-অনিকেট সাহেব আমাকে একটু সাহায্য করবেন।
আজ অফিসে মিটিং ছিল। মিটিং এ আমাদের
একটা বড় প্রজেক্ট সমন্ধে আলোচনা করা
হয়েছে। গত প্রজেক্টের কাজ কালই বসকে জমা
দিয়েছেন মাসুদ ভাই অনেক ভাল ভাবে।
প্রমোশন লেটারটাও পেয়েছেন আশানুরূপ
ভাবে কালই। তাই নেক্সট প্রজেক্টের কাজের
দায়িত্বও পরেছে তার হাতেই। মিটিং শেষে
যে যার মত কাজে নেমে পড়লাম। তার কিছুক্ষন
পরেই মাসুদ ভাই এসে উপরের কথাটি বললেন।
আমি বললাম, জি নিশ্চয়ই। উনি বললেন, আমি
অফিস ক্যান্টিনে অপেক্ষা করছি। আমি একটু
হেসে তাকে সম্মতি জানালাম। কিছুক্ষন পর
আমি ক্যান্টিনে গেলে তিনি আমাদের জন্য
কফির অর্ডার করলেন। কফি খেতেই খেতেই উনি
আমাকে প্রশ্ন করলেন, আমি কেন এরকম? কেন
আমি তাকে সবসময় সাহায্য করে থাকি? আমি
বললাম, একজন অফিস কলিগকে সাহায্য করার জন্য
এভাবে প্রশ্ন করা হবে এটা আমি ভাবিনি।
উনি বললেন, আজ আমার জায়গায় আপনার
প্রমোশন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি
নিজেই অনেক কাজ করে সেগুলো আমাকে
দিয়ে বসকে দেখিয়েছেন। বস এর আগেও
আপনাকে প্রমোশন দিতে চেয়েছিলেন তবে
আপনি নেন নি। বরং বসকে আমার প্রমোশনের
ব্যাপারে বলেছেন। আমি জানতে চাই আপনি
কেন এসব করছেন? আমি বললাম, দেখেন ভাই
আমি একলা মানুষ। প্রমোশন পেয়ে বেশি বেতন
আমি কি করব। তাছাড়া আপনি বিবাহিত। তাই
আপনার বেপারটা একটু নিজ থেকে ভাবছি এই
আরকি। অন্য কিছু না। আর প্লিজ এসব বিষয়ে কথা
না বাড়াই। বরং চলুন নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু
করি। উনি হাসলেন, বললেন, ঠিক আছে তবে
একদিন আমার বাসায় ডিনার করতে হবে। আমি
একটু হেসে বললাম ঠিক আছে।
কফি শেষ করে এসে ডেস্কে এসে বসলাম তখনি
আমার কলিগ নিলীমা বলল, একজন ছেলের
সাথে কফি খাওয়া যেতে পারে তবে আমার
সাথে কেন নয়। তাছাড়া আপনি আমাকে
দিয়ে আপনার কাজ করিয়েছেন তাই চলুন
আমাকে আজ কফি খাওয়াবেন। আমি একটু ইতস্তত
হয়ে বললাম, কেবলি একটা কফি খেয়ে আসলাম,
এখন আর খেতে ভাল লাগবে না। অন্য কোনদিন।
ও বলল, না আজকেই। যদি এখন যেতে না চান তবে
আজকে দুপুরে আমার সাথে লাঞ্চ করবেন। আমি
অগত্যা তার কথার সম্মতি জানালাম। এর
কিছুক্ষন পরেই বস সবাইকে কাল সন্ধায় সবাইকে
তার বাড়িতে আমন্ত্রন করলেন। এটা মুলত নতুন
প্রজেক্টের জন্য পার্টি। কিছুক্ষন পর এক বন্ধু ফোন
দিলে আমি রিসিভ করে হ্যালো বললাম। ওপাশ
থেকে বন্ধু বলল, জরুরী ভিত্তিতে এক বাচ্চার
এবি পজেটিভ রক্ত লাগবে। আমি
হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে বেড়িয়ে
পড়লাম। রক্ত দিয়ে আসতে আসতে বিকেল হল।
অফিসে এসে বসের রুমে গিয়ে সব বুঝিয়ে
বললাম। ভেবেছিলাম না বলে গিয়েছি বলে
হয়ত বস রাগ করবে কিন্তু সবটা শোনার পর উনি
কিছু বললেন না। বসের রুম থেকে বেরিয়ে
ডেস্কে আসতেই দেখি নিলীমা মনমরা হয়ে
মাথা নিচু করে বসে আছে। এরকম এর আগেও
হয়েছে তবে আজকে একটু আমারি ভুল ছিল।
মেয়েটা কি চায় তা আমি জানি। কিন্তু
আমার পক্ষে যে আর কাউকে মনে স্থান দেওয়া
সম্ভব হয়ে উঠছে না। এর আগেও তাকে আমি
অনেক এভোয়েড করেছি। কিন্তু আজ কেন
জানি অন্যরকম লাগছে। মেয়েটা দেখতে
অসম্ভব সুন্দর কিন্তু এই মনমরা ভাবটা তাকে
বিষন্নরুপ এনে দিয়েছে। আমি তার সামনে
গিয়ে বললাম, দুঃখিত। এক শিশুর রক্তের
প্রয়োজন ছিল তাই আমি গিয়ে দিয়ে আসলাম।
আর এতেই দেরী হয়ে গিয়েছে। নিলীমা কিছু
বলল না। শুধু বলল, আমাকে জানিয়ে যেতে
পারতেন। এটা বলেই চলে গেল। আমি এসব বিষয়
ইচ্ছে করেই ভাবি না। ভাবতে ভাল লাগে না।
তাই অফিসে কাজ শেষ করে বাসায় আসলাম।
ভাবছি কাল বসের পার্টিতে যাব কিনা।
সেখানে নিশ্চয়ই বেলা আসবে। পরোক্ষনে
ভাবলাম বসের পার্টি, না গেলে উনি খারাপ
কিছু ভাবতে পারে। তাই পরেরদিন সন্ধার একটু
পরে আমি পার্টিতে গেলাম। সবার শেষে এক
কোনে আমি দাড়িয়ে দেখছি। সামনে সবাই
কাপলরা রয়েছে। এসবের মাঝে নিজেকে
অসহায় লাগছে। হঠাত করে চোখ পড়ল বেলার
উপর। আজ অনেকদিন পর তাকে দেখলাম এখনও
আগের মতই আছে। কি অদ্ভুত ছিল আমাদের
ভালবাসা যেটা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
মুখে আমার একটু কষ্টমিশ্রিত হাসি ভেসে
উঠলো। নিচের দিকে তাকিয়ে এসব
ভাবছিলাম। হঠাত শুনলাম, অনিকেট সাহেব
আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন। সামনে তাকাতেই
দেখলাম সবাই গোল হয়ে বসেছে এবং আমার
দিকে তাকিয়ে আছে। আরো সামনে দেখলাম
বস আমাকে ডাকছে। আমি ওখানে যেতেই
দেখলাম বেলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বস বলল, আজ বস হিসেবে নয়,বন্ধু হিসেবে সবার
হয়ে একটা প্রশ্ন করছি। প্রশ্নটা আমাদের এখানে
উপস্থিত সবার। সেটা হল, আপনি কেন সব সময়
চুপচাপ থাকেন? প্রমোশন দিলে এরিয়ে যান?
এখনও বিয়ে করছেন না কেন? আপনার গল্পটা কি
আমাদের বলবেন আজ দয়া করে?
সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই
একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিলীমা অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
মাসুদ সাহেব আমাকে দেখছে কিন্তু বেলা
মাথা নিচু করে আছে। আমি বসকে বললাম, ঠিক
আছে বলব,তবে এর পরে আর কেউ কিছু বলবেন না
আমায়। সবাই রাজী হল। আমি বলা শুরু করলাম,
আমি তখন সবে মাত্র অনার্স তৃতীয় বর্ষে। আমার
থেকে এক বছর জুনিয়র ছিল বেলা। একই বিষয়
ছিল বলে
আমদের প্রতিদিন ক্যাম্পাসে দেখা হত। আমি
তাকে অনেক বেশিই পছন্দ করতাম। তাই একদিন
তাকে আমার ভালবাসার কথা জানালাম।
সেও হাসি মুখে বলল, প্রতিদিন যদি
ক্যাম্পাসে আগের মত মায়াবী চোখে
তাকিয়ে থাকতে পারেন তবে আমিও
ভালবাসি। বুঝেছিলাম এসবের মাঝে সেও
আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। আমি অনেক
খুশি হয়েছিলাম সেদিন। তবে আমাদের সম্পর্ক
আজ কালের সম্পর্কের মত ছিল না। একে অপরকে
অনেক ভালবাসতাম। তবে সেটা কোন নষ্টামির
মধ্যে দিয়ে নয়। একে অপরকে বিশ্বাস করতাম,
সম্মান করতাম, শ্রদ্ধা করতাম। তাকে নিয়ে যে
অনুভুতি তৈরী হত তা দিয়ে আমার শরীরে
শিহরন বয়ে যেত। আমার ভালবাসার মানুষের
নামটা ছিল (সংক্ষেপে) বেলা। পুরো নাম
বললাম না। একদিন সে বলল, চল আজ আমরা একটা
কথা ওয়াদা করি। তার প্রতি বিশ্বাস ছিল তাই
বললাম বল কি কথা। ও বলল, আমরা যেখানেই
থাকি, যেমনই থাকি, যদি আমরা একে অপরের
নাও হতে পারি তবুও আমরা একে অপরকে সম্মান
করব। আমরা আমাদের ভালবাসাকে কখনও
অসম্মান করব না। আমি সেদিন অনেক খুশি হয়ে
সেই ওয়াদা করেছিলাম। তার প্রতি
ভালবাসাও যেন অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
তার তখন ফোন ছিল না। তাই ক্যাম্পাসেই তার
সাথে কথা বলতাম। এদিকে আমার যখন ফাইনাল
ইয়ার শেষ হল তখন আমি এই ব্যস্ত শহরে চলে আসি
একটা চাকুরীর জন্য। আসার সময় প্রথমবারের মত
বেলা আমার হাত ধরে কেঁদেছিল। বলেছিল,
আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না।
তোমার প্রতি আমার ভালবাসার কখনও অভাব
ছিল না। কিন্তু তুমি পারও এই ভালবাসার
পুর্নতা দিতে। আমি তাকে সেদিন বলেছিলাম
উপরআলার উপর বিশ্বাস রাখো। তিনি নিশ্চয়ই
ভাল কিছু করবেন। ও বলেছিল, বাসা থেকে
বিয়ের কথা চলছে। আমি যেন জলদি কিছু করি।
তার চোখে সেদিন আমি তার ভালবাসার
মানুষকে হারানোর ভয় দেখেছিলাম। তাকে
আশ্বস্ত করে আমি চলে এসেছিলাম। এরপর
চিঠিতেই কথা হত বেশির ভাগ। তার বাসার
ল্যান্ডফোনে কয়েক মিনিটের মত কথা হত।
এদিকে আমি চাকুরীর জন্য হন্তদন্ত হয়ে ঘুরে
বেড়াচ্ছিলাম। কিন্তু অনেকদিন হওয়ার পরও
আমি চাকুরী মেনেজ করতে পারিনি।
এভাবেই আমি এই ব্যস্ত শহরে কখনও দুমুঠো ভাত
আবার কখনও বেলার জন্য একটা চাকুরী খুজতে
মরিয়া হয়ে উঠি। প্রায় দুই বছর পর আমি একটা
চাকুরী পাই। চাকুরী পাওয়ার পর আমি
বেলাকে তার বাসার ল্যান্ডফোনে ফোন
দিয়ে জানাতে চেয়েছি কিন্তু আমি
বেলাকে পাইনি। তখন রন্জন দত্তের বেলাবোস
গানটা খুব গাইতাম। ব্যর্থ হয়ে একটা চিঠি
পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন যাওয়ার পরও
যখন তার কোন জবাব এলো না তখন আমি বেলার
কাছে ফিরে আসার জন্য রওনা দিলাম। সন্ধায়
বাড়ির রাস্তা দিয়ে হাঠছি এমন সময় দেখলাম
কার যেন বরযাত্রী যাচ্ছে বউ নিয়ে। আমি
কেন জানি চুপ হয়ে গেলাম ভাবছি বেলা
নয়তো আবার। তারপরেই ভাবলাম নাহ কি
ভাবছি। কার না কার বিয়ে, আগে আসলে
বিয়েটাও খাওয়া যেত। কিন্তু বেলার বাসার
সামনে যেতেই.......
সামনে যেতেই কি হল অনিকেট সাহেব( সবাই)
আমি একটু পানি খেতে খেতে বেলার দিকে
তাকিয়ে দেখলাম এখনও মাথা নিচু করে আছে।
পানি খাওয়ার পর বললাম ওটা বেলারই বিয়ে
ছিল। বিয়ের বাড়িতে ঢুকার পরেই কিছু লোক
আত্মীয় ভেবেই আমাকে খাওয়ার টেবিলে
বসিয়ে দিল। আমি কাঁদিনি সেদিন। রাতটা
বেলার গ্রামেই কাটিয়েছিলাম। পরেরদিন
বেলা তার জামাই সহ বাসায় আসলো। সবাই
তার সাথে কথা বলছে। আমি রাস্তায়
দাড়িয়ে সব দেখছিলাম। বেলা একসময় আমায়
দেখতে পায়। সবাই চলে গেলে সে আমার
কাছে আসল। কি দিয়ে কথা শুরু করব ভাবতেই
পারছিনা। বেলাই বলল,
- কবে এসেছো(বেলা)
- কালকে। অভিনন্দন তেমাকে।
- (মুখ নিচে করে) চাকরীটা কি পেয়েছো।
(বেলা)
- হ্যা বেলা, চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি।
তোমাদের বাসায় ফোন করেছিলাম। কেউ
ধরেনি।অনেকবার দিয়েছিলাম। কারও সারা
পাই নি।
- বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল। আমি
অনেকবার বাবাকে তোমার কথা বলেছি তবে
তিনি আমাকে আর সময় দেন নি। অনেকবার
তোমার কথা বলে বিয়ে আটকিয়েছি কিন্তু
এবার বাবা কিছুই শুনল না। বাবা তোমাকে
অনেক কিছু বলতে গেলে আমি বিয়েতে
রাজী হয়ে যাই। সব কিছুই আমি সহ্য করতে
পারবো কিন্তু আমাদের ভালবাসার অসম্মান,
তোমার অসম্মান আমি সইতে পারব না তাই
আমি রাজী হয়েছি।(বেলা)
- তুমি কাঁদছো কেন বেলা। তুমি তোমার
ওয়াদা রেখেছো। আমি তোমাকে বিশ্বাস
করি বেলা। তুমি আমাকে এতোটা ভালবাস
কিন্তু আমি তো তোমায় কম ভালবাসি না।
আমিও যে আমার ভালবাসাকে অসম্মান করব না
বেলা।
- আজ আমাদের কিছু করার নেই তাই না।
আমাদের সমাজের রীতিকেই মেনে নিতে
হবে। তবে আমি যে ভালবাসি তোমায়।
(বেলা)
- হ্যা বেলা। আমরা যা হয়েছে তাই মেনে
নিব। আমাদের ভালবাসা যে এই সমাজের
রীতি থেকেই হয়েছিল। তবে আমি তোমাকে
এতটাই ভালবেসেছি যে আর কাউকেই আমার
দেবার মত কিছু নেই। তবে আমি তোমাকে
চিঠি পাঠিয়েছিলাম বেলা।
- আমি চিঠি পেয়েছিলাম কাল। বাবাকে
দেখিয়েও ছিলাম কাল। কিন্তু উনি আমায় কিছু
বললেন না। শুধু বিছানায় বসে গেলেন। বাবার
সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমার কিছু করার
ছিল না। তাই আজ আমি ( কেঁদে দিল)(বেলা)
- কেঁদনা বেলা। আমি উপরআলার উপর তোমাকে
বিশ্বাস করতে বলেছিলাম। তুমি তাই করেছো।
সামনেও তাই করবে। কিন্তু আমরা পারলাম না
সারাজিবন একসাথে থাকতে। হয়ত আমাদের
ভাগ্যে এটাই ছিল। উনি হয়ত এটাতেই মঙ্গল
দেখছেন।
- আমার যে তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে।
আমিও যে আর কাউকে ভালবাসতে পারব না
এটা কি তুমি বুঝছো।(বেলা)
- তাহলে যে এতদিনের ওয়াদা ভেঙ্গে যাবে
বেলা। এতে যে তোমার ভালবাসার অসম্মান
হবে। তোমার ভালবাসা যে এমনটা নয়। আমরা
জিবনের সবথেকে কঠিন মূহুর্তে একে অপরের
পাশে আছি শুধু আমাদের দুজনের মাঝে
বিশ্বাস আছে বলে। এটাকে ভেঙ্গে দিও না
বেলা। মনে রাখবে আমি সবসময় তোমার
পাশেই আছি। আর যার ভালবাসার এতো জোর
সে কখনও কাউকে ধোঁকা দিতে পারে না
বেলা। তুমিও তাই তোমার স্বামীকে সুখে
রাখবে এটাই আশা করছি।
- আমি তোমার মত মানুষকে ভালবেসেছি
এটাই আমার জিবনের সব থেকে বড় স্বার্থকতা।
আমি কি তোমার পা টা একটু ছুতে পারি।
(বেলা)
- কিছু না বলে তাকিয়ে আছি তার দিকে। সে
নিজেই আমার পায়ে হাত বুলিয়ে নিল।
- তুমি কি আমায় শুধু একবারের মত তোমার বুকে
জড়িয়ে নিবে?(বেলা)
- তুমি বিবাহিত বেলা। এটা করলে যে তাকে
ধোঁকা দেওয়া হবে।
- আমি কখনই আমার ভালবাসার অসম্মান হতে
দিব না। তবে সেই ভালবাসা থেকে বলছি
একটাবারের জন্যও কি আমি তোমার বুকে
জায়গা পেতে পারি।(বেলা)
- আমি এবার কেঁদে ফেলেছি।
- সে আমার বুকে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না
করতে লাগলো।
- ওকে শান্ত করার পর বললাম, আমার সাথে
তোমার জিবনযাত্রা এ পর্যন্তই ছিল। সামনের
জিবন অনেক সুখের হোক তোমার এটাই দোয়া
করি উপরআলার কাছে।
- ভাল থেকো তুমি। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে
বিয়ে করে নিও।(কেদে কেদে) (বেলা)
- আমি চোখে অশ্রু নিয়ে হাসলাম। তোমার
স্বামীকে ভালবেসও ঠিক আমার মত নয় আমার
চেয়েও বেশি।
- (ফুপিয়ে ফুপিয়ে) আমাদের কি কখনও আর
দেখা হবে?(বেলা)
- হুম, দেখা হবে কোন সুখকর মুহুর্তে। যেখানে
তুমি আমি আগের মতই থাকব শুধু জিবনটা বদলে
যাবে। তবে কি জান, চাকরীটা পেয়েও আমি
তোমাকে পেলাম না বেলা। বলেই না
দাড়িয়ে চলে আসলাম ওখান থেকে।আর
পিছনে তাকাই নি। নিজের কান্নার পানি
দেখিয়ে প্রিয় মানুষটাকে যে আর কষ্ট দিতে
পারব না।
- আমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকব(বেলা)।
সেদিন রাতেই আমি আবার এই ব্যস্ত শহরে চলে
আসি। মা বাবার সাথেও দেখা করিনি। এসেই
ওই চাকরীটা আমি করিনি। তারপর এটাতে
জয়েন করেছি আজ ৪ বছর হল। নিজে একা তাই
নতুন করে কিছু ভেবে দেখিনি আর। এতক্ষন
মাথা নিচু করে সবাইকে নিজের গল্প
শুনাচ্ছিলাম। সামনে তাকাতেই দেখি সবাই
কাঁদছে। আমি সবাইকে দেখে হাসলাম আর
বললাম, জানেন ওইদিন চলে আসার পর আমি
কয়েকদিন অনেক কেঁদেছিলাম। কিন্তু আর
কাঁদার সাহস পাইনি যেদিন মনে পড়েছিল যে
আমরা একে অপরকে অনুভব করতে পারতাম কাছে
না থাকাতেও। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি
সব সময় ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেছি। এই ৪ বছরে
একদিনও ছুটি নেই নি আমি। তবুও রাতের
নিস্তব্ধতা এখনও আমার অনেক বেশি
দীর্ঘনিঃশ্বাসের কারন। এমন সময় নিলীমা
হঠাত জোরেই কেঁদে দিল। দেখলাম বেলা
উঠে এলো তাকে শান্তনা দিতে। আর মাসুদ
সাহেব নীরব হয়ে রয়েছেন। হয়ত তিনি বুঝতে
পেরেছেন আমি কার কথা বলেছি। হ্যা সেই
বেলার স্বামীই হল মাসুদ সাহেব। বেলার পুরো
নাম হল আনিকা তাসনিম বেলা। তবে মাসুদ
তাকে আনিকা বলে ডাকে। আমি ইচ্ছে করেই
এই কোম্পানীতে জব নেই যেন মাসুদকে
সাহায্য করতে পারি। এর দ্বারা কোন না কোন
ভাবে তো আমি বেলাকেই সাহায্য করছি।
আমি এটা ভেবেই ভাল আছি। যাই হোক এখন
সবার মুড ঠিক করতে হবে তাই এরকম
পরিস্থিতিতে সবার উদ্দেশ্যে বললাম, এজন্যই
আমি কিছু বলতে চাই না আপনাদের। কোথায়
একটা পার্টিতে এসছি মজা করব তা না করে
কান্না করছি।
এরকম হলে আমি চলে যাচ্ছি বলে যেই উঠব অমনি
সবাই আমার সামনে এসে বলল আচ্ছা ঠিক আছে
আর কাঁদব না। মাসুদ ভাই আমাকে এসে জড়িয়ে
ধরলেন। উনি কাঁদছেনই। আমি বললাম ভাই এবার
বুঝেছেন তো। সব ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া
বিশ্বাস থেকে বলছি আপনি অনেক সুখেই
আছেন। তাই বাকি জিবনটা এগুলো ভেবেই
কাটিয়ে দেব। উনাকে সামনে নিয়ে চোখের
পানি মুছিয়ে দিলাম। বললাম, বেলাকে কষ্ট
দিয়েন না। সুখে থাকেন আপনারা। মাসুদ ভাই
হ্যাসূচক মাথা নাড়ালেন। নিলীমা দেখলাম
অনেক কাঁদছে আর বেলা তাকে শান্তনা
দিচ্ছে। বেপারটা আমার কাছে যেন অনেক
বিব্রতকর অবস্থার তৈরী করেছে। তাই এসব
পাল্টাতেই বললাম, আচ্ছা একটা গান হলে
কেমন হয়। সবাই উজ্জল চোখে বলল, হুম খুব ভাল হয় শুরু
করুন। তখন দেখি বেলা আর নিলীমা
পাশাপাশি বসে আমার দিকে তাকিয়ে
আছে। আমি শুরু করলাম,
চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা
শুনছো.........
-.............
-.................
এভাবে রন্জন দত্তের গানটি ৪ লাইন গাওয়ার পর
সবাই বলল, আর দুঃখ নয় এবার একটু রেমান্টিক গান
চাই। সবাই সবার দিকে তাকিয়ে বলল। আমি
মুখে হাসি এনে বেলার দিকে তাকিয়েই
দেখলাম ও ওর চোখ দিয়ে নিলীমাকে ইশারা
করছে। আমি ভুরু কুচকে ওর দিকে তাকালাম
তাকে অনুভব করার জন্য, চেষ্টা করছি তাকে
বোঝার। ও তখন একবার নিলীমার দিকে আংগুল
এবং একবার আমার দিকে আংগুল দিয়ে ওর
হাতেই লাভ এর প্যাটার্ন করে দেখালো এবং
সাথে অমায়িক সুন্দর এর সিগনাল ও দেখালো।
আমি বুঝলাম বেলার মনের কথা। সে চায় আমি
নিলীমাকে আমার জিবনসঙ্গি হিসেবে
মেনে নিই। আমি তার দিকে তাকিয়ে
বুঝানোর চেষ্টা করছি এটা কেন চাও তুমি। সে
করুন দৃষ্টি দিয়ে বোঝালো কতদিন আর এভাবে
থাকবে। আমার ভালবাসার এরকম প্রতিফল চাই
নি। আমি তোমার কথা রেখেছি। আমি আমার
স্বামীকে ভালবাসি তবে তুমি কেন এমন
পাগলামো করছো। মেনে নেওটা তাকে।
অনেক সুখে থাকবা। আমি তাকিয়েই আছি তার
দিকে, এবার তার চাওনি বলল, প্লিজ মেনে
নিয়ে মেয়েটাকে একটু ভালবাসা দিও ও আর
কিচ্ছু চায় না তোমার থেকে। ওর চাউনি বলছে
ও অনেক বুঝে অনুরোধ করছে আমাকে। এবার
আমি হাসলাম। তার দিকে তাকিয়ে চাউনি
দিয়েই বোঝালাম ঠিক আছে তবে তাই হবে।
এবার বেলার মুখে কিছুটা হাসি ফুটলো। হঠাত
বস বলে উঠলো কি বেপার মি.অনিকেট একটা
রোমান্টিক গান না হয় গেয়েই দিন আমদের
জন্যে। আমি এবার নিলীমার দিকে
তাকালাম। আমি জানতাম বাসায় তার বাবা
তাকে নিলা বলে ডাকে। তাই এই নামের একট
মাইলসের গান শুরু করলাম,
নিলা তুমি কি চাওনা, হারাতে ওই
নিলীমায়।
যেখানে............................
গান শেষ হতেই সবাই হাততালী দিচ্ছে।
নিলীমা অনেক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
দেখলাম বেলা এবং মাসুদ ভাই একে অপরের
হাত ধরে রয়েছে। ভাল লাগলো এটা দেখে।
ভাল লাগলো আমাদের ভালবাসার প্রতি
শ্রদ্ধা দেখে। আমি এবার তাদের কাছে গিয়ে
বললাম সারাটা জিবন এমনি থেকো তোমরা।
বেলা বলল, আমিও নিলীমার থেকে সব
শুনেছি। মেয়েটা অনেক ভালবাসে তোমায়।
আর কষ্ট দিও না তাকে। মাসুদ ভাই বলল, ও
তোমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসে। যাও তার
কাছে। আমি হেসে বললাম যেতে পারি তবে
একটা শর্ত আছে। ওরা বলল কি শর্ত। আমি বললাম
তোমরা দুজনে মিলে একটা গান শোনাবে।
দুজনেই সামনে এগিয়ে গেল গানের জন্যে। আর
আমি গিয়ে নিলীমার পাশে বসলাম।
নিলীমা এবার আরও অবাক হল আমার দিকে
তাকিয়ে। আমি বললাম,
- একাই এসেছেন।
-......... (নিলীমা)
- রাত তো অনেক হল। বাড়ি যাবেন কখন।
-..........(নিলীমা)
- আচ্ছা এখন ৮ টা বাজে। চলুন আপনাকে আজ
বাড়ি পৌছে দেই। বলেই উঠে দাড়ালাম।
তাকিয়ে দেখি মেয়েটা কাঁদছে। আমি ওর
সামনে গিয়ে পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসলাম।
তখনি রবীন্দ্রনাথ এর গান শোনা গেল,
ভালবাসি, ভালবাসি। এরপর,
সবাই অনুষ্ঠান শেষ করে যে যারমত বিদায়
নিয়ে চলে গেল। মাসুদ ভাই আমার কাছে এসে
বলল ধন্যবাদ আপনাকে। সত্যিই আপনারা অনেক
কিছুই বোঝালেন আজ। পৃথিবীর মানুষ যদি আজ
গল্পটা শুনত তাহলে সবাই বুঝত ভালবাসা কি,
বিশ্বাস কি? আমি বললাম আপনারা ভালো
থাকবেন ভাই। এদিকে বেলা নিলীমাকে
জড়িয়ে ধরে বিদায় জানালো। শেষে বেলা
এসে বলল আজ অনেকটা হালকা লাগছে। ওর
স্বামীর পাশে দাড়িয়ে ও বলল এটাই হল
আমাদের ভালবাসার পবিত্রতা। ভালো
থেকো। আমিও বললাম তুমিও ভাল থেকো। ওরা
চলে গেলো। এখন আমি আর নিলীমা হাটছি।
আমি নিলীমাকে বললাম,
- আপনি কি একটা কঠিন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত
হতে পারবে?
- কি কথা?(নিলীমা)
- জানতে চাইবেন না এই বেলা টা কে?
- হুম, কিন্তু আপনি কি বলবেন সেটা?
- মাসুদ সাহেবের স্ত্রীই হল আমার সেই বেলা।
নিলীমা থেমে গেলো। অনেক বড় ধাক্কা
খেয়েছে এটা বোঝাই যাচ্ছে।
- কি বললেন এটা আপনি। মাসুদ সাহেব জানে?
(নিলীমা)
- হুম উনি জানে। এখন তুমি চাইলে আমার সাথে
নাও হাঁটতে পার। তবে আমি তোমার সাথে
হাঁটতে চাই।
- ধন্যবাদ তুমি করে বলার জন্য। আপনি আমায় এখনও
চিনলেন না। আমি আপনাকে কতটা ভালবাসি
এটা আপনি কখনও বুঝেন নি। আর আজ আপনার গল্প
শোনার পর আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও
বেড়ে গেছে। আপনাদের থেকে আমার
ভালবাসাকে আমি বুঝতে পেরেছি, বিশ্বাস
করতে শিখেছি। তাই আমি এখন.....(নিলীমা)
- তাই এখন কি?
- (লজ্জা পেয়ে) কিছু না।(নিলীমা)
সামনেই একটা দোকান কনফেকশনারী দেখলাম,
- আমি দৌড়ে একটা আইসক্রিম কিনে তার
সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে আইসক্রিমটা তার
দিকে বাড়িয়ে বললাম, দেখো আমি এতকিছু
বলতে পারবো না। আমার বয়স এখন ৩০ এর
কাছাকাছি। ইয়ং মেয়েরা অনেক সময় বুড়োও
ডাকতে পারে। জানিনা তোমাকে
ভালবাসি কিনা তবে এই মুহুর্তে তোমার
সাথে হাতে হাত রেখে হাটতে ইচ্ছে করছে।
তুমি কি চলার পথে তেমার হাতটি আমার
হাতে রাখবে।
নিলীমা মুচকি হেসে আইসক্রীমটা নিয়ে
আমাকে দাড় করালো তারপর নিজে হাটু
গেড়ে বসে বলল,
আমি জানি আমি তোমার মত ভালবাসতে
জানি না। তোমার মত এতসব বুঝিও না। তবে
তুমি যদি পাশে থাকো তাহলে আমি সব বুঝে
নিব। আমাকে বেলার মত করে ভালবাসতে হবে
না শুধু ভুল করে আমাকে বেলা ভেবে কখনও একটু
ভালবাসা দিও। আমি ওটাতেই সুখে থাকব।
রাতে একা ঘুমাতে গেলে ভয় লাগে তাই
তোমার বুকে লুকানোর মত একটু জায়গা দিও।
বৃষ্টির দিনে যদি কখনও ইচ্ছে হয় তাহলে
আমাকে নিয়ে একটু ভিজবে। না হলেও একটু
অনুভব কর। হঠাত বৃষ্টি শুরু হল কিন্তু আমরা কেউ
সরছি না। তোমার কাছে কখনও অন্যায় আবদার
করব না তবুও বলছি, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে দেবে
কি আমায় একটুখানি ভালাবাসা। আমি তার
থেকে গলে যাওয়া আইসক্রিমটি নিয়ে তাকে
দাড় করিয়ে আইসক্রিম খাইয়ে দিলাম। তারপর
তাকে জড়িয়ে নিলাম নিজের বুকে। বৃষ্টি
পড়ছে তার মত করে তবে আমার বুকে কারও
কান্নার পানিটা আমি আলাদাভাবেই অনুভব
করছি। আমি আলতো করে তার মুখটা তুলে ধরলে
সে অনেক লজ্জা পেল। বুঝলাম একটু একটু করে
ভালবেসে ফেলেছি। তারপর হাতেহাত ধরে
বৃষ্টিতেই হেঁটে এগিয়ে চলেছি। হঠাত মনে হল
বেলা আমায় বলছে সব ঠিক আছে কিনা। আমিও
মনে মনে উত্তর দিলাম হুম ঠিক আছে।
বেলাবোস যে এখন আমার নিলীমার
নিলীমায় আবদ্ধ রয়েছে। তারপর শক্ত করে
হাতটা ধরলাম। নিলীমা আমার দিকে
তাকিয়ে হাসলো। তারপর আমার কাঁধে মাথা
রেখে হাটতে লাগলো। বুঝলাম নিলীমাও
অনুভব করতে পারছে আমাকে। এই অবস্থায় মনে
মনে বললাম বৃষ্টি তোমাকে জানিয়ে দিলাম
ভালবাসার পূর্নতা আজ আমার মাঝে। বেঁচে
থাক এই ভালবাসা চিরন্তনরুপে।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়...
আজ অফিসে মিটিং ছিল। মিটিং এ আমাদের
একটা বড় প্রজেক্ট সমন্ধে আলোচনা করা
হয়েছে। গত প্রজেক্টের কাজ কালই বসকে জমা
দিয়েছেন মাসুদ ভাই অনেক ভাল ভাবে।
প্রমোশন লেটারটাও পেয়েছেন আশানুরূপ
ভাবে কালই। তাই নেক্সট প্রজেক্টের কাজের
দায়িত্বও পরেছে তার হাতেই। মিটিং শেষে
যে যার মত কাজে নেমে পড়লাম। তার কিছুক্ষন
পরেই মাসুদ ভাই এসে উপরের কথাটি বললেন।
আমি বললাম, জি নিশ্চয়ই। উনি বললেন, আমি
অফিস ক্যান্টিনে অপেক্ষা করছি। আমি একটু
হেসে তাকে সম্মতি জানালাম। কিছুক্ষন পর
আমি ক্যান্টিনে গেলে তিনি আমাদের জন্য
কফির অর্ডার করলেন। কফি খেতেই খেতেই উনি
আমাকে প্রশ্ন করলেন, আমি কেন এরকম? কেন
আমি তাকে সবসময় সাহায্য করে থাকি? আমি
বললাম, একজন অফিস কলিগকে সাহায্য করার জন্য
এভাবে প্রশ্ন করা হবে এটা আমি ভাবিনি।
উনি বললেন, আজ আমার জায়গায় আপনার
প্রমোশন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি
নিজেই অনেক কাজ করে সেগুলো আমাকে
দিয়ে বসকে দেখিয়েছেন। বস এর আগেও
আপনাকে প্রমোশন দিতে চেয়েছিলেন তবে
আপনি নেন নি। বরং বসকে আমার প্রমোশনের
ব্যাপারে বলেছেন। আমি জানতে চাই আপনি
কেন এসব করছেন? আমি বললাম, দেখেন ভাই
আমি একলা মানুষ। প্রমোশন পেয়ে বেশি বেতন
আমি কি করব। তাছাড়া আপনি বিবাহিত। তাই
আপনার বেপারটা একটু নিজ থেকে ভাবছি এই
আরকি। অন্য কিছু না। আর প্লিজ এসব বিষয়ে কথা
না বাড়াই। বরং চলুন নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু
করি। উনি হাসলেন, বললেন, ঠিক আছে তবে
একদিন আমার বাসায় ডিনার করতে হবে। আমি
একটু হেসে বললাম ঠিক আছে।
কফি শেষ করে এসে ডেস্কে এসে বসলাম তখনি
আমার কলিগ নিলীমা বলল, একজন ছেলের
সাথে কফি খাওয়া যেতে পারে তবে আমার
সাথে কেন নয়। তাছাড়া আপনি আমাকে
দিয়ে আপনার কাজ করিয়েছেন তাই চলুন
আমাকে আজ কফি খাওয়াবেন। আমি একটু ইতস্তত
হয়ে বললাম, কেবলি একটা কফি খেয়ে আসলাম,
এখন আর খেতে ভাল লাগবে না। অন্য কোনদিন।
ও বলল, না আজকেই। যদি এখন যেতে না চান তবে
আজকে দুপুরে আমার সাথে লাঞ্চ করবেন। আমি
অগত্যা তার কথার সম্মতি জানালাম। এর
কিছুক্ষন পরেই বস সবাইকে কাল সন্ধায় সবাইকে
তার বাড়িতে আমন্ত্রন করলেন। এটা মুলত নতুন
প্রজেক্টের জন্য পার্টি। কিছুক্ষন পর এক বন্ধু ফোন
দিলে আমি রিসিভ করে হ্যালো বললাম। ওপাশ
থেকে বন্ধু বলল, জরুরী ভিত্তিতে এক বাচ্চার
এবি পজেটিভ রক্ত লাগবে। আমি
হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে বেড়িয়ে
পড়লাম। রক্ত দিয়ে আসতে আসতে বিকেল হল।
অফিসে এসে বসের রুমে গিয়ে সব বুঝিয়ে
বললাম। ভেবেছিলাম না বলে গিয়েছি বলে
হয়ত বস রাগ করবে কিন্তু সবটা শোনার পর উনি
কিছু বললেন না। বসের রুম থেকে বেরিয়ে
ডেস্কে আসতেই দেখি নিলীমা মনমরা হয়ে
মাথা নিচু করে বসে আছে। এরকম এর আগেও
হয়েছে তবে আজকে একটু আমারি ভুল ছিল।
মেয়েটা কি চায় তা আমি জানি। কিন্তু
আমার পক্ষে যে আর কাউকে মনে স্থান দেওয়া
সম্ভব হয়ে উঠছে না। এর আগেও তাকে আমি
অনেক এভোয়েড করেছি। কিন্তু আজ কেন
জানি অন্যরকম লাগছে। মেয়েটা দেখতে
অসম্ভব সুন্দর কিন্তু এই মনমরা ভাবটা তাকে
বিষন্নরুপ এনে দিয়েছে। আমি তার সামনে
গিয়ে বললাম, দুঃখিত। এক শিশুর রক্তের
প্রয়োজন ছিল তাই আমি গিয়ে দিয়ে আসলাম।
আর এতেই দেরী হয়ে গিয়েছে। নিলীমা কিছু
বলল না। শুধু বলল, আমাকে জানিয়ে যেতে
পারতেন। এটা বলেই চলে গেল। আমি এসব বিষয়
ইচ্ছে করেই ভাবি না। ভাবতে ভাল লাগে না।
তাই অফিসে কাজ শেষ করে বাসায় আসলাম।
ভাবছি কাল বসের পার্টিতে যাব কিনা।
সেখানে নিশ্চয়ই বেলা আসবে। পরোক্ষনে
ভাবলাম বসের পার্টি, না গেলে উনি খারাপ
কিছু ভাবতে পারে। তাই পরেরদিন সন্ধার একটু
পরে আমি পার্টিতে গেলাম। সবার শেষে এক
কোনে আমি দাড়িয়ে দেখছি। সামনে সবাই
কাপলরা রয়েছে। এসবের মাঝে নিজেকে
অসহায় লাগছে। হঠাত করে চোখ পড়ল বেলার
উপর। আজ অনেকদিন পর তাকে দেখলাম এখনও
আগের মতই আছে। কি অদ্ভুত ছিল আমাদের
ভালবাসা যেটা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
মুখে আমার একটু কষ্টমিশ্রিত হাসি ভেসে
উঠলো। নিচের দিকে তাকিয়ে এসব
ভাবছিলাম। হঠাত শুনলাম, অনিকেট সাহেব
আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন। সামনে তাকাতেই
দেখলাম সবাই গোল হয়ে বসেছে এবং আমার
দিকে তাকিয়ে আছে। আরো সামনে দেখলাম
বস আমাকে ডাকছে। আমি ওখানে যেতেই
দেখলাম বেলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বস বলল, আজ বস হিসেবে নয়,বন্ধু হিসেবে সবার
হয়ে একটা প্রশ্ন করছি। প্রশ্নটা আমাদের এখানে
উপস্থিত সবার। সেটা হল, আপনি কেন সব সময়
চুপচাপ থাকেন? প্রমোশন দিলে এরিয়ে যান?
এখনও বিয়ে করছেন না কেন? আপনার গল্পটা কি
আমাদের বলবেন আজ দয়া করে?
সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই
একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিলীমা অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
মাসুদ সাহেব আমাকে দেখছে কিন্তু বেলা
মাথা নিচু করে আছে। আমি বসকে বললাম, ঠিক
আছে বলব,তবে এর পরে আর কেউ কিছু বলবেন না
আমায়। সবাই রাজী হল। আমি বলা শুরু করলাম,
আমি তখন সবে মাত্র অনার্স তৃতীয় বর্ষে। আমার
থেকে এক বছর জুনিয়র ছিল বেলা। একই বিষয়
ছিল বলে
আমদের প্রতিদিন ক্যাম্পাসে দেখা হত। আমি
তাকে অনেক বেশিই পছন্দ করতাম। তাই একদিন
তাকে আমার ভালবাসার কথা জানালাম।
সেও হাসি মুখে বলল, প্রতিদিন যদি
ক্যাম্পাসে আগের মত মায়াবী চোখে
তাকিয়ে থাকতে পারেন তবে আমিও
ভালবাসি। বুঝেছিলাম এসবের মাঝে সেও
আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। আমি অনেক
খুশি হয়েছিলাম সেদিন। তবে আমাদের সম্পর্ক
আজ কালের সম্পর্কের মত ছিল না। একে অপরকে
অনেক ভালবাসতাম। তবে সেটা কোন নষ্টামির
মধ্যে দিয়ে নয়। একে অপরকে বিশ্বাস করতাম,
সম্মান করতাম, শ্রদ্ধা করতাম। তাকে নিয়ে যে
অনুভুতি তৈরী হত তা দিয়ে আমার শরীরে
শিহরন বয়ে যেত। আমার ভালবাসার মানুষের
নামটা ছিল (সংক্ষেপে) বেলা। পুরো নাম
বললাম না। একদিন সে বলল, চল আজ আমরা একটা
কথা ওয়াদা করি। তার প্রতি বিশ্বাস ছিল তাই
বললাম বল কি কথা। ও বলল, আমরা যেখানেই
থাকি, যেমনই থাকি, যদি আমরা একে অপরের
নাও হতে পারি তবুও আমরা একে অপরকে সম্মান
করব। আমরা আমাদের ভালবাসাকে কখনও
অসম্মান করব না। আমি সেদিন অনেক খুশি হয়ে
সেই ওয়াদা করেছিলাম। তার প্রতি
ভালবাসাও যেন অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
তার তখন ফোন ছিল না। তাই ক্যাম্পাসেই তার
সাথে কথা বলতাম। এদিকে আমার যখন ফাইনাল
ইয়ার শেষ হল তখন আমি এই ব্যস্ত শহরে চলে আসি
একটা চাকুরীর জন্য। আসার সময় প্রথমবারের মত
বেলা আমার হাত ধরে কেঁদেছিল। বলেছিল,
আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না।
তোমার প্রতি আমার ভালবাসার কখনও অভাব
ছিল না। কিন্তু তুমি পারও এই ভালবাসার
পুর্নতা দিতে। আমি তাকে সেদিন বলেছিলাম
উপরআলার উপর বিশ্বাস রাখো। তিনি নিশ্চয়ই
ভাল কিছু করবেন। ও বলেছিল, বাসা থেকে
বিয়ের কথা চলছে। আমি যেন জলদি কিছু করি।
তার চোখে সেদিন আমি তার ভালবাসার
মানুষকে হারানোর ভয় দেখেছিলাম। তাকে
আশ্বস্ত করে আমি চলে এসেছিলাম। এরপর
চিঠিতেই কথা হত বেশির ভাগ। তার বাসার
ল্যান্ডফোনে কয়েক মিনিটের মত কথা হত।
এদিকে আমি চাকুরীর জন্য হন্তদন্ত হয়ে ঘুরে
বেড়াচ্ছিলাম। কিন্তু অনেকদিন হওয়ার পরও
আমি চাকুরী মেনেজ করতে পারিনি।
এভাবেই আমি এই ব্যস্ত শহরে কখনও দুমুঠো ভাত
আবার কখনও বেলার জন্য একটা চাকুরী খুজতে
মরিয়া হয়ে উঠি। প্রায় দুই বছর পর আমি একটা
চাকুরী পাই। চাকুরী পাওয়ার পর আমি
বেলাকে তার বাসার ল্যান্ডফোনে ফোন
দিয়ে জানাতে চেয়েছি কিন্তু আমি
বেলাকে পাইনি। তখন রন্জন দত্তের বেলাবোস
গানটা খুব গাইতাম। ব্যর্থ হয়ে একটা চিঠি
পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন যাওয়ার পরও
যখন তার কোন জবাব এলো না তখন আমি বেলার
কাছে ফিরে আসার জন্য রওনা দিলাম। সন্ধায়
বাড়ির রাস্তা দিয়ে হাঠছি এমন সময় দেখলাম
কার যেন বরযাত্রী যাচ্ছে বউ নিয়ে। আমি
কেন জানি চুপ হয়ে গেলাম ভাবছি বেলা
নয়তো আবার। তারপরেই ভাবলাম নাহ কি
ভাবছি। কার না কার বিয়ে, আগে আসলে
বিয়েটাও খাওয়া যেত। কিন্তু বেলার বাসার
সামনে যেতেই.......
সামনে যেতেই কি হল অনিকেট সাহেব( সবাই)
আমি একটু পানি খেতে খেতে বেলার দিকে
তাকিয়ে দেখলাম এখনও মাথা নিচু করে আছে।
পানি খাওয়ার পর বললাম ওটা বেলারই বিয়ে
ছিল। বিয়ের বাড়িতে ঢুকার পরেই কিছু লোক
আত্মীয় ভেবেই আমাকে খাওয়ার টেবিলে
বসিয়ে দিল। আমি কাঁদিনি সেদিন। রাতটা
বেলার গ্রামেই কাটিয়েছিলাম। পরেরদিন
বেলা তার জামাই সহ বাসায় আসলো। সবাই
তার সাথে কথা বলছে। আমি রাস্তায়
দাড়িয়ে সব দেখছিলাম। বেলা একসময় আমায়
দেখতে পায়। সবাই চলে গেলে সে আমার
কাছে আসল। কি দিয়ে কথা শুরু করব ভাবতেই
পারছিনা। বেলাই বলল,
- কবে এসেছো(বেলা)
- কালকে। অভিনন্দন তেমাকে।
- (মুখ নিচে করে) চাকরীটা কি পেয়েছো।
(বেলা)
- হ্যা বেলা, চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি।
তোমাদের বাসায় ফোন করেছিলাম। কেউ
ধরেনি।অনেকবার দিয়েছিলাম। কারও সারা
পাই নি।
- বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল। আমি
অনেকবার বাবাকে তোমার কথা বলেছি তবে
তিনি আমাকে আর সময় দেন নি। অনেকবার
তোমার কথা বলে বিয়ে আটকিয়েছি কিন্তু
এবার বাবা কিছুই শুনল না। বাবা তোমাকে
অনেক কিছু বলতে গেলে আমি বিয়েতে
রাজী হয়ে যাই। সব কিছুই আমি সহ্য করতে
পারবো কিন্তু আমাদের ভালবাসার অসম্মান,
তোমার অসম্মান আমি সইতে পারব না তাই
আমি রাজী হয়েছি।(বেলা)
- তুমি কাঁদছো কেন বেলা। তুমি তোমার
ওয়াদা রেখেছো। আমি তোমাকে বিশ্বাস
করি বেলা। তুমি আমাকে এতোটা ভালবাস
কিন্তু আমি তো তোমায় কম ভালবাসি না।
আমিও যে আমার ভালবাসাকে অসম্মান করব না
বেলা।
- আজ আমাদের কিছু করার নেই তাই না।
আমাদের সমাজের রীতিকেই মেনে নিতে
হবে। তবে আমি যে ভালবাসি তোমায়।
(বেলা)
- হ্যা বেলা। আমরা যা হয়েছে তাই মেনে
নিব। আমাদের ভালবাসা যে এই সমাজের
রীতি থেকেই হয়েছিল। তবে আমি তোমাকে
এতটাই ভালবেসেছি যে আর কাউকেই আমার
দেবার মত কিছু নেই। তবে আমি তোমাকে
চিঠি পাঠিয়েছিলাম বেলা।
- আমি চিঠি পেয়েছিলাম কাল। বাবাকে
দেখিয়েও ছিলাম কাল। কিন্তু উনি আমায় কিছু
বললেন না। শুধু বিছানায় বসে গেলেন। বাবার
সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমার কিছু করার
ছিল না। তাই আজ আমি ( কেঁদে দিল)(বেলা)
- কেঁদনা বেলা। আমি উপরআলার উপর তোমাকে
বিশ্বাস করতে বলেছিলাম। তুমি তাই করেছো।
সামনেও তাই করবে। কিন্তু আমরা পারলাম না
সারাজিবন একসাথে থাকতে। হয়ত আমাদের
ভাগ্যে এটাই ছিল। উনি হয়ত এটাতেই মঙ্গল
দেখছেন।
- আমার যে তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে।
আমিও যে আর কাউকে ভালবাসতে পারব না
এটা কি তুমি বুঝছো।(বেলা)
- তাহলে যে এতদিনের ওয়াদা ভেঙ্গে যাবে
বেলা। এতে যে তোমার ভালবাসার অসম্মান
হবে। তোমার ভালবাসা যে এমনটা নয়। আমরা
জিবনের সবথেকে কঠিন মূহুর্তে একে অপরের
পাশে আছি শুধু আমাদের দুজনের মাঝে
বিশ্বাস আছে বলে। এটাকে ভেঙ্গে দিও না
বেলা। মনে রাখবে আমি সবসময় তোমার
পাশেই আছি। আর যার ভালবাসার এতো জোর
সে কখনও কাউকে ধোঁকা দিতে পারে না
বেলা। তুমিও তাই তোমার স্বামীকে সুখে
রাখবে এটাই আশা করছি।
- আমি তোমার মত মানুষকে ভালবেসেছি
এটাই আমার জিবনের সব থেকে বড় স্বার্থকতা।
আমি কি তোমার পা টা একটু ছুতে পারি।
(বেলা)
- কিছু না বলে তাকিয়ে আছি তার দিকে। সে
নিজেই আমার পায়ে হাত বুলিয়ে নিল।
- তুমি কি আমায় শুধু একবারের মত তোমার বুকে
জড়িয়ে নিবে?(বেলা)
- তুমি বিবাহিত বেলা। এটা করলে যে তাকে
ধোঁকা দেওয়া হবে।
- আমি কখনই আমার ভালবাসার অসম্মান হতে
দিব না। তবে সেই ভালবাসা থেকে বলছি
একটাবারের জন্যও কি আমি তোমার বুকে
জায়গা পেতে পারি।(বেলা)
- আমি এবার কেঁদে ফেলেছি।
- সে আমার বুকে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না
করতে লাগলো।
- ওকে শান্ত করার পর বললাম, আমার সাথে
তোমার জিবনযাত্রা এ পর্যন্তই ছিল। সামনের
জিবন অনেক সুখের হোক তোমার এটাই দোয়া
করি উপরআলার কাছে।
- ভাল থেকো তুমি। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে
বিয়ে করে নিও।(কেদে কেদে) (বেলা)
- আমি চোখে অশ্রু নিয়ে হাসলাম। তোমার
স্বামীকে ভালবেসও ঠিক আমার মত নয় আমার
চেয়েও বেশি।
- (ফুপিয়ে ফুপিয়ে) আমাদের কি কখনও আর
দেখা হবে?(বেলা)
- হুম, দেখা হবে কোন সুখকর মুহুর্তে। যেখানে
তুমি আমি আগের মতই থাকব শুধু জিবনটা বদলে
যাবে। তবে কি জান, চাকরীটা পেয়েও আমি
তোমাকে পেলাম না বেলা। বলেই না
দাড়িয়ে চলে আসলাম ওখান থেকে।আর
পিছনে তাকাই নি। নিজের কান্নার পানি
দেখিয়ে প্রিয় মানুষটাকে যে আর কষ্ট দিতে
পারব না।
- আমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকব(বেলা)।
সেদিন রাতেই আমি আবার এই ব্যস্ত শহরে চলে
আসি। মা বাবার সাথেও দেখা করিনি। এসেই
ওই চাকরীটা আমি করিনি। তারপর এটাতে
জয়েন করেছি আজ ৪ বছর হল। নিজে একা তাই
নতুন করে কিছু ভেবে দেখিনি আর। এতক্ষন
মাথা নিচু করে সবাইকে নিজের গল্প
শুনাচ্ছিলাম। সামনে তাকাতেই দেখি সবাই
কাঁদছে। আমি সবাইকে দেখে হাসলাম আর
বললাম, জানেন ওইদিন চলে আসার পর আমি
কয়েকদিন অনেক কেঁদেছিলাম। কিন্তু আর
কাঁদার সাহস পাইনি যেদিন মনে পড়েছিল যে
আমরা একে অপরকে অনুভব করতে পারতাম কাছে
না থাকাতেও। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি
সব সময় ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেছি। এই ৪ বছরে
একদিনও ছুটি নেই নি আমি। তবুও রাতের
নিস্তব্ধতা এখনও আমার অনেক বেশি
দীর্ঘনিঃশ্বাসের কারন। এমন সময় নিলীমা
হঠাত জোরেই কেঁদে দিল। দেখলাম বেলা
উঠে এলো তাকে শান্তনা দিতে। আর মাসুদ
সাহেব নীরব হয়ে রয়েছেন। হয়ত তিনি বুঝতে
পেরেছেন আমি কার কথা বলেছি। হ্যা সেই
বেলার স্বামীই হল মাসুদ সাহেব। বেলার পুরো
নাম হল আনিকা তাসনিম বেলা। তবে মাসুদ
তাকে আনিকা বলে ডাকে। আমি ইচ্ছে করেই
এই কোম্পানীতে জব নেই যেন মাসুদকে
সাহায্য করতে পারি। এর দ্বারা কোন না কোন
ভাবে তো আমি বেলাকেই সাহায্য করছি।
আমি এটা ভেবেই ভাল আছি। যাই হোক এখন
সবার মুড ঠিক করতে হবে তাই এরকম
পরিস্থিতিতে সবার উদ্দেশ্যে বললাম, এজন্যই
আমি কিছু বলতে চাই না আপনাদের। কোথায়
একটা পার্টিতে এসছি মজা করব তা না করে
কান্না করছি।
এরকম হলে আমি চলে যাচ্ছি বলে যেই উঠব অমনি
সবাই আমার সামনে এসে বলল আচ্ছা ঠিক আছে
আর কাঁদব না। মাসুদ ভাই আমাকে এসে জড়িয়ে
ধরলেন। উনি কাঁদছেনই। আমি বললাম ভাই এবার
বুঝেছেন তো। সব ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া
বিশ্বাস থেকে বলছি আপনি অনেক সুখেই
আছেন। তাই বাকি জিবনটা এগুলো ভেবেই
কাটিয়ে দেব। উনাকে সামনে নিয়ে চোখের
পানি মুছিয়ে দিলাম। বললাম, বেলাকে কষ্ট
দিয়েন না। সুখে থাকেন আপনারা। মাসুদ ভাই
হ্যাসূচক মাথা নাড়ালেন। নিলীমা দেখলাম
অনেক কাঁদছে আর বেলা তাকে শান্তনা
দিচ্ছে। বেপারটা আমার কাছে যেন অনেক
বিব্রতকর অবস্থার তৈরী করেছে। তাই এসব
পাল্টাতেই বললাম, আচ্ছা একটা গান হলে
কেমন হয়। সবাই উজ্জল চোখে বলল, হুম খুব ভাল হয় শুরু
করুন। তখন দেখি বেলা আর নিলীমা
পাশাপাশি বসে আমার দিকে তাকিয়ে
আছে। আমি শুরু করলাম,
চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা
শুনছো.........
-.............
-.................
এভাবে রন্জন দত্তের গানটি ৪ লাইন গাওয়ার পর
সবাই বলল, আর দুঃখ নয় এবার একটু রেমান্টিক গান
চাই। সবাই সবার দিকে তাকিয়ে বলল। আমি
মুখে হাসি এনে বেলার দিকে তাকিয়েই
দেখলাম ও ওর চোখ দিয়ে নিলীমাকে ইশারা
করছে। আমি ভুরু কুচকে ওর দিকে তাকালাম
তাকে অনুভব করার জন্য, চেষ্টা করছি তাকে
বোঝার। ও তখন একবার নিলীমার দিকে আংগুল
এবং একবার আমার দিকে আংগুল দিয়ে ওর
হাতেই লাভ এর প্যাটার্ন করে দেখালো এবং
সাথে অমায়িক সুন্দর এর সিগনাল ও দেখালো।
আমি বুঝলাম বেলার মনের কথা। সে চায় আমি
নিলীমাকে আমার জিবনসঙ্গি হিসেবে
মেনে নিই। আমি তার দিকে তাকিয়ে
বুঝানোর চেষ্টা করছি এটা কেন চাও তুমি। সে
করুন দৃষ্টি দিয়ে বোঝালো কতদিন আর এভাবে
থাকবে। আমার ভালবাসার এরকম প্রতিফল চাই
নি। আমি তোমার কথা রেখেছি। আমি আমার
স্বামীকে ভালবাসি তবে তুমি কেন এমন
পাগলামো করছো। মেনে নেওটা তাকে।
অনেক সুখে থাকবা। আমি তাকিয়েই আছি তার
দিকে, এবার তার চাওনি বলল, প্লিজ মেনে
নিয়ে মেয়েটাকে একটু ভালবাসা দিও ও আর
কিচ্ছু চায় না তোমার থেকে। ওর চাউনি বলছে
ও অনেক বুঝে অনুরোধ করছে আমাকে। এবার
আমি হাসলাম। তার দিকে তাকিয়ে চাউনি
দিয়েই বোঝালাম ঠিক আছে তবে তাই হবে।
এবার বেলার মুখে কিছুটা হাসি ফুটলো। হঠাত
বস বলে উঠলো কি বেপার মি.অনিকেট একটা
রোমান্টিক গান না হয় গেয়েই দিন আমদের
জন্যে। আমি এবার নিলীমার দিকে
তাকালাম। আমি জানতাম বাসায় তার বাবা
তাকে নিলা বলে ডাকে। তাই এই নামের একট
মাইলসের গান শুরু করলাম,
নিলা তুমি কি চাওনা, হারাতে ওই
নিলীমায়।
যেখানে............................
গান শেষ হতেই সবাই হাততালী দিচ্ছে।
নিলীমা অনেক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
দেখলাম বেলা এবং মাসুদ ভাই একে অপরের
হাত ধরে রয়েছে। ভাল লাগলো এটা দেখে।
ভাল লাগলো আমাদের ভালবাসার প্রতি
শ্রদ্ধা দেখে। আমি এবার তাদের কাছে গিয়ে
বললাম সারাটা জিবন এমনি থেকো তোমরা।
বেলা বলল, আমিও নিলীমার থেকে সব
শুনেছি। মেয়েটা অনেক ভালবাসে তোমায়।
আর কষ্ট দিও না তাকে। মাসুদ ভাই বলল, ও
তোমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসে। যাও তার
কাছে। আমি হেসে বললাম যেতে পারি তবে
একটা শর্ত আছে। ওরা বলল কি শর্ত। আমি বললাম
তোমরা দুজনে মিলে একটা গান শোনাবে।
দুজনেই সামনে এগিয়ে গেল গানের জন্যে। আর
আমি গিয়ে নিলীমার পাশে বসলাম।
নিলীমা এবার আরও অবাক হল আমার দিকে
তাকিয়ে। আমি বললাম,
- একাই এসেছেন।
-......... (নিলীমা)
- রাত তো অনেক হল। বাড়ি যাবেন কখন।
-..........(নিলীমা)
- আচ্ছা এখন ৮ টা বাজে। চলুন আপনাকে আজ
বাড়ি পৌছে দেই। বলেই উঠে দাড়ালাম।
তাকিয়ে দেখি মেয়েটা কাঁদছে। আমি ওর
সামনে গিয়ে পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসলাম।
তখনি রবীন্দ্রনাথ এর গান শোনা গেল,
ভালবাসি, ভালবাসি। এরপর,
সবাই অনুষ্ঠান শেষ করে যে যারমত বিদায়
নিয়ে চলে গেল। মাসুদ ভাই আমার কাছে এসে
বলল ধন্যবাদ আপনাকে। সত্যিই আপনারা অনেক
কিছুই বোঝালেন আজ। পৃথিবীর মানুষ যদি আজ
গল্পটা শুনত তাহলে সবাই বুঝত ভালবাসা কি,
বিশ্বাস কি? আমি বললাম আপনারা ভালো
থাকবেন ভাই। এদিকে বেলা নিলীমাকে
জড়িয়ে ধরে বিদায় জানালো। শেষে বেলা
এসে বলল আজ অনেকটা হালকা লাগছে। ওর
স্বামীর পাশে দাড়িয়ে ও বলল এটাই হল
আমাদের ভালবাসার পবিত্রতা। ভালো
থেকো। আমিও বললাম তুমিও ভাল থেকো। ওরা
চলে গেলো। এখন আমি আর নিলীমা হাটছি।
আমি নিলীমাকে বললাম,
- আপনি কি একটা কঠিন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত
হতে পারবে?
- কি কথা?(নিলীমা)
- জানতে চাইবেন না এই বেলা টা কে?
- হুম, কিন্তু আপনি কি বলবেন সেটা?
- মাসুদ সাহেবের স্ত্রীই হল আমার সেই বেলা।
নিলীমা থেমে গেলো। অনেক বড় ধাক্কা
খেয়েছে এটা বোঝাই যাচ্ছে।
- কি বললেন এটা আপনি। মাসুদ সাহেব জানে?
(নিলীমা)
- হুম উনি জানে। এখন তুমি চাইলে আমার সাথে
নাও হাঁটতে পার। তবে আমি তোমার সাথে
হাঁটতে চাই।
- ধন্যবাদ তুমি করে বলার জন্য। আপনি আমায় এখনও
চিনলেন না। আমি আপনাকে কতটা ভালবাসি
এটা আপনি কখনও বুঝেন নি। আর আজ আপনার গল্প
শোনার পর আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও
বেড়ে গেছে। আপনাদের থেকে আমার
ভালবাসাকে আমি বুঝতে পেরেছি, বিশ্বাস
করতে শিখেছি। তাই আমি এখন.....(নিলীমা)
- তাই এখন কি?
- (লজ্জা পেয়ে) কিছু না।(নিলীমা)
সামনেই একটা দোকান কনফেকশনারী দেখলাম,
- আমি দৌড়ে একটা আইসক্রিম কিনে তার
সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে আইসক্রিমটা তার
দিকে বাড়িয়ে বললাম, দেখো আমি এতকিছু
বলতে পারবো না। আমার বয়স এখন ৩০ এর
কাছাকাছি। ইয়ং মেয়েরা অনেক সময় বুড়োও
ডাকতে পারে। জানিনা তোমাকে
ভালবাসি কিনা তবে এই মুহুর্তে তোমার
সাথে হাতে হাত রেখে হাটতে ইচ্ছে করছে।
তুমি কি চলার পথে তেমার হাতটি আমার
হাতে রাখবে।
নিলীমা মুচকি হেসে আইসক্রীমটা নিয়ে
আমাকে দাড় করালো তারপর নিজে হাটু
গেড়ে বসে বলল,
আমি জানি আমি তোমার মত ভালবাসতে
জানি না। তোমার মত এতসব বুঝিও না। তবে
তুমি যদি পাশে থাকো তাহলে আমি সব বুঝে
নিব। আমাকে বেলার মত করে ভালবাসতে হবে
না শুধু ভুল করে আমাকে বেলা ভেবে কখনও একটু
ভালবাসা দিও। আমি ওটাতেই সুখে থাকব।
রাতে একা ঘুমাতে গেলে ভয় লাগে তাই
তোমার বুকে লুকানোর মত একটু জায়গা দিও।
বৃষ্টির দিনে যদি কখনও ইচ্ছে হয় তাহলে
আমাকে নিয়ে একটু ভিজবে। না হলেও একটু
অনুভব কর। হঠাত বৃষ্টি শুরু হল কিন্তু আমরা কেউ
সরছি না। তোমার কাছে কখনও অন্যায় আবদার
করব না তবুও বলছি, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে দেবে
কি আমায় একটুখানি ভালাবাসা। আমি তার
থেকে গলে যাওয়া আইসক্রিমটি নিয়ে তাকে
দাড় করিয়ে আইসক্রিম খাইয়ে দিলাম। তারপর
তাকে জড়িয়ে নিলাম নিজের বুকে। বৃষ্টি
পড়ছে তার মত করে তবে আমার বুকে কারও
কান্নার পানিটা আমি আলাদাভাবেই অনুভব
করছি। আমি আলতো করে তার মুখটা তুলে ধরলে
সে অনেক লজ্জা পেল। বুঝলাম একটু একটু করে
ভালবেসে ফেলেছি। তারপর হাতেহাত ধরে
বৃষ্টিতেই হেঁটে এগিয়ে চলেছি। হঠাত মনে হল
বেলা আমায় বলছে সব ঠিক আছে কিনা। আমিও
মনে মনে উত্তর দিলাম হুম ঠিক আছে।
বেলাবোস যে এখন আমার নিলীমার
নিলীমায় আবদ্ধ রয়েছে। তারপর শক্ত করে
হাতটা ধরলাম। নিলীমা আমার দিকে
তাকিয়ে হাসলো। তারপর আমার কাঁধে মাথা
রেখে হাটতে লাগলো। বুঝলাম নিলীমাও
অনুভব করতে পারছে আমাকে। এই অবস্থায় মনে
মনে বললাম বৃষ্টি তোমাকে জানিয়ে দিলাম
ভালবাসার পূর্নতা আজ আমার মাঝে। বেঁচে
থাক এই ভালবাসা চিরন্তনরুপে।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়...