গর্ভাকালে নারীর বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার মধ্যে হাঁপানি (অ্যাজমা) অন্যতম। প্রতি ১০০ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে ৩ থেকে ৪ জন হাঁপানিতে ভোগেন। গর্ভকালে হাঁপানি রোগীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বাড়ে এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টও কমে যায়। তবে গর্ভাবস্থায় অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার পরও একজন মা সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
অনিয়ন্ত্রিত অ্যাজমা গর্ভধারণকালে মা ও সন্তানের জন্য যেসব সমস্যা সৃষ্টি করে, সেগুলো হলো—জন্মের সময় শিশুর কম ওজন, সময়ের আগেই প্রসব, মায়ের উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ থাকার বিষয়টি বোঝা যায় কয়েকটি কারণে। ঘুমের সময় কোনো সমস্যা না হওয়া; স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারা, খুব কমই ইনহেলার ব্যবহার করা, ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকা ইত্যাদি।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে
হাঁপানি রোগী সন্তান নেবেন না—এ কথার ভিত্তি নেই। তবে যদি গুরুতর হাঁপানি থাকে, তাহলে সন্তানধারণের আগে তা নিয়ন্ত্রণ করে নেওয়া প্রয়োজন। হাঁপানির দুর্বল নিয়ন্ত্রণ শিশুর জন্য একটি বড় ঝুঁকি। গর্ভাবস্থায় হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা অনুসরণ করে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় গর্ভকালীন নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ওষুধে কোনো পরিবর্তন করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত। গর্ভাবস্থায় যেসব অ্যালার্জি–জাতীয় ওষুধের কারণে অ্যাজমার প্রকোপ বাড়তে পারে, তা থেকে দূরে থাকতে হবে। ধূলিকণা, ধূমপান থেকে দূর থাকতে হবে।
চিকিৎসকের সঙ্গে কথা না বলে হাঁপানির কোনো ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। যেসব গর্ভবতী মা অ্যাজমায় আক্রান্ত, তাঁদের শুরু থেকেই একজন বক্ষব্যাধি অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে থাকা। প্রত্যেক মায়ের শ্বাসকষ্ট অনুযায়ী আলাদা চিকিৎসা পরিকল্পনা থাকে। প্রচলিত হাঁপানির ওষুধের অধিকাংশ গর্ভকালীন সময়ে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ব্যবহার করা যায়। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করতে ইনহেলার সঠিকভাবে ব্যবহার করা দরকার। গর্ভাবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিরাপদ।
শিশুকে বুকের দুধ কি খাওয়ানো যাবে
হাঁপানি আছে, এমন নারীদের বুকের দুধ খাওয়ানোকে উৎসাহিত করা হয়। এমনকি মা যদি হাঁপানির ওষুধ খেয়েও থাকেন। এতে বাচ্চা মায়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি পাবে, যা তাকে পরবর্তী সময়ে অ্যাজমার বা যেকোনো অ্যালার্জি থেকে সুরক্ষিত রাখবে।ৎ
[FA]pen[/FA] লেখক: ডা. নওসাবাহ্ নূর, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ