What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পর্ণগ্রাফি PORNOGRAPHY | ভয়ানক এই আসক্তি থেকে ফিরে আসার উপায় (1 Viewer)

billionbd2024

Member
Joined
Jan 8, 2024
Threads
19
Messages
176
Credits
7,778
মানুষকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করার জন্য শয়তানের অন্যতম অস্ত্র হলো নগ্নতা যার আধুনিক নাম পর্ণগ্রাফি। আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম(আ) ও হাওয়া(আ) শয়তান জান্নাত থেকে বের করার আগে নগ্ন করে ছেড়েছিল। আল্লাহ্‌ বলেন:

হে আদমসন্তান। শয়তান যেন তোমাদের কিছুতেই প্রলুব্ধ না করে যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাবার জন্য বিবস্ত্র করেছিল … (সূরা আ'রাফ ৭:২৭)
মানুষকে নগ্ন করে বিপথে নেয়ার শয়তানের সেই চক্রান্ত শেষ হয়নি, বরং যুগের পর যুগ ধরে বেড়েই গেছে। আর বর্তমানযুগে শয়তানের এই শয়তানি চরম মাত্রা লাভ করেছে ইন্টারনেট পর্ণগ্রাফির কারণে।

➊ পর্ণগ্রাফি মানুষকে মানষিক ও শারিরীকভাবে ভারসাম্যহীণ করে দেয়। নিচে পর্ণগ্রাফির কিছু ভয়াবহ ক্ষতিকর পরিণতি তুলে ধরা হলো। নেক্সট টাইম যখন আপনার পর্ণ ফিল্ম দেখতে ইচ্ছে করবে, এই কথাগুলো নিজেকে মনে করিয়ে দিবেন।

পর্ণগ্রাফি আপনাকে ভালবাসার বিকৃত সংজ্ঞা শেখায়। আপনি যখন পর্ণ মুভি দেখেন তখন আপনি নিজের অজান্তেই অনুভূতিহীন, নিষ্ঠুর, স্বার্থপর মানুষে পরিণত হন। কারণ, পর্ণ মুভিগুলোতে মানুষের ভালো-লাগা, ভালোবাসা, দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ কোন অনুভূতিকেই দেখানো হয় না, শুধু দেখানো হয় "পেনেট্রেশন"। অথচ বাস্তব জীবনে আপনি আপনার সঙ্গীকে আদর-সোহাগ করবেন, গল্প-গুজব করবেন, আড্ডা মারবেন, ঘুরতে যাবেন – এগুলো সবই একটা সুস্থ ভালবাসাময় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পর্ন মুভি আপনার হৃদয় থেকে ভালোবাসার সেই অনুভূতিকে কেড়ে নেয়, নষ্ট করে দেয়। পর্ণগ্রাফি আপনাকে এভাবে প্রোগ্রাম করে ফেলে যে আপনি বিশ্বাস করা শুরু করেন যে ভালবাসার অপর নাম পেনেট্রেশন। আমেরিকায় এক জরিপে দেখা গেছে ডিভোর্স হওয়া দম্পতিদের ৫৬% ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর একজন পর্ণ আসক্ত।

অ্যামেরিকায় গত শতাব্দীতে প্রতি বছর ১ মিলিয়ন করে ডিভোর্স হয়েছে। যদি কমপক্ষে অর্ধেক ডিভোর্সের কারণ হিসেবে পর্নকে ধরা হয় তারপরও প্রতিবছর ৫০০,০০০ টি ডিভোর্সের কারণ হচ্ছে পর্ণগ্রাফি বা পর্ন অ্যাডিকশন।

এভাবে পর্নের কারণে একটি সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একজন সন্তান যখন তার বাবার ল্যাপটপে পর্ন পায় তখন ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়? কি শিখবে এই ছেলে/মেয়েটি তাদের বাবার কাছ থেকে। একজন স্ত্রী যখন তার স্বামীর পর্ন অ্যাডিকশন সম্পর্কে জানবে কোথায় যাবে তার সম্মান। কোন সন্দেহ ই নেই- বর্তামান সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ এই পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি

অনেকেই ভাবেন যে বিয়ের পর সব অ্যাডিকশন দূর হয়ে যাবে। তদের জন্য এই স্ট্যাটিসটিক্সগুলো জানা খুব জরুরী। একজন মানুষ হঠাৎ কোন অ্যাডিকশন থেকে মুক্তি পায়না। তাছাড়া পর্নের স্যাটিসফ্যাকশন শুধুই পর্নে, নরমাল সেক্সচুয়াল লাইফ সবার ক্ষেত্রে এর সলিউশন দিতে পারে না। তাই এখন থেকেই পর্ন ছাড়ার প্রেক্টিস করুণ। তা না হলে আপনার জন্য কষ্ট পেতে হবে আপনার স্ত্রী এবং সন্তানদের।

অনেক তরুণ মনে করে – "এখন তো আমার বয়স কম, এখনো বিয়ে করিনি, এখন পর্ণ দেখি, বিয়ের পর আমি এগুলো দেখা ছেড়ে দিব"। কিন্তু, পরিসংখ্যান বলে ভিন্ন কথা – দেখা গেছে তরুন বয়সে পর্ণ দেখা যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়, বিয়ের পরেও তাদের বেশীরভাগই পর্ণ দেখা ছাড়তে পারে না। কাজেই – আমি এখনো বিয়ে করিনি, তাই পর্ণ দেখব – এটা পর্ণগ্রাফিতে স্থির থাকার কোনও অজুহাত হতে পারে না।



পর্ণ আপনার মানবিক অনুভূতিকে নষ্ট করে ফেলে।পর্ণ আপনাকে শেখায় মেয়েরা মানুষ নয়, শুধুই উপভোগের বস্তু। পর্ণ দেখার ফলে আপনি রাস্তা-ঘাটে, অফিসে-বিশ্ববিদ্যালয়ে যখনই কোন মেয়েকে দেখেন তখন চিন্তা করেন না তারও একটা জীবন আছে, আশা-আকাংক্ষা আছে, দু:খ-কষ্ট-আনন্দ-ভালোবাসার অনুভূতি আছে, আপনি শুধু চিন্তা করতে থাকেন এই মেয়েটার মধ্যে উপভোগ করার মত কি আছে।

একটা মেয়ে রাস্তায় পা পিছলে পড়ে গেলে আপনি চিন্তা করেন না মেয়েটা ব্যাথা পেয়েছে কি না, তাকে উদ্ধার করা যায় কি না, বরং আপনি চিন্তা করেন তার শরীরের কোনও অংশ উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে দেখা যায় কি না।একটি মেয়েকে তার সততা, মেধা ও মানবিক গুণাবলী দিয়ে বিচার না করে আপনি তাকে বিচার করেন তার শরীরের বিশেষ কিছু স্থানের আকার-আকৃতি দিয়ে। পর্ণ মুভি বা পর্ণগ্রাফি আপনাকে শেখায় যে ক্লাসের বন্ধু, অফিসের কলিগ থেকে শুরু করে সবার সাথেই শারিরীক সম্পর্ক গড়া যায় – এভাবে পর্ণ আপনাকে অবৈধ সম্পর্ক গড়তে উৎসাহিত করে। আমেরিকায় এক জরিপে দেখা গেছে যে গড়ে ৬৮% বিবাহ বিচ্ছেদ হয় অনলাইন পর্ণগ্রাফিতে আসক্তির কারণে।



পর্ণগ্রাফি আপনার স্মরনশক্তি কমায়, আপনার মধ্যে ডিপ্রেশন তৈরী করে। ইসলামের স্কলারেরা সেই প্রথম থেকেই বলে আসছেন – আল্লাহ্‌ যা দেখতে নিষেধ করেছেন তার দিকে তাকালে স্মরনশক্তি, চিন্তাশক্তি কমে যায়।

একবার ইমাম শাফেঈ কোরআনের কিছু আয়াত ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি তার উস্তাদ ইমাম মালিককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন – "তুমি হয়তো হারাম কিছু দেখেছ। তাই আল্লাহ তোমার থেকে জ্ঞান তুলে নিয়েছেন"।
ইমাম শাফেঈ প্রথমে কিছুতেই মনে করতে পারছিলেন না তিনি কার দিকে হারাম দৃষ্টি দিয়েছিলেন। পরে বুঝতে পারলেন – আজকে যখন বাজারে গিয়েছিলেন তখন এক মহিলাকে তার বাহন থেকে নামতে দেখেছিলেন। যখন সে নামছিলো তখন তার পায়ের গোড়ালির উপরে একটু কাপড় উঠেছিল, আর সেটার দিকে ইমাম শাফেঈর চোখ পড়ে গিয়েছিল। সাথে সাথে ইমাম শাফেঈ আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন, নিজের পাপের জন্য আকুতি-মিনতি করলেন। আর এর পরেই আল্লাহ্‌ তাকে ভুলে যাওয়া কোরআনের আয়াতগুলো ফিরিয়ে দিলেন।

মনোবিজ্ঞানীরাও গবেষনায় দেখেছেন যে পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি মানুষের স্মরনশক্তি কমিয়ে দেয়, চিন্তাশক্তি হ্রাস করে, অমনোযোগী করে, ডিপ্রেসড করে দেয় এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জার্মানির ডুইবার্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ডক্টর ক্রিস্টিয়ান লেয়ের ২৬ বছর বয়সী ২৮জন মানুষের উপর পর্ণ ছবি দেখার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি গবেষনায় পেয়েছেন – পর্ণ দেখার শর্ট-টার্ম ইফেক্ট হিসাবে এদের স্মৃতিশক্তি কমেছে এবং মনোযোগী হবার ক্ষমতা কমেছে। এছাড়া অন্য গবেষনায় পর্ণ দেখার লং-টার্ম ইফেক্ট হিসাবে ডিপ্রেশন, সামাজিকভাবে ব্যর্থতা ও একাকিত্ব থাকার প্রবণতা পর্যন্ত পাওয়া গেছে।



পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি এডিকশন আপনাকে অক্ষম করে দিতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত পর্ন ভিডিও দেখলে আপনার উত্তেজিত হওয়ার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। এর কারণ হলো – আজকালকার পর্ণ গুলো ধারণ করা হয় হাই ডেফিনিশন ক্যামেরায়, এইসব ক্যামেরায় মেয়েদের শরীরকে এত নিঁখুতভাবে ও জুম করে দেখানো হয় যে বাস্তবে আপনার সংগীকে আপনি এভাবে দেখতে পারবেন না, ফলে সহজে উত্তেজিত হবেন না। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটা পর্ণ মুভি আপনার সামনে নিয়ে আসে নতুন নতুন পর্ণ মডেল, নতুন নতুন লোকেশন আর নতুন নতুন কাহিনী। আপনার ব্রেইন ক্রমেই এই নতুনত্বে অভ্যস্ত হয়ে যায়, পুরনো কিছু তখন আর আপনাকে সহজে উত্তেজিত করতে পারে না। এর ফলে, এরকম ঘটতে পারে যে আপনি কিছুতেই আর আপনার স্ত্রীকে দেখে উত্তেজিত হবেন না।

কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই অক্ষমতা এমন আকার ধারণ করে যে তারা শুধু পর্ণ মুভি দেখেই উত্তেজিত হতে পারে, এমন কি ভায়াগ্রার মতো শক্তিশালী ওষুধেও তাদের কোন কাজ হয় না। এই সমস্যাকে ইরেক্টাইল ডিস্ফাংশন বলে এবং গবেষনায় দেখা গেছে যারা কিশোর বয়সে পর্ণ দেখা শুরু করে (বিশেষ করে ১২ বছর বয়সের পূর্বে) তাদের মধ্যে এই সমস্যা সবচেয়ে প্রকট।

যারা পর্ন এবং মাস্টারবেশন আসক্তিতে ভুগছেন তারা সবাই জানেন যে মাস্টারবেশন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজের ক্ষেত্রে কত বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, কত ছেলেরা এ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করে, কত সংসার ভেঙ্গে যায়। আর এসব মুভিতে মাস্টারবেশনকে জীবনে সফল হওয়ার টিপস হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এছাড়াও পর্নকে তারা কীভাবে স্বাভাবিক করে তুলছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হলিউড এবং এর মত অন্যান্য মুভি ইন্ডাস্ট্রি এভাবেই প্রতিনিয়ত মিথ্যা দিয়ে আমাদের ইয়াং জেনারেশনের মগজ ধোলাই করে চলছে।

তাই যারা পর্ন বা পর্ণগ্রাফি আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছেন তাদের উচিত এসব মুভি থেকে নিজেদের বিরত রাখা। যারা আপাতত পর্ন দেখছেন না, কিন্তু নিয়মিত মুভি, টিভি সিরিজ দেখেন তাদেরও উচিত এসব মুভি বয়কট করা। কারণ আজ যারা পর্ন অ্যাডিক্টেড তারাও একসময় পর্ন দেখত না। কোন এক আইটেম সং কিংবা মুভির সফটকোর দৃশ্য তাদের ধীরেধীরে এ পথে নিয়ে এসেছে, পর্নোগ্রাফি নামক পিচ্ছিল পাথরে একদিন তারা পা রেখেছিল, সেখান থেকেই পিছলে অনেকে এমন এক গহ্বরে গিয়ে পৌঁছেছে যেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ আজ খুঁজে পাচ্ছে না।

তবে আশার কথা এই যে, ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে আবার সক্ষম হওয়া সম্ভব। গবেষনায় দেখা গেছে কোনও ব্যক্তি টানা তিন মাস পর্ণ মুভি বা পর্ণগ্রাফি না দেখলে ও স্বমেহন না করলে তার ব্রেইন আবার আগের প্যাটার্নে ফিরে আসে, ফলে সে ডিজিটাল মিডিয়ার বাইরে মেয়েদেরকে দেখেও উত্তেজিত হতে পারে। ভেবে দেখুন – ব্রেইনের এই নিজে নিজে সেরে উঠার ক্ষমতা আল্লাহর তরফ থেকে কত বড় রহমত! আপনি বছরের পর বছর তাঁর অবাধ্যতা করার পরেও মাত্র তিন মাস নিজেকে সংযত রাখলে আল্লাহ্‌ আবার আপনাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিবেন।

"হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছো, তারা আল্লাহ্ তায়ালার রহমত হেকে (কখনো) নিরাশ হয়ো না; অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা (মানুষের) সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।" [সুরা আঝ ঝুমারঃ ৫৩]
চিন্তা করুন। যদি কুরআনে এই আয়াতটা না থাকতো তাহলে কতো মানুষ নিজেদের কৃতকর্মের জন্য হতাশ হতো।

যখন আপনি পর্ন দেখার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, কিন্তু পরবর্তীতে আবার দেখেন, এরপর আবার ক্ষমা চান এবং আবার দেখেন, এভাবে চলতে থাকে। এই চক্রের মধ্যে বছরের পর অবস্থান করছেন, নিজের এবং আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে আপনি এসব ছেড়ে দিবেন, তবুও ছাড়বো ছাড়বো করে আর ছাড়তে পারছেন না। যার ফলে, আপনি হতাশ হয়ে যান এবং পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্তির লড়াইয়ে হার মানেন।

আপনার ভেতরে যে অপরাধবোধ জন্ম নেয় তা আপনাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত রাখে। ফলে আপনি ভাবতে শুরু করেন যে আল্লাহ্‌ আপনাকে অনেক শাস্তি দিবেন। কিন্তু আপনি যদি বার বার ক্ষমা চাইতে থাকেন এবং এই পর্ণগ্রাফি আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান তাহলে আল্লাহ্‌ আপনাকে শাস্তি দিবেন না।

"আল্লাহ্‌ কি (খামাখা) তোমাদের শাস্তি দেবেন- যদি তোমরা (তাঁর প্রতি) কৃতজ্ঞতা আদায় করো এবং তাঁর ওপর ঈমান আনো; (বস্তুত) আল্লাহ্‌ তায়ালা হচ্ছেন (সর্বোচ্চ) পুরস্কারদাতা, সম্যক ওয়াকেফহাল"[সুরা নিসাঃ ১৪৭]
তাই এই শুকরিয়া আদায় করুন, যে তিনি এখনো পর্ন দেখা অবস্থায় আপনার জান তুলে নেননি। বরং আপনাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন, যাতে আপনি তাঁর সাথে সম্পর্কটা ঠিক করতে পারেন। আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখুন এবং কখনো তাঁর দয়া ও রহমত হতে নিরাশ হবেন না। যদি নিরাশ হন তাহলে আরো বিপথে চলে যাবেন।

"পথভ্রষ্ট ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহর রহমত থেকে কে নিরাশ হতে পারে?"[সুরা আল হিজরঃ ৫৬]
আবারও বলছি, পর্ণ, পর্ণগ্রাফি ও মাস্টারবেশন আসক্তি খুব ভয়াবহ হতে পারে, তাই বলে যৌন অপরাধে জড়িত হয়ে নিজেকে আসক্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করা বড় বোকামি হবে। এ প্রবণতা আপনাকে আরও জঘন্য অপরাধের দিকে ধাবিত করবে। হ্যাঁ, আমি জানি অনেকের জন্য এ ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা বেশ কষ্টকর। বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরণের আসক্তি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও, আপনার কাজের জন্য আপনিই দায়ী। আপনি হয়তো অনুশোচনায় ভুগবেন, কাঁদবেন বা নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করবেন এমন কাজ না করার, কিন্তু যার ক্ষতি আপনি করে ফেলেছেন তাকে তো আর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। তাই পর্ণগ্রাফি আসক্তি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার আগেই আপনি আসক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।



➎ আপনি কি মনে করেন যারা পর্ণ মডেল হয়েছে তারা সবাই নিজের ইচ্ছাতেই পর্ণ মুভিতে এসেছে? মোটেই না। এদের অনেককেই লোভনীয় চাকুরী, ফ্রি-ট্যুর সহ বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে শুটিং স্পটে নিয়ে আসা হয়। তারপর অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে, রঙ্গিন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে পর্ণ মুভিতে বা পর্ণগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। আমেরিকাতে সাধারণ কাজে ঘণ্টায় যত টাকা পাওয়া যায়, পর্ণ মুভির জন্য প্রতি ঘন্টায় তার ২০গুণ টাকা দেয়া হয়। টাকার লোভে পড়ে কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েরা পর্ণ মুভিতে নাম লেখায়, আর এভাবে করেই পর্ণগ্রাফী ইন্ডাস্ট্রিতে গড়ে উঠে বিলাশ এক সম্রাজ্য।

মানুষ নতুন নতুন পর্ণ মডেল দেখতে পছন্দ করে। আর তাই পর্ণ মুভির প্রডিউসাররাও নিত্য-নতুন প্রলোভন দেখিয়ে নতুন নতুন মেয়েদেরকে পর্ণগ্রাফি বা পর্ণ জগতে নিয়ে আসে। আপনি যে মেয়েটাকে পর্ণ-মুভিতে হাসতে দেখছেন, আনন্দে-উচ্ছ্বাসে ডুবে যেতে দেখছেন – কম্পিউটার বন্ধ করে দিলেই আপনার তাকে দেখতে হয় না, কিন্তু আপনার সামনে সে যাতে পরের মুভিতেও আসতে পারে তার জন্য কিন্তু তাকে প্রস্টিটিউট হিসাবেই থেকে যেতে হয়।

আপনি আপনার কম্পিউটারের সামনে বসে নিত্য-নতুন পর্ণ মডেল দেখার জন্য যে ক্লিক করছেন, সে ক্লিকের ডিমান্ড মেটানোর জন্য পর্ণ মুভির প্রডিউসারকে ক্রমাগত নতুন নতুন মেয়ে জোগাড় করে সাপ্লাই দিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে করে, আপাত:দৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হওয়া এই ক্লিকের কারণেই বিশ্বজুড়ে পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি ব্যবসার পালে হাওয়া লাগছে, আর এর সূত্র ধরে নতুন নতুন মেয়ে প্রতিদিন প্রস্টিটিউট হয়ে উঠছে।

আর যে সব পর্ণ মুভি গোপনে ধারণ করা হয়, এগুলো যে কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে, কত মেয়ে এগুলোর জন্য আত্মহত্যা করেছে – তার ইয়ত্তা নেই। ভেবে দেখুন – কেউ যদি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও না দেখত, তাহলে কেউ এগুলো বানাতোও না, ফলে এই ভিডিওগুলোর জন্য কোনও মেয়ের জীবনও নষ্ট হতো না।



মনে রাখবেন, আপনি একা ঘরে কম্পিউটারের সামনে বসে যা করছেন তা আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ্‌ দেখছেন, আর ফেরেশতারা তা লিখে রাখছে এক পরিষ্কার গ্রন্থে। আল্লাহ্‌ যদি এখনো আপনার কুকর্ম মানুষের সামনে প্রকাশ না করে দিয়ে থাকেন – তাহলে বুঝবেন আপনাকে আল্লাহ্‌ তাওবাহ করার জন্য সুযোগ দিচ্ছেন। আপনি যদি তাওবাহ না করে মারা যান, তাহলে এই গ্রন্থের সবকিছু একদিন আপনার সামনে তুলে ধরা হবে, আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু সবাই আপনার আমলনামা দেখতে পাবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন – সেদিনের সেই লজ্জার সম্মুখীন কি আপনি হতে পারবেন? তাই পর্ণগ্রাফি, পর্ণ যে কোন কিছু আর না!

আচ্ছা, আপনারা যারা প্রতিদিন অনেকটা সময় পর্ন দেখার পেছনে ব্যয় করেন, কিন্তু একে কোনো খারাপ কাজ মনে করেন না, নিজের ক্ষতি হচ্ছে এমনটাও বিশ্বাস করেন না, তাদের বলব,-

ধরুন, আপনি আপনার পরিবারের সাথে খুব সুন্দর একটা রিসোর্টে বেড়াতে গিয়েছেন। হোটেলে অন্যান্য সব সুবিধার সাথে হাই স্পিড ইন্টারনেটও আছে। বাহিরে অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। নীল সাগর, আকাশ, নানান রঙের পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে, সমুদ্রের পাড়ে মজার মজার সব খাবারের সমাহার। সবাই বাহিরের প্রকৃতি উপভোগ করছে। কিন্তু আপনি হোটেলে স্মার্টফোন হাতে নিয়ে বসে আছেন। বাসায় যে ইন্টারনেট স্পিডে পর্ন দেখতেন এখানকার স্পিড তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। পর্ণগ্রাফি আপনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে এক স্বপ্নের দুনিয়ায় !

এমন এক মুহূর্তে আপনার পরিবারের সবাই বাহিরের প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য ডাক দিলে আপনি কি করবেন?

① বাহিরে না গিয়ে হোটেলে একা থাকবেন, যাতে পর্ন দেখা যায়।
② সবার সাথে বাহিরের প্রকৃতি উপভোগ করতে যাবেন।

পর্ন বা পর্ণগ্রাফি আসক্তদের নিয়ে আমাদের গত ৩ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, আপনি ১ নং কাজটা করার সম্ভাবনাই বেশি। অর্থাৎ, বাহিরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার চেয়ে স্ক্রিনের কৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করাই আপনার কাছে তখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। পর্ন আসক্তদের এমন আচরণের একটা কারণ হল- তারা সোশ্যাল অ্যানজায়েটিতে (social anxiety) ভুগে।

একটু চিন্তা করে দেখুন, পর্নের কারণে সুন্দর এই রিসোর্টের মতো আপনি কি নিজের জীবনকে উপভোগ করা ভুলে যাচ্ছেন না? যে সময়টা আপনি বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতেন বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারতেন পর্ন কি আপনার কাছ থেকে সেই সময়টা কেড়ে নিচ্ছে না?

আপনি কি জানেন, বিবাহিত পর্ন আসক্তদের অনেকেই স্ত্রীর সাথে যৌন মিলনের সময় উত্তেজনা অনুভব করে না। যদি জেনে থাকেন, তাহলে যে জিনিস পরিবার ও সমাজ থেকে আপনাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, সে জিনিসটাকে আপনি কীভাবে নিরাপদ বলেন। এখনই সময়, আরেকবার ভেবে দেখুন। পর্ণগ্রাফি কে না বলার সময় কি এখনো আসে নি ?


পর্ণ–আসক্তি এবং পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্তির উপায় ϟ ϟ

পর্ণগ্রাফির ছোবল থেকে বাঁচতে ডিজিটাল মিডিয়ার কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না। আপনি কম্পিউটারে যে পর্ণস্টারদের দেখেন, বা টিভিতে যে মডেল আর ফিল্মস্টারদের দেখেন – এরা সবাই হাজার হাজার ডলার এর সার্জারী করে, মেকাপ করে, স্পেশালিষ্ট এর অধীনে ব্যায়াম করে, মেকআপ করে তাদের শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিকে চকচকে করে তোলে মানুষের চোখে নিজেকে আকর্ষণীয়, আবেদনময়ী করে তুলতে। তার উপর আছে হাই-ডেফিনেশন ক্যামেরা, ফটোশপ আর অত্যাধুনিক ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এর কারসাজী। এর ফলে আপনি কম্পিউটারে, টিভিতে, ফ্যাশন ম্যাগাজিনে যে মেয়েদেরকে দেখেন তারা নিঁখুত, পার্ফেক্ট। এমনকি আপনি চাইলে মিনিটির পর মিনিট, ঘন্টার পর ঘণ্টা ধরে এই পার্ফেক্ট ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন – বাধা দেয়ারও কেউ নেই।

কিন্তু, বাস্তব জীবনের কোন মানুষই এরকম পার্ফেক্ট হয় না আর এরকম পিক্সেল বাই পিক্সেল জুম করে দেখাও যায় না। তাই, ডিজিটাল মিডিয়া আর বাস্তবতা এক নয়।

আপনি যতই আবেদনময়ী মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, ততই আপনার শরীরে ডোপেমিন নামক হরমন নিঃসৃত হয়। এই হরমন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে নি:সৃত হলে আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আপনি যখন নিত্য-নতুন সুন্দর মেয়ে দেখতে থাকেন তখন আপনার আপনার শরীর নিজেকে এমনভাবে এডজাস্ট করে নেয় যাতে পরেরবার উত্তেজিত হতে আপনার আরো বেশী ডোপেমিন এর প্রয়োজন হয়, কারণ না হলে তো আপনি খুব সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়বেন। এমনকি আপনি যখন টিভিতে কোন আবেদনময়ী মডেলের এড দেখেন যা পর্ণগ্রাফি থেকে কোন অংশে কম, বা ফেইসবুকে আপনার সুন্দরী বান্ধবীর ছবি দেখেন – তখনো আপনার ডোপেমিন নিঃসৃত হয়। ডিজিটাল মিডিয়ার মেয়েদেরকে আপনি যতই দেখবেন – বাস্তব জগতের একটি মেয়েকে বা আপনার স্ত্রীকে দেখে আপনার উত্তেজিত হওয়ার ক্ষমতা ততই নষ্ট হতে থাকবে। আর তাই – ডিজিটাল মিডিয়ার মেয়েদের দিকে যত কম সম্ভব তাকান।

যদি তাকাতেই হয় তো চেহারার দিকে তাকান। মেয়েদের দিকে যদি একেবারেই না তাকানো যায় তো সবচেয়ে ভালো। কিন্তু, বাস্তবতা হলো আমরা এখন যে জগতে বাস করি তাতে মেয়েদের দিকে না তাকিয়ে, তাদের সাথে মেলা-মেশা না করে চলা যায় না। বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে আপনাকে খবর দেখতে হবে – খবর উপস্থাপন করে মেয়েরা, আবার কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে পড়াশুনা করতে হয়, অফিসেও মেয়ে কলিগ থাকে, অনেক সময় নতুন ভালো মুভিও দেখতে ইচ্ছা করে, তাতেও নারী আছে – এমন অবস্থায় করণীয় কি? সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যেতে হবে? না, এভাবে জীবন চলবে না। যেটা করবেন সেটা হলো – যখনই কোন মেয়ের দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়বে তখন সরাসরি তার চেহারার দিকে তাকাবেন, শরীরের অন্য কোনো বিশেষ অংশের দিকে নয়। আর তাকানোর সময় নিজের নিয়তের দিকে লক্ষ্য রাখবেন, কিছুতেই যেন কোন শারিরীক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তার দিকে না তাকান, দুঃখ-কষ্ট-রাগ-ভালোবাসার অনুভূতিসম্পন্ন একজন মানুষের সাথে কথা বলছেন এভাবে তাকান।

আপনার মায়ের সাথে, স্ত্রীর সাথে, বোনের সাথে বা মেয়ের সাথে একজন বাইরের মানুষ যখন কথা বলে তখন আপনি তার থেকে যেরকম সুন্দর-শোভন-সাবলীল-সম্মানজনক আচরণ প্রত্যাশা করেন, তার চোখ যেখানে থাকবে বলে আপনি আশা রাখেন, অন্য একটা মেয়ের ক্ষেত্রে নিজের চোখটিও সেইভাবে নিয়ন্ত্রন করুন। মনে রাখবেন, আপনি যখন একটা মেয়ের দিকে তার অজান্তে কামনার দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছেন, আপনি তার অধিকার লঙ্ঘন করছেন। আর আপনি যদি পর্ণ ছাড়তেই পারেন, পর্ণগ্রাফি থেকে দূরে থাকতেই পারেন, তবে এই বিষয় গুলো আপনার জন্য পানির থেকেও সহজ হয়ে যাবে, ইন শা আল্লাহ!


নামাজ ছাড়বেন না ϟ

পর্ণগ্রাফী থেকে বের হয়ে আসার প্রধান শর্তই হচ্ছে কিছুতেই নামাজ ছাড়বেন না। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন উপদেশ – কিছুতেই ১টি ওয়াক্তেরও নামাজ ছাড়বেন না। আর আপনি যদি নামাজী না হয়ে থাকেন – তো আজ থেকেই ৫ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে দিন।

আল্লাহ্‌ বলেছেন – "নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল কাজ ও পাপাচার থেকে দূরে রাখে" (সূরা আনকাবুত ২৯:৪৫)।
এক ঘরে যেমন একইভাবে আলো আর অন্ধকার থাকে না, তেমনি একই হৃদয়ে একইসাথে নামাজ আর পর্ণগ্রাফি থাকতে পারবে না।

একবার সাহাবারা রাসূলুল্লাহ(সা) কে বললো – অমুক সাহাবী বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ(সা) জিজ্ঞেস করলেন – সে কি এখনো নামাজ পড়ে? সবাই বললো – হ্যাঁ, পড়ে। রাসূলুল্লাহ(সা) বললেন – সে যদি নামাজ পড়তে থাকে তাহলে নামাজ তাকে অবশ্যই একদিন খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
পর্ণগ্রাফি থেকে বাঁচতে নিয়মিতভাবে নফল রোজা রাখুন। রোজা হচ্ছে ঢালস্বরুপ, যা কিনা আমাদেরকে পাপ কাজ থেকে দূরে সরে থাকতে সাহায্য করে। আমরা যখন রোজা রাখি তখন আমাদের পাকস্থলী ক্ষুধার্ত থাকে, ক্ষুধার্ত পাকস্থলি শরীরকে দুর্বল করে দেয়, এর ফলে আমাদের কামনা-বাসনাগুলোও দুর্বল হয়ে পড়ে। আর তাই, কামনা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ(সা) আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন রামাদানের রোজার বাইরেও বেশী বেশী করে নফল রোজা রাখতে।

সবচেয়ে সহজ হলো – প্রতি আরবী মাসের মাঝের তিন দিন (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) রোজা রাখা, এর চেয়ে আরেকটু কঠিন হলো – প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহষ্পতিবার রোজা রাখা, আর সবচেয়ে ভালো হলো দাউদ(আ) এর মতো রোজা রাখা – একদিন পর একদিন। এছাড়াও বছরের নিচের দিনগুলি রোজা রাখার জন্য বিশেষ বরকতময় –

  • রমজানের পরের মাস শাওয়াল মাসের ছয় রোজা। রমজানের পর এই রোজাগুলি রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়।
  • আরাফাতের দিন বা যিলহজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখের (অর্থাৎ ঈদুল আযহার আগের দিনের) রোজা – যা কিনা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।
  • যিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের রোজা – যা কিনা আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয় নফল ইবাদত।
  • আশুরা বা মহররম মাসের ১০ তারিখের রোজা – যা কিনা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়। এর সাথে মহররমের ৯ তারিখে রোজা রাখতে পারলে আরো ভালো।
মনে রাখবেন – আপনি যত পাপ করতে পারেন, আল্লাহ্‌ তার চেয়েও বেশী ক্ষমা করতে পারেন, আপনি যতবার পাপ করতে পারেন, আল্লাহ্‌ তার চাইতেও বেশী বার আপনাকে ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু শর্ত হলো আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন – আর কোনোদিন পর্ণ দেখবেন না, পর্ণগ্রাফি থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবেন। যদি শয়তানের ফাঁদে পড়ে কখনো দেখে ফেলেন তো সাথে সাথে গোসল করে দুই রাকআত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে নিন, দেরী করবেন না। তারপর দ্বিগুন দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিজ্ঞা করুন – আর কোনদিন পর্ণ দেখবেন না, আপনি আর শয়তানের দাস হবেন না, শয়তান বরং আপনার দাস হবে। কিছুতেই হাল ছাড়বেন না, কিছুতেই না, শয়তান তার শয়তানীতে হাল ছাড়েনি, আপনিও আপনার ঈমানদারীতে হাল ছাড়বেন না। শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোই সফলতা নয়, গন্তব্যে পৌঁছানোর যাত্রাটাও সফলতা।

মহান আল্লাহ্‌ বলেন: জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাদের জন্য যারা কোনও অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা নিজেদের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? (সূরা আলে-ইমরান ৩:১৩৫)
পর্ণগ্রাফি
বইঃ মুক্ত বাতাসের খোঁজ
ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
পর্ণগ্রাফি নিয়ে লেখা অসাধারণ একটি বই ☑​

এক জঙ্গনামা। লড়াইটা এক অক্টোপাসের সাথে। নীলরঙা অক্টোপাস। ব্যক্তিসত্তা, সমাজমানসকে প্রতিমুহূর্তে আগের চেয়ে আরও জোরে পেঁচিয়ে নিচ্ছে আট পায়ে। সমস্যা হলো অক্টোপাসটি একটি ট্যাবু (taboo)। তার নাম নেয়া যায় না, আলোচনা করা যায় না, তার ক্ষতি চিৎকার করে জানিয়ে দেওয়া যায় না সবাইকে। এই সুযোগে সে আরও প্যাঁচ কষে চলেছে। মড়মড় করে ভাঙছে পরিবার, ভাঙছে সমাজ, ভাঙছে আইন, মূল্যবোধ-সুকুমারবৃত্তি, ভাঙছে জীবন—এক একটা স্বপ্ন খানখান হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। যেগুলো ভাঙেনি ঝুরঝুরে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটু ঝাঁপটার অপেক্ষায়।

পর্ন, পর্নগ্রাফি, ব্লু ফিল্ম। একটা অসুখ। প্রতিটা গোঁফের রেখা গজানো কিশোর মুখের দিকে তাকান, প্রতিটা উদ্দাম কলেজপড়ুয়া স্বপ্নবাজ তরুণ, ভার্সিটির চোখ নামিয়ে চলা প্র্যাক্টিসিং ছাত্র, গালফোলা দুই বেণিওয়ালা বাচ্চা মেয়ে, জ্যামে ঝুলে থাকা প্রতিটি কর্মজীবীর ঘর্মাক্ত মুখের দিকে তাকান। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। এক কঠিন দুরারোগ্য অসুখে ভুগছে প্রতিটি মানবসন্তান। অথবা যেকোনো সময় মহামারির গ্রাস হবার অপেক্ষায়। আপনার কেবল দাঁড়াতে শেখা মেয়েটার দিকে একটু তাকান। সদ্যভূমিষ্ঠ ছেলেটার দিকে তাকান। কী এক মড়কওয়ালা শ্মশান রেখে যাচ্ছেন তার জন্য!

এখন ঠিক এই মুহূর্তটিতে আপনার জন্য সবচেয়ে জরুরি এই বইটি পড়া, অক্সিজেনের চেয়েও। বিশ্বাস করুন—হ্যাঁ, আপনার শ্বাসের চেয়েও। আপনাকে বুঝতে হবে, আপনাকে জাগতে হবে; না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। অনেক দেরি। আপনাকে স্মরণ করতে হবে, "আপনি একজন যোদ্ধা"। প্রবাহতাড়িত একটি "গড্ডল" না আপনি। একটু মনে করার চেষ্টা করুন, আপনি যুদ্ধ করার জন্যই জন্ম নিয়েছেন। আর এ যুদ্ধে আপনি জিতবেন, আপনাকে জিততে হবে। এ জয় ছাড়া আপনার হাতে আর কোনো অপশন নেই। দমবন্ধ এই পৃথিবীতে আপনার খুঁজে নিতে হবে মুক্ত বাতাস। যেখানে চোখবুজে লম্বা শ্বাস টেনে নিলে নির্মল শীতল বাতাস পূর্ণ করবে আপনার প্রতিটি অ্যালভিওলাস। পরবর্তী প্রজন্মের অভিশাপের আর্তনাদ থেকে বাঁচতে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে তাদের অধিকার—একঝলক মুক্ত বাতাস।

বইটির লেখক, কলাকুশলীদের প্রাণভরা দু'আ। আল্লাহ তাদের এই খিদমতের বরকতে আমাদের বুঝ দান করুন। আমি চিকিৎসাবিদ্যাগত বিষয়গুলো দেখেছি আল্লাহর ইচ্ছায়, প্রয়োজনমতো পরিবর্তন-পরিমার্জনের পরামর্শ দিয়েছি। পর্নোগ্রাফির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত প্রলয়, এই ইন্ডাস্ট্রির নেপথ্যের কান্নার নৈঃশব্দ্য, মুক্ত বাতাসের যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ—এ আয়োজনে আমি অভিভূত। বইটি আমাদের সত্তার মানবীয় অংশটাকে জাগাক, অনুশোচনায় "অগ্নিদগ্ধ" করুক, চোখের পানি হৃদয় পোড়াতে পোড়াতে নামুক। সে পোড়া ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জন্ম নিক এক "যোদ্ধা", এক "আপনি", এক "আমি"।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top