পর্ব সাত (#3)
এই শহর কোলকাতা থেকে অনেক দুর এক মফঃস্বল শহরে বাস করতো তেইশ বর্ষীয় সুভাষ সান্যাল। এক অভিজাত পাড়ার শেষ প্রান্তে এক বস্তি আর তার পাশে রেলের কলোনি। সেই কলোনিতে সুভাষের খুব ছোট তিন কামরার বাড়ি। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান। বাবা রেলের এক সাধারন কর্মচারী। বড়দা বিয়েথা করে আলাদা হয়ে গেছে। দুই বোন, অপর্ণা আর সুজাতা তখন বেশ ছোট। কলেজ শেষ করে কাজের জন্য হন্যে হয়ে এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়ায়। চায়ের দোকানে আড্ডা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ওর বন্ধু, অনিলের বাবার ফটোর দোকানে গিয়ে বসে আর ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। সেই সুত্রে অনিলের বাবার কাছ থেকে ফটোগ্রাফি করা শিখে ফেলে। খুব বড় লোক না হলে সেই সময়ে বিয়ে পালা পার্বণে ভিডিও করা হতো না তাই স্টিল ফটোগ্রাফির তখন খুব চল ছিল। সবার হাতে তখন ক্যামেরা থাকতো না। অনিলের বাবার সাহায্যে এই বিয়ে পালা পার্বণে গিয়ে গিয়ে ফটো তুলতো। অনিলের বাবার দোকানে ফটো তুলে অন্তত ওর দিনের খাওয়ার খরচ, চা বিড়ির খরচ চলে আসে।
দেখতে হিন্দি ফিল্মের হিরোদের মতন মোটেই ছিল না। পকেটে পয়সা না থাকার ফলে প্রেম করতে পারেনি। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে একজনকে খুব দেখতো। স্বপ্নে আঁকা শ্যাম বরন সুন্দরী কন্যে, অনিতাকে। অনিতার বাড়ি সুভাষের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। অনিতার বাবাও সুভাষের বাবার সাথে রেলে চাকরি করতেন। অনিতাকে শুধু মাত্র দুর থেকে দেখে যাওয়া ছাড়া সুভাষের সারা দিনে কোন কাজ ছিল না। মাঝে মাঝে দেখা হলে কথা হতো, ব্যাস সেই পর্যন্ত ওর দৌড়। সুভাষের মেজদা, অতিশ তখন একটা বড় সোনার দোকানের কর্মচারী। বড়দা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে মেজদার ওপরেই সংসারের ভার এসে পড়ে। একদিন ওর বুক ভেঙে অনিতাকে বিয়ে করে ফেলল ওর মেজদা। বাবার অমত একদম ছিল না কারন অনিতার বাবা আর সুভাষের বাবা বন্ধু ছিলেন। যে মেয়েটাকে এতদিন মনের এক কোনায় পরীর মতন এঁকে রেখেছিল, নিজের বাড়িতে নিজের বৌদি হয়ে আসাতে সুভাষের বড় কষ্ট হল। তারপর থেকে সুভাষ এক প্রকার বাড়িতে আসা যাওয়া করা ছেড়ে দিল। সারাদিন এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়িয়ে কাটাতো আর অনিলের বাবার দোকানে কাজ করতো। অনেক রাতে বাড়িতে ফিরে কোনোরকমে দুটো ভাত মুখে গুঁজে বারান্দায় একটা তক্তপোষে শুয়ে পড়তো।
উঠতি বয়সের ছেলে, মাঝে মাঝে অনিল আর বন্ধুদের সাথে মদ খেতো। যেদিন অতিশের সাথে অনিতার বিয়ে হয়, তার দুইদিন পরে মদ খেয়ে বেশ্যা পাড়ায় গিয়ে এক সুন্দরী বেশ্যার সাথে রাত কাটিয়ে নিজের কৌমার্য খুইয়ে আসে সুভাষ। সারা রাত মদের নেশায় সেই সুন্দরী মেয়েটাকে অনিতা ভেবেই যৌন সঙ্গম করে গিয়েছিল। কিছু টাকা অবশ্য অনিল দিয়েছিল আর বাকিটা ওর জমানো টাকা ছিল। অন্ধকার হলেই মাঝেই মাঝেই নেশার ঝোঁকে বেশ্যা পাড়ায় কাটিয়ে আসতো সুভাষ।
সেই অভিজাত পাড়ায় এক বিশাল সাদা রঙের বাড়িতে এক কোলিয়ারির ম্যানেজার, বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসবাস। দুই ছেলের পরে একমাত্র কন্যে, অতীব সুন্দরী, ঋতুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা মেজাজি মানুষ, এলাকায় বেশ নামডাক। মা, সুনিতা দেবী আর বাবার চোখের মণি, ঋতু। কচি বয়স হলেও অসম্ভব সুন্দরী ছিল ঋতুপর্ণা, বাবা মায়ের আদরে রাজ কুমারী, ঋতু। ভোরের সদ্য ফোটা গোলাপের কুঁড়ির মতন দেখতে। পান পাতার মতন মুখাবয়ব, মাথায় মেঘের মতন ঢালাও চুল। আয়ত কাজল কালো দুই চোখে ছিল পাখীর মতন স্বাধীন হয়ে উড়ে যাওয়ার তীব্র বাসনা। গোলাপি কোমল অধরে যখন হাসি ফুটে উঠতো তখন কোকিলের কুহু ধ্বনি মনে হতো। সব থেকে আকর্ষণীয় ওর নিচের ঠোঁটের নীচে একটা ছোট তিল। বয়সের তুলনায় একটু বাড়ন্ত ছিল ওর দেহের গঠন। বুকের ওপরে উঁচিয়ে থাকা সদ্য গজিয়ে ওঠা তুলতুলে স্তন জোড়া পরনের কামিজ, ফ্রক ফুঁড়ে সামনের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে উদ্যত। পাতলা কোমর অনায়াসে হাতের মুঠোর মধ্যে চলে আসবে। আর তার ঠিক নীচে সদ্য ফুলে ওঠা সুগোল নিতম্ব। মত্ত চলনে রূপসী কন্যে সবার হৃদয়ে দোলা লাগিয়ে চলে যেতো। রূপকথার রাজকন্যে ঋতুপর্ণার রূপের কাছে ম্লান হয়ে যেতো। পড়াশুনায় বিশেষ মাথা না থাকলেও নাচে গানে অতুলনীয় ছিল ঋতুপর্ণা। রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, পুজোর সময়ে, স্কুলে পাড়ায় যেখানেই নাচের কোন অনুষ্ঠান হতো সেখানেই নাচতো ঋতুপর্ণা। হাঁটার সময়ে যেন ঋতুপর্ণা হাঁটতো না, মনে হতো যেন নেচে বেড়াচ্ছে। ওর রূপের ডালি মেলে নাচ দেখার জন্য পাড়ার সবাই জড়ো হয়ে যেতো সেই মঞ্চে। উচ্ছল উদ্দাম এক পাহাড়ি স্রোতস্বিনী, অধরা অপ্সরা।
সুভাষের চেয়ে প্রায় বছর আটেকের ছোট ঋতুপর্ণা তাই সুভাষের চোখে ঋতুপর্ণা এক দুষ্টু মিষ্টি ছোট মেয়ে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পাড়ার বকাটে ছেলে গুলো বাকি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ইতর মন্তব্য করলেও কারুর সাহস হতো না জাঁদরেল, বিদ্যুৎ বাবুর একমাত্র কন্যে, ঋতুপর্ণাকে কিছু মন্তব্য করে। তবে যখন ঋতুপর্ণা গাড়ি করে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতো তখন রাস্তার মুখে অনেকে জটলা পাকিয়ে বসে থাকতো এই অসামান্য রূপসীর দেখা পাওয়ার জন্য। বাবার গাড়ি হুস করে ওইসব ছেলেদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেততো। ঋতুপর্ণা মজে থাকতো নিজের খেয়ালে, কোনোদিন কোন এক রাজকুমার ওর জীবনে আসবে আর কোন দুর দেশে মেঘের ভেলায় ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। স্কুলের দিদিমনি যখন অঙ্ক করাতেন তখন ঋতুপর্ণা অঙ্কের খাতায় আঁকিবুঁকি কাটতো আর জানালার বাইরে তাকিয়ে আম গাছের বকুলের দিকে একমনে তাকিয়ে হারিয়ে যেতো।
সেই সময়ে শীত কালে, পুজোর পরে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হতো। সেদিন অঙ্কের পরীক্ষা, আর সেইদিন একটা রাজনৈতিক মিছিলের জন্য রাস্তায় গাড়ির যানজট। এই রাজ্যে ব্যাঙে পেচ্ছাপ করলেও মিছিল ডাকা হয়, যানজট হয়ে সাধারন মানুষের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
সুভাষ একটা বিড়ি টানতে টানতে সাইকেল নিয়ে দোকানে যাচ্ছিল। বিশাল জ্যাম দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। সাইকেল নিয়ে এই জ্যাম পার হয়ে দোকানে পৌঁছাতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। তবে খানিকদুরে একজনকে দেখে সুভাষ দাঁড়িয়ে পড়েছিল সেদিন। যদি সেদিন ওইভাবে থমকে দাঁড়িয়ে না পড়তো তাহলে হয়তো বর্তমানের এই গল্প শুরু হতো না। সুভাষ একভাবে বিড়ি টানতে টানতে ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়ির দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে ঋতুপর্ণা। আয়ত কাজল কালো চোখ জোড়া জলে ভরে এসেছে।
এই শহর কোলকাতা থেকে অনেক দুর এক মফঃস্বল শহরে বাস করতো তেইশ বর্ষীয় সুভাষ সান্যাল। এক অভিজাত পাড়ার শেষ প্রান্তে এক বস্তি আর তার পাশে রেলের কলোনি। সেই কলোনিতে সুভাষের খুব ছোট তিন কামরার বাড়ি। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান। বাবা রেলের এক সাধারন কর্মচারী। বড়দা বিয়েথা করে আলাদা হয়ে গেছে। দুই বোন, অপর্ণা আর সুজাতা তখন বেশ ছোট। কলেজ শেষ করে কাজের জন্য হন্যে হয়ে এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়ায়। চায়ের দোকানে আড্ডা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ওর বন্ধু, অনিলের বাবার ফটোর দোকানে গিয়ে বসে আর ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। সেই সুত্রে অনিলের বাবার কাছ থেকে ফটোগ্রাফি করা শিখে ফেলে। খুব বড় লোক না হলে সেই সময়ে বিয়ে পালা পার্বণে ভিডিও করা হতো না তাই স্টিল ফটোগ্রাফির তখন খুব চল ছিল। সবার হাতে তখন ক্যামেরা থাকতো না। অনিলের বাবার সাহায্যে এই বিয়ে পালা পার্বণে গিয়ে গিয়ে ফটো তুলতো। অনিলের বাবার দোকানে ফটো তুলে অন্তত ওর দিনের খাওয়ার খরচ, চা বিড়ির খরচ চলে আসে।
দেখতে হিন্দি ফিল্মের হিরোদের মতন মোটেই ছিল না। পকেটে পয়সা না থাকার ফলে প্রেম করতে পারেনি। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে একজনকে খুব দেখতো। স্বপ্নে আঁকা শ্যাম বরন সুন্দরী কন্যে, অনিতাকে। অনিতার বাড়ি সুভাষের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। অনিতার বাবাও সুভাষের বাবার সাথে রেলে চাকরি করতেন। অনিতাকে শুধু মাত্র দুর থেকে দেখে যাওয়া ছাড়া সুভাষের সারা দিনে কোন কাজ ছিল না। মাঝে মাঝে দেখা হলে কথা হতো, ব্যাস সেই পর্যন্ত ওর দৌড়। সুভাষের মেজদা, অতিশ তখন একটা বড় সোনার দোকানের কর্মচারী। বড়দা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে মেজদার ওপরেই সংসারের ভার এসে পড়ে। একদিন ওর বুক ভেঙে অনিতাকে বিয়ে করে ফেলল ওর মেজদা। বাবার অমত একদম ছিল না কারন অনিতার বাবা আর সুভাষের বাবা বন্ধু ছিলেন। যে মেয়েটাকে এতদিন মনের এক কোনায় পরীর মতন এঁকে রেখেছিল, নিজের বাড়িতে নিজের বৌদি হয়ে আসাতে সুভাষের বড় কষ্ট হল। তারপর থেকে সুভাষ এক প্রকার বাড়িতে আসা যাওয়া করা ছেড়ে দিল। সারাদিন এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়িয়ে কাটাতো আর অনিলের বাবার দোকানে কাজ করতো। অনেক রাতে বাড়িতে ফিরে কোনোরকমে দুটো ভাত মুখে গুঁজে বারান্দায় একটা তক্তপোষে শুয়ে পড়তো।
উঠতি বয়সের ছেলে, মাঝে মাঝে অনিল আর বন্ধুদের সাথে মদ খেতো। যেদিন অতিশের সাথে অনিতার বিয়ে হয়, তার দুইদিন পরে মদ খেয়ে বেশ্যা পাড়ায় গিয়ে এক সুন্দরী বেশ্যার সাথে রাত কাটিয়ে নিজের কৌমার্য খুইয়ে আসে সুভাষ। সারা রাত মদের নেশায় সেই সুন্দরী মেয়েটাকে অনিতা ভেবেই যৌন সঙ্গম করে গিয়েছিল। কিছু টাকা অবশ্য অনিল দিয়েছিল আর বাকিটা ওর জমানো টাকা ছিল। অন্ধকার হলেই মাঝেই মাঝেই নেশার ঝোঁকে বেশ্যা পাড়ায় কাটিয়ে আসতো সুভাষ।
সেই অভিজাত পাড়ায় এক বিশাল সাদা রঙের বাড়িতে এক কোলিয়ারির ম্যানেজার, বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসবাস। দুই ছেলের পরে একমাত্র কন্যে, অতীব সুন্দরী, ঋতুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা মেজাজি মানুষ, এলাকায় বেশ নামডাক। মা, সুনিতা দেবী আর বাবার চোখের মণি, ঋতু। কচি বয়স হলেও অসম্ভব সুন্দরী ছিল ঋতুপর্ণা, বাবা মায়ের আদরে রাজ কুমারী, ঋতু। ভোরের সদ্য ফোটা গোলাপের কুঁড়ির মতন দেখতে। পান পাতার মতন মুখাবয়ব, মাথায় মেঘের মতন ঢালাও চুল। আয়ত কাজল কালো দুই চোখে ছিল পাখীর মতন স্বাধীন হয়ে উড়ে যাওয়ার তীব্র বাসনা। গোলাপি কোমল অধরে যখন হাসি ফুটে উঠতো তখন কোকিলের কুহু ধ্বনি মনে হতো। সব থেকে আকর্ষণীয় ওর নিচের ঠোঁটের নীচে একটা ছোট তিল। বয়সের তুলনায় একটু বাড়ন্ত ছিল ওর দেহের গঠন। বুকের ওপরে উঁচিয়ে থাকা সদ্য গজিয়ে ওঠা তুলতুলে স্তন জোড়া পরনের কামিজ, ফ্রক ফুঁড়ে সামনের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে উদ্যত। পাতলা কোমর অনায়াসে হাতের মুঠোর মধ্যে চলে আসবে। আর তার ঠিক নীচে সদ্য ফুলে ওঠা সুগোল নিতম্ব। মত্ত চলনে রূপসী কন্যে সবার হৃদয়ে দোলা লাগিয়ে চলে যেতো। রূপকথার রাজকন্যে ঋতুপর্ণার রূপের কাছে ম্লান হয়ে যেতো। পড়াশুনায় বিশেষ মাথা না থাকলেও নাচে গানে অতুলনীয় ছিল ঋতুপর্ণা। রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, পুজোর সময়ে, স্কুলে পাড়ায় যেখানেই নাচের কোন অনুষ্ঠান হতো সেখানেই নাচতো ঋতুপর্ণা। হাঁটার সময়ে যেন ঋতুপর্ণা হাঁটতো না, মনে হতো যেন নেচে বেড়াচ্ছে। ওর রূপের ডালি মেলে নাচ দেখার জন্য পাড়ার সবাই জড়ো হয়ে যেতো সেই মঞ্চে। উচ্ছল উদ্দাম এক পাহাড়ি স্রোতস্বিনী, অধরা অপ্সরা।
সুভাষের চেয়ে প্রায় বছর আটেকের ছোট ঋতুপর্ণা তাই সুভাষের চোখে ঋতুপর্ণা এক দুষ্টু মিষ্টি ছোট মেয়ে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পাড়ার বকাটে ছেলে গুলো বাকি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ইতর মন্তব্য করলেও কারুর সাহস হতো না জাঁদরেল, বিদ্যুৎ বাবুর একমাত্র কন্যে, ঋতুপর্ণাকে কিছু মন্তব্য করে। তবে যখন ঋতুপর্ণা গাড়ি করে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতো তখন রাস্তার মুখে অনেকে জটলা পাকিয়ে বসে থাকতো এই অসামান্য রূপসীর দেখা পাওয়ার জন্য। বাবার গাড়ি হুস করে ওইসব ছেলেদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেততো। ঋতুপর্ণা মজে থাকতো নিজের খেয়ালে, কোনোদিন কোন এক রাজকুমার ওর জীবনে আসবে আর কোন দুর দেশে মেঘের ভেলায় ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। স্কুলের দিদিমনি যখন অঙ্ক করাতেন তখন ঋতুপর্ণা অঙ্কের খাতায় আঁকিবুঁকি কাটতো আর জানালার বাইরে তাকিয়ে আম গাছের বকুলের দিকে একমনে তাকিয়ে হারিয়ে যেতো।
সেই সময়ে শীত কালে, পুজোর পরে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হতো। সেদিন অঙ্কের পরীক্ষা, আর সেইদিন একটা রাজনৈতিক মিছিলের জন্য রাস্তায় গাড়ির যানজট। এই রাজ্যে ব্যাঙে পেচ্ছাপ করলেও মিছিল ডাকা হয়, যানজট হয়ে সাধারন মানুষের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
সুভাষ একটা বিড়ি টানতে টানতে সাইকেল নিয়ে দোকানে যাচ্ছিল। বিশাল জ্যাম দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। সাইকেল নিয়ে এই জ্যাম পার হয়ে দোকানে পৌঁছাতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। তবে খানিকদুরে একজনকে দেখে সুভাষ দাঁড়িয়ে পড়েছিল সেদিন। যদি সেদিন ওইভাবে থমকে দাঁড়িয়ে না পড়তো তাহলে হয়তো বর্তমানের এই গল্প শুরু হতো না। সুভাষ একভাবে বিড়ি টানতে টানতে ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়ির দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে ঋতুপর্ণা। আয়ত কাজল কালো চোখ জোড়া জলে ভরে এসেছে।