What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made একটি নীল লিটমাসের গল্প (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by BigBick23 to join our community. Please click here to register.

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
প্রেগনেন্সি টেস্টের স্ট্রিপটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছি ।। সকাল সকাল মাথাটা একদম ভোঁতা হয়ে আছে।। সজল অফিসে চলে গেছে ঘন্টা খানেক হলো।। একবার ভাবলাম বাথরুমে গিয়ে ইউরিন স্যাম্পল নিয়ে আসি। পা দুটো যেন পাথর হয়ে আছে। মনে সেই ভয়টা কাঁটার মত বিঁধে আছে।। যদি এবারো,,,?



এই সাত বছরে কতবারই তো পিরিয়ড মিসিং হলো।। কত টেনশন! কত প্রতিক্ষা! কিন্তু ফলাফল তো সেই শুন্যই।

এসব ক্ষেত্রে সজলের আগ্রহটা বরাবরই বেশি ছিলো।। এখন এসব টেস্ট - ফেস্ট নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না সে।। আমিও আর বলিনা ওকে।। কিন্তু এবারের মত দীর্ঘ সময় পিরিয়ড মিসিং আর হয় নাই আমার। না ভুল বললাম।। একবার তো অনেকদিন বন্ধ ছিলো।। সজলের বন্ধু ডাক্তার সীমাদি বললো ভালো খবর হতে পারে। আশায় ছিলাম আমরা। বাজার খুজে, ইন্টারনেট ঘেঁটে সবচাইতে ভলো টেস্ট স্ট্রিপ কিনে আনে সজল।। নিজ আগ্রহে ইন্সট্রাকশন গুলো পড়তে থাকে।।

আমাকে বলে, সকালে উঠেই প্রথম ইউরিন স্যাম্পল দিয়ে টেস্ট করতে হবে কিন্তু, বুজছো??

আমি লক্ষী মেয়ের মত মাথা নাড়াই।

শোন, এই টেস্টটা হলো লিটমাসের খেলা।। তুমি যখন ইউরিন স্যাম্পল দিবে তখন দেখবে নীল লিটমাস টা দু মিনিটের মধ্যে লাল হয়ে যাবে।। আমার সন্তানের মুখ দেখা যাবে।

আমিও গাধার মত বলি সত্যিই বাবুর মুখ দেখা যাবে??

আমার আহাম্মকি দেখে সে হাসতে হাসতে বিষম খায়।

আমি লজ্জা পাই।

সেবার সজলতো সেলিব্রেট করার জন্য ফুল টুল পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল। কিন্তু হায়, নীল লিটমাসটি আজ অব্ধি লাল হলোনা।। নীল রঙা বিষ হয়ে আমাকে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত !

এ সাত বছরে আমি ওকে একটি সন্তান দিতে পারলাম কই??



বিয়ের মাস দশেক পর আমরা টোনাটুনি নতুন বাসায় উঠি।। এক সপ্তাহ না যেতেই একদিন রাতে শুনতে পাই বিড়ালের বাচ্চার মিউ মিউ শব্দ। আমি প্রচন্ড ভয় পাই। সজলকে ডেকে তুলি।। অনেক খোঁজাখুজি করে দেখা যায় নতুন আলমারির মধ্যে বিড়াল বাচ্চা দিয়েছে।। আমি চিৎকার করতে থাকি, ফেলে দিতে বলি বাচ্চাগুলোকে।। আমি ছোট বেলা থেকেই কুকুর বেড়াল একেবারে অপছন্দ করতাম।।

সজল বলে- থাক না বাচ্চাগুলো, একেবারে ছোট বাচ্চা।। বড় হলে এম্নিতেই চলে যাবে ওরা।

আমি প্রচন্ড রেগে যাই।

আমার রাগ দেখে সজল সেই শীতের রাতেই ফেলে দিয়ে আসে বাচ্চাগুলো। যাবার সময় আমি দরজা খুলে তাকাই। দেখি ছয়টি মিষ্টি চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।

এর পর মা বিড়ালটাকে বেশ কিছুদিন আসতে দেখেছি বাসায়।। বাচ্চাগুলোকে অনেক খুঁজেছে সে।। পায়নি। পরে আর আসে নাই।। আবার বছর খানিক পরে আমি দেখতে পাই মা বিড়ালটিকে।।

দেখেই চিনতে পারি।। এক পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে।



সজল বলে - চিনেছো বিড়ালটাকে? খানকি মাগি আবার পেট বাধাঁয়ে আনছে।।বাচ্চা দেয়ার আর জায়গা পায় না। আমার বাসায় আসে।



সজল লাঠি নিয়ে ওকে ধাওয়া করে ।।



আমি চিৎকার করি -প্লিজ প্লিজ মেরোনা ওকে।।

আমার এমন মিনতি দেখে সে অপ্রস্তুত হয়।। বিরক্ত হয়। মারে না বিড়ালকে।

এরপর এক মাসের মধ্যে বিড়াল বাচ্চা দেয় আমার ঘরে। আমি চুরি করে ওদের আগলে রাখি।। কি সুন্দর ছানা গুলো। আমি অভিভূত হই । মা বিড়ালটা কি সুন্দর করে বাচ্চাদের আদর দেয়!!

আমার চোঁখে পানি জমে।। শুধু আমার কোল খালি পরে থাকে কেন?? কি অপরাধ আমার? দীর্ঘ রাত দীর্ঘ দিন গত হয় আমার। অপেক্ষা আর অপেক্ষা।। অথচ একটি সন্তানের জন্য হেন কোন কাজ নেই আমরা করিনি - ডাক্তার, কবিরাজ সব করেছি।

সৃষ্টিকর্তা কি আমাকে কোন দিন মা হতে দিবে না?? এত চাই, তবুও না!

অথচ আমার বোনের মেয়ে, যাকে আমি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই সে কনসিভ করেছে।। আমাকে হেসে হেসে বলে-

দেখোতো খালা, কি করি এখন?

আমি বলি শোন পাগলি এটা আল্লার নেয়ামত। সে হেসে বলে - ধুর, কি যে বল -আমার এখনো মাস্টার্স কমপ্লিট হয় নাই। তার মধ্যে বিয়ে, বাচ্চা। না না আমি এসব পারবোনা।।

তোর জামাই কি বলে?

ও আবার কি বলবে খালা। এটা তো একটা এক্সসিডেন্ট।। আমারা দুজন মিলে ঠিক করেছি এবোরশন করবো।

লজ্জায় অপমানে আমি লাল হয়ে যাই। বুকের ভেতর কান্না দলা পাঁকায়। বড়পা আমায় বুকে টেনে নেয়।। আমি আপার বুকে মুখ গুজে হালকা হতে চাই।। কিন্তু যে দীর্ঘশ্বাস বুকের গহীনে প্রথিত হয়ে আছে তা কি আর ফুরোয় কখনো? ফিরে ফিরে আসে বারবার।



এইতো সেদিন কাজের বুয়া পারভিন এসে কাঁদছিলো।।

আমি বললাম কি হয়েছে?

ময়নার বাপ নতুন বিয়ে করেছে আম্মা।।সে আমারে তালাক দিসে।

আমি বলি, গেছে ভালো হয়েছে।। কাজ করে না।। তোমার টাকায় শুধু নেশা করে। থাকলেই কি আর না থাকলেই কি??

কিন্তু আম্মা- পেটে আমার ছয় মাসের বাচ্চা।।

আমি বললাম- আগে বলনি কেন?

আগে বললে কি কামে রাখতেন আম্মা?

হু তাইতো দুই বছরের ছোট বাচ্চাসহ পারভিনকে কাজে নিয়েছি বলে সজল আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে।। বাচ্চাসহ কেন পারভিন কে কাজে নিলাম? আরে কেন নিলাম সেটা কিভাবে তোমাকে বোঝাই সজল!! বাসায় একটা বাচ্চা থাকুক এটাকি তুমি অনুভব করতে পারোনা? হোক না সেটা পরের।।

পারভিনের প্রগনেন্সির কথা শুনে ওকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। বরং কাজ গুলো আমার ভাগাভাগি করে করি।। ভালো খাবার দেই। ডাক্তার দেখাই।।

একদিন সন্ধ্যায় আমাকে বলে আম্মা- পেটেরডারে আপনারে দিয়া দিমু।। দত্তক। গরিব মানুষ আমি।। নিজেই চলতে পারিনা।। দুইডারে পালমু কেমনে?



রাতে সজলকে ঘটনাটা খুলে বলি। সে খুব একটা ইন্টারেস্ট দেখায় না আবার নাও বলেনা।



আমি নিজের মত করে প্রস্তুতি নিতে থাকি।।কিন্তু এত আদর যত্ন করলাম যে পারভিনকে, বাচ্চা হবার পর দেখি অন্য রুপ।



খাল্লামা আপনে আমারে মাপ করেন।। নিজের কোল খালি কইরা কোন মা ই বাচ্চা দিবোনা খালাম্মা।।



তবে দিতে চেয়েছিলি কেন??



আপনারে কেমনে বুজাই খালাম্মা।। কে বুক খালি করতে চায় বলেন? মা হইলে বুঝতে পারতেন খালাম্মা ? কত কষ্ট?



পারভিনের কথাগুলো আমার বুক ভেংগে দেয়।।

ও আমি তো মা না!! বুঝবো কি ভাবে? কাজের বুয়াও আমাকে কথা শোনায়।।



অবশ্য কে আমাকে কথা শোনায় না?

নিজের মা, বোন, ভাই সবাই।।

শশুর, শাশুড়ি, ননদ, দেবর,,,,,

হা হা হা। ঠক বাছতে গাঁ উজার অবস্থা আমার।



তবে হ্যাঁ। সজল।।

সজল আমাকে কোন দিন কিছু বলেনি।। কোন কটু কথা শোনায়নি।। সত্যিকারের ভালোবাসে আমাকে।। তাইতো আজো বেঁচে আছি।। তবে ওর কষ্ট আমি ফিল করতে পারি।

তাইতো পিরিয়ড মিসিং এর কথা ওকে বলিনি।। যদি আবার কষ্ট পায়।। এরকম অভিজ্ঞতা তো এর আগেও হয়েছে।। বেচারা ।।



এসব ভাবতে ভাবতেই আমি ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়ালাম। ইউরিন স্যামপল নিয়ে এসে বসলাম বিছানায়।। আমার হাত পা কাঁপছে।। প্যাকেটে লেখা ইন্সট্রাকশনগুলো ভালোভাবে পড়ে নিলাম। সজলের কথাগুলো বারবার অওয়াজ তুলছে কানে।। নীল লিটমাসকে লাল হতে হবে।। হতেই হবে। কাঁপা কাঁপা হাতেই ইউরিন স্যাম্পল ঢাললাম।। চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করছি আমি। আর দু মিনিটের মধ্যেই জানা যাবে সব।

আচ্ছা লিটমাসটা যদি কোন জাদুতে রঙ বদলাতো??

এমন হয় না কেন??

আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করার জন্য দু'হাত তুলেছি।। কিন্তু হায়। কিছু বলতে পারছি না।। শুধু ঠোঁট দুটো অনবরত কাঁপছে।। আর বন্ধ চোঁখের কোনা দিয়ে গরম নোনা জল নেমে আসছে।। আমি ঝাপসা চোঁখে দৃষ্টি মেললাম।। যেন অনন্ত কাল পরে চোঁখ খুলছি। জল ভরা চোঁখে যা দেখছি তা অকল্পনীয়।। কে যেন তাজা রক্তজাবা বিছিয়ে রেখে গেছে আমার এত দিনের নীল রঙা অপরাজিতার বুকে।।



এত আনন্দ আমি সহ্য করি কিভাবে।।

আনন্দে কাঁপতে কাঁপতে সজলকে ফোন করি। খুব দ্রুত সব বলি আমি।। আমার দুচোঁখের পানি তখনো অজুত নিজুত ধারায় বহমান।। ওপাশ থেকে সজলও কিছু বলছেনা।। আমি নিশ্চিত আমার মতই শ্রাবণ ধারায় ভিজছে ওর দুচোঁখ।।

আমিও ফোনের এ পাশ থেকে কিছু বলে ওকে আর অপ্রস্তুত করি না।।

কাঁদুক ছেলেটা।।

কাঁদুক।।

কেঁদে বুক ভাসাক ।।

কষ্ট গুলোকে ভিজিয়ে দিক নোনা জলে।।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top