What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পুরুষদের ফ্যাশন হাই হিল! (1 Viewer)

হালের ফ্যাশনসচেতন নারীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে হাই হিল। কিন্তু অবাক বিষয় এই, হাই হিলের আবির্ভাব পুরুষদের ফ্যাশন হিসেবে এবং একসময় পুরুষদের ফ্যাশন ট্রেন্ড হিসেবেই জনপ্রিয় ছিল। শুনতে আশ্চর্য শোনালেও ইতিহাস তা-ই বলে।

o2xAA82.jpg


হাই হিলের জন্মের কথা বলতে গেলে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখতেই হবে। এই ধরনের জুতার ধারণা প্রথমে আসে দশম শতাব্দীতে পারসিয়ান তথা ইরানের সামানিদ সাম্রাজ্যের (৮৭৪-১০০৫) সৈনিকদের হাত ধরে। ঘোড়ায় চড়া এবং ঘোড়ায় চড়ে অস্ত্র চালনার সুবিধার্থে তারা জুতার নিচের অংশ বিশেষভাবে উঁচু করে তৈরি করে নেয়...

QfegBnn.jpg


অস্টাদশ শতকের হাই হিল জুতা, ছবি: উইকিপিডিয়া

এরপর প্রায় ছয় শ বছর পর সপ্তদশ শতাব্দীতে ইরান তথা এশিয়া থেকে ইউরোপে হাই হিলের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। সেটাও আবার পারসিয়ান সৈনিকদের মাধ্যমে। তৎকালীন ইরানি সম্রাট শাহ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিতে উপঢৌকনসহ একদল সৈনিক প্রেরণ করেন। তাদের দেখেই মূলত ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের সমাজের উঁচু স্তরের মানুষেরা হাই হিলকে ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করে। এই ‘পারসিয়ান ম্যানিয়া’ই সপ্তদশ শতাব্দীতে এসে ইউরোপের সমাজে পৌরুষ, ক্ষমতা ও সামরিক দক্ষতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

ইউরোপে হাই হিলের প্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ফরাসি শাসক ‘লুই দ্য গ্রেট’ বা চতুর্দশ লুই (১৬৩৮-১৭১৫), যার উপাধি ছিল ‘সান কিং’। চতুর্দশ লুই মনে করতেন, হিল যত উঁচু হবে এবং লাল রঙের হবে, তা তত বেশি ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে গণ্য হবে। হাই হিলের প্রতি ভালোবাসায় ১৬৭০ সালে তিনি রীতিমতো ফরমান জারি করেন যে শুধু তাঁর রাজ্যসভার সদস্য এবং সমাজের অভিজাতরাই এই জুতা পরিধান করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপনের জন্য লাল রঙের হিল শুধু নিজের জন্য বরাদ্দ রাখেন তিনি।

jJf2eWy.jpg


হাই হিল প্রেমী চতুর্দশ লুই, ছবি: উইকিপিডিয়া

আঠারো শতকের শুরুতে, ১৭৩০ সালের দিকে হাই হিল ধীরে ধীরে পুরুষালি ফ্যাশন থেকে নারীদের ফ্যাশনে পরিণত হয়। আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটাতে নারীদের জুতার হিল অনেক বেশি উঁচু এবং অনেক বেশি অলংকারসমৃদ্ধ হতে লাগল। হাই হিলকে নারীবাদের প্রতীক হিসেবে দেখানো শুরু হলো সে সময়। ১৭৮৯ সালে শুরু হওয়া ফরাসি বিপ্লবের পর থেকে হাই হিল পুরুষ ফ্যাশনের তালিকা থেকে বাদ পড়ে। কারণ, ফরাসি বিপ্লবের আগে এই ধরনের জুতা শ্রেণিবৈষম্য আর ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে গণ্য হতো। নারীদের উঁচু জুতার তুলনায় পুরুষদের জুতা চওড়া, সমতল ও শক্তভাবে তৈরি হতো।

ফরাসি বিপ্লবের পর থেকেই হাই হিল নারীদের ফ্যাশন হিসেবে প্রাধান্য পেতে শুরু করে। তবে উনিশ শতকে এসে আমেরিকার উত্তর অংশের ঘোড়সওয়ার-কাউবয়রা উঁচু হিলকে ফ্যাশন ট্রেন্ডে নিয়ে আসে, যা আবারও পুরুষদের ফ্যাশনে ফিরে আসে। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের দুই আলোচিত ধ্রুপদি অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন এবং মেরিলিন মনরো আবারও মেয়েদের ফ্যাশন হিসেবে হাই হিলকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে এবার শুধু এর বিস্তার ইউরোপ-আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি এই দশককে বলা হয় হাই হিলের সুবর্ণ সময়।

EyoX1ct.jpg


চেলসি বুট পায়ে বিটলস, ছবি: বিটলস আর্কাইভ

দশম শতাব্দীতে পারসিয়ানরা, সপ্তদশ শতাব্দীতে ফরাসিরা এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার কাউবয়দের পর বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে বিশ্ব মাতাল করে দেওয়া যুক্তরাজ্যের চার তরুণের ব্যান্ড ‘বিটলস’-এর কল্যাণে পুরুষদের পায়ে আবারও ফিরে আসে হাই হিল। তবে তারা মূলত সমতলভাবে তৈরি বিশেষায়িত উঁচু হিলের শু, চেলসি বুটকেই নতুনভাবে ফিরিয়ে আনে।

ষাটের দশক-পরবর্তী বিভিন্ন রক অ্যান্ড রোল ব্যান্ড, যেমন অ্যারোস্মিথ, মটলি ক্রু, কিস, ডেভিড বোইয়ের তারকারা নিজেদের মতো করে উঁচু তথা হাই হিল জুতার নকশা করেন নিজেদের জন্য। বিটলসের বিটলস বুটের ট্রেন্ড ছাড়া এদের আর তেমন কেউই ফ্যাশন জগতে হাই হিল নিয়ে প্রভাব রাখতে পারেনি।

dKonjJZ.jpg


বরং হাই হিল নারীদের ফ্যাশন হিসেবেই বেশি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তবে সত্তরের দশকের নারীবাদী আন্দোলনের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে নারীদের ফ্যাশনে হাই হিলের জোয়ারে কিছুটা ভাটা পড়ে। যদিও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত, নারীদের আবেদনময় ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে বিশ্বজুড়েই এর অবস্থান শীর্ষে।

বর্তমানে যেভাবে জেন্ডার বাইনারি বা জেন্ডার বেন্ডিং ফ্যাশন ট্রেন্ডের প্রচলন শুরু হয়েছে, নিকট ভবিষ্যতে হাই হিল নারী-পুরুষ উভয়ের ফ্যাশন হিসেবে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করলেও আশ্চর্য হওয়ার কারণ থাকবে না।
 
হতে পারে একসময় ছিল। তবে বর্তমানে এটা করা হাস্যরসের যোগান দিবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top