নীল বাসায় ঢুকতেই তার মা এমনভাবে ছুঁটে এলেন যেন সুনামি বা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস উনি পেয়ে গেছেন!
-কোথায় ছিলে নীল?
-একটু হাটতে বেরিয়েছিলাম।
-আমাকে বলে যাবে না?
-তুমি ঘুমাচ্ছিলে, তাই ডাকিনি।
-এদিকে তো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে!
-কী ঘটনা?
-জোজো কে পাওয়া যাচ্ছে না!
-এমনভাবে বলছো যেন বাবাকেই পাওয়া যাচ্ছে না!
-এ কী ধরনের কথা বলছো? তোমার কোন রি-এ্যাকশান হচ্ছেনা জোজোর জন্য?
-না, মা। এরচেয়ে অনেক বড় দুঃসংবাদ এই শহরের ঘরে ঘরে প্রতিদিন পৌছে যায়, সেখানে একটা কুকুর হারানো আমার কাছে তেমন কোন ব্যাপারই না!
-তুমি জোজো কে কুকুর বললে? তিন বছর ধরে ও আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারের মত হয়েছিল। কত দাম দিয়ে তোমার বাবা তোমার জন্য জোজোকে নিয়ে এসেছিলেন, তোমার যাতে বাসায় নিঃসঙ্গ না লাগে।
-মা, যতই তুমি ফ্যামিলি মেম্বার মনে করো, জোজো তো একটা কুকুর এটা তোমাকে মানতে হবে। আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হিসাবে জোজোকে বাবা কিনে আনেননি।তোমাদের সোসাইটিতে কুকুর, বিড়াল না থাকলে ভাব আসে না, তাই এনেছিলেন।
-আমাদের সোসাইটি মানে?
-তোমাদের সোসাইটি মানে এই যে, পঁচিশ'শো স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট, ঝকঝকে তকতকে মেঝেতে মুখ দেখা যায়, চার চারটি বেডরুম কিন্তু কোন গেস্টরুম নেই। একটা রুম তোমাদের, একটাতে আমি আর বাকি দুটো?
-বাকি দুটোর একটাতে আমি জীম করি, আরেকটা জোজোর জন্য!
-হাসালে, মা! আমার বাবার ফ্ল্যাটে কুকুরের জন্য একটা ঘর আছে কিন্তু মানুষের জন্য নেই!
-এরকম বড় বড় কথা সাহিত্যে মানায়, তোমার মত তেঁইশ বছরের ছেলের মুখে না।
-এ জন্যই তো কথা কম বলি, বাবার মত। বাবা যেমন বোবা হয়ে নিজের ঘরে পরবাসী জীবন পার করছেন!
-আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন, নীল?
-কারন, তুমি আমার মা। একজন সন্তান তার মায়ের কাছে জীবনের অনেক কথা বলে যায়।
-এখন এসব ছাড়ো। নাস্তা করে ক্লাশে যাও। গত দু'দিন তুমি ক্লাশে যাওনি!
-আমি নাস্তা করে এসেছি।
-কোথায়?
-রাস্তার পাশে ফুটপথে, যেখানে খালারা গরম গরম রুটি আর ডিম ভাজি করে দেয়, সাথে সবজি দিয়ে ডাল। একেবারে অমৃতের মত লাগে!
-ঐ সব জায়গায় তো রিক্সাওয়ালারা খায়! তুমি তাদের সাথে খেয়ে এলে?
-আমি কিছু মানুষের সাথে খেয়ে এসেছি। যারা শরীরের রক্ত পানি করে দুটো সৎ উপার্জন করে। ব্রাউন পেপারের খামে করে যাদের ঘরে লাখ লাখ টাকা চলে আসে না!
-তুমি তো পাগল হয়ে গেছো, নীল!
-আরো আগেই হওয়া উচিৎ ছিল! যেদিন আমার দাদা বিনা চিকিৎসায় মফস্বলের হাসপাতালে মারা গেলেন।
-মানুষের জীবন, মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাছাড়া তোমার ছোটচাচার হাতে তোমার বাবা দেড় লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন, তোমার দাদার চিকিৎসার জন্য।
-মা, তুমি জানতে দাদার হার্টে ব্লক ছিল।মফস্বলে কার্ডিয়াক সাপোর্ট কতটুকু আছে? বাবা তো দাদাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু..।
-কিন্তু কী? বলো, আমি শুনছি!
-তুমি বাসাতে কোন ঝামেলা নিতে চাওনি। দাদা আসলে সাথে দাদী আসবেন, ফুফু আসবেন, এটাতেই ছিল তোমার আপত্তি। টাকা দিয়ে ঝামেলা মুক্ত হতে চেয়েছিলে, কারন টাকা ছাড়া তোমাদের আর কিছু নেই!
তেঁইশ বছরের নীল। নীল মেঘ মুক্তো আকাশের মত স্বচ্ছ জীবন প্রত্যাশা করে। বাবার অবৈধ আয়, আর মায়ের অসুস্থ লোক দেখানো প্রতিযোগিতা এসব নীল মানতে পারে না। নীলের শুধু একটাই প্রশ্ন, জীবন কেন শুদ্ধ হবে না? বেঁচে থাকা কেন নির্মল হবে না? এতো টাকা, এতো সম্পদ তবু বাবা-মা'র সম্পর্ক এতো মেকী। বাবা বোবার মত নিঃশব্দে জীবন কাটিয়ে যাচ্ছেন। মা বিভিন্ন পার্টি, সেমিনার, নারী অধিকার, কত কিছুর সাথে নিজেকে জড়িয়ে ভীষন ব্যস্ত জীবন পার করছেন। এ্যান্টি ডিপ্রেশনের ডোজ বেড়েই যাচ্ছে! কেন জীবন এমন হবে? আজ তো আমাদের বাসায় আমার দাদী আর বিধবা ফুফুর থাকার কথা। কারন আমার বাবা তো বাড়ীর বড় ছেলে। এ বাড়ির একরুম থেকে পান-সুপারীর গন্ধ, আরেক রুম থেকে মা আর ফুফুর হাসির শব্দ আসার কথা! কিন্তু কি নিস্তব্ধ প্রতিটি ঘর! দামী দামী আসবাব, বিভিন্ন দেশের হাজার রকমের শো- পিস, কী নেই এ বাড়িতে? নীল খুঁজে দেখে, এ বাড়ির কোথাও পিন পরিমান শান্তি নেই। নীল একটু শান্তি প্রত্যাশা করে।
রাতে খাবার টেবিলে নীলের দেখা হয় বাবার সাথে। বাবা নীলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন,
-নীল, তুমি নাকি নিয়মিত মত ক্লাশে যাচ্ছো না?
-আমি আর পড়ালেখা করবো না, বাবা।
-মানে? আমার একমাত্র সন্তান তুমি। পড়ালেখা শিখে মানুষ হতে চাও না?
-মানুষ হতে হলে পড়ালেখা করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। মানুষ তো সেই, যার মধ্যে বোধ, বিবেক, মনুষ্যত্ব থাকে।
-তুমি আসলে কী বলতে চাচ্ছো?
-বাবা, আমি মানুষ হতে চাই। লেখাপড়ার সার্টিফিকেট সম্বল করে অমেরুদন্ডী কোন প্রানী হয়ে বাঁচতে চাই না।
-শিক্ষিত সমাজ মানে তোমার কাছে অমেরুদন্ডী প্রানী? কে শিখিয়েছে তোমাকে এসব?
-আমার বিবেক।
-তোমার বিবেক তোমাকে আর কী শিখিয়েছে?
-মানুষের সংস্পর্শে থাকতে শিখিয়েছে, কুকুরের সংস্পর্শে নয়। কুকুর থাকবে মুক্ত স্বাধীন তার স্বজাতির সাথে। কুড়ি বাই আঠারো স্কয়ার ফিটে আটকে রাখবে কেন তাকে? আমি জোজোকে কাঁটাবনের একটা দোকান দিয়ে এসেছি। কাল সকালে মুরাদ চাচা ঐ ঘর ডেটল পানি দিয়ে সাফ করে ফেলবে। যদি কোনদিন ফিরে আসি আমি থাকবো জোজোর রুমে। আমার দাদী আর ফুফু থাকবেন আমার রুমে।
নীলের মা আঁতকে ওঠা স্বরে জানতে চান,
-যদি কোনদিন ফিরে আসি মানে? তুমি কোথায় যাবে?
-আমার শেকড়ের কাছে।
-নীল, আমি তোমার মা! তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো? তোমাকে একবেলা না দেখলেই তো আমি পাগল হয়ে যাই!
-বাঁচতে পারবে, মা। যেভাবে আমার দাদী বেঁচে আছেন!
নীলের বাবার দুটো চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, একটা মানুষ জন্ম দিতে পারার আনন্দে!
নীলের মা চাপা স্বরে কেঁদে বলেন,
-সেই কবে থেকে বলছি ছেলেটাকে একটা মানসিক ডাক্তারের কাছে নাও। ছেলেটা আমার বদলে যাচ্ছে!
-আমাকে কোন মানসিক ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন নেই, বরং তুমি আর বাবা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ভালো মানসিক ডাক্তার দেখাও। নিজের সাথে নিজে কথা বলো, আয়নায় নিজেকে না দেখে মনের আয়নায় নিজের বিবেককে দেখো, মা।
ভোর সাড়ে চারটা। ফজরের আযান ভেসে আসছে। ছোট একটা ব্যাগপ্যাক পিঠে নিয়ে খুব সন্তর্পনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, নীল নামের তেইশ বছরের এক যুবক তার শেকড়ের সন্ধানে। যেখানে ঘরের চালে বৃষ্টি ছন্দ তোলে। বারান্দায় একটা চৌকিতে দাদী হাতের কাছে পান-সুপারীর বাটা আগলে রাখেন। নিঃসন্তান, বিধোবা ছোট ফুফু গরম ভাতের উপর হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে জানতে চান, হাঁসের মাংস কেমন হয়েছে রে, বাপ?
এই জঞ্জাল ভরা, মেকী শহরে আর নয়। আমি নীল, আমি নীল আকাশ। ঐ সবুজের শেষ প্রান্তে আমার সীমানা! নির্দিষ্ট সীমানায় আমাকে আটকাবে কে?
(সমাপ্ত)
-কোথায় ছিলে নীল?
-একটু হাটতে বেরিয়েছিলাম।
-আমাকে বলে যাবে না?
-তুমি ঘুমাচ্ছিলে, তাই ডাকিনি।
-এদিকে তো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে!
-কী ঘটনা?
-জোজো কে পাওয়া যাচ্ছে না!
-এমনভাবে বলছো যেন বাবাকেই পাওয়া যাচ্ছে না!
-এ কী ধরনের কথা বলছো? তোমার কোন রি-এ্যাকশান হচ্ছেনা জোজোর জন্য?
-না, মা। এরচেয়ে অনেক বড় দুঃসংবাদ এই শহরের ঘরে ঘরে প্রতিদিন পৌছে যায়, সেখানে একটা কুকুর হারানো আমার কাছে তেমন কোন ব্যাপারই না!
-তুমি জোজো কে কুকুর বললে? তিন বছর ধরে ও আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারের মত হয়েছিল। কত দাম দিয়ে তোমার বাবা তোমার জন্য জোজোকে নিয়ে এসেছিলেন, তোমার যাতে বাসায় নিঃসঙ্গ না লাগে।
-মা, যতই তুমি ফ্যামিলি মেম্বার মনে করো, জোজো তো একটা কুকুর এটা তোমাকে মানতে হবে। আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হিসাবে জোজোকে বাবা কিনে আনেননি।তোমাদের সোসাইটিতে কুকুর, বিড়াল না থাকলে ভাব আসে না, তাই এনেছিলেন।
-আমাদের সোসাইটি মানে?
-তোমাদের সোসাইটি মানে এই যে, পঁচিশ'শো স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট, ঝকঝকে তকতকে মেঝেতে মুখ দেখা যায়, চার চারটি বেডরুম কিন্তু কোন গেস্টরুম নেই। একটা রুম তোমাদের, একটাতে আমি আর বাকি দুটো?
-বাকি দুটোর একটাতে আমি জীম করি, আরেকটা জোজোর জন্য!
-হাসালে, মা! আমার বাবার ফ্ল্যাটে কুকুরের জন্য একটা ঘর আছে কিন্তু মানুষের জন্য নেই!
-এরকম বড় বড় কথা সাহিত্যে মানায়, তোমার মত তেঁইশ বছরের ছেলের মুখে না।
-এ জন্যই তো কথা কম বলি, বাবার মত। বাবা যেমন বোবা হয়ে নিজের ঘরে পরবাসী জীবন পার করছেন!
-আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন, নীল?
-কারন, তুমি আমার মা। একজন সন্তান তার মায়ের কাছে জীবনের অনেক কথা বলে যায়।
-এখন এসব ছাড়ো। নাস্তা করে ক্লাশে যাও। গত দু'দিন তুমি ক্লাশে যাওনি!
-আমি নাস্তা করে এসেছি।
-কোথায়?
-রাস্তার পাশে ফুটপথে, যেখানে খালারা গরম গরম রুটি আর ডিম ভাজি করে দেয়, সাথে সবজি দিয়ে ডাল। একেবারে অমৃতের মত লাগে!
-ঐ সব জায়গায় তো রিক্সাওয়ালারা খায়! তুমি তাদের সাথে খেয়ে এলে?
-আমি কিছু মানুষের সাথে খেয়ে এসেছি। যারা শরীরের রক্ত পানি করে দুটো সৎ উপার্জন করে। ব্রাউন পেপারের খামে করে যাদের ঘরে লাখ লাখ টাকা চলে আসে না!
-তুমি তো পাগল হয়ে গেছো, নীল!
-আরো আগেই হওয়া উচিৎ ছিল! যেদিন আমার দাদা বিনা চিকিৎসায় মফস্বলের হাসপাতালে মারা গেলেন।
-মানুষের জীবন, মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাছাড়া তোমার ছোটচাচার হাতে তোমার বাবা দেড় লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন, তোমার দাদার চিকিৎসার জন্য।
-মা, তুমি জানতে দাদার হার্টে ব্লক ছিল।মফস্বলে কার্ডিয়াক সাপোর্ট কতটুকু আছে? বাবা তো দাদাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু..।
-কিন্তু কী? বলো, আমি শুনছি!
-তুমি বাসাতে কোন ঝামেলা নিতে চাওনি। দাদা আসলে সাথে দাদী আসবেন, ফুফু আসবেন, এটাতেই ছিল তোমার আপত্তি। টাকা দিয়ে ঝামেলা মুক্ত হতে চেয়েছিলে, কারন টাকা ছাড়া তোমাদের আর কিছু নেই!
তেঁইশ বছরের নীল। নীল মেঘ মুক্তো আকাশের মত স্বচ্ছ জীবন প্রত্যাশা করে। বাবার অবৈধ আয়, আর মায়ের অসুস্থ লোক দেখানো প্রতিযোগিতা এসব নীল মানতে পারে না। নীলের শুধু একটাই প্রশ্ন, জীবন কেন শুদ্ধ হবে না? বেঁচে থাকা কেন নির্মল হবে না? এতো টাকা, এতো সম্পদ তবু বাবা-মা'র সম্পর্ক এতো মেকী। বাবা বোবার মত নিঃশব্দে জীবন কাটিয়ে যাচ্ছেন। মা বিভিন্ন পার্টি, সেমিনার, নারী অধিকার, কত কিছুর সাথে নিজেকে জড়িয়ে ভীষন ব্যস্ত জীবন পার করছেন। এ্যান্টি ডিপ্রেশনের ডোজ বেড়েই যাচ্ছে! কেন জীবন এমন হবে? আজ তো আমাদের বাসায় আমার দাদী আর বিধবা ফুফুর থাকার কথা। কারন আমার বাবা তো বাড়ীর বড় ছেলে। এ বাড়ির একরুম থেকে পান-সুপারীর গন্ধ, আরেক রুম থেকে মা আর ফুফুর হাসির শব্দ আসার কথা! কিন্তু কি নিস্তব্ধ প্রতিটি ঘর! দামী দামী আসবাব, বিভিন্ন দেশের হাজার রকমের শো- পিস, কী নেই এ বাড়িতে? নীল খুঁজে দেখে, এ বাড়ির কোথাও পিন পরিমান শান্তি নেই। নীল একটু শান্তি প্রত্যাশা করে।
রাতে খাবার টেবিলে নীলের দেখা হয় বাবার সাথে। বাবা নীলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন,
-নীল, তুমি নাকি নিয়মিত মত ক্লাশে যাচ্ছো না?
-আমি আর পড়ালেখা করবো না, বাবা।
-মানে? আমার একমাত্র সন্তান তুমি। পড়ালেখা শিখে মানুষ হতে চাও না?
-মানুষ হতে হলে পড়ালেখা করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। মানুষ তো সেই, যার মধ্যে বোধ, বিবেক, মনুষ্যত্ব থাকে।
-তুমি আসলে কী বলতে চাচ্ছো?
-বাবা, আমি মানুষ হতে চাই। লেখাপড়ার সার্টিফিকেট সম্বল করে অমেরুদন্ডী কোন প্রানী হয়ে বাঁচতে চাই না।
-শিক্ষিত সমাজ মানে তোমার কাছে অমেরুদন্ডী প্রানী? কে শিখিয়েছে তোমাকে এসব?
-আমার বিবেক।
-তোমার বিবেক তোমাকে আর কী শিখিয়েছে?
-মানুষের সংস্পর্শে থাকতে শিখিয়েছে, কুকুরের সংস্পর্শে নয়। কুকুর থাকবে মুক্ত স্বাধীন তার স্বজাতির সাথে। কুড়ি বাই আঠারো স্কয়ার ফিটে আটকে রাখবে কেন তাকে? আমি জোজোকে কাঁটাবনের একটা দোকান দিয়ে এসেছি। কাল সকালে মুরাদ চাচা ঐ ঘর ডেটল পানি দিয়ে সাফ করে ফেলবে। যদি কোনদিন ফিরে আসি আমি থাকবো জোজোর রুমে। আমার দাদী আর ফুফু থাকবেন আমার রুমে।
নীলের মা আঁতকে ওঠা স্বরে জানতে চান,
-যদি কোনদিন ফিরে আসি মানে? তুমি কোথায় যাবে?
-আমার শেকড়ের কাছে।
-নীল, আমি তোমার মা! তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো? তোমাকে একবেলা না দেখলেই তো আমি পাগল হয়ে যাই!
-বাঁচতে পারবে, মা। যেভাবে আমার দাদী বেঁচে আছেন!
নীলের বাবার দুটো চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, একটা মানুষ জন্ম দিতে পারার আনন্দে!
নীলের মা চাপা স্বরে কেঁদে বলেন,
-সেই কবে থেকে বলছি ছেলেটাকে একটা মানসিক ডাক্তারের কাছে নাও। ছেলেটা আমার বদলে যাচ্ছে!
-আমাকে কোন মানসিক ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন নেই, বরং তুমি আর বাবা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ভালো মানসিক ডাক্তার দেখাও। নিজের সাথে নিজে কথা বলো, আয়নায় নিজেকে না দেখে মনের আয়নায় নিজের বিবেককে দেখো, মা।
ভোর সাড়ে চারটা। ফজরের আযান ভেসে আসছে। ছোট একটা ব্যাগপ্যাক পিঠে নিয়ে খুব সন্তর্পনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, নীল নামের তেইশ বছরের এক যুবক তার শেকড়ের সন্ধানে। যেখানে ঘরের চালে বৃষ্টি ছন্দ তোলে। বারান্দায় একটা চৌকিতে দাদী হাতের কাছে পান-সুপারীর বাটা আগলে রাখেন। নিঃসন্তান, বিধোবা ছোট ফুফু গরম ভাতের উপর হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে জানতে চান, হাঁসের মাংস কেমন হয়েছে রে, বাপ?
এই জঞ্জাল ভরা, মেকী শহরে আর নয়। আমি নীল, আমি নীল আকাশ। ঐ সবুজের শেষ প্রান্তে আমার সীমানা! নির্দিষ্ট সীমানায় আমাকে আটকাবে কে?
(সমাপ্ত)