নাসিরুদ্দিন হোজ্জার জন্ম তুরস্কে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। নানা চরিত্রে ও পেশায় তাঁকে তাঁর কয়েক শ গল্পে হাজির হতে দেখা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, হোজ্জা এখন আর তুরস্কের নন, সারা বিশ্বের। ইউনেসকো তাঁর গল্পগুলোকে বিশ্বসাহিত্যিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। হোজ্জা অবশ্য একেক অঞ্চলে একেক নামে অভিহিত। যেমন উজবেকিস্তান ও চীনে তিনি আফেন্দি বা এফেন্দি। তাঁর গল্প কখনো নির্মল হাস্যকৌতুকে, কখনো বুদ্ধির ঝলকে, কখনো বা নৈতিক শিক্ষার দ্যুতিতে উজ্জ্বল। কখনো নিজেকে নিজেই ব্যঙ্গ করেছেন।
হিংসের জবাবে
নাসিরুদ্দিনের বন্ধু ছিলেন এক ধনী সওদাগর। একবার দূর দেশে বাণিজ্য করতে যাওয়ার আগে তিনি মোল্লার কাছে বিদায় নিতে এলেন। যখন মোল্লা হাত তুলে সওদাগরকে সেলাম জানাচ্ছেন, তখন দিনের আলোয় চকচক করে উঠল মোল্লার আঙুলের সোনার আংটিখানা। তাই দেখে সওদাগরের হিংসে হলো। গরিব মোল্লার হাতে অত দামি আংটি মানায় না। তিনি তাই মোল্লাকে আলিঙ্গন করে বলে উঠলেন, ‘ভাই, তুমি আমার প্রাণের বন্ধু, তোমাকে ছেড়ে দূর দেশে থাকতে হবে, মনটা আমার হু হু করবে। তাই তোমার একটা স্মৃতিচিহ্ন কাছে রাখতে চাই। তা দাও না ভাই তোমার ওই আংটিখানা। ওটা সব সময় পরে থাকব। ওটার দিকে নজর পড়লেই তোমার কথা মনে পড়বে। ওটা স্পর্শ করলেই তোমার হাতের ছোঁয়াও পাব।’
মোল্লা মিষ্টি হেসে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন, ‘সত্যি ভাই, তোমার কথা শুনে আমার বুক ভরে যাচ্ছে। তুমি আমাকে যে ভালোবাসো, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু ভাই তোমার বিরহেও যে আমার মনটা ছটফট করবে। তা ছাড়া সব সময় আমি তোমার কথা মনে রাখতে চাই। তাই তোমার মনপসন্দ আংটিটা আমি নিজের আঙুলেই পরে থাকব। ওটার দিকে যতবার নজর পড়বে, ততবার মনে হবে ওটা তুমি চেয়েছিলে কিন্তু আমি তোমাকে দিইনি। আর ওটা ফের নেওয়ার জন্য তোমাকে একদিন না একদিন ফিরতেই হবে এই দেশে!’
ঠিক বলেছেন হুজুর
জুম্মাবারে বাদশাহি গোসলখানায় গোলাপজলে গোসল করছিলেন বাদশাহ। ঠিক সে সময় সেখানে হাজির হলেন মোল্লা নাসিরুদ্দিন। বাদশাহ তাঁকেও চৌবাচ্চায় নেমে পড়তে বললেন। দুজন আয়েশ করে কিছুক্ষণ গোসল করার পর বাদশাহ নিজেই নিজের চেহারার সুখ্যাতি করে বললেন, ‘দেখো হে মোল্লা, আমার চেহারাটা কেমন খুবসুরত। এ রকম স্বাস্থ্যবান একজন ক্রীতদাসকে যদি বাজারে বেচতে যাও তাহলে নির্ঘাত অনেক মোহর পাবে।’
‘আমার তো তা মনে হয় না হুজুর। বড়জোর দশটা মোহর দাম মিলতে পারে।’
বাদশাহ ক্ষিপ্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘তোমার আস্পর্ধা তো কম নয়। জানো, আমার মাথার টুপিটার দামই কমপক্ষে দশ মোহর। আর তুমি কিনা...।’
‘হুজুর ঠিকই বলেছেন’, টুপিটা ভালো করে পরীক্ষা করতে করতে বললেন নাসিরুদ্দিন, ‘এই টুপিটার কথা ভেবেই তো আমি দশ মোহর দাম বলেছি।’
* প্রথমা প্রকাশনের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ১০০ গল্প বই থেকে
হিংসের জবাবে
নাসিরুদ্দিনের বন্ধু ছিলেন এক ধনী সওদাগর। একবার দূর দেশে বাণিজ্য করতে যাওয়ার আগে তিনি মোল্লার কাছে বিদায় নিতে এলেন। যখন মোল্লা হাত তুলে সওদাগরকে সেলাম জানাচ্ছেন, তখন দিনের আলোয় চকচক করে উঠল মোল্লার আঙুলের সোনার আংটিখানা। তাই দেখে সওদাগরের হিংসে হলো। গরিব মোল্লার হাতে অত দামি আংটি মানায় না। তিনি তাই মোল্লাকে আলিঙ্গন করে বলে উঠলেন, ‘ভাই, তুমি আমার প্রাণের বন্ধু, তোমাকে ছেড়ে দূর দেশে থাকতে হবে, মনটা আমার হু হু করবে। তাই তোমার একটা স্মৃতিচিহ্ন কাছে রাখতে চাই। তা দাও না ভাই তোমার ওই আংটিখানা। ওটা সব সময় পরে থাকব। ওটার দিকে নজর পড়লেই তোমার কথা মনে পড়বে। ওটা স্পর্শ করলেই তোমার হাতের ছোঁয়াও পাব।’
মোল্লা মিষ্টি হেসে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন, ‘সত্যি ভাই, তোমার কথা শুনে আমার বুক ভরে যাচ্ছে। তুমি আমাকে যে ভালোবাসো, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু ভাই তোমার বিরহেও যে আমার মনটা ছটফট করবে। তা ছাড়া সব সময় আমি তোমার কথা মনে রাখতে চাই। তাই তোমার মনপসন্দ আংটিটা আমি নিজের আঙুলেই পরে থাকব। ওটার দিকে যতবার নজর পড়বে, ততবার মনে হবে ওটা তুমি চেয়েছিলে কিন্তু আমি তোমাকে দিইনি। আর ওটা ফের নেওয়ার জন্য তোমাকে একদিন না একদিন ফিরতেই হবে এই দেশে!’
ঠিক বলেছেন হুজুর
জুম্মাবারে বাদশাহি গোসলখানায় গোলাপজলে গোসল করছিলেন বাদশাহ। ঠিক সে সময় সেখানে হাজির হলেন মোল্লা নাসিরুদ্দিন। বাদশাহ তাঁকেও চৌবাচ্চায় নেমে পড়তে বললেন। দুজন আয়েশ করে কিছুক্ষণ গোসল করার পর বাদশাহ নিজেই নিজের চেহারার সুখ্যাতি করে বললেন, ‘দেখো হে মোল্লা, আমার চেহারাটা কেমন খুবসুরত। এ রকম স্বাস্থ্যবান একজন ক্রীতদাসকে যদি বাজারে বেচতে যাও তাহলে নির্ঘাত অনেক মোহর পাবে।’
‘আমার তো তা মনে হয় না হুজুর। বড়জোর দশটা মোহর দাম মিলতে পারে।’
বাদশাহ ক্ষিপ্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘তোমার আস্পর্ধা তো কম নয়। জানো, আমার মাথার টুপিটার দামই কমপক্ষে দশ মোহর। আর তুমি কিনা...।’
‘হুজুর ঠিকই বলেছেন’, টুপিটা ভালো করে পরীক্ষা করতে করতে বললেন নাসিরুদ্দিন, ‘এই টুপিটার কথা ভেবেই তো আমি দশ মোহর দাম বলেছি।’
* প্রথমা প্রকাশনের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ১০০ গল্প বই থেকে