চত্বারিংশ পর্ব
(১)
সুচরিতা একজন নারী এবং কে না জানে নারীরা খুবই প্র্যাকটিকাল হয়। সুচরিতাও তার নারীসুলভ স্বাভাবিক প্র্যাকটিকাল জ্ঞানে দুটো জিনিষ বুঝতে পেরেছিলো। প্রথমতঃ তার স্বামী শান্তনু আ্যকাডেমিক্যালি যতই ভালো হোক, হি ইজ এ বর্ন ফেলিওর। আর তার এই ব্যর্থতার পিছনে তারও একটু দায় আছে। যদি শরীরের টানে উন্মত্ত হয়ে সে শানুকে প্রলুব্ধ না করতো, যদি আনপ্রটেক্টেড সেক্সের ফলে সে গর্ভবতী না হয়ে পড়তো, তাহলে শানু নিশ্চই পড়াশুনাটা শেষ করতে পারতো। তার যে রকম অধ্যাবসায় ছিলো, একটা সরকারী চাকরি নিশ্চই পেতেই পারতো। তখন তার জীবনটাই অন্য ছন্দে চলতো। সুতরাং শানুর জীবনের এই দুর্দশার জন্য সুচরিতাই দায়ী। তাছাড়া শানু তো কখনো তার হাত ছাড়ে নি। কতো ছেলেই তো মেয়েদের সঙ্গে লটঘট করে, পেট বাঁধিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। শানু কিন্তু কখনো দায়িত্ব এড়ায় নি। তাই শানুর উপর দোষারোপ করে তার সন্তানসহ সংসারটাকে সে ভেসে যেতে দেবে না। সুতরাং তাকেই দায়িত্ব নিতে হবে শানুকে সবরকমভাবে সাপোর্ট দিয়ে, সংসারটাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
আর তাই সে লাল্টুকে একটু আধটু প্রশ্রয় দিয়েছিলো। লাল্টু তার স্বামীকে মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে, রোজগারের সংস্থান করে দিয়েছে, মাথার উপর ছাদ দিয়েছে, তার বদলে সে দাম চাইবে না? এই সংসারে কোনো কিছুই মাগনায় পাওয়া যায় না। সাবানগুড়োর সঙ্গে যে চামচ ফ্রি দেয়, তারও দাম ধরা থাকে ওর মধ্যে। সুচির কাছে লাল্টুর উপকারের দাম দেওয়ার জন্য আছে শুধু তার শরীর। হ্যাঁ, এখনো তার শরীর অটুট আছে, এক বাচ্চার মা হওয়ার পরেও। বরং লাল্টুদা তো বলে, আরো খোলতাই হয়েছে। বাইরে বেরোলেই সে বোঝে, তার শরীরের বিভিন্ন বাঁকে অজস্র চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটুকুই তার সম্পদ, আর তাই দিয়েই সে অল্প অল্প করে মেটাবে লাল্টুর প্রতি কৃতজ্ঞতার দাম। আস্তে আস্তে, খেলিয়ে খেলিয়ে, একেবারে ধরা দেবে না। তাহলে খেলো হয়ে যাবে। লাল্টুকে হাতে রাখতেই হবে। এই এলাকায় অসীম ক্ষমতা লোকটার। পার্টিরও উপরমহলে জানাশোনা আছে। এই লোকটাকে, একটু একটু করে তার যৌবনের মধু পান করিয়ে নিজের কব্জায় রাখতে হবে। লাল্টুরও বোধহয় ওইটুকুই চাহিদা তার কাছে। সুচি ভালো করেই জানে, সে ছাড়াও আরো অনেক মহিলার সঙ্গেই তার সম্পর্ক আছে। সুতরাং তার সাথে, “ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না, ছিঃ” টাইপের সম্পর্ক রাখতেই তার বেশী পছন্দ। দোর্দন্ডপ্রতাপ লাল্টুর সঙ্গে শোওয়ার জন্য রোজ আধডজন মেয়েছেলে ঠ্যাং ফাঁক করে শুয়ে থাকে। তার সাথে শুধুই একটু খুনসুটি করেই আনন্দ পায় লাল্টু।
তবে আজ একটু বেশী হয়ে গিয়েছিলো। পাছার খাঁজে, শাড়ীর উপর দিয়ে, লাল্টুর উথ্থিত পুংদন্ডটার স্পর্শ পেয়েছিলো; আর তাতেই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলো সে। কোমরে খেলা করে বেড়াচ্ছিলো বলিষ্ঠ পুরুষের হাত, ঘাড়ে মোটা গোঁফের বুরুশের ঘষা, মূহূর্তের জন্য কি বিচলিত হয়ে পড়েছিলো সুচি! আজকাল অনেকদিন ধরে শানুর সঙ্গে ঠিকঠাক শারিরীক সম্পর্ক হয় না। রাতে মেয়েটা বড্ড জ্বালায়। চার-পাঁচবার কাথা পাল্টাতে হয়, দু-তিনবার দুধ খাওয়াতে হয়, শরীর আর দেয় না। তাছাড়া শানুরও সারাদিন খাটাখাটনির পর, বিছানায় পড়লেই নাক ডাকতে আরম্ভ করে। তাকে প্রায়দিন ভোরে উঠে যেতে হয়. বালি- স্টোনচিপের গাড়ী মাপার জন্য। রবিবারদিন কখনো সখনো দুপুরের দিকে বা প্রথম রাতে মাঝেমধ্যে হয়। কিন্তু সেটা কেমন যেনো একঘেঁয়ে রুটিনমাফিক কাজের মতো – যেমন দাঁত ব্রাশ করা, টয়লেট যাওয়া, স্নান করা ইত্যাদির মতো। কিন্তু সেই উদ্দাম প্রেম আর নেই।
অথচ কতোই বা বয়স তার। এখনও কুড়ি ছোঁয় নি সে আর শানু মেরে কেটে তেইশ কি চব্বিশ। তাই তো যখন মাছওয়ালা মানকে ফাউ মাছের তেল দেওয়ার অছিলায় তার ভারী বুকটাকে ছুঁয়ে দেয়, যখন ঝুমকে তার কোল থেকে নিয়ে আদর করার বাহানায় বিভিন্ন বয়সের পুরুষ তার স্তন স্পর্শ করে, যখন দুধওয়ালা রাধেশ্যাম তার পাতলা কোমরের দিকে আড়চোখে তাকাতে গিয়ে দুধ উপচে ফেলে, বাসে-ট্রামে তার চওড়া পাছার খাঁজে লিঙ্গ গুঁজে দিয়ে পুরুষরা অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন তলপেটে মোচড় অনুভব করে সুচরিতা। নারীসুলভ লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিয়ে, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে। কিন্তু একটা উদ্ভিন্নযৌবনা নারীর শরীরের তো চাহিদা আছে। তাই হয়তো আজ মূহূর্তের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো। ভাগ্যিস পরক্ষণেই নিজেকে সংযত করতে পেরেছিলো, না হলে কি কেলেংকারিটাই না ঘটে যেতো। খুবই অভিমানী শানু। যদি সাংঘাতিক কিছু দেখতো, না জানি কি করে ফেলতো! যে টুকু দেখেছে, শুনেছে, তাতেই কি ভেবেছে কে জানে! মাথা নীচু করে চলে গেলো কেমন কান্নাচাপা মুখ করে। দেখেই কষ্ট লাগছিলো তার। আজ বাড়ি ফিরলে, খুব সোহাগ করে অভিমান কাটিয়ে দিতে হবে। লাল্টুদাও কেমন ধরা পড়ে যাওয়া মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে চলে গেলো। কাল দুপুরে ওকেও সন্তুষ্ট করে দিতে হবে। নারী – সে গৃহবধুই হোক আর বারবধু, যুগ যুগ ধরে, তার কাজই হলো, পুরুষের মন যুগিয়ে চলা। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে, চানঘরে ঢুকলো সুচি।