কলেজের প্রথম বর্ষ শিক্ষার্থীদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া; সেই সঙ্গে একটু একটু করে নিজের দায়িত্ব নিতে শেখা—এই দীক্ষা তো কলেজজীবনেই শুরু হয়। ২০২০ সালে যারা উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে, কলেজে না গিয়েই কেটে যাচ্ছে তাদের কলেজজীবন। রাজশাহীর নিউ গভ. কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা লিখেছে তার অভিজ্ঞতা।
সিদরাতুল মুনতাহা, ছবি: সংগৃহীত
সবকিছু ঠিক থাকলে এখন হয়তো নিজেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিতাম। একসময় যা খুব স্বাভাবিক মনে হতো, সেটাই তো এখন ‘অধীর অপেক্ষার’ বিষয় হয়ে গেছে। আর অস্বাভাবিকটাই জীবনে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
স্কুলে পড়ার সময় কলেজজীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো কই। এখন যা ঘটছে, সবই তো ছিল কল্পনার বাইরে। অনলাইনে ক্লাস করব, কোনো দিন কি ভেবেছিলাম! শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচয়ও হয়েছে অনলাইনে। কোনো বিষয় বোঝানোর পর শিক্ষকেরা বলেন, ‘কিছু বুঝতে না পারলে কমেন্টে জানাও।’ অথচ সামনে বসে থাকলে শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীর চোখ দেখেই বুঝতে পারেন, আমরা বুঝতে পারছি কি না। এখন তো আর সে উপায় নেই।
নতুন নতুন সবকিছুই ভালো লাগে। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। মেসেঞ্জারে স্টাডি গ্রুপ, অনলাইন ক্লাসে কমেন্ট করা, কিছু না বুঝলে গ্রুপে পোস্ট করা, অনলাইনে নতুন বন্ধু হওয়া, শুরুতে এসবের মধ্যেও এক রকম রোমাঞ্চ ছিল। কিন্তু এখন মনে হয়, এই সবকিছুতেই কেমন যেন একটা কৃত্রিমতা।
কলেজে গিয়ে ক্লাস করতে হলে হয়তো পরিবারের সঙ্গে এতটা সময় কাটাতে পারতাম না। এটা ঠিক। তবু আমরা আগের স্বাভাবিক জীবনটাই ফিরে পেতে চাই। মাঝেমধ্যে ভয় হয়, আদৌ কি কখনো কলেজে যেতে পারব?
বিভিন্ন কাজে বা বিশেষ দিবসে কলেজে গিয়েছি। কিন্তু কলেজ ড্রেস পরে কলেজে যাওয়া হয়নি। সেই অপেক্ষায় আছি। কলেজে গিয়ে ক্লাস করা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, কলেজের মাঠে বসে একসঙ্গে গান গাওয়া, বই-খাতা–ব্যাগ নিয়ে ইউনিফর্ম পরে কলেজে যাওয়া, এই সবই এখন অনেক দূরের স্বপ্ন মনে হয়।
* সিদরাতুল মুনতাহা