ইসলামে সব ক্ষতিকর জিনিস নিষিদ্ধ। ধূমপান মাদকের প্রথম ধাপ। মাদক মাকাসিদে শরিয়া বা শরিয়তের বিধানগুলোর উদ্দেশ্যাবলির অন্তরায়। মাকাসিদে শরিয়া হলো জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা, বংশ রক্ষা, ধর্ম রক্ষা।
হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘মাদক হলো সব পাপের সমন্বয়ক।’ (রাজিন)। ‘মাদক পাপাচারের মূল এবং কবিরা গুনাহের অন্যতম।’ (তবরানি ও বায়হাকি)। কারণ, মাদক এমন পাপ, যা সব পাপের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। এ জন্যই সব ধরনের মাদক ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যেকোনো পানীয় (বা বস্তু) নেশা উদ্রেক করে তা হারাম।’ (বুখারি, প্রথম খণ্ড: ২৪১)। ধূমপান ও তামাক একপর্যায়ে নেশায় পরিণত হয়, যা ছাড়া ধূমপায়ী ও মাদকসেবী থাকতে পারে না। ইসলামি শরিয়তে নেশা সর্বৈব হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু; শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ হতে ও সলাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৯০-৯১)।
জাহান্নাম বা দোজখের বৈশিষ্ট্য তিনটি: আগুন, ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ। এই তিনের সমাহার ঘটে ধূমপানে। সর্বোপরি ‘ধূমপান মাদক সেবনের সোপান’।
ধূমপান ও তামাক শুধু ব্যবহারকারীর নয়, ব্যাপকভাবে অন্যদেরও ক্ষতিসাধন করে। এটি দেশ, জাতি ও সমাজ–সভ্যতার চরম শত্রু। ধূমপান ও তামাকের ক্ষতি সর্বগ্রাসী।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সতর্ক থাকো এমন ফেতনা সম্পর্কে, যার ক্ষতিকর প্রভাব শুধু জালিম অপরাধীবিশেষের প্রতি আপতিত হবে না (বরং সামগ্রিকভাবে সবার ক্ষতি হবে)। আর জেনে রাখো নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কঠোর প্রতিবিধানকারী।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ২৫)।
নিজে নিজের ক্ষতি করার যেমন এখতিয়ার নেই, তেমনি অন্যের ক্ষতি করাও জায়েজ নয়। একজন ধূমপায়ী ব্যক্তি নিজের ক্ষতির পাশাপাশি আশপাশের অন্যদেরও ক্ষতি করে থাকে, যা সম্পূর্ণ হারাম ও কবিরা গুনাহ। পেঁয়াজ একটি হালাল খাদ্য, ক্ষতিকরও নয় বরং উপকারী। কিন্তু কাঁচা পেঁয়াজে একপ্রকার ঝাঁজালো গন্ধ থাকে, যা অনেকে পছন্দ করেন না। তাই মহানবী (সা.) নির্দেশ দিলেন, ‘তোমরা কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে (মুখের দুর্গন্ধ দূর না করে) মসজিদে বা জনসমাগমে আসবে না।’ (তিরমিজি)। যারা ধূমপান করে বা তামাক সেবন করে তাদের মুখে ও শরীরে একধরনের উৎকট বিশ্রী দুর্গন্ধ ছড়ায়; যা পার্শ্ববর্তী মানুষের কষ্টের কারণ হয় এবং তা হারাম ও নাজায়েজ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) রবিআহ গোত্রের প্রতিনিধিদের পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিলেন এবং তিনটি জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বললেন। যে পাঁচটি কাজ করতে বললেন, সেগুলো হলো আল্লাহর ওপর ইমান আনা
[এক আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত (রাসুল)], সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ও গনিমতের এক–পঞ্চমাংশ দান করা। যেসব জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করলেন, সেগুলো হলো শুকনো লাউয়ের খোল, সবুজ (রঙে রঞ্জিত করা) কলসি এবং আলকাতরার পলিশকৃত পাত্র (যেসব মদপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত)। (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৬৭-৬৮, হাদিস: ৮৭; ই. ফা.)।
ধূমপান ও তামাক সেবন ক্ষতিকর ও অপচয়, ইসলামি বিধানে অপচয় করা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না; নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই; আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ২৬-২৭)। কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনো আদম সন্তান এক কদমও নড়তে পারবে না। যথা জীবন, যৌবন, আয়, ব্যয়, জ্ঞান। ব্যয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা পানাহার করো; কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদিগকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৩১)।
ধূমপানে রোজা ভঙ্গ হয়। তাই রমজানে দিনের বেলায় রোজাদার ব্যক্তি ধূমপান করেন না। অনুরূপভাবে যাঁরা বিভিন্নভাবে তামাক সেবন করেন, তাঁরাও রোজা অবস্থায় তা করেন না। অন্তত প্রতিদিন দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা বিরত থাকেন। সুতরাং ধূমপায়ী ও তামাকসেবীদের জন্য তা বর্জনের মহাসুযোগ রমজান মাস।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম