-অই কই তুই?(কন্ঠে যেন আগুন ঝড়ে পড়ছে ইসার)
-কে_ন বাসায়? (তোতলামো করে বললাম আমি)
-তোর ফোনের কি হইছে?তুই কার সাথে বিযি ছিলি? সত্যি করে বল,নইলে তোর ঠ্যং ভাইংগা ফালামু।কিঞ্চিত ভয় পেলাম।অভিনয় করার চেস্টা করে বললাম,কই! কারো সাথে নাতো জান।
-তোরে মিথ্যা বলা আমি শিখামু,তোরে সামনে পাইলে হইছে……অই বেয়াদব সত্যি করে বল,কার সাথে কথা বলেছিস এতক্ষণ?
বুকটা কেমন ধুকধুক করা শুরু করল। যারে এত ভালবাসি তার সাথে মিথ্যাই বা বলি কেমনে?আর বল্লেও…ধরা তো খামু সিউর,তাই একটু ভেবে সত্যিটাই বললাম।
-আসলে জান হইছে কি জানো……(একটু থামলাম)
-আমি কেম্নে জানুম? আমি কি গনক রে হাদারাম? (ধমকে উঠল ইসা)
-হাদারাম না হইলে কি আর তোমার মত ছেড়িরে ভালুবাসছি (মনে মনে কইলাম, মুখে কইয়া মাইর খাইতে চাইনা )
মুখে বললাম,না মানে হইছে কি;আমার সিমে ১ ঘন্টা ফ্রি পাইছিলাম। তাই মানে…অই জয়ীর সাথে একটু ফ্রি মিনিটে কথা বললাম আর কি……একটু পড়াশোনার খবর-টবর নিলাম,তাওতো ৫৯.৩৩মিনিট কথা বলছি,২৭ সেকেন্ড কম কথা বলছি। ওই ২৭ সেকেন্ড ই বাদ;দেকছো তোমায় কত ভালবাসি জানু……… (মনে মনে বললাম,কি সুন্দর ভয়েচ জয়ীর,মেয়েটা নিশ্চিত রেডিও জকি হইবো!!!)
আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে তা জানি না,শুধু এটুকু আন্দাজ করতে পারছি আজ খবর খারাপ আছে!
-তোর জয়ীর সাথে কথা বলা আমি দেকাব,আর তোর ২৭ সেকেন্ডের নাটকও আমি তোকেই দেখাবো। আমার সাথে বিটলামি হারামজাদা,প্রেম করবি আমার সাথে আর রাত জেগে গপ্প করবা আরেকজনের সাথে।কাল ক্যাম্পাছে আয়। তোকে আমি তোর লুচ্চামির মজা দেখাচ্ছি। (রাগে গজগজ করে কথাগুলো বলে ফোন কেটে দিল ইসা )
ইসা।ইসরাত জাহান রুহি। হালকা-পাতলা গড়নের লম্বা করে মেয়েটা অসাধারণ। চেহারায় এক অদ্ভূত লাবণ্যতা। এক অপরুপ স্নিগ্ধতা,পবিত্ রতা। দেখলেই মনের মাঝে কেমন এক অদ্ভূত ভাললাগা কাজ করে।
(২)
ওকে আমি প্রথম দেখি ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু করার প্রায় ১৫ দিন পর| একদিন ক্যান্টিনে বসে চা পান্ করছি,দেখলাম আমার পাশের একটা টেবিলে একটা চমৎকার নন্দিনী এসে বসল|হালকা- পাতলা গড়নের মেয়েটির দিকে একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করেনা| কারো চোখে যে এত মায়া থাকতে পারে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নাই|ইচ্ছা- অনিচ্ছায় জীবনে কম মেয়ে দেখি নাই কিন্তু এত মায়াবী চোখ কোনদিন দেখি নাই|যাইহোক নিজেকে কেমন পাগ্লাটে লাগছিল| বুঝতে চেষটা করছিলাম আসলে আমি চাচ্ছিট কি? যাইহোক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম এত ভাবাভাবির কিছু নাই| দেখা যাক কি হয়| ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে এলাম|তখন পর্যন্ত ইসা আমাকে দেখে নাই| আমি আবার ক্যান্টিনে প্রবেশ করে এদিক-সেদিক তাকিয়ে সোজা ওর সামনে গিয়ে দাড়লাম|
-এখানে একটু বসতে পারি?
ও চারিদিকে নজর বুলিয়ে বলল,এখানে কেন? অইদিকে গিয়ে বসেন| ওইদিকটাতো বেশ ফাঁকা|
-আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম| না,মানে আমি নতুন তো ভার্সিটির তেমন কিছুই চিনি নাতো…তাই……
-তো আমি কি করব? আমাকে দেখে কি আপনার গাইড মনে হচ্ছে নাকি?
-নানা তা হবে কেন?
মানে একটু পরিচিত হতাম আর কি………
-পরিচিত হওয়ার কোন কারণ আছে কি?
আমি একটা চেয়ারে বসে বললাম,পরিচিত হতে কোন নির্দিষ্ট কারণের প্রয়োজন আছে নাকি?
-দেখুন আপনার সাথে আমার ফালতু কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ওই দিকে অনেক চেয়ার ফাঁকা। ওইদিকে গিয়ে বসেন।
-আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন।
-আপনার কি ধারণা আমি খুব খুশি হচ্ছি?
আমি ওর কথায় কোন উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞাসা করলাম,আপুর নামটা.....?
-আমার নাম দিয়ে আপনার কি প্রয়োজন?
-আপনি কি প্রয়োজন ছাড়া কিছু করেন না?
-সে জবাবদিহি কি আপনার কাছে করব?
-আপু রেগে যাচ্ছেন কেন?খুব বিণয়ের সাথে বললাম।
-প্লিজ আপনি যান। আমার ফ্রেন্ড আসবে,আমি তার জন্য অয়েট করছি। আপনি প্লিজ আসুন।
আর কত অপমান সহ্য করব।কিন্তু সমস্যা হইল এই প্রথম এত অপমানিত হলাম,আর মজার কথা হল,আমার কোন কষ্ট হচ্ছেনা। যাইহোক,আমি শুধু সরি বলে উঠে আসলাম। এরপর প্রায় ২১ দিন কেটে গেল|এই ২১ দিন আমি ওকে চাতকের মত অনুসরণ করি|কোথায় থাকে,কখন কোথায় যায়……সব আমার মুখস্ত|ওকে অনুসরণ করতে আমার যে কি ভিষণ ভালো লাগত,তা বলে বোঝাতে পারব না|আমি যে গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি তা বুঝতে দার্শনিক হবার প্রয়োজন নেই| আসলে কোন উদ্দেশ্যে আমিম ওকে ফোলো করি নাই,ভাল লাগচগে তাই করছি|কিন্তু বিপত্তি ঘটল ২২তম দিনে……. আমি ক্যান্টিনে বসে আছি| সামনের একটা টেবিলে ইসা আর ওর ২জন ফ্রেন্ড|
-একটু এইদিকে আসবেন?ইসার বান্ধবী এসে আমাকে নরম সুরে জিজ্ঞাসা করল|
-জি,চলুন|
আমি ইসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম| কেউ আমাকে বসতে বলল না,তাই বসলাম না|
-এই ছেলে কি অসুবিধা তোমার?
-কই অসুবিধা?আমারতো কোন অসুবিধা নাই|
-আমার পিছনে স্পাইগিড়ি করছো কেন?
-কবে?
-কবে মানে?তোমার কি ধারণা আমি অন্ধ?আমার চোখ নাই,আমি দেখছি না আজ ২০-২১ দিন স্পাইয়ের মত আমার পিছনে লেগে আছ………
-চোখ থাকবে না কেন?
আপনার অসাধারণ দুটি চোখ আছে!
-ফাযলামি ছেড়ে বল কি প্রব্লেম তোমার? ঝাঝালো কন্ঠে বলল ইসা|
-কোন প্রব্লেম নেই,আমার কন্ঠ নিস্প্রিহ| ইসাকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা রেগে গেছে| অনেক মেয়েকে নাকি রাগলে সুন্দর দেখায়,এজন্য অনেক মেয়েরা নাকি রাগের অভিনয় করে|কিন্তু ইসার জন্য কথটা প্রযোজ্য না| রাগলে ওকে খুবি বিশ্রি দেখায়| তবুও অকারণে মেয়েটা রাগ করে| নিজেকে একটু কন্ট্রল করে ইসা বলল,নাম কি?
-রেদোয়ান হাসান অংশু|
-দেখো তুমি যা করছ তাতে আমি খুবই বিরক্ত| তোমাকে ভালভাবে বলছি এভাবে আর আমাকে ফোলো করলে তার পরিণামটা ভাল্ হবেনা| পড়াশোনা করতে এসেছো,মন দিয়ে তাই কর|বখাটের মত আচরণ বাদ দিয়ে ভাল হয়ে যাও,বুঝছো?
-কাউকে ভাল লাগলে কি কেউ বখাটে হয়ে যায়?ইসার চোখের দিকে তাকিয়ে নরমসুরে উত্তর দিলাম|
-আরে ফাযিলটা বলে কি? ইসা যেন আকাশ থেকে পড়ল?
এবার ইসার বন্ধুটি আমাকে বলল,আচ্ছা তুমি ওর পিছুপিছু ঘুর কেন?
সাথে নিয়ে ঘুরলে আর পিছুপিছু ঘুরব না|
উত্তর শুনে ইসার বান্ধবী হাসতে লাগল|
-এই ছেলে তুমি পাগল?ইসার বান্ধবীর জিজ্ঞাসা|
-জি না আপু|
-তুমি জান আমরা তোমার ১ইয়ার সিনিয়র?
-এটা কোন সমস্যা না আপু| কিছুদিন গেলে সব ম্যচিং হয়ে যাবে? ইসা এতক্ষন চুপ করে ছিল| সম্ভবত নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিল|
-এই বেয়াদব তুই আমার সামনে দাঁড়ালে কই পইড়া থাকবি জানিস?ওর চোখে তীব্র রাগ|অই মায়াবী চোখে এত রাগ মানায় না…
-উঁচু হিল যদি পড়েন তাহলে থুত্নির নিচে,আর যদি স্লিপার পড়েন তাহলে আপনার কপাল বরাবর! আমার উত্তর শুনে এবার ইসার বান্ধবী শব্দ করেই হেসে ফেলল,ভাল পাগল তো হাসতে হাসতেই বলল|
-থাপড়ায়ে তোমার দাঁত ফেলে দিমু বেয়াদব,সিনিয়র আপুর সাথে মশকরা কর?
-খোদার কসম,একটুও মশকরা করি নাই|যা বলছি সব সত্যি?
-আর যদি একদিনও দেখি ফোলো করতে ডাইরেক্ট ভিসির কাছে বিচার যাবে|এবারের মত মাফ করে দিলাম,যা ভাল হয়ে পড়াশোনা কর|
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম| সারাজীবন মফস্বলের যে ছেলেটি এলাকার সবচেয়ে ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিল আজ সে একটা মেয়ের কাছে এভাবে অপমানিত হচ্ছে!আসলে জীবনে কখন কি যে হয়|আর প্রেম যে কি জিনিস,একবার যে এই প্রেমে পড়ছে তার লাজ-লজ্জা সব নদীর জলে ভাইসা গেছে!!!
এবার বন্ধুটি বলল,বাড়ী কোথায়?
-মতিঝিল|
-আমি তোমার বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করেছি,ইসার বাড়ি কোথায় তা আমি জানি|
-মোহাম্মদপুর|
-শোন|তোমার ভালর জন্যই বলছি,এভাবে ওকে আর ডিস্ট্রাব করোনা|আমরা এক সাথে পড়ি|তাই এটা নিয়ে আর কোন ঝামেলা হোক তা আমরা চাইনা| ভালভাবে পড়াশোনা কর| সেটাই ভাল হবে|বস চা খাও||
আমি কোন উত্তর না দিয়ে ক্যান্টিন থেকে সোজা বের হয়ে গেলাম। যাওয়ার সময় ইসার চোখের দিকে শুধু একবার তাকালাম না সে চোখে কোন রাগ নেই,আছে অসীম মায়া। সে চোখের দিকে তাকিয়ে সব অপমান মুখ বুঝে সোয়া যায়। দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। ইসার সামনে না পড়লেও ফোলো করা বাদ দেই নাই। এইতো সেদিন ফোলো করতে গিয়ে ক্লাস টেষ্টটা মিস করলাম। সে যাক..... অইদিনের ৩ দিন পরে ওর বাড়ির ঠিকানায় একটা চিঠি পোস্ট করলাম। যা লিখেছিলাম চিঠিতে,
"প্রিয়তমা"
মানুষের মন রহস্যময় এক জগৎ। সে জগতের অনুভূতির অণু - পরমাণুগুলো কখন,কোথায়,কিভাব ে,আর কেনই বা বিচরণ করে তা ব্যক্তিসত্ত্বার নিজেরো অজানা।পৃথিবীর অনেক অজানা রহস্যের মত তোমাকে ভালবাসার কারণটাও আমার কাছে অজানা। সে যাইহোক। কথা সত্য,আমি তোমার যোগ্য নই। কোনদিক থেকেই নই। শুধু ভালবাসার দিক ছাড়া, যদিও জানি এই বাজারে এই সস্তা ভালবাসা বিনামূল্যে মুড়ি খাওয়ার মত!!! .....কটকট করে চাবাউ.....পেট ভরবে নাহ!!! হাইটে ছোট,দেখতে বখাটেদের মত,তোমার মত নেই অর্থনৈতিক ভারসাম্য। ....কিন্তু তুমিই বল এত হিসেব করে কি এই জগতে সত্যিকারে কেউ কারও প্রেমে পড়েছে। এত ক্যালকুলেশন করে ব্যবসা করা যায়,ভালবাসা যায়না। তাতে অবশ্য তোমাদের কিছু এসে যায়না,ব্যবসা পেট ভরায়,ভালবাসা নয়!!! ঠিক বলি নাই বাবু! রাগ করলে আদর করে ডাকলাম বলে? তোমাকে ফোলো করি বলে খুব ঝাড়ি মারছ,কিন্তু একবার কি এর পেছনের অভিপ্রায়টা চিন্তা করেছো? কত কষ্ট আর প্রেম মিশে আছে তোমাকে এই লুকিয়ে দেখার মাঝে তা কি একবার অনুধাবন করেছো বাবু? একদিনের ঘটনা।প্রেম করলে যে কত কি সহ্য করতে হয়!!! গত মাসের ২৭ তারিখ। মাসের শেষের দিক। হাতে একদম টাকা নেই। বাবার কাছে মাস শেষ না হলে টাকা চাইতেও পারব না। আর যে দুইটা টিউশনি আছে,মাস শেষ হলেও ঠিকমতো বেতন দেয়না,আর এখন আশা করা বোকামি ছাড়া কিছুই না। সেদিন সকালে মানিব্যাগে দেখি ২৭ টাকা আছে। তোমাকে দুইদিন দেখি নাই আর থাকতে পারলাম না। নাস্তা না করেই রওনা হলাম। নাস্তা করলে তো আর টাকাই থাকবে না। তোমার বাড়ির সামনে চলে এলাম। তোমার ক্লাস ছিল সেদিন ১১টায়| তোমার বের হওয়ার কথা ১০ টায়। আমি ৯ টা থেকে ক্ষুধা আর তৃষ্ণা আর তোমাকে একটু দেখার এক বুক আশা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। সময় গড়ায়....এক সময় সেই কাঙ্খিত সময় আসে। কিন্তু তোমার দেখা নাই। এমন তো হয়না। তুমি তো টাইমলি সব কাজ কর। এক মিনিটো এদিক- সেদিক হয়না। শরীর খারাপ করেনাই তো। বড় চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিন্তু কি আর করার, তোমার বাড়ির ভেতর গিয়ে তো আর খোঁজ নেয়া সম্ভব নয়। তাই ব্যাপক দুশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিচ্ছু করার ছিলনা। ১০,১০.৩০,১১,১১.৩০...এক সময় ১২ টা বাজল। না তবু তুমি আসনা। ক্ষুধা,তৃষ্ণা আর অবর্ণনীয় দুশ্চিন্তায় আমার তখন অবস্থা মুমূর্ষু প্রাণীর মত,যার আত্মা দেহ থেকে বের হওয়ার জন্য ছটফট করছে। একটি চায়ের দোকানে অনেক্ষণ যাবৎ বসে ছিলাম। দোকানদার একটু বিরক্তির সাথে বলল,কি মামু খালি বইয়া বইয়া ঝিমাইলে অইব চা-বিড়ি কিছু দিমু?ক্ষুধায় এমন অবস্থা কি আর বলব,গত রাত্রেও খাইনি। পকেটে টাকা না থাকলে প্রায়ই আমাদের উপোস থাকতে হয়,কিন্তু ভালবাসা একচুলও কমেনা!! এককাপ চায়ের অর্ডার করলাম। ১২.৩৭এ তুমি বের হলে তোমাদের গেইট দিয়ে। আর চা! গরম চায়ে দ্রুত চুমুক দিতে গিয়ে জিহ্বা ফেললাম পুড়িয়ে। রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তুমি আমাকে দেখে ফেললে, আমার দিকে এমনভাবে তাকালে....রাস্ত ার বখাটেদের দিকেও মানুষ এতটা ঘৃণার চোখে তাকায়না। আমাকে দেখতেও সম্ভবত বখাটেদের মতই লাগছিলো,তাইনা জান?? লাগার কথা এমনি যে চেহারা,তারউপর দুইদিন না খাওয়া। না খেলে মানুষের চেহারা কেমন হয় তা সম্ভবত তোমার জানা নেই। তোমার জানার কথাও না!!! ফোলো করলে ভিসির কাছে নালিশ করবে,তোমার মুখ থেকে এ কথা বের হয়েছে; মন থেকে নয়। সে স্বাক্ষী তোমার চোখ দিয়েছে। মানুষ মুখ দিয়ে মিথ্যা বলতে পারে, কিন্তু চোখ কখনও মিথ্যা বলেনা। যার চোখে এত মায়া তার কি এত রাগ মানায়?কেন এত মিথ্যা রাগের অভিনয় কর? তোমার ওই মায়াবী চোখ দুটিই মূলত আমার সর্বনাশের জন্য দায়ী। মানুষের চোখে যে স্রষ্টা এত মায়া দিতে পারেন তা তোমার ওই চোখ না দেখলে আমি কোনদিনই বিশ্বাস করতাম না। আমি যে তোমার চোখের ওই মায়াতে বন্দীগো! এই জনমে আর আমার মুক্তি নেই! "ভালবাসি "-এই শব্দটার কোন গুরুত্ব হয়তো তোমার কাছে নেই। হয়তো এই শব্দটি শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছ। কিন্তু আমার কাছে এই শব্দটির মাহাত্ব্য অন্যরকম। এই কথাটি আজও যে আমার কর্ণকুহর হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছেনি। তোমার কাছে আমার কোন দাবী নেই। শুধু একটা অনুগ্রহ চাই।ভালবাসতে হবেনা। ভালবেসে যাব সারাজীবন,তাতে বাঁধা দিওনা। তোমার সামনে এসে জালাবো না,অগোচরে দেখব!
সবশেষে ছোট্ট একটি কবিতা তোমার জন্য___
অলীক নয় যে হয় যদি প্রেম,
সত্য-মাঝে লুকিয়ে আছো;
সমীর-ছোঁয়া,হিয়ায়
কাঁপন;আমার মাঝেই তুমি বাঁচ।
শব্দ আজি স্তব্ধ হল,মুগ্ধ হল প্রাণ।
স্বত্তা বলে,আত্মা ওগো তুমি আমার জান।
চিঠিটি পাঠানোর পর প্রায় 71 দিন কেটে গেল। দিনগুলো একটা ঘোরের মধ্যদিয়ে কাটতে লাগল। যে আমি জীবনের সব পরীক্ষায় প্রথম হয়ে এই অব্ধি এসেছি তার পড়াশোনার সাড়ে তেরটা বাজল। আর পর্বই বা কেমন করে?? মন তো আমার মাঝে নেই। সেটাযে এখন অন্যের সম্পত্তি! এর মাঝে কিন্তু ওকে ফোকলোর করা,লুকিয়ে দেখা বন্ধ করিনি। ওর নজর এড়ানোর চেষ্টা করলেও প্রায়ই ধরা পড়েছি। 72 তম দিন চিঠি দেয়ার পর। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছি। হঠাৎ মোটা করে একটি ছেলে আসল। আমার হাতে একটি মোটা গিফট প্যাপারে জড়ানো প্যাকেট দিল।
-কে দিল এই প্যাকেট?
-রুহী দিছে। আর রাতের আগে খুলতে না করছে। বলেই ছেলেটি চলে গেল।
আমার বুকের ভিতর কে যেন হাতুড়ি দিয়ে বাড়ী মারছিল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম। আমার পুরো শরীর কাঁপছিল। রাত তখন দেড়টা। রুমমেট ঘুমাছে। আর একজন বাড়িতে গেছে। গিফট প্যাপারটা খুললাম। একটা ডাইরী। ভয়,খুশি, আনন্দ,অপেক্ষা,অনিশ্চয়তা, কষ্ট,ব্যকুলতা অথবা অন্য কোন কারণে আমার শরীর তখনো কাঁপছে। উত্তেজনায় কেমন জানি বমি চাপছে। ডাইরীর পাতা খুলতে কেমন যেন ভিষণ ভয় হচ্ছে। তবু সাহস করে খুলেই ফেললাম। ডাইরী খুলতেই ইসার 3R সাইজের একটা ছবি। ও ভার্সিটিতে সাধারণত লম্বা কামিজ আর মাথায় হিজাব পরে আসে। এই প্রথম ওকে আমি খোলা চুলে দেখলাম। লাল একটা জামা। হাস্যোজ্জ্বল রহস্যময়ী- রমণী!!! চুলগুলো খোলা,বাতাসে উড়ছে। প্রায় 15-20 মিনিট ধরে ছবিটা ভাল করে অবলোকন করলাম। এরপর ডাইরীর পাতা উল্টালাম। প্রথম পৃষ্ঠায় যা দেখলাম তা দেখার পরও যে বেঁচে ছিলাম তা ভাবলেই অবাক হয়ে যাই। "আই লাভ ইউ"...প্রথম পৃষ্ঠায় চমৎকার করে লেখা। মনে হয় কয়েকশোবার লেখাটি পড়ে নিশ্চিত হলাম। না...চশমার পাওয়ার ঠিক ই ছিল!!! আমার বিস্ময় আরও বারল যখন 71 টা পৃষ্ঠা উল্টালাম এবং সবগুলোতেই ওই একই বাক্য,"আই লাভ ইউ"....এক লেখার উপর বারবার ঘষাঘষি করায় কোনকোন পৃষ্ঠা প্রায় ছিঁড়েই গেছে। নিজেকে একটু ধাতস্ত করে 72 তম পৃষ্ঠায় গেলাম। কে জানত আমার জন্য এত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল! "প্রিয়তম" মানুষের মন রহস্যময় এক জগৎ! আমার জগতের সে রহস্যদ্ধার করবে তুমিই। তাইতো তোমার কাছে ধরা দিলাম। আজ নয়,সেইদিনই যেদিন প্রথম পরম ভালবাসার দৃষ্টিতে আমাকে দেখছিলে। তোমার চোখ দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম। এবার বুঝি কারো কাছে ধরা পরে যাব। তাইতো তোমার সাথে রাগো দেখাতাম বেশি।কিন্তু লাভ কি হল?? সেইতো ধরা পড়লাম। জীবনে কম অফার পাইনি,কিন্তু কাউকেই বিশ্বাস করতে পারতাম না| সবার চোখে কামণা দেখেছি,ভালবাসা দেখিনি| তাই এসব রিলেশনে কোন আগ্রহই ছিলনা|কিন্তু অবশেষে……… কারো চোখে এত মায়া থাকতে পারে!!! যাইহোক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। তোমার কাছে হয়তো ঐশ্বর্য পাব না,কিন্তু যা পাব তা পুরো জগতের বিনিময়েও পাব না। অই বেয়াদব ভালবাসাকে মুড়ি খাওয়ার সাথে তুলনা কর? ফাযলামি??ইতরামি কর??? থাপরায়ে তুমার দাঁত ফেলে দিব ফাযিল!!! পারলে দু'একটা এক্সট্রা দাঁত রাখিস,তুই যে বেয়াদব আমার চড় খেয়ে যে তুই কয়টা দাঁত হারাবি.......হি _হি_হি_____ অনেক কষ্ট দিছি তাইনা বাবু?? কি খুশি আদর করে ডাকলাম। আরো অনেক কষ্ট দিব,ভাল যখন বেসেছো কষ্ট পেতেই হবে| আমি যেমন পাচ্ছি।
তোমার জন্য ছোট্ট একটি কবিতা –
আজকে আমার ভোর হয়েছে ঘোর কেটেছে ঘুমের।
আমার হৃদয়,হয়নিকো ক্ষয় হয়েছে জয় প্রেমের।।
(৩)
শরতের আকাশ। এই রোদ,এই বৃষ্টি। আজ কেমন যেন ভ্যাপসা গরম। তারউপর টেনশনে বারটা বেজে যাচ্ছে। আজ কি জানি হয়। পার্কে আসার কথা ৫ টায়, আমি ৪ টা থেকে বসে আছি। যদিও জানি ইসা ৫ টার এক মিনিটও আগে- পড়ে আসবে না। ঠিক ৫ টায় আসল স্বপ্নকন্যা। মাথায় একটা কাল হিজাব আর গায়ে আমার দেয়া ক্রিম কালারের আড়াই হাজার টাকার দামের জামাটা। গত রোযার ঈদে গিফট করেছিলাম।সম্ভবত বাইরে পড়ার জন্য এটাই ওর সবচেয়ে কমদামি জামা। কিন্তু ও বলে এটাই নাকি ওর সবচেয়ে প্রিয় জামা। মুখটা শ্রাবনের আকাশের চেয়েও ভারী সোনামণিটার। আমার পাশে এসে বসল পরীটা।
-পার্কে আসতে বললে যে,ক্যন্টিনেই তো ভাল ছিল! ভয়ে ভয়ে বললাম।
-চুপ করে বসে থাক একটা কথা বলবি না।
ইসার চোখে আজ রাগ দেখলাম না।দেখলাম জমে থাকা একবুক কষ্ট, আর অব্যক্ত যন্ত্রণা।
-বাবু,কিছু বল?
-কথা বলবিনা,চুপ করে বসে থাক। কথা বললে দাঁত খুলে ফেলব।
কিছুক্ষণ নিরবতা, ভয়ে আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি।
ইসাই কথা বলা শুরু করল। খুব নরম সুরে বলল,জীবনে কত প্রপোজ যে আমি রিযেক্ট করেছি তা হয়ত তুমি জান। কোন ছেলেকেই বিশ্বাস করতাম না। অবশেষে তোমাকে বিশ্বাস করলাম,তোমার প্রেমে পরলাম। ভালোমতোই পরলাম।
ব করেছি তোমাকে খুব বেশি কিন্তু তার মূল্য দেয়ার যোগ্যতা তোমার নেই..... লক্ষ্য করলাম ইসার কন্ঠটা ধরে আসছে।
ইসা আমার হাতটা ধরে মুখটা নিচু করে মুখটা রাখল। ২-৩ মিনিট অতিক্রম হল। হঠাৎ গরম পানির স্পর্শ পেলাম। আমি ইসার মুখটা উঁচু করে ধরলাম। এই সাড়ে তিন বছরে এই প্রথম মেয়েটাকে এমন কান্নারত অবস্থায় দেখলাম। এইভেবে আরও খারাপ লাগছিল যে এইজন্য আমি নিজেই দায়ী।
-আমি বিশ্বাস করি তুমি আমাকে সন্দেহ করোনা,আর অবিশ্বাসও করনা। তোমার বিশ্বাস নষ্ট করার মত কোন কাজ আমি করিনি।
-সারারাত কি করেছ তুমি?
-সারারাত না,2-4 টা।2 পর্যন্ত পড়েছি। এরপর 2 টার দিকে রিয়াদ ফোন দিল। আমি তো আর জানিনা যে তুমি ট্রাই করবে। তাই ওর সাথে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম। পাক্কা 45 মিনিট কথা বলে দেখি ফোনে চার্য নেই। ফোন অফ করে আধা ঘন্টা চার্য করার পর চালু করতেই জয়ী ফোন দিয়ে বলল,ওর কাল এক্সাম একটা নোট তৈরি করবে তাই একটু হেল্প চাইল।
-এত রাতে কেন?সারাদিন কি ঘাস কাটছে?
-তা আমি কি জানি?
-আর ওমনি তুমি গল্প করা শুরু করলে ঘন্টা ধরে!
-গল্প না,বিশ্বাস কর। জাস্ট নোট তৈরির ব্যপারে সাহয্যে করেছি। কোন গল্প করিনি| তুমি যে অকারণে ঝাড়ি দেও,মাঝে মাঝে থাপ্পড় দেও|এসব কিচ্ছু বলিনি,এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি।
-খবরদার আমাকে ছুঁবিনা বদ! এসব বলতেও ইচ্ছা করে?কাল তাহলে এসব বললি কেন?
-মজা করেছি। -
তবে রে হারামজাদা! বলেই দুপদুপদুপ......করে আমার বুকে কয়েক হালি কিল বসিয়ে দিল ইসা।
মনে হল আত্নার মাঝে চেপে থাকা বিশাল পাথরটা জানপাখি নিজের হাতে সরিয়ে দিল। কি যে শান্তি পাচ্ছি তা বলে বোঝানো যাবে না। জানতাম ও আমাকে বিশ্বাস করবে। কিছুক্ষণ পার হল। ইসা খুব স্বাভাবিক আচরণ শুরু করল।
-বাদাম কিনি জান?
-শুধু বাদাম খাওয়াবেন?
-আমার সামর্থ্যই যে ওই ১০ টাকার বাদাম!
–আচ্ছা বাবু ভবিষ্যতে আমার ভরণপোষণ করতে পারবে তো?
-আড়াই বেলা খাওয়াতে পারব,দুইবেলা ফুল একবেলা হাফ! একবেলা পার্টনাশীপ করে খেতে হবে।
-আমার তিনবেলা পার্টনারশীপ করতেও আপত্তি নেই!
-উফ রিয়েলি?
-ইয়েস লক্ষী বাবুটা! মনের মাঝে যেন এক শান্তির বায়ু বয়ে গেল?
-আচ্ছা বাবু,এত মেয়ে রেখে তোমার থেকে বড় একটি মেয়েকেই কেন ভালোবাসতে গেলে?
-ভালবাসা আসলে এত হিসেব করে হয়না,হিসেব করে বিজনেস করা যায়,ভালবাসা যায়না। আর বয়স! তুমি আমার থেকে ১০০ বছরের বড় হলেওআমি তোমাকে শুধু ভালবাসতাম!!
-ওমা! আমার বাবুটা আমাকে এত্তগুলা ভালবাসে!! কিন্তু আমি তোমার থেকে ১০০ বছরের বড় হলে তুমি আমার নাতি- পুতির সাথেই প্রেম করতে পারতে|হি_হি_হি__
-আচ্ছা স্যার,আপনি কাল মিথ্যা বললেন কেন?
-মাঝেমাঝে তোমাকে রাগাতে ভাল লাগে।
-তুমি না বলেছিলে রাগলে আমাকে বিশ্রী লাগে?
-বিশ্রী লাগে,কিন্তু রাগের পরের মুহুর্ত মানে রাগ ভেংগে যখন হাসি দাও তখন যে অসাধারণ লাগে!
-তাই!
-হুম।
………………………………………………………………
………………………………………………………………
গল্প করতে করতে সন্ধ্যা হল। বাসায় ফিরছি দু'জন একসাথে এক রিক্সায়। আকাশে শরতের মেঘ। বাতাসে প্রেমের মিষ্টি অনুভূতি। মনের মধ্যে অদ্ভূত আনন্দ-শিহরণ। সাড়ে তিনটি বছর কেটে গেল। হায়াৎ থাকলে আরো সাড়ে তিন যুগ অথবা তারো বেশি সময় কাটবে এভাবেই...... ভালবাসা একচুল ও কমবে না ।
-কে_ন বাসায়? (তোতলামো করে বললাম আমি)
-তোর ফোনের কি হইছে?তুই কার সাথে বিযি ছিলি? সত্যি করে বল,নইলে তোর ঠ্যং ভাইংগা ফালামু।কিঞ্চিত ভয় পেলাম।অভিনয় করার চেস্টা করে বললাম,কই! কারো সাথে নাতো জান।
-তোরে মিথ্যা বলা আমি শিখামু,তোরে সামনে পাইলে হইছে……অই বেয়াদব সত্যি করে বল,কার সাথে কথা বলেছিস এতক্ষণ?
বুকটা কেমন ধুকধুক করা শুরু করল। যারে এত ভালবাসি তার সাথে মিথ্যাই বা বলি কেমনে?আর বল্লেও…ধরা তো খামু সিউর,তাই একটু ভেবে সত্যিটাই বললাম।
-আসলে জান হইছে কি জানো……(একটু থামলাম)
-আমি কেম্নে জানুম? আমি কি গনক রে হাদারাম? (ধমকে উঠল ইসা)
-হাদারাম না হইলে কি আর তোমার মত ছেড়িরে ভালুবাসছি (মনে মনে কইলাম, মুখে কইয়া মাইর খাইতে চাইনা )
মুখে বললাম,না মানে হইছে কি;আমার সিমে ১ ঘন্টা ফ্রি পাইছিলাম। তাই মানে…অই জয়ীর সাথে একটু ফ্রি মিনিটে কথা বললাম আর কি……একটু পড়াশোনার খবর-টবর নিলাম,তাওতো ৫৯.৩৩মিনিট কথা বলছি,২৭ সেকেন্ড কম কথা বলছি। ওই ২৭ সেকেন্ড ই বাদ;দেকছো তোমায় কত ভালবাসি জানু……… (মনে মনে বললাম,কি সুন্দর ভয়েচ জয়ীর,মেয়েটা নিশ্চিত রেডিও জকি হইবো!!!)
আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে তা জানি না,শুধু এটুকু আন্দাজ করতে পারছি আজ খবর খারাপ আছে!
-তোর জয়ীর সাথে কথা বলা আমি দেকাব,আর তোর ২৭ সেকেন্ডের নাটকও আমি তোকেই দেখাবো। আমার সাথে বিটলামি হারামজাদা,প্রেম করবি আমার সাথে আর রাত জেগে গপ্প করবা আরেকজনের সাথে।কাল ক্যাম্পাছে আয়। তোকে আমি তোর লুচ্চামির মজা দেখাচ্ছি। (রাগে গজগজ করে কথাগুলো বলে ফোন কেটে দিল ইসা )
ইসা।ইসরাত জাহান রুহি। হালকা-পাতলা গড়নের লম্বা করে মেয়েটা অসাধারণ। চেহারায় এক অদ্ভূত লাবণ্যতা। এক অপরুপ স্নিগ্ধতা,পবিত্ রতা। দেখলেই মনের মাঝে কেমন এক অদ্ভূত ভাললাগা কাজ করে।
(২)
ওকে আমি প্রথম দেখি ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু করার প্রায় ১৫ দিন পর| একদিন ক্যান্টিনে বসে চা পান্ করছি,দেখলাম আমার পাশের একটা টেবিলে একটা চমৎকার নন্দিনী এসে বসল|হালকা- পাতলা গড়নের মেয়েটির দিকে একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করেনা| কারো চোখে যে এত মায়া থাকতে পারে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নাই|ইচ্ছা- অনিচ্ছায় জীবনে কম মেয়ে দেখি নাই কিন্তু এত মায়াবী চোখ কোনদিন দেখি নাই|যাইহোক নিজেকে কেমন পাগ্লাটে লাগছিল| বুঝতে চেষটা করছিলাম আসলে আমি চাচ্ছিট কি? যাইহোক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম এত ভাবাভাবির কিছু নাই| দেখা যাক কি হয়| ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে এলাম|তখন পর্যন্ত ইসা আমাকে দেখে নাই| আমি আবার ক্যান্টিনে প্রবেশ করে এদিক-সেদিক তাকিয়ে সোজা ওর সামনে গিয়ে দাড়লাম|
-এখানে একটু বসতে পারি?
ও চারিদিকে নজর বুলিয়ে বলল,এখানে কেন? অইদিকে গিয়ে বসেন| ওইদিকটাতো বেশ ফাঁকা|
-আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম| না,মানে আমি নতুন তো ভার্সিটির তেমন কিছুই চিনি নাতো…তাই……
-তো আমি কি করব? আমাকে দেখে কি আপনার গাইড মনে হচ্ছে নাকি?
-নানা তা হবে কেন?
মানে একটু পরিচিত হতাম আর কি………
-পরিচিত হওয়ার কোন কারণ আছে কি?
আমি একটা চেয়ারে বসে বললাম,পরিচিত হতে কোন নির্দিষ্ট কারণের প্রয়োজন আছে নাকি?
-দেখুন আপনার সাথে আমার ফালতু কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ওই দিকে অনেক চেয়ার ফাঁকা। ওইদিকে গিয়ে বসেন।
-আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন।
-আপনার কি ধারণা আমি খুব খুশি হচ্ছি?
আমি ওর কথায় কোন উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞাসা করলাম,আপুর নামটা.....?
-আমার নাম দিয়ে আপনার কি প্রয়োজন?
-আপনি কি প্রয়োজন ছাড়া কিছু করেন না?
-সে জবাবদিহি কি আপনার কাছে করব?
-আপু রেগে যাচ্ছেন কেন?খুব বিণয়ের সাথে বললাম।
-প্লিজ আপনি যান। আমার ফ্রেন্ড আসবে,আমি তার জন্য অয়েট করছি। আপনি প্লিজ আসুন।
আর কত অপমান সহ্য করব।কিন্তু সমস্যা হইল এই প্রথম এত অপমানিত হলাম,আর মজার কথা হল,আমার কোন কষ্ট হচ্ছেনা। যাইহোক,আমি শুধু সরি বলে উঠে আসলাম। এরপর প্রায় ২১ দিন কেটে গেল|এই ২১ দিন আমি ওকে চাতকের মত অনুসরণ করি|কোথায় থাকে,কখন কোথায় যায়……সব আমার মুখস্ত|ওকে অনুসরণ করতে আমার যে কি ভিষণ ভালো লাগত,তা বলে বোঝাতে পারব না|আমি যে গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি তা বুঝতে দার্শনিক হবার প্রয়োজন নেই| আসলে কোন উদ্দেশ্যে আমিম ওকে ফোলো করি নাই,ভাল লাগচগে তাই করছি|কিন্তু বিপত্তি ঘটল ২২তম দিনে……. আমি ক্যান্টিনে বসে আছি| সামনের একটা টেবিলে ইসা আর ওর ২জন ফ্রেন্ড|
-একটু এইদিকে আসবেন?ইসার বান্ধবী এসে আমাকে নরম সুরে জিজ্ঞাসা করল|
-জি,চলুন|
আমি ইসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম| কেউ আমাকে বসতে বলল না,তাই বসলাম না|
-এই ছেলে কি অসুবিধা তোমার?
-কই অসুবিধা?আমারতো কোন অসুবিধা নাই|
-আমার পিছনে স্পাইগিড়ি করছো কেন?
-কবে?
-কবে মানে?তোমার কি ধারণা আমি অন্ধ?আমার চোখ নাই,আমি দেখছি না আজ ২০-২১ দিন স্পাইয়ের মত আমার পিছনে লেগে আছ………
-চোখ থাকবে না কেন?
আপনার অসাধারণ দুটি চোখ আছে!
-ফাযলামি ছেড়ে বল কি প্রব্লেম তোমার? ঝাঝালো কন্ঠে বলল ইসা|
-কোন প্রব্লেম নেই,আমার কন্ঠ নিস্প্রিহ| ইসাকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা রেগে গেছে| অনেক মেয়েকে নাকি রাগলে সুন্দর দেখায়,এজন্য অনেক মেয়েরা নাকি রাগের অভিনয় করে|কিন্তু ইসার জন্য কথটা প্রযোজ্য না| রাগলে ওকে খুবি বিশ্রি দেখায়| তবুও অকারণে মেয়েটা রাগ করে| নিজেকে একটু কন্ট্রল করে ইসা বলল,নাম কি?
-রেদোয়ান হাসান অংশু|
-দেখো তুমি যা করছ তাতে আমি খুবই বিরক্ত| তোমাকে ভালভাবে বলছি এভাবে আর আমাকে ফোলো করলে তার পরিণামটা ভাল্ হবেনা| পড়াশোনা করতে এসেছো,মন দিয়ে তাই কর|বখাটের মত আচরণ বাদ দিয়ে ভাল হয়ে যাও,বুঝছো?
-কাউকে ভাল লাগলে কি কেউ বখাটে হয়ে যায়?ইসার চোখের দিকে তাকিয়ে নরমসুরে উত্তর দিলাম|
-আরে ফাযিলটা বলে কি? ইসা যেন আকাশ থেকে পড়ল?
এবার ইসার বন্ধুটি আমাকে বলল,আচ্ছা তুমি ওর পিছুপিছু ঘুর কেন?
সাথে নিয়ে ঘুরলে আর পিছুপিছু ঘুরব না|
উত্তর শুনে ইসার বান্ধবী হাসতে লাগল|
-এই ছেলে তুমি পাগল?ইসার বান্ধবীর জিজ্ঞাসা|
-জি না আপু|
-তুমি জান আমরা তোমার ১ইয়ার সিনিয়র?
-এটা কোন সমস্যা না আপু| কিছুদিন গেলে সব ম্যচিং হয়ে যাবে? ইসা এতক্ষন চুপ করে ছিল| সম্ভবত নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিল|
-এই বেয়াদব তুই আমার সামনে দাঁড়ালে কই পইড়া থাকবি জানিস?ওর চোখে তীব্র রাগ|অই মায়াবী চোখে এত রাগ মানায় না…
-উঁচু হিল যদি পড়েন তাহলে থুত্নির নিচে,আর যদি স্লিপার পড়েন তাহলে আপনার কপাল বরাবর! আমার উত্তর শুনে এবার ইসার বান্ধবী শব্দ করেই হেসে ফেলল,ভাল পাগল তো হাসতে হাসতেই বলল|
-থাপড়ায়ে তোমার দাঁত ফেলে দিমু বেয়াদব,সিনিয়র আপুর সাথে মশকরা কর?
-খোদার কসম,একটুও মশকরা করি নাই|যা বলছি সব সত্যি?
-আর যদি একদিনও দেখি ফোলো করতে ডাইরেক্ট ভিসির কাছে বিচার যাবে|এবারের মত মাফ করে দিলাম,যা ভাল হয়ে পড়াশোনা কর|
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম| সারাজীবন মফস্বলের যে ছেলেটি এলাকার সবচেয়ে ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিল আজ সে একটা মেয়ের কাছে এভাবে অপমানিত হচ্ছে!আসলে জীবনে কখন কি যে হয়|আর প্রেম যে কি জিনিস,একবার যে এই প্রেমে পড়ছে তার লাজ-লজ্জা সব নদীর জলে ভাইসা গেছে!!!
এবার বন্ধুটি বলল,বাড়ী কোথায়?
-মতিঝিল|
-আমি তোমার বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করেছি,ইসার বাড়ি কোথায় তা আমি জানি|
-মোহাম্মদপুর|
-শোন|তোমার ভালর জন্যই বলছি,এভাবে ওকে আর ডিস্ট্রাব করোনা|আমরা এক সাথে পড়ি|তাই এটা নিয়ে আর কোন ঝামেলা হোক তা আমরা চাইনা| ভালভাবে পড়াশোনা কর| সেটাই ভাল হবে|বস চা খাও||
আমি কোন উত্তর না দিয়ে ক্যান্টিন থেকে সোজা বের হয়ে গেলাম। যাওয়ার সময় ইসার চোখের দিকে শুধু একবার তাকালাম না সে চোখে কোন রাগ নেই,আছে অসীম মায়া। সে চোখের দিকে তাকিয়ে সব অপমান মুখ বুঝে সোয়া যায়। দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। ইসার সামনে না পড়লেও ফোলো করা বাদ দেই নাই। এইতো সেদিন ফোলো করতে গিয়ে ক্লাস টেষ্টটা মিস করলাম। সে যাক..... অইদিনের ৩ দিন পরে ওর বাড়ির ঠিকানায় একটা চিঠি পোস্ট করলাম। যা লিখেছিলাম চিঠিতে,
"প্রিয়তমা"
মানুষের মন রহস্যময় এক জগৎ। সে জগতের অনুভূতির অণু - পরমাণুগুলো কখন,কোথায়,কিভাব ে,আর কেনই বা বিচরণ করে তা ব্যক্তিসত্ত্বার নিজেরো অজানা।পৃথিবীর অনেক অজানা রহস্যের মত তোমাকে ভালবাসার কারণটাও আমার কাছে অজানা। সে যাইহোক। কথা সত্য,আমি তোমার যোগ্য নই। কোনদিক থেকেই নই। শুধু ভালবাসার দিক ছাড়া, যদিও জানি এই বাজারে এই সস্তা ভালবাসা বিনামূল্যে মুড়ি খাওয়ার মত!!! .....কটকট করে চাবাউ.....পেট ভরবে নাহ!!! হাইটে ছোট,দেখতে বখাটেদের মত,তোমার মত নেই অর্থনৈতিক ভারসাম্য। ....কিন্তু তুমিই বল এত হিসেব করে কি এই জগতে সত্যিকারে কেউ কারও প্রেমে পড়েছে। এত ক্যালকুলেশন করে ব্যবসা করা যায়,ভালবাসা যায়না। তাতে অবশ্য তোমাদের কিছু এসে যায়না,ব্যবসা পেট ভরায়,ভালবাসা নয়!!! ঠিক বলি নাই বাবু! রাগ করলে আদর করে ডাকলাম বলে? তোমাকে ফোলো করি বলে খুব ঝাড়ি মারছ,কিন্তু একবার কি এর পেছনের অভিপ্রায়টা চিন্তা করেছো? কত কষ্ট আর প্রেম মিশে আছে তোমাকে এই লুকিয়ে দেখার মাঝে তা কি একবার অনুধাবন করেছো বাবু? একদিনের ঘটনা।প্রেম করলে যে কত কি সহ্য করতে হয়!!! গত মাসের ২৭ তারিখ। মাসের শেষের দিক। হাতে একদম টাকা নেই। বাবার কাছে মাস শেষ না হলে টাকা চাইতেও পারব না। আর যে দুইটা টিউশনি আছে,মাস শেষ হলেও ঠিকমতো বেতন দেয়না,আর এখন আশা করা বোকামি ছাড়া কিছুই না। সেদিন সকালে মানিব্যাগে দেখি ২৭ টাকা আছে। তোমাকে দুইদিন দেখি নাই আর থাকতে পারলাম না। নাস্তা না করেই রওনা হলাম। নাস্তা করলে তো আর টাকাই থাকবে না। তোমার বাড়ির সামনে চলে এলাম। তোমার ক্লাস ছিল সেদিন ১১টায়| তোমার বের হওয়ার কথা ১০ টায়। আমি ৯ টা থেকে ক্ষুধা আর তৃষ্ণা আর তোমাকে একটু দেখার এক বুক আশা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। সময় গড়ায়....এক সময় সেই কাঙ্খিত সময় আসে। কিন্তু তোমার দেখা নাই। এমন তো হয়না। তুমি তো টাইমলি সব কাজ কর। এক মিনিটো এদিক- সেদিক হয়না। শরীর খারাপ করেনাই তো। বড় চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিন্তু কি আর করার, তোমার বাড়ির ভেতর গিয়ে তো আর খোঁজ নেয়া সম্ভব নয়। তাই ব্যাপক দুশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিচ্ছু করার ছিলনা। ১০,১০.৩০,১১,১১.৩০...এক সময় ১২ টা বাজল। না তবু তুমি আসনা। ক্ষুধা,তৃষ্ণা আর অবর্ণনীয় দুশ্চিন্তায় আমার তখন অবস্থা মুমূর্ষু প্রাণীর মত,যার আত্মা দেহ থেকে বের হওয়ার জন্য ছটফট করছে। একটি চায়ের দোকানে অনেক্ষণ যাবৎ বসে ছিলাম। দোকানদার একটু বিরক্তির সাথে বলল,কি মামু খালি বইয়া বইয়া ঝিমাইলে অইব চা-বিড়ি কিছু দিমু?ক্ষুধায় এমন অবস্থা কি আর বলব,গত রাত্রেও খাইনি। পকেটে টাকা না থাকলে প্রায়ই আমাদের উপোস থাকতে হয়,কিন্তু ভালবাসা একচুলও কমেনা!! এককাপ চায়ের অর্ডার করলাম। ১২.৩৭এ তুমি বের হলে তোমাদের গেইট দিয়ে। আর চা! গরম চায়ে দ্রুত চুমুক দিতে গিয়ে জিহ্বা ফেললাম পুড়িয়ে। রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তুমি আমাকে দেখে ফেললে, আমার দিকে এমনভাবে তাকালে....রাস্ত ার বখাটেদের দিকেও মানুষ এতটা ঘৃণার চোখে তাকায়না। আমাকে দেখতেও সম্ভবত বখাটেদের মতই লাগছিলো,তাইনা জান?? লাগার কথা এমনি যে চেহারা,তারউপর দুইদিন না খাওয়া। না খেলে মানুষের চেহারা কেমন হয় তা সম্ভবত তোমার জানা নেই। তোমার জানার কথাও না!!! ফোলো করলে ভিসির কাছে নালিশ করবে,তোমার মুখ থেকে এ কথা বের হয়েছে; মন থেকে নয়। সে স্বাক্ষী তোমার চোখ দিয়েছে। মানুষ মুখ দিয়ে মিথ্যা বলতে পারে, কিন্তু চোখ কখনও মিথ্যা বলেনা। যার চোখে এত মায়া তার কি এত রাগ মানায়?কেন এত মিথ্যা রাগের অভিনয় কর? তোমার ওই মায়াবী চোখ দুটিই মূলত আমার সর্বনাশের জন্য দায়ী। মানুষের চোখে যে স্রষ্টা এত মায়া দিতে পারেন তা তোমার ওই চোখ না দেখলে আমি কোনদিনই বিশ্বাস করতাম না। আমি যে তোমার চোখের ওই মায়াতে বন্দীগো! এই জনমে আর আমার মুক্তি নেই! "ভালবাসি "-এই শব্দটার কোন গুরুত্ব হয়তো তোমার কাছে নেই। হয়তো এই শব্দটি শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছ। কিন্তু আমার কাছে এই শব্দটির মাহাত্ব্য অন্যরকম। এই কথাটি আজও যে আমার কর্ণকুহর হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছেনি। তোমার কাছে আমার কোন দাবী নেই। শুধু একটা অনুগ্রহ চাই।ভালবাসতে হবেনা। ভালবেসে যাব সারাজীবন,তাতে বাঁধা দিওনা। তোমার সামনে এসে জালাবো না,অগোচরে দেখব!
সবশেষে ছোট্ট একটি কবিতা তোমার জন্য___
অলীক নয় যে হয় যদি প্রেম,
সত্য-মাঝে লুকিয়ে আছো;
সমীর-ছোঁয়া,হিয়ায়
কাঁপন;আমার মাঝেই তুমি বাঁচ।
শব্দ আজি স্তব্ধ হল,মুগ্ধ হল প্রাণ।
স্বত্তা বলে,আত্মা ওগো তুমি আমার জান।
চিঠিটি পাঠানোর পর প্রায় 71 দিন কেটে গেল। দিনগুলো একটা ঘোরের মধ্যদিয়ে কাটতে লাগল। যে আমি জীবনের সব পরীক্ষায় প্রথম হয়ে এই অব্ধি এসেছি তার পড়াশোনার সাড়ে তেরটা বাজল। আর পর্বই বা কেমন করে?? মন তো আমার মাঝে নেই। সেটাযে এখন অন্যের সম্পত্তি! এর মাঝে কিন্তু ওকে ফোকলোর করা,লুকিয়ে দেখা বন্ধ করিনি। ওর নজর এড়ানোর চেষ্টা করলেও প্রায়ই ধরা পড়েছি। 72 তম দিন চিঠি দেয়ার পর। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছি। হঠাৎ মোটা করে একটি ছেলে আসল। আমার হাতে একটি মোটা গিফট প্যাপারে জড়ানো প্যাকেট দিল।
-কে দিল এই প্যাকেট?
-রুহী দিছে। আর রাতের আগে খুলতে না করছে। বলেই ছেলেটি চলে গেল।
আমার বুকের ভিতর কে যেন হাতুড়ি দিয়ে বাড়ী মারছিল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম। আমার পুরো শরীর কাঁপছিল। রাত তখন দেড়টা। রুমমেট ঘুমাছে। আর একজন বাড়িতে গেছে। গিফট প্যাপারটা খুললাম। একটা ডাইরী। ভয়,খুশি, আনন্দ,অপেক্ষা,অনিশ্চয়তা, কষ্ট,ব্যকুলতা অথবা অন্য কোন কারণে আমার শরীর তখনো কাঁপছে। উত্তেজনায় কেমন জানি বমি চাপছে। ডাইরীর পাতা খুলতে কেমন যেন ভিষণ ভয় হচ্ছে। তবু সাহস করে খুলেই ফেললাম। ডাইরী খুলতেই ইসার 3R সাইজের একটা ছবি। ও ভার্সিটিতে সাধারণত লম্বা কামিজ আর মাথায় হিজাব পরে আসে। এই প্রথম ওকে আমি খোলা চুলে দেখলাম। লাল একটা জামা। হাস্যোজ্জ্বল রহস্যময়ী- রমণী!!! চুলগুলো খোলা,বাতাসে উড়ছে। প্রায় 15-20 মিনিট ধরে ছবিটা ভাল করে অবলোকন করলাম। এরপর ডাইরীর পাতা উল্টালাম। প্রথম পৃষ্ঠায় যা দেখলাম তা দেখার পরও যে বেঁচে ছিলাম তা ভাবলেই অবাক হয়ে যাই। "আই লাভ ইউ"...প্রথম পৃষ্ঠায় চমৎকার করে লেখা। মনে হয় কয়েকশোবার লেখাটি পড়ে নিশ্চিত হলাম। না...চশমার পাওয়ার ঠিক ই ছিল!!! আমার বিস্ময় আরও বারল যখন 71 টা পৃষ্ঠা উল্টালাম এবং সবগুলোতেই ওই একই বাক্য,"আই লাভ ইউ"....এক লেখার উপর বারবার ঘষাঘষি করায় কোনকোন পৃষ্ঠা প্রায় ছিঁড়েই গেছে। নিজেকে একটু ধাতস্ত করে 72 তম পৃষ্ঠায় গেলাম। কে জানত আমার জন্য এত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল! "প্রিয়তম" মানুষের মন রহস্যময় এক জগৎ! আমার জগতের সে রহস্যদ্ধার করবে তুমিই। তাইতো তোমার কাছে ধরা দিলাম। আজ নয়,সেইদিনই যেদিন প্রথম পরম ভালবাসার দৃষ্টিতে আমাকে দেখছিলে। তোমার চোখ দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম। এবার বুঝি কারো কাছে ধরা পরে যাব। তাইতো তোমার সাথে রাগো দেখাতাম বেশি।কিন্তু লাভ কি হল?? সেইতো ধরা পড়লাম। জীবনে কম অফার পাইনি,কিন্তু কাউকেই বিশ্বাস করতে পারতাম না| সবার চোখে কামণা দেখেছি,ভালবাসা দেখিনি| তাই এসব রিলেশনে কোন আগ্রহই ছিলনা|কিন্তু অবশেষে……… কারো চোখে এত মায়া থাকতে পারে!!! যাইহোক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। তোমার কাছে হয়তো ঐশ্বর্য পাব না,কিন্তু যা পাব তা পুরো জগতের বিনিময়েও পাব না। অই বেয়াদব ভালবাসাকে মুড়ি খাওয়ার সাথে তুলনা কর? ফাযলামি??ইতরামি কর??? থাপরায়ে তুমার দাঁত ফেলে দিব ফাযিল!!! পারলে দু'একটা এক্সট্রা দাঁত রাখিস,তুই যে বেয়াদব আমার চড় খেয়ে যে তুই কয়টা দাঁত হারাবি.......হি _হি_হি_____ অনেক কষ্ট দিছি তাইনা বাবু?? কি খুশি আদর করে ডাকলাম। আরো অনেক কষ্ট দিব,ভাল যখন বেসেছো কষ্ট পেতেই হবে| আমি যেমন পাচ্ছি।
তোমার জন্য ছোট্ট একটি কবিতা –
আজকে আমার ভোর হয়েছে ঘোর কেটেছে ঘুমের।
আমার হৃদয়,হয়নিকো ক্ষয় হয়েছে জয় প্রেমের।।
(৩)
শরতের আকাশ। এই রোদ,এই বৃষ্টি। আজ কেমন যেন ভ্যাপসা গরম। তারউপর টেনশনে বারটা বেজে যাচ্ছে। আজ কি জানি হয়। পার্কে আসার কথা ৫ টায়, আমি ৪ টা থেকে বসে আছি। যদিও জানি ইসা ৫ টার এক মিনিটও আগে- পড়ে আসবে না। ঠিক ৫ টায় আসল স্বপ্নকন্যা। মাথায় একটা কাল হিজাব আর গায়ে আমার দেয়া ক্রিম কালারের আড়াই হাজার টাকার দামের জামাটা। গত রোযার ঈদে গিফট করেছিলাম।সম্ভবত বাইরে পড়ার জন্য এটাই ওর সবচেয়ে কমদামি জামা। কিন্তু ও বলে এটাই নাকি ওর সবচেয়ে প্রিয় জামা। মুখটা শ্রাবনের আকাশের চেয়েও ভারী সোনামণিটার। আমার পাশে এসে বসল পরীটা।
-পার্কে আসতে বললে যে,ক্যন্টিনেই তো ভাল ছিল! ভয়ে ভয়ে বললাম।
-চুপ করে বসে থাক একটা কথা বলবি না।
ইসার চোখে আজ রাগ দেখলাম না।দেখলাম জমে থাকা একবুক কষ্ট, আর অব্যক্ত যন্ত্রণা।
-বাবু,কিছু বল?
-কথা বলবিনা,চুপ করে বসে থাক। কথা বললে দাঁত খুলে ফেলব।
কিছুক্ষণ নিরবতা, ভয়ে আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি।
ইসাই কথা বলা শুরু করল। খুব নরম সুরে বলল,জীবনে কত প্রপোজ যে আমি রিযেক্ট করেছি তা হয়ত তুমি জান। কোন ছেলেকেই বিশ্বাস করতাম না। অবশেষে তোমাকে বিশ্বাস করলাম,তোমার প্রেমে পরলাম। ভালোমতোই পরলাম।
ব করেছি তোমাকে খুব বেশি কিন্তু তার মূল্য দেয়ার যোগ্যতা তোমার নেই..... লক্ষ্য করলাম ইসার কন্ঠটা ধরে আসছে।
ইসা আমার হাতটা ধরে মুখটা নিচু করে মুখটা রাখল। ২-৩ মিনিট অতিক্রম হল। হঠাৎ গরম পানির স্পর্শ পেলাম। আমি ইসার মুখটা উঁচু করে ধরলাম। এই সাড়ে তিন বছরে এই প্রথম মেয়েটাকে এমন কান্নারত অবস্থায় দেখলাম। এইভেবে আরও খারাপ লাগছিল যে এইজন্য আমি নিজেই দায়ী।
-আমি বিশ্বাস করি তুমি আমাকে সন্দেহ করোনা,আর অবিশ্বাসও করনা। তোমার বিশ্বাস নষ্ট করার মত কোন কাজ আমি করিনি।
-সারারাত কি করেছ তুমি?
-সারারাত না,2-4 টা।2 পর্যন্ত পড়েছি। এরপর 2 টার দিকে রিয়াদ ফোন দিল। আমি তো আর জানিনা যে তুমি ট্রাই করবে। তাই ওর সাথে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম। পাক্কা 45 মিনিট কথা বলে দেখি ফোনে চার্য নেই। ফোন অফ করে আধা ঘন্টা চার্য করার পর চালু করতেই জয়ী ফোন দিয়ে বলল,ওর কাল এক্সাম একটা নোট তৈরি করবে তাই একটু হেল্প চাইল।
-এত রাতে কেন?সারাদিন কি ঘাস কাটছে?
-তা আমি কি জানি?
-আর ওমনি তুমি গল্প করা শুরু করলে ঘন্টা ধরে!
-গল্প না,বিশ্বাস কর। জাস্ট নোট তৈরির ব্যপারে সাহয্যে করেছি। কোন গল্প করিনি| তুমি যে অকারণে ঝাড়ি দেও,মাঝে মাঝে থাপ্পড় দেও|এসব কিচ্ছু বলিনি,এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি।
-খবরদার আমাকে ছুঁবিনা বদ! এসব বলতেও ইচ্ছা করে?কাল তাহলে এসব বললি কেন?
-মজা করেছি। -
তবে রে হারামজাদা! বলেই দুপদুপদুপ......করে আমার বুকে কয়েক হালি কিল বসিয়ে দিল ইসা।
মনে হল আত্নার মাঝে চেপে থাকা বিশাল পাথরটা জানপাখি নিজের হাতে সরিয়ে দিল। কি যে শান্তি পাচ্ছি তা বলে বোঝানো যাবে না। জানতাম ও আমাকে বিশ্বাস করবে। কিছুক্ষণ পার হল। ইসা খুব স্বাভাবিক আচরণ শুরু করল।
-বাদাম কিনি জান?
-শুধু বাদাম খাওয়াবেন?
-আমার সামর্থ্যই যে ওই ১০ টাকার বাদাম!
–আচ্ছা বাবু ভবিষ্যতে আমার ভরণপোষণ করতে পারবে তো?
-আড়াই বেলা খাওয়াতে পারব,দুইবেলা ফুল একবেলা হাফ! একবেলা পার্টনাশীপ করে খেতে হবে।
-আমার তিনবেলা পার্টনারশীপ করতেও আপত্তি নেই!
-উফ রিয়েলি?
-ইয়েস লক্ষী বাবুটা! মনের মাঝে যেন এক শান্তির বায়ু বয়ে গেল?
-আচ্ছা বাবু,এত মেয়ে রেখে তোমার থেকে বড় একটি মেয়েকেই কেন ভালোবাসতে গেলে?
-ভালবাসা আসলে এত হিসেব করে হয়না,হিসেব করে বিজনেস করা যায়,ভালবাসা যায়না। আর বয়স! তুমি আমার থেকে ১০০ বছরের বড় হলেওআমি তোমাকে শুধু ভালবাসতাম!!
-ওমা! আমার বাবুটা আমাকে এত্তগুলা ভালবাসে!! কিন্তু আমি তোমার থেকে ১০০ বছরের বড় হলে তুমি আমার নাতি- পুতির সাথেই প্রেম করতে পারতে|হি_হি_হি__
-আচ্ছা স্যার,আপনি কাল মিথ্যা বললেন কেন?
-মাঝেমাঝে তোমাকে রাগাতে ভাল লাগে।
-তুমি না বলেছিলে রাগলে আমাকে বিশ্রী লাগে?
-বিশ্রী লাগে,কিন্তু রাগের পরের মুহুর্ত মানে রাগ ভেংগে যখন হাসি দাও তখন যে অসাধারণ লাগে!
-তাই!
-হুম।
………………………………………………………………
………………………………………………………………
গল্প করতে করতে সন্ধ্যা হল। বাসায় ফিরছি দু'জন একসাথে এক রিক্সায়। আকাশে শরতের মেঘ। বাতাসে প্রেমের মিষ্টি অনুভূতি। মনের মধ্যে অদ্ভূত আনন্দ-শিহরণ। সাড়ে তিনটি বছর কেটে গেল। হায়াৎ থাকলে আরো সাড়ে তিন যুগ অথবা তারো বেশি সময় কাটবে এভাবেই...... ভালবাসা একচুল ও কমবে না ।
Last edited: