শুধুই আমার ৭
ঠিক করছিস কি অবিনাশ?"
ফোনের মধ্যে থেকে মিসেস বিশ্বাসের কথা শুনে অবিনাশ ঘুরে দেখল মিতুর দিকে।মিতু অনেক মনোযোগ দিয়ে কুলফি খাচ্ছে,।অবিনাশ বাইরের উল্টো পাল্টা খাবার খাওয়া একেবারে পছন্দ করেনা,কিন্তু ওর খুব ভালো লাগছিল মিতুকে দেখে।ও অনেকদিন পর যেন নিজের ভয়ের খোলোস থেকে বেরিয়ে প্রজাপতির মত উড়ছিলো।
" ও তোকে দাদা মানে,সুন্দর,শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত দাদা, তুই ওর চোখে আদর্শ একটা ছেলে,ও সব ছেলের মধ্যে তোকে খোজে,তোর মত কেউ,যে ওকে প্রোটেক্ট করবে ,কিন্তু তুই কি ভেবেছিস তুই যখন ওর সামনে নিজের দাদা সত্তা সরিয়ে শুধু অবিনাশ হয়ে দারাবি কি হবে বুঝছিস ?"
" আমি কি এতটা খারাপ মা,কেন এরকম আমার সাথেই হলো,যে মেয়েটিকে সবথেকে ভালোবাসি তাকে পাওয়ার পথ যেন ভগবান নিজের হাতে বন্ধ করে দিয়েছে,আমি ওর দাদা নই মা,কখনোই ছিলাম না সুতরাং আমাকে নিজেকে বের করে আনতে হবে ওই দাদা সত্তা থেকে,ও শুধু আমাকে চিনবে,অবিনাশ বলে একটা ছেলে যে ওর জন্য সবকিছু করতে পারে।"
"কিন্তু যদি ও দোটানার মধ্যে পরে,যদি বুঝে উঠতে না পারে কি করবে,যদি ওর দাদাকে বেশি ভালো লাগে তাহলে কি করবি ?!"
" ওকে যেতে দেব ,ও যেটাতে খুশি থাকে করতে দেব।কিন্তু সেটা এখন না,এখন আমি নিজের সব চেষ্টা করবো ও যাতে অবিনাশকে অ্যাকসেপ্ট করতে শেখে নিজের দাদাকে না।"
মিসেস বিশ্বাস দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন শুধু।
অবিনাশ ফোনটা রেখে ফুচকার প্লেটটা নিয়ে গেলো মিতুর দিকে।মিতু তখন নদীর দিকের একটা বেঞ্চে বসে কুলফি খাচ্ছিল,দাদাকে দেখে ওর চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে গেলো।
অবিনাশ হাতের জামাটা গুটিয়ে নিয়েছিল কনুই অব্দি,ঘামে ভিজে জামাটার বুকের দুটো বোতাম খোলা ছিল।মিতু ঢোক গিলল।অবিনাশ কখনো এভাবে নিজেকে নিয়ে যাইনি মিতুর সামনে।মিতু অবাক হয়ে দেখছিল তার অতীব সুন্দর দাদাকে।
অবিনাশ অনুভব করছিল মিতুর দৃষ্টি।ও সোজা হয়ে বসলো আর সঙ্গে সঙ্গে একইসাথে সংকুচিত হলো ওর সমস্ত পেশি।মিতুর চোখ ওর উপর খেলে গেলো।
ও মৃদু হেসে একটা ফুচকা প্লেট থেকে তুলে মিতুর মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো।
" এবার কি করবি বল মিতু ?মোটে আটটা বাজে।"
মিতু দাদার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ভাবছিল।
" মুভি দেখবি দাদা,অনেকদিন দেখিনি,কোনো ভূতের মুভি,নাইট শো তে।" মিতুর মুখটা উত্তেজনাতে উজ্জ্বল হলো।
অবিনাশ হাসতে গিয়েও থেমে গেলো।নদীর ধারের আলো অন্ধকার ভরা পরিবেশ ,চারপাশের লোকজনের চিৎকার,হকারদের শব্দ যেন দূরে সরে যাচ্ছিল।মিতু ফুচকা তুলে মুখে পুড়ছিল আর অবিনাশ এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে,অনেক রকম অনুভুতি ওর মধ্যে কাজ করছিল।দুদিন আগেও ও মিতুর দিকে এভাবে তাকাতো না,মিতু ওর কাছে ছোট বাচ্চা ছিলো,কিন্তু সেদিন মিতু ওকে জড়িয়ে ধরার পর থেকেই ও বুঝতে পারছিল ওর মিতু আর বাচ্চা নেই,মিতুর শারীরিক গঠনের পরিবর্তন ঘটেছে অনেক,সেটা এতটাই যে অবিনাশের পুরো শরীর জেগে উঠেছিল মিতুকে পাওয়ার জন্য।
" দাদা,annabelle comes home চলছে CC 2, টে দেখবি,11.30 এর শো।"
" যা বলবে মিতু সোনা,আজ তোমার দিন,তুমি শুধু আজ্ঞা করো।"
" হে হে দাদা তোকে যে পাবে সে না খুব লাকি,আমার বৌদি কবে আনবি ?"
"তুমি যেদিন বিয়ে করতে রাজি হবে মিতু।"
"আমার বিয়ের সাথে তোর কি সম্পর্ক বিয়ের ?"
" সবটাই।" অবিনাশ বিরবির করে বলেই উঠে দাড়ালো "চলো মিতু,এবার উঠি,এখানে ভালো লাগছে না।"
ওরা উঠে পৌভাজির দোকানগুলো পেরিয়ে রেল লাইন পেরিয়ে বাবুঘাটের মুখের কাছে আসতেই,অবিনাশ বললো তুই উল্টো দিকে দাড়া,আমি গাড়িটা নিয়ে ঘুরিয়ে তুলে নিচ্ছি তোকে।"
মিতু দুদিন তাকিয়ে রাস্তা পেরিয়ে উল্টোদিকে দাড়ালো।এদিকে বড় বড় গাছের জন্য একটু অন্ধকার হয়ে আছে,পার্কিং এর জন্য যাইগা না পেয়ে গেট থেকে একটু দূরে পার্ক করতে হয়েচিল গাড়িটা।মিতু দাড়িয়ে দেখছিল দাদা গাড়ি স্টার্ট করেছে।গাড়িটা উ টার্ন নিয়ে এদিকেই আসছিল।
" মালটা খাসা,পুরো রসালো।" মন্তব্য কানে যেতেও মিতু মাথা নিচু করে নিজেকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।পাশে দাড়িয়ে কিছু ছেলে মিতুকে নিয়ে মন্তব্য করেই যাচ্ছিল।
" রেট কত রে, কততে উঠবি?"
মিতু আরো জড়িয়ে ধরলো নিজেকে।
অবিনাশ এতক্ষণ অন্ধকারের জন্য পরিস্থিতি বুঝতে পারেনি,একটু সামনে গাড়িটা এগোতেই দেখলো,মিতু পুরো মুখ নিচু করে দাড়িয়ে আছে,আর ওর পাশে দু তিনটে ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে বলতে হাসছে।অবিনাশের মাথা গরম হযে গেলো।গাড়িটার স্পিড বাড়িয়ে ও ঠিক ছেলে তিনটের সামনে গিয়ে ব্রেক কষল।
" শালা বোকা****, গাড়ি চালাচ্ছিস না গা**"" ঢোকাচ্ছিস ,নাম বা** গাড়ি থেকে,তারপর দেখছি।" ছেলে তিনটে ওর গাড়ির দরজা অব্দি উঠে চলে এসেছে,।অবিনাশ প্রচণ্ড রেগে দরজা খুলেই সামনের ছেলেটাকে একটা ঘুসি মারলো,ছিটকে পড়ল ছেলেটা,বাকি দুজন ওর দিকে এগিয়ে আসতেই ও প্রচণ্ড জোরে একজনকে থাপ্পড় মারলো,অন্য জন তখন দৌরেছে,থাপ্পড় খওয়া ছেলেটাকে অবিনাশ তুলে নিলো জামার কলার ধরে," কি বলছিলি , শুও***** বাচ্চা,আবার বল দেখি সাহস থাকলে।" ছেলেটা রীতিমত কাপচিলো,অবিনাশ ওকে মারার জন্য দ্বিতীয়বার ঘুষি তুলতে গেছিলো কিন্তু আটকে গেলো,কারণ ওর জামা টেনে ধরেছে মিতু।" দাদা ছেরে দে,প্লিজ দাদা,।"
মিতু কখনো ওর দাদাকে মারামারি করতে দেখেনি।অবিনাশ প্রচণ্ড রেগে গেছিলো।ওর শরীর কেঁপে যাচ্ছিল রাগে,কিন্তু মিতুর দিকে তাকিয়ে ও আসতে করে হাত নামিয়ে ছেলেটাকে প্রায় ছুরে ফেলেছিল।
মিতু তখন কেদে যাচ্ছে,আর ভীষণ ভয় পেয়ে অবিনাসকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।
ছেলেটা সামনের ছেলেটাকে তুলে নিয়ে হোচট খেতে খেতে খেতে যেতে গিয়ে " সেই লুকা বোনের বুকেই লুকিয়ে যা,মাদার***।" অবিনাশ কে বলতে বলতে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছিল।অবিনাশ ওদের দিকে যাওয়ার জন্য এগোতে গিয়েই বাধা পেল মিতু ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে,মিতুর চোখের জলে ওর জামা ভিজে যাচ্ছিল।
অবিনাশ অবাক হয়ে দেখলো মিতুর একটু স্পর্শে কিভাবে জেগে উঠছে ওর শরীর,কোনো মেয়ে পারেনি আজ অব্দি একমাত্র মিতু ছাড়া।অবিনাশ খুব ভালো করেই জানে বহু মেয়ে ইচ্ছে করে ছুঁতে গেছে তাকে,তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য নিজেদের শরীর অফার করতেও ভাবেনি।কিন্তু অবিনাশের শুধু ঘেন্না লাগতো,দম বন্ধ হয়ে যেত।শরীরের বাইরে তার পরিচয় কটা মেয়ে জানতে চাইছে সে জানে না।জানতে ইচ্ছেও করেনি ।অথচ মিতু অজান্তে একবার তাকে স্পর্শ করলেই তার শরীর নিজে থেকে জেগে ওঠে।
অবিনাশ মিতুর হাতটা ধরে,ওকে সামনে নিয়ে এলো।
" সোনা আমি আছি,আমি থাকতে তোমার দিকে কেউ আঙ্গুল তুলবে না বিশ্বাস কর।"
মিতু ফোপাচ্ছিল।
" আমি...আমার জন্য ভয় পাইনি,......যদি তোর কিছু হয়ে যেত দাদাভাই।" বাকি কথাটা শেষ করার আগেই অবিনাশ ওকে জড়িয়ে ধরলো।অবিনাশের ভীষণ ভালো লাগছিলো,মিতু তার কথা ভেবে কদছে।
" আমার কিচ্ছু হবে না,কিন্তু এবার গাড়িতে ওঠো,না হলে মুভিটা মিস হবে।"
মিতু হেসে গাড়ির দরজা খুলে উঠতেই অবিনাশ গাড়ির পিছনের দিকে এগিয়ে গেলো।ওর চোখে উজ্জল হয়ে গেছিলো জলের বিন্দু গুলো।
ও চোখ মুছে ড্রাইভিং সিটে বসলো।।
.....................
pts ক্রস করে মা ব্রিজের উপর উঠতেই মিতু চিৎকার করে উঠলো " দেখ দেখ দাদা,ভিক্টোরিয়ার আলোর রংটা কি সুন্দর লাগছে।মিতুর হাতটা অজান্তে চেপে ধরেছিল অবিনাশের গিয়ারের উপর রাখা হাতে।অবিনাশ নিজেকে কন্ট্রোল করতে অন্য হাত দিয়ে শক্ত করে ধরলো স্টিয়ারিং।
" একেবারে,মিতু।"
দুপাশে সার সার গাড়ি চলে যাচ্ছে,অবিনাশ একের পর এক রোমান্টিক গান দিচ্ছিল।মিতু চুপ করে বাইরে তাকিয়ে বসেছিল।
" দাদা ac বন্ধ করে জানলাটা খুলে দে না,কি সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে বাইরে।"
অবিনাশ সঙ্গে সঙ্গে ওর দিকের জানলা খুলে দিতেই ও মুখ বের করে দিল,
" ওই মিতু মুখ ঢোকা,অ্যাকসিডেন্ট করবি।"
" কি সুন্দর হাওয়া দাদা,কলকাতাকে কি সুন্দর লাগছে রে দাদা।মাঝে মাঝে মনেই হয় না আমরা কলকাতাতে আছি।'
অবিনাশ শুধু হাসলো।
মা ব্রিজ ক্রস করে ও ওর গাড়িটা যখন বাইপাস ধাবার সামনে দাড় করালো তখন অনেকগুলো গাড়ি পার্কিং করছিল।
ও সিট বেল্ট খুলে মিতুর দরজার সামনে গিয়ে বললো নেমে এসো মিতু।
মিতু কোনোদিন বাইপাস ধাবাতে আসেনি।ও দাদার হাত ধরে ঢুকেই শেষের দিকের টেবিল নিল দুজনে।
ক্রমশঃ