পর্ব ছয় (#3)
বাঁধন হারা পাখী হতে কার না ইচ্ছে করে। কিন্তু সংসারে বাঁধন ছাড়িয়ে কি আর সাংসারিক মানুষের শান্তি আছে। দশ বছর আগে ওর মনে হয়েছিল এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে, কিন্তু পারেনি। সামনে দাঁড়িয়ে যে রক্ত মাংসের দেহটা, যে এতক্ষণ ওকে খেলার ছলে আদর করে গেল তার জন্য পারেনি। না হলে এতদিনে ঋতুপর্ণা শ্বাস নিতো না এই পৃথিবীর বুকে। লুকিয়ে লুকিয়ে খুব কেঁদেছিল সেদিন তারপরে ঠিক করে নেয় যদি বেঁচে থাকতে হয় তাহলে ছেলের জন্যেই বেঁচে থাকবে। পৃথিবীতে স্বামীর ভালোবাসা বলে যে শব্দটা এতদিন জেনে এসেছিল সেদিন সেই শব্দের অর্থ ওর কাছে মিথ্যে হয়ে যায়।
ছেলের মুখে প্রগাঢ় ভালোবাসার কথা শুনে ঋতুপর্ণা স্তব্দ হয়ে ছেলের মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে। ওর চোখ জোড়া ছলছল কর ওঠে। খেলার ছলে হয়তো ওদের মাঝে বেশি করেই মাখামাখি হয়ে গেছে কিন্তু তাতে কি আসে যায়। ওর পুত্রই ওর জীবনের বেঁচে থাকার প্রানশক্তি। কি খেতে ভালোবাসে, কি পড়তে ভালোবাসে এইসব নিয়েই ওর দিন চলে যায়। সুভাষের অনুপস্থিতি কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছে। আর ছেলেও যে মাকে অবহেলা করে সেটা একদম নয়। এই বয়সের ছেলেদের চার পাঁচ খানা বান্ধবী থাকা খুব সাধারন। এই বয়সের ছেলেরা সাধারণত বাড়িতে থাকেই না। কিন্তু আদি ভিন্ন প্রকৃতির, হোস্টেল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকেই ওর আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে।
ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কেঁপে ওঠে আলতো মাথা নাড়িয়ে ধরা গলায় বলে, “তুই না...” না আর শেষ করতে পারে না কথাটা। তার আগেই ওর ছেলে ওকে জড়িয়ে ধরে।
মায়ের ছলছল চোখ দেখে আদির মনে হয় আরো একবার মাকে জড়িয়ে ধরে। দুই পা এগিয়ে এসে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাকে। এতক্ষণ যে খেলার ছলে ভেসে গিয়েছিল তার লেশ মাত্র গন্ধ এই আলিঙ্গনে নেই। বাহু পাশে বেঁধে থাকা নারী ওর পৃথিবী। এই নারীর জন্যেই পৃথিবীর আলো দেখেছে, ওর প্রতিটি শ্বাসে মায়ের অবদান। মায়ের পিঠের ওপরে হাত রেখে আদি অনুভব করে যে মায়ের পিঠ কাঁপছে। একি মা কাঁদছে কেন?
মায়ের মাথা বুকের ওপরে চেপে মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “একি হটাত কি হলো কাঁদছ কেন?”
ছেলের বাহুডোরের নিরাপত্তার ভালোবাসা, নিরাপদ আশ্রয়ের ভালোবাসা। সেটা অনুধাবন করে ঋতুপর্ণা নিষ্পাপ চিত্তে নিজেকে সঁপে দেয় ছেলের বুকের মধ্যে। চোখের কোল বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। ঋতুপর্ণা ছেলের বুকের ওপরে কান পেতে শোনে ওর বুকের আওয়াজ। এই আওয়াজ বড় মিষ্টি, বড় মধুর। ওর শরীর বয়ে আগে যে তীব্র গরম লাভা বয়ে গিয়েছিল, সেই লাভা আর নেই। ওর বুক ভরে যায় এক মধুর নিরাপত্তার অনুভবে। ছেলের এই প্রগাঢ় গভীর আলিঙ্গনে অনেক শান্তি।
ছলছল চোখে ধরা গলায় ছেলেকে বলে, “তুই ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই রে।”
মায়ের কাজল কালো পদ্ম ফুলের মতন চোখে অশ্রু দেখে আদি সত্যি সত্যি ভেঙে পরে। গলা ধরে আসে ওর, “কে বলেছে নেই। আমি সর্বদা তোমার পাশে আছি। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না মা।”
সন্তানের মুখে মায়ের ডাক মনে হয় পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী শব্দ। এই ডাক শুনে ঋতুপর্ণা আর থাকতে পারে না। বেশ কিছুক্ষণ ছেলের বুকে মাথা রেখে মাথা উঠিয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকায়। ছেলের চোখ জোড়া ভাসা ভাসা হয়ে গেছে, তাও ওকে সান্তনা দেওয়ার জন্য ঠোঁটে হাসি নিয়ে তাকিয়ে।
মিষ্টি হেসে ছেলেকে বলে, “আমার ছোট্ট দুষ্টুটা। এইবারে একটু ছাড় বাবা। বেলা বয়ে গেল। লুচি মাংস খেতে হবে না?”
হটাত করে মাংসের কথা উঠতেই দুইজনে চোখে জল নিয়ে হেসে ফেলে। আদি মায়ের গাল টিপে আদর করে বলে, “তুমি না ভারী মিষ্টি। ঠিক রসগোল্লার মতন রসে ভরা। যেখানে যাবে সেখানেই পিঁপড়েরা ছেঁকে ধরবে।”
ঋতুপর্ণা লজ্জা পেয়ে যায়, “ধ্যাত পাগল। তাড়াতাড়ি রান্না বান্না সারতে দে। দেড়টা কি দুটো নাগাদ কমলদা ফোন করবে। আর মনে হয় তোর পড়াশুনা হবে না।” মা আর ছেলে দুইজনেই হেসে ফেলে। ঋতুপর্ণা হাসি থামিয়ে ছেলেকে বলে, “তুই পারলে একবার কমলদার বাড়ি থেকে ঘুরে আয়। আমি ততক্ষণে লুচির ময়দা মেখে ফেলি।”
মায়ের মন ভালো হয়ে গেছে। এইবারে একটু তিস্তার সাথে দেখা করার আর্জিটা মায়ের সামনে রাখলে হয়তো মা আর মানা করবে না। আদি মুখ কাঁচুমাচু করে মাকে বলে, “মানে আমার একটা আর্জি ছিল।”
ছেলের কাঁচুমাচু মুখ দেখে ঋতুপর্ণা বুঝতে পেরে যায় কি ব্যাপারে ছেলে আর্জি জানাতে চায়। মুচকি হেসে ছেলেকে বলে, “আবার কি চাস? যাওয়ার পারমিসান তো দিয়েই দিয়েছি।”
লজ্জায় হেসে ফেলে আদি, “তুমি না... আচ্ছা তুমিও তো যাচ্ছো বেড়াতে।”
ঋতুপর্ণার গালে রক্তিমাভা দেখা দেয়, “হ্যাঁ মানে একটু কাজ আছে তাই।”
আদি মাথা নাড়ায়, “বেশ বেশ। ভালো একটা শাড়ি পরে যেও যেন প্রদীপ বাবু গলে যায়।”
ঋতুপর্ণা কোমর বেঁকিয়ে সারা অঙ্গে হিল্লোল তুলে মৃদু মন্দ হাসতে হাসতে ছেলের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আদি জামা কাপড় পরে বেরিয়ে পরে কমল জেঠুর বাড়ির জন্য। চার তলার ফ্লোরে ওদের ফ্লাটটাই সব থেকে বড়, তারপরে দুটো দুই কামরার ফ্লাট আছে। দরজা খুলে বের হতেই সামনের ফ্লাটের কিঙ্করের সাথে দেখা। কিঙ্কর রেলে চাকরি করে। ওর স্ত্রী সুজাতা গৃহ বধু।
রুদ্র ওকে দেখেই জিজ্ঞেস করে, “কমল বাবু কটার সময়ে সোসাইটি মিটিং ডেকেছেন?”
আদি উত্তর দেয়, “এই একটা নাগাদ।”
বাঁধন হারা পাখী হতে কার না ইচ্ছে করে। কিন্তু সংসারে বাঁধন ছাড়িয়ে কি আর সাংসারিক মানুষের শান্তি আছে। দশ বছর আগে ওর মনে হয়েছিল এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে, কিন্তু পারেনি। সামনে দাঁড়িয়ে যে রক্ত মাংসের দেহটা, যে এতক্ষণ ওকে খেলার ছলে আদর করে গেল তার জন্য পারেনি। না হলে এতদিনে ঋতুপর্ণা শ্বাস নিতো না এই পৃথিবীর বুকে। লুকিয়ে লুকিয়ে খুব কেঁদেছিল সেদিন তারপরে ঠিক করে নেয় যদি বেঁচে থাকতে হয় তাহলে ছেলের জন্যেই বেঁচে থাকবে। পৃথিবীতে স্বামীর ভালোবাসা বলে যে শব্দটা এতদিন জেনে এসেছিল সেদিন সেই শব্দের অর্থ ওর কাছে মিথ্যে হয়ে যায়।
ছেলের মুখে প্রগাঢ় ভালোবাসার কথা শুনে ঋতুপর্ণা স্তব্দ হয়ে ছেলের মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে। ওর চোখ জোড়া ছলছল কর ওঠে। খেলার ছলে হয়তো ওদের মাঝে বেশি করেই মাখামাখি হয়ে গেছে কিন্তু তাতে কি আসে যায়। ওর পুত্রই ওর জীবনের বেঁচে থাকার প্রানশক্তি। কি খেতে ভালোবাসে, কি পড়তে ভালোবাসে এইসব নিয়েই ওর দিন চলে যায়। সুভাষের অনুপস্থিতি কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছে। আর ছেলেও যে মাকে অবহেলা করে সেটা একদম নয়। এই বয়সের ছেলেদের চার পাঁচ খানা বান্ধবী থাকা খুব সাধারন। এই বয়সের ছেলেরা সাধারণত বাড়িতে থাকেই না। কিন্তু আদি ভিন্ন প্রকৃতির, হোস্টেল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকেই ওর আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে।
ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কেঁপে ওঠে আলতো মাথা নাড়িয়ে ধরা গলায় বলে, “তুই না...” না আর শেষ করতে পারে না কথাটা। তার আগেই ওর ছেলে ওকে জড়িয়ে ধরে।
মায়ের ছলছল চোখ দেখে আদির মনে হয় আরো একবার মাকে জড়িয়ে ধরে। দুই পা এগিয়ে এসে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাকে। এতক্ষণ যে খেলার ছলে ভেসে গিয়েছিল তার লেশ মাত্র গন্ধ এই আলিঙ্গনে নেই। বাহু পাশে বেঁধে থাকা নারী ওর পৃথিবী। এই নারীর জন্যেই পৃথিবীর আলো দেখেছে, ওর প্রতিটি শ্বাসে মায়ের অবদান। মায়ের পিঠের ওপরে হাত রেখে আদি অনুভব করে যে মায়ের পিঠ কাঁপছে। একি মা কাঁদছে কেন?
মায়ের মাথা বুকের ওপরে চেপে মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “একি হটাত কি হলো কাঁদছ কেন?”
ছেলের বাহুডোরের নিরাপত্তার ভালোবাসা, নিরাপদ আশ্রয়ের ভালোবাসা। সেটা অনুধাবন করে ঋতুপর্ণা নিষ্পাপ চিত্তে নিজেকে সঁপে দেয় ছেলের বুকের মধ্যে। চোখের কোল বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। ঋতুপর্ণা ছেলের বুকের ওপরে কান পেতে শোনে ওর বুকের আওয়াজ। এই আওয়াজ বড় মিষ্টি, বড় মধুর। ওর শরীর বয়ে আগে যে তীব্র গরম লাভা বয়ে গিয়েছিল, সেই লাভা আর নেই। ওর বুক ভরে যায় এক মধুর নিরাপত্তার অনুভবে। ছেলের এই প্রগাঢ় গভীর আলিঙ্গনে অনেক শান্তি।
ছলছল চোখে ধরা গলায় ছেলেকে বলে, “তুই ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই রে।”
মায়ের কাজল কালো পদ্ম ফুলের মতন চোখে অশ্রু দেখে আদি সত্যি সত্যি ভেঙে পরে। গলা ধরে আসে ওর, “কে বলেছে নেই। আমি সর্বদা তোমার পাশে আছি। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না মা।”
সন্তানের মুখে মায়ের ডাক মনে হয় পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী শব্দ। এই ডাক শুনে ঋতুপর্ণা আর থাকতে পারে না। বেশ কিছুক্ষণ ছেলের বুকে মাথা রেখে মাথা উঠিয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকায়। ছেলের চোখ জোড়া ভাসা ভাসা হয়ে গেছে, তাও ওকে সান্তনা দেওয়ার জন্য ঠোঁটে হাসি নিয়ে তাকিয়ে।
মিষ্টি হেসে ছেলেকে বলে, “আমার ছোট্ট দুষ্টুটা। এইবারে একটু ছাড় বাবা। বেলা বয়ে গেল। লুচি মাংস খেতে হবে না?”
হটাত করে মাংসের কথা উঠতেই দুইজনে চোখে জল নিয়ে হেসে ফেলে। আদি মায়ের গাল টিপে আদর করে বলে, “তুমি না ভারী মিষ্টি। ঠিক রসগোল্লার মতন রসে ভরা। যেখানে যাবে সেখানেই পিঁপড়েরা ছেঁকে ধরবে।”
ঋতুপর্ণা লজ্জা পেয়ে যায়, “ধ্যাত পাগল। তাড়াতাড়ি রান্না বান্না সারতে দে। দেড়টা কি দুটো নাগাদ কমলদা ফোন করবে। আর মনে হয় তোর পড়াশুনা হবে না।” মা আর ছেলে দুইজনেই হেসে ফেলে। ঋতুপর্ণা হাসি থামিয়ে ছেলেকে বলে, “তুই পারলে একবার কমলদার বাড়ি থেকে ঘুরে আয়। আমি ততক্ষণে লুচির ময়দা মেখে ফেলি।”
মায়ের মন ভালো হয়ে গেছে। এইবারে একটু তিস্তার সাথে দেখা করার আর্জিটা মায়ের সামনে রাখলে হয়তো মা আর মানা করবে না। আদি মুখ কাঁচুমাচু করে মাকে বলে, “মানে আমার একটা আর্জি ছিল।”
ছেলের কাঁচুমাচু মুখ দেখে ঋতুপর্ণা বুঝতে পেরে যায় কি ব্যাপারে ছেলে আর্জি জানাতে চায়। মুচকি হেসে ছেলেকে বলে, “আবার কি চাস? যাওয়ার পারমিসান তো দিয়েই দিয়েছি।”
লজ্জায় হেসে ফেলে আদি, “তুমি না... আচ্ছা তুমিও তো যাচ্ছো বেড়াতে।”
ঋতুপর্ণার গালে রক্তিমাভা দেখা দেয়, “হ্যাঁ মানে একটু কাজ আছে তাই।”
আদি মাথা নাড়ায়, “বেশ বেশ। ভালো একটা শাড়ি পরে যেও যেন প্রদীপ বাবু গলে যায়।”
ঋতুপর্ণা কোমর বেঁকিয়ে সারা অঙ্গে হিল্লোল তুলে মৃদু মন্দ হাসতে হাসতে ছেলের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আদি জামা কাপড় পরে বেরিয়ে পরে কমল জেঠুর বাড়ির জন্য। চার তলার ফ্লোরে ওদের ফ্লাটটাই সব থেকে বড়, তারপরে দুটো দুই কামরার ফ্লাট আছে। দরজা খুলে বের হতেই সামনের ফ্লাটের কিঙ্করের সাথে দেখা। কিঙ্কর রেলে চাকরি করে। ওর স্ত্রী সুজাতা গৃহ বধু।
রুদ্র ওকে দেখেই জিজ্ঞেস করে, “কমল বাবু কটার সময়ে সোসাইটি মিটিং ডেকেছেন?”
আদি উত্তর দেয়, “এই একটা নাগাদ।”