What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected শুধুই আমার by Ankita kar (1 Viewer)

শুধুই আমার ১০

মিতু আজকে খুব অস্থির ছিলো সমস্ত দিন।ওরা কিছু বন্ধু মিলে একটা স্যারের কাছে পড়তে শুরু করেছে কিছুদিন,neet দেওয়ার জন্য।এখনই ও "আকাশ" বা অন্য কোনো ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হতে চায় না,বিশেষ করে কিছুদিন আগে অব্দিও ও অবিনাশের কাছেই পড়ত,কিন্তু কিছুদিন ধরে অবিনাশের হটাৎ মানসিক পরিবর্তন ওকে এক দোটানার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।ও তাই বাধ্য হয়ে এই স্যারের কাছে নতুন পড়া শুরু করেছে।

স্যার পড়াচ্ছিলেন,বোঝাচ্ছিলেন কতটা সিরিয়াস হওয়া দরকার নিট পেতে ।মিতু শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হচ্ছিল বারবার।
অবিনাশ সব সময়ই পড়াশুনা নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলো,এমনকি মিতুর hs হওয়ার আগেও নিয়মিত ওর পড়ার খেয়াল রাখা অবিনাশের প্রধান কাজ ছিলো। রাত্রে ডিউটি করে এসে ও নিয়মিত মিতুর mcq টেস্টের উত্তর গুলো নিজে মেলাত।কিন্তু কিছুদিন ধরে হটাৎ করে অবিনাশের শাসন হারিয়ে মিতু যেন দিশাহারা হয়ে গেছে।এতদিন মিতু জানতো কিছু হলেই "দাদা" আছে।
কিন্তু হটাৎ করে অবিনাশ নিজের ব্যাবহার পরিবর্তন করেছে কিছুদিন ধরে। সেই সব কিছুর জন্য দাদা"র খোজ মিতু আর পাচ্ছে না।একই সঙ্গে সে অবাকও হচ্ছে।
কোনোদিন মিতু জানতো না অবিনাশ এত মজা করতে পারে,যেটা কাল রাত্রে ওরা করেছে। এত গল্পঃ করতে পারে,এত হাসতে পরে, হাসাতে পারে,আর এত সুন্দর লাগতে পারে,যেটা ও একদিনে দেখেছে।কালকে দাদা যেন একদম অন্য একটা মানুষ ছিলো।মিতুর নিজের কখনো ইর্ষা লাগছিল ওর হবু বৌদির জন্য।বৌদি এলে দাদা কি আর তার জন্য এত সময় দেবে ? তারপর বাড়িতে ফেরার পর কাল রাত্রে হটাৎ করে বাবার সাথে দাদার কথা,তার সাথে মাকে বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর না পাওয়া,সকাল থেকে দাদার সারাদিন ঘরবন্ধি থাকা,ও কোনোটাই মানতে পারছিলো না।আবার এটাও সাহস হচ্ছিলো না দাদাকে বা কাউকে আলাদা করে জিজ্ঞেস করে "কি হয়েছে ?"

....................
অবিনাশ ড্রাইভ করছিল,পাশেই প্যাসেঞ্জার সিটে মিহিরা বসেছিল। বিকাশ,নীলেষ ইচ্ছে করেই ওদের পাশাপাশি বসিয়েছিল। ওরাও চাইছিল এবার অবিনাশ কোনো রিলেশনে যাক।
ওরা গাড়িতে ওঠার পর, হটাৎ করেই প্ল্যান চেঞ্জ করে দীঘা যাওয়ার প্ল্যান হয়।ওরা বেশ দেরি করেই গাড়ি ছেরেছিল।অবিনাশ বেশ কম স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিল।ওদের প্ল্যান ছিলো ভোরবেলা দীঘা ঢোকা,তাহলে হোটেলের রুম পেতে সুবিধা হবে,আর নাইট রাইড ও হবে।

চারপাশে অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক আগেই।অবিনাশ বেলেপোল,সাঁতরাগাছি পেরিয়ে হাইওয়ে ধরতেই সবাই কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেলো

অবিনাশ সবসময়ে নিজের গানের প্লেলিস্ট রেডী রাখে যখনই ও নিজে ড্রাইভ করে।ও স্টিয়ারিং এ একহাত রেখে,অন্যহাত দরজার কাচের পাশে কনুই থেকে ভাঁজ করে রেখেছিল।ও ভাবছিল।

"কালকেই ঠিক এই গানগুলোই চলছিল।মিতু জানলা থেকে মুখ বের করে হাসছিল।" দাদা,কলকাতা কত সুন্দর লাগছে,দাদা দাদা দেখ ভিক্টোরিয়ার লাইট।" অবিনাশ যেন অন্য এক জগতে চলে যাচ্ছিলো ধীরে ধীরে,মিতুর হাসি, বাবুঘাটে হটাৎ ভয় পাওয়ার পর ওকে জড়িয়ে ধরা।অবিনাশ মিতুকে বোঝাতেও পারবে না ওর অনুভূতিটা কি ছিল।তারপর মুভি দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক ভাবে অবিনাশের হাতে খামচে দেওয়া,আর সেটা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে অবিনাশ যতবারই মজা করতে গেছে,মিতু লজ্জা পেয়ে ,রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।"অবিনাশ বারবার মনে করছিল একই দৃশ্য।ও অবাক হয়ে ভাবছিল শুধু একটা মানুষের একটু হাসি ওকে এতটা পাগল করে দিতে পারে,মিতুর রাগ করা,মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া,লজ্জা পাওয়া,হটাৎ খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়া সবটাই ওর মনে রেকর্ডিং এর মত ফিরে ফিরে আসছিলো।কিন্তু............

কাল রাত্রে বাবার কাছ থেকে ফেরার পর ও মিতুর সাথে কথা বলতে চাইছিল,কিন্তু মিতু দরজা খোলেনী।স্পষ্ট ভাবে অবিনাশ বুঝেছিল মিতু দোটানার মধ্যে আছে,তাই ও আরো অনেকটা সময় মিতুকে দিতে চাইছিল। এবং একই সাথে চাইছিল মিতুর মনে একটা অন্য চিন্তা তৈরি করতে তাকে নিয়ে, আর বাবার কথাগুলো তাকে সেই প্ল্যানটা করতেই হেল্প করলো........

..................
"অবিনাশ, জাবসে তুমকো দেখা হই সনাম,কুমার শানুর গানটা দাও না প্লিজ,খুব ভালো লাগে ওটা,।"

মিহিরা পাশ থেকে বললো।অবিনাশ নিজের ফোনটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিল,গান চেঞ্জের জন্য।

পাশ থেকে একের পর এক বড় লরি বেরিয়ে যাচ্ছে।অবিনাশ মাঝের লেন ধরলো,ধীরে চালানোর জন্য।সোজা কালো রাস্তাটা চলে গেছে কোন দূরে,চারদিকে অন্ধকার,শুধু মাঝে মাঝে গাড়ির আয়নাতে পিছন দিক থেকে ফেলা গাড়িগুলোর আলোটা প্রতিফলিত হচ্ছিল সবার চোখে।তারপর পাশ থেকে সেই গাড়ি গুলো বেরিয়ে গেলেই আবার অন্ধকার ঘিরে ধরছিল সবাইকে। সবাই চুপ করে বসেছিল,আর গাড়ির সাউন্ড সিস্টেম বেজে যাচ্ছিল।অবিনাশ অন্যমনস্ক ভাবে ভাবছিল "প্রথম যখন ওর কোলে মিতুকে দিয়েছিল মা,ছোট পুতুল একটা হাত পা নাড়ার চেষ্টা করছিল,চোখটা খুলতে পারছিলো না একেবারেই,মা কোলে দিতেই হটাৎ করে কেদে উঠেছিল মিতু।মা তারাতারি ওর কোল থেকে নিতে যেতেই ও মিতুকে জড়িয়ে সরে দারিয়েছিলো।তারপর ওর মাকে অবাক করে দিয়ে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল ছোট্ট মিতুকে।
সাত বছরের অবিনাশের পেটের উপর মারের দাগগুলো তখনও জ্বলছিল,কিন্তু ছোট অবিনাশ অবাক হয়ে দেখলো পুতুলটাকে কোলে নিতে ওর পেটের জামার নিচে লুকানো দাগগুলোর যন্ত্রণা যেন অনেক কমে গেলো।সেদিন প্রথমবার নিজের সাত বছরের জীবনে অবিনাশ "বাঁচার একটা লক্ষ্য "পেয়েচিল মিতুকে জড়িয়ে ধরে।
....................
মিস্টার বিশ্বাস( অলকেশ) ঘরে ঢুকেই ব্যাগটা বিরক্তিতে পাশে ছুড়ে ফেললেন।কাল রাত থেকে তার মন ঠিক নেই। জীবনে প্রথমবার তিনি ছেলের গায়ে হাত তুলেছেন।অবিনাশ মাথা গরম হলেও এতটা বুদ্ধিমান,মেধাবী ছেলে ছিলো যে ওকে কোনোদিন শাসন করার দরকার পড়েনি।নিজের কলিগ,বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ছেলের এত প্রশংসা শুনেছেন যে ছেলেকে নিয়ে গর্ব ছিলো তার।তাই কোনোদিন শাসন করেননি ছেলেকে।

রমা ডিউটি বেরিয়ে গেছে,অনেক আগেই।বাড়ির নিচটা ফাঁকা,অবিনাশ সম্ভবত ঘুমাচ্ছ ঘরে, কাল নাইট ছিলো ওর।অলকেশ,উঠে জামা কাপড় ছাড়তে বাথরুমে ঢুকলেন,অবিনাশকে তিনি চেষ্টা করেও দোষ দিতে পারছেন না,বারবার নিজেকে বলার চেষ্টা করছেন ও ভুল কিন্তু পারছেন কই।

এখন তার মনে পড়ছে অবিনাশ মিতুর কাছ থেকে কোনোদিন ভাইফোঁটা নিতে চাইনি,রাখি বাঁধতে চাইনি,বলতো এসব নিয়ম তার নাকি ভালো লাগে না,ছোটবেলা থেকে বাড়ির সবাই অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে মানুষ ছিলো।এই বাড়িতে কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুতে জোর করা হতো না ।তাই রমা বারবার চাইলেও উনি অবিনাশের কথাই মেনেছেন।

শাওয়ারের ঠান্ডা ঠান্ডা জল ওর শরীর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল,সেই সাথে কাল রাত্রিতে হটাৎ মাথা গরম করে অবিনাশকে চড় মারার গ্লানিও।সত্যি তো অবিনাশের কি দোষ,সে ছোটবেলা থেকে জানে মিতু তার বোন না। শুধু মিতুর কথা ভেবেই দাদা হওয়ার চেষ্টা করছিল সে।কিন্তু সেও ছেলে,ফুটন্ত যৌবনের একটা ভীষন সফল ছেলে,।।মিতুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার চিন্তা ভাবনাটাও চেঞ্জ হচ্চিল মিতুকে নিয়ে।সত্যি তিনি দোষ দেন কি করে,বাড়িতে একটা যুবতী মেয়ে বেরে উঠছে,ছেলেটা প্রতি মুহূর্তে তাকে দেখছে,এবং সে জানে মেয়েটা তার কোনো সম্পর্কিত না,কতদিন আর পাতানো সম্পর্ক ডেকে রাখতে পারে অনুভূতি গুলোকে।

অলকেশ রমার সাথে অনেকবার আলোচনা করেছেন এতদিনেও অবিনাশ কোনো মেয়েকে পছন্দ করছে না কেন ? এখন অলকেশ মনে করতে পারছেন রমা প্রতিবারই কিছু বলতে গিয়ে থেমে যেত।রমা সম্ভবত অনেক আগেই লক্ষ্য করেছিলো। হাজার হোক মা তো।

কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে যদি অবিনাশের চিন্তাধারাকে মানা হয় তবে মিতুর কি হবে ? সমাজের কি হবে? আর তার থেকেও বড় ব্যাপার আদৌ মিতু কি নিজের এতদিনের পরিচিত দাদাকে অন্য চোখে দেখতে পারবে ?!চিন্তা ভাবনার মধ্যেই গায়ে জমাটা পরে দরজার নব ঘোরালেন।



অলকেশ দরজা খুলে বেরোতে যেতেই শুনতে পেলেন মিতু খুব আস্তে করে সিড়ির উপর থেকে ডাকছে "দাদা,এসেছিস ?"
....................
অর্ক মিতুকে ফোন করার চেষ্টা করছিল বেশ কিছুক্ষন ধরে,ও চায় না মিতুর মত মেয়ে হাতছাড়া হোক।বিশেষ করে আগের দিন হন্ডাসিটিতে অবিনাশ আর ওকে উঠতে দেখার পর।অর্ক জানত না মিতু এতটা বড়লোকের মেয়ে।মিতু ওকে বলেনি ওর বাবা দাদা কি করে,অর্ক ও বিশেষ ইন্টারেস্ট দেখাইনি।ভেবেছিল দুদিন কথা বলবে,বাকি মেয়েদের মত,তারপর অন্য কাউকে দেখবে।কিন্তু মিতুর সাথে কথা বলতে শুরু করে ও বুঝতে পেরেছে মিতু একেবারেই বাচ্চা,এর আগে সম্ভবত বেশি বন্ধুবান্ধব ছিলো না,তাই ও চাইতেই নিজের ফটো দিয়ে দিল।মিতু সম্ভবত জানেও না অর্ক ওর ছবি নিয়ে কি কি করতে পারে,কিন্তু অর্ক ছবি দেখে পুরো পাগল হয়ে গেছিলো,মিতুকে এত সুন্দর দেখতে ও ভাবেনি।তাই খুব ভালোবেসে দুদিন কথা বলার পর ও এমনিই প্রস্তাব দিয়েছিল দেখা করার।ও ভাবতেও পারেনি মিতু সত্যিকারের রাজি হবে।
কিন্তু এখন অর্ক আর ধর্য ধরতে পারছে না,বিশেষ করে অবিনাশকে দেখার পর থেকে।মিতু ওর দাদাকে ভীষণ ভয় পায় অর্ক জানে,আর আগেরদিন ও দেখেই কিছুটা বুঝেছে মিতুর ভয় অমূলক না।অবিনাশের লম্বা চওড়া শরীরটার চারপাশে সত্যিই একটা অন্ধকার যেন ঘুরে বেড়াই,যাকে হটাৎ করে কাটিয়ে ওঠা যায় না।

.....................
গানটা হটাৎ থেমে গেলো,সবাই হটাৎ তৈরি হওয়া ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো যেন। ছোট্ট স্কিনে তখন ভেসে আসছে মিতুর নাম আর গানের পরিবর্তে ভেসে আসছে মিতুর জন্য সেভ করা অবিনাশের স্পেশাল রিংটোন" কেউকি তুম হি হো আব তুমহি হো,জিন্দেগি আব তুমহি হো।"

ক্রমশঃ
 
Parbarti adhyayer apekshay roilam
File গুলো থেকে টেক্সট বের করতে সময় লাগে বেশি আশা করা যায় আজকে কিছু পর্ব আপ দিতে পারবো
 
Last edited:
শুধুই আমার ১১

মিতু পড়ে ফিরেই গ্যারাজের দিকে তাকালো,দাদার গাড়িটা ওখানেই আছে,মিতুর মনটা খুশি হলো এবার,দাদা ফিরে এসেছে তবে?!
কিন্তু মিতু বাড়ির সামনে গিয়ে দরজা ঘোরাতেই দেখলো দরজা বন্ধ,দাদা ফেরেনি ।

মিতুর মনটা অজান্তেই খারাপ হয়ে গেলো।

মা সম্ভবত বেরিয়ে গেছে,বাবা সন্ধ্যার আগে ফিরবে না, মানে মিতু একা এখন,আর এই সময়টা সবথেকে বিরক্ত লাগে ওর।মা এই সময়ে পিয়াকে ওনার নার্সিংহোমের পাশেই যে" বাচ্চাদের দেখাশোনার করার সেন্টার আছে " we care" বলে ওখানে রেখে,ডিউটি করেন, যাতে মাঝে মাঝেই মেয়েকে দেখে আসতে পারেন।

মিতুর খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু কেন ও জানে না।



আগে যখন মা বাবা থাকতো না,দাদা ডিউটি করে ফিরলেই ওরা দুজন কিছুনা কিছু করত, না হয় গেম খেলা, না হলে নতুন নতুন রান্না করা। আবার গেম খেলতে গিয়ে হেরে গেলে অবিনাশের মজার উত্তরে দাদাকে মারতে যাওয়া ।এসব করে মিতুর সময় কেটেই যায় দাদা থাকলে।

কিন্তু কিছুদিন ধরে মিতুর ভালো লাগছে না,কিছুই না।এমনকি রাত জেগে অর্কর সাথে কথা বলতেও না।কারণ অবিনাশের সাথে ওর সম্পর্কটা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।আর ওর ভালো লাগছে না।

ওর কিছুই হলেই দাদা " বলে ছুটে যাওয়ার মানুষটা যেন দূরে সরে যাচ্ছে।

মিতুর এখন খারাপ লাগছে ,কালকের কথা ভেবে।
কালকে দাদা কথা বলতে চাইছিল যখন তখন একবার বললেই পারতো ও। দাদা অতবার নক করলো ,ও ইচ্ছে করে শুয়ে ছিল।



আচ্ছা ,দাদা কি রেগে গেছে ? তাই জন্য কথা বলছে না !?

মিতুর মন এক অজানা শঙ্কায় কেপে উঠলো।ও ওর দাদাকে ভালো করেই চেনে যে জিনিস অপছন্দ করবে সেটা কেউ জোর করলেও করবে না। যদি দাদা ওকেও অপছন্দ করতে শুরু করে কালকে রাতের জন্য।
যদি দাদা ওকে আগের মত ভালো না বাসে?!

অর্ক সেদিনের পর থেকে অনেকবার বলেছে দেখা করতে কিন্তু মিতুর ইচ্ছে করছে না।
মিতু নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না তার হচ্ছেটা কি ?!

মিতু ঘুমের মধ্যে দুঃসপ্ন দেখে জেগে উঠছে আজকাল।মিতু "স্বপ্নগুলো" বুঝতে পারছে না।, যদিও মনেই থাকছে না বেশিরভাগ ,কিন্তু একটা স্বপ্ন ও বারবার দেখছে ।

ও দেখছে যে ও যেন অনেক উচু থেকে পরে যাচ্ছে কোনো অন্ধকার কুয়োর মধ্যে।বারবার হাত বাড়িয়ে বলছে কাউকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য,কিন্তু কেউ ওকে বাঁচাতে আসছে না।

মিতু চমকে ওঠে স্বপ্নটা দেখলেই ,ঘুম ভেংগে যায় ওর।ওর সারা শরীর ঘামতে থাকে প্রচণ্ড,ওর ইচ্ছে করে কেউ এসে ওকে জড়িয়ে ধরুক,কিন্তু........ও নড়তে পারেনা ওর বিছানা ছেরে।

..................
মিতু ঘরে ঢুকে ব্যাগটা ফেলে দিল বিছানার উপর।তারপর বাইরের জামাটা পরেই হাতপা চারিদিকে দিয়ে বিছানাতে শুয়ে পরলো ও।

ওর চোখে ভাসছিল বাবুঘাট ঘুরতে গিয়ে অবিনাশের হাসি মুখটা,ঘামে ভিজে জামার মধ্যে স্পষ্ট হওয়া দাদার ভীষণ সুন্দর দেহ।
দাদা হাসছিল,ওর কথাতে।
তারপর মা ব্রিজের উপর ড্রাইভ করার সময়ে আলো আধারি দাদার মুখে পরে স্পষ্ট - অস্পষ্ট হওয়ার মাঝে যেন দুলছিল দাদার ছায়া। দাদাকে কোনো অপরিচিত মানুষ লাগছিল ওর।

দাদার কথা বলা,ওকে জড়িয়ে ধরা সবকিছুই ভীষণ অন্যরকম ছিলো।দাদা এভাবে কখনো নিজেকে প্রকাশ করেনি ওর কাছে,মিতু বুঝে উঠতে পারছিলো না ঠিক কি হচ্ছে,কিন্তু আঠেরো বছরের ওর সংস্কার,শিক্ষা,চিন্তাধারা ওকে বারবার মনে করাচ্ছিল এটা ঠিক হচ্ছে না।

অবিনাশের জন্য ওর যে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে এটা ঠিক না,কখনই না।মিতু কতক্ষন শুয়েছিল ও জানে না,চিন্তার জগতে ও ঢুকে গেছিলো ।



ওর চিন্তা ভেঙে গেলো একটা শব্দে।
ঘরের দরজা খুলে কেউ ঢুকলো যেন।

বাবা, মা এই সময়ে আসবেনা।
তাহলে কি " দাদা"?! কথাটা মনে হতেই
ওর ইচ্ছে করছিল দাদার কাছে ছুটে যায়।জড়িয়ে ধরে দাদার ঘামে ভেজা গা,দাদা হেসে জড়িয়ে ধরুক ওকে আর বড় ভালোবেসে বলুক " আমার পাগলি মিতু সোনা।"

কিন্তু মিতু আটকে গেলো নিচে যেতে।
,যদি সত্যি দাদা রেগে গিয়ে থাকে কালকের জন্য,যদি কথা বলতে না চায়?!

মিতু আর কিছু ভাবতে না পেরে বাথরুমে ঢুকলো।জামা,ছেরে ,গা ধুয়ে বেরোলোআর সঙ্গে সঙ্গে ও সিদ্ধান্ত নিল,দাদার সাথে ও কথা বলবে।দাদা যাই মনে করুক,ও নিজের কথা বলবে।

ও ঘর থেকে বেরিয়ে সিড়ির মুখে এলো তারপর
আসতে করে ডাকলো " দাদা এলি ?"
.............
অলকেশ,মিতুর গলা শুনে সিড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন।উনি জানতেন না মিতু বাড়িতে আছে ,অন্যমনস্ক ছিলেন যখন বাড়িতে এসেছিলেন তাই ভাবছিলেন অবিনাশ ফিরে এসেছে ,আর ওই সম্ভবত দরজা খুলেছে।

" মিতু মা,ওপরে কি করছিস নিচে আই।"

অলকেশ ডাকতে মিতু নেমে এলো সিড়ির মুখে।মিতু বাবাকে দেখে একটু অবাক হলো,একটু মন ভাঙলো কি ?! ও বুঝতে পারলো না।

" তুমি কখন এলে বাবা?" মিতু নামতে নামতে বললো।

অলকেশ উত্তর দিলেন না ,তিনি তাকিয়ে ছিলেন।
অলকেশ শর্ট পরে নামতে থাকা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।মিতু ওর চোখে নতুনভাবে ধরা দিচ্ছিল।মিতুকে ভীষণ সুন্দর দেখতে হয়েছে যেন এই কদিনে।উনি এতদিন লক্ষ্য করেননি,তার মেয়ে ছোট থেকে কখন প্রাপ্ত বয়শী হয়েছে।সে আর ছোটো মিতু না,বরং পুরুষদের বুকে ঝড় তোলা এক অপরূপা নারী।

অলকেশ দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন।তিনি বুঝতে পারছিলেন অবিনাশের মনের অবস্থা।যে কোনোদিন মিতুকে বোনের মত দেখেইনি তার জন্য কতটা কষ্টকর ছিলো ।কতটা নিজেকে নিয়ন্ত্রণের দরকার শুধু মিতুর জন্য তার সামনে " দাদার অভিনয় " করার জন্য।উনি বুঝতে পারছিলেন ছেলের মনের দশা।কিন্তু

অথচ.....কি করতে পারেন তিনি?!
বাবা হয়ে, বাড়ির কর্তা হয়ে কি করে অনুমতি দিতে পারেন এরকম একটা ঘটনা ঘটার।

" মিতু মা,দাদা ফেরেনি এখনও ? তুমি আমাকে অবিনাশ ভাবলে মনে হলো?"

মিতু ঘাড় নাড়াল।

অলকেশ মেয়েকে ধরে নিয়ে এলেন ডাইনিং এ।

মিতু কিরকম মনমরা যেন।
" পুডিং খাবি মা ? তোর মা করে রেখে গেছে দেখলাম।"
মিতু আবার অন্যমনস্ক ভাবে ঘাড় নারলো।অলকেশ বেশ কিছুটা পুডিং ওর জন্য বাটিতে নিয়ে সামনে রাখলেন সোফার।
নিজে উল্টোদিকে বসে দেখছিলেন মেয়ের দিকে।

" নতুন sir কেমন মা,পড়া বুঝতে পারছিস ?"
মিতু ঘাড় নারলো।

আবার কিছুক্ষণের নিরবতা।

" আগে তো দাদার কাছেই পড়ছিলি ,এখন হটাৎ টিচার নিতে চাইলি যে,অবিনাশ পড়াচ্ছে না তোকে আর ? কিছু হলো নাকি তোদের ? ঝামেলা করেছিস দাদার সাথে ?"

অলকেশ ইচ্ছে করে প্রশ্নটা করেই তীক্ষ্ম মুখে মিতুর দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

মিতুর মুখটা অবিনাশের নাম শুনে একবার জ্বলে উঠেই নিভে গেলো যেন।অলকেসের চোখের আড়াল হলো না সেটা।

" না বাবা,দাদা আজকাল খুব ব্যাস্ত,আমি তাই আর বলি না।" বলেই নিজের দীর্ঘ নিশ্বাস গোপন করার চেষ্টা করলো মিতু।

অলকেশ এবার চিন্তিত হলেন,এতদিন তিনি অবিনাশকে নিয়ে ভেবেছিলেন।,কিন্তু আজকে মিতুর মুখটা তাকে অন্য কথা বললো।পেশাতে চিকিৎসক তিনি,মানুষকে ঘেঁটে ঘেঁটে অভ্যস্থ তার চোখদুটো বড় বিশ্বাসের সাথেই তাকে বলছিল মিতু এক্ষণও উপলব্ধি না করতে পারলেও অবিনাশ ওর জীবনে অনেকটা,সম্ভবত দাদার থেকেও বেশি কিছু।ও সেটা এখনও নিজে বুঝে উঠতে পারছে না ।

উনি ভাবতে পারছিলেন না আর।যাকে এত বছর মেয়ের থেকে বেশি ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন তার জীবনের সাথে কিভাবে পারবেন এত বড় একটা ভুল হতে দিতে ?! কি হবে তার প্রতিজ্ঞার।একদিকে ছেলে,মিতু অন্যদিকে তার প্রতিজ্ঞা,কোনটা রাখবেন তিনি।

" মিতু,একবার দাদাকে ফোনে ধর আমি কথা বলবো।"

মিতু বাবার ফোনটা তার দিকে এগিয়ে যেতে দিতেই অলকেশ বারণ করলেন।
" আমার ফোন না মা,তোর ফোনটা দিয়ে কর।"

.........................
অবিনাশ স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরলো।ফোনটা বাজছে।ও ফোনের ব্লুটুথ ডিসকানেক্ট করলো ,না হলে স্পিকারে পুরো গাড়িতে শোনা যাবে ওদের কথোপকথন আর অবিনাশ সেটা কোনোভাবেই চায় না।কানে ব্লুটুথ অন করেই ও রিসিভ করলো।মনে মনে বললো ক্ষমা করিস মিতু কিন্তু এই কষ্টটুকু আমি তোকে দেব,তোর আর আমার ভালোর জন্য।

" মিতু বল।"অবিনাশ নিজের গলাটা স্বাভাবিক রেখেই বললো।ও শুনতে চাইছিল মিতুর গলা।মিতু ফোন করে বলুক দাদা তোকে মিস করছি, বাড়ি আই।কিন্তু.........

"আমি অলকেশ বলছি অবিনাশ।" অবিনাশ থমকে গেলো।কিন্তু পরমুহূর্তেই ওর মুখে একটা ভীষন দুষ্টুমি হাসি খেলে গেলো

" বলো,।"
" তুই কোথায় এখন ? ফিরিসনি কেন ?"অলকেশ বললেন ,।

" কেন মা বলেনি?" অবিনাশ গাড়িটা পার্ক করতে করতে বললো। শের ই পাঞ্জাবে ওরা খাবে ঠিক করেছিল আগেই ,তাই শের ই পাঞ্জাবের উল্টোদিকে পার্ক করতে করতে ও উত্তর দিল।

গাড়ি থামতেই ও হাত দেখিয়ে বাকিদের যেতে বলল।" তোরা যা,আমি একটু কথা বলে যাচ্ছি।"

ওরা এগিয়ে গেলো ।অবিনাশ সিটে হেলান দিয়ে বসলো।
" কি বলবে ? তুই কোথায় এখন ? হসপিটালে নেই?" অলকেশ চিন্তিত হয়ে বললো।



" না ,তোমার নির্দেশ মত কাজ করতে এসেছি।" অবিনাশ একটু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।বাবার সাথে ও কোনোদিন এভাবে কথা বলেনি।

অলকেশ স্পষ্ট বুঝতে পারলেন অবিনাশের রাগটা,কিন্তু নিজেকে রাগতে দিলেন না" কি নির্দেশ?"

অবিনাশ পাশের দিকে তাকালো। মিহিরা রাস্তা পেরোচ্ছে ।ও ভালো করে ঐদিকে দেখতে দেখতে বললো " অন্য পথ দেখা।"

" অবিনাশ?!" প্রচণ্ড রাগে এর বাইরে কোনো কথা বলতে পারলেন না অলকেশ।সামনে বসা মিতু পর্যন্ত চমকে উঠেছে।ইনি ফোনটা কানে নিয়ে উঠে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন " তুই কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস, কার সাথে কথা বলছিস ভুলিস না।"

অবিনাশ চুপ করে রইলো।ওর হাতের মুঠি গুলো শক্ত হয়েছে এবার। কিন্তু ও নিজেকে থামিয়ে রেখেছে।

" বাবা ,ভুলিনি,বিখ্যাত মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডক্টর অলকেশ রয় এর সাথে।কিন্তু তুমি বোধ করি এটা ভুলে যাচ্ছো তুমি কার সাথে কথা বলছো বাবা,।"

অলকেশ ঠোঁটের কোন দিয়ে হেসে ওঠার চেষ্টা করলেন।অনেকটা ব্যাঙ্গ করে বললেন " কার সাথে,সার্জেন হতে যাওয়া ডক্টর অবিনাশ রয়ের সাথে?"

অবিনাশ উত্তর দিল না ।এক মুহুর্ত থেমে দাড়ালো, প্রস্তুত হলো পরবর্তী কথা বলার জন্য।তারপর বললো

" না তোমার ছেলে অবির সাথে,তোমার কাছে আমি,মা ,মিতু প্রফেসনাল লাইফের বাইরে কোনো পরিচয় পেয়েছি কোনোদিন ?তুমি গর্ব বোধ কর বাবা তোমার ছেলে সার্জেন,বউ মেট্রন,আর মেয়ে মাধ্যমিকে দারুন রেজাল্ট করেছে,নিট পেয়ে ডক্টর হবে।
লোকজনের কাছে তুমি গর্ব করে বলবে তোমার প্রচণ্ড সফল পরিবারকে নিয়ে কিন্তু তার বাইরে কখনো আমাদের জন্য কিছু ভেবেছ ? আমরা কি চাই ,কিসে খুশি হতে পারি, জিজ্ঞেস করেছ ? হসপিটাল,প চেম্বার করে বাড়ি ফিরেই নিজের ঘরে ঢুকে যাও,কখনো আমাদের পাশে এসে বসেছ? কখনো মিতুকে জিজ্ঞেস করেছ ও কি চায় ? করনি! কারণ তুমি চাইছ ও ডাক্তার হোক। আর কিছু জানার প্রয়োজন তোমার ছিলো না।তুমি জানো মিতু পাইলট হতে চায়....."

" মিতু তোকে এসব বলেছে নাকি......"অলকেশ বলতে গেলো

" বাবা আমার কথাটা শেষ করতে দাও ,তারপর বলো।সারাজীবন তোমার কথা শুধু শুনেই গেছি,কখনো প্রতিবাদ করিনি।তাই আজও অমান্য করবো না"

বলতে বলতেই অবিনাশের মুখের কোণে একটা ব্যাঙ্গ ভরা হাসি ফুটে উঠল।

" তুমি জানতে চাইলে না বাবা,আমি কোথায় ?! আমি দীঘা যাচ্ছি,আর........আমার একটা খুব সুন্দরী জুনিওর আমার সঙ্গে আছে,ও অনেকদিন থেকে আমাকে একটু বেশি পছন্দ করে?! তুমিই বলেছিলে না মিতুর থেকে অন্যদিকে মন নিতে, দীঘার ঘর বুকিং করে নিয়েছি ,তোমার কথা অক্ষরে অক্ষরে ....."

" অবিনাশ,তুই কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস,কি বলছিস তুই নিজে জানিস?" অবিনাশের কথার মাঝেই কেটে প্রচণ্ড রাগ নিয়ে বললো অলকেশ।

এবার অবিনাশের চোখ জ্বলে উঠলো রাগে।

" খুব ভালো করে ভেবেচিন্তে বলছি,এখন চিৎকার করছ বাবা,তখন মনে হইনি যখন পরশু রাত্রে আমাকে বলেছিলে,মিতুর থেকে অন্যদিকে মন দিতে? তুমি নিজেই ভালো করে জানো মিতুর জন্য আমার চিন্তাধারা কেমন,কতটা ভালোবাসি ওকে।,ও যখন দাদা বলতো কষ্ট হতো আমার। বুকের উপর হাত রেখে বলবে বাবা তুমি কিচ্ছু জানো না, জানো না যখন স্কুলে গার্জিয়ান কল হয়েছিলো,ভুলে গেলে থানাতে বসেছিলাম আমি, কার জন্য করেছি জানো না,।মিতুর ওপর একটু আঘাত আমি কোনোদিন সহ্য করতে পারিনি।কিচ্ছু জাননা তুমি বাবা? কিচ্ছু না?"

অলকেশ চুপ করে গেছিলো।মিথ্যে বলতে বাধছিল তার।তিনি সবই জানেন,কিন্তু মানতে চাননি।ভেবেছিলেন বয়স হলে ঠিক হবে ছেলে।



অবিনাশও চুপ করে গেছিলো,সে কোনোদিন বাবা মার মুখের উপর এভাবে বলে না।

,কিন্তু আজ ওর শরীর জ্বলছিল রাগে ।অলকেশ তাকে শাসন করতে গিয়ে বড়ো অশ্লীলতা নিয়ে মিতুকে ভুলে যেতে বলেছিল পরশু রাত্রে।অবিনাশের গায়ে লেগেছিলো মিতুকে অসম্মান করাটা।ও প্রতিবাদ করতে যেতেই চড় মেরেছিল অলকেশ।

" আমি ফোন রাখছি বাবা,পরশু সকালে বা কাল মাঝরাতে ফিরবো........" বলেই একটু থেমে হাসলো " তোমার কাজ সম্পূর্ণ করে।"

অলকেশ কিছু বলার আগেই মুখের উপর ও ফোনটা রেখে দিল। গাড়িটা লক করে শের ই পাঞ্জাবের দিকে এগিয়ে যেতেই আবার ভাইব্রেট করলো ফোনটা।অলকেশ মিতুর নম্বর থেকে আবার ফোন করছেন।অবিনাশ এক মুহুর্ত ভাবলো,ফোনটা কেটে দেবে কিনা।কিন্তু কি মনে হতে ফোনটা ধরলো।



" বাবা,এখন তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না,রাস্তাতে আছি,পরে বলবো।"

......." অবিনাশ ফোন ধরেই বলে নিল এক নিশ্বাসে।ফোনটা রাখতে যাবে তখনই একটা নরম গলা কথা বলে উঠলো।

"দাদা,আমি মিতু,তুই কি আমার উপর রেগে গেছিস ?"।

অবিনাশ স্তব্ধ হয়ে গেলো।মিতুর গলাতে এতটা দুঃখ কোথা থেকে এলো ও জানে না।

অবিনাশের কষ্ট হচ্ছিল।
ওর মনে হচ্ছিল ওর আর ওর বাবার মাঝের জেদে সবথেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে মিতু।অবিনাশের ইচ্ছে করছিল এক্ষুনি ঘোরা ক্যানসেল করে বাড়ি ফিরে জড়িয়ে ধরে মিতুকে।ওকে নিজের সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে বলে " না রে আমি রাগ করিনি,কোনোদিন করতে পারবো না তোর উপর,তুই তো আমার বাচার একমাত্র লক্ষ্য।কিন্তু

।কিন্তু.........ওকে এই কাজটা করতেই হবে,ওর আর মিতুর ভালোর জন্য।অবিনাশ মনে মনে বললো

খুব কষ্ট দিচ্ছি সোনা,কিন্তু একটু সহ্য কর।এটুকু কষ্ট তোকে দিতে আমি বাধ্য।

অবিনাশ কথা বললো " না ,রাগ করবো কেন ? "

" আমি কাল তোর সাথে কথা বলিনি ,তাই তুই
রাগ করেছিস না?" অবিনাশের মনে হলো যেন কোনো নববিবাহিত স্ত্রী বড় ভালোবেসে প্রশ্ন করছে ওকে।

" না রে,সোনা,রাগ করিনি, মা ফিরলো ?"

" না ,এখনও আসেনি,চলে আসবে ,কালকেই তো নাইট করেছে,এখনও কেন ফিরলো না জানি না !"

দুজনে একটু চুপ হয়ে গেলো।
মিহিরা দুর থেকে ওকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়লো ওর দিকে ।তারপর এগিয়ে আসছিলো ওর দিকে।

মিহিরা এগিয়ে এসেই, হাত ধরে টানলো ওর " চলো অবিনাশ,সবাই অনেক্ষন বসে আছে তোমার জন্য।" ওর মুখটা ভীষন খুশি খুশি।

" দাদা,তোর কথা খুব মনে পরছে রে,।" মিতুর গলাটা কান্নার জন্য বুজে গেলো।অবিনাশের সমস্ত শরীর দিয়ে একটা কারেন্ট চলে গেলো যেন।ও থরথরিয়ে কেপে উঠলো অজান্তেই।সেই কম্পন এতটাই ছিলো যে মিহিরা ভয় পেয়ে এগিয়ে এলো " অবিনাশ,।"

অবিনাশ ওর কথা শুনতে পাচ্ছিলনা।ওর কানে ভাসছিল মিতুর কান্না জড়ানো গলা " দাদা,তোর কথা মনে পড়ছে।"

ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ১২

অবিনাশ বিয়ারের বোতল নিয়ে ব্যালকনিতে এলো। ব্যালকনিটা নীল রঙের আলোতে সাজানো, চার তলার উপরে।
হোটেলের সামনের অংশটাতে কাজ চলছে,একটা হোটেল বানানোর। সেটা অর্ধসমাপ্ত হয়ে আছে, ইটের গাঁথুনি গাঁধার পর।
আর কোনো হোটেল না থাকাতে অবিনাশ সামনের সমুদ্র দেখতে পাচ্ছিল।
ওরা দীঘা এসে দুটো রুম নিয়েছে,একটা থ্রি বেড একটা টু বেড। একটাতে ছেলেরা শোবে ,একটাতে মেয়েরা।
....................
" তুই কি পাগল,ভাই। " নিলেষ্ বলেছিল প্রচণ্ড রেগে।

" মানে ,ব্যাপারটা কি বলবি? হটাৎ ফিরে যাবি বলছিস কেন ?"বিকাশ বললো।

" দেখ,বাড়িতে একটু সমস্যা হচ্ছে !" অবিনাশ মুখ ঘুরিয়ে নিল দুই বন্ধুর সামনে থেকে।

" সত্যি কথা বল ত অবিনাশ ,তুই কি মিহিরার জন্য যেতে চাইছিস না ?" বিকাশ এগিয়ে এলো।
...........................
মিতুর ফোনটা অনেক্ষন ধরে ছিলো অবিনাশ। মিহিরার দিকে তাকিয়ে বলেছিল " তুমি যাও ,আমি একটু কথা বলেই যাচ্ছি। " তখনই অন্যমনস্ক ভাবে হাতে লেগে ফোনটা লাউডস্পিকারে চলে গেছিলো। আর মিতু, অবিনাশ কারো সাথে কথা বলছে দেখে প্রশ্ন করেছিল " কে দাদা?"

মিহিরা মিতুর গলা চিনতে পেরে খুব খুশী হয়ে বলে উঠেছিল "মিতু,আমি মিহিরা দিদি বলছি,কেমন আছো?"
অবিনাশ সঙ্গে সঙ্গেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্পিকার মোড সরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ততক্ষণে যা গল্ডগোল হওয়ার হয়েচে।
মিহিরাকে বার বার হাতের ইশারা করার জন্য সে যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে চলে গেলেও মিতু খুব গাঢ় গলাতে বললো " দাদা তুই কোথায় ? মিহিরাদির সাথে কি করছিস এত রাতে?"
অবিনাশ এক মুহুর্ত চুপ করেই বললো
" ওই দীঘা যাচ্ছি রে,হটাৎ প্ল্যান হলো,বিকাশ, নিলেশ ,মধুরিমাদি ছিলো , তাই মিহিরাদি ও এসেছে সবার সঙ্গে। "

" ও। ফিরবি কবে ?"

" কাল রাত্রে,বা পরশু সকালে ধর। তোকে বাবা বা মা বলেননি আমি ফিরবো না আজকে ?"

" না তো,..........( একটু চুপ করে রইলো মিতু)

" ও,......( অবিনাশ কথা না পেয়ে চুপ করে গেলো) ...
শুয়ে যা মিতু,অনেক রাত হলো। "

" তুই সত্যি আমার উপর রেগে নেই দাদা?"

" না ,রে পাগলি,তোর উপর রাগতে পারি ?!"

"হম,......( দুজনেই একটু চুপ করে রইলো) কিন্তু আমার সত্যি তোর কথা অনেক মনে পরছে রে !"

অবিনাশ নিজের হাতের মুঠো শক্ত করলো। ও কি ভুল সিদ্ধান্ত নিল। ও চাইছিল মিতুর মধ্যে দাদার বাইরেও কোনো ফিলিং ওর প্রতি রয়েছে কিনা দেখার?!
পরশু বাবার বলা কথাগুলোই ওকে এই প্ল্যানটা দিয়েছিল।
বাবা ওকে অন্য অপশন দেখতে বলেছিল।
তখনই ওর মাথাতে এসেছিল যদি ও অন্য কারোর সাথে ঘনিষ্ট হবার অভিনয় করে তাহলে মিতু কিভাবে ব্যাপারটা দেখবে ?!মিতুর মধ্যেও কি ঈর্ষা কাজ করবে ?
এতদূর অব্দি ব্যাপারটি ঠিক ছিলো। বাবাকে যথেষ্ট ভয় দেখানো গেছিলো,এমনকি মিতু পর্যন্ত ওকে ফোন করেছিলো। অবিনাশের খুশি লাগার কথা ছিল কিন্তু সেটা লাগছিল না।
মিতুর গলাটা ওকে ভাবতে বাধ্য করছিল। অবিনাশের ইচ্ছে করছিল,এক্ষুনি বাড়ি ফিরে যায়।

...............
বিকাশ, নীলেস,মধুরিমা আড্ডা মারছিল, শের ই পাঞ্জাবের বাইরের খাটিয়াতে বসে। মিহিরা আশপাশে ছিলো না,সম্ভবত বাথরুমের দিকে গেছিলো।

অবিনাশ কিছুক্ষন ভাবলো,তারপর নীলেস,বিকাশের সামনে গিয়ে বললো " এদিকে শোন একটু কথা আছে। "

.......................



অবিনাশ চুপ করে রইলো। ও বলতে পারলো না,মিহিরা না,কোনোদিনই ছিলো না,ওর কষ্ট হচ্ছিল মিতুর জন্য।
কিন্তু হটাৎ মিতুর জন্য বাড়ি ফিরতে চাইলে কোনো বড় এক্সকিউজ দিতে হবে বিকাশ আর বাকিদের কাছে। কোনো অসুখের কথা বললে বাকি সবাই ওর সাথে ফিরে যেতে চাইবে,মিতুকে দেখতে। ব্যাপারটা অন্যদিকে চলে যাবে পুরো। আর মিতুর শরীর খারাপ নিয়ে মিথ্যে বলতে ওর ইচ্ছে করছিল না।

ওর নীরবতাকে হা ধরে বিকাশ বললো

"অবিনাশ,একটু বোঝার চেষ্টা কর,আমরা তোর উপর চাপিয়ে দিচ্ছিনা কিছু। কিন্তু তোর যথেষ্ট বয়স্ হয়েছে। আর মিহিরা তোকে সত্যি পছন্দ করে,। ও এত সুন্দর দেখতে,এত ভালো মেয়ে। .........দেখ ভাই তুই না চাইলে আমরা আর জোর করবো না কিন্তু ভেবে দেখতে পারিস ব্যাপারটা। তবে তুই যদি না চাস,আমরা তোকে জোর করবো না! কিন্তু ব্রো ,সেজন্যে তুই আমাদের ফেলে নিশ্চিত ফিরে যাবি না? কতদিন পর আমাদের টাইম ম্যাচ করলো,এরপর আবার কবে প্ল্যান হবে জানি না। "
নিলেশ এতক্ষণ অন্যদিকে মুখ করে ছিলো। বিকাশ অবিনাসকে অনেকটা বুঝিয়ে মধুর দিকে এগিয়ে গেলো।
অবিনাশ আর নিলেশ দুজনেই বেশ কিছুক্ষন পাশাপাশি দাড়িয়েছিল। এতটা রাত হওয়া সত্বেও হোটেলে প্রচণ্ড ভিড়। একের পর এক গাড়ি ঢুকছিল পার্কিং লটে।
অবিনাশ আর নিলেশ দুজনেই অনেক্ষন রাস্তার দিকে তাকিয়েছিল। দুদিক থেকে গাড়িগুলো এসে ওদের সামনে থেকে চলে যাচ্ছিলো নিজের গন্তব্যে।

" অবিনাশ,একটা প্রশ্ন করি ?"

" হম" অবিনাশ অনেক্ষন চুপ করে উত্তর দিল।

"আমি তোকে সবথেকে বেশিদিন চিনি,সম্ভবত,তাই এটা আমি বলতে পারি কোনো মেয়ের জন্য তুই হটাৎ আমাদের ছেরে চলে যাবি না,সেটা মিহিরা হোক বা তার থেকেও সুন্দর কোনো মেয়ে। "
নিলেশ ঘুরে দাড়ালো অবিনাশের দিকে।
" আসল কারণটা কি বলবি ?"

অবিনাশ চুপ করে ভাবছিল। ঠিক কি উত্তর দেবে ও।
এক মুহুর্ত,দু মুহুর্ত করে কেটে যাচ্ছিল সময়।

"মিতু। " অবিনাশ বুকের কাছে দুহাত জোর করে ঘুরল
নিলেসের দিকে। " আমার বাড়ি ফিরতে চাওয়ার কারণটা হলো মিতু। "
নিলেসের মুখে বিষ্ময়ের ছাপ ফুটে উঠলো। ও বড় তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আবিনাসকে লক্ষ্য করছিল। অবিনাশ ওর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো না,ও সুযোগ দিচ্ছিল ওর চোখ থেকে নিলেস যাতে সবকিছু পড়ে নিতে পারে। নিলেসের চোখটা হটাৎ বড় বড় হয়ে উঠলো হটাৎ
" আমি একটা সন্দেহ অনেকদিন থেকে করি অবিনাশ,কিন্তু সেটা এতটাই অসম্ভব,আমি নিজেই ভাবতে চাইনি,কিন্তু....."
নিলেস এগিয়ে এলো।
" মিতুকে তুই বোনের বাইরেও অন্যভাবে দেখিস ?" নিলেসের গলাটা কাপছিল,যেন তার নিজেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তার নিজের করা প্রশ্নটা।

অবিনাশ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো। তারপর উত্তর না দিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নিল অন্যদিকে।

" তুই পাগল অবিনাশ,কি করছিস তুই নিজে জানিস ?" নিলেস চিৎকার করে উঠলো। সেটা এতটাই যে আশপাশের লোকজন ঘুরে তাকালো।

নিলেস চারপাশের দিকে তাকিয়ে গলা নামিয়ে বললো
" তুই নিজের বোনের প্রতি......???? ছি ছি...? এটাকে নিয়ে একটা গালাগালি আছে জানিস ?"

" জানি,কিন্তু তুই কি জানিস আমি কিছু ভুল করিনি। " অবিনাশ হটাৎ প্রচণ্ড রেগে বললো।
" ভুল করিসনি ??? নিজের বোনের প্রতি ফিলিং আসছে তোর ? আর তুই ভুল করিসনি??এই জন্যই এতদিন কোনো সম্পর্কে যাসনি বল ? এই জন্যই মিতুর দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে কেলিয়ে এসেছিস বল ?! আর তুই বলছিস তুই ভুল করিসনি ?"
অবিনাশ চুপ করে রইলো।

" উত্তর দে অবিনাশ,তোর বাবা মা জানলে কি হবে ?! চুপ করে থাকলে উত্তর আসবে না অবিনাশ ,তুই এখনও বলবি তুই ভুল করিসনি ?"

অবিনাশ এবার হটাৎ ঘুরল নিলেসের দিকে।
" না আমি ভুল করিনি,কারণ...." অবিনাশ থেমে গেলো।
"। কি কারণ অবিনাশ,কি এমন কারণ দেখাবি যেটা তোর নোংরামিকে ঢাকতে পারে। বল অবিনাশ বল কি এমন কারণ ?"

" কারণ মিতু আমার নিজের বোন না ,কোনোদিন ছিলো না। তুই শুনতে চাইছিলি না ,তবে শোন। যেদিন থেকে মিতুকে আমি মার হাত থেকে কোলে নিয়েছি সেদিন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে ওকে সব খুশি দেব। ও শুধুই আমার হবে ! আজ অব্দি এখনও অব্দি আমি সেই প্রতিজ্ঞা রেখেছি। "

নিলেস কথা হারিয়ে ফেলেছে।

" বুঝতে পারিস আমি আজকের জগতের ছেলে,বেসিক নিড আমারও আছে ,এটুকু ত বুঝিস নিজে ছেলে হয়ে ! তাও এতদিন কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে যাইনি ! এখনও,আজকের জগতের ছেলে হলেও। এগুলো তোকে শোনানোর জন্য বলছি না! শুধু এটাই বোঝাতে চাইছি মিতু আমার কাছে কি !"

নিলেস মাথার চুলের মধ্যে হাত দিয়ে খামচে ধরছে। সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে কি উত্তর দেবে। তার মনে হচ্ছিল কোনো সিনেমা ঘটছে তার সামনে। এক্ষুনি সেটা শেষ হলেই আবার বাস্তবে ফিরে আসবে সে।

"ত মিতুর পরিচয় কি ?" নিলেস ভীষন আসতে করে বললো।

" আমি বলতে পারবো না তোকে?! মিতু এখনও কিছুই জানে না,ও যদি জানতে পারে ও হটাৎ নিতে পারবে না রে এত কিছু ! মিতুকে আমি চিনি,ও ভীষন নরম বাচ্চা মনের মানুষ। .......আর আমি চাইনা ওর কোনো ক্ষতি করতে ..........."
অবিনাশ কেদে ফেললো প্রায়।

" ত তুই কি চাইছিস এখন অবিনাশ। ?"

" মিতুকে বুঝতে ! আমি জানি ও আমার বোন না,কিন্তু ও জানে না। এতদিন আমি জানতেও দেইনি ওকে। শুধু চুপ করে থেকে পাশে দাড়িয়েছি ওর। কিন্তু.......আমিও একটা ছেলে নিলেস,আমার গা জ্বলে যায় মিতুকে অন্য কারো সাথে কল্পনা করলে। " অবিনাশের চোখ জ্বলে উঠলো।
নিলেস অবিনাশের দিকে তাকিয়েছিল। ও সম্ভবত বুঝতে পারছিল এতদিন মিতুকে নিয়ে অবিনাশের এত পসিশিভ হওয়ার কারণ।

" মিতু আমাকে দাদা বলে চেনে,এতদিন আমিও সেই মুখোশ পরে ছিলাম,কিন্তু এখন পারছি না আর। জীবনে একটাই মেয়ে চেয়েছিলাম,অথচ আমার অবস্থাটা ভাব একবার,........তাই আমি সুযোগ নিতে চাই,দাদার বাইরে দাড়িয়ে অবিনাশ হতে চাই ওর সামনে,আমি দেখতে চাই দাদার বাইরে ও আমাকে একটা পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হিসেবে দেখতে চায় কিনা ?"

" আর তাই তুই মিহীরাকে ব্যাবহার করতে চাইছিস অবিনাশ!? যাতে মিতুর মধ্যে তোকে নিয়ে ইনসেকুরিটি তৈরি হয় , ঈর্ষা তৈরি হয়?? অবিনাশ তুই এত নেমে গেছিস? মিহীরা ভালো কি খারাপ সেটা নিয়ে আমি মন্তব্য করবো না,কিন্তু ও তোকে ভালোবাসে এটা সম্ভবত সবাই জানে। তুই এভাবে ব্যাবহার করবি ওকে?"

" দেখ ভাই,আমার নিজেরও এখন খারাপ লাগছে,কিন্তু কি করবো বলবি?!"

দুজনেই অনেক্ষন চুপ করে ছিলো। তারপর নিলেস কথা বললো।
" দেখ,আমার মনে হয় তুই আজ আমাদের সঙ্গে চল,মিতুকে একটু সময় দে,আর তুই নিজেও একটু সময় নে। "

অবিনাশের মনে হলো নিলেস যা বলছে ঠিকই বলেছে অন্তত এই মুহূর্তে।
ওরা দুজন এগিয়ে যাচ্ছিলো বাকিদের কাছে। নিলেস শেষ প্রশ্ন করলো
" যদি,মিতু তোকে মেনেও নেয়,সমাজকে মানাবি কি করে ?"
" আমি সমাজ মানি না তুই জানিস নিলেস!"

" তুই না মানিস মিতু ত মানে! ওর কথা ভাববি না?"

" আগে মিতু আমাকে মানুক,বাকি সব কিছু তারপর ঠিক করেই নেব,। "

নিলেস চুপ করে গেছিলো।



..............
আজকে সারাদিন অবিনাশ নিজেকে ঘর থেকে বের করেনি। বন্ধুরা অনেক বলা সত্বেও সমুদ্রে যাইনি। সারাদিন একেরপর এক বিয়ার খেয়েছে,আর শুধু ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকেছে,কিন্তু একটাও ফোন ঢোকেনি। মিতু আজ একবারও ফোন করেনি সারাদিনে।

অবিনাশ অনেকবার নিজে ফোন করতে গিয়েও থমকে গেছে,ও যদি ফোন করে ওর উদ্দেশ্য সফল হবে না।

ঘরের বেল বাজলো।

অবিনাশ ব্যালকনি থেকে বেরিয়ে দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলো, মিহিরা দাড়িয়ে আছে একটু বেশিই খোলামেলা পোশাকে।
অবিনাশের মাথা ঝিমঝিম করছিল সারাদিন এতগুলো বিয়ার খাবার পর।
ও কথা বললো " তুমি বেরও নী ওদের সাথে ?"
মিহিরা একটু এগিয়ে এলো।
" না,শরীর ভালো লাগছিলো না। "
" ও" দুহাতে দরজার দুপাশ ধরে পুরো দরজা গার্ড করে দাড়ালো।
" বাইরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলবো ?? ভিতরে আসতে বলবে না?"



" এম,... মানে দেখো রুমে আর কেউ নেই ত,আমি তুমি একঘরে ব্যাপারটা সবাই ভালো চোখে দেখবে না। "

" তাহলে আমি ফিরে যাবো অবিনাশ?!আসলে আমার তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল হটাৎ। "মিহিরা গলাটা অনেক নামিয়ে বললো।

অবিনাশের চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। অ্যালকোহলের প্রতিটি বিন্দু স্তিমিত করে দিচ্ছিল ওর নার্ভের কাজ করার ক্ষমতা।
ও শুধু দুর থেকে শুনতে পাচ্ছিলো মিতুর কান্না জড়ানো গলা " দাদা,তোর কথা খুব মনে পরছে। "

অবিনাশ যেন দেখলো মিতু দাড়িয়ে সামনে,ভীষণ নিষ্পাপ মুখটা ভিজে গেছে চোখের জলে। আর ও বলে যাচ্ছে" মনে পড়ছে তোর কথা। "
অবিনাশ মিতুর হাত ধরে নিজের দিকে টেনে জড়িয়ে ধরলো সঙ্গে সঙ্গে " আমাকে ক্ষমা কর সোনা,আমি ভীষণ ভুল করেছি ,তোকে এত কষ্ট দেবার অধিকার আমার নেই রে। "

মিহিরার শরীরের উপর অবিনাশের দেহের চাপ বাড়ছিল,আর কানের কাছে বলা কথাগুলো"আমাকে ক্ষমা কর সোনা,আমি ভীষণ ভুল করেছি ,তোকে এত কষ্ট দেবার অধিকার আমার নেই রে। "



মিহিরা বিশ্বাস করতে পারছিল না অবিনাশ ওকে অ্যাকসেপ্ট করেছে। ও আরো গাঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরলো।
অবিনাশ মিতুকে চোখের সামনে দেখে আরো কাছে এনেছিল স্পষ্ট করে দেখার জন্য। মিতুর গালের উপর গড়িয়ে নামা জলটা অবিনাশের নিজের উপর সব নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দিচ্ছিল। ও মিতুকে দুহাতে ধরে আনছিল মুখের অনেক কাছে..........ও মিতুকে আগলে ধরতে যাচ্ছিল। বাঁচাতে চাইলো সব দুঃখ থেকে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ও থমকে দাড়ালো। ঘোলাটে চোখেও ও দেখলো ওটা মিতু না,মিহিরা।

সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে সরে দাড়ালো অবিনাশ
" তুমি এখানে কি করছো মিহিরা?"

" অবিনাশ,তুমিই ত ঘরে ডাকলে আমাকে। "

অবিনাশ নিজের উপর নিস্ফল রাগে মাথার চুল চিপে ধরলো।
" সরি সরি,আমি একটু বেশি ড্রিংক করেছিলাম ,কিন্তু তুমি প্লিজ বাইরে যাও। "

" অবিনাশ,তুমি কি আমাকে একটু সুযোগ দিতে পারো না?" মিহিরা এগিয়ে এসে স্পর্শ করলো অবিনাশের হাত।
অবিনাশ এতটাই জোরে সরিয়ে নিল যে মিহিরার হাতে লেগে গেলো।

" প্লিজ,এই নোংরামিতে আমি সামিল হতে পারবো না,প্লিজ মিহিরা আমাকে একটু একা থাকতে দাও। "

মিহিরা ফোপাচ্ছিলো,এত বড় অপমান ওকে পাগল করে দিচ্ছিল। ও বুঝতে পারছিল অবিনাশ নেশার জন্য ওকে অন্য কেউ ভেবে নিয়েছে। মিহিরা কেদে ফেলছিল,রাগে,দুঃখে অপমানে,। ও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো ও জেনেই ছাড়বে কে সেই মেয়ে।
মিহিরা প্রচণ্ড রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই অবিনাশ কোনোক্রমেই ঘরের দরজা আটকে শুয়ে গেলো। ওর ঘুম দরকার,সঙ্গে অনেক স্বপ্ন দেখা।



"তুঝে সব হই পাতা হই না মা " রিংটোন হয়ে যাচ্ছিল। অবিনাশ বেশ কিছুক্ষন এদিক ওদিক করে ফোনটা ধরলো

ভীষণ জড়ানো গলাতে "হেলো" বলতেই ওর মার চিৎকার ভেসে এল
" বাবু তুই এখন কোথায় ?"

" দীঘার হোটেলে,বলেছিলাম না। "

" তুই এক্ষুনি বাড়ি ফিরে আই। "

" কেন,বাবার আমাকে মনে পড়ছে নাকি?"

" মিতুকে তোর বাবা ঘরে আটকে রেখেছে,আমি এত বলছি শুনছে না। "

অবিনাশ মিতুর নাম শুনেই লাফিয়ে উঠলো। সব নেশা কেটে গেলো যেন।
" কি হয়েছে মা?"

" তোর বাবা আজকে মিতুকে একটা ছেলের সাথে একটু বেশি ঘনিষ্ট হতে দেখেছে,আর আশেপাশের লোকজন ছেলেটাকে মারতে গেলে মিতু নাকি সবার সামনে বলেছে ও ছেলেটাকে বিয়ে করতে চায়, তাই কেউ যেন ওর গায়ে হাত না তোলে। অবিনাশ তুই শুনতে পাচ্ছিস। ?"

অবিনাশ কোনো কথা বললো না কিছুক্ষন। তারপর প্রচণ্ড ঠান্ডা গলাতে বললো

" আমি বাড়ি যাচ্ছি। " বলেই ফোনটা কেটে দিল।
ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ১৩

"সত্যিই তোর কথা খুব মনে পড়ছে রে" মিতু ফোনটা ধরে বলেছিল অবিনাশকে ।
অবিনাশ চুপ করে গেছিল।।
মিতুও অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল।
মিতুর মনে হচ্ছিল দাদা সম্ভবত বিরক্ত হচ্ছে বারবার ফোন করার জন্য । সত্যিই তো অবিনাশ বাড়ি ছেড়ে সেরকম বেরোই না।
একবার বন্ধুদের সাথে বেরিয়েছে এতদিন পর, সে, বাবা সবাই মিলে তাকে ফোন করে শুধু শুধু ডিস্টার্ব করছে ।বিরক্ত হবে নাই বা কেন ?
"দাদা আমি শুয়ে যাব ফোনটা রাখছি "মিতু বলেছিল অবিনাশ কে
"হ্যাঁ শুয়ে যা,রাত হলো।"
অবিনাশ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ফোনটা ধরে চুপ করে।
মিতু বেশ কিছুক্ষণ ফোনটা ধরে রাখার পর অবিনাশ এর কোন কথা শুনতে না পেয়ে কেটে দেয়।
ওর ভীষণ মন খারাপ লাগছিল
মিতুর মধ্যে একটা অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছিল যেটা তার নিজের কাছে স্বীকার করতে নিজের লজ্জা লাগছিল ।সদ্য 18 তে পা দেওয়া মিতু নিজের সহজাত নারীত্বেরবোধ থেকে বুঝতে পারছিল তার ঈর্ষা লাগছে । তার সাথে অবিনাশের মুহূর্তগুলো কেউ যেন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে,মনে হচ্ছে তার।
মিতুর মধ্যে অনেকগুলো অনুভূতি একসাথে কাজ করছিল । অবিনাশ কি বিরক্ত হচ্ছে তার বারবার জিজ্ঞাসাতে । দাদার সাথে মিহিরাদিদিকে তো খুব সুন্দর লাগে তাহলে মিতুর মনে এরকম চিন্তা আসছে কেন?

নিজের দাদার প্রতি উপর যে ফিলিংস গুলো আসছে এগুলো কি আদৌ স্বাভাবিক ???!!তার এতদিনের সংস্কার তার মাথার মধ্যে বারবার বলতে শুরু করল না ,না, কোনদিনই না এটা কখনোই স্বাভাবিক না । কিন্তু তার মনের একটা কোন যেন বলে উঠতে গেলো সে কোন ভুল করছে না
অথচ সে বুঝতে পারছিল না তার মনে কেন এরকম লাগছে।নিজের দাদার প্রতি ফিলিং এত অস্বাভাবিক যে কিভাবে তার মন কিভাবে এটাকে ভুল ভাবছে না।

মিতুর বারবার মনে হচ্ছিল ও অবীনাসকে নিজের জীবনে বারবার জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে।দাদা সম্ভবত বিরক্ত হচ্ছে ।ও দাদার সব ব্যাপারে নাক গলানোর চেষ্টা করছে ভাবছে দাদা।মিতু একটা আঠেরো বছর বয়োসী মেয়ে।অথচ ও একদিন দাদাকে না দেখেই বাচ্চাদের মত দাদাকে ফোন করে করে বাড়ি ফিরতে বলছে ? কোন প্রাপ্ত বয়োসি ছেলে মেনে নেবে এটা?? দাদা নিশ্চয় ভাবছে ও দাদার গায়ে বেশি পরছে ?! কিছু পারে না ও।দাদার খুব বিরক্ত লাগছে সম্ভবত ওর এত গায়ে পরা ?!
মিতুর বারবার ইচ্ছে করছিল,অবিনাশকে একবার ফোন করে,একটু কথা বলে।এমনকি কথা না বললেও দাদার নিশ্বাসের শব্দ শুনে নেয় একবার।

কিন্তু .....


না মিতু ফোন করবে না।আর ও দাদার বিরক্তির কারণ হবে না।
মিতু অর্ককে ফোন করলো।

" হ্যাল্লো"

" বলো মিতু , জান,দুদিন ঠিক করে কথা বলছো না কেন ? শরীর খারাপ ?" অর্ক বললো।

মিতু নিজের ভিতরের কথাগুলো কাউকে বলার জন্য পাগল হয়ে গেছিলো।

মিতু জানে এগুলো বাবা মাকে কোনোদিন বলতে পারবে না।বাবা মা ওকে ঘেন্না করবে ,নিজের দাদার প্রতি ফিলিং এর জন্য।
" অর্ক,তোমাকে কিছু বলার আছে ?" মিতু ইতস্তত করে বললো।
" বলো না,এত ভাবছো কি ?"অর্ক উৎসাহিত হয়ে বললো।
" আমি কি করে বলবো বুঝতে পারছি না তোমাকে ?" মিতুর ইতস্তত ব্যাপারটা বেড়ে গেছে অনেক।

" বলো না ?! আমাকেও বলতে এতটা সমস্যা ?"

" তুমি খারাপ ভাববে না ত ?"

" আমি কি আমার জানকে খারাপ ভাবতে পারি মিতু সোনা ?"

" থ্যাংকস অর্ক,তুমিই একমাত্র আমাকে বোঝ !"

" আমার ভবিষ্যত বউকে একটু বুঝতেই হবে বলো !"
বউএর উল্লেখ্য হওয়ার জন্য মিতু পুরো লাল হয়ে গেল।ওর মনে হলো অর্ককে সব বলা যায়।

"কিছুদিন ধরে একটা খুব বাজে ব্যাপার হচ্ছে !" মিতু কেটে কেটে বললো।

অর্ক চুপ করে ওকে বলার সুযোগ দিলো।
" তুমি আমাকে অনেক খারাপ ভাববে জানি,কিন্তু.........তুমি আমার দাদাকে সেদিন দেখেছ তো ?! কেমন লাগলো দেখে ?"

" কেমন বলতে কি বলছো বুঝলাম না !? যদি জিজ্ঞেস করো দেখতে কেমন তাহলে এককথায় যে কেউ বলবে খুবই হ্যান্ডসাম।কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না মিতু,তুমি এই প্রশ্নটা আমাকে করলে কেন ?!এটার সাথে তোমার মন খারাপের কি ?"



" দেখো,আমি জানি তুমি আমাকে খারাপ ভাববে......"
মিতু কথা শেষ করার আগেই অর্ক ওর কথার মাঝপথ থেকে ধরে নিল।" তুমি বারবার নিজেকে খারাপ বলছো কেন ? কি এমন হয়েছে সেটা ত বলো ?!"

মিতু ঢোক গিলে দম নিলো।
" আচ্ছা,নিজের দাদাকে ভালো লাগলে কি সেটা খারাপ ?"

" দাদাকে ভালো লাগবে সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তুমি সম্ভবত সেটা বলোনি তাই না মিতু,কি বলতে চাইছো স্পষ্ট করে বলো !" অর্কর গলাটা অনেক ঠান্ডা।মিতুর ভয় লাগছিল।কিন্তু উত্তর দেওয়াটা দরকার ভীষণ।

" কিছুদিন ধরে দাদা আমাকে একটু বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে,আমি আসলে এতদিন দাদাকে এভাবে দেখিনি।
মানে তোমাকে কি বলবো ? দাদা বেস্ট ছেলে আমার দেখা।আমি কাউকে দেখিনি দাদার মত। মানে কিভাবে বলবো তোমাকে দাদা এত সুন্দর দেখতে,এত ভালো পড়াশুনাতে,দাদা ব্ল্যাক বেল্ট জানো,দাদা যেন সত্যি কোনো সিনেমার হিরো,মাঝে মাঝে অবাক লাগে কোনো বাস্তব চরিত্র কি আদৌ এরকম হতে পারে......"মিতু নেশার ঘোরে বলে যাচ্ছিলো।হটাৎ করে তার মনের সব দরজা খুলে গেছিলো।মিতু নিজেও জানত না অবিনাশ তার মনে এতটা অংশ জুড়ে আছে।কিন্তু তার কথার প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলো অর্কর কথাতে
" তুমি এমনভাবে কথা বলছ যেন তুমি তোমার প্রেমিকের বর্ণনা দিচ্ছ?! সত্যি নাকি সেটা।" অর্ক ব্যাঙ্গাত্মক গলাতে বললেও মিতুর অর্ক গলাতে স্পষ্ট রাগের কথা শুনতে পেলো।
ও থেমে গেলো।কোথাও গিয়ে ওর মনে হলো অর্ক কে সব বলা ঠিক হচ্ছে না।কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।অর্ক বেশ জোর গলাতে বললো
" নামে দাদা আর পিছনে কি ? বা,বা ,বা ।ভেবেছিলাম তুমি শিক্ষিত ঘরের মেয়ে ।এত অভদ্র নোংরা ভাবিনি।বেশ্যারা বোধকরি তোমার থেকে ভদ্র..........."

" অর্ক,।" মিতু চিৎকার করে উঠেছিল।

" চিৎকার করো না,আমি এত নোংরা মেয়ে র সাথে সম্পর্ক রেখেছি ভাবলেই আমার অসহ্য লাগছে।না জানি কি কি করেছ,আর আমার সামনে সতী সাজার অভিনয় করছ ?"

মিতু কেদে ফেলেছিল ," প্লিজ,আমার কথা শোন,আমি কিছুই করিনি দাদার সাথে,প্লিজ, একটু শোনো।"

" আমি ফোন রাখলাম,আর আমাকে ফোন করবে না।" বলেই অর্ক ফোন কেটে দিয়েছিল।
মিতু বারবার চেষ্টা করছিল ফোন করার।শেষে অনেক রাত্রে ফোনটা রিসিভ করেছিলো অর্ক।মিতু তখন অঝোর ধারাতে কাদছে।কি ভুল করেছিল সে।একমাত্র অর্ক আছে যে তাকে ভালোবাসে।সেই মানুষটাকেই সে দূরে করে দিচ্ছিল।
" প্লিজ অর্ক,তুমি যা বলবে করবো,প্লিজ রাগ করো না।"

" কালকে বিকেল ৩ টের সময়ে রবীন্দ্র সরোবরের গেটে দেখা কর।" বলেই ফোনটা কেটে দিল অর্ক।
.....................

নিচে বাবা মার প্রচণ্ড ঝামেলা শুনতে পাচ্ছিল ও।ওর ইচ্ছে করছিল না আর কোনো শব্দ শোনে।মা বাবাকে বারবার বলছিল " দেখ,তুমি এটা ভুল করছো,মিতুকে আটকে রাখছো কেন এভাবে ?! বাচ্চা মেয়ে ,একটা ভুল করেছে ,বুঝিয়ে বললে হবে ।এসব পাগলামি করছো না তুমি ?"

" পাগলামি আমি করছি ? জানো ডাক্তার বিশ্বাস ওকে প্রথম দেখে যখন গাড়ি থামিয়ে আমাকে দেখায়,আমি বিশ্বাস করতে পারিনি ও আমার মেয়ে।কি লজ্জা।একটা ডাক্তারের মেয়ে,দুদিন পর নিজে ডাক্তার হবে,অথচ রাস্তাতে দাড়িয়ে প্রেম করছে?!"

মিতু আর শুনতে চাইল না,কানে হেডফোন দিয়ে জোরে গান চালিয়ে দিল।
মিতু জানলো না নিচে তর্ক আরো বাড়ছে।
" তোমাকে বলেছিলাম, কার না কার রক্ত?! এখন নিজের রূপ দেখাতে শুরু করে দিয়েছে না ?"

" চুপ করবে তুমি ?! সব দোষ আমার,তাই না ?!তুমি নিজে চাওনি ওকে ?! ওর জন্য নিজের আগের হসপিটাল,আগের বাড়ি ছেরে আসোনি? নতুন করে শুরু করনি জীবন ?! সে কি শুধু আমার কথা শুনে ? নাকি যাতে মিতুর পরিচয় কারো কাছে না জানানোর জন্য,যাতে ও একটুও কষ্ট না পায়।"





মিতুর বাবা মাথাতে হাত দিয়ে বসে গেছিলেন।তার মনে পড়ে যাচ্ছিল সেদিন কিভাবে মিতুকে তোয়ালেতে মুড়িয়ে বাড়িতে এনেছিলেন দুজনে মিলে।অবিনাশ তখন ঘুমাচ্ছিল।ওকে ডেকে ওর হাতে মিতুকে দিতেই ও অবাক হয়ে তাকিয়েছিল পুতুলটার দিকে।মিতুকে তিনি কখনোই নিজের মেয়ে ছাড়া অন্যকিছু ভাবেননি।আজ তাই তার নিজের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল,তিনি মিতুকে নিয়ে কি কথাগুলো বলেছেন। রমা ওনার পাশে এসে বসলো । ধীরে ধীরে ওনার মাথাতে হাত বোলাতে বোলাতে বললো " সব ঠিক হবে দেখ?!"
" কি ঠিক হবে রমা ,বলবে? অবিনাশ কিরকম জেদী তুমি জানো না ? ও এত সহজে মিতুকে ভুলে যাবে ভেবেছ?! ঝামেলা ত এখন শুরু হলো সবে।"
রমা চমকে উঠেছিলেন,তিনি জানতেন না মিতুর বাবা কিভাবে অবিনাশের কথা জানলো।কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্ন করলেন না।
" দেখ ,মিতুর বয়স কম অনেক,আমরা অবিনাশ কে বোঝানোর চেষ্টা করবো ভালো করে ?! না হলে ভাবতে হবে !"রমা বললো

" কি ভাবতে চাও তুমি ?! তুমি কি ভাবছো ওদের সম্পর্ক বাড়তে দেবে ?"মিতুর বাবা অবাক হয়ে বলেছিল।
" দেখ,ব্যাপারটা অস্বাভাবিক।কিন্তু দুজন সত্যি ত ভাইবোন না।অবিনাশ কে তুমি দোষ দিতে পারো কি ?! আজ অবধি যে ছেলে বোনকে রাখি বাঁধেনি,বোন বলে স্বীকার করেনি,তাকে কিভাবে তুমি দোষ দিতে পারো।ও ত বহুদিন বলেছে ও পারছে না।এখন তুমি বলো না তুমি নিজের ছেলের এতটা কষ্ট বুঝতে পারোনি একেবারেই।"

" তুমি পাগল রমা ,সমাজ কি বলবে ?"

" এর আগের বার যখন মিতুকে মেয়ে বলে মেনেছিলে,তখন সমাজের পরোয়া করেছিলে কি ?! আর একবার মিতুর জন্য সবকিছু ছেড়ে এখানে এসেছি,দরকার হলে দুজনের খুশির জন্য আবার অন্য কোথাও যাবো?!" রমার কথা শেষ হবার আগেই অবিনাশ দরজাটা প্রচণ্ড জোরে খুলে ঢুকলো।
" মা মিতু কোথা ?" বাবার দিকে না তাকিয়ে সোজাসুজি মাকে প্রশ্ন করলো অবিনাশ।

" বাবা, শোন,একটু বস।তোর সাথে কথা আছে।একটু ঠাণ্ডা হ।"রমা এগিয়ে গেলো ছেলের দিকে।
" মা মিতু কোথায় ?' অবিনাশের রাগটা প্রতিটা শব্দে বেরিয়ে আসছিলো,প্রচণ্ড চেষ্টা করে ও নিজেকে ধরে রেখেছিল।

" মিতু ওপরের ঘরে আসে,তুই একটু ঠাণ্ডা হয়ে ...."
রমার কথা শেষ হবার আগেই অবিনাশ তিন চারটে করে সিড়ি টপকে উঠতে শুরু করেছে।পিছনে মিস্টার বিশ্বাস আর রমা চিৎকার করতে করতে।
.............
মিতু ওর প্রিয় গানগুলো শুনেই যাচ্ছিল।অন্য সময় হলে ওর শুনতে খুব ভালো লাগতো।কিন্তু এবার লাগলো না।ওর ইচ্ছে করছিল বাবা মা কি আলোচনা করছে শুনতে।কিন্তু ওর কি এক ভয়ে কান থেকে হেডফোন খুলতে সাহস পাচ্ছিল না।ও বিছানার উপর শুয়ে ছিল,দরজাটা একটু ফাঁক হতেই ও উঠে বসলো।বাবার কাছে ও এবার ক্ষমা চাইবে।বাবা নিশ্চয় ওকে ক্ষমা করে দেবে।
দরজাটা পুরো খুলে গেলো।কিন্তু মিতু সিটিয়ে গেলো পুরো।কারণ প্রচণ্ড রাগে জ্বলতে থাকা চোখ দুটি দিয়ে ওকে প্রায় পুড়িয়ে দিতে দিতে অবিনাশ ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল।
দরজার বাইরে তখন অবিনাশের মা বাবা চিৎকার করে যাচ্ছে দরজা খোলার জন্য।
ক্রমশঃ
( আমার ডিউটি এখন একটু বেশি হচ্ছে।তাই লেখার সময় পাচ্ছিনা বলে এত দেরি হচ্ছে।বিশেষ ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।)
 
শুধুই আমার ১৪

" তাহলে মিতু তুমি সত্যিই বড় হলে দেখছি ?!" অবিনাশ দরজা বন্ধ করেই বলেছিল।
মিতু নিজের মধ্যের সবটুকু শক্তি সঞ্চয় করে কথা বলার জন্য উঠে দাড়ালো।

"তুই নিজে এটা কি করছিস দাদা?" মিতু উঠে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিল অবিনাশের চোখের দিকে। অবিনাশ অবাক হয়ে দেখছিল এক নতুন মিতুকে ।তার চোখে নতুন ভাবে দেখা দিচ্ছিল মিতুর এই প্রতিবাদী সত্তা।

অবিনাশ মিতুর চোখ থেকে চোখ সরালো না। চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল ও বড় ধীরে ধীরে "কেন কি করেছি আমি?"

মিঠু এগিয়ে এলো ওর অনেক কাছে। নিজের দুই হাত দিয়ে দাদা দুই হাতের কনুই এর কাছে হাত ধরল।

"দাদা তুই কি করছিস সেটা আমার প্রশ্ন না,আমার প্রশ্ন কেন করছিস তুই এসব ? খুব মজা লাগছে বল আমি এভাবে কষ্ট পাচ্ছি দেখে ?"

অবিনাশ অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে । তারপর বড় বিস্মিত গলায় বলল "তুই কষ্ট পেলে আমার মজা লাগে কি বলেছে তোকে সে কথা?"

"কেউ বলে নি ?"জোর গলায় বলল মিতু।
....................
মিতুর মনে পড়ে যাচ্ছিল সব কথা। ওর সাথে রবীন্দ্রসরোবরে সামনে দেখা করার পর অর্ক ওকে ভালো করে বুঝিয়ে ছিল অবিনাশ এটা ঠিক করেনি!
মিতুর কি দোষ ?!মিতু অনেক ভালো মেয়ে!

"দেখো সোনা আমি জানি ,তুমি কতটা ভালো মেয়ে ! তোমার দাদা এরকম কেন করছে আমি বুঝতে পারছি না ? তোমার সাথে মজা করার জন্য করেছে সম্ভবত এসব। তুমি হয়তো ভুল বুঝছো কারণ দেখো কিছু মনে করো না কিন্তু তোমাদের বাড়ি যতই আধুনিক হোক এই ধরনের মজাটাকে আমি ঠিক মানতে পারলাম না!"অর্ক ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল।
মিতুর চোখে জল এসে গেছিল । অর্ক একমাত্র যে তাকে বোঝার চেষ্টা করে ।এত তাড়াতাড়ি যে অর্ক কথাগুলো বুঝে যাবে ও ভাবতেও পারেনি ।

"তুমি ঠিকই বলেছো গো, আমি নিজেও বুঝতে পারি না দাদা মাঝে মাঝে এরকম কেন করে ?" মিতু ভাবতে ভাবতে বললো।

" আমার নিজেরই মনে হয় মাঝে মাঝে দাদা হয়তো মজা করার জন্য এরকম করে ?!আমি নিজেই বুঝে উঠতে পারিনা দাদা করতে কি চাইছ?"

অর্ক বেশকিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে ভাবলো। তারপর বললো
"আমার মনে হয় এই প্রশ্নের উত্তরটা একমাত্র তোমার দাদাই দিতে পারবে । তুমি তোমার দাদার সঙ্গে একবার খোলাখুলি কথা বলো ওকে জিজ্ঞেস করো কেন এরকম করছে ও?! তোমাকে নিয়ে এরকম মজা করে ও নিজে আনন্দ নিচ্ছে এটা তো ঠিক না?! দেখ হোয়েতো বন্ধুদের সামনে তোমাকে নিয়ে মজা করছে ?"

" কিন্তু দাদা এরকম কেন করবে ?!" মিতু অবাক হয়ে বলেছিল



" কার কি খেয়াল আমি কি করে বলবো।দেখ সোনা আমি তোমাকে ভালোবাসি,বিয়ে করতে চাই।তোমার সাথে বিয়ে হলে তোমার দাদা আমার শালা হবেন সম্পর্কে।আমি চাইনা তোমাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হোক একটুও ।"

অর্ক অবেগী গলাতে বলেছিল
মিতু লজ্জা পেয়ে গেছিলো বিয়ের উল্লেখ হতে।অর্ক ওকে সত্যি অনেক ভালোবাসে ও বুঝেছিল।ও বড় মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল অর্কর দিকে।

কিন্তু তখনিই ও দেখল রাস্তার উল্টো দিকে হটাৎ দাঁড়ানো সেডান থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ওর বাবা ।এবং তার মুখ জ্বলছে রাগে।
..............

"আমি নিজে বুঝতে পারিনা ভাবিস যে তুই আমার সাথে এভাবে মজা করিস কেন?"

অবিনাশের মুখে একটা হালকা হাসি খেলে গেলো। একই সঙ্গে সঙ্গে উৎকন্ঠার একটা প্রচণ্ড ঢেউ ওকে পাগল করে দিল।

" মিতু কি তবে সবই জানে ????"

"কেন করি আমি?" অবিনাশ বড় ধীরে ধীরে মিতুর কাছে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করল মিতুর চোখের দিকে তাকিয়ে।

"কারণ" মিতু একটু থামল তারপর বলল " আমি তোর কাছে খেলনার পুতুল ছাড়া কিছু নয় দাদা , আমি তোর কাছে মজার পাত্র ছাড়া কিছু নয় ?! তুই দেখতে পাস আমি কেমন ব্যবহার করি আর পরে সেটা মনে করে হাসাহাসি করিস নিজের বন্ধুদের সঙ্গে।"

অবিনাশ নিজেকে ধরে রাখতে পারল না আর ।
দুই হাতে শক্ত করে ধরল মিতুর দু'দিকের কাধ এবং সেটা এতোটাই জোরে ছিল যে মিতু মৃদু শব্দে বলে উঠলো আঃ।

কিন্তু অবিনাশ কর্ণপাত করলো না মিতুর কথাতে।

"আমি তোর কথা নিয়ে বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করি ?" অবিনাশ কেটে কেটে বলল প্রতিটা শব্দ ।

এতক্ষণ মিতু নিজের ভেতরের সমস্ত সাহস সঞ্চয় করে অবিনাশের সম্মুখীন হয়েছিল । কিন্তু অবিনাশের গলার স্বর মিতুর মধ্যে ভয়ের শিহরন ফিরিয়ে আনলো।
অর্কর কথা শুনে অভিনাশকে প্রশ্ন করতে গিয়েছিল ও।মিতু এই মানসিক টানাপোড়েন আর নিতে পারছিল না ।ওর দরকার ছিল জানা অবিনাশ হঠাৎ করে কেন নিজেকে পরিবর্তন করছে?!

এতদিনের অবিনাশের হঠাৎ পরিবর্তন করা ব্যবহার ওকে ভুলিয়ে দিয়েছিল পুরনো অবিনাশকে ।ও ভুলে গিয়েছিল ওর দাদা দুজনকে পিটানোর জন্য থানাতে বসেছিল। ও ভুলে গিয়েছিল স্কুলে মারপিট করার জন্য গার্জিয়ান কল হয়েছিল অবিনাশের। ও ভুলে গিয়েছিল অবিনাশকে ও ভয় পায় ভীষণ রকম ।

মিতু চোখ নামিয়ে নিতে গেছিল ।কিন্তু অবিনাশ সেটা বুঝতে পেরে বেশ রুক্ষভাবে মিতুর গাল ধরে তুললো নিজের দিকে ।

"তুমি কিন্তু আমার উত্তর দিলে না মিতু !"
অবিনাশ কেটেকেটে বলল।

দরজার বাইরে তখন অবিনাশের বাবা-মা ক্রমাগত ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে ।

" অবিনাশ প্লিজ দরজা খুলে দে এরকম করিস না ।" রমা বিশ্বাস করে যাচ্ছিলেন

"বাবু তুই কিন্তু সীমানাটা ক্রস করে যাচ্ছিস ,আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না এবারে !" প্রচন্ড রেগে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললেন অলকেশ

অবিনাশ পাত্তা দিল না! বাবা মা কারো কথার পাত্তা দিলো না ও।

মিঠু দু-তিনবার দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে অবিনাশ এর দিকে তাকিয়ে বলল
" দাদা দরজা খুলে দে, বাবা মা অনেক বার বলছি।"

"আমি আমার প্রশ্নের উত্তর যতক্ষণ না পাবো দরজা খুলবো না ।"
অবিনাশ ঠান্ডা গলায় কেটে কেটে মিতুর দিকে তাকিয়ে বলেছিল।

মিতু কাঁপা কাঁপা গলায় অবিনাশী দিকে তাকিয়ে বলেছিল" কি জানতে চাস বল?"

" তুমি ভালোভাবেই জানো মিতু আমি কি জানতে চাই ?তোমার ঘরে সেদিন যখন এসেছিলাম তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি পরীক্ষার জন্য টেনশন করছিলে সেদিন এই ছেলেটার জন্য কাঁদছিলে তাইনা? কেএফসিতে গিয়ে বসে ছিলে এর জন্য তাই না ?"
অবিনাশ চিবিয়ে চিবিয়ে প্রতিটা কথা বলল আর প্রতিটা কথার শব্দ শুনে মিতু যেন চমকে উঠল বারবার।

"চুপ করে থেকো না মিতু, আমার ধৈর্যের একটা সীমানা রয়েছে কিন্তু !"অবিনাশের হাত আরো শক্ত করে চেপে বসেছিল মিতুর কাধে।

"ছেলেটা কে?" অবিনাশ কেটে কেটে জিজ্ঞেস করল।

মিতু চুপ করে রইল।

"তুমি নিজেকে কি ভাবতে শুরু করেছ আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করছি তুমি কি বুঝতে পারছ না ?মিতু কেঁপে উঠলো ভয় পেয়ে।
অবিনাশের গলাটা যে কোন মানুষের দেহে ভোয়ের শিহরণ তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল।

"তুমি খুব ভালো করে জানো মিতু আমি দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করা পছন্দ করি না!
নামটা কি!?"

মিতু ফুঁপিয়ে উঠলো। কিন্তু অবিনাশ সেটা দেখেও দেখলো না।

"আমি কিন্তু এখনও নামটা শুনতে পেলাম না। ছেলেটা কে?"

মিতু কেঁদে উঠলো এবার। অবিনাশ আরো রেগে গেল। মিতু তার সামনে দাড়িয়ে আরেকটা ছেলের জন্য চোখের জল ফেলছে এটা মানা একেবারেই সম্ভব ছিল না ওর জন্য।

অবিনাশ মিতুর দিক থেকে মুখ সরিয়ে ঘরের চারিদিকে তাকাল । দু'তিনবার এদিক ওদিক তাকাতেই বিছানার বালিশের পাশে পড়ে থাকা মোবাইলটা চোখে পরলো । অবিনাশ মিতুকে কোন প্রশ্ন না করে গিয়ে মোবাইলটা তুলে নিল।



এতক্ষণ মিতু মুখ নিচু করে ফুপিয়ে যাচ্ছিল । কিন্তু অবিনাশকে ফোনটা হাতে নিতে দেখেই ও এগিয়ে গেল অবিনাশের দিকে।

" দাদা তুই আমার ফোনটা নিচ্ছিস কেন?"অবিনাশ ওর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।

" যে প্রশ্নের উত্তর তুমি আমাকে দাওনি মিতু সেটাকে জানার জন্য !"

"দাদা এরকম কেন করছিস?"

অবিনাশ ঘুরে তাকালে মিতুরদিকে।

"আমি কেন করছি ?"অবিনাশ কেটে কেটে বলল প্রতিটা শব্দ ।
"এতদিন ধরে তুমি যে আমাকে মিথ্যা কথা বলছে সেটা ঠিক করেছ তুমি মিতু?"

"আমি কি করতাম বল তোকে যদি বলতাম অর্কর কথা ......" মিতু থেমে গেলো ভোয়ে।অজান্তেই ওর মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে অর্কর নাম।

"ও তবে ছেলেটার নাম অর্ক! খুব ভালো?!
কি করে কি ছেলেটা?"

মিতু দাঁত দিয়ে ঠোট চেপে ধরেছিল ।

"হ্যাঁ আমি জানি দাদা ও তোর মত সফল নয় তোরা আমাকে যার সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা ঠিক করবি তার মত সফল নয় ও। ছেলেটা হয়তো ভালো কিছু করে না কিন্তু ছেলেটা আমাকে ভালবাসে ।জোর গলায় অবিনাশের দিকে তাকিয়ে বলল মিতু।

আবিনসের রাগটা বেরোতে গিয়ে থমকে দাড়ালো ,বদলে এক টুকরো হাসি ওর ঠোঁটের কোণে খেলে উঠলো। অনেকটা ব্যঙ্গাত্মক সেই হাসিটা দেখেই মিতু বুঝতে পারল ওর দাদা হাসছে মনে মনে।আর এই অবিনাশ রেগে যাওয়া অবিনাশের থেকে অনেক বিপদজনক।

"তাই ছেলেটা তোমাকে ভালোবাসে ?"আবিনাশ অনেকটা হেসে হেসে প্রশ্ন করল

মিতু উত্তর দেওয়ার আগেই ওর গলার শব্দ ঢেকে গেল বাইরে বাবা-মার চিৎকারে।

"অবিনাশ তুই যদি দরজা না খুলিস আমরা কিন্তু এবার দরজা ভাঙতে বাধ্য হবে?!" অলকেশ বলে উঠলেন।
এতক্ষণে উত্তর দিল অবিনাশ নিজের বাবার গলা শুনে
"চেষ্টা করে দেখ যদি ভাঙতে পারো!"
ওর বাবা ওর কথাটা শুনে জ্বলে উঠলো।
" তুই কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আবিনাশ। নিজেকে কি মনে করতে শুরু করেছিস তুই ?"

"বাবা একটু থাম, এই প্রশ্নের উত্তর তোমাকে আমি পরশুদিনই দিয়ে দিয়েছি ।বারবার এক প্রশ্ন করোনা।"

"অবিনাশ তুই এত বুঝিস বাবা কেন এরকম করছিস তোর একটা কথা আমাদের পুরো সংসারটা ভেঙে দেবে !"
রমা বিশ্বাস চিৎকার করে বলে উঠলো।

"মা আমি জানি আমার কোথায় থামা উচিত ,কোথায় থামা উচিত না।
একটু চুপ করো আমার মিতুর সাথে কিছু কথা বলা দরকার । আমি সে কথাটা বলে নিয়েই দরজা খুলে দেব। দশটা মিনিট দাড়াও।"

রমা বিশ্বাস আর ওর বাবার গলাটা সত্যি বন্ধ হয়ে গেলো। নিজের ছেলেকে দুজনেই খুব ভালো রকম চিনতেন। তারা জানতেন ফাঁকা কথা বলার ছেলে ও না। যখন 10 মিনিট বলেছে 10 মিনিট পরে ও ঠিক দরজা খুলবে।

অবিনাশ এবার ঘুরে তাকাল মিতুর দিকে।

"ছেলেটা তোমাকে ভালবাসি বলেছে না ?" অবিনাশ গিয়ে বসলো মিতুর খাটের উপর।" কতটা ভালোবাসে তোমাকে?"

মিতা এতক্ষণ মাথা নিচু করেছিল। এবার অবিনাশের দিকে এগিয়ে গিয়ে মুখ তুলে বলল " অনেক বেশি ভালবাসে আমাকে, সবার থেকে বেশি!"

"তাই "অবিনাশ বড় কৌতূহল নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।

"হ্যাঁ"

"খুব ভালো মিতু, তাহলে একটা কাজ কর !" অবিনাশকে কিছুটা হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো মিতুর দিকে ।

"ও যখন তোমাকে এত ভালোবাসে ওকে বলো তোমার ভালোর জন্য তোমাকে ভুলে যেতে।"
মিতু চোখ বড় বড় করে তাকালো অবিনাশের দিকে।

ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ১৫

"মিতু কেউ যখন তোমাকে কোন কথা বলে তার উত্তর দেওয়াটা কি ভদ্রতা এটুকু তুমি জানো না?"

অবিনাশ বলল

" আমি কি বলেছি বুঝতে পেরেছ? হ্যাঁ বা না তে অন্তত উত্তরটা দাও?"
মিতু নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে নিজের দুপাশের রাখল। তারপর জেদি চোখ নিয়ে অবিনাশের দিকে তাকিয়ে বলল
"আমার বয়স 18 হয়ে গেছে, তুই আমাকে সব কিছু বলবি না যে আমি কি করবো!"

অবিনাশী ঠোঁটের কোণে হাসিটা আরো চওড়া হলো।

"তাই মিতু তুমি এতটা বড় হয়ে গেছো?
আমি তো বুঝতেই পারিনি এতদিন!
তোমার 18 বছর হোক কি 30 বছর হোক তুমি আমার থেকে যথেষ্ট ছোট এটা মাথায় রেখো ।
আশা করি আমাদের বাড়ির পরিবেশ তোমাকে এতটুকু শিক্ষা দিয়েছে বড়দের সাথে কিভাবে ব্যাবহার করতে হয়?"অবিনাশ বললো।

"ফোনটা আপাতত আমি নিজের কাছে রাখলাম ,
তোমার অর্কর সাথে আমার কিছু কথা বলা দরকার এবারে।"

অবিনাশ মিতুর দিকে পিছন ফিরে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই মিতু এগিয়ে গিয়ে অবিনাশের এক হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করলো।
অবিনাশ থমকে অর্ধেক ঘুরে দাড়ালো।

অবিনাশের চোখ প্রথমে ওর হাতের উপর রাখা মিতুর হাতের দিকে গেল, তারপর ওর চোখের দৃষ্টি মিতুর হাত বরাবর উপরে উঠতে উঠতে গেল মিতুর চোখের দিকে।

"বলো মিতু ,তো কি বলতে চাও আমাকে,?"

"তুই এটা করতে পারিস না! তুই জানিস সেটা দাদা। আমার ফোনটা আমার কাছে রেখে দে।ওটা তোর নেবার অধিকার নেই।"

"আমি কি করতে পারি না পারি নি সেটা তোমার কাছ থেকে শিখব না মিতু!" অবিনাশ ঠান্ডা গলায় কেটে কেটে বলল প্রত্যেকটা শব্দ।

তারপর মিতুর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ও দরজার দিকে এগিয়ে যেতে গেল।

"দাদা "মিতুর কান্না ভরা গলাটা শুনে অবিনাশ আবার থমকে দাঁড়াল।
" একটা সত্যি কথা বলবি ?"মিতু কথা বলে।অবিনাশ চুপ করে যায় উত্তর না দিয়েই।

"বল কি জিজ্ঞাসা করবি?"
বেশ কিছুক্ষন চুপ করে অবিনাশ উত্তর দিল।

"কেন করছিস দাদা এরকম?
আমাকে নিয়ে মজা করে কি আনন্দ পাচ্ছিস তুই?"

"তোকে যদি আমি উত্তর দিতে পারতাম কেন করছি, তাহলে অনেক ব্যাপারে সমাধান হয়ে যেত!
কিন্তু এখনো তোকে জানানোর বয়স আসেনি কেন এসব করে চলেছি।"

মিতু উত্তেজিত হয়ে পরলো।
" দাদা আমি 18 বছর পরে গেছি! কি এমন কথা যেটা তোরা সবাই লুকোনোর চেষ্টা করিস আমার থেকে?"
চিৎকার করে উঠল মিতু

অবিনাশের দুহাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেল এক অদম্য জেদ, ক্রোধে । একদিকে বাবা-মার কাছে করা ওর প্রতিজ্ঞা আরেকদিকে সবকিছু ঠিক বা ভুল হতে চাওয়ার একটা সুযোগ ।দুটোর মাঝখানে ফেঁসে অবিনাশ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না ওর এই মুহূর্তে কি করা উচিত!

"তোকে আমি একটা প্রশ্ন করি মিতু?" অবিনাশ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলো।

"কর"

"এটা বিশ্বাস করিস কি আমি তোকে ভালোবাসি তোর ভালো চাই ?"

মিতু একটু চুপ করে রইল। তারপর ঘাড় নামিয়ে বড় আস্তে আস্তে বলল
"হ্যাঁ বিশ্বাস করি !তোর থেকে বেশি সম্ভবত বাবা-মাও আমাকে ভালোবাসো না।"

অবিনাশ নিজের মধ্যে এক অবিরত যন্ত্রণা মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে নিজেকে আটকে নিলো। তার ভিতর জমা কষ্টের বিন্দুমাত্র অংশ যেন এক দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে এলো বাইরে।

অবিনাশ নিজের মনেই বললো মিতু তুই কবে বুঝবি সত্যিই আমার থেকে বেশি তোকে কেউ ভালোবাসে না

কিন্তু মুখে সে কথা স্বীকার করার সাহস হলোনা অবিনাশের।

"যদি বুঝিস তোকে ভালবাসি ,আমরা সবাই ভালবাসি , তবে এরকম ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিস না।"

" সেটাইতো আমি বুঝতে পারছি না দাদা কি ভুলভাল সিদ্ধান্ত ? কি এমন করেছি আমি ? প্রেম করা কি এতটা খারাপ ?"

মিঠু এগিয়ে গেল অবিনাশের দিকে ।অবিনাশ দরজার দিকে তাকিয়ে নিজের দুই হাত শক্ত করে মুঠো খুলছিল আবার বন্ধ করছিল নিজের ভিতরের রাগ ,অভিমান ,কষ্টকে ধরে রাখার জন্য।

" দাদা আমার বয়স 18 হয়ে গেছে অথচ আমার কোনো বন্ধু নেই পর্যন্ত । অর্ক আমার জীবনের প্রথম ছেলে যে আমাকে এতটা ভালোবাসে।কি দোষের এটা বলবি ? এরকম কেন করছিস দাদা ?একটু তো বুঝতে পারিস তোরা ব্যাপারটা ।"

মিতুর মুখ থেকে বার বার অর্কর নাম শুনে অবিনাসের পক্ষে নিজেকে ধরে রাখা সত্যিই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। রাগ নিজের সীমানা অতিক্রম করার পর এক প্রচন্ড কষ্টের ঢেউ অবিনাশকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ,তাকে আটকানোর কোনো পথ ওর জানা ছিল না।
যেন সাঁতার না জেনে কেউ পড়ে গেছে সমুদ্রের কোন বিধ্বংসী ঝড়ে ।যেখানে প্রতি মুহূর্তে বিশাল বিশাল ঢেউএর নাগরদোলায় চলতে চলতে কখনোও সে চলে যাচ্ছে জলের মধ্যে ,কখনো ভেসে উঠছে বাতাস থেকে অক্সিজেনের খোজে।
তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে যেন। সে মুখ তুলতে চাইছে একটু শ্বাস নিতে কিন্তু পারছেনা। অবিনাশের যেন সেরকম মনে হচ্ছিল। তাকে যেন কেউ চুবিয়ে ধরেছে জলের মধ্যে।

" মিতু তুমি যথেষ্ঠ বড় হয়েছো বলেই প্রশ্নটা আমি তোমাকে করছি!" অবিনাশ ঘুরে তাকাল মিতুর দিকে।
" যদি আমার আর অর্কর মধ্যে তোমাকে পছন্দ করতে হয়, তুমি কাকে পছন্দ করবে?"

* এটা কি ধরনের প্রশ্ন দাদা ? তুই দাদা হোস আর ও ......."মিতু চমকে গিয়ে বললো।

" মিতু একটা উত্তর আমি চেয়েছি !প্রশ্নটা আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছ ?"
অবিনাশ নিজেকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল।

"এভাবে তোদের দুজনের মধ্যে কোনদিন চয়েজ করা যায় দাদা ?কি ভুলভাল প্রশ্ন করছিস তুই?"

"মিতু, আমার একটা ধৈর্য রয়েছে ! সেই ধৈর্যের পরীক্ষা বারবার নিও না ।আমি বারবার তোমাকে সতর্ক করছি।"
অবিনাশের গলাটা প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে গেছে ।রাগের অন্তিম সীমা অতিক্রম করলে যে ভয়ংকর মানসিক অবস্থাতে চলে যাওয়া যায় অবিনাশ এখন সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে ।মিতু অবিনাশের বলার ধরণে একটু ভয় পেয়ে গেল ।

" তুই " .... মিতু একটু থেমে আবার বললো "তুই আমার দাদা !অবশ্যই তোকে চয়েজ করতাম ।"

মিতু আস্তে আস্তে কেটে কেটে বললো

"আর যদি দাদা না হতাম?"
অবিনাশ প্রশ্ন করা থেকে নিজেকে আটকাতে পারল না ।
কিন্তু মিতু এবার ঘাবড়ে গেল না। অবিনাশের চোখে চোখ রেখে ঠাণ্ডা গলায় আস্তে আস্তে বলল
" তারপরেও আমি তোকেই চয়েজ করতাম।"

অবিনাশের মুখে এক অনাবিল হাসি ভরে গেল।

ও মিতুর দিক থেকে ঘুরে দরজা খুলতে গেল।১০ মিনিট হয়ে গেছে প্রায়।

"দাদা তোকে একটা প্রশ্ন করব?"

অবিনাশ নিঃশব্দে মাথা নাড়লো অনুমতি দিতে।

"কিছুদিন ধরেই তুই এই কথাটা অনেকবার বলেছিস যদি তুই আমার দাদা না হতিস ।"
অবিনাশ ঠান্ডা হয়ে গেল প্রশ্ন শুনে। ও নিজেকে তৈরি করে নিল প্রশ্নের পরবর্তী অংশের জন্য।

"সত্যিই কি তুই আমার দাদা নোস? মা বাবা কি তোকে এডপ্ট করেছ ?
তাই জন্যই কি তুই বারবার বলিস যে তোর সাথে আমার সম্পর্ক কোন খারাপ হবে না ।আমরা কোন খারাপ কাজ করবো না । কারণ তুই আমার সত্যি কারের দাদা নস।?"

অপরিনত মিতুর পরিণত কথা অবিনাশ কে কাপিয়ে দিল পুরো।

ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ১৬

অবিনাশ চুপ করে রইল। ও বুঝে উঠতে পারছিল না কি উত্তর দেওয়া উচিত। কারণ মিতু কথাটাকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছিল। ও যখন প্রথমে অবিনাশকে অ্যাডাপটিভ চাইল্ড ভেবেছে, তখন ওর হঠাৎ করে বেরোনো মুস্কিল এই চিন্তাধারা থেকে। এখন যদি ওকে বলা হয় অবিনাশকে অ্যাডপ্ট করা হয়নি বরং মিতুকে রক্ষার জন্য ওকে এডপ্ট করতে বাধ্য হয়েছিল অবিনাশের বাবা-মা এবং মিতুকে আসন্ন বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে তাদের আগের বাড়ি এবং হসপিটাল ছেড়ে ওর বাবা মা দুজনেই চলে এসেছিল কলকাতায় ,তখন ও ব্যাপারটা কিভাবে নেবে অবিনাশ বুঝতে পারছিল না। মিতুর জন্ম স্বাভাবিক ছিলো না। কেউই জানত না মিতুর অস্তিত্বের কথা। এমনকি মিতুর বায়োলোগিক্যাল বাবাও না। কারণ মিতুর জন্ম অনেকের পক্ষেই খুব বিপদজনক হয়ে যেত।
অবিনাশ একটু বড় হওয়ার পরে জানতে পেরেছিল মিতুর আসল পরিচয়। অবিনাশের বাবা-মা ওকে সামনে বসিয়ে খুব ভালো করে বুঝিয়েছিল মিতুর সুরক্ষার জন্য, এটাই ভালো হবে যেন মিতুর পরিচয় গোপন থাকে।
অবিনাশ ভালো করেই বুঝতে পারছিল মিতুর মধ্যে যে রাগ-অভিমান তৈরি হচ্ছে বয়সের জন্য সেটাকে যদি দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তবে অর্কর দিক থেকে ওকে ফিরিয়ে আনা মুশকিল হবে।

অবিনাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে মিতুর দিকে ঘুরে তাকালো
"তোর হঠাৎ কেন মনে হল আমি তোর দাদা নই?"

মিতু অবিনাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ করে মিতু যেন অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল মানসিকতায়। কিন্তু মিতু সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো না বরং ধীরে ধীরে ও এগিয়ে আসতে লাগল অবিনাশের দিকে।

তারপর অবিনাশের দিকে তাকিয়ে অবিনাশের প্রশ্নের উত্তরটা না দিয়ে প্রশ্ন করল অবিনাশকেই
"তুই কি আমার দাদা ?সত্যিকারের দাদা?"
অবিনাশ বড় করে একটা শ্বাস নিল । তারপর বড় ধীরে ধীরে বলল

"না আমি তোর দাদা নই,সত্যিকারের দাদা নই !" অবিনাশ তীক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল মিতুর মুখের ছোট ছোট ক্যাপিলারি গুলোতে রক্তের হটাৎ আগমনকে। প্রচণ্ড ভাবে চিন্তিত,উৎকন্ঠিত এবং দিশাহারা হয়ে গেছে।

মিতু এতক্ষণ উৎকণ্ঠিত হয়ে অপেক্ষা করছিল অবিনাশের উত্তরের। ওর নিজেরও ভয় লাগছিল অবিনাশকে এরকম প্রশ্ন করার জন্য।
কিন্তু ও দাদার এই উত্তর আশা করেনি। একই সাথে অনেক প্রশ্ন ওর মধ্যে ভিড় করে আসছিল। কেন ,কেন কেন?! কোথায়, কি করে হলো ?!" প্রশ্নগুলো ওর মাথাতে ভিড় জমালেও ও উত্তর খুঁজে পাচ্ছিল না।

" মিতু,আমাকে একটু সময় দিবি?" অবিনাশ এগিয়ে এলো মিতুর দিকে। " আমি জানি তুই জানতে চাস তোর নিজের পরিচয় ,আমি সেটা তোকে বলবো কিন্তু একটু সময় দে। বাবা মার সাথে আমার কথা বলা দরকার। "

" কিন্তু দাদা, মানে ..... কেন ?! কি করে, মানে আমাকে বলিসনি কেন ?"
অবিনাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো। সে অনেকবার বলতে চেয়েছে ,কিন্তু পরিস্তিতি তাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।

" একটু সময় দে ,আমি জানি তোর পক্ষে অপেক্ষা করা মুস্কিল কিন্তু....." অবিনাশ তাকালো ওর দিকে।
কিছুক্ষন দে"
মিতু চুপ করে ঘাড় নারলো। অবিনাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগোলো।
..................
" মিতুকে সব বলে দেওয়ার সময় এসেছে আমার মনে হয় !" অবিনাশ বাবার দিকে তাকিয়ে বলল। অবিনাশ ডাইনিং এর সোফার উপর ঝুঁকে বসেছিল সামনের দিকে। ওর মা ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার কিছুটা ঘুরিয়ে নিয়ে অবিনাশের দিকে তাকিয়ে বসেছিলেন। অলকেশ,কোণের চেয়ারের মাথাটার উপর হাত দিয়ে ভর দিয়ে পিছন ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন।
অবিনাশ ঘর থেকে বেরিয়েই দেখলো বাবা মা উৎকন্ঠিত মুখে দাড়িয়ে আছে। ও বেরোতেই দুজনে ওকে একপলক দেখে সঙ্গে সঙ্গে মুখ বাড়ালো দরজার মধ্যে দিয়ে। মিতু মুখ নিচু করে খাটের উপর বসে ছিল। ওর মা এগিয়ে যেতে গেলে অবিনাশ বাধা দিল। ।
" নিচে চলো কথা আছে। " অবিনাশের প্রচণ্ড চিন্তিত, গম্ভীর গলা দুজনকেই বাধ্য করলো মিতুর দিক থেকে অবিনাশের দিকে তাকাতে।
নিচে এসে ডাইনিং এর তিনজনেই চুপ করে বসেছিল বেশ কিছুক্ষন। ওরা দুজনে চুপ করে অবিনাশ কে বলার সুযোগ দিচ্ছিল। আর অবিনাশ চেষ্টা করছিল নিজের মধ্যের অবিন্যস্ত চিন্তার সুতোগুলোকে একটা অংশে আনতে। কিন্তু ওর বহুমুখী চিন্তার অংশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এতটাই ব্যাস্ত ছিলো,যে অবিনাশ চেষ্টা করেও পারছিলো না সেগুলোকে একসাথে আনতে। কোনটা মিতুর জন্য ঠিক ও নিজেই বুঝছিলো না। কি করলে মিতু ভালো থাকবে।
" মিতুকে এবার সব বলা দরকার আমার মনে হয়। " অবিনাশ অনেক্ষন চুপ করে উত্তর দিল। বাকি দুজন আন্দাজ করেছিলো এটাই বলবে অবিনাশ। তাই তারা চুপ করে ওকে নিজের কথা শেষ করতে দিল।

অবিনাশ আবার বললো " আজকে মিতু ,এই যে অর্ক বলে ছেলেটার জন্য এতটা করলো ,তোমাদের মনে হয় না এর জন্য ওর মানসিক ইন্সেকারিটি দায়ী। ও বুঝতে পারছে আমরা কিছু লুখাচ্ছি ওর থেকে। অথচ ও জানতে পারছে না কিছু। এমনকি আজ ও আমাকে প্রশ্ন করেছে আমি তোমাদের এডপ্ট করা বাচ্চা কিনা,ওর সত্যিকারের দাদা কিনা ?!"
এবার দুজনেই বিস্মিত হয়ে তাকালো অবিনাশের দিকে।
" মিতু ,তোকে এটা বলেছে ?" রমা নিজের উৎকণ্ঠা গোপন রাখতে না পেরে বললো।
কিন্তু তার কথার উত্তর দেওয়ার আগেই অলকেশ বললো " আর কি কি বলেছে ও ?"
অবিনাশ মার মুখ থেকে বাবার দিকে তাকালো।
"ও জিজ্ঞেস করেছে ,কেন ওকে আমরা বাধা দিচ্ছি। ওর ১৮ বছর হয়ে গেছে,ওকে আমরা বাধা দিতে পারিনা। "
অলকেশ রেগে সিড়ির দিকে থেকে দোতলার দিকে তাকালো " এতটা সাহস কি করে হয় ,এধরণের কথা বলার। "
" বাবা,আমি মনে করিনা ও কিছু ভুল বলেছে,। " অবিনাশের কথা শুনে সিড়ির দিক থেকে ঘুরে তাকালো অলকেশ।
" ওর puberty পরের অবস্থা চলছে,খুব স্বাভাবিক ও নিজের সত্তা নিয়ে উপলব্ধি করতে পারছে,আর। " অবিনাশ উঠে দাড়ালো " আমার মনে হয় এই মুহূর্তে যদি আমরা জোর করি ব্যাপারটা আরো খারাপ হবে। ও আরো জেদ করে এগিয়ে যাবে ছেলেটার দিকে। তুমি নিশ্চিত নিজের মেয়েকে সব সময়ে ধরে বেঁধে রাখবে না। "
অলকেশ কথা বললো এবার " তাহলে তুই কি বলছিস ওকে সব বলে দেব ?! তুই কি পাগল ?! তুই জানিস না মিতুর অতীত কি বাজে ?! ওর পরিচয় যদি লোক জানতে পারে কি হবে ?! ওর বাবা ওর অস্তিত্ব জানতে পারলে ওকে মেরে রেখে যাবে না ,কোনো নিশ্চয়তা আছে ? তুই জানিস না ওর বায়োলজিকাল বাবার কাছে ও কতবড় একটা থ্রেট। তুই জানিস না ওকে বাঁচাতে নিজের সবকিছু ফেলে এসেছি। তুই তার পরেও বলছিস ওকে সব বলে দিতে?" অলকেশ মাথা চেপে ধরে বসে পরে। রমা এগিয়ে যায় তারাতারি ওর দিকে।
" কি গো কষ্ট হচ্ছে,অবিনাশ, স্পিগমমানোমিতার টেবিলের উপর আছে ওটা আন,বাবার bp দেখ। "
রমার কথা শেষ হওয়ার আগেই অলকেশ কথা বলে
" আমি ঠিক আছি,তুমি একটু বোস। "
তারপর অবিনাশের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন অলকেশ।
" মিতু হটাৎ করে এরকম কেন করছে বলে তোর মনে হয় ?"
অবিনাশ পূর্ণ দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়।
" তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো সেটা স্পষ্ট করে বলো বাবা। "

" আমি সেটাই বলতে চাইছি যেটা তুই বুঝছিস ?! এতদিন ত মিতু এসব করেনি,তুই হটাৎ করে যদি তোর এই দাদা হবো না অবিনাশ হবো বলে জেদ না করটিস। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। ভালো করে পড়াশুনা করছিল ও,তুই মাঝখান থেকে এসব যদি শুরু না করতিস। " অলকেশ জেদী গলাতে বললো।

" তারমানে তুমি বলতে চাও আমি সবকিছু শুরু করেছি ?" অবিনাশ বাবার দিকে তাকিয়ে বললো

রমা ছেলে আর স্বামীর মধ্যে তৈরি হওয়া টেনশন বুঝতে পেরেই ঠিক করে পাচ্ছিল না কোনদিকে যাবে। কিন্তু তার কোনো কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই অবিনাশ পকেট থেকে মিতুর ফোনটা বের করলো।
" মিতুর ফোনটা নিয়ে কি দেখাতে চাইছিস তুই ?"
অবিনাশ মিতুর লক করা অংশে আন্দাজে পাসওয়ার্ড বসাতে বসাতে বললো " তোমাদের সন্দেহ যে ভুল ,সেটা। "
আন্দাজে মিতুর জন্মদিন ডেট বসাতেই ফোন খুলে গেলো। অবিনাশ আবার বসে পরলো সোফাতে। বাকি দুজন এগিয়ে এসে ওর দুপাশে বসলো।
অবিনাশ প্রথমে কললিস্ট খুললো। অবুঝ মিতু অর্কর নাম দিয়েই সেভ করেছে নম্বর। ও ভাবেও নী এভাবে ধরা পরে যাবে। বাড়িতে অবাধ স্বাধীনতা থাকার জন্য কেউই কোনোদিন কারো জিনিসে হাত দেয় নী।
অবিনাশ নিজে যদিও আন্দাজ করেছিলো কি দেখতে পারে,তাও অর্কর সাথে কথার সময় গুলো দেখে ওর মুহূর্তের মধ্যে মাথা গরম হয়ে গেলো। ওর ইচ্ছে করলো এসএমএস গুলো খুলে দেখতে। কিন্তু বাবা মার সামনে সেটা উচিৎ মনে করলো না ও। অর্কর সাথে মিতু প্রায় দেড় বছর ধরে কথা বলছে। অবিনাশ নিস্ফল ক্রোধে জ্বলছিল,কিন্তু সেটা কতটা মিতুর উপর কতটা নিজের উপর ও নিজেই বুঝছিলো না।

রমা অবিনাশের হাত থেকে ফোনটা নিল।
" মিতু ভুলভাল কিছু করে বসেনী ত ?" রমার প্রশ্নে বাকি দুজনই চমকে উঠলো। অলকেশ চমকে উঠলো ভয়ে, চিন্তার জন্য,অবিনাশ চমকে উঠলো প্রচণ্ড ঈর্ষার অনুভূতিতে। মিতুকে অন্য কোনো ছেলের সাথে ভাবলে যার শরীর জ্বলে,সে কিভাবে আন্দাজও করতে পারতো মিতু কারোর সাথে শুয়ে এসেছে।
ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ১৭

আমার মনে হয় না রমা,মিতু এতটা কিছু করেছে ।" অলকেশ ওদের তিন জনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া গাম্ভীর্যের পরিবেশকে একটু হালকা করার জন্য বললো।

অবিনাশ বাবার দিকে না তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।এবং সেটা এতটাই জোরে এবং এতটাই ইঙ্গিতবাহী যে রমা ,অলকেশ দুজনেই উপলব্ধি করলেন অবিনাশের ভিতরের অদম্য কষ্টটা।
" কি করবে এবার বলো ?" অলকেশ প্রশ্ন ছুড়ে দিল বাকি দুজনের দিকে।বাকি দুজনও তখন ভেবে চলেছে কি করা উচিত।
" আমার মনে হয় পুরোটা ওকে না বললেও কিছুটা বলা যাবে,আগে দেখি ও কিভাবে ব্যাপারটাকে নিচ্ছে?মিতু হটাৎ করে অনেকটা পরিণত হয়েছে যেন আমার মনে হয়।" অবিনাশ বললো।
অলকেশ এক মুহুর্ত ভাবলো।তারপর বললো " তবে সেটাই হোক,রমা তুমি আজকেই কথা বলো ওর সঙ্গে।ভালোভাবে ভেবেচিন্তে বুঝিয়ে বলো।কারণ যদি হটাৎ ওর অভিমানে লেগে যায়,বা ও মনে করে ওর আত্মসম্মানে লাগছে তবে ওকে বোঝানো মুস্কিল হবে।"
রমা কোনো কথা না বলে নিঃশব্ধে উঠে দাড়ালেন ।অবিনাশ এতক্ষণ চুপ করেছিলো।রমা উঠতে যেতেই ও কথা বললো।
" আমি কথা বলবো ওর সাথে।" অবিনাশ দৃহ গলাতে বলল।
অলকেশ রমা দুজনেই কথা বলে উঠলেন একসাথে
" তুই কি কথা বলবি ?"
" তোমাদের দুজনের থেকে ওকে আমি বেশি চিনি,বেশি সময় কাটিয়েছি।তাই তোমাদের থেকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে ওকে আমি পারবো।"
অলকেশ বা রমা কেউই কিছুক্ষন কথা বললো না।

" অবিনাশ,।" অবিনাশ ওদের কথাকে সম্মতি ধরে সিড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই অলকেশ ডাকলেন।
" তুই আশা করি,আবেগের বশে ওকে ভুল বোঝাবি না?"
অবিনাশ হাসলো এতক্ষণ পর।
" ওই ছেলেটার থেকে আমি সম্ভবত ওর জন্য অনেক ভালো কেউ হবো ?! তোমার মনে হয় না বাবা ?"

" তুই কি এই ব্যাপারটা ভুলে যেতে পারিস না ?" অলকেশ বললো।
" চেষ্টা করিনি কে বললো?! তুমি কি ভাবো আমি জানি না ব্যাপারটা যে এটা কত অস্বাভাবিক।যেদিন থেকে বুঝেছি মিতুর জন্য আমি কি ভাবি,চেষ্টা করেছি অন্য মেয়েদের সাথে ঘনিষ্ট হবার।মাকে জিজ্ঞেস করো সব জানে মা।" রমা মুখ নিচু করলেন।অবিনাশের সঙ্গে তার নির্ঘুম অপ্রীতিকর রাত্রিগুলো মনে করে।যখন বাইরে রাফ টাফ অবিনাশ, মাকে জড়িয়ে ধরে কাদত,নিজের অক্ষমতার জন্য,নিজের অনভিপ্রেত অনুভূতি গুলোর হাত থেকে রেহাই পেতে।
অলকেশ একবার রমার দিকে দেখেই ওর দিকে তাকালেন।
" তাহলে তুই কি চাস ?"
" তুমি কি চাও বাবা?" অবিনাশ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে এগিয়ে এলো।
" তুমি মিতুর খুশি চাও না,?! চাও না, ও ভালো থাকুক,খুশি থাকুক? ওকে সবকিছু থেকে কেউ রক্ষা করুক ?"
অবিনাশ এসে দাড়িয়েছিল আলোকেসের সামনে
নিজের ছেলের দিকে প্রথমবার তাকাতে ভীতি লাগলো তার। ঢোক গিলে নিলেন গলার ভিতরে হটাৎ সৃষ্টি হওয়া পিপাসার অনুভূতিকে দমিয়ে রাখতে।
" হ্যা চাই।সেটা ত সব বাবাই চায় নিজের সন্তানের খুশি।"

অবিনাশ হাসলো।
" তোমার কি মনে হয় ,এ ব্যাপারে আমার থেকে যোগ্য কেউ আছে ?"
রমা ছেলের সব কথাগুলো ঘাড় নিচু করে শুনছিলেন।

এখন মুখ তুলে ছেলের দিকে তাকালো।অবিনাশ কোনোদিন বাবার মুখের উপর এভাবে মিতুকে পাওয়ার কথা বলেনি।অবিনাশ দিনদিন এতটা ডেসপারেট হয়েছে সম্ভবত রমা বা অলকেশ কেউই বুঝতে পারেননি।বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ওরা দুজনেই তাকিয়েছিলেন অবিনাশের দিকে।অবিনাশ হাসছিল,ধূর্ততার হাসি।
এবার রমার একটু ভয় লাগলো।অবিনাশ যদি আবেগের বসে একটু বেশি কিছু করে ফেলে ।
" বাবু।" রমা এটুকু বলেই থেমে গেলো।কিভাবে বলবে নিজের ছেলেকে এতটা সেনসেটিভ ব্যাপারে।তাও যেখানে তার মেয়ে জড়িত।
" আমি জানি মা তুমি আর বাবা কি ভ্য় পাও।" ওর গলাটা শুনে দুজনেই একযোগে তাকালেন ওর দিকে।
অবিনাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।
" এটুকু নিজের ছেলের উপর ভরসা রাখতে পারো,আমি কোনো সাধূপুরুষ না হলেও,এতটা অশিক্ষিত নই।আর ....." অবিনাশ এগিয়ে গিয়ে সিড়িতে পা রাখতে রাখতে বললো " মিতুকে আমি ভালোবাসি,মজা নিতে চাইনা।" বলেই বাকি কাউকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়েই ওপরের সিড়ি দুতিনটা করে ছেরে লাফিয়ে উঠছিল ও।
অলকেশ আর রমা স্তম্ভিত হয়ে বসেছিল।অবিনাশ ওদের মুখের উপর এভাবে বলবে ওনারা কেউই ভাবেনি।
" তুমি দেখলে রমা,বাবু কিভাবে উত্তর দিল ?! এ সবকিছু তোমার প্রশ্রয়ের জন্য জানো ?"

" আমার কি প্রশ্রয়,কি করতাম আমি? চেষ্টা করিনি ভেবেছ ওকে বোঝানোর?! কিন্তু ছেলের এত জেদ, শুনলে ত হয়! আমার বংশে ত কারো এত জেদ দেখিনি,তাহলে এলো কোথা থেকে এসব ?"

" রমা,তুমি এরকম ছোটলোকদের মত ঝামেলা করছ কেন ? বংশ তুলে কথা বলছো এভাবে ?"

রমা নিজেও বুঝতে পারছিলেন।

কিন্তু অলকেশ র কথাটা ওর ভালো লাগলো না।ছেলেকে কি তিনি একা মানুষ করেছেন যে তাকে এভাবে বলার অধিকার পাবে অলকেশ।
কিন্তু রমা চুপ করে গেল।কথাই কথা বারে ভেবে।
অলকেশ ও রাগে গর্জাতে গর্যাতে ঘরের দরজা বন্ধ করলো নিজের।
" অবিনাশ নামলে একবার আমার কাছে পাঠিয়ে দিও ত ।"
অলকেশ বন্ধ দরজার ভিতর থেকে বললেন।
রমা সিড়ির মুখ অবধি এগিয়ে গেলেন ।কিছুক্ষন কান পেতে শুনলেন।না কিছুই শোনা যাচ্ছেনা।না মিতুর কান্নার শব্দ না অবিনাশের গলার শব্দ।চারিদিক বড় বেশি রকম শান্ত যেন। অশনির সংকেত বুঝি এরকমই হয়।
...................
অবিনাশ মিতুর ঘরের সামনে গিয়ে নক করলো একবার ওর আলগা করে ভেজানো দরজার উপর।মিতুকে আসতে আস্তে উপলব্ধি করানো দরকার ওর অধিকার গুলো।অবিনাশ কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে ঢোকে।মিতু এতক্ষণ বিছানার উপর বসেছিল ।অবিনাশ ঘরে ঢুকতেই ও মুখ তুলে তাকায়।মিতুর চোখের পাশে জল শুকিয়ে আছে।অবিনাশের কষ্ট হচ্ছিল মিতুর অনুভূতি গুলো বুঝতে পেরে।কিন্তু ওর কিছু করার ছিল না।ওকে এই কষ্টটা দিতেই হতো মিতুকে।
" আসবো মিতু।"

" হম,।" মিতু কিছু বলতে চেয়েও পারলো না।

অবিনাশ মিতুর পাশে খাটে গিয়ে বসলো।

দুজনেই বেশ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো।
" দাদা...... মানে তোকে দাদা বলবো নাকি .....!"
মিতু অপ্রস্তুতে পরে গেলো।
অবিনাশ হাসলো ।" যেটা তোর মন চায়।তবে যদি আমাকে বলিস আমি দাদা ডাক শোনা খুব পছন্দ করিনা ,অন্তত তোর মুখ থেকে।" মিতু চমকে ঘুরে তাকালো অবিনাশের দিকে।অবিনাশের মুখের দৃহচেতা গঠন ওকে বলে দিচ্ছিল,অবিনাশ ফাঁকা কথা বলছে না।
" তুই বলেছিলি আমার পরিচয় বলবি ?! মানে তুই এডপ্ট হোসনি,আমাকে এডপ্ট করা হয়েছে তাই ত ?"
অবিনাশ চমকে উঠলো না আর।মিতু যে কিছুক্ষণের মধ্যে হটাৎ করেই পরিণত হয়েছে এত সেটা অবিনাশ বুঝতে পেরেছিল আগেই।
" হম,বলবো।কিন্তু তুই কিছু খাসনি সন্ধ্যে থেকে।খিদে পায়নী তোর ?"

" খিদে পাওয়ার মত অবস্থা ছিল কি ,তুই নিজেই বল।তোর খিদে পেত এই অবস্থাতে থাকলে ? যখন তুই হটাৎ জানতে পারবি এতদিন যাকে দাদা মেনেছিস সে তোর কেউ না,এতদিন যাকে পরিবার বলেছিস তারা আদৌ কেউ না।" মিতু ঠোঁট কামড়ে ধরলো দাঁত দিয়ে।

অবিনাশ এগিয়ে গেলো মিতুর দিকে।
কিন্তু কিছুই বললো না ও।
" কেন বলিসনি তোরা এতদিন ?" মিতু অভিমানে স্তব্দ গলা থেকে উচ্চারণ করলো কথাগুলো।অবিনাশ এই প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিলো কিন্তু তাও উত্তর দিতে গিয়ে কিছু সময় নিলো ভাবার।অবিনাশ খুব আস্তে করে এগিয়ে মিতুর ডান হাতটা টেনে নিল নিজের দুহাতের মাঝে।মিতু বাধা দিল না।
অবিনাশ মিতুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
" কারণ,তোকে আমরা নিজেদেরই ভেবেছি।কোনোদিন আলাদা ভাবিনি।"

মিতু অবিনাশের দিকে তাকিয়ে ছিল একদৃষ্টে।
অভিনাশ একটু থেমে গেল তারপর মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল

"তোকে একটা গল্প বলি, শুনবি?"
মিতু নিঃশব্দে ঘাড় নাড়লো।



"একটা বাচ্চা ছিল জানিস , তার বাবা-মা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতো । ছেলেটার কোন বন্ধু ছিল না। ছেলেটা একা একা স্কুলে যেত,আবার একা একা শূন্য বাড়িতে ফিরে এসে পড়াশোনা করত। কারন সেটা ছাড়া সে কিছুই জানত না ।ছেলেটা ভীষণ চুপচাপ ছিল ।তার জন্য তার স্কুলের বন্ধুরা তাকে নিয়ে সারাক্ষণই মজা করত। কখনো কখনো মজাটা মারামারি জায়গাতে চলে যেত। ছেলেটা মুখ বুজে সব সহ্য করত । বাবা-মার সামনে জামার মধ্যে ঢেকে রাখত কালো হয়ে যাওয়া দাগগুলোকে ।কারণ সে জানতো তার কথাগুলো কেউ শুনবে না। তার বাবা-মা দুজনেই খুব ব্যস্ত। তার বাবা শুধু স্বপ্ন দেখত ছেলে বড় হবে, বড় হয়ে ডাক্তার হবে। আর তার মা সারাদিনের পরিশ্রমের পর ছেলের জন্য বিশেষ সময় দিতে পারত না । ছেলেটা একটু সঙ্গী খুঁজত। একটা বন্ধু একটা কেউ যাকে সে সবকিছু বলতে পারবে । যে শুধু তার থাকবে আর কারো না ।ছেলেটা শুনেছিল ভগবান নাকি বাচ্চাদের কাছে আসে, তাদের ঘুমের মধ্যে । ভগবান নাকি বাচ্চাদের সাথে কথা বলে তাদের ইচ্ছেগুলো শোনে আর সেই সমস্ত ইচ্ছে গুলো পূরণ করে দেয় । ছেলেটা প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যে ভগবানকে বলতো শুধু কাউকে দিতে,যে শুধু তার হবে । জানিস তো, একদিন ভগবান সত্যিই তার প্রার্থনা শুনে নিল ।তার বাবা-মা রাতের অন্ধকারে একটা ছোট্ট পুতুলকে তোয়ালের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে এলো বাড়িতে ।ছেলেটাকে ঘুম থেকে তুলে তার কোলে বাচ্চাটাকে দিয়ে তার মা বলেছিল
" এটা তোর বোন ! সাবধানে রাখিস ?!'

মিতু চুপ করে থাকতে পারল না আর। ওর গলা থেকে অজান্তেই বেরোলো" দাদা ?!"
কিন্তু অবিনাশ থামলোনা। অবিনাশ বলতেই থাকলো

" ছেলেটা প্রথমবার বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার পর বুঝতে পারল জামার মধ্যে লুকানো অব্যর্থ কালিমালিপ্ত কালশিটেএর যন্ত্রণা যেন কমে গেল
মুহূর্তেই। সেদিন প্রথমবার ছেলেটা ভগবানের কাছে দুইহাত জোড় করে প্রণাম করেছিল তার ইচ্ছে সে পূরণ করার জন্য।"

মিতু বিস্ময় হতবাক হয়ে গেছিল। ও কোন কথা বলতে পারেনি ।অবিনাশও চুপ করে গিয়েছিলো অতীত রোমন্থনের যন্ত্রণা ভুলতে।

ক্রমশঃ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top