What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected শুধুই আমার by Ankita kar (2 Viewers)

শুধুই আমার ২৮

"অলকেশ বাবু না?" গলাটা পুরো জমিয়ে দিল অলকেশকে। পিছনে না ঘুরেই তিনি আন্দাজ করলেন বহুদিন আগে শোনা সেই হিন্দি টান মেশানো গলাটার মালিক কে।
..................
লাঞ্চ শেষ করে ড্রাইভিং সিটে,বসেই,অবিনাশ বুঝলো খাওয়া বড্ড বেশি হয়েছে। এখন ড্রাইভ করা বেশ মুস্কিল এরকম ভরপেটে। সেটা সে আরো স্পষ্ট করে বুঝলো,যখন লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখতে পেলো,মা বাবা,গাড়িতে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যে ঢুলে পরলো একে অন্যের গায়ে।

অবিনাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো। গাড়িতে চলা পুরনো দিনের গান,কখনো মেঘ , কখনো, রোদের ঝিম ধরা পরিবেশ,আর ধাবায় করা অতি সুস্বাদু লাঞ্চ ওর দুচোখ জুড়িয়ে দিচ্ছিল ঘুমে। এভাবে ,ও ত অ্যাকসিডেন্ট করে দেবে এবার !? অবিনাশ মিতুর দিকে তাকালো। মিতু তখন ,গাড়ির এসির তাপমাত্রাকে উপেক্ষা করে,জানলা খুলে প্রচণ্ড জোরে ছুটে আসা বাতাসের মধ্যে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

" ওই,মিতু,। "

মিতু অবিনাশের গলাটা শুনে বাইরে থেকে মুখ সরিয়ে ওর দিকে তাকালো,দুচোখে প্রশ্ন নিয়ে।

" আমার ঘুম পাচ্ছে,তুই কথা বল আর আমার ঘুম কাটা,না হলে আমি এক্সিডেন্ট করবো এবার। "

" আমি কি বলবো?" মিতু অবাক হয়ে বললো।

" যা,ইচ্ছে বল,আর প্লিজ এই গানগুলো চেঞ্জ কর,আমার আরো ঘুম পাচ্ছে। "

মিতু,নিজের ফোনের ব্লুটুথ কানেক্ট করে কিছু গান চালালো।
" গুড,এবার শুরু কর, বকা। " অবিনাশ চোখের পাতা খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে বলল।

" এভাবে কথা বলতে বললেই বলা যায় নাকি ! .....
ওকে ওকে দাড়া,চল ট্রুথ আর ডিয়ার খেলি। "

অবিনাশ এবার হেসে ফেললো।
" সেটাতো খুবই মজার হতো,কিন্তু তোর মনে হয় না,ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত হবে, মানে আমার দুহাত ,দুপা এনগেজ, ডেয়র কি করে করবো পাগলী ?"

" ওকে ওকে,তাহলে শুধু ট্রুথ,ওটাতে তোর হাতপা লাগবে না,মুখ হলেই হবে। "

অবিনাশ হেসে সায় দিল নিঃশব্ধে।
" ঠিক আছে,কিন্তু শর্ত একটাই,যা প্রশ্ন হবে তার উত্তরে দুজনকেই সত্যি বলতে হবে! রাজি ?"

" ওকে done, প্রথমে আমি শুরু করি, কজন মেয়ের সাথে ডেট এ গেছিস ?" অবিনাশ পুরো অবাক হয়ে গেলো মিতুর প্রথম প্রশ্নেই। ও ধরতে পারছিলো না,মিতুর হটাৎ এধরণের প্রশ্ন করার মানে। কিন্তু ও উত্তর দিল।

" দাড়া এক মিনিট,হিসেব করতে দে,যদি ক্লাস ১২ থেকে ধরি, তাহলে ধর ২৫ - ৩০ জন হবে ,আরো বেশি হতে পারে। ঠিক মনে নেই,ওভাবে ত ভেবে যাইনি !"

" omg দাদা,তুই ত হিরো রে পুরো,আর এদের মধ্যে বৌদি কে হচ্ছে ?"

অবিনাশ এবার হাসলো,মিতুর কথা শুনে। মিতু কি কোথাও গিয়ে ঈর্ষা অনুভব করলো,তাই ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো,এদের মধ্যে কাউকে অবিনাশ ভালোবেসেছে কিনা ?

" যাকে ভালোবাসবো সে। আর এখনও অবধি কারো ক্ষমতা হইনি সেই জায়গাটা নেবার,এবার যদি জিজ্ঞেস করিস কে সেই জায়গাটা নিয়ে বসে আছে এত বছর ধরে,তবে আমার বলতে......."

" ঠিক আছে,ঠিক আছে,অন্য টপিক!" অবিনাশ কথা শেষ করার আগেই মিতু প্রায় লাল হয় ওকে থামিয়ে দিতে দিতে বলল।

"কত জলদি বুঝে যাস তুই মিতু। " অবিনাশ মিতুর মুখের রক্তের হটাৎ আগমন লক্ষ্য করেই বললো
" চল,এবার আমার টার্ন প্রশ্ন করার,অর্কর সাথে পরিচয় কিভাবে তোর ?"
মিতু চমকে ঘুরে তাকালো অবিনাশের দিকে। অবিনাশ দুদিন ধরে যেন একটু বেশি সাহসী হয়ে গেছে। বারবার
অর্কর কথা জিজ্ঞেস করছে,আগের মত চুপচাপ না থেকে।

" মাধ্যমিকের পর ফেইসবুকে আলাপ,অনেক ভালো ভালো গল্প করতো ও,আমার খুব ভালো লাগতো শুনতে, তারপর আমার পড়াশুনার খুব খোজ নিত,তারপর একদিন ও ফোন নম্বর চাইলো,আমি দিয়ে দিলাম । তারপর গল্প করতাম অনেক। তারপর যা হয় আর কি !"

মিতু এতক্ষণ বলে থামলো। অবিনাশ অনেক্ষন চুপ করে ছিলো ওর কথা শোনার পর।
" শুধুই কি কথা বলার লোক খুঁজছিলি মিতু,নাকি ভালোবেসেছিলি ওকে ?" অবিনাশ ঠান্ডা গলাতে প্রশ্ন করলো।

" জানিনা। আমি সত্যিই জানিনা। " মিতু কথাটা শেষ করেই জানলার দিকে মুখ বাড়ালো। ওর দুজনেই চুপ করে গেছিলো। গাড়ির পিছনে আলোকেশের মৃদু নাক ডাকার শব্দ ঢাকা পরে যাচ্ছিল স্পিকারের শব্দে

" তেরে বিনা জিন্দেগিসে কোই শিকবা তো নেহি

শিকবা নেহি,শিকবা নেহি। "

দুপাশে সুধূর বিস্তৃত মাঠের সীমারেখা মিশে গেছিলো দিগন্তের সীমারেখার সাথে। চওড়া কালো পিচের রাস্তার উপর সাদা সাদা দাগ আর ডিভাইডার ছাড়া কিছুই ছিল না চারিদিকে। রাস্তার পাশে মাঝে মাঝে পড়া ছোট ছোট জনবসতিগুলো ধীরে ধীরে পিছনে সরে যাচ্ছিল গাড়ির গতির সাথে পাল্লা দিতে না পেরেই। আকাশের কুমুলোনিম্বস মেঘের বিশাল কালচে বর্ণের উপস্থিতি প্রমাণ করার চেষ্টা করছিল,বৃষ্টি আসার পূর্বাভাসকে।
অবিনাশ নিজের দিকের জানলা খুলে বসেছিল। ঠান্ডা ঠান্ডা,ভেজা ভেজা বাতাসটা ওর মুখের উপর আছরে পড়ার সাথে সাথে, ওর নাকের ইন্দ্রিয়গুলো সক্রিয় হয়ে উঠছিল বৃষ্টিভেজা, সোদা মাটির গন্ধটা পেয়ে।

,১৩০ এ ছুটে চলা সেডানের সামনের অংশটা বড় সাবধানে কেটে বেরোচ্ছিল বাতাসের বেগ,আর তার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমশ অ্যাক্সিলারেটরের উপর অবিনাশের পায়ের চাপ বারছিল,গিয়ার এখন পাঁচ ছাড়িয়ে ৬ পরেছে।

অবিনাশের নেশা লাগছিল, আর এ নেশা বড়ই বিপদজনক,কারণ এ নেশার স্বাদ সবাই পায় না,এ নেশা গতির নেশা । চারপাশের ঝিম ধরানো পরিবেশ আর ওর মনের মধ্যে চলা প্রশ্নের ঝড়ের উত্তর পেতে ও ক্রমশই গতির নেশার কাছে সমর্পণ করছিল নিজেকে...... যতক্ষণ না

" দাদা,আসতে চালা ,কি করছিস তুই,গাড়ি ১৬০ এ উঠেছে। "

মিতুর ভীত গলাটা ওকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো।
" সরি। " অবিনাশ গাড়ির গতি আসতে করতে করতে বললো।
" হম,। " মিতু চুপ করতে করতে বলল।

" মিতু,একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি ?" অবিনাশ অনেক্ষন চুপ করে থাকার পর বললো।

" হম,বল। " মিতু দীর্ঘনঃশ্বাস ফেলে বললো।

" হটাৎ করে আমার থেকে এত দূরে চলে যাচ্ছিস কেন বলবি,?ছোটবেলাতে আমার সব কথা বলার জাইগা ছিলি তুই,আজকাল তোর কথা বলার জন্য,অর্কর দরকার পরে,আমি কি এতটাই দূরে চলে গেছি তোর থেকে ? আমার এটা কতটা কষ্ট দিয়েছিল আমি জানি না যে তুই অর্কর সাথে প্রেম করছিস,কিন্তু আমাকে সবথেকে কষ্ট কি দিয়েছিল জানিস তুই সেটা আমাকে লুকিয়ে গেছিলিস সেটাকে। আমাকে মিথ্যে বলেছিলি তুই মিতু ?? আজ আমি এতটাই দূরে চলে গেছি তোর থেকে বল ! যাকে জড়িয়ে একসময় তুই সব গল্প করতি আজ তার চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলতে হচ্ছে তোকে?????"

অবিনাশের গলার বিষাদের সুর মিতুকে শিহরিত করেছিলো পুরো। কি প্রচণ্ড কষ্ট,যে এই কটা কথার মধ্যে ছিলো মিতু সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো। অবিনাশকে ও কখনো এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়নী। আজ অবধি ও দাদাকে কখনো এত ভেঙে যেতে দেখেনি। কিন্তু মিতু চুপ না থেকে মুখ খুললো তার উপরে করা অভিযোগের উত্তর দিতে।

" সেটা তুই তৈরি করেছিলি ! একটাও বন্ধু ছিল না আমার, তোর জন্য! ছেলেরা আমাকে দেখলে দূরে সরে যেত সেটাও তোর জন্য ?! ক্লাস টেন পাস করার আগে ফোন হাতে দিসনী বাবা মাকে বুঝিয়ে । তোর ফোন থেকে তোর সামনে দাড়িয়ে কথা বলতে হতো নিজের বন্ধুদের সাথে ? এত অবিশ্বাস,এত শাসনের পর তুই কিভাবে আশা করলি আমি সবকিছু তোকে বলবো ? তুই আজ বলছিস আমি তোকে কেন মিথ্যে বলেছিলাম,সেটাও তোর নিজের জন্য। ভালো করে ভেবে দেখিস,কতটা,আমার ভুল কতটা তোর !" মিতু বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল জানলার দিকে।

অবিনাশ বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। কিন্তু কিছুই বলতে পারছিল না ও উত্তরে,কারণ মিতুর একটা কথাও মিথ্যে না। অবিনাশ আজ অনেকদিন পর উপলব্ধি করলো মিতুকে প্রোটেক্ট করতে গিয়ে ও বড় বেশিরকম আগলে ধরেছিল মিতুকে। আর মিতু যেন সেই সোনার খাচাতে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে ,মুক্তির আশাতে শক্ত করে ধরেছিল অর্কর হাত। অবিনাশের নিজের উপর রাগ হচ্ছিলো। কোনো না কোনোভাবে আজকে পুরো পরিস্থিতির জন্য ও নিজেই দায়ী, লাগছিল ,ওর।

" আমি জানি মিতু,আমি ভুল করেছিলাম,...কিন্তু যেটুকু করেছিলাম তোর ভালো চেয়ে করেছিলাম বিশ্বাস কর। " অবিনাশ কাতর গলাতে বললো। গোগোল ম্যাপ অনুসারে,গাড়ি এখন ধানবাদ শহরের ঘিঞ্জি রাস্তাতে ঢুকছে।

" না দাদা,তুই আমার কথা ভেবে করিসনি ,করেছিস নিজের কথা ভেবে । তুই চাইতিস তুইই আমার একমাত্র বন্ধু থাক,যাতে আমি তোকে কোনোদিন অস্বীকার করতে না পারি। " অবিনাশ স্তব্ধ হয়ে গেলো। মিতু একি কথা বলছে তাকে????? ও বোঝাতে গেলো মিতুকে যে মিতু সম্পূর্ণ ভুল ভাবছে ওকে,কিন্তু ....



" এই ত ঢুকে গেছি,বাবু, ধীরে চালা এবার,বেশ ভিড় রাস্তাতে। " অলকেশ আরমোরা ভাঙতে ভাঙতে উঠে বললেন।

গাড়িটা তখন এগচ্ছে আগে থেকে বুক করে রাখা,এবং শহরের থেকে একটু দূরে,দুধসাদা,বিশাল হোটেলের গেটের দিকে।
..............



"অলকেশ বাবু না। "

আর ফাইভ স্টার হোটেলের রিসেপশনের সামনে দাড়িয়ে এক মুহূর্তে যেন অলকেশ পাথর হয়ে গেলেন গলাটা শুনেই। সাদাটে উজ্জল রঙের ঝাড়বাতির আলো চকচকে টাইলসের মেঝের উপর পরে,এক বড় মসলিন আভিজাত্য দান করছিল পুরো হোটেলটাকে। রিসেপশনের মেয়েটির মেপে ফাঁক হওয়া ঠোঁটের মাঝের দুধ সাদা দাঁতের হাসি যেন হটাৎ করেই ফিকে হয়ে গেলো আলোকেশের আবছায়া দৃষ্টির সামনে। যে অশনীর কথা তিনি শুধু দুঃস্বপ্নে দেখেছেন,আজকে প্রথমবার সেটা যেন তার অবচেতন মনের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে,বাস্তবের পৃথিবীতে পা রাখলো।



অবিনাশ বাবার মুখের হটাৎ পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলো সাইন করতে করতেই,। কিন্তু ও সেটাকে ভীষণ ভুলভাবে নিল। ও ভাবলো,ওর বাবার শারীরিক কোনো সমস্যা হচ্ছে !

" বাবা,কি হয়েছে তোমার ? mi ( myocardial ইনফাকসন,বা সোজা ভাষাতে বুকে ব্যাথা, হার্ট এ ব্লাড সাপ্লাই কম যাওয়ার জন্য ) হচ্ছে নাকি ? " অবিনাশ , অলকেশকে দুহাতে ধরতে ধরতে বললো। আর অলকেশ ছেলের হাত শক্ত করে চেপে,ধরলেন নিজের ঘামতে থাকা হাত দিয়ে। যেন একটু ছাড়লেই সেটা পিছলে যাবে,আর তিনি নিজের সবথেকে বড় সাহারা হারাবেন।

" এক মিনিট দাড়াও। আমার ব্যাগে সর্বিট্রেট( ওষুধ) আছে,আমি দিচ্ছি,তুমি যেভাবে ঘামছ,sure mi হচ্ছে। " অবিনাশ বাবার হাত ছাড়িয়ে ব্যাগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করতেই,অলকেশ ওর হাত চেপে প্রায় ফিসফিস কণ্ঠসরে বললো
" মিতুর কাকা...."



আর অবিনাশ তখনই হটাৎ করে সোজা তাকালো চিন্তিত মুখে তাদের দিকে এগিয়ে আসা ,কাঁচাপাকা দাড়ির,লম্বা লোকটার দিকে। লোকটার পরনে খয়েরি ব্লেজার,বুকের কাছের হিরের পিন পরিচয় দিচ্ছিল অগাধ অর্থের সাথে,প্রচণ্ড মার্জিত রুচির। মুখের কাচাপাকা দারিগুলো,পরিচ্ছন্ন ভাবে কামানো, । বলিরেখায় কুচকে যাওয়া চোখের চামড়ার মধ্যে থেকে জ্বলছিল ,কালচে খয়েরী রঙের চোখের মনি। মেদহীন,দড়ির মতো পাকানো লম্বা শরীরটা যেন,পাথরের মত,নির্বাক,অথচ প্রচণ্ড শক্ত। । শিরদাঁড়া টানটান করে সে এগিয়ে আসছিল রিসেপশনের দিকে ঘুরে দাঁড়ানো আলোকেশের দিকে,নিজের সন্দেহ দুর করতে। আর অবিনাশ বাবার পাশে দাড়িয়ে,ক্রমশ মেপে যাচ্ছিল লোকটাকে। ওর মনের মধ্যে হাতুড়ির বাড়ি পড়তে শুরু করেছিল,নিজের সিদ্ধান্তের জন্য। ওই তো জোর করে ,বাবাকে বুঝিয়ে এনেছিল,কেউ জানতে পারবে না বলে। রাচি,আর ধানবাদ অনেক দূরে দূরে অবস্থিত। সুতরাং দেখা হওয়ার চান্স ছিলো না মিতুর অতীতের সঙ্গে।

কিন্তু এখন ত পরিস্থিতি পুরো অন্যদিকে যাচ্ছে,। অবিনাশ ভদ্রলোককে দেখার পরই বুঝতে পেরেছে,কেন ওর বাবা,এত ভয় পায়,মিতুর পরিবারের লোকজনকে। কারণ অবিনাশ লক্ষ্য করলো এই ভদ্রলোকের অতি মার্জিত আভিজাত্যের উপস্থিতী সত্বেও শ্রদ্ধার পরিবর্তে ভয় লাগছে এনাকে দেখে।
অবিনাশ একবার আড়চোখে দেখলো,মিতু,আর রমার দিকে।

তখন মিতু , রমার সাথে বিশাল রিসেপশনের কোণের দিকের সোফাতে বসে অপেক্ষা করছিল ,ওদের হোটেলে চেক ইন করার।



অবিনাশ একবার মিতুর দিকে চোখ বুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকালো প্রায় সামনে এসে দাড়ানো লোকটার নির্মেদ শরীরের দিকে। এতক্ষণ লোকটা একটু হলেও কনফিউজ ছিলো অলকেশ ওর কথার উত্তর দিচ্ছে না কেন দেখে?! সে বুঝতে পারছিল না ,ভুল করে অন্য কোনো লোককে অলকেশ ভেবেছে কিনা?! কারণ দরজার কাছে দাড়িয়ে ও অলকেশের মুখ দেখতে পাচ্ছিল না পিছন থেকে। কিন্তু এখন দরজার সামনে থেকে হেঁটে রিসেপশনের সামনে দাড়িয়ে অলকেশকে চিনতে পেরে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।



" হামি বিশ্বাস করতে পারছি না,এটা তুমি ডাক্তার! কিতনে সাল কে বাদ মিলে ইয়াদ হাই ? " বলেই অলকেশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জড়িয়ে ধরলো সে। আর অবিনাশ পরিস্থিতির জন্য পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও ,সঙ্গে সঙ্গে একটু পাশে সরে,লোকটার দৃষ্টির থেকে ,মিতু আর নিজের মাকে আড়াল করে দাড়ানোর চেষ্টা করলো।

অলকেশ ততক্ষনে নিজেকে অনেক সামলে নিয়েছে। তারাতারি নিজের অপ্রস্তুত অবস্থা কাটিয়ে কথা বললো" আদিনাথদা, কইসে হই অ্যাপ ?"

" হাম ত ঠিকই হাই। ইটনি দিন বাদ ঝাড়খণ্ড আয়ে ওর হামকো খবর ভি নেহি কি আপনে ? এ ত বরি দুঃখ কি বাত ! ভাবি নেহি দিখ রহি? একেলে আয়ে হই কেয়া আপ?"

আদিনাথ চারিদিকে চোখ চাইতে চাইতেই অলকেশের পিছনে অবিনাশের দিকে তাকালো হটাৎ করে। আর তখনই তার চোখ তীক্ষ্ম হয়ে উঠলো। অবিনাশের শক্তিশালী দেহ,এবং নির্মেদ শরীর আর সর্বোপরি প্রচণ্ড সাহসী চোখের দৃষ্টির সঙ্গে চোখাচোখি হতেই অজান্তেই আদিনাথের দেহ টানটান হয়ে উঠলো,। অবিনাশ আর সে তখন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মেপে নিতে চাইছিল ওপর পক্ষকে,বুঝে নিতে চাইছিলো আদৌ বন্ধুত্বের হাত বারাবে নাকি শত্রুতে পরিণত হবে একে অন্যের।

...........................
অলকেশ বেশ কিছুক্ষন ইতস্তত করলো,পরিচয় করাবে কিনা পরিবারের সাথে? কারণ তাতে মিতুকে এর সামনে আনতে হতো,আর অলকেশ কোনোভাবেই চাইছিলেন না,মিতু এদের সামনে আসুক। মিতুর অস্তিত্ব আছে আদৌ,এটাই জানুক এরা। কিন্তু এখন তার পিছনে ফেরার রাস্তা ছিল না। কারণ এখানে মিথ্যে কথা বললেও এদের যা নেটওয়ার্ক এরা জেনেই যাবে,তখন ব্যাপারটা আরো সন্দেহ সৃষ্টি করবে এদের মনে ,অহেতুক মিতুর পরিচয় কেন লোকাচ্ছে ? তখন যদি এরা জানতে শুরু করে,তাহলে কেচো খুরতে কেউটে সাপের মত মিতুর পরিচয় সামনে আসবে,সেটা আরো বিপদজনক।

" আদি ভাই,এ মেরা বেটা অবিনাশ,আভি সার্জারি পর রাহা হই!" অলকেশ ,অবিনাশের দিকে ঘুরে,পরিচয় করাতে করাতে বললো।

" এ ও অবিনাশ হাই???? আরে বেটা ইটনা বরা হো গ্যায়া? তুঝে ইটনাসা দেখা থা মাইনে! ( বলেই হাতের ইসারা করে দেখালো,মাটি থেকে মাত্র ২ ফুট উঁচুতে)
ইয়াদ হাই,তেরা আদি আঙ্কল ! আরে মেরি গাড়ি মে কিটনা ঘুমটা ঠা তব?! ভুল গয়া ?"
অবিনাশ শুধু হাসলো। ও অনেক কষ্টেও মনে করতে পারছিলো না,ওর ছোটবেলার স্মৃতির মধ্যে থেকে,এই মুখটাকে।
" সরি,বুরা মত মানিয়ে গা, ইয়াদ নেহি!" অবিনাশ হেসেই বললো।

" আরে,ও ত সহি হই,ইটনা দিন,বলুন ডাক্তার সাব, লরকা তো বড় হলো পুরো! ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার,দিল খুষ হো গয়া দেখকে । মাগার ভাবি কাহা?"
আদিনাথের কথা শেষ হওয়ার আগেই মাঝপথে থেমে গেছিলো। কারণ রমা নিজের প্রচণ্ড বিস্মিত মুখ নিয়ে,উঠে এসেছিল, এটা আদৌ স্বপ্ন না বাস্তব বুঝতে

" রমা,তুমি এখনও কি খুবসুরত আছো! বিশ্বাস হচ্ছে না,তোমার এত বড় লাড়কা আছে?!" আদিনাথ গলাতে প্রচণ্ড মুগ্ধতা নিয়ে বললো।
আর অলকেশ কিছু বলার আগেই অবিনাশ লক্ষ্য করলো,রমা কিরকম যেন গুটিয়ে গেল আদিনাথের দৃষ্টির সামনে।
তখনই অবিনাশ বুঝলো কিছু একটা গল্ডগোল আছে,তার মা আর আদিনাথের সম্পর্কের মাঝে,যেটা তার বাবা মা তাকে বলেনি। ও সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যেতে গেলো,মার সামনে ,যাতে মাকে আড়াল করে দাড়াতে পারে,কিন্তু তার আগেই,আদিনাথের প্রচণ্ড বিস্মিত গলাটা শুনে ও থমকে গেল
" এ লারকি কোন হই?"
অবিনাশ আদিনাথের গলাটা অনুসরণ করে দেখলো মিতু,কখন পায়ে পায়ে,এগিয়ে এসেছে বোনকে কোলে নিয়ে। আর আদিনাথ মিতুর দিকে তাকিয়ে প্রচণ্ড বিস্মিত গলাতে বলে উঠছেন " এ লারকী হই কোন? বরি জানি পাহেচানি লাগতি হাই?"

আর তখনই সবাই একসাথে জমে গেলো। শুধু কিছু না বুঝে হেসে ফেলা পিয়ার মুখের লালা মুছিয়ে দিতে দিতে মিতু অবাক চোখে তাকালো,বাড়ির সবার অদ্ভুত মুখের এক্সপ্রেশনের দিকে।

ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ২৯

" ও হো তোমাকে আলাপ করানোই হয়নী ,এ মিতু( অলকেশ,এগিয়ে গেলো,মিতুর দিকে) ,ভালো নাম মোহর । তুমি ওকে দেখইনী!"

" বা, কেয়া বাত ডক্টর,ইতনি খুবসুরত বেটি। এইজন্য এতো জানা পাইহেচানা লাগছিলো,,পুরো রমার মত সুরত । কনসে ক্লাস মে হো বেটি ?"

মিতু একটু অবাক হয়ে গেছিলো,এতক্ষণে কি হচ্ছে বুঝতে না পেরে। অবিনাশ সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে ওর পাশে দাড়িয়ে গেলো " বল মিতু,বাচ্চাদের মত চুপ করে দাড়িয়ে আছিস কেন ?"অবিনাশ একটু ধাক্কা দিল অবাক মিতুর গায়ে। ও চাইছিল যত তারাতারি এই পরিচয় পর্ব শেষ করে, এনার সামনে থেকে দূরে যেতে।

মিতু অবিনাশের হটাৎ ব্যাবহারের পার্থক্য বুঝতে না পেরে ওর দিকে তাকিয়েই কি মনে হতে,পিয়াকে দাদার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে ,কথা বললো আদিনাথের দিকে তাকিয়ে
" আমি এবার hs দিয়েছি । hi,nice to meet you." বলেই মিতু ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
মিতুর হটাৎ ব্যাবহার পরিবর্তনে সবাই চমকে গেলো হটাৎ। অবিনাশ পর্যন্ত অবাক হয়ে ঘুরে তাকালো,মিতুর দিকে। আদিনাথ এক মুহুর্ত চমকে উঠলো। তারপর মিতুর হাত দুহাতের মধ্যে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো," the প্লেজার is all mine,বেটা । "
আর সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত সবাই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

অলকেশ এবার এগিয়ে এলো আদিনাথ নাথের দিকে
" কি ব্যাপার,দাদা,হটাৎ এখানে! এতদূরে ?"

" আরে,এ ওয়্যালা হোটেল নেয়া খারিদা কোম্পানি নে,২ সাল হুয়া আভি,কখনো কখনো দেখতে হয়, সামজতে হ না । কাহাবাত হাই কি, আপনা চিজ আপনে পাস রাখনা সিখো,নেহি ত কোই ওর লে কর চলা জয়েগা। কি বেটা,সেহি বোলা না মাইনে?"হটাৎ আদিনাথ অবিনাশের দিকে তাকিয়ে বলল।
অবিনাশ হটাৎ এই প্রশ্নে একটু অবাক হয়ে গেলো । তারপর মুখে হাসি রেখেই বললো।
" সরি but আমি আপনার সাথে এগ্রী করতে পারলাম না। "

" কেন,জানতে পারি?!" আদিনাথের গলাটা একটু তীক্ষ্ম হলো যেন,তার ৫৫ বছরের জীবনে সে না শব্দটা খুব বেশি শোনেনি।

" কারণ আমি মানি( অবিনাশ মিতুর দিকে একবার আড়চোখে দেখলো) যেটা আমার জিনিস,সেটা আমার কাছ থেকে নিতে আমি কাউকে দেব না। " অবিনাশ হাসতে হাসতে বললো। আর সেই সময়েই বাইরের আকাশের মেঘ কেটে গিয়ে সূর্যের দেখা পাওয়া গেলো হটাৎ করেই যেন।
আদিনাথ আলোকেশের পাশ থেকে সরে অবিনাশের দিকে এগিয়ে গেলো। ওকে আরো খুঁটিয়ে দেখতে,।

" বা,লারকা, কাবিল হো রাহা হাই ,দেখ রেহী হ্ন। ভালো খুব ভালো। তাহলে ডাক্তার,ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি বিকেলে আসবো। বহত বাতে বাকি হাই। " বলেই রমার দিকে একবার তাকিয়েই ও আলোকেশকে বললো।

" ইন লকোকো ও নয়া সুইট দেনা। আভি। এ সারে মেরে গেস্ট হই। " আদিনাথ রিসেপশনের মেয়েটাকে বললো,অলকেশ কিছু বলার আগেই।

" দাদা,এসবের কি দরকার?" অলকেশ বিব্রত হয়ে বললো।

আর আদিনাথ এগিয়ে ওর দুকাধে হাত রাখলো শক্ত করে। " আপ মেরে গেস্ট হো, অর এতদিনের দোস্ত ভি?! আমার হোটেলে তুমি পায়সা দে কে রহোগে ????"

" থ্যাংক ইউ ,কিন্তু একই সঙ্গে সরি মিস্টার আদিনাথ,আমরা ঠিক কমফোর্ট ফিল করবো না,আপনার হোটেলে এভাবে থাকতে। তাই মনে হয়,আমরা আমাদের বুক করা রুমেই থাকি। "
অলকেশ কিছু বলার আগেই অবিনাশ বললো।

আর আদিনাথ সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে তাকালো ওর দিকে।
" অবিনাশ, রাইট ?। , তুমি চিন্তা করো না, আমার যে জিনিস পছন্দ হয়,সেটা নিজের না হলেও আমি অন্য কাউকে দেইনা,তার ভাগ। কিছু কিছু ঘটনার কথা বাদ দিলে যদিও( আদিনাথ,রমার দিকে আবার দেখলো)। চিন্তা করো না,আমি কোনো ফেবার করছি না,তোমাদের। সচ লো,কুচ অতীত কা ইয়াদ তাজা হলো তোমাদের দেখে,তাই সেই অতীতকে আরো একবার তুম লোককে পাশ বাথ কর ইয়াদ করবো। "
আদিনাথ কিরকম ভাবুক গলাতে বললো যেন।
আর সঙ্গে সঙ্গেই অলকেশ ওর পরবর্তী কথা ধরে নিলো,অবিনাশ আর ওর মধ্যের ঝামেলা বাড়তে না দিয়ে,
" তাহলে সন্ধেবেলা দেখা হচ্ছে। তখন না হয়,তোমার বলা রুমে যাবো,। কিছু মনে করো না, আদিদা। "

" নো, নো,অফকোর্স। "
.......................
" এবার তোমরা দুজন কি আমাকে বলবে,ওই লোকটা মার দিকে বারবার ইশারা করছিল কেন? আমি ত মনেও করতে পারছি না একে? তোমাদের সাথে এর এত পরিচয় হলো কিভাবে??মা তুমিই বা কিছু বললে না কেন? তুমি ত এত চুপচাপ নও ? লোকটা কি নোংরা ভাবে তোমার দিকে তাকিয়েছিল,আমার ইচ্ছে করছিল ........ ছার,.......! লোকটা কে বাবা ? আমাদের সাথে ওদের এত ভালো সম্পর্ক কেন ?"

দুটো ঘর নেওয়া হয়েছে। মিতু পাশের ঘরে ফ্রেশ হতে যেতেই,অবিনাশ বাকি দুজনের উপর জেরা শুরু করেছে। কারণ মিতুর অনেক সময় লাগে বাড়ির সবাই জানে।

"তোকে আমি বলেছিলাম,ঝাড়খণ্ড বাদ দে.... তুই শুনলি না ,তখন..... বেশি বুঝলে যা হয়। " অলকেশ ,অবিনাশের উত্তর না দিয়েই বললো।

" সিরিয়াসলি বাবা,এভাবে লুকিয়ে তোমরা যাচ্ছিলে,আর সব দোষ আমার?মিতু একদিন জানতে পারবেই বাবা, ওর পরিচয়,সেটা আজ না হোক কাল । আর আমার মনে হয়,এটা আমাদের জন্য আরো ভালো হবে,যদি ওর পরিবারের ব্যাপারে আমরা একটু খোজ রাখি। তোমরা ১৮ বছর আগে চলে গেছো,এতদিনে কি হয়েছে তোমরা জানো না, হয়েতো মানুষগুলো পরিবর্তন হয়ছে। আদিনাথকে দেখে ভয় লাগে ঠিকই ,কিন্তু হতেই পারে মিতুর বাবা,এখন অনেক চেঞ্জ হয়েছে। যাক হোক,যা হবার হয়েছে,কিছু করার নেই এখন,। আর মিতু এক্ষুনি বেরোবে,তার আগে বলো,কি ব্যাপার ছিল তোমাদের? না হলে,সিরিয়াস বলছি,লোকটা মার খাবে আমার কাছে,তোমার দিকে আর একবার ওভাবে তাকালে। "অবিনাশ রেগে বলল রমার দিকে তাকিয়ে।

রমা আর অলকেশ একে অন্যের দিকে তাকালো একবার। ওরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না,বলবে কিনা। কিন্তু অনেক্ষন ভাবার পর ছেলের উপর ভরসা করাই ওদের ঠিক মনে হলো।
" ও তোর মাকে,বিয়ের জন্য বলেছিল । " অলকেশ বলেই থেমে গেলো। আর অবিনাশ চমকে উঠলো,এতবড় কথাটা শুনে।
" কি???" অবিনাশ এর বাইরে কোনো কথা বলতে পারলো না।

"হম,তোকে বলেছিলাম,মিতুর মা আর আমি একই সাথে নার্সিং কলেজে ঢুকি। তখন মিতুর মা, মানে রিমিতা,মিতুর বাবার সাথে প্রেম করছিল। তোকে বলেছিলাম,মিতুর বাবার কথা,ও আদিনাথের বড় ভাই ছিলো। তখনই আমার সাথে আদিনাথের পরিচয়,। ও মাঝে মাঝে নিতে আসতো,মিতুর মাকে,তখনই আমার সাথেও পরিচয়। আমি রিমির বন্ধু বলে,মন খুলে মিশেছিলাম,তখন জানতাম না ও সেটাকে ভুল ভেবেছিল। পরে ও আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়,কিন্তু আমি তখন...... তোর বাবার সাথে......." রমা এতদূর বলেই থামলো।

অবিনাশ মাথা চেপে ধরে বসে পরলো খাটে। ভগবান,তাকে আর কি কি সহ্য করাবেন ? সে মানুষ নাকি আদৌ,???

" অবিনাশ....?" রমা আর অলকেশ দুজনেই উৎকন্ঠিত হয়ে এগিয়ে গেলো অবিনাশের এরকম মাথাতে হাত দিয়ে বসে পরতে দেখে।

" আমি ঠিক আছি। " অবিনাশ হাত তুলে ওদের থামিয়ে দিয়ে বললো। " আমাকে একটু মাথা ঠাণ্ডা করতে দাও। আদিনাথ ছোট,আর ওর বড় ভাই,মিতুর আসল বাবা,তাই ত? তুমি আর রিমীতা মাসী বন্ধু। আর এই লোকটা তোমাকে প্রপোস করে,আর তুমি তাকে রিজেক্ট করে বাবাকে বিয়ে করো,আর মাসী,মিতুর বাবাকে রিজেক্ট করে.........এখন ত এদের পুরো পরিবার দেখছি আমাদের উপর রেগে আছে। "অবিনাশ বলতেই বাকিরা কোনো উত্তর দিল না। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা। তারপর , অবিনাশ কথা বললো
" ঠিক আছে, যা হওয়ার হয়ে গেছে,এখন চল আমরা মাথা ঠান্ডা করে,একটা সিদ্ধান্ত নী। প্রথমত মিতুকে উনি চিন্তে পারেননি,আর তাই এখন মিতুর সামনে কিছু বলার দরকারও নেই। কারণ মিতু জানে না ওর পরিবারের কেউ বেঁচে আছে।
দ্বিতীয়ত ,আদিনাথ লোকটাকে বেশি পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই,সরি টু say মা,কিন্তু লোকটা সম্ভবত এখন বিবাহিত,। নিশ্চিত তোমার উপর প্রেমের জন্য বিয়ে না করে বসে নেই? তাই ওকে বেশি পাত্তা না দিয়ে,নরমাল ব্যাবহার করি চলো,।
আর তৃতীয়ত আর সবথেকে ইম্পর্ট্যান্ট কথা....." বলতে বলতে অবিনাশ বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো।

রমা আর অলকেশ কিছুক্ষন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো,কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো " কি ?"

" মজা করতে এসেছি,মজা করবো। মিতুর অতীত কোনোদিন না কোনদিন সামনে আসতো,ভালই হলো,আগে এসে গেলো। আর আমরা যতটা ভয় পাচ্ছিলাম,সেরকম আপাতত কিছুই হলো না। তাই.... এসব ছার,আর রেডী হও। ভাতিন্ধা ফলস যাবো,যা বৃষ্টি হচ্ছে সকাল থেকে,এখন দেখার মত অবস্থা হবে। তোমরা এই ঘরে,রেডী হও,আমি মিতু বেরোলে,ওই বাথরুমে যাচ্ছি। " অবিনাশ বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো,কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই।

......................
অবিনাশ ঘরে ঢুকেই দেখলো,মিতু তখনও বেরোইনি বাথরুম থেকে। ও বাথরুমের দরজার গায়ে হেলান দিল,। মিতু গুনগুন করে গান করছে,সাওয়ার চালিয়ে।
অবিনাশ হাসলো নিজের মনেই,তারপর দরজার উপর নক করলো।
" ওই, তারাতারি কর,কতক্ষন লাগবে তোর,আমিও রেডী হবো । "

" সবকিছুতে এত তাড়াহুড়ো কেন ? কি হয়েছে কি তোর?" মিতু নিজের গানে বাধা পেয়ে ,সাওয়ার বন্ধ করেই চিৎকার করে উঠলো।

" তাহলে,তুই থাক,আমরা বেরিয়ে গেলাম, গানই কর,বাথরুমে,টাটা। " অবিনাশ হাসতে হাসতে বাথরুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে বললো।

" ওই দরজা খোল। " আর মিতু অবিনাশের কথা শুনে,বেরোতে যেতেই,দরজা আটকানো পেয়ে চিৎকার করে উঠলো। " মজার একটা সীমা থাকে,দাদা,দরজা খোল,আমি কিন্তু মাকে বলে দেব। "

অবিনাশ মিতুর কথা বিশেষ পাত্তা দিল না। বরং আয়েস করে চেয়ার টেনে বসলো,বাথরুমের সামনে। এতক্ষণের সিরিয়াস ব্যাপার থেকে,মাথা সরানোর সবথেকে ভালো উপায় অবিনাশ জানে,মিতুকে একটু রাগানো,তারপর ওর রাগ ভাঙিয়ে, মিষ্টি হাসিটা দেখা।

" try কর,যদি মা ওঘর থেকে তোর কথা শুনতে পায়,আমি ততক্ষণ পাবজি খেলছি,। হেডফোন লাগালাম রে,তুই চিৎকার শুরু কর বুঝলি। "

" ওই ওই,দাদা,প্লিজ,এরকম করিস না,ওই .... তুই শুনছিস?" মিতু গলাটা অনেক নামিয়ে বলে। আর অবিনাশ সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা নামিয়ে রাখে পাশে,। ওর মধ্যে এবার যে চিন্তাভাবনা আসতে শুরু করেছে মিতুকে নিয়ে সেটা স্বাভাবিক না আদৌ। বাথরুমের ভিতর থেকে পাওয়া মিতুর গলাটা,ও না চাইলেও ওকে অনেক কিছু ভাবতে বাধ্য করছিল। এখন মিতু কি অবস্থাতে আছে,সেটা কল্পনা করতে গিয়েই .......



অবিনাশ নিজেকে আটকে নিল। না,কন্ট্রোল ওকে নিজেকেই করতে হবে। যেভাবে চারিদিকে সমস্যা বাড়ছে,মিতু ওর সাথে কমফোর্ট ফিল না করতে শুরু করলে,আর দেখতে হবে না। সব মিলেমিশে খিচুড়ি হয়ে যাবে। তখন আর কোনোকিছুই ঠিক করা যাবে না।
অবিনাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে উঠে দরজাটা খুলে দিল। তারপর ও ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হতেই,মিতু হটাৎ ডাকলো।
" দাদা,একটা হেল্প করবি? আমার হাত থেকে, জামাটা পরে গেলো, তোর পাগলামির জন্য,। ব্যাগ থেকে একটা জামা দে না। " অবিনাশ হাত শক্ত করে মুঠো করলো।
ভগবান আর কত পরীক্ষা নেবেন তার ধর্যের কে জানে। আর কত কন্ট্রোল করবে সে? মিতুকে নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা যেভাবে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে,অবিনাশ বুঝতে পারছিল না নিজেকে আর কতক্ষন কন্ট্রোল করবে সে।
" কোনটা দেব? আর কোন চেনে আছে?"

" ডান পাশের চেনের নীল টপটা দে। " মিতু বললো।
অবিনাশ আর কিছু না বলে,বিছানার ওপর পরে থাকা,মিতুর ব্যাগ থেকে জামাটা বের করে এগিয়ে বাথরুমে নক করলো। আর মিতু,দরজা খুলেই,নিজের জলে ভেজা হাতটা বাড়িয়ে দিল, জামাটা নেওয়ার জন্য।
অবিনাশ,ঢোক গিলল। ,মিতুর নগ্ন হাতের থেকে জলের ফোঁটাগুলো গড়িয়ে পড়ছিল,। আর অবিনাশ বুঝতে পারছিল,নেশা কাকে বলে। ও সে মুহূর্তে কি অমানসিক ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে নিজেকে,আটকে রেখেছিল,সেটা কেউ জানলো না। অবিনাশ নিজের মাথার নিউরোনের তরঙ্গকে চেষ্টা করেও আটকাতে পারছিলো,মিতুকে,নিয়ে ওর চিন্তা ভাবনা করা থেকে আটকাতে। কারণ ওর মাথাতে তৈরি ছবিটা শুধু মিতুর হাতের উপর সীমাবদ্ধ ছিলো না.......
" দাদা...দিবি ত!" মিতু অপেক্ষা করে করে, বাধ্য হয়ে বললো।
" হুম। " অবিনাশ মিতুর হাতের উপর জামা দিতেই,ওর হাত একটু বেশি স্পর্শ করে গেলো,মিতুর মসলিন চামড়ার উপর,। ভিজে ভিজে,নরম,চামড়ার উপর ওর হাতের স্পর্শ যেন ওকে নতুন করে জাগিয়ে দিচ্ছিল,যতক্ষণ না

" এক মিনিট দাদা,তোরা,আমাকে ফেলে যাবি না কিন্তু। " মিতু জামা পরতে পড়তেই বললো ।
অবিনাশ কোনো উত্তর দিল না। শুধু এগিয়ে গিয়ে দরজার উপর পিঠ দিয়ে দাড়ালো
" মিতু। "
অবিনাশ ডাকলো।
" হুঁ। " মিতু জামা পড়তে পরতে অন্যমনস্ক ভাবে বললো।
" একটা প্রশ্ন করবো উত্তর দিবি?"

" হম,বল। " মিতু দরজা খুলতে খুলতে বললো।
" যদি,তুই কোনোদিন না জানতে পারতী আমি তোর দাদা,আমাদের কোনো পরিচয় না থাকতো?! তাহলে কি অর্কর পরিবর্তে আমি থাকতে পারতাম ?"

মিতু একটু থমকে গেলো। দরজা না খুলে ও চুপ করে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন।
" তুই অর্কর থেকে অনেক বেশি কিছু আমার কাছে। কারণ,সত্যি বলছি,আমি বাবা মাকে সেরকম পাইনি কাছে। কিন্তু তুই থাকার জন্য আমার কোনোদিন মনেও পড়েনি ওদেরকে এত কম সময়ে পেয়ে। "

অবিনাশ কোনো উত্তর দিল না।
" আমি তোর উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিচ্ছিনা মিতু,কিন্তু যদি,আমি আর তুই এই অবস্থাতে না পড়তাম, মানে এই সিরিয়ালের মত গল্পে ( মিতু হেসে উঠলো অবিনাশের কথা শুনে বাথরুমের মধ্যে থেকেই) তাহলে কি ..... ? " অবিনাশ শেষ করলো না

" না,তাহলেও খুব আলাদা কিছু হতো না,। তুই ভীষন হ্যান্ডসাম দা,শিক্ষিত,বুদ্ধিমান,একটা মানুষ। যাকে মাঝে মাঝে মনে হয়,বাস্তবের কোনো চরিত্র না,যেন,সিনেমার মতো কেউ ( অবিনাশ হেসে ফেললো এবার) কিন্তু তার বাইরেও তুই আছিস। আর সেটাই আসল তুই। তুই সেই মানুষ,যে আমাকে শাসন করে,আবার আমার ভালোর জন্য নিজের পড়া বাদে নোট বানায় সারারাত জেগে। আমাকে ছেলেদের নিয়ে সতর্ক করে,আবার কেউ আমাদের বাড়ির কারো দিকে আঙুল তুললে তার জবাব দিতে পারে,। হা, মাঝে মাঝে প্রচণ্ড মাথা গরম করিস,কিন্তু তোর থেকে বেশি হাসাতে ,কাউকে দেখিনি...( অবিনাশ চোখে জল নিয়েও হেসে যাচ্ছিল,মিতুর কথা শুনে। কিন্তু কোনো কথা বলে ওর স্মৃতিচারণ শেষ করতে দিল না, তাই চুপ করেই রইলো ও)... আমি খুব খুশি,আমি আমার জীবনের ১৮ টা বছর তোর মত কাউকে জীবনে পেয়েছি,। আমি ভীষন লাকি,তোর সঙ্গে প্রতিটা মুহূর্ত কাটাতে পেরে,বিশ্বাস কর। তাই আমি ভাবতেও চাইনা,যদি আমরা এভাবে না থেকে অন্যভাবে দেখা করতাম,কারণ তাতে আমি তোকে চিনতাম না। আর তাতে আমি ,আমি হতাম না। কারণ আজকে আমি যেটুকু,যা হচ্ছি,তার পুরোটাই তোর জন্য । " মিতু দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।

অবিনাশ চোখের জল মুছতে না পেরে বসে পড়েছিল বাথরুমের সামনেই। আর মিতু বেরিয়েই জড়িয়ে ধরলো অবিনাশকে
" its ওকে, কাদিস না । আমি জানি না তোর মাথাতে কি চলছে,কিন্তু তোকে আমি এত কোনোদিন ভাঙতে দেখিনি,কি হয়েছে দাদা,?" আর অবিনাশ প্রথমবার,মিতুকে জড়িয়ে কেদে ফেললো। ও কখনো কারো সামনে কাদেনি,আজ অবধি । কিন্তু আজকে হটাৎ মিতুর কথাগুলো ওর বাধ যেন ভেঙে দিল।

মিতু কিছুই বুঝতে না পেরে,শুধু অবিনাশকে জড়িয়ে ধরে মাথাতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিল। অবিনাশকে এ অবস্থাতে মিতু আজ অবধি দেখেনি। অবিনাশ ভীষন স্ট্রং একটা ছেলে,ও জানে। বাড়ির সবাই,সব বিপদে দাদার কাছে পরামর্শ চায়,। সেখানে দাদা এভাবে প্রথমবার ভেঙে পরেছে দেখেই মিতু বুঝলো ব্যাপার গুরুতর। কিন্তু ব্যাপারটা কি সেটা ও আন্দাজ করতে পারলো না। কারণ যে তাকে বলতে পারতো কি হয়েছে,সে তখন,তাকে জড়িয়ে সান্ত্বনা খুঁজে নিচ্ছিল,নিজের পরবর্তী স্টেপগুলো ঠিকঠাক নেবার।

আর অবিনাশ মিতুকে জড়িয়ে ভেসে যাচ্ছিল এক অবর্ণনীয় খুশিতে। মিতুর গায়ের,লিলি বডি ওয়াসের গন্ধের সাথে,মিশে গেছিলো,ওর চুলের গন্ধটা। অবিনাশের নেশা লাগছিল আবার। মিতুর ঠান্ডা,ভিজে ভিজে শরীর,আর গায়ের ভীষন নিজস্ব গন্ধটা যেন,অবিনাশকে আচ্ছন্ন করে তুলছিল। ও ভেসে যাচ্ছিল এক অন্যরকম অনুভূতির সাগরে,যতক্ষণ না
" দাদা, আমাকে খুলে বলবি কি ,কি হয়েছে তোর? কি চিন্তা করিস সারাক্ষন?"
মিতুর চিন্তিত গলাটা ওকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো আবার।
ক্রমশঃ
( জ্বরের জন্য দিতে দেরি হলো অনেক। ক্ষমাপ্রার্থী)
 
শুধুই আমার ৩০

" আমার ভালো লাগছে না রে আর,পাগল পাগল লাগছে,নিজেকে। এত এত সমস্যা,দিনদিন এসেই যাচ্ছে........."

অবিনাশ মিতুর ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়েছিল। অবিনাশ যেন অজান্তেই বড় বেশি জড়িয়ে ধরেছিল মিতুকে। মিতুর শরীর থেকে উষ্ণতার শেষ পরশটুকু শুষে নিতে চাইছিল ও। একটু শক্তি,একটু সহমর্মিতার বড় বেশিরকম চাহিদা অনুভব করছিল অবিনাশ আজকে হটাৎ করে। কাউকে নিজের সব কথা খুলে বলার দরকার ছিল ওর।



মিতুর অবাক লাগছিল। কিন্তু খারাপ লাগছিল না। দাদার হাতের মধ্যের যে,প্রচণ্ড নিরাপত্তাটুকু ও খুঁজে পাচ্ছিল,সেটা আজ অনেকদিন পর ও প্রথম বুঝতে পারছিল। এইরকম একটা শক্ত কাধ সবাই চায়,নিজেকে নির্ভয়ে তার উপর সপে দিতে। মিতু ভীষন দোটানার মধ্যে ছিলো কাল থেকে। পরিবার ,বন্ধু বান্ধব,বাবা মা বোন সর্বোপরি দাদা ওর কেউ না,ভাবতেই ওর কিরকম ধোয়াসা লাগছিলো,এতদিনের তৈরি সমস্ত স্মৃতির উপর। ও নিজেকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিল ও খুব লাকি,ও এত ভালো ফ্যামিলি পেয়েচে,যারা ওকে কোনোদিন বুঝতেই দেইনি ,তারা ওর কেউ না। অলকেসের মত বাবা লোকে পায় না,না পায় রমার মত মাকে। আর অবিনাশ ত আলাদাই।

মিতুর কালকে থেকে ভালো লাগছিলো, বিশেষ করে অবিনাশের কথাটা শোনার পর থেকে। ও জানে না ,কেন?! কিন্তু সব মেয়েদের, ক্রাশ একটা ছেলে, যখন তার জন্য পাগল,এটা তো যে কোনো মেয়েকেই খুশি করার জন্য যথেষ্ট। নিজেকে রাজকুমারী লাগতে শুরু করবে মেয়েটির, যখন সে দেখবে তার স্বপ্নের পুরুষ এসে দাড়িয়েছে সামনে । কিন্তু........

মিতু বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখলো,সেই ছেলেটা,সেই রাজকুমার আর কেউ না,সেটা ওর দাদা ...... অন্তত এতদিন যাকে দাদা বলে এসেছে ও।

মিতুর কাল থেকে তাই পাগল পাগল লাগছে। যতটা না নিজের অজানা ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে,তার থেকেও বেশি অবিনাশের হটাৎ নিজেকে এতবেশি এক্সপোজ করে দেবার জন্য ,ওর সামনে। মিতু বুঝে উঠতে পারছে না,ও রিএক্ট করবে কি করে?! কালকের সন্ধ্যার একের পর এক ঘটনা ওকে পাগল করে দিচ্ছিল । তারপর কালকে নিউটাউনে গাড়ির মধ্যে অবিনাশের , ওর কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে যাওয়া ,আজকে ড্রাইভিং শেখানোর সময়ে বারবার ওর হাত ইচ্ছে করে স্পর্শ করা.... বারে বারে,অর্কর সাথে নিজের তুলনা করা...... মিতু বুঝতে পারছিল সবই। কিন্তু সেভাবে বারন করতে পারছিলো কই?

মিতু কালকে রাত্রে অনেক্ষন কেদেছিলো। যতটা না নিজের অতীতকে মনে করে,তার থেকেও বেশি সন্ধেবেলা অবিনাশের বলা গল্পগুলো শুনে,। কতটা কষ্ট,কতটা অনুভূতি যে ওই কথাগুলোর মধ্যে লুকিয়ে ছিল,সেটা মিতু বুঝতে পারছিল,। রাত্রে বারবার ওর চোখের সামনে ভেসে এসেছে অবিনাশের দুঃখিত মুখটা। মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে,অবিনাশকে না দেখলে মিতু বিশ্বাসও করতো না। আর তাই

" কি হয়েছে তোর ? তুই নিজেই আজ আসতে আসতে বলেছিলি না আমি তোর কথা শুনিনা,....( মিতু হটাৎ করেই নিজের দুহাতের তালু দিয়ে নিজের কাধের উপর থেকে,অবিনাশের মুখটা ধরে,নিজের সামনে নিয়ে এলো,অবিনাশ বিস্ময়ে কথা বন্ধ করে দিল,মিতুর কাজ দেখে)তুই বল এবার,আমি শুনতে চাই তোর সব কথা। "
মিতু দৃঢ় গলাতে বললো অবিনাশের মুখটা নিজের দুটি হাতের তালুর মধ্যে ধরার চেষ্টা করতে করতে। আর অবিনাশ কথা হারিয়ে ফেললো বিস্ময়ে।
................
" না রে,তোর কথা ,না শুনলে ভুল করতাম,কি সবুজ চারিদিক। "
অলকেশ ড্রাইভ করছিল,আর চারিদিকে তাকাচ্ছিলো। ভাটিন্ধা ফলস ধানবাদ শহর থেকে খুব বেশি দূর না।
কালকে সারারাত নীলেষ আর অবিনাশ মিলে প্ল্যান করতে গিয়ে ঘুমাতে পারেনি বেশি। তার উপর সকাল থেকে এতটা ড্রাইভ করার জন্য, এখন ও চোখ খুলে রাখতে পারছিল না, প্রায়। তাই রমা,পিয়াকে নিয়ে সামনে বসতে,ও আর মিতু পিছনে বসেছিল।

অবিনাশ গাড়িতে উঠেই মিতুর গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমানোর প্ল্যান করেছিলো। কিন্তু মিতু ,এত বড় সুযোগ ছাড়তে পারেনি,তাই ও অবিনাশের , কান টেনে,কাতুকুতু দিয়ে,অবিনাশের বড় সাধের ঘুমটা ভাঙিয়ে দিচ্ছিল বারবার। তাই আপাতত অবিনাশ মিতুর গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমানোর প্ল্যান ছেরে,পাশেই ঘুমাচ্ছিল। যদিও ও মিতুকে বলে রেখেছে " মনে রাখিস,শুরুটা তুই করলি,এরপর আমি কিছু করলে আমাকে দোষ দিবি না কিন্তু..... ".
" যা যা,আগে ঘুমা ত কুম্ভকর্ণ,!" বলেই মিতু জিভ ভেঙ্গিয়ে দিয়েছিল। অবিনাশ তখনকার মত হেসে শুয়ে গেলেও,কি কি স্বপ্ন যে দেখছিল মিতুকে নিয়ে,.....সেটা না বলাই ভালো।

..................
" আরে কোথা থেকে শুরু করি বল ত ? এত সমস্যা?!"
অবিনাশ মিতুর পাশে বসে বলেছিল বেরোনোর আগে। তখনও মিতুর চুলে শ্যাম্পুর ভিজে ভিজে গন্ধটা মিশে যাচ্ছিল মিতুর গায়ের গন্ধের সঙ্গে,। অবিনাশ নাক টানছিল,একটু বেশিসময় ধরে,সেই গন্ধটা পুরোপুরি অনুভব করে নিতে।

" শুরু ত কর আগে। " মিতু অধর্য হয়ে বললো

" হম। মিহিরাকে মনে আছে তোর ? আমার জুনিওর ?"
অবিনাশ খাটের উপর উঠে বসলো,মিতুর হাত ধরে টেনে নিয়ে। এতক্ষণ কার্পেটের উপরই বসেছিল দুজনে।
" হম,সেদিন, যার রুমে ছিলাম তাই ত ?" মিতু একটু চিন্তা করে বললো

" হম,ও সম্ভবত (অবিনাশ একটু দম নিলো,তারপর বললো) আমাদের ব্যাপারটা জেনে গেছে ! "

"আমাদের ব্যাপার মানে ? আমি তোর বোন না ?" মিতু অবাক হয়ে বললো।

অবিনাশের মুখে একটা কষ্টের হাসি ফুটে উঠলো।
" সেটা হলে আরো খারাপ ব্যাপার হতো,কিন্তু .....
ও জানে,আমি তোকে পছন্দ করি, আর ও এটা জানে তুই আমার সত্যিকারের বোন। " অবিনাশ বলেই মাথা নিচু করলো। কথাটা যে কতটা নোংরা ও নিজে জানে। তাই মিতুর মুখোমুখি হবার ইচ্ছে ওর ছিলো না।

" সিরিয়াসলি !!! ও আমার কথা জানে? তুই কি করেছিলি বলবি কি দাদা,যে ও আমার কথা জেনে গেলো। " মিতু দুহাত বুকের কাছে , জর করে ওর দিকে প্রশ্নের ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলেছিল।



অবিনাশ,আর একটু হলেই হেসে ফেলতো,মিতুর অবস্থা দেখে,। কিন্তু পরিস্থিতির গাম্ভীর্য পর্যবেক্ষণ করে ও সামনে নিলো নিজেকে।

" সেরকম কিছু না......,আসলে, দিঘাতে হোটেলে..... আমি ওকে দেখে,তুই ভেবে নিয়ে ছিলাম....... সরি সরি মিতু দেখ বিশ্বাস কর ,কিচ্ছু উল্টোপাল্টা না,( অবিনাশ বলতে বলতেই দুকান ধরলো,ও কতটা সরি বোঝানোর জন্য) ...আমি অনেকগুলো বিয়ার খাচ্ছিলাম সেদিন,ভাবিনি এতটা চরে যাবে নেশা। আর ও আমাকে একটু পছন্দ করে সেটা আমি জানতাম। কিন্তু এখন ত দেখছি ব্যাপারটা সীমা ছাড়িয়ে গেছে,......" অবিনাশ বলতে বলতে নিজের ঘোরে চলে যাচ্ছিলো।
মিতু এতক্ষণ কোনো কথা বলেনি,এবার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।

" সুন্দর হওয়া কি ভালো বল দাদা! আমার বন্ধুগুলো gf gf করে মরে,আর তোকে এত জন বলে ,যে তুই বিরক্ত হয়ে যাস। তোর ভালো লাগে না,দাদা,এত সুন্দর সুন্দর মেয়েরা তোকে পাওয়ার জন্য এতকিছু করে ?"

" তুই কি জেলাস ফিল করছিস মিতু ?" অবিনাশ মজার লোভটা সামলাতে পারলো না।

" দাদা। " মিতু শাসনের গলাতে বলে উঠলো।

" ওকে ওকে সরি। ...( অবিনাশ একটু থেমে গেলো তারপর বললো আবার) কি জানিস তো, বাইরে থেকে যতটা সুন্দর লাগে,সবকিছু তত সুন্দর না রে,। মিথ্যে বলবো না,একটা সময় ভালো লাগতো। আর সত্যি বলতে( অবিনাশ মিতুর দিকে আড়চোখে দেখলো) আমি তোকে ভুলতে,কম মেয়ের সাথে এগোনোর চেষ্টা করিনি। কিন্তু কি বলতো,..... খুশি লাগে না,কিছু একটা, চাহিদা থেকেই যেত। তোকে আগেও বলেছি মিতু। তারপর আসতে আস্তে যখন বুঝতে পারলাম,তোকে ভোলা আমরা পক্ষে সম্ভব না,তখন কিরকম যেন নোংরা লাগতো। আমি কারো সাথে একটু বেশি এগোতে গেলে,কোথাও ..... কিভাবে বলবো তোকে,...... ধরে নে ভালো লাগতো না। আর তখন থেকেই,আমি মেয়েদের একটু অভয়েড করি। "

ওরা দুজনেই অনেক্ষন চুপ করেছিলো। তারপর মিতু হটাৎ কথা বললো,
" আমিই কেন? আমার থেকে অনেক ভালো মেয়ে আছে, যারা তোর জন্য পাগল। কিন্তু তারপরেও তুই এত বছর ধরে.... কি করে .....পারলি তুই ?( মিতু থেমে থেমে কেটে কেটে বললো)

অবিনাশ হাসলো। তারপর ওর দিকে ঘুরে,বললো
" হ্যা ,অনেক মেয়ে আছে যারা তোর থেকে ভালো,কিন্তু কথাটা কি জানিস( অবিনাশ নিজের ডান হাত দিয়ে মিতুর মুখটা তুলে ধরলো নিজের দিকে,তারপর মিতুর নিস্পলক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল) কিন্তু এরা কেউ তুই না। এরা কেউ আমাকে সাহস দিতে পারেনি,যেটা তুই দিয়েছিস। জানিস,মিতু,যেদিন তোকে বাড়িতে এনেছিল,সেদিন ক্লাসের কিছু ছেলে আমাকে প্রচণ্ড মেরে ছিলো,মাটিতে ফেলে,কিসের জন্য জানিস" আমি বাঙালি বলে। " ওরা বাংলা নিয়ে মজা করেই যাচ্ছিল,আমি বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ করতে যেতেই ওরা মাটিতে ফেলে আমার পেটে লাথির পর লাথি মেরেছিল। ,আমার খুব সৌভাগ্য ছিলো,আমি মরে যাইনি। আমি সেদিন বাড়িতে ফিরে একা একা কেদেছিলাম,। জানিস ওরা এতটা অপমান করেছিলো,আমি ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করে নেব। বাবার ড্রয়ার থেকে অনেকগুলো স্লিপিং পিল নিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলাম বালিশের নিচে। শুধু ভেবেছিলাম,বাবা মা ফিরলে,একবার ওদের দেখে মরবো। কিন্তু জানিস..... বাবা মা সেদিন একা ফেরেনি,তোকে নিয়ে ফিরেছিল । আর......( অবিনাশ মিতুর দিকে ঘুরে মিতুকে স্পর্শ করলো আবার) আমি সেদিন তোকে দেখার পর,বাথরুমের কমোডে ফ্ল্যাশ করেছিলাম ওষুধগুলো) এর পরেও বলবি..... কারো সাথে তোর তুলনা ? সেদিন তুই না থাকলে আমি একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতাম,সেদিন বাচ্চাগুলো তোর উপর অবিচার না করলে,আমি নিজের এই প্রতিবাদী অংশকে চিনতেই পারতাম না,তারপরেও তুই বলবি ..... তোর মত অনেকে আছে মিতু?"

মিতু বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলো। কি ভীষণ রকম ভালোবাসা যে অবিনাশের প্রতিটা কথার মধ্যে লুকিয়ে ছিল ও বুঝতে পারছিল।

" ঠিক আছে,ছার। এখন এটা বল,তাহলে তোর সমস্যা আপাতত মিহীরাদি তাই ত ?"

অবিনাশ হাসলো। তারপর বললো
" না ,সমস্যা হচ্ছে,মিতু....?"

মিতু অবাক হলো অবিনাশ কি বলছে ভেবে।

" বুঝলি না.... এই দেখ,যদি তুই সমস্যা না হতিস,এতক্ষণ বাথরুমে ঢুকে গান করতিস না। আর আমার রেডী হতে দেরি হতো না ,আর মা আমাদের দুজনের উপর চিল্লাতে পারতো না। "

মিতু আবার অবাক হয়ে বললো
" কিন্তু মা ত কিছুই বলেনি,তুই দেরি করছিস আর আমার নামে দোষ দিচ্ছিস!" বলেই মিতু অবিনাশকে মারতে গেলো।

আর ঠিক তখনই
" ওই বাবু,মিতু,তোদের হলো কি, আমরা রেডি কিন্তু ?" বলতে বলতেই রমা ঢুকলো।
আর অবিনাশ সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাধটা একবার ঝাঁকালো মিতুর দিকে তাকিয়ে। বোঝানোর জন্য ওর একটু আগেই বলা কথাটা ঠিক।

" তোরা দুটো আড্ডা মারছিস ? সব কিছুতে লেট না করলে হয়না বল। বেড়াতে এসেছি,কিন্তু ঘুরতে না বেরিয়ে ঘরে বসে আছি,। আর বাবু তুই তো ফ্রেশ ও হোসনি। ......!" রমা বকেই যাচ্ছিল,আর ওরা দুজন মাথা নিচু করে নিয়েছিল। শুধু অবিনাশ একবার মিতুর দিকে চোখ মারল,মিতু হেরে গেছে বোঝানোর জন্য।
" ১০ মিনিটের মধ্যে নিচে নাম দুটি। " এতক্ষণের বকা শেষ করে রমা দরজাটা প্রচণ্ড জোরে বন্ধ করে বেরিয়ে গেলো।

" বলেছিলাম। " অবিনাশ বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বলল।

" তুই ত সবই ঠিক বলিস,ডাক্তারি ছেরে, এই কর না। ভবিষত বলা লোকের,। " মিতু চুলে চিরুনি দিতে দিতে বললো।

" দাড়া তোর উপর try করি। ফরচুন টেলিং,কি বলিস? হাতটা দে মিতু.... হম আমি দেখতে পাচ্ছি,তোর যে বর হবে,খুব ভালো দেখতে হবে,হম..... আমি দেখতে পাচ্ছি সে সার্জেন হবে.... এবং সে তোর আশপাশেই আছে,একটু খুঁজে নিতে হবে তোকে। " অবিনাশ খুব গম্ভীর গলাতেই বললো মিতুর হাতটা ওর হাতের মধ্যে নিয়ে।

" মার এখন খাবি,নাকি বাবা মার সামনে খাবি দাদা ? মজা হচ্ছে ? খুব মজা বল। চুপচাপ বাথরুমে ঢোক। না হলে,মা বকলে কিন্তু আমি জানি না। " মিতু অনেক বড় দের মত বলে উঠলো।

" যাচ্ছি যাচ্ছি,অফ সব কিছুতে এত সিরিয়াস হস কেন তুই মিতু। মজা কর না একটু। " অবিনাশ বাথরুমের দিকে দিকে যেতে যেতেই বললো।

মিতু কিছু না বলে হাসলো।
" যদিও কথাটা মজা ছিলো না। " বলেই সঙ্গে সঙ্গে অবিনাশ বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো।

মিতু নিজের মনেই হেসে ফেললো অবিনাশের পাগলামি গুলো মনে করে।
.............
" না রে,তোর কথা ,না শুনলে ভুল করতাম,কি সবুজ চারিদিক। " অলকেশ গাড়ি থেকে নেমেই বললো। ওরা তখন এসে দাড়িয়েছিল সবুজের সাম্রাজ্যে। একটা ছোট্ট মাঠের মত অংশ পার্কিং করার জন্য রাখা। তার পাশেই একটা ছোট্ট সিমেন্টের ঘর,জানলা বলে কিছুই নেই তার । মাথার দিক বাদে চারিদিক খোলা। আর তার সামলেই একটা ঢালের মত অংশ নেমে গিয়ে মিশেছে ভাতিন্ডা ফল স এ।
অবিনাশ এতক্ষণে ঘুম থেকে উঠলো ,। তারপর ঘুমের আমেজ কাটাতে বাবার কথা বিশেষ পাত্তা না দিয়েই,ওর পাশে দাড়ানো মিতুর গাল ধরে টানলো। মিতু এতক্ষণ বিভোর হয়ে সামনের ঝর্না দেখছিল,। অবিনাশ হটাৎ করেই ওর গাল টানতে,ওর বেশ জোরে লাগলো।
" মা দেখ,দাদা মারছে। " মিতু অবিনাশ কে মারতে গিয়েই দেখলো ,অবিনাশ নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে।

" থাম দুটো,এটা বাড়ি না। কি করছিস কি অবিনাশ। লোকজন আছে চারপাশে। " রমা বকে উঠতে গেলো।

যদিও ততক্ষণে শোনার মত অবস্থা নেই,দুজনের কারোর। অবিনাশ মিতুকে রাগাতে রাগাতে ,নিরাপদ দূরত্বে নামতে শুরু করেছে,ঝর্নার দিকে। আর মিতু অবিনাশকে মারতে না পেরে রেগে ওর পিছনে।

" চেষ্টা করেই যা,ওইটুকু হাত পা নিয়ে,এমনিও ধরতে পারবি না আমাকে। " অবিনাশ মিতুকে রাগিয়েই যাচ্ছিল।

ঘরটার পাশ থেকে,একটা ঢালের মত অংশ নেমে গেছে ঝর্নার দিকে। ঝাড়খণ্ড সরকার,সেটাকে,টুরিস্ট স্পট হিসেবে তৈরি করার জন্য,বেশ কিছু পাথরের পর পাথর, বসিয়ে দিয়েছে সেই ঢালে। আর আপাতত অবিনাশ আর মিতু,সেটা দিয়ে দৌড়ে নামছিল। আকাশ কিরকম সাদাটে কাল। মাঝে মাঝে বয়ে চলা,ঠান্ডা হাওয়াটা পূর্বাভাস দিচ্ছিল বৃষ্টিপাতের।
ওরা দুজন নামতে নামতে হটাৎ থমকে গেলো সামনের দৃশ্য দেখে।
একটা ছোট জলহীন ঝর্না ,বৃষ্টির জলে যে কি বিশাল আকার নিতে পারে,সেটা সামনের দিকে না দেখলে বোঝা যেত না। ওদের ডান দিকের পাথরের রুক্ষ গা থেকে নামা জলের প্রচণ্ড স্রোত,ওদের সামনের অংশে অনেকটা চওড়া হয়ে,ওদের বা পাশের বিশাল ঢাল থেকে লাফিয়ে পড়ছে,প্রচণ্ড জলস্রোত নিয়ে।

" wow,গোগলেও এত ভালো ছবি দেখিনি। " অবিনাশ মুগ্ধ হয়ে মোবাইল বের করতে করতে বলল।

" তোরা,দৌরচ্ছিলি কেন দুটো ওরকম ভাবে । পাথরগুলো কি পিছল,এক্ষুনি হুমড়ি খেলে কি হতো ?" রমা আর অলকেশ পিয়াকে নিয়ে নামতে নামতেই বলছিল। কিন্তু তারপরই ওদের মুখের কথা মুখের আটকে গেলো,সামনের সৌন্দর্য দেখে।

" বলেছিলাম,তোমাদের ?! কি দারুন না মা ?" অবিনাশ ফোনে রেকর্ডিং করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলো জলের দিকে।

..........
" আমরা ওপরে যাচ্ছি,গাড়িতে বসছি। তোরা উঠে আই। " বেশ কিছুক্ষন চারিদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করে, রমা আর অলকেশ পিয়াকে কোলে নিয়ে উঠে যাওয়াই ঠিক করলো।
চারপাশে লোকজন বিশেষ নেই। কারণ এটা ঠিক টুরিস্ট স্পট না,তারপর নিজের গাড়ি না থাকলে এখানে আসা মুস্কিল। কারণ এখানে আসার কোনো ট্রান্সপোর্ট অবিনাশের অন্তত চোখে পড়েনি, পুরো রাস্তাতে। তারপরে,আকাশের কালো অবস্থা ক্রমশ ঘনীভূত হওয়ার জন্য,লোকজন ফিরে যাচ্ছিল বেশিরভাগ। অবিনাশ আর মিতুর যদিও খেয়াল ছিলো না এসব দিকে। ওরা তখন নিজেদের ঝগড়া ভুলে ছবি তুলতে ব্যাস্ত। তাই জন্যই ,গায়ের উপর বৃষ্টির ফোঁটা ওরা প্রথমে খেয়াল করলো না। কিন্তু সেই ফোঁটা বড় হতে সময় লাগলো না। যতক্ষণে ওরা বুঝলো,তখন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো হটাৎ। চারপাশের পাথরগুলোর সাতলা পড়া পিছল গায়ের দিকে তাকিয়ে ওদের সাহস হলো না,এই বৃষ্টিতে ওই পাথর দিয়ে উঠতে গিয়ে পিছল খেয়ে ঝর্নার জলে পরে ভেসে যায় দুজনে। তাই অবিনাশ মিতুর হাত ধরে টানলো পাশের ঝকড়া গাছের দিকে।

.........
বৃষ্টি টিপটিপ থেকে মুসলধারে হতে এক মিনিটের ও কম সময় নিলো। ঝর্নার জল, বাড়তে বাড়তে ওদের পায়ের কাছ অবধি চলে আসছিল প্রায়। অবিনাশ ,একটু আগেই বাবা মাকে ফোন করে বলেছে ওরা দুজন ঠিক আছে। বৃষ্টি কমলেই গাড়ির দিকে যাবে। অলকেশ আর রমা যেন শুধু শুধু চিন্তা না করে গাড়ির মধ্যেই বসে থাকে।
চারিদিক ঝাপসা হতে শুরু করেছে প্রচণ্ড বৃষ্টির জন্য। গাছটা বড় হওয়া সত্বেও,তার পাতা থেকে চুয়ে পরা জলের জন্য মিতু আর অবিনাশ কেউই শুকনো ছিল না।
ওদের পিছনের দিকে বড় বড় পাথরের বল্ডারে র ফাঁক থেকে উঠেছে ছোট বড় গাছের সারি। সামনের ভাতিন্ধ ফলস এখন আর ছোট কোনো পাহাড়ি ঝর্না না,বরং বিপুল গর্জনে গর্জে ,ছুটে চলা কোনো বিশাল নদী যেন।
অবিনাশ চারপাশের দিকে চিন্তিত মুখে তাকাচ্ছিলো। নদীর জল যেভাবে বাড়ছে,যে কোনো সময়ে ওদের কাছে চলে আসবে। অথচ ,ওপরে উঠতে গেলেও পিছলে পরার ভয় থাকবে। আর তখনই অবিনাশ দেখলো মিতুর দিকে। মিতুর শরীর ভিজে গেছে পুরো। নিল রঙের টপটা ভিজে স্পষ্ট হয়েছে ওর অন্তবাস। ও অবিনাশের দিকে পিছন করে দাড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়েছিল। অবিনাশ দেখছিল কিভাবে মিতুর ভিজে জামা কাপড়ের মধ্যে থেকে কাপুনি স্পষ্ট হচ্ছে দেহের।

এতটা উত্তেজনা অবিনাশের শরীরকে জাগিয়ে তুলছিল । চারদিকের নির্জন ঝিমধরা পরিবেশ,ক্রমশ কমতে থাকা উষ্ণতা আবিনাসকে পাগল করে তুলছিল মিতুর উষ্ণতার পুরোটা শুষে নিতে। অবিনাশ চোখ সরাতে পারছিল না মিতুর ভিজে যাওয়া পিঠের দিক থেকে। ওর ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছিল,শরীর জ্বলে যাচ্ছিল কিছু একটা পাওয়ার ইচ্ছেতে। অবিনাশ নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না,তাড়াহুড়োতে বুকের কাছে জামার কয়েকটা বোতাম খুলে এগিয়ে গেলো।

মিতু সামনের দিকে তাকিয়েই ছিলো। কি অপূর্ব লাগছে চারিদিক। একটু আগের দৃশ্য যেন আবার পরিবর্তন হয়েছে,হটাৎ করেই। ও ঠান্ডা লাগছিল,ভিজে জামাটার জন্য। হটাৎ.....
" মিতু। " পিছন থেকে আসা অবিনাশের গলাটা যেন কিরকম ঠান্ডা,পিছলে পিছলে যাচ্ছিল মিতুর কানে।
মিতু পিছনে ঘুরেই চমকে উঠলো। অবিনাশের ভিজে সাদা জামাটার বুকের অনেকগুলো বোতাম খোলা। তার তার জন্যই তার সুগঠিত পেশীর উপরে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো পরে বড়ই স্পষ্ট হচ্ছিল সেগুলো। অবিনাশের ভিজে চুলগুলো উল্টো করে সরানো হোয়েছে মাথার পিছনের দিকে। অবিনাশ কে ভীষণ অন্যরকম লাগছিল যেন। কিন্তু সেটার থেকেও যেটা মিতুকে বেশি আশ্চর্য করলো ,সেটা অবিনাশের চোখের দৃষ্টি। আর অনেক অপরিনত হয়েও মিতু ,যেন সেই চোখের দৃষ্টি বুঝতে পারলো। আর সঙ্গে সঙ্গে ও ঢোক গিলল।
অবিনাশ তখন এগিয়ে এসে দাড়িয়েছে ওর সামনে।
ক্রমশঃ
( আজকে বাধ্য হয়ে নিচের মন্তব্য গুলো লিখতে হচ্ছে আমাকে। বেশ কিছুদিন,শুধুই আমার নিয়ে একটু বেশি এসএমএস আসছে আমার কাছে। যদিও সেটা খুবই ভালো লাগার কথা আমার ,কিন্তু কিছু মানুষের জন্য সেটা লাগছে না। বারবার কিছু মানুষ প্রশ্ন করার নাম করে রীতিমত বাজে ভাবে বলছেন চ্যাট বক্সে। তাদের জন্য

এক : এটা কি অনেক বড় গল্প ?! আর কতদিন টানবেন ? এবার শেষ করুন ( আরো অভদ্র ভাবে বলা ছিলো ,আমি ভদ্রভাবে লিখলাম)
উত্তর : হা,এটা বড় গল্প।
যতদিন মনে হবে ততদিন টানবো।
আমার যখন মনে হবে শেষ করার মত,করবো,আপনি বললেও আবার না বললেও। লেখাটা সম্ভবত লেখকের স্বাধীনতা।

দুই: একটু রোমান্স ছাড়া পানসে লাগছে। কি লিখে যাচ্ছেন,একটু প্রেম আনুন। ?( এবং আরও অনেক ভালো কিছু কথা,যেগুলো উল্লেখ করতে পারবো না)

উত্তর : একদিন আগের দাদা বোন পরের দিন রোমান্স করতে পারে,বলে আমার জানা নেই। গল্পটা সেনসেটিভ । তাই এরকম পাগলের মত রোমান্স আমি আনতে পারবো না। আমার নোংরা লাগছে ব্যাপারটা ভাবলেই।
আর দ্বিতীয়ত রোমান্স বলতে আপনি বোঝেন কি ? চুমু,আর শারীরিক? প্রেম মানে শরীরের বাইরেও অনেক কিছু। তার পাশে দাড়ানো। তার অনুভূতি বোঝা। ছোট ছোট হাতের স্পর্শ এমনকি কথাও খুব রোমান্টিক হতে পারে। আমি এরকম রোমান্স অনেক দিয়েছি। ছোট ছোট অনুভূতি,কথা। চুমু আর বিছানার বাইরে বেরিয়ে দেখুন,প্রেম অন্যভাবেও হয়।

প্রো : পরের এপিসোড জলদি দিন।
উত্তর : এটা খুবই ভালো লাগছে,আমার লেখা আপনাদের অনেক পছন্দ । কিন্তু আপনি যদি নাও বলেন তাও আমি দেব,আপনি বললেও দেব। কিন্তু সেটা যখন আমার সময় হবে। তাই বারবার এভাবে এসএমএস করবেন না অনুরোধ।

যাই হোক সবশেষে এটাই কথা,আমি আপ্লুত বহু মানুষের ভালোবাসাতে। কিন্তু বারবার যদি উপরিউক্ত এসএমএস গুলো আসে,আমি এরপর বাধ্য হবো মানুষটাকে ব্লক করতে । কারণ সবার কথা বলছি না,অনেকেই ভীষণ ভালো ভাবে জিজ্ঞেস করেন,আর আমার সেগুলো খুবই ভালো লাগে । কিন্তু কিছু এসএমএস রীতিমত মাথা গরম করিয়ে দেয়। তাই আশা করবো এই টপিক গুলো বাদ দিয়ে অন্য sms থাকলেই তবে এসএমএস করবেন,যেমন বহু মানুষ করেন,এবং আমার তাদেরকে খুবই ভালো লাগে।
ভালো থাকুন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top