What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected বেলাশেষে (1 Viewer)

Pegasus

Member
Joined
Mar 8, 2018
Threads
103
Messages
171
Credits
28,977
এই শোন, আজ সবাই রাধিকা ম্যামের ক্লাস শেষে পুতুলের চায়ের দোকানে আসবি। কিছু কথা আছে। কথাটি বলেই তিথি ক্লাসে চলে গেল। প্রতিদিন কেউ না কেউ এই কথাটি বলে। তবে তিথিই বেশিরভাগ সময় বলে। ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে আমরা প্রতিদিন পুতুলের চায়ের দোকানের সামনে একটি বাধানো বটগাছ আছে ওখানে আড্ডা দেই। আগে অবশ্য আমি আড্ডায় খুব একটা থাকতাম না তবে এক অজানা আকর্ষনে আমি আড্ডায় আশি। রাধিকা ম্যাম আমার দেখা সবচেয়ে ভাল ম্যামদের মধ্যে একজন। সবাই যখন ঐ চায়ের দোকানে আড্ডায় ব্যস্ত তখন আমি আমাদের থেকে খানিকটা দুরে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক লোকটিকে দেখি। রোজ ভার্সিটি শেষে রাধিকা ম্যাম সামনের কনফেকশনারীর দোকান থেকে কিছু একটা নিতো আর লোকটি তা দেখত। আবার ম্যাম চলে গেলে লোকটিও চলে যেত। প্রথমে ব্যাপারটি আমার কাছে কিছু মনে হয়নি তবে বারবার এই জিনিসটি আমি লক্ষ্য করেছি বলে মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। লোকটি কি ম্যামের পরিচিত। একদিন আমি ভার্সিটিতে এসেও ক্লাস না করে বাইরে দারিয়ে থাকলাম। প্রতিদিনের মতই লোকটি ভার্সিটি ছুটির কিছুক্ষন আগে এসে বসে থাকল আর ম্যাম সেই কনফেকশনারীর দোকান থেকে কিছু নিয়ে চলে যাওয়ার পর লোকটিও চলে গেল। এর পরেরদিন দেখলাম লোকটি অনেক তারাতারি এসেছে। সেদিন আমাদের ক্লাস হল না টিচার্স মিটিং ছিল বলে। তাই বাইরে এসে সবাই আড্ডা দিচ্ছি। এ ধরনের আড্ডায় তিথী সব সময় উদ্ভট প্রশ্ন করে। আজ তিথী সবাইকে প্রশ্ন করল হঠাৎ, আচ্ছা সবাই এক এক করে বল কার কাছে বাস্তবতা কি??? এরকম প্রশ্নে আমার অনেক ইন্টারেস্টিং লাগে তাই ব্যাপারটাতে মন দিলাম। প্রথমে রনি বলল, বাস্তবতা হল মামা খালুর দুনিয়া। যার মামা খালু পাক্কা তার কাছেই এই দুনিয়া। রাশেদ বলল, বাস্তবতা হল স্বার্থপরতা। সবাই নিজ নিজ স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে এটাই বাস্তবতা। আমি শুধু হাসছি। এরপর রোহান বলল, বাস্তবতা হল ঢোপবাজি। যে তেল বা ঢোপ মারতে ভাল জানে তার কাছেই সব। তিথী এবার বলল, আমার কাছে তো সবাইকে নিয়ে চলাই বাস্তবতা। আপনজনদের জন্য কিছু করতে পারার চেষ্টাই বাস্তবতা। আরও অনেকে অনেক কিছু বলল। সব শেষে আমার পালা আসলে আমি বললাম, বাস্তবতা হল একটা পরিবর্তনের পতিক্রিয়া। আমরা বাস্তব জিবনে নিজের জিবন অতিবাহিত করার জন্য য়েসব কিছুর সম্মুখীন হই তাই আমাদের কাছে বাস্তবতা। উদাহরনস্বরুপ, কিছু বিজ্ঞ লোক বলে, "নাই মামার থেকে কানা মামা ভাল" আবার তাদের মতই কিছু লোক বলে, "দুষ্টু গরুর থেকে শুন্য গোয়াল ভাল"। যার জিবনে যেরকম প্রতিফল এসেছে তার কাছে সেটাই বাস্তবতা। বাস্তবতা কখনও নির্দিষ্ট এক বাক্য হয় না। বিল গেটস এর মেয়ের জিবনে যেটা বাস্তবতা, বিল গেটস এর কাছে সেটা স্বপ্ন ছিল। বিল গেটস এর মেয়ে জানেনা বিল গেটস এর কাছে বাস্তবতা কত কঠিন ছিল। তাই আমার কাছে বাস্তবতা বলতে জিবনের নির্দিষ্ট কিছু প্রতিক্রিয়া ছাড়া কিছুই নয়। সবাই এতক্ষন হা করে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না দেখে তিথী বলল, লম্বা লেকচার তবে আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। পরোক্ষনেই সেই লোকটি আমাদের বলল, বাস্তবতা বলতে আসলে কিছুই নেই, এটা আমাদের চলমান জিবনে কিছু সুখ দুঃখের ঘাটতি। বলেই লোকটি উঠে দারালো। তখন দেখলাম রাধিকা ম্যাম সেই দোকান থেকে কিছু নিয়ে চলে যাচ্ছে। আসলে এসব গল্প করতে করতে এতক্ষন পার হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। এর পরে সবাই যে যারমত বাসায় চলে আসলাম। পরেরদিন ভার্সিটি শেষে আমি সবাইকে বিদায় দিয়ে লোকটির পাশে গিয়ে বসলাম। উনি আমার দিকে তাকালোও না। কেবল রাধিকা ম্যাম সেই দোকান থেকে কিছু নিয়ে চলে যাওয়ার পর উনি আমায় বললেন, আমাকে যেতে হবে। তুৃমি কি চাও আমার থেকে। আমি বললাম, আপনার থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার ইচ্ছে। তাছাড়া আর কিছুই নয়। উনি বললেন, কিছু প্রশ্নের জন্য আমাকে এতদিন ফলো করছো এমনকি কিছুদিন আগে আমার বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলে। এবার আমি একটু হতভম্ব হয়ে যাই। আমি তাকে ফলো করছিলাম তবে এটা উনি বুজলেন কি করে। লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, জানো, তুমি কি প্রশ্ন করবে আমি তা জানি। আমি অবাক হয়ে বললাম, এটা কিভাবে সম্ভব। উনি বললেন, আমি তোমাকে দেখে আমার ভার্সিটি লাইফটাকে দেখতে পাই। আমিও তোমার মতই ছিলাম। তবে আজ তোমাকে একটা গল্প বলব।শুনবে?? আমি বললাম অনেকদিন অপেক্ষা করেছি তবে আর নয়। প্লিজ বলুন। উনি একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলা শুরু করলেন,
কয়েক বছর আগের কথা। আমি তখন ভার্সিটিতে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ক্লাস শেষ করে বেরনোর পথে আমার কাছে কিছু লোক এসে মানিব্যাগ ফোন সব ছিনতাই করে। আমি তখন কি করব ভেবে পাচ্ছি না। শুধু ভাবলাম মানিব্যাগে ৩০ টাকা ছিল আমার বাস ভাড়া এটা নিয়ে ওরা কি করবে। ভার্সিটি থেকে বাসা একটু দুরে তাই হেটে আসাও সম্ভব ছিল না। তাই ভার্সিটির গেটে দাড়িয়ে আছি। সব বন্ধুরা চলে গেছে তবে আমার ডিপার্টমেন্টের এক মেয়ে আছে। তার সাথে সেভাবে পরিচিত নই তাই তাকে কিছু বলতেও পারছি না। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি বলে সে বলল, কি ব্যাপার তানিম এভাবে তাকিয়ে আছো যে। আমি অবাক হয়েছি সে আমার নামটা জানে। কিন্তু আমি লজ্জায় পরে গেলাম কারন আমি তার নাম জানি না। আসলে মেয়েদের সাথে কম কথা বলি একটু তাই। আমি একটু সংকোচ নিয়ে বললাম, আসলে তেমার কাছে কি কিছু টাকা হবে। আমার আসলে একটু আগে ছিনতাই হয়েছে। তাই বাসায় যেতে পারছি না। ও এবার হেসে ফেলে বলল, ও এই কথা। আমি ভাবলাম প্রথম কথাতেই টাকা চাইছি কথায় ও অবাক হবে তা না করে হাসছে। ও তখন আমাকে ৫০০ টাকার একটি নোট দিয়ে বলল এটা রাখো। আমি তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এটা দেখে সে বলল কি হয়েছে আবার এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি নিজেকে অবাক করে বললাম, খুচরা হবে, এত টাকা ভাংতি কেউ দিতে চায় না। বলেই নিজেকে মনে মনে বলছি কি করছি আমি এসব। ও এবার জোরে হেসে বলল আচ্ছা ঠিক আছে দারাও। তখন ও চারটা পন্ঞ্চাশ টাকার নোট দিয়ে বলল এটাও রাখো আর নিজের খেয়াল রেখো বলেই চলে গেল। আমি এতকিছু না শুনে ওর হাসিতেই পরে আছি। মেয়েটার প্রেমে যে পড়েই গেছি সেটা খুব ভালভাবে বুঝেছিলাম। তাই ভাবলাম তার দেওয়া এই টাকাটা রেখেই দিব। তখন ভার্সিটি থেকে বাসা পর্যন্ত রিকশা রিজার্ভ নিয়ে আসলাম। আর বাসায় এসে ভাড়া দিলাম। পরেরদিন ভার্সিটিতে এসেই ওকে খুজছি। মহাসমস্যা হল তার নামটা এখনো জানি না। ডিপার্টমেন্টে এসে এদিক অদিক খুজছি তবে ওকে পাচ্ছি না। হঠাত কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। পিছনে ঘুরে দেখলাম ওই মেয়েটি। ও কিছু লোককে দেখিয়ে বলল, এরাই কি কাল ছিনতাই করেছিল। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে ওদের চিনতে পারলাম। ওদের দিকে অনেক রাগ নিয়ে এগিয়ে যাব তখনি মনে হল ওদের জন্যই এই মেয়েটির সাথে পরিচয়। তাই ওকে আমি বললাম হুম এরাই তবে এদের আমি মাফ করে দিয়েছি। ও অবাক হয়ে বলল, কি? তখন ওরা আমার কাছে আমাকে আমার ফোন দিয়ে বলল ভাই ভুল হয়ে গেছে ভাই।আর কখনও এই কাজ করমু না। আমি ওদেরকে আশ্বস্ত করে বললাম ঠিক আছে ঠিক আছে।এর পরে এসব আর করবে না। আর যে একটা মেয়েকে এতো ভয় পায় তার দারা ছিনতাই মানায় না। এরপর ওরা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে চলে গেল। আমি মেয়েটির দিকে তাকাতেই মেয়েটি অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। আরেকবার ঠুস করে প্রেমে পরে গেলাম। ওর হাসি থামলেই ও বলল, হাই, আমি ইশানি। আমি ওর দিকে হাত বারিয়ে বলতে যাব কিছু তখনই ও বলল আমি জানি তুমি তানিম। আমি ওকে বললাম এদেরকে কই পেলে। ও বলল নাস্তা খাওয়ার সময় এসেছিল তখন নিয়ে এসেছি বলেই আবার হাসলো। আমি তাকে কালকের পাওনা অন্যটাকা দিয়ে শোধ করলাম। ওর দেয়া টাকাগুলো আমার কাছেই রেখে দিয়েছিলাম। পরে দুজনে একসাথে ক্লাসে গেলাম। ওর সাথে অনেক ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল। এখন সব গল্প, আড্ডা, ঘুরতে যাওয়া সব ওর সাথেই হত। একদিন ক্লাসে ডিপার্টমেন্ট হেড এসে বলল ৮০% উপস্থিতি না থাকলে কেউ পরিক্ষা দিতে পারবে না। এ কথা শুনে আমার অনেক রাগ হল। কিন্তু কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলছেনা তাই আমি সামনে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললাম, আচ্ছা আমরা কি প্রাইমারী স্কুলে পড়ি। তারা যাই বলবে সেটাই মেনে নিতে হবে। ঐ মটু, ভুড়িয়া, তাড়ছিরা, ফাটা ডিপার্টমেন্ট হেড যা বলবে তাই মেনে নিব আমরা। এর একটা বিহিত করতেই হবে। কি বল তোমরা। সবাই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশানি চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে আসছে। ওর কিছু বান্ধবী উঠে গিয়ে ওকে আটকানোর চেষ্টায় বলছে, ইশানি ও হয়তো জানে না। কিছু বলিস না জানলে এরকমটা বলত না। তখন কিছু বন্ধু এসে বলল, বেটা তুই কি করলি এটা। তুই জানিস না ইশানি আমাদের হেডের মেয়ে। আমি স্টাইলিশ ভাবে তাদের বললাম, তাই নাকি ওয়াও বলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার একটিং করলাম। সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। ইশানি এটা দেখে হেসে হেসে শেষ। দৃশ্যটা দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তবে চোখ তো চেয়েও খুলতে পারছি না। কে যেন এসে পানি ছিটিয়ে দিল। আমি আসতে আসতে চোখ খুললাম। মনে মনে ভাবছি চরম একটিং হইছে। উপরে তাকিয়ে দেখি সবাই হাসছে। আমিও হাসছি তবে মনে মনে। প্রকাশ্যে হাসলে আমাকে এখন খুজেও পাওয়া যাবে না। অতপর ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছি। সবসময় ইশানিসহ একসাথেই আসি তবে আজ অন্যরকম লাগছে। হঠাত দেখি ইশানি এসে আমার হাতটা ধরে সামনে হাঁটতে লাগলো। আমি তার দিকে তাকাতেই সে বলল, কোন কথা বলবে না। শুধু হাঁটতে থাকো। আমিও এবার তার হাতটি শক্ত করে ধরলাম। ও বলল নাটক তো ভালই পারও। আমি বললাম, তুমি বুঝেছিলে? ও বলল, আমি বুঝি তোমাকে। এভাবে অনেক দিন চলে গেল। তবে এখনও কেউ কাউকে ভালবাসি বলিনি। তবে সত্যি বলতে দুজনেই জানি আমরা একে অপরকে কতটা ভালবাসি। একদিন তার বাবা আমাদের একসাথে দেখে ফেলে। সেদিন তার বাবা তাকে কিছু না বলে সাথে বাড়ি নিয়ে যায়। আমি ভাবলাম এটাই হয়ত আমার ছাত্রজিবনের শেষ দিন কিন্তু না সেরকম কিছুই হল না। ভেবেছিলাম অফিস রুমে আমার ডাক আসবে কিন্তু আসে নি। ইশানি অনেকদিন ধরে ক্লাসে আসছেনা। অনেক ফোন করেছি অনেকভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি তবে পাইনি তার খোজ। ভার্সিটির রেজাল্ট এর দিনে এক বুক সাহস নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলাম। ডিপার্টমেন্ট হেড স্যার আমায় দেখে বললেন, তোমার সাহস কিভাবে হয় এখানে আসার। তোমার এত বড় স্পর্ধা। এসব কথা শুনতে শুনতেই ইশানি সামনে আসলো। আমি স্যারের দিকে দিকে তাকিয়ে বললাম, স্যার, আমরা একে অপরকে ভালবাসি এটা কেউ কাউকে বলিনি। কিন্তু আমরা দুজনেই জানি যে আমরা একে অপরকে ছাড়া চলতে পারব না। আর সত্যি বলতে আপনার মেয়ে আমার চেয়েও আপনাকে বেশি ভালবাসে। তাই সে কখনই আপনার অবাধ্য হয়ে আমার কাছে আসবে না। আমি শুধু এটুকু বলব, আপনার সামনে দুটো জিবন রয়েছে। চাইলেই আপনি এই জিবনগুলো ওলটপালট করে দিতে পারেন আবার সাজিয়েও দিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন দুটি জিবনের মধ্যে একটি আপনার মেয়ে। আজ আসি স্যার। ভাল থাকবেন বলেই আমি চলে আসি। সেদিন রাতে ইশানির বাবা আমায় ফোন করে পরেরদিন দেখা করতে বলে। আমি হাসিমুখে পরেরদিন দেখা করতে গেলাম। উনি বললেন, দেখো তুমি এখনও কোন জব কর না তাই আমি চাই তুমি আমার পক্ষ থেকে একটা কোম্পানি শুরু কর। এর জন্য যত টাকা লাগে আমি দেব তবে তোমাকে ইশানিকে নিয়ে আমার বাসায় সেটেল হতে হবে। আমি অবাক চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি বললাম, দেখেন স্যার আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমি ছোট থেকে অনেক কিছু থেকে বন্ঞ্চিত হয়েছি তবে পরিবার থেকে যে ভালবাসা পেয়েছি আর আমাদের সবার মধ্যে যে ভালবাসা রয়েছে সেটা আপনিও পেয়েছেন বলে মনে হয় না। আপনি হয়ত জানেন না মধ্যবিত্তদের কাছে সম্মান জিনিসটা কত বড়। আর আপনি ইনডিরেক্টলি আমাকে ঘরজামাই হয়ে থাকার কথা বলছেন। এটা আমার পরিবার কেন আমিই মেনে নেব না। আপনার টাকা থাকতে পারে তবে আপনার মত নিচু মানের আমি নই স্যার। কোন সম্মানী লোক তার মেয়ের জন্য কাউকে এমন অফার দিতে পারে না স্যার। আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করলে আমার পরিবারের সাথেই থাকব। কষ্ট হলেও তাকে এটা মেনে নিতে হবে। এটাই আমার শেষ কথা। স্যার অনেক রেগে গিয়ে বললেন, তোমার এত বড় সাহস আমাকে নিচু বলেছো। আমি তোমাকে,.. তোমাকে,.. তোমাকে...
স্যার আর কিছু বলতে পারলেন না। দেখলাম স্যারের চোখ লাল হয়েছে অনেক মাথা দিয়ে ঘাম ঝরছে। হয়ত স্যারের প্রেশার বেড়ে গিয়েছে। এমন সময় ইশানি রুমে এসে দেখলো স্যার ঠিকমত নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তখনি ও দৌড়ে ইনহ্যালার নিয়ে এসে ওর বাবাকে দিল আর আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলল। আমি কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম। এবার ইশানি অনেক জোরেই বলল যেতে বলেছি তোমাকে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে চলে আসলাম। কিছুদিন পর শুনি ইশানির বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আমি দেখতে গেলে ইশানি কোন কথা না বলে চলে যেতে বলল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। বারবার তাকে বোঝাতে চেয়েছি আমার কি দোষ, আমি কি
করেছি। তখন ও আমাকে একটা থাপ্পর দিয়ে বলে আর যেন কখনও তার সামনে না আসি। আমি অনেক অভিমান নিয়ে সেদিন চলে আসলাম। এর কিছুদিন পরে ওর বাবা সুস্থ হয়ে উঠল। আমিও একটা চাকরী পেয়ে যাই। চাকরী পাওয়ার দিনে আমি আবার ইশানিদের বাসায় যাই। তবে ইশানি আমাকে বলল, যে আমার বাবাকে অপমান করতে পারে সে আর যাই হোক আমাকে ভালবাসতে পারে না। তাই সেদিনও আমি ফিরে এসেছিলাম। একদিন এক মেয়ে কলিগকে রাত হওয়ার কারনে বাসায় পৌছে দিচ্ছিলাম। তখন ইশানি বাসায় ফিরছিল। আমাকে ওই মেয়ের সাথে দেখে ও রিকশা থামালো। আমাকে বলল, এবার তাহলে আর একজনকে খুজে নিয়েছো। নাটক আগেও করতে এখনতো আরও এক্সপার্ট। বলেই এক তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে গেল। আমাকে কিছু বলার সুযোগও দিল না। এরপর আমি ইশানির বাবার সাথে দেখা করি। তাকে বললাম, আমার অপরাধ কি জানতে পারি স্যার। আজ আমার কাছে ইশানিকে ভাল রাখার মত সবকিছুই আছে কিন্তু সেই ইশানিই আজ আমার নেই স্যার। আমি আপনার থেকে আমার পরিবারের সম্মান চেয়েছি এটাই কি অপরাধ স্যার। সেদিন স্যারের থেকে কোন উত্তর পাইনি। এর পর অনেক গুলো দিন কেটে যায়। ইশানির খোজ সবসময় রাখতাম। আজ ৩৫ বছর বয়সে এসেও আমি কাউকে ভসলবাসতে পারিনি আর। তবে জানি না ইশানি কেন বিয়ে করছে না। সে কি এখনও আমাকে ভালবাসে না অন্যকিছু। তবে তার সামনে যাওয়ার সাহস করতে পারি না। তার ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকানো চোখ আমি সহ্য করতে পারি না। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই দুরে থেকেই কাটিয়ে দেই। এই হল আমার গল্প। আমি এবার লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, এই গল্প আমাকে কেন বললেন আর এই ইশানিই বা কে? আর এর সাথে আমার প্রশ্নের উত্তর কথায়। উনি একটু হেসে বললেন, তুমি বুঝে যাবে সব আর হ্যা আগে সবাই তাকে ইশানি বলেই জানত। আর এখন.......বলেই একটা রিকশা নিয়ে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। আমি কিছুক্ষন ঠায় দাড়িয়ে থাকলাম। একবার মনে হল এই রাধিকা ম্যামই আবার ইশানি নয়ত। আমি দ্রুতো ফোন বের করে ভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে টিচার্স প্যানেলে নাম খুজছি। একটা নাম, রাধিকা রহমান ইশানি। আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। মনে মনে ঠিক করলাম কাল ম্যামের বাসায় যাব। পরেরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে তিথীকে সব বললাম। ভার্সিটি শেষে দেখলাম আজ লোকটি আসে নি। রাধিকা ম্যাম সেই দোকানটিতে গেল তবে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দারালো কিছুক্ষন। তারপর চলে যেতে লাগলো। বুঝলাম এতদিন পর উনাকে আজ না দেখতে পেরে ম্যাম টেনশন করছে। আমি উনার পিছু পিছু উনার বাড়ির সামনে এসে তাকে বললাম ম্যাম একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি। আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে ম্যাম বলল, কি বেপার মামুন তুমি এখানে। এটা আমার বাসা। আসও ভেতরে আসও। তুমি আমাকে ভার্সিটিতেই জিজ্ঞেস করতে পারতা, এত কষ্ট করে এখানে আসার কি দরকার। আমি ম্যামের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বললাম, কেন নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন ম্যাম। তার কি অপরাধ। ম্যাম প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। এই সময়ে ম্যামের বাবা এসে বললেন প্রশ্নটা আমারও। উনি আরও বললেন, আমি বারবার বলেছি ওই ছেলেটির কোন দোষ নেই। ছেলেটি এখনও বিয়ে করেনি আর এদিকে তুইও বিয়ে করছিস না। তুই কেন এভাবে নিজে কষ্ট পাচ্ছিস সাথে আরেকজনকে কষ্ট দিচ্ছিস। ম্যাম এবার বলল, আমি এ বেপারে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না আর মামুন তুমি এবার আসতে পার। আমি উঠে ম্যামকে বললাম, চলে যাচ্ছি ম্যাম তবে কাল বিকেলে একবার এয়ারপোর্টের পিছনের ল্যাকটাতে আসবেন। হয়ত কারও সাথে শেষ দেখা। বলেই চলে আসলাম। ম্যাম হয়তবা কিছু বলতেন তবে তিথীর সাথে যা প্লান করেছি তাতে এটা করতেই হত। আজ আমি ওই লোকটিকে আলাদা জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলাম যেন ম্যামের ভাবমুর্তি দেখতে পারি। পরেরদিন আমি আর তিথী ল্যাকের ধারে অপেক্ষা করছি ম্যামের জন্য। একটু পরেই কয়েকজন বন্ধু কেক নিয়ে আসলো। তিথী বলল আজ আমার জন্মদিন ম্যাম। ম্যাম ওকে বলল শুভ জন্মদিন কিন্তু আমি তো তোমার জন্য গিফট নিয়ে আসিনি। আচ্ছা তুমি পছন্দ কর বল। তিথী ম্যামকে বলল আমি যা চাইব তাই দেবেন কি। ম্যাম আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, আচ্ছা বল তুমি কি চাও। তিথী বলল, ওই যে লোকটি দেখছেন ওনার কিছু প্রশ্নের জবাব দেবেন আজ। ম্যাম লোকটিকে দেখে স্থির হয়ে গেল। এই লোকটিকে এখানে আশা করেন নি ম্যাম। তবুও ম্যাম একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছেন। একটি বেন্চের এক পাশে লোকটি বসে আছে আর ম্যাম গিয়ে আরেকপাশে বসলেন। দুজনেই চুপচাপ। আমি তিথীকে সবাইকে বিদায় দিতে বলে চুপি চুপি তাদের পাশে দাড়ালাম। প্রথমে লোকটিই বলল,
- কেমন আছো।
-........... (ম্যাম)
- আজও কি বলবেনা কি দোষ ছিল আমার।
- তুমি কি এখনও ভালবাস আমায়?(ম্যাম)
- (মৃদু হেসে) এই উত্তরটা তুমি জানও।
- কিছু প্রশ্নের উত্তর বাস্তবতা মানুষকে বলতে দেয় না। তোমার প্রশ্নের উত্তরটাও ঠিক তেমনভাবেই আমি কখনও দিতে পারবনা।(ম্যাম)
- বিয়ে করছো না কেন?
- কাউকে ভালবাসি তাই।(ম্যাম)
- আমায় কি একটুও ভালবাসও না এখন।
- না বাসি না। আর বাসি না বলেই কারও অফিসের পথের ভার্সিটিতেই শিক্ষকতা করি। কোন প্রোয়োজন ছাড়াই সেই দোকানে কিছু কেনার ছলে হলেও নিজের ভালবাসার মানুষটিকে একবার দেখি।(ম্যাম)
- তুমি এসব না করলেও পারতে। আজ আমরা একসাথে থাকতে পারতাম।
- পারতাম তবে আমার ভাগ্যে হয়ত এটা ছিল না।আর সবার ভাগ্য ভাল হয় না।(ম্যাম)
- দেবে কি আমায় আরেকটা সুযোগ তোমাকে নিজের থেকেও অনেকটা বেশি ভালবাসার। তোমার ভাগ্যটাকে একটু নিজের হাতে গোছাতে চাই। থাকবে কি আমার এই সংসারে যেখানে কেউ তোমার জন্য হাহাকার করছে।
ম্যাম কাঁদছে। একটু জোরেই কাঁদছে। খেয়াল করলাম তাদের মাঝে বসার দুরত্বটাও কমে আসছে। আমি আর ওখানে থাকলাম না। সব বন্ধুদের নিয়ে চলে আসলাম। তবে কিছু নোনাজল চোখথেকে বেরিয়ে এলো। আগেও বন্ধুদের মিলন করিয়েছি তবে এরকমটা নয়। তবে তিথীর মিথ্যে জন্মদিন টা অনেক কাজে দিয়েছে। পরেরদিন ভার্সিটিতে আসলে ম্যাম আমাকে ডাকলো। বলল, আজ বিকেলে ওই ল্যাকের ধারে আসবে। আজ সত্যিই কারও জন্মদিন। আমি বললাম কার জন্মদিন। ম্যাম বলল আসলেই বুজবে। তাই বিকেলে ওই ল্যাকের ধারে আসলাম। দেখলাম সবাই আছে সেখানে। তবে ম্যাম এর সাথে ওই লোকটিকে দেখে অনেক ভাল লাগলো। এমন সময় একটা কেক দেখলাম যেটাতে কিছুই লিখা নেই। সবাই কোন কথা না বলে কেক কাটলো। আমি বললাম, কার জন্মদিন কিছু লিখা নেই কেন। ওই লোকটি তখন একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলল তোমার ম্যামের বিয়ের কার্ড, প্রথম তোমাকেই দাওয়াত করলাম। আমি কার্ডটা নিয়ে খুলে দেখলাম, পাত্র শাহরিয়ার আহমেদ তানিম। আর পাত্রী রাধিকা রহমান ইশানি। এটা দেখে হাসিমুখে তাদের দিকে তাকিয়ে বললাম, এবার তবে রাধিকা ম্যামের বিয়েতে যাব। ম্যাম বলল, রাধিকা নয় তোমার ইশানি ম্যামের বিয়ে। বলেই ম্যাম একটু লজ্জা পেল। আমরাও সবাই হেসে উঠলাম। এরপর সবাই কেক কেটে চলে গেল। তবে তিথী আসে নি দেখে একটু খারাপ লাগলো। মেয়েটার জন্যই এতকিছু সম্ভব হল আর ও আজ নেই। আমি ম্যামকে বললাম, তিথী আসলে ভাল হত। ম্যাম বলল, কাল ওর জন্মদিনে এসেছিল আজ কেন আসবে। আমি হেসে বললাম কাল তো মিথ্যে জন্মদিন ছিল। ওটা করতে হয়েছিল আপনাদের জন্য। এবার উনারা হাসলেন। হঠাত করে বৃষ্টি শুরু হল। আমি উনাদের বললাম চলেন ছাতার নিচে গিয়ে বসি। ম্যাম বলল, তুমিতো বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ কর। তবে আজ ভিজবে না। আমি বললাম, হুম ভিজব। তবে আপনারা যান। ম্যাম বলল, আজ আমরাও ভিজতে ভিজতে বাড়ি যাব। তুমিও যাও। এসব বলেই ম্যাম আর ওই লোক আমাকে বিদায় জানালেন। আমিও তাদের বিপরীতে হাঁটতে লাগলাম। দুহাত প্রসারিত করে হাঁটছি, এমন সময় কে যেন আমার হাত ধরল। তাকিয়ে দেখি তিথী। আমি অবাক হয়ে কিছু বলতে যাব তখনি ও বৃষ্টিভেজা মুখে বলল, চুপ, কোন কথা হবে না, হাঁটতে থাকো। আমি ওর মায়াময়ী বৃষ্টিভেজা মুখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এটা দেখে ও খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করল। আমি এবার পেছনে তাকিয়ে দেখলাম স্যার আর ম্যাম এক হাতে স্যান্ডেল আর এক হাতে একে অপরকে ধরে আমাদের দেখছে আর হাসছে। আমিও এবার হাটা থামিয়ে নিজের স্যান্ডেল খুলে হাতে নিলাম আর তিথীকেও এটা করতে ইশারা করলাম। ও স্যান্ডেল হাতে নিয়ে আমার হাতে হাত ধরে পিছনে তাকালো। দেখলো ম্যাম স্যারের কাধে মাথা রেখে হাঁটছে। ও একটু হেসে আমার কাধে মাথা রেখে হাঁটতে শুরু করল। আমি মনে মনে ভাবছি, এভাবে তো অনেক ভাল লাগছে। তবে আর যাই হোক এরকম মুহুর্ত আমি সবসময় চাই। কিভাবে কি হল বাকিটা পরে জানা যাবে। আপাতত এই মুহুর্তটাকে অনুভবে রাখতে চাই। দিনের সবচেয়ে ক্লানকাঁতরময় মুহুর্ত এই বেলাশেষে এসেই তবে সব সমিকরন মিলে গেল। হঠাত মনে হল তবে আজ কি তিথীরই জন্মদিন.........?????

ভুলত্রুটি ক্ষমাপ্রার্থী.........
 

Users who are viewing this thread

Back
Top