What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা : সত্যি ঘটনা নাকি রুপকথা ? (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
q3HVUFn.jpg


শুরুতেই নাম সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে বলে নিচ্ছি। জার্মান একটি শহর যার নাম Hamelin। এর উচ্চারন কোথাও হ্যামিলিন কোথাও হ্যামিলন দেয়া হয়েছে। বেশকিছু যায়গায় দুটো উচ্চারনই দেয়া। যেহেতু ছোটবেলার গল্পের বইয়ে হ্যামিলন লেখা ছিল। আমরা সবাই সে শব্দের সাথেই পরিচিত তাই এখানে হ্যামিলনই লেখা হচ্ছে। আমাদের ছোটবেলার সে গল্পের নাম ছিল হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। এই গল্পটি বেশ কয়েকটি রুপে রয়েছে । কিছুটা ঘষা মাজা করলে সব গল্পের মূল ভিত্তি সেই একই রকম এসে দাঁড়ায়। এতসময় ধরে যে গল্পের কথা বললাম, জানলে অবাক হবেন এটি নিছকই শুধু একটি গল্প না । বাস্তব এবং সত্যি ঘটনা। তবে গল্পের বেশ কিছু অংশে বিতর্ক রয়েই গিয়েছে।

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়েসার নদীর তীরে অবস্থিত হ্যামিলন শহর। আজকের জার্মানীর মত এতটাও উন্নত ছিলনা শহরটি। প্রায় ৭০০ বছরেরও বেশী আগে সুন্দর ছিমছাম গ্রামে শুরু হয় ইঁদুরের উপদ্রব। তারা এত পরিমাণে বেড়ে গেল যে ড্রয়ার, টেবিলের নিচে, চুলায় এমনকি চায়ের পাত্রেও দেখা মিলল তাদের। তারা আকারে এত বড় আর সংখ্যায় এত অধিক যে বিড়ালও ওদের দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করল। হ্যামেলিনের লোকজন দুঃচিন্তায় পড়ে গেল। শেষ পর্যন্ত সব লোকজন একত্র হয়ে সিদ্ধান্ত নিল তারা মেয়র মল্ডিন এর কাছে যাবে। মেয়রের নেতৃত্বে সবাই মিলে একজোট হয়ে ঠিক করলেন, শহরকে ইঁদুরের হাত থেকে যে বাঁচাতে পারবে তাকে মোটা অঙ্কের পুরস্কার দেওয়া হবে। সেই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে শহরে এসে হাজির হলো রহস্যময় এক বাঁশিওয়ালা। ভাল পারিশ্রমিকেই তাকে দায়িত্ব দেয়া হলো। লোকটি বাইরে বের হয়ে নিজের রঙিন আলখাল্লাটার মধ্য থেকে দারুণ একটি বাঁশি বের করলো। সেই বাঁশি বাজাতে বাজাতে ঘুরতে থাকলো হ্যামিলনের পথে৷ সে বাঁশির এক অচেনা সুরের আকর্ষণে শহরের হাজার হাজার ইঁদুর দলবেঁধে ছুটছে লোকটির পেছনে পেছনে৷। বাশিওয়ালা হাটতে হাটতে গেলো শহরের পাশের ওয়েজার নদীর বাঁকে। ইদুর গুলো ঝাপিয়ে পড়লো নদীতে। শহর হলো ইঁদুর মুক্ত।

whj3ZDq.jpg


পারিশ্রমিক দেবার বেলায় বেকে বসলো শহরবাসী। রেগে গেলো বাঁশিওয়ালা। বের করলো এক নতুন বাঁশি। বাজাতে বাজাতে হেটে চললো শহরের বাইরে। সেই বাঁশির সুরে শহরের ঘর গুলো থেকে এবার বেড়িয়ে এলো ছোটবাচ্চারা। সবাই যেন সম্মোহিত। বাবা মা কারো ডাক শুনল না সবাই আনন্দে ছুটলো বাঁশিওয়ালার পেছনে। পাহাড়ের ওখান থেক সব বাচ্চা নিয়েই বাঁশিওয়ালা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ফিরে এলো মাত্র দুইজন। একজন ছিলো বোবা যে সব দেখলেও কিছু বলতে পারলো না। অন্যজন ছিল অন্ধ যার বলার ক্ষমতা থাকলেও কোথায় গেল তা দেখতে পারলো না। কোনদিন আর বাঁশিওয়ালাকে দেখা যায়নি আর।

সত্যতা যাচাই

rcJiebE.jpg


শহরে রয়েছে বাঁশিওয়ালার ভাষ্কর্য

ইতিহাসবিখ্যাত এ ঘটনাটির সত্যতা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে ১২৮৪ সালের ২২ জুলাই ঘটনাটি ঘটেছে। দীর্ঘদিন অমীমাংসিত এই রহস্যের বিস্তর গবেষণা হয়েছে। বর্তমানে হ্যামিলনে যে পৌরসভা রয়েছে, তার নামের অর্থ হল 'ইঁদুর ধরা লোকের বাড়ি'। এটি নির্মিত হয় ১৬০২ সালে। এর দেয়ালে বিশ্ববিখ্যাত কাহিনীটির ছবি চমৎকারভাবে আঁকা আছে। হ্যামিলিন শহরে এ সংক্রান্ত একটি জাদুঘর রয়েছে। ওই জাদুঘরে সঞ্চিত পঞ্চদশ শতাব্দীতে লেখা কয়েকটি বইয়ে এ রহস্যময় কাহিনীর বর্ণনা রয়েছে। ফ্রাউ ভন লিউড নামের এক ১৩ বছরের বালিকার ১২৯৪ সালের রেকর্ডে লিপিবদ্ধ আছে যে সুদর্শন এ লোকটির বয়স ছিল আনুমানিক ৩০। তার বাঁশিটি ছিল রুপোর তৈরি। এক নথিতে পাওয়া যায় ১৩০০ শতাব্দীতে হ্যামিলনের বাজারে এক কাঠের ফলক ছিল। সেখানে এক বংশীবাদক ও অনেক শিশুর ছবি ছিল। সেটা ১৭০০ সালে ঝড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। ১২৮৪ সালের ঘটনার পরেই চার্চে Stained-glass জানালা লাগানো হয় ১৩০০ সালের দিকে। সেখানে এই করুণ ঘটনা লেখা ছিল। জানালাটা বানাবার উদ্দেশ্যই ছিল শিশুদের স্মরণ করা। জানালাটা ধ্বংস হয়ে যায় ১৬৬০ সালে, পরে ইতিহাসবিদ হ্যান্স ডবারটিন ঐতিহাসিক লেখনী থেকে এই জানালা পুনঃনির্মাণ করেন। সেখানে দেখা যায় বাঁশিওয়ালা আর সাদা পোশাকে শিশুদের ছবি! বর্তমানের হ্যামেলিন শহরে যদি কখনো বেড়াতে যান তবে দেখবেন সেখানে বাঁশিওয়ালার মূর্তি, সাথে ইঁদুর। ২০০৯ সালে জার্মানিরা এক টুরিস্ট ফেস্ট আয়োজন করে শিশুদের প্রস্থানের করুণ ঘটনার ৭২৫তম বার্ষিকীতে। যে বাড়িতে খোদাই করা ছিল ইতিহাসটি, সেটিকে এখন "র‍্যাট ক্যাচার" এর বাড়ি বলে। প্রতি বছর ২৬ জুন পালন করা হয় র‍্যাট ক্যাচার দিবস। এবার একটি আকর্ষনীয় তথ্য দেয়া যাক, যে রাস্তায় সর্বশেষ বাঁশিওয়ালাকে দেখা গিয়েছিল বলে দাবী করা হয়, সে রাস্তার নাম হচ্ছে Bungelosenstrasse বা 'নো ড্রাম স্ট্রিট'। এ রাস্তায় কোন মিউজিক বাজানো নিষিদ্ধ। প্রায় ৭০০ বছর ধরেই এমনটি চলে আসছে বলে জানা যায়।

MIdLOpo.jpg


বিখ্যাত Bungelosenstrasse রাস্তা, যেখানে বাদ্য বাজানো নিষেধ

মিথ্যার দাবি

অনেকে ব্যাপারটিকে মিথ্যা দাবি করে থাকে , কারন পুথিগত ভবে কোন নথি বা পত্র খুজে পাওয়া যায়নি। আর এর কোন ব্যাখ্যাও আসলে দেয়া কষ্টকর। প্রাচীন নথিতে আগেও শহরে ছেলে ধরার ব্যাপারে জানা গিয়েছে। ধারনা করা হয় বাঁশিওয়ালার গল্প নিছক সেই ছেলেধরার কাহিনী এর সাথে শুধু কিছু গল্প যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ১২৮৪ এর দিকে জার্মানে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ইঁদুর ছিল এ রোগের বাহক। সে সময় শহরে ইঁদুর ধরার বিশেষ লোক ছিল যারা বাঁশি বাজিয় ইঁদুর ধরতো। এমন বাঁশি জার্মান জাদুঘরেও রয়েছে। সেসময় প্লেগে অনেক শিশু মারা যায়। তাই অনেকের দাবি গীর্জার দেয়ালে বা পুথির পাতায় বর্নিত ঘটনা গুলো আসলে রূপক অর্থে তুলে ধরা হয়েছে।

দুপক্ষের বিচার বিশ্লেষন তুলে ধরা হলো। সত্যমিথ্যা বিশ্বাস সম্পূর্নটাই ব্যাক্তিগত। কালের বিবর্তনে সাধারন ঘটনা যেমন অসাধারন রূপ লাভ করে ঠিক তেমনি দুনিয়াতে ঘটে অমিমাংশিত অনেক ঘটনা। তবে যাই হোক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ঘটনাটি জার্মান জনপ্রিয় একটি গল্প বা ঘটনা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জার্মানবাসী এটি ধারন করে রেখেছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top