শিশু–কিশোরদের মধ্যেও মেরুদণ্ডের ব্যথা দেখা যায়। বিশেষত ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সীরা মেরুদণ্ডের ব্যথায় বেশি ভোগে। শীত মৌসুমে এ ব্যথা আরও বাড়ে। ছোটদের এ ব্যথার কারণ খুঁজতে রোগীর সার্বিক ইতিহাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা দরকার। সে অনুযায়ী প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মেরুদণ্ডের ব্যথার কারণ
- শিশু–কিশোরদের প্রতিদিন ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, বইসহ ব্যাগের ওজন শিশু–কিশোরের শরীরের ওজনের চেয়েও বেশি। অধিক ওজনের ব্যাগ বহন করায় শিশু–কিশোরের পিঠের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এতে মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়।
- শিশু–কিশোরদের অনেকেরই প্রাত্যহিক জীবনে শারীরিক সক্রিয়তা নেই। ব্যস্ত রুটিনের আবর্তে তাদের সময় কাটে। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়া, স্কুলে বসে ক্লাস করা, তারপর বাসায় ফিরে কম্পিউটার বা মুঠোফোনে গেম খেলা, টিউটরের কাছে পড়া, এসব করতে গিয়ে শিশু–কিশোরেরা খেলাধুলা কিংবা শারীরিক ব্যায়ামের সুযোগ পায় না। এটা শিশু–কিশোরদের মেরুদণ্ডের ব্যথার অন্যতম কারণ।
- আরামের কথা চিন্তা করে অনেকেই ঘুমানোর সময় ফোম কিংবা নরম তোশক ব্যবহার করেন। এটা মেরুদণ্ডের জন্য ক্ষতিকর। নরম বিছানায় শোয়া শিশু–কিশোরের মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকৃতি পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। এতে দেখা দিতে পারে ব্যথা।
- অনেক সময় শিশু–কিশোরেরা বাঁকা হয়ে, আধশোয়া হয়ে, ঝুঁকে টিভি দেখে, পড়াশোনা করে কিংবা মুঠোফোন ও কম্পিউটারে গেম খেলে। এটা মেরুদণ্ডের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে মেরুদণ্ডের পেশি দুর্বল হয়ে ব্যথা হতে পারে।
মুক্তির উপায়
- স্কুলের ব্যাগের ওজন এমন হতে হবে, যাতে শিশু–কিশোর সহজেই তা বহন করতে পারে। কোনোভাবেই ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের চেয়ে বেশি হওয়া যাবে না।
- শিশু–কিশোরেরা যাতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- শিশু–কিশোরকে খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
- তুলনামূলক শক্ত বিছানায় শিশু–কিশোরকে শুতে দিতে হবে। নরম বিছানা ব্যবহার বাদ দিতে হবে।
- ভুল দেহভঙ্গিতে বা বাঁকা হয়ে, আধশোয়া হয়ে কাজ কিংবা পড়াশোনা করা যাবে না। টিভি দেখার সময় কিংবা পড়তে বসলে চেয়ারে পিঠ টানটান করে বসতে হবে।
- এসব নিয়ম অনুসরণ করার পরও কোনো শিশু–কিশোর দীর্ঘদিন মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা অনেক সময় বাতরোগের কারণে শিশু–কিশোরদের মেরুদণ্ডে ব্যথা হতে পারে।
[FA]pen[/FA] লেখক: এম. ইয়াছিন আলী, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ