‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’ কথাটি বেশ প্রচলিত। কিন্তু হুট করে রেগে গেলে নিশ্চয়ই তা মনে থাকে না। প্রতিটি মানুষেরই রাগ থাকে। রাগ স্বাভাবিক অনুভূতি। তবে তার প্রকাশ অনেক সময়েই অস্বাভাবিক হয়ে যায়। অনেকে আবার অল্পতেই রেগে যায়। রাগ মানুষের অনেক ক্ষতি করে। আর সবাই চায় রাগ কমাতে। যদি সত্যিই রাগকে সংবরণ করতে চান, তাহলে মেনে চলতে পারেন কিছু পরামর্শ।
জায়গা পরিবর্তন করুন
কারও সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হুট করে রেগে গেলেন। যখন আপনি সামনের কারও ওপর রেগে গেছেন, তখন তার সামনে থেকে সরে যাওয়া বা জায়গার পরিবর্তন করাটা হবে সেরা সমাধান। কারণ, সামনে থাকলেই কথা হবে বেশি, আর সে কথা থেকে রাগের আগুনটা বাড়বে বৈ কমবে না। লেখক, চিত্রশিল্পী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেন, ‘রাগে যা শুরু হয় তা লজ্জায় শেষ হয়।’ সুতরাং শেষ করার অপেক্ষায় না থেকে স্থান পরিবর্তন করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ঠোঁট বন্ধ রাখুন
রাগান্বিত মুহূর্তে মুখ বন্ধ রাখা বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু এ সময় ঠোঁটে তালা মেরে রাখতে পারাটা দারুণ কার্যকর। যার সঙ্গে রাগারাগি হচ্ছে, তাকে ইচ্ছেমতো বলতে দিন কিন্তু আপনি টুঁ–শব্দটিও করবেন না। ধৈর্য ধরে রাখতে পারলে পরে বিষয়গুলো নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। তিনি আপনাকে যতই উত্ত্যক্ত করুন, আপনি কিছুতেই মুখ খুলবেন না। কারণ, রেগে আপনি যা বলবেন, তা মোটেই আপনার মনের কথা নয়। তাই কথা বলা বন্ধ করুন সবার আগে। বিখ্যাত ব্রাজিলীয় ঔপন্যাসিক এবং গীতিকার পাওলো কোয়েলহো ক্রোধ নিয়ে বলেন, ‘রাগের সর্বোত্তম উত্তর হলো নীরবতা।’
চোখ বন্ধ, কানও বন্ধ
রাগের মাত্রা বেশি বেড়ে গেলে শুধু ঠোঁট নয়, চোখ আর কানও বন্ধ করে ফেলতে হবে। এটা সত্যিই কার্যকর। যে আপনাকে রাগিয়ে দিচ্ছে বা যা নিয়ে আপনি রেগে যাচ্ছেন, কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে সেখান থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন। যেন আপনি সেখানে থেকেও নেই। প্রয়োজনে স্থান ত্যাগ করে অন্য কোথাও গিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে হেডফোনে গান শুনুন।
একটু হেঁটে আসুন
রাগ সামলাতে না পারলে অল্প সময়ের জন্য হলেও ঘটনাস্থল থেকে দূরে গিয়ে একটু হেঁটে আসুন। এতে রাগারাগি আর না বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে আর আপনার মনও হয়তো একটু শান্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।
ধ্যান করুন
নিয়মিত একটু সময়ের জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান করার চেষ্টা করুন। আকস্মিকভাবে রেগে যাওয়ার রোগ থাকলে সেটাও সেরে যেতে পারে নিয়মিত ধ্যানে। ধ্যানের ফলে আপনার ব্যক্তিত্ব আরও শক্তিশালী হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শরীরচর্চা রাগ কমানোর আরও একটি কার্যকরী উপায়। শরীরচর্চার ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। এ ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চায় একজন মানুষের যে খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে, তা সুস্থ জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বদভ্যাস পরিত্যাগ করুন
রাগ কমাতে অনেকে ধূমপান করেন। কিন্তু তা মোটেই রাগ কমানোর ভালো পথ নয়। তাতে মনটা আরও বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ধূমপান, মদপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান আপনাকে বদমেজাজি করে তুলবে। এসব বাজে অভ্যাসের কারণে বদহজম ও অনিদ্রা সমস্যায় মানুষ ভোগে। শারীরিক গোলযোগের কারণে মনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। যে কারণে আমরা চট করেই অনেক কথায় রেগে যাই। পরে হয়তো ভেবে অবাকও হন, এত সামান্য কথায় রেগে যাওয়ার মানুষ আপনি নন। তাই চটজলদি সব বদভ্যাস পরিত্যাগ করুন। সম্ভব হলে এখন থেকেই।
জীবন তো একটাই। স্বল্প সময়ের এই জীবনে যতটা সম্ভব সময়টাকে উপভোগ করতে শিখুন। এক মিনিট রাগ করার কারণে আপনি ৬০ সেকেন্ড সুখের সময় মিস করলেন। কখনো বিষয়টি এভাবে ভেবে দেখেছেন কি!
* সাহিদা আক্তার