সাবিরা আলম (ছদ্মনাম)। একজন শিক্ষার্থী। তাঁর বয়স ২২ বছর। ৪ মাস আগে তিনি আক্রান্ত হন করোনায়। করোনা হলেও সে মাসে তাঁর পিরিয়ড সঠিক সময়েই হয়েছিল। কিন্তু পরের মাস থেকেই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগছেন তিনি।
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় পিরিয়ড হওয়ার অভিজ্ঞতা বললেন কান্তা (ছদ্মনাম)। করোনার নানা রকম সমস্যার পাশাপাশি পিরিয়ডে রক্তপাত ছিল অনিয়মিত। এ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে অনেক বেশি দুর্বলতা ও পেটে ব্যথার সমস্যা হয়েছিল তাঁর।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী সময়ে দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন শারীরিক সমস্যা। তবে করোনা মহামারির নানা রকম সমস্যা থাকলেও পিরিয়ড কিন্তু বন্ধ হয়নি। তার ওপর করোনার কারণে পিরিয়ডের সাধারণ সমস্যাগুলো এখন আরও বেড়েছে।
এমনকি পরিবর্তন এসেছে মাসিক চক্রে বা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলেও। করোনার সময় অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার বা সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে, তাই মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন রক্ষা করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার সব থেকে কার্যকর, বললেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী। করোনাকালে ও করোনা-পরবর্তী পিরিয়ড-সমস্যা নিয়ে জেনে নেওয়া যাক তাঁর কিছু পরামর্শ।
বেশি রক্তপাত হলে
করোনাকালে বা তার পরবর্তী সময়ে পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে অবশ্যই খেতে হবে আয়রন ট্যাবলেট। এতে রক্ত যাওয়ার ক্ষতি অনেকটা পূরণ হবে। অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতে ৫ দিন ৩ বেলা খেতে হবে ট্রানেকজামিক অ্যাসিড ৫০০ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া করোনার পরে লম্বা একটা সময় চিকিৎসক কিছু মাল্টিভিটামিন ও জিংক ট্যাবলেট খেতে দেন। এই ওষুধগুলোও চালিয়ে যেতে হবে। এতে পিরিয়ডের দুর্বলতা অনেকটাই কমবে জানালেন ডা. মুনিরা ফেরদৌসী। তবে বেশি রক্ত গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পেটে ব্যথায়
পিরিয়ডের সময়ে পেটে ব্যথা অস্বাভাবিক নয়। তবে করনাকালে ও পরবর্তী সময়ে পিরিয়ডে পেটে ব্যথার তীব্রতা থাকে বেশি। সে ক্ষেত্রে খেতে হবে মেফেনেমিক অ্যাসিড ৫০০ মিলিগ্রাম। ওষুধটি ভরা পেটে সকালে ও রাতে ৫ দিন খাওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।
এ ছাড়া করোনাকালে ও পরবর্তী সময়ে পিরিয়ডে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সমস্যার সমাধান নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে চিকিত্সকদের পরামর্শ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, করোনাকালে ও পরবর্তী সময়ে স্ট্রেস ও উদ্বেগ থেকে অনিয়মিত পিরিয়ড, রক্ত অতিরিক্ত যাওয়া বা কম যাওয়া, দুর্বলতা প্রভৃতি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যাগুলো কমাতে বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ, যা পিরিয়ডের সঙ্গে যুক্ত এমন শারীরিক সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।
ইতিবাচক ভাবনা
ইতিবাচক ভাবনা শরীরে হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে। করোনার সময়ে বা পরে খুব বেশি উদ্বেগ বা মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না। এটি মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে পরিবর্তন আনতে পারে।
মেডিটেশন
মেডিটেশনে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি আসে। করোনার সময়ে চিকিৎসকেরা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম দিয়ে থাকেন। মেডিটেশনেও রয়েছে শ্বাসের ব্যায়াম, যা মনকে শান্ত রাখে।
ব্যায়াম
করোনা হলেও চিকিৎসকেরা হালকা ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে পিরিয়ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমস্যাগুলোরও সমাধান আসবে।