What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected শুধুই আমার by Ankita kar (1 Viewer)

samaell

Skilled Member
Joined
Mar 27, 2020
Threads
7
Messages
2,295
Credits
18,668
T-Shirt
লেখিকার কথা
( গল্পটা ভিশন কন্ট্রোভার্সিয়াল টপিক এ লেখা গল্পের চিন্তাধারা সবার ভাল নাও লাগতে পারে, অনুরোধ করবো এরিয়ে যাওয়ার জন্য। ভাল্ থাকুন,আমার টাইপিং বোর্ড খারাপ থাকায় অনেক বানান ভুল আছে পরে আমি এটা ঠিক করে দেবো। সেটার জন্য আগাম ক্ষমাপ্রার্থী )

And original credit goes to the writer and Pratilipi
you-are-perfect-768x402.jpg.webp
 
শুধুই আমার ১

ব্রেকআপ যে সত্যি হল মিতু কিছুতেই মানতে পারছে না। ওর চোখমুখ ভিজে লাল হয়েছে,বারবার চোখের জল মুছলে ও আবার সঙ্গে সঙ্গে জলে ভিজে যাচ্ছে চোখ। ও ফোনটা নিয়ে আবার রিং করছে অর্কের নম্বরে। রিং হয়েই কেটে যাচ্ছে বারবার । ওকে ব্লক করেছে অর্ক । আবার আবার ফোন করলো ও। কেটে গেলো,করেও যাচ্ছিল ও। কিন্তু ফোনের ব্যাটারি একেবারে শেষ। ও ছুটে ফোনটা চার্জে বসিয়ে পাশে দাড়িয়ে ফোন করতে শুরু করলো। ব্যাস্ত,ব্যাস্ত.......

মা নিচ থেকে ডাকলো খেতে। ও কাল থেকে খায়নি। খিদে নেই বলে রাত্রে ঘুমিয়ে গেছিলো। এখন না খেলে মা সন্দেহ করবে। ও আসছি বলে বাথরুমে গেলো মুখে চোখে জল দিতে। নিচে নামার সময়ে একটা এসএমএস করলো

"আমি পারছি না বাবু। তুমি যা বলবে সেটাই করবো,শুধু ফোনটা একবার ধর,প্লিজ।"

বেশ কিছুক্ষন ফোনটা ধরেই দাড়ালো। কোনো রিপ্লাই নেই। ফোনটা শর্ট এর পকেটে নিয়ে ভাইব্রেশন অন করে সাইলেন্ট করলো ও,তারপর নিচে নেমে গেলো। মা টেবিলে খাবার গুছিয়ে দিয়েছে। বাবা অফিসের জন্য রেডী হয়ে পেপার দেখতে দেখতে লুচি মুখে পুড়ছিল। ওকে বসতে দেখে পেপারটা সরিয়ে রাখল। বাবার চশমাটা সব সময়ে পরতে লাগে না,শুধু কিছু পড়ার সময়ে লাগে। বাবা এখনও ওকে ছোট্ট বাচ্চার মত দেখে। আজকেও তাই হলো। কাগজটা নামিয়ে চশমাটা নাকের কাছে এনে একটু ভুরু কুচকে বললো "সোনামার মুখটা যেন কেমন লাগছে,কাল ঘুম হলোনা নাকি রে???"



মিতু হেসে ফেললো। বাবার সামনে একটুও দুঃখ থাকে না। মিতুরা তিন ভাইবোন,দাদা তারপর মিতু আর তারপর মিতুর ছোটবোন। মিতু এবারই উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে ছুটি কাটাচ্ছে। কিছুদিন আগে joint ছিলো। পরীক্ষাটা যদিও দিয়েছে কিন্তু এবার পাওয়ার আশা নেই। পরের বার ভালো করে পড়বে বলে দাদা আর বাবা রীতিমত আলোচনাতে বসেছে। ওর দাদা এই বছরই mbbs শেষ করে ms মানে সার্জারি টে md টে ভর্তি হয়ে ছে,তার খুব ইচ্ছে বোন সার্জেন হোক। কিন্তু মিতুর খুব ইচ্ছে ও ইঞ্জিনিয়ার হবে।





কিন্তু এখন মিতুর কিছুই হতে ইচ্ছে করছে না। বিরক্ত লাগছে।



বাবাকে উত্তর দেওয়ার আগেই দাদা ঘরে ঢুকলো "আর কি সারারাত মোবাইল ঘেটেছে নিশ্চিত। এমনি তো পেঁচির মত দেখতে তারপর আরো রাত জেগে কালো পেঁচি হবে?! আর কেউ বিয়ে করবে না?!" বলেই নিরাপদ দূরত্বে সরতে শুরু করেছে দাদা।

মিতুর সব দুঃখ সরে গেছে। টেবিল থেকে দাদার দিকে যেতে যেতেও চিৎকার করলো মিতু "মা দেখ দাদা পেঁচা বলছে। "



দাদা তখন সরে গেছে টেবিলের উল্টো দিকে। মিতু টেবিল ঘুরে উল্টো দিকে যেতেই দাদা দৌড়ে অন্যদিকে গেলো। যেন দুজনে টেবিলের চারপাশে ধরাধরি খেলছে। বাবা দুজনের দিকে দেখলো কিন্তু বিশেষ পাত্তা দিল না। এটা বাড়িতে স্বাভাবিক ঘটনা। এটা না হলেও শান্ত লাগতো বাড়িটা। দাদা ওইদিক থেকে চিল্লাচ্ছে "বললাম পেঁচা ,দেখ দিনের বেলা কিছুই দেখছে না,আমি সামনে তাও কিরকম হাতরে যাচ্ছিস দেখ?!" দাদা আরো কিছু বলত মিতুকে রাগানোর জন্য। মা ঢুকলো মিতুর ছোটবোন প্রিয়াকে কোলে নিয়ে,ওর বয়স মোটে এক । ভীষণ আদুরে,ওকে দেখলেই কোলে নিতে ইচ্ছে করে। এবারও তাই হলো। মিতু দৌড়ে গিয়ে কোলে নিল বোনকে।

মা এবার দাদাকে বললো "তোর হসপিটালে যেতে হবে না,খেতে বোস আগে। প্রতিদিন বোনের পিছনে না লাগলেই নয়?!"

মিতু দাদার দিকে জিভ ভাঙ্গিয়ে বোনকে কোলে নিয়ে বারান্দার দিকে গেলো। তার পকেটে তখন ভাইব্রেট করছে ফোনটা।

ওর দিকে তাকিয়ে ছিল অবিনাশ ( দাদা).। বোনটা অনেক বড় হলো । কদিন আগে ও ওকে কোলে নিয়ে ঘুরতো। আজকে দেখ। মা সম্ভবত অবিনাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। বোনের প্রতি ওর প্রচণ্ড ভালোবাসা উথলে উঠতে দেখে কথা বললেন "কদিন পরে যখন অন্য বাড়ি চলে যাবে কি করবি। ?!"



অবিনাশ দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো।

"যতদিন না এমন কাউকে পাই যে ওকে খুশি রাখবে,কোথাও যেতে দেব না,আমার বোনকে কেউ যেন কখনো দুঃখ দিতে না পারে,যে আমার বোনকে কাদাবে আমি দেখে নেব। "



মা ওর শক্ত মুঠো করা হাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন। তার ছেলেটা ডাক্তার হলে কি হবে ভীষণ রগচটা। অবিনাশ প্রায় ছ ফুটের কাছে লম্বা,ভীষণই স্বাস্থ্যবান,প্রতিদিন জিম আর মার্শাল আর্ট শেখার জন্য গায়ে ভীষণ জোর। কিন্তু ওর ওই এক সমস্যা। বোনকে ভীষণ ভালোবাসে।



যখন প্রথম ৭ বছরের অবিনাশের কোলে যখন প্রথম তিনি মিতুকে দিয়েছিলেন,তখন ভীষণ সাবধানে ওকে জড়িয়ে অবাক হয়ে দেখেছিল অবিনাশ।

এই পুটলিতে জড়ানো পুতুলটা ওর বোন। যখন তিনি ব্যাস্ত থাকতেন,বোন কাদলেই অবিনাশ ছুটে যেত তার যাওয়ার আগেই,কোলে নিয়ে তাকে শান্ত করা,মুখে দুধের বোতল দেওয়া,কোলে করে ঘুম পাড়ানো কিছু বাদ দিত না। ।



................

তারপর একদিন সেই ঘটনা ঘটলো। সেদিন স্কুল থেকে ফোন করে তাকে ডাকা হলো। অবিনাশ নাকি মারামারি করেছে। এটা এত অস্বাভাবিক ছিলো যে ওনার মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছিল। কোনোক্রমেই দৌড়ে স্কুলে গিয়ে দেখেন,চোদ্দ বছরের অবিনাশ প্রিন্সিপাল রুমের সামনে বসে আছে,তাকে জড়িয়ে ধরে করছে সাত বছরের ছোট্ট মিতু। অবিনাশের মুখের পাশে কেটে গেছে। কিন্তু ও তাও বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে মাথাতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

অবিনাশ ওনাকে দেখেই মাথা নিচু করেছিলো। উনি ওর দিকে এগিয়ে মিতুকে ওর কোল থেকে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কেদে ফেলেছিলেন। ওনাকে আসতে দেখে প্রিন্সিপাল নিজেই বেরিয়ে ওনাদের ডাকলেন।



"মিসেস বিশ্বাস,আমার কাছে অবিশ্বাস্য অবিনাশের মত ছেলে এরকম করবে। ও এত ব্রাইট স্টুডেন্ট। "

মিসেস বিশ্বাস ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। প্রিন্সিপালের কথাগুলো সব তার কানে যাচ্ছিল না।



এবার মুখ খুললেন "ম্যাডাম আমি কিভাবে ক্ষমা চাইবো জানি না,কিন্তু আমার একটা জিজ্ঞাস্য ছিলো আমি আমার ছেলেকে চিনি। ও কাউকে শুধু শুধু গায়ে হাত দেবে বিশ্বাস করা মুস্কিল,কি হোয়েছিলও ???"





প্রিন্সিপাল ম্যাডাম অসহায় ভাবে বললেন "আমরা জানি না,তিন জন ছেলেকে হসপিটালে নিতে হয়েছে,আমরা যদি কারণ না জানতে পারি কি ব্যাবস্থা নেব?! অথচ অবিনাশ মুখ খুলছে না। এতবার ওকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে ?!"

মিসেস বিশ্বাস এবার ছেলের দিকে ঘুরলেন "কি হয়েছে বাবা? আমি বিশ্বাস করি তোমার এই ব্যাবহারের কোনো কারণ আছে!"



অবিনাশ মুখ নিচু করে বসেছিল। মুখ তুলতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিলো যেন। কোলের ওপর হাতের মুঠিটা শক্ত হলো। তারপর মুখ তুলে ও একবার মায়ের কোলে ঘুমিয়ে যাওয়া বোনের দিকে দেখলো আর ওর চোখটা ভীষণ নরম হয়েই আবার জ্বলে উঠলো।

"ওরা মিতুর জামা তুলে প্যান্ট খুলে দিয়ে হাসছিল। আমি ক্লাস শেষ হতে ওর ক্লাসে যাচ্ছিলাম। ওদের দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেছিলো। আমার বোনের গায়ে কেউ হাত দেবে না । যে দেবে আমি এবাবেই মারবো। "





তার কথা বলার ধরন অনুসারে ব্যাপারটা অন্যদিকে যেতে পারতো। কিন্ত বোনের উপর এই ব্যাপারটা প্রিন্সিপাল আর তার মা কেউই ভালো নিলেন না। প্রিন্সিপাল সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে মিতুর টিচারদের মিটিং আসতে বললো। আর একবার সতর্ক করলো

"অবিনাশ ব্যাপারটা খুব খারাপ হলো মিতুর সাথে যা হলো,কিন্তু এভাবে পরের বার করবে না। আমাদের জানাবে। মিসেস বিশ্বাস,আমরা একটা মিটিং করে নিচ্ছি,আপনি ওকে বাড়ি নিয়ে যান। ও আমাদের কিছুতেই ওর মুখের কাটাতে হাত দিতে দিচ্ছে না। "





প্রিন্সিপাল রুম থেকে বেরিয়েই মার থেকে বোনকে কোলে নিল ও। তারপর মার দিকে ফিরে বললো "মা আমি নিজেকে শক্ত করতে চাই,যাতে কারো ক্ষমতা না হয় বোনের দিকে চোখ তোলার। "



মিসেস বিশ্বাস সেদিন থমকে গেছিলেন। কি বলবেন বুঝতে পারেননি। ......



। । । । । । । । । ।



ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ২

মিতু ফোনটা রেখে কাদছিলো বালিশে মুখ গুজে,শুধু ফোপানোর শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। মিতু শোনাতে ও চাইছিল না কাউকে। বাবা মা নিচে থাকলেও দাদার ঘর পাশে আর দাদা অনেক রাত অব্দি পড়ে ,যদি কিছু আন্দাজ করে এক্ষুনি প্রশ্ন করে করে জেরারার করে দেবে। দাদা মিতুকে খুব ভালোবাসে,কিন্তু একটু বেশি চিন্তা করে। দাদা পছন্দ করে না মিতুর চারপাশে কোনো ছেলে আসুক। দাদার ভয় মিতুর কোনো ছেলে বন্ধু ছিলো না। একবার স্কুল থেকে ফেরার সময়ে রাস্তার পাশে কিছু ছেলে তাকে দেখে কিছু রসালো মন্তব্য করেছিল,ছোট্ট মিতু বাড়িতে ফিরে কাদতে শুরু করেছিল। দাদা কলেজ থেকে ফিরে বাবা মার কাছ থেকে শুনে মাথা গরম করে বেরিয়েছিল। বাবা মা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও শোনে নী। ।



অনেক্ষন পর বাবা যখন একটা ফোন পেয়ে বেরিয়ে গেছিলো । তারপর বেশ কিছুক্ষন পর ফিরেছিল দাদাকে নিয়ে। দাদার মুখে শুধু ঠোঁটের পাশে কালো হয়েছিলো। মা ছেলের কাছে ছুটে গেছিলো। আর ছোট্ট মিতু কি রকম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কাদতে কাদতে দাদার পেটের কাছে জড়িয়ে ধরেছিল। দাদা ঝুঁকে বোন কে কোলে তুলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে ছিলো।
তখন বাবা চিৎকার করছে "সামলাও নিজের ছেলেকে। ছেলে আবার কার সাথে মারামারি করেছে। এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দিতে পুলিশ এসে এদের আলাদা করেছে। পুলিশ স্টেশনে বসেছিল ছেলে। দুদিন পর ডাক্তার হবে। ছি ছি,নেহাৎ sp আমার পেশেন্ট ছিলো,তাই কাউকে না বলে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে।"



মা তখন এগিয়ে গেছেন ছেলের দিকে "কেন করিস বাবা এসব। মেয়ে বড় হলে এসব হবে! কতদিন বাচাবি এভাবে ?"



দাদা মার দিকে চোখ তুলে জীবনে প্রথমবার সম্ভবত এত রেগে গিয়ে বলেছিল "যতদিন আমি আছি,মিতুর দিকে কেউ ,কোনো ছেলে চোখ তুলে তাকাবে না।"



মা অনেক্ষন ছেলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে চমকে উঠেছিলেন। তারপর ছেলের পিঠে হাত দিয়ে অনেকটা ঠেলে নিয়ে গেছিলেন মিতুর ঘরের দিকে। মিতুকে বিছানাতে শুইয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দাদা যখন এগিয়ে এসেছিল দরজার কাছে মা একবার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেছিলেন "ঠিক করছিস না বাবা। এ সম্ভব না।"
অবিনাশ সম্ভবত চমকে উঠেছিল। তারপর খুব আস্তে আস্তে কেটে কেটে বলেছিল "কেন সম্ভব না ? ও আমার নিজের বোন না।"
মা আবার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। "কিন্তু সেটা সবাই জানে না । সমাজ মেনে নেবে না। তুই শুধু শুধু কষ্ট পাবি ওকেও কষ্ট দিবি।"



অবিনাশ অনেক্ষন চুপ করে ছিলো। তারপর মাকে জড়িয়ে কেদে ফেলেছিল "আমি যে পারছি না মা। অনেক চেষ্টা করছি। পারছি না..........."



মিতু এসবের কিছুই জানতো না,সে তখন ঘুমের দেশে। দাদার হাত ধরে বেলুন ধরে হাঁটতে শুরু করেছে এক অজানা জগতের দিকে.....ক্রমশঃ আরো গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে মিতু পরম বিশ্বাসে জড়িয়ে ধরছিল দাদার হাতটা।
............
মিতু দাদাকে ভীষণ ভালোবাসে,তাই সব সময়ে দাদার জেদ কেও মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সেই ঘটনার পর থেকে ছেলেরা রীতিমত মিতুকে এড়িয়ে চলে। শুধু একটা মেয়ের জন্য কে আর মার খাবে। । তাই প্রথম যখন মিতু প্রেমের প্রস্তাব পেলো বিশ্বাস ও করতে পারেনি সত্যি কোনো ছেলে তাকে প্রস্তাব দিয়েছে। ঘটনা ছিলো মিতুর মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্টের জন্য বাবা বেশ দামী একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছিল। দাদাকে অনেক বলে ফেইসবুকে একটা একাউন্ট খুলেছিল। যদিও দাদার সর্ত ছিলো কোনো ছবি দেওয়া যাবে না। অনেকে নাকি তার ছবি নিয়ে অনেক কিছু করতে পারে। অর্ক বলে একটা ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট প্রথম দিন আসতেই মিতু খুব খুশি হয়ে অ্যাকসেপ্ট করেছিলো। প্রথম প্রথম ম্যাসেঞ্জার এ টুকিটাকি কথা হতো। মিতুর অনেক ভালো লাগতো। ও সব বলছিল অর্ককে। অর্ক জিজ্ঞেস করতো মিতুর পরিবারের ব্যাপারে। মিতু সব বলেছিল শুধু নিজের দাদার কিত্তি গুলো ছাড়া। যদি এও ওকে দূরে সরিয়ে দেয় দাদার কথা শুনে। কিন্তু অর্ক সম্ভবত এখানের ছেলে না,তাই ওর দাদাকে নিয়ে বিশেষ কিছু বললো না। অর্ক কিছুদিন কথা বলার পর ওর কাছে সলজ্জ হয়ে ওর একটা ছবি চেয়ে পাঠিয়েছিলো। মিতু খুশিতে পাগল হয়ে গেছিলো। কেউ প্রথমবার ওর ছবি চাইলো। ও নিজের সেলফি ক্যামেরা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলে পাঠিয়েছিল। কিছুক্ষন কোনো এসএমএস নেই। মিতুর মন ভীষণই যখন খারাপ হচ্ছে,তখন এসএমএস ঢুকলো।
অর্ক: আমি ভাবতেও পারিনি মিতু তুমি এত সুন্দর।
মিতু : ধন্যবাদ। লিখতে লিখতেই ওর গালটা লাল হলো।
অর্ক : একটা রেকোয়েস্ট করবো,প্লিজ না বল না, একদিন দেখা করবে?"
মিতু কি লিখবে বুঝতে পারছিল না,দাদার জন্য প্রচণ্ড ভয় হচ্ছিলো আবার একই সঙ্গে উত্তেজনাতে শরীর কাপচিল।
মিতু : ওকে।



অর্ক: থ্যাংক ইউ,তুমি আমাকে কতটা খুশি করেছ তুমি নিজেও জানো না।
.................
দরজা ধাক্কা শুনে বালিশের মধ্যে থেকে মুখ তুললো মিতু। দাদা দরজার বাইরে দাড়িয়ে ডাকছে।
"ওই তোর ঘর থেকে কিসের শব্দ আসছে,দরজা খোল।"
মিতু সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল সুইচ অফ করলো। তারপর "আসছি" বলেই বাথরুমে ঢুকে মুখে জল দিয়ে মুখটা মুছে ঘরের আলোটা বন্ধ করে দরজা খুললো। দাদা বক্সার পরে দাড়িয়ে আছে,দাদার বুকের পেটের পেশীগুলো শক্ত হয়ে আছে,মিতুর মাঝে মাঝে দাদাকে নিয়ে গর্ব হয়। দাদার মত সুন্দর মিতু কাউকে দেখেনি।
দাদার মুখের পেশীগুলো শক্ত হয়ে আছে "তোর ঘর থেকে কিসের শব্দ আসছিল।" বলেই ওকে সরিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো,লাইটটা জ্বালিয়ে চারপাশ দেখে ওর দিকে ঘুরেই থমকে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে সামনে এসেই ওর ঝুঁকে পরা মুখটা নিজের দিকে তুলে খুব তীক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। তারপরেই দাদার চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো যেন। ভীষণ ভাবে জ্বলে উঠলো চোখ দুটি "কে ?" বলেই থেমে গেলো। মিতু বুঝলো দাদার দুহাত চেপে বসেছে তার কাধের দুপাশে।
"দাদা,লাগছে,ছার। "
মিতু কাপতে কাপতে বললো।
হাত দুটো আলগা হলো না। কিন্তু একটা হাত এসে ওর প্রায় ঝুঁকে পরা মুখটাকে নিজের দিকে তুলে প্রশ্ন করলো "আমি একবারই জিজ্ঞেস করবো,আর তুমি জানো মিতু আমি দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করা পছন্দ করিনা,ছেলেটা কে?"



মিতু কাপছে। দাদা জানতে পারলে অর্ককে মেরেই দেবে।
দাদা ঝাকাতে শুরু করেছে। মিতুর খুব লাগছিল। দাদাকে এত রাগতে ও কখনো দেখেনি।
"কেউ না কেউ না বিশ্বাস কর দাদাভাই,আমার ভীষণ ভয় লাগছিল hs রেজাল্ট নিয়ে,যদি ভালো কলেজ না পাই কি হবে। "
বলেই মিতু দাদাকে জড়িয়ে ধরেছিল। যদিও ও মেরেকেটে দাদার বুকের কাছ অব্দি পৌঁছোচ্ছিল। ও জানে দাদাকে জড়িয়ে ধরলে দাদার একটুও রাগ থাকেনা। দাদাও যেন এবার বুঝতে পেরেছে সে ভুল করেছিল। মিতুকে দুহাতে আরো কাছে টেনে নিল। "
আমার ভুল হয়েছিল্ মিতু,আমি বুঝতে পারিনি। আমি বুঝিনি তুই পড়া নিয়ে এত চিন্তিত। আমাকে ক্ষমা কর সোনা। "..................
ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ৩

কতক্ষন কেটেছে মিতু জানে না। মিতু জড়িয়ে ধরে আছে দাদাকে,আর অবিনাশ মিতুর খোলা চুলে আসতে আসতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। মিতুর ভালো লাগছিল। অন্যরকম ভালো। সে একটু বড় হওয়ার পর দাদা তাকে কখনো এভাবে জড়িয়ে ধরেনি। অবিনাশের গরম শ্বাস মিতুর ঘাড়ের কাছে ছুয়ে যাচ্ছিল। মিতুর মনে হচ্চিল দাদার হাতের বাঁধনের মত এত শান্তি আর নিরাপত্তা সে কখনো পাইনি। তখনই তার অর্কর কথা মনে হলো। অর্কর সাথে বিয়ে হলে দাদাকে ছেরে যেতে হবে। কি করে পারবে সে ??? মনে হতেই দাদাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
সঙ্গে সঙ্গে সে অনুভব করলো দাদার হৃদপিন্ডের শব্দ। সেটা হটাৎ করেই এতটা জোরে দৌড়িচ্ছে যে মিতু যেন শুনতে পাচ্ছিল সেটা। মিতুর ঘাড়ের উপর সেই নিশ্বাসের হালকা শব্দ শেষ হয়ে বেশ শব্দ করে নিশ্বাস পরছে তার চুলে।
অবিনাশ দুহাত দিয়ে শক্ত করে মিতুকে নিজের থেকে সরিয়ে সামনে নিয়ে এলো। মিতু অবাক হয়ে দাদার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। দাদার চোখদুটো জ্বলছে,এভাবে কখনো ও দাদাকে দেখেনি। মুখের প্রতিটি পেশি টানটান হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। দাদার নিশ্বাস এতটা জোরে পড়ছে যে ও সামনে দাড়িয়ে শুনতে পাচ্ছিলো। অবিনাশ ওর কাধ থেকে হাত দুটো সরিয়ে দুহাতের তালুর সাহায্যে ওর মুখটা ধরলো। অবিনাশের ডান হাতের বুড়ো আঙুল স্পর্শ করছে ওর ঠোঁট,নাক। মিতু মুখ সরিয়ে নিতে পারছে না। ও বুঝে উঠতে পারছে না ঠিক কি হচ্ছে। কিন্তু ওর ভালো লাগছে । ভীষণ রকম ভালো লাগছে। ও ওর মুখটা একটু এলিয়ে দাদার ডান হাতের উপর ঘষতে শুরু করেছে। অবিনাশ চমকে উঠলো। কিন্তু মুহূর্তের জন্য। তারপর দুহাত দিয়ে টেনে আনতে লাগলো নিজের মুখের কাছে। মিতু কথা হারিয়ে ফেলেছে। দাদার গায়ের গন্ধটা বড় তীব্র ভাবে ওর নাকে আসছে। ও আবেশে চোখ বন্ধ নিচ্ছিল হটাৎ চোখ পড়লো খাটে পরে থাকা বন্ধ ফোনের দিকে। অর্ক এতক্ষণে কি একবারও ফোন করেনি......মনে হতেই ও বিদ্যুৎ চমকের মত সামনে তাকালো,অবিনাশের সুন্দর পুরুষালি মুখটা ওর মুখের খুব কাছে। অবিনাশ ওকে জড়িয়ে ধরেছে দুহাত দিয়ে।
"দাদা" মিতুর মুখ থেকে ছিটকে বেরোলো কথাটা। আর কিছু বলতে পারলো না।
কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট ছিল। ও দেখলো অবিনাশের চোখের দৃষ্টির পরিবর্তন। অবিনাশ যেন এতক্ষন বাস্তবে ছিলো না। বুঝতে পেরেই হটাৎ মিতুকে ছেরে সরে দাড়ালো । আর তখনই লক্ষ্য করলো মিতু কাপছে। ও মিতুর দিকে হাত বাড়ালো কিন্তু মিতু একটু ভয় পেয়ে সরে গেলো। অবিনাশ তখন আত্মগ্লানি র আগুনে জ্বলছে। ও শেষ বার মিতুর দিকে তাকালো তারপর "সরি" বলেই বেরিয়ে গেলো একবারও পিছনে না দেখে।
যতক্ষণ না দাদা বেরিয়ে গেলো মিতু দাদার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে বাচ্চা না,সে জানতো যেটা হয়েছে সেটা ঠিক না। দাদাকে কখনো এরকম ভাবে দেখিনি মিতু। মিতুর অদ্ভুত লাগছিল,সে বুঝে উঠতে পারছিলো না সেই অদ্ভুত কতটা,কিন্তু সে অবাক হচ্ছিল ভেবে তার মধ্যেই একটা অংশই যেন চাইছিল আরো কিছু। সেটা মনে হতেই মিতু দৌড়ে গেলো বাথরুমে। আয়েনার সামনে দাড়িয়ে নিজের উপর নিজের লজ্জা লাগছিল। মিতুর নিজের চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিল। চোখের চারপাশটা জ্বলে যাচ্ছিল,আর সেটা বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে নামছিল। মিতু সপাটে চড় মারলো নিজের ডান গালে। ভীষণ ভাবে লাল হোয়ে জ্বলে গেল গালটা। কিন্তু সেটা ভিতরের আত্মগ্লানি কে ক্ষমা করতে পারলো কই। ছি ছি,সে নষ্ট মেয়ে,নিজের দাদার দিকে সে কি কোনোদিন চোখ তুলে তাকাতে পারবে আর?! লোকে জানলে কি বলবে,নিজের দাদার সাথে সে ............
আর ভাবতে পারলো না মিতু। জোরে চড় মারলো নিজের দ্বিতীয় গালে।
। .......……


অবিনাশ প্রচণ্ড শব্দে দরজাটা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই,মিসেস বিশ্বাস রান্নাঘর থেকে সরে এলেন। ততক্ষনে ছেলের বাইকের শব্দ বেশ দুর থেকে শোনা যাচ্ছে। মিস্টার বিশ্বাস এখনও চেম্বার করে ফেরেননি। মিসেস বিশ্বাস দীর্ঘশ্বাস ফেলে হটাৎ দোতলার মিতুর বন্ধ ঘরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলেন। তারপর একটু তাড়াহুড়ো করেই সিড়ি ভেঙে মেয়ের ঘরের সামনে দাড়িয়ে এক মুহূর্ত ভাবলেন। তারপর দরজাতে নক করে বললেন " মিতু, দরজা খোল,। "
.................
অবিনাশ বাইকের স্পীড বাড়িয়ে যাচ্ছিল। রাস্তাতে লোকজন নেই বলতে গেলে। অবিনাশ ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো না নিজের রাগ কিভাবে সামলাবে। কি ভাবে সে নিজের অনুভূতি গুলোকে সামনে আসতে দিল। মিতু এখনও অনেক বাচ্চা,সে এখনও অনেক কিছু জানে না। সে জানে না যখন সে হেসে গড়িয়ে পরে অবিনাশ নির্বাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখে,যখন মিতুর চোখদুটো দুঃখে ভরে ওঠে তখন অবিনাশের ইচ্ছে করে সব কিছুতে ছুড়ে ভেঙে ফেলতে। ও বোঝে না,ও জানে না,প্রতি রাত্রে ও ঘুমিয়ে গেলে অবিনাশ কতবার ওর ঘরে যায় ওর নিস্পাপ ঘুমন্ত মুখটা শুধু একবার দেখার জন্য। ও জানে না যে দাদাকে ও নিজের রক্ষাকবচ মানে,সেই দাদাই ওর ভক্ষক হতে চায়।
অবিনাশের কাউকে মারতে ইচ্ছে করছে ভীষণ ভাবে,শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে সব কিছু।
অবিনাশ জানে না,কিন্তু আজ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে অবিনাশ যেন দেখতে পেয়ে ছিলো অন্য কাউকে। অবিনাশ জ্বলে উঠেছিল। মিতুর সাথে অন্য কাউকে কল্পনা করলেই ও জ্বলে ওঠে,তারপর যখন মিতু চোখে জল ভরে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল অবিনাশ ঠিক জানে না কি করছিল সে তারপর। তার ভীষন ভাবে মিতুকে পেতে ইচ্ছে করছিল ...........
অবিনাশ দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো,মিতু তার নিজের বোন না,কখনই ছিলো না,কিন্তু সে বাবা মার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলো কোনোদিন কাউকে বলবে না সে কথা,এমনি মিতুকেও না।

বাইক থামিয়ে ও ফোন করলো নিলেশ কে। নিলেস ওর অনেক ছোটবেলার বন্ধু। যখনই ওর মন খারাপ করে ও নিলেসের বাড়ি পালিয়ে যায়।
" ভাই,দরজাটা খোল,আমি অফিসার চয়েজ আর খাবার নিয়ে যাচ্ছি। "
.....................
মিতু চমকে উঠলো মার গলা শুনে। মা যদি তাকে দেখে এক্ষুনি কিছু আন্দাজ করবে। ও কিছুক্ষণ চুপ করে ঘুমের গলাতে বললো " মা খুব ঘুম পাচ্ছে,প্লিজ। "
মিসেস বিশ্বাস দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন। মার পায়ের শব্দ যতক্ষণ না মিলিয়ে গেলো ও কান খাড়া করে রইলো তারপর মোবাইলটা অন করল। যখনই ও ফোনটা হাতে নিল,একটা এসএমএস ঢুকলো। অর্কর ৫ টা মিস কল,আর একটা এসএমএস " রিপ্লাই ফাস্ট আর্জেন্ট। "
ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ৪

অবিনাশ ক্যান্টিন থেকে বেরোতেই মিহিরার সাথে প্রায় ধাক্কা লেগে গেলো। মিহিরা অবিনাশের জুনিওর।এবছরই ফাইনাল year এ উঠেছে।মাঝে দু তিন বার ওদের ক্লাসের কিছু ছেলে মেয়ে অবিনাশকে সার্জারি পড়াতে বলেছিল।যদিও অবিনাশের ডিউটি খুবই বেশি তাও বারবার অনুরোধ পাওয়ার পর রাজি হয় পড়াতে। মিহীরা ও ওদের সাথে মাঝে মাঝে পড়া বুঝতে যেত। মীহিরা কলেজের সবথেকে সুন্দর মেয়ে,কত ছেলে যে ওর পিছনে পরে আছে তার সীমা নেই।
মহীরা ধাক্কা লেগে প্রায় পরে যাচ্ছিল ,অবিনাশ ধরে নিল হাত বারিয়ে,ওকে সোজা ভাবে দাড় করিয়েই সরে দাড়ালো ওর থেকে।
"থ্যাংকস অবিনাশ।"
"থ্যাংকস এর দরকার নেই,😊।"অবিনাশ বলেই হেসে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
মিহিরা ডাকলো।"বলছিলাম,সেলুলার গ্রোথ চ্যাপ্টারটা নিয়ে একটু সমস্যা আছে,যদি সময় পাও একটু দেখিয়ে দেবে?"
অবিনাশ একটু ভাবলো তারপর বললো "পরশু আমার ইভনিং নাইট আছে,ওইদিন pg রুমে তোমরা চলে এসো,পেশেন্ট কম থাকলে পড়িয়ে দেব।"
বলেই হেসে হাঁটতে শুরু করলো পেডিয়াট্রিক এর দিকে।নিলেষ ফোন করে কিছু একটা বলছিল,কিন্তু ওর ফোনটা মাঝপথে কেটে গেছে।বারবার ফোন করেও পাচ্ছে না অবিনাশ।ফোনটা সুইচ অফ।অবিনাশ জানে ওর আজ পেডিয়াট্রিক এ ডিউটি।তাই ও তাড়াহুড়োতে যাচ্ছিল,কারণ নিলেসের ফোন কাটার আগে শেষ যে কথাটা ও শুনতে পেয়েছে সেটা "মিতু।"
মিহিরা অবিনাশের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।ওর কষ্ট হচ্ছিল।কলেজের প্রথমদিন ইন্ট্রো থেকে ওর অবিনাশ কে ভীষণ ভালো লাগে।বাঙালি ছেলেদের মধ্যে হটাৎ করে এত সুন্দর ছেলে দেখা যায় না।ভীষণ রকম পুরুষালি একটা সৌন্দর্য।তাদের ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে প্রথম দিনই আলোচনার বিষয় ছিলো অবিনাশ।অবিনাশ কলেজের ক্রাস।কিন্তু সমস্যা অবিনাশ কাউকেই ঠিক বন্ধুর বেশি উঠতে দেয় না।অথচ অবিনাশ যে সিঙ্গেল সেটা মোটামুটি সবাই জানে। মেয়ে দের অনেকে অবিনাশ কে প্রপোজ করার প্ল্যান করেছিলো।কিন্তু অবিনাশের চারপাশে এমনি একটা ব্যাক্তিত্ব বিরাজ করে কারো সাহস হয় না ওর কাছে বলার। মিহিরা সব চেষ্টা করেছে অবিনাশের সাথে একটু কথা বলার,কিন্তু অবিনাশ কাজের বাইরে একটুও কথা বলে না কারোর সাথে।
মিহিরার মাঝে মাঝে গা জ্বলে,তার এত রূপ দিয়েও সে কিছুতেই ওর মন জিততে পারছে না।

...............
pg রুমে বসে কিছু ডিসচার্জ সাইন করছিল নিলেষ।হটাৎ প্রচণ্ড শব্দে দরজাটা খুলে যেতেই ও চমকে তাকালো।অবিনাশ বড় বড় কয়েকটা পা ফেলে ওর সামনে এসেই বলল "ফোনে মিতুকে নিয়ে কি বলছিলি?"
নিলেষ পাশের চেয়ার টা বারিয়ে দিল।"তুই বস আগে,একটু ঠাণ্ডা হ,বলছি।"
অবিনাশ তার আগেই চেয়ারটা একটা জোরে হাত দিয়ে সরিয়ে সামনে এসে বললো "কি হয়েছে ?"
নিলেষ ওর মাথা গরম বন্ধুটিকে অনেক ছোটবেলা থেকেই চেনে।ও শুধু দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।ও জানে এই সময়ে অবিনাশ শান্ত হবে না।বোনের ব্যাপারে একটু কিছু শুনলেই এভাবেই জ্বলে ওঠে ও।
"আরে একটু আগে যখন হসপিটাল আসছিলাম,দেখলাম মিতু কেএফসিটার দিকে যাচ্ছে,খুব তারাহুরিতে।আমি দেখতে পেয়ে বললাম আমার সাথে বাইকে উঠে যেতে,পৌঁছে দেব যেখানে যাবে,কিন্তু মিতু কিছুতেই উঠতে চাইলো না আশ্চর্য।আমার তখন কেন যে মনে হলো ও চাইছে না আমি জানি ও কোথায় যাচ্ছে । তো আমি ওকে কিছু না বলে ওকে ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করি।ও কেএফসি দিয়ে ঢুকলো।আর সবথেকে অদ্ভুত ব্যাপার মিতুকে এত সাজতে আমি কখনো দেখিনি। তাই মনে হলো তোকে বলি।এইরকম বয়স তো ! ভুলভাল কিছু করলে.........."
"কতক্ষন আগে দেখেছিস......"অবিনাশ ওর কথা শেষ হবার আগেই বললো।
"এই ধর ১৫, ২০ মিনিট।"
অবিনাশ ওর পুরো কথা না শুনেই পিছন ফিরে হাটতে শুরু করেছে করিডোর দিয়ে।
নিলেষ পিছন থেকে চেচাচ্ছে "তোর ইভিনিং আছে, কোথায় যাচ্ছিস?"
অবিনাশ দৌড়ে কলেজ বিল্ডিং থেকেই নেমেই নিজের হণ্ডা সিটিতে উঠলো। ওর চোখ জ্বলছে।
ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ৫

মিতু কেফসিতে ঢুকে মুখ বাড়িয়ে চারিদিকে দেখে নিল।কেউ এই সময়ে সাধারণত থাকে না সেরকম।বিকেল বাড়লে ভিড় বাড়ে।না কেউ পরিচিত নেই আশপাশে।
ও মুখটা নিচু করে ঢুকে একেবারে কোণের টেবিলে বসলো।বসেই ঘড়ি দেখল।এখনও ১৫ মিনিট মত অপেক্ষা করতে হবে অর্কর।অর্ক কাল রাত্রে ফোন করে বলেছে ওর কিছু আর্জেন্ট দরকার আছে,তাই যেন দেখা করে আজকেই।
মিতু সকালে দাদা বেরোনোর আগে বেরোতে পারেনি,না হলে দাদা বলতো গাড়ি করে পৌঁছে দিচ্ছে যেখানে ও যেতে চাইবে।দাদা বাবা বেরোনোর পর,মাও যখন একটু আগে ডিউটিতে বেরোলো ও তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়েছে,ওদের কেউই আজ সন্ধ্যার আগে ফিরবে না ।তার মধ্যেই মিতু দেখা করে বাড়ি চলে যাবে।
ও আরো সতর্ক হয়ে বাড়ি থেকে এতটা দূরের কেএফসিটা চয়েস করেছে যাতে সহজে কেউ পরিচিত না থাকে আশেপাশে।
মিতু তারাহুরো করে একটা বার্গার নিয়ে বসলো। মোবাইলে অর্ককে টেক্ট করলো আর কতক্ষন লাগবে?
অর্ক এসএমএস সিন করেনি এখনও। গাড়ি চালাচ্ছে সম্ভবত।যদিও অর্ক বলেছিল পৌঁছতে পৌঁছিতে 3.15 বেজে যাবে,মানে এখনও ১৫ 20 মিনিট বাকি।মিতু বার্গারটা মুখে তুলতে যাবে তখনই জমে গেলো ভয়ে।তখন কাচের দরজাটা ঠেলে কেএফসির ভিতরে ঢুকছে অবিনাশ।
............
অবিনাশ ঢুকেই চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়েই দেখতে পেলো মিতুকে।মিতু ওকে দেখেই চোখ নিচু করে মাথা নিচু করে নিলো।অবিনাশ জ্বলে উঠলো পুরো।মিতু তার থেকে কখনো চোখ নিচু করেনি।যেন সে কোনো অপরাধ করেছে।অবিনাশ সেটা ধরে ফেলেছে বলে নিজেকে লুকোতে চেষ্টা করছে মিতু।তাহলে কি নিলেশের সন্দেহই ঠিক ?! সত্যি কেউ আছে মিতুর জীবনে ?!
................
মিতু প্রচণ্ড ভয়ে মুখ নামিয়ে নিলো।অবিনাশের মুখের পেশীগুলো প্রচণ্ড শক্ত হয়ে আছে।চোখ দুটি জ্বলছে রাগে।ও দ্রুত এগিয়ে গেলো মিতুর সামনে।তারপর ঠিক মিতুর উল্টো দিকের সিটে বসলো।টেবিলের উপর দুটো হাত শক্ত করে মুঠি করে নিজের রাগ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছিল অবিনাশ।বেশ কিছুক্ষন পর নিজেকে সামনে কথা বললো অবিনাশ।
" মিতু,তুমি কেএফসি এত ভালোবাসো জানতাম না তো ?"
মিতু মুখটা আরো নিচু করলো।দাদা রেগে গেলেই "তুই" থেকে " তুমি" বলতে শুরু করে।
ও আমতা আমতা করছিল " আসলে বাড়িতে ভালো লাগছিলো না,তোরা কেউ নেই,ভাবলাম একটু ঘুরে যাই"
ও মাথা তুলতে পারেনি এখনও।
" হম" একটু থেমে অবিনাশ আবার বললো " ভালো খুব ভালো"।কথাটার মধ্যে ব্যাঙ্গ এত স্পষ্ট যে মিতু মুখ তুলতে বাধ্য হলো আর তখনই আরো ভয় পেলো কারণ অবিনাশ জ্বলছে রাগে।
" এত একা লাগছিল মিতু,একা লাগলে খুব সুন্দর করে সাজতে লাগে না ?!"অবিনাশ কেটে কেটে বললো।
মিতু মুখ নিচু করল।আজ ও অনেক সুন্দর করে সেজেছে।কতদিন পর অর্কর সাথে ওর দেখা হবে।

।দাদা খুব স্বাভাবিক কিছু আন্দাজ করেছে, যে মেয়ে চোখে কাজলটুকু দেয় না,সে হটাৎ সেজে এসেছে এত তাও একা একা বাড়ি থেকে এতটা দূরে।
" তুমি kfc এত ভালোবাসো মিতু আমি ত এতদিনেও জানতাম না। "
মিতু আড়চোখে ঘড়ি দেখছে আর ১০ মিনিটের মধ্যেই অর্কর আসার কথা।দাদা অর্ককে দেখলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে।
" দা ভাই,তুই তো এসেই গেলি চল তাহলে বাড়ীতে চলে যাই।"
অবিনাশ হাসলো ।" কেন মিতু,এতদিন পর এলাম।ভাবছি একটু বসে যাই,তুমিও খেতে এসেছো,কি খাবে বলো মিতু ?"
মিতু স্পষ্ট বুঝতে পারছে দাদা সবই বুঝতে পেরেছে।শুধু অপেক্ষা করতে চাইছে " কে " মানুষটা দেখার।
দাদার হাসিটা দেখে মিতুর বুক দুরদুর করছিল।মিতু জানে দাদার রাগের থেকেও অনেক ভয়াবহ এই মিষ্টি মুখটা।
সময় কাটছে একটু একটু করে।অবিনাশ ফোনটা বের করে টেবিলে রেখে বেশ হেলান দিয়ে বসলো ।তারপর মিতুর বার্গারের কাছ থেকে কোল্ড ড্রিংক তুলে নিয়ে স্ত্র টা মুখে দিল।
মিতু একবার আড়চোখে দাদাকে দেখেই ঘড়ি দেখলো।আর পাঁচ মিনিট বাকি ১৫ বাজতে।
অবিনাশ মিতুকেই দেখছিল।ওর ভিতর অব্দি জ্বলে যাচ্ছিল রাগে,ও ভালোভাবেই দেখেছিল মিতু বারবার ঘড়ি দেখছে।অর্থাৎ কারো আসার অপেক্ষা করছে।

মিতু ঘড়ি দেখলো ৩.৩০।
এখনও কেউ আসেনি।ও মনে মনে চাইছিল অর্ক আজ না আসুক।দাদাকে আজকে ভারী সুন্দর দেখতে লাগছে।অন্য সময় হলে মিতু বলেই দিত দাদা তোকে সুন্দর লাগছে। নেভী ব্লু কালারের গেঞ্জিটা, দাদার ফর্সা গায়ের উপর ঘামে ভিজে চেপে বসেছিল ।দাদার অতীব সুন্দর দেহটা স্পষ্ট, ঘামে ভেজা জামার মধ্যে দিয়ে।কিন্তু আজ দাদাকে দেখে ওর প্রচণ্ড ভয় লাগছে।
শেষ চেষ্টা করলো মিতু,একবার বাথরুমে গিয়ে যদি অর্ককে এসএমএস করতে পারে খুব ভালো হতো।
শেষ চেষ্টা।
ও উঠে দাড়ালো।অবিনাশের বিশেষ কোনো হোলদোল হলো না।ও যেন তৈরীই ছিলো এরকম কিছু হবে।
" দাদা সর,বাথরুমে যাবো।"
অবিনাশ সরে বসলো।
" ফোনটা রেখে যাও মিতু।বাথরুমে ফোনের কি দরকার।"
অবিনাশ মুখে হাসি এনে মিতুর হাতে ধরা ফোনটা নিতে নিতে বললো।
" না মানে,অসুবিধা কি দাদা নিয়ে যদি যাই,মানে যাব মানে ........"ও আমতা আমতা করছিল।
" কিসের জন্য মিতু,কাউকে ফোন করা দরকার নাকি ?" অবিনাশ মুখে হাসি নিয়েও কেটে কেটে বললো।
" দা বিশ্বাস কর,আমার একটু অসুবিধা আছে ,।"
"কি অসুবিধা মিতু ,আমাকে বলা যাবে,নাকি অন্য কাউকে লাগবে।"অবিনাশ উঠে দাড়ালো।মিতু অবিনাশের কাধও ছাড়াচ্ছে না লম্বাতে।

" লোকজন দেখবে এভাবে দাড়িয়ে থাকলে মিতু,আরো একবার জিজ্ঞেস করছি কি এমন অসুবিধা যাতে ফোন নিয়ে বাথরুমে যেতে হয়,যেটা আমাকে বলা যাবে না ?!"শেষের কথাতে রীতিমত জোর দিল অবিনাশ।তার অপমানিত লাগছিল।এত কিছুর পরও মিতু তাকে কোনো জিনিস লুকোতে চাইছে।
মিতু অনেক্ষন চুপ থেকে বললো " আমার শারীরিক অসুবিধা হচ্ছে,হটাৎ হলো,আমার কাছে কোনো প্রটেকশন নেই,আমি মিলিকে ফোন করতে যেতাম,ওর বাড়ি কাছে,ও যদি নিয়ে আসে।"মিলি এক নিশ্বাসে বলেই অন্য দিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিল

অবিনাশ থমকে দাঁড়ালো ।মিতু অনেক বড় হয়ে গেছে ও জানে।কিন্তু ও ভাবতেও পারেনি মিতু তাকে এই ছোট কথাটা এতক্ষণ বলতে সাহস পায়নী।সে সামনে থাকতে অন্য বান্ধবীকে ফোন করে ডাকতে হচ্ছে
এটুকু ভরসাও দিতে পারেনি মিতুকে।মিতু কি ওকে এতটাই ভয় পায়?! অবিনাশ নিজের ব্ল্যাক জ্যাকেটটা টেবিল থেকে তুলে নিলো।মিতু কিছু বোঝার আগেই ওর কাধের উপর জ্যাকেটটা জড়িয়ে দিল।জ্যাকেটটা মিতুর কোমর ছাড়িয়ে প্রায় হাঁটু অবধি নেমে গেছে।মিতু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকানোর আগেই ও ভীষণ আলতো করে মিতুর কাধে হাত দিয়ে এগিয়ে দিল।
তারপর বেশ আসতে করে বললো " মিতু,একটা কথা মনে রাখিস,তোর যা সমস্যা হোক আমাকে বলবি,আমি আছি সোনা,এটুকু ভরসা রাখিস।"
মিতু কেদে ফেলেছিল প্রায়।দাদার গলাটা এত সুন্দর লাগছিল যে ওর মনে হচ্ছিল দাদা খুব কষ্ট পেয়েছে ও দাদাকে বলেনি বলে ।মিতুকে আলতো জড়িয়ে অবিনাশ গাড়ির দিকে যাচ্ছিল, ।
আর মিতু ভাবছিল একটা সময় ছিল মিতু দাদাকে সব কিছু বলতো,আর আজ?! তার দাদা ডাক্তার সে জানে।তার কাছেও এত লজ্জা মিতুর।
সত্যি ও অনেক বড় হয়ে গেছে।সব কিছু বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে কোথাও।
অবিনাশ ড্রাইভিং সিটে বসলেই ও পাশে বসলো।গাড়িটা যখন পার্কিং লট পেরোচ্ছ মিতু চমকে উঠলো কারণ পাশেই বাইকটা রেখে বাইকের গায়ে হেলান দিয়ে সিগারেট খাচ্ছে অর্ক।
আর অর্কর চোখটা ফলো করে যাচ্ছে ওকে।অবিনাশ অন্যদিকে তাকিয়েছিল তাই দেখলো না মিতু চোখের ইসারায় অর্ককে বোঝানোর চেষ্টা করছে পরিস্তিতি।
..............

মিতুকে নিয়ে নিজের হসপিটালে গেলো ও। ৫ মিনিট মত লাগে ওর হসপিটাল।মিতু পুরো রাস্তাই চুপ করে ছিলো,বাইরের দিকে তাকিয়ে।অবিনাশ স্পষ্ট বুঝতে পারছিল মিতু তার সামনে স্বচ্ছন্দ হতে পারছিলো না।তাই জন্যই ও কলেজে এসে একটু ভেবেই মিহিরাকে ফোন করলো।
" হ্যাল্লো,মিহিরা,অবিনাশ বলছি,একটা হেল্প করতে পারবে।"
মিহিরা তখন সব করতে রাজি।প্রথমবার অবিনাশ ওকে ফোন করেছে নিজের থেকে।
" একদম বলো।"
অবিনাশ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো,ও ফোন করবে বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে,মিতু সিটে বসে ফোন ঘাটছে,বিকেলের রোদটা এসে পরেছে ওর মুখে,ভীষণ পবিত্র মুখটা যেন জ্বলছে দেবীর মত।অবিনাশ চোখ সরাতে পারছিল না।
" অবিনাশ ,অবিনাশ ফোনে আছো,হেলো হেলো,আমি কোনো কথা শুনতে পারছিনা।" মিহিরার কথা গুলো ওকে আবার ফোনে ফিরিয়ে আনলো।
" হম,বলছি তুমি হোস্টেলে আছো তো ?"অবিনাশ বললো।
মিহিরা উত্তর দিলো " না কান্টিনে,তবে আজকে আর ক্লাস নেই চলে যাবো হোস্টেল।কেন ?!"
অবিনাশ মিতুর দিকে তাকালো।মিতু ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।কি ভীষণ সুন্দর ওই চোখ দুটো।
" একবার পার্কিং লট এ আসতে পারবে,মিতু মানে আমার বোন.....( বলেই একটু থেমে গেলো,"বোন")
ওর পিরিওড হয়েছে রাস্তাতে ।প্রটেকশন নেই।আর বুঝতেই পারছো ও ঠিক আমার কাছে স্বাভাবিক হতে পারছে না। তো যদি তুমি একটু তোমার রুমে রাখো।আমি ওর জন্য জামা এনে দিচ্ছি।"
" হ্যা হ্যা আসছি,এক মিনিট।"
ফোনটা কেটে গেলো।অবিনাশ এগিয়ে গিয়ে মিতুর দরজার পাশে ভর দিয়ে দাড়ালো।
" মিতু,আমার ৪ টে থেকে ডিউটি,আমি আমার এক জুনিওরকে বলে দিয়েছি।মিহিরা ওর নাম।ওর কাছে তুই থাক।আমি তোর আলাদা একটা জামা কিনে আনছি,আর প্রটেকশন ও।তুই কিছুক্ষন একটু কষ্ট করেনে।আমি ছ" বাজার মধ্যে বেরোচ্ছি।তোকে নিয়ে বেরিয়ে যাবো।মাকে বলে দিয়েছি।তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না।"
মিতু চুপ করে ঘাড় নারলো।অবিনাশ দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।না বড় ভুল করছে ও।মিতুকে প্রোটেক্ট করতে গিয়ে ও অনেক স্ট্রিক্ট হয়েছে।মিতু ওকে ভয় পাচ্ছে।এটা ঠিক না।এটা কাটাতে হবে,যে করেই হোক।
" অবিনাশ" মিহিরা ডাকতে ডাকতে এগিয়ে আসছে
ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ৬

মিহিরা অবিনাশের দিকে এগিয়ে আসতেই মিতুকে দেখতে পেলো।অবিনাশ ওকে দেখেই দরজা খুলে দিল। হাত ধরে বের করে আনলো মিতুকে।

" মিহীরা ,এ মিতু,মিতু এ মিহিরা,আমাদের কলেজের খুব ভালো স্টুডেন্ট।"

মিহিরা মিতুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল,মিতু অবিনাশের জ্যাকেটটা খুলে এগিয়ে দিল।
" এটা তুই রাখ,দিদির সাথে যা,ফ্রেশ হ। আমি জামা কিনে আনছি। আর মিহিরা এক দুঘন্টা একটু রেখে দিও তোমার ঘরে। আমি বিভাসকে বলে আমার ডিউটি আল্টার করার চেষ্টা করছি।"

" সে তুমি চিন্তা করো না, তোমার বোন মানে আমারও ত বোন,।"
মিতু মিহিরার গায়ের কাছে চিপকে দাড়িয়েছিল।মিতু অবাক হয়ে দেখছিল মিহিরা কি সুন্দর দেখতে।

অবিনাশ ওদের দিকে বাই বলে pg রুমের দিকে গেল।
মিহিরার একটু খারাপ লাগলো,বোনের বাইরে আর একটা কথাও বলেনি অবিনাশ,কিন্তু যদিও বোনের ভার ওকে দিয়েছে মানে ওকে যথেষ্ট ভরসা করে ও।আর বোনকে ম্যানেজ করতে পারলে দাদা কি একটুও গলবে না ?!

........................

মিহিরা মিতুকে বাথরুমে ঢুকিয়ে নিজের একটা নতুন শর্টস বের করলো,প্রয়োজনীয় প্রটেকশন ও। মিহিরা নিজের রুমে একাই থাকে।

মিতু অনেক্ষন পর যখন বেরোলো তখন ওর অনেক ফ্রেশ লাগছিল।ও বাথরুমে যখন ছিলো মিহিরা চিৎকার করে বলল ও হোস্টেলের নিচে যাচ্ছে,অবিনাশ নিচে দাড়িয়ে আছে ওর জামা নিয়ে।গার্লস হোস্টেলের মধ্যে ছেলেরা ঢুকতে পারবে না বলে
মিহিরা নিচে গেছে ওর থেকে আনতে।

মিতু বেরিয়ে জানলা দিয়ে দেখলো।অবিনাশ আর মিহিরা হেসে হেসে গল্প করছে। দুজনকে এত সুন্দর লাগছে,যেন ভগবান বানিয়ে দিয়েছেন দুজনকে দুজনের জন্যই।মিতুর হটাৎ অদ্ভুত লাগল। বৌদি বৌদি করে ও অনেক ভেবেছে,দাদাকে রাগিয়েছে।কিন্তু সত্যি যখন মিহিরা আর অবিনাশকে পাশাপাশি এত হেসে হেসে গল্প করতে দেখছে ওর ভালো লাগছে না। ওর মনে হচ্ছে ওর দাদাকে কেউ যেন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে.......ওর কষ্ট হচ্ছে,অদ্ভুত রকম

তখনই ফোনটা বেজে উঠলো।

....................
মিহিরা নিচে নেমে দেখলো অবিনাশ দাড়িয়ে আছে কম্পাউন্ডের মধ্যে।ও হেসে এগিয়ে গেলো ।

অবিনাশ দুটো বড় প্লাস্টিক এগিয়ে দিল।
" এত কি কিনলে ?"মিহিরা অবাক হয়ে বললো।

" আসলে দু তিনটে সেট কিনলাম,ওকে একবার পরে দেখে নিতে বলো,আর.......মানে আমি তো ঠিক জানি না.....মানে বলছিলাম কিছু ইনার আছে,আমি আসলে ওর সাইজ জানি না........"
অবিনাশ একটু যেন লজ্জা পাচ্ছে। মিহিরা প্লাস্টিকগুলো নিয়ে হাসলো।
" তুমি কিন্তু অনেক ভালো বর হবে অবিনাশ,যেভাবে বোনের জন্য করছো?!"

অবিনাশ হাসলো " বলছ ভালো বর হবো মিতুর জন্য যা করছি?!"

মিহিরা হেসে ফেললো। তখন তারা জানে না মিতু তখন তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

...............
ফোনটা বাজতেই মিতু দৌড়ে গেলো, "অর্ক"

" হ্যাল্লো,।"মিতু বলে উঠলো

" খুব তো মজা বলো,রোজ রোজ নতুন নতুন ছেলে ?"

" ছি,কিসব বলছ,ওটা আমার দাদা,এভাবে কি করে বলতে পারো তুমি,তোমাকে দেখিয়েছিলাম দাদার ছবি.তার পরেও বলতে পারলে ?"
মিতু কেদে ফেললো।ও ভাবতেও পারেনি অর্ক এরকম বলতে পারে।

" এই মিতু,মিতু, শোন শোন সরি,আমার খুব খারাপ লাগছিল তোমাকে আর একটা ছেলের সাথে দেখে।আসলে আমি ভাবিনি তোমার দাদাকে বাস্তবে এত ভাল দেখতে,আসলে তোমার দাদা যেভাবে জড়িয়ে বেরিয়ে আসছিলো আমি ভাবলাম অন্য কিছু।তোমাদের দুজনকে পাশাপাশি এত সুন্দর লাগছিল যে আমার গা জ্বলছিল।"

"its ওকে,অনেক ভালো,আজকে তুমি আসো নী,দাদা জানতে পারলে বিপদ হতো।"

" তুমি এমন ভাবে বলো যেন তোমার দাদা কোনো ডন।এত ভয় পাও কেন ?!"

মিতু সঙ্গে সঙ্গে কথাটা অন্যদিকে ঘোরানো চেষ্টা করে" এলেনা কেন ?! যদিও না এসে ভালই করলে ?"

"আরে আমি বাইকটা রাখছি,দেখলাম তোমার দাদা ঢুকছে,তখন তো জানি না।তারপর ও গাড়ি থেকে বেরোলো ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে বেরোলো " মা,আজ আমার ফিরতে রাত হবে,আর আমি মিতুকে নিয়ে ফিরবো।চিন্তা করো না....."

তোমার নামটা শুনেই আমার মনে হলো ও তোমাকে চেনে,তুমি কেস খেতে পারো।

"যাই হোক,তোমার সাথে কথা বলা জরুরি,কবে দেখা করতে পারবে?"

দরজা খোলার শব্দ হতেই মিতু বললো " রাখছি পরে বলছি।"

মিহিরা ঢুকছে ঘরে।
....................

অবিনাশ দরজা খুলে দিতে মিতু গাড়িতে উঠলো। অবিনাশের নেশা লাগছিল। মিতুর জন্য ও একটা হাঁটুর নিচ অব্দি ব্লু কালারের ড্রেস এনেছিল।
মিহিরা মিতুকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। অবিনাশ কখনো মিতুকে এভাবে দেখেনি। তার সুন্দর মিতু যে কবে ছোট্ট মেয়ে থেকে নারী হয়েছে ও এত স্পষ্ট করে কোনোদিন উপলব্ধি করেনি।

সন্ধ্যে নেমে গেছে অনেক্ষন।

" দাদা,তোকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে জানিস!"
অবিনাশ চমকে ঘুরে তাকালো।মিতুর গলাতে আগের মত ভয় নেই। কতদিন পর মিতু তারসাথে এভাবে কথা বললো। অবিনাশের ভীষণ খুশি লাগছিল। বিভাসের রুমে গিয়ে সে যখন রেডী হচ্ছিল বিকাশ পর্যন্ত অবাক।"
" কি রে অবিনাশ, ডেট যাচ্ছিস নাকি, আল্টের করলি,তারপর এত সেজে যাচ্ছিস।"

" হম,বোনের সাথে ডেট যাচ্ছি।" অবিনাশ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো।

বিকাশের মুখটা চুন হলো " ধুস,আমি ভাবলাম কি না কি ?!"

অবিনাশ হেসে বেরিয়ে এসেছিল।

" মিতু তোমাকেও ভীষণ সুন্দর লাগছে,আমি তো ভাবতে পারিনি আমার ছোট্ট মিতু এত সুন্দর একটা মেয়ে। কেন যে তোমার দাদা হলাম,না হলে sure প্রেম করতাম তোমার সাথে।
মিতু লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করলো। অবিনাশ তৃষ্ণার চোখে তাকিয়ে ছিল সেই সুন্দর মুখটার দিকে।
যে একটা সদ্য বিকশিত কুড়ি যেন সূর্যের আলোর স্পর্শে আবার গুটিয়ে যেতে চাইছে।

" তুই না দাদা,সব সময়ে এমন বলিস। তোর মুখে কিছু আটকাতে পারে কখনো।"অবিনাশ গাড়ি স্টার্ট করে পার্কিং থেকে বেরোচ্ছিল।
" কেন আমি এত খারাপ নাকি যে আমাকে বিয়ে করা যাবে না?"
মিতুর আজকে ভালো লাগছিল।কেন ও জানে না।ac চলছিল,আর পুরনো দিনের গান,কলকাতার জ্বলে ওঠা আলোগুলো একে একে পিছনে সরে যাচ্ছিল।চারপাশে কত লোকজন কত কথা বলতে বলতে সরে যাচ্ছিল।দাদার গায়ের গন্ধ ,পারফিউমের সাথে মিশে একটা অদ্ভুত মাদকতা তৈরি করছিল।
" না,তুই একটু বেশি ভালো রে,এত সুন্দর দেখতে,সার্জেন হবি কিছুদিন পর,তোকে তো যেকোনো মেয়ে পেতে চাইবে ,তোকে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।"
অবিনাশের হাত স্টিয়ারিং এর উপর চেপে বসলো।ওর খুশিতে পাগল লাগছিল,মিতুর চোখে সে কিছু অন্তত আছে।
"কিন্তু আমি তোর মত ছেলেকে পাওয়ার যোগ্য না দাদা,আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে,খুব সাধারণ দেখতে,সাধারণ পড়াশুনাতে।আমাকে আর কে পছন্দ করবে?"
অবিনাশের খুব উত্তর দিতে ইচ্ছে করছিল।আমি তোরই আছি মিতু,পুরোটাই তোর,শুধু তুই একবার চেয়ে দেখ,সবটুকু দেব তোকে।কিন্তু ও জানে সেটা এখনও বলার সময় আসেনি।কোনোদিন আসবে কিনা ও জানে না ?!

" আমার এত সুন্দরী মিতুই যদি আমাকে পছন্দ না করে অন্যরা কি পছন্দ করবে ?"
অবিনাশ সোজা না বেরিয়ে pg হসপিটালের দিকে বাক নিতেই মিতু কথা বললো " কোথায় যাচ্ছিস দাদা,এদিকে কেন বাকলি?!"

" চুপ করে বসে থাক মিতু,আজ রাতটা আমার ফাঁকা,চল সারারাত ঘুরবো দুজন।মাকে বলে দিয়েছি।তুই কতদিন বাইরে বেরোস না সারাদিন পড়িস।আজ যা ইচ্ছে করবি আমার সাথে।" বলেই বাবুঘাট ছাড়িয়ে পার্ক করলো গাড়িটা।
নেমেই ঘুরে গিয়ে মিতুর দিকের দরজা খুলে নিজের হাতটা এগিয়ে দিল।মিতু নিজের ছোট্ট নরম হাতটা রাখল অবিনাশের পুরুষালি হাতে।অবিনাশ হাত ধরে আসতে করে ওকে বের করে গাড়ি লক করলো।

মিতু আড়চোখে দেখছিল দাদা কি সুন্দর দেখতে।মিতুর দাদার হাতটা জড়িয়ে ধরলো।অবিনাশ মিতুকে টেনে আনলো ওর গায়ের কাছে।তারপর একটা হাত দিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো।

অবিনাশ বুঝতে পারছিল মিতু তাকে লক্ষ্য করছে।ও অনুভব করছিল মিতুর চোখের দৃষ্টি ওর শরীরের উপর।কিন্তু ওর ভীষন ভালো লাগছিলো।কারণ সেই চোখের দৃষ্টি কোনো ছোট বোনের দাদার প্রতি না,সে দৃষ্টি কোনো নারীর কোনো পুরুষকে খোজার

ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ৭

ঠিক করছিস কি অবিনাশ?"
ফোনের মধ্যে থেকে মিসেস বিশ্বাসের কথা শুনে অবিনাশ ঘুরে দেখল মিতুর দিকে।মিতু অনেক মনোযোগ দিয়ে কুলফি খাচ্ছে,।অবিনাশ বাইরের উল্টো পাল্টা খাবার খাওয়া একেবারে পছন্দ করেনা,কিন্তু ওর খুব ভালো লাগছিল মিতুকে দেখে।ও অনেকদিন পর যেন নিজের ভয়ের খোলোস থেকে বেরিয়ে প্রজাপতির মত উড়ছিলো।

" ও তোকে দাদা মানে,সুন্দর,শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত দাদা, তুই ওর চোখে আদর্শ একটা ছেলে,ও সব ছেলের মধ্যে তোকে খোজে,তোর মত কেউ,যে ওকে প্রোটেক্ট করবে ,কিন্তু তুই কি ভেবেছিস তুই যখন ওর সামনে নিজের দাদা সত্তা সরিয়ে শুধু অবিনাশ হয়ে দারাবি কি হবে বুঝছিস ?"

" আমি কি এতটা খারাপ মা,কেন এরকম আমার সাথেই হলো,যে মেয়েটিকে সবথেকে ভালোবাসি তাকে পাওয়ার পথ যেন ভগবান নিজের হাতে বন্ধ করে দিয়েছে,আমি ওর দাদা নই মা,কখনোই ছিলাম না সুতরাং আমাকে নিজেকে বের করে আনতে হবে ওই দাদা সত্তা থেকে,ও শুধু আমাকে চিনবে,অবিনাশ বলে একটা ছেলে যে ওর জন্য সবকিছু করতে পারে।"

"কিন্তু যদি ও দোটানার মধ্যে পরে,যদি বুঝে উঠতে না পারে কি করবে,যদি ওর দাদাকে বেশি ভালো লাগে তাহলে কি করবি ?!"

" ওকে যেতে দেব ,ও যেটাতে খুশি থাকে করতে দেব।কিন্তু সেটা এখন না,এখন আমি নিজের সব চেষ্টা করবো ও যাতে অবিনাশকে অ্যাকসেপ্ট করতে শেখে নিজের দাদাকে না।"



মিসেস বিশ্বাস দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন শুধু।

অবিনাশ ফোনটা রেখে ফুচকার প্লেটটা নিয়ে গেলো মিতুর দিকে।মিতু তখন নদীর দিকের একটা বেঞ্চে বসে কুলফি খাচ্ছিল,দাদাকে দেখে ওর চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে গেলো।
অবিনাশ হাতের জামাটা গুটিয়ে নিয়েছিল কনুই অব্দি,ঘামে ভিজে জামাটার বুকের দুটো বোতাম খোলা ছিল।মিতু ঢোক গিলল।অবিনাশ কখনো এভাবে নিজেকে নিয়ে যাইনি মিতুর সামনে।মিতু অবাক হয়ে দেখছিল তার অতীব সুন্দর দাদাকে।

অবিনাশ অনুভব করছিল মিতুর দৃষ্টি।ও সোজা হয়ে বসলো আর সঙ্গে সঙ্গে একইসাথে সংকুচিত হলো ওর সমস্ত পেশি।মিতুর চোখ ওর উপর খেলে গেলো।

ও মৃদু হেসে একটা ফুচকা প্লেট থেকে তুলে মিতুর মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো।

" এবার কি করবি বল মিতু ?মোটে আটটা বাজে।"

মিতু দাদার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ভাবছিল।
" মুভি দেখবি দাদা,অনেকদিন দেখিনি,কোনো ভূতের মুভি,নাইট শো তে।" মিতুর মুখটা উত্তেজনাতে উজ্জ্বল হলো।

অবিনাশ হাসতে গিয়েও থেমে গেলো।নদীর ধারের আলো অন্ধকার ভরা পরিবেশ ,চারপাশের লোকজনের চিৎকার,হকারদের শব্দ যেন দূরে সরে যাচ্ছিল।মিতু ফুচকা তুলে মুখে পুড়ছিল আর অবিনাশ এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে,অনেক রকম অনুভুতি ওর মধ্যে কাজ করছিল।দুদিন আগেও ও মিতুর দিকে এভাবে তাকাতো না,মিতু ওর কাছে ছোট বাচ্চা ছিলো,কিন্তু সেদিন মিতু ওকে জড়িয়ে ধরার পর থেকেই ও বুঝতে পারছিল ওর মিতু আর বাচ্চা নেই,মিতুর শারীরিক গঠনের পরিবর্তন ঘটেছে অনেক,সেটা এতটাই যে অবিনাশের পুরো শরীর জেগে উঠেছিল মিতুকে পাওয়ার জন্য।



" দাদা,annabelle comes home চলছে CC 2, টে দেখবি,11.30 এর শো।"

" যা বলবে মিতু সোনা,আজ তোমার দিন,তুমি শুধু আজ্ঞা করো।"

" হে হে দাদা তোকে যে পাবে সে না খুব লাকি,আমার বৌদি কবে আনবি ?"

"তুমি যেদিন বিয়ে করতে রাজি হবে মিতু।"

"আমার বিয়ের সাথে তোর কি সম্পর্ক বিয়ের ?"



" সবটাই।" অবিনাশ বিরবির করে বলেই উঠে দাড়ালো "চলো মিতু,এবার উঠি,এখানে ভালো লাগছে না।"

ওরা উঠে পৌভাজির দোকানগুলো পেরিয়ে রেল লাইন পেরিয়ে বাবুঘাটের মুখের কাছে আসতেই,অবিনাশ বললো তুই উল্টো দিকে দাড়া,আমি গাড়িটা নিয়ে ঘুরিয়ে তুলে নিচ্ছি তোকে।"
মিতু দুদিন তাকিয়ে রাস্তা পেরিয়ে উল্টোদিকে দাড়ালো।এদিকে বড় বড় গাছের জন্য একটু অন্ধকার হয়ে আছে,পার্কিং এর জন্য যাইগা না পেয়ে গেট থেকে একটু দূরে পার্ক করতে হয়েচিল গাড়িটা।মিতু দাড়িয়ে দেখছিল দাদা গাড়ি স্টার্ট করেছে।গাড়িটা উ টার্ন নিয়ে এদিকেই আসছিল।

" মালটা খাসা,পুরো রসালো।" মন্তব্য কানে যেতেও মিতু মাথা নিচু করে নিজেকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।পাশে দাড়িয়ে কিছু ছেলে মিতুকে নিয়ে মন্তব্য করেই যাচ্ছিল।

" রেট কত রে, কততে উঠবি?"

মিতু আরো জড়িয়ে ধরলো নিজেকে।
অবিনাশ এতক্ষণ অন্ধকারের জন্য পরিস্থিতি বুঝতে পারেনি,একটু সামনে গাড়িটা এগোতেই দেখলো,মিতু পুরো মুখ নিচু করে দাড়িয়ে আছে,আর ওর পাশে দু তিনটে ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে বলতে হাসছে।অবিনাশের মাথা গরম হযে গেলো।গাড়িটার স্পিড বাড়িয়ে ও ঠিক ছেলে তিনটের সামনে গিয়ে ব্রেক কষল।
" শালা বোকা****, গাড়ি চালাচ্ছিস না গা**"" ঢোকাচ্ছিস ,নাম বা** গাড়ি থেকে,তারপর দেখছি।" ছেলে তিনটে ওর গাড়ির দরজা অব্দি উঠে চলে এসেছে,।অবিনাশ প্রচণ্ড রেগে দরজা খুলেই সামনের ছেলেটাকে একটা ঘুসি মারলো,ছিটকে পড়ল ছেলেটা,বাকি দুজন ওর দিকে এগিয়ে আসতেই ও প্রচণ্ড জোরে একজনকে থাপ্পড় মারলো,অন্য জন তখন দৌরেছে,থাপ্পড় খওয়া ছেলেটাকে অবিনাশ তুলে নিলো জামার কলার ধরে," কি বলছিলি , শুও***** বাচ্চা,আবার বল দেখি সাহস থাকলে।" ছেলেটা রীতিমত কাপচিলো,অবিনাশ ওকে মারার জন্য দ্বিতীয়বার ঘুষি তুলতে গেছিলো কিন্তু আটকে গেলো,কারণ ওর জামা টেনে ধরেছে মিতু।" দাদা ছেরে দে,প্লিজ দাদা,।"

মিতু কখনো ওর দাদাকে মারামারি করতে দেখেনি।অবিনাশ প্রচণ্ড রেগে গেছিলো।ওর শরীর কেঁপে যাচ্ছিল রাগে,কিন্তু মিতুর দিকে তাকিয়ে ও আসতে করে হাত নামিয়ে ছেলেটাকে প্রায় ছুরে ফেলেছিল।

মিতু তখন কেদে যাচ্ছে,আর ভীষণ ভয় পেয়ে অবিনাসকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।
ছেলেটা সামনের ছেলেটাকে তুলে নিয়ে হোচট খেতে খেতে খেতে যেতে গিয়ে " সেই লুকা বোনের বুকেই লুকিয়ে যা,মাদার***।" অবিনাশ কে বলতে বলতে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছিল।অবিনাশ ওদের দিকে যাওয়ার জন্য এগোতে গিয়েই বাধা পেল মিতু ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে,মিতুর চোখের জলে ওর জামা ভিজে যাচ্ছিল।

অবিনাশ অবাক হয়ে দেখলো মিতুর একটু স্পর্শে কিভাবে জেগে উঠছে ওর শরীর,কোনো মেয়ে পারেনি আজ অব্দি একমাত্র মিতু ছাড়া।অবিনাশ খুব ভালো করেই জানে বহু মেয়ে ইচ্ছে করে ছুঁতে গেছে তাকে,তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য নিজেদের শরীর অফার করতেও ভাবেনি।কিন্তু অবিনাশের শুধু ঘেন্না লাগতো,দম বন্ধ হয়ে যেত।শরীরের বাইরে তার পরিচয় কটা মেয়ে জানতে চাইছে সে জানে না।জানতে ইচ্ছেও করেনি ।অথচ মিতু অজান্তে একবার তাকে স্পর্শ করলেই তার শরীর নিজে থেকে জেগে ওঠে।

অবিনাশ মিতুর হাতটা ধরে,ওকে সামনে নিয়ে এলো।

" সোনা আমি আছি,আমি থাকতে তোমার দিকে কেউ আঙ্গুল তুলবে না বিশ্বাস কর।"

মিতু ফোপাচ্ছিল।
" আমি...আমার জন্য ভয় পাইনি,......যদি তোর কিছু হয়ে যেত দাদাভাই।" বাকি কথাটা শেষ করার আগেই অবিনাশ ওকে জড়িয়ে ধরলো।অবিনাশের ভীষণ ভালো লাগছিলো,মিতু তার কথা ভেবে কদছে।

" আমার কিচ্ছু হবে না,কিন্তু এবার গাড়িতে ওঠো,না হলে মুভিটা মিস হবে।"

মিতু হেসে গাড়ির দরজা খুলে উঠতেই অবিনাশ গাড়ির পিছনের দিকে এগিয়ে গেলো।ওর চোখে উজ্জল হয়ে গেছিলো জলের বিন্দু গুলো।

ও চোখ মুছে ড্রাইভিং সিটে বসলো।।

.....................

pts ক্রস করে মা ব্রিজের উপর উঠতেই মিতু চিৎকার করে উঠলো " দেখ দেখ দাদা,ভিক্টোরিয়ার আলোর রংটা কি সুন্দর লাগছে।মিতুর হাতটা অজান্তে চেপে ধরেছিল অবিনাশের গিয়ারের উপর রাখা হাতে।অবিনাশ নিজেকে কন্ট্রোল করতে অন্য হাত দিয়ে শক্ত করে ধরলো স্টিয়ারিং।
" একেবারে,মিতু।"

দুপাশে সার সার গাড়ি চলে যাচ্ছে,অবিনাশ একের পর এক রোমান্টিক গান দিচ্ছিল।মিতু চুপ করে বাইরে তাকিয়ে বসেছিল।
" দাদা ac বন্ধ করে জানলাটা খুলে দে না,কি সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে বাইরে।"

অবিনাশ সঙ্গে সঙ্গে ওর দিকের জানলা খুলে দিতেই ও মুখ বের করে দিল,
" ওই মিতু মুখ ঢোকা,অ্যাকসিডেন্ট করবি।"

" কি সুন্দর হাওয়া দাদা,কলকাতাকে কি সুন্দর লাগছে রে দাদা।মাঝে মাঝে মনেই হয় না আমরা কলকাতাতে আছি।'

অবিনাশ শুধু হাসলো।



মা ব্রিজ ক্রস করে ও ওর গাড়িটা যখন বাইপাস ধাবার সামনে দাড় করালো তখন অনেকগুলো গাড়ি পার্কিং করছিল।
ও সিট বেল্ট খুলে মিতুর দরজার সামনে গিয়ে বললো নেমে এসো মিতু।

মিতু কোনোদিন বাইপাস ধাবাতে আসেনি।ও দাদার হাত ধরে ঢুকেই শেষের দিকের টেবিল নিল দুজনে।
ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ৮

মিতু কি খাবি,চিকেন না মাটন,নাকি প্রন খাবি ?"

"তুই যা ভালো বুঝিস,আমার খিদে পাচ্ছে না।"

" একটা মকটেল খা অন্তত,নাকি ককটেল খাবি? অবিনাশ একটু দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে বললো।

মিতুর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো।ও উত্তেজনাতে অবিনাশের অনেক কাছে সরে এসে জামাটা ধরে ওর মাথাটা নিজের দিকে নিল ।অবিনাশ হাতের কাছের কাটা চামচ শক্ত করে ধরলো।
" সত্যিই খেতে দিবি দাদা,কিন্তু বাবা যদি জানতে পারে ?"

" তুই আঠেরো বছরে পরেছিস সোনা,যা ইচ্ছে করবি।আর..........( মুখটা মিতুর দিকে ঘুরিয়ে বললো )থাকবি তো আমার সাথে।আমি থাকতে কেউ তোকে কিছু বলবে না।"
মিতুর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেলো।
" থাক দাদা পরে খাবো।এখন মকটেল খাবো।"

*****

ওরা বাইপাস ধাবা থেকে বেরিয়ে যখন গাড়িতে উঠলো,তখন ৯ টা ৩০ বাজে,অবিনাশ একটু স্পীড বাড়িয়ে দিয়েছিল,মিতুর জন্য গাড়ির সব জানলা খুলে দিয়েছিল ও।প্রচণ্ড হাওয়া দিচ্ছিল।মিতু বাইরে তাকিয়ে বসেছিল আর অবিনাশ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল নিঃশব্ধে।

" মিতু,তুই neet ক্র্যাক করলে কি নিয়ে পড়তে চাস ?কিসের ডাক্তার হবি ভেবেছিস ?"

মিতু একটু চুপ করে রইলো,"সত্যি কথা বললো দাদা,আমি ডাক্তার হতে চাই না,পাইলট হতে চাই।কিন্তু আমি জানি তুই আর বাবা মানবী না,তুই সার্জেন হতে যাচ্ছিস,বাবা মেডিসিনের,মা bsc নার্স ,সেখানে আমি যদি পাইলট হতে চাই তোরা কেউ মানবী না।"

অবিনাশ দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।সত্য যে জানতো না মিতু কি চায়।।জিজ্ঞেস ও করেনি কারণ তার মনে হতো সে যেটা বোঝে সেটাই মিতুর জন্য বেস্ট।

" বলিস নী কেন সোনা আমাকে,আমি বাবার সাথে কথা বলতাম,।"

মিতু অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে " তুই রেগে যাসনি একটুও,দাদা?"

অবিনাশ গাড়িটা cc ২ পার্কিং এর নিচে নামাতে নামাতে হাসলো," আমার খুশি লাগছে তুই আমাকে বললি, আমাকেই বললি, রাগবো কেন,তোর ইচ্ছে স্বপ্ন শুধুই তোর,আমরা কে যে তোকে বলি কি করবি কি করবি না,তুই যথেষ্ট বড় হোয়েচিস,তোর সিদ্ধান্ত তুই নিবি,এটা তোর জীবন মনে রাখিস।"

গাড়িটা পার্ক করে ও নেমে মিতুর দিকে গিয়ে দরজা খুলে দিল।
" আসুন ম্যাডাম,আমরা আমাদের গন্তব্য এসে গেছি।"

অবিনাশ এগিয়ে ওকে অনেকটা জড়িয়ে ধরে হাঁটছিলো লিফটের দিকে।

মিতু হেসে ফেললো " দাদা তুই এভাবে ধরিস না, মেয়েরা ভুল ভেবে তোকে লাইন মারবে না আর।"

অবিনাশ লিফটের বোতাম টিপতে টিপতে বলল " তুই থাকতে আমার কোনো মেয়ের দরকার নেই।"

মিতু অবাক হলো না,ওর ভালো লাগলো।দাদার কথার ইঙ্গিতগুলো ও ধরতে পারছিলো,কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলো না দাদার হটাৎ পরিবর্তনের কারণ।
বুঝে উঠতে পারছিলো না এটা ঠিক কি ভুল,কিন্তু ওর ভালো লাগছিলো।

" জানিস দাদা, মিহিরা দি তোকে পছন্দ করে,আর তোদের দুজনকে কি সুন্দর লাগে।"

অবিনাশ এবার ঘুরল,লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।মিতু হটাৎ ভীষন অদ্ভুত লাগলো।অবিনাশ যত এগোচ্ছিল ও তত পিছিয়ে যাচ্ছিল,যতক্ষণ না ওর পিঠ লিফটের সাথে লেগে গেলো।অবিনাশ ওর মাথার দুপাশে দুদিকে হাত রেখে দাড়ালো।মিতু মাথাটা নিচু করে নিল।

" আর তুমি মিতু,তোমার পছন্দ হয় না আমাকে ?"

" তুই আমার দাদা হস,এভাবে বলিস না আমার বাজে লাগছে।" মিতু জড়িয়ে জড়িয়ে বললো।

অবিনাশ একহাত দিয়ে ওর ঝুঁকে পরা মুখটা তুললো।মিতু অবাক হয়ে গেলো দাদাকে দেখে,দাদার চোখে এক অজানা অনুভূতির অস্তিত্ব দেখে।
অবিনাশ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো "আমার প্রশ্নের উত্তর এটা না মিতু,আচ্ছা যদি আমি তোর দাদা না হতাম,তাহলে তোর পছন্দের তালিকাতে কি আমি থাকতাম।"

মিতু বারবার চোখ নামিয়ে নিতে যাচ্ছিল,কিন্তু অবিনাশ শক্ত করে ধরেছিল ওর মুখটা।মিতু অন্যদিকে তাকালো।

" তোকে না বলার ক্ষমতা কোনো মেয়ের আছে বলে আমি জানি না,.............তুই আমার দাদা না হলে হোয়েত আমি তোকে অন্য চোখে দেখতাম।" অবিনাশ অনেক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। মিতু তাকিয়ে ছিল সুইচ বোর্ডের দিকে। লিফটের দরজা খুলতে যেতেই ওরা সরে দাড়ালো।মিতু মুখটা নিচু করে বললো " আর কখনো এরকম করিস না দাদা,এটা ঠিক না,আমি জানি তুই মজা করার জন্যই করেছিস,কিন্তু মনে রাখিস আমিও মেয়ে,তোর মত কেউ বারবার মজা করলে আমার মধ্যে যে ফিলিং গুলো তৈরি হবে সেগুলো স্বাভাবিক না,অন্তত নিজের দাদার প্রতি বোনের ফিলিং না সেগুলো।"

অবিনাশ বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলো।।মিতুর মুখ থেকে কথাগুলো শোনার জন্য ও তৈরি ছিলো না।যেন মিতু হটাৎ করে পরিণত হয়েছে।ওরা চুপচাপ উঠছিল চলমান সিড়ি দিয়ে,বেশিরভাগ লোকজন নামছে, মল বন্ধ হবে শুধু যারা সিনেমা দেখবে তাদের জন্য inox খোলা।ওরা দুজন নিঃশব্ধে উঠছিল ওপরে।



অবিনাশ অনেক্ষন পর মুখ খুললো। "কিন্তু আমি যদি তোর দাদা না হতাম,?"

মিতু প্রথমবার অবিনাশের চোখের দিকে তাকাল পূর্ণ দৃষ্টিতে।
" তাহলে এতদিনে তোর প্রেমে পরে যেতাম....................কিন্তু সেটা সম্ভব না,কারণ তুই আমার দাদা হোস।"



...পপকন কিনে মিতু আর অবিনাশ যখন ঢুকলো inox এ,তখন বেশিক্ষণ বাকি নেই।
খুব বেশি লোক নেই,অথচ নাইট শো টে ভালো লোক থাকে।
অবিনাশ মিতু কেউই কথা বলেনি অনেক্ষন।

অন্ধকার হতেই অবিনাশ মিতুকে নিজের অনেকটা কাছে টেনে আনলো।মিতু বাধা দিল না,
" কেন করছিস দাদা এরকম,এই মজাগুলো না করলেই না ?"

অবিনাশ সামনের স্কিনের দিকে তাকিয়েই বললো " আমি তোকে সব বলতে পারবো না শুধু দুটো কথা বলি আমি মজা করিনি একটাও,আর দ্বিতীয় আমরা কোনো ভুল করছি না,এটা বিশ্বাস রাখিস আমি তোর কোনোদিন খারাপ চাইবো না।"

" কিন্তু....."

" কোনো কিন্তু না,যখন সময় আসবে আমি তোকে সব বলবো, তোর উপর নির্ভর করছে সবকিছু,কিন্তু সেটা এখন না,এখনও তুই অনেক বাচ্চা।"

................
গাড়িটা নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই মিতু অবিনাশ দুজনেই অবাক হয়ে গেলো।ঘরের আলো জ্বলছে।অবিনাশ গাড়ি পার্ক করতেই গাড়ির শব্দ শুনে মিসেস বিশ্বাস দরজা খুললেন।মিতু মাকে জড়িয়ে ধরতেই উনি অবিনাশ কে বললেন " তুই একবার স্টাডি রুমে যা,তোর বাবা তোর সাথে কথা বলবে।আমি মিতুকে ওপরে নিয়ে যাচ্ছি।"

অবিনাশ উত্তর দিল না।মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ও বুঝেছিল মা সবই বলে দিয়েছে বাবাকে।বাবাকে একদিন না একদিন ফেস করতেই হোত ভালই হলো সেটা আগেই হয়ে গেলো।
মিতু কিছু প্রশ্ন করার আগেই মিসেস বিশ্বাস ওকে ওপরে নিয়ে গেলেন।অবিনাশ একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বাবার স্টাডিতে নক্ করলো।

ক্রমশঃ
 
শুধুই আমার ৯

" মিতু,দরজা খোল,একটু ,তোর সাথে কথা আছে !" অবিনাশ দরজা ধাক্কাচ্ছে।

মিতু বেশ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ,তারপর বললো " দাদা খুব ক্লান্ত আর অনেক রাতও হলো,কাল কথা বলি?"

অবিনাশ স্পষ্ট বুঝতে পারলো মিতু ওকে অভয়েড করছে,ওর মধ্যে আবার রাগটা জেগে উঠছিলো।ইচ্ছে করছিল,দরজা ভেঙে ফেলে।কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিল ও।এত চেষ্টা করে মিতুর ভয় ভাঙলো আজ।অবিনাশ চায় না আবার মিতু ওকে ভয় পায়।
..................
ও নিজের ঘরে ঢুকেই জামা কাপড় গোচাচ্ছিল।মিসেস বিশ্বাস ঘরে ঢুকলেন।বেশ কিছুক্ষন ওর কাজ দেখার পর জিজ্ঞেস করলেন " কথা হলো বাবার সাথে ?"

অবিনাশ মাথা না তুলে কাজ করতে করতেই বললো " হম।"

আবার নিস্তব্ধতা।" এত রাত্রে জামা কাপড় গোচাচ্ছিস কেন ? তুই কি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি নাকি ?"

" না,কি যে বলো মা।" বলেই ও হাসলো।

" কি বললো বাবা ?" মিসেস বিশ্বাস উৎকন্ঠিত হয়ে বললেন।তখনই অবিনাশের ঘরের ঘড়িতে রাত ৩ টে বাজলো।অবিনাশ একবার ওনার দিকে তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো।

" কাল কথা বলি মা? অনেক রাত হলো,তুমি শুয়ে পর,আমিও শুয়ে পড়ি।"

............
মিসেস বিশ্বাস ( রমা বিশ্বাস) ছেলের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে অবিনাশ উঠে দরজা বন্ধ করে দিল।
রমা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে একবার মেয়ের ঘরের সামনে দাঁড়ালেন,তারপর এগিয়ে গেলেন দোতালা বারান্দার দিকে।
কিছুদিন ধরে তার সাজানো সংসারটা ভেঙে পরছে যেন,আর এর জন্য তিনি নিজেকে দোষারোপ করা আটকাতে পারেননা।তিনি বহুদিন আগেই বুঝেছিলেন অবিনাশের অনুভূতিগুলো।কিন্তু সেগুলোকে বাড়তে দিয়েছিলেন,ভেবেছিলেন বড় হলে শুধরে যাবে,ভুলভাল চিন্তাটা সরিয়ে রাখবে।কিন্তু অবিনাশ এক্ষণ আরো বেশিরকম ভাবে ভাবছে এটা নিয়ে।মিতুকে বোনের মত ভালোবাসার বদলে আরো বেশি উৎসুক হচ্ছে নিজেকে প্রকাশ করতে মিতুর সামনে।
তার ছেলে সর্বগুন সম্পন্ন তিনি জানেন,আর এটাও জানেন মেয়েরা কিভাবে ওকে পেতে চায়। সেখানেই ওনার ভয় লাগছে মিতু যদি আকৃষ্ট হয় অবিনাশের দেহজ সৌন্দর্যে,তারপর ব্যাপারটা কি হবে?! মিতু যদি জানতে পারে নিজের পরিচয় ওকি স্বাভাবিক থাকতে পারবে,যখন জানবে এতদিন যাদের ও পরিবার মেনেছে তারা ওর কেউ না।

রমা নিজের ছেলেকে খুব ভালো করে চেনেন।ও যখন কোনো কিছু চায় সেটা অর্জন করেই ছারে।এবার md পাওয়ার আগে শুধু ডিউটির ৪৮ ঘণ্টা ছাড়া বই ছেরে উঠতই না,সারাদিন পড়া ,md লাগিয়েই ছাড়বে।

সেই জন্যই রমার ভয় লাগছিল।অবিনাশের চিন্তা এত সহজে বদল হবার না।, না,ও মিতুকে যখন এতটা ভেবে নিয়েছে ও শেষ না দেখে ছাড়বে না।অবিনাশ মিতু ছাড়া কোনো মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় না রমা জানে। তাই অবিনাশ আজ যখন তাকে ফোন করে বলেছিল মিতুকে নিয়ে ও ঘুরতে যাবে,এবং সেটা দাদা হিসেবে না অবিনাশ হিসেবে,তখন রমা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল।অবিনাশ যদি নিজেকে কোনো মেয়ের কাছে দেখাবে ভাবে ,তাহলে খুব কম মেয়েই আছে যে ওকে "না" বলার ক্ষমতা রাখে।

যদিও নিজের ছেলেকে ও ভাল করে চেনে,কোনোদিন কোনো মেয়েকে অবিনাশ স্পর্শও করবে না তার অনুমতি ছাড়া।কিন্তু প্রশ্নটা ছিলো সেই মেয়েটা যে সে কেউ না ,সেই মেয়েটি "মিতু".,অবিনাশের একমাত্র চাহিদা।

তাই আজ যদি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারে অবিনাশ,যদি মিতুকে কিছু করে দেয়,যদি মিতুকে বলে দেয় তার আসল পরিচয়,তবে সব শেষ হয়ে যাবে।এতদিন এত কষ্ট করে বানানো ছবির মত সংসারটা শেষ হয়ে যাবে।
তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি,তাই বাধ্য হয়ে অবিনাশের বাবাকে সব বলেছিলেন।তিনি কোনো উত্তর দেননি ।সবকিছু চুপ করে শোনার পর বলেছিলেন "ওরা ফিরলে বাবুকে আমার সাথে দেখা করতে বলো।"

রমা কোনোদিন নিজের স্বামীকে এত শান্ত দেখেননি।তার হাসিখুশি বদমেজাজি স্বামী কোনোদিন এত চুপ করে থাকেন না।তাই তারপর থেকেই তার চিন্তা হচ্ছিল 'বলে" ঠিক করলেন কিনা।

পিয়া হটাৎ করেই ঘুমের মধ্যে কেদে উঠলো। উনি বাধ্য হয়ে উঠে গেলেন নিজের ঘরে।
...............
অবিনাশ ঘুম থেকে উঠেই নীলেশকে ফোন করলো।
" ঘুরতে যাবি বলছিলি না,কাল বেরোবি কি,আজ নাইট করে বেরিয়ে যেতাম তবে।"
নীলেশ ঘুম ঘুম চোখে ওর গলা শুনেই খুশি হলো " সত্যি বলছিস ভাই,না ঘুমের ঘোরে বকছিস? তুই যাবি ঘুরতে?"

অবিনাশ হাসলো " কেন বে আমি যাইনা নাকি ? বিকাসদের ফোন কর,দেখ যদি ওরা রাজি হয় suv টা নেব,না হলে তোর i ২০ টা নিস বা আমার সিটিটা নিয়ে নেব।"

অবিনাশ ফোনটা রেখেই বিছানার উপর ছুড়ে ফেললো ফোনটা ।ও কাল সারারাত ঘুমাইনি।

ঘরের বাথরুমে ঢুকলো ও,তখনই বেসিনের আয়েনাতে দেখলো গালের উপর লালচে কাল হওয়া পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ,ছোট থেকে এই প্রথমবার ওর বাবা ওর গায়ে হাত তুলেছে।

অবিনাশ ভালো করে মুখ হাত ধুয়ে সেভ করলো,মুখে ক্রিম মাখলো ভালো করে,।ভালো করে দেখলো ,না এক্ষণ খুব একটা বোঝা যাচ্ছেনা আঙ্গুলের দাগ গুলো।রাত্রে অন্ধকারে কেউই সেরকম নজর করবে না।
অবিনাশ সারাদিন ঘর থেকে বেরোলো না,এমনকি যখন মিতু স্কুলে যাওয়ার সময়ে দরজাটা লক করে " দাদা আসছি " বললো তখনও "হম" এর বাইরে কোনো উত্তর ও দিল না।ওর ইচ্ছে করছিল একবার দরজা খুলে দেখে মিতুকে ,কিন্তু.............

রমা দুপুরে খেতে ডাকলে ও নামেনি " খিদে নেই" বলে।রমা জোর করেনি ছেলেকে।
দুপুরে অনেক আগে ও বেরোলো। ডিউটি শুরুর অনেকটা আগে।ওর হাতে বেশ বড় একটা ব্যাগ ছিলো।
রমা বেরিয়ে এলেন " ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস।"

"বাবাকে বলে দিও কালকে ডিউটি করে আমি নীলেসের বাড়ি থেকেই ওদের সাথে বক খালি যাবো।"
অবিনাশ উবেরে উঠতে উঠতে বললো।

" নিলেসের বাড়ি কেন যাবি আবার,বাড়িতে এসে দুটি ভাত খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বেরোস,আজ সারারাত জাগবি ,নাইট করতে,বিশ্রাম না নিলে এতটা ড্রাইভ করবি কি করে ?"

" বাবা পছন্দ করেনা আমি থাকি , যাই হোক বাবাকে বলে দিও আমি ফিরব না,দেখ খুশি হবে।" অবিনাশ একটু জড়িয়ে জড়িয়ে বলেই ইসারা করলো গাড়ি চালাতে।

রমা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল।ছেলেটা খুব কম বন্ধুদের সাথে বেরোই,তার উপর দুতিন দিনের জন্য বাড়ির বাইরে ও কখনোই থাকেনি।কি হচ্ছে তার এত সুন্দর সংসারে।রমা বিরক্ত মুখে রেডী হতে গেলো , তারও নাইট ডিউটি আছে আজকে।
......................
নিলেশের বাড়ি থেকে রেডী হয়ে ওর xuv টা নিয়ে বিকাশের বাড়ি গেলো ওরা।কিন্তু অবিনাশ অবাক হয়ে দেখলো, মিহিরা,বিকাশ আর ওর gf মাধুরীর সাথে ওর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গল্পঃ করতে করতে আসছে।
মিহিরা ওদের সাথে যাবে অবিনাশ সেটা জানতো না।

মিহিরা একটা পিঙ্ক পালাজো পড়েছিল আর ওপরে সাদা রঙের টপ,মুখে মেকাপ ছিলো না,কিন্তু ভীষণ সুন্দর লাগছিল।অবিনাশ ড্রাইভিং সিটে বসে নিজের মনেই হেসে উঠলো।আর মনে মনে বললো " তোমার কথাই পালন করবো বাবা,তুমি যা যা বলেছ।"
অন্ধকারে কেউ দেখলো না,কিন্তু ওর মুখটা হেসে উঠলো এক অদ্ভুত হাসিতে।

ক্রমশঃ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top