শুধুই আমার ১০
মিতু আজকে খুব অস্থির ছিলো সমস্ত দিন।ওরা কিছু বন্ধু মিলে একটা স্যারের কাছে পড়তে শুরু করেছে কিছুদিন,neet দেওয়ার জন্য।এখনই ও "আকাশ" বা অন্য কোনো ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হতে চায় না,বিশেষ করে কিছুদিন আগে অব্দিও ও অবিনাশের কাছেই পড়ত,কিন্তু কিছুদিন ধরে অবিনাশের হটাৎ মানসিক পরিবর্তন ওকে এক দোটানার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।ও তাই বাধ্য হয়ে এই স্যারের কাছে নতুন পড়া শুরু করেছে।
স্যার পড়াচ্ছিলেন,বোঝাচ্ছিলেন কতটা সিরিয়াস হওয়া দরকার নিট পেতে ।মিতু শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হচ্ছিল বারবার।
অবিনাশ সব সময়ই পড়াশুনা নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলো,এমনকি মিতুর hs হওয়ার আগেও নিয়মিত ওর পড়ার খেয়াল রাখা অবিনাশের প্রধান কাজ ছিলো। রাত্রে ডিউটি করে এসে ও নিয়মিত মিতুর mcq টেস্টের উত্তর গুলো নিজে মেলাত।কিন্তু কিছুদিন ধরে হটাৎ করে অবিনাশের শাসন হারিয়ে মিতু যেন দিশাহারা হয়ে গেছে।এতদিন মিতু জানতো কিছু হলেই "দাদা" আছে।
কিন্তু হটাৎ করে অবিনাশ নিজের ব্যাবহার পরিবর্তন করেছে কিছুদিন ধরে। সেই সব কিছুর জন্য দাদা"র খোজ মিতু আর পাচ্ছে না।একই সঙ্গে সে অবাকও হচ্ছে।
কোনোদিন মিতু জানতো না অবিনাশ এত মজা করতে পারে,যেটা কাল রাত্রে ওরা করেছে। এত গল্পঃ করতে পারে,এত হাসতে পরে, হাসাতে পারে,আর এত সুন্দর লাগতে পারে,যেটা ও একদিনে দেখেছে।কালকে দাদা যেন একদম অন্য একটা মানুষ ছিলো।মিতুর নিজের কখনো ইর্ষা লাগছিল ওর হবু বৌদির জন্য।বৌদি এলে দাদা কি আর তার জন্য এত সময় দেবে ? তারপর বাড়িতে ফেরার পর কাল রাত্রে হটাৎ করে বাবার সাথে দাদার কথা,তার সাথে মাকে বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর না পাওয়া,সকাল থেকে দাদার সারাদিন ঘরবন্ধি থাকা,ও কোনোটাই মানতে পারছিলো না।আবার এটাও সাহস হচ্ছিলো না দাদাকে বা কাউকে আলাদা করে জিজ্ঞেস করে "কি হয়েছে ?"
....................
অবিনাশ ড্রাইভ করছিল,পাশেই প্যাসেঞ্জার সিটে মিহিরা বসেছিল। বিকাশ,নীলেষ ইচ্ছে করেই ওদের পাশাপাশি বসিয়েছিল। ওরাও চাইছিল এবার অবিনাশ কোনো রিলেশনে যাক।
ওরা গাড়িতে ওঠার পর, হটাৎ করেই প্ল্যান চেঞ্জ করে দীঘা যাওয়ার প্ল্যান হয়।ওরা বেশ দেরি করেই গাড়ি ছেরেছিল।অবিনাশ বেশ কম স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিল।ওদের প্ল্যান ছিলো ভোরবেলা দীঘা ঢোকা,তাহলে হোটেলের রুম পেতে সুবিধা হবে,আর নাইট রাইড ও হবে।
চারপাশে অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক আগেই।অবিনাশ বেলেপোল,সাঁতরাগাছি পেরিয়ে হাইওয়ে ধরতেই সবাই কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেলো
অবিনাশ সবসময়ে নিজের গানের প্লেলিস্ট রেডী রাখে যখনই ও নিজে ড্রাইভ করে।ও স্টিয়ারিং এ একহাত রেখে,অন্যহাত দরজার কাচের পাশে কনুই থেকে ভাঁজ করে রেখেছিল।ও ভাবছিল।
"কালকেই ঠিক এই গানগুলোই চলছিল।মিতু জানলা থেকে মুখ বের করে হাসছিল।" দাদা,কলকাতা কত সুন্দর লাগছে,দাদা দাদা দেখ ভিক্টোরিয়ার লাইট।" অবিনাশ যেন অন্য এক জগতে চলে যাচ্ছিলো ধীরে ধীরে,মিতুর হাসি, বাবুঘাটে হটাৎ ভয় পাওয়ার পর ওকে জড়িয়ে ধরা।অবিনাশ মিতুকে বোঝাতেও পারবে না ওর অনুভূতিটা কি ছিল।তারপর মুভি দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক ভাবে অবিনাশের হাতে খামচে দেওয়া,আর সেটা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে অবিনাশ যতবারই মজা করতে গেছে,মিতু লজ্জা পেয়ে ,রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।"অবিনাশ বারবার মনে করছিল একই দৃশ্য।ও অবাক হয়ে ভাবছিল শুধু একটা মানুষের একটু হাসি ওকে এতটা পাগল করে দিতে পারে,মিতুর রাগ করা,মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া,লজ্জা পাওয়া,হটাৎ খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়া সবটাই ওর মনে রেকর্ডিং এর মত ফিরে ফিরে আসছিলো।কিন্তু............
কাল রাত্রে বাবার কাছ থেকে ফেরার পর ও মিতুর সাথে কথা বলতে চাইছিল,কিন্তু মিতু দরজা খোলেনী।স্পষ্ট ভাবে অবিনাশ বুঝেছিল মিতু দোটানার মধ্যে আছে,তাই ও আরো অনেকটা সময় মিতুকে দিতে চাইছিল। এবং একই সাথে চাইছিল মিতুর মনে একটা অন্য চিন্তা তৈরি করতে তাকে নিয়ে, আর বাবার কথাগুলো তাকে সেই প্ল্যানটা করতেই হেল্প করলো........
..................
"অবিনাশ, জাবসে তুমকো দেখা হই সনাম,কুমার শানুর গানটা দাও না প্লিজ,খুব ভালো লাগে ওটা,।"
মিহিরা পাশ থেকে বললো।অবিনাশ নিজের ফোনটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিল,গান চেঞ্জের জন্য।
পাশ থেকে একের পর এক বড় লরি বেরিয়ে যাচ্ছে।অবিনাশ মাঝের লেন ধরলো,ধীরে চালানোর জন্য।সোজা কালো রাস্তাটা চলে গেছে কোন দূরে,চারদিকে অন্ধকার,শুধু মাঝে মাঝে গাড়ির আয়নাতে পিছন দিক থেকে ফেলা গাড়িগুলোর আলোটা প্রতিফলিত হচ্ছিল সবার চোখে।তারপর পাশ থেকে সেই গাড়ি গুলো বেরিয়ে গেলেই আবার অন্ধকার ঘিরে ধরছিল সবাইকে। সবাই চুপ করে বসেছিল,আর গাড়ির সাউন্ড সিস্টেম বেজে যাচ্ছিল।অবিনাশ অন্যমনস্ক ভাবে ভাবছিল "প্রথম যখন ওর কোলে মিতুকে দিয়েছিল মা,ছোট পুতুল একটা হাত পা নাড়ার চেষ্টা করছিল,চোখটা খুলতে পারছিলো না একেবারেই,মা কোলে দিতেই হটাৎ করে কেদে উঠেছিল মিতু।মা তারাতারি ওর কোল থেকে নিতে যেতেই ও মিতুকে জড়িয়ে সরে দারিয়েছিলো।তারপর ওর মাকে অবাক করে দিয়ে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল ছোট্ট মিতুকে।
সাত বছরের অবিনাশের পেটের উপর মারের দাগগুলো তখনও জ্বলছিল,কিন্তু ছোট অবিনাশ অবাক হয়ে দেখলো পুতুলটাকে কোলে নিতে ওর পেটের জামার নিচে লুকানো দাগগুলোর যন্ত্রণা যেন অনেক কমে গেলো।সেদিন প্রথমবার নিজের সাত বছরের জীবনে অবিনাশ "বাঁচার একটা লক্ষ্য "পেয়েচিল মিতুকে জড়িয়ে ধরে।
....................
মিস্টার বিশ্বাস( অলকেশ) ঘরে ঢুকেই ব্যাগটা বিরক্তিতে পাশে ছুড়ে ফেললেন।কাল রাত থেকে তার মন ঠিক নেই। জীবনে প্রথমবার তিনি ছেলের গায়ে হাত তুলেছেন।অবিনাশ মাথা গরম হলেও এতটা বুদ্ধিমান,মেধাবী ছেলে ছিলো যে ওকে কোনোদিন শাসন করার দরকার পড়েনি।নিজের কলিগ,বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ছেলের এত প্রশংসা শুনেছেন যে ছেলেকে নিয়ে গর্ব ছিলো তার।তাই কোনোদিন শাসন করেননি ছেলেকে।
রমা ডিউটি বেরিয়ে গেছে,অনেক আগেই।বাড়ির নিচটা ফাঁকা,অবিনাশ সম্ভবত ঘুমাচ্ছ ঘরে, কাল নাইট ছিলো ওর।অলকেশ,উঠে জামা কাপড় ছাড়তে বাথরুমে ঢুকলেন,অবিনাশকে তিনি চেষ্টা করেও দোষ দিতে পারছেন না,বারবার নিজেকে বলার চেষ্টা করছেন ও ভুল কিন্তু পারছেন কই।
এখন তার মনে পড়ছে অবিনাশ মিতুর কাছ থেকে কোনোদিন ভাইফোঁটা নিতে চাইনি,রাখি বাঁধতে চাইনি,বলতো এসব নিয়ম তার নাকি ভালো লাগে না,ছোটবেলা থেকে বাড়ির সবাই অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে মানুষ ছিলো।এই বাড়িতে কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুতে জোর করা হতো না ।তাই রমা বারবার চাইলেও উনি অবিনাশের কথাই মেনেছেন।
শাওয়ারের ঠান্ডা ঠান্ডা জল ওর শরীর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল,সেই সাথে কাল রাত্রিতে হটাৎ মাথা গরম করে অবিনাশকে চড় মারার গ্লানিও।সত্যি তো অবিনাশের কি দোষ,সে ছোটবেলা থেকে জানে মিতু তার বোন না। শুধু মিতুর কথা ভেবেই দাদা হওয়ার চেষ্টা করছিল সে।কিন্তু সেও ছেলে,ফুটন্ত যৌবনের একটা ভীষন সফল ছেলে,।।মিতুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার চিন্তা ভাবনাটাও চেঞ্জ হচ্চিল মিতুকে নিয়ে।সত্যি তিনি দোষ দেন কি করে,বাড়িতে একটা যুবতী মেয়ে বেরে উঠছে,ছেলেটা প্রতি মুহূর্তে তাকে দেখছে,এবং সে জানে মেয়েটা তার কোনো সম্পর্কিত না,কতদিন আর পাতানো সম্পর্ক ডেকে রাখতে পারে অনুভূতি গুলোকে।
অলকেশ রমার সাথে অনেকবার আলোচনা করেছেন এতদিনেও অবিনাশ কোনো মেয়েকে পছন্দ করছে না কেন ? এখন অলকেশ মনে করতে পারছেন রমা প্রতিবারই কিছু বলতে গিয়ে থেমে যেত।রমা সম্ভবত অনেক আগেই লক্ষ্য করেছিলো। হাজার হোক মা তো।
কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে যদি অবিনাশের চিন্তাধারাকে মানা হয় তবে মিতুর কি হবে ? সমাজের কি হবে? আর তার থেকেও বড় ব্যাপার আদৌ মিতু কি নিজের এতদিনের পরিচিত দাদাকে অন্য চোখে দেখতে পারবে ?!চিন্তা ভাবনার মধ্যেই গায়ে জমাটা পরে দরজার নব ঘোরালেন।
অলকেশ দরজা খুলে বেরোতে যেতেই শুনতে পেলেন মিতু খুব আস্তে করে সিড়ির উপর থেকে ডাকছে "দাদা,এসেছিস ?"
....................
অর্ক মিতুকে ফোন করার চেষ্টা করছিল বেশ কিছুক্ষন ধরে,ও চায় না মিতুর মত মেয়ে হাতছাড়া হোক।বিশেষ করে আগের দিন হন্ডাসিটিতে অবিনাশ আর ওকে উঠতে দেখার পর।অর্ক জানত না মিতু এতটা বড়লোকের মেয়ে।মিতু ওকে বলেনি ওর বাবা দাদা কি করে,অর্ক ও বিশেষ ইন্টারেস্ট দেখাইনি।ভেবেছিল দুদিন কথা বলবে,বাকি মেয়েদের মত,তারপর অন্য কাউকে দেখবে।কিন্তু মিতুর সাথে কথা বলতে শুরু করে ও বুঝতে পেরেছে মিতু একেবারেই বাচ্চা,এর আগে সম্ভবত বেশি বন্ধুবান্ধব ছিলো না,তাই ও চাইতেই নিজের ফটো দিয়ে দিল।মিতু সম্ভবত জানেও না অর্ক ওর ছবি নিয়ে কি কি করতে পারে,কিন্তু অর্ক ছবি দেখে পুরো পাগল হয়ে গেছিলো,মিতুকে এত সুন্দর দেখতে ও ভাবেনি।তাই খুব ভালোবেসে দুদিন কথা বলার পর ও এমনিই প্রস্তাব দিয়েছিল দেখা করার।ও ভাবতেও পারেনি মিতু সত্যিকারের রাজি হবে।
কিন্তু এখন অর্ক আর ধর্য ধরতে পারছে না,বিশেষ করে অবিনাশকে দেখার পর থেকে।মিতু ওর দাদাকে ভীষণ ভয় পায় অর্ক জানে,আর আগেরদিন ও দেখেই কিছুটা বুঝেছে মিতুর ভয় অমূলক না।অবিনাশের লম্বা চওড়া শরীরটার চারপাশে সত্যিই একটা অন্ধকার যেন ঘুরে বেড়াই,যাকে হটাৎ করে কাটিয়ে ওঠা যায় না।
.....................
গানটা হটাৎ থেমে গেলো,সবাই হটাৎ তৈরি হওয়া ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো যেন। ছোট্ট স্কিনে তখন ভেসে আসছে মিতুর নাম আর গানের পরিবর্তে ভেসে আসছে মিতুর জন্য সেভ করা অবিনাশের স্পেশাল রিংটোন" কেউকি তুম হি হো আব তুমহি হো,জিন্দেগি আব তুমহি হো।"
ক্রমশঃ
মিতু আজকে খুব অস্থির ছিলো সমস্ত দিন।ওরা কিছু বন্ধু মিলে একটা স্যারের কাছে পড়তে শুরু করেছে কিছুদিন,neet দেওয়ার জন্য।এখনই ও "আকাশ" বা অন্য কোনো ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হতে চায় না,বিশেষ করে কিছুদিন আগে অব্দিও ও অবিনাশের কাছেই পড়ত,কিন্তু কিছুদিন ধরে অবিনাশের হটাৎ মানসিক পরিবর্তন ওকে এক দোটানার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।ও তাই বাধ্য হয়ে এই স্যারের কাছে নতুন পড়া শুরু করেছে।
স্যার পড়াচ্ছিলেন,বোঝাচ্ছিলেন কতটা সিরিয়াস হওয়া দরকার নিট পেতে ।মিতু শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হচ্ছিল বারবার।
অবিনাশ সব সময়ই পড়াশুনা নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলো,এমনকি মিতুর hs হওয়ার আগেও নিয়মিত ওর পড়ার খেয়াল রাখা অবিনাশের প্রধান কাজ ছিলো। রাত্রে ডিউটি করে এসে ও নিয়মিত মিতুর mcq টেস্টের উত্তর গুলো নিজে মেলাত।কিন্তু কিছুদিন ধরে হটাৎ করে অবিনাশের শাসন হারিয়ে মিতু যেন দিশাহারা হয়ে গেছে।এতদিন মিতু জানতো কিছু হলেই "দাদা" আছে।
কিন্তু হটাৎ করে অবিনাশ নিজের ব্যাবহার পরিবর্তন করেছে কিছুদিন ধরে। সেই সব কিছুর জন্য দাদা"র খোজ মিতু আর পাচ্ছে না।একই সঙ্গে সে অবাকও হচ্ছে।
কোনোদিন মিতু জানতো না অবিনাশ এত মজা করতে পারে,যেটা কাল রাত্রে ওরা করেছে। এত গল্পঃ করতে পারে,এত হাসতে পরে, হাসাতে পারে,আর এত সুন্দর লাগতে পারে,যেটা ও একদিনে দেখেছে।কালকে দাদা যেন একদম অন্য একটা মানুষ ছিলো।মিতুর নিজের কখনো ইর্ষা লাগছিল ওর হবু বৌদির জন্য।বৌদি এলে দাদা কি আর তার জন্য এত সময় দেবে ? তারপর বাড়িতে ফেরার পর কাল রাত্রে হটাৎ করে বাবার সাথে দাদার কথা,তার সাথে মাকে বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর না পাওয়া,সকাল থেকে দাদার সারাদিন ঘরবন্ধি থাকা,ও কোনোটাই মানতে পারছিলো না।আবার এটাও সাহস হচ্ছিলো না দাদাকে বা কাউকে আলাদা করে জিজ্ঞেস করে "কি হয়েছে ?"
....................
অবিনাশ ড্রাইভ করছিল,পাশেই প্যাসেঞ্জার সিটে মিহিরা বসেছিল। বিকাশ,নীলেষ ইচ্ছে করেই ওদের পাশাপাশি বসিয়েছিল। ওরাও চাইছিল এবার অবিনাশ কোনো রিলেশনে যাক।
ওরা গাড়িতে ওঠার পর, হটাৎ করেই প্ল্যান চেঞ্জ করে দীঘা যাওয়ার প্ল্যান হয়।ওরা বেশ দেরি করেই গাড়ি ছেরেছিল।অবিনাশ বেশ কম স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিল।ওদের প্ল্যান ছিলো ভোরবেলা দীঘা ঢোকা,তাহলে হোটেলের রুম পেতে সুবিধা হবে,আর নাইট রাইড ও হবে।
চারপাশে অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক আগেই।অবিনাশ বেলেপোল,সাঁতরাগাছি পেরিয়ে হাইওয়ে ধরতেই সবাই কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেলো
অবিনাশ সবসময়ে নিজের গানের প্লেলিস্ট রেডী রাখে যখনই ও নিজে ড্রাইভ করে।ও স্টিয়ারিং এ একহাত রেখে,অন্যহাত দরজার কাচের পাশে কনুই থেকে ভাঁজ করে রেখেছিল।ও ভাবছিল।
"কালকেই ঠিক এই গানগুলোই চলছিল।মিতু জানলা থেকে মুখ বের করে হাসছিল।" দাদা,কলকাতা কত সুন্দর লাগছে,দাদা দাদা দেখ ভিক্টোরিয়ার লাইট।" অবিনাশ যেন অন্য এক জগতে চলে যাচ্ছিলো ধীরে ধীরে,মিতুর হাসি, বাবুঘাটে হটাৎ ভয় পাওয়ার পর ওকে জড়িয়ে ধরা।অবিনাশ মিতুকে বোঝাতেও পারবে না ওর অনুভূতিটা কি ছিল।তারপর মুভি দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক ভাবে অবিনাশের হাতে খামচে দেওয়া,আর সেটা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে অবিনাশ যতবারই মজা করতে গেছে,মিতু লজ্জা পেয়ে ,রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।"অবিনাশ বারবার মনে করছিল একই দৃশ্য।ও অবাক হয়ে ভাবছিল শুধু একটা মানুষের একটু হাসি ওকে এতটা পাগল করে দিতে পারে,মিতুর রাগ করা,মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া,লজ্জা পাওয়া,হটাৎ খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়া সবটাই ওর মনে রেকর্ডিং এর মত ফিরে ফিরে আসছিলো।কিন্তু............
কাল রাত্রে বাবার কাছ থেকে ফেরার পর ও মিতুর সাথে কথা বলতে চাইছিল,কিন্তু মিতু দরজা খোলেনী।স্পষ্ট ভাবে অবিনাশ বুঝেছিল মিতু দোটানার মধ্যে আছে,তাই ও আরো অনেকটা সময় মিতুকে দিতে চাইছিল। এবং একই সাথে চাইছিল মিতুর মনে একটা অন্য চিন্তা তৈরি করতে তাকে নিয়ে, আর বাবার কথাগুলো তাকে সেই প্ল্যানটা করতেই হেল্প করলো........
..................
"অবিনাশ, জাবসে তুমকো দেখা হই সনাম,কুমার শানুর গানটা দাও না প্লিজ,খুব ভালো লাগে ওটা,।"
মিহিরা পাশ থেকে বললো।অবিনাশ নিজের ফোনটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিল,গান চেঞ্জের জন্য।
পাশ থেকে একের পর এক বড় লরি বেরিয়ে যাচ্ছে।অবিনাশ মাঝের লেন ধরলো,ধীরে চালানোর জন্য।সোজা কালো রাস্তাটা চলে গেছে কোন দূরে,চারদিকে অন্ধকার,শুধু মাঝে মাঝে গাড়ির আয়নাতে পিছন দিক থেকে ফেলা গাড়িগুলোর আলোটা প্রতিফলিত হচ্ছিল সবার চোখে।তারপর পাশ থেকে সেই গাড়ি গুলো বেরিয়ে গেলেই আবার অন্ধকার ঘিরে ধরছিল সবাইকে। সবাই চুপ করে বসেছিল,আর গাড়ির সাউন্ড সিস্টেম বেজে যাচ্ছিল।অবিনাশ অন্যমনস্ক ভাবে ভাবছিল "প্রথম যখন ওর কোলে মিতুকে দিয়েছিল মা,ছোট পুতুল একটা হাত পা নাড়ার চেষ্টা করছিল,চোখটা খুলতে পারছিলো না একেবারেই,মা কোলে দিতেই হটাৎ করে কেদে উঠেছিল মিতু।মা তারাতারি ওর কোল থেকে নিতে যেতেই ও মিতুকে জড়িয়ে সরে দারিয়েছিলো।তারপর ওর মাকে অবাক করে দিয়ে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল ছোট্ট মিতুকে।
সাত বছরের অবিনাশের পেটের উপর মারের দাগগুলো তখনও জ্বলছিল,কিন্তু ছোট অবিনাশ অবাক হয়ে দেখলো পুতুলটাকে কোলে নিতে ওর পেটের জামার নিচে লুকানো দাগগুলোর যন্ত্রণা যেন অনেক কমে গেলো।সেদিন প্রথমবার নিজের সাত বছরের জীবনে অবিনাশ "বাঁচার একটা লক্ষ্য "পেয়েচিল মিতুকে জড়িয়ে ধরে।
....................
মিস্টার বিশ্বাস( অলকেশ) ঘরে ঢুকেই ব্যাগটা বিরক্তিতে পাশে ছুড়ে ফেললেন।কাল রাত থেকে তার মন ঠিক নেই। জীবনে প্রথমবার তিনি ছেলের গায়ে হাত তুলেছেন।অবিনাশ মাথা গরম হলেও এতটা বুদ্ধিমান,মেধাবী ছেলে ছিলো যে ওকে কোনোদিন শাসন করার দরকার পড়েনি।নিজের কলিগ,বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ছেলের এত প্রশংসা শুনেছেন যে ছেলেকে নিয়ে গর্ব ছিলো তার।তাই কোনোদিন শাসন করেননি ছেলেকে।
রমা ডিউটি বেরিয়ে গেছে,অনেক আগেই।বাড়ির নিচটা ফাঁকা,অবিনাশ সম্ভবত ঘুমাচ্ছ ঘরে, কাল নাইট ছিলো ওর।অলকেশ,উঠে জামা কাপড় ছাড়তে বাথরুমে ঢুকলেন,অবিনাশকে তিনি চেষ্টা করেও দোষ দিতে পারছেন না,বারবার নিজেকে বলার চেষ্টা করছেন ও ভুল কিন্তু পারছেন কই।
এখন তার মনে পড়ছে অবিনাশ মিতুর কাছ থেকে কোনোদিন ভাইফোঁটা নিতে চাইনি,রাখি বাঁধতে চাইনি,বলতো এসব নিয়ম তার নাকি ভালো লাগে না,ছোটবেলা থেকে বাড়ির সবাই অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে মানুষ ছিলো।এই বাড়িতে কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুতে জোর করা হতো না ।তাই রমা বারবার চাইলেও উনি অবিনাশের কথাই মেনেছেন।
শাওয়ারের ঠান্ডা ঠান্ডা জল ওর শরীর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল,সেই সাথে কাল রাত্রিতে হটাৎ মাথা গরম করে অবিনাশকে চড় মারার গ্লানিও।সত্যি তো অবিনাশের কি দোষ,সে ছোটবেলা থেকে জানে মিতু তার বোন না। শুধু মিতুর কথা ভেবেই দাদা হওয়ার চেষ্টা করছিল সে।কিন্তু সেও ছেলে,ফুটন্ত যৌবনের একটা ভীষন সফল ছেলে,।।মিতুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার চিন্তা ভাবনাটাও চেঞ্জ হচ্চিল মিতুকে নিয়ে।সত্যি তিনি দোষ দেন কি করে,বাড়িতে একটা যুবতী মেয়ে বেরে উঠছে,ছেলেটা প্রতি মুহূর্তে তাকে দেখছে,এবং সে জানে মেয়েটা তার কোনো সম্পর্কিত না,কতদিন আর পাতানো সম্পর্ক ডেকে রাখতে পারে অনুভূতি গুলোকে।
অলকেশ রমার সাথে অনেকবার আলোচনা করেছেন এতদিনেও অবিনাশ কোনো মেয়েকে পছন্দ করছে না কেন ? এখন অলকেশ মনে করতে পারছেন রমা প্রতিবারই কিছু বলতে গিয়ে থেমে যেত।রমা সম্ভবত অনেক আগেই লক্ষ্য করেছিলো। হাজার হোক মা তো।
কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে যদি অবিনাশের চিন্তাধারাকে মানা হয় তবে মিতুর কি হবে ? সমাজের কি হবে? আর তার থেকেও বড় ব্যাপার আদৌ মিতু কি নিজের এতদিনের পরিচিত দাদাকে অন্য চোখে দেখতে পারবে ?!চিন্তা ভাবনার মধ্যেই গায়ে জমাটা পরে দরজার নব ঘোরালেন।
অলকেশ দরজা খুলে বেরোতে যেতেই শুনতে পেলেন মিতু খুব আস্তে করে সিড়ির উপর থেকে ডাকছে "দাদা,এসেছিস ?"
....................
অর্ক মিতুকে ফোন করার চেষ্টা করছিল বেশ কিছুক্ষন ধরে,ও চায় না মিতুর মত মেয়ে হাতছাড়া হোক।বিশেষ করে আগের দিন হন্ডাসিটিতে অবিনাশ আর ওকে উঠতে দেখার পর।অর্ক জানত না মিতু এতটা বড়লোকের মেয়ে।মিতু ওকে বলেনি ওর বাবা দাদা কি করে,অর্ক ও বিশেষ ইন্টারেস্ট দেখাইনি।ভেবেছিল দুদিন কথা বলবে,বাকি মেয়েদের মত,তারপর অন্য কাউকে দেখবে।কিন্তু মিতুর সাথে কথা বলতে শুরু করে ও বুঝতে পেরেছে মিতু একেবারেই বাচ্চা,এর আগে সম্ভবত বেশি বন্ধুবান্ধব ছিলো না,তাই ও চাইতেই নিজের ফটো দিয়ে দিল।মিতু সম্ভবত জানেও না অর্ক ওর ছবি নিয়ে কি কি করতে পারে,কিন্তু অর্ক ছবি দেখে পুরো পাগল হয়ে গেছিলো,মিতুকে এত সুন্দর দেখতে ও ভাবেনি।তাই খুব ভালোবেসে দুদিন কথা বলার পর ও এমনিই প্রস্তাব দিয়েছিল দেখা করার।ও ভাবতেও পারেনি মিতু সত্যিকারের রাজি হবে।
কিন্তু এখন অর্ক আর ধর্য ধরতে পারছে না,বিশেষ করে অবিনাশকে দেখার পর থেকে।মিতু ওর দাদাকে ভীষণ ভয় পায় অর্ক জানে,আর আগেরদিন ও দেখেই কিছুটা বুঝেছে মিতুর ভয় অমূলক না।অবিনাশের লম্বা চওড়া শরীরটার চারপাশে সত্যিই একটা অন্ধকার যেন ঘুরে বেড়াই,যাকে হটাৎ করে কাটিয়ে ওঠা যায় না।
.....................
গানটা হটাৎ থেমে গেলো,সবাই হটাৎ তৈরি হওয়া ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো যেন। ছোট্ট স্কিনে তখন ভেসে আসছে মিতুর নাম আর গানের পরিবর্তে ভেসে আসছে মিতুর জন্য সেভ করা অবিনাশের স্পেশাল রিংটোন" কেউকি তুম হি হো আব তুমহি হো,জিন্দেগি আব তুমহি হো।"
ক্রমশঃ