What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কুলখানিঃ এক বর্বর রেওয়াজের আখ্যান (1 Viewer)

WhisperBD

Expert Member
Joined
Jul 24, 2024
Threads
72
Messages
1,902
Credits
16,205
কারো মৃত্যুর তিন দিনের মধ্যে তার নামে কুলখানি খাওয়ানোর একটা বর্বর রেওয়াজ এই উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত আছে। এর পেছনে হাদিস-কুরআনসিদ্ধ কোনো ভিত্তি আছে বলে খোঁজ পাইনি। ইউটিউব খুঁজে দেখেছি বেশ কয়েকজন মাওলানাও এই কুলখানিপ্রথার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, এ ধরনের আয়োজনকে নিরুৎসাহিত করেছেন, ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিহতও করতে বলেছেন।

কুলখানির কোনো ধর্মীয় ভিত্তি আছে কি না, তা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব হলেও এর বিপক্ষে আমার ব্যক্তিগত অবস্থান সুস্পষ্ট। একজন ব্যক্তির মৃত্যু তার স্বজনদের জন্য অবিসংবাদিতভাবেই অপূরণীয় এক ক্ষতি। পিতৃবিয়োগ, মাতৃবিয়োগ বা প্রিয়জন বিয়োগের পরবর্তী অব্যবহিত কয়েকটি দিন সন্তান বা আপনজনদের কেমন কাটে, কষ্টের কারবালা কীভাবে আপাদমস্তক রক্তাক্ত করে, বেদনার বিদ্যুৎপ্রবাহ কীভাবে চোখদেরকে স্পৃষ্ট করে, মস্তিষ্ক কীভাবে কতটা অসাড় হয়, শরীরের অঙ্গেরা কতটা অঙ্গার হয়, সশব্দ চিৎকারেরা নিঃশব্দে মিলিয়ে গেলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হয়; এ কেবল তারাই জানেন, যাদের বাবা, মা বা প্রিয়জন মারা গিয়েছেন।

এমন ট্রাজেডির পর ফোলা চোখ স্বাভাবিক হতেই যেখানে দেড়-দুই সপ্তাহ কেটে যায়, ক্ষুধামন্দা সারতেই যেখানে অন্তত একমাস লেগে যায়, অনির্দিষ্ট কালজুড়ে যেখানে চোখজুড়ে সেঁটে থাকে কাঁচা কবরের ছবি; সেখানে মৃত্যুর বাহাত্তর ঘণ্টা বা চল্লিশ দিনের মধ্যেই হাজার হাজার লোক ডেকে খাওয়ানো, খাওয়ানোর যাবতীয় বন্দোবস্ত করা, এ যেন মৃতের আপনজনদের ওপর সামাজিক নির্যাতনের অসামাজিক স্টিম রোলার।

সদ্য পিতা হারানো একজন পুত্রকে পিতৃবিয়োগের পরদিনই হাটে পাঠিয়ে গরু-ছাগল, চাল-ডাল-মাল কিনতে পাঠানোর মতো নির্মমতা প্রদর্শন বোধহয় কেবল এই উপমহাদেশের মুসলিমদের পক্ষেই সম্ভব!

কুলখানিতে কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করা হবে, কী কী খাওয়ানো হবে, ডালে লবণ কতটা দেওয়া হবে, কাকে কই বসানো হবে, কে কাকে চিবিয়ে খাইয়ে দেবে; সদ্য পিতৃহারা সন্তানটিকে ইত্যাকার সবকিছু সামলেও শেষতক শুনতে হয় সেই চিরাচরিত বাক্য - গোশতের টুকরোগুলো একটু ছোট হয়েছে, ডালটাও আরেকটু ঘন হলে খেতে ভালো লাগত, ফিরনিতে চিনি বেশি হয়ে গেছে। সমাজের ধূর্ত, রুক্ষ, বিবেকবর্জিত লোকজনের একাংশ এভাবেই কুলখানির খাবারেও ত্রুটি খুঁজে বের করবেই। বিয়ে, খতনা, আকিকার সাথে কুলখানির কোনো তফাৎ এদের কাছে নেই। অন্য আয়োজনগুলোর মতো কুলখানিও এদের কাছে নিছকই এক আনন্দ উৎসব।

সমাজের লোকজনের একাংশ যেন অপেক্ষায়ই থাকে মানুষের মৃত্যুর জন্য। মৃত্যু হলেই কুলখানি হবে, কুলখানিতে মাংস-মিশ্রিত ডাল খাওয়া যাবে, খাওয়ার পরে তোলা যাবে তৃপ্তির ঢেঁকুর। যে হাজার হাজার ব্যক্তি কুলখানিতে খেতে আসে, তাদের কেউই মরহুমের মৃত্যুতে শোকার্ত না; তারা নিছকই ক্ষুধার্ত। শোকার্ত কেবল ওই কজন, আপনজন বিয়োগের পর চোখ মোছারও সময় না পেয়ে যাদেরকে নেমে পড়তে হয় মৃত্যু-উৎসবে যোগ দিতে আসা অনাহূত অবিবেচকদের রসনা-রঞ্জনে।

কুলখানিতে কারা কত মানুষকে খাওয়াতে পারে, এমনও একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা যুগ-যুগ ধরে উপমহাদেশীয় মুসলিমদের মধ্যে লক্ষণীয়। প্রয়াত ব্যক্তিটি অসুস্থ থাকাকালে কারো টিকিটিরও দেখা পাওয়া না গেলেও, চিকিৎসায় কারো সহযোগিতা না পাওয়া গেলেও কুলখানিতে নিমন্ত্রণ না পেলে 'অতি দূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা' গোত্রের স্বজনরা গোস্বা করে থাকেন এবং এই গোস্বাতাণ্ডবের যাবতীয় চাপ এসে পিষে দিয়ে যায় সদ্য এতিম হওয়া মানুষদেরকে।

এমন না যে, কেউ ভাতের অভাবে কুলখানি খেতে আসেন; কিন্তু কুলখানিতে নিমন্ত্রণ পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে সৃষ্ট বিবাদের রেষ বয়ে বেড়াতে হয় বছরের পর বছর। শুনেছি গ্রামাঞ্চলে ইদানীং কোনো ভিখিরি মারা গেলে তার নামেও নাকি পাঁচ-সাতশো লোককে খাওয়ানো হয়। আজকাল ভিখিরির সন্তানরাও এত বড় আয়োজনের আর্থিক সক্ষমতা রাখেন। আর একটু সামর্থবান হলে তো কথাই নেই। শ’-হাজারখানেক মানুষ এসে গোশত-ডাল খেয়ে যান, গরুর হাড় চিবিয়ে অবশেষে তাদের হাড় জুড়োয়।

কিন্তু জানি না ওই হাজার ব্যক্তির মধ্যে ক’জন প্রয়াত ব্যক্তির কবরটা জিয়ারত করে যান! আর ক'জনইবা ওই শোকাহত মানুষগুলোকে শক্তি-সাহস-ভরসা যোগান!

(তথ্যসূত্র: বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহিত, সংকলিত ও পরিমার্জিত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top