What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made এক টুকরো জীবন (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
দ্রুত নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছিলো প্রীতি। শাফিন কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে। এর আগে আয়রাকে খাইয়ে দিতে হবে।আগামী দুদিন মেয়ের খাওয়া দাওয়ার কি অবস্থা হবে কে জানে? শাফিন ধৈর্য ধরে আয়রাকে খাওয়াতে পারেনা।দেখা যাবে দুইদিন ধরে শুধু চকলেট আর চিপস খাইয়ে রেখেছে মেয়েকে। আয়রার এই খাওয়ার অনিয়ম হবে ভেবেই প্রীতির মধ্যে অনেখানি দ্বিধা কাজ করছিলো। মন সায় দিচ্ছিলো না এভাবে মেয়েকে রেখে যেতে। অনেক কষ্টে মনকে শক্ত করেছে। তৃষার সাথে বহু বছর দেখা হয়না। অফিসের কাজে প্রায়ই সিডনি আসে তৃষা। প্রতিবার দেখা করার প্ল্যান বানানো সত্ত্বেও সংসারের জালে আটকে পড়া প্রীতি সময় বের করতে পারেনা। সিডনি থেকে বের অনেকটা দূরের একটা গ্রামে থাকে সে...চাইলেই ফট করে শহরে পৌঁছে যাওয়া যায়না।
অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। কয়দিন আগেই বিশ্রী গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল। এখন আবার ফট করে এমন ঠান্ডা পড়েছে যে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এইটুকুর জন্যে এত মোটা আর ভারী ভারী কাপড় বইতে ভাল লাগে না। কই ভেবেছিলো একটা ব্যাকপ্যাকে সব হয়ে যাবে।তার বদলে ছোটখাটো একটা লাগেজ টানতে হবে।

আয়রার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে প্রীতি শেষ বারের মতো আরো একবার জিজ্ঞেস করলো,তোমাকে যা যা বলেছি মনে আছে তো মামণি ? আয়রা ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললো। প্রীতি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে একটু আদর করে বললো মাম্মি পরশু রাতেই চলে আসবো। তুমি একদম লক্ষী হয়ে থাকবে।যা যা বলেছি সব মনে করে করলে আসার সময় তোমার জন্য খুব সুন্দর একটা গিফট নিয়ে আসবো। আয়রা আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো কি গিফট মাম্মি? প্রীতি মুচকি হেসে বললো, সেটা সারপ্রাইজ। বলে দিলে মজা থাকবেনা তো....

শাফিন অফিস থেকে ফিরে বাইরের কাপড়েই খেয়ে নিলো। প্রীতিকে বললো তোমাকে একেবারে স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে এসে ফ্রেশ হবো। বারবার কাপড় বদলাতে ভাল লাগেনা। প্রীতি হতাশ ভঙ্গিতে উত্তর দিলো এতো অলস তুমি, তোমার কাছে এজন্যই মেয়েকে বেশিক্ষন রাখতে সাহস পাইনা। নিজে যেমন ল্যাদা ব্যাদা হয়ে থাকো, আমার মেয়েকেও তো তুমি এভাবেই রাখবে মনে হচ্ছে। আল্লাহর দোহাই লাগে একটু খেয়াল করে ওর দিকে তাকিয়ো। হাত মুখ ঠিকঠাক মতো ধুয়ে দিয়ো। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় মনে করে ওর জামা চেঞ্জ করে দিয়ো। ওর ক্লিপগুলো বের করে দিয়েছি। ওগুলো লাগিয়ে দিয়ো, না হলে চোখের উপর চুল পড়ে মুখ অর্ধেক ঢেকে থাকবে । আর কাইন্ডলি দিনে একটার বেশি চকলেট দিবে না। অন্য খাবার দুই কামড় খেয়ে রেখে দিলে তুমি আবার নিশ্চিত হয়ে থেকে যেয়ো না। গল্প বললে ও পুরাটা খেয়ে নেয়। ওকে বলবে আয়রা তুমি সবটা খাও তাহলে আমি স্টোরি শোনাবো তোমাকে। আর বাথরুমে ওকে একা যেতে বললে ও বাথরুম পেটে চেপে সারাদিন বসে থাকবে, তবু যাবে না। একা খুব ভয় পায়। তুমি ওকে বাথরুমে বসিয়ে দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকবে। বুঝেছো?

শাফিন মোবাইল টিপছিল,সেখান থেকে মুখ না তুলেই বললো ''হু'', সব বুঝেছি। এই নিয়ে এই কথাগুলি গত ১০ দিন ধরে দশ হাজারবার বলেছো। মুখস্ত হয়ে গেছে। তোমার মেয়ে চার মাসের শিশু না, তার বয়স এখন চার বছর।তুমি এতো তুচ্ছ সব ব্যাপারে অকারণে টেনশন করোনা তো...দুইদিনের জন্য যাচ্ছ, টেনশন মুক্ত হয়ে যাও।

প্রীতিকে স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে বাবা মেয়ে অনেক রাত অব্দি টিভি দেখলো। ফ্রাইডে নাইট। কাল পরশু দুদিন বন্ধ। একটু রাত জাগা যেতেই পারে। তার উপর প্রীতি নেই, কাজেই স্বাধীনতা আরো বেড়েছে। রাতে মেয়েকে শুইয়ে দিয়ে প্রীতি বেশ অনেক্ষন আয়রার মাথার কাছে ওর হাত ধরে বসে থাকে। গভীর ঘুমে যখন আয়রার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, তখন সে আস্তে করে সরে আসে। আজ শাফিন মেয়ের হাত ধরে বসেছে। বেশ কিছুক্ষন যাওয়ার পর শাফিন দেখলো আয়রা তখনো তাকিয়ে আছে।সে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে মামণি? ঘুম আসছেনা? আয়রা ফিসফিস করে উত্তর দিলো, মাম্মির কথা মনে পড়ছে। মাম্মি কেন আমাদের ফেলে বেড়াতে গেলো? শাফিন কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো। তারপর বললো তুমি যখন আরো ছোট ছিলে ,তখন তোমাকে বেশিক্ষণের জন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া যেতোনা। খুব ক্র্যাঙ্কি হয়ে যেতে তুমি।লং ড্রাইভে তুমি সিক ফিল করতে । তখন সারাক্ষন তোমার মাম্মি তোমার সাথে বাসায় থাকতো। সেইসময় আমি আমার বন্ধুদের সাথে অনেক বেড়িয়েছি।আমরা বন্ধুরা মিলে কার রেসিং দেখতে গেছি, ফুটবল ম্যাচ দেখতে গেছি, এমনকি অফিসের পার্টি গুলোতেও একা গেছি,কলিগদের সাথে এনজয় করেছি। কিন্তু তোমার মাম্মি তুমি হওয়ার পর থেকে একা একা কোথাও যায়নি। সবসময় তোমার সাথে থেকেছে। তুমি তো এখন একটা বিগ গার্ল হয়ে গেছো মা।যেসব বেবিরা কথা বলতে শিখেনি, হাটতে শিখেনি , স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি তাদের কাছে তাদের মাম্মীদের থাকতে হয়. কারণ ওরা নিজেরা কিছু পারেনা। তুমি তো ওদের থেকে বড়। নিজে নিজে গেমস খেলতে পারো, ড্র্ইং করতে পারো ,আরো কত কিছু পারো।এখন কি তোমার মাম্মির একটু ফ্রি টাইম এনজয় করা উচিত না? মাম্মির কি ইচ্ছা করেনা নিজের মতো একটু আনন্দ করতে? মাম্মির বন্ধুদের সাথে একটু ফান টাইম কাটাতে? তুমি যখন আরো বড় হবে তখন তোমার বন্ধুদের সাথে তুমি বেড়াবে , পিকনিক করবে, কত মজা করবে। তখন তোমার সাথে আমরা যাব না, তুমিও আমাদের নিতে চাইবে না। ওটা তোমার নিজের স্পেস হবে। সেরকমই মাম্মি ড্যাডির লাইফেও নিজের নিজের স্পেস আছে....

মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো আয়রা। হঠাৎ উত্তজিত হয়ে উঠে বসলো। তরপর বললো, আমার এরকম ফ্রেন্ড হবে? শাফিন বললো হবে তো... সবার হয়.... সবার লাইফে টাইম কয়েকটা পার্ট এ ভাগ করা থাকে। ফ্যামিলি টাইম, অফিস বা ওয়ার্ক টাইম, ফ্রেন্ডস টাইম। আর সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট হলো সেলফ টাইম। নিজের জন্য কিছু সময়।এটা খুব দরকার। আমাদের সব রেস্পনসিলিবিটির বাইরে নিজের জন্য আলাদা করে একটু টাইম রাখা। নিজেকে খুশির রাখার জন্য ট্রাই করা।তুমি যেমন পেইন্ট করো, ওটা তোমার নিজের টাইম। কারণ তুমি পেইন্টিং খুব লাইক করো।ঠিক সেরকম আমাদেরও একটা সময় লাগে যেটা আমরা লাইক করি সেটা করার জন্য। মাম্মি তো অনেকদিন সেই সময়টা পায়নি, তাই এবার আমি বলেছি আয়রা আর আমি দুইদিন একসাথে থাকবো, আর তুমি গিয়ে তোমার বন্ধুর সাথে এনজয় করে এসো।

আয়রা আবার শুয়ে পড়তে পড়তে জানতে চাইলো তুমি না বলো মাম্মি আর তুমি বেস্ট ফ্রেন্ড। তাহলে তোমাকে রেখে মাম্মি অন্য ফ্রেন্ড এর সাথে এনজয় করলে তোমার স্যাড লাগবে না? শাফিন মৃদু হেসে উত্তর দিলো না , তা কেন লাগবে? আমি আর তোমার মাম্মি লাইফ পার্টনার, বেস্টেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু আমাদের স্কুল কলেজ বা উনিভার্সিটির আরো অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড আছে, যাদের সাথে সময় কাটাতে আমাদের খুব ভাল লাগে। আমি যখন আমার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাই মাম্মি কি আপসেট হয়? হয় না। সেরকম এখন থেকে মাম্মি যখন মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের সাথে বেড়াবে তখন আমি আর তুমি আপসেট হবো না... ঠিক আছে? আয়রা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।শাফিনের এক পলকের জন্য মনে হলো এতটুকু মেয়ের জন্য কথাগুলো কি একটু বেশি ভারী হয়ে গেলো? কিন্তু বোঝাতে তো হবেই। প্রত্যেকের নিজের জীবন আছে,এটা ছোট থেকেই মাথায় গেঁথে দেয়া প্রয়োজন।মা মানেই সব কিছু ত্যাগ করে ২৪/৭ বাড়িতে বসে থাকা নয়।

রোববার সন্ধ্যের ট্রেনে সিডনি থেকে ফিরে আসার পথে প্রীতি মনে মনে আশংকিত হচ্ছিলো না জানি আয়রার কি হাল করেছে শাফিন। এই দুদিন যতবার ফোন করেছে ততবার শাফিন বলেছে আমরা খুব ভাল আছি, চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক আছে। তারপরো ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলো না সে। স্টেশনে নেমে মেয়ের হাসিমুখ দেখে প্রীতির বুক থেকে একটা ভার নেমে গেলো।আয়রা মা'কে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো মাম্মি জানো ড্যাডি আমাকে ফান ফেয়ারে নিয়ে গেছিলো।আমি সব গুলো রাইডে দুইবার করে চড়েছি। আমরা লাঞ্চ করেছি কেএফসি আর ডিনার করেছি ম্যাকডোলানস এ। আমার ফেভরিট ফুড ছিল ,আমি সব খাবার ফিনিশ করেছি। তারপর বাসায় বসে ড্যাডি আর আমি অনেক গুলো গেম প্লে করেছি। আই এনজয়েড আ লট। মেয়েকে কোলে নিয়ে প্রীতি বললো ওয়াও , দ্যাটস গ্রেট। তারপর শাফিনের দিকে তাকিয়ে কপট রাগের ভাব নিয়ে বললো সব বেলায় বাইরেই খেয়েছো নাকি?পয়সা দেখি বেশি হয়ে গেছে !
শাফিন বললো ধুর, কেএফসিতে খেতে আর কয় ডলার লাগে? কি যে বলোনা তুমি। তোমার মেয়ে কত খুশি দেখেছো? শুধু শুধু ওকে নিয়ে টেনশন করেছিলে....কি সুন্দর থাকলো আমার সাথে।

গাড়িতে বসে আয়রা জানতে চাইলো তার মা এই দুদিন কি কি করেছে। প্রীতি ইংরেজিতে মেয়েকে তার ট্রিপের একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলো। তারপর হাসতে হাসতে শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো আমরাও তোমাদের মতো বাইরে খেয়েছি, কিন্তু ফাস্ট ফুড না....আমরা খেয়েছি একদম খাঁটি বাঙালি খাবার। তৃষা খুঁজে খুঁজে সব বাঙালি দোকানে নিয়ে গেছিলো আমাকে। আমরা দুই বন্ধু মিলে কলেজে লাইফের মতো পাল্লা দিয়ে ফুচকা খাবার কম্পিটিশন করেছি জান ? কতগুলো খেয়েছি শুনলে তুমি বিশ্বাস করবে না....ঝালে আঃ উঃ করছি, আবার খাচ্ছি, দিয়ে নিজেরাই হাসছি।লোকজন হা করে আমাদের তাকিয়ে ছিল. পাগল ভাবছিল মনে হয়। ওরা তো জানেনা এসবের সাথে আমাদের কত পুরানো স্মৃতি আছে... ওগুলা মনে পড়লে না হেসে থাকা যায় বলো? তারপর রাতে বেলা তো আরেক কান্ড, এক ফোটা ঘুম নেই আমাদের। কত গল্প যে করলাম সারারাত ধরে.... বহুদিন পরে একটু পরনিন্দা পরচর্চাও করেছি বুঝলে?হিহিহি। তৃষা যা অসভ্য সব কথা বলে ওরে আল্লাহ, তুমি শুনলে শেষ! সবচেয়ে মজা কি হয়েছে বলোতো? পারলে না তো?আরে কালকে নাইট শোতে সিনেমা দেখতে গেছিলাম। কি ভাগ্য দেখো। হৃতিক এর সিনেমা রিলিজ করেছে নতুন,সময়টা কি দারুন মিলে গেলো আমাদের সাথে ভাব একবার। অসাধারণ সব ইমোশনাল সিন্ ছিল...মনটা খারাপ লাগছিলো।তাই দেখে তৃষা ফাজিলটা বলে কিনা তোর এখনো হৃতিক ন্যাকাটার সিনেমা দেখে এরকম ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদার অভ্যেস যায়নি ? কি অবস্থা বলতো ! সারাজীবন হৃত্বিক নিয়ে এভাবে ক্ষেপিয়েছে আমাকে। আমিও কিন্তু কম না...আগের মতো আমিও ঝাড়ি মেরে বললাম আর নিজেরটা কি? দুই ফুট হাইটের বুড়া আমির খান তোর পছন্দ। এরপর তৃষার রাগ যদি দেখতে! হাহাহাহাহাহা।

প্রীতি এক নাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছে। বাচ্চাদের মতো আনন্দ তার চোখে মুখে ঝলমল করছে। শাফিন গাড়ি চালাতে চালাতে আড়চোখে কয়েকবার প্রীতির দিকে মুগ্ধ চোখে তাকালো।তার মনে হলো বিয়ের পরপর প্রথম দিকের সেই ছটফটে উচ্ছল প্রীতি হঠাৎ করে ফিরে এসেছে। সাংসারিক চাপ আর মাতৃত্বর কর্তব্য এই হাসিখুশি প্রীতিকে মাঝের কয়েকটা বছর আড়াল করে ফেলেছিলো যেন। ভাগ্যিস সে প্রীতিকে নিজের মতো দুইটা দিন আলাদা করে কাটাতে জোর করে পাঠিয়েছিল। তাইতো আজ প্রীতির সেই পুরোনো হাসি, পুরোনো লাবণ্য, পুরোনো স্বপ্রতিভতা নতুন করে দেখার সৌভাগ্য হলো।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top