What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব (1 Viewer)



।। অষ্টম পর্ব।।


সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। ডায়েরি শেষ করে এনেছি প্রায়। শেষ দিকটা বড় করুণ। বলেন্দ্র মোহনের বল কমে গেছে। শারীরিক শক্তি সামর্থ্য তেমন নেই। "কঠিন যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত শুয়ে শুয়ে দিনাতিপাত হয়। ....বড় অন্যায় করিয়াছি মণির প্রতি। ....একবার যদি বউমার দেখা পাইতাম তাহা হইলে মার্জনা ভিক্ষা চাইতাম....আমি জানি বউমা আমার জগদ্ধাত্রী আমার প্রতি মণির যত ঘৃণাই থাকুক বৃদ্ধ সন্তানটিকে তিনি ফিরাইয়া দিতে পারিতেন না....।"
মা চা নিয়ে এল।বউমা মানে আমার মা বলেন্দ্র মোহনের জগদ্ধাত্রী।ভাল করে মাকে দেখলাম,অন্য রকম মনে হল।জিজ্ঞেস করলাম,মা তোমাকে একটা কথা বলবো?
কি কথা? শোন মনু যেখানেই যা্স অত রাত করে ফিরবি না।
ঠাকুরদা যদি তোমার কাছে ক্ষমা চায় তুমি তাকে মাপ করতে পারবে?
যত আজেবাজে কথা। আমার কাজ আছে--।
মা বলো না মা।মাকে জড়িয়ে ধরে আমি বায়না করি।
মা কি যেন ভাবেন,শোন মানু দোষেগুণে মানুষ--সব সময় মানুষের ভাল দিকটা দেখবি তাহলে দেখবি পৃথিবী কত সুন্দর।তোর বাবাকে বলেছিলাম একবার খোজ নিতে--। মেয়েদের তোরা মানুষ বলে ভাবলে তো? মার গলা ধরে আসে।
আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। সত্যি মা আমার জগদ্ধাত্রী। বলেন্দ্র মোহনের চিনতে ভুল হয়নি। এখন একবার বেরোতে হবে। দেখি অনুরাধাদি কি কাজ দেয় আবার? কবিরা খুব সংবেদনশীল হয় শুনেছি।
অনুরাধাদি সেজেগুজে কোথাও বের হচ্ছে মনে হল।খুব সাদামাটা সাজগোজ। দীর্ঘদেহি চওড়া পিঠের উপর ছড়ানো একরাশ কালো চুল। কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ।দময়ন্তীর চুল কাঁধ অবধি ছোট করে ছাটা।
কোথাও যাচ্ছো?
হ্যা তোর জন্য অপেক্ষা করছি,চল।
কি কাজ দেবে বলেছিলে তুমি?
এইতো কাজ।
হাটতে হাটতে স্টেশন অবধি গিয়ে ট্রেনে উঠালাম।দুটো স্টেশন পর মাজদিয়া। কলকাতার বিপরীত দিকে,আগে এদিকে আসি নি। কলকাতায় গেছি অনেকবার।অনুদি বলেছিল দুটো কাজের কথা,ওর সঙ্গে যাওয়া হচ্ছে এক নম্বর। স্টেশন থেকে বেরিয়ে রিক্সা স্ট্যাণ্ড,তারা রিক্সা নিয়ে এগিয়ে আসতে অনুদি বলল, আজ হেটে যাবো।সঙ্গে ভাই আছে।
অনুদি মনে হল প্রায়ই এদিকে আসে।পাকা রাস্তা ছেড়ে কাচা রাস্তায় নামলাম। আম-জাম-তেতুল-বকুল-কদম-শিমুলের ঘন নিবদ্ধ জটলা।নীচে আশ শ্যাওড়া -আকন্দ-গোয়ালালতা-ভুতচিংড়ের ঠাস বুনট তার মধ্য দিয়ে সুঁড়ি পথ।
মনা ভাল লাগছে না?
কোথায় যাচ্ছি বললে নাতো?
সাসপেন্স।গেলেই দেখতে পাবি।
বিশাল ভাঙ্গাচোরা জীর্ণ বাড়ির নীচে এসে যাত্রা শেষ হল।বাড়ির সামনে আগাছায় ভরা জঙ্গল।ভিতরে ঢুকে দেখলাম ক্ষয়া ক্ষয়া সিঁড়ি উপরে উঠে গেছে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে একটা বৈঠকখানা গোছের ঘর।পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বোঝা গেল ঝাড়পোছ হয়। আমরা ঢুকতে পাশের ঘর থেকে একটি বছর কুড়ি-বাইশের ফুটফুটে সুন্দরি মেয়ে বেরিয়ে এসে বলল, দিদি আপনি?
মেয়েটি কুমারী না বিবাহিত বোঝার উপায় নেই।অনুদি বলল, তোর ছেলে কোথায়?
মেয়েটি হেসে বলল, দস্যিপনা করে এখন মার কাছে ঘুমোচ্ছে।দাড়ান,আনছি।
না থাক ঘুমোক।মাসিমার শরির কেমন আছে?
ভিতর থেকে কে যেন ডাকলেন, কে এলরে ইন্দ্রাণী?
অনুদি এসেছেন মা।
অনুদি আমার কাছ থেকে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে তার ভিতর থেকে একগোছা টাকা বের করে ইন্দ্রাণীর হাতে দিল। একটু ইতস্তত করে টাকাটা নিয়ে বলল,দিদি মামলা কতদিন চলবে? আর ভাল লাগছেনা।
তোকে ওসব ভাবতে হবেনা। তোকে যা বলেছি মন দিয়ে কর। পিএসসি পরীক্ষা এগিয়ে এল।তোর উপর অনেক ভরসা আমার।
মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে ইন্দ্রানি,তারপর বলে ,দিদি বোসো চা করি।
না বসবোনা,অনেক কাজ আছে।আসিরে।
নীচে নামতে একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে এল, আমি কুদ্দুস।
ওঃ ভাইজান? কেমন আছেন?
আপনি এসেছেন দেখে আসলাম।
কোন অসুবিধে হচ্চেনা তো?
দিদিমণি আপনি কিছু ভাববেন না।আপনার ভাইজান থাকতে কোন হারামি ওদের ক্ষতি করতে পারবে না।
সেই ভরসাতে আমি নিশ্চিন্তে যেতে পারছি।কোন দরকার হলে আমার স্কুলে চলে আসবেন। এখন আসি?
পাখিরা বাসায় ফিরে গেছে, একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে। এবার অন্য পথে চলেছে । ক্রমশ রহস্যময়ী হয়ে উঠছে অনুদি।
কিরে অত দূরে থাকলে কথা বলবো কি করে? পাশে পাশে আয়।
বড় বড় পা ফেলে অনুদির পাশে যেতে আমার কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল, কেমন দেখলি?
কিসের কথা বলছো?
আমি ইন্দ্রাণীর কথা বলছি।
মহিলা বেশ সুন্দরি।
ইন্দ্রাণী পলাশ পুরে থাকতো,আমার ছাত্রী। ওর রূপই ওর কাল হয়েছে।
আপনা মাংসে হরিণা বৈরী। আমি চর্যাপদের শ্লোক আওড়ালাম।
বাঃ বেশ বলেছিস তো। রূপই মেয়েদের শত্রু। ক্লাস টেনে উঠে এক ঠগের পাল্লায় পড়েছিল,তার বোলচালে ভুলে বিয়ে করে।পরে জানা গেল ছেলেটির কোন উপার্জন নেই বেকার ইন্দ্রাণীকে বিপথে নেবার চেষ্টা করে।বুদ্ধিকরে তার খপ্পর থেকে বেরিয়ে আমাকে সব জানায়।ডিভোর্সের মামলা চলছে,আমি ওকে নিজের পায়ে দাড় করাবার চেষ্টা করছি।আমার বিশ্বাস ও পারবে।
কিন্তু আমাকে এখানে আনলে কেন তা কিন্তু বলনি।
তুই ওকে বিয়ে করতে পারবি?
কেন পারবো না?
বিয়ে করে খাওয়াবি কি?
সেই একটা সমস্যা। অনুদি আমি একটা অপদার্থ আমাকে দিয়ে তোমার কোন কাজ হবেনা।
কি করে বুঝলি?
বোজোদি বলত গোসাই তোমার বড় দোষ তুমি বানিয়ে কথা বলতে পারো না।
অনুদি ভ্রু কুচকে আমাকে লক্ষ্য করে কি যেন বোঝার চেষ্টা করে। তারপর বলে, একটা কথা বলি হয়তো একটু রুঢ় শোনাবে।তুই একটা অলস গা-বাচানো স্বার্থপর মায়ের কষ্ট না-বোঝা কি বলবো যাচ্ছেতাই--।
থাক আর বলতে হবেনা।অনুদি তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করে আনন্দ পেতে চাও--পাও। কিন্তু আমার জন্য চিন্তা করনা।
কি জানি কেন চিন্তা করছি? আসলে আমি জীবনের অপচয় সহ্য করতে পারিনা।মনুষ্যত্বের স্খলন আমাকে যন্ত্রণা দেয়।
অনুদি কবি তাই হয়তো উপলব্ধিগুলো এত সুন্দর করে প্রকাশ করতে পারে। আমরা একটা নদীর কাছে চলে এসেছি। নদীর ধারে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত। চাদের আলোয় ঝিলমিল করছে নদীর জল।
এটা কি নদী অনুদি?
নদীর নাম রূপাই।হিজলতলিতে একে দেখেছিস অন্য রূপে।
গদ গদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অনুদি।আমার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,তুই সিগারেট খাস?
কখনো খেয়েছি এক-আধটা।
মাঝে মাঝে মন ভারাক্রান্ত হলে এখানে আসি।বসে বসে শুনি রুপাইয়ের রূপ কথা।কত কথা বলে যায় নীরবে।
ব্যাগের ভিতর থেকে সিগারেট বের করে আমাকে একটা দিল,নিজেও একটা ঠোটে গুজে ধরাল। ইতিপুর্বে অনুদিকে সিগারেট খেতে দেখিনি।অনুদি আমার দিকে হেলে বসেছে বুকের আঁচল খসে পড়েছে খেয়াল নেই।কবিদের জীবন যাপনই আলাদা।একরাশ ধোয়া ছেড়ে অনুদি আবৃত্তি করে,
নদীর বাতাসে শোন বিলাপের ধ্বনি
বালির অতলে জল কাপে নিরবধি
আমিও এসেছি আজ রুপাইয়ের তীরে
তোমার পায়ের চিহ্ন খুঁজে অগোচরে
আমি শুধু শূন্য গুনি, গুনে মন ভোর
প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।

আকাশে চাঁদের সভা বসে গেছে। কি সুন্দর লাগছে দেখতে অনুদিকে চাদের আলোর সিলুয়েটে। অনুদি কার পায়ের চিহ্ন খুঁজে ফিরছে?মুগ্ধ হয়ে অনুদিকে দেখি
আধার নেমে এসেছে। অনুদিকে এক ঘোরের মধ্যে মনে হয়। দুজনে বসে আছি পাশাপাশি। রুপাই নাকি রূপকথা বলে? অদ্ভুত লাগে অনুদির কথা। জিজ্ঞেস করি ,তুমি রুপাইয়ের কথা শুনতে পাও?
অনুদি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন, শোনা যায় না উপলব্ধি করতে হয়। দুই পাড়ে নিত্য ঘটে চলেছে কত অত্যাচার অবিচার অনাচার তার নীরব সাক্ষী এই রুপাই। রুপাই আমাদের মায়ের মত তা সত্বেও অকৃতজ্ঞ-পাষণ্ড সন্তানদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি রুপাই।স্নেহ-মমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে।
নতুন কথা শুনছি।এইসব কথা যেন আমার বুকে চাপা ছিল এতদিন।অনুদির কথায় যেন দরজা খুলে গেল।
তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? অসুবিধে থাকলে বলিস না।
কি কথা বলো,তোমাকে আমি সব কথা বলতে পারি।
ব্রজবালার সঙ্গে তোর কেমন সম্পর্ক ছিল?
জানো অনুদি বোজোদি আমাকে খুব ভালবাসতো--।
তা নয় তুই কিছু করিস নি তার সঙ্গে?
অনুদি কি ইঙ্গিত করছে? অনুদি আর পাঁচজনের মত নয়।বোজোদির কথা মনে পড়ল।লাজুক গলায় বললাম, জানো অনুদি, বোজোদি বলতো, গোসাই তোমার-আমার একদিন মিলন হবে। বিশে-কেলোরা আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিয়ে বাবার কাছে মার খাইয়েছে।জানো আমার মা বিশ্বাস করেনি এমন কি দময়ন্তীও--।
তুই কোন মেয়ের সঙ্গে কোনদিন কিছুই করিস নি?
কি জানতে চাইছে অনুদি? হঠাৎ এসব কথা জিজ্ঞেস করছে কেন? কিছু কি শুনেছে?
থাক তোকে বলতে হবেনা।অনুদি প্রসঙ্গ বদলাতে চায়।
অনুদি নদীর দিকে তাকিয়ে বলে, তোর মধ্যে কোন হিপোক্রিসি নেই তুই খুব সরল। তোর এই গুণ মেয়েদের আকর্ষণ করে বেশি।
কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি কথাটা বলিনি।
মিথ্যে করে বানিয়ে বলতেও পারিস নি।
বলিনি, শুনলে আমাকে ঘেন্না করবে।বিশ্বাস করো আমি ঘুমিয়েছিলাম,রেবতী বউদি জোর করে--।
কে রেবতী?
পলাশপুরে থাকে অতুলদার বউ। অতুলদা তাকে সুখি করতে পারেনি। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি আচমকা--।
ওই একবার? আর কখনো কারো সাথে--।
মলিনাবৌদি--
অনুদি অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে,যার স্বামী জেলে আঁছে?
হ্যাঁ। একদিন একটা পুটুলি আমাকে রাখতে দিল। কদিন পর সেই পুটুলি ফেরত দিতে গেলাম--।
কি ছিল পুটুলিতে?
তখন জানতাম না পরে জেনেছি--সোনার বিস্কুট ছিল।
ও ঐজন্য পুলিশ কিছু পায়নি?তুই খুব ঝুঁকির কাজ করেছিস অবশ্য না জেনে--।
মলিনাবৌদি কি রকম আকুতি-মিনতি করতে লাগল তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। ভীষণ কষ্ট হল আমি না করতে পারলাম না। অনুদি তোমার খুব ঘেন্না হচ্ছে তাই না?অনুদি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে তারপর স্মিত হেসে আমাকে আচমকা বুকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ চুমু দিয়ে বলল, আমার কাছে তোর সম্মান অনেক বেড়ে গেল। তুই এক নতুন অভিজ্ঞতা তোকে কথা দিতে হবে আমি যা বলবো তুই করবি?
কঠিন কাজ না হলে করবোনা কেন?
অনুদির বুকের উষ্ণতায় মন সতেজ হয়ে উঠল।
এবার ওঠ,তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরতে হবে। পরশুদিন একটা বই প্রকাশ উপলক্ষে বাড়িতে কয়েকজনকে ডেকেছি--অনেক কাজ বাকি।
কি হবে সেখানে?
কবিরা আসবে, কলকাতা থেকেও আসবে কবিতা-পাঠ আলোচনা--তুই আসবি?
আমি কি করবো?আমি কি কবিতা লিখি?
শুনতে ভাল লাগেনা? শুনবি--।চল, এখান থেকে স্টেশন বেশি দূর না।
অনুদির হাত আমার কাঁধে একটা সুন্দর গন্ধ অনুদির গায়ে। একসময় অনুদি বলে, তুই আজ আমাকে যা বললি আর কাউকে বলবি না। তুই জানিস ব্রজবালাকে কে খুন করেছে?
মলিনাবৌদি বলেছে নকুড়দালাল রেপ করে খুন করেছে।
মলিনা কি করে জানলো?
সঙ্গে কেলোরা ছিল।ওদের সঙ্গে বৌদির খুব ভাব।বোজোদি কারও কোনো ক্ষতি করেনি।
মলিনাকে এড়িয়ে যাবি,কোথা থেকে বিপদ আসে কে বলতে পারে।
আমার কাঁধে অনুদির ঝোলা তার উপর কাঁধে অনুদির হাত চলতে অসুবিধে হচ্ছে।কিছুক্ষণ নীরবে চলার পর অনুদি জিজ্ঞেস করে, তুই কাউকে কোনদিন ভালবেসেছিস?
ওসব বিলাসিতা আমাকে মানায় না।
না মানাবার কি আছে?
বারে আমার কি টাকা আছে?টাকা না থাকলে কে আমাকে ভালবাসবে বলো?
তুই এত জানলি কি করে?
দাদাকে দেখলাম না? বড়লোকের মেয়ে দেখে সব ভুলে গেল।
সব মেয়ে টাকার জন্য ভালবাসেনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে অনুদি।
মনে মনে ভাবি অনুদির দুঃখের ভাগ আমি কোনোভাবে আমি কি নিতে পারিনা? অনুদি বড় চাপা নিজের দুঃখের ভার কাউকে শেয়ার করতে চায় না। বড় রাস্তায় পড়তে অনুদি কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বলল, দে আমার ব্যাগ দে।
ট্রেনে উঠে অনুদি গম্ভীর অন্য চেহারা। হিজলতলিতে নেমে বলল, পরশু আসবি কিন্তু অনেক কথা আছে।
রিক্সার প্যাক প্যাক ধ্বনিতে মুখর স্টেশন চত্বর। মা বলেছে বেশি দেরি করবিনা। দ্রুত পা চালালাম বাড়ির দিকে। মেয়েদের বুকের উষ্ণতা কি প্রেরণা সঞ্চার করে? রুপাইয়ের তীরে অনুদির বুকে মাথা রেখে সেরকম অনুভূতি হল। রমেশদার বাড়ির কাছে এসে থমকে দাঁড়ালাম।জানলায় দাঁড়িয়ে মলিনাবৌদি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।দেখলেই আমাকে ডাকতে পারে।অনুদি বলেছে এড়িয়ে চলতে আমি একটু ঘুরে অন্য পথ ধরলাম।
সব মেয়ে টাকার জন্য ভালবাসেনা।তাই কি?জানি না অনুদি কোন ভালবাসার কথা বলল।বোজোদি আমাকে ভালবাসতো,খাওয়াতো কিন্তু কোনোদিন হাত পেতে কিছু চায়নি।বলতো গোসাই তোমারে চোখে দেখলেই আমার শান্তি।শুধু চোখের দেখাতেই কি শান্তি পাওয়া যায়? আর কোনো চাহিদাই নেই? অনেকক্ষন না দেখলে বা ফিরতে দেরী হলে মা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে দেখেছি।ফিরলে অনুযোগ করতো, সারাদিন কোথায় থাকিস,মার কথা মনে পড়েনা?বেলা হচ্ছে দেখে কি দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
মাকে কেমন নতুন মনে হয়।অকৃতজ্ঞ পাষণ্ড সন্তানদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি।অনুদির কথাগুলো মনে পড়ল।মায়েদের ভগবান অন্য ধাতু দিয়ে গড়েছে।
 


||নবম পর্ব।।


রুপাই নদী আমার কাছে নতুন নয়, কাল অনুদি আমাকে দেখালো রুপাইয়ের এক নতুন রূপ। কবিরা এভাবেই দেখে তাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা সাধারণ ঘটনাকে। বলেন্দ্র মোহনের ডায়েরি পড়তে পড়তে যেভাবে বিস্মৃত অতীত জীবন্ত হয়ে ওঠে চোখের সামনে রুপাই যেন নিরন্তর লিখে চলেছে সেইভাবে সময়ের দিনলিপি। মলিনাবৌদির কথা শুনে অনুদি কিছু মনে করেনি।মলিনাবৌদির থেকে অনুদির স্পর্শ আলাদা। নিজের বুকে আমার মাথা চেপে ধরে আদর করেছিল।সুর্য বা আগুণের তাপ নয় অনুদির বুকে এক অন্য রকম উষ্ণতা যা মনকে উজ্জীবিত করে।সব মেয়ের বুকেই এরকম উষ্ণতা থাকে? বোজোদি যখন জড়িয়ে ধরতো এরকম হত।ঠোটে স্পর্শ এখনো যেন লেগে আছে। ভাবছি একবার লাইব্রেরিতে ঘুরে আসবো, বরেনদার সঙ্গে কথা বলতে বেশ লাগে।বরেনদা কবি নয় অফিস থেকে ফিরে লাইব্রেরি খুলে বসে বইয়ে ডুবে থাকেন সারাক্ষণ।আমাকে দেখেই বরেনদা জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার মনোজমোহন? অনেকদিন পরে এলে? দাদার সঙ্গে যোগাযোগ হল?
শুনেছি দাদা এদেশে ফিরেছে।এখনো যোগাযোগ হয়নি।
কাল কোথায় গেছিলি?
ছোটো অঞ্চল কোনো খবর চাপা থাকে না বললাম,অনুদির সঙ্গে মাজদিয়া। রুপাইনদী ওদিকটা অন্যরকম। আপনি দেখেছেন বরেনদা?
হিজলতলিতে অনেক ময়লা জমেছেরে--নদীর চেহারা বদলে দিয়েছে।আক্ষেপের সুর বরেনদার গলায়।
বরেনদার কথা কখনো কখনো দুর্বোধ্য মনে হয় বুঝতে পারিনা।তা হলেও শুনতে ভাল লাগে। একটা বই পালটে বেরোতে যাবো বরেনদা জিজ্ঞেস করেন, সেদিন মানিকের দোকানে কি হয়েছিল রে?
মনে পড়ল সেদিন কেলোর সঙ্গে গোলমালের কথা। বললাম, মানিকদার সঙ্গে কথা বলছি কেলো এসে ফালতু চমকাতে এল--।
ওদের এড়িয়ে চলাই ভাল,সমাজের দুষ্ট ক্ষত। তারপর কি ভেবে বললেন, গায়ে ময়লা পড়লে তো গা ঝাড়া দিতেই হবে।
লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে পার্টি অফিস অতিক্রম করে কিছুটা যেতেই ভোলা এসে দাঁত বের করে বলল, মনাদা খেল জমেছে।হি-হি-হি।
তোর চাকরির কিছু হল?
ধ্যুৎ কল্যাণদা দেবে চাকরি? ফিস ফিস করে বলল, এবার কল্যানদার ক্যালানি খাবার সময় হয়ে এসেছে।হি-হি-হি।
কে ক্যালাবে?
নকুড় দালালের সঙ্গে কিচাইন হয়ে গেছে,শালা পালটি খেয়ে এখন রঞ্জিতদাসের গ্রুপে ভিড়েছে,হি-হি-হি।
ভোলা এসব কি কথা বলছে?ওর এতে এত আনন্দ কিসের? ভোলার বিধবা মা লোকের বাড়ী কাজ করে ছেলের মুখে অন্ন যোগায়।মা চিরকাল থাকবেনা,কি করবে তখন ভোলা, কে দেখবে ওকে? বললাম, তোর এসব কথায় কাজ কি? চিরকাল চামচাগিরি করে কাটাবি? কিছু একটা করার চেষ্টা কর।
ভোলার মুখ করুণ হয়ে যায়। ভোলাকে রেখে এগিয়ে যাই 'কিছু একটা কর' কথাটা কানের মধ্যে অনুরণিত হতে থাকে। আমি কি ভোলার থেকে আলাদা? খুব অসহায় মনে হয় নিজেকে। মনে হয় রুপাইয়ের ধারে গিয়ে বসে রূপকথা শুনি।
মনাদা-মনাদা।
পিছন ফিরে দেখলাম ছুটতে ছুটতে আসছে ভোলা। আবার কি গোপন কথা বলতে আসছে।হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল,তোমাকে ডাকছে।
তোকে বলেছি না আমি কারো হুকুমের গোলাম না?
যাঃ বাবা আমাকে বলছো কেন? দিদিমণি বলল তাই বললাম। ভোলা একটু মনক্ষুন্ন।
দিদিমণি? তাকিয়ে দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে আছে অনুরাধাদি। কাছে যেতে বলে,কানে আজকাল কম শুনিস নাকি?
আমি আজকাল কম শুনি কম দেখি, অনুদি আমি দিনদিন যাচ্ছেতাই হয়ে যাচ্ছি।
যা বলছি মন দিয়ে শোন,খালি পাকা-পাকা কথা। ভেবেছিলাম সকালে আসবি,তোর কিসের যে এত ব্যস্ততা বুঝিনা।আজ তো হলনা--কাল সক্কালে উঠে শিয়ালদা এই ঠিকানায় চলে যাবি। সুদেষ্ণা আমার বন্ধু, ওকে এই বইটা আর চিঠিটা দিবি। কি বলে মন দিয়ে শুনবি।কিরে বুঝেছিস?
বইটা নিয়ে দেখলাম প্রচ্ছদে লেখা 'রুপাইয়ের রুপকথা।' তার নীচে অনুরাধা বসু।
তোমার বই?
হ্যাঁ। কাল অবশ্যই যাবি।সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে আসবি, মনে আছে তো?
সেই কবিদের ব্যাপার? আমি কি করবো বলো?ইতস্তত করি।
আমি বলছি তুই আসবি। একটা জিনিস পরীক্ষা করে দেখতে চাই।
অনুদির চোখে রহস্যের আলো ঝিলিক দিয়ে গেল। কবিদের বোঝা মুস্কিল, কখন যে কি মুডে থাকে।বুকের উষ্ণতার কথা মনে এল।
ডাক্তার সেনের অ্যাটেনড্যাণ্ট নিরঞ্জন বাবু তক্কে তক্কে ছিলেন বোধহয়, চেম্বার অতিক্রম করতে যাব এসে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই রাস্তা দিয়ে যাও না আজকাল?
মাঝে মাঝে যাই,কেন?
একবার উপর থেকে ঘুরে যাও।
আরেক দিন যাবো।আজ দেরী হয়ে গেছে।
গরীবকে কেন বিপদে ফেলবে? দেখা দিয়েই চলে যেও।
এর মধ্যে বিপদের কি আছে?বলছি তো আরেকদিন যাব।
মালিকের মেয়ে বলে কথা--কদিন ধরে বলেছে--।
নিরঞ্জন বাবু মানুষটা খারাপ নয়।এতকরে বলছেন বয়স্ক মানুষ।উপরে উঠে গেলাম। বসার ঘরে কেউ নেই। আমি ঢুকতে মিসেস সেন এলেন বললেন,অনেকদিন পরে এলে।কেমন আছো?
ভালই।আপনি?
ওই একরকম। দিয়া তোমার খোজ করছিল।তোমার মোবাইল নেই?
বেকার ছেলে মোবাইল দিয়ে কি করবো?ও কলেজ থেকে ফিরেছে?
পরীক্ষা হয়ে গেছে এখন তো কলেজ যাচ্ছেনা।
জানতাম না দময়ন্তীর ডাকনাম দিয়া। দিয়া মানে কি প্রদীপ? মিসেস সেন চলে যাবার আগে বললেন,তুমি বোসো।
দময়ন্তীর পরীক্ষা হয়ে গেছে? কোনো খবরই রাখিনা। দময়ন্তী ঘরে ঢুকল, পরনে পায়জামা গায়ে ছোট জামা রুক্ষ চুল। আরও বাচ্চা লাগছে দেখতে।ভাবলেশহীন গম্ভীর মুখ। ঝগড়াঝাঁটি করেছে নাকি?ওকে দেখলেই সঙ্কুচিত বোধ করি, কখন কি বলে তার ঠিক নেই।সব সময় গোমড়া মুখো।ওকে একদিন একটা হাসির সিনেমা দেখতে বলবো।চায়ের কাপ হাতে সোফার উলটো দিকে বসে বলল, আজকাল নাকি কাব্যচর্চা শুরু করেছো?
তা পারলে তো নিজের একটা পরিচয় হতো।
কথার যাদুতে আমাকে ভোলাতে পারবেনা। অনুরাধা বসুর সঙ্গে মাজদিয়া যাও নি? তোমার চেয়ে কত বড় জানো?
বড় তো কি হয়েছে?
ন্যাকামি করবে না।যথেষ্ট বুদ্ধি হয়েছে তোমার।
কি যা-তা বলছো? অনুদি আমাকে স্নেহ করে,শুনলে কি ভাববে বল তো?
ভাবলো তো বয়ে গেল! আমি কাউকে ভয় পাইনা।
উরই বাবাঃ দিয়া জ্বলে উঠেছে--।মজা করার লোভ সামলাতে পারিনা।
ভ্রু কুচকে আমাকে দেখে বলে, দিয়া? এ নাম কি করে জানলে?আমি তো তোমায় বলিনি?
তোমার আপত্তি আছে? তাহলে বলবো না।
না আপত্তি নেই কিন্তু সবার সামনে বলবে না। শোনো বেশি চালাকি করবে না, আমাকে তুমি ফাকি দিতে পারবে না জেনে রেখো।
তোমাকে কেন,আমি কাউকে ফাকি দিতে চাইনা। আচ্ছা তুমি বলো আমি কি তোমার সঙ্গে কখনো বিশ্বাস ভঙ্গ করেছি?
তোমাকে বিশ্বাস করিনা তুমি কি বিশ্বাস ভঙ্গ করবে?দেখি তোমার হাতে ওটা কি বই?
দেওয়ার আগে ছিনিয়ে নিয়ে বইটা নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে,সন্দীপ মজুমদার কে?
আমি কি করে বলবো?
কবি অনুরাধা বসু বইটা তোমাকে দেয়নি, জনৈক সন্দীপবাবুকে দিয়েছে? তাকে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব তোমার?
বুঝলাম ক্ষেপে আছে,সব কথার সব সময় গুরুত্ব দিতে নেই।সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনে ঘুরে দেখি ডাক্তার সেন ঢুকছেন।যাক বাঁচা গেল আপাতত জেরা হতে মুক্তি! আমাকে দেখে ডাক্তার সেন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন,তোমাকে আগে কোথায় দেখেছি? কেমন চেনা লাগছে মুখটা।
অনেকদিন আগে বাবাকে নিয়ে চেম্বারে এসেছিলাম--।
ওঃ হ্যাঁ মনে পড়েছে,তোমার এক দাদা বিদেশে থাকে--।তা তুমি কি করো?
বছর দুই আগে গ্রাজুয়েশন করেছি।
এখন তাহলে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন?
আজ্ঞে না।এখন কিছু করিনা।
মানে বেকার? চাকরির চেষ্টা করতে পারো।বেকার বসে বাবার ঘাড়ে--স্যরি তোমার তো আবার বাবা নেই।আচ্ছা তোমরা কি--অন্তত রাস্তার ধারে একটা জায়গা নিয়ে দোকান দিতে পারো? দেখো ভাগ্য কোথায় নিয়ে ফেলে--ভাগাড়ে না রাজপ্রাসাদে?
ফুসে ওঠে দময়ন্তী,তুমি ওকে অপমান করছো?
চুপ করো! অনেক অপমান তোমরা করেছো।আমি আর অপমানিত হতে চাইনা। ডাক্তার সেন চোয়াল চেপে বলেণ আড়চোখে মেয়েকে দেখে ঘরে ঢুকে গেলেন।
দময়ন্তীর মুখ লাল মাথা নিচু করে বসে আছে।
দিয়া আমি কিছু মনে করিনি।
তুমি মনে করবে কেন, আমি মনে করেছি। নিজের মোবাইলটা হাতে গুজে দিয়ে বলে, এইটা রাখো।আমি দিয়েছি কাউকে বোলনা।
এইটা আবার-?দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শেষ করতে পারিনা। অন্যঘরে চলে গেল। মিসেস সেন ঢুকলেন, চা নিয়ে।
তুমি একা বসে আছো? দিয়া কোথায়?
ও পাশের ঘরে গেল। আমি দ্রুত চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম,আমি আসি?
ওমা সেকি!তোমাকে একলা বসিয়ে বুঝিনা বাপু--আচ্ছা বাবা আবার এসো।
আমি চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। দময়ন্তী যেন প্রদীপের মত--দিব্যি জ্বলছে হাওয়ায় নিভু-নিভু আবার দপ করে জ্বলে ওঠে।ড.সেনের কথায় এত ক্ষেপে গেল কেন?
আমি আগে কখনো মোবাইল ব্যবহার করিনি,কিভাবে কি করতে হয় জানি না।রাস্তায় নেমে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি দারুণ জিনিসটা।কাউকে বলতে মানা করেছে দিয়া।কেউ জিজ্ঞেস করলে কি বলবো মাথায় আসে না।হাতের বইটা দেখে মনে পড়ল কাল আবার বইটা দিতে যেতে হবে।যারা বেকার তাদেরই বেশি কাজ করতে হয়।আসলে মেয়েদের মুখের উপর কিছু বলতে পারি না এইটা আমার দুর্বলতা।
 


।।দশম পর্ব।।



স্কুল-কলেজের পাঠ শেষ, কাজ-কম্ম নেই,বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস। সময়মত উঠতে পারবো কিনা দুশ্চিন্তা নিয়ে রাতে ঘুমিয়েছি।সুর্য ওঠার আগেই আমি উঠে পড়লাম ঘড়িতে সবে চারটে বাজে ভাবছি আবার শুয়ে পড়বো কিনা? ঝুঁকি নেওয়া সমীচীন হবে না।যদি ঘুমিয়ে পড়ি ঠিক সময় উঠতে না পারি? বাথরুম সেরে বেরোতে কোথায় যেন পিড়িং করে শব্দ হল। মনে পড়ল কাল রাতে দময়ন্তী একাটা মোবাইল ফোন দিয়েছিল।
অপটু হাতে সুইচ টিপে দেখলাম মেসেজ এসেছে। গুড মর্নিং মন।...দিয়া।
সকাল বেলায় দিয়ার মেসেজ পেয়ে আলোকিত হয়ে উঠল চরাচর।দারুণ তো,দুজনের দেখা হল না কিন্তু কথা এসে গেল।লোকের হাতে মোবাইল দেখেছি কিন্তু হাতে ধরে দেখার সুযোগ হয়নি।ভোর বেলা আমার কথা দিয়ার মনে পড়েছে।কেউ একজন কারো কথা ভাবলে কারই না ভাল লাগে?বিশেষ করে দিয়ার মত সুন্দরী মেয়ে যদি হয়?দিয়ার মুখটা মনে পড়তে মনটা মিইয়ে গেল,গম্ভীর সব সময় রাগী-রাগী ভাব--একটু হাসতে পারেনা?ঐটুকু মেয়ে অত কি চিন্তা তোমার?
শিয়ালদা স্টেশনের খুব কাছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের উপর সন্দীপ মজুমদারের অফিস খুঁজেপেতে অসুবিধে হলনা। ঘরে ঢুকে দেখলাম সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো একটা দেওয়ালে প্রায় ছাদ সমান উঁচু বই ভর্তি তাক।হাফ রাউণ্ড টেবিলের পেটের ভিতর বসে আছেন সুবেশা এক মহিলা।অনুদির বয়সী মনে হল। দেওয়ালে ঈশ্বর চন্দ্র রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দের ছবি।
সন্দীপ মজুমদার?
হ্যা বলুন।আমি তার স্ত্রী সুদেষ্ণা।
আমি মনোজমোহন--।
ও আপনি?বসুন-বসুন। সুদেষ্ণা বললেন।
আমি বসতে বসতে বই এবং চিঠি এগিয়ে দিয়ে বললাম, আপনি আমাকে 'তুমি' বলবেন।
ও শিয়োর।তুমি অনুরাধার ভাই?
একটা ফোন কল রিসিভ করে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,তোমার বাইওডাটা এনেছো?
বাইওডেটা মানে রেজাল্ট? এগিয়ে দিলাম।
মনোযোগ দিয়ে দেখলেন সুদেষ্ণা।সাহেবি পোশাক সুদর্শন চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা এক ভদ্রলোক ঢুকে বললেন,তুমি ব্যস্ত আছো?
সুদেষ্ণা হেসে বললেন,তুমি? এই দ্যাখো তোমার শালি কি পাঠিয়েছে? আর এ মনোজ--।
বহুকাল দেখিনা অনুরাধাকে।আমার দিকে তাকিয়ে বল্লেন,কেমন আছেন অনুরাধা?
ভাল আছেন।
তোমাকে কেন পাঠিয়েছে,বুঝতে পারছো?সুদেষ্ণা জিজ্ঞেস করেন।
কিছুটা পারছি।
বাকিটা তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমরা দুজনে মিলে এই সেন্টারটা চালাই। এটা ছাড়া আমাদের পাচটা ব্রাঞ্চ আছে। মেনলি বিসিএস আইএএস ইউপিএসসি মিস্লেনিয়াস গাইড করি।এছাড়া কয়েকটা ব্রাঞ্চে রেল এসএসসিও গাইড করা হয়। অনুরাধার ইচ্ছে তুমি বিসিএস করো।তোমাকে খাটতে হবে।আশাকরি অনুরাধা না বুঝে তোমাকে পাঠায়নি। তোমার রেজাল্ট দেখলাম--ওকে।
টাকার ব্যাপারে একটু যদি বলেন।
সুদেষ্ণা হাসলেন,তোমাকে সব বলবো। তুমি আগে বলো খাটতে পারবে কিনা।এটা আমাদের প্রেসটিজের ব্যাপার। হ্যাঁ বিসিএস-এ চার্জ ফিফটি থাউসেণ্ড তবে একবারে দিতে হবেনা।
তা হলে বোধহয় হলনা।হতাশ গলায় বললাম।
উঠে দাড়াতে সুদেষ্ণা বললেন,তুমি বড় অস্থির,বোসো।টাকার কথা তোমাকে ভাবতে হবেনা,বোসো।
পাশে দাঁড়িয়ে সন্দিপবাবু বইটা খুলে মনে হল পড়ছেন।সেদিকে তাকিয়ে সুদেষ্ণা বলেন,কি ব্যাপার শালির কবিতায় ডুবে গেলে যে?
ভদ্রমহিলার লেখার স্টাইলটা রিয়েলই প্রশংসার দাবী রাখে। শোনো যে কথা বলছিলাম--একটু ওঘরে চলো--।
যাও যাচ্ছি। শোনো মনোজ তুমি নৈহাটি ব্রাঞ্চে জয়েন করো কাল থেকেই। কয়েকমাস পরেই পরীক্ষা।চা আসছে একটু বসো।আমি একটা কাজ সেরে আসছি।
অনুদিকে শালী বলছে ভদ্রলোক কে?টাকা পয়সার কথা ভাবতে হবেনা--সব তালগোল পাকিয়ে যায়।একটু পরেই চা এল।একা একা বসে চায়ে চুমুক দিতে থাকি।

হিজলতলিতে নামলাম তখন রাত আটটা। আবার ফোন বেজে উঠল,কানে লাগাতে শুনতে পেলাম,কনগ্রাচুলেশন দময়ন্তী--। যাঃ বাবা! কে মেয়েটা? এর আগেও ফোন এসেছে কয়েকবার। এতো এক ঝামেলা হল।এককথা কতবার বলা যায়? আবার পুনরাবৃত্তি করলাম, আপনি ভুল করছেন--। ফোন কেটে গেল। একবার ভাবলাম অনুদিকে খবরটা দিয়ে যাই। কিন্তু এভাবে ভীড়ের মধ্যে যাওয়া ঠিক হবে কি? বাড়ী গিয়ে আসতে হলে রাত হয়ে যাবে।
ভোলার সঙ্গে দেখা,খুব খুশি। হাতে একটা প্যাকেট দেখিয়ে বলল, মনাদা যত রাত হোক তোমাকে যেতে বলেছে দিদিমণি। হেভি খাওয়া-দাওয়া। ভোলা আর দাঁড়ালো না।মনেহল ভোলার হাতে খাবারের প্যাকেট।
স্নান করে নিলাম।মা মুড়ি আর গুড় দিয়ে বলল, একটু পরে চা দিয়ে যাচ্ছি। কোথায় থাকিস সারাদিন?
মুড়ি চিবোতে চিবোতে ভাবছি এতরাতে যাব কিনা? হঠাৎ খেয়াল হয় ম্যাডাম সুদেষ্ণা একটা চিঠি দিয়েছেন অনুদিকে দেবার জন্য। ইশ আসার পথে দিয়ে আসতে পারতাম।না, যেতেই হচ্ছে। চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।মলিনা বৌদির বাড়ির কাছে আসতে সতর্ক হলাম। খানিক এগোতে নজরে পড়ল দুজন পুরুষ-মহিলা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ঘনিষ্টভাবে আলাপরত। একজনেকে চিনতে পারলাম মলিনাবৌদি।রমেশদা ফিরে এল নাকি? রমেশদা বাড়িতেই কথা বলতে পারতো।হাটার গতি বাড়িয় দিলাম।
অনুদির বাড়ির দরজা খোলা, এক ভদ্রলোককে দেখলাম বেরিয়ে যেতে। একটু ইতস্তত করে ঢুকে পড়লাম। মনে হচ্ছে অনুষ্ঠান শেষ,একে একে অতিথিরা চলে যাচ্ছেন। ওদের মধ্যে অনুদিকেও দেখলাম,আমাকে দেখেও যেন দেখেনি এমনভাবে কথা বলছে। একটা টেবিলে দেখলাম কয়েকটা খালি বোতল।কিসের বোতল কিছুটা অনুমান করতে পারি। একটা সুন্দর মাতাল করা গন্ধ ছড়িয়ে আছে সারা ঘরে।সুগতদা-বৌদি কি বাড়ি নেই নাকি? এখন ভাবছি, না-এলেই ভাল হত। চিঠিটা কাল সকালে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হতনা।সবাই চলে গেল আমার দিকে ফিরেও দেখছেনা কেউ। এতক্ষণে অনুদির নজরে পড়ল আমাকে, মৃদু হেসে বলল, দাঁড়িয়ে আছিস কেন,ভিতরে আয়।
মনে হল অনুদির দাড়াতে অসুবিধে হচ্ছে,কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। ইতস্তত করে ঘরে ঢুকলাম। অনুদি জিজ্ঞেস করল,সুদেষ্ণা কি বলল?
আমি চিঠিটা এগিয়ে দিলাম।
কি লিখেছে,পড়।
তোমার চিঠি আমি পড়বো?
তুই আমি কি আলাদা?আমি বলছি পড়।
আমি চিঠি খুলে দেখলাম সংক্ষিপ্ত চিঠি।
জোরে পড়,না হলে বুঝবো কি করে?
"প্রাণ প্রতিম বন্ধু অনুরাধা, শুভ জন্মদিনে সন্দীপ এবং আমার পক্ষ হতে জানাই আন্তরিক শুভকামনা। ছন্নছাড়া জীবন আর কতদিন? পরের জন্য অনেক করেছিস এবার নিজের প্রতি দয়া কর। আমি বলি কি একটা বিয়ে করে জীবনকে শৃংখলার নিগড়ে বাঁধ। সব পুরুষকে এক তৌলে ফেলে বিচার করলে ভুল হবে। সন্দীপ আমাকে দোষারোপ করে এভাবে একটা প্রতিভার অপচয় তুমি কিভাবে সহ্য করো সুষি? একদিন আয় অনেক কথা আছে।ইতি--তোর সুদেষ্ণা।"
চিঠি পড়ে অনুদির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ছল ছল করছে চোখ।জিজ্ঞেস করি, আজ তোমার জন্মদিন? আমাকে বলোনি তো?
ম্লান হেসে অনুদি বলে,তুই ও ঘরে হ্যাঁঙ্গার থেকে আমার কালো নাইটিটা নিয়ে আসবি?বড় ক্লান্ত লাগছে রে।
আমি পাশের ঘরে গেলাম। বুঝতে পারলাম সুগতদা বৌদি কেউ বাড়িতে নেই। হ্যাঙ্গারে পরপর অনেকগুলো নাইটি ঝুলছে। কালো নাইটিটা নিয়ে এঘরে এসে দেখলাম, শাড়ি খুলে ফেলেছে অনুদি,পরনে কেবল পেটিকোট আর জামা। পৌনে ছফুট দীর্ঘ, চুল এলিয়ে আছে পিঠে। অনুদিকে মনে হচ্ছে গান্ধার শিল্পের কোন প্রস্তর খোদিত রমণী মুর্তি।
হা করে কি দেখছিস? নাইটিটা দে।
চেয়ার ছেড়ে হাত বাড়িয়ে নাইটীটা নিতে গিয়ে টাল খেয়ে পড়ছিল।আমি ধরে সামলাবার চেষ্টা করি। একটা হাত অনুদির স্পঞ্জের মত নরম স্তনের উপর পড়ল।
উঃ মাগো এখুনি পড়ছিলাম!
কেন খাও এসব?
তুই বুঝি পছন্দ করিস না?
না তা নয়--পড়লে কি হত বলতো?
পড়বো কেন তুই আছিস কি করতে? পিছনের হুকগুলো খুলে দে।
অনুদি কি বলছে? আমি হুক খুলে দেবো?আমার দিকে পিছন ফিরে বলে, ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে কি বললাম শুনিস নি?
আমার হাত-পায়ে কাঁপন শুরু হল। কান দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে। পিছনে দাঁড়িয়ে কাপা-কাপা হাতে হুক খুলতে থাকি সামনে যেতে ভয় হয় কি জানি কি দেখবো? সামনে যেতে হলনা হুক খোলা হলে অনুদি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, এইতো লক্ষি ছেলে।
উপরিভাগ সম্পুর্ন নগ্ন। বালু পাথরের মত রং,দিয়ার মত ফর্সা নয়। স্তনযুগল ঈষৎ নতমুখী। আমার দৃষ্টি মাটিতে চোখ তুলে তাকাতে পারছিনা। অনুদি গুনগুন করে গান গাইছে 'আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়----।'
অনুদি তুমি শুয়ে পড়ো,আমি আসি--?
শুয়ে পড়বো কিরে, খাবো না? তুই খেয়েছিস?
বেশিক্ষিন দাঁড়ালে কি জানি কি হয়?শরীরের মধ্যে কেমন করছে।এখান থেকে বেরোতে পারলে নিশ্চিন্ত।বললাম, বাড়ি গিয়ে খাবো।
তার মানে? তুই আমার গেস্ট আজ এখানে খাবি।
মা চিন্তা করবে।অনুদি আমি যাই?
মাসিমা চিন্তা করবে কেন? আমার কোন দায়িত্ব নেই? আমি খবর দিয়ে দিয়েছি।
তুমি গেছিলে আমাদের বাড়ি? গলায় বিস্ময়।
পাগল! এই অবস্থায় আমি মাসিমার কাছে যাই? ভোলাকে দিয়ে খবর দিয়েছি।
ভোলা? আমি তো জানতাম ভোলা কল্যানদার চামচা। তোমারও চামচা নাকি?
ভোলা কারো চামচা নয়,ভোলা ক্ষিধের দাস।
খুব সহজ কথা কিন্তু বুকের মধ্যে ছ্যত করে বাজে।আমি ভোলাকে চিনতে পারিনি। অনুদিকে বলি, তুমি ভোলার জন্য কিছু করতে পারো না?
আমাদের স্কুলে একজন পিওন নেবে।দেখি সেখানে ঢোকাতে পারি কিনা?
মনে পড়ল একটু আগে সুদেষ্ণা মজুমদারের চিঠির কথা। 'পরের জন্য অনেক করেছিস--।'অনুদিকে এই মুহূর্তে মনে হয় মুর্তিময়ী করুণা আর দাদার ব্যাবহারে লজ্জিত বোধ করি।
কি ভাবছিস আয় খাবি আয়।
আমার গলা শুকিয়ে এসেছে,খাবো কি? অনুদি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,আয় সহজ করে দিই।
অনুদি আমার গলা জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে চেপে ধরে। নরম বুকে মুখ ডুবে যায়।নিশ্বাস নিতে পারিনা। একটা অবস্থায় সবাই এক। অতৃপ্ত রেবতিবৌদি নিরক্ষর মলিনাবৌদি বিদুষী অনুদিতে কোন ফারাক থাকেনা। আমাকে ছেড়ে দিয়ে অনুদি বলে, তোর নামের মানে জানিস?
মন হতে জাত মনোজ। আমি বললাম।
মনোজ মানে অনঙ্গ কামের দেবতা। তুই খুব সরল এই জন্য তোকে আমার ভাল লাগে। হিপোক্রিটদের আমি দুচোখে দেখতে পারিনা।তুই মন দিয়ে পড়াশুনা কর,অনেক ভরসা তোর উপর। তুই আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ,আমার মুখ রাখিস সোনা। সন্দীপের গাইডেন্সে আমি সিয়োর তুই পারবি।তাড়াতাড়ি খেয়ে নে,তারপর তোকে একটা গল্প শোনাবো।
একটা বোতলে খানিকটা পানিয় ছিল,সেটুকু গেলাসে ঢালল অনুদি,প্রায় আধ গেলাসের উপর।আমি বললাম,আবার অতটা খাবে?
কি করবো,কত দাম জানিস? এককাজ করি দুজনে ভাগ করে নিই?
কিছু হবেনা তো?
কি হবে আমি তো আছি।অনুদি আর একটা গেলাসে অর্ধেক দিল আমাকে।
অনেকদিনের ইচ্ছে একটু স্বাদ নেবার। রাতের দিকে রিক্সাওলারা খায়, সস্তার পানিয়। একচুমুক দিলাম,খারাপ লাগল না। ঝিমঝিম ভাব এল।অনুদিকে বললাম, তোমাকে একটা কথা বলবো?
অনুদি চোখ মেলতে পারছেনা।একটা মাংসের টুকরো মুখে দিতে গিয়ে থেমে গেল।
বললাম, তোমার বন্ধু ঠিকই বলেছেন,তুমি এবার বিয়ে করো।
অনুদি মাংসের টুকরো মুখে দিয়ে চিবোতে থাকে,একসময় আমাকে চমকে দিয়ে বলে, তুই আমাকে বিয়ে করবি?
দময়ন্তী একদিন বলেছিল অনুদি বয়সে আমার চেয়ে বড়। এখন বুঝতে পারছি কেন বলেছিল। কখন এনে দিয়েছি অথচ অনুদি নাইটিটা গায়ে দেয়নি।গা ছমছম করছে।
কিছু বললিনা তো? অনুদি জিজ্ঞেস করে আবার।
আমি তোমার চেয়ে ছোট--।
বউকে বরের চেয়ে জ্ঞানে বুদ্ধিতে বয়সে ছোট হতেই হবে? যাতে চিরকাল দাবিয়ে রাখতে পারে--তাই না?
না মানে আমি বেকার নিজেরই কোন ঠিক নেই,বউকে কি খাওয়াবো বলো?
অনুদি বেসিনে মুখ ধুতে ধুতে বলে,সে সব তোকে ভাবতে হবেনা।আমি আমার বরকে খাওয়াবো।
বুঝতে পারছিনা আমার কি নেশা হয়ে গেছে?যা হচ্ছে সব কি সত্যিই? আমি বললাম, ঠিক আছে তুমি যা বলবে।
অনুদি পেটিকোট খুলতে লাগল। ঐ একটিমাত্র বস্ত্র অনুদির পরনে ছিল।
অনুদি তুমি কি করছো?
যার উপর ভরসা করে কাটাবো সারা জীবন তার পরীক্ষা নেবো না?
পেটিকোট খুলে নীচে পড়ে গেল।সম্পুর্ণ অনাবৃত অনুরাধা বসু। সারা ঘর আলোকিত রূপের ছটায়। মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি। অনুদি এগিয়ে এসে আমাকে উলঙ্গ করল, বাধা দেবার শক্তি নেই আমার।আমি মেঝেতে বসে পা জড়িয়ে ধরে বলি, আমি কি পারবো?
অনুদি আমাকে তুলে দাড় করিয়ে জড়িয়ে ধরল। হাত দিয়ে আমার ধোন চেপে ধরে বলে, বাঃ বেশ লম্বা তো কিন্তু এত নরম কেন?
আমি কি করবো?
ঠিক আছে তোকে কিছ করতে হবেনা,আমিই করছি।
আমাকে খাটে বসিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে ধোনটা মুখে পুরে নিল।আমাকে বলল,তুই আমার কাঁধটা টিপে দে।
অবাক ব্যাপার কিছুক্ষণের মধ্যে শিথিল লিঙ্গ শক্ত কাঠের মত হয়ে গেল। মুখ থেকে বের করে ধোনের দিকে তাকিয়ে অনুদি বলল, সত্যিই সার্থক তোর নাম, তুই মুর্তিমান কামদেব।
প্রসঙ্গ বদলাবার জন্য বলি, তুমি কি গল্প বলবে বলেছিলে--।
তোর মনে আছে? হ্যাঁ বলবো সেই গল্প।তোর ত্রিশূল গেঁথে নিয়ে বলবো।
 
।।একাদশ পর্ব।।


বিয়ের কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার মধ্যে। অনুদির যা উপার্জন তাতে দুজনের চলে যাবে। অনুদির সঙ্গে দাদা যা করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত হবে।কিন্তু সুগতদা? তিনি কি বোনের এই বিয়েতে রাজি হবেন? আর মা-ই বা ব্যাপারটা কি ভাবে নেবে বুঝতে পারছিনা।আলোচনা করা দরকার।দময়ন্তী ঠাট্টা করবে জানি,তা বলে কি চিরকাল অবিবাহিত থাকবো? লোকের কথা অত ভাবলে চলে না। অনুদি জিজ্ঞেস করল,কিরে কি ভাবছিস?
অনুদি তোমার দাদা কি রাজি হবে?
কিসের রাজি?
তোমার-আমার বিয়ে কি সুগতদা মেনে নেবেন?
কিসে আমার সুখ সেটা আমি ঠিক করবো,কে রাজি হল নাহল তাতে কিছু যায় আসেনা।
অনুদির কথায় মনে জোর পেলাম,আবেগে বলে ফেললাম, আমি তোমাকে একদম কষ্ট দেবোনা অনুদি। তুমি যা বলবে তাই করবো।
তুই ভাল করে পড়াশুনা কর বিসিএস টা পাশ কর।আমি আর কিছু চাইনা।
অনুদি বিয়ের পর এপাড়া ছেড়ে চলে যাব অন্য কোথাও।
কেন,অন্য পাড়ায় যাব কেন?
সবাই ক্ষ্যাপাবে।আমার জন্য নয় তোমাকে কেউ কিছু বললে আমার কষ্ট হবে।
অনুদি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।ভীষণ লজ্জা লাগে পা দুটো জড়ো করে আড়াল করতে চেষ্টা করি।অনুদি বলল,আমাকে মন্দ বললে তোর কষ্ট হবে?
লজ্জায় মাথা নীচু করি।
অনুদি আমাকে জড়িয়ে নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। অনুদির নরম শরীরের উপর গালে গাল রেখে বললাম, তোমার সুখের জন্য আমি সব করতে পারি।দাদা তোমাকে কষ্ট দিয়েছে আমি সেরকম করব না বিশ্বাস করো---।
অনুদি আমার তলপেটের নীচে হাত দিয়ে ধোন চেপে ধরে আছে,হাতের মুঠোয় সাপের মত ফুলছে।অনুদি বলল, তুই একটা হাঁদাগঙ্গারাম!তুই নিজেকে নিজেই জানিস না। তুই খনির মত, মাটির নীচে কি সম্পদ লুকানো তার খবর জানবি কি করে?
অনুদির কথার হেঁয়ালি বুঝতে পারিনা,জিজ্ঞেস করি, বিয়ের পর আমরা কোথায় যাব?
শোন এবার গল্পটা শোন।এক রাজকন্যা রাজপুরীতে বড় হচ্ছে। একসময় সে পদার্পন করল যৌবনে। তার বিদ্যা-বুদ্ধ- রুপ-গুণের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল ত্রিভুবনে। স্বর্গ লোকে দেবতাদের মধ্যে শুরু হল তৎপরতা ওই কন্যাকে চাই--চাইই।
তুমি কি আমাকে ছেলে মানুষ মনে করো? রুপকথার গল্প শোনাচ্ছো?
ছেলে মানুষ ছাড়া কি?নাহলে সব কথায় এত সহজে বিশ্বাস করে?শোন যা বলছিলাম--কিন্তু রাজকন্যা এক মানব সন্তানকে মন দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু রাজার এতে আপত্তি, রাজকন্যাও নাছোড়বান্দা--।
তুমি বললে রাজকন্যার খুব বিদ্যা-বুদ্ধি তাহলে এত বোকামি করল কেন?
সত্যিই তুই একটা হাদা-গঙ্গারাম!
অনুদি আমার ধোন নিজের চেরার ফাকে লাগিয়ে বলল, এবার চাপ দে।
আমি পাছাটা উঁচু করে চাপ দিতে অনুদি আঃ-উ-উ করে বলল, আস্তে! কি করছিস--। কি হল চাপ দে।
অনুদি তোমাকে কষ্ট দিতে পারবো না।
ঠিক আছে তুই পা মেলে দিয়ে বোস।
অনুদির কথা মতো দেওয়ালে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসলাম।অনুদি আমার দু-পাশে পাদিয়ে কোলের উপর বসে বাড়াটাকে গুদে ঢোকাবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।আমি এক্টূ ঝুকে বাড়াটা গুদে সেট করে দিলাম।অনুদি দু-পায়ে ভর দিয়ে ঠাপাতে শুরু করল।বাড়াটা শক্ত করে রাখি।অনুদি এক নাগাড়ে ঠাপিয়ে চলেছে।চোখ মুখ লাল,কপালে ঘাম জমেছে,হাপাচ্ছে।
অনুদি তুমি হাপিয়ে গেছো।তোমার কষ্ট হচ্ছে।
হোক তুই চুপ কর।এত বক বক করিস কেন?
অনুদি ঠাপিয়ে চলেছে।মিনিট দশেক হবে হঠাৎ গুদটা চেপে ধরে মনুরে বলে কাতরে উঠল।আমাকে নীচু হয়ে সজোরে জড়িয়ে ধরল।কিছুক্ষন পর সোজা হয়ে বসে জিজ্ঞেস করে,তোর হয়নি? অনেকদিনের কৌতুহল বিষয়টা নিয়ে,আজ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হল।তোর হয়নি?
কিসের অভিজ্ঞতা?
তোর হয়নি তুই কর।
দরকার নেই কিছু হবে না।
আমার দরকার আছে।ভিতরে পড়লে কেমন লাগে বুঝতে চাই।
বুঝলাম শুনবে না।বললাম,তোমার কষ্ট হবে।
এবার তুই করবি।অনুদি চিত হয়ে সুয়ে পড়ল।আমি অনুদির উপর বসে বাড়াটা চেরার মুখে লাগিয়ে ধীরে ধীরে চাপ দিতে থাকি পুঁছ পুঁছ করে আমূল বিদ্ধ হতে লাগল।অনুদির তলপেটের সঙ্গে আমার তলপেট সেটে গেল। অনুদি আমাকে বেষ্টন করে বলল, পাছা নাড়িয়ে ঠাপ দে।
মুণ্ডিটা ভিতরে রেখে বের করে আবার পুরোটা ঢুকিয়ে দিচ্ছি।অনুদি উম-হা-আ-আ উম-হা-আআআ করে শব্দ করছে ঠাপের তালে তালে। দুহাতে ছাঁনচে আমার পাছা।অনুদিকে নিয়ে জীবন কাটানোর স্বপ্নে বিভোর আমার মন। একসময় হা-আআ আআআআআ করে অনুদি সবলে বুকে চেপে ধরে আমাকে। তারপর হাত শিথিল করতে আবার ঠাপাতে লাগলাম।যেন নদিপথে নাও ভাসিয়ে ছলাক ছলাক করে বৈঠা চালাচ্ছি।থর থর করে কেপে ওঠে সারা শরীর তলপেটে যন্ত্রণা অনুভব করি।অর্গল মুক্ত হয়ে তীব্র বেগে বীর্যপাত করে ফেলি।
অনুদি আমার বুকের নীচে ছটফটিয়ে ওঠে।তারপর নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকি দুজনে। কতক্ষন জানিনা,এক সময় অনুদি বলে,এইযে কামদেব এবার ওঠো। বাপরে!তোর অনেকটা বের হয়।আমারও আবার হল।
অন্ধকারে আমরা দুজন যেন আদম এবং ইভ। আলো নেই ভাগ্যিস, ভীষণ লজ্জা করছে।অনুদি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, তোর কোন দোষ নেই।আমিই তোকে বলেছি-। তুই পরীক্ষায় পাস।বুঝলাম, যৌন ক্ষুধা কাতর নিছক একটা জানোয়ার নয়।
পাস করার পর বিয়ে করবে?
তুই রাজকন্যার নাম জিজ্ঞেস করলিনা তো?
কি নাম রাজকন্যার?
দময়ন্তী।তোর কেমন লাগে দময়ন্তিকে?
ও খুব ভাল মেয়ে।কিন্তু জানো আমাকে যা-না তাই বলে সব সময়। তুমি ওর কথা বলছো কেন?তোমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে চাই না,অনুদি আমাকে বিয়ে করবে তো?
বোকা ছেলে।আমি তোকে এমনি বলেছি--।
মানে? মুহুর্তে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।নিজে বলল এখন নিজেই কথা ঘোরাচ্ছে। অভিমানের সুরে বললাম, হ্যাঁ আমি বোকা,হাঁদা গঙ্গারাম! সবাই আমাকে নিয়ে মজা করে--।চোখের জল রোধ করতে পারিনা,স্তন ভিজে যায়।
ছিঃ কাঁদেনা মনা।আমি তোর ভাল চাই--।
ছাই চাও,তোমরা সব স্বার্থপর।আমি বেকার আমি গরীব,খুব বিশ্বাস করেছিলাম তোমাকে। আমাকে ছেড়ে দাও আমি চলে যাবো।
যাবি।এত রাতে কোথায় যাবি? সকাল হোক,এখন শুয়ে পড়।
অনুদি জোর করে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।দময়ন্তীর সন্দেহ মিথ্যে নয়।বয়সে ছোট হলেও অনেক বুদ্ধি ওর।ঠিকই বলে আমি একটা বোকা।অনুদি ঘুমিয়ে পড়েছে।চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ।আমি উঠে বসতে গেলে অনুদি চেপে শুইয়ে দেয়।তাহলে কি ঘুমায় নি?নাকি ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারছে।আমার মাও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সব বুঝতে পারে।বাড়ীতে মা নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে।বলেন্দ্র মোহন মাকে জগদ্ধাত্রী বলেছেন।যে জগতকে ধারণ করে আছে তাকে বলে জগদ্ধাত্রী।সুদেষ্ণাদি বলছিলেন ভাল করে চেষ্টা করলে আমি পারবো।বোজোদির মন্ত্রটা মনে পড়ল,আমার ইচ্ছেশক্তি প্রবল এই শক্তি বলে সকল অসাধ্য আমি সাধন করতে পারি।পারতেই হবে আমাকে,কারো খেলার সামগ্রী হয়ে থাকতে চাই না।
 
অসাধারণ গল্প ভাই, অনেক দিন পরে এমন গল্প পড়লাম, চালিয়ে যান ভাই
 
দ্বাদশ পর্ব




সেদিন ক্লান্ত বিষন্ন মুখে বাড়ী ফিরলাম।একে একে সবাইকে চিনছি। এখন বুঝতে পারছি সত্যিই আমি খুব বোকা। বাসায় ফিরতে মা জিজ্ঞেস করল,তোর অনুদি কাল কি খাওয়ালো?
রাগে গা জ্বলছে মায়ের কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করল না।কি ভেবে মা বলল,মেয়েটা স্বার্থপর নয় যারা ভাল তাদের অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হয়।
ধৈর্য রাখতে পারিনা বললাম,রেবতী বৌদি ভাল দময়ন্তী ভাল অনুদি ভাল---মা তোমার কাছে খারাপ কে বলতো?
মা আমার দিকে অবাক তাকিয়ে বলল,তোর কি হয়েছে বলতো?খালি খারাপ খুজে বেড়াচ্ছিস?
অপ্রস্তুত বোধ করি বলি,তা নয় বলছিলাম কি উপর থেকে দেখে মানুষ চেনা যায়না।
হ্যা একদিক দেখে নয় সব দিক দেখে বিচার করতে হয়।ভাল মন্দ মিশিয়ে মানুষ। নিজের দিকেও দেখতে হয়।তোর দাদা যে ব্যবহার করল তারপরও তোর জন্য ভাবে তার কিসের এত ঠ্যাকা?
আমি আর কথা বাড়ালাম না।যত দেখছি নতুন করে চিনছি মাকে।বলেন্দ্র মোহন মাকে বলেছেন জগদ্ধাত্রী। অবাক লাগে এত কাছে থেকেও নিজের মাকেও ভাল করে চেনা হল না।
দাদা আমাকে চিরকাল অবজ্ঞা করে এসেছে,এখন কোথায় আছে কে জানে। অনুরাধা বসুও আমার সঙ্গে মজা করল।রেবতীবৌদি কোথায় পালিয়ে গেল কোন খবর নেই। দময়ন্তি ডাকে কাছে গেলে দূর ছাই করে।এখন মেসেজ করে উইশ করে।পাস করে কলকাতায় হাসপাতালে ইন্টার্নিশিপ করছে,হিজলতলিতে আসা কমে গেছে।বোজোদিও চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।আমি এখন একা,কেউ নেই আমার।নৈহাটি কোচিং সেন্টারে যাই আর আসি।পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি সারাদিন। কল্যানদা ভোলাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছিলেন, যাইনি।সুনীল গাঙ্গুলীর একটা কবিতার কথা মনে পড়ল,
"কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর
কাটলো কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার
আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিলো
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল,
কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি ।"
সন্দীপদা নৈহাটিতে ক্লাস নিতে আসেন সপ্তাহে তিনদিন। চমৎকার বোঝাতে পারেন। এক সময় অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিসে ছিলেন।ভীষণ কড়া আর অনেষ্ট অফিসার।যেখানে পোস্টিং হত সেখানেই স্থানীয় রাজনীতিক দাদাদের সঙ্গে গোলমাল ,আর ঘন ঘন বদলি।বিরক্ত হয়ে একদিন দুচ্ছাই বলে ছেড়ে দিলেন মোটা মাইনের চাকরি।এখন স্বামী-স্ত্রী মিলে খুলেছেন ওয়ে আউট কোচিং সেন্টার।
ক্লাসশুরু হয়ে গেছে পুরোদমে,সুদেষ্ণাদি বলে দিয়েছেন,ক্লাস ড্রপ করবেনা।কোন চ্যাপ্টার রিপিটেশন হবেনা। তোমার সঙ্গে আমার প্রেস্টিজ জড়িয়ে গেছে। একদিন রাজদীপবাবুর সঙ্গে আলাপ হল,সুদেষ্ণাদির দেওর। সরকারি অফিসার বেশ জলি।বউদির সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করলেও দাদাকে খুব সমীহ করেন।
বেশ মজা লাগছিল,তিন বছর আগে ক্লাস ছেড়ে এসেছি আবার কেঁচে গণ্ডূষ আরকি। নতুন নতুন ছেলেমেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।সময় কেটে যাচ্ছে ঝড়ের মত। আমার সাফল্য-ব্যর্থতার সঙ্গে সুদেষ্ণাদির প্রেজটিস নাকি জড়ীয়ে আছে। ডাক্তার দিবানাথ সেনের ব্যঙ্গ এখনো কানে বাজছে। মনে মনে বলি বোজোদি তোমার গোসাইরে সাহস যোগাও।
হিজলতলিতে একেরপর এক কত ঘটনা ঘটে যায়।জলে ঢিল পড়লে তরঙ্গ সৃষ্টি করে আবার ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায়। অনুদি বলেছিল অসম্ভব সহ্যশক্তি রুপাইয়ের, দু-পারে কত অন্যায় অবিচার অনাচার নিত্য ঘটে কিন্তু রুপাই বয়ে চলে নিজস্ব গতিতে নির্বিকার।
একদিন কোচিং থেকে ফিরছি স্টেশনে পা দিয়েই বুঝলাম কেমন থমথম করছে স্টেশন পরিবেশ।রাস্তায় লোকজন কম ভাবছি কি হল আবার কোথা থেকে ভোলা ছুটে এসে জানালো,মনাদা শুনেছো শালা নকড়ে দালালের লাশ পাওয়া গেছে জঙ্গলে?এতক্ষণে বুঝলাম পরিবেশ বদলের কারণ।
কে মারল?
ভোলা কাছে ঘেঁষে ফিসফিস করে বলে, কেলোর কীর্তি---ব্যাটা ফেরার।পুলিশ এসেছিল রমেশদার বউকে ধরে নিয়ে গেছে।
মলিনাবৌদি? তাকে ধরল কেন?
নকড়ে মরার আগে ওর সঙ্গেই শুয়েছিল।রঞ্জিতদাস বলেছে শেষ দেখে ছাড়বে।
নকুড় দালাল ইদানীং রঞ্জিতদাসের এলাকায় প্রোমোটীং করছিল।কল্যানদার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলনা। রাতে মলিনাবোউদির কাছে আসতো।হঠাৎ শরীরের মধ্যে শীতল শিহরণ খেলে যায়।ভোলা বলছিল,ওর সঙ্গে শুয়েছিল। পুলিশের জেরায় আমার কথা বলে দেবেনা তো?এলাকায় মনীন্দ্রমোহনের একটা সুনাম আছে,লোকে তাহলে আঙ্গুল তুলে বলবে, ওই যাচ্ছে বাপের মুখে কালি দেওয়া ছেলে!দাদা বাপ-মাকে ফেলে পালিয়েছে আর তার ভাই--ছিঃ-ছিঃ।
পরেরদিন দেখলাম দেওয়ালে পোষ্টার--শহীদ নকুড় শিকদার জিন্দাবাদ! তার মানে আমাদের অঞ্চলেও রঞ্জিতদাসের লোকজন আছে। দিয়াদের বাড়ির কাছে যেতেই এগিয়ে আসেন নিরঞ্জনবাবু।
একবার উপরে যেও বাবা।
বয়স্ক মানুষের কথা উপেক্ষা করতে পারিনা। তাহলে দিয়া কি ফিরে এসেছে? উপরে উঠে বসার ঘরে ঢুকে দেখলাম কেউ নেই। কি করবো ভাবছি,এমন সময় একজন বিধবা মহিলা এসে বললেন,মা আপনাকে বসতে বললেন।
মা বললেন? তাহলে কি মিসেস সেন? একটু পরেই মিসেস সেন চা নিয়ে ঢুকলেন।
তোমার মা কেমন আছেন?স্মিত হেসে মিসেস সেন বলেন।
ভাল,আপনি ভাল আছেন?
আর বাবা ভাল।একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আমি তোমার মায়ের মত,তোমাকে একটা কথা বলছি।
মায়ের মত কথাটায় একটা যাদু আছে,আমি উদগ্রীব হয়ে তাকালাম।
দেখো বাবা মেয়েটাকে তুমি একটু বুঝিয়ে বোলো।মা কি তার শত্রু?কলকাতা তো খুব দূর নয় তাহলে হোস্টেলে থেকে ইন্টার্ণিগিরি করার কি দরকার?
জানেন তো দিয়া কেমন জিদ্দি,আমার কথা কি শুনবে?আমাকেই ধমক দেয়!
মিসেস সেন মৃদু হেসে বলেন, তুমি বোলো তোমার কথা ফেলতে পারবেনা।চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে খেয়ে নেও।
শরতের আকাশের মত মনে হল মিসেস সেনকে। প্রথমে করুণ আর্তি তারপর হাসিতে উদ্ভাসিত উজ্জল মুখ। বাতাসে হিমেল পরশ।ডাক্তার সেনের বাড়ি থেকে রাস্তায় নামতে দেখলাম মিছিল যাচ্ছে।কমরেড নকুড় শিকদারের হত্যাকারীদের শাস্তি চাই--শহীদ নকুড় শিকদার লাল সেলাম শ্লোগানে মুখর মিছিল।মনে এল, মলিনার বাসায় কি বিপ্লব করতে গেছিলে কমরেড? শালা শহীদ হয়েছে! মানুষ এসব সহ্য করে কি করে?
দেখতে দেখতে পুজোর ছুটি শেষ হতে চলল। প্রিলি পরীক্ষা শেষ পড়াশুনায় চাপ কম।আজ ভাবছি কলকাতার অফিসে যাবো।রেজাল্টের কোন খবর পাওয়া যায় কিনা।এসময় ট্রেনে ভীড় প্রচণ্ড। গাদাগাদি করে উঠে যখন শিয়ালদা পৌছালাম বেলা একটা বেজে গেছে। অফিসে বসে আছেন সুদেষ্ণাদি।আমাকে দেখে বললেন,কোথায় থাকো তুমি?
বুঝলাম না কি বলছেন,জিজ্ঞেস করি,কেন কিছু হয়েছে?
চোখ কুচকে আমাকে কয়েক মুহূর্ত দেখে সুদেষ্ণাদি বললেন,কিছু শোনোনি?
কি ব্যাপারে?
আচ্ছা বোসো। বলে সুদেষ্ণাদি চলে যেতে ঢুকলেন সন্দীপ স্যর।
আমি উঠে দাড়াতে বললেন,আরে বোসো-বোসো। তুমি তো কামাল করেছো ভাই। পরীক্ষায় তোমার rank কত হয়েছে জানো?--ইলেভেন।
রেজাল্ট বেরিয়েছে?
যাও তোমার দিদির সঙ্গে দেখা করে এসো।
সুদেষ্ণাদির সঙ্গে দেখা হয়েছে।আমি বললাম।
একটা ঘর দেখিয়ে বললেন,সোজা ঐ ঘরে চলে যাও। হ্যাঁ দরজায় নক করে ঢুকবে।
দরজায় নক করতে ভিতর থেকে গম্ভীর গলায় পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এল, কে-এ? ভিতরে এসো।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে চমকে গেলাম, অনুরাধা বসু আর রাজদীপবাবু মুখোমুঝি বসে। ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধে হয়না। ফিরে যাব ভাবছি অনুদি বলল,আয় মানু ভিতরে আয়।
এই তোমার সেই ভাই? আচ্ছা রাধা তোমরা কথা বল আমি পাশের ঘরে আছি। রাজদীপবাবু বেরিয়ে গেলেন।
আমি ভিতরে ঢুকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কি করবো মাথায় আসছেনা।
অনুদি হেসে বলে, তোকে বিয়ে করিনি বলে রাগ করেছিস?
আমার কি আছে বলো?হাবাগোবা বেকার-বাউণ্ডেলে--আমাকে বিয়ে করতে কার বয়ে গেছে।
অনুদি খিলখিল করে হেসে ওঠে,আমার গা জ্বলে যায়। খুব পাকা-পাকা কথা শিখেছিস?
তোমরা কবি তোমাদের মত কথা কি করে বলবো?
সন্দীপবাবুকে নিয়ে সুদেষ্ণাদি ঢুকতে ঢুকতে বললেন,তোর ইনভেস্টমেন্ট কাজে লেগেছে বল।
আমি ওসবে নেই।আমি মানুকে টাকা ধার দিয়েছি। কিন্তু আমাদের আড়ি চলছে কি ভাবে টাকা ফেরত চাইব ভাবছি।
সুদেষ্ণাদি মজা করে জিজ্ঞেস করে, কি নিয়ে আড়ি?
কিরে মানু বল কি নিয়ে আড়ি? অনুদি বলে।
অবাক হলাম কোনো ভয় নেই বলে কিনা কি নিয়ে আড়ি!সুদেষ্ণাদির কথায় আজ জানলাম, অনুদি এতকাল আমার পড়ার খরচ যুগিয়েছে? আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল।মায়ের কথা মনে পড়ল সব দিক বিচার করতে হয়। অনুদি উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলল, ছিঃ বোকা ছেলে কাঁদেনা।
বিস্মিত হয়ে সুদেষ্ণা দুই ভাই-বোনকে দেখে।সন্দীপ বলেন,চলো ভাই-বোনের মধ্যে আমাদের থাকা ঠিক নয়।
ওরা চলে যেতে আমি বললাম, অনুদি তুমি খুব বিরক্ত হয়েছো?আমি না জেনে তোমার প্রতি দুর্ব্যবহার করেছি।
নারে বিরক্ত হবো কেন,আমি কি তোকে চিনিনা?
এখনো অনেক পথ বাকি
যেতে হবে আরো বহুদূর
এদিক-ওদিকে কি দ্যাখো
সামনের দিকে চোখ রাখো--।
কি সুন্দর আবৃত্তি করে অনুদি! মোবাইল বেজে ওঠে , অনুদি বলে, দ্যাখ কার এত তাড়া?
তুমি কোথায়?
আমি ওয়ে আউট-এ--।
ওখানেই থাকো--আমি আসছি।ফোন কেটে দিল দময়ন্তী।
কে রে?অনুদি জিজ্ঞেস করল।
আমি বিরক্তি নিয়ে বলি, ডাক্তারবাবুর মেয়ে।
কি বলছে?
দ্যাখো না খালি হুকুম করবে।আমি কারো হুকুমের ধারধারিনা।
ঠিকই হুকুম করলেই শুনতে হবে?
অনুদির ঘর থেকে বেরিয়ে ভাবছি কি করবো? দময়ন্তী অপেক্ষা করতে বলল,চলেই যেতাম।কিন্তু মিসেস সেন বলেছেন, দেখি ওকে বলে শোনে কিনা?যদি উল্টোপাল্টা কিছু বলে বলুক আমি পরোয়া করি না।ডাক্তার হয়েছে ঐরকম ব্যবহার বললে কোনো রোগীর ওর কাছে আসতে বয়ে গেছে।পাস করলেই হয়না ব্যবহারটা ভাল করতে হয়।
 
Last edited:
অসাধারণ গল্প ভাই, অনেক দিন পরে এমন গল্প পড়লাম, চালিয়ে যান ভাই
ধন্যবাদ ভাই।পড়তে থাকুন,মতামত দিতে থাকুন।
 
অসাধারণ গল্প ভাই, অনেক দিন পরে এমন গল্প পড়লাম, চালিয়ে যান ভাই
ধন্যবাদ ভাই।পড়তে থাকুন সেই সঙ্গে মতামত জানান।
 
।।ত্রয়োদশ পর্ব।।


ওয়ে আউট সেন্টারের নীচে দাঁড়িয়ে আছি।একটা গাড়ি এসে থামতে বর্নালি নেমে আমাকে দেখে মিষ্টি হেসে বলল, কনগ্রাচুলেশন!তারপর সেন্টারের ভিতর চলে গেল।বর্ণালী গড়িয়াহাট শাখার মেয়ে,বিত্তশালী পরিবার।গাড়ী করে যাতায়াত করে।যেচে আলাপ করেছিল আমার সঙ্গে,মেন অফিসে আসলে দেখা হয়।মনে হল আমার পাসের খবর পেয়েছে।কি করব বুঝতে ভাবছি, হুকুমের ধার ধারিনা বলেও কেন দাঁড়িয়ে আছি বুঝতে পারছিনা। রাজদিপ আর অনুদি বেরিয়ে আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করে, কিরে দাঁড়িয়ে আছিস,যাসনি?
দুটোর আগে ট্রেন নেই।
প্লাটফর্মে গিয়ে অপেক্ষা কর।তুই কি দময়ন্তীর জন্য দাঁড়িয়ে আছিস?
না ঠিক তা নয়।মিসেস সেন এত করে বললেন--।
তোর এটাই দোষ,কোনটা যে ঠিক সেটা বুঝতে বুঝতেই সময় চলে যায়।অনুদি বলল।
ওরা চলে গেলেন।মনে মনে ভেবেছিলাম দশ মিনিট দাড়াবো এর মধ্যে যদি না আসে চলে যাবো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম দশের জায়গায় চোদ্দ মিনিট হয়ে গেছে সিদ্ধান্ত বদলে পনেরো মিনিট করলাম। নজরে পড়ল বাস থেকে নেমে মাথা নীচু করে আসছে দময়ন্তী। ঢিলা জামা জিনসের প্যান্ট পরেছে, এলোমেলো চুল।গম্ভীর থমথমে মুখ।আমাকে দেখেও ভাব করছে যেন দেখেনি। সব সময় কেন যে এত বিষণ্ণ থাকে বুঝিনা।অন্য মেয়েদের মত সাজগোজের তেমন বাহার নেই।কাছে এসে বলে, কতক্ষণ?
দিয়া তোমাকে একটা কথা বলবো?
ভণিতা নাকরে যা বলতে চাও বলো।
সব সময় এত গম্ভীর থাকো কি করে,একটু হাসতে পার না?
অকারণ হাসে পাগলে,আমাকে কি পাগল মনে হয়?
কার সঙ্গে কি কথা বলছি,জানি এরকম কিছু বলবে। আমি চুপ করে গেলাম,কি বলতে কি বলে দেবে।
তুমি বিসিএস দিয়েছ কই আমাকে তো বলোনি?
সব কথা তোমাকে বলতে হবে? বললে তুমি কি করতে?
তা ঠিক।আমাকে বলবে কেন, আমি তো অনুরাধা বসু নই।
তুমি কি ঝগড়া করবে বলেই এসেছো?
ফিক করে হেসে ফেলে দিয়া।হাসলে গালে টোল পড়ে ,কি সুন্দর হাসি অথচ সারাক্ষণ মুখ গোমড়া করে থাকে। দিয়া বলল, তোমার সাফল্যে আমি খুশি,কি খাবে বলো?
দিয়াও খবর পেয়েছে।মনে হচ্ছে মুড ভাল এই মওকা, এই সুযোগে কথাটা বলে ফেলি। ভণিতা না করে বলি,তুমি আজ বাড়ী চলো।
ভ্রু কুচকে আমাকে দেখে দিয়া বলল, দালালি পেশা কবে শুরু করলে? কে তোমায় লাগিয়েছে ডাক্তার সেন না মিসেস সেন?
মিসেস সেন আমাকে বললেন,বাবা আমি তোমার মায়ের মত--।
ব্যস অমনি গলে গেলে?মন এটাই তোমার সমস্যা আমার দুশ্চিন্তা। কতটুকু জানো তুমি ওদের?
একদম বাজে কথা বলবে না।গুরুজনদের নিয়ে এভাবে কথা বলা আমি পছন্দ করিনা।তোমার দিদি আত্মহত্যা করার পর তোমাকে নিয়ে সান্ত্বনা পেতে চেয়েছিলেন--।
আমার আকস্মিক উত্তেজনায় দিয়া বিস্মিতভাবে আমাকে লক্ষ্য করে। আমার মধ্যেও একটা কঠিন লোক লুকিয়ে আছে তাকে আগে কখনো দেখেনি।
মোন, দিদি আত্মহত্যা করেনি তাকে বাধ্য করা হয়েছে। তুমি সেসব জানোনা,ডাক্তার সেন গায়ে পড়ে তোমাকে অপমান করেন তুমি গায়ে না মাখলেও আমি উপেক্ষা করতে পারিনা।
দিয়া প্লিজ আজ অন্তত আমার কথা শোন আর কখনো তোমাকে বলব না।
দিয়া খুটিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে,হয়তো বোঝার চেষ্টা করে কেন আমি এত পিড়াপিড়ি করছি। তারপর বলল, চলো,কাল ভোরেই আবার চলে আসবো।
দুপুরের ট্রেনেও ভীড়,ব্যারাকপুরে এসে বসার জায়গা পেলাম। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে দময়ন্তী। উদাস দৃষ্টি, মন যেন কোন গভীরে ঘুরে ফিরছে। আমার প্রস্তাবে বাড়ি যেতে রাজি হবে ভাবিনি।ওকে খুশি করার জন্য বললাম,দিয়া আমি তোমাকে একদিন একটা অদ্ভুত জিনিস দেখাবো।
আমার দিকে ঘুরে তাকালো,দেখলাম মুখটা হাসি-হাসি,ভরসা করে বললাম,দেখবে একটা নদী--এমনিতে শুকনো খটখটে কিন্তু অমাবস্যায়-পুর্নিমায় সে অতি কষ্টে কোত্থেকে একটুখানি ক্ষীণ জলধারা নিয়ে আসে।
দময়ন্তী চোখ বড় করে তাকায়।
মা-বাবার ভালবাসাও ঐরকম,সব সময় দেখা যায়না কিন্তু থাকে।
ওসব বলে আমাকে সান্ত্বনা দেবার দরকার নেই।আমি আমার মত থাকতে চাই। কবে দেখাবে সেই আশ্চর্য নদী?
এরপর আর উৎসাহ পাইনা বলি, সে একদিন হবে।
একদিন না,আজই দেখবো।চলো--।
পাগলি ক্ষেপেছে,বলেই ভুল করেছি বললাম, মাজদিয়া যেতে হবে।রাত হয়ে যাবে,বাড়িতে চিন্তা করবে।অন্য একদিন বরং--।
না আজই। কে কি চিন্তা করল আমি পরোয়া করিনা।
চকাকে কি বলতে গেলাম? ইচ্ছে করছে নিজের পাছায় আচ্ছা করে লাথি কষাই।ওকে নিরস্ত করব সাধ্য কি?পাঁচটা নাগাদ মাজদিয়া নামলাম। অনেকটা হাটতে হবে,পারবে তো?
পারবো।
রেল লাইন বরাবর কিছুটা গিয়ে ডান দিকে নেমে মেঠোপথ ধরলাম।এবড়ো-খেবড়ো আলপথ ধরে হাটছি।দিয়ার হাইহিল জুতো হাটতে অসুবিধে হচ্ছিল।জিজ্ঞেস করি,যাবে না ফিরে যাবো?
ইয়ার্কি হচ্ছে?
আমাদের বাঁদিকে হেলে পড়েছে সুর্য।লালচে ম্লান রোদ চুইয়ে পড়ছে তখনো। 'আউফ' বলে দিয়া মাটিতে বসে পড়ে।পা মচকে গেছে।জানতাম এরকম একটা কিছু হবে। আমি ওর পা কোলে তুলে নিয়ে ম্যসাজ করতে থাকি।দিয়া আমার দিকে পরিপুর্ন দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে।সুর্যের লালিমা ওর মুখে। হাতে ধরা ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বলে, এর মধ্যে স্প্রে আছে।
আমি হ্যাণ্ডব্যাগটা নিয়ে জিপার খুলে ভলিনি-স্প্রে বের করে স্প্রে করে দিলাম।
তোমার পা মচকে যাবে আগেই জানতে?
ভুলে যেওনা আমি ডাক্তার।এইছোট্ট ব্যাগে ফার্স্টেএইডের সব কিছু আছে।তুমি হাতটা ধুয়ে ফেলবে।
কেন?
কেন কি?পায়ে হাত দিলেনা? চলো--।
রুপাই নদী এখানে অনেকটা বিস্তৃত।দিয়া বলল,তুমি একটু দাড়াও,আমি আসছি। নদীর পাড় বেয়ে ঝোপের দিকে এগিয়ে গেল। আমি বললাম,দাড়াও আমি আসছি সাপ-খোপ থাকতে পারে,একা যেওনা।
ঝোপের কাছে গিয়ে প্যান্টের জিপার খুলতে খুলতে হেসে বলল,এ্যাই অসভ্য তোমাকে আসতে হবেনা।
ধবল পাছা এক মুহূর্ত ঝলসে উঠে জঙ্গলের আড়ালে হারিয়ে গেল।ব্যাপারটা বুঝে আমি উলটো দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। চাঁদের ম্লান আলো চুইয়ে পড়ছে,পাশ দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলেছে রুপাই। নিশব্দ চরাচর আচমকা মিষ্টি সুরে কানের কাছে ডাক শুনতে পেলাম,গোঁ-সা-ই!
কে বোজোদি? ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলাম দময়ন্তি। জোছনার মত মুখে এক রাশ হাসি।ভ্যাদলামুলের গন্ধ পেলাম। নদীর ধারে পাশাপাশি বসলাম।
জানো দিয়া এই নদী আমাদের মায়ের মত।আমাদের আবদার অত্যাচার মুখ বুজে নীরবে সহ্য করে চলেছে। কখনো তার কর্তব্য থেকে তিলমাত্র বিচ্যুত হয়না।কান পেতে শোন তুমি তোমার হারিয়ে যাওয়া কিশোর বেলার কত কথা শুনতে পাবে।
তুমি একটা পাগল,অতীত আর ফিরে আসেনা। তোমার বাবা আমার দিদি জয়ী আর কোনদিন ফিরে আসবেনা। তুমি জানো ডাক্তার সেনের মেয়ে জয়ন্তী কিভাবে মারা গেছে? জয়িদিটা খুব বোকা--।
জয়ন্তী সেন মেধাবী ছাত্রী,কলকাতায় হস্টেলে থেকে পড়াশুনা করতো।এক বিপ্লবী ছাত্রনেতার প্রেমে পড়ল।গেরুয়া পাঞ্জাবি একমুখ দাড়ি নিয়ে তুখোড় বক্তৃতা করতো সিরাজুল। বাকুড়ায় নাকি ধনী পরিবারে তার জন্ম। মা কলেজে অধ্যাপিকা বাবা রাজনীতি করেন। নানা উড়ো-খবর ডাক্তার সেনের কানে আসছিল।একদিন আর থাকতে নাপেরে সরেজমিনে গেলেন দেখতে। ততক্ষণে পাখি উড়ে গেছে। কলেজের ছেলেদের কাছ থেকে খবর নিয়ে ডাক্তার সেন বাকুড়া গেলেন।সেখানে অপেক্ষা করছিল আর এক চমক। সিরাজুলের বাবার সামান্য জমি,চাষ করে অতি কষ্টে দিন গুজরান করে।একবোন টিউশন করে কলেজে পড়ে।বাড়িতে গরু আছে দেখভাল করে মা। সিরাজুলের বাবা বলেছিল, তার ছেলে বছর তিনেক নাকি বাড়ি আসেনা। দময়ন্তী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
পুলিশে ডায়েরি করনি?
পুলিশে ডায়েরী করা হয়েছিল কিন্তু ডাক্তার সেন পারিবারিক সম্মানের কথা ভেবে তদবির করেননি। জয়িদি আপনিই ফিরেছিল বছর খানেক পর।একা নয় পেটে তার বাচ্চা।সিরাজুল একদিন আসছি বলে বেরিয়ে আর ফেরেনি। জয়িদির পরনে ছেড়া ময়লা শাড়ি,চেহারা শুকিয়ে কাঠ। মা ধরে ঘরে আনছিল।বাবা চিৎকার করে উঠল, খবরদার মনো! এটা হোটেল নয়।এতদিন যেখানে ছিল সেখানে যেতে বলো।
আমি বললাম, বাবা দিদি ভুল করেছে বলে তুমিও ভুল করবে?
ডাক্তার সেন বলেছিলেন,ডোণ্ট শাউট।ইফ ইউ উইশ ইউ ক্যান ফলো হার--আমি জানবো আমি নিঃসন্তান!
সেইরাতেই জয়িদি রেল লাইনে গলা দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল।
দেখো দিয়া,মানুষ একের পর এক অসম্মান সহ্য করতে করতে চরম সীমায় পৌছে সহ্য করতে না পেরে একসময় আত্মহত্যা করে।কতবার অসম্মানিত হবার পর আত্মহত্যা করে তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই।তোমার দিদি আগেও অসম্মানিত হয়েছে বহুবার, অবশেষে ডাক্তার সেনের দ্বারা অপমানিত হয়ে তাকে এই পথ বেছে নিতে হল। আমি বলতে চাই তোমার দিদির আত্মহত্যার জন্য ডাক্তার সেন একমাত্র দায়ী নন। তুমি ডাক্তার সেনের দিক থেকে ভাবার চেষ্টা করো--।
উঃ পায়ে ঝি-ঝি লেগে গেছে।মোন আমার হাতটা ধরো।
আমি টেনে তুলে দাড় করিয়ে বললাম,একটু দাঁড়িয়ে থাকো,নরম্যাল হয়ে যাবে।
কতকাল আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কে জানে।দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
ঠিক হয়েছে? এবার চলো অন্ধকার হয়ে গেছে।হঠাৎ বসে পড়ে বলল,আমি আর যাবনা।
বলে কি!অন্ধকার ঘিরে ধরছে ধীরে ধীরে। পাগল হয়ে গেল নাকি? ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি।চারপাশে কোন বাড়ি ঘর নেই।ধু-ধু প্রান্তর।এই অঞ্চলে কিছু জানি না চিনি না বললাম,দিয়া লক্ষীটি--।
তুমি যাও।দু-হাত তুলে চুল বাধে।
অচেনা জায়গা প্লীজ ছেলে মানুষী করে না।
যেন দয়া করছে এমনভাবে বলল, যেতে পারি।তোমার সব কথা শুনবো যদি একটা জিনিস দাও।বলো দেবে? বলেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল--মুখটা উঁচু করে কাঙ্গালের মত বলল, দেবেনা গোসাই?
আমি অতি দীন কি আছে আমার দেবার মত,মুখটা নামিয়ে ওর ঠোটের উপর ঠোট রাখলাম।কতকালের তৃষ্ণার্ত দিয়া দুহাতে ধরে আমার চেতনা-চৈতন্য-অস্তিত্বকে আকণ্ঠ শুষে নিতে লাগল।কতক্ষণ জানি না সারা শরীর মনে অভুতপুর্ব এক অনুভুতি রক্তে চারিয়ে যেতে থাকে।তারপর ছেড়ে দিয়ে হাটতে শুরু করে।মনে মনে বললাম,দিয়া আমাকে ছেড়ে কোনোদিন যাবেনা তো?
হাটতে হাটতে চলেছি আলের উপর দিয়ে,দিয়া পিছন থেকে বলল,তোমার ভীষণ জিদ।
কেন?
সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকে অপেক্ষা করছি কবে তুমি বলবে?শেষ পর্যন্ত আমাকেই বলতে হল।
অনুদি বলে আমার নাকি বুঝতে বুঝতে সময় চলে যায়। জানো দিয়া, আমি খুব একা।
দময়ন্তী আল থেকে নেমে আমার বাহুমূলে বুক চেপে বলে, খবরদার বলছি আর কখনো তুমি একথা মুখে আনবে না।
রক্তে যেন জোয়ারের প্লাবন,ভয় হল জোয়ারের জল আমাকে আছড়ে ফেলবে নাতো?বোকাটাকে নিয়ে কোনো নতুন খেলা নয়তো?দিয়া আমার হাতটা বুকে চেপে ধরে মাথাটা কাধে হেলিয়ে দিয়ে হাটতে থাকে।
 
Last edited:
।।চতুর্দশ পর্ব।।


গলির মুখে এসে দময়ন্তী 'বাই' বলে চলে গেল।আমি তাকিয়ে থাকি,কিছুটা গিয়ে পিছন ফিরে আমাকে দেখে হেসে হাত নাড়ল।আজকের দিনটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।একটা শঙ্কা মাথার মধ্যে গুন গুন করে আজকের কথা দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারের মত মিলিয়ে যাবে নাতো।আজকের দিন কোনোদিন ভুলতে পারবো না দিয়া যদি অনুদির মত করেও তবু স্মৃতিতে উজ্জ্বল থাকবে আজকের আনন্দানুভুতি। একজন কাউকে আজকের কথা বলতে পারলে স্বস্তি পেতাম কিন্তু কাকে বলবো? কি যে হচ্ছে এ এক অদ্ভুত অনুভূতি বুঝিয়ে বলা যায়না অনুভুত হয় মর্মে মর্মে। মাকে বললে ভয় পেয়ে যাবে কেননা অস্বাভাবিক সম্পর্কে জড়িয়ে তার ছেলেটা না কষ্ট পায়। মলিনাবৌদির জানলা দিয়ে আলো এসে পড়েছে রাস্তায়। তাহলে কি পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে? আমি দ্রুত পা চালাই বাড়ির দিকে।সুন্দর মনটাকে মলিনাবৌদির মলিন স্পর্শ হতে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।দময়ন্তি আমার বউ ভেবে মনটা যেমন ফুর ফুর তেমনি একটা আশঙ্কা ডা.সেন কিছুতেই এসম্পর্ক মেনে নেবেন না।আজ সারাদিন যাযা ঘটেছে সব কি সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিনা।এখনো জিভে দিয়ার আস্বাদ টের পাই।আমাকে নিয়ে দিয়া নতুন কোনো খেলায় মাতেনি তো?বাড়ির কাছাকাছি আসতে খেয়াল হয় পরীক্ষার রেজাল্টের কথা মা জানে না।
ড.দিবানাথ সেনের চেম্বারে রোগীর ভীড় কিছুটা পাতলা।আগে নাম না লেখালে উনি দেখেন না।আসলে এত ভীড় হয় দেখা সম্ভব নয়।দময়ন্তী দরজার কড়া নাড়তে মিসেস সেন দরজা খুলে অবাক হয়ে বলেন, কিরে তুই হঠাৎ?
আহা! কিছু জানোনা যেন,তুমি দূত পাঠাও নি?
মিসেস সেন মুচকি হেসে বলেন, কেমন আছিস?
দময়ন্তী মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা, মোন বিসিএস-এ Rank করেছে --খুব ভালো ছেলে।তোমার আপত্তি নেই তো?
মিসেস মনোরমার বুক কেপে ওঠে, মেয়ে সুখী হোক সব মা-ই কামনা করে। দিয়ার মধ্যে পরিবর্তন দেখে ভাল লাগে।জিজ্ঞেস করেন, হিজলতলিতে কখন এসেছিস?
প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে দময়ন্তী বলে, মা আমাকে একটু চা দেবে?
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সেন প্রবেশ করেন। অবাক হয়ে দেখেন হৃদ্য পরিবেশে মা-মেয়ে চা খেতে খেতে গল্প করছে। এমন বিরল দৃশ্য দেখে ডাক্তার সেন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন, এখন তুমি কোন হাসপাতালে আছো?
বাঙ্গুর হাসপাতাল। আচ্ছা বাবা--।
চমকে ওঠেন ডাক্তার সেন,তিনি ঠিক শুনেছেন তো? বহুদিন পর মেয়ের মুখে 'বাবা' ডাক শুনলেন। মুখ তুলে তাকালেন।
তুমি কেমন জামাই পছন্দ করো?
ড সেন আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসেন বললেন, বেকার রাজনীতি করে বাবা চাষবাস করে লোকের বাড়ি কাজ করে মা--ঠগ, প্রতারক-- ।
আশঙ্কায় মনোরমার দম আটকে আসার যোগাড়।দময়ন্তী রাগ করেনা হেসে বলে,বিসিএস অফিসর হলে কেমন হয়?
মনোরমা মুখ নিচু করে হাসেন। একবার স্ত্রী একবার মেয়েকে দেখে বলেন, কি ব্যাপার কলকাতায় তুমি এইসব করছ নাকি? এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা তোমাকে। ডাক্তারিটা মন দিয়ে শেষ করো। আমি তোমার বাবা,শত্রু নই।ডাক্তার দিবানাথ সেন দ্রুত অন্য ঘরে চলে গেলেন, চোখের পাতা ভিজে গেছিল পাছে ধরা পড়ে যান।কতকাল পর মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনলেন।চশমা খুলে চোখ মুছলেন।
দময়ন্তী কথা বাড়ায় না।হয়তো মোন ঠিকই বলেছে, বাইরে থেকে আমরা দেখতে পাই সামান্য অংশ। মিসেস সেন স্বস্তি বোধ করেন। দময়ন্তীর ইচ্ছে হয় একবার মোনের সঙ্গে কথা বলতে।মিসেস সেন মেয়ের জন্য টিফিন করতে গেলেন।
কখন বাড়ির সামনে এসে মায়ের মুখটা মনে পড়ল। দরজার কাছে এসে শুনতে পেলাম কার সঙ্গে কথা বলছে মা। এত রাতে আবার কে এল? এক ভদ্রলোক গ্রাম্য চেহারা পৌঢ় বলা যায়। আমি ঢুকতে আমার দিকে তাকালেন। মা বলল,আমার ছেলে মনোজমোহন।
একেবারে ছোট কর্তার চেহারা।ভদ্রলোক বললেন।
মা কেমন আছেন? মা জিজ্ঞেস করে।
গিন্নিমা ভালই আছেন। কানাইয়ের উপদ্রব দিন দিন বাড়ছে। ছোট কর্তা যতদিন আছেন সাহস করবেনা কিন্তু--।
কানাই নামটা শোনা-শোনা,ডায়েরি খুলে দেখতে হবে। মায়ের কাছে শুনলাম, ঠাকুর্দা মৃত্যুশয্যায়,একবার বউমাকে দেখতে চান। বহুঘুরে গ্রামের একটি ছেলের কাছে থেকে আমাদের হদিশ বের করেন জীবন সরকার। কাল সকালেই আমাদের যেতে হবে আড়াইডাঙ্গা গ্রামে। মনটা বিমর্ষ হল।চিরকাল বেহিসেবি জীবন যাপন করে মরণকালে সুবুদ্ধির উদয়। মোবাইল বাজতে পাশের ঘরে গিয়ে ধরলাম।
এতরাতে কি ব্যাপার?
তোমায় কি সময় মেপে ফোন করতে হবে?
দিয়া আমার ঠাকুর্দা মরণাপন্ন,কাল সকালে আমরা যাচ্ছি।
আমি আসবো?
না না, চিনিনা জানিনা কোথায়।তোমাকে আসতে হবেনা।
ঠিক আছে মোন। পড়াশুনায় যেন গাফিলতি নাহয় আমি বলে দিলাম।শুভ রাত্রি।
মোবাইল রেখে মনে হল, এইতো দিয়া ফোন করল,তাহলে কি সত্যি দিয়া আমার,একান্তভাবে আমার?
শোবার আগে ডায়েরি খুলে দেখলাম, "...গিরিবালা মিথ্যা বলিয়াছে, ও পূর্বেই অন্য ঔরসে গর্ভবতী হইয়াছিল.....মিথ্যা বলিয়া কামারের সন্তানের দায় আমার উপর চাপাইতে চায়...... .কামারের বাচ্চা হইবে সোম বংশের সন্তান?....কিছুতেই তা হইতে দেওয়া যায় না....।ব্যাপারটা জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেল।
সকালে বেলা মাকে নিয়ে আমি জীবনবাবু স্টেশনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি।এত ভোরে লোকজন খুবই কম।আড়াইডাঙ্গা নাম শুনেছি কোনোদিন যাওয়া হয়নি। দময়ন্তী হন্তদন্ত হয়ে এসে হাজির।পরনে সালোয়ার কামিজ।মাকে প্রণাম করল,মা চিবুক ছুঁয়ে আশির্বাদ করল।দময়ন্তী আমাকে পাশে ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, মোন কোন অসুবিধে হলে আমাকে ফোন করবে।মাকে দেখবে।
ট্রেন আসতে আমরা উঠে পড়লাম।দময়ন্তী শেষ পর্যন্ত ছিল।ট্রেন যখন প্লাটফরম ছেড়ে চলে যাচ্ছে দময়ন্তী উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে।মনটা কেমন হূহূ করে ওঠে।এই অনুভুতিটা নতুন আগে কখনো এমন বোধ হয়নি।দময়ন্তী হাত নাড়ছে।
কোথায় যাচ্ছি আগে কখনো নাম শুনিনি।এতকাল পরে বাবার জন্ম ভিটেতে যাচ্ছি সঙ্গে বাবা নেই।ফিরবেনা বলে বেরিয়ে এসেছিল কথা রেখেছে, বোলপুর স্টেশন থেকে বেরোতে বাসের কনডাক্টর হাঁকছে, আড়াইডাঙ্গা --আড়াইডাঙ্গা।
বাস থেকে যখন নামলাম সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। কয়েকটা রিক্সাওলা এগিয়ে এসে সেলাম করল। জীবনবাবু সামনে একটা রিক্সায় পিছনে আর একটায় আমি আর মা। পাকা রাস্তা ছেড়ে রিক্সা কাচা রাস্তায় নামলো।রিক্সাওলার মুখটা কোথায় দেখেছি মনে হচ্ছে।অতি সাধারণ মুখ একজনের সঙ্গে আরেকজনের মিল থাকতেই পারে। মাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম,মা চিনতে পারছো?
সেই কবে এসেছি তা কি মনে আছে?
রিক্সাওলাকে জিজ্ঞেস করি,ভাই তুমি কি বরাবর এখানে রিক্সা চালাও?
জ্বি না।আগে পলাশ ডাঙ্গায় চালাতাম।
পলাশ ডাঙ্গায় বিজয়া মাসীর বাড়ি হয়তো পথে ঘাটে দেখে থাকতে পারি। একসময় মাঠের রিক্ততা ছেড়ে গ্রাম সীমায় পৌছালাম।দু-একজন লোক নজরে পড়ছে রাস্তায়।যেতে যেতে ঘাড় নিচু করে সেলাম করছে।পথের দু-ধারে বিশাল-বিশাল গাছ,তার ছায়ায় পথ চলে গেছে গ্রামান্তরে।ভাঙ্গাচোরা জরাজির্ন ইটের দালান কোঠা মাঝে মাঝে কাচা মাটির উপর খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়িঘর।একটা পানায় ভরা দিঘীর পাড়ে রিক্সা থামে। আচমকা ধূমকেতুর মত একটা লোক এসে রিক্সার গতিরোধ করে বলল, এ্যাই জীবনা এরা কারা?
জীবনবাবু ভয় পেলেন না বিরক্ত হয়ে বললেন,তোর যম।
যতবড় মুখ না তত বড় কথা। বলেই কলার ধরে জীবনবাবুকে রিক্সা থেকে নামায়।
এ্যাই কানাই ভাল হবে না বলছি ছোট কর্তা শুনলে--।
তোর ছোট কত্তা খাটিয়া ছেড়ে আর উঠবে ভেবেছিস?
আমার ঘিলু নড়ে উঠল।লাফ দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে অসভ্য লোকটার ঘাড় ধরে ধাক্কা দিতে লোকটা ছিটকে পড়ল। ঘটনার আকস্মিকতায় লোকটা হতচকিত।ইতিমধ্যে দশাসই দুই পালোয়ান লাঠি হাতে এসে হাজির।তাদের দেখে কানাই দ্রুত উঠে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেল।
আসুন মা,এটুকু হেটে যেতে হবে।জাফর তোরা মালপত্র গুলো নিয়ে আয়।
দিঘীর পাড় দিয়ে রাস্তা ধরে এগোতে নজরে পড়ে বিশাল অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ।সামনে মোরাম বিছানো পথ। অট্টালিকাকে কেন্দ্র করে দুপাশে ছোট ছোট একতলা পাকা বাড়ী।সম্ভবত কাজের লোকেরা থাকে।আমাদের দেখে এক চল্লিশোর্ধ মহিলা ঘোমটা টেনে দ্রুত অন্দরে প্রবেশ করে। বোধহয় খবর দিতে গেল মালকিনকে।আমাদের পাশ দিয়ে জাফর-কালু মাল-পত্তর নিয়ে উপরে উঠে গেল।দোতলায় উঠে দীর্ঘ বারান্দার শেষ প্রান্তে একটি ঘরের সামনে পৌঁছে জীবনবাবু বললেন,আসুন মা। ভিতরটা অন্য রকম বিশাল ঘর আসবাবে সাজানো পিছনে দেওয়াল ঘেঁষে পুরানো আমলের পালঙ্ক। পালঙ্কের উপর শীর্ণ দেহ কাচা হলুদের মত রং মাথায় একরাশ রুপালি চুল চওড়া পাড় হলুদ জমিনের শাড়ি পরনে এক মহিলা বসে আছেন।
মার বৈধব্য বেশ দেখে মহিলা স্তম্ভিত,দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। মা গিয়ে প্রণাম করল।সেই সঙ্গে আমিও।
মহিলা ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন,একবার খবর দিতে পারলে না?
কি করবো মা আপনি তো আপনার ছেলেকে জানেন।
এই তাহলে আমার বাবার মা?বুঝতে অসুবিধে হয় না।
মণির আর কি দোষ?শোনো বউমা তুমি ওর কাছে এই পোষাকে যেওনা।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে বললেন,বিন্দু তুই এখন যা।
চা দেবো? বিন্দু জিজ্ঞেস করে।
হ্যাঁ চা দিয়ে যা। আমার দিকে ফিরে বললেন,এসো মনা আমার পাশে বস।আচ্ছা বউমা, তোমার দুই ছেলে না?
হ্যাঁ মা মনোজ ছোট সরোজ বড়।কলকাতায় থাকে।
বৃদ্ধা দামিনী আমাকে পাশে বসিয়ে সারা শরীরে শীর্ন হাত বোলাতে থাকেন।
সরকার মশায়।
জীবনবাবু বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন,ডাক পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন।
বিন্দুকে দিয়ে পাশের ঘরটা পরিষ্কার করে রাখুন।জাফর-কালুকে বলবেন,আমার নাতির উপর নজর রাখতে,দাউভাইয়ের যেন কোন ক্ষতি না হয়।
জি।আমি আসি?
একটু বিশ্রাম করে নিন।
একটা রুপোর ট্রেতে চা নিয়ে ঢুকল বিন্দু।আমার দিকে তাকিয়ে ঠোট বেঁকিয়ে চোরা হাসি দিল।গায়ে মাখলাম না। বিন্দু চা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দামিনী ফিস ফিসিয়ে মাকে বললেন,এ বাড়িতে কাউকে বিশ্বাস করা যায়না। একমাত্র সরকারবাবু ছাড়া। দাদুভাই একা-একা কোথাও যেওনা।
বিশাল বাড়ী পাশে ফুট দশের চওড়া বারান্দা এ-পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে মিনিট পাঁচেক সময় লাগে।এক দিকে সারি সারি ঘর অন্য দিকে বুক সমান পাচিল মাঝে মাঝে বড় বড় থাম।বসে বসে ভাবছি কখন একটু সুযোগ পাবো,ভালোভাবে পৌছেছি দিয়াকে খবরটা দিতে হবে।
 
Last edited:

Users who are viewing this thread

Back
Top