What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (2 Viewers)

ধৃতিমানের গলার স্বরে বেদনা। বহু মানুষের সাথে ওঠাবসা করেছে দেবশ্রী, কার কণ্ঠস্বর কি বলতে চাইছে সেটা ভালো ভাবেই জানে। ধৃতিমানের কণ্ঠে পাপবোধ ছলকে পড়ছে, কারন জানতে উন্মুখ হয়ে ওঠে দেবশ্রী। তাড়াতাড়ি একটা ম্যাক্সি ছেড়ে, জিন্স আর শার্ট পরে হোটেলের বারে ঢোকে। রাত অনেক হয়ে গেছে, হৃদপিণ্ড ধুকপুক করছে এক অজানা আশঙ্কায়। বারের এক কোনায় দুই মহিলার সাথে একজন লোক বসে। অন্য কোনায় একা ধৃতিমান এক গ্লাস স্কচ নিয়ে চুপচাপ বসে। দেবশ্রীকে দেখে ধৃতিমান উঠে দাঁড়ায়। দেবশ্রী ধৃতিমানের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে ওই দুই চোখ কিছু বলতে চাইছে দেবশ্রীকে। সামনের সোফার উপরে দেবশ্রীকে বসতে অনুরোধ করে ধৃতিমান। টেবিলের উপরে একটা ছোটো মেয়ের হাসিখুশি ছবি।

ধৃতিমান ম্লান হেসে গ্লাসে একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে বলে, “আমি স্বপ্নে ভাবিনি আপনি সত্যি আসবেন।”

দেবশ্রী এইরকম ভাবে আসার কারন নিজেই ঠিক করে জানেনা। দেবশ্রী ধৃতিমানকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে আপনার? এতো রাতে আবার ড্রিঙ্ক করতে করতে হটাত আমার কথা কেন মনে পড়ল?”

টেবিলের উপরে থেকে দেবশ্রী ছবিটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখে। হাসি হাসি মুখ, বড় মিষ্টি দেখতে মেয়েটাকে, মেয়েটার নাক, থুতনি ধৃতিমানের মতন। দেবশ্রীর হাতের ছবি দেখিয়ে ধৃতিমান বলে, “আপনার হাতের ছবিটা আমার একমাত্র কন্যের, মল্লিকা দেবনাথ।” এক অজানা আশঙ্কায় দেবশ্রীর হৃদয় ধুক করে ওঠে। ধৃতিমান বলে, “দিল্লিতে ডিপিএস এ ক্লাস এইটে পড়ে। দুই বছর পরে স্কুল ফাইনাল দেবে।” বড় একটা পাথর বুকের উপরে থেকে সরে যায়, দেবশ্রীর। ধৃতিমান বলে, “জানেন ম্যাডাম, মলির চেহারা, মলির চোখ দুটি ওর মায়ের কথা আমাকে বারেবারে মনে করিয়ে দেয়।” দেবশ্রী একবার ভাবে ধৃতিমানের স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করবে। ধৃতিমান, “আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছিলেন যে আমি মুম্বাই থাকাকালীন খুব চুপচাপ ছিলাম।”

দেবশ্রী মাথা নাড়ায় “হ্যাঁ, করেছিলাম। একবার ভেবেছিলাম জিজ্ঞেস করবো, কিন্তু আপনার মানসিক অবস্থা দেখে ঠিক জিজ্ঞেস করে উঠতে পারিনি আর।”

ধৃতিমানঃ “আজকে আপনাকে একটা মনের কথা বলবো, আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে পারিনি আমি।”

দেবশ্রী একবার ছবির দিকে তাকায়, আরেকবার ধৃতিমানের মুখের দিকে তাকায়। দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “আপনার স্ত্রী কোথায়?”

ধৃতিমান চোখের কোল মুছে বলে, “সব বলছি ম্যাডাম। মুম্বাই আমার ভালোবাসার শহর, আমার সবকিছু কেড়ে নেওয়ার শহর। আমি মুম্বাইয়ের ছেলে, ছোটবেলা থেকে ওইখানে বড় হয়েছি, বিচে খেলেছি, গনপতি বাপ্পা মোরিয়া করে মাথায় গনপতি নিয়ে বিসর্জন দিয়েছি। কলেজে পড়ার সময়ে এক মারাঠি সুন্দরী মেয়ের সাথে আমার দেখা হয়, তার নাম কল্পনা পাটেকর। কলেজ শেষে আমি মাস্টারস করি মার্কেটিংয়ে, ও ছিল একাউন্টসে। আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেল, আমাদের বিয়ে হলো না। একটু ভেঙে পড়েছিলাম আমি তবে নিজেকে শক্ত করে নিয়েছিলাম। ব্রেকআপের কারন আর কিছু না, আমি নাকি একটু ন্যাকাপনা ছেলে, আমার মধ্যে নাকি পুরুষত্ব নেই। দুইজন শেষ পর্যন্ত দুইজনের পথ ছেড়ে দাঁড়ালাম।”

দেবশ্রী হেসে ফেলে ধৃতিমানের কথা শুনে। ধৃতিমান দেখতে মোটামুটি, বয়সের ভারে একটু ভুঁড়ি হয়ে গেছে, দেবশ্রীর চেয়ে ইঞ্চি দুয়েক লম্বা কিন্তু পুরুষত্ব বিহীন একেবারে বলা চলে না। ওর কথাবার্তা ওর চালচলন আদবকায়দা বেশ রুচিসম্পন্ন। বেশি খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো না দেবশ্রীর।

ধৃতিমানঃ “পড়াশুনা শেষে চাকরি পেলাম। বাবা আমার জন্য মেয়ে বাঙালি মেয়ে দেখলেন, তার নাম রেনুকা, বেহালায় বাড়ি। ষোলো বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে রেনুকা চাকরি করতে চায়, আমি বাধা দিলাম না। আমার স্ত্রী রেনু, বড্ড ভালো মেয়ে, খুব ভালবাসতো আমাকে। পুরাতন সব ব্যাথা মন থেকে মুছে গিয়েছিল আমার। মার্কেটিংয়ের কাজ, মাঝে মাঝেই বাইরে থাকতাম কাজের জন্য। প্রথম দুই বছর বিশেষ কিছু পদোন্নতি ঘটল না, পরের বছর আমি বেশি করে কাজে মন দিলাম আর বাড়ির বাইরে থাকতাম। তবে যেটুকু সময়ে বাড়িতে বা মুম্বাই অফিসে থাকতাম, চেষ্টা করতাম স্ত্রীর সাথে কাটাতে। রোজ অফিস ফেরত ওকে আমি ওর অফিস থেকে তুলে নিতাম, কোনদিন বিচের ধারে ঘোরা, কোনদিন রেস্টুরেন্টে খেয়ে বাড়ি ফেরা। মোটামুটি ভালো মন্দ মিলিয়ে সুন্দর ছিল আমাদের দুই জনের সংসার।”

“বিয়ের তিন বছর পরে ঘর আলো করে আমার লক্ষ্মীর জন্ম। মল্লিকা নাম দিলাম সেই ছোট্ট ফুটফুটে মুক্তোর বিন্দুকে। মলির জন্মের পরে পরিবার বাড়ল, কাজ বাড়ল। আমার বাড়িতে থাকা কমে গেল। রেনুকা চাকরি ছেড়ে দিল মেয়েকে দেখার জন্য। আমি বাড়ির বাইরে থাকতে লাগলাম কাজের জন্য। মাথায় ভর করলো উপরে ওঠার, টাকা প্রতিপত্তি নামযশ কেনার। আমার সাথে যারা পাস করেছিল তাদের গাড়ি হয়ে গেছে, কেউ কেউ ফ্লাট কিনেছে। আমরা দুই কামরার একটা ফ্লাটে থাকতাম, ভালোবাসার ফ্লাট ছোটো হয়ে গেল আমার কাছে।” কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে ধৃতিমানের, সেই সাথে দেবশ্রী একবার ছবিতে মল্লিকার হাসিহাসি চেহারা দেখে আর ধৃতিমানকে দেখে। ধৃতিমান, দেবশ্রীর দিকে একটা ছবি এগিয়ে দেয়। এক সুন্দরী মহিলা কোলে একটা ছোটো মেয়ে। দুইজনে কোন এক সমুদ্র সৈকতে সাগর জলের মধ্যে শুয়ে।

ধৃতিমান বলে, “আমার স্ত্রীর আর মেয়ের শেষ ফটো। ঠিক দশ বছর আগে, এক শীতের ছুটিতে আমরা গোয়া ঘুরতে যাই। সময় বিশেষ পেতাম না, তাই বেশ কয়েক দিনের ছুটি নিলাম। মলি তখন সবে আধো আধো কথা বলতে শিখেছে, মাম্মা, পাপ্পা। শুনতে বড় মিষ্টি লাগতো।”

দেবশ্রীর মনে পড়ে যায় দেবায়নের কথা, স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার সময় পর্যন্ত খাইয়ে দিতে হতো ছেলেকে। নিজে হাতে কিছুতেই খাবে না সে ছেলে। রাতের বেলা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তো দেবায়ন, কোনদিন বাড়ির কাজ সারতে একটু দেরি হয়ে গেলে কান্নাকাটি বাধিয়ে বাড়ি মাথায় করে তুলতো। সব কাজ ছেড়ে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে তবে আবার রান্না ঘর পরিষ্কার, এঁঠো বাসন গুলো সকালের কাজের লোকের জন্য জড়ো করে রাখা ইত্যাদি কাজ করে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়া।

ধৃতিমান বলে চলে, “ট্রেনে যেতে বলেছিল রেনুকা, আমি নতুন গাড়ি কিনেছিলাম তখন। গাড়ি করে আমরা গোয়া ঘুরতে গেলাম। পাঁচদিন খুব জমিয়ে ছুটি কাটালাম। রেনুকা সাঁতার জানে, সমুদ্রকে ভয় করে না। মেয়েকে পিঠে বেঁধে সমুদ্রের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে এক উদ্দাম খুসি। শেষদিন, গোয়ায় এক ব্যস্ত বাজারে আমি আর রেনুকা কিছু কেনাকাটা করছিলাম, মলি আমার কোলে ছিল। রঙিন চুড়ি, স্টোল ইত্যাদি দেখতে দেখতে রেনুকা এগিয়ে যায়, ভিড়ে হারিয়ে যায়। সেই সময়ে হটাত আমার চোখ পড়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার দিকে। বড় চেনা মনে হলো মহিলাকে, কাছে এগিয়ে যেতেই চিনতে অসুবিধে হলো না আমার পুরাতন প্রেমিকা, কল্পনাকে। আমাকে দেখে চমকে গেল কল্পনা, জিজ্ঞেস করলো আমার কথা। আমি বললাম যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে, কোলে মলিকে দেখিয়ে পরিচয় দিলাম আমার মেয়ে। নিজের কথা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন দেখি রেনুকা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে আসে। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার একটা কার্ড বের করে কল্পনার হাতে গুঁজে চলে গেলাম। রেনুকা আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল। আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম, কল্পনাকে অন্তত দেখেনি রেনুকা। দেখলে কি হতো জানতাম না। হোটেলে ফিরে এলাম, বিকেলের দিকে কল্পনার ফোন এল। আমাকে বলল যে আমার সাথে মুম্বাই ফিরে দেখা করতে চায়। আমি কারন জিজ্ঞেস করাতে জানাল কিছু ব্যাক্তিগত কারনে আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম ওর বিয়ে হয়েছে কি না। উত্তরে জানায় যে স্বামীর সাথে কিছু দ্বন্দের ফলে বছর দুয়েক ধরে আলাদা থাকে। ডিভোর্স হয়নি ওদের মধ্যে। রেনুকার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অদুরে দাঁড়িয়ে আমাকে খুঁজছে। রেনুকার হাসি মুখ আমাকে চুম্বকের মতন টেনে নিল। আমি কল্পনাকে বললাম যে মুম্বাই ফিরে ওর সাথে আমি দেখা করবো। কিন্তু মনের মধ্যে খচখচ করে উঠলো পুরানো প্রেমের কাঁটা, কল্পনার কথা জানতে বড় ইচ্ছে হলো। শেষ বিকেল, গোয়ায় রেনুকাকে জড়িয়ে ধরে আমরা আড়াই জনে সূর্যাস্ত দেখলাম।”

“বিকেলবেলা গোয়া থেকে রওনা দিলাম মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে। আমি গাড়ি চালাচ্ছি, পাশে রেনুকা মলিকে কোলে নিয়ে বসে। মলি রেনুকার কোলে ঘুমিয়ে পড়ল। রেনুকা মলিকে পেছনের সিটের উপরে বিছানা করে বেল্ট দিয়ে আড়াআড়ি বেঁধে দিল সিটের সাথে। আমাকে জাগিয়ে রাখার জন্য গল্প করতে শুরু করে রেনুকা। একটু খানি ক্লান্তি বোধ করলে বিস্কুট খাইয়ে দেয় অথবা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল মুখের কাছে ধরে। রেনুকা আমাকে বলেছিল যদি আমার গাড়ি চালাতে কষ্ট হয় তাহলে রাতে কোথায় একটা হোটেল দেখে থেকে যেতে। আমি হেসে বললাম যে ওর মতন সুন্দরী পাশে বসে থাকলে ঘুম কেন যম পর্যন্ত আমার পাশে আসতে পারবে না। গল্প করতে করতে এক সময়ে রেনুকার চোখ বুজে এল। আমি আর ওকে জাগালাম না। গাড়ি চালাতে চালাতে মাঝে মাঝে পেছন মলির দিকে তাকিয়ে দেখি, পাশে বসে রেনুকা ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলাম, রেনুকার দিকে ঝুঁকে ওর গায়ের সুবাস বুকে টেনে নিলাম। ভাগ্য বিধাতা সেখানেই বাধ সাধল, ওর গায়ের গন্ধে আমি পাগল হয়ে গেলাম, চোখে লাগল ঘুমের আবেশ।”

“সকাল হয় হয়, আমরা মুম্বাইয়ের খুব কাছে, ঠিক খোপোলি পেরিয়েছি। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে গেল আমার, হটাত সাত বছর আগের কল্পনা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আমি পুরানো প্রেমের স্বপ্নে ভেসে গেলাম। গাড়ি নিয়ে সোজা ধাক্কা রাস্তার পাশে একটা লাইট পোস্টে। গাড়ির সামনেটা দুমড়ে মুচড়ে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখি, রেনুকা সামনের কাঁচ ভেঙে অর্ধেক শরীর গাড়ির বাইরে, মাথাটা বনেটের উপরে। আমার পা আটকে গেছিল ব্রেক প্যাডেলে, স্টিয়ারিং বুকে বেঁধে আমাকে গেঁথে দিয়েছিল সিটের সাথে। কোনোরকমে জ্ঞান হারাবার আগে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, মলির কিছু হয়নি, সিটের সাথে বাঁধা থাকার ফলে শুধুমাত্র সিট থেকে নিচে পড়ে কান্নাকাটি করছে। যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি হস্পিটালের বেডে শুয়ে। অফিসের লোকজন বাড়ির লোকজন সবাই আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। আমি চোখ খুলে রেনুকার কথা জিজ্ঞেস করলাম। কেউ বলতে চায় না আমার স্ত্রীর কথা, সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত। আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে সান্ত্বনা দেবার কারন। সবাইকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে রেনুকার নাম ধরে ডাক দিলাম, কেউ উত্তর দিল না। একদিন গেল, দুই দিন গেল, তিনদিন গেল, রেনুকার দেখা নেই। আমার থমথমে চেহারায় শ্বাশুড়ি মলিকে কোলে নিয়ে চুপ করে এক কোনায় দাঁড়িয়ে। আমি আমার শালাকে জিজ্ঞেস করলাম ওর দিদির কথা। শালা একটু মাথা নাড়াল, আমার মেয়েকে আমার কোলে তুলে দিল। আমি চেঁচিয়ে বললাম একবার আমি রেনুকাকে দেখতে চাই। আমাকে নিয়ে গেল মর্গে, আমি দেখলাম আমার সুন্দরী ভালোবাসার পাত্রী রেনুকাকে। সাদা চাদরে ঢাকা, মাথায় ঘাড়ে ব্যান্ডেজ। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে রেনুকার কি হয়েছে। আমার শালা আমাকে জানাল যে, মাথা ভেঙে প্রচুর কাঁচ মাথায় ঢুকে যাওয়ার ফলে সেই খানেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। আমি নির্বাক, আমি স্তব্দ হয়ে গেলাম। সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করলো এক্সিডেন্ট কি করে হলো, আমি নির্বাক। রেনুকা আমাকে বারবার বলেছিল ঘুম পেলে রাতে কোথাও থেকে যেতে, আমি থাকিনি ওর কথা শুনিনি। মেয়ের মুখের দিকে তাকালেই মনে পড়ে যেতো যে আমার ভুলের জন্য আমার মেয়ে মাতৃহীনা।”

“আমি মুম্বাইয়ের চাকরি ছেড়ে বাইরে চলে গেলাম। আমার শ্বাশুড়ি আমার মেয়েকে নিয়ে কোলকাতায় চলে গেল। একবছর নিজের থেকে দুরে পালিয়ে থাকলাম, দেশের বাইরে চলে গেলাম। মাঝে মাঝেই আমার মা আমার শ্বাশুড়ি আমাকে ফোন করতো। মলির আধো আধো কথা আমাকে বড় টানতো। আমি ফিরে এলাম দেশে, কিন্তু মুম্বাইয়ে আর ফিরে গেলাম না। এই দিল্লীতে চাকরি নিলাম, কিন্তু মেয়ের সামনে যাবার মতন সাহস ছিল না আমার। দুই বছর পরে আমার শ্বাশুড়ি আমাকে বললেন যে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে। আমার মা বাবা আমাকে মুম্বাই ফিরে যেতে বলল, আমি রেনুকাকে ছাড়া আর মুম্বাই ফিরে যেতে পারলাম না। বড় ভালবাসতো আমাকে আমার স্ত্রী, ওকে ছাড়া মুম্বাই কেন এই পৃথিবী বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। আমি আর কোনদিন কল্পনার সাথে দেখা করিনি, যদিও কল্পনা বেশ কয়েক বার ফোন করেছিল যখন আমি হসপিটালে ছিলাম। আমি উত্তর দেইনি। তারপরে আর কোনদিন ওর সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি। একদিন আমার মা আর আমার শ্বাশুড়ি মেয়েকে নিয়ে আমার কাছে চলে এল। রেনুকা চলে যাওয়ার দুই বছর পরে মেয়ের মুখ দেখে কেঁদে ফেললাম, বেঁচে থাকার একটা রসদ খুঁজে পেলাম। সেই থেকে মেয়ে আমার কাছে। কিন্তু মেয়ের মুখ দেখলেই মনে হয় আমি ওর মায়ের খুনি। সেই রাতের ঘুম, সেই রাতের আমার পুরানো হারানো প্রেমিকার স্বপ্ন আমার বাস্তবের স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে।”

দেবশ্রী স্তব্দ হয়ে যায় ধৃতিমানের কথা শুনে। ধৃতিমানের হাত ধরে দেবশ্রী প্রবোধ দিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে, “ধৃতিমান দশ বছর আগে যা ঘটেছিল সেটা একটা দুর্ঘটনা ছিল। আপনার দোষ একটাই আপনি স্ত্রীর কথা শোনেনি। মিস্টার দেবনাথ, আপনি খুনি নন। মানুষের জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত আসে, মানুষকে সেই সব ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে এগিয়ে চলতে হয়। জীবন একজনের চলে যাওয়াতে থেমে যায়না, মিস্টার দেবনাথ। নিজেকে এই রকম ভাবে কষ্ট না দিয়ে নিজের জীবন খুঁজে নিন পুনরায়।”

ধৃতিমান সামনে দেবশ্রীর দিকে ঝুঁকে বলে, “অনেক চেষ্টা করেছি ম্যাডাম। গত দশ বছরে অনেকের কাছে গেছি, অনেকেই আমার সাথী হয়েছে, কিন্তু কাউকে মনে ধরাতে পারলাম না।”

দেবশ্রী হেসে ফেলে ধৃতিমানের আচরনে। ধৃতিমানের চোখে দেবশ্রীর প্রতি প্রেমের জল দেখে দেবশ্রীর মন বিচলিত হয়ে ওঠে। দেবশ্রী শান্ত শীতল কণ্ঠে বলে, “আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবো, খুব তাড়াতাড়ি আপনার জীবনে এক সাথী আসবে। সে মল্লিকাকেও নিজের মতন করে বুকে টেনে নেবে।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে, “দেবশ্রী, তোমাকে প্রথম দিন দেখেই কেন জানিনা ভালো লেগে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল যে তুমি সেই মহিলা যে আমার মনের কষ্ট বুঝতে পারবে।” 'আপনি' থেকে 'তুমি' চলে এল ধৃতিমানের ঠোঁটে, 'ম্যাডাম' হয়ে গেল 'দেবশ্রী'।
 
দেবশ্রীর সারা শরীরে এক বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে যায় ধৃতিমানের উষ্ণ হাতের পরশে। দেবশ্রী শান্ত শীতল কণ্ঠে বলে, “তুমি ঘুমাতে যাও, ধৃতিমান। নিজের রুমে যাও, কাল সকালে দেখা হবে।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত না ছাড়িয়ে বলে, “জানো দেবশ্রী, তোমার এই অসামান্য সুন্দরী মমতাময়ী রুপের টানে তোমার কাছে চলে এসেছি।”

দেবশ্রী ভেবে পায় না উত্তর, উষ্ণ হাতের পরশ আর ধৃতিমানের ব্যাথা ওকে অনেক নরম করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ ধৃতিমানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “ধৃতিমান, তুমি নেশার ঘোরে আছো। বিশ্রাম নাও সকালে এই নিয়ে কথা বলবো।”

ধৃতিমানঃ “এতটা মদ আমি খাইনি দেবশ্রী যে আমি কি বলছি সেটা জানি না। তোমাকে দেখে, তোমার আচরন দেখে বড় ভালো লেগেছে বলেই বলছি।”

দেবশ্রীর চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রু টলমল করে ওঠে, ধরা গলায় বলে, “ধৃতিমান, কেন এই রকম আচরন করছো? তুমি আমার অতীত জানো না, আমার একটা বড় ছেলে আছে, কলেজে পড়ে। এই মত অবস্থায় আমি ঠিক তোমাকে...” কি বলবে ভেবে পায় না দেবশ্রী। ধৃতিমানের কাহিনী শুনে মন গলে গেছে ঠিক কিন্তু এক নতুন বন্ধনে নিজেকে জড়াতে চায় না।

ধৃতিমান সোফা ছাড়িয়ে দেবশ্রীর হাত ধরে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। লজ্জিত দেবশ্রী মৃদু আলোয় আলোকিত বারের চারপাশে দেখে। কারুর নজর ওদের দিকে বিশেষ নেই, অন্য কোনায় যে লোকটা দুই মেয়েকে নিয়ে বসেছিল তারা নিজেদের নিয়ে অতি ব্যস্ত। ধৃতিমানের আচরনে, হৃদয়ের কাছে হার মেনে যায় দেবশ্রী। ধৃতিমান দেবশ্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি সত্যি বলো, কেন তাহলে আমার ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি করে এখানে চলে এলে? তুমি যথাযথ কারন আমাকে বলো, আমি তোমাকে আর উত্যক্ত করবো না।”

দেবশ্রী ধৃতিমানের টানে এখানে এসেছিল, কিন্তু সেই কথা মুখে আনতে লজ্জা বোধ করে। ঠোঁট চেপে অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “তোমার গলার আওয়াজ শুনে মনে হলো তুমি খুব যন্ত্রণায় ভুগছো। আমার কাজ সবার যন্ত্রণা লাঘব করার, তাই তোমার কথা শুনতে তোমার কাছে এসেছি।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ম্লান হেসে বলে, “ওঃ তাহলে এই কথা। নিজেকে এক ঋজু কঠিন চেহারা পেছনে বন্ধ করে রাখতে চাও। বেশ খুব ভালো কথা। হ্যাঁ, তোমাকে বলে কি লাভ। ঠিক আছে আমি নিজের রুমে যাচ্ছি।” ধৃতিমান পা বাড়ায় বেরিয়ে যাবার জন্যে। নির্বাক দেবশ্রী শত চিন্তা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে সোফার ওপরে। বারের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে ধৃতিমান দেবশ্রীর দিকে ঘুরে তাকিয়ে হাত বাড়ায়।

দেবশ্রী হেসে ফেলে ধৃতিমানের আচরনে, মাথা দুলিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে বলে, “তুমি কিছুতেই শুনবে না তাই না।”

ধৃতিমান হেসে বলে, “রুম পর্যন্ত একসাথে পাশাপাশি হাঁটতে আশা করি আপত্তি নেই?”

দেবশ্রী হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “তুমি সত্যি পাগল ধৃতিমান।”

লিফটে উঠে ধৃতিমান দেবশ্রীর কানে কানে বলে, “জানো দেবশ্রী, আজ তোমাকে সব কথা জানিয়ে মনে বড় শান্তি হয়েছে। দশ বছর পরে বুকটা যেন বেশ খালি খালি মনে হচ্ছে।”

দেবশ্রী হেসে বলে, “যাক তাহলে আমি কিছু কাজে আসতে পারলাম তোমার। এবারে আশা করি ভালো ঘুম আসবে।”

ধৃতিমান ম্লান হেসে বলে, “তা আসবে বৈকি।” দুইজনে চুপ।

করিডোরের এক কোনায় দেবশ্রীর কামরা, অন্য কোনায় ধৃতিমানের কামরা। করিডোর দিয়ে হাঁটার সময়ে ধৃতিমানের কামরা আগে পড়ে। ধৃতিমান নিজের কামরার দরজা খুলে দাঁড়ায়। দেবশ্রী এগিয়ে গিয়ে পেছন ফিরে হাসে।

ধৃতিমান দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, “একটা কথা বলবো, কিছু মনে করবে না তো?”

দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে মাথা দুলিয়ে বলে, “মনে করার মতন কথা হলে মনে করবো বৈকি।”

ধৃতিমানঃ “রোজদিন এক নয় বিজনেস সুট, না হয় শাড়ি পরো। আজকে জিন্সে দারুন দেখাচ্ছে তোমাকে, জানো।”

দেবশ্রী লাজুক হেসে বলে, “হ্যাঁ অনেক হয়েছে ধৃতিমান। এবারে রুমে ঢুকে পড়ো, কাল থেকে অনেক কাজ।”

ধৃতিমানঃ “তোমার শুধু কাজ আর কাজ, তাছাড়া কিছু জানো তুমি? নিজের জন্য কোনদিন কোন সময় রাখো তুমি?”

দেবশ্রীঃ “হ্যাঁ নিজের জন্য সময় আছে আমার। কি হবে তোমার জেনে সেই সময়ের কথা?”

ধৃতিমানঃ “বা রে, আমি নিজের কথা জানালাম, আর যে আমার কথাগুলি শুনলো তাকে একবার জানবো না?”

দেবশ্রী নিজের কামরার দিকে এগিয়ে নিজের রুমের দরজা খুলে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার কথা তোমার জেনে লাভ নেই ধৃতিমান। আমার অনেক কাজ বাকি, আমি ঘুমাতে গেলাম।”

ধৃতিমানঃ “ওকে গুড নাইট।”
 
দেবশ্রী নিজের কামরায় ঢুকে যায়। সোজা বাথরুমে ঢুকে জিন্স ছেড়ে স্লিপ গলিয়ে আলো নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। চোখে ঘুম আসে না কিছুতেই। চোখ বন্ধ করলে ধৃতিমানের মুখ ভেসে ওঠে চোখের সামনে। অভুক্ত হৃদয় আকুলিবিকুলি করে একটু ছোঁয়া পাওয়ার জন্য, একটু ভালোবাসা, একটু প্রেম। এতদিন যাদের সাথে মিশেছিল দেবশ্রী তাদের থেকে অন্য ধরনের মানুষ, ধৃতিমান। ধৃতিমানের চোখে লিপ্সার আগুনের চেয়ে বেশি ছিল প্রেমের জল। ওর দুই গভীর চোখ, গাড় কণ্ঠস্বর কানের মধ্যে বেজে ওঠে, “তোমাকে জিন্সে আজকে দারুন দেখাচ্ছে।” নিজের জন্য সত্যি কি সময় দিতে নেই, হৃদয়ের দোরগোড়ায় নিজে থেকে এসে কেউ কড়া নাড়ছে তাও দেবশ্রী কিসের জন্য পিছিয়ে? সায়ন্তন ওর জীবন থেকে অনেকদিন আগেই মুছে গেছে, দেবায়নের মুখ চেয়ে নিজের যৌবনের শেষ সীমানায় উপস্থিত। তৃষ্ণার্ত দেবশ্রী কাতর হয়ে পড়ে একটু ভালোবাসার ছোঁয়া, একটু প্রেমের পরশের আশায়। জানেনা এই সম্পর্ক ওকে কোথায় নিয়ে যাবে। দ্বিধাগ্রস্ত হৃদয়, চঞ্চল হয়ে ওঠে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না চঞ্চল মন। শেষ পর্যন্ত সময়ের হাতে নিজেকে সঁপে একসময়ে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে ক্লান্ত দেবশ্রী।

সকাল সকাল স্নান সেরে কাজের জন্য তৈরি হয়ে যায় দেবশ্রী। মনীষাকে ডেকে নিয়ে নিচে নেমে আসে প্রাতরাশ সারার কন্য। প্রাতরাশের টেবিলে দেখা হয় ধৃতিমানের সাথে। ধৃতিমান হেসে চেয়ার টেনে এগিয়ে দেয় দেবশ্রীর জন্য। টেবিলে সামনা সামনি বসে পড়ে ধৃতিমান, পাশে মনীষা।

ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “রাতে ঘুম হয়েছে?”

দেবশ্রীঃ “না হবার কারন?”

ধৃতিমানঃ “না তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল যে রাতে ঘুম হবে না।”

দেবশ্রীঃ “বড্ড মানুষের চেহারা পড়তে পারো দেখছি। কোথায় শিখলে এতসব?”

ধৃতিমান দেবশ্রীর দিকে ঝুঁকে নিচু কণ্ঠে বলে, “তোমার সাথে থেকে থেকে শিখে গেছি।”

দেবশ্রীর চোখে লাগে নতুন প্রেমের লাজুক হাসি। ঠোঁট চেপে মিষ্টি হেসে বলে, “অনেক তাড়াতাড়ি অনেক কিছু শিখে গেছো তাহলে।”

ধৃতিমানঃ “শিখতে আর দিলে কই। কিছু শেখানোর আগেই নাকচ করে দিলে আমাকে।”

দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে ঠোঁট চেপে হেসে বলে, “একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না, ধৃতিমান।”

ধৃতিমানঃ “ওকে ওকে, আর না। আর কিছু বলবো না। তা আজকের প্ল্যান কি? কয়জন আছে ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য।”

দেবশ্রী মনীষাকে জিজ্ঞেস করে জানিয়ে দেয়, “তোমার জন্য দশ জন আছে।”

ধৃতিমানঃ “যদি তাড়াতাড়ি সেরে ফেলি তাহলে সিনেমা দেখতে যাবে আমার সাথে?”

দেবশ্রী চোখ বড়বড় করে বলে, “ধৃতি, তুমি একা নও এখানে। আমাকে সবার শেষে বের হতে হয়, সবার রিপোর্ট, সবার জন্য অফার লেটার তৈরি করা। স্যালারি স্ট্রাকচার তৈরি করা, অনেক কাজ থাকে আমার। তুমি ইন্টারভিউ নিয়ে খালাস, পরের কাজ আমাকে করতে হয়। তুমি বাকিদের নিয়ে চলে যেও, আমার অনেক কাজ থাকে।”

ধৃতিমানঃ “প্লিস দেবশ্রী, আচ্ছা আজকে না হয় হলো না। কাল পুনেতে শেষ দিন, কাল বেশি লোক থাকবে না। কাল যাওয়া যেতে পারে একটা সিনেমা দেখতে।”

দেবশ্রীঃ “আরে বাবা, আমি সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখিনি প্রায় দশ বারো বছর হয়ে গেল। ওই সব আর পোষায় না আমার। আর কাল বিকেলে ব্যাঙ্গালোরের ফ্লাইট, কাল হবেই না। তুমি একদম পাগল, ধৃতি।”

সারাদিন কেটে যায় কাজে। ইন্টারভিউয়ের পরে দেবশ্রী খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সবার অফার লেটার, স্যালারি স্লিপ তৈরি করা। সব মিলিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করা। মিস্টার ব্রিজেশ একটা ধরা বাঁধা বাজেট ওকে দিয়েছে, সেই অনুযায়ী ওকে কাজ করতে হয়। একটা স্যালারি স্লাব আছে কিন্তু মাঝে মাঝে সেই স্যালারি স্লাব থেকে বেরিয়ে কাজ করতে হয়। কারুর অভিজ্ঞতা বেশি, কারুর জ্ঞান বেশি। সেইসব নিয়ে আশিস, পার্থ বাকিদের সাথে আলাপ আলোচনা করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়।

ধৃতিমান আলোচনায় অংশগ্রহন করে কিন্তু বারেবারে ঘড়ির দিকে তাকায়। দেবশ্রী ধৃতিমানের ইঙ্গিত বুঝেও হেসে উপেক্ষা করে। আলোচনা পর্ব শেষ হয়ে যাবার পরে ধৃতিমান দেবশ্রীকে অনুরোধ করে সিনেমা দেখার জন্য। দেবশ্রী হেসে জানিয়ে দেয় যে সিনেমা দেখতে নারাজ তবে দুইজনে একান্তে কোথাও ডিনার করতে রাজি। ধৃতিমান খুশিতে ফেটে পড়ে, সেই সাথে দেবশ্রীর হৃদয়ে নতুন প্রেমের সাড়া জেগে ওঠে। ধৃতিমান জানায় যে এমজি রোডের মোড়ে একটা ভালো চাইনিজ রেস্তোরাঁ আছে, সেখানে যেতে পারে। দেবশ্রী জানায় ওর চাইনিজ খাবারে আপত্তি নেই। হোটেলে ফিরে নিজের কামরায় গিয়ে স্নান সেরে ফেলে দেবশ্রী। মনে মনে গুনগুন গান গায়, অনেক অনেক দিন পরে ওর হৃদয় বড় উৎফুল্ল। বেশি শাড়ি আনেনি, তবে একটা হাল্কা গোলাপি শাড়ি এনেছিল এমনি পরার জন্য। সেটা পরে, সাজার বিশেষ কিছু নেই। কোনদিন সাজে না দেবশ্রী, কিন্তু সেইদিন সাজতে বড় ইচ্ছে করলো। কাজল, নেলপলিশ কিছুই সঙ্গে নেই দেখে নিজেই হেসে ফেলে। সাধারন সাজে সজ্জিত হয়ে ধৃতিমানের মোবাইলে ফোন করে দেবশ্রী।

ধৃতিমান হেসে উত্তর দেয়, “তোমরা মেয়েরা সাজতে বড় দেরি করো। আমি প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তোমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে।”

দেবশ্রী সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেখে ধৃতিমান দাঁড়িয়ে, জিজ্ঞেস করে, “নক করলে না কেন?”

ধৃতিমানঃ “বাপরে, তোমার রুমে নক করবো আর ভেতর থেকে যদি দেবশ্রীর বদলে একটা আগুন ছোঁড়া ড্রাগন বেরিয়ে আসতো তাহলে?”

দেবশ্রী কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, “আচ্ছা, তাহলে আমাকে ড্রাগন বলে মনে হয়েছে তোমার। তাহলে আর ড্রাগনের সাথে ডিনার করে কি হবে। কাউকে ফোনে ডেকে নাও, তার সাথে ডিনারে যাও।”
 
ধৃতিমান মাথা নিচু করে হেসে বলে, “ওকে বাবা মাফ করে দাও।” দেবশ্রীর দিকে ঝুঁকে কানে কানে বলে, “তোমার গায়ের রঙের সাথে এই গোলাপি শাড়ি দারুন মানিয়েছে। তবে কি জানো, জিন্স পরলে আরো ভালো লাগতো।”

দেবশ্রীর মুখ লাল হয়ে যায় লজ্জায়। কামরা থেকে বেরিয়ে এপাশ ওপাশ দেখে, ওদের এক সাথে কেউ দেখে ফেললে মুশকিল হতে পারে। ধৃতিমান দেবশ্রীর উদ্বেগ বুঝতে পেরে বলে, “আমি আগে হোটেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। নিচে একটা ট্যাক্সি নিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। তুমি একটু পরে বের হও, কেমন।”

ধৃতিমান চলে যাবার পরে দেবশ্রীর মন আষাঢ়ের ময়ুরের মতন নেচে ওঠে। অনেকদিন পরে বুকের মাঝে এক শীতল হিমেল হাওয়ার পরশ অনুভব করে মন খুশিতে ভরে যায়। দশ মিনিট যেন ওর কাছে দশ বছরের মতন মনে হয়। ধির পায়ে নিচে নেমে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসে। ধৃতিমান ট্যাক্সি নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। ট্যাক্সিতে উঠে ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ধরে, এবারে আর দেবশ্রী নিজের হাত ছাড়ায় না, ধৃতিমানের হাতের উষ্ণ পরশ হাতে মাখিয়ে নেয়।

ট্যাক্সির নিভৃতে ধৃতিমান দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি সত্যি আমার পাশে বসে আছো বিশ্বাস হচ্ছে না।”

বিশ্বাস দেবশ্রীর নিজের হচ্ছে না, ওর পা যেন মাটিতে নেই, আকাশে উড়ছে ধৃতিমানের ছোঁয়া পেয়ে। দেবশ্রী মিষ্টি গলায় বলে, “কি করলে তোমার বিশ্বাস হবে? চিমটি কাটবো নাকি?”

ধৃতিমান দেবশ্রীর দিকে গাল এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলে, “চিমটি খেলে মনে হয় না স্বপ্ন ভাঙবে, তার চেয়ে অন্য কিছু দাও।”

দেবশ্রী লজ্জা পেয়ে যায়, হাত চেপে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “ট্যাক্সির মধ্যে দুষ্টুমি করবে না একদম।”

হোটেল থেকে বেশি সময় লাগে না চাইনিজ রেস্তোরাঁ পৌঁছাতে। রেস্তোরাঁতে বসে ধৃতিমান দেবশ্রীর মুখের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। দেবশ্রীর বয়স যেন কুড়ি বছর কমে যায়, ধৃতিমানের চাহনি যেন ওকে গলিয়ে দেবে। ধৃতিমান দেবশ্রীকে তার ছেলের ব্যাপারে, তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। দেবশ্রী খেতে খেতে হেসে জানায়, ওর জীবন প্রবাহ অতি সাধারন, জীবন প্রবাহে কোন চাঞ্চল্য নেই, কোন তরঙ্গ নেই। অনেক আগে রঙ ভরাতে চেয়েছিল এই সাদা কালো জীবনে কিন্তু সেটাও করে উঠতে পারল না। বর্তমানে শুধু দেবায়নকে নিয়ে চিন্তা। ওর বর্তমান পরিধি ছেলের চিন্তায় শুরু হয় আর সেখানেই শেষ। সেই সাথে জানায় অনুপমার কথা। সব শুনে ধৃতিমান হেসে বলে যে দেবশ্রী বেশ আধুনিক মানসিকতা নিয়ে থাকে। দেবশ্রী বলে, মানসিকতা আধুনিক নয়, মানসিকতা সময়ের সাথে একটু উদার করে নিয়েছে। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেলে তাদের নিজেদের কিছু গন্ডি চলে আসে। সেই গন্ডিটুকু ছেলে মেয়েদের ছেড়ে দেওয়া উচিত।

ডিনারের পরে ওরা হোটেলে ফিরে আসে একসাথে। দ্বিধাবোধ জড়তা অনেক কমে যায় দেবশ্রীর মধ্যে, ধৃতিমানের পাশে হাঁটতে ওর আর খারাপ লাগে না। হোটেলে ঢুকতেই পার্থের সাথে দেখা, পার্থ জিজ্ঞেস করাতে দেবশ্রী উত্তর দেয় যে ডিনারে বেরিয়েছিল একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁতে। লিফটে চেপে নিজেদের তলায় এসে ধৃতিমান নিজের কামরার দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকে।

দেবশ্রী ধৃতিমানকে জিজ্ঞেস করে, “কিছু বলবে?”

ধৃতিমানঃ “না মানে, কিছু না। আমি ভেবেছিলাম তুমি একা, আমি একা; একটু গল্প করলে কেমন হতো।”

ধৃতিমানের চোখের ভাষা পড়ে নেয় দেবশ্রী, ঠোঁটে লাজুক হাসি মাখিয়ে বলে, “গুড নাইট ধৃতিমান, কাল গল্প করবো। এখানের কাজের পরে কাল ব্যাঙ্গালোর যাবার আছে, আমার ব্যাগ গোছানো বাকি।”

ধৃতিমান দুই পা দেবশ্রীর দিকে এগিয়ে আসে, দেবশ্রীর বুকের মাঝে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড়। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে তুলে নেয়। দেবশ্রী শ্বাস বন্ধ করে ধৃতিমানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দুই পায়ে কেউ যেন পেরেক দিয়ে মেঝের সাথে গেঁথে দিয়েছে। সামনে পা বাড়াতে অক্ষম পিছিয়ে যেতে অক্ষম। ধৃতিমানের জ্বলন্ত চোখের ভাষা দেবশ্রীকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।

ধৃতিমান দুই পা দেবশ্রীর দিকে এগিয়ে আসে, দেবশ্রীর বুকের মাঝে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড়। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে তুলে নেয়। দেবশ্রী শ্বাস বন্ধ করে ধৃতিমানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পায়ে কেউ পেরেক দিয়ে মেঝেতে গেঁথে দিয়েছে। সামনে পা বাড়াতে অক্ষম পিছিয়ে যেতে অক্ষম। ধৃতিমানের জ্বলন্ত চোখের ভাষা দেবশ্রীকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।

ধৃতিমান দেবশ্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার সাথে ডিনারের জন্য অনেক ধন্যবাদ, ম্যাডাম। তুমি আমার ব্যাথা বেদনা ভাগ করে নিলে, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। জানো আজকে বড় খুশির দিন আমার কাছে, অনেক দিন পরে মনে হচ্ছে নিজেকে ফিরে পেয়েছি।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর মুখের উপরে ঝুঁকে পড়ে, দেবশ্রীর বুকের পাঁজরের ভেতরে হৃদপিণ্ড ধুকপুক করা থামিয়ে দেয়। সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে এক আসন্ন চুম্বনের চুম্বকীয় আকর্ষণে। দেবশ্রী নিথর হয়ে যায়, মুখের উপরে ধৃতিমানের উষ্ণ শ্বাসের ঢেউ মৃদু প্রলেপ লাগিয়ে চলে যায়। পরস্পরের শারীরিক চাহিদা চাইলেই মিটিয়ে নিতে পারতো দেবশ্রী।

দেবশ্রী বহু কষ্টে হাত ছাড়িয়ে ধৃতিমানের দিকে ভেজা চোখে মিহি কণ্ঠে বলে, “গুড নাইট, ধৃতি। কালকে অনেক কাজ আছে।”

চুম্বকের টানে নিজের ঘরে ঢুকে গেল দেবশ্রী। হাতমুখ ধুয়ে, জামা কাপড় বদলে একটু কাজ নিয়ে বসার পরে ছেলেকে ফোন করে। দেবশ্রীর গলা শুকিয়ে যায়, কি বলবে ভেবে পায় না।

মায়ের শুকনো কণ্ঠ শুনে দেবায়ন বিচলিত হয়ে ওঠে, “কি হয়েছে মা? তোমার শরীর ভালো আছে? তোমার গলা ওই রকম শুকনো কেন? বিকেলে কেন ফোন করলে না।”

সন্তানের মুখে “মা” ডাক বড় মধুর, চোখের কোল মুছে কানের উপরে মোবাইল চেপে বলে, “না রে বাবা, ভালো আছি। আজকে অনেক কাজ ছিল বিকেলে তাই আর ফোন করা হয়ে ওঠেনি। বুঝতেই পারছিস, এই রিপোর্ট, সেই রিপোর্ট তৈরি করে দিল্লীতে মেল করা। তারপরে আবার পরের দিনের জন্য কাজ গোছানো, সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি রে বাবা।”

দেবায়নঃ “তুমি শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরবে তো?”

দেবশ্রীঃ “হ্যাঁ রে, শুক্রবার রাতেই আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলকাতা ফিরে যাবো। বাড়ির বাইরে আর মন টিঁকছে না।”

দেবায়নঃ “মা গো, তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে, মা।”
 
দেবশ্রী কিঞ্চিত চিন্তিত হয়ে পড়ে ছেলের গলা শুনে, “কি হয়েছে রে তোর?”

দেবায়ন ভাবে আগে মা বাড়ি ফিরে আসুক তারপরে ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবে। সারাদিন সারারাত শুধু ওর মাথার মধ্যে নিজের কোম্পানি তৈরি করার চিন্তা ঘোরাফেরা করে। মাকে ঠিক ভাবে না বলা পর্যন্ত মনে শান্তি আসছে না। মায়ের ব্যাস্ততার জন্য ফোনে আর খোলসা করে কিছু বলতে চায় না দেবায়ন। উত্তরে কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমার জন্য কি আনছো?”

হেসে ফেলে দেবশ্রী। আগে অফিস থেকে ফেরার সময়ে রোজ দিন কিছু না কিছু নিয়ে ঘরে ঢুকতো, কোনদিন ক্যাডবেরি, কোনদিন খেলনা, কোনদিন গল্পের বই। কিছু না পেলে রাগ করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো দেবায়ন। দেবশ্রী হেসে বলে, “তোর জন্য দিল্লী থেকে একটা দামী ঘড়ি কিনেছি আর অনুর জন্য জিন্স কিনেছি রে। বাড়ি গেলে দেখাবো। রাতে খেয়েছিস? কাজের লোক এসেছিল?”

দেবায়নঃ “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। আমার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে, কাজের লোক এসে রান্না বান্না করে দিয়ে গেছে।”

দেবশ্রীঃ “আমি বাড়ি নেই, পড়াশুনা নিশ্চয় তাকে উঠিয়ে রেখেছিস।”

অবশ্য গত সাত আট দিনে বই কি জিনিস একবারের জন্য ছুঁয়ে দেখেনি। মা জানতে পারলে পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেবে। দেবায়ন কিঞ্চিত বিরক্ত প্রকাশ করে বলে, “বা রে, এই সবে ছুটি শুরু হলো। দাঁড়াও পড়াশুনা হবে ঠিক হবে।”

দেবশ্রীঃ “সামনে পরীক্ষা, ভালো মার্কস না আনলে হাইয়ার স্টাডিস কি করে হবে?”

দেবায়নঃ “সব হবে, ঠিক হবে। ফোন রাখো তো। ভালো থেকো গুড নাইট।”

পরের দিন পুনেতে শেষ দিন, সকাল থেকে ইন্টারভিউ নেওয়া, চূড়ান্ত ফলাফল জানিয়ে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের কাছে রিপোর্ট পাঠানো। সবার ফাইনাল পদ প্রার্থীদের অফার লেটার দেওয়া, দ্বিতীয় বার সবার কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখা, এই কাজে সারাদিন ব্যস্ত হয়ে পড়ে দেবশ্রী। সকাল থেকে ধৃতিমানের সাথে কথা বলার অবকাশ পায়নি একদম। বিকেলে হোটেলে ফিরে গোছগাছ করে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিল সবাই। গাড়িতে উঠে একটু শান্তির শ্বাস নেয় দেবশ্রী। ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে দিন কেমন কাটলো। দেবশ্রী মাথায় হাত দিয়ে বলে যে যত দিন এগোয় তত ওর চিন্তা বেড়ে ওঠে কাজ বেড়ে ওঠে। ব্যাঙ্গালর শেষ করে তাড়াতাড়ি কোলকাতা ফিরে যেতে পারলে বেঁচে যায়। প্লেনে চেপে ব্যাঙ্গালরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। দেবশ্রী চুপচাপ বসে থাকে, বাইরের রাতের অন্ধকার আকাশে এক নতুন জায়গায় নিয়ে যায় প্লেন। পাশে বসে মনীষা নিজের গল্প করে যায়, অর্ধেক কথা কানে ঢোকে, অর্ধেক কথা ঢোকে না। দেবশ্রী, জানালার বাইরের অন্ধকারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চুপচাপ বসে থাকে। প্লেন এক মনে নিজের গোঁ গোঁ শব্দে পুনে থেকে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে যায়।

সেন্ট মার্কস রোডের উপরে খুব বড় একটা হোটেলে ওদের থাকার ব্যাবস্থা। পরের দিনের ইন্টারভিউ ওই হোটেলে হবে। সারাদিন কাজের পরে বড় ক্লান্ত সবাই। নিজের কামরায় ঢুকে সব থেকে আগে স্নান সেরে ফেলে দেবশ্রী, তারপরে ছেলেকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে গেছে। মায়ের গলা পেয়ে দেবায়ন খুব খুশি, আর মোটে দুই দিন তারপরে মা বাড়িতে চলে আসবে। পুনে থেকে বের হবার সময়ে বিশেষ খাওয়া হয়নি, প্লেনে যা খেতে দিয়েছিল তা এতক্ষনে হজম হয়ে গেছে। দেবশ্রী ল্যাপটপ খুলে কাজে মন লাগায়, একবার ভাবে কিছু একটা রুম সার্ভিস অর্ডার করলে হয়। ঠিক সেই সময়ে রুমের ফোন বেজে ওঠে। ফোন তুলে ওপর পাশে ধৃতিমানকে পেয়ে একটু শান্তি পায় দেবশ্রী, সারাদিনের ব্যাস্ততার মাঝে ধৃতিমানের সাথে ঠিক করে কথা বলতে পারেনি।

ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “আমার বড় ক্ষিধে পেয়েছে, তোমার কি খবর?”

দেবশ্রী হেসে ফেলে, “আমি ঠিক তাই ভাবছিলাম, রুম সার্ভিস ডেকে নেব ভাবছি।”

ধৃতিমানঃ “হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই ভালো এখন আর নিচে নেমে লাভ নেই। তোমার রুমে ডেকে নাও আমি একটু পরে চলে আসছি।”

দেবশ্রীঃ “মানে?”

ধৃতিমানঃ “মানে তুমি তোমার রুমে অর্ডার প্লেস করবে না আমার রুমে আসবে?”

দেবশ্রীঃ “ওকে বাবা, তুমি আমার রুমে চলে এসো। আমি কাগজ পত্র মেলে, ল্যাপটপ খুলে বসে পড়েছি। এখানেই চলে এসে কিছু অর্ডার করে দাও।”

ধৃতিমানঃ “ওকে, আমি একটু পরেই আসছি।”

কিছুক্ষণের মধ্যে ধৃতিমান দেবশ্রীর কামরায় পৌঁছে যায়। দেবশ্রী তাড়াতাড়ি পরনের ম্যাক্সির উপরে একটা স্টোল জড়িয়ে নেয়। ধৃতিমানের চাহনি দেবশ্রীর নধর সুপুষ্ট দেহপল্লবের উপরে ঘোরাফেরা করে। উত্তপ্ত চাহনি দেবশ্রীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। ধৃতিমানের লিপ্সা মাখা নজরে দেবশ্রীর হৃদয়ে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। ধৃতিমান ফোন তুলে খাবারের অর্ডার দিয়ে একটা সোফা টেনে বসে, মাঝখানে ছোটো টেবিল উলটো দিকের সোফায় দেবশ্রী।

ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “তুমি সত্যি ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলকাতা ফিরে যাবে?”

দেবশ্রীঃ “হ্যাঁ ধৃতি, আমি দিল্লী যাচ্ছিনা। মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশের সাথে কথা হয়ে গেছে। আমি শুক্রবার রাতে এখানের কাজ শেষ করে সোজা কোলকাতা ফিরে যাবো।”

ধৃতিমানের চেহারায় একটু কালো ছায়া পড়ে যায় দেবশ্রীর কথা শুনে, ক্ষুণ্ণ মনে বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি দিল্লী যাবে, তারপরে ওখান থেকে কোলকাতা। দিল্লী গেলে বড় ভালো হতো, একদিন তোমাকে অন্তত নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতাম। মলি তোমাকে দেখে খুশি হতো।”

ম্লান হেসে জবাব দেয় দেবশ্রী, “মনে হয় না এই যাত্রায় সম্ভব, ধৃতি। ছেলের জন্য, বাড়ির জন্য মন বড় টানছে, কোলকাতা আমাকে ফিরতে হবেই।”
 
ধৃতিমান সামনে ঝুঁকে দেবশ্রীর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “ব্যাঙ্গালোরে শুধু কাজ আর কাজ, আমি ভেবেছিলাম আরো কিছুদিন তোমার পাশে থাকতে পারবো।”

দেবশ্রীর শরীর কেঁপে ওঠে ধৃতিমানের উষ্ণ হাতের চাপে, চাপা কণ্ঠে বলে, “পৃথিবীটা গোল ধৃতি, একদিন হয়তো আবার দেখা হবে।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত না ছেড়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। দেবশ্রীর ধৃতিমানের চোখের মণির দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ঠোঁটের কাছে এনে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “দেবশ্রী, এই কয়দিনে আমি তোমাকে বড় ভালোবেসে ফেলেছি।”

তিরতির করে কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর ঠোঁটজোড়া, ধরা গলায় বলে, “কেন স্বপ্ন দেখাচ্ছো ধৃতিমান? রঙিন স্বপ্ন দেখা আমি ভুলে গেছি।”

ধৃতিমান ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায় দেবশ্রীর ঠোঁটের কাছে, দেবশ্রীর ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক হয়ে আসন্ন চুম্বনের প্রতীক্ষা করে। উষ্ণ শ্বাসের প্রলেপ লেগে যায় দেবশ্রীর সারা মুখে। ধৃতিমানের পুরু ঠোঁট দেবশ্রীর পাতলা নরম গোলাপি ঠোঁট আলতো করে ছুঁয়ে যায়। দেবশ্রী চোখ বুজে ধৃতিমানের হাত শক্ত করে ধরে থাকে। ধৃতিমানের ঠোঁট ওর নরম তৃষ্ণার্ত অধরের রস চুম্বনে ব্যস্ত হয়ে যায়। দুই চাতক চাতকী পরস্পরের অধর চুম্বনে মগ্ন হয়ে পড়ে। ধৃতিমান দেবশ্রীর গা থেকে স্টোল সরিয়ে কাঁধে হাত রাখে। দেবশ্রী ধৃতিমানের বুকের উপরে হাত মেলে চুম্বন গভীর করে নেয়। বহু যুগ পরে প্রেমের বারিসিঞ্চনে দেবশ্রীর অভুক্ত হৃদয় ভরে ওঠে। ধৃতিমান দেবশ্রীর নধর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়। দুই থাই ফাঁক করে ধৃতিমানকে পায়ের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসতে সাহায্য করে দেবশ্রী। দেবশ্রীর হাত উঠে আসে ধৃতিমানের মাথার পেছনে, চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে আঁচড় কেটে মাথা টেনে চুম্বন আরো গভীর করে তোলে দেবশ্রী। ধৃতিমানের হাত ওর পিঠের ওপরে চলে যায়। সারা পিঠ জুড়ে ধৃতিমানের হাত উপর নীচ আদর করে। উত্তপ হয়ে ওঠে দেবশ্রীর শরীর, শ্বাস ফুলে ওঠে সেই সাথে নরম উদ্ধত স্তন জোড়া ধৃতিমানের বুকের উপরে চেপে বসে। ধৃতিমানের কঠিন বুকের পেষণে দেবশ্রী গলে যায় মোমের পুতুলের মতন। প্রগাঢ় চুম্বন ভাঙে রুম সার্ভিসের বেলে।

লাজুক চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “দুষ্টুমি শুরু করে দিলে, এবারে দরজা খুলে খাবার নিয়ে এসো।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে চুমু খেয়ে বলে, “ওকে ডারলিং, যেমন তুমি বলবে।”

দেবশ্রী গায়ে স্টোল জড়িয়ে নেয়, বয় খাবার নিয়ে এসে টেবিলের উপরে রেখে চলে যায়। বয় চলে যেতেই ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে। দেবশ্রী ধৃতিমানের গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “ক্ষিধে মনে হচ্ছে চলে গেছে?”

ধৃতিমান নতুন প্রেমিকের মতন নাকের উপরে নাক ঘষে বলে, “হ্যাঁ তোমার মিষ্টি ঠোঁটের ডেসার্ট চেখে ক্ষিধে মরে গেছে।”

দেবশ্রীর শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, নরম ব্রা পরিহিত স্তনের ওপরে ধৃতিমানের চওড়া বুক চেপে বসে সমতল করে দিয়েছে। ধৃতিমানের হাত দেবশ্রীর শিরদাঁড়ার নিচের অংশে চেপে, নিজের দিকে টেনে ধরে। ধৃতিমানের শিথিল উত্তপ্ত লিঙ্গ ওর ট্রাক প্যান্ট ভেদ করে, দেবশ্রীর পাতলা ম্যাক্সি ভেদ করে নরম পেট পুড়িয়ে দেয়।

দেবশ্রী চেপে ধরে নিজেকে ধৃতিমানের বাহুপাশে, চোখের মণির মাঝে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলে, “ধৃতি, আমাকে ডিনারের ছলে রুমে ডেকে একি করলে তুমি। আমি অবশ হয়ে যাচ্ছি তোমার ছোঁয়ায়।”

ধৃতিমানঃ “আমি তোমার রুপে, তোমার গুনের প্রেমে পড়ে গেছি দেবশ্রী।”

দেবশ্রী ধৃতিমানের গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “আমার কিন্তু বড় ক্ষিধে পেয়েছে, ধৃতি।”

ধৃতিমানঃ “আমাকে খাও না, প্রথম দিনেই আমার মাথা খেলে আর আজকে তো মনে হয় সব খাবে।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর কোমর ছেড়ে সোফায় বসে পড়ে। ধৃতিমানের বাহুপাশ থেকে মুক্তি পেয়ে সোফায় পা মুড়ে বসে যায়। পরনের ম্যাক্সি হাঁটুর কাছে চলে আসে। ধৃতিমানের দৃষ্টি ফর্সা মসৃণ পায়ের গুলির উপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়, পাতলা ম্যাক্সি দেবশ্রীর নধর দেহপল্লবের আকর্ষণ বিশেষ ঢাকা রাখতে পারে না। সুগোল পাছার আকার সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়, সেই সাথে পরনের প্যান্টির দাগ পাছার উপরে চেপে বসে দেখা দেয়। ধৃতিমানের দিকে থালা এগিয়ে দিয়ে চিকেন আর রুটি দেয় দেবশ্রী। ধৃতিমানের চাহনির ফলে কোমরের নিচের রোমকুপ ফুলে ওঠে।

দেবশ্রী মিহি কণ্ঠে ধৃতিমানকে বলে, “আগে খাওয়া সারো নাহলে রুম থেকে বের করে দেবো।”

ধৃতিমান লজ্জা পেয়ে বলে, “না না, তোমাকে উঠতে হবে না।”

খেতে খেতে দেবশ্রী মল্লিকার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। ধৃতিমান জানায় মল্লিকা পড়াশুনায় বেশ ভালো। ধৃতিমানের ইচ্ছে মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানোর কিন্তু মল্লিকা বিজ্ঞানের চেয়ে ইংরাজি বেশি ভালোবাসে। দেবশ্রী জানায় যে ছেলে মেয়েদের নিজের পছন্দ মতন ভবিষ্যৎ গড়তে দেওয়া উচিত। দেবায়ন নিজেই চেয়েছিল ফিসিক্স নিয়ে পড়তে। দেবশ্রী চেয়েছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে কিন্তু দেবায়ন কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাই আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারেনি। দেবায়নের সেই নিয়ে কোন ক্ষোভ নেই, দেবশ্রী সেইসব কথা মন থেকে মুছে ফেলেছে। নিজেদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে কথাবার্তায় খাওয়া শেষ হয়।

খাওয়া শেষে ধৃতিমান ট্রেতে সব কিছু গুছিয়ে দরজার বাইরে করিডোরে রেখে আসে। দেবশ্রী বাথরুমে ঢোকে হাত মুখ ধোয়ার জন্য। আয়নায় নিজেকে দেখে লজ্জিত হয়ে পড়ে দেবশ্রী। ধৃতিমানের তীব্র কামাবেগের চুম্বনে ঠোঁট গাল লাল হয়ে গেছে, চেহারায় এক অনাবিল আনন্দের আলোক ছটা দেখা দিয়েছে। চোখের তারায় ভালোবাসা আর বাসনা মেশানো এক ঝিলিক। ধৃতিমান দেবশ্রীর পেছনে এসে দাঁড়ায়। আয়নার প্রতিফলনে পরস্পরের চোখের মণি নিবদ্ধ হয়ে যায়। ধৃতিমান দেবশ্রীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কিঞ্চিত কঠিন লিঙ্গ দেবশ্রীর নরম সুগোল পাছার খাঁজে চেপে বসে যায়। ধৃতিমানের হাত দেবশ্রীর কোমর পেঁচিয়ে নরম তুলতুলে পেটের উপরে চলে আসে। দেবশ্রী সোজা হয়ে পিঠ চেপে ধরে ধৃতিমানের প্রশস্ত বুকের উপরে। ধৃতিমানের হাতের উপরে হাত রেখে আলিঙ্গন পাশ নিজের দেহের উপরে নিবিড় করে নেয় দেবশ্রী। ধৃতিমানের মুখ নেমে আসে দেবশ্রীর কাঁধের উপরে। খালি কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুমু খায় ধৃতিমান। ঠোঁট ঘষে কাঁধ থেকে ঘাড়ে নিয়ে যায়, দেবশ্রীর নধর দেহপল্লব কামাবেগে কেঁপে ওঠে ধৃতিমানের কঠিন বাহুপাশে।

দেবশ্রীর গালে গাল ঘষে আদর করে বলে ধৃতিমান, “তুমি বড় মিষ্টি, দেবশ্রী। তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে।”

বুকের প্রজ্বলিত কামনার আগুন দমন করে দেবশ্রী ধৃতিমানের গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “বুড়ো ধাড়ি, অনেক হয়েছে প্রেম দেখানো। আমি ঘুমাতে যাচ্ছি তুমিও ঘুমাতে যাও। আগামী কাল অনেক কাজ আছে।”
 
ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে আলতো চুমু খেয়ে কামরা থেকে বেরিয়ে নিজের কামরায় চলে আসে। সকাল বেলা তাড়াতাড়ি ওঠার পালা, স্নান সেরে শাড়ি পরে কাজের জন্য তৈরি। মনীষা এসে প্রাতরাশের জন্য ডেকে নিয়ে যায়। প্রাতরাশের টেবিলে ধৃতিমানের সাথে দেখা। ধৃতিমান ইচ্ছে করে দেবশ্রীর পাশে এসে বসে। কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে রাতের কথা জিজ্ঞেস করে। ধৃতিমানের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারেনা দেবশ্রী। দেবশ্রী নিজেকে সামলে নেয়, দিনের আলোকে, সবার সামনে ধৃতিমানের এই আচরনে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়।

দেবশ্রী ধৃতিমানের আচরন উপেক্ষা করে জানিয়ে দেয় যে প্রথম দিনের ব্যাঙ্গালোরের অনেক ক্যান্ডিডেট আছে, সেই মত নিজেকে তৈরি করে যেন ভালো ভাবে ইন্টারভিউ নেয়। ধৃতিমান দেবশ্রীর কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারে, রাতের দেবশ্রী আর দিনের এই পাশে বসা দেবশ্রীর মাঝে আকাশ পাতাল তফাত। সেই কাম বিলাসিনী ক্ষুধার্ত দেবশ্রীর জায়গায় পুরোদস্তুর এক কর্মঠ দক্ষ পেশাদারী নারী বসে। ধৃতিমান আর দেবশ্রীকে ঘাঁটাতে সাহস পায় না।

সারাদিন সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কাজে, একের পর এক ক্যান্ডিডেটদের ইন্টারভিউ নেওয়া, তাদের অফার লেটার, স্যালারি সম্বন্ধে আলোচনা ইত্যাদি কাজে দিন কেটে যায়। সকালে কাজের মধ্যেই একবার ছেলেকে ফোন করেছিল দেবশ্রী। রোজ কথা হয় ছেলের সাথে তাও যেন মনে হয় কতদিন দেবায়নের গলা শোনেনি। কাজের ব্যাস্ততার মাঝে সারাদিন হাঁপিয়ে উঠেছিল। বিকেলে কাজের শেষে ছেলের কথা হটাত খুব মনে পড়ে যায়। হোটেলে নিজের কামরায় ঢুকেই আগে দেবায়নকে ফোন করে। ছেলের গলা শুনে ধরে যেন প্রান ফিরে আসে। ছেলের ফোন ছাড়তেই মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের ফোন আসে। দেবশ্রীর কাজের কথা জিজ্ঞেস করা, বাকিদের কথা জিজ্ঞেস করা ইত্যাদি। গরম ভালোই পড়েছে ব্যাঙ্গালোরে, একবার ভাবে স্নান কর নেবে। তারপরে ভাবে একেবারে রাতে শোয়ার আগে স্নান সারবে। ল্যাপটপ খুলে রিপোর্ট তৈরি করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। সময়ের খেয়াল হয় যখন রুমের ইন্টারকমে ধৃতিমানের ফোন আসে।

ধৃতিমানঃ “তুমি কি আমার উপরে রেগে আছো?”

দেবশ্রী হেসে ফেলে, “কই না তো। তোমার হটাত এমন মনে হলো কেন?”

ধৃতিমানঃ “না মানে সারাদিনে বিশেষ কথা বললে না। এমন কি বিকেলের চা নিজের রুমে খেয়েছো মনে হচ্ছে। জানো কটা বাজে?”

দেবশ্রী ঘড়ির দিকে তাকায়, কাজে কাজে রাত নটা বেজে গেছে। ধৃতিমানকে হেসে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি ইচ্ছে, সেটা খোলসা করে একবার বলে দাও? আজকে কিন্তু আমি ডিনার নিচে গিয়ে করবো, আর তোমার জালে ফাঁসছি না।”

ধৃতিমান হেসে ফেলে, “না না, আজকে ভাবছি নিচে গিয়েই ডিনার করবো সবার সাথে।”

দেবশ্রী আদুরে লাজুক কণ্ঠে বলে, “আমি কিন্তু ডিনারের পরে সোজা নিজের ঘরে চলে আসবো।”

ধৃতিমানঃ “ওকে বাবা, আমি কিছু বলেছি নাকি সেই জন্য। যাই হোক, একটা কথা বলার ছিল তোমাকে।”

দেবশ্রীঃ “কি বলে ফেলো, আর লুকিয়ে কি হবে?”

ধৃতিমানঃ “না এখন বলবো না, ডিনারের পরে বলবো।”

দেবশ্রীঃ “ঠিক আছে বাবা, তাই সই। চলো তাহলে নিচে, কাল আবার আমার কয়েকটা ইন্টারভিউ নেওয়ার আছে। একটা এ্যাসিস্টেন্ট এইচ.আরের নতুন রিক্রুটমেন্ট হবে ব্যাঙ্গালোর অফিসে।”

ধৃতিমান আর দেবশ্রী নিচে রেস্তোরাঁতে এসে দেখে কেউ আসেনি খেতে। অনেকেই হয়তো হোটেলে নেই অথবা নিজেদের রুমে। ডিনারে সেরে ফেলে তাড়াতাড়ি। ধৃতিমানের আগুন ঝরানো চাহনির সামনে দেবশ্রী পুনরায় মোমের পুতুলের মতন গলতে শুরু করে। লিফটে ওঠার সময়ে দেবশ্রীর কোমর জড়িয়ে ধরে ধৃতিমান। নববিবাহিতা রমণীর মতন ধৃতিমানের কাঁধে মাথা রাখে দেবশ্রী। মন চঞ্চল হয়ে ওঠে মিলনের জন্য। দেবশ্রী মনেপ্রানে ধৃতিমানের সান্নিধ্য পেতে চায়, দিনের আলোকে সেটা সম্ভবপর নয় তাই রাতের আঁধারে সবার অলক্ষ্যে ধৃতিমানের অঙ্কশায়িনী হওয়ার জন্য হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। একটু খোঁচা মেরে ধৃতিমানকে বলে যে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে চায়। ধৃতিমান কানেকানে বলে, তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না। কানের লতির উপরে ধৃতিমানের উষ্ণ শ্বাসের ফলে গাল লাল হয়ে যায় দেবশ্রীর। লিফট থেকে বেরিয়ে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ায় দেবশ্রী। ধৃতিমান পেছন থেকে দেবশ্রীর হাত টেনে বুকের উপরে টেনে ধরে। দেবশ্রী টাল সামলাতে না পেরে ধৃতিমানের বুকের উপরে পড়ে যায়। ধৃতিমান দেবশ্রীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। স্থান কাল ভুলে দেবশ্রী ধৃতিমানের প্রেমের পরশে ডুব দেয়। দুই হাতে ধৃতিমানের গলা জড়িয়ে প্রেমঘন চুম্বন আরও নিবিড় করে তোলে।

চুম্বন ছাড়িয়ে দেবশ্রী ধৃতিমানকে বলে, “আমি স্নানে যাবো, তুমি কি আসতে চাও?”

ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে চুমু এঁকে বলে, “আমি এখুনি আসছি তারপরে স্নানে ঢুকে যেও।”

দেবশ্রীঃ “তাড়াতাড়ি এসে যেও, আমি কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবো না।”

ধৃতিমানঃ “না আমার সুন্দরী অপ্সরা। তোমাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাবো না। আজকে তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।”

দেবশ্রীঃ “তাই নাকি? কি বলার বাকি আছে? আর কাকে কাকে ভালোবেসে করেছো সেই কথা।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে হাত বুলিয়ে আদর করে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ায়, “ধুর বাবা, অদ্ভুত মেয়ে তুমি। যাও যাও, আমি জামা প্যান্ট ছেড়ে বারমুডা পরে এখুনি আসছি।”

দেবশ্রী নিজের কামরায় ঢুকে গান গাইতে শুরু করে দেয়, “চঞ্চল মন আনমনা হয়ে যেই তার ছোঁয়া লাগে, ভোরের আকাশে আলো দেখে পাখী যেন জাগে... চঞ্চল মন আনমনা হয়ে যেই তার ছোঁয়া লাগে” মনের ভেতরে এক অদ্ভুত ভালোলাগার শীতল মলয় দোলা দেয়। শাড়ির প্যাঁচ খুলতে খুলতে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে। শুধুমাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বারেবারে জরিপ করে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায়, আয়নার প্রতিফলনকে মৃদু বকে দেয়, “ধুত দুষ্টু মেয়ে, যাঃ শুধুমাত্র একটা রাতের ভালোবাসা, নিজেকে ভাসিয়ে নে এই কয় ঘন্টার ভালোবাসায়। কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে নে তোর শূন্য হৃদয়কে।” গায়ে একটা তোয়ালে জড়িয়ে, টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ, কাগজপত্র গুছাতে শুরু করে।
 
পরেরদিন বৃহস্পতিবার আর তারপরে শুক্রবার। শুক্রবারে কোলকাতা ফিরে যাওয়া, সেই নিয়ে অবশ্য মিস্টার ঠাকুর আর মিস্টার ত্রিপাঠির সাথে আলোচনা করা হয়ে গেছে। শুক্রবারে বিশেষ কোন ইন্টারভিউ নেই তাই দুপুরের ফ্লাইট ধরার ইচ্ছে আছে যাতে সন্ধ্যের আগেই কোলকাতা পৌঁছে যেতে পারে। এমন সময়ে দরজায় টোকা মারার আওয়াজ শুনে উচ্ছল প্রানা দেবশ্রী দৌড়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলেই ধৃতিমানকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠার মতন হয়ে যায়। এই দেবশ্রী কাজের সময়ে এক ভিন্ন রুপী কঠোর মহিলা ছিল। উচ্ছলতা বুকের মাঝে লুকিয়ে দুষ্টু মিষ্টি হেসে ধৃতিমানকে কামরার ভেতরে আসতে বলে। ধৃতিমানের হাতে একটা বড় উপহারের বাক্স। দেবশ্রীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেবশ্রীর কপালে ছোটো চুমু খায়। অবাক চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে উপহারের কথা জিজ্ঞেস করে।

ধৃতিমান বলে, “তোমাকে বিজনেস সুটের চেয়ে, শাড়িতে বেশি সুন্দরী দেখায়। একটা সাউথ সিল্ক কিনলাম বিকেলে, দেখো একবার খুলে পছন্দ হয়েছে কি না। আমি অবশ্য দোকানে বলে এসেছি যে পছন্দ না হলে যার জন্য নিয়ে যাচ্ছি তাকে নিয়ে আগামী কাল ফিরে আসবো বদল করার জন্য।”

দেবশ্রী শাড়ির প্যাকেট খুলে বড় খুশি হয়। ঠোঁটে হাসি মুখে লাজ দেখিয়ে বলে, “এই কেনার কি দরকার ছিল, আমি তোমার জন্য কিছু কিনতে পারলাম না যে।”

ধৃতিমান শাড়িটা মেলে ধরে দেবশ্রীর সামনে, সমুদ্রের নীল রঙের শাড়ি আর গাড় নীল রঙের পাড়। দেবশ্রীর গায়ে ঘোমটার মতন জড়িয়ে দিয়ে বুকের কাছে টেনে বলে, “ব্যাস, আমার কাছে থাকলেই হলো। এই সব থেকে বড় উপহার পাওয়া হয়ে গেল আমার।”

ধৃতিমানের প্রেমঘন আলিঙ্গন পাশে নিজেকে সঁপে দিয়ে বড় শান্তি মনে হয় দেবশ্রীর। গেঞ্জির উপর দিয়ে, ধৃতিমানের প্রশস্ত বুকের উপরে কান পেতে গাল ঘষে বলে, “তুমি বড্ড ভালো, ধৃতি। বড় মন কেমন করে ওঠে।”

ধৃতিমান বারমুডার পকেট থেকে একটা ছোটো বাক্স বের করে দেবশ্রীর সামনে ধরে। দেবশ্রী অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ধৃতিমানের দিকে। ধৃতিমানের চোখে কাম লিপ্সার ছোঁয়ার বদলে অনাবিল এক ভালোবাসার আবেগ ঘন চাহনি। ছোটো লাল বাক্স দেখে দেবশ্রী অনুধাবন করে যে এই বাক্সে একটা দামী অলঙ্কার আছে। ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে চোখের কোল ভিজে ওঠে। তিরতির করে কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর ঠোঁট জোড়া। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দুই পা পেছনে সরে যায়। ধৃতিমান ছোটো লাল রঙের ভেলভেটের বাক্স খুলে একটা সোনার আংটি তার উপরে একটা ছোটো হীরে বসানো, দেবশ্রীর দিকে এগিয়ে দেয়। দেবশ্রীর বুক কেঁপে ওঠে, ভাষা হারিয়ে ফেলে, গলা শুকিয়ে যায়। এতটা এগিয়ে যাবে, ধারনা করতে পারেনি দেবশ্রী। ধৃতিমান দেবশ্রীকে ধরে বিছানার উপরে বসিয়ে দেয়। কাঠের পুতুলের মতন দেবশ্রী চুপচাপ বিছানায় বসে পড়ে।

সামনে মেঝেতে ধৃতিমান হাঁটু গেড়ে বসে, দেবশ্রীর বাম হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “আমাকে বিয়ে করবে, দেবশ্রী?”

কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের ন্যায় স্থানুর মতন দেবশ্রী নিথর হয়ে বসে থাকে। ধৃতিমানের বাক্য ওর শরীরের সব শিরা উপশিরা ঝনঝন করে ওঠে, মাথা ফেটে পড়ার যোগাড়। কি বলবে দেবশ্রী, উত্তর খুঁজে পায় না। দুই চোখে অবিরাম শ্রাবন বারিধারা বয়ে চলে। ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি, দেবশ্রী।”

দেবশ্রী কান্নায় ভেঙে পড়ে, দুই হাতে মুখ ঢেকে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে কেঁদে ওঠে, “আমাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছো কেন ধৃতিমান? আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি ঠিক, কিন্তু এখন বিয়ে করা একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত।”

ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ধরে মুখের উপরে থেকে সরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন, দেবশ্রী, কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারো না। আমি কি খারাপ লোক? আমি তোমাকে কোথায় ব্যাথা দিয়েছি, বল আমাকে। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি, দেবশ্রী।”

দেবশ্রীঃ “আমাদের এই ভালোবাসা, এই ভালোলাগা ক্ষণজন্মা। তুমি কেন বুঝতে পারো না। আমি আর তুমি দুইজনে ভিন্ন মরুর মানুষ। তুমি উচ্ছল চঞ্চল, আমি ঠিক জানি না আমি কি পছন্দ করি। আমরা দুইজনে প্রাপ্ত বয়স্ক, আমাদের সন্তান আছে। রাতের অন্ধকারে, একান্তে সবার চোখের আড়ালে পরস্পরের কাছে এসেছি, তাই বলে বিয়ে করা? সেটা অসম্ভব, ধৃতিমান।”

ধৃতিমান উঠে দাঁড়ায় দেবশ্রীর সামনে থেকে, “কেন অসম্ভব, কারন বলো।”

দেবশ্রী চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়িয়ে তোয়ালের উপরে গাউন জড়িয়ে বলে, “আমার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে ধৃতিমান। এই সময়ে দ্বিতীয় বার বিয়ের কথা ভাবতে পারি না আমি। আমার সবকিছু আমার ছেলে, ওর পড়াশুনা, ওর ভবিষ্যৎ, ওর সবকিছু আমার উপরে নির্ভর করে। তুমি দিল্লীতে থাকো, আমি কোলকাতায় থাকি। ছেলেকে ছেড়ে আমি কখনই দিল্লীতে আসতে পারবো না। আমি জানিনা আমাদের সম্পর্ক কিভাবে ফলপ্রসু হবে। তোমার নিজের একটা মেয়ে আছে, তার কথা একবার ভাবো ধৃতিমান। তুমি মেয়ের সাথে কথা না বলে কি করে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে? তুমি নিজে কখন কার সাথে রাত কাটাও সেটা তোমার মেয়ে দেখতে যায় না। কিন্তু এই বয়সে তার জীবনে তার পিতার বিবাহিত এক নারীর পদক্ষেপ, সেটা তোমার মেয়ে মেনে নাও নিতে পারে। আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও, আমাকে ভাবতে সময় দাও ধৃতিমান।”

ধৃতিমান হীরের আংটিটা বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু পরে শান্ত কণ্ঠে দেবশ্রীকে বলে, “একটা কথা বলবো, কিছু মনে করবে না।” দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান বলে, “আমি মিস্টার ঠাকুরকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম।”

বুক কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর, প্রচন্ড রাগ হয় ধৃতিমানের উপরে, চোয়াল শক্ত করে চোখের জল মুছে কড়া কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আমার উপরে নজরদারি করছিলে? জানতে চাইছিলে আমি কি ধরনের মহিলা? তোমার ভালোবাসা তাহলে মেকি?”

ধৃতিমান, “না দেবশ্রী, তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। মিস্টার হেমন্ত জানিয়েছিলেন যে তুমি নাকি পরের বছর ডি.জি.এম এইচ.আর পদে দিল্লীতে ট্রান্সফার হয়ে আসছো।”

চোয়াল শক্ত করে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “অফার পেয়েছি, তবে আমি এখন কোন সিদ্ধান্ত জানাই নি। কারন তোমাকে আগেই বলেছি, আমার সবকিছু আমার ছেলে। ওর খুশি, ওর ভালোবাসা, ওর মুখের হাসির চেয়ে দামী, এই পৃথিবীতে কিছু নেই। সুতরাং আমি শুক্রবার কোলকাতা ফিরে ওর সাথে আলাপ আলোচনা করে তবে আমি ওই অফারের সিদ্ধান্ত নেব।”

ধৃতিমান মাথা নাড়িয়ে বলে, “দেবশ্রী, আমার কথা প্লিস একটি বার ভেবে দেখ।”

দেবশ্রীঃ “আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, ধৃতিমান। জানি এই ভালোবাসা ক্ষণজন্মা, তবে বিয়ের ব্যাপারে একটু ভাবতে দাও। ধৃতিমান তুমি দয়া করে এখন চলে যাও, আমি একটু একা থাকতে চাই।”

ধৃতিমান মাথা নিচু করে দেবশ্রীর কামরা থেকে বেরিয়ে যায়। দেবশ্রী অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে সোফার উপরে। মাথা চিন্তাশুন্য হয়ে যায়, ভাবনা চিন্তা করার শক্তি লোপ পায়। একা একা বিছানায় শুতেই বুকের মাঝে জেগে ওঠে অপার শূন্যতা। দেবশ্রী জানে ওকে ফিরে যেতে হবে নিজের একাকীত্ব জীবনে। হৃদয় হুহু করে কেঁদে ওঠে। পার্স থেকে দেবায়নের ফটো বের করে দেখে, চোখের কোণে এক চিলতে জল চলে আসে দেবশ্রীর। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে দেবায়নের ফটো বুকে ধরে জিজ্ঞেস করে, “আমি তোর মা হলেও আমি এক নারী দেবু। আমি কি করবো একবার বলে দে সোনা? আমি হয়তো ধৃতিমানকে ভালোবেসে ফেলেছি।” স্নান আর করা হলো না দেবশ্রীর, দেবায়নের ছবি বুকে করে কাঁদতে কাঁদতে একসময়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
 
রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই। সকালে উঠে স্নান করার পরেই দেবায়নকে ফোন করে। প্রাতরাশের টেবিলে ধৃতিমান আর বাকিদের সাথে দেখা। ধৃতিমান আর দেবশ্রী পরস্পরকে দেখে অল্প হাসে। বাকিদের সাথে প্রাতরাশ সেরে কাজে নেমে পড়ে। সকাল থেকে ক্যান্ডিডেটদের আসার পালা, তাদের ইন্টারভিউ নিতে নিতে দুপুর গড়িয়ে যায়। কথামতন দেবশ্রী পাঁচজনের ইন্টারভিউ নেয়, তার মধ্যে একজনকে দিল্লীতে এসিস্টেন্ট এইচ.আর পদে নিযুক্ত করে। লাঞ্চের সময়ে ধৃতিমানের সাথে দেখা, দেবশ্রী ইচ্ছে করে ধৃতিমানকে একটু এড়িয়ে চলে। গত রাতের পরে ধৃতিমানের আচরনে বেশ বদলে গেছে। দেবশ্রীর সাথে বিশেষ কথাবার্তা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। মনীষা আর শান্তনুকে নিয়ে দেবশ্রী লাঞ্চ সারে। লাঞ্চের পরে ধৃতিমান একটু হন্তদন্ত হয়ে দেবশ্রীর কেবিনে ঢোকে। দেবশ্রী কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে ধৃতিমানের এহেন আচরনের কারন জিজ্ঞেস করে।

ধৃতিমান একটু বিরক্তি প্রকাশ করে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এটা কি হলো? আমি দুটো ক্যান্ডিডেটকে সিলেক্ট করেছিলাম, তুমি নাকচ করে দিয়েছো।”

দেবশ্রী উত্তরে বলে, “ওদের স্যালারি একটু বেশি, তাই হোল্ডে রাখা হয়েছে। নাকচ করেছি তোমাকে কে বললো?”

ধৃতিমান একটু তোড় দেখিয়ে দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “হোল্ডে কেন রাখা হয়েছে? ওই দুটো ক্যান্ডিডেট বেশ ভাল, আমি ইন্টারভিউ নিয়েছি, আমি জানি কাকে কি ভাবে কাজ করাতে হয়।”

দেবশ্রী কড়া কণ্ঠে জবাব দেয়, “এখন তোমার পাঁচ খানা ক্যান্ডিডেট আছে, তাদের ইন্টারভিউ শেষ হোক, মনঃপুত হলে বেছে নিও, নাহলে শেষ পর্যন্ত কি করা যায় দেখা যাবে।”

ধৃতিমানঃ “কিন্তু যাদের সিলেক্ট করেছি তাদের অফার দিতে অসুবিধে কোথায় তোমার?”

দেবশ্রী গম্ভির কণ্ঠে উত্তর দেয়, “আমি আমার কাজ ভালো ভাবে জানি, ধৃতিমান। সত্যি কথা বলতে তুমি যে দুইজনকে সিলেক্ট করেছো, তাদের এক্সপেক্টেড স্যালারি গ্রেডের চেয়ে বেশি। মনীষা যখন এক মাস আগে ওদের ফোন করেছিল, তখন ওরা যে এক্সপেক্টেড স্যালারি বলেছিল, আর তুমি ইন্টারভিউ নেবার পরে যা লিখে পাঠিয়েছো তাতে দেড় লাখের তফাত। এমন কি হলো একমাসে যে ওদের প্রত্যাশা এতো বেড়ে গেল?”

ধৃতিমান নিরুত্তর, ইচ্ছে করেই ওই দুই ছেলের স্যালারি একটু বেশি করিয়ে ঢুকাতে চেয়েছিল, কারন ধৃতিমানের পচ্ছন্দের লোক ছিল দুইজনে। ধৃতিমান আমতা আমতা করে বলে, “কোম্পানি দিতে পারে তো স্যালারি, তাহলে তুমি বাধা দিচ্ছো কেন?”

দেবশ্রীঃ “কোম্পানি কি দিতে পারে না পারে সেটা আমার ভালো ভাবে জানা আছে। আমাকে প্রতিমাসে বোর্ডের কাছে জবাব দিতে হয়, যেটা তোমাকে দিতে হয় না। লাঞ্চের পরে আরও পাঁচখানা ক্যান্ডিডেট আছে তোমার, ভালো করে ইন্টারভিউ নাও, যদি শেষ পর্যন্ত পছন্দ না হয় তাহলে ওই দুই ক্যান্ডিডেটকে অফার লেটার দেবো। এখন আমার কাজ আছে, এবারে আসতে পারো।”

ধৃতিমান একবার দেবশ্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে, গতরাতের আচরনের জন্য ধৃতিমানের উপরে ক্ষুব্ধ কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করে। দেবশ্রীর মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই ওর মাথার মধ্যে কি চলছে। ধৃতিমানের চাহনি দেখে দেবশ্রীর বুঝতে অসুবিধে হয় না ওর মনের কথা। দেবশ্রী হেসে নিচু কণ্ঠে জানিয়ে দেয় যে ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে কাজ আর পেশা কখন গুলিয়ে ফেলে না। ধৃতিমান বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ম্লান হেসে দেবশ্রীর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

পরের দিনের জন্য কোন কাজ ফেলে রাখতে চায় না দেবশ্রী। বিকেলের মধ্যে ইন্টারভিউয়ের কাজ শেষ হয়ে যায়। ধৃতিমান শেষ পর্যন্ত পূর্ব মনোনীত প্রার্থীদের বদলে আরো দুটি প্রার্থীকে নিযুক্ত করে। কাজের শেষে ধৃতিমান দেবশ্রীর কাছে এসে দুপুরের আচরনের জন্য ক্ষমা চায়। ধৃতিমানের আচরনে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়। কপট অভিমান দেখিয়ে দেবশ্রী, মনীষাকে নিয়ে হোটেলের দিকে রওনা দেয়। ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হবে, আগামী কাল দুপুরের ফ্লাইট। হোটেলে নিজের কামরায় ঢুকে সারাদিনের কাজের রিপোর্ট খুলে বসে। সব মিলিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে বেশ সময় লেগে যায়। রিপোর্ট, মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠিকে মেল করে দেয়। রুম সার্ভিসে এক কাপ কফি চেয়ে চুপ চাপ টিভি খুলে বসে পড়ে। টিভি দেখতে দেখতে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলে। এমন সময়ে মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠির ফোন আসে দেবশ্রীর কাছে, কনফারেন্স কলে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর।

ব্রিজেশঃ “হ্যালো ম্যাডাম, কেমন আছেন? আপনার রিপোর্ট পেলাম।”

দেবশ্রীঃ “হ্যাঁ স্যার ভালো আছি। ব্যাস সব কাজ শেষ, আশা করি আপনাদের মনঃপুত ভাবে কাজ শেষ করতে পেরেছি।”

ব্রিজেশঃ “ম্যাডাম, আপনি অভূতপূর্ব কাজ করে দিয়েছেন।”

দেবশ্রী জানে কি ব্যাপারে কথা বলছে মিস্টার ত্রিপাঠি, তাও বিনম্র ভাষায় বলে, “এটা আমার কাজ, স্যার।”

হেমন্তঃ “আপনি সতের লাখ টাকা বাঁচালেন কি করে? আপনার গোপন শক্তি একটু খোলসা করে বলুন তো?”

হেসে ফেলে দেবশ্রী, “বাঃ স্যার, আপনি নিজে বোর্ডে আছেন আপনি জানেন ভালো ভাবে কি করতে হয়।”

হেমন্তঃ “হ্যাঁ সেটা জানি কিন্তু এর আগে যাকে পাঠিয়েছিলাম মানে চার বছর আগে যে চিফ রিক্রুটার ছিল সে বাজেট ফেল করে দিয়েছিল, সেখানে আপনি সতের লাখ টাকা বাঁচিয়ে এনেছেন, তাও সবার মন রক্ষা করে। কি করে করেন ম্যাডাম।”

ব্রিজেশঃ “ম্যাডাম, সত্যি বলছি, আগে মনে হতো মিস্টার ঠাকুর আপনার সম্পর্কে বাড়িয়ে বলেন। আজকের রিপোর্ট দেখে মনে হলো আপনাকে পরের মাস থেকে দিল্লীতে নিয়ে আসি। এখানে খুব দরকার আপনার, বিজনেসে মার্জিন কমে আসছে সেই সাথে কস্ট কাটিং কিন্তু লোক ছাড়িয়ে কস্ট কাটিংয়ের পক্ষপাতি আমি নই।”

হেমন্ত হেসে বলে, “আপনি আমার চাকরি খেয়ে ফেললেন দেখছি। কিন্তু আমি সত্যি আপনার কৌশলে প্রভাবিত।”

দেবশ্রী হেসে দেয়, “না স্যার, দিল্লী আসার সিদ্ধান্ত এখন ঠিক করে উঠতে পারিনি। ছেলের সাথে ওই বিষয়ে কোন কথা হয়নি। আমি জানি আমার ছেলেকে, হয়তো আমার দিল্লীতে আসা হবে না স্যার। আমি সত্যি খুব দুঃখিত।”
 
হেমন্তঃ “আপনি এতো ভেঙে পড়ছেন কেন? আমার কিন্তু আপনার উপরে বিশ্বাস আছে। আচ্ছা এক কাজ করুন, আপনি ছুটি নিন। আপনি ছেলেকে নিয়ে কোন এক ভালো জায়গায় ছুটি কাটিয়ে আসুন, ছেলের সাথে বিস্তারিত কথা বলুন, ওকে জানান যে এখন চাকরির বাজারের কি অবস্থা। এইমত অবস্থায় আপনার কোম্পানি ওকে চাকরি দিচ্ছে।”

দেবশ্রী হেসে বলে, “আগামী কাল আমি কোলকাতা ফিরতে চাই। আমার ছেলে আমার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে।”

ব্রিজেশঃ “ম্যাডাম, আপনি কালকে কোলকাতা না গিয়ে দিল্লী চলে আসুন। গরম কাল, কোলকাতায় বড় ঘাম দেয়। একটা সুন্দর হিল স্টেসানে ঘুরতে যান ছেলেকে নিয়ে। মুসৌরিতে রেসিডেন্সি ম্যানরে আপনার নামে রুম বুক করে দিচ্ছি, আপনি ছেলেকে নিয়ে বেশকিছু দিন ছুটি কাটিয়ে আসুন। কাজের কথা পরে করা যাবে, ওই সব মাথা থেকে মুছে মুসৌরি ঘুরে আসুন। আপনি সতের লাখ টাকা বাঁচিয়ে দিয়েছেন, টাকা সঞ্চয় করা মানে টাকা আয় করা। কোম্পানি আপনার জন্য এতটুকু করতেই পারে, অন্তত আমি করতে পারি।” ব্রিজেশ হেমন্তকে বলে, “মিস্টার হেমন্ত, তাড়াতাড়ি একটু ব্যাবস্থা করে দিন ম্যাডামের। কাজের কথা না হয় পরে হবে, আগে ম্যাডামের এয়ার টিকিট আর হোটেলের ব্যাবস্থা করে দিন।”

হেমন্তঃ “হয়ে যাবে স্যার, আমি এখুনি শান্তনুকে ফোনে জানিয়ে দিচ্ছি। ম্যাডামের সব ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।” দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “কার নামে কবে কার টিকিট হবে, সব কিছু আপনি শান্তনুকে বলে দেবেন। কাল দুপুরের মধ্যে আপনার টিকিট, গাড়ি, মুসৌরিতে থাকার ব্যাবস্থা সব হয়ে যাবে। আপনি একটু রেস্ট নিন আর ছেলের সাথে কিছুদিন ঘুরে আসুন।”

বেড়াতে যাবার প্রস্তাবে দেবশ্রী বড় খুশি হয়, অনেক বছর দেবায়নকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যায় নি। ঘুরতে গেলেও, পশ্চিমবঙ্গের আশেপাশের জায়গা ছাড়া কোথাও যেতে পারেনি। দেবশ্রী প্রস্তাব মেনে বলে, “ঠিক আছে স্যার, আপনি শান্তনুকে বলে দিন। বাকি আমি কাল সকালে ছেলেকে ফোন করে জানিয়ে দেবো।”

দেবশ্রী ফোন ছেড়ে বেশ খুশি হয়, দেবায়নকে একটা বড় চমক দেওয়া যাবে। এতরাতে আর ফোন করে না, সকালে ফোন করে দেবে। কিছু পরে শান্তনু দেবশ্রীকে জানায় যে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের কথা অনুযায়ী কোলকাতার টিকিট বাতিল করে দিল্লীর টিকিট কেটে দিয়েছে। দেবশ্রী দেবায়নের নামে কোলকাতা থেকে দিল্লীর শুক্রবার রাতের একটা টিকিট কাটতে বলে। দেবশ্রী জানায় যে শনিবার সকালে ওরা দিল্লী থেকে গাড়ি করে অথবা ট্রেনে মুসৌরি যেতে চায়। সেইখানে তিন দিন ছুটি কাটাতে চায়। শান্তনু জানিয়ে দেয়, দেবশ্রীর কথা মতন হোটেল গাড়ি সব ঠিক করে দেবে।

সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে দেবশ্রী চুপচাপ বসে থাকে। মন একটু ভারাক্রান্ত, ভেবেছিল ধৃতিমানের সাথে শেষ সময়টুকু একটু সুখকর হবে কিন্তু ধৃতিমানের প্রস্তাবে কি করবে কিছু ভেবে পায় না। দুপুরে দেবায়নকে ফোন করেছিল। দেবায়ন অনুরোধ করেছিল যাতে আর রাতে ফোন না করে, তাই আর ফোন করে উত্যক্ত করলো না ছেলেকে। দেবায়নের কথা মনে পড়ে দেবশ্রীর, ছেলে বলেছিল, “তোমার রক্ত মাংসের শরীর মা, তোমার বুকেও নিশ্চয় অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা কামনা বাসনা আছে। মা তুমি কাউকে ভালোবেসে আবার বিয়ে করো। তোমার সামনে অনেক বড় একটা জীবন পড়ে আছে। কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো? মা, আমি আমার ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি। আমি হয়তো ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারি তোমার কাছে। হয়তো আমার চাকরি বিদেশে হবে। মা অনেক সময়ে তোমার মনে হয় না, যে তোমার পাশে কেউ থাকলে তাঁকে মনের কথা বলতে পারতে, তাঁর কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে পারতে, তাঁর বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে পারতে।” তার উত্তরে দেবশ্রী জিজ্ঞেস করেছিল, “তোকে এতো কথা কে শিখিয়েছে রে? অনু?” ছেলে মাথা নাড়িয়ে জানিয়েছিল ওই ছোটো মেয়েটা ওকে এই সব শিখিয়েছে। দেবায়নের সাথে সাথে অনুপমার কথা মনে হয়। মনে হয় যে ছেলে মেয়েরা সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছে, মনে হয় ওরা বর্তমান যুগের ছেলে মেয়ে, এক একাকী মায়ের দুঃখ কষ্ট বুঝতে পারবে। দেবশ্রী সেদিন হাসি কান্না মিশিয়ে ছেলেকে বলেছিল, “আমার তাহলে আজ মরেও শান্তি আছে রে। জেনে বড় শান্তি পেলাম যে, তোকে দেখার মতন কেউ আছে।”

ধৃতিমানের জন্য মন উতলা হয়ে ওঠে দেবশ্রীর, এই কথা আগে কেন মনে হয়নি ওর। আগে মনে হলে হয়তো অতো কড়া ভাবে ধৃতিমানের প্রস্তাবের উত্তর দিতো না, হয়তো বুঝিয়ে বলতো যে দেবায়নের সাথে কথা বলার পরে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবে। ডিনার করা হয়নি, একবার ভাবে ধৃতিমানকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে ডিনারের জন্য। ঠিক সেই সময়ে ধৃতিমানের ফোন আসে হোটেলের ইন্টারকমে।

ধৃতিমান ফোন তুলেই বলে, “কি হলো, আমার উপরে রাগ করে আছো মনে হচ্ছে? রাত সাড়ে দশটা বাজে ডিনারের নাম নেই, তোমার মোবাইল অনেকক্ষণ থেকে এনগেজ ছিল? ছেলের সাথে কথা বলছিলে?”

অনেকক্ষণ পরে ধৃতিমানের স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর শুনে দেবশ্রীর মন নেচে ওঠে, হেসে উত্তর দেয়, “সত্যি, তোমার উপরে রাগ করে থাকা যায় না।”

ধৃতিমানঃ “ডিনারের কি খবর? নিচে যাবে?”

দেবশ্রীঃ “জানো সত্যি কথা বলবো। তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম আমি, কখন ডিনারের জন্য ডাকবে।”

ধৃতিমান অবাক সুরে বলে, “তাই নাকি? আমার মত ভাগ্যবান আর এই পৃথিবীতে নেই তাহলে। রাগ তাহলে কমে গেছে সুন্দরীর।”

দেবশ্রী লাজুক হেসে বলে, “ধুত দুষ্টু, তাড়াতাড়ি নিচে চলো। একটা নতুন খবর দেবো তোমাকে।”

ধৃতিমানঃ “তাই নাকি, ওকে ডারলিং, আমি তৈরি। চলে এসো।”

দেবশ্রী কাপড় ছাড়ার সময় পায়নি, অফিস থেকে এসে হাত মুখ ধুয়ে কাজে বসে গেছিল, তারপরে হেমন্ত ঠাকুর আর ব্রিজেশ ত্রিপাঠির ফোন এল, তারপরে ব্যাগ গুছানো। কামরা থেকে বেরিয়ে দেখে ধৃতিমান দরজায় দাঁড়িয়ে। ধৃতিমানকে দেখে একগাল মিষ্টি হেসে নিচে রেস্তোরাঁতে যেতে বলে। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাসি মুখ দেখে খুব খুশি হয়, একবার ভয় পেয়ে গেছিল যে দেবশ্রী দ্বিতীয় বার ওর সাথে কথা বলবেনা।

খাবার সময়ে ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে বড্ড খুশি, কি ব্যাপার? কাল চলে যাবে তাই খুশি?”

দেবশ্রীঃ “না সেটা নয়। আসল খুশি অনেক দিন ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যাইনি। এবারে ভাবছি ঘুরতে যাবো।”

ধৃতিমানঃ “বাঃ বেশ, এই অধম যদি একটু সাথে যেতে পারতো তাহলে বড় ভালো হতো। কিন্তু যাচ্ছো কোথায়?”

দেবশ্রী মিচকি হেসে বলে, “তোমাদের দিল্লীর কাছেই কোথাও একটা যাচ্ছি।”

ধৃতিমান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলছো? কোথায় যাচ্ছো একটু ঝেড়ে কাশো।”

দেবশ্রীঃ “মুসৌরি যাচ্ছি, আমি আর ছেলে।”

ধৃতিমানঃ “হটাত কি ব্যাপার। তোমার তো ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না?”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top