What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made না বলা ভালোবাসা (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
প্রায় পনেরো বছর পর তমালের সাথে দেখা । সুন্দর চেহারাটা কেমন দুমড়ে মুচরে গিয়েছে । আহা ! এককালে কত গর্ব ছিল তার, এই চেহারা নিয়ে । জিজ্ঞাসা করলাম,

- ডায়েবেটিস হয়েছে নাকি তোমার ?

- হ্যা, কিভাবে বুঝলি ?

- বোঝা যায়।

বললাম না, তোমার চেহারাটা একদম নষ্ট হয়ে গেছে । কারো কারো মত আমি মানুষ কে কষ্ট দিতে পারি না । অথচ তমাল একদিন কত সহজেই আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, আমার চেহারাটা মোটেও তার পরিচিত মহলে চালিয়ে নেওয়ার মত নয়।

তমাল আমার ফুপাতো ভাই । আমার বাবারা দুই ভাই বোন । ফুপি বড়, বাবা ছোট । ফুপির একমাত্র সন্তান, তমাল । দেখতে খুব সুন্দর এবং ভীষণ মেধাবী ছিল । ফুপির পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না । প্রায় প্রায়ই সাহায্য নিতে আসতে হতো বাবার কাছে । এজন্য মা তেমন পছন্দ করতো না ফুপি কে। আর তমালের সাথে মেলামেশা করাটা মা মোটেও সহ্য করতে পারতো না ।

জীবনের কোন এক দূর্বল মুহূর্তে তমাল বলেছিল, " মেঘা, তোকে সারাজীবন আগলে রাখতে ইচ্ছা করে । " কিশোরী বয়সের ভালোলাগা ভয়ংকর ধরণের হয়। ছোট ছোট কিছু কথা, মনের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। ছেলেরা হয়তো কোনদিনই সেটা বুঝতে পারে না । তাইতো অনায়েসে এমন ডাকাতের মত কথা বলে । একবারও চিন্তা করে না, এমন হৃদয় হরণ করা কথা শোনার পরে, সেই মেয়েটার রাতের ঘুম হবে তো ?

আমি তখন কল্পনার জাল বুনি। তমাল বুয়েটে পড়তো। আমি তখন সবে এস এস সি পাশ করেছি। তমাল আমার চার বছরের বড় হওয়ার সত্বেও ওকে নাম ধরেই ডাকতাম । মা অবশ্য বকতো। বলতো, " ভাইয়া ডাকা যায় না? " আমি বলতাম, " কখনোই না। "

ঈদের সময় যখন ফুপি, বাপের বাড়িতে ঈদ করতে আসতো, তখন আমার আনন্দ আর দেখে কে ? আমরা তখন প্রতিটা ঈদ দাদা বাড়িতে করতাম । ওরা আসার আগে, দিন যেন কাটতেই চাইতো না । অথচ আসার পরে বুঝতেই দিতাম না, আমি তার পথ চেয়ে ছিলাম।

আমি যখন মেডিকেল কলেজে তৃতীয়বর্ষে পড়ি, তমাল তখন বুয়েট থেকে পাশ করে একটা বেসরকারী কোম্পানিতে ঢুকেছে। সেবারের ঈদ টার কথা, আমি জীবনে কোনদিন ভুলতে পারবো না । দাদা বাড়ির পিছনে পুকুর পাড়ে যে কদম গাছটা আছে, সেটার নিচে বসে ছিলাম আমি আর তমাল । হঠাৎ ওকে বলে ফেললাম, " তুমি তো চাকরিতে ঢুকেছো। এবার তাহলে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দাও। " তমাল হাসতে হাসতেই বললো, " কার বাসায় প্রস্তাব দিবো ? আমার বেশ রাগ হলো । বললাম, " আমাদের বাসায় ! " তমাল হাসিটা আরো বিস্তৃত করে বললো, " তুই কী পাগল হয়েছিস ? তোর মত মোটা মেয়ে কে বিয়ে করলে তো, খাটে আমার জায়গা হবে না । আমি ভীষণ অবাক এবং আহত হলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম, ও মজা করছে কিনা । কিন্তু তমাল তখন পুকুরে ঢিল ছোড়াতে ব্যস্ত ।

বছর খানেক পরে ফুপি মারা যায়। ফুপি মারা যাওয়ার পরে তমাল কানাডার সিটিজেনশীপ নিয়ে চলে যায় কানাডা । ফুপা আবার বিয়ে করে । তাই হয়তো অভিমানে তমাল দেশে তেমন আসে না । আমাদের সাথে তো কোন যোগাযোগই করে না । যেনো ফুপি মরার সাথে সাথে সম্পর্কও শেষ হয়ে গেছে ।

আজ এতগুলো বছর পরে তমাল এসেছে ! অথচ আজ আমি ভীষণ ব্যস্ত । আমার হাসপাতাল, আমার জন্য ছোট খাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতদিন আমি এই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ছিলাম। আজ আমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কনসালটেন্ট হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে । এই হাসপাতাল, আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে ।

আমার মা আমাকে বেশ বিত্তশালী পরিবারে বিয়ে দেয়। আমার স্বামী শাওন একজন ডাক্তার । সে বাবার একমাত্র সন্তান । তার বাবার প্রচুর সম্পত্তি আছে দেখে, পড়াশুনায় তেমন মন নেই । বাবার হোটেলে থাকে, খায়। কিন্তু আমার খুব পড়তে ইচ্ছা করতো। কিন্তু শাশুড়ি কেন জানি আমার পড়াটা তেমন পছন্দ করতো না ।

এত কষ্ট করে ডাক্তার হয়ে বসে থাকার কোন মানে নেই । আর তাছাড়া, আমার নিজস্ব কিছু হাত খরচ থাকে । সেটা শাশুড়ির কাছ থেকে হাত পেতে নিতে আমার খারাপ লাগতো । বেশ তিন, চার বছর অহেতুকই বসে ছিলাম । ডাক্তার হয়ে শুধুই গৃহের কাজ করতে, ভালো লাগতো না । বাসার কাছেই তখন এই নতুন হাসপাতালটা হয়েছিল । ঐখানে যোগাযোগ করে মেডিকেল অফিসারের একটা চাকরি পেয়ে গেলাম । বেতন ছিল ৩০০০০ টাকা ।

হাসপাতালে যেয়ে অবসর সময়ে পড়তাম। আমার যখন এম এস কোর্সে চান্স হলো, তখন হাসপাতাল আমাকে একটা শর্ত দিলো। আমি যদি পাশ করার পরে অন্তত তিন বছর এখানে সার্ভিস দিই, তাহলে কোর্স কালীন সময়ে হাসপাতাল আমাকে পূর্ন বেতন দিবে। পাশ করতে পারলে এখানে আমাকে কনসালটেন্ট হিসাবে নিয়োগ দেবে এবং তখন বেতন হবে দুই লক্ষ টাকা । আমার জন্য এরচেয়ে ভালো প্রস্তাব আর হতেই পারে না । আমি সাথে সাথেই অফারটা লুফে নিলাম। তিন বছর কেনো ? এই হাসপাতাল ছেড়ে আমি কোনদিনই কোথাও যাবো না । এই হাসপাতাল আমাকে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে ।

তমাল কে বললাম, তুমি এতকাল পরে আসছো, অথচ তোমাকে আজ সময় দিতে পারবো না । ওকে হাসপাতালের অনুষ্ঠানের কথাটা বললাম। তমাল বললো, " আমি তোর সাথে হাসপাতালে গেলে, তোর কোন সমস্যা হবে? " আমি এক মুহূর্ত ভাবলাম । তারপর বললাম, " সমস্যা নেই, চলো। "

হাসপাতালের অনুষ্ঠানে হাসপাতালের মালিক ডা. পলাশ ভাইয়া তমাল কে বেশ খাতির যত্ন করলো। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে তমাল বললো, " এখন আর তোর বাসায় যাবো না । এখান থেকে সোজা এয়ারপোর্ট যাবো। "

তমাল চলে যাওয়ার পরে হঠাৎ করেই ছোটবেলার মত মনটা খারাপ হলো। জানি, মন খারাপ হওয়াটা ঠিক নয়। কিন্তু মন সব সময় যুক্তি মানে না । ওর বউ , ছেলে মেয়ের কথাও জিজ্ঞাসা করা হলো না । একটু বেশি সময় নিয়ে আসলে কী ক্ষতি হতো ?

তমাল বুয়েট থেকে পাশ করার পরে, তার অনুরোধে তার মা, মেঘার মায়ের কাছে গিয়েছিল, বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে । মামী তার মাকে, গরীব বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় এবং প্রচুর অপমান করে । তমাল খুব কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু মেঘা কে কখনো বুঝতে দেয়নি। কি দরকার? অহেতুক মা, মেয়ের সম্পর্ক নষ্ট হবে। মা মারা যাওয়ার পরে তমাল কানাডার সিটিজেনশীপ নিয়ে চলে যায় কানাডা । বিয়ে শাদী করেনি। কেন জানি মেঘার জায়গাটা অন্য কাউকে দিতে ইচ্ছা করেনি । সে মেঘার খোঁজ সব সময়ই রাখতো। মেঘা যখন ঐ হাসপাতালে চাকরির খোঁজে যায়, তখন তমালের বন্ধু ডা. পলাশ তাকে চিনতে পারে। কারণ তমালের কাছে মেঘার অনেক ছবি সে দেখেছে এবং তমাল যে মেঘাকে ভালোবাসে এটা সে জানতো। সে তমালকে জানায়। তমাল মেঘাকে চাকরি দিতে বলে এবং খুব চড়া মূল্যে পলাশের কাছ থেকে ঐ হাসপাতালের অর্ধেক শেয়ার কিনে নেয়। যদিও অনুরোধ করে ব্যাপারটা যাতে কেউ জানতে না পারে । মেঘা তো না বটেই। আজ তমালের পরিকল্পনা মতোই মেঘার কনসালটেন্ট হওয়া উপলক্ষে অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়েছে । তমাল এই সুন্দর মুহূর্তটা নিজ চোখে দেখতে চেয়েছিল দেখেই এতকাল পরে তিন দিনের জন্য দেশে এসেছিল। যদিও ডা. পলাশ কে খুব ভালো করে শিখিয়ে দিয়েছিল, যেন মেঘা বুঝতে না পারে, পলাশ তার বন্ধু এবং এই হাসপাতালের অর্ধেক শেয়ার হোল্ডার।

তমাল এখন এয়ারপোর্টের রাস্তায়। তুমুল বৃষ্টি নেমেছে । খুব ইচ্ছা করছে, মেঘাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, " তোর কী এখনো বৃষ্টি হলেই ভিঁজতে ইচ্ছা করে? " কিন্তু সব সময় সব ইচ্ছা কে পাত্তা দিতে হয় না । তমাল নিজেকে কনট্রোল করতে জানে ।


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top