পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাব প্রত্যেক নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন নারীর নিয়মিত ও সঠিকভাবে মাসিক হওয়ার অর্থ তিনি সন্তান ধারণে সক্ষম। বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও এটি নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো স্বাভাবিক নয়। এমনকি পিরিয়ড নিয়ে পরিচিতদের কাছে তাচ্ছিল্যের শিকার হন অনেকে। যদিও দিন দিন মানুষের মধ্যে ট্যাবু ভাঙছে, সচেতনতা বাড়ছে।
পিরিয়ড নারীদের প্রজননপ্রক্রিয়াতে প্রভাব বিস্তার করে। সাধারণত ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সেই মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়। গড়ে ২৮ দিন পরপর এটা হয়ে থাকে। এ মাসিক চক্রটা কারও কারও ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ২১ বা ৩৫ দিন পরপর হতে পারে এবং ৫০ থেকে ৫২ বছর বয়সে বন্ধ হয়ে যায়। শারীরিক গঠন বা বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে কারও এর আগে কিংবা দেরিতে পিরিয়ড শুরু হতে পারে। আমাদের দেশে এখনো যেহেতু পিরিয়ডকে একটি লজ্জার ব্যাপার হিসেবে ধরা হয়, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ বয়সী মেয়েদের জন্য পিরিয়ডের প্রথম অভিজ্ঞতা বেশ ভয়াবহ ও বিব্রতকর হয়ে থাকে। পিরিয়ডের সময় অনেকেই ভয় ও লজ্জায় কাউকে কিছু জানায় না। এটি পরবর্তী সময়ে কিশোরীর মানসিক ও শারীরিক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পিরিয়ড চলাকালে পেটে ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্যথা, মানসিক অবসাদ, বিরক্তি দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় বাড়তি কিছু যত্নের প্রয়োজন হয়। তেমনি কিছু বিষয়ে সচেতন থাকাও দরকার।
- পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। স্যানিটারি প্যাড (৪–৬) ঘণ্টা অন্তর পরিবর্তন করতে হবে।
- এ সময়ে হরমোনের প্রভাবে কিছুটা মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, তাই মানসিক চাপমুক্ত থেকে ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কর্মচঞ্চল জীবন যাপন করতে হবে।
- মাসিক চলাকালে চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায়, ফলে লোমকূপ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তাই এ সময়ে শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো।
- এ সময় যেহেতু জরায়ুমুখ উন্মুক্ত থাকে, তাই পুকুর বা নদীতে গোসল করা উচিত নয়।
- খেয়াল রাখতে হবে যেন এ সময়ে পেটে কোনো প্রকার আঘাত না লাগে। মাসিক চলাকালে জরায়ু অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় থাকে, তাই সামান্য আঘাতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
- পিরিয়ডের সময় কাপড় ব্যবহার না করে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা মেনস্ট্রুয়াল ক্যাপ ব্যবহার করা অধিক স্বাস্থ্যসম্মত।
- এ সময়ে ভারী কাজ, ব্যায়াম, সাঁতার বা সাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অনিয়মিত পিরিয়ডসহ অন্য যেকোনো সমস্যা অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
* অধ্যাপক আফজালুন্নেসা চৌধুরী, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা