সুস্বাস্থ্যই সব সুখের মূল। এটি একটি প্রচলিত প্রবাদ। আর আজকের দিনে মানুষ যেন একটু বেশিই স্বাস্থ্যসচেতন। অবশ্য স্বাস্থ্যসচেতন না বলে ফিগার–সচেতন বলা উচিত। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ফিগার নিয়ে একটু বেশিই সতর্ক থাকেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, অনেকেই সুস্বাস্থ্য রক্ষার নামে একটু বেশিই অসচেতন হয়ে যান, আর নিজের অজান্তেই নিজের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেন। স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলার একটি অন্যতম পন্থা হলো ক্র্যাশ ডায়েট। খুব কম পরিমাণে খেয়ে দ্রুত ওজন কমানোর পদ্ধতিই ক্র্যাশ ডায়েট নামে পরিচিত।
ক্র্যাশ ডায়েট জনপ্রিয় হলেও এটা বিপজ্জনক ডায়েট হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপনে মানুষকে জানানো হয়, সপ্তাহে ৩–৫ কেজি অথবা মাসে ১০–১২ কেজি ওজন কমানো যায়। এটি আসলে খুবই বিপজ্জনক।
খাদ্য হচ্ছে মানবদেহের জ্বালানি, প্রতিদিন আমাদের শরীরে খাদ্যের একটা নির্দিষ্ট চাহিদা থাকে। প্রতিদিন আমরা যে খাদ্য খাই, সেখান থেকেই আমরা আমাদের শরীরে শক্তি পাই। আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খান, তাহলে আপনার ওজন কমে যাবে, আবার যদি বেশি খান, তাহলে ওজন বেড়ে যাবে। ওজন কমানোর জন্য অবশ্যই খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে, তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট নিয়মে। ওজন কমানোর জন্য দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে প্রতিদিন ২৫০-৪০০ কিলোক্যালরি খাবার কম খেতে হবে।
হয়তো কারও ওজন একটু বেশি। ফলে তাঁর প্রতিদিন হয়তো ২ হাজার ২০০ কিলোক্যালরি খাবার প্রয়োজন। এখন ওজন কমাতে চাইলে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরি খাবার গ্রহণ করতে হবে। ওজন বাড়াতে সহায়ক খাবার, যেমন তেল, চর্বিজাতীয় খাবার, সরল কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। মিষ্টি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, আইসক্রিম, চকলেট, কোমল পানীয় ইত্যাদি বর্জন করতে হবে। প্রতিদিন একবেলা হাঁটার বা অন্য কোনো ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে।
সবকিছু খেতে হবে সঠিক নিয়মে
সারা দিনের খাবারকে পাঁচ–ছয়বারে ভাগ করে খেতে হবে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাটের অনুপাত ঠিক রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, প্রয়োজনে একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া হলে দেখা যাবে, মাসে পাঁচ–ছয় কেজি ওজন খুব সহজেই কমে যাচ্ছে। এতে শরীরের ওপরেও কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ক্র্যাশ ডায়েটের নামে অভুক্ত থাকলে শরীরে কিছু খারাপ প্রভাব দেখা দিতে পারে।
ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন দ্রুত কমবে ঠিকই, কিন্তু এর প্রভাবে শরীরের পুষ্টিঘাটতি প্রকট আকারে দেখা দেবে। অনেক সময় দেখা যায়, ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ হয় ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী সময়ে খুব কম সময়ের মধ্যে আবার আগের হারানো ওজন ফিরে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওজন আগের ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে।
কোমল পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে
তবে বিশেষ কারণে দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে ক্র্যাশ ডায়েট করতে পারেন। যেমন আপনি হয়তো কোনো পার্টিতে যাবেন, সে ক্ষেত্রে কিছুদিনের জন্য ক্র্যাশ ডায়েট করা যায়। তবে এই ডায়েট পদ্ধতি কোনোভাবেই ১৫ দিনের বেশি স্থায়ী হওয়া উচিত নয়। খুব বেশি দিন এ ধরনের ডায়েট মেনে চলতে গেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সঙ্গে কিছু বাহ্যিক সমস্যাও দেখা যায়। যেমন মাথাঘোরা, ঘুম না হওয়া, পেশিক্ষয়, শারীরিক দুর্বলতা ও মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কাজকর্মে উৎসাহ না পাওয়া, সবকিছুতে আগ্রহ হারানো, হজমে গন্ডগোল ও পেটে ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেওয়া, চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হওয়া, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপ দেখা দেওয়াসহ আরও অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্র্যাশ ডায়েট ব্যাঘাত ঘটনায নিদ্রায়
এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, ক্র্যাশ ডায়েটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। একান্ত জরুরি না হলে ক্র্যাশ ডায়েট করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখতে হবে, এটা সব সময়ের ডায়েট হতে পারে না। ক্র্যাশ ডায়েট একান্তই করতে চাইলে অবশ্যই একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে শুরু করতে হবে।
লেখক: মো. ইকবাল হোসেন | পুষ্টিবিদ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
ক্র্যাশ ডায়েট জনপ্রিয় হলেও এটা বিপজ্জনক ডায়েট হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপনে মানুষকে জানানো হয়, সপ্তাহে ৩–৫ কেজি অথবা মাসে ১০–১২ কেজি ওজন কমানো যায়। এটি আসলে খুবই বিপজ্জনক।
খাদ্য হচ্ছে মানবদেহের জ্বালানি, প্রতিদিন আমাদের শরীরে খাদ্যের একটা নির্দিষ্ট চাহিদা থাকে। প্রতিদিন আমরা যে খাদ্য খাই, সেখান থেকেই আমরা আমাদের শরীরে শক্তি পাই। আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খান, তাহলে আপনার ওজন কমে যাবে, আবার যদি বেশি খান, তাহলে ওজন বেড়ে যাবে। ওজন কমানোর জন্য অবশ্যই খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে, তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট নিয়মে। ওজন কমানোর জন্য দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে প্রতিদিন ২৫০-৪০০ কিলোক্যালরি খাবার কম খেতে হবে।
হয়তো কারও ওজন একটু বেশি। ফলে তাঁর প্রতিদিন হয়তো ২ হাজার ২০০ কিলোক্যালরি খাবার প্রয়োজন। এখন ওজন কমাতে চাইলে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরি খাবার গ্রহণ করতে হবে। ওজন বাড়াতে সহায়ক খাবার, যেমন তেল, চর্বিজাতীয় খাবার, সরল কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। মিষ্টি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, আইসক্রিম, চকলেট, কোমল পানীয় ইত্যাদি বর্জন করতে হবে। প্রতিদিন একবেলা হাঁটার বা অন্য কোনো ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে।
সবকিছু খেতে হবে সঠিক নিয়মে
সারা দিনের খাবারকে পাঁচ–ছয়বারে ভাগ করে খেতে হবে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাটের অনুপাত ঠিক রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, প্রয়োজনে একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া হলে দেখা যাবে, মাসে পাঁচ–ছয় কেজি ওজন খুব সহজেই কমে যাচ্ছে। এতে শরীরের ওপরেও কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ক্র্যাশ ডায়েটের নামে অভুক্ত থাকলে শরীরে কিছু খারাপ প্রভাব দেখা দিতে পারে।
ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন দ্রুত কমবে ঠিকই, কিন্তু এর প্রভাবে শরীরের পুষ্টিঘাটতি প্রকট আকারে দেখা দেবে। অনেক সময় দেখা যায়, ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ হয় ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী সময়ে খুব কম সময়ের মধ্যে আবার আগের হারানো ওজন ফিরে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওজন আগের ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে।
কোমল পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে
তবে বিশেষ কারণে দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে ক্র্যাশ ডায়েট করতে পারেন। যেমন আপনি হয়তো কোনো পার্টিতে যাবেন, সে ক্ষেত্রে কিছুদিনের জন্য ক্র্যাশ ডায়েট করা যায়। তবে এই ডায়েট পদ্ধতি কোনোভাবেই ১৫ দিনের বেশি স্থায়ী হওয়া উচিত নয়। খুব বেশি দিন এ ধরনের ডায়েট মেনে চলতে গেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সঙ্গে কিছু বাহ্যিক সমস্যাও দেখা যায়। যেমন মাথাঘোরা, ঘুম না হওয়া, পেশিক্ষয়, শারীরিক দুর্বলতা ও মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কাজকর্মে উৎসাহ না পাওয়া, সবকিছুতে আগ্রহ হারানো, হজমে গন্ডগোল ও পেটে ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেওয়া, চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হওয়া, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপ দেখা দেওয়াসহ আরও অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্র্যাশ ডায়েট ব্যাঘাত ঘটনায নিদ্রায়
এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, ক্র্যাশ ডায়েটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। একান্ত জরুরি না হলে ক্র্যাশ ডায়েট করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখতে হবে, এটা সব সময়ের ডায়েট হতে পারে না। ক্র্যাশ ডায়েট একান্তই করতে চাইলে অবশ্যই একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে শুরু করতে হবে।
লেখক: মো. ইকবাল হোসেন | পুষ্টিবিদ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল