সকাল প্রায় ১১ টা বাজে। অফিসে বসে আছি কিন্তু কাজকর্ম কিছুই এগোচ্ছে না। সামনে আরিফ ভাই বসে আছেন, বিধ্বস্ত অবস্থা। উনার ধারনা ভাবী উনাকে আর ভালবাসে না, কথায় কথায় গালমন্দ করে। উঠতে বসতে কথার খোঁচা দেয়। সেগুলো উনার গায়ের চামড়া ফুঁড়ে নরম হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে। আমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছেন।
- কি করতে পারি আরিফ ভাই?
- তোমার ভাবীকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। একই সাথে একটা পরীক্ষা ও করা দরকার, আমার জন্য কোন টান আছে কিনা। কথাবার্তায় তো কোন মায়া মোহাব্বত নাই। এরপর একটা এপার ওপার করেই ফেলব, বুঝছ?
- ভালবাসার টেস্ট? আমার মাথাও আউলিয়ে গেল।
সেই থেকে দুজনে টেবিলে বসে আছি। যাই পরিকল্পনা করি, সবকিছুইতেই একটা ফাঁক ধরা পড়ে। আর ভাবী এমনিতেই খুব বুদ্ধিমতী। ধরতে পারলে পুরা বাড়ি মাথায় উঠিয়ে ফেলবে। আর আমার ও মাঝে মাধ্যে ওই বাসার ভালমন্দ খাওয়া সব বন্ধ হয়ে যাবে।
অনেকক্ষণ ভেবে একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করলাম, একদম ফুলপ্রুফ। নাহ, অনেক ভেবেও কোন খুঁত বের করতে পারলাম না। প্ল্যান অনুসারে আরিফ ভাইয়ের একটা মারাত্মক এক্সিডেন্ট হবে আর এতে ভাবীর ভালবাসার গভীরতাও পরীক্ষা করা হয়ে যাবে।
পা ভাঙ্গবে, তাই পায়ে প্লাস্টার ও করতে হবে। সেই প্লাস্টার নিয়ে ফ্রিতে কয়েকদিন সেবাযত্ন ও নিতে পারবেন। পাড়ার সবচেয়ে পরিচিত ওষুধের দোকানে গিয়ে ছেলেটাকে সব করনীয় বুঝিয়ে দেয়া হল। বদের হাড্ডি ফ্রিতে করতে রাজি না, অভিনয়ের জন্য ১০০ টাকা ঘুষ দিতে হল।বাম পায়ে প্রথমে প্লাস্টার করে নেয়া হল।
সে ভাবীর নম্বরে ফোন দিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে বুঝিয়ে বলল, আরিফ ভাই এর কার এক্সিডেন্ট হয়েছে। মোবাইলটা রাস্তার একপাশে পড়ে ছিল। সে বুদ্ধি করে ভাবীর নম্বর আন্দাজ করে কল দিয়েছে। ভাবী যাতে এক্ষুনি গলির মুখের হাসপাতালে চলে আসেন।সম্ভবত আরিফ ভাইয়ের পা ভেঙ্গেছে, হাসপাতালে নিয়ে গেছে। ভাবী নিশ্চয়ই দৌড়াতে দৌড়াতে হাসপাতালে চলে আসবেন। এরমধ্যে আরিফ ভাই ও প্লাস্টার করা পা নিয়ে রিসেপশনে বসে থাকবেন।রিসেপশনে একটা ছোটখাট আবেগঘন নাটক ও হয়ে যেতে পারে। তারপর আরিফ ভাই ভাবীর কাঁধে ভর দিয়ে বাসায় যাবেন।
মিনিট দশেক পরে বাসার কাজের মেয়েটা এসে উপস্থিত। ফোনে কথা বলার পর ভাবী নাকি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল। মাথায় অনেকটুকু কেটে গেছে। ব্যান্ডেজ, আইসব্যাগ, তুলা এগুলো নিয়ে যেতে এসেছে। শুনে আমাদের হুঁশ উড়ে গেল। বদের হাড্ডি মনে হয় ফোনে ওভার একটিং করে ফেলছে। ৫ মিনিটের রাস্তা আমরা ২ মিনিটে পৌঁছে গেলাম।
ভাবীকে একটা রুমে শুইয়ে রাখা হয়েছে। আরিফ ভাই তো অনুশোচনায় পুরাই কাতর। আহাজারি করতে করতে ভাবীর মাথার কাছে দৌড়ে গিয়ে কপালে হাত রাখলেন।
ভাবী এক চোখ খুলে বললেন,
- সব কিছুতেই তোমার ওভার একটিং। পায়ে প্লাস্টার আর হাতে ক্রাচ নাই। দিব্যি চলাফেরা করতেছ। এই তোমার ভাঙ্গা পা !!
আরিফ ভাই টেনশন নিয়েই বলতে লাগলেন,
- আরে বাদ দাও আমার পা। তোমার অবস্থা কি, মাথায় কোথায় লেগেছে দেখি।
ভাবী আস্তে করে উঠে বসলেন,
- আমার আবার কি হবে। একটিং কি তুমি খালি একাই পার। এমন একটা ছেলেকে দিয়ে ফোন করিয়েছ, যার সাথে প্রায়ই দেখা হয়, কথা হয়। আর কাউকে পেলে না। তোমার সাথে দেড় যুগ ধরে সংসার করতেছি, তোমাকেও চিনতে কি আর বাকি আছে। দেখলাম আর কি, আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি শুনে তোমার কি রিয়েকশন হয় !!
ওদের কথাবার্তা শুনে আমারই অজ্ঞান হবার মত অবস্থা। পালিয়ে যাবার পথ খুঁজছি।
আরিফ ভাইয়ের নজর ভাবীর দিকে,
- যদি সত্যি সত্যি আমার এক্সিডেন্ট হত, আর ফিরে না আসতাম!!
এবার ভাবীর গলায় ও অনেক আবেগ ভর করল,
- এধরনের খবর শুনার আগেই আমাকেও যেন আল্লাহ উপরে তুলে নেন।
আকাশ বাতাসে ভালবাসা। রোমান্টিক সমাপ্তির মাঝে নিজেকে অপাংক্তেয় মনে হচ্ছে। প্লাস্টার কাহিনী নিয়ে হইচই শুরু হবার আগেই আস্তে করে বেরিয়ে এলাম, মানে পালিয়ে এলাম। কিছুদিন আর ওইমুখো হওয়া যাবে না।
(সমাপ্ত)
- কি করতে পারি আরিফ ভাই?
- তোমার ভাবীকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। একই সাথে একটা পরীক্ষা ও করা দরকার, আমার জন্য কোন টান আছে কিনা। কথাবার্তায় তো কোন মায়া মোহাব্বত নাই। এরপর একটা এপার ওপার করেই ফেলব, বুঝছ?
- ভালবাসার টেস্ট? আমার মাথাও আউলিয়ে গেল।
সেই থেকে দুজনে টেবিলে বসে আছি। যাই পরিকল্পনা করি, সবকিছুইতেই একটা ফাঁক ধরা পড়ে। আর ভাবী এমনিতেই খুব বুদ্ধিমতী। ধরতে পারলে পুরা বাড়ি মাথায় উঠিয়ে ফেলবে। আর আমার ও মাঝে মাধ্যে ওই বাসার ভালমন্দ খাওয়া সব বন্ধ হয়ে যাবে।
অনেকক্ষণ ভেবে একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করলাম, একদম ফুলপ্রুফ। নাহ, অনেক ভেবেও কোন খুঁত বের করতে পারলাম না। প্ল্যান অনুসারে আরিফ ভাইয়ের একটা মারাত্মক এক্সিডেন্ট হবে আর এতে ভাবীর ভালবাসার গভীরতাও পরীক্ষা করা হয়ে যাবে।
পা ভাঙ্গবে, তাই পায়ে প্লাস্টার ও করতে হবে। সেই প্লাস্টার নিয়ে ফ্রিতে কয়েকদিন সেবাযত্ন ও নিতে পারবেন। পাড়ার সবচেয়ে পরিচিত ওষুধের দোকানে গিয়ে ছেলেটাকে সব করনীয় বুঝিয়ে দেয়া হল। বদের হাড্ডি ফ্রিতে করতে রাজি না, অভিনয়ের জন্য ১০০ টাকা ঘুষ দিতে হল।বাম পায়ে প্রথমে প্লাস্টার করে নেয়া হল।
সে ভাবীর নম্বরে ফোন দিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে বুঝিয়ে বলল, আরিফ ভাই এর কার এক্সিডেন্ট হয়েছে। মোবাইলটা রাস্তার একপাশে পড়ে ছিল। সে বুদ্ধি করে ভাবীর নম্বর আন্দাজ করে কল দিয়েছে। ভাবী যাতে এক্ষুনি গলির মুখের হাসপাতালে চলে আসেন।সম্ভবত আরিফ ভাইয়ের পা ভেঙ্গেছে, হাসপাতালে নিয়ে গেছে। ভাবী নিশ্চয়ই দৌড়াতে দৌড়াতে হাসপাতালে চলে আসবেন। এরমধ্যে আরিফ ভাই ও প্লাস্টার করা পা নিয়ে রিসেপশনে বসে থাকবেন।রিসেপশনে একটা ছোটখাট আবেগঘন নাটক ও হয়ে যেতে পারে। তারপর আরিফ ভাই ভাবীর কাঁধে ভর দিয়ে বাসায় যাবেন।
মিনিট দশেক পরে বাসার কাজের মেয়েটা এসে উপস্থিত। ফোনে কথা বলার পর ভাবী নাকি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল। মাথায় অনেকটুকু কেটে গেছে। ব্যান্ডেজ, আইসব্যাগ, তুলা এগুলো নিয়ে যেতে এসেছে। শুনে আমাদের হুঁশ উড়ে গেল। বদের হাড্ডি মনে হয় ফোনে ওভার একটিং করে ফেলছে। ৫ মিনিটের রাস্তা আমরা ২ মিনিটে পৌঁছে গেলাম।
ভাবীকে একটা রুমে শুইয়ে রাখা হয়েছে। আরিফ ভাই তো অনুশোচনায় পুরাই কাতর। আহাজারি করতে করতে ভাবীর মাথার কাছে দৌড়ে গিয়ে কপালে হাত রাখলেন।
ভাবী এক চোখ খুলে বললেন,
- সব কিছুতেই তোমার ওভার একটিং। পায়ে প্লাস্টার আর হাতে ক্রাচ নাই। দিব্যি চলাফেরা করতেছ। এই তোমার ভাঙ্গা পা !!
আরিফ ভাই টেনশন নিয়েই বলতে লাগলেন,
- আরে বাদ দাও আমার পা। তোমার অবস্থা কি, মাথায় কোথায় লেগেছে দেখি।
ভাবী আস্তে করে উঠে বসলেন,
- আমার আবার কি হবে। একটিং কি তুমি খালি একাই পার। এমন একটা ছেলেকে দিয়ে ফোন করিয়েছ, যার সাথে প্রায়ই দেখা হয়, কথা হয়। আর কাউকে পেলে না। তোমার সাথে দেড় যুগ ধরে সংসার করতেছি, তোমাকেও চিনতে কি আর বাকি আছে। দেখলাম আর কি, আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি শুনে তোমার কি রিয়েকশন হয় !!
ওদের কথাবার্তা শুনে আমারই অজ্ঞান হবার মত অবস্থা। পালিয়ে যাবার পথ খুঁজছি।
আরিফ ভাইয়ের নজর ভাবীর দিকে,
- যদি সত্যি সত্যি আমার এক্সিডেন্ট হত, আর ফিরে না আসতাম!!
এবার ভাবীর গলায় ও অনেক আবেগ ভর করল,
- এধরনের খবর শুনার আগেই আমাকেও যেন আল্লাহ উপরে তুলে নেন।
আকাশ বাতাসে ভালবাসা। রোমান্টিক সমাপ্তির মাঝে নিজেকে অপাংক্তেয় মনে হচ্ছে। প্লাস্টার কাহিনী নিয়ে হইচই শুরু হবার আগেই আস্তে করে বেরিয়ে এলাম, মানে পালিয়ে এলাম। কিছুদিন আর ওইমুখো হওয়া যাবে না।
(সমাপ্ত)