সন্তান বড় করা যে পৃথিবীর সবচেয়ে টাফ জব এইটা কোন বাবা মা অস্বীকার করবে না।
জন্মের পর থাকে একধরনের ডিফিকালটি।সারাক্ষণ মনে হয় কিভাবে তাকে অসুখ বিসুখ থেকে দুরে রাখব,কিভাবে তাকে বিপদ থেকে সুরক্ষিত রাখব।
তারপর একটু বড় হলে কেও খায় না,কেও হাগু করে না, কেও রাতে ঘুমায় না,কারো সারাবছর অসুখ বিসুখ লেগে থাকে,আরো নানাবিধ চ্যালেঞ্জ।
এরপর শুরু হয় পড়ালেখা শেখানোর যুদ্ধ।আমার বড়টা যেমন লিখতেই পারতোনা কিছু, অনেক কষ্টে সৃষ্টে কোন বর্ণ শেখালেও লিখত উলটা।
মাঝে মাঝে নিজের চুল টানতাম আর কান্তে কান্তে বলতাম
- ওরে আমার আব্বারে,তুই কি ভুল করে কিছু ঠিক লেখতে পারিস না?
সন্তানের জন্মের পর থেকে বাবা মা গুলো সিম্পলি রোলার কোস্টার রাইডে থাকে,কখন যে আপসাইড ডাউন হয়ে যাবে কেও জানেনা।
তবে সন্তান পালনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, ডিলিং উইথ গ্রোইং আপ কিডস।মানে টিনেজার ডিল করা।ইবলিশ শয়তানকে আমি দেখিনাই কিন্তু এদের দেখে আমি বুঝি ইবলিশ কেমন শয়তান হতে পারে।
জোক্স আপার্ট,টিনেজারদের এই অস্থির সময় এবং ব্যবহারের জন্য যদিও কিছু হরমোন দায়ী কিন্তু প্যারাটা তো বাবা মাকেই নিতে হয়।লাইফতা ত্যানা ত্যানা তো বাবা মায়েরই হয়।আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় মনের দুঃখে বনে চলে যাই।
মা হলেও তো আমি মানুষ,আমারও তো হরমোন আছে।
শান এ নজুল বেশী লম্বা হয়ে যাচ্ছে,মূল ঘটনায় আসি
আমার পুত্র একটি স্বনামধন্য কলেজে ইংলিশ ভার্শনের বার ক্লাসে পড়ে,গত বছর অর্থাৎ তার ফার্স্ট ইয়ারের প্রায় অর্ধেক সময় অতিবাহিত হয়ে যাবার পরে সে হঠাত একদিন ঘোষণা দিল,সে এইচএসসি দিবেনা,এ লেভেলস দিবে।
প্রথমে আমি তাকে নরম করে বোঝালাম,সে বোঝেনা,রাগ করে বোঝালাম তবু বোঝেনা,চড় চাপড়ও দিলাম,তবু সে তার সিদ্ধান্তে অটল বিহারী বাজপেয়ী।
কিছুতেই কিছু হয়না,উলটা সে কেঁদে কেটে একাকার,আমরা তার ইন্টারেস্ট বুঝি না,ভাল লাগা বুঝিনা ,তার উপর চাপিয়ে দেই নিজেদের পছন্দ, এই জীবন আর সে রাখতে চায়না ব্লা ব্লা ব্লা।
ছেলের এহেন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে আহত হয়ে পুত্রের বাবা আনোয়ার হোসেন এর মত আ আ করতে করতে বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ল এবং মুক ও বধির হয়ে গেল।তিন ধাক্কা দিলেও তার মুখ থেকে আর শব্দ বের হয় না।
আমার একদিকে স্বামী আর অন্যদিকে সন্তান,আমি পুরাই শাবানা।সারাদিন বিছানায় উপতা হয়ে পড়ে পড়ে কাঁদি।
তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম পুত্রের পিতা শোকে পাথর হয়ে যাক কিন্তু আমি পুত্রের পাশেই থাকব।জানি এই ডিসিশন সুইসাইডাল,তবু চান্স নিব যেন ছেলে সারাজীবন এই অপবাদ না দিতে পারে যে আমরা তার পছন্দের মূল্যায়ন করিনি।
সবাইকে সাকসেসফুল হয়েই বুঝতে হবে যে সে রাইট ছিল?কেও ভুল করেই বুঝুক যে সে ভুল ছিল।হোক সে ফেইলার কিনতু জানুক যে সিদ্ধান্তটা তার নিজের ছিল।
যতই বড় বড় কথা ভাবি,রাতে আমার ঘুম হয় না।জ্বর থাকে সারাক্ষণ।পুত্রের সেমি অন্ধকার ভবিষ্যৎ পুরাই অন্ধকার লাগে।
তারপর একদিন তিতা মুখে তাকে নিয়ে চললাম এ লেভেলস এর কোচিং এ ভর্তি করাতে।
যে শিক্ষক তার ক্লাস নিবেন তাকে আমি আগের ঘটনা কিছুই বলিনি,শুধু বলেছি আমার পুত্র ভার্শন থেকে মিডিয়াম এ আসতে চায়,আমি তাকে আপনার কোচিং এ ভর্তি করাবো।
দেখা হলে,স্যার নিজেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জিজ্ঞেস করলেন এবং বুঝলেন যে ছেলের পিতামাতা মানসিক ভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
তারপর উনি এত সুন্দর করে আমার পুত্রকে বোঝালেন এবং বললেন তার নিজের পড়াটা কনটিনিউ করতে যে আমার চোখে পানি চলে এলো।
আমি লাস্ট কবে কাওকে এত দোয়া করেছিলাম মনে পড়ে না।
উনি চাইলেই আমার পুত্রের মধ্যে ব্যাবসা দেখতে পারতেন,কথা না বাড়িয়ে ভর্তি করে ফেলতে পারতেন, তা না করে নিজের সময় নষ্ট করে সম্পূর্ণ অকারণেই একটা বাচ্চাকে বোঝালেন কি তার জন্য ভাল হবে।
পুত্রও কনভিন্সড হল।আর আমার মনে হল কোন যুদ্ধ জয় করে বাসায় ফিরছি।
কোচিং থেকে বের হয়ে তাকে আদর করে বললাম- পিএস ফোরের নতুন কি গেইম আসছে বল।কালকেই কিনে দিব।
পুত্র কিছু না বলে লজ্জা পেয়ে হাসলো............।
বিঃদ্রঃ-কে বলে সব শিক্ষক কমার্শিয়াল হয়ে গেছে।শিক্ষকতার মত বর্ণাঢ্য পেশাকে কে সমহিমায়,সমুন্নত রেখেছেন এমন শিক্ষকও আমাদের আসে পাশেই আছেন।আমার সৌভাগ্য এরকম একজনের সাক্ষাত পেয়েছিলাম সেদিন।এই শিক্ষককে দেখে আমার তারে জামিন পার এর ছবির আমির খান এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
খুব ইচ্ছা করছিল স্যারকে একটা হাগ দিয়ে আসি।আমাদের দেশে যেখানে সেখানে হাগা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে,ধন্যবাদ দিয়েই কাজ সারতে হল...............।
(সমাপ্ত)
জন্মের পর থাকে একধরনের ডিফিকালটি।সারাক্ষণ মনে হয় কিভাবে তাকে অসুখ বিসুখ থেকে দুরে রাখব,কিভাবে তাকে বিপদ থেকে সুরক্ষিত রাখব।
তারপর একটু বড় হলে কেও খায় না,কেও হাগু করে না, কেও রাতে ঘুমায় না,কারো সারাবছর অসুখ বিসুখ লেগে থাকে,আরো নানাবিধ চ্যালেঞ্জ।
এরপর শুরু হয় পড়ালেখা শেখানোর যুদ্ধ।আমার বড়টা যেমন লিখতেই পারতোনা কিছু, অনেক কষ্টে সৃষ্টে কোন বর্ণ শেখালেও লিখত উলটা।
মাঝে মাঝে নিজের চুল টানতাম আর কান্তে কান্তে বলতাম
- ওরে আমার আব্বারে,তুই কি ভুল করে কিছু ঠিক লেখতে পারিস না?
সন্তানের জন্মের পর থেকে বাবা মা গুলো সিম্পলি রোলার কোস্টার রাইডে থাকে,কখন যে আপসাইড ডাউন হয়ে যাবে কেও জানেনা।
তবে সন্তান পালনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, ডিলিং উইথ গ্রোইং আপ কিডস।মানে টিনেজার ডিল করা।ইবলিশ শয়তানকে আমি দেখিনাই কিন্তু এদের দেখে আমি বুঝি ইবলিশ কেমন শয়তান হতে পারে।
জোক্স আপার্ট,টিনেজারদের এই অস্থির সময় এবং ব্যবহারের জন্য যদিও কিছু হরমোন দায়ী কিন্তু প্যারাটা তো বাবা মাকেই নিতে হয়।লাইফতা ত্যানা ত্যানা তো বাবা মায়েরই হয়।আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় মনের দুঃখে বনে চলে যাই।
মা হলেও তো আমি মানুষ,আমারও তো হরমোন আছে।
শান এ নজুল বেশী লম্বা হয়ে যাচ্ছে,মূল ঘটনায় আসি
আমার পুত্র একটি স্বনামধন্য কলেজে ইংলিশ ভার্শনের বার ক্লাসে পড়ে,গত বছর অর্থাৎ তার ফার্স্ট ইয়ারের প্রায় অর্ধেক সময় অতিবাহিত হয়ে যাবার পরে সে হঠাত একদিন ঘোষণা দিল,সে এইচএসসি দিবেনা,এ লেভেলস দিবে।
প্রথমে আমি তাকে নরম করে বোঝালাম,সে বোঝেনা,রাগ করে বোঝালাম তবু বোঝেনা,চড় চাপড়ও দিলাম,তবু সে তার সিদ্ধান্তে অটল বিহারী বাজপেয়ী।
কিছুতেই কিছু হয়না,উলটা সে কেঁদে কেটে একাকার,আমরা তার ইন্টারেস্ট বুঝি না,ভাল লাগা বুঝিনা ,তার উপর চাপিয়ে দেই নিজেদের পছন্দ, এই জীবন আর সে রাখতে চায়না ব্লা ব্লা ব্লা।
ছেলের এহেন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে আহত হয়ে পুত্রের বাবা আনোয়ার হোসেন এর মত আ আ করতে করতে বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ল এবং মুক ও বধির হয়ে গেল।তিন ধাক্কা দিলেও তার মুখ থেকে আর শব্দ বের হয় না।
আমার একদিকে স্বামী আর অন্যদিকে সন্তান,আমি পুরাই শাবানা।সারাদিন বিছানায় উপতা হয়ে পড়ে পড়ে কাঁদি।
তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম পুত্রের পিতা শোকে পাথর হয়ে যাক কিন্তু আমি পুত্রের পাশেই থাকব।জানি এই ডিসিশন সুইসাইডাল,তবু চান্স নিব যেন ছেলে সারাজীবন এই অপবাদ না দিতে পারে যে আমরা তার পছন্দের মূল্যায়ন করিনি।
সবাইকে সাকসেসফুল হয়েই বুঝতে হবে যে সে রাইট ছিল?কেও ভুল করেই বুঝুক যে সে ভুল ছিল।হোক সে ফেইলার কিনতু জানুক যে সিদ্ধান্তটা তার নিজের ছিল।
যতই বড় বড় কথা ভাবি,রাতে আমার ঘুম হয় না।জ্বর থাকে সারাক্ষণ।পুত্রের সেমি অন্ধকার ভবিষ্যৎ পুরাই অন্ধকার লাগে।
তারপর একদিন তিতা মুখে তাকে নিয়ে চললাম এ লেভেলস এর কোচিং এ ভর্তি করাতে।
যে শিক্ষক তার ক্লাস নিবেন তাকে আমি আগের ঘটনা কিছুই বলিনি,শুধু বলেছি আমার পুত্র ভার্শন থেকে মিডিয়াম এ আসতে চায়,আমি তাকে আপনার কোচিং এ ভর্তি করাবো।
দেখা হলে,স্যার নিজেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জিজ্ঞেস করলেন এবং বুঝলেন যে ছেলের পিতামাতা মানসিক ভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
তারপর উনি এত সুন্দর করে আমার পুত্রকে বোঝালেন এবং বললেন তার নিজের পড়াটা কনটিনিউ করতে যে আমার চোখে পানি চলে এলো।
আমি লাস্ট কবে কাওকে এত দোয়া করেছিলাম মনে পড়ে না।
উনি চাইলেই আমার পুত্রের মধ্যে ব্যাবসা দেখতে পারতেন,কথা না বাড়িয়ে ভর্তি করে ফেলতে পারতেন, তা না করে নিজের সময় নষ্ট করে সম্পূর্ণ অকারণেই একটা বাচ্চাকে বোঝালেন কি তার জন্য ভাল হবে।
পুত্রও কনভিন্সড হল।আর আমার মনে হল কোন যুদ্ধ জয় করে বাসায় ফিরছি।
কোচিং থেকে বের হয়ে তাকে আদর করে বললাম- পিএস ফোরের নতুন কি গেইম আসছে বল।কালকেই কিনে দিব।
পুত্র কিছু না বলে লজ্জা পেয়ে হাসলো............।
বিঃদ্রঃ-কে বলে সব শিক্ষক কমার্শিয়াল হয়ে গেছে।শিক্ষকতার মত বর্ণাঢ্য পেশাকে কে সমহিমায়,সমুন্নত রেখেছেন এমন শিক্ষকও আমাদের আসে পাশেই আছেন।আমার সৌভাগ্য এরকম একজনের সাক্ষাত পেয়েছিলাম সেদিন।এই শিক্ষককে দেখে আমার তারে জামিন পার এর ছবির আমির খান এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
খুব ইচ্ছা করছিল স্যারকে একটা হাগ দিয়ে আসি।আমাদের দেশে যেখানে সেখানে হাগা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে,ধন্যবাদ দিয়েই কাজ সারতে হল...............।
(সমাপ্ত)