What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কেমন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি (1 Viewer)

lVTtwms.jpg


স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো পালিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে, এই ফেব্রুয়ারিতে জানা যাক সদ্য মুক্ত স্বদেশে কেমন ছিল সেই পালন?

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসকবর্গের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথম সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে বাঙালিরা। যার পরম্পরায় সংঘটিত হয় বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। বাংলা ভাষার দাবির আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার ও বরকতরা শহীদ হওয়ার ঘটনার পর এই দিনটিকে পরের বছর ১৯৫৩ সাল থেকেই শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বাঙালিরা। পাকিস্তানের সেই পরাধীন সময়ে ১৪৪ ধারা জারিসহ নানা বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে প্রতিবছর পালন করা হতো শহীদ দিবস। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থানের বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে হয়েছিল অভূতপূর্ব গণসমাবেশ। শহীদ মিনার আমাদের অকুতোভয় হয়ে ওঠার চেতনাস্তম্ভ। এ কারণেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী অন্যতম লক্ষ্যে পরিণত হয় শহীদ মিনার। পাকিস্তানি সৈন্যরা একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্বর গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি গুঁড়িয়ে দেয় শহীদ মিনার।

কিন্তু একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ী হওয়ার পর কেমনভাবে পালিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি?

স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাস চার দিন পরই আসে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। দেশ তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। অবকাঠামো ধ্বংসপ্রায়। আকাশে–বাতাসে তখনো লাশের গন্ধ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিনই সন্ধান মিলছিল অসংখ্য গণকবরের। মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসছিল মানুষের হাড়, কঙ্কাল ও মাথার খুলি। এই বাস্তবতায় ১৯৭২ সালে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি এল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ঐতিহাসিক শহীদ মিনারটি সে সময়ও ছিল মিনারবিহীন।

বাংলাদেশের প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের তথ্য পাওয়া যায় সমকালীন সংবাদপত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের স্মৃতিকথায়। দৈনিক পূর্বদেশ–এর ২৯ জানুয়ারি ১৯৭২ সংখ্যা থেকে জানা যায়, একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে শহীদ মিনারের ভাঙা বেদি ও এর আশপাশ ধোয়া-মোছার কাজ শুরু হয় '৭২–এর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে।

১৯৭২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ছিল দেশের সর্বোচ্চ সরকারি ও বেসরকারি ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রাখাসহ নানা কর্মসূচি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে 'বাংলা পড়ুন, বাংলা লিখুন' শিরোনামে বিলি করা হয় একটি ব্যতিক্রমী প্রচারপত্র। সাত দিনব্যাপী কর্মসূচির তৃতীয় দিন ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, শুক্রবার। এদিন ছাত্রলীগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে 'বাংলা পড়ুন, বাংলা লিখুন' প্রচারপত্রটি তুলে দেন ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজসহ অন্যরা। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় ছবিসহ সেই খবরটি প্রকাশ করা হয়।

১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল সোমবার। যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস পালনে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষাসংগ্রামী ও প্রয়াত আলোকচিত্রশিল্পী আমানুল হক স্মৃতিকথায় লেখেন, '...১৯৭২-এ প্রথম শহীদ দিবস পালিত হয় পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে সদ্যমুক্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে মিনারবিহীন বিধ্বস্ত শহীদ চত্বরে। ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয়ের পর বাঙালি জীবনের সে এক গৌরবের দিন।' (সূত্র: একুশের তমসুক, পৃষ্ঠা ১৮–১৯)।

'৭২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের খবর প্রকাশিত হয় এক দিন পর অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি, বুধবার। এদিনের সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতায় প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে স্থান পেয়েছিল পালিত হওয়া শহীদ দিবসের সচিত্র খবর। পূর্বদেশ পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবিসহ আট কলামজুড়ে ছিল প্রধান প্রতিবেদন। শিরোনাম, 'সারা দেশে নবতর চেতনায় জাতীয় শহীদ দিবস পালন: কেন্দ্রীয় মিনারের বেদীমূলে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান—চারটি মূলনীতির ওপর দেশকে গড়ে তুলুন।' প্রতিবেদনে লেখা হয়, '...বঙ্গবন্ধু সকালে মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যগণসহ আজিমপুরের গোরস্থানে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মাজারে মালা অর্পণ করেন ও তাঁদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু নগ্ন পদে হেঁটে শহীদ মিনারে আসেন এবং পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। সেখানে বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, "শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।" ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন, "১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙ্গালীদের জাতীয় মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল।" তিনি বলেন, "লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো সক্রিয় রয়েছে।" তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।'

বাংলা ভাষার অধিকারের দাবিতে পিকেটিং করতে গিয়ে জেল খেটেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ফলে ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের প্রতি তাঁর আবেগমিশ্রিত শ্রদ্ধা প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর বক্তব্যে।

পূর্বদেশ-এর প্রধান প্রতিবেদনের পাশে ছেপেছিল রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বাণী। শিরোনাম করা হয়, '"একুশে ফেব্রুয়ারী" মুক্তি সংগ্রামের আলোকবর্তিকা—রাষ্ট্রপতি।'

২১ ফেব্রুয়ারি পালন নিয়ে দৈনিক বাংলার ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'রক্তস্নাত বাংলায় অমর একুশে পালিত'। শিরোনামের নিচে শোল্ডারে লেখা হয়, 'শহীদানের রক্ত যেন বৃথা না যায়: বঙ্গবন্ধু।' প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়, 'লক্ষ লক্ষ মানুষের কঙ্কালের উপর দাঁড়িয়ে রক্তস্নাত এই বাংলাদেশে ২১ শে ফেব্রুয়ারী মহান শোক দিবস পালিত হয়েছে। অত্যন্ত শোকাতুর পটভূমিতে বহু রক্তঝরা বাঁক ঘুরে এবার একুশে এসেছিল বাঙলায় স্বাধীনতার সূর্যকে আলিঙ্গন করে।...'

বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম রাখা হয়, 'রিনিউড ভৌ টু আপহোল্ড শহীদ ডে স্প্রিট এক্সপ্লয়টেশন মাস্ট এন্ড: মুজিব'।

১৯৭২ সালে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ বরকতের মায়ের বয়স ছিল ৮২ বছর। বৃদ্ধ বয়সে ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে বরকতের মা হাসিনা েবগম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শুধু তা–ই নয়, ১৯৭২–এর ২১ ফেব্রুয়ারি আজিমপুর কবরস্থানে ছেলের কবরে প্রথম ফুল দেন তিনি। অশীতিপর বরকতের মায়ের তাঁর ছেলের কবরে ফুল দেওয়ার দৃশ্য সেখানকার পরিবেশকে আবেগঘন করে তোলে। এ নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—'প্রথম ফুল'। স্টাফ রিপোর্টার পরিবেশিত প্রতিবেদনটি ছিল:

প্রথম ফুল। একুশের প্রথম ফুল। আজিমপুরের মাজারে। তখন গভীর রাত। শিশির ঝরছে। ভীষণ শীত। আজিমপুর গোরস্তান। এখানে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের কবর। রাত বারোটা বেজে গেছে। রাজধানীর প্রত্যন্ত প্রান্তর থেকে নগ্নপায়ে আসতে শুরু হয়েছে একুশের মিছিল। ঠিক তখন তিনি এলেন। হাতে বিরাট একটা পুষ্পস্তবক। অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে এগুলেন নিঃশব্দে কবরের দিকে। তিনি আবুল বরকতের মা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন আজ। কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে দিলেন ফুলের স্তবক প্রিয় ছেলের কবরে। চারদিক নিঃশব্দ। দূর থেকে অনেকে দেখছেন এই দৃশ্য। সবার চোখ ছল ছল করছে। কোন কথা বলতে পারলেন না তিনি। মৃদু উচ্চারণে অস্পষ্ট শব্দে কবরের গায়ে হাত বুলোতে থাকলেন কিছুক্ষণ। তাঁর চোখে অশ্রু নেই। সবাই চোখ মুছলো তখন।

প্রথম ফুল রাখলেন কবরে। একুশের প্রথম প্রহরে। তিনি আবুল বরকতের মা।

পূর্বদেশও বরকতকে নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন করে। এর শিরোনাম ছিল, 'কেঁদো না মা, দ্যাখো বরকত ফিরে এসেছে।'

১৯৫২–এর ২১ ফেব্রুয়ারি রফিক, জব্বার ও বরকতরা প্রাণের বিনিময়ে এনে দিয়েছেন মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। আর এর ২০ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে অভূতপূর্ব এক আবেগ নিয়ে পয়লাবারের মতো মুক্ত পরিবেশে গীত হয় সেই অমর সংগীত, 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।'
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top