What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শেষের পাতায় শুরু (6 Viewers)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,441
Pen edit
Sailboat
Profile Music
"শেষের পাতায় শুরু" - by pinuram

TGQ8JOq.jpg


গল্পটা সম্পূর্ণ রূপে কাল্পনিক এবং সম্পূর্ণ লেখকের চিন্তন প্রভুত, এই গল্পের সব চরিত্র আর ঘটনা সম্পূর্ণ রূপে লেখকের মস্তিস্ক প্রভুত, কোন জীবিত অথাব মৃত ব্যাক্তির সাথে কোন মিল নেই, যদি কেউ কোন মিল খুঁজে পান তাহলে সেটা নিতান্তই কাকতালীয়।

পর্ব এক (#1-1)

সামনের বাড়ির কার্নিশে কাকটা অনেকক্ষণ ধরে একটানে ক্যা ক্যা করে যাচ্ছিল। আকাশে মেঘের ঘটা দেখে কারুর বলার জো নেই যে শরত কাল এসে গেছে। সেই সাদা পোজা তুলোর মেঘের জায়গায় কালো মেঘ ছেয়ে ছিল আকাশে। হয়ত কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি নামবে। তেইশটা বসন্ত পেরিয়ে আসা সুন্দরী আম্বালিকার মন হারিয়ে যায় আকাশের কালো মেঘের আনাগোনা দেখে। গত রাতে ঝম ঝম করে বৃষ্টি হয়েছিল, মেঘের গর্জনে অনেকক্ষণ ঘুম আসেনি ওর। মা থাকলে, মায়ের পাশে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে নিশিন্ত মনে ঘুমাতে পারত, কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসেনি ওর চোখে। কয়েক মাস পরেই ওর মাস্টার্সের পরীক্ষা তারপর চাকরি করবে ইচ্ছে আছে। প্রোফেসর কি যে ছাতার মাথা পড়িয়ে চলেছে সেইদিকে বিশেষ মন ছিল না ওর। এক মনে কাক টাকে দেখতে দেখতে পাতলা গোলাপি ঠোঁটের মাঝে পেন চিবোতে চিবোতে কোথায় যেন হারিয়ে গেছিল। মনের আঙ্গিনায় গুন গুনিয়ে ওঠে একটা গানের কলি, ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস আজকে হল সাথী, সাত মহলার স্বপ্নপুরী, নিভল হাজার বাতি... ও যে বড় একা, নীলাদ্রি না থাকলে হয়ত হারিয়ে যেত কোথাও। আরো একজন আছে ওর জীবনে যার মিষ্টি হাসি মনে পরলে সব কিছু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত।

ওর প্রিয় আর একমাত্র বান্ধবী পিয়ালীর আলতো ধাক্কায় সম্বিত ফিরে পেল আম্বালিকা, “কি রে আজকে তোর মন কোথায়?”

মিষ্টি হেসে উত্তর দেয় আম্বালিকা, “এই ত আছি।”

পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, “আজকে তোর ভাইয়ের জন্মদিন না?”

মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।” মুচকি হেসে বলে, “পরের বছর নার্সারিতে ভর্তি হবে সেটা ভেবেই কেমন যেন হাসি পাচ্ছে। দিনে দিনে যা বাঁদর হচ্ছে না, কি বলব।”

বলেই দুই বান্ধবী হেসে ফেলে।

আম্বালিকার মা মারা যায়, তখন আম্বালিকা অনেক ছোট। বাবা, দক্ষিণ কোলকাতার নামজাদা ডাক্তার, ঢাকুরিয়ায় ওদের বিশাল দোতলা বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় খুব ভালো তাই বাবার ইচ্ছে ছিল মেয়েও ডাক্তারি নিয়ে পড়বে। কিন্তু ডাক্তারি পড়া আর হয়নি ওর। ওর মা মারা যাওয়ার পর থেকে ওর বাবা বেশির ভাগ সময় হস্পিটাল আর পেসেন্ট নিয়েই পড়ে থাকতেন। ধিরে ধিরে বাবার আর মেয়ের মাঝের ব্যাবধান অনেক বেড়ে যায়। বেশ কয়েক বছর পরে ওর বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন তার হস্পিটালের একজন নার্সকে, সুমিতা। তারপর থেকেই বাবা আর মেয়ের সম্পর্কে চিড় ধরে যায়। বিশাল দুতলা বাড়িতে বড্ড একা আম্বালিকা, মন মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠত, মাঝে মাঝে মনে হত সব কিছু ছেড়ে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবে। বাবার ইচ্ছে অমান্য করেই ডাক্তারি পরীক্ষা ঠিক ভাবে দেয়নি, কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়ে কলেজে। সেই নিয়ে বহুবার আম্বালিকাকে বাবার কাছে কথা শুনতে হয়েছে। ওর সৎমায়ের সাথে ইচ্ছে করেই ভালো সম্পর্ক রাখেনি কোন দিন আম্বালিকা, কিন্তু সুমিতা সবসময়ে চেষ্টা করতেন বাবা মেয়ের মাঝে যেন একটা সুহৃদ সম্পর্ক বজায় থাকে। কলেজে পড়ার সময়ে নীলাদ্রির সাথে দেখা। নীলাদ্রি যদিও ওর কলেজের ছাত্র ছিল না, দু’বছর আগেই যাদবপুর থেকে আরকিটেকচার নিয়ে পাশ করেছে। একটা কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে চাকরি করে। নীলাদ্রি আর ওর সম্পর্ক নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল বাবার সাথে তবে মেয়ের জেদের সামনে ঝুঁকে যেতে হয়। মেনে নেন আম্বালিকা আর নীলাদ্রির সম্পর্ক।

গত বছরের ঠিক এই রকম এক দিনের কথা মনে পড়ে যায়। বাবার সাথে নীলাদ্রিকে নিয়ে তুমুল ঝগড়া, রাগে দুঃখে আম্বালিকা নিজের ঘরে ঢুকে আত্মহত্যা করতে যায়। কিন্তু নিজের ঘরে ঢুকে বিছানার দিকে তাকিয়ে ওর আর আত্মহত্যা করা হল না। কচি এক শিশু ওর বিছানায় বসে ওর পেন খাতা বই সব কিছু মেলে ধরে খেলায় মত্ত। আম্বালিকাকে উন্মাদ অবস্থায় ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেখে সেই শিশুটা কিছু না বুঝেই ওর দিকে কচি হেসে দুই হাত মেলে ধরে। ওর সৎমা, ওর নামের সাথে মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছিল অম্বরীশ। আম্বা আদর করে ওকে রিশু ডাকত। রিশুর নরম টোপা গালের হাসি দেখে আম্বা আর সেই যাত্রায় আত্মহত্যা করতে পারল না। জড়িয়ে ধরেছিল দুই হাতে সেই কচি শিশুকে। নাকের ওপর নাক ঠেকিয়ে হেসে বলেছিল, বড্ড দুষ্টু তুই, আমার সব খাতা বই নষ্ট করে দিলি। বাঁচতে হলে শুধু তোর জন্যেই বাঁচব। সেই কচি অম্বরীশের সেদিন ছিল জন্মদিন। নীলাদ্রিও আসবে পীয়ালি ও নিমন্ত্রিত।

পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, “নীলাদ্রি কলেজে আসবে কি?”

মাথা দোলায় আম্বালিকা, “হ্যাঁ আসবে, হয়ত বাইরে দাঁড়িয়ে। তারপর একটু বাজারে যাবো একটু কেনাকাটা আছে, রিশুর কেকের অর্ডার দিয়েছি সেটা নিয়ে বাড়ি ফিরব। তুই ওই সাতটার মধ্যে চলে আসিস, আমরা ততক্ষনে বাড়ি পৌঁছে যাবো।”

পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, “এই পুজোতে কোথাও যাচ্ছিস নাকি তোরা?”

মাথা দোলায় আম্বালিকা, “না রে, বাবা মনে হয় পুজোতে বাড়িতে থাকবে না। এক কনফারেন্সে নিউইয়র্ক যাওয়ার কথা আছে। বাড়িতে শুধু আমি আর সুমিতা থাকব।”

পিয়ালী কপট হেসে জিজ্ঞেস করে, “এখন সব ঠিক আছে তোদের মধ্যে?”

আম্বালিকা মাথা দোলায়, “ওই আছে এক রকম, যেমন থাকতে হয়।”

ঘড়ি দেখে আম্বালিকা, সাড়ে তিনটে বাজে, এই ক্লাসের পরে আর কোন পিরিওড নেই, নীলাদ্রির সাথে বেড়িয়ে যাবে।

ঠিক সেই সময়ে লেকচার থেমে যেতেই সবাই উন্মুখ হয়ে পরে। পিওন এসে সরকার স্যারের কানে কানে কিছু একটা বলতেই, সরকার স্যার আম্বালিকা কে ডাক দেন, বলেন যে প্রিন্সিপাল ওকে নিজের কেবিনে ডেকেছেন। আম্বালিকা বরাবর ভালো ছাত্রী, লেকচার থামিয়ে এইভাবে প্রিন্সিপালের ডাক পড়বে সেটা নিতান্ত আশাতীত। পিয়ালী ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, কি ব্যাপার, হটাত এইভাবে কেন ডেকেছেন। এর উত্তর আম্বালিকার নিজের জানা নেই, তাই বই গুছিয়ে চুপচাপ পিওনের পেছন পেছন ক্লাস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। প্রিন্সিপালের কেবিনের দিকে যেতে যেতে পিওনকে প্রশ্ন করলে তার কোন সদুত্তর পায়না। বুকের হাতুরি বেজে চলেছে এক নাগাড়ে, হটাত করে এইভাবে সমনের কারণ কিছুতেই খুঁজে পায়না। প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকেই ওর চোখ পরে চেয়ারে বসে থাকা এক পুলিস ইন্সপেক্টরের ওপর। হাজার প্রশ্ন নিয়ে পুলিসের দিকে তাকিয়ে থাকে আম্বালিকা। তারপর যে ঘটনা শুনল তাতে ওর পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। রিশুকে নিয়ে ওর বাবা আর সুমিতা, দুপুরের দিকে বেড়িয়েছিল একটু। বাড়ি ফেরার পথে বাসের সাথে ওদের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়। ওর বাবা আর সুনিতা, তৎক্ষণাৎ মারা যান, ভাগ্যক্রমে রিশুর বেশি আঘাত লাগেনি। সব শুনে কিংকর্তব্য বিমুড়ের মতন হা করে চেয়ে থাকে সবার দিকে। বাবার প্রতি তেমন টান কোনদিন ছিল না তবে এইভাবে হটাত করে ওকে ছেড়ে চলে যাবে সেটাও ভাবেনি আম্বালিকা। মাথা ঘুড়ে পরে যাওয়ার মুহূর্তেই, পিয়ালী ওকে ধরে ফেলে। প্রিন্সিপালের রুমের বাইরে তখন অনেক ভিড়।

পিয়ালী আম্বালিকাকে নিয়ে কলেজ ছেড়ে বেড়িয়ে আসে, সাথে আরো কয়েকজন। কলেজের বাইরে নীলাদ্রিকে দেখে ভেঙ্গে পরে আম্বালিকা, ভাষা হারিয়ে যায়, কি বলবে কি করবে ভেবে পায় না। ট্যাক্সি করে পুলিশের গাড়ির পেছন পেছন হসপিটাল পৌঁছায়। বাবা নাম করা ডাক্তার ছিলেন, তাই সেই হস্পিটালের অনেকের চেনা। মর্গে বাবা আর সুমিতার দেহ সাদা কাপড়ে ঢাকা দেখে, অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। একবারের জন্য মনে হয় যেন সব শেষ হয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করে অম্বরীশের কথা। ডাক্তার জানায়, ভাগ্যক্রমে ছোট্ট রিশুর বিশেষ আঘাত লাগেনি, কাকতালীয় ভাবে পেছনের সিটের মাঝে আটকে ছিল। আম্বালিকা চোখ মুছে পেডিয়াট্রিক বিভাগে প্রবেশ করে। নার্সেরা ছোট্ট রিশুকে নিয়ে হিমসিম, এক নাগারে কেঁদে চলেছে, ওর চারপাশে সবাই অচেনা। দিদিকে দেখতে পেয়েই লাফ দিয়ে দিদির কোলে উঠে প্রানপন শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আম্বালিকা চোখ বন্ধ করে শেষ শক্তিটুকু নিঃশেষ করে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে রিশুকে। এর সামনে কাঁদলে চলবে না, ভেঙ্গে পরলে চলবে না ওর। এক বছর আগের সেই কথা মনে পরে যায়, এরপর বাঁচতে হবে শুধু এই শিশুটার জন্য।

আম্বালিকা রিশুর গালে চুমু খেয়ে বলে, “আমার সোনা বাবার কি হয়েছে?”

আদো আদো কন্ঠে উত্তর দেয় রিশু, “মা তই? আমি বালি দাবো...”

ম্লান হাসে আম্বালিকা, “হ্যাঁ সোনা এই যাবো।” রিশুর চোখের জল মুছিয়ে টোপা নরম গালে বার কয়েক চুমু খেয়ে আদর করে বলে, “আজ আমার সোনার জন্মদিন, আমার সোনা কেক খাবে, কত লাল রঙের গাড়ি আসবে, কত খেলনা আসবে।”

দিদির প্রবোধ বাক্যে ছোট্ট রিশু সব ভুলে হেসে ওঠে, “রেড কার?”

বুকের পাঁজর এক এক করে ভাঙতে শুরু করে আম্বালিকার, তাও চোখের জল আটকে রেখে রিশুকে বলে, “হ্যাঁ সোনা, রেড কার। বাবা আর মা তোমার জন্য কেক আনতে গেছে, রেড কার আনতে গেছে।”

ওদের দেখে পিয়ালী চোখের জল আটকাতে পারে না। আম্বালিকা ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় কান্না বন্ধ করতে অনুরোধ করে। রিশুকে কোলে নিয়ে আম্বালিকা আর পিয়ালী একটা ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরে আসে, পেছনে নীলাদ্রি এ্যাম্বুলেন্সে আম্বালিকার বাবা মায়ের মৃত দেহ নিয়ে আসে। ঘর ভর্তি লোকজন, কারুর মুখে কোন কথা নেই সবাই চুপ করে শুধু আম্বালিকাকে দেখে চলেছে। আত্মীয় সজ্জনের মধ্যে অনেকেই ভেঙ্গে পড়েছে, বিশেষ করে সুমিতার বাড়ির লোকেরা। আম্বালিকার অনুরোধে বাবা মায়ের মৃতদেহ নিচের তলার হল ঘরে রাখা হয়। রিশুকে কোলে নিয়ে ওপরের তলায় চলে যায়। অনেকক্ষণ চুপ করে রিশুকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে বসে থাকে, কথা বলার ভাষা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই, তাও হাসি মুখে রিশুকে না না আছিলায় ভুলিয়ে রাখে। ওর এই রূপ দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। রিশু কিছুতেই ছাড়তে চায় না ওকে, কোনমতে চোখের জল আটকে অনেক কষ্টে অনেক ভুলিয়ে ভালিয়ে রিশুকে কিছু খাইয়ে দিয়ে কাজের মেয়ের কাছে রেখে নিচে নেমে আসে।

নিচের তলায় লোকজন আত্মীয় সজ্জনে ভর্তি, লোকে লোকারণ্য। হলের মাঝে, বাবার আর সৎ মায়ের মৃত দেহ শায়িত, সেদিকে দেখে চুপ করে একটা চেয়ারে বসে পরে আম্বালিকা। ওর কঠিন চোয়াল আর কাজল কালো চোখের ভাবলেশহীন চাহনি দেখে কারুর সাহস হয় না ওর সাথে কোন কথা বলার। কথা বলার ভাষা হারিয়ে, চুপ করে মেঝের দিকে এক ভাবে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে।
 
পর্ব এক (#2-2)

কিছু পরে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নীলাদ্রিকে ডেকে আম্বালিকা বলে, “আজকে রিশুর জন্মদিন। আমি ওর জন্মদিন আগে পালন করব তারপরে বাকি কাজ।”

ওর কথা শুনে সবাই অবাক, মেয়ে বলে কি? নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি পাগল হয়ে গেছ নাকি?”

মাথা নাড়ায় আম্বালিকা, কন্ঠের স্বর দৃঢ়, “বাবা আর সুমিতা মারা গেছেন সেটা আমার অদৃষ্ট। সেটাকে আমি বদলাতে পারব না, যারা চলে গেছেন তাদের আমি ফিরিয়ে আনতে পারবো না। কিন্তু আজকে রিশুর জন্মদিন, আমার কাছে রিশুর মুখের হাসির দাম অনেক বেশি, আমি সেটা হারাতে চাই না।”

আম্বালিকার এই কঠিন সংকল্পের অনেকেই বিরোধিতা করে, কিন্তু সেদিন ও নিজের কথায় অনড় ছিল। ওর কথা শুনে অনেকেই আম্বালিকাকে পাগল বলে বিশেষ করে সুমিতার বাড়ির লোকজন, কিন্তু কারুর কথায় কান দেয় না। বেশির ভাগ লোকজন ওর পাশ ছেড়ে চলে যায়, তবে সেদিন নীলাদ্রি আর পিয়ালী ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল। যে কেকের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল সেটা আনা হয়। চোখের জল আটকে, মুখে হাসি মেখে ওপরের তলায় সেদিন ছোট করে রিশুর জন্মদিন পালন করা হয়। রিশুকে ক্ষনিকের জন্যেও কারোর কাছে ছাড়ে না আম্বা। প্রান ঢেলে দিয়েছিল সেদিন সেই কচি শিশুটার মুখে হাসি দেখার জন্য। রিশু যতবার ওর মাকে খোঁজে ততবার নানা কথায় ভুলিয়ে, নানা ভাবে ভুলিয়ে রাখে আম্বা। বরাবর রিশুকে ওর মা খাইয়ে দিত, সেদিন বহু কষ্টে রিশুকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়েছিল আম্বালিকার। ওর ওড়না ছোট মুঠোর মধ্যে আঁকড়ে ধরে কোলের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।

রিশু ঘুমানোর পর বহু কষ্টে সেই ছোট মুঠো ছাড়িয়ে নিচে নেমে আসে। রাত অনেক, তাই আম্বালিকা পিয়ালীকে অনুরোধ করে বাড়ি ফিরে যেতে, তবে নীলাদ্রি ওর পাশ ছাড়েনা শেষ পর্যন্ত। কাজের মেয়েকে বলে যায় যেন এক মুহূর্তের জন্য রিশুর পাশ থেকে না নড়ে। গভির রাতের অন্ধকারে বাবা আর সুমিতার মৃতদেহ দাহ সংস্কার করা হয়। নিজের অদৃষ্টের জন্য সেদিন আর ওর চোখে জল ছিল না। মা অনেকদিন আগেই গত হয়েছেন, এবারে বাবাকেও শ্মশানে পুড়িয়ে দিয়ে এই পৃথিবীতে একা হয়ে গেল। বাবার সাথে যত ঝগড়া বা কথাকাটি হোক না কেন, মনের গভিরে আম্বালিকা এটা জানত যে ওর বাবা ওকে কোনদিন জলে ফেলে দিত না। সুমিতা সৎমা হলেও এক বান্ধবীর মতন ব্যাবহার করত সব সময়ে।

নীলাদ্রি ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছ এবার?”

শুন্য চোখে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় আম্বালিকা, “রিশুকে নিয়েই ভাবছি, কি করে ওকে বড় করব।”

ওর হাতের ওপর হাত রেখে উত্তর দেয় নীলাদ্রি, “আমি সাথে আছি’ত, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

শুষ্ক হাসি টেনে উত্তর দেয় আম্বালিকা, “তোমার অনেক ধকল গেছে, তোমার জন্য বাড়িতে হয়ত চিন্তা করবে। তুমি এইবার বাড়ি যাও।”

নীলাদ্রি উত্তর দেয়, “আমাকে সরিয়ে দিচ্ছ নাকি?”

হাতের ওপর হাত রেখে উত্তর দেয়, “না না, তেমন কিছু নয়। এরপর জীবনের অঙ্ক আবার নতুন করে কষতে হবে তাই বাড়ি গিয়ে একটা নতুন খাতা কিনব।”

নীলাদ্রি ভেবে পায় না এর উত্তর কি দেবে, তবে যে আম্বালিকাকে সেদিন চোখের সামনে দেখছে, যে ভাবে রিশুকে আগলে রেখেছিল নিজের আঁচলের তলায়, যেভাবে দৃঢ় কন্ঠে নিজের মতামত জানিয়েছিল সেদিন, তাতেই নীলাদ্রি বুঝে গিয়েছিল যে এই আম্বালিকা আর সেই আগের আম্বালিকা নেই, ওর প্রেমিকা আম্বালিকা কোথাও লুকিয়ে গেছে এক মাতৃময়ী মূর্তির আড়ালে।

দাহ কর্ম শেষ করতে করতে ভোর হয়ে যায়। আগের দিন থেকেই আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা চলছিল, ভোরের দিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। নীলাদ্রি চলে যাওয়ার পরে একা একাই গাড়িতে চেপে বাড়ি ফিরে আসে আম্বালিকা। বাকি আত্মীয় সজ্জনেরা ওর হাবভাব আচরনের কোন অর্থ খুঁজে পায় না। ঘরে ঢুকেই আগে নিজের ঘরে উঁকি মারে, ওর বিছানায় দলা পাকিয়ে ঘুমিয়ে কচি রিশু, কাজের মেয়েটা পাশের একটা চেয়ারে বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে, শাওয়ার চালিয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আগামী দিনের কথা চিন্তা করে। এক ধাক্কায় অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছে, এক ধাক্কায় অনেক বড় হয়ে গেছে, ওর কাঁধে অনেক দ্বায়িত্ব এসে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পরে আম্বালিকা, হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে বাথরুমের মধ্যে।

সম্বিত ফেরে বাথরুমের দরজায় কাজের মেয়েটার ধাক্কাতে। কাজের মেয়েটা জানায়, যে রিশু ঘুম থেকে উঠে পড়েছে আর কাঁদছে। রিশু কাঁদছে শুনেই সব কিছু ভুলে যায় আম্বালিকা, কোন মতে স্নান সেরে বেড়িয়ে আসে বাথরুম থেকে। ঘুম থেকে উঠে মাকে না পেয়ে রিশুর কান্না, মা চাই। সদ্য মা হারা কচি শিশুটাকে সান্ত্বনা দিতে ততপর হয়ে ওঠে। বৃষ্টি বাইরে, সেই সাথে বুকের মধ্যে অপার শূন্যতা, কিন্তু চোখে বিন্দু মাত্র জল আনা বারণ। রিশুকে কোলে নিয়ে কাজের মেয়েটাকে ওর জন্য দুধ বানাতে বলে।

রিশুকে কোলে নিয়ে আদর করে বলে, “আমরা দুদু খেয়ে রেড কার নিয়ে খেলবো।”

সদ্য মাতৃহারা রিশু মাকে খোঁজে, “মাম্মা কই?”

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে উত্তর দেয়, “এখুনি চলে আসবে, আমার সোনার জন্য রেড কার আনতে গেছে। সেই গাড়িতে করে আমরা বেড়াতে যাবো।”

রিশু মাথা দোলায়, “বেলাতে দাবো? কোথায় দাবো?”

উত্তর দেয় আম্বালিকা, “কোথায় যেতে চায় আমার সোনা?”

রিশু খিলখিল করে হেসে উত্তর দেয়, “রেড কার কিনতে দাবো...”

কথা শুনে হেসে ফেলে আম্বালিকা, “রেড কারে চেপে আরো একটা রেড কার কিনতে যাবো।”

অনেক ভুলিয়ে ভালিয়ে দুধ আর সেরেল্যাক খাইয়ে শান্ত করে রিশুকে। নিচের তলায় তখন বেশ কিছু আত্মীয় সজ্জন বর্তমান, বিশেষ করে সুমিতার বাড়ির লোকজন। আম্বালিকার বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে, তার এডভোকেট বন্ধু, মিস্টার প্রমথেশ বড়াল ও বাড়িতে পৌঁছে যান। রিশুকে কোলে নিয়েই নিচে নেমে আসে আম্বালিকা। মিহি গুঞ্জনে ভরে ওঠে হল ঘর। এরপর কি করবে আম্বালিকা, এই বাড়ি, কলেজ পড়াশুনা, ছোট রিশু, এই সবের আবছা প্রশ্ন ওর কানে ভেসে আসে বটে তবে ওর শক্ত চোয়াল আর কোলের মধ্যে জেঁকে বসা রিশুকে দেখে কারুর সাহস হয় না কিছু প্রশ্ন করার। প্রমথেশ বাবু জানান যে ওর বাবা কোন উইল করে যায়নি। অকস্মাত এইরকম কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে সেটা কারুর জানা ছিল না, তবে ওর বাবার ইচ্ছে ছিল এই সম্পত্তির অর্ধেক ভাগ আম্বালিকাকে দেওয়া হবে আর বাকি অর্ধেক সুমিতার নামে হবে। প্রমথেশ বাবু ওকে জিজ্ঞেস করেন যে ও কি করতে চায়। আম্বালিকা জিজ্ঞেস করে যে আইনত কি রিশুর মামা বাড়ির লোকেরা রিশুকে নিয়ে যেতে পারে? তার উত্তরে প্রমথেশ বাবু জানিয়ে দেন যে, যেহেতু আম্বালিকা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা এবং রিশুর সাথে ওর রক্তের সম্পর্ক সেই কারনে আম্বালিকা না চাইলে রিশুকে কেউ ওর কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারবে না। সেটা শুনে আম্বালিকা আস্বস্থ হয়ে রিশুর গালে চুমু খায়।

সেদিন থেকে শুরু হয় আম্বালিকার এক নতুন জীবন। আর্থিক দিক থেকে ওর বাবা কম টাকা রেখে যান নি, সেই নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না। ওর নিজের ব্যাঙ্ক একাউন্টে কয়েক লাখা টাকা পড়ে আছে। কয়েক মাস পরেই ওর মাস্টার্সের পরীক্ষা, কলেজ ওকে শেষ করতেই হবে। বাড়িতে সব কাজের জন্য আলাদা লোক নিযুক্ত, রান্নার লোক আলাদা, এমনি কাজের লোক আলাদা, তাও আম্বালিকা রিশুকে দেখা শোনা করার জন্য এক জন গভর্নেস নিযুক্ত করে। তবে যতটা সময় বাড়িতে থাকত ক্ষণিকের জন্যেও রিশুকে চোখের আড়াল হতে দিত না। ছোট্ট রিশু কয়েকদিনের মধ্যেই মায়ের অভাব অনুভব করতে পারে না, আম্বালিকার অগাধ স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে ওকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। সকালে কলেজে বের হওয়ার আগে গভর্নেসকে সবকিছু বুঝিয়ে সুঝিয়ে দিয়ে যায়। কলেজে গেলেও ওর মন পড়ে থাকে বাড়িতে রিশুর কাছে, একা বাচ্চাটা কি করছে, গভর্নেস ঠিক সময় মতন খাইয়েছে কি না, ঠিক সময়ে স্নান করিয়েছে কি না ইত্যাদি। আগের সেই আম্বালিকা আর নেই সেটা পীয়ালিও বুঝতে পারে, কলেজের পরে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে আড্ডা আর মারে না। শুরুর দিকে পীয়ালির সাথে বেড়াতে না বের হলেও ফোনে কথা হত, ধিরে ধিরে সেই ফোনের যোগাযোগ অনেক কমে যায়। নীলাদ্রির সাথে ঘুরতে না বের হলেও ওর সাথে রোজদিন ফোনে যোগাযোগ হত। আম্বালিকার কথাবার্তা আর সেই আগের মতন নয়, মার্জিত এক মহিলার মতন কথাবার্তা হত দুইজনের।

ঠান্ডার আমেজ কেটে গেছে, কোলকাতায় তেমন ঠান্ডা পরে না। রবিরারের দিন, সারাদিন অনেক ব্যাস্ত ছিল আম্বালিকা। রিশুর ঠান্ডা লেগেছে, নাক থেকে জল পরছে। ছেলেটা কিছুতেই সোয়েটার জ্যাকেট গায়ে রাখবে না, পায়ের মোজা এই পরালেই সেই খুলে দেয়, তাতে ওর দেখাশোনা করার গভর্নেস বেশি বকা খায়, দেখতে পারো না ছেলেটা খালি পায়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে? যদিও বুঝতে পারে যে আসল দোষী এই কচি শিশুটা কিন্তু ওকে বকাঝকা করতে বড্ড মায়া লাগে আম্বালিকার। রিশুকে নিয়ে বিকেলের দিকে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল, সারাটা রাস্তা গাড়িতে আম্বালিকার কোলে বসে চুপ করে জুলুজুলু চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে আর হাসে। ওর খুব চিন্তা, ছেলে খুব কম কথা বলে। বাড়িতে কাজের লোক আর ড্রাইভার ছাড়া আর কোন মানুষ নেই যে রিশু কথা শিখবে। ডাক্তার হেসে ওকে জানিয়ে দেয় যে সব বাচ্চারা এক ধরনের হয় না আর বিশেষ করে ছেলেরা একটু দেরিতেই কথা শেখে, কিন্তু ওর মন কিছুতেই মানতে চায় না।

সন্ধ্যের পরে নিজের ঘরের চেয়ারে বসে পড়াশুনা নিয়েই ব্যাস্ত ছিল আম্বালিকা। পড়ার ফাঁকে মাঝে মাঝেই কানে রিশুর আওয়াজ আসে, গভর্নেস ওকে খাওয়াতে ব্যাস্ত কিন্তু সেই ছেলে কিছুতেই খাবে না। কখন বারান্দায় দৌড়ে পালায় কখন বসার ঘর তোলপাড় করে ফেলে। শেষ পর্যন্ত আম্বালিকা থাকতে না পেরে নিজের ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসে।

চোখ পাকিয়ে রিশুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি কঠোর কন্ঠে বলে, “চুপচাপ খেয়ে নাও না হলে জুজু বুড়ো এসে যাবে কিন্তু।”

গুটিগুটি পায়ে অপরাধীর মতন আম্বালিকার কাছে এসে কচি কন্ঠে বলে, “জুজু বুলো...”

আদর করে কোলে তুলে নেয় রিশুকে, “হ্যাঁ, না খেলে এইবারে জুজু বুড়োর কাছে দিয়ে আসব।” বলে গভর্নেসের হাত থেকে খাওয়ারের বাটি নিয়ে নিজেই খাওয়াতে বসে।

টিভিতে কোন এক কারটুন চলছিল, দু চামচ খেয়ে রিশু টিভির দিকে দেখে দিদির গলা জড়িয়ে আদো আদো কন্ঠে বলে ওঠে, “মাম্মা ব্লাক ভৌ ভৌ...” প্রথমে আম্বালিকা ঠিক ভাবে বুঝতে পারেনি রিশু কি বলছে। রিশু টিভির দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, “মাম্মা ব্লাক ভৌ ভৌ...”

মাতৃ হারা ছেলের মুখ “মা” ডাক শুনে চোখে জল চলে আসে আম্বালিকার, হাতের চামচ হাতেই থমকে যায়। জল ভরা চোখে রিশুর দিকে তাকিয়ে বলে, “বল দিদি, আমি তোর দিদি”

রিশু বুঝতেই পারে না ওর দিদির চোখে কেন জল, আদো আদো কন্ঠে আবার ডাকে, “মাম্মা”

কেঁদে ফেলে আম্বালিকা, খাওয়ার বাটি রেখে দিয়ে আঁকড়ে ধরে বুকের মাঝে, হয়ত বা নিজের গর্ভে ধারন করেনি রিশুকে কিন্তু বুকের প্রতিটি পাঁজর দিয়ে আগলে রাখা এই সবে ধন নীলমণি। রিশুর মন থেকে ওর মায়ের অভাব কখন মুছে গেছে সেটা আর টের পায়নি, আম্বালিকাকেই কচি রিশু নিজের মা নিজের বাবা নিজের পৃথিবী বলেই ভেবে নেয়।

আশ্রুভরা নয়নে, রিশুর গালে বার কয়েক চুমু খেয়ে বলে, “হ্যাঁ রে বাবা, তুই আমার সব, আমি তোর মা।”
 
পর্ব এক (#3-3)

কলেজ ফেরত রোজদিন রিশুর জন্য হাতে করে কিছু নিয়ে আসতে হয়, সারাদিন বাচ্চাটা একা একা থাকে তাই বাড়ি পৌঁছেই সব থেকে আগে রিশুকে আদর করে। ও ফিরলেই, রিশু “মাম্মা” বলে ঝাঁপিয়ে পরে ওর কোলে। রাতের বেলা ঘুমানোর সময়ে বুড়ো আঙ্গুল চুষতে চুষতে বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়, বাম হাতের মুঠোতে ওর মাক্সির কোনা ধরে ওকে ঘুমাতে হয়। দুপুরে যখন আম্বালিকা বাড়ি থাকে না তখন রিশুর ঘুম আম্বালিকার মাক্সি নিয়েই হয়, “মাম্মা”র গন্ধ না পেলে সেই ছেলে কিছুতেই ঘুমাবে না।

কয়েক সপ্তাহ পরেই মাস্টার্সের পরীক্ষা, কলেজের ক্লাস অনেকদিন থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে। আজকাল বাড়িতেই থাকে বলে রবিবার করে গভর্নেসের ছুটি, পুরোটা দিন রিশুকে নিয়েই চলে যায়। ছুটির দিন গুলোর বেশির ভাগ সময় ওকে নিয়েই কেটে যায়, যতদিন যাচ্ছে তত দুষ্টুমি বেড়ে চলেছে, তবে নিজের খেলনা নিয়েই থাকে, অন্যের কিছুতেই হাত দেয় না। কোন খেলনা আস্ত নেই, দুই তিন দিনের মধ্যেই সেটার ওপরে কারিগরি শুরু করে দেয়, খুলতে না পারলে মেঝের ওপরে বাড়ি মেরে ভেঙ্গে দেখে কি আছে ওর মধ্যে। এইত কয়েকদিন আগে একটা গাড়ি কিনে দিয়েছিল, সেই গাড়িটা আর আস্ত নেই, কি করে সেই গাড়িতে লাল আলো জ্বলে সেটা দেখার জন্য বাবু সেটা একদিন আছাড় মারল মেঝেতে। খুব বকা খেয়েছিল সেদিন, আম্বালিকার ইচ্ছে করছিল দেয় দুই ঘা পিঠের ওপর বসিয়ে। মাস দুয়েক আগে একটা খেলনা ছোট সাইকেল কিনে দিয়েছিল, সেটা লোহার তাই আর ভাঙতে পারেনি। সেদিন নিজের পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত ছিল আম্বালিকা, ওর ঘরেই সব খেলার সরঞ্জাম মেলে মেঝেতে খেলছিল রিশু। বইয়ের থেকে মাঝে মাঝে মাথা উঠিয়ে রিশুর দিকে দেখে, রিশু এক মনে প্লাস্টিকের ব্লক্স নিয়ে একটার ওপর একটা রাখতে ব্যাস্ত।

পীয়ালির সাথে অনেকদিন কথা হয়নি। মাঝে সাঝে কাজের জন্য অথবা নোটসের জন্য কোন বন্ধু বান্ধবী ফোন করলে তবেই উত্তর দেয় না হলে নিজে থেকে আর কাউকে ফোন করে না আম্বালিকা। এমন সময়ে কাজের মেয়ে এসে খবর দেয় যে নীলাদ্রি এসেছে। অনেকদিন নীলাদ্রির সাথে দেখা হয়নি, ছ্যাঁত করে ওঠে বুকের ভেতর। তন্বী তরুণী, উদ্ভিন্ন যৌবনা কন্যে, মাঝে মাঝে বড় ইচ্ছে করে নীলাদ্রির বাহুডোরে নিজেকে সঁপে দিতে, ইচ্ছে করে হারিয়ে যেতে। মাঝে মাঝে বুকের ভেতরটা হুহু করে ফাঁকা হয়ে আসে। ওর বুকের মধ্যে ভালোবাসা এখন জীবিত কিন্তু রিশুর মুখ চেয়েই ভবিষ্যতের কথা আর ভাবেনি। নিজের হৃদয়ের সুপ্ত আশা আকাঙ্ক্ষা সব এক খাঁচায় বন্ধ করে কোন এক গর্তে ফেলে দিয়েছে অনেকদিন আগেই। চেয়ার ছেড়ে উঠতেই রিশু ওর পিছু নেয়, মাম্মা কোথায় যাচ্ছে সেটা জানা ওর খুব দরকার।

বসার ঘরে ঢুকে সোফায় বসা নীলাদ্রিকে দেখে স্মিত হাসে আম্বালিকা, “কেমন আছ?”

নীলাদ্রি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “এই চলে যাচ্ছে।”

ওর হাতে একটা খেলনার বাক্স দেখে প্রশ্ন করে, “এইসব আবার আনতে গেলে কেন?”

স্মিত হাসে নীলাদ্রি, “এমনি তেমন কিছু না।” খানিক থেমে আম্বালিকার আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কেমন আছ?”

অন্য সময়ে এই দৃষ্টিতে গলে পড়ত আম্বালিকা, কিন্তু সেদিন নীলাদ্রির পাশের একটা সোফায় বসে মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “যেমন থাকা যায় আর কি।”

হটাত আদো কন্ঠে রিশুর প্রশ্ন, “ওতা কি?” ওর সাথে সাথে রিশু যে গুটিগুটি পায়ে ওর পেছন পেছন চলে এসেছিল সেটা আম্বালিকার খেয়াল ছিল না।

হেসে ফেলে নীলাদ্রি, “এটা তোমার জন্য, আসো” বলে ওর দিকে বাক্সটা বাড়িয়ে দেয়।

রিশু একবার মাম্মার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে নীলাদ্রির হাত থেকে খেলনার বাক্স নিয়ে নেয়।

আম্বালিকা ওর মাথার ঘন এলো মেলো চুলের মধ্যে বিলি কেটে আদর করে বলে, “এবার শান্তি?” কাজের মেয়েকে ডেকে বলে রিশুকে নিয়ে যেতে আর নীলাদ্রির জন্য কিছু জল খাবারের ব্যাবস্থা করতে।

নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে, “এত দিন ফোন করনি কেন?”

ম্লান হেসে উত্তর দেয় আম্বালিকা, “এমনি গো, সময় থাকে না একদম।” সত্যি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি ভাবে কেটে ওর সেটা বুঝতেই পারে না। নিজের পড়াশুনা, রিশু এই সব নিয়েই পরে আছে।

নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে, “এরপর কি করবে?”

আম্বালিকা ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, “এই মাস্টারস শেষ করে বাড়িতেই কিছু একটা করব ভেবেছি। রিশুকে ছেড়ে চাকরি করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না, আমি বাইরে গেলে ওকে কে দেখবে, তাই ভাবছি এক তলায় একটা প্লে স্কুল খুলবো। রিশুর হাতেখড়ি পড়াশুনার শুরু ওখান থেকেই হয়ে যাবে।”

নীলাদ্রি একটু হাসে, “বেশ ভালো কথা” একটু থেমে প্রশ্ন করে, “তারপর?”

প্রশ্নটা ঠিক কিসের জন্য করা সেটা অবিদিত নয় আম্বালিকার কিন্তু উত্তরটা নিজেরও অজানা। শুন্য চোখে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “অত পরের কথা এখন ভাবিনি গো, জানি না কি হবে।” বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “আমি এখন এক এক দিন করে বাঁচতে চাই, বেশি দুরের কথা ভাবতে বড্ড ভয় করে।”

নীলাদ্রি সব বোঝে, কি কারনে ওর সেই উচ্ছল আম্বালিকা এই উত্তর দিচ্ছে। কাজের মেয়ে খাবারের প্লেট রেখে যায়, সেই সাথে রিশুও খেলনা নিয়ে বসার ঘরে ঢুকে পরে। রিশুর চোখে মুখে হাসি ধরে না, ওর হাতে নীলাদ্রির আনা খেলনা হেলিকাপ্টার।
আম্বালিকার দিকে খেলনা উঁচিয়ে আদো আদো কন্ঠে বলে, “মাম্মা হেলি ত্তার।”

রিশুর গলায় মাম্মা ডাক শুনে নীলাদ্রি ভুরু কুঁচকে আম্বালিকার দিকে তাকায়। রিশুকে কাছে টেনে কোলের মধ্যে বসিয়ে কাঁপা গলায় সেই ভ্রু কুঞ্চিত অবাক প্রশ্নের জবাব দেয় আম্বালিকা, “আমি মা হয়ে গেছি নীলাদ্রি।” দু চোখে জল টলমল করে ওর, রিশুর মাথায় ঠোট চেপে বলে, “তোমার ঐ তারপরের উত্তর আমার কোলে।”

নীলাদ্রি বাক্যহারা, কি বলবে কিছু ভেবে পায় না এর উত্তরে। ছেলের সামনে এইভাবে কাঁদতে খুব বাধে, তাই আবার কাজের মেয়েকে ডেকে রিশুকে ওইখান থেকে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। ওর বুকের ওপরে কেউ যেন শক্তি শেল বিঁধিয়ে দিয়েছে। রিশুকে নিয়ে চলে যাওয়ার পরে, ওড়না দিয়ে চোখের কোল মুছে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে।

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নীলাদ্রিকে বলে, “আমি মা হয়ে গেছি নীলাদ্রি।” শরীরের শেষ শক্তিটুকু বুকের মাঝে জড় করে নেয়, এরপরের বাক্য নিজেই কি ভাবে বলবে জানে না, “আমাকে ভুলে যাও।” ভ্রু কুঁচকে নিস্পলক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে নীলাদ্রি। আম্বালিকা বলে, “আমি আমার ছেলে ছেড়ে থাকতে পারব না কোন মতেই। আমাদের বিয়ে হতে পারে না।”

নীলাদ্রি ওর নরম হাত নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে প্রশ্ন করে, “কেন হতে পারে না? আমি আছিত তোমার পাশে। তোমার ভয় কিসের?”

নীলাদ্রির উষ্ণ পরশে কেঁপে ওঠে আম্বালিকার উদ্ধভিন্ন যৌবনা দেহ পল্লব। ধিরে ধিরে নীলাদ্রির হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উত্তর দেয়, “তুমি বুঝতে পারছ না নীলাদ্রি, তোমরা উত্তর কোলকাতার যৌথ পরিবার, আমি একা এক মেয়ে তাও আবার কোলে এক কচি বাচ্চা। তোমার বাড়ির লোকেরা কি মেনে নেবে আমাকে আর রিশু কে? তোমার আত্মীয় সজ্জন আমার সত্যি জানে না, অনেকে অনেক বাজে কথা বলবে। তুমি জানো রিশু আমার ভাই, কয়েক মাস আগেও রিশু আমার ভাই ছিল কিন্তু আজ ও আমাকেই ওর মা বলে জানে। সবার সামনে যখন রিশু আমাকে মাম্মা বলে ডাকবে তখন কার কার কাছে তুমি জবাবদিহি দেবে নীলাদ্রি?” একটু থামে আম্বালিকা, নীলাদ্রি কিছু বলতে গেলেও থামিয়ে দেয়, “আমার কোলে জন্ম নেয়নি ঠিক, কিন্তু আমার রক্ত মাংসে গড়া ওই কচি শিশুটার ছোট পৃথিবী আমি বেঁচে থাকতে এই ভাবে ভাঙতে দিতে পারি না। আমি কলেজে গেলেও আমার মন বাড়িতে পরে থাকত কখন বাড়ি ফিরব আর রিশু মাম্মা বলে আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কত রাত গেছে দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি ওর জ্বালায়, তাও যখন আদর করে মাম্মা বলে ডাকে তখন সবকিছু ভুলে যাই, সব ক্লান্তি মিটে যায়। আমার জীবন ওই কচি রিশুর হাসি কান্নার মাঝেই আটকা পরে গেছে নীলাদ্রি।” নীলাদ্রির সামনে হাত জোর করে বলে, “আমাকে ভুলে যাও প্লিজ, এ জীবনে আর তোমার হতে পারলাম না নীলাদ্রি।”

শেষের কথা গুলো বলার সময়ে ওর বুক ভেঙ্গে যায়। কথা গুলো শেষ করার পরে উঠে দাঁড়ায় আম্বালিকা, দুই চোখে জলের বন্যা, ওর ভালবাসার ঘর নিজে হাতে ভেঙ্গে টুকরো করে দিতে হল। নীলাদ্রি কিছু বলার আগেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়, ওর সামনে আর বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার মতন শক্তি বেঁচে নেই ওর বুকে। নিজের ঘরে ঢুকেই আছড়ে পরে বিছানায়, এতদিনের যত্ন করে রাখা ওর স্বপ্ন সেদিন নিজে হাতে এইভাবে ভাঙতে ওর ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। বালিশে মুখ গুঁজে পড়েছিল অনেকক্ষণ। বন্ধ দরজার অন্যপাশ থেকে কানে ভেসে আসে, কচি শিশুটার খিলখিল হাসির কলতান। বারেবারে ডুকরে কেঁদে ওঠা হৃদয়কে প্রবোধ দেয়, সত্যি কি কিছুই আর রইল না ওর জীবনে? চোখ মুছে বাথরুমে ডুকে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে নিজেকে ঠিক করে নেয়। এই ভাবে রিশুর সামনে যাওয়া চলে না, ওকে কাঁদতে দেখলে রিশুও কাঁদতে শুরু করে দেবে। ঘরের বাইরে বেড়িয়ে দেখে রিশু খেলতে ব্যাস্ত, কাজের মেয়ে জানিয়ে দেয় যে নীলাদ্রি বেশিক্ষন বসেনি।

নীলাদ্রি যে চুপ করে বসে থাকার পাত্র নয় সেটা আম্বালিকা ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল। সেদিনের পর বহুবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু একবারের জন্যেও ফোন তোলেনি আম্বালিকা। মাঝে মাঝেই ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। পরীক্ষার সময়েও হলের বাইরে ওর জন্য অপেক্ষা করেছিল। পরীক্ষার শেষের দিনে আম্বালিকাকে ধরে ফেলে রাস্তার মাঝে, জানতে চায় কেন এইরকম করছে? নীলাদ্রি জানায় যে ও বাড়ির সাথে কথা বলবে, সব কিছু ঠিক করে দেবে। সেদিন নীলাদ্রিকে দেখে পাগলের মতন মনে হয় আম্বালিকার। আম্বালিকা জানিয়ে দেয় যে ওদের মধ্যে আর কিছু নেই, নীলাদ্রি যেন চিরতরে ওকে ভুলে যায়। মানতে কষ্ট হয় নীলাদ্রির, ওর চোখে মুখে ফুটে ওঠে জীবন যুদ্ধে পরাস্ত এক সৈনিকের প্রতিচ্ছবি।

সেদিনের পর থেকেই নানান দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করে, প্রেমে ধাক্কা খেয়ে নীলাদ্রি কিছু করে বসবে না ত আবার? হামেশাই খবরের কাগজে নানান খবর ছাপে, কোথাও প্রেমে ধাক্কা খেয়ে একটা ছেলে তার প্রেমিকার ওপরে এসিড ছুঁড়ে মেরেছে, কখন খবর ছাপে কোথাও প্রেমে ধাক্কা খেয়ে আত্মহত্যা করেছে প্রেমিক, সব থেকে বেশি ভয় যদি রিশুকে কিছু করে কেউ তাহলে কি করবে? এই শহর ওকে ছাড়তে হবে, নীলাদ্রির চোখের সামনে থেকে চলে গেলে হয়ত কিছুদিনের মধ্যে নীলাদ্রি ওকে ভুলে যাবে এবং নতুন জীবনের দিকে পা বাড়াবে। এইসব দুশ্চিন্তা, হাসি কান্না নিয়েই কোন রকমে মাস্টার্সের পরীক্ষায় পাস করে আম্বালিকা। ওর কড়া নির্দেশ ছিল, ও বাড়িতে না থাকলে কোন অচেনা অজানা লোক কে যেন বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়া হয়, ওর অবর্তমানে রিশুকে নিয়ে বাইরের পার্কে খেলতে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। নানান দুশ্চিন্তা আম্বালিকাকে আরো বেশি কঠোর করে দেয়, রিশুকে নিয়ে আরো বেশি ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরে দিনে দিনে।
 
পর্ব এক (#4-4)

পরীক্ষা শেষে একদিন এডভোকেট প্রমথেশ বাবুকে ফোন করে বলে যে ও রিশুর আইনত অবিভাবক হতে চায় সেই সাথে এও জানায় যে এই বাড়ি বিক্রি করে রিশুকে নিয়ে কোলকাতা ছেড়ে চলে যেতে চায়। কোথায় যাবে কার কাছে যাবে কিছুই জানে না, ওর মামা বাড়ি জলপাইগুড়ি কিন্তু মা মারা যাওয়ার পর থেকে সেই আত্মীয়তা ভেঙ্গে গেছে।

বাবা গত হয়ার প্রায় এক বছর হতে চলল, দেখতে দেখতে রিশুর জন্মদিন এগিয়ে এসেছে। বিকেলের ফ্লাইট, মোটামুটি সব ঠিক করা হয়ে গেছে। প্রমথেশ বাবুর কাছে বাড়ির চাবি দিয়ে দিয়েছে, বলে দিয়েছে বাড়ি বিক্রি করে দিতে। এই বাড়িতে আম্বালিকার জন্ম রিশুর জন্ম, সেই জন্মস্থান ছেড়ে চলে যেতে বুক ভেঙ্গে যায় ওর, কিন্তু রিশুর মুখ চেয়েই আর নীলাদ্রির কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য ওকে কোলকাতা ছাড়তে হয়। প্রমথেশ বাবুর এক বন্ধু, রজনীশ রাঁচিতে থাকেন, সেখানেই সব কিছু ঠিক করে দেন তিনি। একমাত্র প্রমথেশ বাবু ছাড়া আর কেউ জানে না আম্বালিকা কোথায় যাচ্ছে। রিশুকে কোলে নিয়ে সেই বিকেলে কোলকাতা ছাড়ে আম্বালিকা। ছোট্ট রিশুর অনেক প্রশ্ন, কোথায় যাচ্ছে? হাসি মুখে উত্তর দেয় আম্বালিকা, বেড়াতে যাচ্ছে অনেক দূরে। প্লেনটা কোলকাতার মাটি ছাড়তেই ছলছল চোখে প্লেনের জানালার বাইরে তাকিয়ে বিদায় জানায়, হয়ত এই জীবনে আর কোনদিন ফিরে আসবে না এই শহরে। আসার আগে বাগানের এক মুঠো মাটি একটা প্যাকেটে করে নিয়ে এসেছিল, শহর ছাড়লেও ওর বুকের মাঝে এই শহর আঁকা। এই গঙ্গার পাড়ে বসে কত বিকেলে নীলাদ্রির সাথে গল্প করেছে, পীয়ালির সাথে অনান্য বন্ধু বান্ধবীর সাথে কফি হাউসে বসে কত আড্ডা মেরেছে, লাইঠ হাউস গ্লোবে কত সিনেমা দেখছে, কত বিকেল কেটে গেছে এই ময়দানে নীলাদ্রির হাতে হাত রেখে বসে থাকা। রিশু জুলু জুলু চোখে মাম্মার দিকে তাকিয়ে থাকে আর জানালার বাইরের আলো গুলো ছোট হতে হতে মিলিয়ে যেতে দেখে।

কোলকাতা থেকে রাঁচি প্লেনে বেশি সময়ের পথ নয়। রজনীশ বাবু যদিও বলেছিলেন যে তাঁর বাড়িতে উঠতে কিন্তু স্বভিমানী আম্বালিকা আগে থেকেই এক সপ্তাহের জন্য একটা হোটেল ভাড়া করে রেখেছিল। পরের দিন সকালে রজনীশ বাবু আসেন হোটেলে ওদের সাথে দেখা করতে, ওর ব্যাপারে আগে থেকেই প্রমথেশ বাবু জানিয়ে রেখেছিলেন। রজনীশ বাবু ওকে বেশ কয়েকটা স্কুলের নাম আর কার সাথে দেখা করতে হবে সেই সব জানিয়ে দেয়। নতুন শহর, সব কিছুই অজানা সবাই অচেনা, একা এক তন্বী তরুনির কোলে বাচ্চা ছেলে দেখে বহু মানুষের মনে বহু প্রশ্ন। মানুষের মনে ভালো চিন্তা কখনি আসে না, আসে খারাপ চিন্তা ধারা, সেই সব কথায় কান দেয় না আম্বালিকা। রিশুকে কোলে নিয়েই সেই স্কুলে গুলোতে টিচারের এল্পলিকেশান দিয়ে এসেছিল, বাড়ি খুঁজতে বেরিয়েও সমস্যা, একা কোন মেয়েকে কেউই ভাড়া দিতে চায় না। কাউকে জবাবদিহি দিতে নারাজ আম্বালিকা, কারুর সামনে ঝুঁকতে নারাজ। অনেক খোঁজা খুঁজির পরে একটা ছোট ফ্লাট পায়। যেহেতু সেই বাড়ির মালিক বিদেশে থাকে তাই বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন করতে হয়নি, তাও আশেপাশের লোকের কানাঘুষো ওর কানে আসে। সেসবে কান না দেয় না আম্বালিকা। পড়াশুনায় সর্বদা ওর ভালো মার্ক্স ছিল, কেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স তাই স্কুলের চাকরি পেতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি।

শুরু হয় এক নতুন জীবন এক নতুন শহরে, মা আর ছেলের ছোট সংসার। কোলকাতার বাড়ি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরে রাঁচিতেই একটা ছোট ফ্লাট কেনে আম্বালিকা। রিশুকে নিজের স্কুলেই ভর্তি করিয়েছিল আম্বালিকা, ক্ষনিকের জন্যেও চোখের আড়াল করতে নারাজ একমাত্র ছেলেকে। বড় হতে হতে রিশুর মনে অনেক প্রশ্ন জাগে, ওর বাবা কোথায়, ওদের বাড়ি কোথায়? সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিলেও সম্পূর্ণ মিথ্যে বলেনি আম্বালিকা, রিশু জানে ওর বাবা অনেকদিন আগে গাড়ির এক্সিডেন্টে মারা গেছে, ওদের বাড়ি ছিল কোলকাতায়, ওর বাবা মারা যাওয়ার পরে শহর ছেড়ে দেয় ওর মাম্মা আর এই শহরে এসে বসবাস করা শুরু করে।

দেখতে দেখতে দশ বছর কেটে যায়, রিশু ক্লাস সেভেনে পড়ে, সেদিন রিশুর জন্মদিন। নিজের জন্মদিন ভুলে গেলেও ছেলের জন্মদিন কোন বার ভোলে না। আম্বালিকাও অনেক বদলে গেছে, যে তন্বী তরুণী কোলকাতা ছেড়েছিল সেই মেয়েটা আর নেই। রাঁচির এক নামকরা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষিকা, চোখে চশমা, খানিক ভারিক্কি হয়ে গেছে ততদিনে, কিন্তু মুখের হাসিটা এখন বদলায়নি আর বদলায়নি রিশুর প্রতি ভালোবাসা। একমাত্র ছেলের পড়াশুনার প্রতি একটু বেশি কড়া। ওর বাবার ইচ্ছে ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে সেটা নিজের অভিমানের জন্য হতে পারেনি কিন্তু রিশুকে ডাক্তারি পড়াতে চায়। প্রতিবারের মতন সেদিনও স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছিল আম্বালিকা, ছেলে অরেঞ্জ কেক খেতে ভালোবাসে তাই সকাল থেকেই লেগে পড়েছিল অরেঞ্জ কেক বানাতে। স্কুলের পরে ঝোড়ো কাকের মতন কাঁধে ব্যাগ আর হাতে জুতো নিয়ে রিশুর আগমন। সেটা দেখেই আম্বালিকা ভীষণ রেগে যায়, নিশ্চয় কারুর সাথে ঝগড়া মারামারি করে এসেছে। এই কয়েক মাস আগেই একজোড়া নতুন জুতো কিনে দিয়েছিল।

ছেলের দিকে রোষকষিত চোখে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কি রে কার সাথে আবার মারপিট করেছিস? তোর জ্বালায় যদি একটু শান্তিতে থাকা যায়।” যদিও রিশু একটু শান্ত প্রকৃতির অহেতুক কারুর সাথে ঝগড়া মারামারি করে না, তাও বাচ্চাদের মধ্যে কখন কি নিয়ে মারামারি লাগে সেটা কি আর কেউ বলতে পারে।

অপরাধীর মতন মায়ের পেছন পেছন ঘরের মধ্যে ঢুকে বলে, “নিরঞ্জন খেপাচ্ছিল তাই মেরেছি। শা...” বলতে গিয়েই থেমে যায়, এবারে এই গালাগালি শুনলে মা মেরেই ফেলবে।

আম্বালিকা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কেন মারপিট করেছিস? কাল স্কুলে গেলেই তোর নামে কমপ্লেন আসবে আমার কাছে।”

অপরাধি রিশু মায়ের সামনে মাথা নিচু করে মিন মিন করে উত্তর দেয়, “না স্কুলে হয়নি, বাসে হয়েছে, নিরঞ্জনের সাথে সিট নিয়ে ঝামেলা হয়েছে তাই।” তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “না মাম্মা, আমি আগে মারিনি, নিরঞ্জন খেপাতে খেপাতে সুমিতের মাথায় মারে আর সেই নিয়েই ঝগড়া শুরু।”

আম্বালিকা প্রশ্ন করে, “বাসে ত রিনা ম্যাডাম বসেছিল বলতে পারিসনি?”

বড় হয়েছে রিশু আর রিশুর বন্ধুরা, নিজেদের ঝামেলা আজকাল নিজেরাই মেটাতে চায়, “বাঃ রে, মারামারি নিরঞ্জন শুরু করেছে তাই আমরাও থেমে থাকিনি। জুতো খুলে দিয়েছি দু ঘা ওর ওপরে।”

জুতো দিয়ে মেরেছে শুনে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে আম্বালিকা, “জুতো দিয়ে মেরেছিস মানে? আজকে তোর বারথডে না হলে তোর পিঠের ছাল চামড়া নামিয়ে দিতাম।”

ঘরে ঢুকেই নাকে অরেঞ্জ কেকের গন্ধ এসেছিল, কিন্তু মায়ের রাগ দেখে কিছু আর বলতে সাহস পাচ্ছে না। কান ধরে মায়ের সামনে কচি বাচ্চার মতন আদো আদো কন্ঠে বলে, “আল কোব্ব না মাম্মা, প্লিজ...”

এমন করলেই আম্বালিকার মন ভিজে যায়, তাও মিষ্টি কঠোর কন্ঠে বলে, “বাবা, কাউকে ওইভাবে জুতো দিয়ে মারতে নেই।” ছেলের উষ্কখুষ্ক চুলের মধ্যে বিলি কেটে বলে, “যা তারাতারি হাত মুখ ধুয়ে নে। তোর অরেঞ্জ কেক প্রায় তৈরি, তোর বন্ধুরাও হয়ত কিছুক্ষনের মধ্যে এসে যাবে।”

মাকে দুহাতে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে, এখানে ওর প্রান আটকে, ওর ভালোবাসা, ওর ঘুম ওর শান্তি ওর হাসি ওর কান্না সবকিছুই ওর মা। “এই যাচ্ছি, প্লিজ একটু কেক দাও আগে?”

ওইভাবে জড়িয়ে ধরলেই গলে যায় আম্বালিকা, কচি রিশুকে কোলে নিয়ে সেই যে কোলকাতা ছেড়েছিল সেকথা মনে পড়ে যায়। “আরে বাঁদর, এখন কেক হচ্ছে, আর বারথডে কেক কাটার আগেই কেক খাবি কি রে?”

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নেমে আসে, একে একে বাড়িতে রিশুর বন্ধু বান্ধবীর আগমন শুরু হয়ে যায়। বসার ঘর জমজমাট, জনা দশেক বাচ্চাদের কোলাহলে মুখরিত। ঠিক এমন সময়ে কলিং বেল বাজে, ওর কোন বন্ধু এসেছে ভেবেই দরজা খুলে কিঞ্চিত থমকে যায়। দরজায় দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক হাতে এক বেশ বড়সড় গিফটপ্যাক। কোনদিন এই ভদ্রলোক কে কোথাও দেখেছে বলে রিশুর মনে পড়েনা।

রিশু জিজ্ঞেস করে, “কাকে চাই, আপনি কে?”

আময়িক হেসে সেই আগন্তুক ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার মা বাড়িতে আছেন?”

আম্বালিকা রান্নাঘরে ব্যাস্ত ছিল কোন এক কাজে, “কে এলো রে?” জিজ্ঞেস করে।

মাথা দোলায় রিশু, “হ্যাঁ আছেন।” ডাক দেয় মাকে, “জানি না মাম্মা, এক বার এসো তোমাকে ডাকছেন।”

বসার ঘরে ঢুকে আগন্তুককে দেখে চমকে ওঠে আম্বালিকা, এতদিন পরে চোখের সামনে নীলাদ্রিকে দেখে থমকে যায়। যার জন্য কোলকাতা ছেড়ে এতদুর এসেছিল সেই নীলাদ্রি কি করে খুঁজে পেল ওকে? নীলাদ্রি অনেক বদলে গেছে আগের থেকে, একটু মোটা হয়েছে, গায়ের রঙ একটু বেশি তামাটে হয়ে গেছে। কি বলবে ভেবে পায়না, ক্ষনিকের জন্য মাথা ঘুরে যায় ওর কিন্তু ঘর ভর্তি রিশুর বন্ধু বান্ধবী তাই সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে নীলাদ্রিকে বসার ঘরে বসতে বলে। রিশু নিজের বন্ধু বান্ধবী নিয়েই ব্যাস্ত।

সোফায় বসে নীলাদ্রিকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছো?”

ম্লান হাসে নীলাদ্রি, “বেঁচে আছি কোন রকমে এই যেমন থাকা যায় আর কি।”

আম্বালিকার প্রান ডুকরে কেঁদে ওঠে, চোয়াল চেপে সেই অশ্রু সংবরণ করে ম্লান হেসে জিজ্ঞেস করে, “বাড়ির সবাই ভালো? মাসি মা, মেসো?”

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে নীলাদ্রি, “তাঁদের খবর বিশেষ জানা নেই, আশা করি ভালো আছে তারা। তোমার কি খবর?”

অন্য ঘরে রিশু তখন বন্ধুদের সাথে গল্পে মশগুল, সেদিকে দেখিয়ে উত্তর দেয় আম্বালিকা, “আমার খবর ঐযে হাসছে।” খানিক থেমে জিজ্ঞেস করে, “তোমার ফ্যামিলি কেমন আছে?”

হেসে ফেলে নীলাদ্রি, “জানি না গো, এইত প্রশ্ন করলাম কিন্তু সঠিক উত্তর পেলাম না।”

এবারে অবাক হওয়ার পালা আম্বালিকার, “মানে?”

নীলাদ্রি বলে, “আমি আর বিয়ে থা করিনি আম্বা। তুমি চলে আসার পরে অনেক খুঁজেছি তোমাকে।”

ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে আম্বালিকার, “কেন? আমি তোমার জন্য ওই শহর ছেড়েছিলাম, কেন তুমি তোমার জীবনে ফিরে যাওনি?”

নীলাদ্রি ম্লান হেসে বলে, “আমার যা ছিল সব কিছু নিয়ে চলে এলে, আমি আর কি নিয়ে থাকতাম বলো।”

আম্বালিকার বুঝতে বিন্ধুমাত্র কষ্ট হয়না যে ওর জীবনের পথ নীলাদ্রির সাথেই বাঁধা। “কি করে খুঁজে পেলে আমাকে?”

নীলাদ্রি নিজের গল্প শুরু করে, “আমি আমার বাড়িতে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তারা কিছুতেই তোমাকে আর রিশুকে মেনে নিতে পারবে না সেটা সোজা জানিয়ে দিল। বাবা মায়ের সাথে অনেক ঝগড়া মন কষাকষির পরে আমি বাড়ি ছেড়ে দিলাম। সেটা জানাতে যেদিন তোমার বাড়িতে গেলাম সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম যে তুমি শহর ছেড়ে চলে গেছ। কোথায় গেছ সেটা আর কেউ বলতে পারল না। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কয়েক মাস অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম যদি কোথাও তোমার দেখা পাই। কিন্তু তুমি যে একদম হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে সেটা বুঝতে পারিনি। আমি আর আমার কয়েক বন্ধু মিলে একটা আরকিটেকচার ফার্ম খুললাম, তার কাজেই অনেক জায়গায় যেতে হয়। আমি আর বিয়ে করলাম না” বুকের বাঁ দিক চেপে বলে, “এখানে আর কাউকে সেইভাবে বসাতে পারলাম না গো।”

আম্বালিকা কেঁদে ফেলে নীলাদ্রির কথা শুনে, “তুমি না সত্যি একটা পাগল লোক।”

নীলাদ্রি গানের কয়েক কলি গেয়ে ওঠে, “যখন কেউ আমাকে পাগল বলে, তার প্রতিবাদ করি আমি, যখন তুমি আমায় পাগল বল, ধন্য যে হয় সে পাগলামি, ধন্য আমি ধন্য যে...”

মাঝ পথে থামিয়ে জল ভরা চোখে হেসে ফেলে আম্বালিকা, “এই বুড়ো বয়সে আর গান ধরতে হবে না, থামো।”

নীলাদ্রি ওর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে বলে, “ফিরে চল আম্বা, আমি তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি।”

পাশের ঘরে রিশুর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে, “তোমাকে সেদিন ও যা বলেছিলাম আজকেও সেই এক কথা বলব নীলাদ্রি, আমার জীবনের পথ তোমার পথের সাথে আর নেই গো।”

কাতর মিনতি করে নীলাদ্রি, “তোমার ছেলে বড় হয়েছে আম্বা, এখন নিশ্চয় অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আম্বা, তোমার আর রিশুর মাঝে আমি কোনদিন আসব না। শুধু তুমি আমার পাশে থেক ব্যাস তাহলেই হবে।”

এত ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারে না আম্বালিকা, অগত্যা আম্বালিকা হেরে যায় নীলাদ্রির ভালবাসার কাছে।

❤️ "শেষের পাতায় শুরু" ❤️
 
পর্ব এক (#5-5)

নীলাদ্রি জানায়, রাঁচিতে কাজের সুত্রে এসেছিল। সেদিন বিকেলে স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে রিশুকে দেখতে পেয়েই চিনতে পেরেছিল, রিশুর মুখবয়াব হুবহু আম্বালিকার মতন, সেই চোখ সেই নাক, সেই হাসি। তখন থেকেই পিছু নিয়েছিল স্কুল বাসের এবং বাড়ি খুঁজে পেয়েছিল সে ভাবে। নীলাদ্রি আরো জানায়, আম্বালিকা চলে যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে ওর যে কোলকাতার বাড়ি ছিল সেটা নীলাদ্রি কিনে নেয়, তার জন্য যদিও বিশাল টাকা লোন নিতে হয়েছে ওকে তবে বাড়িটা হাতছাড়া করতে চায়নি নীলাদ্রি। আম্বালিকা এই সবের কি জবাব দেবে ভেবে পায় না।

রিশুও বড় হয়েছে, মায়ের দুঃখ কষ্ট অনেক কিছুই বোঝে। মনের মধ্যে অনেক বড় কিন্তু সেই সাথে নীলাদ্রির ওপরে একটু হিংসে তবে মেনে নিয়েছিল আম্বালিকা আর নীলাদ্রির বিবাহ। শুরুতে আঙ্কেল বলে নীলাদ্রিকে সম্বোধন করত, ধিরে ধিরে সেটা “পাপা” তে পরিনত হয়। নীলাদ্রি কোনদিন নিজের গন্ডি উলঙ্ঘন করেনি, রিশুর ব্যাপারে কোনদিন আম্বালিকাকে কিছু বলেনি। ও ভালো ভাবে জানত যে আম্বালিকার রিশু অন্ত প্রান, সবেধন নীলমণি যখের ধন ঐ ছেলে। রাঁচি ছেড়ে আবার কোলকাতা ফিরে আসে আম্বালিকা, আবার সেই পুরানো বাড়ি, সেই পুরানো বাগান যেখানে ছোট্ট রিশু খেলা করত। যেমন রেখে গিয়েছিল ঠিক তেমন ভাবেই নীলাদ্রি রেখে দিয়েছিল বাড়িটাকে। আম্বালিকা বাড়ির লোন শোধ করে দেয়। বাড়ির নিচের তলায় একটা প্লে স্কুল খোলা হয়, কয়েক মাসের মধ্যেই বেশ নামডাক হয়ে যায় সেই স্কুলের। বিয়ের দু বছরের মাথায়, ঘর আলো করে একটা কন্যের জন্ম দেয় আম্বালিকা। রিশু তার বোনের নাম রাখে দ্বীপানিতা, আদরের নাম রাখা হয় দিয়া।

দেখতে দেখতে রিশুর স্কুল শেষ হয়ে যায়। আম্বালিকার কড়া তত্ত্বাবধানে আর অগাধ মাতৃ স্নেহের ফলে মেডিকেল এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় রিশু। কোলকাতার মেডিকেল কলেজেও পেয়েছিল রিশু সেই সাথে দিল্লীর এইএমএস এও চান্স পেয়েছিল। সারা ভারতে দিল্লীর এইএমএস খুব নামকরা মেডিকেল কলেজ। আম্বালিকা জানিয়ে দেয় যে দিল্লীতেই ওকে যেতে হবে, ভারতের নাম করা মেডিকেল কলেজ সেই চান্স কিছুতেই ছাড়া যায় না।

যেদিন রিশুর মেডিকেল এন্ট্রান্সের রেজাল্ট বের হয় সেদিন বাড়িতে সবাই খুব খুশি। বেশ রাত পর্যন্ত সেদিন জেগেছিল রিশু, নিজের ঘরে বসে বন্ধুদের সাথে মোবাইলে গল্প করছিল। রাত অনেক, এমন সময়ে মাকে ঠাকুর ঘরের দিকে যেতে দেখতেই কেমন যেন মনে হয়। এত রাতে কি হল মায়ের? চুপ চাপ নিজের ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসে দেখে ওর মা, ঠাকুর ঘরে বসে হাতে কিছু একটা নিয়ে হাপুস নয়নে কাঁদছে। রিশু মাকে এই ভাবে কোনদিন কাঁদতে দেখেনি তাই ভীষণ ভাবে আশ্চর্য হয়ে যায়।

আম্বালিকা তাঁর বাবার ফটো, সুমিতার ফটো আর নিজের মায়ের ফটো বের করে কাঁদতে কদাতে বলে, “আমি আমার কথার খেলাপ করিনি, আমি ছেলেকে ডাক্তার করতে পেরেছি।”

মায়ের চোখের জলের অর্থ রিশুর বোধগম্য হয়না। মায়ের পাশে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “কাঁদছ কেন মাম্মা, আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না।” তারপর চোখ যায় মেঝেতে রাখা তিনটে ফটোর দিকে।

আম্বালিকা চোখের অশ্রুভরা নয়নে রিশুকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আরেক বার আমাকে মা বলে ডাক।”

“মাম্মা এইত আমি” বলে রিশুও কাঁদতে শুরু করে দেয়, মায়ের অব্যাক্ত বেদনার কারণ কিছুতেই বুঝতে পারে না।
ফটো গুলো রিশুকে দেখিয়ে আম্বালিকা ধরা গলায় বলে, “আমি তোর মা নয় রে” সেই বাক্যটা বলতে বলতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে ওর, সুমিতার ফটো দেখিয়ে ওকে বলে, “এটা তোর আসল মা।” বাবার ফটো দেখিয়ে বলে, “এটা তোর বাবা” তারপর নিজেকে দেখিয়ে বলে, “আমি তোর দিদি রে রিশু।” কথাটা শেষ করে রিশু কে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে আম্বালিকা।

রিশু কিছুক্ষন থম মেরে বসে থাকে, বোঝার চেষ্টা করে যে দেবী প্রতিমাকে এতদিন মায়ের স্থানে দেখেছে আসলে সে তার দিদি কি করে? ধিরে ধিরে চোখের সামনে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়, যাকে জড়িয়ে ধরে ওর দিন আর রাত কেটেছে সেদিন সেই দেবী প্রতিমা যে নিজের মা নয় সেটা মানতে নারাজ ওর হৃদয়।

ফটো গুলোর দিকে দেখে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে রিশু বলে, “সত্যি মিথ্যে জানি না মাম্মা, যখন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে তখন থেকে তোমার আঁচলের ছায়ায় বড় হয়েছি মাম্মা। শাসন করতে তুমি আবার আদর করতে তুমি, অন্য কেউ আমার পাশে ছিল না। যখন রাতে আমার ঘুম হত না তখন তোমার মুখে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়েছি, পড়ে গিয়ে যখন আমার ব্যাথা লাগত তখন তোমার একটা ফুঁতেই সেই ব্যাথা ঠিক হয়ে যেত। আমি জানতে চাই না আমার বাবা কে আমার আসল মা কে। মাম্মা আমি শুধু তোমার ছেলে হয়েই থাকতে চাই।”

ছেলেকে বুকে মাঝে জড়িয়ে ধরে আম্বালিকা, “হ্যাঁ রে বাবা, তুই আমার বুকের পাঁজর আমার রক্ত আমার সন্তান।”

ঠিক হয় এইএমএস ভর্তি করানোর জন্য সবাই দিল্লী যাবে। ছেলে চলে যাবে বলে মায়ের মন খুব খারাপ। রিশুর ইচ্ছে ছিল মায়ের কাছে থাকার, মায়ের আঁচল ছাড়ার কথা চিন্তা করতেই কেঁদে ফেলে রিশু। ছোট্ট দিয়া বেশ আনন্দে আছে, দিল্লী ঘুরতে যাবে, সকাল থেকে সারা বাড়িময় মাতিয়ে বেড়িয়েছে দাদাভাইয়ে সাথে মায়ের সাথে বাবার সাথে দিল্লী বেড়াতে যাবে।

বুকের ওপরে পাথর রেখে সুটকেস গুছাতে গুছাতে ঘন ঘন চোখ মোছে আম্বালিকা, “এরপর হোস্টেলে থাকবি, নিজের দিকে একটু দেখিস। উল্টোপাল্টা কেউ কিছু দিলে খাবি না, কোন বদ ছেলের সাথে একদম মেলামেশা করবি না।”

মায়ের আঁচল ধরে ঘ্যান ঘ্যান করতে করতে বলে, “আমি দিল্লী যাবো না, আমি কোলকাতায় থাকব।”

চোখ মুছে ছেলেকে বুঝায় আম্বালিকা, “কয়েক বছর মাত্র, দেখিস দেখতে দেখতে কেটে যাবে। শুধু ত পড়তে যাচ্ছিস বাবা।”

রিশুর অবুঝ মন কি আর সে কথা বোঝে, “কোলকাতার মেডিকেল কলেজ থেকেও ডাক্তারি পড়া যায়।”

আম্বালিকা বুঝিয়ে বলে, “দিল্লীর এইএমএস বিশ্ব বিখ্যাত মেডিকেল কলেজ, সেখান থেকে ডাক্তারি পড়ে পাশ করার অর্থ আলাদা। এমবিবিএস পড়ার পরে এইখানে চলে আসিস, এখানে এমডি অথবা এমএস করিস।” ছেলেকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলে, “বাবারে সব পাখিরা এক সময়ে উড়তে শেখে, কতদিন মায়ের আঁচল ধরে থাকবি বল?” একটু হেসে বলে, “বড় হয়েছিস, এরপর লোকেরা বলবে মায়ের নেওটা ছেলে।”

রিশু অভিমান করে বলে, “আমি পাখী নয় মাম্মা যে আমাকে ঘর ছেড়ে যেতে হবে।”

মাথায় গালে হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে বলে, “আচ্ছা বাবা পাখী নয়, ঘাট হয়েছে, কয়েকটা বছর ব্যাস তারপর ফিরে আসবি চিন্তা কিসের।”

নীলাদ্রি পেছন থেকে মা আর ছেলের কান্নাকাটি দেখছিল, “দিল্লী বেশি দূরে নয়, দিনে পাঁচ ছয় খানা ফ্লাইট, মোটে দুই ঘন্টার রাস্তা। যেকোনো সময়ে চলে যাওয়া যায়। আমার অনেক জানাশোনা আছে সি আর পার্কে, নয়ডাতে, মহাভির এঙ্কলেভে। দরকার পরলে ওখানে একটা ফ্লাট ভাড়া নেওয়া যাবে।”

সবাই মিলেই দিল্লী যায় রিশুকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করতে। ফিরে আসার দিনে বুকের একাংশ কেটে দূর দেশে রেখে আসে আম্বালিকা। ফেরার পথে কোলের মধ্যে আঁকড়ে ধরে থাকে দিয়াকে। ফ্লাইটে উঠে বারেবারে নীলাদ্রিকে জিজ্ঞেস করে, একা ছেলেটা ঠিক করে থাকবে ত? ছেলের একটু সর্দির ধাত, আবহাওয়া একটু বদল হলেই সর্দি লাগে। বাড়ি থাকলে না হয় এই গারগেল কর, এই ওষুধ খা, এই সব বলতে পারত, ওই দূর দেশে ওকে কে গরম জল করে দেবে গারগেলের জন্য, কে ওষুধ খেতে মনে করাবে? ঠিক বিয়ের পর আর দিয়া হওয়ার আগে ওরা দারজিলিং বেড়াতে গিয়েছিল, সেখানে গিয়ে সারাক্ষন নাক থেকে জল পরছিল রিশুর, সেই নিয়ে খুব চিন্তায় ছিল আম্বালিকা। পড়াশুনা করার জন্য রাত জাগে ছেলেটা, রাতে খিধে পেলে কে খেতে দেবে? বাড়িতে না হয় ওর জন্য স্যান্ডউইচ বানিয়ে রেখে দিত, ফ্রিজে কেক, ম্যাগি, ডিম সেদ্ধ ইত্যাদি বানিয়ে রেখে দিত, হস্টেলে যদি খিধে পায় তাহলে কি করবে?

সেই বছর আম্বালিকার কোল ভরে দ্বৈপায়নের জন্ম হয়, আদর করে নাম রাখা হয় দীপ। প্রত্যকে মাসে রিশুর বাড়ি আসা চাই, শুক্রবার ক্লাস শেষ করেই রাতের ফ্লাইটে বাড়ি ফেরে আর সোমবারের ভোরের ফ্লাইট ধরে ফিরে যায় দিল্লী। পড়াশুনায় বেশ ভালো, অচিরে এম বি বি এস পাশ করার এক বছর পরেই এইএমএস এই এম এস এর পরীক্ষায় পাশ করে। রিশু অরথপেডিক সারজেন হয়, দিয়া বুক ফুলিয়ে সবাইকে বলে বেড়ায় ওর দাদাভাই দিল্লীর নামকরা মেডিকেল কলেজের অরথপেডিক সারজেন। তবে রিশুর একটাই দুঃখ সেই সাথে আম্বালিকার একটাই দুঃখ, কোলকাতায় আর ফিরতে পারল না রিশু। এই এম এস এই রেসিডেন্ট ডাক্তারি পায় রিশু। দিল্লীতে অনেক জানাশোনা ছিল নীলাদ্রির তাই সি আর পার্কে একটা দুই কামরার ফ্লাট ভাড়া পেতে কোন অসুবিধে হয়নি। রেসিডেন্ট ডাক্তার হওয়ার পর বাড়ি আসা কমে যায় রিশুর, খুব কম ছুটি পায় আজকাল। তবে ছুটি পেলেই আম্বালিকা ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে যায় দিল্লী।

দিয়া বড় হয়েছে, অতীব আধুনিকা মেয়ে তবে পড়াশুনায় ভালো। ক্লাস ইলেভেনে সায়েন্স নিয়ে পড়ছে, আম্বালিকার ইচ্ছে ওর মেয়েও ডাক্তারি পড়বে তবে রিশুর ইচ্ছে দিয়া যা পড়তে চায় যা করতে চায় সেটাই করবে। ভাই বোন মাকে যমের মতন ভয় পেলেও ওরা জানে দাদাভাই ওদের ঢাল, তাই সব আদর আবদার রিশুর কাছেই। রিশুও যা মাইনে পায় তার বেশির ভাগ দিয়ার আবদার মেটাতেই খরচ হয়ে যায়, তার জন্যে যদিও খুব বকা খায় মায়ের কাছে তাও মাকে লুকিয়ে দিয়ার আর দীপের সব আবদার মেটায় রিশু। দিয়ার কখন নতুন মোবাইল চাই, কখন ট্যাব চাই, কখন নতুন জিন্স অথবা থাই হাই জুতো। নতুন কোন খেলনা দেখলেই দীপ রিশুর কাছে আদবার করে আর সেটা চলে আসে। দিপের যখন জন্ম হয় তখন রিশু চলে যায় দিল্লীতে পড়াশুনা করতে তাই দিপের প্রতি রিশুর আদর সব থেকে বেশি আর মায়ের কথায় সেই আদরে দিপ বাঁদর হয়ে গেছে। রিশু বাড়িতে এলেই কেউ দিয়া আর দীপকে বকতে পারে না, কারুর সাধ্য নেই ভাই বোন কে আলাদা করার। ঘুমানোর সময়েও দীপ ওর পেটের ওপরে ঘুমাত আর দিয়া ওর হাতের ওপরে।

দিনের মধ্যে বহুবার বাড়িতে ফোন করে রিশু। ট্রমা সেন্টারে ডিউটি ছিল রিশুর, সকাল থেকে একটার পর একটা এক্সিডেন্টের কেস দেখতে দেখতে হয়রান হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরেই মায়ের সাথে কথা হয়েছিল, সারাদিনের বিবরণ কি কি অপারেশান করেছে, কি খেয়েছে, সব কিছু না জানালে ছেলের পেটের ভাত হজম হয় না আর ওদিকে মায়ের ঘুম হয়না। শীত কাল, দিল্লীতে অনেক ঠান্ডা পড়ে। রাত প্রায় সাড়ে ন’টা, পরের দিন ভোর বেলায় ট্রমা সেন্টারে ডিউটি, খাওয়া শেষে বসে বসে একটু টিভি দেখছিল ডক্টর অম্বরীশ সান্যাল।

ঠিক তখন ফোন বেজে ওঠে, অন্যপাশে দীপের কান্না ভেজা আর্ত চিৎকার শুনে বুকের রক্ত হীম হয়ে যায় ওর। “দাদাভাই আমার হাত ভেঙ্গে গেছে তাড়াতাড়ি এস।”

===================== প্রথম পর্বের সমাপ্তি =====================

❤️ "শেষের পাতায় শুরু" ❤️
 
পর্ব দুই – (#1-6)

শীতকাল, ঠান্ডার আমেজ আকাশে বাতাসে। পরিষ্কার আকাশ আর কোলকাতা মাথায় দেখা যায় না, তাও নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘের ভেলা। সামনের পার্কের বেশির ভাগ গাছাপালা ন্যাড়া হয়ে গেছে। পাখী গুলো যেন বড্ড বেশি কিচির মিচির করছে। মিষ্টি রদ্দুরে মাঝে মাঝে মনে হয় গা ভাসিয়ে কোথাও হারিয়ে যেতে। বাড়িতে সাজ সাজ রব, কয়েক দিন পরেই সঙ্ঘমিত্রার বিয়ে। তেইশ বসন্ত পার করে নিজের ঘরের বিছানায় গা ভাসিয়ে মোবাইলে গল্পে মশগুল সেই তন্বী তরুণী। আষাড়ের প্রথম বারিধারায় স্নাত যেন এক অধরা গোলাপ। পাতলা গোলাপি ঠোঁট জোড়া ভীষণ কথা বলে, গাল দুটো পিচ ফলের মতন নরম, দুধে আলতা গায়ের রঙ, চওড়া কাঁধ ছাড়িয়ে ঘন চুলের ঢল নেমে এসেছে পিঠের মাঝ পর্যন্ত। অতীব আধুনিকা মেয়ে, কয়েকদিন পরেই বিয়ে তাই চুলে গাড় বাদামি রঙ করিয়েছে সেই সাথে সামনের কয়েক গোছা চুল একটু গাড় লাল রঙের, আজকালের ভাষায় যাকে বলে হাইলাটিং করান। ওর নধর দেহ পেছন থেকে দেখলে মনে হয় যেন এক বালির ঘড়ি। ভীষণ ভাবেই উচ্ছল ওর কাজল টানা চোখ জোড়া। ওর চোখের চাহনিতে কলেজের অনেক ছেলেই পাগল ছিল। সুন্দরী বলে কলেজে বেশ নাম ছিল, অনেক ছেলেই ওর পেছনে পড়েছিল কিন্তু কারুর সাথে বেশি মেলামেশা করেনি কোনদিন। পরনে ঢিলে একটা গেঞ্জি আর আঁটো জিন্সের হাফ প্যান্ট, প্যান্টটা সঙ্ঘমিত্রার সুগোল পাছার ওপরে দ্বিতীয় ত্বকের মতন লেপে গিয়ে আকার অবয়াব অতি সুন্দর ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছে। গোল গলার ঢিলে টি শারটটা বাঁ কাধের নিচে নেমে গেছে, উন্মুক্ত বাম কাঁধের ওপরে লাল ব্রার স্ট্রাপ বেড়িয়ে পরেছে। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকার ফলে দেখলে মনে হবে যেন ধবধবে সাদা বিছানায় যেন এক জল পরী শুয়ে। কোলকাতার এক প্রাইভেট কলেজ থেকে এই বছরেই এম-বি-এ পাশ করেছে। বিয়ে করছে নিজের পছন্দের ছেলে পার্থকে, এক বছরের প্রেম, তাও যেন মনে হয় কত যুগ ধরে ওদের চেনা জানা। ওদের বিয়ে নিয়ে বাড়িতে খুব ঝামেলা হয়েছিল, বিশেষ করে বাবা ওদের বিয়েতে রাজি ছিলেন না, কারণ পার্থ ব্যাবসায়ি পরিবারের ছেলে। ভীষণ জেদি মেয়ে, অনেক ঝগড়া ঝাটির পরে বাবা মা ওদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।

“কি করছ?” ফোনের অন্য পাশ থেকে জিজ্ঞেস করে পার্থ।

ফোন ঠোঁটের কাছে চেপে ছুড়ে দেয় এক মিষ্টি মধুর চুম্বন, “মুয়া আ আ আ... এই ত তোমাকে চুমু খাচ্ছি।”

অন্যপাশ থেকে ভেসে আসে এক চুম্বনের শব্দ, “কাল চলে এসো, পরেশের ফ্লাটে একটা পারটি করছি।”

কপট রাগ দেখায় সঙ্ঘমিত্রা, “ধ্যাত কি যে বল না তুমি, মা আমাকে ছাড়বে না একদম। কি বলে আসব? আর ত কয়েকটা দিন ডারলিং ব্যাস তারপর শুধু আমি আর তুমি।”

কাতর মিনতি করে পার্থ, “প্লিজ, তুমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবে জানি।” গলা নামিয়ে বলে, “কতদিন তোমাকে চটকে আদর করিনি বলত?”

কথাটা শুনেই শরীরের প্রতিটি রোমকূপ সজাগ হয়ে ওঠে ওর, প্রথম যেদিন ওর টপের মধ্যে হাত গলিয়ে উষ্ণ কোমল স্তন জোড়া হাতের মধ্যে নিয়ে আলতো চটকে দিয়েছিল, সেদিন পাগল হয়ে গিয়েছিল সঙ্ঘমিত্রা। তারপরে যেদিন টপ খুলে ব্রার ওপর দিয়েই চুমু খেয়েছিল ওর সুগোল স্তনের ওপরে সেদিন পার্থর মাথা চেপে ধরেছিল নিজের উষ্ণ কোমল স্তনের সাথে, কামোত্তেজনায় সারা অঙ্গ ছটফটিয়ে উঠেছিল।

বিছানায় ওলট পালট খেয়ে খিলখিল করে হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আমি আসব।”

পার্থ অন্য পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে, “কালো প্যান্টিটা পরে এস কিন্তু, বড্ড সেক্সি দেখায়।”

কথাটা কানে যেতেই কামোত্তেজনায় কেঁপে ওঠে সঙ্ঘমিত্রা, সম্পূর্ণ সঙ্গমে মেতে ওঠেনি পার্থর সাথে তবে, সেদিন কালো প্যান্টির ওপর দিয়েই ওর কোমল ফোলা যোনির ওপরে আঙ্গুল দিয়ে ডলে পিশে একাকার করে দিয়েছিল। সারা শরীর ভীষণ সুখের উত্তেজনায় বারেবারে শিহরিত হয়ে ওঠে। কামাতুরা তন্বী তরুণী সুগোল মসৃণ দুই ঊরুর মাঝে বালিশ চেপে, মিহি কন্ঠে অনুরাগ প্রকাশ করে বলে, “ধ্যাত শয়তান, যাবো না যাও।”

কাতর মিনতি করে পার্থ, “প্লিজ সোনা এমন করে না, প্লিজ, বলছিত কয়েকজন বন্ধু মিলে পারটি করব, সত্যি বলছি অমন কিছুই করব না তোমার সাথে।”

কথা বলতে বলতে নিজের হাত চলে যায় বুকের ওপরে, টপের ওপর থেকেই নিজের উষ্ণ সুগোল স্তন চেপে ধরে। প্রেমিকের সাথে কথা বলতে বলতে স্তনের বোঁটা জোড়া নুড়ি পাথরের মতন শক্ত হয়ে উঠেছে। নিজের তালুর চাপেই হাঁসফাঁস করে ওঠে আঁটো ব্রার মধ্যে বন্দি স্তন জোড়া। গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার দাঁড়িয়ে গেছে নাকি?”

অন্যপাশের থেকে হাসি ভেসে আসে, “হাতে ধরে বসে আছি গো। গতকাল রাতে তুমি যে সেলফিটা পাঠিয়েছ না মাইরি...”

সেটা শুনতেই কান লাল হয়ে যায়, পার্থ ভীষণ ভাবে নাছরবান্দা জুড়ে দিয়েছিল গতকাল রাতে, একটা সেলফি চাই। শেষ পর্যন্ত বাথরুমে ঢুকে শুধু মাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরে মোবাইলে একটা ছবি তুলে পাঠাতে হয়েছে ওকে। “ইসসস, যাও শয়তান, ওটা কিন্তু এখুনি ডিলিট করে দেবে।” সঙ্ঘমিত্রার পায়ের মাঝে কিঞ্চিত শিরশিরানি ধরে আসে। ঊরুর মাঝের বালিশটাকে দুমড়ে মুচড়ে একাকার করে দেয়।

পার্থ বলে, “উম্মম ডারলিং, তোমার পায়ের মাঝে ফোলা দেখলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়। আচ্ছা তুমি শেভ করেছ ত নাকি জঙ্গলে এডভেঞ্চার করতে যেতে হবে?”

কান লাল হয়ে যায় সঙ্ঘমিত্রার। সকালেই স্নান করার সময়ে সম্পূর্ণ যোনিকেশ কামিয়ে মসৃণ করে নিয়েছে। কামিয়ে ফেলার পরে কেমন যেন নিজের দেহের প্রতি আকর্ষণ বেরে যায় ওর, হ্যান্ড শাওয়ার দিয়ে ধুতে ধুতে দুই আঙ্গুল দিয়ে ডলে দেয় যোনির চেরা, শিক্ত হয়ে উঠেছিল ওর কোমল যোনি। সেই সব ভাবতেই ভীষণ ভাবে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, “শয়তানি রাখো ত। তুমি জঙ্গলে যাবে না ময়দানে যাবে সেটা এখন জেনে কি দরকার। নিজের দিকটা দেখো, সময় মতন যেন ঠিক করে দাঁড়াতে পারে সেটার চিন্তা কর।” বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।

এমন সময়ে দরজায় মায়ের গলা পেয়েই ধরমর করে উঠে বসে সঙ্ঘমিত্রা, “ঝিনুক একবার এদিকে আয়।”

জামা কাপড় ঠিক করে পার্থকে বিদায় জানিয়ে ঘর ছেড়ে বসার ঘরে ঢুকে মাকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে এত জোরে চেল্লাচ্ছ কেন?”

পীয়ালি বড়মেয়ের আপাদ মস্তক নিরীক্ষণ করে খানিকটা ধমক দিয়েই বলে, “বিয়ের বাড়ি, যেকোনো সময়ে কোন আত্মীয় সজ্জন এসে পড়বে। তোকে বারবার বলি সালোয়ার কামিজ পর কিন্তু তুই কিছুতেই শুনবি না।” এদিক ওদিক তাকিয়ে ছোট মেয়ে শকুন্তলার খোঁজ করে পীয়ালি, “এই ঝিলিক আবার কোথায় গেল, দেখেছিস?”

পীয়ালির, ছোট মেয়ে ঝিলিক পড়াশুনায় ভালো, ক্লাস ইলেভেনে সায়েন্স নিয়ে পড়ছে। সেও বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকা। ঠিক তখনি ঝিলিক মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আবদার করে, “মম, দিদির বিয়েতে আমার এক বান্ধবীকে ইনভাইট করতে চাই।”

পীয়ালি বলে, “করিস তাতে অসুবিধে কোথায়?”

ঝিলিক বলে, “মম, দিয়া আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মম, প্লিজ ওদের ফ্যামিলিকেও ইনভাইট কর।”

একটু ভেবে পীয়ালি বলে, “আচ্ছা বাবা তাই হবে। আজ বিকেলে তোর দিদির ব্রেসলেট যখন পাল্টাতে যাবো তখন না হয় ওদের বাড়ি যাবো।” ছোট মেয়ের পোশাকের ওপরে নজর বুলিয়ে আক্ষেপের সুরে বলে, “তোদের দুটোকে কে নিয়ে একদম পারি না। বলি কাজের বাড়ি তাও তোরা শুনবি না কিছুতেই।”

ঝিলিকের পরনে ওর দিদির মতন একটা ঢিলে টিশারট আর ছোট হাফ প্যান্ট। নিজের পোশাকের দিকে দেখে মাকে বলে, “যাঃ বাবা এতে খারাপ কোথায়? বাইরে ত যাচ্ছি না।”

কপালে কড়াঘাত করে পীয়ালি, “তোর বাবা আসুক তারপরে দেখিস।” বলে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। ইতিমধ্যে দুরের দুয়েক জন আত্মীয় বাড়িতে এসে গেছে।

বিকেলে দুই মেয়েকে নিয়ে বউবাজারে যায় পীয়ালি। ঝিনুকের কোন ব্রেসলেট পছন্দ হয় না, এটার ডিজাইন ভালো নয়, ওটা ভালো নয় ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। বেশ কয়েকটা দোকান ঘোরার পরে অবশেষে সুন্দরী কন্যের গয়না পছন্দ হয়। গয়না কেনার পরে ঝিলিকের আবদার মেনে ওর বান্ধবীর বাড়ির দিকে রওনা দেয় ওরা। ওদের গাড়ি ঢাকুরিয়া ঢুকতেই ভ্রু কুঁচকে এপাশ অপাশ দেখে পিয়ালী। বড় মেয়ে কানে হেডফোন গুঁজে কোন ইংরেজি গানে মশগুল, ছোট মেয়ে তার বান্ধবীর সাথে ফোনে তাদের বাড়ির পথ জেনে নিচ্ছে। সেই নির্দেশ মতন ড্রাইভার ঝিলিকের বান্ধবীর বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। বাড়ির দিকে তাকিয়ে, এক লহমায় হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় পীয়ালির। অনেক বছর আগে এই বাড়িতে ওর বেশ আনাগোনা ছিল, ওর প্রিয় বান্ধবী থাকত এই বাড়িতে। সেই প্রানের বান্ধবীর সাথে বহু বছর কোন যোগাযোগ নেই, কেন সেই বান্ধবী এই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেটা আজ পর্যন্ত ওর অজানা।

কাঁপা কন্ঠে ছোট মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “তোর বান্ধবীর নাম কি রে?”

ঝিলিক উত্তর দেয়, “দ্বিপানিতা, ডাক নাম দিয়া।”

গাড়ি থেকে নেমে পীয়ালি জিজ্ঞেস করে, “তোর বান্ধবীর মায়ের নাম কি জানিস?”

অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ঝিলিক, “না সেটা ত কোনদিন জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু ওর মায়ের নাম কেন জিজ্ঞেস করছ বলত?”

ওর চোখ জোড়া ক্ষণিকের জন্য ঝাপসা হয়ে আসে, মেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “না কিছু না, অনেক পুরানো দিনের কথা মনে পরে গেল এই বাড়িটা দেখে তাই।”

দিয়া ওদের জন্য বারান্দায় অপেক্ষা করছিল, গাড়ি থেকে ঝিলিক আর তার দিদি আর মাকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে নিচে নেমে এসে দরজা খুলে দেয়। দিয়া, পীয়ালির পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করতেই থমকে যায় পীয়ালি। দিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে। দিয়ার চোখ জোড়া ভীষণ উজ্জ্বল ঠিক নীলাদ্রির মতন দেখতে। হাতে হাত রেখে এক প্রকার টানতে টানতেই দিয়া আর ঝিলিক বাড়ির মধ্যে ঢুকে পায়। ঝিনুক তার মায়ের মনের ভাব বুঝতে পেরে একটু অবাক হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে তার কারণ। ওর অলক্ষ্যে চোখের কোনা মুছে হেসে সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায়। এক পা এক পা করে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে পীয়ালির হৃদ স্পন্দন বেড়ে ওঠে। বসার ঘরে ঢুকতেই থমকে যায় পীয়ালি। দেয়ালে ঝুলানো একটা ছবিটা দেখে আর চোখের জল সামলাতে পারে না, ছবিটায় আম্বালিকা ছোট রিশুকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। কোন রকমে চোখের জল সামলে রেখে সোফায় অধীর অপেক্ষায় বসে পরে। সঙ্ঘমিত্রা ঘাড় ঘুরিয়ে বসার ঘর দেখে একটু অবাক হয়ে যায়, শুধু মাত্র এই বসার ঘরেই ওদের ফ্লাটের অধিকাংশ এসে যাবে। মাকে বারংবার প্রশ্ন করে হটাত করেই মায়ের চোখে কেন জল এসেছে। দিয়া আর ঝিনুক ততক্ষণে ওদের ছেড়ে হারিয়ে গেছে বাড়ির মধ্যে। বড় মেয়ের প্রশ্নের উত্তরে বাক্যা হারা পীয়ালি, কোন উত্তর দেওয়ার মতন শক্তি নেই ওর শরীরে, চুপ করে সোফায় বসে চোখের কোল মুছতে মুছতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বসে থাকে ওর বান্ধবীর। কিছু পরে ঝিলিক আর দিয়ার পেছন পেছন আম্বালিকা বসার ঘরে প্রবেশ করে। পীয়ালির দিকে তাকাতেই আম্বালিকার পা জোড়া মাটিতে আটকে যায়, কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে ওর, সত্যি কি ওর সামনে ওর ছোট বেলার সেই বান্ধবী পীয়ালি বসে।

সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যায় পীয়ালি, “তুই কেমন...” কথাটা শেষ করতে পারল না পীয়ালি।

আম্বালিকা ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “তুই সত্যি...”

তিনটে মেয়ে নিজেদের মায়ের দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে যায়। দুই মহিলা যে নিজেদের পুরানো বান্ধবীকে খুঁজে পেয়েছে সেটা ওদের বুঝতে বেশি দেরি হয় না। এক অদ্ভুত খুশির আমেজে ঘর ভরে যায়। দিয়া আর ঝিনুকের খুশির সীমানা থাকে না, ওরা দুজনে যেমন প্রানের বান্ধবী ঠিক তেমন ওদের মায়েরাও প্রানের বান্ধবী। দুই বান্ধবী নিজেদের পুরানো গল্প স্মৃতি চারনে মশগুল হয়ে যায়।

পীয়ালি বলে, যে আম্বালিকা চলে যাওয়ার পরে নীলাদ্রি বেশ কয়েকবার ওদের বাড়িতে এসেছিল ওর খোঁজ নেওয়ার জন্য, কিন্তু সেই খবর ওর কাছে ছিল না। বেশ কয়েক বছর পরে পীয়ালির বিয়ে হয়ে যায় সোমনাথের সাথে। সোমনাথ তখন রানীগঞ্জে এক কোলিয়ারি তে চাকরি করত, বিয়ের পর পীয়ালি ও কোলকাতা ছেড়ে চলে যায়। বছর দশেক আগে সোমনাথের ট্রান্সফার হয় কোলকাতা হেডঅফিসে, সল্টলেকে একটা ফ্লাট কিনেছে সেখানেই থাকে। ঝিনুক ওদের বড় মেয়ে, কয়েক দিন পরেই ঝিনুকের বিয়ে। সেই সুবাদে ছোট মেয়ে ওদের নেমন্তন্ন করতে এসেছিল।

আম্বালিকা ঝিনুকের মাথায় গালে হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে, “ভালো থাকিস মা, আশীর্বাদ করি তুই যেন সুখী হস।”

পীয়ালি জিজ্ঞেস করে, “তোর ভাই এখন কি করছে?”

আম্বালিকা স্মিত হেসে বলে, “রিশুর কথা বলছিস? সে অনেক কথা।” গলা নামিয়ে কানে কানে বলে, “ও আর আমার সেই ছোট ভাই নেই, এখন ও আমার বড় পুত্র।”

আম্বালিকার কথা শুনে কিঞ্চিত আশ্চর্য হয়ে যায় পীয়ালি, কি করে এক দিদি “মাম্মা” তে পরিনত হয়েছে সেই কাহিনী বলতে শুরু করে পীয়ালিকে। দিল্লীর সব থেকে বড় মেডিকেল কলেজের অরথপেডিক সারজেন শুনে আরো বেশি অবাক হয়ে যায়। ওদের গল্প যেন আর শেষ হতে চায় না, অনেক বছর পরে দুইজনের দেখা। ইতিমধ্যে নীলাদ্রিও অফিস থেকে চলে আসার পরে ওদের গল্প গুজব আরো জমে ওঠে। দিয়া আর ঝিলিক নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যাস্ত হয়ে পরে। ঝিনুক ফোনে পার্থর সাথে গল্প করতে করতে ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখে। ঝিলিক আবদার করে, যেহেতু ওর মা আর আম্বালিকা আন্টি দুই বান্ধবী সেহেতু বিয়ের কয়েকটা দিন দিয়া ওর সাথেই থাকবে। পীয়ালিও খানিক আবদার করে, এতদিন পরে খুঁজে পাওয়া বান্ধবী সুতরাং জোর একটু বেশি খাটবে। সম্মতি পেতেই দুই বান্ধবীর খুশির সীমানা থাকে না। পীয়ালি ফিরে যাওয়ার আগে আম্বালিকা জানায় যে পরের দিন বিকেলে সবাইকে নিয়ে ওদের বাড়িতে বেড়াতে যাবে।

❤️ "শেষের পাতায় শুরু" ❤️
 
পর্ব দুই – (#2-7)

দুপুরের পর থেকেই ঝিনুকের মনে উড়ু উড়ু ভাব, মনের মধ্যে সংশয় কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে, এই সময়ে বাড়ি থেকে বেড়াতে বের হওয়ার জন্য অনুমতি পাবে কি না। পার্থ সকাল থেকে দুই তিন বার ফোন করেছে। ঝিনুক জানিয়ে দিয়েছে যে কোন ভাবে মাকে মানিয়ে নিয়ে বিকেলের দিকে বেড়িয়ে যাবে। সময় যত কাছে আসে, তত বুকের মধ্যে দুরুদুরু ভাব বেড়ে ওঠে ঝিনুকের। শীতকাল দিন ছোট তাই দুপুরের খাওয়ার পরেই সাজতে শুরু করে দেয়। সেজে গুজে তৈরি হয়ে বুক ভরে শ্বাস নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে মাকে জানায় যে একজন বন্ধুর বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে যাবে। পীয়ালি জানিয়ে দেয় বড় মেয়েকে যে কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ে এই সময়ে বাড়ি থেকে মেয়েদের বের হওয়া মানা। মায়ের কথা মানতে নারাজ ঝিনুক, খানিক আবদার করেই মিনতি করে শুধু মাত্র কয়েক ঘন্টা, টাক্সি করে যাবে দেখা করবে একটু গল্প করবে তারপর ফিরে আসবে। পীয়ালি স্বামী সোমনাথের দিকে তাকায়, ঝিনুকের বাবা রেগে যান মেয়ের এহেন অহেতুক জেদের কথা শুনে। স্ত্রীর দিকে রোষ কষিত দৃষ্টি হেনে বলে, বড় মেয়ের এই অবনতির জন্য পীয়ালি দায়ি, আদর দিয়ে মাথায় করে রাখার ফল, এই সময়ে কোন মেয়ে কি বাড়ি থেকে বের হয়। মুখ গোমড়া হয়ে যায় ঝিনুকের, ওদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে মোবাইলে বারবার পার্থের ফোন। ঝিনুক রেগেমেগে পা দাপিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে যায়, শেষ পর্যন্ত কোন কান্ড না করে বসে ভেবেই পীয়ালি মেয়েকে সম্মতি দেয়।

টাক্সিতে বসেই পার্থকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওর আসার কথা। টাক্সি চলা মাত্র ওর মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, কাজটা কি ঠিক হল, মায়ের ওপরে বাবার ওপরে এমন ভাবে জেদ করে চলে আসাটা? নিজের পোশাকের দিকে একবার দেখে, পরনে একটা চাপা হাতকাটা গোলাপি রঙের টপ, উদ্ধত দুই স্তনের আকার অবয়াব অতি সহজেই পরিস্ফুটিত, নিচে একটা ফ্রিল হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হাল্কা নীল রঙের ঢিলে স্কারট, শীতকাল বলে টপের ওপরে একটা নীল রঙের জিন্সের জ্যাকেট, পায়ে থাই হাই জুতো। পার্থের পছন্দ মতন, কালো রঙের লেস ব্রা আর প্যান্টি পড়েছিল। চাপা আঁটো কালো ব্রার মধ্যে থেকে দুই সুগোল স্তন ঠিকরে সামনের দিকে উঁচিয়ে। আনমনা হয়ে ফোন নিয়ে হাতের মধ্যে নড়াচড়া করতে করতে ভাবে কয়েকদিন পরেই বিয়ে করে বাড়ি থেকে চলেই যাবে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ওর পা আর মাটিতে নেই, ছোট বোনের সাথে আর সেই রকম কথাই বলা হয় না, বেশির ভাগ সময়ে পার্থের সাথে ফোনে কাটায় না হলে বান্ধবীদের সাথে বিয়ের কেনাকাটা নিয়েই মেতে থাকে। ওর মাথায় যেন শুধু পার্থ আর বিয়ের পরের সুন্দর এক সাজান বাগানের স্বপ্নে ভরপুর। পার্থর সাথে মাত্র এক বছরের দেখা, কিন্তু ওর বোন ত ছোট বেলা থেকে ওর পাশে ছিল। একবারের জন্য মনে হল ঝিলিক কে একটা ফোন করে, মাকে অন্তত ফোন করে ক্ষমা চায়, প্লিজ রাগ কর না তাড়াতাড়ি চলে আসব। কিন্তু কোথায় যেন বাধে, দুরন্তপনা যেন ওর ধমনীতে, কারুর সামনে সহজে ঝুঁকতে নারাজ।

পার্থ সাথে পরিচয় হয়েছিল ওর এক বান্ধবীর জন্মদিনের পারটিতে। পার্থের বাড়ি গড়িয়ার দিকে, ওর বাবার কাপড়ের ব্যাবসা এবং সেই সাথে এই প্রোমটারি ব্যাবসায় কিছু টাকা খাটিয়েছে। প্রথমের দিকে বিশেষ পাত্তা দেয়নি পার্থকে, তবে পার্থ যখনি সময় পেত ওর কলেজের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। শুরুর দিকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করত, শুরুতে পার্থ বিশেষ আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি তবে ওকে পেছন পেছন অনেক ঘুরেছে। শেষে একদিন কথা বলে, কথা বলে বোঝে যে ছেলেটা বেশ মিশুকে, তারপরে আর অন্যদিকে তাকায়নি। কয়েক মাস আগে এমবিএ শেষ করার পরে বাড়িতে জানায় পার্থের কথা, ব্যাবসাদার পরিবার শুনে বাবা এক কথায় মানা করে দিয়েছিল। অনেক ঝগড়া ঝাটি, একবার ঝিনুক ছুরি নিয়ে নিজের হাত কাটতে গেছিল। সেই দেখে শেষ পর্যন্ত ওর মা ওর বাবাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করায়। পার্থ অত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায়নি, একপ্রকার ঝিনুকের জেদের বশে ওদের বিয়ের ঠিক হয়। ঝিনুক বলে ও খোলা আকাশে উড়তে চায়, ওই বাড়িতে থাকলে ওর এই উন্মুক্ত জীবনের স্বপ্ন কোনদিন পূরন হবে না। পার্থের এক বন্ধু, পরেশের ফ্লাটে ওদের এই পার্টির আয়োজন। পরেশের ফ্লাটে কয়েকবার পার্থর সাথে পারটি করতে এসেছে ঝিনুক। পরেশ সল্টলেকে একটা আই টি কোম্পানিতে চাকরি করে, সেই ফ্লাটে ওর গার্লফ্রেন্ড, রিনাকে নিয়ে লিভ-ইন থাকে। পার্থ ওকে একবার বলেছিল বাড়ি ছেড়ে ওর সাথে লিভ-ইন করতে, তাতে ওর মনে বাধে তাই বলেছিল যে একদম বিয়েই করতে হবে। আধা ঘন্টার মধ্যেই সেই ফ্লাটে পৌঁছে যায় ঝিনুক।

কলিং বেল বাজাতেই দরজা খোলে পার্থ। পার্থকে দেখেই গলা জড়িয়ে কোলের ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে ঝিনুক, “মুয়াআআ মাই ডারলিং...”

পার্থ ওর কোমর জড়িয়ে মাঠি থেকে তুলে নিয়ে ঠোঁটে ওপর শিক্ত চুম্বন এঁকে দেয়, “মাই সুইট ড্যামজেল।” পার্থ একের পর এক চুম্বনে অস্থির করে তোলে ঝিনুক কে।

রিনা শেষ পর্যন্ত বলে ফেলে, “ওর পারি না রে, পাশের ঘর খালি আছে চলে যা।”

রিনার কথায় সম্বিত ফেরে ঝিনুকের, পার্থের গলা ছেড়ে হেসে বলে, “ব্যাস চারদিন তারপরে রুম থেকে বের হব না।”

হেসে ফেলে পার্থ, ওর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে, “কালো প্যান্টি টা পড়েছ নাকি সেটাও খুলে রেখে এসেছ?”

কথাটা কানে যেতেই কান লাল হয়ে যায় ঝিনুকের, পার্থকে খান কয়েক চাটি মেরে বলে, “দরজায় তালা মারা, যা করার সব কয়েকদিন পরেই হবে।”

হেসে ফেলে পার্থ, “দরজায় তালা মারা হলেও, দরজার বাইরে নক করতে ত ক্ষতি নেই।”

লাজুক হাসে ঝিনুক, “আমার হাতে কিন্তু অত সময় নেই যে নক করা হবে।”

পার্থ সোফায় বসে ঝিনুকের হাত ধরে টেনে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে বলে, “ঠিক আছে, নক করার সময়ে দেখা যাবে।”

সবাই ঝিনুকের অপেক্ষায় ছিল, পার্থের অনুমিত পেয়ে পরেশ ড্রিঙ্কস বানাতে শুরু করে দেয়।

সবাই গ্লাস উঠিয়ে ঝিনুক আর পার্থ কে বলে, “চিয়ারস ফর ইউর লাভ লাইফ।”

পার্থের কোলের ওপরে বসেই মদের গ্লাসে চুমুক দেয় ঝিনুক। গল্প গুজব হাসি ঠাট্টাতে মুখরিত হয়ে ওঠে ছোট ঘরটা। বেশি মদ খাওয়ার অভ্যেস নেই ঝিনুকের, একটা গ্লাস নিয়েই ছোট ছোট চুমক দেয় আর পার্থের কোলে বসে আদর খায়। পার্থ কখন যেন ওর টপ সরিয়ে নরম পেটের ওপরে হাত নিয়ে গেছে সেটা টের পায় যখন পার্থের হাত ঠিক ওর স্তনের নিচে পৌঁছে যায়। চাপা ব্রার মধ্যে উদ্ধত স্তন জোড়া হাঁসফাঁস করে ওঠে আসন্ন কামোত্তেজনায়। চোখ জোড়া আপনা থেকে ঢুলুঢুলু হয়ে যায় ঝিনুকের। পাতলা স্কার্ট ফুঁড়ে কোমল নিতম্বের খাঁজের মাঝে পার্থের তপ্ত কঠিন লিঙ্গের পরশ অনুভব করে। ঝিনুকের পাতলা কোমর জড়িয়ে চেপে ধরে কোলের ওপরে বসিয়ে রেখেছে পার্থ। অনবরত পার্থের কঠিন লিঙ্গ ওর নধর পাছার খাঁজে দুষ্টুমি করে চলেছে। কামনার শিহরন ওর সারা অঙ্গে বিদ্যুতের ঝলকানির মতন খেলে বেড়ায়। দুই চোখের তারায় মাতন লাগে ঝিনুকের, ইসস সত্যি ছেলেটা ওর স্কার্ট ছিঁড়ে দেবে মনে হচ্ছে।

ঝিনুক পার্থের হাত স্তনের নিচে চেপে ধরে বলে, “প্লিজ অন্তত ওদের সামনে নয়...”

হেসে ফেলে পার্থ, “ধ্যাত আমি কিছু করেছি নাকি?” ওর হাত ধরে সোফা থেকে উঠে বলে, “চল একটু ডান্স করি।”

এপর ওদের নতুন জীবন, সেই জীবন নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। মিউজিক সিস্টেমে খুব জোরে হিন্দি সিনেমার গান বেজে চলেছে। নাচতে নাচতে সারা অঙ্গে পার্থের তপ্ত স্পর্শ অনুভব করে ঝিনুক। অন্যদিকে রিনাকে নিয়ে মেতে উঠেছে পরেশ, সেদিকে ওদের বিশেষ খেয়াল থাকে না। ঝিনুকের মদের গ্লাস শেষ, চোখে রঙ লেগে গেছে, সেই সাথে নাচতে নাচতে মাথায় এক ঝিমুনি ভাব দেখা দেয়। পরেশ আর রিনা একটা সিগারেটের মতন কিছু একটা জ্বালিয়ে টানছে, সেই ধোঁয়ার বিকট গন্ধে ঝিনুকের মাথায় ঝিমুনি ভাব দেখা দেয়। পার্থের হাত ওর পিঠ ছাড়িয়ে নেমে যায় স্কারট ঢাকা সুগোল নিতম্বের ওপরে। ধিমে নাচের তালে তালে পাতলা স্কারটের ওপর দিয়েই ঝিনুকের দুই সুগোল কোমল নিতম্ব দুই থাবার মধ্যে পিষে ধরে, নিজের জানুসন্ধি ওর দুই কলা গাছের মতন সুগোল উরুর মাঝে চেপে ধরেছে। এক অদ্ভুত নেশায় পেয়ে বসে ঝিনুককে। পার্থের মাথার চুল খামচে ধরে, ওর পুরু ঠোঁটের ওপরে চেপে ধরে নিজের গোলাপি পাতলা নরম ঠোঁট জোড়া। পার্থের বুকের সাথে ওর কোমল স্তন জোড়া পিষে ধরে। কিঞ্চিত উত্তেজনায় স্তনের বোঁটা জোড়া ফুলে উঠেছে। দুই কলা গাছের মতন মোটা থাই মেলে দিয়ে পার্থের জানুসন্ধির সাথে নিজের জানুসন্ধি মিশিয়ে দেয়। পার্থের এক হাত ওর পাছার খাঁজে চলে গেছে, অন্য হাত ওর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে চাপাচাপি করতে শুরু করে দিয়েছে। পার্থ ধিমে লয়ে নিজের লিঙ্গ ঝিনুকের মেলে দেওয়া দুই উরুর মাঝে চেপে নাড়িয়ে ওকে কামোত্তেজিত করে তলে। পার্থ ঝিনুকের জিব নিয়ে খেলতে খেলতে দেয়ালের সাথে পিষে ধরে তন্বী তরুণীর নধর দেহ। অজানা শিহরনে আন্দোলিত হয় ঝিনুকের সারা দেহ। পার্থের দুষ্টুমি ভরা আঙ্গুল ওর স্কারটের নিচে নগ্ন নিতম্বের ওপরে অনুভব করতেই সারা দেহে আলোড়ন খেলে যায়।

কাম কাতর মিহি কন্ঠে পার্থ কে বলে, “এই প্লিজ এইভাবে আমাকে মাতাল কর না, আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে।”

স্কারটের ভেত্র থেকে হাত বের করে পার্থ ওর হাত দুটো ওর মাথার ওপর চেপে ধরে, শরীরের সব ভার দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে ঝিনুকের কোমল দেহকান্ড। ওর মুখবয়াবে পার্থের কামঘন উষ্ণ শ্বাস বয়ে যায়। হিসহিস করে বলে, “কি হয়েছে ঝিনুক, কয়েকদিন পরে যা হওয়ার সেটা কয়েকদিন আগে হয়ে গেলে ক্ষতি কি।”

মাথা ঝিম ঝিম করছে ঝিনুকের, “প্লিজ এমন করে না সোনা।”

পার্থ ওর গালের ওপরে নাক ঘষে বলে, “তোমার গায়ের গন্ধ আজকে আমাকে মাতাল করে দিয়েছে ডারলিং।”

ঝিনুক ছটফট করে ওঠে, পার্থের এই রূপ আগে কোনদিন দেখেনি। কাতর কন্ঠে মিনতি করে, “হাতে লাগছে পার্থ, কি করছ?”

পার্থ ঝিনুক কে ছেড়ে দিয়ে হেসে বলে, “ওকে ডারলিং, এখন এই টুকু, তবে যাওয়ার আগে কিন্তু দরজায় নক করব।”

লজ্জায় লাল হয়ে যায় ঝিনুক, পার্থের পেটের ওপর আদর করে চিমটি কেটে বলে, “আর কত নক করবে, এতক্ষন যা করে গেলে তারপরেও চাই নাকি?”

মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে পার্থ, “ওটা ত ট্রেলার ডারলিং, নকিং এখন বাকি আছে...”

মদের বোতল খুলে বেশ কয়েক ঢোক মদ গলায় ঢেলে নেয় পার্থ। সেই দেখে সবাই হা হা করে ওঠে। ঝিনুক একটু রেগেই ওকে বলে, “করছ কি তুমি?”

মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দেয়, “আই এম অল রাইট ডারলিং, আমি একদম ঠিক...”

❤️ "শেষের পাতায় শুরু" ❤️
 
পর্ব দুই – (#3-8)

আগের মতন আবার চারজনে মিলে গল্প গুজব শুরু করে দেয়। পরেশ সিগারেটের মতন কিছু একটা টানছিল সেটা পার্থের দিকে এগিয়ে দেয়, পার্থ সেই সিগারেটে একটা টান মেরে মাথা ঝাঁকিয়ে ঝিনুকের দিকে এগিয়ে দেয়। ঝিনুক বন্ধুদের সাথে মিশে কয়েকবার মজা করে সিগারেট খেয়েছে তবে গাঁজা কোনদিন নেয়নি, তাই মাথা নাড়িয়ে পার্থের কাছ থেকে সেই সিগারেট নেয় না। কিছু পরে পার্থ ঝিনুককে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। বাকিরা ওদের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করতেই কিঞ্চিত লজ্জায় ওর কান গাল লাল হয়ে যায়। ঝিনুক আর পার্থ দুইজনেই এক এক গ্লাস মদ নিয়ে পাশের রুমে ঢুকে যায়।

ঘরে ঢুকেই পার্থ হাতের গ্লাসের পুরো মদটা গলায় ঢেলে বলে, “একটা ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।”

ঝিনুক মদের গ্লাসে ছোট এক চুমুক দিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি কথা?”

পার্থ গলার বলে, “আমার এখুনি পনেরো লাখ টাকার দরকার।”

ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে ঝিনুক, “হটাত এত টাকার দরকার কিসের?”

পার্থের চোখ জোড়া ততক্ষণে জবা ফুলের মতন লাল হয়ে গেছে, অনেক গ্লাস মদের ফল সেটা বুঝতে ঝিনুকের অসুবিধে হয় না। পার্থ ওর দিকে দুই পা এগিয়ে এসে বলে, “ঝিনুক আমি এক জায়গায় ভীষণ ভাবে ফেঁসে গেছি। আগামি কাল পাওনাদার আসবে, কাল দুপুরের মধ্যে যদি পনেরো লাখ টাকা যোগার না করতে পারি তাহলে ওরা খুব মারবে আমাকে। প্লিজ ঝিনুক, আমি জানি তোমার একাউন্টে তোমার বাবা বারো লাখ টাকার মতন দিয়েছে।”

কথাটা শুনে থমকে যায় ঝিনুক, ভালবাসার বশতে বেশ কয়েকদিন আগে ওর একাউন্টের খবর পার্থকে জানিয়েছিল। “তুমি কিসে কি করেছ আর আমি সেই টাকা তোমাকে কেন দেব?”

মত্ত অবস্থায় পার্থ ওকে বলে, “ঝিনুক কয়েকদিন পরেই আমাদের বিয়ে, এর মাঝে আবার তুমি আর আমি কেন?”

ঝিনুকের পার্থের পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে, “না ওই টাকা আমি তোমাকে দেব না।”

হিসহিস করে ওঠে পার্থ, চোয়াল শক্ত অথচ কন্ঠের স্বর নরম করে বলে, “প্লিজ দাও না হলে ওরা আমাকে আগামি কাল মেরে ফেলবে।” ঝিনুকের হাত শক্ত মুঠোর মধ্যে ধরে বলে, “দাও ঝিনুক প্লিজ, না হলে আমাকে অন্য পথ নিতে হবে।” শেষের বাক্যের মধ্যে এক কঠিন ভাব।

ঝিনুকের রক্ত গরম হয়ে যায় পার্থের এই কথা শুনে, শক্ত মুঠো থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে জিজ্ঞেস করে, “আমি না দিলে কি করবে?”

পার্থ অশ্লীল ভাবে ওর নরম গালের ওপর জিব দিয়ে চেটে বলে, “আছে আমার কাছে অন্য পথ ঝিনুক।”

ছটফট করে ওঠে ঝিনুক, এতদিন ধরে যাকে ভালোবেসে এসেছে, সে শুধু মাত্র ওর টাকার জন্য ওর সাথে প্রেমের নাটক করে গেছে, সেটা ভাবতেই ওর দুই চোখে আগ্নি অশ্রু তে চিকচিক করে ওঠে। রাগে দুঃখে চাপা গর্জে উত্তর দেয়, “না ঐ টাকা তুমি পাবে না।”

ইতরের মতন হেসে ফেলে পার্থ, “টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তুমি যেতে পারছ না।”

ওই হাসি দেখে গা জ্বলে ওঠে ঝিনুকের, চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে, “তুমি আমার সাথে এমন করতে পারলে?”

পার্থ হাসে, “টাকা ঝিনুক টাকা, তুমি সুন্দরী তায় আবার বড়লোকের মেয়ে তাই’ত এত প্রেম তোমার সাথে। সত্যি বলছি আমি এখুনি টাকা চাইতাম না, একবার বিয়ে হয়ে যেত, কিন্তু শালা ওই পাওনাদারদের আর ঠেকিয়ে রাখতে পারলাম না, ওদের কালকেই টাকা চাই।”

গানের জোর আওয়াজের ফলে ওদের কথাবার্তা পাশের ঘরের পরেশ আর রিনা শুনতে পায় না। ঝিনুক বুঝতে পারে এতদিন কি ভুল করেছে। আহত সর্পিণীর মতন ফোঁস করে ওঠে, “আমি তোমাকে মেরে ফেলব।” পার্থ ওর দিকে এগিয়ে যেতেই পাশে পরে থাকা একটা মদের বোতল দেয়ালে ভেঙ্গে অর্ধেক টুকরো হাতে নিয়ে পার্থের দিকে উঁচিয়ে বলে, “ইউ সন অফ বিচ, শুয়োরের বাচ্চা, তুই শুধু টাকার জন্য আমার সাথে এতদিন গেম খেলে গেলি?”

হাতে কাঁচের ভাঙ্গা কাঁচের বোতল দেখে ক্ষণিকের জন্যে দমে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় পার্থ, “শুধু কি আর টাকা, তোমার ওই সেক্সি শরীর, নরম গরম পুসি কত কিছু আছে তোমার কাছে।” নিজের মোবাইল দেখিয়ে বলে, “তোমার প্রচুর সেক্সি সেলফি আর ভিডিও আমার মোবাইলে আছে ঝিনুক।” জিব দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলে, “জানো আমার বন্ধুরা কি বলে তোমার ভিডিও দেখে? ওদের ইচ্ছে আমাদের প্রথম রাতের লাইভ দেখা। আমিও বলেছি যে আমি ভিডিও করব...”

কথাটা শুনে ঝিনুকের সারা শরীর আতঙ্কে আর তীব্র ঘৃণায় কেঁপে ওঠে, পার্থের আবদারে কতবার বাথরুমে ঢুকে ব্রা আর প্যান্টি পরে ছবি তুলে পাঠিয়েছে। কতবার বিভিন্ন লাস্যময়ী অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও পাঠিয়েছে। একবার যদি সেই সব ছবি আর ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় তাহলে ওর আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না।

কিন্তু এই ইতর লম্পটের কাছে হেরে যেতে নারাজ ঝিনুক, “কি করবে ওই সেলফি দিয়ে? ইন্টারনেটে দেবে? দাও আমিও পুলিসের কাছে যাবো।” কেঁদে ফেলে ঝিনুক, আর কয়েকদিন পরে সবকিছুই উজাড় করে দিত এই ইতর পার্থের সামনে সেটা বিশ্বাস করতে ভীষণ কষ্ট হয় ওর, “সত্যি তুমি আমার সাথে এমন করতে পারলে?” পার্থ ওর সামনে মোবাইল নাড়িয়ে এগিয়ে আসতেই আহত সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে, “একদম আমার দিকে পা বাড়াবি না।” বলে ওর দিকে বোতল উঁচিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসে।

ঝিনুকের ওই রুপ দেখে রিনা আর পরেশের নেশার ঘোর কেটে যায়। পরেশ ঝিনুকের হাত থেকে ভাঙ্গা কাঁচের বোতল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ঝিনুক ওর দিকেও বোতল উঁচিয়ে শাসিয়ে দেয়, “এক পা এগোলে আমি ছুঁড়ে মারব এই বোতল।” এক ঝটকায় ওর হৃদয় ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেছে। এতদিনের সাজান স্বপ্ন এক ধাক্কায় চুরমার হয়ে গেছে।

পার্থ ওকে বলে, “তুমি যেতে পারছ না ঝিনুক। তুমি এখানে এসেছ সেটা তোমার বাড়ির লোক জানে না। যার নাম করে এসেছ তাকেও হয়ত বলনি তুমি কোথায় এসেছ। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তুমি এখান থেকে বের হতে পারবে না ঝিনুক।” পার্থ মোবাইল খুলে ওর একটা অর্ধ নগ্ন ভিডিও চালিয়ে ওকে দেখিয়ে হেসে বলে, “শুধু মাত্র পনেরো লাখ ঝিনুক, তোমার একাউন্টে বারো লাখ আছে। তোমার বাবাকে ফোন করে দাও, বাকি তিন লাখ না পাওয়া পর্যন্ত তুমি এখানে”

দরজা আটকে পরেশ দাঁড়িয়ে, অন্যদিকে এক পা এক পা করে পার্থ ওর দিকে ক্ষুধার্ত হায়নার মতন লোলুপ দৃষ্টি হেনে এগিয়ে আসে। নিজেকে বাঁচাতে হাতের মধ্যে ধরে থাকা ভাঙ্গা বোতল একমাত্র সম্বল, কোনরকমে জ্যাকেট তুলে নেয় মেঝে থেকে, জুতো পরার কথা ভুলে যায়। পরেশের দিকে বোতল উঁচিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “দরজা থেকে সরে যা না হলে তোকে খুন করে দেব।”

পরেশ হেসে ফেলে, “ডোন্ট বি সিলি ঝিনুক, বোকার মতন কাজ কর না। জাস্ট পনের লাখ।”

আহত ভগ্ন কাঁপা গলায় পরেশের দিকে দেখে বলে, “তুই ও ওর সাথে মিলে আছিস? তোরা এতদিন আমার সাথে শুধু মাত্র ছল চাতুরি করে গেছিস।” রিনার দিকে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক, “তুই ও কি ওদের সাথে?”

রিনা চোয়াল চেপে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না রে আমি এইসবের মধ্যে নেই।” পরেশের দিকে এগিয়ে যায়, “ওকে যেতে দাও, না হলে তোমাকে আমি টুকরো টুকরো করে দেব।” বলেই রিনা দৌড়ে রান্না ঘর থেকে একটা বড় ছুরি নিয়ে এসে পরেশের দিকে উঁচিয়ে ধরে।

আহত বাঘিনী নিজেকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করে, হাতের বোতল পরেশের দিকে ছুঁড়ে মারে, নিজেকে বাঁচাতে পরেশ দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে রিনা, পরেশের দিকে এগিয়ে যায় ছুরি উঁচিয়ে, ঝিনুককে জুতো নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে।

মোবাইল হাতে নিয়ে পার্থ ওর দিকে এগিয়ে আসে, “খুব সেক্সি সেলফি গুলো ঝিনুক, ইসসস যে ভাবে তুমি সেদিন লাল প্যান্টির ওপরে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে ভিডিওটা দিয়েছিলে সেটা দেখে ত”...

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই এক ঝটকায় ওর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় ঝিনুক। জুতো হাতে নিয়ে পার্থের দিকে ঝাপসা চোখে ভগ্ন হৃদয়ে আহত কন্ঠে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, “তোকে আমি দেখে নেব।”

অট্টহাসিতে ফেটে পরে পার্থ, “তোর বিয়ে তাহলে হচ্ছে না। আমি দেখব তোর ফ্যামিলি কি করে মাথা তুলে দাঁড়ায়।”

শেষ বাক্য কানে যেতেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে ঝিনুক, কোন রকমে জুতো পরে গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে ফ্লাটের বাইরে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। ওর চোখের জল আর থামতে চায় না, সত্যি মানুষ কত বড় প্রতারক, শুধু মাত্র ওর দেহ আর টাকার জন্য এতদিন ওর সাথে ভালোবাসা প্রেমের নাটক করে গেছে পার্থ। মাথার চুল অবিন্যাস্ত, চোখের জলে ওর সাজ ধুয়ে গেছে অনেক আগেই। ওর দেহে যেখানে যেখানে পার্থ হাত দিয়েছিল সেই জায়গা গুলো জ্বালা করতে শুরু করে দিয়েছে। কোন রকমে একটা টাক্সিতে বসে ভেঙ্গে পরে ঝিনুক। এই মুখ নিয়ে করে বাড়িতে দেখাবে। পার্থের মোবাইল খুলে কারডটা ট্যাক্সির জানালার বাইরে ফেলে দেয়, সেই সাথে মোবাইলটাও রাস্তায় ফেলে দেয়। পাতলা কব্জিতে বাঁধা ঘড়ির দিকে দেখে, রাত প্রায় আটটা বাজতে চলেছে। বড় দের কথা মেনে যদি চলত তাহলে হয়ত আজকে ওর এই দুর্দশা হত না। বাবা মা নিশ্চয় ওর জন্য খুব চিন্তা করছেন। ঠোঁটে চুমু খেয়েছিল ইতর জঘন্য ভাবে, বারেবারে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে মুখ মুছে সেই ইতর চুমুর পরশ মুছে দিতে চেষ্টা করে। গালের ওপরে জঘন্য ভাবে জিব বুলিয়ে দিয়েছিল, নখের আচরে সেই চামড়া খামচে দেয় ঝিনুক। পাগল হয়ে যায়, যেখানে যেখানে পার্থ ওকে ছুঁয়েছিল সেই সব জায়গায় নখের আঁচর কেটে চামড়া ছাড়িয়ে দিত চেষ্টা করে। কান্না আর থামে না, বুকের মধ্যে অপার শুন্যতা, এরপর কি করবে কি হবে সেটা ভেবে কোন কূল কিনারা করতে অক্ষম হয়ে যায়। প্রবল ঘৃণা আর দুঃখে কাঁপতে কাঁপতে সিটের মধ্যে কুঁকড়ে বসে থাকে।

ড্রাইভার মনে হয় কয়েক বার কিছু জিজ্ঞেস করেছিল, “ম্যাডাম আপনি ঠিক আছেন ত?”

কান্না ভেজা ক্ষুধ কন্ঠে ঝাঁঝিয়ে ওঠে ড্রাইভারের দিকে, “তুমি গাড়ি চালাও...”

একবারের জন্য মনে হয় যে এই অবস্থায় আর বাড়ি ফিরে যাবে না। ওর সব শেষ, খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ, নিজের বাড়িতে নিজের মতন করে থাকার স্বপ্ন শেষ। পার্থের সাথে ঘর বেঁধে কতকি করবে ভেবে রেখেছিল। এই রাস্তায় কত এক্সিডেন্ট হয়, একবার ভাবে যে এইখানে নেমে পরে, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরে, কোন এক গাড়ি খুব জোরে ওকে ধাক্কা মেরে চলে যাবে, ওর প্রাণহীন দেহ লুটিয়ে পড়বে এই খালি রাস্তার মাঝে। বাড়ির সামনে ট্যাক্সি দাঁড়াতেই চোখ বুজে কেঁপে ওঠে ঝিনুকের প্রান।

❤️ "শেষের পাতায় শুরু" ❤️
 
পর্ব দুই – (#4-9)

সন্ধ্যের পরেই আম্বালিকা দীপকে নিয়ে পীয়ালির বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল, কথা ছিল নীলাদ্রি অফিস থেকে সোজা ওদের সল্টলেকের বাড়িত চলে আসবে। দিয়া আর ঝিলিক নিজেদের নিয়েই সকাল থেকে ব্যাস্ত, ওর দুজনে খুব খুশি একে অপরের সাথে গতরাতে গল্প করেই কাটিয়েছে। বসার ঘরে জমিয়ে গল্প চলছে, নীলাদ্রি অনেক আগেই চলে এসেছিল পীয়ালির বাড়িতে। গল্প করলেও পীয়ালির মন পরে ছিল ঝিনুকের জন্য, এত রাত হয়ে গেল এখন মেয়েটা এল না, ফোন উঠাচ্ছে না, ভীষণ চিন্তায় পরে যায়। সোমনাথ মাঝে মাঝেই ঘড়ির দিকে তাকায় আর ইশারায় পীয়ালিকে জিজ্ঞেস করে ঝিনুকের কথা।

পীয়ালির অস্থির ভাব আম্বালিকার চোখ এড়ায় না, “কি রে কিছু হয়েছে নাকি?”

বুকের মধ্যে অজানা আশঙ্কায় দুরু দুরু করতে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষনে, তাও মুখে হাসি টেনে বলে, “না রে কিছু না।”

আম্বালিকা এদিক ওদিক দেখে জিজ্ঞেস করে, “ঝিনুক কে দেখছি না যে? কোথাও গেছে নাকি?”

কিছু বলার আগেই, বিধস্ত ঝিনুক খোলা দরজা দিয়ে ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলে। ওকে ওই বিধস্ত অবস্থায় দেখে সবাই আশ্চর্যচকিত হয়ে যায়। পীয়ালির বুক ভয়ে দুরুদুরু করে ওঠে, মেয়ের দিকে তাকিয়ে আরো ভয় পেয়ে যায়, সারা গালে হাতে নখের আঁচর, চুল অবিন্যাস্ত। চরম আশঙ্কাজনিত কন্ঠে মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে? তুই এতক্ষন কোথায় ছিলিস?”

মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে গুমড়ে কেঁদে ফেলে ঝিনুক, “আমি বিয়ে করব না, পার্থ একটা মস্ত বড় শয়তান আমকে কি না শেষ পর্যন্ত...” কথাটা আর শেষ করতে পারে না।

পীয়ালি মেয়েকে বুকের কাছে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে। আম্বালিকা ঝিনুকের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে একবার খুলে বল। পার্থ তোর সাথে কিছু করেছে?”

মায়ের কোলে মাথা গুঁজে মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমি বিয়ে করব না, ও আমাকে ...”

ভীত সন্ত্রস্থ সোমনাথ নীলাদ্রির দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে। ঝিলিক আর দিয়া কথা বলতে ভুলে যায়। দিপ মোবাইলে গেম খেলছিল, সেটা থামিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরো বেশ কয়েকজন আত্মীয় সজ্জন উপস্থিত ছিল ঘরের মধ্যে, সবাই অজানা আশঙ্কায় ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে মায়ের কাছে পুরো ঘটনার বিবরন দেয় ঝিনুক।

ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে সোমনাথ, “তোকে হাজার বার বলেছিলাম পার্থ ছেলেটা ভালো নয়, কোনদিন ওর মতিগতি আমার ভালো লাগে নি। কিন্তু তুই কিছুতেই শুনবি না। আমি ওর বাবার সাথে কথা বলছি।”

বাবার ক্রোধিত গলা শুনে রাগে দুঃখে আরো বেশি ফেটে পরে ঝিনুক, “হ্যাঁ যার সাথে কথা বলার বলে নাও, কিন্তু আমি ওই শয়তানটাকে বিয়ে করব না।” মায়ের কোল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাবার দিকে দেখে, “আমি কাউকেই বিয়ে করব না।”

ক্রোধে দিগ্বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে যায় সোমনাথ, মেয়ের দিকে তেড়ে গিয়ে বলে, “আমার মান সন্মান সব জলাঞ্জলি দিয়ে এখন বলছিস বিয়ে করবি না? তিন দিন পরে বিয়ে, সবাইকে নিমত্তন্ন করা হয়ে গেছে, লোকে কি বলবে? কতবার বলেছিলাম রানীগঞ্জের দিলিপের ছেলের সাথে বিয়ে দেব, তখন কিছুতেই আমার কথা শুনিস নি।” জল ভরা চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে ঝিনুক। মেয়েকে শাসিয়ে বলে সোমনাথ, “আর তোর কোন জেদ আমি মানব না। যখন বলব, যার সাথে বলব তখন তার সাথেই তোর বিয়ে হবে।”

আহত ঝিনুক পা দাপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। বেড়িয়ে যাওয়ার আগে বাবার দিকে দেখে বলে, “আমাকে জোর করে বিয়ে দিলে আমি বিষ খাবো।” ওর যে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে, ভালোবাসার ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে।

মেয়ের কথা শুনে ডুকরে কেঁদে ওঠে পীয়ালি। বসার ঘরে নেমে আসে শ্মশানের স্তব্ধতা, কারুর মুখে কোন কথা নেই। আম্বালিকা পীয়ালিকে শান্তনা দিলেও কান্না থামান যায় না, বারেবারে আম্বালিকার কোলের ওপরে মূর্ছা যায়। সোমনাথ ফোন করে পার্থের বাবাকে সব ঘটনা জানায়, পার্থের বাবা ক্ষমা চায় কিন্তু সেই সাথে সোমনাথ জানায় যে তার মেয়ে এই বিয়েতে একদম নারাজ।

মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আক্ষেপ করে বলে সোমনাথ, “এ জীবনে কি যে পাপ করেছি জানি না।” নীলাদ্রি ওকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করাতে, সোমনাথ ওকে বলে, “কি করিনি বলবেন? বাড়ির বড় মেয়ে, ছোট বেলা থেকে আদর দিয়ে মানুষ করেছি, যখন যা চেয়েছে দিয়েছি। পড়াশুনায় মাথা ভালো ছিল কিন্তু কিছুতেই সায়েন্স নিয়ে পড়ল না, ইংরেজি নিয়ে পড়ল তাতেও মানা করিনি। ওই এলাকার সব থেকে ভালো স্কুলে দুই মেয়েকে পড়িয়েছি।” দুশ্চিন্তায় হাত পা কাঁপতে শুরু করে দেয় সোমানাথের।

নীলাদ্রি সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “কিছু একটা উপায় বেড়িয়ে আসবে অত চিন্তা করবেন না।”

কাঁপা হাতে ফোন ধরে বলে, “একবার ভাবছি দিলিপকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি, কয়েক মাস আগেও আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিল ঝিনুকের কথা। ওর ছেলে কিশলয় ব্যাঙ্গালোরে একটা আইটি কোম্পানিতে চাকরি করে।”

নীলদ্রি একবার আম্বালিকার দিকে দেখে একবার সোমনাথের দিকে দেখে। আম্বালিকাকে জড়িয়ে ধরে পীয়ালি ডুকরে কেঁদে ওঠে, “আমার অদৃষ্ট কি করব বল...”

আম্বালিকা ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “নিজেকে একটু সামলা, দ্যাখ দিলিপ কে ফোন করে কি বলে।”

রাগে গজগজ করতে করতে পীয়ালিকে দোষারোপ করে সোমনাথ, “এবারে আর মেয়ের জন্য কি করতে বলছ? বলত দিলিপের পায়ে ধরব? আমি আর কিছু চিন্তা ভাবনা করতে পারছি না।” পুরুষ মানুষ না হলে এতক্ষনে হয়ত কেঁদে ফেলতেন সোমনাথ।

আম্বালিকা পীয়ালিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “তোর মেয়ে খারাপ ত নয়, একটু জেদি এই বয়সে অনেকেই একটু জেদি হয়। একদম বিপথে যেতে পারত, অনেক খারাপ কিছুও করতে পারত, আশা করি সেইসব কিছু করে বসেনি এতদিনে। আজকাল কত ছেলে মেয়ে বাড়ি ছেড়ে প্রেমিক প্রেমিকার সাথে লিভ-ইন করছে, তোর মেয়ে সেই পথে যায়নি। হ্যাঁ মানুষ চিনতে ভুল হয়েছে সেটাই আমাদের হামেশাই হয়। ভগবান সময় থাকতেই ঝিনুককে পথ দেখিয়ে দিয়েছে, না হলে একবার ভাব, যদি বিয়ের পর এইসব কান্ড হত তখন কি করতিস?”

কথাটা ভুল বলেনি আম্বালিকা, পীয়ালি বলে, “এই জেদি মেয়ে নিয়ে কত ভুগেছি জানিস। রানীগঞ্জে থাকতে এই আসানসোল, দুরগাপুর করে বেড়িয়েছে। কিছু বললেই মেয়ের মুখ ফুলে যেত, বেশি শাসন করতে আসলে দরজা বন্ধ করে না খেয়ে বসে থাকত।” চোখ মুছে আম্বালিকাকে বলে, “হ্যাঁ পারত হয়ত বিপথে যেতে, হয়ত কোন জন্মের পুন্য ফলেই ভগবান সময় থাকতে চোখ খুলে দিয়েছে।”

নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানায় লুটিয়ে পরে ঝিনুক। ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে গায়ে হাতে নখের আঁচর কেটে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে। আর বেঁচে থেকে লাভ কি, ওর ত সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। শুধু মাত্র টাকার লোভে আর ওর শরীরের লোভেই প্রেমের নাটক করে গিয়েছে এতদিন। একটানে গায়ের টপ খুলে ফেলে, পেটে বুকে নখের আঁচর কেটে নিজেকে কষ্ট দেয়। ফর্সা ত্বক লাল হয়ে যায় নখের আঁচরে। কাঁপতে কাঁপতে বিছানার এক কোনায় কুঁকড়ে বসে থাকে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় ওর, বাড়ির ছাদ যেন যেকোনো মুহূর্তে ওর মাথার ওপরে ভেঙ্গে পড়বে। ফ্যানের দিকে তাকায় ঝিনুক, কতটা উঁচু সেটা মাপতে চেষ্টা করে, ওর ভার নিতে পারবে নিশ্চয়। বিছানার চাদর হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ ঝিলিক দৌড়ে এসে না ধরলে হয়ত ঝিনুক আত্মহত্যা করে নিত, ওর পেছন পেছন দিয়াও ঘরের মধ্যে ঢুকে ঝিনুকের এহেন অবস্থা দেখে আঁতকে ওঠে।

দিদিকে ওইভাবে চাদর হাতে বিছানায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রমাদ গোনে ঝিলিক। দৌড়ে এসে দিদিকে জড়িয়ে ধরে, “একি করছিস তুই?” বলেই কেঁদে ফেলে। “একটা বাজে ছেলের জন্য তুই আমাকে ছেড়ে বাবা মাকে ছেড়ে চলে যাবি?”

ঝিলিককে জড়িয়ে ধরে ভেঙ্গে পরে ঝিনুক, “বোন রে খুব পাপ করেছি...”

দুই বোন কে এই ভাবে কাঁদতে দেখে দিয়াও সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “ঝিনুকদি আমরা সবাই আছি, বাবা মা আছেন সব ঠিক করে দেবেন, তুমি এমন কর না।”

বোনের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করে, “বাবা কি দিলিপ আঙ্কেলকে ফোন করেছে নাকি?”

মাথা দোলায় ঝিলিক, “মনে হয়, সেই নিয়েই কথা হচ্ছিল।”

জোরে জোরে মাথা নাড়ায় ঝিনুক, “আমি কাউকেই বিয়ে করব না। এই জীবনের ওপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গেছে রে বোন।”

দিদির মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে সান্ত্বনা দেয়, “আমার সোনা দিদি” দিদির চোখের জল মুছিয়ে বলে, “তোকে কাউকেই বিয়ে করতে হবে না, আমি বাবা মাকে বুঝিয়ে বলে দেব। এবারে প্লিজ একটু শান্ত হ।”

বসার ঘরের পরিবেশ থমথমে, কারুর মুখে কোন কথা নেই। বেশ কিছুক্ষন পরে আম্বালিকার পাশে এসে বসে নীলাদ্রি, ওর চোখে চোখ রেখে ভুরু নাচিয়ে কিছু একটা ইঙ্গিত করে। ভুরু কুঁচকে তাকায় স্বামীর দিকে, সত্যি ও যেটা ভাবছে সেটা কি নীলাদ্রি ও ভাবছে? অল্প হেসে মাথা দুলিয়ে সম্মতি দেয় নীলাদ্রি।

আম্বালিকা মুচকি হেসে নীলাদ্রিকে বলে, “সেইজন্য তোমাকে এত ভালোবাসি।”

এহেন পরিস্থিতিতে ওদের মুখে হাসি দেখে পীয়ালি আর সোমনাথ আশ্চর্য হয়ে যায়। আম্বালিকা পীয়ালির হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “আমার একটা প্রস্তাব আছে যদি তোরা কিছু মনে না করিস।” সোমনাথ, নীলাদ্রি আর আম্বলিকার দিকে হাজার প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকে। আম্বালিকা বলে, “আমার বড় ছেলে, রিশু। অনেক দিন থেকেই রিশুর জন্য মেয়ে দেখছি কিন্তু ছেলে আমার কিছুতেই বিয়ে করবে না।”

পীয়ালি আশ্চর্য হয়ে যায়, “রিশু? কিন্তু ওকি এই অবস্থায় ঝিনুককে মেনে নেবে?”

নীলাদ্রি সোমনাথকে বলে, “যতদূর আমি ওকে চিনি, রিশু ওর মায়ের কথা কোনদিন ফেলতে পারবে না।”

কালো মেঘের কোনায় আশার আলো দেখতে পেয়ে পীয়ালির বুকে বল আসে, “জীবনে ভাবিনি যে আমার মেয়ে তোর বাড়ির বোউমা হবে। আমার জামাই যে একজন এতবড় ডাক্তার হবে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি রে।” বলেই আম্বালিকার দুই হাত জড়িয়ে কেঁদে ফেলে।

এতক্ষন যে ভয়ার্ত চাপা আওয়াজে বসার ঘর গুঞ্জরিত হয়েছিল সেটা আশার আলোয় পরিনত হয়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নীলাদ্রিকে জড়িয়ে ধরে সোমনাথ, “আপনাদের কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবো ভেবে পাচ্ছি না।”

নীলাদ্রি হেসে সোমনাথকে জড়িয়ে ধরে বলে, “বুকে বল আনুন, বিয়ে এখন শেষ হয়ে যায়নি, শুধু বর পালটে গেছে বাকি সব ঠিক আছে।”

চোখের জল মুছে হেসে ফেলে পীয়ালি, আম্বালিকা আর নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বলে, “তোদের বাড়ির বোউমা হবে সেটা আমার সৌভাগ্যরে আর ঝিনুকের ভাগ্য।”

বুক ভরা শ্বাস নিয়ে পীয়ালি আর সোমানাথের দিকে তাকিয়ে আম্বালিকা বলে, “রিশু আসছে ঠিক আছে তবে তার আগে আমি রিশুর ব্যাপারে কিছু বলতে চাই। সব কিছু শুনে তবেই তোরা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিস। তুই জানিস রিশু আমার কে।” পীয়ালি মাথা দোলায়, ও সব জানে, তাও আম্বালিকা বলে, “রিশু আমার ভাই, আমার গর্ভে ধরা সন্তান হয়ত নয় কিন্তু ও আমার বড় ছেলে। আমি আমার বুকের রক্ত মাংস দিয়ে ওকে বড় করেছি। দিপ আর দিয়া কিন্তু সে কথা জানে না, এই পৃথিবীতে হয়ত এখন খুব কম লোক আছে যারা জানে যে রিশু আসলে আমার পুত্র নয়। রিশু নিজে সেকথা জানলেও সেসব ভুলে ও কিন্তু আমাকে নিজের মা বলেই ...” শেষের কথাটা বলতে বলতে কেঁপে ওঠে মাতৃ হৃদয়।

পীয়ালি ওর হাত ধরে বলে, “তুই মহামায়া, তুই যেভাবে রিশুকে মানুষ করেছিস তারপর কারুর কিছু বলার থাকে না। আমাদের সৌভাগ্য যে ঝিনুক এই জীবনে তোর আঁচলের ছায়ায় থাকতে পারবে।”

বুক ভরে স্বস্তির শ্বাস নেয় আম্বালিকা, সেই সাথে মনের কোনায় এক বিশাল বড় কিন্তু দেখা দেয়। রিশুকে এখুনি সব কিছু বলে দিলে দিল্লী থেকে আসবে না। যদিও আম্বালিকা মনে প্রানে জানে যে ওর কথার অমান্য করবে না তাও একবার রিশুর মতামত জানা প্রয়োজন। যত হোক এটা ওর জীবনের খুব বড় পদক্ষেপ। তবে যতক্ষণ না রিশু ওর সামনে এসে পৌঁছায় ততক্ষন কিছু বলে বোঝানো মুশকিল। ছেলেকে অনেক বার বলেছে বিয়ে করতে, দেখতে দেখতে একত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেল, কিন্তু সেই ছেলে কিছুতেই বিয়ে করতে নারাজ। রিশুর একটা অতীত আছে, যেটা আম্বালিকার অজানা নয়, মায়ের কাছে কোনদিন কিছু লুকায়নি রিশু।

আম্বালিকা দিপকে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “দিয়া কোথায় রে?”

দিপ জানিয়ে দেয় দিয়া ঝিনুক দিদির ঘরে। দিপ দিয়াকে ডেকে নিয়ে আসার পরে আম্বালিকা দিপ আর দিয়াকে সব কিছু সবিস্তারে জানিয়ে দেয়। সেই শুনে দিপ আর দিয়ার আনন্দ আর ধরে না। এতদিন পরে ওদের দাদার বিয়ে হবে তাও আবার ঝিনুক দিদির সাথে। দুই বাড়ির মধ্যে এতদিন শুধু মাত্র বন্ধুত্তের সম্পর্ক ছিল, যেমন ওদের মায়েদের মধ্যে ছিল তেমনি দিয়ার আর ঝিলিকের মধ্যে ছিল। এরপর ঝিনুক দিদির বিয়ে যদি ওর দাদাভাইয়ের সাথে হয়ে যায় তাহলে ওদের দুই বাড়ির মধ্যে সম্পর্ক চিরকালের জন্য বাঁধা হয়ে যাবে।

দিয়া একটু ভেবে বলে, “কিন্তু মাম্মা, দাদাভাইকে যদি তুমি এখুনি এইসব কথা বল তাহলে দাদাভাই কিন্তু কিছুতেই আসবে না।”

আম্বালিকার আশঙ্কা অমূলক নয়, ছোট ছেলেকে অনুরোধ করে, “তাও একবার ফোন করে দেখ।”

দিপ মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, “দাদাভাইয়ের কাল ট্রমা সেন্টারে মর্নিং ডিউটি এতক্ষনে হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে।”

আম্বালিকা তাও ছোট ছেলেকে আদর করে বলে, “একবার ট্রাই ত কর তোর দাদাকে ফোন করতে। তোর দাদা যদি না আসে তাহলে কি ভাবে এই বিয়ে হবে?”

দিপ চোখ নাচিয়ে বলে, “আমাকে তাহলে দিদির মতন একটা ট্যাব কিনে দেবে?”

হেসে ফেলে আম্বালিকা আর সেই সাথে ঘরের সবাই। পীয়ালি ওকে কাছে ডেকে আদর করে বলে, “তুই যা চাস সব দেব।”

দিয়া মুচকি হেসে বলে, “আমার কাছে একটা উপায় আছে দাদাভাইকে কোলকাতা নিয়ে আসার।” বলেই দিপের কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলতেই দিপের মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি খেলে যায়।

রিশুকে ফোন করে আর্ত চিৎকার করে ওঠে দিপ, “দাদাভাই আমার হাত ভেঙ্গে গেছে তুমি তাড়াতাড়ি এস।”

=============== পর্ব দুই সমাপ্ত ===============

❤️ "শেষের পাতায় শুরু" ❤️
 
পর্ব তিন – (#1-10)

রাত প্রায় সাড়ে নটা। বিকেলের দিকে একবার মায়ের সাথে কথা হয়েছিল, মা বলছিল কোন এক বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে তাই সেই বাড়িতে যাবে। এতদিন দিল্লীতে থেকে দিল্লীর ঠান্ডা অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে। কাজের লোক রাতের খাওয়া বানিয়েই গিয়েছিল, খাওয়া সেরে বসে বসে টিভি দেখছিল। একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে, কাল ভোরবেলা ট্রমা সেন্টারে ডিউটি। শীতকাল এলেই গাড়ির এক্সিডেন্ট খুব বেড়ে যায়, রোজ দিন অন্তত দশ বারোটা এক্সিডেন্টের কেস দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় বাড়ি ফিরতে। এমন সময়ে ফোন বেজে উঠতেই চমকে যায় রিশু।

ফোনের ওপাশে দিপের আর্ত চিৎকার শুনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়, “দাদাভাই আমার হাত ভেঙ্গে গেছে তুমি তাড়াতাড়ি এস।”

ভাই বোনকে ভীষণ ভালোবাসে রিশু, ওর দুটো চোখের মনি দুই ভাই বোন। রিশু যখন ডাক্তারি পড়তে দিল্লী যায় তখন দিপের জন্ম হয়, পরাশুনা আর দুরত্তের ফলে দিপকে সেইভাবে বড় হতে দেখতে পারেনি বলে ওর খুব দুঃখ। তাই বাড়িতে এলেই দিপকে নিয়ে পরে থাকত রিশু। ওর ইচ্ছে ছিল দুইজনকে দিল্লীতে নিজের কাছে নিয়ে আসার, কিন্তু ওর নিজের খুব ইচ্ছে মায়ের কাছে কোলকাতা ফিরে যাওয়ার তাই আর ওদের নিয়ে আসেনি। বেশ কয়েক বছর আগে, যখন রিশু সবে মাত্র এমএস পড়ছে, তখন একবার দিপ সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গেছিল। ডিউটি থেকে ছুটি নিয়ে তখুনি বাড়ি গিয়েছিল এবং যতদিন না দিপের পা ঠিক হয় ততদিন দিপের পাশে ছিল।

রিশু ধরমর করে উঠে বসে বলে, “কি রে কি করে হয়েছে?”

অন্যদিকে দিপ কপট হেসে, মুখ বেঁকিয়ে কাঁদার ভঙ্গি করে বলে, “আমি বাথরুমে পিছলে পরে গেছি দাদাভাই। ডান হাতের কুনুই খুব ব্যাথা দাদাভাই, দাদাভাই হাত সোজা করতে পারছি না দাদাভাই। তুমি এস তাড়াতাড়ি...”

দিপের এহেন কপট কান্নার ভঙ্গিমা দেখে সবাই মুখ চেপে হেসে ফেলে। রিশু বলে, “মাম্মাকে ফোন দে।”

দিপ কপট ব্যাথায় চেঁচিয়ে ওঠে, “দাদাভাই... প্লিজ এস।”

রিশু, “আচ্ছা তুই মাম্মাকে দে।”

দিপ নাছোড়বান্দা, “তুমি না এলে আমি কিন্তু হসপিটাল যাবো না। লোকে কি বলবে, আমার দাদাভাই এতবড় অরথপেডিক সারজেন আর নিজের ভাইয়ের বেলায় লবডঙ্কা।”

রিশু কি করবে ভেবে পায় না তাও বলে, “আচ্ছা বাবা, আমি আসছি, তুই মাম্মাকে ফোন দে।”

আম্বালিকা দিপের হাত থেকে ফোন নিতেই অন্যদিক থেকে রিশু বলে, “কি দেখ, কোথায় থাক তোমরা? হটাত করে কি ভাবে বাথরুমে পরে গেল?”

ছেলের রাগ দেখে হেসে ফেলে আম্বালিকা তাও রিশুকে শান্ত করে বলে, “আচ্ছা বাবা, ঘাট হয়েছে। আমি যত বলছি যে হসপিটাল নিয়ে যাবো, তোর ভাই কিছুতেই শুনছে না।”

রিশু মাকে বলে, “তুমি ওকে নিয়ে এখুনি হসপিটাল যাও, এসএসকেএম এ নীলেশ আছে আমি ফোন করে দিচ্ছি, আমি কাল সকালের ফ্লাইটে পৌঁছে যাবো।”

দিপ মায়ের হাত থেকে ফোন নিয়ে বলে, “তুমি এখুনি না এলে আমি কোথাও যাবো না। আমার হাত বেঁকে যাক ভেঙ্গে যাক তোমার তাতে কি।”

কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকে রিশু, একটু ভেবে বলে, “আচ্ছা আমি আসছি তবে তুই হসপিটাল যা আমি নীলেশকে একটা ফোন করে দিচ্ছি ও পৌঁছে যাবে এমারজেন্সিতে।”

মায়ের ফোন রেখে নীলেশকে ফোনে জানিয়ে দেয় ভাইয়ের কথা। ল্যাপটপ খুলে বসে পরে, ভাই নাছোড়বান্দা ওকে ছাড়া কিছুতেই হসপিটাল যাবে না। ফ্লাইট চেক করে দেখে রাত বারোটায় কোলকাতার একটা ফ্লাইট আছে, কোন মতে ল্যাপটপের ব্যাগ আর একটা ছোট ব্যাগে কিছু জিনিস নিয়ে বেড়িয়ে পরে। জামা কাপড় নেওয়ার দরকার পরে না, কারন কোলকাতার বাড়িতে ওর সব কিছু আছে। ট্যাক্সিতে বসে আবার ফোন করে দিপকে, দিপের কান্না কিছুতেই থামছে না দেখে বেশ চিন্তায় পরে যায়। কি হল, গিয়েই একটা এক্সরে করাতে হবে, রিপোরট দেখেই বুঝতে পারবে কতটা কি হয়েছে। এইচওডি কে ফোন করে দিয়েছিল যে কয়েকদিনের জন্য ছুটি চাই, ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে, সেই সাথে ওর বন্ধু ইন্দ্রজিতকে ফোন করে দেয়। এমবিবিএস এর সময় থেকেই ইন্দ্রজিতের সাথে ওর বন্ধুত্ত, বেশ কয়েক বার ইন্দ্রজিত আর ওর স্ত্রী শালিনী কোলকাতায় রিশুদের বাড়িতে গেছে।

সিকুরিটি চেকের পরে প্লেনের দিকে যেতে যেতে মাকে ফোন করে রিশু, “কি হল কোথায় আছো, হসপিটাল নিয়ে গেলে?”

আম্বালিকা ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, “তুই কি ফ্লাইটে বসে গেছিস?”

রিশু, “হ্যাঁ। আমি এবারে ভাইকে নিয়ে আসব আমার কাছে।”

দিপ আর দিয়া, হাতের মুঠো হাওয়ার মধ্যে উঁচিয়ে লাফিয়ে ওঠে, “মিশন একমপ্লিসড মাম্মা, কাজ হাসিল।” মাকে জড়িয়ে ধরে একটু নেচে নেয় দুই ভাই বোন, এবারে ওদের দাদাভাইয়ের বিয়ে হবে প্রিয় ঝিনুক দিদির সাথে।

ছেলের এহেন মনের অবস্থা দেখে আম্বালিকা হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা নিয়ে যাস, তোর ভাই তোর কাছে থাকবে না ত কি আমার কাছে থাকবে নাকি? বহাল তবিয়েতে আছে তোর ভাই, কিছুই হয়নি তোর ভাইয়ের।” বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটু থেমে বলে, “কিন্তু বাবা ভাইকে যে নিয়ে যাবি তুই ত সারাদিন বাড়িতে থাকিস না, কে দেখবে তোর ভাইকে?”

ভাই ভালো আছে শুনে ঝাঁঝিয়ে ওঠে রিশু, “এত রাতে এইসবের মানে কি? ভাইয়ের কিছু হয়নি মানে?” এতক্ষন ওর মনের মধ্যে অনেক কিছু চলছিল।

আম্বালিকা ছেলেকে শান্ত হতে অনুরোধ করে বলে, “কাল বলছিলাম না যে আমার বান্ধবী পীয়ালির বড় মেয়ে সঙ্ঘমিত্রার বিয়ে।” রিশু ছোট উত্তর দেয়, “হুম”। আম্বালিকা বলে, “তোর জন্যেও একটা সুন্দরী মেয়ে খুঁজেছি, ভাবছি এক সাথেই এক মন্ডপে দুই জনের বিয়ে দিয়ে দেব।”

প্লেনের সিটে বসতে গিয়েও থেমে যায় রিশু, “কি বলছ?”

আম্বালিকা বুঝতে পারে এইবারে একটা ঝড় শুরু হবে, তাও ছেলেকে বলে, “তুই আয় সব বলছি। দিপের কান্না না শুনলে তুই আসতিস না তাই বদমাশটা ওই ভাবে তোকে ডেকে এনেছে।”

শেষ পর্যন্ত হেসে ফেলে রিশু, “আমি দিপের এবারে সত্যি হাত ভেঙ্গে দেব।”

প্লেন দিল্লীর মাটি ছাড়তেই এক বিমান সেবিকা এসে ওদের জলের বোতল দিয়ে যায়। সেই সুন্দরী বিমান সেবিকার বুকের নেম প্লেট দেখে থমকে যায় ডক্টর অম্বরীশ সান্যাল, “চন্দনা”। একবার সেই বিমান সেবিকার মুখের দিকে তাকিয়ে আপন মনেই হেসে ফেলে। পাঁচ বছর আগের এক ভীষণ বর্ষার বিকেলে দেখা হয়েছিল এক সুন্দরী ললনার সাথে, নাম তার চন্দনা নয়, সেই ললনার নাম ছিল চন্দ্রিকা পশুপতি। মাছের বাজারে দেখা, সি আর পার্কের মাছের বাজারে অনেকেই আসে মাছ কিনতে। সেদিন বিকেল থেকেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা তবে আকাশ দেখে মনে হয়নি যে হটাত করেই বৃষ্টি নামবে। কাজের মেয়েটা শুধু নিরামিশ রান্না করে যায়, গতবার মা এসে ওকে হাতে ধরে মাছ ভাজা বানাতে শিখিয়ে গেছে। এমনিতে মা যখন আসে, তখনি এক গাদা মাছ কিনে রান্না করে ফ্রিজে রেখে যায়। কাটা রুই ছাড়া আর কি বানাবে সেই কিনে মাছের বাজার থেকে বাইরে আসতেই ঝমঝমিয়ে তুমুল বৃষ্টি নামে। বাজার থেকে ওর বাড়িটা বেশি দূরে নয়, ভেবেছিল এক দৌড়ে বাড়ি পৌঁছে যাবে। পরের দিন রবিবার ছিল, হসপিটাল যাওয়ার ছিল না, তখন ওর ওপিডিতে ডিউটি ছিল। বৃষ্টির জন্য একটা দোকানের শেডে বেশ কয়েক জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সেই ভিড়ের মধ্যে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে এক সুন্দরী গোলগাল গড়নের মেয়ের দিকে ওর নজর যায়, পরনে সালোয়ার কামিজ, পিঠ ছাড়িয়ে লম্বা বেনুনি, গায়ের রঙ একটু চাপা হলেও চেহারার গড়নে একটা মাধুর্য আছে। বৃষ্টির ছাঁটে কামিজ একটু ভিজে গেছে, তাও নিজেকে বাঁচানোর জন্য অন্য সব লোকের সাথে ধাক্কা ধাক্কি করে সেই সেডের নিচে দাঁড়াতে যেন সেই ললনার মনে দ্বিধা জাগে। রিশু আড় চোখে বার কয়েক ওর দিকে দেখে, তৃতীয় বার দেখতেই দুইজনার চার চোখ এক হয়ে যায়। রিশু অসহায়ের মতন একটু হাসি দেয় ওকে দেখে, প্রত্যুত্তরে ললনা ভুরু কুঁচকে রিশুর দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

ঠিক সেই সময়ে রিশুর পাশের বাড়ির একজন ওকে দেখে চিনতে পেরে বলে, “আরে ডাক্তারবাবু যে, কি মাছ কিনলেন ইলিশ না পমফ্রেট?”

রিশু একটু হেসে উত্তর দেয়, “কাটা রুই, ইলিশের দিকে ত হাত দেওয়া যাচ্ছে না।”

হেসে ফেলে সেই ভদ্রলোক, “আপনি মশাই এমএসএর ডাক্তার তাও বলবেন যে ইলিশে হাত দেওয়া যাচ্ছে না? তাহলে ত মশাই আমাদের কুচো চিংরি খেয়ে থাকতে হয়।”

হেসে ফেলে রিশু, “আরে না না, আসলে আমি ঠিক মাছ রান্না করতে জানি না, মা আসলে তবেই মাছ খাওয়া হয়।”

বৃষ্টি একটু ধরে আসতেই রিশু বাড়ির দিকে পা বাড়ায়, এখানে দাঁড়িয়ে লাভ নেই একটু ভিজলেও ক্ষতি নেই। কিছুদুর যেতেই পেছনে বেশ কয়েক জন লোকের মিলিত আওয়াজ পায়, সেদিকে তাকিয়ে একটা জটলা দেখে। ওর বুঝতে দেরি হয় না, যে এই বর্ষার রাস্তায় কারুর এক্সিডেন্ট হয়েছে। ডাক্তার মানুষ তাই স্বভাব বশত এগিয়ে যায় জটলার দিকে। সেই দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার এক্সিডেন্ট হয়েছে, রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা বাইক এই বর্ষার মধ্যে ঠিক সময়ে ব্রেক লাগাতে না পারায় পেছন থেকে ধাক্কা মেরে দিয়েছে যার ফলে মেয়েটা রাস্তায় পরে যায়। বাইকের লোকটাকে সবাই মিলে ধরে খুব বকাঝকা। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখে রিশু, মেয়েটার ভেজা কামিজের পেছনে রাস্তার নোংরা লেগে গেছে, পরনের চাপা লেগিন্সটাও বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। হাঁটুর জায়গায় লেগিন্সের বেশ কিছুটা ছিঁড়ে গেছে, দেখেই বুঝতে পারে হাঁটুতে চোট লেগেছে, কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে তবে বেশি নয়। ডাক্তারি চোখে জরিপ করে নেয় মেয়েটাকে।

রিশুর সেই চেনাজানা লোকটা ওই জটলার মধ্যেই ছিল, ওকে দেখে বলল, “আরে ডক্টর বাবু ত।”

সেই শুনে বাকিরা একটু তফাতে সরে গেল। ডাক্তারির অভ্যেসবশত রিশু মেয়েটার দিকে দেখে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় কোথায় লেগেছে?” মেয়েটা কপাল আর কুনুই দেখিয়ে দিতে, রিশু ওর কপাল আর কুনুই দেখে বলে, “তেমন বিশেষ কিছু হয়নি একটু ফারস্ট এড করলেই ঠিক হয়ে যাবে।” মেয়েটার দিকে দেখে জিজ্ঞেস করে, “পাশেই আমার বাড়ি, যদি যেতে চান তাহলে আমি ফারস্ট এড করিয়ে দিতে পারি।”

চেনাজানা লোকটা রিশুর পরিচয় দিতেই বাকিরাও সমস্বরে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, এত বেশ ভালো কথা।”

মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল রিশু, “আমার বাড়ি যেতে কি আপত্তি আছে?”

ব্যাথা হওয়া সত্তেও কোন রকমে একটু হেসে উত্তর দেয় মেয়েটা, “না না তা নেই।” হাটার জন্য পা বাড়াতেই বুঝতে পারে হাঁটুতেও বেশ লেগেছে। ব্যাথায় ককিয়ে উঠে বলে, “হাঁটুতেও ব্যাথা, ঠিক ভাবে হাঁটতে পারছি না।”

পাশ দিয়ে একটা অটো যাচ্ছিল, সেটাকে থামিয়ে দিয়ে রিশু আর মেয়েটা সেই অটোতে উঠে পরে। অভ্যেস বশত রিশু জিজ্ঞেস করে, “আর কোথায় কোথায় লেগেছে ঠিক করে বলুন।”

মেয়েটা একটু হেসে বলে, “ধুপ করে ওইভাবে পরে গেছি তাই পেছনেও লেগেছে।” তারপর ডান হাত বাড়িয়ে দেয় রিশুর দিকে, “আমি চন্দ্রিকা, এই কাছেই আমার বাড়ি।”

রিশুও চন্দ্রিকার সাথে হাত মিলিয়ে নিজের পরিচয় দেয়, “অম্বরীশ, এমএসএ আছি।”

সেই শুরু চন্দ্রিকা আর রিশুর পরিচয়ের সুত্রপাত।

❤️ "শেষের পাতায় শুরু" ❤️
 

Users who are viewing this thread

Back
Top