নজরুলের কারাজীবন ও বাংলা সাহিত্যে জাতীয় চেতনার উন্মেষ
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম দ্বিতীয় কবি যিনি কবিতা লেখার জন্য কারাবরণ করেন। কবিতার জন্য কারাবরণকারী প্রথম হলেন সিরাজগঞ্জের 'অনল প্রবাহ' কবি ইসমাঈল হোসেন সিরাজী। কিন্তু নজরুল যেমন কবিতায় আলোড়ন সৃষ্টি করে ব্রিটিশের মত রাজশক্তিকে নাড়িয়ে তুলেছিলেন, এমন আর কেউ পারেননি। এদিক থেকে নজরুল জাতীয়তাবাদী কবি হিসাবে আজো সকলের শ্রদ্ধেয়।
১৯২২ সালে যুদ্ধ ফেরত নজরুল বন্ধুকে নিয়ে প্রকাশ করলেন সাপ্তাহিক 'ধূমকেতু'। শৌর্যের বার্তাবহ এ কাগজ তরুণচিত্তে অপূর্ব আত্মদানের আহবান নতুন করে জাগাল। বাংলার বিপ্লবী মন বিস্ময়ে 'ধূমকেতু'র প্রতিটি অক্ষরে প্রাণের কথা পাঠ করে উৎসাহিত হ'ল। টনক নড়লো ব্রিটিশ সরকারের। তারা ধূমকেতুকে দমন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠলো। পূজা সংখ্যার ধূমকেতুতে কবিতা বেরুল :
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম দ্বিতীয় কবি যিনি কবিতা লেখার জন্য কারাবরণ করেন। কবিতার জন্য কারাবরণকারী প্রথম হলেন সিরাজগঞ্জের 'অনল প্রবাহ' কবি ইসমাঈল হোসেন সিরাজী। কিন্তু নজরুল যেমন কবিতায় আলোড়ন সৃষ্টি করে ব্রিটিশের মত রাজশক্তিকে নাড়িয়ে তুলেছিলেন, এমন আর কেউ পারেননি। এদিক থেকে নজরুল জাতীয়তাবাদী কবি হিসাবে আজো সকলের শ্রদ্ধেয়।
১৯২২ সালে যুদ্ধ ফেরত নজরুল বন্ধুকে নিয়ে প্রকাশ করলেন সাপ্তাহিক 'ধূমকেতু'। শৌর্যের বার্তাবহ এ কাগজ তরুণচিত্তে অপূর্ব আত্মদানের আহবান নতুন করে জাগাল। বাংলার বিপ্লবী মন বিস্ময়ে 'ধূমকেতু'র প্রতিটি অক্ষরে প্রাণের কথা পাঠ করে উৎসাহিত হ'ল। টনক নড়লো ব্রিটিশ সরকারের। তারা ধূমকেতুকে দমন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠলো। পূজা সংখ্যার ধূমকেতুতে কবিতা বেরুল :
'আর কতকাল থাকবি বেটি
মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল,
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে
অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
মাস দুই যেতে না যেতেই পুলিশ এসে হানা দেয় ধূমকেতু অফিসে। ছাপাখানাকেও রেহাই দিল না। সম্পাদক, মুদ্রাকর, প্রকাশক নজরুল ফেরার হয়ে গেল। কিন্তু কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে এল নজরুলকে। ধূমকেতুর মামলায় পুলিশ কোর্টে যে চাঞ্চল্য জাগালো তা অবর্ণনীয়। বহু উকিল স্বেচ্ছায় এলেন নজরুল তথা ধূমকেতুর পক্ষ সমর্থনের জন্য। মলিন মুখোপাধ্যায় হলেন প্রধান উকিল। সাক্ষী শেষে নজরুল এক লিখিত জবানবন্দি দাখিল করেন। তাতে কবি বলেন, 'সত্য স্বয়ং প্রকাশ, তাকে কোন রক্ত অাঁখি রাজদন্ড নিরোধ করতে পারে না। দোষ আমারও নয়, আমার বীণারও নয়। দোষ তার যিনি আমার কর্ণে তার বীণা বাজান। প্রধান রাজদ্রোহী সেই বীণাবাদক ভগবান। তাকে শাস্তি দেবার মত রাজশক্তি বা দ্বিতীয় ভগবান নেই। আমি সত্য রক্ষার ন্যায় উদ্ধারে বিশ্বপ্রলয় বাহিনীর লাল সৈনিক। বাংলার শ্যাম শ্মশানের মায়া নিদ্রিত ভূমিতে আমায় তিনি পাঠিয়েছিলেন অগ্রদূত তূর্যবাদক করে। আমি সামান্য সৈনিক যতটুকু ক্ষমতা ছিল তার আদেশ পালন করছি। বিচারক জানে, আমি যা বলেছি, যা লিখেছি, তা ভগবানের চোখে অন্যায় নয়। ন্যায়ের এজলাসে মিথ্যা নয়। কিন্তু তবুও হয়তো সে শাস্তি দেবে। কেননা সে সত্যের নয়, সে রাজার। সে ন্যায়ের নয়, সে আইনের। সে স্বাধীন নয়, সে রাজভৃত্য।' মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল,
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে
অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।