রসে টসটসে লাল-বেগুনি বিট নিজেই দেখতে এত সুন্দর যে রূপচর্চার ক্ষেত্রে বিটের ব্যবহারের কথা উঠলে কেউই উড়িয়ে দেবে না। এখনকার দিনে প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে চর্চাকে সারা বিশ্বেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এক গাদা মেকআপের আবরণে নিজেকে ঢেকে না রেখে সুস্থ, সুন্দর, সজীব ত্বকের জয়জয়কার এখন সারা বিশ্বে। আর সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে যদি ঘন, ঝলমলে এক ঢাল চুল থাকে, তবে তো সোনায় সোহাগা।
বিট ব্যবহৃত হচ্ছে ত্বক ও চুলের যত্নে বানানো বিভিন্ন প্রাকৃতিক রূপচর্চা পণ্যে, ছবি: উইকিপিডিয়া
প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে রূপচর্চা বিষয়ে যাঁরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলেছেন, তাঁরা কিন্তু বিট নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট জোর দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে বিটের ব্যবহার হচ্ছে প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ারের পণ্যগুলোয়। আবার বিটে প্রাকৃতিক লাল রঞ্জক পদার্থ থাকায় ত্বক ও ঠোঁট রাঙাতেও অনেক মেকআপ কোম্পানি বিট চূর্ণ ব্যবহার করছে। আমাদের স্বাভাবিক ত্বক, রূপলাবণ্য আর চুলের বাহারকে আরও সুন্দর ও মোহনীয় করে তুলতে বিটের ব্যবহারগুলো দেখে নেওয়া যাক।
ত্বক ও চুলের যত্নে বিট খাওয়া
প্রকৃতপক্ষে, ভেতর থেকে পরিচ্ছন্ন, সুস্থ, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও নীরোগ ত্বক আর চুলই সুন্দর দেখায়। নয়তো শুধু সৌন্দর্যবর্ধকসামগ্রী আর প্রসাধনী কোনো কাজে আসে না। এই নাগরিক জীবনে পরিবেশদূষণ, খাদ্যে ভেজাল, অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি কারণে আমাদের ভেতরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন টক্সিন ও ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হচ্ছে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া, ত্বক ও চুলের রূপলাবণ্য হারিয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া—সবকিছুর জন্য এসব বিষাক্ত অবস্থা অনেকাংশে দায়ী বলে ধরা হয়।
বিট ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে
তাই ভেতর থেকে আমাদের দেহমনকে বিশুদ্ধীকরণের জন্য প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ডিটক্সিফিকেশন করতে পারে এমন খাদ্য উপকরণ গ্রহণ করা এখন খুবই প্রয়োজন। এই নিরিখে, বিটালাইন নামক ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের খনি বিটরুট আমাদের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত। এ ছাড়া এর আঁশ ও পানি হজমে সহায়তা করে বলে ত্বকে ব্রণ বা ফুসকুড়ি খুব কম ওঠে। এর ভিটামিন সি ত্বকের এবং ফলিক অ্যাসিড চুলের যত্নে অনন্য। আবার বিটের গ্লুটাথিওন নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট লিভারের কার্যকারিতা ভালো রাখে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। বিটের এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট লিভারের সমস্ত ক্ষতিকর বাই প্রোডাক্টকে দূর করতে সহায়তা করে। এতে ত্বকও ভালো থাকে।
বিটের তেল
নারকেল তেলে বিটের নির্যাস মিশিয়ে তৈরি হয় বিট এসেনশিয়াল ওয়েল। এই তেল চুলের গোড়া ও ত্বকে মেসেজ করে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এই তেল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সাবানও বানানো হয়।
বিটের নির্যাস মিশিয়ে তৈরি হয় বিট এসেনশিয়াল ওয়েল
বিটের স্কিন সিরাম
বর্তমান যুগে স্কিন সিরাম রূপচর্চায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সিরামে প্রয়োজনীয় উপাদানটিকে বেশি পরিমাণে অবিকৃতভাবে ত্বকে বা চুলে লাগানো হয়। বিটরুট দিয়ে বানানো স্কিন সিরাম বিশ্বব্যাপী এখন খুবই জনপ্রিয়। বিটে আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন ও মিনারেল এত ভালোভাবে আছে যে একে সিরাম তৈরি করার জন্য রূপবিশেষজ্ঞরা খুবই উপযোগী মনে করেন। উজ্জ্বল ত্বক এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করার জন্য বিটের সিরাম ব্যবহার করা হয়। এতে ত্বকের দাগও দূর হয় বলে এই সিরাম ব্যবহারকারীরা মনে করেন।
বিটের ফেসপ্যাক
বিটের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষঙ্গ মিশিয়ে তৈরি করা যায় ত্বক চর্চার ফেসপ্যাক, ছবি: উইকিপিডিয়া
বিটের সঙ্গে চালের গুঁড়ো, দুধের সর, দই, গোলাপ জল অথবা মুলতানি মাটির মতো ক্লে মাস্ক মিলিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকে টানটান ভাব ও লাবণ্যময় আভা ফুটে ওঠে। বিটের ভিটামিন সি কোলাজেনের আধিপত্য বাড়িয়ে ত্বককে সুস্থ-সুন্দর করে তোলে।
চুলের যত্নে বিটের রস
সরাসরি চুলের গোড়ায় নারকেল তেলে মিশিয়ে বিট জুস মেসেজ করতে হয়। খুশকিমুক্ত, মজবুত গোড়াযুক্ত চুল পেতে এই মেসেজ অনেক কার্যকর বলে অনেক স্যালন এক্সপার্ট মত দিয়ে থাকেন। চুল পড়াও কমে আসে বিট ব্যবহারে।
টোনার হিসেবে ঠান্ডা বিট জুস
বিট জুস মেকআপ তোলার টোনার হিসেবে ভালো কাজ করে, ছবি: উইকিপিডিয়া
মেকআপ তোলার পর বা মুখ ধুয়ে একেবারে রোমকূপ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে ত্বকের জন্য টোনার ব্যবহার করা খুব উপকারী। এই টোনার হিসেবে ঠান্ডা, ফ্রিজে রাখা বিট জুস তুলায় নিয়ে মুখ ও গলা–ঘাড়ে লাগানো যায়। এতে ত্বক পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোমকূপ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ভিটামিনও পৌঁছে যায়।
ত্বক ও ঠোঁট রাঙাতে বিট
প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ও ঠোঁট রাঙাতে বিট ব্যবহার করা যায়
বিটের রং অপূর্ব! কার না মন চাইবে সেই রঙে নিজেকে সাজাতে? বহু বছর ধরে বিখ্যাত ব্রিটিশ হারবাল স্কিন কেয়ার ও প্রসাধনী কোম্পানি ‘দ্য বডি শপ’সহ আরও অনেকে বিটচূর্ণ ব্যবহার করে ব্লাশার, রোজ, লিপ কালার, আইশ্যাডো বানায়। এমনকি আমরা নিজেরাই বিটের রস, গ্লিসারিন, শিয়া বাটার ইত্যাদির সমন্বয়ে লিপবাম বানাতে পারি। শীতের এই শুষ্ক আবহাওয়ায় ঠোঁট বিটের লিপবামের রঙে রাঙিয়ে বিটরঙা শাল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়াই যায় কুয়াশাঘেরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।