এই লেখা কি এখানেই সমাপ্ত
ষাটের দশকে আমেরিকায় Mooning বলে একটা জিনিস চালু হয়েছিল। হঠাৎ জনসমক্ষে প্যান্ট খুলে পাছা দেখানাে হচ্ছে এই Mooning বা 'নিতম্ব প্রদর্শন'। নিতম্ব যেহেতু পূর্ণচন্দ্রের মতো গােলাকৃতি তাই এই পাগলামীর নাম দেওয়া হয়েছিল Mooning।
Mooning-এর ঢেউ শেষ হতেই শুরু হয়েছিল স্ট্রিকিং (Streaking)-এর ঝড়। স্ট্রিকিং-এর অর্থ বলা চলে 'বিদ্যুৎগতি'। অবশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘা যেমন কাঞ্চনবাবুর জঙ্ঘা নয়, তেমনি বলা বাহুল্য বিদ্যুৎগতিও বিদ্যুত্ববাবুর গতি নয়। স্ট্রিকিং হল সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দৌড় লাগানাে। বার্থ-ডে সুটে ভাগম-ভাগ। উদোম উদ্যম বলা যায় আর কি। শুরু হয়ে ছিলো ১৯৭২ সালে আমেরিকার (Yale University) ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে দুজন ছাত্র ন্যাংটো হয়ে দৌড় লাগিয়েছিল। দুজনেই পড়ল পুলিশের কবলে। ওদের কয়েক মাস কারাবাস হয়েছিল। এর কিছুদিন পর দুটি সুশ্রী মেয়ে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্রিকিং করল। তপ্ত ইতিহাসের নগ্ন পাতায়, না স্যরি, নগ্ন ইতিহাসের তপ্ত পাতায় এ দুজনের নাম উল্লেখ থাকবে। এরা মেয়ে স্বাধীনতার অগ্রদূতী বা বলা যায় নগ্নদূতী। এরপর সাউথ ক্যারােলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০৮ জন ছাত্র-ছাত্রী স্ট্রিকিং-এর রেকর্ড স্থাপন করলো। কিছুদিন পর কলােরাডাে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নগ্নতার রেকর্ড ভঙ্গ করল একসঙ্গে ১২০০ ছাত্র-ছাত্রী উদোম নৃত্য করে। শুরু হয়ে গেল প্রতিযােগিতা। কে কত বেশি এই নগ্নতার প্রদর্শনী করতে পারে বা কত উদ্ভট ন্যাংটো স্টান্ট দেখাতে পারে। শুরু হল তার নব নব আবিষ্কার। ওয়েস্ট জর্জিয়ার পাঁচজন পুরুষ ছাত্র প্লেন থেকে ন্যাংটো অবস্থায় প্যারাসুট নিয়ে ঝাপ দিল। কানাডায় একজন প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ( ফ্রিজিং পয়েন্টের বিশ ডিগ্রী নিচে) স্ট্রিকিং করে দুঃসাহসের পরিচয় দিলো। নিউজিল্যাণ্ড ও ইংলণ্ডের টেস্ট ম্যাচের সময় ত্রিশ হাজার দর্শকদের সামনে নিউজিল্যাণ্ডের একজন ছাত্র ন্যাংটো হয়ে দৌড় লাগালো মাঠে।
মনােবৈজ্ঞানিকরা এই অভূতপূর্ব পাগলামীর নানারকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তাঁরা বলেছেন-
এটা হল জীবনে অসফলতার করুণ প্রতিবাদ, frustration-এর এক নতুন বিজ্ঞাপন। অনেকটা জনসমক্ষে আত্মপরিচয় প্রকাশ করার এক বৃথা চেষ্টা।
Shock দিয়ে জনমনকে আকর্ষণ করার জন্যই এই নগ্নতার ছড়াছড়ি।
Streaking করে সামাজিক কানুনকে ভাঙাতে রয়েছে অন্যায় করে গােপন এক আত্মপ্রত্যয় লাভ।
পাপ, অন্যান্য অপরাধ চিরকালই সামাজিক নাগপাশ বন্ধন থেকে মুক্তির উপায়। সুতরাং লােভনীয়। অস্কার ওয়াইল্ড এজন্যই লিখেছিলেন, "আমি যা ভালবাসি তা হয় অসামাজিক, অনৈতিক বা বেআইনী"।
নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ করা এ যুগের কোন নব্য আবিষ্কার নয়।
৯০০ বৎসর আগে লর্ড অফ কভেনট্রির স্ত্রী লেডী গােডিভা নগ্ন হয়ে ঘােড়ার পিঠে চড়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ওয়াকউইকশায়ারের প্রজাদের উপর অত্যধিক শুল্ক ধার্যের প্রতিবাদ জানাতে এই Streaking করেছিলেন। স্বামীর বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদে স্বামী বাধ্য হয়ে শুল্ক তুলে নিয়েছিলেন। Sex দেখিয়ে Tax তুলে নেওয়ার দৃষ্টান্ত বোধ হয় এই প্রথম।
ইংলণ্ডের লেডী গােডিভার আগে এই নগ্ন প্রতিবাদ গ্রীসেও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সালামীস দ্বীপ যুদ্ধে অধিকৃত হওয়ার পর নাট্যকার সফোক্লেস এথেন্সের রাজপথে এক নগ্ন শােভাযাত্রার অধিনায়কত্ব করেছিলেন। শােভাযাত্রার শােভা নিশ্চয়ই নগ্নতায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর গােড়াতে জার্মানীতে এই নগ্নতার নব্য সংস্কৃতির জন্ম হয়। জার্মান ভাষায় Nacktbultur মানে Naked culture অর্থাৎ Nudist শুরু হয় কয়েকজন নগ্নতাবাদীর নেত্রিত্বে। তাঁরা নগ্নতার সপক্ষে বহু সামাজিক বৈজ্ঞানিক যুক্তি উত্থাপন করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে নগ্নতা খুবই স্বাস্থ্যকর আন্দোলন। এই আন্দোলন ক্রমে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে জার্মান, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, যুগােশ্লাভিয়া, স্পেন, চেকোস্লোভাকিয়া ও অন্যান্য দেশে Nudist কলােনী গড়ে ওঠে। প্রচুর জায়গা নিয়ে এই নগ্নতাবাদীরা ক্লাব, বাসস্থান, সুইমিংপুল, রেস্তোরাঁ বানিয়ে রীতিমত আধুনিক শহর বানিয়ে নিয়েছে। Streaking আসলে Nudist আন্দোলনেরই একটা নতুন শাখা।
কিন্তু না, আমেরিকা বা জার্মান না। লেডী গোডিভা বা সফোক্লেস এই নগ্ন আন্দোলনের পুরােধা নয়। এই আন্দোলনের জন্মস্থান হল প্রাচীন ভারতবর্ষ। এই নগ্নতার উগ্রতা পশ্চিমের দান নয়। এটা ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসে অনেক আগেই ছিল। আজ থেকে চার হাজার বৎসর আগে মহারাজা জনক তৎকালীন বিখ্যাত ঋষি, মুনি ও মহাজ্ঞানীদের এক সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। সে জ্ঞানভারতীর সভায় মহাজ্ঞানেশ্বরী গার্গী এসেছিলেন সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে। বিদ্যার, জ্ঞানের এত বড় বিদগ্ধ নারী নগ্ন হয়ে আসায় অন্যান্য মুনি ঋষির অবাক ।
কয়েকজন গার্গীর এই নির্লজ্জতার সমালােচনা করায় গার্গী জবাব দিয়েছিলেন- "আপনারা সত্যিকারের বেদান্তের অর্থ বােঝেন না। সত্যিকারের বৈদান্তিক কখনও নগ্নদেহে শুধু দেহের নগ্নতা দেখতেন না, দেখতে পেতেন দেহাতীত সে মহাসত্যকে, সে মহাজ্ঞানকে, সে মহাবিদ্যাকে—যে শক্তির অন্য নাম হল ঈশ্বর। দেহ তত অনিত্য অসত্য, যা সত্য তা অমর, তা দেহাতীত।"
এছাড়া শ্রীকৃষ্ণ গােপীদের বস্ত্র হরণ করে বৃন্দাবনে নুডিস্ট কলােনী স্থাপন করেছিলেন।
জার্মানদের এই নগ্নতাবাদের দর্শনের অনেক আগে মহাজ্ঞানী মহাবীর জৈনধর্মের দিগম্বর সাধু সম্প্রদায় দিগম্বরপ সৃষ্টি হয়েছিলো।
কোপেনহেগেনে যৌন স্বাধীনতার জোয়ারে নারী পুরুষের নানাবিধ যৌন সঙ্গমের ছবির বই বাজারে বেরিয়েছে। কত বিভিন্ন আসন, কত বিচিত্র বিকারগ্রস্ত ভঙ্গী! কিন্তু আমাদের খজুরাহাে আর কোণারকের মিথুনভঙ্গী ও প্রক্রিয়ার বিভিন্নতার কাছে এসব তাে পান্তাভাত। ইউরােপ আমেরিকায় টপলেস রেস্তোরাঁর অনেক আগে অজন্তা ইলােরার টপলেস মেয়েরা নগ্ন বক্ষ কক্ষ দেখিয়েছেন। কোণারকে যা বহুকাল আগে জনসমক্ষে প্রকট ছিল, সেটা মাত্র কাল কোপেনহেগেনে প্রচারিত হচ্ছে! সামাজিক দুঃসাহসিক বিবর্তন যা পশ্চিমে নতুন, তা ভারতবর্ষের অনেক পুরােনাে কালের ইতিহাস। ফ্রয়েড য়ুঙ্গ মাস্টার ও জনসনের অনেক আগেই বাৎস্যায়ণ কামশাস্ত্র লিখে ছিলেন। বিদেশীদের কাছ থেকে আমাদেরই শেখানাে জিনিস নতুন করে বার করছি আমরা।
বয়ঃসন্ধির ছেলেদের পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য নিয়ে দুর্ভাবনায় মুখ ব্রনে ভরে যায়, মেয়েদের দুর্ভাবনা হল স্তনের উচ্চতা নিয়ে। দেহমুখী সাহিত্য ও দেহধর্মী বিজ্ঞাপন দেখে এই অর্থহীন মনােবিকার । নগ্নতার স্বাধীনতা থাকলে ওই সব বিকার লােপ পাবে। দর্শনকাম বা প্রদর্শনকাতরতারও উপশম হবে। আজেবাজে যৌন কাগজ কেউ পড়তে চাইবে না। ছবির বই কিনবে না লুকিয়ে লুকিয়ে।শ্রেণীযুদ্ধের এক বিরাট অস্ত্র হল বস্ত্র । পােশাক দিয়েই চেনা যায় কে ধনী কন্যা আর কে গরীবের মেয়ে, কে মন্ত্রী আর কে সামান্য যন্ত্রী, কে অভিনেত্রী ও কে দেশনেত্রী, কে রাজা আর কে প্রজা, কে পুলিশ আর কে নকসাল, কে শিক্ষক আর কে কৃষক, কে ছাত্রী আর কে ধাত্রী, কে মহারানী আর কে ডাক্তারনী, কে মহীয়সী আর কে পাপীয়সী, কে নায়ক আর কে গায়ক, কে গৃহবধূ আর কে বারবধূ। সকলের পােশাক খুলে নিন, দেখবেন শুধু দুটোই শ্রেণী— নারী ও পুরুষ। সাম্যবাদের প্রথম সিড়ি চড়তে হলে বস্ত্র ত্যাগ হল প্রধান উপায় । ধনীদের কাপড় ধরে টান দিন আগে। এতে মেয়েদের শাড়ি কাপড়ের চাহিদার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। স্বামীরা, বাবারা বেঁচে যাবেন। বিয়ের কনেকে চেলি পরতে হবে না, মন্ত্র পড়লেই চলবে, বাসরঘরে কনেকে দেখতে ঘােমটা তুলতে হবে না, চোখ তুললেই হবে। কাপড় কেনার খরচই শুধু বাঁচবে না, কাপড় ধােওয়ার যাবতীয় খরচও বাঁচবে, সেলাইয়ের খরচও বাঁচবে।
আজকে যদি সকলে কাপড় খুলে এক হতে পারে, কালকে তাহলে হৃদয় খুলে এক হতে পারবে।
শচীন ভৌমিকের লেখা 'ফর অ্যাডাল্টস ওনলি' বইয়ের 'স্ট্রিকিং' শীর্ষক অংশ থেকে সংকলিত ও সম্পাদিত।
হ্যা, এই লেখা এটুকুই। মূল বই থেকে কিছুটা সংক্ষেপিত।এই লেখা কি এখানেই সমাপ্ত
সেই জিনিস দেখি লেখক
ষাটের দশকে আমেরিকায় Mooning বলে একটা জিনিস চালু হয়েছিল। হঠাৎ জনসমক্ষে প্যান্ট খুলে পাছা দেখানাে হচ্ছে এই Mooning বা 'নিতম্ব প্রদর্শন'। নিতম্ব যেহেতু পূর্ণচন্দ্রের মতো গােলাকৃতি তাই এই পাগলামীর নাম দেওয়া হয়েছিল Mooning।
Mooning-এর ঢেউ শেষ হতেই শুরু হয়েছিল স্ট্রিকিং (Streaking)-এর ঝড়। স্ট্রিকিং-এর অর্থ বলা চলে 'বিদ্যুৎগতি'। অবশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘা যেমন কাঞ্চনবাবুর জঙ্ঘা নয়, তেমনি বলা বাহুল্য বিদ্যুৎগতিও বিদ্যুত্ববাবুর গতি নয়। স্ট্রিকিং হল সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দৌড় লাগানাে। বার্থ-ডে সুটে ভাগম-ভাগ। উদোম উদ্যম বলা যায় আর কি। শুরু হয়ে ছিলো ১৯৭২ সালে আমেরিকার (Yale University) ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে দুজন ছাত্র ন্যাংটো হয়ে দৌড় লাগিয়েছিল। দুজনেই পড়ল পুলিশের কবলে। ওদের কয়েক মাস কারাবাস হয়েছিল। এর কিছুদিন পর দুটি সুশ্রী মেয়ে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্রিকিং করল। তপ্ত ইতিহাসের নগ্ন পাতায়, না স্যরি, নগ্ন ইতিহাসের তপ্ত পাতায় এ দুজনের নাম উল্লেখ থাকবে। এরা মেয়ে স্বাধীনতার অগ্রদূতী বা বলা যায় নগ্নদূতী। এরপর সাউথ ক্যারােলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০৮ জন ছাত্র-ছাত্রী স্ট্রিকিং-এর রেকর্ড স্থাপন করলো। কিছুদিন পর কলােরাডাে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নগ্নতার রেকর্ড ভঙ্গ করল একসঙ্গে ১২০০ ছাত্র-ছাত্রী উদোম নৃত্য করে। শুরু হয়ে গেল প্রতিযােগিতা। কে কত বেশি এই নগ্নতার প্রদর্শনী করতে পারে বা কত উদ্ভট ন্যাংটো স্টান্ট দেখাতে পারে। শুরু হল তার নব নব আবিষ্কার। ওয়েস্ট জর্জিয়ার পাঁচজন পুরুষ ছাত্র প্লেন থেকে ন্যাংটো অবস্থায় প্যারাসুট নিয়ে ঝাপ দিল। কানাডায় একজন প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ( ফ্রিজিং পয়েন্টের বিশ ডিগ্রী নিচে) স্ট্রিকিং করে দুঃসাহসের পরিচয় দিলো। নিউজিল্যাণ্ড ও ইংলণ্ডের টেস্ট ম্যাচের সময় ত্রিশ হাজার দর্শকদের সামনে নিউজিল্যাণ্ডের একজন ছাত্র ন্যাংটো হয়ে দৌড় লাগালো মাঠে।
মনােবৈজ্ঞানিকরা এই অভূতপূর্ব পাগলামীর নানারকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তাঁরা বলেছেন-
এটা হল জীবনে অসফলতার করুণ প্রতিবাদ, frustration-এর এক নতুন বিজ্ঞাপন। অনেকটা জনসমক্ষে আত্মপরিচয় প্রকাশ করার এক বৃথা চেষ্টা।
Shock দিয়ে জনমনকে আকর্ষণ করার জন্যই এই নগ্নতার ছড়াছড়ি।
Streaking করে সামাজিক কানুনকে ভাঙাতে রয়েছে অন্যায় করে গােপন এক আত্মপ্রত্যয় লাভ।
পাপ, অন্যান্য অপরাধ চিরকালই সামাজিক নাগপাশ বন্ধন থেকে মুক্তির উপায়। সুতরাং লােভনীয়। অস্কার ওয়াইল্ড এজন্যই লিখেছিলেন, "আমি যা ভালবাসি তা হয় অসামাজিক, অনৈতিক বা বেআইনী"।
নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ করা এ যুগের কোন নব্য আবিষ্কার নয়।
৯০০ বৎসর আগে লর্ড অফ কভেনট্রির স্ত্রী লেডী গােডিভা নগ্ন হয়ে ঘােড়ার পিঠে চড়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ওয়াকউইকশায়ারের প্রজাদের উপর অত্যধিক শুল্ক ধার্যের প্রতিবাদ জানাতে এই Streaking করেছিলেন। স্বামীর বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদে স্বামী বাধ্য হয়ে শুল্ক তুলে নিয়েছিলেন। Sex দেখিয়ে Tax তুলে নেওয়ার দৃষ্টান্ত বোধ হয় এই প্রথম।
ইংলণ্ডের লেডী গােডিভার আগে এই নগ্ন প্রতিবাদ গ্রীসেও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সালামীস দ্বীপ যুদ্ধে অধিকৃত হওয়ার পর নাট্যকার সফোক্লেস এথেন্সের রাজপথে এক নগ্ন শােভাযাত্রার অধিনায়কত্ব করেছিলেন। শােভাযাত্রার শােভা নিশ্চয়ই নগ্নতায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর গােড়াতে জার্মানীতে এই নগ্নতার নব্য সংস্কৃতির জন্ম হয়। জার্মান ভাষায় Nacktbultur মানে Naked culture অর্থাৎ Nudist শুরু হয় কয়েকজন নগ্নতাবাদীর নেত্রিত্বে। তাঁরা নগ্নতার সপক্ষে বহু সামাজিক বৈজ্ঞানিক যুক্তি উত্থাপন করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে নগ্নতা খুবই স্বাস্থ্যকর আন্দোলন। এই আন্দোলন ক্রমে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে জার্মান, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, যুগােশ্লাভিয়া, স্পেন, চেকোস্লোভাকিয়া ও অন্যান্য দেশে Nudist কলােনী গড়ে ওঠে। প্রচুর জায়গা নিয়ে এই নগ্নতাবাদীরা ক্লাব, বাসস্থান, সুইমিংপুল, রেস্তোরাঁ বানিয়ে রীতিমত আধুনিক শহর বানিয়ে নিয়েছে। Streaking আসলে Nudist আন্দোলনেরই একটা নতুন শাখা।
কিন্তু না, আমেরিকা বা জার্মান না। লেডী গোডিভা বা সফোক্লেস এই নগ্ন আন্দোলনের পুরােধা নয়। এই আন্দোলনের জন্মস্থান হল প্রাচীন ভারতবর্ষ। এই নগ্নতার উগ্রতা পশ্চিমের দান নয়। এটা ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসে অনেক আগেই ছিল। আজ থেকে চার হাজার বৎসর আগে মহারাজা জনক তৎকালীন বিখ্যাত ঋষি, মুনি ও মহাজ্ঞানীদের এক সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। সে জ্ঞানভারতীর সভায় মহাজ্ঞানেশ্বরী গার্গী এসেছিলেন সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে। বিদ্যার, জ্ঞানের এত বড় বিদগ্ধ নারী নগ্ন হয়ে আসায় অন্যান্য মুনি ঋষির অবাক ।
কয়েকজন গার্গীর এই নির্লজ্জতার সমালােচনা করায় গার্গী জবাব দিয়েছিলেন- "আপনারা সত্যিকারের বেদান্তের অর্থ বােঝেন না। সত্যিকারের বৈদান্তিক কখনও নগ্নদেহে শুধু দেহের নগ্নতা দেখতেন না, দেখতে পেতেন দেহাতীত সে মহাসত্যকে, সে মহাজ্ঞানকে, সে মহাবিদ্যাকে—যে শক্তির অন্য নাম হল ঈশ্বর। দেহ তত অনিত্য অসত্য, যা সত্য তা অমর, তা দেহাতীত।"
এছাড়া শ্রীকৃষ্ণ গােপীদের বস্ত্র হরণ করে বৃন্দাবনে নুডিস্ট কলােনী স্থাপন করেছিলেন।
জার্মানদের এই নগ্নতাবাদের দর্শনের অনেক আগে মহাজ্ঞানী মহাবীর জৈনধর্মের দিগম্বর সাধু সম্প্রদায় দিগম্বরপ সৃষ্টি হয়েছিলো।
কোপেনহেগেনে যৌন স্বাধীনতার জোয়ারে নারী পুরুষের নানাবিধ যৌন সঙ্গমের ছবির বই বাজারে বেরিয়েছে। কত বিভিন্ন আসন, কত বিচিত্র বিকারগ্রস্ত ভঙ্গী! কিন্তু আমাদের খজুরাহাে আর কোণারকের মিথুনভঙ্গী ও প্রক্রিয়ার বিভিন্নতার কাছে এসব তাে পান্তাভাত। ইউরােপ আমেরিকায় টপলেস রেস্তোরাঁর অনেক আগে অজন্তা ইলােরার টপলেস মেয়েরা নগ্ন বক্ষ কক্ষ দেখিয়েছেন। কোণারকে যা বহুকাল আগে জনসমক্ষে প্রকট ছিল, সেটা মাত্র কাল কোপেনহেগেনে প্রচারিত হচ্ছে! সামাজিক দুঃসাহসিক বিবর্তন যা পশ্চিমে নতুন, তা ভারতবর্ষের অনেক পুরােনাে কালের ইতিহাস। ফ্রয়েড য়ুঙ্গ মাস্টার ও জনসনের অনেক আগেই বাৎস্যায়ণ কামশাস্ত্র লিখে ছিলেন। বিদেশীদের কাছ থেকে আমাদেরই শেখানাে জিনিস নতুন করে বার করছি আমরা।
বয়ঃসন্ধির ছেলেদের পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য নিয়ে দুর্ভাবনায় মুখ ব্রনে ভরে যায়, মেয়েদের দুর্ভাবনা হল স্তনের উচ্চতা নিয়ে। দেহমুখী সাহিত্য ও দেহধর্মী বিজ্ঞাপন দেখে এই অর্থহীন মনােবিকার । নগ্নতার স্বাধীনতা থাকলে ওই সব বিকার লােপ পাবে। দর্শনকাম বা প্রদর্শনকাতরতারও উপশম হবে। আজেবাজে যৌন কাগজ কেউ পড়তে চাইবে না। ছবির বই কিনবে না লুকিয়ে লুকিয়ে।শ্রেণীযুদ্ধের এক বিরাট অস্ত্র হল বস্ত্র । পােশাক দিয়েই চেনা যায় কে ধনী কন্যা আর কে গরীবের মেয়ে, কে মন্ত্রী আর কে সামান্য যন্ত্রী, কে অভিনেত্রী ও কে দেশনেত্রী, কে রাজা আর কে প্রজা, কে পুলিশ আর কে নকসাল, কে শিক্ষক আর কে কৃষক, কে ছাত্রী আর কে ধাত্রী, কে মহারানী আর কে ডাক্তারনী, কে মহীয়সী আর কে পাপীয়সী, কে নায়ক আর কে গায়ক, কে গৃহবধূ আর কে বারবধূ। সকলের পােশাক খুলে নিন, দেখবেন শুধু দুটোই শ্রেণী— নারী ও পুরুষ। সাম্যবাদের প্রথম সিড়ি চড়তে হলে বস্ত্র ত্যাগ হল প্রধান উপায় । ধনীদের কাপড় ধরে টান দিন আগে। এতে মেয়েদের শাড়ি কাপড়ের চাহিদার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। স্বামীরা, বাবারা বেঁচে যাবেন। বিয়ের কনেকে চেলি পরতে হবে না, মন্ত্র পড়লেই চলবে, বাসরঘরে কনেকে দেখতে ঘােমটা তুলতে হবে না, চোখ তুললেই হবে। কাপড় কেনার খরচই শুধু বাঁচবে না, কাপড় ধােওয়ার যাবতীয় খরচও বাঁচবে, সেলাইয়ের খরচও বাঁচবে।
আজকে যদি সকলে কাপড় খুলে এক হতে পারে, কালকে তাহলে হৃদয় খুলে এক হতে পারবে।
শচীন ভৌমিকের লেখা 'ফর অ্যাডাল্টস ওনলি' বইয়ের 'স্ট্রিকিং' শীর্ষক অংশ থেকে সংকলিত ও সম্পাদিত।
We use essential cookies to make this site work, and optional cookies to enhance your experience.