১
“ফ্রেন্ডস চ্যাট সার্ভিসে আপনাকে স্বাগত জানাই... এই কলের জন্য আপনাকে দিতে হবে মাত্র তিন টাকা প্রতি মিনিটের শুল্ক... দয়া করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ... দয়া করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ... দয়া করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ... আমার আপনার কল এখনই একটি বন্ধুর সাথে কানেক্ট করতে যাচ্ছি...”
মোবাইল ফোনে পাঁচ অক্ষরের নম্বর ডায়াল করতেই রেকর্ড করা আওয়াজ শুনতে পারল রাহুল, মাত্র দুই দিন হয়েছে ও মোবাইল ফোন কম্পানির এই পরিসেবা সাবস্ক্রাইব করেছে। এই সার্ভিসে নাকি মেয়েদের সঙ্গে কথা বলা যায়, তাও নিজের আসল মোবাইল নম্বর না জানিয়ে...
আমিও এই পরিসেবাতে ঢুকেছি তবে অন্য ভাবে। একদিন মোবাইল ফোন কম্পানির থেকে একটা ম্যাসেজ পাই। সেই নম্বরে যোগাযোগ করে জানা যায় যে মোবাইল ফোন কোম্পানি একটা বেসরকারী সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগে এই পরিসেবা শুরু করেছে। আমার মত অনেক মেয়েদেরই তারা নাকি দলে ভিড়িয়েছে। আমাদের মত মেয়েদের কাজ হল যে যখন এই ‘ফ্রেন্ডস চ্যাট সার্ভিসে’ ছেলেরা ফোন করবে, আমার মত কোন না কোন মেয়ে তার ফোন পাবে। আমাদের কাজ হল যে এই সব গ্রাহকদের সাথে যতক্ষণ পারা যায় কথা বলা, ওদের লাইনে রাখা- ওদের বিল তিন টাকা প্রতি মিনিট হিসাবে উঠবে আর যত কথা বলে বিল উঠবে, আমরা এই পরিসেবায় নিযুক্ত মেয়েরা তার থেকে কিছু কমিশন পাব... – একে বলে টক টাইম তোলা, এটাই হল আমাদের ID র Job অথবা চাকুরী...
বেশ! আমি তো ছয় মাস ধরে এই পরিসেবায় কর্মরত। মাসে তিন চার হাজার টাকা আরামসে উঠে যায়... শুধুই তো কথা বলা... সব রকমেরই কথা বার্তা বলা... সাধারণ, যাবতীয় এবং সেক্স, রোমান্স, ইত্যাদি... আমার তো সব কিছুরই এখন অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে, এছাড়া যদি এই চ্যাট সার্ভিস থেকে আরও কিছু লাভ হয় তো ক্ষতি কি?
সেই দিন রাহুলের ফোন আমি পেলাম...
আজ জানি না কেন এখনও আমার এক বোতল বিয়ার শেষ হয়নি কিন্তু আমি এটা জানি, কারুকে নিজের নম্বর না জানিয়ে একটু দুষ্টু মিষ্টি কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে।
“হ্যালো?”, অবশেষে আমি একটা আওয়াজ পেলাম।
“হ্যালো, কে বলছ?”, আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“আমার নাম রাহুল, তুমি কে বলছ?”
“আমার নাম বিম্বো, কোথায় থাক তুমি?” ইস! নিজের আসল ডাক নামটা বলে ফেললাম...
“আমি, দমদম থাকি, আর তুমি?”
“আমি, শ্যামনগরে থাকি...”
“বিম্বো? এটা আবার কি নাম?”
“হি... হি... হি... হি... রাহুল... আমার নাম বিমলা বসু...”, এই যা! নিজের আসল নামটাও বলে দিলাম, “শর্টে বন্ধুরা বিম্বো বলে ডাকে...”
“হা... হা... হা... মনে হচ্ছে আমাদের জমবে ভাল...”, রাহুল বলল।
“আমাকে না দেখে, না চিনে কি করে এই কথা বলছ?”
“জানি না কেন... মনে হল... আচ্ছা তুমি কি কর, বিম্বো?”
“আমি, চাকরি করি... আর তুমি?”
“আমিও চাকরী করি...”
“তোমার বাড়িতে কে কে আছে?”, আমি জানতে চাইলাম। টক-টাইম তুলতে হবে যে...
“মা আছেন, বাবা আছেন, দাদা আর বৌদি, ...তোমার বাড়িতে কে কে আছে?”
জানি না রাহুলের গলার আওয়াজে কি জাদু ছিল নাকি এটা বিয়ারের নেশার ফল যে আমি যেন একেবারে গলে গেলাম।
“বলি?”, জিজ্ঞাসা করে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম।
কৌতুহল বশত রাহুল বলে উঠল “হ্যাঁ, বল... বিম্বো, বল।”
“বললে তুমি বিশ্বাস করবে না...”
“কেন?”
“আমার বাড়িতে যারা আছেন তাদের সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ নেই...”
“মানে?”
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে, আমি বলতে আরম্ভ করলাম, “আমার যখন উনিশ বছর বয়স, আমি একটা ছেলের সঙ্গে ভালবাসা করে পালিয়ে বিয়ে করলাম... মাস ছয়েক সবই ঠিকঠাক চলল... কিন্তু ছেলেটা কোন কাজ করত না... কোন রকমে টেনে টুনে এত দিন সংসার চালানোর পরে... আমি যখন মা হতে চলেছি... সে আমাকে ছেড়ে এক দিন চলে যায়... আমাকে বাধ্য হয়ে গর্ভপাত করাতে হল... তার পরে আমার বাবা আর মা আমাকে আর বাড়িতে রাখলেন না... অবশেষে আমি মাথা গুঁজলাম আমারই এক দূর সম্পর্কের মাসীর বাড়িতে...”
শুনে রাহুল একবারে স্তব্ধ হয়ে গেল। কিন্তু আমার ব্যাপারে সব জানার জন্য হয়ত রাহুলের একটু ঔৎসুক্যটা বেড়ে গিয়েছিল, তাই বোধহয় আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা?...”, রাহুল কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে বলল, “কি হল বিম্বো?”
“না, মানে কিছু পুরানো কথা মনে পড়ে গেল তাই...”
“যাক, আমার সাথে যা হবার তা হয়ে গেছে, এখন আমি একটা সরকারি দফতরে একজন জুনিয়ার ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি... এবারে তোমার কথা বল...”
আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে বললাম, “তুমি বিয়ে করেছ?”
“না...”
“তোমার বয়েস কত?”
“ আমার বয়স ৪২... আর তোমার?”
“২৮...”, আমি নিজের বয়েস কমিয়েই বললাম। সব মেয়েরা তো তাই করে।
“ভাল- আশা করি আমার সাথে তোমার বন্ধুত্ব করতে কোন আপত্তি নেই...”, রাহুল জিজ্ঞাসা করল।
“হা... হা... হা... আজ্ঞে না, নেই...”, আমি তো সব তথ্যেই অভ্যস্ত।
“তোমাকে দেখতে কেমন, বিম্বো?”
“হুম”, আমি একটু মৃদু হেসে বললাম, “আমি পাঁচ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা, গায়ের রঙ্গ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, মাথার চুল কোমর অবধি লম্বা...”, জানি না কেন- এটা বোধ হয় বিয়ারের নেশার প্রভাব- যে আমি একটু ইতস্তত করা সত্বেও বলেই ফেললাম, “ আর আমি ৩৪ সাইজের ব্রা পরি...”
“আর তোমার কাপ (Cup) সাইজ?”
“B....”, আমি এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না ।