What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

udola.champa লিখিত গল্পসমূহ (1 Viewer)


“ফ্রেন্ডস চ্যাট সার্ভিসে আপনাকে স্বাগত জানাই... এই কলের জন্য আপনাকে দিতে হবে মাত্র তিন টাকা প্রতি মিনিটের শুল্ক... দয়া করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ... দয়া করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ... দয়া করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ... আমার আপনার কল এখনই একটি বন্ধুর সাথে কানেক্ট করতে যাচ্ছি...”

মোবাইল ফোনে পাঁচ অক্ষরের নম্বর ডায়াল করতেই রেকর্ড করা আওয়াজ শুনতে পারল রাহুল, মাত্র দুই দিন হয়েছে ও মোবাইল ফোন কম্পানির এই পরিসেবা সাবস্ক্রাইব করেছে। এই সার্ভিসে নাকি মেয়েদের সঙ্গে কথা বলা যায়, তাও নিজের আসল মোবাইল নম্বর না জানিয়ে...

আমিও এই পরিসেবাতে ঢুকেছি তবে অন্য ভাবে। একদিন মোবাইল ফোন কম্পানির থেকে একটা ম্যাসেজ পাই। সেই নম্বরে যোগাযোগ করে জানা যায় যে মোবাইল ফোন কোম্পানি একটা বেসরকারী সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগে এই পরিসেবা শুরু করেছে। আমার মত অনেক মেয়েদেরই তারা নাকি দলে ভিড়িয়েছে। আমাদের মত মেয়েদের কাজ হল যে যখন এই ‘ফ্রেন্ডস চ্যাট সার্ভিসে’ ছেলেরা ফোন করবে, আমার মত কোন না কোন মেয়ে তার ফোন পাবে। আমাদের কাজ হল যে এই সব গ্রাহকদের সাথে যতক্ষণ পারা যায় কথা বলা, ওদের লাইনে রাখা- ওদের বিল তিন টাকা প্রতি মিনিট হিসাবে উঠবে আর যত কথা বলে বিল উঠবে, আমরা এই পরিসেবায় নিযুক্ত মেয়েরা তার থেকে কিছু কমিশন পাব... – একে বলে টক টাইম তোলা, এটাই হল আমাদের ID র Job অথবা চাকুরী...

বেশ! আমি তো ছয় মাস ধরে এই পরিসেবায় কর্মরত। মাসে তিন চার হাজার টাকা আরামসে উঠে যায়... শুধুই তো কথা বলা... সব রকমেরই কথা বার্তা বলা... সাধারণ, যাবতীয় এবং সেক্স, রোমান্স, ইত্যাদি... আমার তো সব কিছুরই এখন অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে, এছাড়া যদি এই চ্যাট সার্ভিস থেকে আরও কিছু লাভ হয় তো ক্ষতি কি?

সেই দিন রাহুলের ফোন আমি পেলাম...

আজ জানি না কেন এখনও আমার এক বোতল বিয়ার শেষ হয়নি কিন্তু আমি এটা জানি, কারুকে নিজের নম্বর না জানিয়ে একটু দুষ্টু মিষ্টি কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে।

“হ্যালো?”, অবশেষে আমি একটা আওয়াজ পেলাম।

“হ্যালো, কে বলছ?”, আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“আমার নাম রাহুল, তুমি কে বলছ?”

“আমার নাম বিম্বো, কোথায় থাক তুমি?” ইস! নিজের আসল ডাক নামটা বলে ফেললাম...

“আমি, দমদম থাকি, আর তুমি?”

“আমি, শ্যামনগরে থাকি...”

“বিম্বো? এটা আবার কি নাম?”

“হি... হি... হি... হি... রাহুল... আমার নাম বিমলা বসু...”, এই যা! নিজের আসল নামটাও বলে দিলাম, “শর্টে বন্ধুরা বিম্বো বলে ডাকে...”

“হা... হা... হা... মনে হচ্ছে আমাদের জমবে ভাল...”, রাহুল বলল।

“আমাকে না দেখে, না চিনে কি করে এই কথা বলছ?”

“জানি না কেন... মনে হল... আচ্ছা তুমি কি কর, বিম্বো?”

“আমি, চাকরি করি... আর তুমি?”

“আমিও চাকরী করি...”

“তোমার বাড়িতে কে কে আছে?”, আমি জানতে চাইলাম। টক-টাইম তুলতে হবে যে...

“মা আছেন, বাবা আছেন, দাদা আর বৌদি, ...তোমার বাড়িতে কে কে আছে?”

জানি না রাহুলের গলার আওয়াজে কি জাদু ছিল নাকি এটা বিয়ারের নেশার ফল যে আমি যেন একেবারে গলে গেলাম।

“বলি?”, জিজ্ঞাসা করে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম।

কৌতুহল বশত রাহুল বলে উঠল “হ্যাঁ, বল... বিম্বো, বল।”

“বললে তুমি বিশ্বাস করবে না...”

“কেন?”

“আমার বাড়িতে যারা আছেন তাদের সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ নেই...”

“মানে?”

একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে, আমি বলতে আরম্ভ করলাম, “আমার যখন উনিশ বছর বয়স, আমি একটা ছেলের সঙ্গে ভালবাসা করে পালিয়ে বিয়ে করলাম... মাস ছয়েক সবই ঠিকঠাক চলল... কিন্তু ছেলেটা কোন কাজ করত না... কোন রকমে টেনে টুনে এত দিন সংসার চালানোর পরে... আমি যখন মা হতে চলেছি... সে আমাকে ছেড়ে এক দিন চলে যায়... আমাকে বাধ্য হয়ে গর্ভপাত করাতে হল... তার পরে আমার বাবা আর মা আমাকে আর বাড়িতে রাখলেন না... অবশেষে আমি মাথা গুঁজলাম আমারই এক দূর সম্পর্কের মাসীর বাড়িতে...”

শুনে রাহুল একবারে স্তব্ধ হয়ে গেল। কিন্তু আমার ব্যাপারে সব জানার জন্য হয়ত রাহুলের একটু ঔৎসুক্যটা বেড়ে গিয়েছিল, তাই বোধহয় আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা?...”, রাহুল কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে বলল, “কি হল বিম্বো?”

“না, মানে কিছু পুরানো কথা মনে পড়ে গেল তাই...”

“যাক, আমার সাথে যা হবার তা হয়ে গেছে, এখন আমি একটা সরকারি দফতরে একজন জুনিয়ার ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি... এবারে তোমার কথা বল...”

আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে বললাম, “তুমি বিয়ে করেছ?”

“না...”

“তোমার বয়েস কত?”

“ আমার বয়স ৪২... আর তোমার?”

“২৮...”, আমি নিজের বয়েস কমিয়েই বললাম। সব মেয়েরা তো তাই করে।

“ভাল- আশা করি আমার সাথে তোমার বন্ধুত্ব করতে কোন আপত্তি নেই...”, রাহুল জিজ্ঞাসা করল।

“হা... হা... হা... আজ্ঞে না, নেই...”, আমি তো সব তথ্যেই অভ্যস্ত।

“তোমাকে দেখতে কেমন, বিম্বো?”

“হুম”, আমি একটু মৃদু হেসে বললাম, “আমি পাঁচ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা, গায়ের রঙ্গ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, মাথার চুল কোমর অবধি লম্বা...”, জানি না কেন- এটা বোধ হয় বিয়ারের নেশার প্রভাব- যে আমি একটু ইতস্তত করা সত্বেও বলেই ফেললাম, “ আর আমি ৩৪ সাইজের ব্রা পরি...”

“আর তোমার কাপ (Cup) সাইজ?”

“B....”, আমি এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না ।
 

অপ্রস্তুতে পড়ে গিয়ে আমি রাহুলকে জিজ্ঞেস করলাম, “আর তোমাকে দেখতে কেমন, ... রাহুল?”

“আমার গায়ের রঙ ফর্সা, আমি পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি লম্বা... শরীর স্বাস্থ্য ভালই...”

“আর তুমি জুনিয়ার ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ কর?”

“হ্যাঁ... যাক যে মহিলা তোমাকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন উনি আর তোমার মা বেশ ভাল ভাবেই তোমাকে মানুষ করেছেন দেখছি... উনার Husband (স্বামী) কি করতেন?”

আমি আবার চুপ করে রইলাম, রাহুল জানতে চাইল, “কি হল, বিম্বো?”

“আমার মাসীর কেউ ছিল না, উনি কেন বিয়ে করেননি... তা জানি না... আমি আসার পরে আর মাসী আমাকে নিয়ে একাই সংসার টেনেছেন...”

আমার এই সব কথা রাহুলের কেমন যেন একটা মর্মস্পর্শী গল্পের মত লাগছিল... আর আমি যেন এক ভাবাবেগে বয়ে যাচ্ছিলাম... আর রাহুলের কৌতূহল যেন আরও বেড়ে চলেছিল... ফোনে কেমন যেন একটা নীরবতা এসে গিয়েছিল আর রাহুল না থাকতে পেরে জিজ্ঞেসই করে ফেলল, “তোমার মাসী কি কোন স্কুলে টিচার অথবা টিউশানি করতেন?”

“না”, রাহুল বলল, “উনি সেলাই করে করেই নিজের সংসার টেনেছেন... সংসার বলতে ফুলওয়ালী যে আমাকে আর আমার মা’মনিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং আমি আর আমার মা’ মণির সংসার...”

“উনি কি lady tailor?”, আমি জানতে চাইলাম।

“না, উনি এমনি ছোট খাটো সেলাই করে করে, যেমন বাজার হাটে যে সব জামা কাপড় বিক্রয় হয় তা ছাড়া এর ওর তার জামা কাপড়ের রিপু করে, শাড়িতে ফল্স লাগিয়ে...”

এক মহিলা একটা অজানা অচেনা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসে মানুষ করেছে, আর পালিত মা’মণির কথা ভেবে ওনাদের প্রতি রাহুলের একটা শ্রদ্ধা জেগে উঠেছে...

রাহুল এতক্ষণ চুপ করেই ছিল, নীরবতা কাটানোর জন্য, আমি জানতে চাইলাম, “চুপ করে আছ কেন, রাহুল?”

“এমনি ভাবছিলাম... ছোট বেলায় হারিয়ে গিয়ে গ্রামে- গ্রামের মেয়েদের মত মানুষ হয়েছ... পড়া শোনা করে এখন শহরে চাকুরি করছ...”

“হ্যাঁ... হ্যাঁ... হ্যাঁ... এটা আমার মা’মণির প্রাপ্য! মা’ মণি ছোট বেলার থেকে আমার সব আবদার মেনেছে... যখন যা চেয়েছি দিয়েছে... TV, ফ্রিজ... জামাকাপড়, সাইকেল... আমার পড়ার খরচা... সব... এবারে আমার পালা”, কেন জানি না আমি যেন একটু উত্তেজিত হয়ে উঠলাম...

“অ্যাই! রেগে যাচ্ছ কেন?”, রাহুল হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আমি বললাম, “কিছু মনে কোরো না... আমি একটু উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম... তাহলে তোমাকে সবটাই খুলে বলি...”

আমি বলতে আরম্ভ করলাম-

আমাদের গ্রামের বাজারে এক বয়স্ক ফুলওয়ালী বসতো। আমার মা’ মণি প্রত্যেক শনিবার ও রবিবার সন্ধ্যাবেলা করে রোজকার তুলনায় একটু ভাল দেখে শাড়ি-ব্লাউজের পরে সেজে গুজে নিজের কেশরাশি সুন্দর ভাবে আঁচড়ে একটা ভরাট গোটা খোঁপা বেঁধে নিত- আমার মা’ মণির বেশ লম্বা ঘন কালো চুল ছিল- এলো করে রাখলে পাছার নীচ অবধি ছাড়িয়ে যেত- আমাকেও বেশ সুন্দর একটা ফ্রক পরিয়ে সুন্দর সাজিয়ে গুজিয়ে আমাকে নিয়ে বাজারে যেতেন, তোমাকে আমি আগেই বলেছি, এমন কি আমার মনে আছে প্রথম প্রথম ফুলওয়ালিও আমার মা’ মণিকে বলতো- ‘দুলি (মা’মণির ডাক নাম) তোর মেয়ে বড় হয়ে গেলে, আমি যেমন তোর জন্য কাজ ঠিক করে দিয়েছি... আমি তোর মেয়ের কাজও ঠিক করে দেব... তোদের আর কোন অভাব হবে না...”

মা’ মণি হেসে বলেছিল, “ওকে ভাল করে পড়া-শোনা করিয়ে ভাল মানুষ করে তুলব... আজ কি কাজ আছে?”

“আজ? দুই জন আসবে... এক এক কিম্বা দেড় দেড় ঘণ্টার বেশি একদম দেরি করবি না...”

আমি আর কি বুঝি?

আমাকে ফুলওয়ালীর দোকানে বসিয়ে আমার মা’মণি সোজা চলে যেতেন তার (ফুলওয়ালির) বাড়িতে।

আমি ফুলওয়ালির দোকানে বসে ওনার টুকিটাকি সাহায্য করে দিতাম- যেমন ফুলের মালা ঠোঙায় ভরে দেওয়া, কুচো ফুল বেলপাতা তুলসী পাতা- এইসব জড়ো করে খদ্দেরদের হাতে তুলে দেওয়া... ছোট ছিলাম- কিছুই বুঝতাম না, তাই ভাবতাম যে আমিও ফুল বেচছি... আমি মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতাম যে, ‘মা’ মণি, তুমি কোথায় যাচ্ছ?’

মা’ মণি আমাকে অতি আদর ও স্নেহের সাথে বলতেন যে বাছা আমি ফুলওয়ালী মাসীর বাড়ি কাজ করতে যাচ্ছি... মা’ মণিরা বাড়িতে কি কাজ আর করে? ঘর মোছা, কাপড় কাচা, ঝাঁট দেওয়া, রান্না করা... আর আমি তো বাজারে ফুলওয়ালী মাসীর সাথে বসে ফুল বেচছি... আমি কি আর জানি?

একদিন আমার মা’মণি আমাকে ফুলওয়ালী মাসীর দোকানে বসিয়ে যথারীতি ওর বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে তার প্রায় মিনিট ১৫ কিম্বা ২০ হয়ে গেছে, হটাত ফুলওয়ালী মাসীর কি যেন একটা মনে এলো। আমাকে একটা ঠোঙা ধরিয়ে বললেন, “যা শীঘ্র যা! এই ঔষধটা তোর মা’মণিকে দিয়ে আয়... তাড়াতাড়ি দৌড়ে যা... নয়ত দেরি হয়ে যাবে...”

আমি বাধ্য বাচ্চার মত দৌড় দিলাম ফুলওয়ালির বাড়ির দিকে। বাজারের পাকা রাস্তা থেকে নেমে, কাঁচা রাস্তা দিয়ে একটু গেলেই ওর বাড়ি। আমি পৌঁছে গিয়ে দেখি যে বাড়ির দরজা জানলা সব এঁটে বন্ধ করা।

দরজার সামনে শুধু দু জোড়া পাদুকা রাখা আছে, এক জোড়া আমার মা’মণির তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু আর এক জোড়া জুতা এমন, যেমন দাদা, কাকা, মেসোরা পরে- মানে পুরুষ মানুষের পরার জুতা...

আমি গিয়ে বাড়ির দরজার কড়া নাড়লাম... মা’মণির দরজা খুলতে কিছুক্ষণ দেরি হল... আলতো করে দরজা খুলেই উঁকি মেরে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে?”

আমি মা’ মণির অবস্থা দেখে অবাক!

মা’ মণির পরনে শাড়ি নেই, শুধু সায়া আর ব্লাউজ, মাথার পরিপাটি করে আঁচড়ানো আর খোঁপায় বাঁধা চুল একেবারে এলো খালো, কপালের টীপটা একেবারে ধেবড়ে গেছে... আর মুখে চোখে কেমন যেন একটা উচ্ছৃঙ্খল ভাব। এছাড়া আমার মনে হচ্ছিল যে মা’ মণি দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছে, যেন চায়না যে আমি ঘরের ভিতরটা দেখতে পাই...

"মা’ মণি ফুলওয়ালী মাসী বলল তোমাকে এই ঔষধটা দিয়ে আসতে... নয়ত দেরি হয়ে যাবে...”

মা’ মণি আমার হাত থেকে নিয়ে খুলে দেখে আমাকে বলল, “ও হ্যাঁ! আচ্ছা... ভাল করেছিস... তুই এখন মাসীর দোকানে যা... আমার অনেক কাজ বাকি...দেরি হবে... মাসীকে বলিস তোর হাত পা ভাল করে ধুইয়ে দিতে আর মাছ ভাত খাইয়ে দিতে... আজ আমার একটু দেরি হবে... একেবারে লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকবি, একদম দুষ্টুমি করবিনা...”, বলে মা’ মণি যেন তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিল...

“ঐ ঠোঙায় কি ছিল জানো, রাহুল?”

“কি?”

“আমি বড় হয়ে বুঝতে পারলাম... ঠোঙায় ছিল কনডমের প্যাকেট...”
 

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে রাহুল জানতে চাইল, “এই সবের সুত্রপাত কবে থেকে হল? তুমিকি সেটা জানো, বিম্বো?”

“মনে হয়, জানি...”, আমি আর একটা দীর্ঘ নিস্বাস ফেললাম, আর বিয়ারের বোতল থেকে আর একটা ঢোঁক গিললাম আর বলতে লাগলাম-

আমি যত দুর জানি, মা’মণির প্রথমবার সম্পর্ক হয় কলকাতার এক কাকুর সাথে...

কিন্তু আমি একটা জিনিষ লক্ষ্য করে ছিলাম যে একজন ভদ্রলোক আমার মা’মণির কাছে বার বার আসতেন। ওনাকে আমি কলকাতার কাকু বলে ডাকতাম।

আর ওনার সাথে প্রথম পরিচয় হয়, আমাদের ফুলওয়ালী মাসীর বাড়িতে। তখন ভদ্রলোকের বয়েস হবে প্রায় ৪৫ এর কাছাকাছি...

ঐ সময় ফুলওয়ালী মাসীর শরীর একটু খারাপ যাচ্ছিল, তাই মা’মণি ফুলওয়ালী মাসীর বাড়িতে গিয়ে ওনার ফুল গাছগুলিতে জল দিত, ফুল তুলে দিত, ওনার সাথে বসে ফুলের মালা গেঁথে দিত... ইত্যাদি...

সেটি ছিল একটা অমাবস্যার দিন... কলকাতা থেকে একটি ধনি ব্যক্তি – সেই কলকাতার কাকু- এসে এক হাজার আটটা জবা ফুলের পাঁচটি মালা গেঁথে দেবার অর্ডার দিয়ে গিয়েছিলেন।

ওনার ইচ্ছা ছিল যে ঐ ফুলের মালাগুলি মন্দিরে ঠাকুরের মূর্তিতে পরাবেন। মুহূর্ত অনুযায়ী উনি পূজার দিন খুব সকালেই এসে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফুলওয়ালীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সে সব কটা ফুলের মালা গাঁথতে পারেনি; ফুলওয়ালী চারটে মালা গাঁথার পরেই সে মা’ মণিকে ডেকেছিল।

আমার বয়েস তখন কত হবে? চার অথবা পাঁচ।

আমিও নিজের মা’মণির কোলে চড়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম ফুলওয়ালীর বাড়িতে। সেই দিন মা’ মণি রাত সাড়ে চারটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন, স্নান করে গায়ে শুধু একটা লাল পাড় শাড়ি পরে আধ ভিজা এলো চুলে ঠাকুর নমস্কার করে, মা’মণি অর্ডারের মালা গাঁথতে বসে গিয়েছিলেন।

ইতিমধ্যে ফুলওয়ালীও উঠে পড়েছে আরে কিছুক্ষণ বাদেই কলকাতার কাকুও এসে উপস্থিত।

সেই দিন প্রথমবার উনি মা’মণিকে দেখেছিলেন ঐ অবস্থায়- আধ ভিজা এক ঢাল এলো চুল, পরনে শুধু মাত্র শাড়ি- ব্লাউজ পরা নেই- ২৬-২৭ বয়েসের একটা নারী তার হয়ে ফুলের মালা গাঁথছে।

ওনাকে আসতে দেখার পরে, ওনাকে বসিয়ে ঘরে গিয়ে অবশ্য মা’মনি নিজের চুলে একটা খোঁপা করে একটা ব্লাউজ পরে এসে বসে আবার মালা গাঁথতে লেগেছিলেন। হাজার হোক পরপুরুষ উনি, কিন্তু কলকাতার কাকু যা দেখার দেখে নিয়েছিল... ফুলওয়ালীর সাথে গল্প করতে করতে উনি মায়ের ব্যাপারেও জিজ্ঞাসা করে ছিলেন। আমি পাসেই বসে ছিলাম...

জানি না কেন, মা’মণির কথা উঠতেই ফুলওয়ালী উঠে গিয়ে নিজে হাতে আমার মা’মণির চুলের খোঁপা খুলে, চুল পীঠের উপরে খেলিয়ে দেয়, আর বলে, “দুলি, তুই এলো চুলেই বসে মালা গাঁথতে থাক...”

আমার মনে আছে যে মা’মণি একবার ফুলওয়ালীর দিকে একবার মুখ তুলে তাকাল, তারপরে আমার দিকে দেখল তার পরে কলকাতার কাকুর দিকে দেখে আবার মাথা নিচু করে বসে মালা গাঁথতে লাগলেন... হয়ত মা’মণি বুঝে গিয়ে ছিলেন যে ফুলের সাথে সাথে ওনার নিজেরও সৌদা হচ্ছে... কিছু করার নেই... সংসার টানতে হবে ফুল বেচে, সেলাই করে আর কি পাওয়া যায়...

এর পর থেকেই প্রায় শনি-রবিবার করে কলকাতার কাকু আমাদের বাড়িতে আসতেন। সারা শনি রবিবার আমাদের বাড়িতেই কাটাতেন- সকাল থেকে রাত্রি... রাতের বেলায় আমি দেখতাম যে মা’মনি আর কলকাতার কাকু এক ঘরে গিয়েই শুতেন।

ছোটবেলা থেকে দেখে দেখে আমি এমনই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম যে কিশোরাবস্থা অবধি আমার মনেই আসেনি যে কেন এই কাকু আমাদের বাড়িতে আসেন আর মা’মণির সাথে এক ঘরে বেশির ভাগ সময়টা কাটান... কেন মা’মণি ওনার উপস্থিতিতে নিজের এক ঢাল পাছার নীচ অবধি লম্বা চুল এলো রাখতেন... কাকুর নাকি মা’মণিকে এলো চুলে দেখতে খুব ভাল লাগত...

এমনকি আমার মনে আছে কলকাতার কাকু মাঝে মাঝে মা’ মণিকে নিয়ে কলকাতা চলে যেতেন- এক বা দুই দিন পর মা’মণি বাড়ি ফিরে আসতেন সঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে আসতেন- নিজের জন্য শাড়ি- ব্লাউজ, আমার জন্য জামা কাপড়, খেলনা...

জানি না ভদ্রলোকের কোন পরিবার ছিল কিনা। উনি মা’ মণির কাছ থেকে একটা যোয়ান মহিলার সঙ্গ তো পেয়েই যেতেন তা ছাড়া ওনার যৌন চাহিদা ও পরিতৃপ্তি মা’মণি পূর্ণ করে দিতেন...

আমর কেমন যেন একটা অদ্ভুত লাগল কিন্তু খুব শীঘ্রই আমি পুরো ব্যাপারটা ভুলেই গেলাম...

স্কুল আর তার পরে ১২ ক্লাসের পর কলেজের চাপ... কিন্তু ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হল।

কারণটা ছিল আমার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, কলেজে একটু ছেলেদের মাঝে নাম ডাক হওয়া আর মা’ মণির পাঠানো টাকা দিয়ে মদ আর সিগারেট খাওয়া... প্রথম বার ভোট দেওয়া... একটু বড় বড় ভাব... কিন্তু রেজাল্ট দেখে আমার মনটা ভেঙে পড়ল। কোন রকমে আমি পাস করে ছিলাম।

মনে পড়ে গেল মা’মণির কথা... কিছু না খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম ষ্টেশনের দিকে... ট্রেন ধরে সোজা চলে গেলাম গ্রামে...
 

পৌঁছাতে-পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে গেল... ভ্যান রিক্সা করে বাড়ি গিয়ে দেখলাম যে বাড়িতে তালা দেওয়া।

মনে পড়ল যে আজ শনিবার... মা’মণি গেছে ফুলওয়ালির বাড়িতে কাজ করতে... মা’ মণি ঘর ঝাঁট দেবে- মুছবে, রান্না করবে, তারপর না বাড়ি আসবে?

বাজারে গিয়ে দেখলাম যে ফুলওয়ালির দোকানে ফুলওয়ালী নেই, পাশের মাসী বলল যে মাসী বোধ হয় একটু বাথরুম গেছে... তাই আমি সোজা রওনা দিলাম ফুলওয়ালির বাড়ির দিকে।

পাকা রাস্তা পেরিয়ে, কাঁচা রাস্তায় নেমে বাজার থেকে একটু গেলেই ফুলওয়ালির বাড়ি। গ্রামে আবহাওয়া বেশ ভাল... ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে... রাতে মনে হয় ঝড় বৃষ্টিও হতে পারে... কিন্তু এ কি... পাকা রাস্তার ধারে একটা শহরের ট্যাক্সি দাঁড় করানো... ড্রাইভার হাঁ করে ঘুমাচ্ছে... গ্রামের এই অঞ্চলে ট্যাক্সি তো আসেনা... বোধহয় কেউ নিশ্চয়ই এসেছে...

যাই হোক... আমার এখন মা’মণির সাথে দেখা করা দরকার... বলব যে আমার ভুল হয়ে গেছে... তুমি যে এত কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা করাচ্ছো... এবারে আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে ... কিন্তু আমি পাস করে গেছি... সেকেন্ড ইয়ারে আমি ফার্স্ট ডিভিশান নিশ্চয়ই আনব... আঃ এই তো ফুলওয়ালির বাড়ি... হাতে ঘড়ি দেখলাম এখন বাজে রাত পৌনে দশটা, মা’ মণির কাজ হয়ত শেষ হয়ে গেছে... যাক মা’ মণির সাথেই আজ বাড়ি ফিরব।

ফুলওয়ালির বাড়ির দরজা জানলা সব এঁটে বন্ধ করা। আমার মা’ মণি এই ঘরে ভিতরেই ঘর মোছা, কাপড় কাচা, ঝাঁট দেওয়া, রান্না করা... এই সব করছে হয়তো... মনে পড়ে গেল সেই ছোটবেলাকার কথা...

কিন্তু এ কি? আমি কৌতূহল বশত ঘরের ভিতরে জানলার ফুটো দিয়ে উঁকি মেরে দেখেই আঁতকে উঠলাম-

ঘরে জ্বলছে একটা নাইট বাল্ব... আর আমি দেখলাম যে ঘরের খাটে চিত হয়ে শুয়ে আছে এক মহিলা- সে সম্পূর্ণ উলঙ্গ, তার এক ঢাল লম্বা এলো চুল খাটের থেকে ঝুলে প্রায় মেঝেতে ঠেকেছে- তার উপরেই শুয়ে আছে একটা লোক- বয়স্ক, সেও নগ্ন আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে তার লিঙ্গ সেই মহিলাটির যৌনাঙ্গে প্রবিষ্ট করা আর সে রতিক্রিয়ায় মগ্ন হয়ে নিজের কোমরটা উপর নীচ উপর নীচ দোলাচ্ছে...

আমি যে একেবারে আশ্চর্য হয়ে কতক্ষণ ধরে ওদের দুজনের এই খেলা দেখছিলাম জানি না, কিন্তু একটু পরে, আমার জ্ঞান হলো যে এইবার সরে পড়া দরকার...

ঘরের দরজা খুলে একটা মাঝ বয়েসি যথাযোগ্য পোশাক আশাক পরা লোক বেরিয়ে এল, এদিক ওদিক দেখে দ্রুত গতিতে পাকা রাস্তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল, আমি নিশ্চিত যে ও এগিয়ে গিয়ে ঐ ট্যাক্সিটাই ধরবে... আমি ওর চোখ এড়ানোর জন্যে উঠোনের একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়লাম...

লোকটা চলে যাবার পরে, আমি পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে শিকল বিহীন দরজা ঠেলে ঘরের ভিতরে উঁকি মারলাম... দেখলাম ছোট ঘরে রয়েছে একটা বড় খাট... সেই বিছানার চাদর একেবারে কুঁচকে- দুমড়ে মুচড়ে একাকার... খাটের ধারে একটি মহিলা এক রাশ এলো চুল নিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে আছে, তা পরনে শুধু একটা সায়া আর সে মাথা নিচু করে নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে নিজের ব্লাউজের হুকগুলি লাগাচ্ছে... লোকটার সাথে এই মহিলা যে এতক্ষণ উলঙ্গ অবস্থায় ছিল সেটা আমার বুঝতে দেরি হলো না... একটা মহিলা এক পর পুরুষের সাথে উলঙ্গ হয়ে শুধু সময় তো কাটায় না... যৌন সেবা প্রদান করা... যে লোকটা একটু আগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, সে ভাল ভাবেই এই মহিলাকে ভোগ করেছে- বিছানার দুমড়ানো- মুচড়ানো-কুঁচকানো চাদর ওদের কাম লীলার প্রমাণ... আমার সেটাও বুঝতে দেরি হল না... কিন্তু আমার যেটা বিশ্বাস হচ্ছিল না – সেটা হল গিয়ে কি এই মহিলা- যে খাটে এক ধারে এলো চুল নিয়ে বসে শুধু সায়া পরে নিজের ব্লাউজের হুকগুলি আটকাচ্ছিল সে আর কেউ নয় স্বয়ং আমার ৪১ বছর বয়সী মা’ মণি...
 

আমার চোখের সামনে ভেসে এলো ছোট বেলাকার সে স্মৃতি- এক দিন ফুলওয়ালী আমাকে একটা ঠোঙা ধরিয়ে বলেছিল যে, “যা শীঘ্র যা! এই ঔষধটা তোর মা’ মণিকে দিয়ে আয়... তাড়াতাড়ি দৌড়ে যা... নয়ত দেরি হয়ে যাবে...”

সে দিন আমি ঠোঙা ফাঁক করে তার মধ্যে রাংতায় মোড়া ঔষধ মত কিছু আছে- আজ বুঝতে পারলাম যে, সেগুলি ঔষধ নয়- কনডমের প্যাকেট ছিল। সেই দিনও ফুলওয়ালির ঘরে আমার মা’ মণির সাথে কোনপর পুরুষ ছিল আর তখন আমার মা’ মনির বয়স ছিল কম, প্রায় সাতাশ বছর হবে। সেই দিন বোধহয় ফুলওয়ালির বাড়িতে আগে থেকে কনডম রাখা ছিল না। কনডম না থাকলে কি ফুলওয়ালির বেছে আনা গ্রাহক অপেক্ষা করবে? সে হয়ত মা’ মণির মত অল্প বয়েসি নারীর যৌনাঙ্গে নিজের লিঙ্গ প্রবিষ্ট করে, মেতে উঠবে মৈথুন লীলায়... তারপরে তার বীর্য স্খলিত হবে... তৃপ্ত হবে সে...

কিন্তু ফুলওয়ালীর আমার মা’মণিকে তখন আরও অনেক দিন চালাবার দরকার...

তাই সে অথবা আমার মা'মণি, কেউই এমন একটা সময় একটা অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা চাইতো না।

আজ বুঝতে পারছি যে মাঝে মাঝে মা’মণি ফুলওয়ালির বাড়িতে গিয়ে অচেনা অজানা কাকু- জেঠাদের জন্য কেন চা করে নিয়ে আসত... আর ফুলওয়ালী আমার মা’মণিকে বলত, “চুলটা খুলেই দে না দুলি, এলো চুলে খুব ভালই লাগে তোকে... আশা করি কর্তা মশাইয়েরও ভালই লাগবে...”, মা’মণি ওদের সামনেই নিজের খোঁপা খুলে চুলে এলো করে দিতেন...

মেয়েদের এলো চুলে দেখতে নাকি আরও আকর্ষণীয় লাগে, আর মা’মণির বয়েস কালে যা লম্বা ঘন চুল ছিল সেই দেখে, লোকেরা মুগ্ধ হয়ে যেত। ফুলওয়ালিরও কাজ হাসিল হয়ে যেত... আর দূর হয়ে যেত আমাদের সংসারের অভাব...

সেলাই করা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা, ঝাঁট দেওয়া, রান্না করা... এইসব করতে করতে আমার মা’ মণির এই হাল কি করে হল? মা’ মণি টের পেয়ে মুখ তুলে দেখার আগেই আমি তাড়াতাড়ি উঠোনের একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়লাম... মা’ মণি ঠিক টের পেয়েছিল বোধহয়, সে একটু বেরিয়ে এসে এদিক ওদিক দেখে আবার ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল। তারপর দেখি যে আমাদের ফুলওয়ালী মাসীও নিজের ঘরে এসে গেল আর আমি দুই মহিলার কথা বার্তা বলার অস্পষ্ট আওয়াজ শুনতে পারছিলাম... সাহস করে এগিয়ে এসে জানলার বাইরে কান পেতে শুনতে চেষ্টা করলাম যে ওরা কি বলছে...

ফুলওয়ালী আমার মা’ মণিকে বলছিল, “দুলি, এইনে তোর টাকা... আজকের লোকটা তোর উপরে খুশি হয়ে তোর জন্যে পাঁচ’শো টাকা বেশি দিয়ে গেছে... বলেছে আবার আসবে তোর কাছে...”

আমার মা’ মণি যেন খস-খস করে টাকা গুনে বলল,“হ্যাঁ, ঠিক আছে... আগামী কাল এই সময়ই আসব কি?”

“একটু তাড়াতাড়ি আসলে ভাল হয়... কালকের লোকটাও বেশ দুর শহরের খদ্দের... একটু বেশি টাকায় রাজি করিয়েছি, কিন্তু অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হল... এখন তো তোর বয়েসও বাড়ছে...”

“কি আর করব, মাসী? সেলাই করে তো আর সংসার টানা যায় না- মেয়েটা কলেজে আছে... ওর পড়ার খরচাও বেড়েছে... ও একবার মানুষ হয়ে গেলে, আমি শান্তি পাই... যত দিন সম্ভব হয়ে তোমার আনা লোকেদের একটু সুখ দিয়ে আমি নিজের রোজগারটাও করে ফেলি।”

“তা ঠিক রে দুলি... মনে আছে? তুই বাড়ির থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলি, তার পরে যখন তোর স্বামী তোকে ছেড়ে চলে যায় তুই নদিতে ডুবে প্রাণ দিতে চলেছিলি... আমিই তোকে বাঁচিয়ে নিয়ে এনেছিলাম...

তোকে বলেছিলাম যে তুই আমার হয়ে কাজ কর... তারপরে মেলার থেকে ঐ মেয়ে – বিম্বোকে তুলে নিয়ে এলাম- ভেবেছিলাম যে তোর বয়েস হয়ে গেলে- ওকে চালাবো... ওর মাই-পাছা তো ভালই আছে... চুলও তোর মত না হলেও বেশ লম্বা... বলি কি...”

“মাসী!”, মা’ মণি দাবড়ে উঠল, “কত বার বলেছি? এই সব কথা বোলো না...?”

“হ্যাঁ- যে ও মেয়ে, ভেবেছিলাম যে তোর বয়েস হয়ে গেলে তত দিনে ঐ মেয়েও বড় হয়ে যাবে- তাহলে ওকেও ধান্দায় নামাবো... কিন্তু তুই ওকে নিজের সন্তানের মত করেই মানুষ করলি...”

“কি আর করি বলো...?”

“ঠিক আছে, কিন্তু আমাদের মত এই একা মেয়েদের এছাড়া কি আর উপায় আছে, বল? তবে এখনও তোর যা রূপ রঙ আর চুল আছে... আশা করি কিছুদিন আরও টেনে দিতে পারবি...”

এই সব শুনে আমি একেবারে স্তম্ভিত! আমার এখনও এক বর্ণও বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমি মা’মণির পালিত মেয়ে? আমার মা’মণি আমাকে মানুষ করতে গিয়ে, সংসারের অভাব কাটাতে গিয়ে শেষকালে পর পুরুষকে দেহ দান করে? আর আমি ফার্স্ট ইয়ারে ফেল করতে করতে কোন রকমে বেঁচে গেছি? ছীঃ! ধিক্কার!
 

আমি ভাবলাম যে আমার আর ফুলওয়ালির বাড়িতে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয়। তাই আমি নিজেরদের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের বাড়ি যাবার একাটা শর্ট-কাট রাস্তা ছিল, আমার মা’ মণি আমাকে ঐ রাস্তা দিয়ে যেতে সর্বদা বারণ করতেন... ছোট বেলায় আমাকে বলতেন যে ঐ রাস্তায় জুজু আছে... একটু বড় হবার পরে আমাকে উনি বলতেন ঐ রাস্তায় অনেক জন্তু জানোয়ার আছে... আজ বুঝতে পারছি যে... আমার মা’মণির চিন্তা চতুষ্পদ জন্তুদের নিয়ে ছিল না... ওনার চিন্তার কারণ ছিল দু পেয়ে জানোয়ার গুলিকে নিয়ে... কিন্তু আজ আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছতেই হবে...

শীত হোক গ্রীষ্ম হোক কি বর্ষা... ফুলওয়ালির বাড়ির থেকে এসে মা’মণি সব সময় স্নান করতেন। তাই আগে বাড়ি পৌঁছে আমি তাড়াতাড়ি ওনার স্নানের জল তুলে রাখলাম।

বাড়ি এসে মা’মণি আমাকে দেখে অবাক! যাই হোক আমি ওনাকে বললাম যে এইবারে আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। উনি একটু ক্ষুণ্ণ হলেন কিন্তু আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, যা হবার তাই হয়ে গেছে, এবারে মন দিয়ে পড়া শোনা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে... আর তাই হল... আমি খুব ভাল ভাবে BA পাস করলাম...

“সে তো বেশ ভাল কথা...”, রাহুল বলল।

“ভাল কথা আর কি রাহুল? বাংলা মিডিয়ামে পড়ে আমার ভাল চাকুরী পেতে বেশ অসুবিধে হতে লাগল... কোন রকমে একটা ছোট খাটো কল সেন্টারে চাকুরী পেলাম... এই নিয়ে আমি নিজের দিন কাটাচ্ছি...”

“তাতে অসুবিধে কোথায় আছে?”

“আছে রাহুল... আছে...”

“কেন?”

“এই তো কয়েক দিন আগে একটা গাছ পড়ে গিয়ে আমাদের বাথরুমে আর ঘরের দেয়াল ধসে পড়ল, সেই দেয়াল ঠিক করানোর জন্যে প্রায় দেড় লাখ টাকার দরকার... গ্রামের বাড়ি বাঁধা দিয়ে আমরা ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিলাম... কিন্তু এখন তার EMI দিতে আমাদের বেশ অসুবিধে হচ্ছে...”

“হ্যাঁ, বুঝতে পারছি...”

“তাই একদিন আমি মাসীকে বললাম...”

“কি?”

“যে আমিও যখন বড় হয়েছি, আমিও বাড়িতে লক্ষ্মী আনতে পারি...”

“মানে?”, রাহুল একটু আশ্চর্য চকিত হল!

“হ্যাঁ, আমি একদিন বাড়ি এসে নিজের মাসীর সামনে একেবারে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বললাম মা’ মণি যাই বলুক না কেন... মাসী তুমি আমার জন্যেও লোক দেখো... মাসী এই দেখে খুব খুশি। কয়েক দিন পরে মাসী আমাকে বলল যে আমার জন্যে একটা লোক দেখেছে... যেহেতু আমি কুমারী সেই জন্য লোকটা আমাদের প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা দেবে... এতে ক্ষতি কি?... এই থেকে আমারও এই লাইনে জীবন শুরু...”

“তাই?”, রাহুল বলল।

“হ্যাঁ... ছোট বেলায় আমাকে যেই রকম ভাবে দোকানে বসিয়ে রাখা হতো ঠিক সেই ভাবে মা’মণিকেও আমাদের ফুলের দোকানে মাসীর সাথে বসিয়ে রাখা হত, আর ভাগ্যক্রমে আমি বাড়িতে মাসীর আনা লোকেদের সাথে শুতাম... তাদের শারীরিক সুখ দিতাম... আমার মা’মণি এইসব কিছুই জানতো না...

একদিন আমার মা’মণি কোন কারণে বাড়ি এসে গিয়েছিল, সেই দিন বোধ হয় ঘরের দরজাটা ঠিক করে আটকানো ছিল না। ঠেলা দিতেই হাট করে খুলে গেল... মা’মনি দেখল যে শুধু আন্ডারওয়ার পরে বিছানায় একটা লোক শুয়ে আছে আর আমি ওনার সামনে দাঁড়িয়ে... পরনে সায়া ছাড়া কিছুই নেই... আমার লম্বা ঘন চুল এলো আর বুক জোড়া নগ্ন... দেখা মাত্রই মা’মনি বুঝে গেলেন যে ঘরে কি হচ্ছে...

আমি তাড়াতাড়ি চেয়ারে রাখা শাড়ি দিয়ে গা ঢাকা দিলাম, কিন্তু যার যা জানার সে জেনে গেল...

সেই দিন মা’ মণি খুব কেঁদেছিলেন... কিন্তু উনি জানতেন যেই অভাবে পড়ে উনি পরের বিছানায় তাদের সঙ্গিনী হয়ে ছিলেন... আজ আমারও এই অবস্থার কারণ হচ্ছে গিয়ে সেই অভাব...”

রাহুল একেবারে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে এইসব কথা শুনছিল।

“কি হলো রাহুল... বল আমার সঙ্গে কি তুমি দেখা করবে? আমার সাথে সময় কাটাবে?... বেশি নয় মাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য আমি তোমার সাথে দুই ঘণ্টা কাটাতে রাজি আছি...”

রাহুল যেন হটাত কাশতে লাগল, তারপরে একটু সামলে নিয়ে আমাকে বলল, “ঠিক আছে- ঠিক আছে... শোন তোমার ID নম্বরটা তো আমার কাছে আছে... আমি তোমাকে পরে জানাচ্ছি, এখন অফিস থেকে একটা ফোন আসছে... আমাকে ওটা ধরতেই হবে...”

বলে রাহুল তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে দিল...

আমি দেখলাম যে প্রায় দুই ঘণ্টা সাতাশ মিনিট কথা হয়েছে, বেশ ভাল টক টাইম উঠেছে... আমি বিয়ারের শেষটুকু খেয়ে ফেললাম... না... আজ অনেক কথা বলেছি, গলাটা বেশ শুকিয়ে আছে... আর একটা বোতল হলে মন্দ হতো না... আমি ফ্রিজ খুলে আরেকটা বোতল বের করে ওপেনার দিয়ে ছিপি খুললাম... আবার ত্রিন-ত্রিন, ত্রিন ত্রিন... ফোন বেজে উঠল, id তে আর একটা কল ঢুকেছে...

আমি হাসি মুখে বললাম, “হ্যালো? কে বলছো?”

সমাপ্ত
 
ধুমিয়ার আঁধারী (Tuk 2)
udola.champa



আমার নাম সন্ধ্যা নাগ, বাড়িতে আমাকে সবাই খুকু বলে ডাকে- হাজার হোক, বিয়ের অনেক দিন পরে অনেক মানত পূজা ইত্যাদি করার পরে আমার জন্ম হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়া আমার আর একটা নামও আছে যেটা নাকি আমার চেনা পরিচিত অথবা আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কেউই জানে না- সেটা হল গিয়ে ‘আঁধারী’। আমার এই নাম কি করে হল তার পিছনে একটা রয়েছে একটি জীবন পরিবর্তন করে দেওয়া ঘটনা।

ছোট বেলার থেকেই আমার জ্যোতিষিবিদ্যার একটি শখ ছিল, তাই খুব অল্প বয়েস থেকেই আমি অনেক কয়টা বইও পড়েছি এই বিষয় আর গণনা ও ভবিষ্যৎবাণী করে বন্ধুদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেছি। আমার এই শখ বড় হতে হতে আমাকে জাদু বিদ্যা, তন্ত্র-মন্ত্রর দিকে আমাকে কৌতূহলী করে দেয়।

স্কুল ফাইনাল আর পরে Chartered Accountancy পরীক্ষার চাপে আমার এই জ্যোতিষিবিদ্যার শখ আর জাদু বিদ্যা, তন্ত্র- মন্ত্রের দিকে আমার কৌতূহল যেন একটু বাধা পেয়েছিল কিন্তু গত তিন বৎসর আগে সানরাইজ ফাইনানশিয়াল কন্সাল্টান্সী’ (Sunrise Financial Consultancy) তে, একটি জুনিয়ার অডিটারের চাকরী পাওয়ার পর থেকেই যখনি আমি সময় পেতাম- আমি নিজের শখ আর কৌতূহলকে প্রশ্রয় দিতাম।
***

পুরো ঘটনাটার সূত্রপাত কবে থেকে যে হয়েছে, সেটা আমি সঠিক ভাবে জানি না- তবে এটা আজ থেকে প্রায় দু' বছর আগেকার কথা। আমি চাকরী পাবার পর থেকে একা সহরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকি, বাবা অসুস্থতার কারণে তাড়াতাড়ি রিটায়ার করেছেন, বাবা মা থাকেন গ্রামাঞ্চলের আমাদের আদি বাড়িতে। বাবার পেনশন আর আমার পাঠানো টাকায় সংসার বেশ ভালই চলছে। হাজার হোক আমি মা বাবার একটি মাত্র সন্তান।

এই ঘটনাচক্রে একটি বড় ভূমিকায় ছিল এক মাঝ-বয়েসি মহিলা, ওকে দেখতে মোটা না হলেও বেশ গোলগাল চেহারা। ওর কাছ থেকে মাঝে মাঝে আমি জ্যোতিষী এবং তন্ত্র-মন্ত্রের চটি-চটি বইগুলি কিনতাম। সে এক গ্রাম থেকে আসত আর আমি যেই বাস স্ট্যান্ড থেকে অফিস যাবার জন্য বাস ধরতাম, সে সেখানেই একটা গাছের তলায় বসে একটা প্লাস্টিকের ওপরে তার দোকান লাগাত। তার কাছে অনেক চটি চটি বই ছাড়া থাকত বিভিন্ন রকমের তাবিজ এবং মাদুলি। মাঝে মাঝে আমি দেখতাম যে কাছের বস্তির মহিলারা ওই মাঝবয়েসি মহিলার কাছে হাত দেখাতে আর নিজের ভবিষ্যৎ জানতে আসে। আমি অনুমান করেছিলাম যে উনি কোন জ্যোতিষী অথবা তন্ত্র সাধিকা হবেন- এবং আমার এই আন্দাজ ছিল একেবারে ঠিক ছিল।

যেহেতু আমি প্রায়ই ওনার কাছ থেকে বইপত্র কিনে থাকতাম তাই আমার একটা পরিচয় মত হয়ে গেছিল ওনার সাথে আর উনি বলেছিলেন ওনার নাম হুলা - আমি ওনাকে হুলা মাসী বলে ডাকতাম আর এই পরিচয়ের সুত্রে আমি ওনাকে নিজের ফোন নাম্বারও দিয়েছিলাম। এমন কি ওনার গ্রামের বাড়িতে পূজো হলে উনি আমাকে তার প্রসাদও দিতেন- এমন সুস্বাদু প্রসাদের পেঁড়া এই শহরে পাওয়া যায় না।

এক দিন বাসের অপেক্ষা করেতে করতে আমি দেখলাম যে আমার কাছে খুচরো পয়সা নেই, সব কটাই একশ আর একটা পাঁচশ টাকার নোট। কি করি? আমি ভাবলাম যে হুলা মাসীর কাছ থেকে টাকা ভাঙিয়ে নেব। ওনার দোকানে গিয়ে দেখি যে উনি ঠিক সেইভাবেই দোকান সাজিয়ে বসে আছেন। আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম, “কেমন আছ, হুলা মাসী?”

-“ভাল আছি রে সন্ধ্যা... আজ অনেক দিন পরে এলি, তুই ভাল আছিস তো?”

“হ্যাঁ... খুব ব্যস্ত ছিলাম, তা কি নতুন বই এনেছ?”

-“এই বইটা বেশ ভাল”, বলে হুলা মাসী আমার হাতে একটা বাঁধানো পুরনো মোটা দেখে বই তুলে দিলেন। বইটার নাম ছিল– “প্রাচীন গুপ্ত বিদ্যা”।

বইটা দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে সেটি কারুর ব্যবহৃত বই, কিন্তু আমি মলাটের পাতা উলটে একটু অবাক হয়ে গেলাম কারণ সে বইটি মুদ্রিত এবং প্রকাশিত হয়েছিল (ইং) ১৮৯২ সালে, মানে বইটি প্রায় একশ বছরেরও বেশি পুরনো কিন্তু বইটি নিজের প্রাচীনত্বের তুলনায় বেশ চমৎকার অবস্থায় ছিল।

সঠিক বাজারে এই বইয়ের দর প্রায় হাজার হাজার টাকা হতে পারে সেটা আমি জানতাম। কারণ আমাদের ফার্ম (Firm) হালেই একটি অকশান হাউসের (Auction House), যেখানে নাকি নানা প্রাচীন মূর্তি, আসবাব পত্রাদি ইত্যাদি নিলাম করা হয়; তাদের হিসাব নিকাশ করেছিল...

-“অত ভাবনা চিন্তা না করে এই বইটি কিনে নে। আমি বইটা পেয়েই তোর কথা ভাবছিলাম আর দেখ, তুইও আজই এসে গেলি...”, হুলা মাসীর স্বর যেন আমাকে নিজের চিন্তার জগত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো।

“কিন্তু...”

-“কিন্তু, আবার কি? আমি বইটা পড়ে দেখেছি। এতে কয়েকটা ‘বৃদ্ধি মন্ত্রও’ আছে, ৭০ এর পাতায় যে মন্ত্রটা আছে ওটার নিয়ম মেনে রোজ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে উচ্চারণ করে শুবি, দেখবি একবারে দুর্দান্ত এবং অব্যর্থ কাজ হবে।”

“কিন্তু আমি কিসের বৃদ্ধির কামনা করব?”

-“কেন তোর বাড়িতে গাছ পালা নেই? যেমন গোলাপ গাছ... যদি সেটা শুকিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে দেখবি যেন এই মন্ত্রের প্রভাবে ঐ গাছের বাড় বৃদ্ধি কেমন সুন্দর ভাবে হয়। তা ছাড়া এই মন্ত্রে মেয়েদের চুল ঘন আর লম্বা করার জন্যেও ব্যবহার করা যায়। ”

তা ঠিক, আমার গাছ পালার খুব শখ আমি যেখানে ভাড়া থাকি সেই ফ্লাটের বারান্দায় আমি বেশ কয়েকটা টবে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে ছিলাম কিন্তু আমার প্রিয় গোলাপ গাছটা যেন কেমন মরা মরা হয়েই থাকত। সার জল নিয়মিত দেবার পরেও কোন লাভ হয়নি। তাছাড়া আমার ছোট বেলার থেকেই লম্বা চুলেরও খুব শখ কিন্তু হাজার রকমের তেল, ঔষধ, কেশ চর্চা করার পরেও আমার চুলও যেন ঠিক মনোমত ভাবে বাড়ে না। কিন্তু হুলা মাসী আমার এই কথাগুলি জানল কি করে? হয়ত এটা একটা নিছক কাকতালীয় ব্যাপার।

কেন জানি না হুলা মাসী যেন আমার মনের কথা পড়ে ফেলে বললেন, “ভাবছিস কি- আগে নিজের গোলাপ গাছের উপরে পরীক্ষা করে দেখ তারপরে নয় নিজের চুল আরও লম্বা, ঘন আর রেশমি করে তুলবি- এখনো তোর চুল বেশ সুন্দর কিন্তু তোর কনুই অবধি লম্বা- দেখে নিস দু মাসের মধ্যে তোর চুল আরও ঘন আর রেশমি আর পাছার নীচ অবধি লম্বা হয়ে যাবে। তুই আমাকে এই বইটার জন্য ষাট টাকা দে।”

আমি যেন লক্ষ করলাম যে হুলা মাসীর বয়েস অনুযায়ী ওনার স্বাস্থ্য আর চুল বেশ সুন্দরই আছে, ওনার খোঁপা দেখে মনে হয় যে ওনারও কাঁচা পাকা চুল বেশ ঘন আর প্রায় ওনার পাছা অবধি লম্বা হবে। নিজের বয়সকালে উনি বেশ সুন্দরী ছিলেন- এটা কি মন্ত্রের প্রভাব নাকি বংশগত জানি না। আমি আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি বইটার ৭০ এর পাতা খুলে দেখলাম, আমার নজর পড়ল সেই বৃদ্ধি মন্ত্রের উপরে- মন্ত্রটা বাংলায় লেখা তবে ভাষাটা কেমন যেন অদ্ভুত-


কারোপিকো আহাঊ, আহাঊ, আহাঊ

কো রেইয়া টোকুহিয়া হিয়া ঈঙ্গা

আনা আহাঊ কীটূটুকু টুপু উঙ্গা

(নিজের ইচ্ছা জাহির করুন)

হিয়াহিয়াটিয়াআনা ভাকারিটি ই


আমি আর কিছু না ভেবে নিজের ব্যাগে বইটা পুরে হুলা মাসীকে একটা একশ টাকার নোট দিলাম। হুলা মাসী বলল, “এই যা! আমার কাছে তো এত খুচরা টাকা নেই!

“ও মা! আমি ভাবছিলাম বাস ভাড়ার জন্য তোমার কাছ থেকে খুচরো করাব।”

“এই নে দশ টাকা, তুই বইটা এখন নিয়ে যা; তুই আমাকে পরে নেহাত বইয়ের দাম সহ দশ টাকা বেশি দিয়ে যাস।”

আমি রোজ এই পথে যাওয়া আসা করি- তাই অসুবিধে নেই। কথা বার্তা বলতে বলতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই আমি তাড়াতাড়ি একশ টাকাটা নিয়ে আবার বাস স্ট্যান্ডে ফিরে গেলাম, আর ভাবছিলাম যে আজ আবার খুচরো টাকার জন্যে চ্যাংড়া কন্ডাক্টরের কাছে দু চারটে কথা শুনতে হবে... হ্যাঁ কি যেন মন্ত্রটা? ‘কো রেইয়াটোকু পুকু’ না কি? অফিসের পরে বাড়ি গিয়ে ৭০ নম্বর পাতাটা ভাল করে পড়তে হবে। আমি ভাল করে জানতাম যে এবারে আজ আর অফিসে আমার মন লাগবে না। তবে তখন আমি ভাবতেই পারিনি যে আমার এই নিরীহ জ্যোতিষবিদ্যার শখ এবং তন্ত্র মন্ত্রের কৌতূহল আর এই বইয়ের মন্ত্রগুলি অবশেষে আমাকে ধুমিয়া গ্রামের আঁধারী করে তুলবে।
 


সেদিন অফিসে বিশেষ কাজ ছিল না, তাই বোধ হয় আমার মনে হচ্ছিল যে সময়টা যেন বড় আস্তে আস্তে কাটছে, আমি বার বার ঘড়ি দেখছিলাম, কিন্তু সময় আর যেন কাটছিল না। আমাদের কোম্পানির মালিক খুব কড়া ব্যক্তি ছিলেন- তিনি নিয়ম, অনুশাসন এবং সময় নিষ্ঠার প্রতি বিশেষ জোর দিতেন। কিন্তু সেদিন কেন জানি না উনি অফিসে শুধু কয়েকজনকে থাকতে বলে আমাদের প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই ছুটি দিয়ে দিলেন, হাজার হোক সেদিন শুক্রবার ছিল। আমি যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেলাম।

সাধারণত আমি বাড়ি গিয়ে স্নান করে, রান্না বান্না সেরে একটু টিভি দেখতাম, কিন্তু সেদিন যেন আমার আর তর সইছিল না। আমার অনুসন্ধিৎসার যেন কোন সীমা ছিল না, তাই সে দিন আমি ফোন করে বাড়িতে পিজ্জা অর্ডার করলাম আর একটা নাইটি পরে নিজের চুলগুলি জড়ো করে উঁচু করে খোঁপা বেঁধে, ব্যাগ থেকে বইটা বের করে পড়তে লাগলাম।

হ্যাঁ, বইটি দুর্লভ বটে! আমি নিজের নব অর্জিত সম্পদ ১৮৯২ সালে প্রকাশিত- “প্রাচীন গুপ্ত বিদ্যা”- নিয়ে একটু পড়তে বসলাম। বাঁধানো মলাট খোলার পরেই বইয়ের নাম আর প্রকাশনের সাল লেখা আছে, তবে আজব ব্যাপার, কোন লেখক/লেখিকার নাম নেই। আমি তার পরের পাতা উলটালাম, সেই পাতার লেখা পড়ে আমি একটু চমকে উঠলাম। লাল কালি দিয়ে মোটা হরফে লেখা ছিল –


· এই বইটি এটি খুবই প্রবলভাবে কার্যকর অতিপ্রাকৃত গুপ্তবিদ্যার ভাণ্ডার।

· মনে রাখিবেন যে এই বই ব্যবহার করিলে, আপনার জানতে অথবা অজান্তে ইহলোক আর উহলোকের মাঝে অনেক দ্বার খুলে যাবে।

· শেষ করিবার ইচ্ছা অথবা ক্ষমতা না থাকিলে, কখনোই শুরু করবেন না।



আমি এটা পড়েই শিউরে উঠলাম! কিন্তু যেমন করে আমি ছোট বেলায় ভয় ভূতের সিনেমা দেখতাম- ঠিক সেইভাবে আমি বইয়ের এক একটা পাতা পড়তে লাগলাম। বইটার প্রবর্তন পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম যে বইটির লেখক অনেক দেশের সংস্কৃতি, আস্থা, জাদু বিদ্যা, তন্ত্র মন্ত্র, ইন্দ্রজাল এবং বিশেষ করে ডাইনী বিদ্যা অনুসন্ধান করে এই বইটি সঙ্কলন করেছেন এবং উনি লিখেছেন যে এই বইতে লেখা সব কর্ম, ক্রিয়া এবং তুকতাক যেন লেখা নিয়ম অনুযায়ী করা হয়, তা না হলে হয়ত সঠিক ফল পাওয়া যাবে না অথবা বিপদও ঘটতে পারে।

টিং টং!

কলিং বেলের শব্দ শুনে আমি আবার চমকে উঠলাম কারণ এতক্ষণ আমি বইটাতে প্রায় ডুবে ছিলাম, কিন্তু পিজ্জার ডেলিভারি এসে গিয়েছিল, প্রায় চল্লিশ মিনিট কেটে গেছে, আমি বুঝতে পারিনি। পিজ্জা টেবিলে রেখে ডেলিভারি বয়টাকে বিদায় করার পর, আমি নিজের চুল খুলে আবার সোফায় একটু আধশোয়া অবস্থায় আবার বইটা নিয়ে বসলাম- প্রায় অনেকক্ষণ একভাবে বসে থেকে কেমন যেন একটু আড়ষ্ট লাগছিল।

দেখতে দেখতে আমি বইটার দুটি অধ্যায় পড়ে ফেললাম। তার পরের অধ্যায়ের নাম ছিল- প্রস্তুতি।

প্রথমেই লেখা ছিল যে উহলোকের (অন্য ব্রহ্মাণ্ড) এই সময় সক্রিয়- যে বিদ্যমান অশরীরী, তাহাকে সব অসারত্ব, পূর্বধারণা, অহং ত্যাগ করে একেবারে হীন, নির্বস্ত্র এবং নম্র হয়ে আহ্বান করতে হবে এবং তিনি হবেন আহ্বানকারীর ‘প্রতিপালক’। এই অশরীরী অস্তিত্ব ঠিক সময় মত নিজেকে আহ্বানকারীর সামনে ব্যক্ত করবেন।

এমন অশরীরী অস্তিত্বকে আহ্বান করার মন্ত্র বইটাতে যথাযথ লেখা ছিল :-

“টি আউরো- ঈতা ওয়াইরু”

বইয়ের লেখা অনুযায়ী এই মন্ত্রটিকে ৩৩ বার উচ্চারণ করলে ‘প্রতিপালক’ অশরীরীকে আহ্বান জানান হবে। আহ্বান সফল হলে আহ্বানকারী নিশ্চয়ই একটি সাড়া পাবেন।

আমি আবার বলছি, বইতে বাংলা হরফে লেখা ঠিকই কিন্তু এ কোন ভাষা আমি জানি না, তাই আমি মনে মনে কয়েকবার মন্ত্রটা আওড়ে নিলাম- যাতে জিনিষটা সড়গড় হয়ে যায়। তারপরে নিজের বেড রুমের মধ্যে গিয়ে নিজের নাইটি, ব্রা আর প্যান্টি ছেড়ে ফেলে একেবারে উলঙ্গ হয়ে গেলাম আর ঠিক করে পা গুটিয়ে সোজা হয়ে বসে- আমি নিজের মনকে একাগ্র করে, চোখ বুজিয়ে- মন্ত্রটা ফিসফিস করে উচ্চারণ করতে লাগলাম-

- “টি আউরো- ঈতা ওয়াইরু”

আর হাতের আঙুলে কতবার মন্ত্র উচ্চারণ করেছি তার গণনা রাখতে লাগলাম।

ঠিক ৩৩ বার মন্ত্রটি উচ্চারণ করা শেষ হবার পরেই আমি পট্ করে নিজের চোখ খুলে আসে পাসে দেখতে লাগলাম, আমি জানতাম না যে আমার কি আশা করা উচিত, একটা যেন বিরাট অনিশ্চয়তা... তবে আমাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলনা, বাইরে থেকে “দুম!” করে একটা আওয়াজ এলো- ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমারে আজ অনেক দিন পরে আবার গণ্ডগোল- সারা পাড়ার আলো নিভে গেল, হটাত করে একটা হাল্কা ঝড় মত যেন শুরু হয়ে গেল, বাইরে থেকে আসা জোর একটা ঠাণ্ডা হাওয়াতে ঘরের খোলা জানলার পর্দাগুলি উড়তে লাগল আর এই গ্রীষ্মকালেও আমার সারা গা শির-শির করতে লাগল। তার পরেই একটা ‘ফড়- ফড়- ফড়-ফড়’ আওয়াজ; দেখলাম যে কোথা থেকে একটা প্যাঁচা উড়ে এসে বাইরে ঘরের জানলার কাছে এসে বসেছে। রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি তীর বেগে চলে গেল আর তার স্টিরিওতে একটা চেনা চেনা গান বাজছিল –“এ যে সেই আঁধার...”

এটা কি আমি নিজের আহ্বানের কোন ‘সাড়া’ পেলাম? ঠিক সেই সময় আমার টেবিলে রাখা আমার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল ।
 
3

ফোনের স্ক্রিনে দেখলাম- দেখলাম হুলা মাসী ফোন করেছে।

“হ্যালো?”, আমি ওনার ফোন পেয়ে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

“হ্যাঁ, সন্ধ্যা?... আমি বলছি... তুই কি বইটা পড়তে শুরু করেছিস?”

“হ্যাঁ...”, হুলা মাসী জানল কি করে?

“ভাল-ভাল, না মানে আমি এমনি ফোন করেছিলাম, আজকে দিনটা বেশ ভাল ছিল, তাই আজ থেকে বইটা পড়া শুরু করলে তুই ভাল ফল পাবি তাই ভাবলাম যে তোকে একবার জানিয়ে দি। তা ছাড়া আজ রাত বারোটা থেকে একটা ভাল যোগ আছে, তুই বৃদ্ধি মন্ত্রটা ব্যাবহার করে দেখতে পারিস।”

“আচ্ছা...”

“তুই এই সব নিয়ে পড়াশোনা করিস আর তোর একটু শখ আছে তাই ভাবলাম তোকে জানিয়ে দি, রাস্তাঘাটে তো আর সব কথা বলা যায় না... আচ্ছা রাখছি।”

হুলা মাসীর ফোনটা রেখে দেবার পরেই যেন সব ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু মেঘের আড়াল থেকে উঁকি মারা চাঁদের আলোয় আমি দেখলাম যে প্যাঁচাটা তখনো জানলায়ই বসে আছে; ওর গায়ে সাদা সাদা আর বাদামি রঙের পালক আছে মনে হল, বেচারা বোধ হয় ঝড়ে ভয় পেয়ে গেছে। ও জানলায় বসে থাকে থাকুক, নিজেই আবার উড়ে যাবে।

বইটা যেন আমাকে বেঁধে রেখেছিল- টানছিল আমাকে- তাই আমি একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে আবার বইটা পড়তে শুরু করলাম। বাকি পাতাগুলি পড়তে আমার বেশি সময় লাগল না- আহ্বান করা শেষ প্রস্তুতির অধ্যায়ও পড়া শেষ, এবারে পরের অধ্যায়– “মন্ত্র এবং রীতি”।

হুলা মাসী বলেছিলেন যে বইটার ৭০ নম্বর পাতায় লেখা রয়েছে ‘বৃদ্ধি মন্ত্র’ আর এই তুক সফল করার জন্য বিস্তারিত লেখা রয়েছে তার সাথে যুক্ত পদ্ধতি (যেটা নাকি সাত দিন টানা করে যেতে হবে) আর এই কাজে যা যা জিনিস লাগবে তার তালিকা। আমি পুরো লেখাটার উপরে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম আর মোমবাতির আলোতেই একটা কাগজে যে সব জিনিসপত্র লাগবে সেইগুলিও লিখে নিলাম, পরক্ষণেই দেওয়ালে টাঙানো ঘড়িটার থেকে ‘টং- টং’ করে ঘণ্টা বাজল- এখন রাত আটটা বাজে এখনো সব দোকান পাট খোলা আছে, কেন জানি না প্যাঁচাটা তখনই আমার দিকে ‘চ্যাঁ-চ্যাঁ-চ্যাঁ-চ্যাঁ’ করে উঠল।
যেন আমাকে বলছে, “হ্যাঁ- হ্যাঁ, এখনি যাও- এখনি যাও...”

আমি তাড়াতাড়ি আবার নিজের ব্রা-প্যান্টি আর একটা টি-শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরে, হাতে একটা থলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ঘরে তালা দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে হল যে বাড়ির বড়রা বলেছিলেন যেন রাতের বেলা মেয়েদের এলো চুলে বেরুতে নেই। চুলে একটা খোঁপা অথবা পনি টেল বেঁধে নিলে হত। কিন্তু আজকাল এই সব কে আর মানে?
***

বাড়ির কাছেই একটা সুপার মার্কেট ছিল, যার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে আমি বলতে গেলে সবই পেয়ে গেলাম, বিল দেবার সময় দেখলাম যে কাঁচের দরজা লাগানো বড় বড় ফ্রিজে বিয়ার ক্যানগুলি সুন্দরভাবে সাজান রয়েছে। আমি অনেকদিন বিয়ার খাইনি। আজ বৃদ্ধি মন্ত্রের তুক শুরু করার পরে বিয়ার আর পিজ্জা খেয়ে ঘুমাতে যাব।

বাড়ির জন্য অটো ধরার আগে আমি একটা ষ্টেশনারীর দোকান থেকে একটা চার্ট পেপার আর কয়েকটা মার্কারও কিনে নিলাম। এতে আমাকে বইতে লেখা নির্দেশের মত একটা আসন আঁকতে হবে। তবে এই আসন বসার জন্য নয়।

বাড়ির কাছে অটো থেকে নেমে দত্তদার মুদিখানার দোকান থেকে আমি তিনটি লাল রঙের বড় বড় মোমবাতি কিনে নিলাম। দত্তদা একটু অবাক হয়ে বললেন, “দিদি, তুমি এই ‘কিং সাইজ’ মোমবাতিগুলি নিয়ে করবেটা কি? এখানে তো তেমন লোড শেডিং হয় না আজকাল!”

আমিও হেসে বললাম, “সাজিয়ে রাখব... দরকার হলে পলতেয় আগুন দেব...”
বাড়ি এসে দেখি যে কারেন্ট এসে গেছে। কিন্তু প্যাঁচাটা এখনো জানলার কাছেই বসে আছে। যাই হোকনা কেন আমি তাড়াতাড়ি কিনে আনা জিনিসগুলি গুছিয়ে রেখে, বিয়ার ক্যানগুলি ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিলাম। ব্যাটা সেল্সম্যানটা আমাকে দু খানা বিয়ার ক্যানের সেট গছিয়ে দিয়েছিল- একটা সেট মানে ছয়টা ক্যান আর ছয়টা ক্যানের সাথে নাকি একটা ক্যান ফ্রি। শেষকালে আমি ১৪ টা ক্যান নিয়ে বাড়ি ফিরে ছিলাম।

তারপরে আমি বইটা খুলে নির্দেশগুলি আবার পড়ে বারান্দায় গিয়ে আধা শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ গাছটার থেকে একটা ফুল ও কিছু পাতা ছিঁড়ে নিয়ে এসে বইয়ের লেখা অনুযায়ী একটা কাগজে মুড়ে সেটি সুতো দিয়ে বেঁধে দিলাম আর ভাবলাম যে এবারে জামাকাপড় বদলে চার্ট পেপারে আসনটা আঁকতে হবে। আমি টি-শার্ট আর জিন্স খুলে যেই নাইটিটা পরতে গেলাম, প্যাঁচাটা আবার ‘চ্যাঁ-চ্যাঁ-চ্যাঁ’ করে উঠল... এ কি রে বাবা? এবারে আমি প্যাঁচাটাকে লক্ষ করে যেন জিজ্ঞেস করলাম, “কি রে প্যাঁচা? আমাকে কি সব এলো চুলে ল্যাংটো হয়ে করতে হবে?”

প্যাঁচাটা দু বার এপাশ ওপাশ দুলে যেন স্বীকৃতি জানাল, আশ্চর্য ব্যাপার আমার এই সব কেমন যেন একটু অদ্ভুত লাগছিল। একবার ভাবলাম যে কেননা আমি একবার হুলা মাসিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নি? ফোন করায় কোন লাভ হল না, হুলা মাসীর ফোন লাগছিল না- সেটি নাকি এখন কভারেজের বাইরে ছিল, তাছাড়া আমার বইতে লেখা কথাগুলি মনে পড়ল, মনে হয় এতে লেখা সব রীতিগুলি অসারত্ব, পূর্বধারণা, অহং ত্যাগ করে একেবারে হীন, নির্বস্ত্র এবং নম্র হয়েই করতে হবে - আমি একটু ইতস্ততঃ সহ আবার নিজের ব্রা আর প্যান্টি খুলে ফেললাম, আশা করি খোলা জানলা দিয়ে কেউ আমাকে এই উলঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলবে না।

আঁকা শেষ হবার পরে আমি চার্ট পেপারটা নিজের সামনে দুই হাতে তুলে ধরে নিজের আঁকা দেখে বেশ গর্বিত বোধ করলাম।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top