What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হঠাৎ করেই হলো by Neellohit (4 Viewers)

[HIDE]

ফ্ল্যাটে ঢোকার সময় দেখলাম চিত্রার ফ্ল্যাটের দরজাটা বন্ধ , আমি নিজের ঘরে ঢুকে পুপুকে ফোন করলাম , ও বললো কলকাতায় খুব বৃষ্টি হচ্ছে ওরও শরীরটা খারাপ মাথাব্যথা সামান্য জ্বরও আছে '' রুপুকে বলেছিস ?'' '' হ্যাঁ ও এসেছিলো একটা ওষুধ দিয়েছে একটা খেয়েছি আরেকটা রাতে খেয়ে খাবো '' '' জ্বর কত দেখেছিস ?'' '' ১০১ লাস্ট দেখলাম সন্ধ্যায় '' '' ওষুধ খেয়ে কমেনি জ্বরটা ?'' ''একটু কমেছে , রুপু বললো একবারে কমানোর মতো কড়া ওষুধ দেওয়া যাবেনা '' '' আচ্ছা আমি কালই আসছি '' '' এতো টেনশন করিসনা বাবু আমি ঠিক আছি হয়তো বৃষ্টিতে একটু ঠান্ডা লেগেছে '' '' ঠিক আছে মাকে ফোনটা দে তো '' মা ফোন ধরলো '' বল '' '' পুপু কি বৃষ্টিতে ভিজেছিলো ? '' '' না না দুদিন ধরে একটু সর্দি আর গলা ব্যাথা সাথে বমিভাব ছিল তা এইসময় বমিভাব থাকে , তুই চিন্তা করিসনা বাবা রুপু আর সুধীর এসে দেখে গ্যাছে '' '' হুমম আচ্ছা রাখছি '' ফোনটা কেটে আমি রুপুকে ফোন করলাম , রুপু বললো '' মনে হচ্ছে সর্দি থেকে জ্বরটা এসেছে দেখি কাল যদি জড় না কমে ওকে আমার এখানে ভর্তি করাবো কিছু টেস্ট করাবো '' '' আচ্ছা আমিও কাল আসছি '' আমি একটা ড্রিঙ্কস বানিয়ে ব্যালকনিতে বসলাম , একটু পরে চিত্রা ফোন করলো '' তুই কি ঘরে ?'' '' হ্যাঁ '' '' আমি আসছি '' '' আয় '' একটু পরেই দরজায় নক করতে আমি দরজা খুলে দিলাম চিত্রা ঘরে এসেই প্রথম জিজ্ঞেস করলো '' খুব মজা করেছিস দুদিন ?'' আমি ম্লান হাসলাম '' কি হয়েছে রে তোর মুখটা কেমন যেন লাগছে ? '' '' পুপুর খুব শরীরটা খারাপ রে চিত্রাদি '' '' কেন কি হয়েছে ?'' '' জ্বর বমি মাথাব্যথা '' '' ডাক্তার দেখিয়েছে ?'' '' হ্যাঁ আমার শালী আর ওর বর তো ডাক্তার ওরাই দেখছে '' একটু থেমে আবার বললাম কাল যদি জ্বরটা না কমে আমি বিকেলে কলকাতায় যাবো '' '' ঠিক আছে '' '' চিত্রাদি একটা ড্রিংক নিবি ?'' '' হ্যাঁ দে '' আমি ড্রিংক বানিয়ে ওকে দিলাম তারপর দুজনেই ব্যালকনিতে বসলাম পরপর দুতিনটা ড্রিংক শেষ করে চিত্রাদি চলে গ্যালো আমি বসে রইলাম কিছু রান্না করতে ইচ্ছা করছে না গলায় একটা কান্না যেন দলা পাকিয়ে উঠছে , একটু পরে চিত্রা আবার এলো খাবার নিয়ে গ্যালো '' খাবারটা খেয়ে শুয়ে পর চিন্তা করিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে প্রভু জগন্নাথের কৃপায় সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস '' বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই আমি ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম চিত্রা আমার মাথাটা নিজের পেটে চেপে ধরে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো '' এই কাঁদিসনা দেখিস পুপু ঠিক হয়ে যাবে '' | পরেরদিন সকালে বাবা ফোন করে বললো '' শোন পুপুমার জ্বরটা বেড়েছে আমি রুপুকে ফোন করেছি ওরা আসছে ওকে হসপিটালে ভর্তি করবে কিছু চেকাপ এর জন্য তুই কখন আসবি ?'' '' দুপুরের আগে তো কোনো ফ্লাইট নেই প্রথম ফ্লাইটটাই ধরবো '' , অফিসে যেতেই হলো কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে , এর মধ্যেই ফোন এলো সুজয়ের '' জিজু দি'ভাইকে হসপিটালে ভর্তি করা হলো জ্বরটা কমছে না তুই কখন আসছিস ?'' '' আমি তিনটের সময় একটা ফ্লাইট আছে সেটা ধরছি '' '' ওকে সাবধানে আয় টেনশন করিসনা '' রুপুকে ফোন করলাম রুপু বললো '' কাল রাতে জ্বরটা বাড়াতে তোমার বাবা ফোন করেছিলেন ভোর বেলায় আমি আর রিস্ক নিলামনা একটু শ্বাসকষ্টও আছে তাই ভর্তি করিয়েছি অক্সিজেন চলছে স্যালাইন চলছে যাইহোক তুমি এসো আর চিন্তা করোনা আমরা সবাই তো আছি আর আমাদের স্যারকেও কল দিয়েছি উনিও আসছেন '' আমি অফিস থেকে সাড়ে বারোটাতেই বেরিয়ে গেলাম প্রথম ফ্লাইটটা ক্যানসেল হয়েছে পরের ফ্লাইট সাড়ে চারটের সময় , এয়ারপোর্টেই বসে রইলাম একটু পরে পরেই ফোন করে খবর নিচ্ছি রুপুর থেকে রুপু বলছে খুব কিছু ডেভেলপমেন্ট হয়নি , ফ্লাইট ছাড়লো দমদমে নামতেই সুজয়ের ফোন এলো '' জিজু তুই কোথায় ? '' '' দমদমে এখুনি নামলাম পুপু কেমন আছে ?'' '' ওকে আই,সি সি ইউ তে নিয়ে গ্যাছে '' আমার মাথাটা ঘুরছে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে আমি একটা চেয়ারে বসলাম , একটু পরে উঠে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দিলাম উইকডের জ্যাম জট পার করে হসপিটালে পৌঁছতেই সুজয় এগিয়ে এলো ফোনে কাকে যেন বললো জিজু এসে গ্যাছে '' তারপর আমায় নিয়ে লিফটে উঠলো , আই সি সি ইউর সামনে রুপু দাঁড়িয়ে ছিল আমায় বললো '' খুব ক্রিটিকাল অবস্থা মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর তুমি চলো '' আমি জুতোটা খুলে আই সি সি ইউ তে ঢুকে দেখলাম পুপুর সারা মুখটা নীল হয়ে গ্যাছে মুখে অক্সিজেন মাস্ক , নেবুলাইজার চলছে দুটো চোখ বোঁজা আমি পাশে দাঁড়িয়ে আস্তে ডাকলাম '' পুপু '' আস্তেআস্তে চোখ খুললো আমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো আমি ওর হাতটা ধরলাম মৃদু হাসলো আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রইলো হাতটা ধরে পেটের ওপরে রেখে আমার দিকে তাকালো ওর দুচোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো কয়েক মুহূর্ত ওর হাতটা আলগা হয়ে গ্যালো পুপুদুটো চোখ বুঁজলো ঠোঁটে মৃদু হাসি আমি রুপুর দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম '' রুপু '' সুধীর এগিয়ে এলো রুপু আমায় নিয়ে আই,সি,সি,ইউর বাইরে এসে আবার একা ঢুকে গ্যালো আমার চোহের সামনে আমার দুনিয়া ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলাম সুজয় সামনেই ছিল ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো , আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম , জ্ঞান ফিরলো যখন দেখলাম সবাই আমায় ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে , সবার চোখের ভাষাই বলে দিলো যে পুপু আর নেই , আমি উঠলাম চেয়ার থেকে সুজয়কে বললাম '' চল একটু বাইরে যাই '' হসপিটালের বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম | শ্রাদ্ধশান্তি মিটলো আমি ভুবনেশ্বরে ফিরে কাজে জয়েন করলাম মনে শান্তি নেই , আমার বিস্বাসঘাতকতার শাস্তি পেলো পুপু ,কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত করে দিলাম | পড়ে শুনেছিলাম ছোটবেলায় যে মেনিনজাইটিস হয়েছিল সেটাই আবার রিল্যাপ্স করেছিল আর সেটাই পুপুর মৃত্যুর কারণ |
এর পর পনেরো বছর কেটে গ্যাছে পুপু আমার জীবন থেকে চলে গ্যাছে সাথে নিয়ে গ্যাছে আমার মনের শান্তি আমার যৌনতা , এই পনেরো বছর আমি নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে সব ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি , কোম্পানিতে আমার প্রমোশন হয়েছে আমি এখন কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট বিজনেস ডেভেলপমেন্ট , চিত্রাদি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দুজনেই কোম্পানির বোর্ড মেম্বার , আমার দায়িত্বের জন্য আমায় মাসের পনেরো কুড়িদিনই ট্যুরে কাটাতে হয় দেশে বিদেশে আমার হেড কোয়ার্টার মুম্বাই মাসে তিনচার দিনের বেশি কলকাতায় থাকতে পারিনা , পাপিয়ার ডিভোর্স হয়ে গ্যাছে ও এখন কলকাতায় পোস্টেড্ | একদিন মুম্বাই থেকে কলকাতায় এসে কলকাতা অফিসে কিছু কাজ সেরে ফিরছি সাদার্ন এভিনিউ হয়ে , বিবেকানন্দ পার্ক ক্রস করার সময় দেখলাম মামনি মানে পুপুর মা দাঁড়িয়ে আছেন আমি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম গাড়ি থেকে নেমে মামনির সামনে দাঁড়ালাম '' মামনি কেমন আছো ?'' অনেকদিন পরে দেখে প্রথমে হয়তো বুঝতে পারেননি আমিই বললাম '' আমি কাজল '' মামনি বুঝতে পেরে বললেন '' আছি দিন কেটে যাচ্ছে কোনোরকমে , তুমি কেমন আছো বাবা ? '' উত্তর কি দেব আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম '' রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো কেন ? কারুর জন্য ওয়েট করছো ?'' '' হ্যাঁ নাতনীটা স্কুল বাস থেকে নামবে ওকে নিতে এসেছি অন্যদিন বৌমাই আসে আজ আমি এলাম বৌমাও আসবে আমি আগে এলাম যদি বাস এসে যায় তাই '' '' সুজয়ের মেয়ে ?'' '' হ্যাঁ '' এর মাঝেই অনন্য সুজয়ের বৌও এসে গ্যাছে '' কেমন আছেন জিজু ? '' '' আছি একরকম '' বলতে বলতেই স্কুল বাসটা এসে দাঁড়ালো , বাস থেকে নামলো একটা মেয়ে বসে থাকা অন্যদের হাত নেড়ে ' টাটা ' বলে এগিয়ে এলো আমি চমকে উঠলাম মেয়েটাকে দেখে সামনে এসে যখন দাঁড়ালো আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে কানে এলো মামনির কথা '' অবিকল পুপুর মতো হয়েছে '' আমি নিজেকে কোনোমতে সামলালাম আমার দুই গাল চোখের জলে ভিজে গ্যাছে মেয়েটা আমার সামনে এসে বললো '' তোমার নাম কাজল তো ? আমি অপু সংযুক্তা '' ঠিক যেমন প্রথম পরিচয়ের দিন পুপু বলেছিলো '' তুই কাজল তো ? আমি সংগীতা পুপু '' আমি কোনোমতে মামনিকে বললাম '' মামনি আমি আসি '' আসার সময় দেখলাম মামনির চোখেও জল |

বাড়িতে ফিরে মা'কে সব বললাম , রাতে সুজয় ফোন করলো অনেকক্ষন কথা হলো , আমায় বললো '' জিজু সেই দি'ভাই চলে গ্যালো তারপর থেকে আর তুই আমাদের বাড়িতে আসিসনি আজকের ঘটনার পর মা , পাপা খুব কান্নাকাটি করছে একবার যায় অন্তত ওদের জন্য আয় '' '' যাবো কয়েকদিনের মধ্যেই যাবো অপুর সাথে দরকার আছে আমার একাউন্ট্যান্ট যাবে কিছু ডকুমেন্ট চাইবে দিয়ে দিস '' '' মানে বুঝলাম না '' '' দেখা হলে বলবো '' , সকালে মা'কে বললাম বাবাইও সামনেই ছিল '' আমি ঠিক করেছি পুপুর যা গয়না লকারে আছে সব অপুকে দেব আর পুপুর নামের শেয়ারগুলো যা পাপা ওকে দিয়েছিলো সেগুলোও অপুর নামে ট্রান্সফার করে দেব '' মা কিছু বললো না অঞ্চলে চোখ মুছলো | পরেরদিন আমায় মুম্বাই যেতে হলো |
কয়েকদিন পরে মুম্বাই থেকে ফিরলাম , ব্যাংক থেকে গয়নাগুলো তুললাম , সুজয়কে ফোন করলাম '' সন্ধ্যা বেলা থাকবি ?'' '' হ্যাঁ '' আমি আসবো আজ পুপুর জন্মদিন '' '' হুমম আজ অপুরও জন্মদিন জানিস ? আয় কথা হবে '' | সন্ধ্যাবেলা পুপুদের বাড়িতে গেলাম , পাপা চুপ করে বসে আছে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বললেন '' বোসো বাবা '' বসলাম সুজয় এলো '' অপুকে ডাক তো '' অপু এলো আমার পাশে বসলো '' আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম '' হ্যাপি বার্থডে সোনামা '' বলে গয়নার বাক্সটা ওর হাতে তুলে দিলাম , সুজয় জিজ্ঞেস করলো '' কি এটা ?'' '' তোর দি'ভাইয়ের গয়না গুলো এগুলো অপুরই তো পাওনা '' মামনি ডুকরে কেঁদে উঠলেন '' আজ তো পুপুরও জন্মদিন '' আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম |
এখন আমি খুবই ভালো আছি মনের সব ভার নেমে গ্যাছে , আগের মতোই নরমাল |



[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top