What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সালেহা হত্যাকাণ্ড : স্বাধীন দেশে প্রথম আলোচিত অপরাধীর ফাঁসি (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,654
Messages
117,056
Credits
1,241,720
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
XYR1SLr.jpg


তখনকার দিনে সালেহা ছিলেন ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের আদুরে কন্যা। ‌একদম সত্যিকারের 'সোনার চামচ মুখে নিয়ে' জন্ম নেয়া একটি মেয়ে। সাত ভাইয়ের এক বোন। তৎকালীন সমাজে সালেহার পরিবারের ব্যাপক প্রভাব ছিলো। সেটা অর্থনৈতিক এবং সামাজিক, উভয়ই !

সমাজের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হলেও সালেহার বাবার মেয়ের শিক্ষার্জনের বিষয়টিকে খুব একটা পাত্তা দেননি। তিনি বিত্তবান ছিলেন। ভেবেছিলেন বিত্তের জোরেই মেয়েকে ভালো একটা পাত্রের হাতে তুলে দেবেন। আর সে লক্ষ্যেই মেয়েকে সুখী করার সঠিক উপায় হিসেবে শিক্ষিত জামাই খুঁজতে শুরু করলেন। পেয়েও গেলেন। ছেলের নাম ইকবাল। পরবর্তীতে মেয়ের সুখের গ্যারান্টির জন্য সালেহার বাবা নিজের টাকায় ইকবালকে ডাক্তারি পাস করান। তখন ছেলের নাম হয়, ডাক্তার ইকবাল।

বিয়ের সময় প্রচুর যৌতুকের সঙ্গে ইকবালকে হলুদ রঙের একটি ডাটসান ১৩০ প্রাইভেট কার দেওয়া হয়েছিল।

মেয়ের সুখের জন্য ইকবালকে সালেহার বাবা এত এত দামী জিনিস উপহার দিয়েছিলেন। তাতেও মেয়ের জন্য সুখ কিনতে পারেননি। বিয়ের পরপরই সালেহা বুঝতে পারেন তার স্বামী ডা. ইকবালের দৃষ্টি পরনারীতে। অনৈতিক কাজের বিরোধিতা করেছিলেন সালেহা। প্রতিবাদ করেছিলেন স্বামীর দুশ্চরিত্রের বিরুদ্ধে। একদিন কাজের মেয়ের সঙ্গে এক লজ্জাকর পরিস্থিতিতে ইকবাল ধরা পড়ে যান সালেহার কাছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতেই ডা. ইকবাল দরজার ডাসা দিয়ে সালেহার মাথায় আঘাত করেন। মারা যান সালেহা…

সালেহা হত্যাকাণ্ড

… ঘটনাটি এখানে শেষ হলেই ভালো হত, কিন্তু হয়নি। ন‍ৃশংসতার আরো ভয়ংকর রূপ ইকবাল দেখিয়েছেন সালেহার লাশের সাথে !

দরজার ডাসার আঘাতে সালেহা মারা যাবার পর ইকবাল ধারালো ব্লেড দিয়ে তাকে জবাই করে প্রচার চালায় সালেহা আত্মহত্যা করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ডা. ইকবাল ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার তার বন্ধু। আগে থেকে সবকিছু তারা ঠিক করে রেখেছিল। তাই সালেহার ময়নাতদন্ত করাটা ছিলো শুধুই এক আনুষ্ঠানিকতা। ডাক্তাররা বললেন, সালেহা আত্মহত্যাই করেছে। এটি কোনো হত্যাকাণ্ড নয়। দাফন হয় সালেহার লাশ…

কিন্তু সাংবাদিকদের কাছে ঘটনাটি অত্যন্ত সন্দেহজনক মনে হতে থাকে। সন্দেহ হয় বিদেশে অবস্থানরত সালেহার এক ভাইয়ের। তৎকালীন পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। সালেহার পরিবার আবারও ময়নাতদন্তের অনুরোধ জানান। দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত হয়। সেখানে আবারও মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা বলা হয়। তৃতীয়বার আবারও ময়নাতদন্তের আবেদন জানানো হলে তা আর গ্রহণ হয়নি…

সালেহা হত্যা'র সর্বশেষ বিচার

কিন্তু সেসময়কার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের পরিবারের সাথে তখন সালেহার পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। যে কারণে আবারও ময়নাতদন্ত করার আবেদনটি গ্রহণ করার ব্যবস্থা হয়। কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে এবার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত হয়। তিন সদস্যের একটি বোর্ড ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি হত্যা। মাথায় আঘাত করে সালেহাকে হত্যার পর শরীরে ধারালো ব্লেড দিয়ে পোঁচ দেওয়া হয়েছে। সালেহার গলা ও শরীরের যেসব স্থানে ব্লেডের আঘাত রয়েছে, তা কোনোভাবেই নিজে নিজে করা সম্ভব নয়। শরীরে সূক্ষ্মভাবে যে পো‍ঁচ দেওয়া হয়েছে, তা থেকে কিছুটা বাঁকাভাবে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। খুনি যেই হোক, ব্লেড দিয়ে পোঁচাতে সে তার বাম হাত ব্যবহার করেছে।

এই প্রতিবেদনের পর পুলিশি তদন্তে নতুন মোড় নেয়। পুলিশ বাম হাতের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত করেন। আবিষ্কার করেন খুনি তাদের সামনেই রয়েছে। কারণ ওই হতভাগা মহিলার স্বামী নিজেই একজন বাঁ-হাতি !

এ ঘটনাটিই হলো ১৯৭৮ সালে দেশ কাঁপানো চাঞ্চল্যকর সালেহা খুনের ঘটনা। রাজধানীর মালিবাগে সালেহাকে নৃশংসভাবে খুন করেন তার চিকিৎসক স্বামী ইকবাল। খুনের দায় থেকে ডা. ইকবাল নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন বারবার। কিন্তু পারেননি। সালেহা খুনের পর সারা দেশের মানুষ প্রতিবাদ করেছে। ফাঁসির দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। পত্রপত্রিকাগুলোতে এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরে ফাঁসি হয় ডা. ইকবালের। আদালতে বলা হয়, গৃহপরিচারিকার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের পরিণতিতে ডা. ইকবাল খুন করেন তার স্ত্রীকে। আদালতে আরও অভিযোগ করা হয়, যৌতুক আদায়ের জন্য ডা. ইকবাল নির্যাতন করতেন সালেহাকে। বিচারে ডা. ইকবালের মৃত্যুদণ্ড হয়। ১৯৮৭ সালে সেই দণ্ড কার্যকর করা হয়। এই মৃত্যুদণ্ড তখন খুব আলোচিত হয়েছিলো। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত সমাজের কোনো ব্যক্তির ফাঁসি হওয়ার ঘটনা ছিলো ওটাই প্রথম।

vYET6tk.jpg


সালেহার আবাসস্থল

যৌতুকের নির্মমতার ইতিহাসে সালেহা ও তার স্বামী ডা. ইকবালের নাম মনে পড়লে আজও মানুষের অনুভূতি ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। সালেহার মৃত্যুর পর সামাজিক সোচ্চারের কারণে ১৯৮০ সালে যৌতুকবিরোধী আইন প্রণীত হয়।

তবে সালেহা হত্যাকাণ্ড বিচারে সবচেয়ে বড় ভুমিকা ছিলো সাংবাদিকদের। তৎকালীন সময়ে সালেহা হত্যাকাণ্ড ও বিচার প্রক্রিয়া খুব কাছ থেকে দেখেছেন এবং এসব নিয়ে পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন, এমন সাংবাদিকদের মধ্যে বশির আহমেদ অন্যতম। কোনো এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, "ওই সময়ে সালেহা হত্যাকাণ্ডটি ছিলো 'টক অব দ্য কান্ট্রি'। অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনা। পত্রিকায় তাদের অনুসন্ধানীমূলক প্রতিবেদন না হলে হয়ত সালেহা খুনের ঘটনাটি প্রকাশই পেত না। অপমৃত্যু হিসেবেই থাকত। পত্রিকায় প্রতিবেদন হওয়ার কারণেই তৃতীয় দফা ময়নাতদন্ত হয়। যা থেকে খুনের ঘটনাটি প্রকাশ পায়।"

আর্কাইভ ঘেটে জানা যায়, ইকবালের পরিবার সাংবাদিকদের উপর এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলো যে, ফাঁসির রায় কার্যকরের পর ইকবালের বাসায় গেলে সাংবাদিকদের দা নিয়ে ধাওয়া পর্যন্ত করেছিলো ইকবালের স্বজনরা !
 

Users who are viewing this thread

Back
Top