What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review 12 Angry men : ১২ জন রাগী মানুষের গল্প (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
9wDcLLk.jpg


বারোজন মানুষ, একটি প্রাণ, একটি সিদ্ধান্ত, এবং একটি রুম !

ব্যাপারটা একটু খুলে বলি । একজন মানুষের প্রাণ বারোজন মানুষের হাতে । সেই 'একজন মানুষ' দোষী না নির্দোষ এটা নিয়েই কথা, তর্ক , আলোচনা , ঝগড়া , অপমান । বিভিন্ন বয়সের এবং বিভিন্ন চরিত্রের বারোজন মানুষ একটা আবদ্ধ রুমের ভিতর একটি মাত্র সিদ্ধান্তে আসার জন্য একেকজন একেক রকম যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন । একদম শ্বাসরুদ্ধকর ব্যাপার !

পরিচালক সিডনী লুমেট ১৯৫৭ সালে 12 Angry Men নামে এক অসাধারণ কোর্ট রুম ড্রামা নির্মাণ করেন । সিডনী লুমেট এর এটিই প্রথম পরিচালনা । এবং প্রথম সিনেমাতেই তিনি বাজিমাত করে দেখিয়েছেন ।

সংক্ষেপে সিনেমার কাহিনী সম্পর্কে একটু জেনা নেয়া যাক । ১৮ বছরের এক যুবক তার পিতাকে ছুরি মেরে খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয় । মামলার রায় দেয়ার দায়িত্ব এসে পড়ে ১২ সদস্যের এক জুরি বোর্ডের উপড় । সমস্ত ফ্যাক্টস , সমস্ত যুক্তি – প্রমাণ খতীয়ে দেখে রায় দিতে হবে । ১২ জন জুরির রায় একই হতে হবে । হয় দোষী না হয় নির্দোষ । জুরি বোর্ডের উদ্দ্যেশে জজ সাহেব আরো একটি প্রয়োজনীয় কথা বলে দেন । সেটি হচ্ছে কারো মনে যদি মামলার রায় নিয়ে কোন 'যুক্তি সংগত সন্দেহ (Reasonable Doubt)' থাকে তাহলে সে অভিযুক্ত যুবকের পক্ষে যথাযথ যুক্তি পেশ করে তাকে নির্দোষ দাবি করতে পারে ।

9zMdnJk.jpg


12 Angry men সিনেমার জুরি বোর্ডের ১২ সদস্য

প্রাথমিক ভোটে জুরি বোর্ডের ১২ জনের মধ্যে ১১ জনই আসামীর বিপক্ষে রায় দেয় । ১১ জনই বলে আসামী দোষী । শুধুমাত্র একজন জুরি দাবি করলো আসামী নির্দোষ । তিনি হচ্ছেন আট নম্বর জুরি । তার কাছে মনে হলো ১৮ বছরের একটা তরুণ যে ছোটবেলা থেকেই সমাজে নির্যাতিত – নিপীড়িত হয়ে আসছে সে কখনো তার বাবাকে খুন করতে পারে না । এভাবে এত সহজেই সে কারো জীবণ-মরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না । পুনরায় সকল ফ্যাক্টস , সকল যুক্তি-প্রমাণ নতুন ভাবে খতিয়ে যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সে একটা সিদ্ধান্তে আসতে চায় । এভাবে একেক জনের যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে অজানা অনেক কিছুই বের হয়ে আসে । খুনের কথা বলতে গিয়ে বের হয়ে আসে অজানা অনেক কিছু যা আদালতে প্রকাশ পায় না । বের হয়ে আসে একেকজনের আসল চেহারা । আস্তে আস্তে সে চেহারা রূপ নেয় ভিন্ন আরেক চেহারায় । সংলাপের সুর পাল্টে যায় । একপর্যায়ে বের হয়ে আসে চরিত্রগুলোর বিক্ষুব্ধ-রাগী চেহারা ।

RtAAglI.jpg


জুরি নম্বর ৮ তিনি একাই আসামীর পক্ষে হাত উঠিয়েছেন

শেষ পর্যন্ত আসামীর কি পরিণতি হয়? ১২ জন জুরি যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত গ্রহন করে? এসব জানতে হলে আপনাকে সিনেমাটি অবশ্যই দেখতে হবে ।

সিনেমার বিভিন্ন জায়গায় Reasonable Doubt কথাটির ব্যবহার দেখা যায় । চলুন জেনে নেয়া যাক আসলে এই Reasonable Doubt জিনিসটা কি ??

Reasonable Doubt বা যুক্তিসংগত সন্দেহ : যুক্তিসংগত সন্দেহ হচ্ছে যখন একটি অপরাধমূলক আসামীর মামলা হয় , প্রসিকিউটর একটি যুক্তিসংগত সন্দেহের বিনিময়ে আসামীর দোষ প্রমাণ করেন । প্রমাণের একটি প্রধান কারন হচ্ছে একটি পক্ষের তুলনায় অন্য পক্ষের আরো বেশি প্রমাণ রয়েছে । প্রসিকিউটরের এই যুক্তিসংগত সন্দেহের মাধ্যমে আসামীর দোষ প্রমাণ করারকেই বলা হয় Reasonable Doubt । এটি Anglo-Saxon country (যে সব দেশে ইংরেজি কেই প্রধান ভাষা হিসেবে ধরা হয়) গুলোতে বহুল প্রচলিত একটি বিচার ব্যবস্থা । মার্কিন যুক্ত-রাষ্ট্রের যে কোন দেশেই এই Reasonable Doubt হচ্ছে একটি আদালতের সর্বচ্চ প্রমাণাদি । সেখানে সকল অপরাধ মূলক বিচারের প্রমাণ হয় Reasonable Doubt এর মাধ্যমে ।

yxK3uUp.png


রাগান্বিত দৃশ্যে লী যে কব, জুরি নম্বর ৩

আমরা জানি আইনের চোখ অন্ধ । আইন যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে প্রমাণে বিশ্বাস করে । একজন আসামী কি আসলেই দোষী না নির্দোষ সেটার যুক্তি সংগত কোন কারন ছাড়া আইন কখনো কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারে না । মানুষ ভুল করে । কিন্তু এক সময় মানুষ ভুল স্বীকার করে যুক্তি মেনে নেয় । কারন যুক্তি-তর্কের মাধ্যমেই আসল সত্য বের হয়ে আসে । মাঝে মাঝে এমন কিছু বের হয়ে আসে যার জন্য আমরা প্রস্তুত নই । চরিত্রের খোলসের ভিতরের অংশটুকুও বের হয়ে আসে । আসলে 12 Angry Men সিনেমার মূল বক্তব্যই হচ্ছে যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সত্যের পরিচয় পাওয়া । সমাজে অহরহ অপরাধ ঘটে চলেছে । কিন্তু সব অপরাধেরই কি ঠিকমত সঠিক বিচার করে সঠিক রায় দেয়া হয় ??? নাকি ইচ্ছেমত মনগড়া কোন রায় দিয়ে দেই আমরা ? 12 Angry Men সিনেমাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে আমাদের সমাজের বিচার –ব্যবস্থার অসংগতিগুলি । অপরাধ যাই হোক না কেন সঠিক প্রমাণ এবং সঠিক যুক্তি দিয়ে সত্য বের করে সঠিক রায় দেয়াটাই আসল ব্যাপার ।

অভিনয়ের কথা বললে প্রত্যেকটা চরিত্রই অসাধারন অভিনয় করেছেন । ১২ জন মানুষ তাদের নিজ নিজ যুক্তি দেখানোর সময় তাদের কথা বলার ভঙ্গি , মুখের এক্সপ্রেশন, চেহারার রাগী ভাব সব মিলিয়ে জাস্ট অসাধারন । প্রত্যেকটা চরিত্রের অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছিল ক্যামেরায় । তবে যার অভিনয়টা ছিল সব থেকে সাবলীল তিনি হলেন জুরি নম্বর আট যিনি সর্ব প্রথম একাই হাত তুলেন আসামীর পক্ষে । পুরো সিনেমা জুরে তিনি তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অটুট । জুরি নম্বর আটে যিনি অভিনয় করেছেন তিনি হলেন 'হ্যানরী ফোন্ডা' । অভিনয়ের পাশাপাশি এই সিনেমার প্রযোজক হিসেবেও ছিলেন 'হ্যানরী ফোন্ডা' । একজন যুক্তিবাদী , এবং একজন জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিজেকে চরিত্রের জন্য একেবারে বিলিয়ে দিয়েছিলেন । তবে সিনেমার একদম শেষ পর্যন্ত জুরি নম্বর ৩ এ অভিনয় করা 'লী জে কব' এর অতুলনীয় অভিনয়ের কথাও ভুলতে পারবেন না । এক কথায় বলতে গেলে ১২ জনের সবাই নিজ নিজ চরিত্রে অসাধারন অভিনয় করেছেন । এই অসাধারন অভিনয়ের জন্য 'হ্যানরী ফোন্ডা 'Best Foreign actor' ক্যাটাগরিতে বাফতা এ্যাওয়ার্ড পান ।

১ ঘন্টা ৩৬ মিনিটের এই সিনেমায় আপনি বোরিং ফিল করবেন না । সিডনী লুমেট একটি রুমের মাঝেই পুরো সিনেমা শেষ করে দিয়েছেন । সিনেমা দেখার সময় মনেই হবে না যে একটি রুমের ভিতর পুরো সিনেমা শেষ হয়ে গেছে । পুরো সিনেমাটিই সংলাপ নির্ভর সিনেমা । সিডনী লুমেট প্রত্যেকটা অভিনেতার কাছ থেকে যে নিপুণতা আর যে অভিনয়ের মাধুর্য নিয়ে আসেছেন তা সত্যই অতুলনীয় । সিনেমাটা একটি রুমের মধ্যে হওয়ায় ক্যামেরার অনেক গুলো ছোট ছোট শট নিতে হয়েছিলো । বড় শট তেমন ছিলো না । কারন একটি রুমের মাঝেই ক্যামেরা বার বার ঘুরে ফিরে বারো জনের দিকেই তাক করা ছিল । সংলাপ বহুল সিনেমার কারনে পরিচালক চেষ্টা করেছেন যেন প্রত্যেকটা চরিত্রের অভিব্যক্তি তিনি তার ক্যামেরায় ফুটিয়ে তুলতে পারেন । এবং

সিডনী লুমেট এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছেন । সিনেমাটি অস্কারে নোমিনেশন পেলেও শেষ পর্যন্ত অস্কার পায় নই । তবে অস্কার না পেলেও সিনেমাটি 'golden bear award, OCIC award' সহ আরো কয়েকটি পুরষ্কার লাভ করে ।

F7bDoV7.jpg


হ্যানরী ফোন্ডা, জুরি নম্বর ৮ চরিত্রে

পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই সিনেমাটি সম্পর্কে । সিনেমাটি শুধু একটি খুনের বিচার করার মাঝে সীমাবদ্ধ নয় , সিনেমায় ফুটে উঠেছে বারো জন মানুষের বারো রকমের গল্প । উঠে এসেছে মানুষের আবেগ , খোঁড়া যুক্তি আর নিজেদের গোঁড়ামির বিবেচনা । একজন মানুষকে না চিনে না জেনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা এতটা সহজ নয় । মানবিক দিকটাও ভাবতে হয় । সিনেমাটি আপনাকে ভাবাবে । আপনি ভাবতে বাধ্য হবেন । সিনেমাটি দেখার পরে সমাজের এবং আইনের অসংগতি গুলো আপনাকে নতুন করে ভাবাতে সাহায্য করবে ।

২০০৮ সালে সিনেমাটি 'american film institute's list' এ "কোর্ট রুম ড্রামা" জনরাতে টপ টেন অলটাইম গ্রেটেস্ট সিনেমার মাঝে '২' নম্বর পজিশনে জায়গা পায় ।

12 Angry Men সিনেমার উপড় ভিত্তি করে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তে "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদ নাট্যোৎসব- ২০১৭" এর দ্বিতীয় সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে নাটক "12 Angry Men (1957 film)

Khci145.jpg


ঢাকা ভার্সিটির নাট্যোৎসবে প্রদর্শিত 12 Angry Men (1957 film)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top