What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected কতিপয় দাঁড়কাকের সুইসাইড নোট (1 Viewer)

bidushi

Member
Joined
Mar 7, 2018
Threads
10
Messages
144
Credits
3,945
লেখকঃ সাগর রহমান। থেকে সংগৃহিত)

আমরা ভেবেছিলাম – গল্পটি আমাদের।

মধুর ক্যান্টিনের সামনে যে-ভঙ্গিতে শরীফুল হাসান দাঁড়িয়ে থাকত ঘণ্টার পর ঘণ্টা, একটা সস্তা সিগারেটের ধোঁয়ায় নিজের ভাঙাচোরা মুখখানা ঢেকে দিতে দিতে যেভাবে সে মাথা নাড়ত, আর বলত, হইলো না রে দোস্ত, হইলো না! – এ-দৃশ্য দিনের পর দিন দেখে আমাদের সবার মনে এ-ধারণাই জন্মেছিল : গল্পটি বোধহয় আমাদেরই। আমাদের বন্ধু শরীফুলের নয়।

এ-ভাবনায় প্রথম ধাক্কা লাগার দিনটিতেও আমরা মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছিলাম। এমএর শেষ পরীক্ষা দিয়ে ফুরফুরা মেজাজে
দুধ-চা ভাগাভাগি করে খাচ্ছিলাম। শরীফুলের খবর অনেকদিন ধরেই আমাদের জানা ছিল না। বেশ কয়েক বছর আগেই ছাত্রত্বের খাতায় ঢেরা ফেলে সে কোনো এক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে মালামাল সাপস্নাই দিতে শুরু করেছিল – আমরা কেবল এ-কথাটি জানতাম।

সেদিন সাদা রঙের একটা টয়োটা গাড়ি আচমকা চিল-চিৎকার দিয়ে ব্রেক কষেছিল ঠিক আমাদের ঘাড় ও পশ্চাৎদেশ ঘেঁষে। গাড়িটি থেকে নেমে এসেছিল শরীফুল হাসান। পাশে একটা পাতলা গড়নের মেয়ে। দুজনের চোখে কালো রঙের রোদচশমা। তবু সেই ঢাকা চোখ থেকেই বেয়ে বেয়ে নামছিল যেসব সুখ তার হদিস পেতে খুব একটা মাথা ঘামাতে হয়নি আমাদের। শরীফুল খোলসা করে বলেছিল, হঠাৎ বিয়ে করে ফেললাম, দোস্ত। আয়, পরিচয় করিয়ে দিই।

আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি নারী এবং একটি গাড়ির মালিক শরীফুল হাসান তখন খুব হাসছিল। তার নারীটি হাসছিল। তার গাড়িটি হাসছিল। আর এসব সম্মিলিত হাসির চোটে আমাদের মনস্থির করতে বিন্দুমাত্র সলা-পরামর্শ করতে হয়নি : যা না হওয়ার জন্য শরীফুল দীর্ঘকাল মাথা নাড়ানাড়ি করে গেছে, সেসব ওর 'হয়ে' গেছে।

এসব পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে তখন পাহাড়-নদী-অরণ্য। শরীফুল সেসব ডিঙিয়ে গেছে কত অবলীলায় – ভাবতে ভাবতে আমাদের মুখে তেলতেলে হাসিও কি ফোটেনি? আমরাই তো বলেছিলাম, কবে খাওয়া দিবি, দোস্ত?

তা শরীফুল খাইয়েও ছিল। বোয়াল মাছের অত বড় পেটি – আমরা ভেবেছিলাম শুধু দামি হোটেলে গেলেই পাওয়া যায় – আমাদের সেই ধারণা ভেঙে গিয়েছিল সেদিন এবং চিংড়ির মালাইকারি, ভুনা গোশত ও রেজালা নামক বস্ত্তগুলো এক বসায় এক পেস্নটে খাওয়া যায় নিজ কামাইয়ে নিজ ঘরে বসে – সে-তথ্যটি জানানোও এক অর্থে। ওর বউ বেশ টেনে টেনেই জানিয়েছিল : আপনাদের বন্ধুর খালি এসব খাবার শখ। রোজ রোজ রাঁধতে হয় আমার। আর ভালস্নাগে না।

'ভাল্লাগে না' বলতে বলতে হাতের কনুইতে তিনি শরীফুলের পাঁজরায় ছোট্ট একটা আদুরে ধাক্কা মেরেছিলেন। ধাক্কা মারার দৃশ্য এবং 'ভাল্লাগে না' শব্দটি আমাদের চোখে ও কানে মধু বর্ষণ করতে করতে খাবার গতি শ্লথ করে দিতে চেয়েছিল, তবু আমরা চালিয়ে গিয়েছিলাম প্রাণপণে। সেই ফাঁকে শরীফুল জানিয়েছিল : তোর ভাবি আবার এসব হেভি ফুড পছন্দ করে না। ওর পছন্দ সালাদ, লেটুস, শসা – এগুলা।

ওর কথার সমর্থনে ভাবি তখন নিজেই জানান দিয়েছিলেন, আমার ওসবই ভালো, ভাই। আর যা হোক, মুটকি হয়ে যেতে চাই না।

এ-সময় ভাবির সিস্নম ফিগারের দিকে আমাদের দৃষ্টি পিছলে গিয়েছিল। সেটাকে রীতিমতো শাসন করে যথাস্থানে ফিরিয়ে এনে আমরা মুখ চালানোতে মনোযোগী হয়েছিলাম। মনে মনে প্রবোধ দিয়েছিলাম নিজেদের, আমাদেরও হবে। আর কদিনের মধ্যেই হবে।

মূলত তার পরদিন থেকেই আমরা চাকরির খবর পত্রিকা কিনতে শুরু করেছিলাম অধিকতর নিয়মিতভাবে। নানান দৈনিকের চাকরি পাতা কেটে নিয়ে আসতে শুরু করলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে ঢুকে; এবং রাতদিন জেগে পড়তে শুরু করলাম কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, নলেজ ওয়ার্ল্ড, সেলফ কনফিডেন্স। যেহেতু গার্মেন্টসে মাল সাপস্নাই দেওয়ার বিদ্যে জানা হয়নি আমাদের, শিখতে চাইও-নি আমরা, ভার্সিটি থেকে এমএ পাশ করে কেউ গার্মেন্টসের মাল সাপস্নাই দেয় না – এটা কেউ না বলে দিলেও আমরা জানি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটে এ-কথাটিই লেখা রয়েছে।

আমরা তো জানতামই : এমএ পাশ করলে চাকরি হয়, চাকরি হলে টাকা হয়, টাকা হলে গাড়ি হয়, বাড়ি হয়, গাড়ি-বাড়ি হলে সালাদ-লেটুস খাওয়া 'সিস্নম-ফিগারের' নারী হয়, সে-নারীরা 'ভাল্লাগে না' বলে পাঁজরায় কনুইয়ের গুঁতো মারতে মারতে বোয়াল, চিংড়ি, গরুর গোশত রান্না করে খাওয়ায়।

তখনো আমাদের ধারণা ছিল – গল্পটি আমাদের। শরীফুল বড়জোর পার্শ্বচরিত্র।

দুই

ঢাকা শহরে শরীফুল হাসান আছে কতজন? এবং তাদের কতজন গার্মেন্টসে মাল সাপস্নাই দেয়? এবং তাদের কতজনের সিস্নম ফিগারের নারী, মগবাজারের কোনায় দোতলা বাড়ি, ও একটা সাদা রঙের টয়োটা গাড়ি আছে?

আমাদের মতে, এসব সূচকের সমন্বয়ের পর সংখ্যাটি যতটা আঁচ করা যায়, তার চেয়েও অনেক, অনেক বেশি! মতটা অবশ্য এমনিতেই তৈরি হয়নি। বিসিএসের জন্য তিন মাইল লম্বা ফরম জমা দিতে গিয়ে আমাদের এমন মতামত তৈরি হয়েছে। আমাদের চারপাশে শত শত শরীফুল হাসানের অযুত-নিযুত বন্ধুর চাকরির জন্য হা পিত্যেশ দেখে মনে হয়েছে!

শরীফুল হাসান মোবাইল ফোনে তার বাসায় আমাদের দাওয়াত খাওয়ার ছবি তুলেছিল একটা। হাত মাথার ওপর তুলে ধরে সম্মিলিত সেলফি। সেলফি তখনো আমাদের কারো ফোনেই তোলা যেত না। শরীফুল হাসানেরটাতে যেত; এবং ওর হাত বাড়িয়ে তোলা ছবি বলে ওকেই দেখাচ্ছিল সবার চেয়ে বড়সড়, সামনে, বিকট দাঁত কেলানো অবস্থায়। ওর সেই অগ্রগণ্য অবস্থানটি আমরা সেদিন মেনেও নিয়েছিলাম নির্দ্বিধায়। যদিও মনে মনে জানি, এ অবস্থানটি বড়ই সাময়িক। হতাশ হওয়ার কিচ্ছু নেই।

ততদিনে আমরা হল থেকে বিতাড়িত হয়েছি। তেজকুনীপাড়ার একটা কানাগলির মেসবাড়িতে দলবেঁধে কয়েকটা চৌকি ভাড়া নিয়ে, সকাল-বিকালে কয়েকটা টিউশনি করে দুপুরবেলাটাতে চাকরি খুঁজে বেড়াই। মাঝেমধ্যে মন-দিল উদাস হলে ফার্মগেটের ছন্দ সিনেমা হলে কাটপিসের সিনেমা দেখে রাতে ঘরে ফিরে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স হতে পরস্পর পরস্পরের 'জেনারেল নলেজ' যাচাই করি।

এভাবে আমাদের জেনারেল নলেজ গাণিতিক হারে বেড়ে গেলেও জীবনের আর সব সূচকে অবনমন ঘটছিল জ্যামিতিক হারে। মেসের দমবন্ধ-করা গরমে সারা গা ঘেমে সপ্সপ্ করতে থাকলে আমাদের একমাত্র সান্তবনা ছিল – এমএ পাশের সার্টিফিকেটটির একপাশে ধরে তার সামনে শরীরটাকে এপাশ-ওপাশ দোলানো। এতে প্রথম প্রথম গা-হাত-মাথা কেমন শীতল হয়ে এলেও অচিরেই বুঝতে পারলাম – উলটোটা ঘটছে। সার্টিফিকেটটাই এতে শীতল হয়ে পড়ছে আর অবিরাম দুলুনিতে আমাদের শরীর অধিকতর গরম হয়ে উঠছে।

আমাদের স্পষ্ট মনে আছে, পাবনার মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তির এক মাস আগে, আমাদের চোখের সামনে, আমাদের আরেক বন্ধু মিসবাহ-উল হক ওর এমএ পাশের সার্টিফিকেটটা ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে একটা মারাত্মক গালি দিয়েছিল। গালি-সংবলিত বাক্যটিতে শরীফুলের নাম উচ্চারিত হওয়ায় আমরা ধরে নিয়েছিলাম ওকে উদ্দেশ করেই মিসবাহর ওই গালিটি; যদিও কেন – তা আমাদের বোধগম্য হয়নি – আমরা বাধা দিয়েছিলাম, ওরে গালি দিচ্ছিস কেন খালি খালি? তখনো তো বুঝিনি মিসবাহ এই মাত্র পাগল হয়ে গেল, চাকরি না পেয়ে কেউ যে চোখের সামনে ভালো মানুষ থেকে পাগল মানুষ হয়ে যেতে পারে – তা কেউ বললেও হয়তো আমরা এত সহজে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু মিসবাহর মুখ বন্ধ হলো না, গালিগালাজ করতেই থাকল। মতিগতি দেখে আমরা রাস্তার পাশের একটা চট-ঘেরা চায়ের দোকান হতে এক জগ পানি ওর মাথায় ঢেলে দিয়েছিলাম; এবং সেই প্রথম, সেই চায়ের দোকানে মিসবাহকে চেপে ধরে মাথা ভেজাতে ভেজাতে আমরা দলগতভাবে স্বীকার করি, যত যাই কস দোস্ত, শরীফ্যাই আমাদের টেক্কা দিয়া গেছে। ইন্টার পাশ একটা পোলা, অথচ –

আমরা বলি, এই দেশটার কিচ্ছু যে হয় না, তার কারণটা বুঝছস দোস্ত?

কারণটা আমাদের প্রত্যেকেরই জানা ছিল, তাই কেউ এ-প্রশ্নের উত্তর দিই না। বরং কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই আমরা কয়েকটা গালিগালাজ করি মিসবাহর সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এসব গালি কাকে উদ্দেশ করে – দেশের সরকার, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে সমন্বয় সম্পর্কিত ব্যবস্থা, কিংবা শরীফুল হাসান নামক আমাদের প্রাক্তন বন্ধু – সে-সম্পর্কে আমাদের বিশেষ কোনো ধারণা ছিল না। অনেকটা গালি দেওয়ার সুখেই গালি দেওয়া! একসময় আমাদের গালি দেওয়া বন্ধ হয়, মিসবাহর মুখ আর বন্ধ হয় না, একনাগাড়ে সে বিচ্ছিরি সব কথা বলতেই থাকে যতদিন না দেশের বাড়ি থেকে ওর বড়ভাই এসে একটা বেবিট্যাক্সিতে উঠিয়ে ওকে নিয়ে যায়। তার থেকেই আমরা পরে খবর পাই, মিসবাহকে পাবনায় ভর্তি করানো হয়েছে।

তিন

ব্যাপারটা ঘটেছিল আরো বছরদুয়েক বাদে।

ততদিনে আমাদের প্রত্যেকের কপালে বেশ কয়েকবার বিসিএস ফেলের বলিরেখা অংকিত হয়েছে, কারো কারো সার্টিফিকেটে যথেষ্ট রকম বয়স কমানো হয়নি বলে সেবারই তাদের শেষবারের মতো পরীক্ষায় বসা হয়ে গেছে। বিসিএসের ধান্দা বাদ দিয়ে তলে তলে প্রত্যেকেই যেমন-তেমন যে জায়গায়-সে জায়গায় – একটা চাকরি হলেই হলোর ধান্দা শুরু করেছি। আগে কোনো পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেখলে দলবেঁধে সেটাতে দরখাস্ত করতাম, ফরম ফিলাপের ব্যাপারে একে অন্যকে সাহায্য করতাম। অচিরেই আবিষ্কার করলাম একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে আমাদের মধ্যে : কোনো পত্রিকায় কোনো চাকরির বিজ্ঞাপন আগে যার চোখে পড়ে, সে সেটা লুকিয়ে রাখে আর সবার কাছ থেকে – যাতে অন্তত কয়েকজন প্রতিযোগীও যদি কমে যায় এভাবে!

এমনি একটা বিষয় নিয়ে একদিন আমাদের দুই বন্ধু ফজলুল ও ভূপেনের মধ্যে বিশাল ঝগড়া লেগে গেল। ফজলুল ভূপেনকে নির্দ্বিধায় বলে বসল : শালা মালাউনের বাচ্চা, ইন্ডিয়া যা গিয়া! কোন লালচে এই দেশে পইড়া আছিস আর লাইন বাড়াচ্ছিস?

প্রতি-উত্তরে ভূপেনও ফজলুলকে শাসাল : তুই শালা পাকির জান। ওখানে গিয়া পাক সার করলেই তো পারস! রাজাকার কোন-খানকার?

পাকিস্তানি ক্রিকেটের একনিষ্ঠ সমর্থক ফজলুলকে আমরা 'পাকির জান' বলে ক্ষেপাতাম মাঝেমধ্যেই। তাতে ও কিছুই মনে করত না, বরং প্রাণখুলে হাসত। কিন্তু আপদকালীন সময়ে সেটা শোনাল বড় নির্মম। তার ওপর 'রাজাকার'!

দুজনে বেশ হুটোপুটি লেগে গেল। কিল-ঘুসি উড়ল এগালে-ওগালে।

সেদিন রাতে, আনুমানিক দেড়টার সময়, ফার্মগেট ওভারব্রিজের পূর্ব চিপায় মাথা গুঁজে বসে থাকতে থাকতে আমাদের একজন আচমকা প্রস্তাব করে বসল : চল, হালারে খুন করি।

চার

স্বীকার করা দরকার, সেদিন আমরা কেরু অ্যান্ড কোংয়ের ফরেন লিকার 'জরিনা ভদকা' বেশ কয়েক ঢোক করে গিলেছিলাম। তাতে প্রথমে সবকিছু কেমন হালকা হয়ে গিয়েছিল। কেমন ভেসে বেড়াচ্ছিলাম সুতোকাটা ঘুড়ির মতো সবাই মিলে। তারপর হঠাৎ গোত্তা লাগল। মাধ্যাকর্ষণের প্রবল টানে মাথা যেন ঘাড়ের ভেতর ঢুকে যেতে চাইল। আচমকা কিছু একটা, খুব জরুরি কিছু একটা করে ফেলার প্রচ- তাগিদ দেখা দিলো আমাদের মধ্যে। সে-সময়েই ওই খুন করে ফেলার প্রস্তাবটা উচ্চারিত হয়। যদিও 'হালা'টি কে? – সেটা প্রস্তাবনায় ছিল না, তবু দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন না করেই আমরা স্থির বুঝতে পারি, 'হালা' মানে শরীফুল। প্রস্তাবটা একবাক্যে পাশ হয়ে যায় আমাদের মধ্যে। কোনোরকম দলীয় সমন্বয় ছাড়াই আমরা ঝট করে উঠে দাঁড়াই নিজ নিজ পায়ে : চল, চল, শরীফ্যারে খুন করুম।

কেউ একজন ভদকার বোতলটাকে ক্রিকেট বলের মতো ছুড়ে মারে রাস্তার মাঝখানে লোহার ডিভাইডারের দিকে; এবং রাতের নির্জনতায় ডিজিটাল সাউন্ড কোয়ালিটির ঝনঝন শব্দ তুলে বোতলটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে কালো পিচের রাস্তায়।

এরপর ফাঁকা রাস্তায় গলাগলি করে মগবাজারের দিকে হাঁটতে শুরু করি আমরা। যেতে যেতে শরীফুলকে খুন করার মতো অনেক কারণ পরস্পরকে জানিয়ে নিজেদের চাঙ্গা করে তুলতে থাকি :

হালায় গাড়িত চড়ে, বাড়িত ঘুমায়, বউ নিয়া মউজ মারে।

ইন্টার পাশ কইরা ওই হালায় কোটিপতি। এদেশের আর উন্নতি হইব ভাবছো?

শরীফ্যা নিশ্চয়ই ইয়াবা ব্যবসা করে। ইয়াবা ব্যবসা ছাড়া সম্ভব এতকিছু করা!

সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে : বাড়ি-গাড়ি থাকব এমএ পাশওয়ালাদের। ইন্টার পাশ কইরা গাড়ি চড়ন দ-যোগ্য অপরাধ কি না ক দেখি!

হালার কত্ত বড় সাহস আমগোরে দাওয়াত দিয়া কোর্মা-পোলাও খাওয়ায়! আবার আইফোন বাহির কইরা সেলফি তোলে!

এ-ধরনের আরো অনেক কারণ বলাবলি করতে করতে, রাত তিনটা বিশে আমরা এসে দাঁড়াই মগবাজারের দোতলা বাড়িটির সামনে – যেখানে এই মাসতিনেক আগেও শরীফুল হাসানের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকীতে খালি হাতে মুখ লুকিয়ে এসে প্রাণভরে কোর্মা-কালিয়া খেয়ে গিয়েছিলাম।

বস্ত্তত শরীফুল আমাদের প্রায়ই খাওয়াত। তার একটা নাদুসনুদুস ছেলে হয়েছিল। নাম রেখেছিল 'প্রিয় হাসান'। প্রিয় হাসানের জন্মদিন, আকিকা, মুসলমানি, হাতেখড়ি ছাড়াও শরীফুলের নিজের জন্মদিন (ওর যে জন্মদিন আছে – এতকাল এ-তথ্যটি আমাদের জানা ছিল না), তার সিস্নম বউয়ের জন্মদিন, তাদের সম্মিলিত বিবাহবার্ষিকী – এসব ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে তো সে কখনো আমাদের ভোলেইনি, এমনকি নানান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসেও তার বাসায় পার্টি লেগে থাকত; এবং এগুলোতেও আমাদের দাওয়াত পড়ত অবশ্যম্ভাবীভাবে। এ-কথা অস্বীকার করলে আমাদের অন্যায় হবে যে, শরীফুল এসব দাওয়াত স্রেফ ফোন করে দিত না। নিজে সশরীরে এসে দাওয়াত দিত আমাদের।

টয়োটা গাড়ি ছেড়ে সে তখন একটা বিএমডবিস্নউ কিনেছিল। বউয়ের লিপস্টিকের কালারের সঙ্গে মিলিয়ে গাড়ির রং পছন্দ করেছিল সে – মেরুন। তথ্যটি তার বউই আমাদের দিয়েছিল; এবং যে-তথ্যটি দেয়নি – তা আমরা নিজমনে বুঝে নিয়েছিলাম – মেরুণ রঙের গাড়ি কিনে সে তার বউকে বলেছিল, 'মেরুন রঙের গাড়ি কিনলাম ডার্লিং। এর মধ্যে বসে থাকলে মনে হয় তোমার ঠোঁটের উষ্ণতার মধ্যে ডুবে আছি।'

ওই গাড়িটি আমাদের মেসের গলিতে ঢুকত না। বড় রাস্তার মোড়ে গাড়িটা পার্ক করে শরীফুল তার ড্রাইভারকে পাঠাত আমাদের ডেকে নেওয়ার জন্য। আমরা তখন নগদানগদি ট্রিপল ফাইভ সিগারেট এবং আসন্ন দাওয়াতের কথা ভেবে দলবেঁধে ছুট লাগাতাম শরীফুলের সঙ্গে দেখা করতে। কাছে গেলে সে নিজের সানগস্নাসটি চোখ থেকে কপালের দিকে ঠেলে দিয়ে বলত, উঠে বস। ধানম–তে একটা নতুন তন্দুরির দোকান হইছে। চল, খাওয়াইয়া আনি।

আমরা সবাই হইহই করে, নানান ফাঁকফোকরে চাপাচাপি করে গাড়িতে উঠে বসতাম, উঠেই ড্রাইভারকে তাড়া লাগাতাম, 'এসি বাড়াও মিয়া। এত গরমে মানুষ বাঁচে।' এ-কথাতে ড্রাইভারের নাক এবং মুখ কুঁচকে যেত। তবে সে যথারীতি এসি বাড়াত। তারপর আমাদেরই কারো ফরমায়েশ মতো 'দিল তো পাগল হ্যায়, দিল দিওয়ানা হ্যায়'-এর সিডি বাজিয়ে গাড়ি ছোটাত ধানম–র দিকে।

যেতে যেতে শরীফুলের সানগস্নাস আবার তার চোখে নেমে আসত, আলো-আঁধারির ঘেরাটোপ থেকে সে আমাদের তার সাম্প্রতিক সফলতার নানা গল্প শুনিয়ে যেত। কোন গার্মেন্টস কারখানা কেনার পরিকল্পনা করছে সে, কোন বায়ারের সঙ্গে দেখা করতে সপ্তাহখানেক আগে সুইডেন না সুইজারল্যান্ড ঘুরে এসেছে, আগামী মাসে সে আর ভাবি মিলে পোখরায় বেড়াতে যাচ্ছে, ছেলেকে কোন ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তির জন্য দুই লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছে – এমনি ধরনের বিষয় উঠে আসত তার কথায়। এসব শুনতে শুনতে, হিন্দি গানের সুরে হাতের আঙুলে চুটকি বাজাতে বাজাতে, বাড়িয়ে দেওয়া এসির আয়েশে আর্দ্র হতে হতে তন্দুরি চিকেনের ঘ্রাণ পেতে শুরু করতাম আমরা; এবং প্রায় ক্ষেত্রে ধানম– আসার আগেই গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়তাম।

এত শামিত্মর ঘুম, হোক তা মিনিট কয়েকের জন্য – সারা বছরে আর কখনো, কোথাও ঘুমিয়েছি বলে মনে পড়ে না আমাদের।

বলা বাহুল্য, শরীফুলের প্রতিটি দাওয়াতে আমরা যেতাম। সেই যে বহু বছর আগে তার বাসায় প্রথম দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম, সেদিন আমরা বহু চিমত্মা ও দেনদরবার করে উপহার হিসেবে ফুল জিনিসটাকে পছন্দ করেছিলাম। দামে কম, অথচ সস্তা বলে নাক সিঁটকানোর কোনো উপায় নেই, অতি উন্নত ও স্নিগ্ধ রুচির মানুষরাই তো উপহার হিসেবে ফুল দেয়! শাহবাগ মোড়ের মালঞ্চ পুষ্পালয় থেকে কয়েকটি রজনীগন্ধার স্টিক একসঙ্গে বেঁধে, বাঁধের জায়গায় একটা সাদা কার্ড সেঁটে, তাতে রবীন্দ্রনাথের প্রেমের কবিতার কয়েকটা লাইন লিখে হাত-পা দোলাতে দোলাতে আমরা শরীফুলের ফ্ল্যাটে উপস্থিত হয়েছিলাম সেদিন। ফুলটা কার হাতে থাকবে, সেটা কোন কায়দায় ভাবির হাতে তুলে ধরে একটু নাটকীয় কায়দায় 'জনম জনম আপনাদের বন্ধন অটুট থাকুক' বলবে – এসব ঠিক করতে করতে গিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই, দরজার ঠিক পাশে একটা টেবিলের ওপর জড়ো করা উপহারের পর্বতপ্রমাণ প্যাকেট দেখে, সেই প্যাকেটগুলোর সাইজ এবং দামি র‌্যাপিং পেপারে ঠিকরানো আলোয় এক তোড়া রজনীগন্ধা-হাতে দাওয়াত খেতে উপস্থিত হওয়া আমরা বেমালুম হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। শরীফুল সেদিন তার বাসায় আমরা ছাড়াও আরো বহু লোককে দাওয়াত দিয়েছিল; এবং নিঃসন্দেহে তাদের কেউ আমাদের মতো তার ছাত্রাবস্থার বন্ধু ছিল না। ঝাঁ চকচকে স্যুটে-বুটে-শাড়িতে খুশবুমাখা একদল মানুষের মধ্যে নিজেদের কেমন গোবেচারা মনে হলেও আমরা সেটা 'শিগগিরই আমাদেরও হবে' ভাবনায় উড়িয়ে দিতে পেরেছিলাম। দরজায় আমাদের দেখতে পেয়ে শরীফুল সহাস্যে এগিয়ে এসেছিল, সঙ্গে তার বউ; এবং তারা দুজনেই কোরাসে যে-কথাটি বলেছিল, সেটা হচ্ছে : আরে কী দরকার ছিল উপহার আনার!

ফুলটা সেদিন আমরা ওদের হাতে দিইনি, তারাও নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়নি। ওটা রাখা হয়েছিল উপহার টেবিলটারই এক কোনায় অতি সংকোচের সঙ্গে এবং কিছুক্ষণ পরে, অসাবধানে রাখার ফলেই হয়তো-বা – বেশ শব্দ করেই ওটা নিচে পড়ে গিয়েছিল। বহুক্ষণ বাদে, গলা পর্যন্ত খাওয়া-খাদ্য খেয়ে আমরা যখন বেরোচ্ছিলাম, দেখে এসেছিলাম – টেবিলের ওপর থেকে আর সব উপহার ভেতরের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেবল আমাদের ফুলটা রয়ে গেছে টেবিলের নিচে পড়া অবস্থায়। তাতে স্কচটেপ দিয়ে আটকানো কার্ডে লেখা রবিবাবুর লাইন মুখ ভেংচাচ্ছে মেঝেতে শুয়ে শুয়ে :

প্রেম-রহস্য সন্ধান পথের যাত্রী –

মধুময় হোক তোমাদের দিনরাত্রি –

নামুক দোঁহার শুভদৃষ্টিতে

বিধাতার শুভদৃষ্টি।

সেদিন মেসে ফিরে উপহার বিষয়ে আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছিলাম। আলোচনা শেষে আমরা এই সিদ্ধামেত্ম পৌঁছেছিলাম : বন্ধুর বাড়িতে যাব – তার আবার উপহার-টুপহার কী! তারপর আমরা এখনো ছাত্র। উপহার নিয়ে গেলে শরীফুল আর তার বউয়ের মনে দুঃখই দেওয়া হয়। দুজনেই কত সুন্দর করে বলেছিল : কী দরকার এসব উপহার আনার!

সুতরাং সেদিনের পর থেকে কখনোই আর কোনো উপহার কেনার কথা আমরা ভাবিনি। দরজা খোলা পেয়ে 'আরে ভাবি, খবর কী!' বলতে বলতে স্মার্টলি ঢুকে পড়েছি ঘরভর্তি দামি মানুষের মধ্যে এবং শরীফুলের কাঁধে হাত রেখে সে যে আমাদের প্রাণের বন্ধু, তার বাড়িতে আসতে আমাদের উপহার লাগে না – সেটা বুঝিয়ে দিয়েছি সবাইকে। যদিও প্রতিবারই মনে মনে নিজেদের এই প্রবোধ দিয়েছিলাম আমরা : দেখিস, কদিন পরে! চাকরিটা হোক, তখন দেখি কত উপহার নিতে পারিস!

সেই চাকরি তখনো আমাদের হয়নি এবং উপহারের বদলে মুখে ভদকার গন্ধ ও গালিগালাজ নিয়ে আমরা গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম শরীফুলের ফ্ল্যাটবাড়ির দরজায়, সেই মাঝরাত্রি পেরোনো সময়ে। কলাপসিবল গেটে জোরে ধাক্কা দিয়ে আমরা চেঁচিয়ে উঠেছিলাম : ওই শরীফ্যা, বাহির হ। আজকে তোর খবর আছে!

আমাদের ধাক্কায় লোহার গেট থরথর করে কেঁপে উঠেছিল। সুনসান গলিতে সে-শব্দ শোরগোলে রূপ নিচ্ছিল ক্রমশ। একসময় গেটের মাঝবরাবর একটা আধাহাত পরিমাণ বর্গাকার জানালা খুলে গেল। সেখান দিয়ে একজোড়া ভীত চোখ জিজ্ঞেস করল, আপনারা কারে চান?

চোখদুটো ও ভয়ার্ত স্বরের মালিক এই দারোয়ানটিকে আমরা চিনতাম। সেও আমাদের চিনত। দাওয়াত খেতে এলে সালাম-টালামও দিত মাঝেমধ্যে। কিন্তু এখন সে আমাদের চিনতে পারছিল না। আমরা তাকে ধমকে উঠলাম : ওই বেটা, শরীফ্যা কই? তারে ডাইক্যা আন।

আমাদের একজন বলে : হালায় নিশ্চয়ই বউ নিয়া ঘুমাইয়া আছে।

দারোয়ানটা মিনমিন করে জানায় : এইখানে শরীফ্যা নামে তো কেউ থাকে না। আপনেরা ভুল বাড়িতে আসছেন।

আমরা গেটে চপেটাঘাত করি সজোরে। আমাদের একজন দারোয়ানটিকে একটা কুৎসিত গালি দিয়ে বলে : হারামজাদা তোর বাপের নাম ভুইলা গেছস? শরীফ্যারে চিনস না? শরীফুল হাসান না বললে নবাবের ব্যাটার অপমান হয়?

এ-কথাতে আমরা বাকি সবাই হা-হা করে হেসে উঠি। আমরা এতক্ষণ খেয়াল করিনি, আমাদের ঠিক পেছনে কখন যেন দুটো নেড়ি কুকুর এসে জুটেছিল এবং বসে বসে লেজ নাড়ছিল। আমাদের সম্মিলিত হাসির ধ্বনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও কয়েকবার ডাক ছাড়ল : কুঁইই, কুঁইই।

দারোয়ানটির গলায় স্পষ্টতই ভয়। সে বলল : স্যার তো দেশে নাই। আমেরিকা গেছে।

আমরা হইহই করে উঠি। নিশ্চয় মিথ্যা কথা বলছিল বদমাশটা।

আমাদের একজন হিসহিস করে বলে উঠল : তোমার স্যার কী ছিঁড়তে আমেরিকা গেছে? দেশে কি ছেঁড়ার জিনিসের অভাব?

এ-কথাটায় – শরীফুল আমেরিকা গিয়ে কিছু একটা ছিঁড়ছে বসে বসে – এ-দৃশ্যটি আমাদের মাথায় ঝট করে খেলে যায়। আমরা হা-হা করে হেসে উঠি। কুকুর-দুটো ডাক ছাড়ে : কুঁইই, কুঁইই।

কিন্তু দারোয়ানটার কথার সত্যি-মিথ্যার একটা যাচাই তো হতে হয়! সত্যিই কি শরীফ্যা আমেরিকায় এখন? জহির ঝট করে ওর পকেট হতে মোবাইল ফোনটা বের করে। তারপর মনোযোগ দিয়ে সেটা টিপতে শুরু করে সে। মিনিটখানেক বাদে সে জানায় : কথা সইত্য রে। হালায় এখন আমেরিকা।

ফোনের স্ক্রিনটা সে আমাদের মাঝখানে তুলে ধরে। ফেসবুক পেজ খোলা। তাতে শরীফুলের ফটো-স্ট্যাটাস। বউয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে আছে সে। পেছনে নায়াগ্রা জলপ্রপাত। অঝোরে জল ঝরছে সেখানে। শরীফুল লিখেছে : ফিলিং ভেজা ভেজা মন, উইথ মীরা হাসান। ইন কানাডা। নায়াগ্রা ওয়াটার ফলস।

এবং তাতেও শেষ হয়নি। স্ট্যাটাসে একটা গানের কলি : আজ মন চেয়েছে, আমি হারিয়ে যাব, হারিয়ে যাব আমি তোমার সঙ্গে।

শরীফুল ও মীরা হাসানের ক্লোজআপ ছবি। ঠোঁটে দুজনেরই স্পাউটের ভঙ্গি।

হঠাৎ করে যেন আমাদের সব উৎসাহ মিইয়ে যায় সাবানের বুদ্বুদের মতো। ভদকার নেশাটা আচমকা ঝিমিয়ে গিয়ে বিপুল ক্লামিত্ম ভর করে পায়ে। স্পাউট করা ছবিতে শরীফুলকে হিজড়াদের মতো দেখালেও মীরা হাসানের মোহনীয় ঠোঁটের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে আমরা গেটের সামনে হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়ি।

মাথাটা হঠাৎই ভীষণ রকম ঘুরে ওঠে আমাদের। পেটের মধ্যে ঘূর্ণিবাত্যার তোলপাড় শুরু হয়ে যায় এবং গলায় প্রচ- ওয়াক ওয়াক ধ্বনি তুলে উঠে আসে বমি।

শরীফুলের ফ্ল্যাটে ঢোকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তায় বসে বসে আমরা সবাই প্রাণভরে বমি করি; এবং বমির তরলে দানা দানা হয়ে লেপটে থাকতে দেখি অনেক সার্টিফিকেট, ক্লাস নোট, লেকচার, তত্ত্ব-তথ্য-উপাত্ত, আট বছরের সেশনজট, জেনারেল নলেজ। রাস্তার পাশের নর্দমার দিকে গড়িয়ে যেতে দেখি আমাদের উপোসি যৌবন ও জীবনের অনেক অধ্যায়, দলা পাকানো, থিকথিকে, বিপুল ঘেন্নামাখা।

সেই বমিতে আঙুল চালিয়ে আমরা হয়তো শেষবারের মতো বাঁচানোর চেষ্টা করতাম এসবের কিছু অংশও। তার আগেই কুকুর-দুটো লম্বা জিভ বের করে এগিয়ে আসে। চকাস চকাস শব্দ তুলে নিমেষে পরিষ্কার করতে শুরু করে শরীফুলের ফ্ল্যাটের সদর দরজা।

উপসংহার

আমরা ভেবেছিলাম – গল্পটি আমাদের।

আমরা ঠিকই ভেবেছিলাম। এ-গল্পটি শরীফুল হাসানের নয়। এমএ পাশ শিক্ষিত বেকারদের গল্পে শরীফুল হাসানদের কোনো ভূমিকা থাকে না। তারা বড়জোর রাত-বিরেতে সস্তা মদ খেয়ে, ফাঁকা রাস্তায় মাতলামি করে বমি করতে ধেয়ে আসা মাতালদের জন্য কলাপসিবল গেট আটকে রাখে।

কিংবা আমাদের ভাবনাটি ভুল। গল্পটি আসলে শরীফুল হাসানেরই। এমএ পাশ শিক্ষিত বেকারদের কোনো গল্প থাকে না। তাদের মুরোদ বড়জোর রাত-বিরেতে সস্তা মদ খেয়ে, ফাঁকা রাস্তায় মাতলামি করতে করতে শরীফুল হাসানদের আটকানো কলাপসিবল গেটের সামনে বমি করে আসা পর্যন্তই – যা সাফ করতে মিউনিসিপ্যালিটির ঝাড়ুদার পর্যন্ত লাগে না, নেড়ি কুত্তার জিহবাই যথেষ্ট।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top