লং কোভিড শব্দটি এখন বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। করোনায় সংক্রমিত রোগী সুস্থ হওয়ার পরও বেশ কিছুদিন কিছু উপসর্গে ভুগতে থাকেন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষের গবেষণা অনুযায়ী, এসব উপসর্গের মধ্যে দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, শরীরব্যথা, কাশি, ক্ষুধামান্দ্য, অনিদ্রা, মাথাব্যথা, বুকব্যথা, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার এবং মনোযোগে সমস্যা, ভুলে যাওয়ার সমস্যা ইত্যাদি অন্যতম। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ১১ সপ্তাহ পর্যন্ত এসব সমস্যা স্থায়ী হলে তাকে ‘পোস্ট অ্যাকিউট কোভিড’ এবং ১২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় স্থায়ী হলে তাকে ‘লং কোভিড’ নামে ডাকা হয়।
লং কোভিডের পরিসংখ্যান
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিতে লং কোভিডে ১০-১১ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে সিআরপি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্টের সমন্বিত গবেষণায় দেখা গেছে, এ দেশে করোনায় সংক্রমিত ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীর লং কোভিড উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই রোগীদের দুই-তৃতীয়াংশ শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ব্যথায় ভুগছেন এক-তৃতীয়াংশ। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, ক্ষুধামান্দ্য, অনিদ্রা, মাথাব্যথা, বুকব্যথা ও স্বাদ বা গন্ধ কমে যাওয়া। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই পুরুষ হলেও লং কোভিডে নারীরা বেশি ভুগছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে ৩১-৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি।
লং কোভিডের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি
চিকিৎসাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়, দুই লাখের বেশি মানুষের ওপর করা জরিপে দেখা গেছে, কোভিডের পর ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি রোগসহ স্ট্রোকের হার বেড়ে যাচ্ছে। কাজেই লং কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ও চিকিলং কোভিডে করণীয়
- লং কোভিডে জনসচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এর জন্য ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি জরুরি।
- বিভিন্ন দেশে ‘লং কোভিড ক্লিনিকে’ উপসর্গ নিশ্চিত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পুনর্বাসন চিকিৎসা নিশ্চিত করার সুপারিশও করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুনর্বাসন চিকিৎসক দলে ফিজিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট, সাইকোলজিস্টসহ মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি টিম কাজ করেন।
- আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নির্দেশিকায় লং কোভিড সময়ে ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, ইতিবাচক চিন্তা ও পর্যাপ্ত ঘুমের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যথাজনিত উপসর্গ, শারীরিক অবসাদ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে চেস্ট ফিজিওথেরাপি, অ্যারোবিক এক্সারসাইজ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট নির্দেশিত থেরাপি কার্যকরী চিকিৎসা।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা লং কোভিডে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ‘মাইন্ডফুলনেস’ চর্চা করার পরামর্শ দিয়েছে।
- বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) সাভার ও মিরপুর কেন্দ্রে ‘লং কোভিড পুনর্বাসন সেবা’ চালু রয়েছে।ৎসা প্রস্তুতি রাখা জরুরি।
* কে এম এমরান হোসেন,প্রভাষক, বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই)