শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ও বৃদ্ধি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তার দাঁতের স্বাভাবিক গঠন ও বিকাশও গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর তিন বছর বয়সের মধ্যে ২০টি প্রাথমিক দাঁত গজায়। আর স্থায়ী দাঁত ওঠা শুরু হয় ছয় বছর বয়স থেকে। ১৩ বছর বয়সের মধ্যে সব স্থায়ী দাঁত গজানো শেষ হয়।
শিশুর দাঁতের সুষ্ঠু গঠনের ক্ষেত্রে ক্ষয়রোগ খুব ক্ষতিকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ২ থেকে ৮ বছর বয়সের প্রায় ১৫ শতাংশ শিশুর এক বা একাধিক প্রাথমিক দাঁতে ক্ষয় ধরে। ১২ থেকে ১৫ বছরের প্রায় ১০ শতাংশ শিশুর স্থায়ী দাঁতেও ক্ষয়রোগ হয়। দাঁতের সঠিক যত্ন না নিলে খাদ্যকণা জমে, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই ক্ষয়রোগ হয়।
শিশুবয়সে দেখা দেওয়া দাঁতের ক্ষয়রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করালে তা দাঁত বিনষ্ট করে দেয়, দাঁতের মজ্জা পর্যন্ত প্রদাহ ছড়িয়ে পড়ে। এতে তীব্র ব্যথা হয়। সংক্রমণের কারণে চোয়ালের অস্থিতে পুঁজ সৃষ্টি হয়। দাঁতের ক্ষয় হওয়া জায়গা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে কি না, তা বুঝতে কিছু বিপৎসংকেত রয়েছে। যেমন—
● জ্বর
● দ্রুত হৃৎস্পন্দন বা দ্রুত শ্বাস
● মুখের চোয়ালের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরা
● জিহ্বা ও মুখগহ্বর থেকে লালা ঝরা
● কথা বলা, ঢোক গেলা ও শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা
● পানিস্বল্পতা ও রক্তচাপ কমে যাওয়া
● চোখের চারপাশ ফোলা, গ্রন্থি ফোলা ও রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যাবৃদ্ধি প্রভৃতি
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
● শিশুর দাঁতের ক্ষয়রোগ দেখা দিলে দেরি না করে দাঁতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
● শিশুর দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
● শিশুকে মিষ্টি পানীয় পান করতে দেবেন না। ছোট শিশুদের ফিডারে বা বোতলে করে দুধ বা পানি দেবেন না। শিশুকে মিষ্টি পানীয় যদি পান করাতেই হয়, তবে তা কেবল দিনের প্রধান খাবারের সময় দেওয়া উচিত। তবে কিছুতেই দিনে ছয় আউন্সের বেশি মিষ্টি পানীয় পান করা উচিত নয়। এ ধরনের পানীয় পানের পর ব্রাশ করা ভালো।
● ৮ বছরের কম বয়সী বেশির ভাগ শিশু নিজে নিজে সুষ্ঠুভাবে দাঁত ব্রাশ করতে পারে না। তাই তাদের মুখগহ্বরের যত্ন ও দাঁত ব্রাশে সহযোগিতা করুন।
* অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী | সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল