সবই ঠিকাছে শুধু একটিই খচখচানি । চার চারটি ! - জনসংখ্যা না বাড়িয়ে বাকি সবকিছু - বোঝেনই তো জনাব ।
তারপর একসময় চোখ মেলে দেখে মিতা ওর পাশে বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে ধরা আছে একটা টাওয়েল। যেটা দিয়ে ওর নিজের মুখ, বগল আর শরীরের ঘাম মুছছে। তার মানে ওর আজকের ব্যায়াম শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। এতক্ষণ ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সকাল বেলা চাদরের তলায় বরের অপকর্মটা দেখছিল। বউকে দেখে কমল একটা সলজ্জ হাসি হাসে। মিতা কমলের দিকে তাকিয়ে বলে, “কতদিন বলেছি, সকাল করে ঘুম থেকে উঠে, আমার সাথে একটু ব্যায়াম করো। তা নয়। বেলা পর্যন্ত ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোবে, আর চাদরের তলায় এসব করবে।”
বউয়ের কাছে ধরা পড়ে গিয়ে লজ্জা পায় কমল। ও সাফাই দিতে গিয়ে বলে, “না, মানে, সরি, হঠাৎ...”
বরকে থামিয়ে দিয়ে মিতা বলে, “প্রতিদিন তোমার হঠাৎ করেই এসব হয়। বিছানার চাদর তো আর তোমায় কাচতে হয় না। হলে বুঝতে।”
“কেন মীরাকে দিয়ে দেবে কাচতে। তোমায় কাচতে হবে কেন?”
“আহা, কি বুদ্ধি! ওনার ঐ ফ্যাদা মাখানো চাদরটা দেবো কাজের মেয়েকে কাচতে! বলব, ওরে তোর মেজদা সকাল বেলা একটু চাদরটা নোংরা করে ফেলেছে, কেচে দে।” এর কোনো উত্তর দিতে পারে না কমল। চুপ করে থাকে। তারপর চাদরের তলা থেকে ডানহাতটা বের করে মিতার কাছ থেকে টাওয়েল নিতে যায়।
মিতা দু পা পিছিয়ে গিয়ে বলে, “খবরদার আমার টাওয়েলে মুছবে না। ঐ চাদরেই মুছে দাও। ওটা এমনিতেই কাচতে হবে। আর প্রতিদিন পারি না। কতবার বলেছি বাথরুমে চলে যাও। ওখানে গিয়ে করো। তা নয়। প্রতিদিন বিছানায় শুয়ে শুয়ে খালি নোংরা করে। যে জিনিসটা আমি দেখতে পারি না, সেটাই ওনার করা চাই।” কমল কিছু না বলে হাতটা চাদরে মুছে নেয়। তারপর ঐ চাদরটা দিয়েই নিজের বাঁড়টা পরিষ্কার করে শর্টসটা কোমরে তুলে নেয়। মিতা তখনও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। সকাল সকাল কাজটা করে ফেলে, আর বউয়ের কাছে ধরা পড়ে গিয়ে লজ্জায় পড়ে গেছে কমল। ও মিতার হাতটা ধরে নিজের দিকে টানে। মিতা ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, “কটা বাজে খেয়াল আছে? এখন ওসব রাখো। তাড়াতাড়ি চান করতে যাও। আমি ব্রেকফাস্টটা রেডি করি। দেরী হলে বাবা আবার চেঁচাবেন।” বউয়ের মুখে বাবার কথা শুনে তাড়াতাড়ি দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকায় কমল। সাড়ে আটটা বাজতে যাচ্ছে। সত্যিই এখন আর হাতে একদম সময় নেই। ও বিছানা থেকে নেমে সটান বাথরুমে ঢুকে যায়। মিতা বিছানার চাদরটাকে তুলে ঘরের এককোণে রাখে। তারপর আলমারী থেকে অন্য একটা চাদর বের করে বিছানায় পেতে দেয়। স্নান করার আগে কেচে নেবে। তারপর নিজের যোগাড্রেসটা ছেড়ে আগেরদিনের ছেড়ে রাখা শাড়ি-ব্লাউজ ইত্যাদি পরে নেয়। কারণ এই যোগাড্রেসে ও বাবার অর্থাৎ শ্বশুরের সামনে যেতে পারবে না। তারপর নিজের যোগাড্রেসটাকেও বিছানার চাদরের কাছে রেখে দেয়। ওটাকেও কাচতে হবে। প্রতিদিনই কাচে। কারণ ঘামে ভেজা ড্রেস ও পরতে পারে না। কেমন যেন ঘেন্না লাগে। তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটাকে খোঁপা করে নেয়। তারপর মাথায় শাড়ির আঁচলটাকে ঘোমটা করে নেয়। এটা ওর শাশুড়ির কথা। শ্বশুরের সামনে বউমাকে মাথায় ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। মিতাও এটা মেনে নিয়েছে। বাড়িতে শ্বশুরের সামনে ও মাথায় ঘোমটা দিয়েই রাখে। তারপর দরজা খুলে বাইরে বের হয়। পাশের ঘরটাই ওর ছেলেমেয়ের ঘর। ছোটো থেকেই ওরা আলাদা ঘরে শোয়। বড় ছেলাটার বয়স নয় বছর। মেজটা সাত। আর মেয়েটা এই সাড়ে চার। তিনজনেই স্কুলে পড়ে। ছোটটা সদ্য কিণ্ডার গার্ডেনে ভর্তি হয়েছে। ছেলেমেয়ের ঘরে ঢুকে মিতা দেখে, বড়োটা তৈরী হয়ে গেছে। ইউনিফর্ম পরছে। মেজটা স্নান করছে। মিতা মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে ব্রাশ করিয়ে দেয়। তারপর স্নান করতে পাঠিয়ে দেয়।
তার পাশের ঘরটা মিতার ছোটো দেওর বিমলের ঘর। মিতা বিমলকে ওর ডাকনাম ‘রাজা’ বলে ডাকে। মিতা রাজার ঘরে ঢুকল। দেখল রাজা অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধতে বাঁধতে বৌদিকে দেখে বলল, “মর্ণিং বৌদি।”“মর্ণিং।”“মেজদা রেডি হয়েছে?”“কবে আর টাইমে তৈরী হয়েছে বল্?” মিতা রাজাকে ‘তুই’ করেই বলে।
“আজ আমি কিন্তু এক সেকেণ্ডও দাঁড়াতে পারব না। আজ আমার একটা জরুরী মিটিং আছে। লেট করে গেলে বস ক্যলাবে বলেছে।” মিতা আর রাজার সম্পর্কটা বেশ খোলামেলা। রাজা বৌদির সামনে গাল দিয়ে কথা বলে। মিতা কিছু মাইণ্ড করেনা। বরং বেশ উপভোগ করে। মিতা দাঁড়িয়ে আছে দেখে রাজা ওকে তাড়া লাগায়। “উফ্, এখনো দাঁড়িয়ে আছো, বৌদি? ব্রেকফাস্টটা রেডি করো। তা নাহলে কিন্তু আজ না খেয়েই বেরিয়ে যেতে হবে।” মিতা হেসে বলে, “তোরা সবকটা ভাইই একরকমের। নিজেরা দেরী করবি। তারপর আমাকে তাড়া লাগাবি। তুই আয়। আমি ব্রেকফাস্ট টেবিলে দিচ্ছি।” বলে মিতা আর দাঁড়ায় না। দেওরের ঘর থেকে বেরিয়ে চলে আসে। রাজার ঘরের পাশেই বাবার ঘর। দরজাটা বন্ধ করা আছে। মিতা জানে বাবা এই সময় ঘরে নেই। উনি এখন জগিং করে ফিরে এসে বাইরের লনে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। মিতার প্রথম কাজই হল চিনি, দুধ ছাড়া র’ চা করে বাবাকে দেওয়া। একটু দেরী হলেই আর রক্ষে নেই। চা আর খাবেন না। মিলিটারীতে কাজ করে করে ওনার মেজাজটাও মিলিটারী হয়ে গেছে। সবকিছু সময় মেপে, আর বুঝে। এক সেকেণ্ডও এদিক-ওদিক হয় না। ডাইনিং রুমের জানলা দিয়ে মিতা দেখল বাবা বাইরের লনে বসে কাগজ পড়ছেন। মিতা তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে ঢুকে চা বানাতে লেগে গেল। ততক্ষণে বাড়ির কাজের মেয়ে মীরাও চলে এসেছে। মীরা মিতাকে সবকাজেতেই সাহায্য করে। মিতা প্রতিদিনের মত মীরাকে সবার ব্রেকফাস্টটা তৈরী করতে বলে নিজে চা করতে থাকে। চা-টা কাপে ছেঁকে মীরাকে আরেকবার তাড়া দিয়ে ও চায়ের কাপটা নিয়ে বাড়ির সামনে লনে আসে। বাড়িটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা পাঁচিলের পর থেকে বেশ কিছুটা জায়গা বাগান আর লন। সবকিছুই বাবা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করিয়েছেন। তিন ছেলের কাউকেই ওনার তেমন বিশ্বাস নেই। ওনার মতে তিনটেই হোপলেস। লনে তিন-চারটে চেয়ার আর একটা বেতের সেন্টার টেবিল আছে। প্রতিদিন জগিং সেরে সুরেশ্বরবাবু লনে এসে বসে খবরের কাগজ পড়েন। তারপর বউমার হাতের তৈরী চা খেয়ে তবে বাড়িতে ঢোকেন। মিতা শাড়ির আঁচলটা দিয়ে পিঠ আর মাথাটা ঢেকে বাবার কাছে এসে দাঁড়ায়। বলে, “বাবা, আপনার চা।” সুরেশ্বরবাবু বউমার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “লাটসাহেবরা সব ঘুম থেকে উঠেছেন।” মিতা হেসে বলে, “উঠেছে। দুজনেই তৈরী হচ্ছে। আপনি চা-টা খেয়ে আসুন বাবা। আমি মীরাকে নিয়ে ব্রেকফাস্টটা দিচ্ছি।” সুরেশ্বরবাবু বলেন, “তুমি যাও, আমি আসছি।” মিতা আর দাঁড়ায় না। এখন ওর হাতে একটুও সময় নেই।
We use essential cookies to make this site work, and optional cookies to enhance your experience.