"" এিশ""
দিনগুলো সব রুপকথার গল্পের মত কাঁটছে, ঋতুর শাসন,ভালবাসা,সত্যি আমার কপালে এতো সুখ লেখা ছিলো ভাবিনি কখনও। ছুটির দিনে মিঠুর দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছি, তখন মিঠু বললো ভাই বাবা মা মেয়ে দেখেছে আমার জন্য।উনাদের পছন্দ হয়তো আগামী সপ্তাহে দিনক্ষণ ঠিক করতে যাবে,আমি বললাম মেয়ে কি করে ও বললো মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে আর পড়াশোনা করেনি,বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো না। ও তা তুই দেখিস নি মেয়েকে ? ও বললো এমনিতে দেখিনি কিন্তু ছবিতে দেখেছি, চেহারা মোটামুটি দারুন ফিগার,আমি হেসে বললাম শালা তোর যতো চিন্তা ফিগার নিয়ে। তারপর আড্ডা শেষ করে বাড়ি পথে হাঁটা দিলাম,যা মিঠুরও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,আমাদের যে কবে হবে, বাড়ি এসে পৌছাতেই ঋতুর ফোন এলো,,,
-কি করো ??
-এই তো মিঠুর ওখানে ছিলাম মাএ বাসায় আসলাম।
-শোন একদিন ছুটি নিতে পারবে?
-আমি বললাম কেন ?
-দরকার আছে,আগে পারবে কিনা বলো?পারলে কালই নিয়ে নেও!
-আমি বললাম আচ্ছা সমস্যা নাই। এখন বলো কেন?
-কাল আমি বাড়ি যাবো তুমি আমার সাথে যাবে মাকে তো সব বলেছিলাম,কাল রাতে মা কল করে বললো তোমাকে দেখতে চায়। বয়স হচ্ছে কখন কি হয়ে যায় তাই উনার যতো চিন্তা।
-আমি বললাম সত্যি মা দেখতে চেয়েছে আমাকে।কিন্তু আমার না খুব টেনশন হচ্ছে!
ঋতু বললো আরে কিসের টেনশন আমি আছি না,যথারীতি পরেদিন সকালে রওনা দিলাম,ঋতু আজ একটা সাদা কালারের শাড়ি পরেছে,দেখতে একদম সাদা পরীর মত লাগছে। দুই ঘন্টা লাগলো যশোরে ওদের বাসায় পৌছাতে,দরজায় নক করতে ঋতুর মা দরজা খুললো ভদ্র মহিলার বেশ বয়স হয়েছে অথবা অতীতের অভাব আর অসুস্থতার জন্য বয়সটা বেড়ে যেতে পারে। আসার সময় কিছু ফল আর মিষ্টি কিনে এনেছিলাম, যদিও ঋতু মানা করছিলো,কিন্তু আমি বললাম প্রথমবার শশুর বাড়ি যাচ্ছি খালি হাতে গেলে আমার মান থাকে !? ও আর মানা করেনি। প্যাকেট গুলা ঋতুর হাতে দিয়ে হবু শাশুরীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। উনি মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন,বেঁচে থাকো বাবা!
তারপর শুরু হয়ে গেল হবু নতুন জামাইয়ের আদর আপ্যায়ণ, ফল, হরেক রকম মিষ্টি, লেবুর শরবত। আহ কতো দিন এভাবে এসব খাওয়া হয়নি।আমাকে নাস্তা দিয়ে মাসিমা বললো সব গুছিয়ে খাবা কিন্তু বাবা, লজ্জা করো না। আমি বললাম এতো কিছু করার কি দরকার ছিলো আপনার এই অসুস্থ্য শরীর নিয়ে,মাসিমা বললো এ আর এমন কি বাবা প্রথম বার আমাদের বাড়িতে এলে,বলে উনি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন।এতোক্ষণ পর ঋতু কথা বললো,উম্ম ঢং..যেন মাসিমার জন্য কত দরদ, নাও এবার চুপচাপ খেয়ে নাও ওতো ফিল্মি হতে হবে না। উফফ মেয়েটা আবার আমার পিছে লাগলো,,একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বললাম তুমি একপিছ মিষ্টি নাও না,ও বললো না বাবা ওসব এখন খাবো না। তুমি খাও আমি একটু মায়ের কাছ থেকে ঠান্ডা শরবত খেয়ে আসি,বলেই ও চলে যেতে গেল।
আমি সাথে সাথে ওর হাতটা টেনে ধরলাম,ও ঢ্যাব ঢ্যাব চোখে আমার দিকে তাকালো, আর ইশারায় বললো কি হলো?আমি বললাম শরবত এখানেও তো আছে এখান থেকে খাও না! এবার ঋতু হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,ওটা মা তোমাকে দিয়েছে।আমি বললাম অতো আমি খেতে পারবো না,তুমি একটু খাও বাকিটা না হয় আমি খাবো। ঋতু এবার কপট ঢং করে বললো বাবা! খুব রোমান্টিক মুডে আছো মনে হচ্ছে।কি ব্যাপার আসার সময় তো টেনশনে ঘামছিলে।
আমি বললাম তুমি তো আমার কিছুই শোন না শুধু শাসন করো। প্লিজ না বলো না একটু,,,,!!
ঋতু আবার বসে পরে বললো ঠিক আছে পাঠার হাঁড়ি কাঠে তোলার আগে শেষ ইচ্ছাটা না হয় পূরণ করি,বলে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে একটু চুমুক দিলো। তারপর আমাকে দিয়ে বললো নাও,খাও এবার আবার বলো না যেন,মিষ্টি বেশি হয়ে গেছে।বলেই ভিতরের ঘরে চলে গেল।যে জায়গায় ঠোঁট লাগিয়ে ও শরবতটা খেলো, আমিও সেখানে ঠোঁট লাগিয়ে ওর রেখে যাওয়া বাকি শরবত টুকু খেয়ে নিলাম, সত্যি ঋতু ঠিকই বলেছে একটু যেন বেশিই মিষ্টি লাগছে!
এবার একটু আমি বাড়িটার ভিতরটা লক্ষ্য করলাম,বাড়িটা একটু পুরাতন,সবে মাএ দুইটা রুম,একটা রান্নার ঘর,আর ছোট করে একটু বসার জায়গা যেখানে এখন আমি বসে আছি। কিন্তু সবকিছু পরিপাটি করে সাজানো গোছানো আসলে মা থাকলে সব কিছু এমনিতেই সেজে উঠে।
বিকালে রওনা দিবো তাই একটু তাড়াতাড়িই দুপুরের খাবার খেতে দেওয়া হলো।খাবার টেবিলে বসে দেখি সে এক এলাহী কান্ড,কলার মোচার ঘন্ট,ছোট মাছের ঝাল চচ্চড়ি,রুই মাছের মাথা,দেশি মুরগী ভুনা,কচি পাঠার ঝোল, টক দই,সবশেষে বড় বড় চার পিচ রসগোল্লা, মাসিমা বললেন আস্তে আস্তে খাও বাবা,আমি খাবো কি দেখেই পেট ভরে গেছে,ঋতু বললো আমি বসবো না মাসিমা বললো তুই পরে খাবি। ঋতু কপট রাগ দেখিয়ে চোখ বড় করে আমার দিকে তাকালো,আমি বললাম মাসিমা এতো কেন যোগার করেছেন ?আমি কি আর আসবো না,আপনারাও বসুন না , মাসিমা বললেন না বাবা আমরা পরেই খাই,তুমি বরং শুরু করো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে আস্তে আস্তে খেতে শুরু করলাম।দারুন হয়েছে মোচার ঘন্টটা ঠিক যেন মায়ের হাতের রান্না,আসলে মা সব সময়ই মা,কত দিন পর বাড়ির রান্না খাবার খাচ্ছি,আমি মোচার ঘন্ট তৃপ্তি করে খাচ্ছি দেখে মাসিমা বললো আর একটু দেব বাবা ? আমি বললাম না মাসিমা এই তো অনেক হয়ে গেছে।আমার খাওয়া শেষ হবার আগ পর্যন্ত ঋতু আর এখানে আসেনি। আমি খাওয়া শেষ করে বসে আছি,কিন্তু ঋতুর দেখা নাই,একটু পর মাসিমা এলো।
মাসিমা বললো দেখ বাবা তোমাকে যে জন্য এখানে আসতে বলা সে সম্পর্কে কিছুই বলা হলোনা।মাসিমার কথা শুনে আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম,মাসিমা শুরু করলেন,আসলে বাবা সব মা ই চায় মেয়ে ভালো ঘরে বিয়ে হোক সুখে থাকুক,তোমার পরিবার সম্পর্কে সব ওর কাছ থেকে শুনেছি সেগুলা বলে আর তোমায় কষ্ট দিতে চাইনা।সবই অদৃষ্ট! ঋতু যখন তোমাকে পছন্দ করেছে সেখানে আমার অমতের কিছু নেই।কারণ আমি জানি ও কখনো ভুল করতে পারে না। ওর বাবা যখন মারা যায় ও তখন সবে ১২ ক্লাস পাশ করলো,ওর বাবা ছোট একটা কাগজের ফ্যাক্টারিতে কাজ করতো তাই এই বাড়িটা ছাড়া বেশি কিছু রেখে যেতে পারেনি, মেয়েটার আমার মেধা খুব ভালো, তারপর নিজের পরিশ্রম আর ঋতুর টিউশনি এভাবেই বেঁচেছি আমরা,তারপর ও ভার্সিটিতে গেল,ও নিজের খরচ টিউশনি করে নিজেই চালাতো,ওকে ভালো জায়গায় যে বিয়ে দিবো সে সামর্থ্যও আমার ছিলো না। তারপর আমার শরীরটাও ভেঙে পরলো মেয়েটা তখন খুব কষ্ট করেছে পড়াশোনা,টিউশনির পাশাপাশি একটা বাচ্চাদের স্কুলে ঢুকলো,এভাবেই ওর পড়াশোনা আর আমাদের সংসারটা চলতো।তারপর ওর পড়াশোনা শেষ হলে ভগবানের অশেষ কৃপায় প্রথম চান্সেই তোমাদের ওখানের ওই সরকারি কলেজের চাকরিটা পেয়ে গেল।আসলে ও জীবনে অনেক কষ্ট করেছে,অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে ওর উপর দিয়ে। তোমাকে আমার অপছন্দ না,এগুলা বললাম যাতে তুমি বুঝতে পারো আমরা কেমন পরিবেশে বেড়ে উঠেছি,সেখানে তোমার আর ওর মাঝে আকাশ পাতাল তফাদ,তাই আবেগ দিয়ে না বাস্তবতা দিয়ে ভেবে তোমরা তোমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ো। আমি তোমাদের সাথেই আছি।