What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মানুষখেকো যত মাংসাশী উদ্ভিদ … (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
dNhOp1J.jpg


পৃথিবীতে মাংসাশী উদ্ভিদ আছে, ব্যাপারটা শুনতেই কেমন যেন অবাক লাগে। তারা কি ধরনের মাংস খায়, এবং তারা মানুষখেকো কিনা? নানা ধরনের প্রশ্নই আমাদের মনে উঠে। তবে চিন্তার কিছু নেই, পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত মানুষখেকো কোন উদ্ভিদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু আজ যে অন্য প্রাণীদের ধরে ধরে খাচ্ছে, একদিন যদি সে বিবর্তিত হয়ে দানবাকৃতি ধারণ করে এবং মানুষ খাওয়া শুরু করে? এমন প্রশ্নও মাঝে মাঝে হয়…

মাংসাশী উদ্ভিদদের পরিচয়

মাংসাশী সকল উদ্ভিদ সাধারণত plantae (প্লানটি) জগতের eudicots রাজ্যের sarraceniaceae পরিবারের অন্তর্ভূক্ত। এরা স্বাভাবিক বিরুৎ উদ্ভিদ হতে দেখতে ভিন্ন হয়। এরা সাধারণত মশা,মাছি, গুবরে পোকা, ঝিঁঝি পোকা খায়। তবে তুলনামূলক বড় আকৃতির উদ্ভিদরা ব্যাঙ এবং ইঁদূরও খায়।

কেনো তারা এমন হলো?

মাংসাশী উদ্ভিদ সাধারণত স্যাতস্যাঁতে জলাভূমিতে জন্মে। আর সেখানকার মাটিতে নিত্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেনের অভাব হওয়ায় তাদের আচরণ এমন সহিংস হয়েছে বলে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন। আবার অনেক বিজ্ঞানী বলে থাকেন, কিছু দানবীয় উদ্ভিদ বিবর্তিত হয়ে এমন মাংসাশী উদ্ভিদে রুপান্তরিত হয়েছে।

কয়েকটি বিখ্যাত মাংসাশী উদ্ভিদের নমুন

এই পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে। এরমধ্যে প্রসিদ্ধ ও ভয়ানক কয়েকটি হল –

১. কলস উদ্ভিদ : কলস উদ্ভিদের কথা আমরা কমবেশি শুনেছি। আমাদের দেশের সিলেটেও কলস উদ্ভিদ আছে। এ উদ্ভিদটি দেখতে কলসের মত। তাই এর নাম কলস বা pitcher ! এটা বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত,শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, মাদাগাস্কারের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। এর উজ্জল রঙের পাতা এবং সাধারণ পাতা উভয়ই রয়েছে। এর পাতাগুলো প্রথমে একটি আকর্ষী হতে সুতার মত বের হয়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হয়ে ফুলে একটি জগের আকৃতি ধারণ করে।এর উপরে একটি ঢাকনার মতো পাতাও থাকে। একটি কলস উদ্ভিদ ২ইঞ্চি হতে ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।

ছোট উদ্ভিদগুলো মশা-মাছি এবং বড়গুলো ব্যাঙ,মাকড়সা,ইঁদুর ইত্যাদি খেয়ে থাকে। কলস উদ্ভিদ এক ধরনের মধূ জাতীয় এনজাইম তৈরী করে, যা পোকামাকড়কে কাছে টানে। উদ্ভিদের মুখে অল্প পরিমানে মধূ থাকে, যার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে নলের মত ফাঁপা অংশের উপরিভাগে বসে। কিন্তু কলস উদ্ভিদের ফাঁপা অংশের ভেতরটা এতটাই পিচ্ছিল হয় যে পোকামাকড় পা পিছলে আরো নিচে পড়ে যায়। নিচে কিছু এনজাইম থাকে। পোকামাকড় ওখানে পড়লে উপরে উঠার চেষ্টা করে, কিন্তু যতই উপরে উঠার চেষ্টা করে, ততই আরো নিচে তলিয়ে যায়। শেষমেষ তারা তলদেশে পৌঁছে যায়। এবং সেখান থেকে বেরোনো অসম্ভব। পরে পোকাগুলো মরে পঁচে গেলে বীপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কলস উদ্ভিদ তার খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে।

২. ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ : ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের সাথে আমরা ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। ছোটবেলায় বিভিন্ন কার্টুন শো তে দেখতে পেতাম, পিরিচ আকৃতির চোয়ালওয়ালা এক ধরনের উদ্ভিদ একটা গোটা মানুষকে খেয়ে ফেলছে। সেটা ছিলো কল্পনা। কিন্তু বাস্তবেও এরা কম ভয়ানক নয়।

এটা পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনায়। এটা উচ্চতায় প্রায় ১ ফুট এবং প্রতিটি পাতা ১ ইঞ্চি মত লম্বাচওড়া হয়। এর পাতা দু'ভাগে বিভক্ত। পাতার বিভক্ত স্থানটিতে সবুজ রেখা রয়েছে। পাতার ভিতরের দিক মানুষ মুখগঃহ্বরের মত লাল। এর পাতার লাল অংশে ছোট ছোট কাঁটা রয়েছে। পাতার শেষভাগে চোয়ালের দাতের মত ভয়ংকর কয়েকটি দাঁত রয়েছে।এগুলোকে বলা হয় "সিলিয়া। পাতা গহ্বরে কয়েকটি ট্রিগার হেয়ার রয়েছে।

পাতার ট্রিগার হেয়ারগুলো শিকারকে আকর্ষণ করে। ট্রিগার হেয়ার ও তার আশেপাশে মধূ জাতীয় এনজাইম থাকে। শিকার যখন মধূ খেতে এসে সংবেদনশীল ট্রিগার হেয়ারে দু'বার স্পর্শ করে ঠিক তখনই গাছটি বুঝে যায় যে এটি তার শিকার। এবং আধ সেকেন্ডের চেয়েও কম সময়ে চোয়াল বন্ধ হয়ে যায় এবং সিলিয়াগুলে বাইরে বের হবার পথ আটকে দেয়। এরপর শিকার গহ্বরের ভেতর মারা যায়। এসময় উদ্ভিদ আরো এনজাইম উৎপন্ন করে মৃতদেহ পঁচায় এবং মৃতদেহকে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ তরলে রুপান্তরিত করে। এরপর ঐ তরল পদার্থ উদ্ভিদ খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে। মৃতদেহের অপাচ্য অংশ সমূহ ফাঁদ খুলে বের করে দেওয়া হয়। ভেনাস ফাইট্র্যাপের একটি শিকার বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় খেতে ১০ দিন সময় লাগে।এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী উদ্ভিদ।

৩. গোখরা লিলি : গোখরা লিলি বা কোবরা লিলি অবিকল গোখরা সাপেরা মতই দেখতে।আর এটা জলাভুমিতে জন্মে। তাই এর নাম গোখরা লিলি।এটি খুবই দূর্লভ। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওরিগন রাজ্যে এদের পাওয়া যায়।

এদের কোন গোপন গর্ত থাকেনা। এরা দেহের চারপাশে সৃষ্ট আলো দ্বারা শিকারকে আকৃষ্ট করে। এদের দেহে চুলের মত কিছু আঁশ থাকে, শিকার কাছে আসলে সেগুলো শিকারকে আটকে ফেলে। এরপর পঁচে গলে গেলে সেখান থেকে উদ্ভিদ খাদ্য শোষণ করে।

৪. ওয়াটারহুইল : এটি ৪-১২ ইঞ্চি লম্বা হয়। এটার চারদিকে ৮ টা পাতা স্পোকের মত হয়ে থাকে বলে একে ওয়াটারহুইল বলা হয়। এটা পানির নিচে থাকে। এটার পাতাগুলো ফাঁদ হিসাবে কাজ করে। পাতাগুলোর সাইজ খুবই ছোট হয়। এর উচ্চতা মাত্র ৬ মিলিমিটার বা ০.২৫ ইঞ্চি।

এদের শিকার পদ্ধতি ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের মত। এদেরও পাতার বহির্ভাগে শুঙ্গ বা দাঁত থাকে। এরা প্লাঙ্কটন ও এর লার্ভা খেয়ে বেচে থাকে। এদের পাতা দুটি এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে বন্ধ হয়ে যায়

৫. সূর্যশিশির : এর পাতাগুলো গোলাকার। এরা আঠাঁযুক্ত ফাঁদ ব্যবহার করে থাকে শিকার করার জন্য। ছোট আকারের এ উদ্ভিদটি মাত্র ৩.৫ ইঞ্চি চওড়া। এটা প্রায়ই বড় উদ্ভিদ ও আগাচার নিচে জন্মায়। এর পাতাগুলো উজ্জল লাল রঙের হয়। এর পাতাগুলোর মধ্যে এক ধরনের সুগন্দি যুক্ত আঠাজাতীয় এনজাইম তৈরী হয়। এগুলো দেখতে শিশিরের মত লাগে। রোদে এনজাইমগুলো চকচক করে এবং বাতাসে সুগন্ধি ছড়ায়। আর তাতে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় পাতার উপর বসলে আঁঠাযুক্ত এনজাইমে পা আটকে যায়। আর এরা যতই বেরোতে চেষ্টা করে ততই এনজাইম বের হয়ে শিকারকে ডুবিয়ে ফেলে। পরে পোকাটা মরে গেলে নির্গত এনজাইমের সাথে বিক্রিয়া শরীরের পুষ্টি উপাদানগুলো এক প্রকার নাইট্রোজেন জাতীয় তরলে রুপান্তরিত হয় এবং সূর্যশিশির সে তরলকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে।

৬. লবস্টার পট ট্র্যাপ : এ উদ্ভিদের শাখা প্রশাখা গুলো দেকতে গলদা চিংড়ির মত হয়। যার কারনে এটার নাম লবস্টার পট ট্র্যাপ। এরাও পানির নিচে অথবা কাছাকাছি থাকে। যখনই শিকার উদ্ভিদের আশেপাশে আসে, তখনই এটা তার লম্বা লতাজাতীয় শাখা দিয়ে শিকারকে বেঁধে ফেলে এবং মরে গেলে অন্যান্য মাংসাশী উদ্ভিদের মত করে বিপাক করে ফেলে।

৭. ব্লাডারওর্ট : ব্লাডারওর্ট বা ব্লাডার ট্র্যাপ ব্লাডারের মত ফুলে ফেঁপে থাকে। শিকার যখনই এর সামনে আসে তখনই এর সংবেদনশীল ট্রিগার হেয়ার তা জানান দেয়। ঠিক তকনই এটি একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মত করে শিকারকে টেনে ব্লাডারের ভিতর নিয়ে যায়। আর সেখানেই চলে বিপাক প্রক্রিয়া।

৮. ফ্লাই পেপার ট্র্যাপ : ফ্লাই পেপার ট্রাপের পাতাগুলো হয় আঁঠালো ও কাঁটাযুক্ত। এটার পাতাতে যখনই কোন না কোন মাচি বসে সেটা পাতার কাঁটা ও আঠাতে আটকে যায়। আর এভাবে পাতাতে আটকানো অবস্থায় পঁচে গেলে ধীরে ধীরে প্রানীর মরদেহ থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ করে নেয়

মাংসাশী উদ্ভিদগুলো সাধারণত ছোটখাট পোকামাকড়ই খায়।

বিবর্তন প্রক্রিয়ায় মানুষের দেহ দিন দিন ছোট হচ্ছে, আর তারাও দিনদিন হিংস্র হচ্ছে। তারা মানুষখেকো হোক বা না হোক তারা সহজলভ্য নয় এবং তারা বৈচিত্রময়। সুতরাং এসব মাংসাশী উদ্ভিদকে সংরক্ষণ করা উচিত। কারন মানুষ গাছের খায়, গাছ মানুষের নয়। সুতরাং আমরাই বরং তাদের কাছে ঋণী…
 

Users who are viewing this thread

Back
Top