প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাতাস ভারী হয়ে চলেছে। এর মধ্যেই বাঁচতে হচ্ছে তাদের। সেই কষ্ট চেপে বসছে। কিন্তু জীবনের চলমানতাকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সেই ভার লাঘবের। মনের ওপর কারও হাত হয়তো নেই। তবু তাঁকে ভেবে, স্মৃতি সজীব করেই মনকে থিতু করতে হবে।
কবি জীবনানন্দ দাশ ‘মানুষের মৃত্যু হলে’ কবিতায় লিখেছেন ‘মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব/ থেকে যায়; অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে/ প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে।/ আজকের আগে যেই জীবনের ভিড় জমেছিলো/ তা’রা ম’রে গেছে;/ প্রতিটি মানুষ তার নিজের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে/ অন্ধকারে হারায়েছে’।
করোনা অতিমারিতে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে মানুষ। কবিতার মতোই যেন চির–অন্ধকারেই হারিয়ে যাচ্ছে তারা প্রিয়জনদের ছেড়ে চিরতরে। পরিস্থিতির কারণে শেষবিদায় বলার কিংবা শেষ দেখার সুযোগও অনেক সময় মেলে না। আবার করোনায় আক্রান্ত এই প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে সবার যে আকুল চেষ্টা, তা–ও বৃথা যায়। বরং তাকে হারিয়ে ফেলার সে অভিজ্ঞতা যার আছে সেই শুধু বুঝে, কী বেদনা, কী দুঃখ আর হাহাকার ভিড় করে মনে।
করোনায় অকালেই পরিবারের প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েও শোকাতুর হওয়ার সুযোগই–বা কই। জীবন তো বহমান। সময়ের স্রোতে ভাসতে যে হবেই। করোনাকালে কাছের মানুষের কঠিন মৃত্যুতে আপনার মানসিক কষ্ট আর বিষাদ কাটিয়ে ওঠার শক্তি আর সাহস জোগাবে হয়তো এই বিষয়গুলো।
নিজেকে দোষারোপ না করা
প্রাকৃতিক নিয়মে সবাইকে একদিন চলে যেতেই হয়। করোনায় অকালেই চলে যাওয়া প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে আপনি হয়তো সাধ্যের সবটুকুই করেছেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর নিজেকেই হয়তো দায়ী করছেন, ভাবছেন হয়তো আরও কিছু কেন করতে পারলাম না। এমনটা করলে আপনি নিজের জন্য পরিস্থিতি আরও ঘোলাটেই করে তুলবেন। মনে রাখতে হবে, অতিমারিকালে কোনো কিছুই নিয়ম মেনে সঠিকভাবে ঘটে না। ফলে নিজেকে দোষারোপ না করে বরং এমন সময়েও নিজের জীবন বাজি রেখে আপনি সবটাই করেছেন ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে হবে।
অপ্রত্যাশিত বিষয়কে মেনে নিতে শেখা
প্রতিটি মৃত্যুই অপ্রত্যাশিত। আর সে মৃত্যু যদি অপ্রত্যাশিতভাবে কিংবা দুঃখজনকভাবে হয়, তবে কষ্টের পরিমাপ করা অসম্ভবই প্রায়। এ মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু এবং এই সময়কে মেনে নিতে মনের সঙ্গে বোঝাপড়ায় নামতে হবে। মন থেকে নেতিবাচক আবেগগুলো দূরে সরানোর চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। কথা বলতে হবে নিজের মনের অবস্থা নিয়ে। কান্না কিংবা শোকাতুর হয়ে দিনাতিপাত যে কোনো সমাধান নয়, নিজেকে বোঝান সেটা।
মনের ক্ষত সেরে ওঠার জন্য সময় দেওয়া
করোনায় মৃত্যুতে প্রিয়জনকে শেষ দেখা বা তার পাশে থাকার সুযোগ কমই থাকে। একে তো প্রিয়জন হারানোর শোক, তার ওপর তাকে শেষ দেখা বা বিদায় বলারও সুযোগ নেই। এমন গুমোট আর অস্থির সময়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলতে, মনের ক্ষত সারিয়ে তুলতে নিজেকে আরও বেশি সময় দেওয়ার বিকল্প নেই। নিজের সঙ্গে কথা বলতে হবে। নিজের ভালো লাগে এমন কিছু কাজ করতে হবে। পড়তে বা শুনতে হবে। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে অন্য কিছুতে। তবেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
প্রিয় মানুষটির প্রিয় জায়গা থেকে ঘুরে আসা
এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ঠিক রাখতে সুযোগ হলে ঘুরে আসা যেতে পারে কোথাও থেকে; সেটা হতে পারে হারিয়ে ফেলা প্রিয় স্বজনের পছন্দের জায়গা। সেখানে গিয়ে নিজেকে হালকা করে তোলা যাবে। কারণ, সেখানে গিয়ে তার কথা ভাবা এবং তার স্মৃতিময় বিষয়ের সঙ্গে সময় কাটানো। কিছুটা স্মৃতিমেদুর হওয়া। এসবই মনের ভার লাঘব করবে।
তাকে স্মরণ করা, অন্য উপায়ে
যার হারায় সেই জানে, হারানোর বেদনা কতটা কঠিন। তাই চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলা মানুষটিকে স্মরণ করা, অন্যভাবে। তার জন্য আয়োজন করা যেতে পারে স্মরণ অনুষ্ঠান। এখানে রাখা যেতে পারে তার বন্ধুদের, কাছের মানুষদের, নিকট আত্মীয়দের। তারা ওই মানুষকে নিয়ে বলতে পারে নিজের অনুভূতির কথা, তার নানা স্মৃতি স্মরণ করতে পারেন তারা। এর মধ্যে দিয়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষটিকে আবিষ্কার করা যাবে নতুনভাবে।
তার স্মৃতির কথা ভাবা
ভালোবাসার কিংবা প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে জমা হয়ে থাকে অজস্র স্মৃতি। এসব স্মৃতির আবেগ অমূল্য। কাছের মানুষকে হারিয়ে দুঃখের সাগরে হারিয়ে যাওয়ার মানে নেই। কারণ, আপনার কাছে আছে তার অনেক সুন্দর স্মৃতি। এই স্মৃতিগুলো স্মরণ করে ভাবতে হবে তিনি হারিয়ে যায়নি। তিনি আছেন সর্বদা আপনার অন্তরের মণিকোঠায়। তার ছবি, তার ব্যবহৃত জিনিস—আসবাব, ব্যক্তিগত ডায়েরি, পোশাক এসবের মধ্যে কিছু নিজের কাছে রেখে দেওয়া। তার নানান স্মৃতির সঙ্গে মেতে উঠে কাটিয়ে উঠতে হবে শোক।
তার কথা ভেবেই ভালো থাকার চেষ্টা করা
জীবন চলমান। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে বর্তমান সময়কে অপচয় না করে বরং তার কথা ভেবে, তার জন্যই আরও ভালোভাবে জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা। কারণ, নিজে ভালো থাকলেই সেই মানুষটি বেঁচে থাকাকালে যতটা খুশি হতো, অন্য কোথাও না থেকেও আপনার অবস্থায় তিনি নিশ্চয়ই অখুশি হবেন না। ফলে তার জন্যই বাঁচতে হবে। আনন্দ আর খুশি মনে থাকতে হবে।
* মো. আবদুল্যা আল মামুন
কবি জীবনানন্দ দাশ ‘মানুষের মৃত্যু হলে’ কবিতায় লিখেছেন ‘মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব/ থেকে যায়; অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে/ প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে।/ আজকের আগে যেই জীবনের ভিড় জমেছিলো/ তা’রা ম’রে গেছে;/ প্রতিটি মানুষ তার নিজের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে/ অন্ধকারে হারায়েছে’।
করোনা অতিমারিতে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে মানুষ। কবিতার মতোই যেন চির–অন্ধকারেই হারিয়ে যাচ্ছে তারা প্রিয়জনদের ছেড়ে চিরতরে। পরিস্থিতির কারণে শেষবিদায় বলার কিংবা শেষ দেখার সুযোগও অনেক সময় মেলে না। আবার করোনায় আক্রান্ত এই প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে সবার যে আকুল চেষ্টা, তা–ও বৃথা যায়। বরং তাকে হারিয়ে ফেলার সে অভিজ্ঞতা যার আছে সেই শুধু বুঝে, কী বেদনা, কী দুঃখ আর হাহাকার ভিড় করে মনে।
করোনায় অকালেই পরিবারের প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েও শোকাতুর হওয়ার সুযোগই–বা কই। জীবন তো বহমান। সময়ের স্রোতে ভাসতে যে হবেই। করোনাকালে কাছের মানুষের কঠিন মৃত্যুতে আপনার মানসিক কষ্ট আর বিষাদ কাটিয়ে ওঠার শক্তি আর সাহস জোগাবে হয়তো এই বিষয়গুলো।
নিজেকে দোষারোপ না করা
প্রাকৃতিক নিয়মে সবাইকে একদিন চলে যেতেই হয়। করোনায় অকালেই চলে যাওয়া প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে আপনি হয়তো সাধ্যের সবটুকুই করেছেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর নিজেকেই হয়তো দায়ী করছেন, ভাবছেন হয়তো আরও কিছু কেন করতে পারলাম না। এমনটা করলে আপনি নিজের জন্য পরিস্থিতি আরও ঘোলাটেই করে তুলবেন। মনে রাখতে হবে, অতিমারিকালে কোনো কিছুই নিয়ম মেনে সঠিকভাবে ঘটে না। ফলে নিজেকে দোষারোপ না করে বরং এমন সময়েও নিজের জীবন বাজি রেখে আপনি সবটাই করেছেন ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে হবে।
অপ্রত্যাশিত বিষয়কে মেনে নিতে শেখা
প্রতিটি মৃত্যুই অপ্রত্যাশিত। আর সে মৃত্যু যদি অপ্রত্যাশিতভাবে কিংবা দুঃখজনকভাবে হয়, তবে কষ্টের পরিমাপ করা অসম্ভবই প্রায়। এ মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু এবং এই সময়কে মেনে নিতে মনের সঙ্গে বোঝাপড়ায় নামতে হবে। মন থেকে নেতিবাচক আবেগগুলো দূরে সরানোর চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। কথা বলতে হবে নিজের মনের অবস্থা নিয়ে। কান্না কিংবা শোকাতুর হয়ে দিনাতিপাত যে কোনো সমাধান নয়, নিজেকে বোঝান সেটা।
মনের ক্ষত সেরে ওঠার জন্য সময় দেওয়া
করোনায় মৃত্যুতে প্রিয়জনকে শেষ দেখা বা তার পাশে থাকার সুযোগ কমই থাকে। একে তো প্রিয়জন হারানোর শোক, তার ওপর তাকে শেষ দেখা বা বিদায় বলারও সুযোগ নেই। এমন গুমোট আর অস্থির সময়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলতে, মনের ক্ষত সারিয়ে তুলতে নিজেকে আরও বেশি সময় দেওয়ার বিকল্প নেই। নিজের সঙ্গে কথা বলতে হবে। নিজের ভালো লাগে এমন কিছু কাজ করতে হবে। পড়তে বা শুনতে হবে। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে অন্য কিছুতে। তবেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
প্রিয় মানুষটির প্রিয় জায়গা থেকে ঘুরে আসা
এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ঠিক রাখতে সুযোগ হলে ঘুরে আসা যেতে পারে কোথাও থেকে; সেটা হতে পারে হারিয়ে ফেলা প্রিয় স্বজনের পছন্দের জায়গা। সেখানে গিয়ে নিজেকে হালকা করে তোলা যাবে। কারণ, সেখানে গিয়ে তার কথা ভাবা এবং তার স্মৃতিময় বিষয়ের সঙ্গে সময় কাটানো। কিছুটা স্মৃতিমেদুর হওয়া। এসবই মনের ভার লাঘব করবে।
তাকে স্মরণ করা, অন্য উপায়ে
যার হারায় সেই জানে, হারানোর বেদনা কতটা কঠিন। তাই চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলা মানুষটিকে স্মরণ করা, অন্যভাবে। তার জন্য আয়োজন করা যেতে পারে স্মরণ অনুষ্ঠান। এখানে রাখা যেতে পারে তার বন্ধুদের, কাছের মানুষদের, নিকট আত্মীয়দের। তারা ওই মানুষকে নিয়ে বলতে পারে নিজের অনুভূতির কথা, তার নানা স্মৃতি স্মরণ করতে পারেন তারা। এর মধ্যে দিয়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষটিকে আবিষ্কার করা যাবে নতুনভাবে।
তার স্মৃতির কথা ভাবা
ভালোবাসার কিংবা প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে জমা হয়ে থাকে অজস্র স্মৃতি। এসব স্মৃতির আবেগ অমূল্য। কাছের মানুষকে হারিয়ে দুঃখের সাগরে হারিয়ে যাওয়ার মানে নেই। কারণ, আপনার কাছে আছে তার অনেক সুন্দর স্মৃতি। এই স্মৃতিগুলো স্মরণ করে ভাবতে হবে তিনি হারিয়ে যায়নি। তিনি আছেন সর্বদা আপনার অন্তরের মণিকোঠায়। তার ছবি, তার ব্যবহৃত জিনিস—আসবাব, ব্যক্তিগত ডায়েরি, পোশাক এসবের মধ্যে কিছু নিজের কাছে রেখে দেওয়া। তার নানান স্মৃতির সঙ্গে মেতে উঠে কাটিয়ে উঠতে হবে শোক।
তার কথা ভেবেই ভালো থাকার চেষ্টা করা
জীবন চলমান। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে বর্তমান সময়কে অপচয় না করে বরং তার কথা ভেবে, তার জন্যই আরও ভালোভাবে জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা। কারণ, নিজে ভালো থাকলেই সেই মানুষটি বেঁচে থাকাকালে যতটা খুশি হতো, অন্য কোথাও না থেকেও আপনার অবস্থায় তিনি নিশ্চয়ই অখুশি হবেন না। ফলে তার জন্যই বাঁচতে হবে। আনন্দ আর খুশি মনে থাকতে হবে।
* মো. আবদুল্যা আল মামুন