ঘড়িতে নয়টা বেজে গেছে এখনও কাজের মেয়েটা আসলো না! জাহিদ অফিসে চলে গেছে। ছোট মেয়ে মিলাও কলেজে গেছে। নুরী এখনও কাজে আসলো না কেনো? আজকে কি কাজে আসবে না?
কলিংবেলের শব্দ হতে দরজা খুলতেই নুরী আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না , আম্মা গো পরির আব্বা কাল রাতে মদ খায়ে বাড়ি ফিরে আমারে খুব মারছে সারা গায়ে বেদনা। আপনারে আমি দেখাই কতো মারছে।
নুরী চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আঘাতের জায়গা গুলো দেখাচ্ছে হঠাৎ আমার কপালে ওর নজর আটকে গেলো, ও আম্মা আপনার কপালে কি হইছে? টেপ মারা কেন?
থতমত খেয়ে বললাম ও কিছু না গত রাতে লোডশেডিং এর সময় অন্ধকারে দেয়ালে বাড়ি লেগেছে তুই অল্প কাজ করে বাড়ি চলে যা।
ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম।নুরী কে সত্যি কথা বলতে পারিনি। বলতে পারিনি নুরী তোর বর যেমন মদ খেয়ে তোকে পিটিয়েছে আমার স্বামী ও তেমনি ড্রিঙ্ক করে এসে আমাকে মেরে কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে। তোর আর আমার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই রে নুরী, শুধু পার্থক্য তুই সবাইকে বলতে পারিস আর আমি মানসম্মানের ভয়ে কাউকে বলতে পারি না।
প্রথম যেদিন জাহিদ আমার গায়ে হাত তুলেছিল তখন দোলার বয়স চার আর মিলার বয়স দুই বছর। জাহিদ অনেক রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে। মদ খেয়েছো কেন জিগ্যেস করতেই কষে আমাকে চড় মেরে বলে, আমার টাকায় আমি মদ খেয়েছি কারোর বাপের টাকায় খায়নি যে কৈফিয়ত দিতে হবে। আমি এভাবেই চলবো কারোর ইচ্ছা হলে থাকতে পারে আবার ইচ্ছা করলে চলে যেতে পারে আমার কোন আপত্তি নেই।
সে রাতে আমি ঠাঁই বসেছিলাম একফোঁটা ঘুমাতে পারিনি। সকাল হতেই জাহিদ কে ঘুমন্ত অবস্হায় রেখে দুই মেয়ের হাত ধরে বাপের বাড়ি এসে মা'কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, মা আমি আর ঐ সংসারে ফিরে যাবো না দেখো তোমাদের জামাই আমাকে মেরেছে।
মা পরম মমতায় আমার আঘাতের উপরে হাত বুলিয়ে বললো, মা রে অনেক সময় আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে হয় পরিবেশ পরিস্হিতি আমাদের করতে বাধ্য করে। তোর বাবা নেই ভাই নেই অবিবাহিত ছোট বোন তুই যদি এভাবে একেবারে চলে আসিস তাহলে সবাইকে যে না খেয়ে মরতে হবে।ঘর ভাড়া দিয়ে যে সামান্য টাকা পাই তা দিয়ে দুইজনের সংসার কোনরকমে চলে কিন্তু পাঁচজনের সংসার তো চলবে না রে মা। তোর ছোট বোনের এখনও বিয়ে হয়নি সমাজের লোকজন যখন জানবে তুই স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে এসেছিস তখন সহজে কণার বিয়ে হবে? লোকজন বলবে বড়ো বোন স্বামীর ঘর করতে পারিনি ছোট বোনের দিয়ে আর কতটুকু আশা করা যায়? তাছাড়া তোর মেয়েদের ভবিষ্যত কি? আত্মীয় স্বজনরাই বা কি বলবে? তুই একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ মিনা।
সাথে সাথে দুই মেয়ের হাত ধরে আবার জাহিদের সংসারে ফিরে এসেছি। মা তো ঠিক কথাই বলেছে।সত্যিই তো আমার কোন লেখাপড়ার জোর নেই যে স্বাবলম্বী হয়ে নিজে মেয়ে দুটোর দায়িত্ব নেবো, আমার কারণে কণার ভালো জায়গায় বিয়ে হবে না এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না। নিজের আত্নসম্মান, আত্নমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে আমি জাহিদের সংসার করছি। প্রায় রাতেই জাহিদ ছাইপাশ গিলে এসে আমার গায়ে হাত তোলে। কাউকে কিচ্ছু জানতে দিই না, দোলা মিলার কাছ থেকে ওর বাবার এই রূপটা আড়াল করে রাখি না হলে মেয়েরা বাবা কে অসম্মান করবে।
মার খেয়ে কাঁদি আর মনে মনে ভাবি আমার বাবা মা যে ভুল করেছে আমি সে ভুল করবো না। দোলা, মিলাকে ভালোভাবে লেখাপড়া শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে তারপর বিয়ের চিন্তা ভাবনা করবো।
দোলা মিলা বড় হবার পর যতই আমি জাহিদের কুৎসিত চেহারা আড়াল করি না কেন ওরা ঠিক বুঝতে পারে। একদিন দুই বোন রাত জেগে পড়ছে জাহিদ বাড়ি ফিরেছে ড্রিঙ্ক করে।আমি আস্তে করে বললাম মেয়েরা বড়ো হয়েছে এখন অন্তত এইসব খাওয়া বন্ধ করো। সাথে সাথে চিৎকার চেচাঁমেচি করে আমার গালে কষে চড় মারলো।একটাও কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি মুখ কালো করে দুই মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদের হাত ধরে ওদের ঘরে আসার সাথে সাথে দুই মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, মার খেয়ে খেয়ে আমি কাঁদতে ভুলে গেছি আজ অনেক দিন পর মেয়েদের জড়িয়ে ধরে আমিও খুব কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, মা গো আমি সবসময় দোয়া করি তোমারা যেন শ্বশুরবাড়ি আত্নসম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারো।আত্নসম্মান রক্ষা করতে হলে তোমাদের কে স্বাবলম্বী হতে হবে, মন দিয়ে লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়েশাদীর চিন্তা করতে হবে।আত্নমর্যাদাহীন জীবন বড়ো কষ্টের গো মা।
দোলা যখন অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ে তখন জাহিদ তার বন্ধুর ছেলের সাথে দোলার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল কিন্তু জাহিদ মেয়ের সাথে পারিনি । দোলার একই কথা পড়া শেষ করে চাকরি করবো তারপর বিয়ে।পড়া শেষে দোলা ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পর অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হলো,জামাই খুব ভাল অনেক বড়ো ব্যাবসা করে।তিন বছরের মেয়ে নিয়ে দোলা খুব সুখে আছে।মিলাও পড়াশোনা শেষ করে একটা কলেজে শিক্ষকতা করে।আমার জীবনের একটাই স্বার্থকতা মেয়ে দু'টোকেই স্বাবলম্বী করতে পেরেছি।
কলিং বেলের শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম,এ সময় কে এলো? নুরী দেখতো কে এসেছে?
আম্মা গো দেহেন বড়ো আপা আসছে।
একটু অবাক হলাম ব্যাংকে না যেয়ে এই অসময়ে এখানে! তাড়াতাড়ি বিছানার থেকে নামলাম দোলা তুলতুলের হাত ধরে আমার ঘরে চলে এসেছে।
মা কেমন আছো বলেই দোলা আমার কপালে দিকে তাকিয়ে আতঁকে উঠলো! কি হয়েছে তোমার কপালে? নিশ্চয়ই আব্বা গতকাল ড্রিঙ্ক করেছিল?আব্বার স্বভাব আর পাল্টাবে না এখন থেকে আমিও দেখবো আব্বা কিভাবে তোমার গায়ে হাত তোলে?
আমার কথা বাদ দে সোনা তোর কথা বল।
মা তুমিই আমাদের শিখিয়েছিলে আত্নসম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচতে তাই আমি স্বপনের সংসার ছেড়ে চলে এসেছি। স্বপনের সাথে ও'র পিএ এর অবৈধ সম্পর্ক আছে আমি প্রমাণ পেয়েছি আজ তিনদিন স্বপন সিংগাপুর বিজনেস ট্যুুরে গেছে পি এ কে সাথে নিয়ে। এতবড় অপমান সহ্য করে আত্নসম্মান হারিয়ে স্বপনের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না , খুব তাড়াতাড়ি স্বপন কে ডিভোর্স দেবো।তোমাদের কোন রকম অসুবিধায় ফেলবো না মা , কয়েকটা দিন তোমাদের সাথে থাকবো তারপর আলাদা বাসা ভাড়া করে চলে যাবো।
মা গো এই বাড়িটা তোদের তোর যেখানে ভালো লাগবে সেখানেই থাকবি।
আমি এখানে থাকলে মিলার বিয়ের সমস্যা হবে মা, আর আত্মীয় স্বজনরা অনেক কিছু মনে করবে।
মিলার বিয়ে নিয়ে কোন সমস্যা হবে না রে সোনা , মিলা স্বাবলম্বী। কে কি মনে করলো সেটা বড় কথা না জীবনটা তোর তুই মাথা উঁচু করে বাঁচবি।অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করবি না।
সত্যি বলছো মা! আমি তোমাদের কাছে থাকলে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না!
দোলা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আমার চোখ বেয়ে দু'ফোটা অশ্রু ঝরে পড়লো,না এ কোন কষ্টের অশ্রু না, আনন্দের অশ্রু আমি যা পারিনি আমার মেয়ে সেটা পেরেছে।আমি সারাজীবন আত্নসম্মান বিসর্জন দিয়ে অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে সংসার করেছি শুধুমাত্র স্বাবলম্বী ছিলাম না এই জন্য। কিন্তু দোলার মাথা নত করতে হয় নি। কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে, দোলার মাধ্যমে আমিই যেন জাহিদ স্বপনদের মতো পুরুষমানষুদের গালে চড় মারতে পেরেছি আজ আমার কষ্ট সার্থক।
(সমাপ্ত)
কলিংবেলের শব্দ হতে দরজা খুলতেই নুরী আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না , আম্মা গো পরির আব্বা কাল রাতে মদ খায়ে বাড়ি ফিরে আমারে খুব মারছে সারা গায়ে বেদনা। আপনারে আমি দেখাই কতো মারছে।
নুরী চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আঘাতের জায়গা গুলো দেখাচ্ছে হঠাৎ আমার কপালে ওর নজর আটকে গেলো, ও আম্মা আপনার কপালে কি হইছে? টেপ মারা কেন?
থতমত খেয়ে বললাম ও কিছু না গত রাতে লোডশেডিং এর সময় অন্ধকারে দেয়ালে বাড়ি লেগেছে তুই অল্প কাজ করে বাড়ি চলে যা।
ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম।নুরী কে সত্যি কথা বলতে পারিনি। বলতে পারিনি নুরী তোর বর যেমন মদ খেয়ে তোকে পিটিয়েছে আমার স্বামী ও তেমনি ড্রিঙ্ক করে এসে আমাকে মেরে কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে। তোর আর আমার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই রে নুরী, শুধু পার্থক্য তুই সবাইকে বলতে পারিস আর আমি মানসম্মানের ভয়ে কাউকে বলতে পারি না।
প্রথম যেদিন জাহিদ আমার গায়ে হাত তুলেছিল তখন দোলার বয়স চার আর মিলার বয়স দুই বছর। জাহিদ অনেক রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে। মদ খেয়েছো কেন জিগ্যেস করতেই কষে আমাকে চড় মেরে বলে, আমার টাকায় আমি মদ খেয়েছি কারোর বাপের টাকায় খায়নি যে কৈফিয়ত দিতে হবে। আমি এভাবেই চলবো কারোর ইচ্ছা হলে থাকতে পারে আবার ইচ্ছা করলে চলে যেতে পারে আমার কোন আপত্তি নেই।
সে রাতে আমি ঠাঁই বসেছিলাম একফোঁটা ঘুমাতে পারিনি। সকাল হতেই জাহিদ কে ঘুমন্ত অবস্হায় রেখে দুই মেয়ের হাত ধরে বাপের বাড়ি এসে মা'কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, মা আমি আর ঐ সংসারে ফিরে যাবো না দেখো তোমাদের জামাই আমাকে মেরেছে।
মা পরম মমতায় আমার আঘাতের উপরে হাত বুলিয়ে বললো, মা রে অনেক সময় আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে হয় পরিবেশ পরিস্হিতি আমাদের করতে বাধ্য করে। তোর বাবা নেই ভাই নেই অবিবাহিত ছোট বোন তুই যদি এভাবে একেবারে চলে আসিস তাহলে সবাইকে যে না খেয়ে মরতে হবে।ঘর ভাড়া দিয়ে যে সামান্য টাকা পাই তা দিয়ে দুইজনের সংসার কোনরকমে চলে কিন্তু পাঁচজনের সংসার তো চলবে না রে মা। তোর ছোট বোনের এখনও বিয়ে হয়নি সমাজের লোকজন যখন জানবে তুই স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে এসেছিস তখন সহজে কণার বিয়ে হবে? লোকজন বলবে বড়ো বোন স্বামীর ঘর করতে পারিনি ছোট বোনের দিয়ে আর কতটুকু আশা করা যায়? তাছাড়া তোর মেয়েদের ভবিষ্যত কি? আত্মীয় স্বজনরাই বা কি বলবে? তুই একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ মিনা।
সাথে সাথে দুই মেয়ের হাত ধরে আবার জাহিদের সংসারে ফিরে এসেছি। মা তো ঠিক কথাই বলেছে।সত্যিই তো আমার কোন লেখাপড়ার জোর নেই যে স্বাবলম্বী হয়ে নিজে মেয়ে দুটোর দায়িত্ব নেবো, আমার কারণে কণার ভালো জায়গায় বিয়ে হবে না এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না। নিজের আত্নসম্মান, আত্নমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে আমি জাহিদের সংসার করছি। প্রায় রাতেই জাহিদ ছাইপাশ গিলে এসে আমার গায়ে হাত তোলে। কাউকে কিচ্ছু জানতে দিই না, দোলা মিলার কাছ থেকে ওর বাবার এই রূপটা আড়াল করে রাখি না হলে মেয়েরা বাবা কে অসম্মান করবে।
মার খেয়ে কাঁদি আর মনে মনে ভাবি আমার বাবা মা যে ভুল করেছে আমি সে ভুল করবো না। দোলা, মিলাকে ভালোভাবে লেখাপড়া শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে তারপর বিয়ের চিন্তা ভাবনা করবো।
দোলা মিলা বড় হবার পর যতই আমি জাহিদের কুৎসিত চেহারা আড়াল করি না কেন ওরা ঠিক বুঝতে পারে। একদিন দুই বোন রাত জেগে পড়ছে জাহিদ বাড়ি ফিরেছে ড্রিঙ্ক করে।আমি আস্তে করে বললাম মেয়েরা বড়ো হয়েছে এখন অন্তত এইসব খাওয়া বন্ধ করো। সাথে সাথে চিৎকার চেচাঁমেচি করে আমার গালে কষে চড় মারলো।একটাও কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি মুখ কালো করে দুই মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদের হাত ধরে ওদের ঘরে আসার সাথে সাথে দুই মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, মার খেয়ে খেয়ে আমি কাঁদতে ভুলে গেছি আজ অনেক দিন পর মেয়েদের জড়িয়ে ধরে আমিও খুব কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, মা গো আমি সবসময় দোয়া করি তোমারা যেন শ্বশুরবাড়ি আত্নসম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারো।আত্নসম্মান রক্ষা করতে হলে তোমাদের কে স্বাবলম্বী হতে হবে, মন দিয়ে লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়েশাদীর চিন্তা করতে হবে।আত্নমর্যাদাহীন জীবন বড়ো কষ্টের গো মা।
দোলা যখন অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ে তখন জাহিদ তার বন্ধুর ছেলের সাথে দোলার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল কিন্তু জাহিদ মেয়ের সাথে পারিনি । দোলার একই কথা পড়া শেষ করে চাকরি করবো তারপর বিয়ে।পড়া শেষে দোলা ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পর অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হলো,জামাই খুব ভাল অনেক বড়ো ব্যাবসা করে।তিন বছরের মেয়ে নিয়ে দোলা খুব সুখে আছে।মিলাও পড়াশোনা শেষ করে একটা কলেজে শিক্ষকতা করে।আমার জীবনের একটাই স্বার্থকতা মেয়ে দু'টোকেই স্বাবলম্বী করতে পেরেছি।
কলিং বেলের শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম,এ সময় কে এলো? নুরী দেখতো কে এসেছে?
আম্মা গো দেহেন বড়ো আপা আসছে।
একটু অবাক হলাম ব্যাংকে না যেয়ে এই অসময়ে এখানে! তাড়াতাড়ি বিছানার থেকে নামলাম দোলা তুলতুলের হাত ধরে আমার ঘরে চলে এসেছে।
মা কেমন আছো বলেই দোলা আমার কপালে দিকে তাকিয়ে আতঁকে উঠলো! কি হয়েছে তোমার কপালে? নিশ্চয়ই আব্বা গতকাল ড্রিঙ্ক করেছিল?আব্বার স্বভাব আর পাল্টাবে না এখন থেকে আমিও দেখবো আব্বা কিভাবে তোমার গায়ে হাত তোলে?
আমার কথা বাদ দে সোনা তোর কথা বল।
মা তুমিই আমাদের শিখিয়েছিলে আত্নসম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচতে তাই আমি স্বপনের সংসার ছেড়ে চলে এসেছি। স্বপনের সাথে ও'র পিএ এর অবৈধ সম্পর্ক আছে আমি প্রমাণ পেয়েছি আজ তিনদিন স্বপন সিংগাপুর বিজনেস ট্যুুরে গেছে পি এ কে সাথে নিয়ে। এতবড় অপমান সহ্য করে আত্নসম্মান হারিয়ে স্বপনের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না , খুব তাড়াতাড়ি স্বপন কে ডিভোর্স দেবো।তোমাদের কোন রকম অসুবিধায় ফেলবো না মা , কয়েকটা দিন তোমাদের সাথে থাকবো তারপর আলাদা বাসা ভাড়া করে চলে যাবো।
মা গো এই বাড়িটা তোদের তোর যেখানে ভালো লাগবে সেখানেই থাকবি।
আমি এখানে থাকলে মিলার বিয়ের সমস্যা হবে মা, আর আত্মীয় স্বজনরা অনেক কিছু মনে করবে।
মিলার বিয়ে নিয়ে কোন সমস্যা হবে না রে সোনা , মিলা স্বাবলম্বী। কে কি মনে করলো সেটা বড় কথা না জীবনটা তোর তুই মাথা উঁচু করে বাঁচবি।অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করবি না।
সত্যি বলছো মা! আমি তোমাদের কাছে থাকলে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না!
দোলা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আমার চোখ বেয়ে দু'ফোটা অশ্রু ঝরে পড়লো,না এ কোন কষ্টের অশ্রু না, আনন্দের অশ্রু আমি যা পারিনি আমার মেয়ে সেটা পেরেছে।আমি সারাজীবন আত্নসম্মান বিসর্জন দিয়ে অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে সংসার করেছি শুধুমাত্র স্বাবলম্বী ছিলাম না এই জন্য। কিন্তু দোলার মাথা নত করতে হয় নি। কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে, দোলার মাধ্যমে আমিই যেন জাহিদ স্বপনদের মতো পুরুষমানষুদের গালে চড় মারতে পেরেছি আজ আমার কষ্ট সার্থক।
(সমাপ্ত)