দুই চোখ মেলে সুন্দর এই পৃথিবী দেখা বিধাতার এক আশীর্বাদ! কিন্তু বয়সের কারণে, পারিবারিক সমস্যা, টিভি/কম্পিউটার/মোবাইল বা বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার জনিত সমস্যা দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলে। তবে কিছু সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলেই এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজকের লেখায় এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করবো যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে খাবারের তালিকায় এই খাবারগুলো রাখতে অবশ্যই ভুলবেন না। চলুন তাহলে জানা যাক দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা খাবারগুলো সম্পর্কে এবং সেই সাথে চোখের যত্ন সম্পর্কে কিছু টিপসও জেনে নেই।
গাজর
মাটির নিচে জন্মানো এই সবজিটি পুষ্টিগুণে অনন্য। এর রয়েছে বহুমুখী গুণাগুণ এবং যেকোনো রান্নায় গাজরের রঙিনভাব লোভনীয়তা বাড়ায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা-ক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ। বিজ্ঞানীদের মতে, গাজর রাতের বেলার দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে এবং দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও গাজর অক্সিডেটিভ ক্ষয় (কঞ্জাংকটিভা বা নেত্রনালীর সমস্যা) প্রতিরোধ করে ও চোখের জ্বালাপোড়া কমায়। এই দুইটি সমস্যা চোখের প্রধান দুটি সমস্যা।
কাঁচা গাজরে পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণে বজায় থাকে; Image Source: StyleCraze
ইন্টারনেট ঘেঁটে গাজরের স্যুপের বিভিন্ন রকমের রেসিপি পেতে পারেন। হাতের নাগালে থাকলে যেকোনো তরকারি রান্নার সময় গাজর দিতে ভুলবেন না! তবে রান্নার চাইতে কাঁচা গাজরে পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণে বজায় থাকে। কারণ চুলার আঁচে থাকলে অনেক পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। হুটহাট ক্ষুধা লাগলে স্ন্যাকস না খেয়ে একটি কাঁচা গাজর কামড়ে খেয়ে ফেলুন অথবা সালাদে দিয়েও খেতে পারেন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। লক্ষ্য রাখবেন, গাজর যেন পরিমাণে বেশি না খাওয়া হয়। কারণ গাজর বেশি খেলে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন এ শরীরে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।
ফ্যাটি মাছ
ফ্যাটি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। আর ওমেগা-৩, ওমেগা- ৬ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অনুপাত নিয়ন্ত্রণ করে চোখে জ্বালাপোড়াভাব কমায়। জ্বালাপোড়াভাব কম হলে আপনার শরীর ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও আমাদের চোখের রেটিনার পাশের অংশ ডিএইচ দিয়ে ভরপুর, যা হলো এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।
স্যামন - Source: Smrt English
তাই স্যামন, টুনা ও ম্যাক্রল জাতীয় সামুদ্রিক মাছ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো কাজ করে। যদি আপনি একেবারেই মাছ খেতে পছন্দ না করেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাছের তেল সাপ্লিমেন্ট হিসেবে খেতে পারেন। মাছ গ্রিল করে খেলে এর ফ্যাটি এসিডের গুণাগুণ সর্বোচ্চ মাত্রায় বজায় থাকে। ভেজে বা বেশি রান্না করে খেলে এর পুষ্টিগুণ অপেক্ষাকৃত কম বজায় থাকে।
পালং শাক
পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকম মিনারেল যেমন- আয়রন, জিংক ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস (লুটিন এবং জিজেন্থিন)। ক্যারোটিনয়েড, লুটিন এবং জিজেন্থিনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও জ্বালাপোড়াভাব কমানোর গুণ। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পালং শাক খেলে ম্যাকুলার অবক্ষয় (দৃষ্টিশক্তি হারানোর অন্যতম কারণ) এবং ছানি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেহেতু এতে জিংক রয়েছে, তাই এটি কর্নিয়ার স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। পালং শাকের স্মুদি এখন বেশ জনপ্রিয় খাবার।
এতে জিংক রয়েছে, তাই এটি কর্নিয়ার স্বাস্থ্যও ভালো রাখে; Image Source: Rodale's Organic Life
তাই রেসিপি দেখে আপনিও ঘরে তৈরি করে নিতে পারেন এটি। এর সাথে কিছু ফলমূল যোগ করে নিলে এর পাতা ও তিক্ত জাতীয় স্বাদ দূর হয়। এছাড়াও ডালের সাথে দিয়ে বা স্যুপ বানিয়েও খেতে পারেন পালং শাক। কচি পালং পাতা স্যান্ডুইচ বা পাস্তা দিয়ে খেলে কচমচে স্বাদটা বেশ ভালোই উপভোগ করতে পারবেন।
ডিম
ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অপরিহার্য অ্যামাইনো এসিড এবং পানি-দ্রবণীয় ও চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন। ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি এবং লুতিন ও যিযানথানের ভালো একটি উৎস যার কারণে কুসুমের রং হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে।
ডিম - Source: Today
ভালো দৃষ্টিশক্তি পেতে প্রতিদিন একটি বা দুটি ডিম অবশ্যই খান। সেদ্ধ, পোচ বা রান্নার যেকোনো আইটেমেও ডিম দিলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।