What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

গোপন কথাটি রবে না গোপনে (1 Viewer)

Joined
Jan 13, 2021
Threads
2
Messages
212
Credits
7,662
লেখকের স্বীকারোক্তিঃ


এই গল্পে বর্ণিত সমস্ত স্থান, কাল ও পাত্র-পাত্রী সবই কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। তাই সকল পাঠকের কাছে অনুরোধ কেউ বাস্তবের কোনো চরিত্রের সঙ্গে মিল খোঁজার ব্যর্থ প্রয়াস করবেন না। যদি কোথাও কারুর জীবনের সঙ্গে এই গল্পের কুশি-লবদের কোনো মিল থেকে থাকে তা কাকতালীয়, সেখানে লেখকের কোনো দায়ভার নেই। সকলকে ধন্যবাদ।


গৌরচন্দ্রিকাঃ



কোলকাতায়
গঙ্গার ধারে বিগত দেড়শো বছর ধরে অত্যন্ত আভিজাত্যের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজপ্রাসাদোপম চৌধুরী ভিলা। চৌধুরী ভিলার বর্তমান মালিক রাজনারায়ণ চৌধুরী তাঁর চল্লিশতম বিবাহবার্ষিকী বড়ো ধুমধামের সঙ্গে পালন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শুধু এখানেই থেমে থাকলে এই গল্পটা লেখার কোনো প্রয়োজনই পড়তো না , তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা এই অনুষ্ঠানের একটা ভিডিও অ্যালবাম তৈরি করার যেখানে তাঁর তো বটেই বাড়ির সমস্ত সদস্যের জীবনের জানা-অজানা কাহিনী ধরে রাখা হবে। এই ভিডিও অ্যালবাম ও বাড়ির সকল সদস্যের জীবনের অপ্রকাশিত গোপন কাহিনী নিয়েই এই গল্প নিজস্ব গতিতে তার পথে এগিয়ে যাবে।
 
প্রথম অধ্যায়ঃ



ভিডিও অ্যালবামে রূপরেখা তৈরিঃ



পরিচ্ছেদ – ১: চৌধুরী ভিলার ড্রয়িংরুম



বিকেল প্রায় পাঁচটা , চৌধুরী ভিলার বাইরের মহলে সুবিশাল ড্রয়িংরুমে মুখোমুখি বসে আছেন রাজনারায়ণ চৌধুরী ও নীললোহিত ( পরবর্তীতে এঁকে আমরা নীল বলেই ডাকবো ) । রাজনারায়ণবাবু নীলকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি ভিডিও অ্যালবামটায় কি কি চান এবং কেমনভাবে চান। নীল সব শুনে ঘাড় নেড়ে বলে -

- " সবই তো বুঝলাম, কিন্তু বাড়ির সকলে বিশেষ করে মহিলারা কি তাঁদের অন্তরের গোপন কথা অকপটে ক্যামেরার সামনে স্বীকার করবেন? তাঁরা সেটা যদি না করেন তাহলে আপনি যেটা চাইছেন সেটা ফুলফিল হবে না।আমি সমস্ত ব্যাপারটাই একটা নতুন অ্যাঙ্গেলে করবো। আমি বা আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট যখন তখন আপনার বাড়িতে আসব এবং আপনার বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবো। আমার ক্যামেরা যখন কারুর উপর ফোকাস করবো তখন তিনি বাড়িতে প্রতিদিন যেমন কাটান তেমনভাবেই ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়াবেন , কোনো কৃত্রিম অভিনয় করতে পারবেন না।

আমার ভিডিও অ্যালবামটা আর পাঁচটা ভিডিও অ্যালবামের মতো শুধুমাত্র কৃত্রিম হাসির টুকরো দিয়ে সাজানো থাকবে না। তাতে প্রত্যেকের জীবনের হাসি থাকবে , থাকবে চোখের জল , বুকের গভীরে জমে থাকা না বলা অন্ধকার , আরও কত কি ? আপনি যদি রাজী থাকেন তো বলুন , না হলে আমি এই অ্যাসাইনমেন্ট নেবো না।"



সবেমাত্র সত্তর ছাড়ানো রাজনারায়ণবাবু যৌবনে ছবি আঁকা ও ভালো ছবির পিছনে তীব্র প্যাশান নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। আজ নীলের চোখে তিনি তাঁর যৌবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে এক কথায় রাজী হয়ে যান এবং মুচকি হেসে বলেন ,

-- " আলবাৎ বলবে , আমি এখনই সবাইকে বলে দিচ্ছি।"

-- " থাক্ এখনই বলতে হবে না , সময় মতো অবশ্যই বলে দেবেন। এখন আমাকে আপনার পারিবারিক অ্যালবামটা দিন এবং সেইসঙ্গে পরিবারের সকল সদস্য সম্পর্কে একটা ধারণা দিন। "

কথা বলতে বলতেই এ বাড়ির খাস চাকর রামু দুজনের জন্য চা আর গরম গরম সিঙ্গাড়া দিয়ে গেল।

-- " নাও গরম থাকতে থাকতে চা আর সিঙাড়া খেতে থাকো। আর আমি তোমাকে সকল সদস্য সম্পর্কে একটা আভাস দিই। " - বলে উঠলেন রাজনারায়ণবাবু।

রাজনারায়ণবাবুর কাছ থেকে পারিবারিক অ্যালবাম এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ও চৌধুরী ভিলার প্রত্যেক সদস্যের প্রোফাইল নোটডাউন করে নিয়ে নীল যখন নমস্কার জানিয়ে চৌধুরী ভিলা থেকে বিদায় নিল তখন রাত প্রায় আটটা। চৌধুরী ভিলা থেকে বের হয়ে নীল ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট বিপাশাকে ফোন করে জানালো আজ অফিস বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে। একটা বড়ো কাজ ও হাতে নিয়েছি, এই কাজটা আমাদের দুজনের কাছেই একটা বড়ো চ্যালেঞ্জের মতো, এটাতে আমাদের সফল হতেই হবে। আগামীকাল সময়ে অফিস চলে এসো তখন সব আলোচনা করে নেব।
 
পরিচ্ছেদ – ২: নীললোহিতের অফিস --



সকাল সাড়ে দশটা , নীললোহিত ও বিপাশা ক্রিক রোতে স্টুডিওর অফিসে একটা টেবিলের দুপাশে মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসে রয়েছে। টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু কাগজ , ছবি , আর দুকাপ ব্ল্যাক কফি। নীল তার সহকারিনী ও বন্ধু বিপাশাকে বলে --



-- " তোমাকে চৌধুরী পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব কিছু জানতে হবে, প্রত্যেকটা চরিত্র ভালোভাবে বিশ্লষণ করতে হবে। তবেই তুমি এই কাজে সাফল্য পাবে। "

এই বলে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নীল বিপাশাকে চৌধুরী মহলের প্রত্যেকটি চরিত্রকে বিশ্লেষণ করে শোনায়। নীলের বিশ্লেষণ এই প্রকারের ---





) রাজনারায়ণ চৌধুরীঃ



ইনি এই কাহিনীর নায়ক , সবেমাত্র সত্তর অতিক্রমকারী এক পুরুষ। এখনো অনন্ত পৌরুষের গর্ব আছে তাঁর। এখনো তাঁর মনের আকাশ থেকে ঝরে ঝরে ক্লান্ত হয়ে যায়নি বাসনার বৃষ্টিরা। এখনও ইচ্ছে হলে তিনি মধ্যরাতে চাবুক হাঁকাতে পারেন ঘুমন্ত কোলকাতার বুকে। ছবি আঁকার অদম্য ইচ্ছে এবং নারী মাংসের প্রতি অনন্ত লোভ তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর এই দুই বাসনাকে চরিতার্থ করতে তিনি বারবার ঘর ছেড়েছেন। এমনকি নিজের নব বিবাহিতা স্ত্রীকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন পাশ্চাত্য আর্ট ও কালচারের পীঠস্থান ফ্রান্সে।



বিপাশা চেয়ে চেয়ে দেখে রাজনারায়ণ বাবুর নানা বয়সের অনেকগুলো ছবি -- কৈশোরের উদ্ভাসিত রাজনারায়ণ , যৌবনের উদীপ্ত রাজনারায়ণ , প্রৌঢ়ত্বের মলিন রাজনারায়ণ এবং বার্ধ্যকের ঝলমলে

রাজনারায়ণ।

বিপাশা, এই ছবিগুলো দেখে রাজনারায়ণ বাবু সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ছবি নিজের মনে মনে আঁকতে থাকে। রাজনারায়ণ বাবুর চোখ দুটো অসম্ভব উজ্জ্বল। মনে হয় , সবসময় উনি নতুন কিছু করার চেষ্টা করে চলেছেন। এই ভিডিও অ্যালবাম তৈরিও সে কথাকে প্রমাণ করে।



) চন্দ্রলেখাঃ



একটা বছর ষাটের বৃদ্ধার ছবি দেখিয়ে নীল বলে ওঠে - ইনি চন্দ্রলেখা , রাজনারায়ণ বাবুর বিবাহিতা স্ত্রী। ইনিই এই ভিডিও ফ্লিমের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র। দু-এক পলক দেখে নীল যেটুকু বুঝেছে তাতে ইনি বেশ চাপা স্বভাবের। বুক ফাটলেও এনার মুখ ফুটবে না , তাই বিপাশার কাছে এটা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ এই পাষাণের বুকে ফাটল ধরিয়ে তাঁর ভেতর থেকে জল বের করার মতো তাঁর সমস্ত রাগ , দুঃখ , অভিমান, অভিযোগ সব বের করে আনতে হবে। আর জানতে হবে তাঁর জীবনের গোপন অভিলাষ , অজানা কোনো কথা।



) আশুতোষঃ



নীলের হাতে ধরা আর একটি ছবি - বলে আশুতোষ চৌধুরী। ঝকঝকে ব্যক্তিত্ব। থ্রী পিস স্যুট পড়া , চোখে রোদ চশমা। সমস্ত চেহারায় উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঝরে পড়ছে। চল্লিশ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এই ব্যক্তির উত্থান এক কাল্পনিক রূপকথার মতো। বর্তমানে তাঁর অবস্থা বেশ স্বচ্ছল , ব্যাংকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ডলার তিনি জমিয়েছেন। সফল একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি প্রবাসী বাঙালি মহুয়াকে বিবাহ করেছেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান হলো লিসা। বাবার ভিডিও ফ্লিমের এই অদ্ভুত খেয়াল মেটাতে অনেক দিন পর তিনি সপরিবারে ভারতে আসছেন।



) মনোতোষঃ



একটি ছবি দেখিয়ে নীল বলে ইনি রাজনারায়ণ বাবুর মেজো ছেলে মনোতোষ চৌধুরী। চৌধুরী ভিলার ইনি সবচেয়ে ট্রাজিক চরিত্র। বংশের ধারা অনুসারে ইনি সুন্দর ও সুঠামদেহী , কিন্তু ছোট্টবেলায় গলার এক জটিল রোগে তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। আবার মনের মধ্যে যখন কোনো একটা আবেগ হামাগুড়ি দেয় , চেতনা আঁচড় কাটে বা তিনি তাঁর মনের ভাব ও ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে যান তখন তিনি একটু অস্বাভাবিক আচরণ করেন। সেই সময় তাঁর স্ত্রী স্বর্ণালী ছাড়া আর কেউ তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে একটা কথা না বললেই নয় তিনি অদ্ভুত সুন্দর ছবি আঁকেন। রং-তুলি দিয়ে তিনি ছবির মাধ্যমে তাকে প্রকাশ করেন। সেই সময় মনে হয় তাঁর মধ্যে রয়েছে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল মন , তাঁর চোখে তখন দূর দিগন্তের ছায়া কিংবা গ্রাম বাংলার কাকবন্ধ্যা সরসীর জল।

তুমি জানো বিপাশা আমি অকারণে কোনো মানুষের প্রশংসা করি না। আমি তাঁর চোখে প্রতিভার যে বিচ্ছুরণ দেখেছি তাতে মনে হয়েছে তাঁর মুখে যদি ভাষা থাকতো তাহলে তিনি আধুনিক ছবির জগতে বিপ্লব এনে দিতে পারতেন।

কথা না বলতে পারার বেদনা থেকে তার মধ্যে জন্মেছে এক আশ্চর্য হীনমন্যতা। তাই তিনি সব সময় নিজেকে গুটিয়ে রাখেন । আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে তাঁর একমাত্র ভালোবাসার জায়গাটা হলো এখন স্ত্রী স্বর্নালীর সান্নিধ্য। সেই সান্নিধ্যে সে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। তুমি যদি মনোতোষ বাবুকে ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারো তাহলে দেখবে এই বোবা মানুষটিই আকারে ইঙ্গিতে, তুলির আঁচড়ে এমন কিছু খবর দেবেন যা তোমাকে হতবাক করে দেবে।
 
) শিবতোষঃ



এবার বিপাশা নীলের হাতে অত্যন্ত সুদর্শন ও ব্যক্তিত্বময় একজনের ছবি দেখতে পেল। নীল বললো ইনি রাজনারায়ণ বাবুর ছোটো ছেলে। অ্যাকাউন্টেসিতে মাস্টার্স করার পর স্টেট ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে জামশেদপুরে পোস্টেড। সেখানে অফিস থেকে একটা বিশাল বাংলো পেয়েছেন। সেই বাংলোতে তিনি স্ত্রী মোনালি ও পাঁচ বছরের ছেলে সুকান্তের সঙ্গে থাকেন । তিনিও এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠানে আসছেন।



) চন্দ্রিমাঃ



রাজনারায়ণ বাবুর বড় মেয়ে চন্দ্রিমা , বাড়ির লোক সংক্ষেপে চনু বলে ডাকে। নারীদের সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা নতুন করে দিতে হবে এঁর সামনে দাঁড়ালে। বিপাশা ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে একজন নারীর এতরূপ হতে পারে ? কী সুন্দর শান্ত সমাহিত রূপ। এই রূপ পুরুষকে জ্বালিয়ে ছারখার করে না , বরং স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে পুরুষ হৃদয়কে শান্তি প্রদান করে। নিজের রূপের প্রতি কোনোদিনই তাঁর যত্ন নেই , তা সত্ত্বেও ছত্রিশ অতিক্রান্ত চন্দ্রিমাকে দেখলে মনে শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা দুর্গা প্রতিমা। এখনো হাসলে তাঁর দুগালে টোল পড়ে।



তাঁর বিবাহ হয়েছে কোলকাতার নামজাদা ফ্লোরিষ্ট দীপ্তেন্দুর সঙ্গে। দীপ্তেন্দুর প্রপিতামহ দর্পনারায়ণ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগরে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল নার্সারিসহ জমিদারি। দীপ্তেন্দুর খ্যাতি ও তাঁর চাষ করা ফুল ভারতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে।

তাঁদের একমাত্র ছেলে রীতেশ শুধুমাত্র চন্দ্রিমার জেদের কারণে কার্শিয়াং-এর একটা কনভেন্ট স্কুলে পড়ে।



) রূপকথাঃ



রাজনারায়ণ বাবুর মেজো মেয়ে রূপকথা। নামটা তাঁর রূপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর দেহে এত রূপ যে তাঁকে পরীদের দেশের রানী বলে মনে হয়। বছর তিরিশের এই নারী চৌধুরী ভিলার খুব ইন্টারেস্টিং চরিত্র। চৌধুরী বাড়িতে কুড়ি পার হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজনারায়ণ বাবু তাঁর মেজাজী ও বাপের আহ্লাদী মেজো মেয়েকে আজ পর্যন্ত পাত্রস্থ করতে পারেন নি। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সে সারাজীবন অবিবাহিতা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রূপকথা মেয়ে হিসেবে মার্জিত , পরিশীলিত, সংস্কৃতিমনা এবং আশ্চর্যজনকভাবে চৌধুরী ভিলার মতো গোঁড়া পরিবারের সদস্য হলেও ভারত নাট্যমের পাবলিক পারফরম্যান্স করে।



বিপাশা আমার মনে হয় রূপকথার জীবনে কোনো অন্ধকার দিক আছে যার জন্য সে পুরুষ জাতটাকেই বিশ্বাস করে না। তোমাকে তাঁর জীবনের সেই অজানা দিকটা উন্মোচিত করতে হবে।



বিপাশা ভাবে কাজের প্রতি নীলের কি ডেডিকেশন ! প্রতিটি চরিত্র সে সাংঘাতিকভাবে বিশ্লেষণ করে। প্রতিটি ফটো বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে স্টাডি করে মানুষটির কাল্পনিক মূর্তি তৈরি করে , তার সঙ্গে কথা বলে , যতক্ষণ না তাঁর সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হচ্ছে।



) স্বর্ণালীঃ



মনোতোষ বাবুর স্ত্রী স্বর্ণালী চৌধুরী ভিলার সবচেয়ে ট্রাজিক চরিত্র। তাঁর মতো রূপবতী নারীকে শুধুমাত্র দুঃসহ দারিদ্র্য ও বাবার লোভের কারণেই সব জেনেশুনে এক বোবা পুরুষকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। বিবাহের দশ বছর পরেও সে মাতৃত্বের স্বাদ পায়নি। ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা গেছে মনোতোষ বাবু এই পৃথিবীতে কোনো দিন কারুর বাবা হতে পারবেন না।



নীল বলে চলে - বাকরুদ্ধ স্বামী ও নিজের বন্ধ্যাত্ব - এই দুটো অভিশাপ মাথায় নেওয়া সত্ত্বেও তিনি শরতের শিউলির মতো অভিমানিনী। বিপাশা অবাক হয়ে শোনে একটা মানুষ চিত্রনাট্যের কোনো চরিত্রের সঙ্গে কতটা একাত্ম হতে পারলে তবেই এই কথাগুলো বলতে পারে। নীল তখনো বলে চলেছে - বিপাশা তোমাকে মনে রাখতে হবে চৌধুরী ভিলার গোপন চাবিকাঠিটি কিন্তু স্বর্নালীর আঁচলে বাঁধা। তোমাকে সেখানে নিশি কুটম্ব হয়ে প্রবেশ করে খুলে ফেলতে হবে চৌধুরী ভিলার রহস্যময় দ্বার। আর তাহলেই দেখবে এই ভিডিও ফ্লিমটি হিট করার মতো রসদ তুমি পেয়ে যাবে। তোমার ক্যামেরা এই চিত্রনাট্যে প্রথম স্বর্নালীর ওপরেই ফোকাস করবে।



) পদ্মাবতীঃ



ইনি রাজনারায়ণ বাবুর আদরের বোন। বিপাশা তুমি এঁর দেখা পাবে চৌধুরী ভিলার একতলার একটা ঘরে , মাঝ দুপুরেও ঘরে আধো অন্ধকার, সূর্য এখানে বোধহয় সলাজ এক বধূ।

এই মহিলা বা বৃদ্ধা যাই বলো না কেন তুমি , তিনি কিন্তু দু দুবার চোখের ছানি অপারেশন করেও চোখে ভালো দেখতে পান না। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে তাঁর বিবাহ হয়েছিলো উত্তর কোলকাতার এক বনেদী পরিবারে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো বিবাহের পাঁচ মাসের মধ্যে এক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে বিধবা অবস্থায় ভাইয়ের সংসারে ফিরে আসেন এবং ভাইয়ের সংসারের জোয়াল নিজের কাঁধে তুলে নেন।

নীল বলে বিপাশা এর পিছনেও কোনো রহস্যময় অতীত চাপা পড়ে আছে। তোমাকে সাবধানে খনন করে সেই ইতিহাস বের করে আনতে হবে।



নীল চিত্রনাট্যের সমস্ত চরিত্রকে বিপাশার সামনে যথাযথভাবে উপস্থাপন করে বলে , বিপাশা এই ভিডিও ফ্লিমের চিত্রনাট্য তোমাকে যত্ন নিয়ে লিখতে হবে। তুমি এতোদিন জর্জ টেলিগ্রাফে যা যা শিখেছো বা বই পড়ে যা জেনেছো তার পরীক্ষা এই চিত্রনাট্যের সংলাপ লেখার মাধ্যমে হয়ে যাবে। এই ভিডিও ফ্লিম হবে তোমার সন্তানের মতো , আমি দূর থেকে দেখবো তুমি তোমার সন্তানকে কতটা যত্ন করে হেলদি করে তুলছো। আমি শুধু তোমাকে দূর থেকে গাইড করে যাব , মূল কাজটা তোমাকেই করতে হবে।



একটি সত্তর অতিক্রান্ত মানুষ এই ভিডিও ফ্লিমের মাধ্যমে তার অতীতকে ফিরে দেখতে চেয়েছেন। হয়তো এই শেষবারের মতো সকলের সঙ্গে তিনি মিলিত হচ্ছেন। মৃত্যুর আগে আবার সকলকে একত্রে পাবেন কিনা ঠিক নেই। এই ভিডিও ফ্লিমটার মাধ্যমেই তিনি সকলকে বারবার ছুঁয়ে দেখতে চাইছেন। সুতরাং এই ভিডিও ফ্লিমটি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয় , এটা একটা পরিবারের জীবন্ত দলিল , এর সাথে জড়িয়ে থাকবে চৌধুরী ভিলার ইতিহাস , তার ভাব-ভালোবাসা , আশা-নিরাশা , চেতন-অচেতন -- সব কিছু। তাই এই দায়িত্ব আমি ভরসা করে তোমার হাতে ছেড়েছি। আশাকরি তুমি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে। তোমাকে এই চিত্রনাট্য লেখার জন্য তোমার দৃষ্টিকে দিগন্ত প্রসারী করতে হবে , তোমার মনের ভাবনা সিরাজের কবুতরের মতো অসীম আকাশে ভেসে বেড়িয়ে তোমার জিজ্ঞাসাগুলোর উত্তর খুঁজে নিয়ে আসবে। তোমার সাফল্যের চাবিকাঠি হবে তোমার মনের সংবেদনশীলতা, তুমি সংবেদনশীল হলে তবেই চৌধুরী ভিলার বৈচিত্র্যময় চরিত্রগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে পারবে , আর তাহলেই দেখবে তোমার চিত্রনাট্য তৈরি হয়ে গেছে।



জর্জ টেলিগ্রাফে তোমাদের ব্যাচের মধ্যে তুমিই ছিলে অত্যন্ত প্রমিসিং এবং তোমার কাজের প্রতি ছিলো অসীম ভালোবাসা, কাজটা যতক্ষণ না নিখুঁত হচ্ছে ততক্ষণ তুমি লড়ে যেতে । তোমার এই গুণগুলোই আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। তাই আমি তোমাকে আমার সহকারিনী হিসেবে নির্বাচিত করেছি। তুমি নিশ্চয়ই তার মর্যাদা রাখবে। এই বলে নীল বিপাশার দুই কাঁধ ধরে কাছে টেনে ওর কপালে একটা চুমু খায়। দুজনের চোখ পরস্পরের সঙ্গে মিলে গিয়ে যেন এক সেতুবন্ধ তৈরি করেছে।



বিপাশা বোঝে নীল কতটা ভরসা করে ওকে এই গুরুদায়িত্ব দিয়েছে। তাই হরিশ মুখার্জি রোডে তাদের বাড়ির দোতলার চিলেকোঠায় বসে আবেগ , মনের মাধুর্য , বাস্তবের কঠোরতা সব কিছুর মিশেলে সে পাতার পর পাতা কাটাকুটি করে সংলাপ লেখে। লেখার পর নিজেই সেটা ট্রায়াল দেয় কতটা ভালো হয়েছে দেখার জন্য, যে অংশ পছন্দ হয় না সেটা কলমের এক খোঁচায় বাতিল করে আবার লেখে। প্রথমে বিদিশার কাছে চিত্রনাট্যের চরিত্রগুলো আবছা আবছা ভাবে ধরা দিচ্ছিল। এতগুলো চরিত্র, তাদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা ও জীবন দর্শন, নিজস্ব উটাচন ও অন্ধকার, কারুর রিক্ততা তো কারুর উন্নাসিকতা, কেউ জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়েছে তো কেউ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে -- এসব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে সুবিশাল এক ক্যানভাসে সংলাপের মাধ্যমে প্রত্যেকটা চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা রীতিমতো এক চ্যালেঞ্জিং কাজ। সাত দিন ধরে লড়াই করে শব্দের নিরন্তর কাটাকুটি ও জাগলারির মাধ্যমে বিপাশা চৌধুরী ভিলার চিত্রনাট্য লেখার কাজ শেষ করে। তারপর সুখবরটা নীলকে জানায়।

নীল তাকে বিকেলে আপাত নির্জন রবীন্দ্র সরোবরের পাড়ে চিত্রনাট্যের খাতা নিয়ে আসতে বলে। ওখানেই লেমনটি খেতে খেতে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে চিত্রনাট্যটা কাটাছেঁড়া করবে।



কথামতো রবীন্দ্র সরোবরের নির্জন এক কোণায় সিমেন্টের এক বেঞ্চে বসে বিপাশা তার চিত্রনাট্য পাঠ করতে শুরু করে। বিষন্নতার প্রতিমূর্তি স্বর্ণালীকে প্রধান চরিত্র করে বিপাশা যে চিত্রনাট্য তৈরি করেছে তা এক কথায় অনবদ্য। নীল এক ঘোরের মধ্যে হাততালি দিতে দিতে বিপাশাকে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বসে।



বিপাশা গম্ভীর কন্ঠে বলে -- "এটা কি হলো?'



নীল উত্তর দেয় -- "এটা তোমার পরিশ্রমের পুরস্কার।"



-- " তাহলে এই পুরস্কার তো ভাগ করে নিতে হয় , তোমার সাহায্য ছাড়া এটা সম্পূর্ণ করা আমার সাধ্য ছিল না।"



এই বলে বিপাশাও নীলকে ঠোঁটে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বসে। দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠে।



নীল বলে -- " এই ভিডিও ফ্লিমটার নাম কি হবে?"



বিপাশা বলে -- " এই ভিডিও ফ্লিম একটা পরিবারের সদস্যদের গোপন জবানবন্দি নিয়ে। তাই আমার মতে এই ভিডিও ফ্লিমের নাম 'গোপন কথাটি রবে না গোপনে' -- এটাই হওয়া উচিৎ।"



নীল বিপাশার কলাপে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলে -- " এই জন্যই তোমাকে এত পছন্দ। তোমার চিন্তাধারা আমার সঙ্গে দারুণ ম্যাচ করে। "



এরপর ঠিক হয় অনুষ্ঠানের ঠিক সাত দিন আগে থাকতেই তারা চৌধুরী ভিলায় প্রতিদিন হানা দেবে। প্রথম দিন ভোরবেলায় স্বর্নালীর ওপর ক্যামেরা ফোকাস করে ভিডিও ফ্লিম তৈরির কাজটা শুরু হবে।
 
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ

স্বর্ণালীর
উপাখ্যান

পরিচ্ছেদ
– ১: একটা নতুন সকালের
জন্ম



কথামতো এক ভোরে নীল ও বিপাশা এসে হাজির চৌধুরী ভিলার ছাদে। ছাদের এক কোণায় কার্নিস ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্ণালী। মায়াবী এক সকালের জন্ম হচ্ছে কোলকাতায়। সূর্য তখনও ওঠেনি। পূর্বাকাশে রক্তিম আলোর বন্যা , আর ঘুম ভাঙা পাখিদের কুজন জানান দিচ্ছে আবার একটা সকাল হচ্ছে। ক্যামেরা চলছে , কিন্তু কোনো সংলাপ নেই। এই মুহূর্তে বিপাশা স্বর্ণালীর নানান অভিব্যক্তি ধরে রাখছে।

গঙ্গার দিক থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় স্বর্ণালীর চুল উড়ছে। সে হাত দিয়ে বারবার মুখের উপর এসে পড়া চুলগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে। স্বর্ণালী আনমনে আকাশ দেখতে দেখতে ভাবে এখানে যেমন অদূরে বহমান গঙ্গা , ঠিক তেমনই মুর্শিদাবাদে তাদের ঘরের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে যাচ্ছে ময়ূরাক্ষী নদী। বাবা তাকে প্রতিদিন ভোরে তুলে দিতো। সে দেখতো একটা সকালের জন্ম , দেখতো কুঁড়ি থেকে ফুলে পরিণত হওয়া গোলাপটাকে। তারপর পূর্বাকাশে আলোর বন্যা, ঝলমল করে উঠতো চারপাশ।

সেই অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেছে। যদিও কোলকাতার সূর্যোদয়টা ওখানকার মতো নয় , তবুও কাশীপুরে গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই অট্টালিকার ছাদ থেকে পুণ্যতোয়া গঙ্গা, ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রার ওড়াওড়ি - এসব দেখতেও ভালোলাগে।

ভোরের এই সময়টুকু স্বর্ণালী নিজের মতো করে উপভোগ করে। তার মনে এখন অনেক স্মৃতির গুঞ্জন। তবে আজ একটু সতর্ক সে । এই মুহূর্তে তার সমস্ত চলাফেরা, মুখের অভিব্যক্তি - সবই ক্যামেরা বন্দী হচ্ছে। না হলে এই সময় প্রকৃতির স্নেহ পরশে একটু কেঁদে নিয়ে সে হাল্কা করে নিজের বুকের ভেতর জমাট বাঁধা দুঃখ-কষ্টের পাহাড়টাকে।

সেটুকু বাদ দিয়ে স্বর্ণালীর অভিব্যক্তি অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। নীল ও বিপাশা অবাক হয়ে দেখে পুব আকাশের রং বদলের সঙ্গে সঙ্গে গভীর চিন্তায় মগ্ন স্বর্ণালীর মুখের অভিব্যক্তিও বদলে যাচ্ছে। পরের অধ্যায়ে স্বর্ণালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিতে নিঃশব্দে ক্যামেরা বিপাশার হাতে ছেড়ে দিয়ে নীল ওখান থেকে সরে যায়।
 
পরিচ্ছেদ – ২: স্বর্ণালীর সাক্ষাৎকার



ক্যামেরা নিয়ে বিপাশা স্বর্ণালীর সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগলো। স্বর্ণালীর এক একটি অভিব্যক্তি ধরে রাখছে সেলুলয়েড পর্দা। এরপর এডিটিং এর সময় তার কাটাছেঁড়া করা হবে। অপ্রয়োজনীয় ও বক্তার ক্ষতি করতে পারে এমন বক্তব্য ছেঁটে বাদ দেওয়া হবে।



স্বর্ণালী রান্নাঘর থেকে তাঁর স্বামীর জন্য ও নিজেদের জন্য কয়েক কাপ চা করে নিয়ে এল । শোবার ঘরে এসে দেখে মনোতোষ তখনও ওঠেননি। তাঁর চা টা হটপটে রেখে দিয়ে দুটো কাপে নিজের ও বিপাশার জন্য চা ঢালল। তারপর লাগোয়া পাশের ঘরে (মনোতোষ বাবুর ছবি আঁকার ঘর) বিপাশাকে নিয়ে বসল।



চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বিপাশা স্বর্ণালীকে বলে - আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো , আপনি ইচ্ছে হলে জবাব দেবেন নাহলে দেবেন না।



স্বর্ণালী বলে - বাবা (শ্বশুর মশাই) হুকুম করেছেন না বলে উপায় আছে। আপনি জিজ্ঞেস করুন।



বিপাশা জিজ্ঞেস করে - আচ্ছা স্বর্ণালী দেবী, এই যে আপনার মতো রুচিশীল, সুন্দরীর বিয়ে প্রতিবন্ধীর সঙ্গে না হয়ে কোনো স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গেও তো হতে পারতো ? এই চিন্তা আপনাকে কষ্ট দেয় না ?



স্বর্ণালী একটু ম্লান হেসে উত্তর দেয় - আমি যে দারিদ্র্যতার মধ্যে মানুষ হয়েছি তাতে এই বাড়িতো আমার কাছে স্বর্গ। আমি দরিদ্র ব্রাক্ষণ পরিবারের মেয়ে। আমরা তিন বোন। আমিই ওদের মধ্যে বড়ো। আমাদের দুবেলা ঠিকমতো খাবার জুটতো না। এখানে সে সমস্যা তো নেইই , বরং ব্যাপক প্রাচুর্যের মধ্যে আছি। আর চারদিকে যা শুনছি তাতে অনেকেরই স্বাভাবিক স্বামী নিজের বউকে বাড়িতে রেখে দিয়ে অন্যের বউয়ের সঙ্গে বা বারবনীতার সঙ্গে ফস্টিনস্টি করে। আমার স্বামীর তো সেই দোষ নেই। তিনি কথা বলতে পারেন না এটাতো ঈশ্বরের অভিশাপ। আর তিনি কথা বলতে না পারলেও আকারে ইঙ্গিতে এবং তুলির টানে আমাকে যে কথা বলতে চান সেটা আমার বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয় না। তিনি আমাকে যে কতটা ভালোবাসেন তা বোঝাতে আমাকে মডেল বানিয়ে শকুন্তলা সিরিজ এঁকেছেন এবং নিজেকে দুষ্মন্তের আসনে বসিয়েছেন। এই দেখুন সেই ছবিগুলো।

বিপাশা ক্যানভাসে মনোতোষের তুলির টানে ফুটে ওঠা শকুন্তলার প্রতি দুষ্মন্তের ভালোবাসার গভীরতা নিরীক্ষণ করে অবাক হয়ে যায়। ছবিগুলো দেখে এটা সে বুঝতে পারে মনোতোষবাবু এই ছবিগুলোর মধ্যে দিয়ে স্বর্ণালীর প্রতি তার ভালোবাসার গভীরতা কতটা সেটা বোঝাতে চেয়েছেন।



স্বর্ণালী বলে চলে - আমার স্বামী কতটা পরিশীলিত ও সংবেদনশীল সেটা আমি বাসর রাতেই টের পেয়েছি। তবে সে রাতে কী হয়েছিল সেটা নিশ্চয়ই শুনতে চাইবেন না ? আর আমিও তা ক্যামেরার সামনে বলবো না। তবে এটুকু বলি সেদিন থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি ওঁর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশবো এবং স্ত্রী হিসেবে সব কর্তব্য পালন করবো।



বিপাশা বলে -- না না আপনাকে স্বামী-স্ত্রীর বাসর রাতে কী হয়েছিল সেটা আমার জানার বিষয় নয়। তবে আর একটা প্রশ্ন আমাকে খোঁচা দিচ্ছে, সেটা হলো আপনি যখন জানতে পারলেন আপনার আর এ জীবনে মা হওয়া সম্ভব নয় তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়েছিল?



স্বর্ণালী বলে -- এই পৃথিবীতে সব নারীই কী মা হতে পারে ? তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় একটা যদি ছোট্ট ছেলে থাকতো আমার তাহলে কী ভালোই না হতো। জানেন মাঝে মাঝে আমি হাঁফিয়ে উঠি , আর তখন মনে হয় আমি তিরিশ বছরের তরুণী নই , আমার যৌবন অনেক দিন আগেই হারিয়ে গেছে। তবে আমার স্বামীকে নিয়েই দিনের অনেকটা সময় কেটে যায়। সে অণুক্ষণ আমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়ে রেখেছে, আমাকে চোখের আড়াল হতে দেয় না। শুধু যখন ক্যানভাসের সামনে তুলি নিয়ে বসে তখন তিনি একেবারে অন্য মানুষ , তখন তাঁর দেহটাই এঘরে পড়ে থাকে আর মন কোথায় হারিয়ে যায় ঈশ্বর জানেন। তবে যখনই তার অভিমান হয় কিংবা ভেতরে কোনো আবেগ ফুলে ফেঁপে ওঠে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকের মধ্যে ছোটো ছেলের মতো মুখ গুঁজে থাকে। এই দেখুন আপনাকে কীসব বলে বসলাম , ছিঃ ছিঃ, মাথাটা একদম গেছে।



বিপাশা দেখে বলতে বলতে স্বর্ণালীর গালদুটো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। বিপাশা স্বামী-স্ত্রীর এই ভালোবাসা দেখে অবাক হয়ে যায়। সে ভাবে নিদারুণ দ্রারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিতা কুড়ি বছর বয়সে মেয়েটি এক বোবা ছেলেকে মেনে নিয়েছিল স্বামী হিসেবে, হয়তো ভেবেছিল সন্তানবতী হয়ে একদিন সে পল্লবিত হবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি , তথাপি সে এতোটুকুও বিষণ্ণবতী হয়নি , তার স্বামীকে সে অত্যন্ত গভীরভাবে ভালোবাসে। এতটুকু অবহেলা করে না তার প্রতিবন্ধী স্বামীকে। এরকম স্ত্রীকেই স্ত্রীরত্ন বলা হয়।



বিপাশার চটকা ভাঙে স্বর্ণালীর ডাকে -- কী এত ভাবছেন ?



বিপাশা বলে -- আপনাকে দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসছে। বুকের মধ্যে এত কষ্ট জমিয়ে রেখেও কী হাসিখুশি রয়েছেন আপনি! আচ্ছা আর একটা মাত্র প্রশ্ন করে আপনার কাছ থেকে আজকের মতো বিদায় নেবো। স্বামী ছাড়া আর কোনো পুরুষ আপনার জীবনে এসেছিল কী ?

স্বর্ণালীর বলে -- এখন আমার স্বামীই আমার একমাত্র ভালোবাসা। তবে জীবনে আর কেউ আসেনি এটা বলে আপনার কাছে মিথ্যা বলতে পারবো না । আমরা তো অত্যন্ত গরীব ছিলাম। তাই বাবা পড়াশোনা করার জন্য কোনো টিউশন দিতে পারেনি। আমি ইংরেজিতে একটু কাঁচা ছিলাম। আমাদের গ্রামের এক দাদা , পরিমলদা আমাকে বিনা পয়সায় দেখিয়ে দিত। তার জন্যই আমি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে পেরেছি। তার প্রতি আমার মুগ্ধতা ও ভালোলাগা কাজ করতো । মুখে প্রকাশ না করলেও পরিমলদা আমার প্রতি দুর্বল সেটা বুঝতে পারতাম। তারপর হঠাৎ করে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর পরিমলদা একদিন তার বাড়ির পাশের আমবাগানে ডেকে বলেছিলো সে আমাকে ভালোবাসে, আমিও তাকে বলেছিলাম তারজন্য আমার মনেও একটা সফট কর্ণার আছে। কষ্ট হলেও তাকে কিন্তু বলেছিলাম --

-- বিয়ের সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পর বাবার মুখে চুনকালি দিয়ে এখন আমি তার সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করতে পারবো না। সেই সম্পর্কের সেখানেই ইতি।

আর এবাড়িতেই একজন আমার সঙ্গে জোর জবরদস্তি করেছিলো। সেটা আমি আর বলবো না , তিনি যদি নিজের মুখে তাঁর অপরাধের কথা স্বীকার করেন তাহলে জানতে পারবেন।

বিপাশা বলে -- ঠিক আছে আজ উঠি। এখনও পাঁচ- ছদিন আপনাদের বাড়িতে থাকবো। প্রয়োজন পড়লে আপনার সঙ্গে আবার কথা বলবো।
 
পরিচ্ছেদ – ৩: স্বর্ণালীর স্মৃতিচারণ ( অফ দ্য ক্যামেরা)



#
পর্ব - ১ - স্বর্ণালী ও পরিমলের প্রেম কাহিনী




বিপাশা উঠে চলে যায়। কিন্তু স্বর্ণালী সেখানে বসেই থাকে আনমনা হয়ে। সে মনে মনে ফিরে গেছে তার স্কুলের জীবনে, পরিমলদার কাছে পড়তে যাওয়ার দিনগুলোতে। বিপাশার কাছে সে সবটা বলেনি। সত্যের কিছুটা অপলাপ করেছে। সেও পরিমলকে খুব ভালোবাসতো। এমনকি তাদের মধ্যে আংশিক শারীরিক সম্পর্কও হয়েছিল। লজ্জার মাথা খেয়ে সে তার বাবাকে বলেছিলো পরিমলদাকে সে বিয়ে করবে, কিন্তু এবাড়ির বৈভবের কথা পদ্দি নাপতানির কাছে শুনে স্বর্ণালীর বাবার শীর্ণ চোখের তারা লোভের আলোয় চকচক করে উঠেছিল। স্বর্ণালীর গ্রামের পদ্দি মাসীই ওর জন্য এই সম্বন্ধ এনেছিলো। সে বাবাকে বুঝিয়েছিল রাজনারায়ণ বাবুর বড়ছেলে বিদেশে থাকে, ছোটো ছেলে ব্যাংকের বড় অফিসার, আর তাই তিনি মেজ ছেলেকেই তাঁর সম্পত্তির বেশিরভাগটা লিখে দিয়ে যাবেন। অগাধ সম্পত্তির কথা শুনে দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধরত ব্রাহ্মণ আর দ্বিমত না করে দিন সাতেকের মধ্যে এক ফাল্গুন সন্ধ্যার কনে দেখা আলোতে স্বর্ণালীকে এখানেই জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন। বাবার প্রতি অভিমানে অষ্টমঙ্গলার পর আর কোনদিন সে বাপের বাড়ি যায়নি।

পরিমলদার সঙ্গে কাটানো এক এক দিন ও এক এক মুহূর্ত স্বর্ণালীর ভালোভাবে মনে আছে। পরিমলদা ইংরেজির খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। সে উদাত্ত কন্ঠে যখন ইংরেজি কবিতাগুলো পাঠ করে শোনাতো এবং সহজ করে তাকে বুঝিয়ে দিতো তখন স্বর্ণালী মুগ্ধ হয়ে শুনতো । পড়ার বাইরেও পরিমল স্বর্ণালীকে শেক্সপিয়ারের 'রোমিও - জুলিয়েট' , 'ওথেলো' , ' ম্যাকবেথ' এসব কালজয়ী নাটক পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে শুনিয়েছে। এইসব নাটকের বিষয়বস্তু এবং পরিমলের বাচনভঙ্গি স্বর্ণালিকে মুগ্ধ করতো। আর সেই মুগ্ধতা থেকেই ক্রমশ ভালোলাগা ও ভালোবাসা জন্মায়। স্বর্ণালীর মনে পড়ে গেল পরিমলদার দুষ্টুমি ভরা এক পড়া পড়া খেলার কথা।

তখন দুজনের মধ্যে ভালোবাসা বেশ শক্তপোক্তভাবে বাসা বেঁধেছে। সেই সময় একদিন পড়তে গিয়ে পরিমলদা স্বর্ণালীকে বললো সে যদি আজ ইংরেজি রাইটিং লিখতে গিয়ে কোনো ভুল করে তাহলে যতবার ভুল করবে পরিমলদা ততবার তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চিমটি কাটবে। স্বর্ণালী তখনও বোঝেনি পরিমলদার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি কাজ করছে। সে সরল বিশ্বাসে রাজী হয়ে গিয়েছিল।

খাতা দেখার সময় যতবার ভুল বের হয়েছে ততবার পরিমল বাহুতে , পেটে, নিতম্বে চিমটি কেটেছে। তারপর তার ঠোঁটে দুই আঙুল দিয়ে সুড়সুড়ি দিয়ে আলতো করে চেপে দেয় । ঠোঁটে আঙুলের স্পর্শে স্বর্ণালী কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর সেই সুযোগে পরিমলের দুই হাত তার অষ্টাদশী স্তনে ব্লাউজের ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে তার স্তনবৃন্ত হাল্কা করে মুচড়ে দেয়। অষ্টাদশী স্বর্ণালীর শরীরে বিদ্যুতের ঝলকের মতো একটা শিহরণ বয়ে যায়। পুরো ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে যে স্বর্ণালী বাধা দেওয়ার সুযোগই পায় না। সে পরিমলকে দুহাতে ঠেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় তারপর রাগত কন্ঠে বলে--
-- "এটা কী হলো পরিমলদা ? "

পরিমল আতঙ্কিত ও নিশ্চুপ। স্বর্ণালী বই-খাতা গুছিয়ে নিয়ে দৃপ্ত পদক্ষেপে বের হয়ে যায়। পরিমল সারাটা দিনই আতঙ্কের মধ্যে কাটায় -- এই বোধহয় স্বর্ণালী তার বাবাকে নিয়ে হাজির হয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি , কিন্তু কেউ এলো না দেখে পরিমলের বুক থেকে দুশ্চিন্তার জগদ্দল পাথরটা নেমে যায়।

এদিকে রাতে বিছানায় শুয়ে স্বর্ণালীর চোখে আর ঘুম আসে না। পরিমলের স্পর্শ তার দেহে কামনার কালসর্পকে জাগ্রত করে দিয়েছে। তার শরীরটা কেমন যেন করছে , তার মনে নিষিদ্ধ জগতে প্রবেশের হাতছানি। বিছানায় সে উসখুশ করতে থাকে। পাশে শুয়ে থাকা ছোটো বোন বলে ওঠে --

--"এই দিদি তুই না ঘুমিয়ে কেবল এপাশ ওপাশ করছিস কেন ?"

স্বর্ণালী বলে --

--"কিছু না । তুই ঘুমিয়ে পড়।"

এই বলে উঠে বসে ঘটি থেকে জল গড়িয়ে খায়। তারপর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাইরে তখন পূর্ণিমার চন্দ্রালোকে মায়াবী এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। সেই ঠান্ডা বাতাসে স্বর্ণালীর দেহের উটাচন কিছুটা শান্ত হলেও অশান্ত মনের জ্বালা কিন্তু মেটে না। সকালের ঘটনা তার মনে গভীর প্রভাব রেখে গেছে। বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন চোখ লেগে আসে। ঘুমের দেশে তার দুচোখ জুড়ে স্বপ্ন নেমে আসে। স্বর্ণালী দেখে সে এক সুন্দর পার্বত্য উপত্যকায় (বইয়ে বর্ণিত উপত্যকার মতো) দাঁড়িয়ে আছে । চার দিকে রংবেরং এর ফুলের সমাহার এবং বিচিত্র রঙের অসংখ্য প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে । পাখির সুরেলা ডাকে মুখর উপত্যকায় স্বর্ণালীর মনে হয় সে পরীদের দেশে এসে পৌঁছেছে।

হঠাৎ ঘোড়ার খুরের খটাখট আওয়াজে স্বর্ণালী সচকিত হয়ে দেখে এক উজ্জ্বল সাদা ঘোড়ায় এক অশ্বারোহী তার দিকে এগিয়ে আসছে। তারপর চোখের পলক না পড়তেই সে স্বর্ণালীকে কোমর জড়িয়ে ধরে ঘোড়ার উপর তুলে মুখোমুখি বসিয়ে দিল। মুখ কাপড়ের আড়ালে থাকায় স্বর্ণালী চেষ্টা করেও তার মুখ দেখতে পাচ্ছিল না। ঘোড়া ছুটিয়ে আগন্তুক অশ্বারোহী একটা গুহার সামনে এসে থামলো। ঘোড়া থেকে নেমে সে স্বর্ণালীকেও কোলে কোরে ঘোড়া থেকে নামিয়ে হাত ধরে টেনে গুহার ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে , স্বর্ণালী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পারে না। আগন্তুক অশ্বারোহী স্বর্ণালীকে গুহার দেওয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরে চুমু খেতে শুরু করে , স্বর্ণালীর দুই হাতই আগন্তুকের হাত দ্বারা গুহার দেওয়ালের সঙ্গে আবদ্ধ থাকায় সে অসহায় হয়ে পড়ে। কিন্তু আগন্তুক এরপর এক হাতে স্বর্ণালীর কোমল স্তন চটকাতে শুরু করে। স্বর্ণালীর এক হাত খোলা থাকায় আগন্তুকের মূহুর্তের অসতর্কতায় সে এক ঝটকায় আগন্তুকের মুখের আবরণ সরিয়ে দেয় , সে অবাক হয়ে বলে --

-- "পরিমলদা তুমি !!!"

পরিমলের হাত তখন স্বর্ণালীর স্তন ছেড়ে উরুসন্ধিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। স্বর্ণালী বাধা দিয়ে বলে --

-- "না পরিমলদা তুমি এটা করতে পারো না। প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।"

হঠাৎ একটা ধাক্কায় স্বর্ণালীর ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তার বোন ধাক্কা দিতে দিতে তার মুখের উপর ঝুঁকে বলছে --

-- "এই দিদি তুই তখন থেকে বির বির করে কী বলছিস ? তোর কী হয়েছে ?"

স্বর্ণালী ধরফর করে উঠে বসে। সে চারদিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘরে রয়েছে। এতক্ষণ তাহলে সে স্বপ্ন দেখছিলো। পুব আকাশ প্রায় ফরসা হয়ে এসেছে। সে বোনকে বলল--

-- "কিছু হয়নি রে। বোধহয় স্বপ্ন দেখছিলাম।"

সে ইচ্ছে করেই পরিমলদার বাড়িতে ঘটা ঘটনার ব্যাপারটা চেপে যায়। তানাহলে বাবা তার পড়তে যাওয়া বন্ধ করে দেবে।

ওই ঘটনার পর থেকে স্বর্ণালী তিন দিন পরিমলদার কাছে পড়তে যায় না। এই তিন দিন সে শুধু ওই দিনের কথা মনে করতে থাকে। সেদিন ঘটনার আকস্মিকতায় সে পরিমলদাকে বাধা দিলেও পরিমলদার ছোঁয়ায় তার শরীর যে জেগে উঠেছিল এবং এক অচেনা সুখবোধ তার শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো সেটা সে ভালোই বুঝতে পারছে। তার সদ্য যৌবনে পা রাখা নারীদেহ যেন এই নিষিদ্ধ সুখ চেখে দেখার জন্য উদগ্রীব।

দিন তিনেক পর স্বর্ণালী বই-খাতা বুকে চেপে ধরে পরিমলের বাড়ির দরজার কড়া নাড়ে। পরিমল দরজা খুলে স্বর্ণালীকে দেখে আশ্বস্ত হয়। সে ভেবেছিল স্বর্ণালী হয়তো আর পড়তে আসবে না।

পরিমল স্বর্ণালীকে পড়াতে শুরু করে। কিন্তু সেদিন পরিমলের পড়ানো স্বর্ণালীর কানে ঢুকছিলো না। সে একমনে পরিমলকে দেখে চলেছিল। এক সময় পরিমলকে অবাক করে দিয়ে স্বর্ণালী পরিমলের হাত নিজের হাতের মধ্যে চেপে ধরে। চাপা উত্তেজনায় স্বর্ণালীর হাতের তালু ঘেমে গিয়েছিলো। পরিমল স্বর্ণালীর হাতের সেই ভিজে ভাব অনুভব করে। সে হাত ধরে স্বর্ণালীকে দাঁড় করিয়ে নিজের দিকে টেনে নেয়। দুটো শরীর যেন এক হয়ে গেল। পরিমলের বুক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে স্বর্ণালী তার মুখ তুলে ধরে পরিমলের দিকে। পরিমলের চুম্বনের প্রত্যাশায় তার ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপতে থাকে। পরিমল অন্ধের মতো স্বর্ণালীর ওষ্ঠ সুধা পান করার তাগিদে নিজের ঠোঁটের মধ্যে তার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো। নিষিদ্ধ সুখের অন্বেষণে তাদের কোনো খেয়াল নেই কি করছে না করছে। সেদিন পরিমলের বাড়ির লোক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ায় নব্য তরুণ-তরুণীর এই আদিম খেলা দেখার কেউ ছিলো না। পরিমলের দুজোড়া ঠোঁট যেন কর্কের ছিপির মতো একে অপরের সাথে আটকে গেল , স্বর্ণালীও তা ছাড়াতে চাইলো না। তার সেই রক্তিম ঠোঁট জোড়াকে পরিমলের আগ্রাসী ঠোঁট শেষ অবধি চেটেপুটে ভক্ষণ করলো। আজ স্বর্ণালী পরিমলকে কোনো বাধা দিলো না, বলা চলে বাধা দেওয়ার ইচ্ছেও তার ছিলো না। বরং পরিমলের চুল তার বাঁ হাত নেড়ে দিতে থাকলো আর অপর হাত দিয়ে পরিমলের জামার বোতাম খুলে তার বুকের লোমে আলতো করে হাত বোলাতে শুরু করলো। পরিমলও বোধহয় এটাই চাইছিলো , এটা যেন ওর শরীরের খিদেকে আরও তীব্র করে তুললো।

পরিমল কোমরে ধরে স্বর্ণালীকে আরও কাছে টেনে নিলো। স্বর্ণালী নিজেকে সঁপে দিলো পরিমলের বুকে। তীব্র উত্তেজনায় স্বর্ণালীর ঘাড়, গলা, কাঁধে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। কাঁধ থেকে ঘাড় বেয়ে জিভ বুলিয়ে লেগে থাকা সেই ঘামের বিন্দুগুলো চেটে খেতে লাগল পরিমল। তারপর গালে একটা আলতো চুমু খেতে খেতেই আচমকা স্বর্ণালীর কানে মুখ দিল পরিমল। কানের লতিতে কামড় দিয়ে সেটা মুখে নিয়ে টেনে টেনে চুষতে লাগলো।

এই প্রথম স্বর্ণালীর মুখ দিয়ে একটা আওয়াজ বেরোল " উমমমম উহু"

সেই আধো উচ্চারণের আওয়াজে পরিমলের কাম উত্তেজনা আরো বেড়ে গেল, ও এবার সোজা কানের মধ্যে জিভ ঢুকিয়ে দিল।

স্বর্ণালী যেন পাগল হয়ে গেল এই আদরে। কিছুটা বেঁকে গিয়ে ছটফট করতে লাগলো। আধ খোলা চোখে তাকিয়ে মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে উম উম আওয়াজ করতে লাগলো।

পরিমল কান ছেড়ে এবার সোজা স্বর্ণালীর ঠোঁটে হামলা করল।

স্বর্ণালীর পাতলা কোমল ঠোঁট দুটোকে মুখে নিয়ে তীব্রভাবে চুষতে লাগলো। স্বর্ণালী যেন একটা ঘোর কেটে চমকে উঠল। কয়েক মুহূর্তের জন্য সম্পূর্ণ স্থির হয়ে গেল। পরিমলের বুকটা ধড়াস করে উঠল, আবার কিছু কি ভুল হয়ে গেল নাকি!!!

তারপর হঠাৎ করে স্বর্ণালী পরিমলের মুখের মধ্যে নিজের জিভটা গুঁজে দিল । এতে পরিমল আরও উত্তেজিত হয়ে পাগলের মত চুক চুক করে ওর জিভটা চুষে খেতে লাগলো।

কতক্ষণ ধরে ওরা একে অপরকে চুমু খেয়েছিল তা মনে করতে পারে না, কারুর কোন হুঁশ ছিল না।

অনেকক্ষণ পরে দুজনের দম আটকে এলে তারপর একজন আরেক জনের মুখ থেকে মুখ সরালো।

পরিমল যেন একটা নেশার ঘোর লাগা দৃষ্টি মেলে স্বর্ণালীকে দেখতে লাগল। স্বর্ণালীর যাবতীয় উতপ্ত কামোত্তেজনা যেন হঠাৎ করে সরে গিয়েছে, তার জায়গায় একটা শান্ত স্নিগ্ধ ভালোলাগা এসে ভর করেছে।

দুই হাতে স্বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে রেখে ওর মুখের দিকে তাকালো পরিমল। স্বর্ণালীর মুখটা অল্প লাল, নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে, চোখ দুটো যেন প্রায় বুজে এসেছে, চুলটা ঘামে একটু ভিজে লেপটে আছে কপালে । পরিমল হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। প্রায় দুই বছর ধরে পড়াচ্ছে যে মেয়েটাকে , প্রায় প্রতিদিনই দেখছে যে মেয়েটাকে এর সাথে তার কোন মিল নেই।এযেন সম্পূর্ণ অচেনা কেউ একজন।

পরিমল আস্তে আস্তে স্বর্ণালীর বুকের আঁচল ফেলে দিলো। ধীরে ধীরে তার শাড়ি ও পেটিকোট খুলে দিলো। এখন পরিমলের চোখের সামনে স্বর্ণালীর গোলাপি ব্রেসিয়ারে মোড়া তরতাজা যৌবন পুষ্পদুটি উন্মুক্ত হয়ে গেল।

ব্রেসিয়ারে মোড়া হলেও স্বর্ণালীর নব প্রস্ফুটিত পদ্মফুলের কুঁড়ির মত তরতাজা স্তনদুটি দেখেই পরিমলের পুরুষাঙ্গের ডগা কামরসে ভিজতে শুরু করেছিল। এমনকি তার পাজামার ওপর দিয়ে সেই ভেজা ভাবটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এদুটো স্বর্ণালীর সেই স্তন, যেগুলি তখনও অবধি কোনও পুরুষের ছোঁওয়া পায়নি! পরিমল স্বর্ণালীর কাছ থেকে তার ব্রেসিয়ারের হুক খুলে দেবার অনুমতি চাইলো, কামনার সুরা পান করে নেশাগ্রস্ত স্বর্ণালী সেটা দিয়েও দিল।

পরিমল ব্রেসিয়ারের হুক খুলে দিয়ে সেটা স্বর্ণালীর স্তনের উপর থেকে সরিয়ে দিল। তারপর সে বোধহয় দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখল! একটা কুমারী মেয়ের পুরো খাড়া হয়ে থাকা সুদৃশ, সুগঠিত এবং কারুর ছোঁয়া না পাওয়া পুষ্পের মত প্রস্ফুটিত ৩২ সাইজের টুসটুসে স্তন দুটো দেখে পরিমলের মাথা যেন ঝনঝন করে উঠল। সে স্বর্ণালীকে তার নগ্ন বুকে চেপে ধরলো। যেই তার সদ্যযৌবন প্রাপ্ত বুকের স্তনযুগল পরিমলের তপ্ত বুকের সকল ঘামের বিন্দু বাষ্প করে দিলো, পরিমলের রক্তের মধ্যে এক কামরসের উৎসস্রোত শুরু হলো ।পরিমল নিঃসঙ্কোচে তার বুকের উপর আঙ্গুলের আলতো স্পর্শ করতেই কেঁপে ওঠে স্বর্ণালী, কচি শরীরে শুরু হলো আগুনের মাতন। নিষিদ্ধ সুখের আবেশে স্বর্ণালী আর চেষ্টা করেও চোখ খুলে রাখতে পারলো না, বুজে এলো তার চোখ। যেন এক অনাবিল আনন্দের অধিকারীনি সে তখন। তার কপালে বিন্দু বিন্দু জমা ঘামের মাঝে পরিমল একটা চুম্বন দিয়ে কচি স্তন দুটোয় হাত বুলাতে এবং তার ছোট্ট বৃন্ত দুটো মাঝে মাঝে কচলে দিতে লাগলো। এক অদ্ভুত অনুভূতি তার সারা অঙ্গে খেলে বেড়ায়, রক্তে লাগে মাতন, স্বর্ণালীর মুখ দিয়ে মৃদু মৃদু শিৎকার বের হতে লাগলো। এদিকে পরিমলের কঠিন লিঙ্গ স্বর্ণালীর উরুসন্ধিতে ক্রমাগত আঘাত করে চলেছে। কামরসে ভেজা প্যান্টির ওপর দিয়েই কঠিন লিঙ্গের আঘাতে পা দুটো অবশ হয়ে আসে স্বর্ণালীর। মিহি এক শিৎকার ঠিকরে বের হয়ে আসে স্বর্ণালীর কণ্ঠের গভীর থেকে "আহহ…"। কামনার আগুনে এই কচি শরীর দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে।

পরিমল এক ঝটকায় কোলে তুলে নেয় স্বর্ণালীকে। চোখ না খুলেই দুই হাতে পরিমলের গলা জড়িয়ে ধরে সে। তার কচি বুকের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার এক দমকা বাতাস, নিজেকে এই অচেনা আনন্দে ভাসিয়ে দেওয়ার উত্তেজনা। পরিমল ওকে ওর বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর স্বর্ণালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ক্ষুধার্ত বাঘের মতো, যেন ওকে এখনই কামড়ে খুবলে শেষ করে দেবে।

পরিমল স্বর্ণালীর কোমরে হাত রেখে ওর কোমর উঁচু করে দিয়ে প্যান্টিটা নামিয়ে দেয় কোমর থেকে। আধাবোজা চোখ মেলে একবার পরিমলের দিকে স্বর্ণালী তাকিয়ে দেখে ওর চেহারায় কামনার জ্বলন্ত আগুন। সামনে শুয়ে এক কচি দেহকে পেয়ে ওর ভেতরের রাক্ষসটা যেন ভীষণ ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। স্বর্ণালীর যোনির চারপাশে কালো চুলের গুচ্ছ দেখে পরিমলের চোখ জোড়া চকচক করে ওঠে।

হিস হিসিয়ে ওঠে, "ইসসস কি মিষ্টি দেখতে তুই…"

স্বর্ণালী লজ্জা ঢাকতে এক হাত দিয়ে পায়ের মাঝখান আড়াল করে বলে, "তুমি না ভীষণ অসভ্য।"

ওর শরীরের ওপর ঝুঁকে পড়ে পরিমল। ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে মাথা নামিয়ে আনে স্বর্ণালীর উরুসন্ধিতে। স্বর্ণালীর হাত সরিয়ে দিয়ে পরিমল তার নাকটা ওর যোনিতে চেপে ধরে টেনে নেয় নারীদেহের মাদকতাময় মিষ্টি গন্ধ। তারপর জিভ দিয়ে স্বর্ণালীর যোনিতে আঁকতে থাকে বিচিত্র সব আল্পনা এবং তার দুই হাত নিপীড়ন করতে থাকে স্বর্ণালীর রক্তিম দুই স্তনবৃন্তকে। কামনায় পাগল হয়ে ওঠে স্বর্ণালী । ছটফট করতে করতে, বিছানার চাদর খামচে ধরে স্বর্ণালী। সে তীব্র শিৎকার করে ওঠে,

"উমা মাআআআ… ইসসস কি রকম একটা অনুভূতি হচ্ছে… উফফফ ....... আআআআআহহহহ ....."

বেশ কিছুক্ষণ ধরে স্বর্ণালীর যোনি চুষে কামার্ত সুন্দরীকে উত্যক্ত করে তোলে পরিমল। তবে এই তীব্র যোনি চোষণে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না স্বর্ণালী। পিঠটা বিছানা থেকে আর্চের মতো তুলে ধরে সুতীব্র এক শিৎকার করে নিজের রাগমোচন করে ফেলে স্বর্ণালী। কামরসে ওর যোনিকুন্ড ভরে যায়। এ যেন এক স্বর্গীয় আনন্দ, জীবনে প্রথমবারের জন্য এই সুখানুভুতি ছড়িয়ে পড়লো স্বর্ণালীর দেহে।

ইতিমধ্যে পরিমল পাজামা খুলে তার পুরুষসিংহকে অর্গল মুক্ত করে। নারী মাংস চাখার লোভে তার পুরুষসিংহ মাঝে মাঝেই কেঁপে কেঁপে উঠছে। স্বর্ণালী অবাক হয়ে তার এত দিনকার জীবনে প্রথমবারের জন্য কঠিন ও দীর্ঘ পুরুষাঙ্গ চাক্ষুষ করলো। সে অবাক চোখে পরিমলের পুরুষাঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরিমল স্বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ---

-- " এবার এটা তোর যোনির ভেতরে নিয়ে আমাকে শান্ত কর।"

ভয়ার্ত কন্ঠে স্বর্ণালী বলে -- " বাপরে , এটা ভেতরে ঢোকালে আমি মরে যাব , আমার কুমারীত্বও অক্ষত থাকবে না। তুমি আমাকে বলো তোমাকে অন্য কীভাবে শান্ত করা যায়।"
পরিমল গ্রামের ছেলে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত পরিমল জানে এই সমাজে মেয়েদের কুমারীত্ব কতটা মূল্যবান। যদি স্বর্ণালীর সঙ্গে তার বিবাহ হয় তাহলে তখনই না হয় সবটা হবে। এখন কিছুটা বাদই থেকে যাক। সে একটু হেসে স্বর্ণালীকে বলে --

--"তাহলে আমার এটা চুষে দে। "

পরিমল বিছানা থেকে নেমে এসে মেঝেতে দাঁড়ালো। তারপর স্বর্ণালীকে ডাকলো।

স্বর্ণালী বলল --

--"ওমা..এতবড় এটা, আমি পারবো না।"

-"কেন তোর মুখের ছিদ্র এর চেয়ে ছোট নাকি?"

-"না,আগে কখনো চুষিনি।"

--"এর আগে তো যোনি চুষিয়ে রাগমোচনও করিসনি। আজ কী ওটা করতে খারাপ লাগলো?"

স্বর্ণালী লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে কোনো কথা না বলে পরিমলের সামনে হাঁটুগেড়ে বসে হাত বাড়িয়ে পরিমলের কঠিন

লিঙ্গ হাতের মুঠিতে নিয়ে নেয়। নরম আঙুল জড়িয়ে থাকে লিঙ্গের ওপরে, পরিমলের লিঙ্গ কেঁপে ওঠে নরম মুঠির শক্ত বাঁধনে। স্বর্ণালী হাতের মুঠিতে ওর লিঙ্গ নিয়ে মন্থন শুরু করে দেয়। সে চুমু খেল একটা পুরুষাঙ্গের মুন্ডিতে। পরিমল মুন্ডিটা স্বর্ণালীর গাল মুখে ঘষে দিলো। স্বর্ণালী মুখে পুরলো মুন্ডিটা। মুন্ডির চারপাশে জিভ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আদর করতে থাকে। পরিমলের মুখ থেকে সুখের শিৎকার নির্গত হতে থাকে।

পরিমল এবার সামনে ঝুঁকে দুহাতে আলতোভাবে স্বর্ণালীর মাথা চেপে ধরলো তারপর মুখের ভিতর লিঙ্গ চালাতে লাগলো। লিঙ্গ ঢুকছে, বের হচ্ছে। তার মধ্যেই স্বর্ণালী পরিমলের পাছা আঁকড়ে ধরে তীব্রভাবে লিঙ্গ চোষা শুরু করতেই কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিমলের গোঙানির আওয়াজ শুনতে পায় স্বর্ণালী। পরিমল স্বর্ণালীর চুল মুঠিতে চেপে ধরলো।

কানে তার হাস্কি আওয়াজ ভেসে আসলো, --"থাম নয়তো তোর মুখেই বীর্যপাত হয়ে যাবে।"

পরিমল স্বর্ণালীর মুখ থেকে লিঙ্গ বের করে নিয়ে মৈথুন করতে শুরু করে। এক সময় ফোয়ারার মতো বীর্য নির্গত হয়ে স্বর্ণালীর বুক ভিজিয়ে দেয়।

কাঁধে হাতের চাপ পড়ায় বাস্তবে ফিরে আসে স্বর্ণালী। সে চমকে তাকিয়ে দেখে তার স্বামী মনোতোষ হাসি মুখে দা্ঁড়িয়ে।

-- " তুমি ঘুম থেকে উঠে পড়েছো ? "

মনোতোষ হ্যাঁ সূচক ঘাড় হেলিয়ে দিলেও তাঁর চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ভেসে ওঠে।

স্বর্ণালী বুঝতে পেরে হেসে বলে --

-- " আজ থেকে বাবার(শ্বশুর মশাই) ইচ্ছে মতো ভিডিও অ্যালবাম তৈরির কাজ আজ থেকে শুরু হয়েছে। ওরা প্রথমেই আমার কাছে এসেছিলেন। কিন্তু তুমি ঘুমাচ্ছিলে বলে এই ঘরে এসে বসেছিলাম। চলো তোমাকে চা দিই। "

এই বলে স্বর্ণালী মনোতোষকে নিয়ে শোয়ার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
 
# পর্ব - ২ - স্বর্ণালীর ফুলশয্যার রাত



আজ সংসারের সমস্ত কাজ শেষ করে একটু রাত করেই স্বর্ণালী শোয়ার ঘরে এলো। এসে দেখলো মনোতোষ তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। একেবারে শিশুর মতো গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখে স্বর্ণালীর মনে মায়া ও ভালোবাসা দুটোরই অনুভূতি হলো। মানুষটা কথা বলতে পারে না , সকলের মতো স্বাভাবিক নয় , তাকে সন্তান সুখও দিতে পারেনি -- তথাপি মানুষটাকে ও অগাধ ভালোবাসে। অনেকটা শিশুর মতো এই মানুষটি তাকে মায়ার বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে। আজ ভিডিও অ্যালবামের কারণে সে অতীত জীবনে ফিরে গেলেও সে অনুভব করে পরিমলের প্রতি তার ভালোবাসা আর অবশিষ্ট নেই, এখন তার মন জুড়ে মনোতোষেরই অধিষ্ঠান।

স্বর্ণালী ঘুমন্ত মনোতোষের মুখে উপর পড়া চুলটাকে যত্ন করে কানের পাশে সরিয়ে দেয়। চাদরটাকে মনোতোষের গায়ের আরেকটু উপরে উঠিয়ে মুচকি হেসে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। তারপর কী মনে করে ঘরের উত্তরের বন্ধ জানালাটা খুলে দেয়। ডিসেম্বরের শীতল বাতাস আর বাগানের পাঁচমিশালি ফুলের গন্ধ তার মুখে হিমেল সুগন্ধি পরশ মাখিয়ে দেয়।

আজ বারবার স্বর্ণালীর তার অতীতের দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। তার মনে পড়ে আজকের মতো দশ বছর আগে আর এক রাতে এরকমভাবে সে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। সে রাতটা ছিল তার ফুলশয্যার রাত।

নানারকম আশা-নিরাশার দোলা তার মনে। একজন প্রতিবন্ধী মানুষ এবং তার বিত্তশালী পরিবারের সঙ্গে সে মানিয়ে নিতে পারবে তো - সংশয়ের দোলায় উতলা তার মন। সে তার সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে ভালোবাসতে পারবে তো কিংবা তার কাছ থেকে ভালোবাসা পাবে তো? এইসব ভাবনায় বিভোর স্বর্ণালী টেরই পায় না মনোতোষ কখন তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। মনোতোষ স্বর্ণালীকে কাঁধে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।

স্বর্ণালীকে দেখে মনোতোষের মুখে-চোখে এক বিস্ময়াবিষ্ট মুগ্ধতা ফুটে ওঠে। সে যেন আজ এক পরীকে দেখছে। লাল সিঁদুর কালারের বেনারসী শাড়ি , চোখে হালকা আইশ্যাডো ও গাঢ় কাজল , ঠোঁটে লাল সিঁদুর কালারের লিপিস্টক , মুখে হাল্কা মেকাপ। দুইহাত ভরা সোনার চুরি, পায়ে নুপুর, কানে ভারী সোনার দুল, লম্বা সোনার হার পরিহিতা স্বর্ণালীকে দেখলে স্বর্গের অপ্সরাও আজ লজ্জা পাবে।

মনোতোষ স্বর্ণালীর দুহাত ধরে নিজের দিকে টেনে আনে। স্বর্ণালী মনোতোষের দিকে তাকিয়ে দেখে মনোতোষ তার একদম সামনে।

আর একটু কাছে আসলেই ওদের ঠোঁট দুটিতে কোন দূরত্ব থাকবে না।

স্বর্ণালী পুরো বরফ হয়ে গেছে। নড়তেও পারছে না সে। মনোতোষের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে।

সেও এক অদ্ভুত মায়ায় পড়ে গেছে।

মনোতোষের দৃষ্টিতে স্বর্ণালী এক শিল্পীকে খুঁজতে চেষ্টা করে। মনোতোষ তাকে অবাক করে দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে তার ছবি আঁকার ঘরে প্রবেশ করে। তারপর স্বর্ণালীকে একটা কৌচে বসিয়ে ক্যানভাসের বুকে পাগলের মতো তুলি ও রঙের আঁচড় কাটতে থাকে। মাঝে মাঝে এসে স্বর্ণালীর মুখ, চুল সব ঠিক করে দিয়ে যাচ্ছে। সেই সময় তার স্পর্শ ও উষ্ণ নিঃশ্বাসে স্বর্ণালীর ভেতর পর্যন্ত কেঁপে উঠতে থাকে। কিছুক্ষণ পর ক্যানভাসটা নিয়ে এসে স্বর্ণালীর হাতে দিল। স্বর্ণালী নিজের ছবি দেখে নিজেই অবাক হয় -- সে এত জীবন্ত ও এত রূপসী। মনোতোষ হাত নেড়ে তাকে বলে এটা স্বর্ণালীকে তার ফুলশয্যা রাতের উপহার।

স্বর্ণালী বললো -- "এটা আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার।"

স্বর্ণালী উঠে দাঁড়ায়। মনোতোষ ওর কোমর ধরে ওকে কাছে টানে। তারপর ওর কোমর থেকে হাত দুটো উঠিয়ে হাতগুলো ওর দুই গালে রাখলো। গালে হাত বোলাতে বোলাতে চিবুক ধরে মুখটা একটু তুলে ধরে। স্বর্ণালী ওর চোখ বন্ধ করে ফেলে । ওর গোলাপের পাপড়ির মতো রাঙা ঠোঁট দুটো মনোতোষের চুম্বনের প্রতীক্ষায় তিরতির করে কাঁপতে থাকে। মনোতোষ এবার ওর ঠোঁটগুলোতে আলতো করে নিজের ঠোঁটের ছোঁয়ালো।

সাথে সাথে স্বর্ণালী কেঁপে উঠলো।

ওর কেঁপে ওঠাটা মনোতোষকে যেন আরো মাতাল করে দিল।

এবার মনোতোষের একটি হাত স্বর্ণালীর গাল থেকে কোমরে নেমে গেল। নারীর সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় স্বর্ণালী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে মনোতোষ আরো জোরে কাছে টেনে নেয় আর ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে ওর ঠোঁটের স্বাদ নিতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর মনোতোষ তার নাক মুখ স্বর্ণালীর ঘাড়ে ঘষতে লাগলো। ওর নারী শরীরের ঘ্রাণ নিতে লাগলো। নারী শরীরের ঘ্রাণ ওর কাছে নতুন না হলেও ( পাঠককুল মনোতোষ এর আগে আর একবার নারী শরীরের সংস্পর্শে এসেছিল। সে গল্পটা পরে শুনবো) স্বর্ণালীর শরীরের ঘ্রাণে ওর যেন নেশা লেগে যাচ্ছিল।

মনোতোষ ওর ঘাড় থেকে মুখটা তুলে ওর নাকটা স্বর্ণালীর চুলে ডুবিয়ে দিলো। ওর চুলের ঘ্রাণ যেন মনোতোষের নেশা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

ওর ঘাড়ে মুখটি আবার নিয়ে গিয়ে মনোতোষ আলতো করে একটা চুমু দিল।

চুমু দিতেই স্বর্ণালী কেঁপে উঠল।

এবার মনোতোষ বৃষ্টির মতো অবিশ্রান্ত ধারায় ওর ঘাড়ে, গলায় , গালে আরও চুমু দিতে লাগল।

প্রতিটি চুমুতেই স্বর্ণালী কেঁপে কেঁপে উঠছিল।

ওর নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছিল। প্রাথমিক লজ্জা কেটে যাওয়ার পর স্বর্ণালীও তীব্র একটা আবেগে মনোতোষকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। স্বর্ণালীর বুকের নরম কবুতর দুটি মনোতোষের বলিষ্ঠ বুকে পিষ্ট হতে লাগলো।

প্রাথমিক আবেগ ও উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে যাওয়ার পর মনোতোষ স্বর্ণালীর হাত ধরে শোয়ার ঘরে এসে বিছানায় বসে। তারপর পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা গিফট বক্স বের করে স্বর্ণালীর হাতে দেয়। স্বর্ণালী বক্স খুলে দেখে একটা সুন্দর হীরের আংটি। গরীব ঘরের মেয়ে স্বর্ণালী হীরের আংটির জ্যোতি দেখে অবাক হয়ে যায়। সে মনোতোষকে বলে আংটিটা পড়িয়ে দেওয়ার জন্য। মনোতোষ আংটিটা পড়িয়ে দিয়ে হাতে একটা চুমু খায়। তারপর হাতের মুদ্রায় ইশারা করে স্বর্ণালীকে বলে - " তুমি আমার বন্ধু হবে?"

স্বর্ণালী বলে , " তুমি আমার স্বামী , বন্ধু - সবকিছু। তোমার জন্যই আমি আজ এ বাড়ির বউ। আমার মন, আত্মা , সুখ-দুঃখ - সবকিছুই আজ থেকে তোমার।"

মনোতোষ প্রচন্ড আবেগ নিয়ে স্বর্ণালীকে কিছু বোঝাতে চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো ভাবে প্রকাশ করতে না পেরে মুখ থেকে বিচিত্র একটা শব্দ বের হতে থাকে এবং গোটা মুখটা লাল হয়ে যায়।

স্বর্ণালী মনোতোষের মুখটা বুকে চেপে ধরে হাত বোলাতে বোলাতে বলে , " তোমাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে না। তুমি মুখে কিছু না বলতে না পারলেও আমি বুঝতে পারছি তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আজ থেকে আমি তোমার ঢাল হয়ে তোমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করবো। "

মনোতোষ স্বর্ণালীর কোলে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ে। স্বর্ণালী মনোতোষের চুলে বিলি কাটতে থাকে। তার মন থেকে সমস্ত দ্বিধা -দন্দ্ব কেটে যায়। এই মুক মানুষটার প্রতি মায়া, মমতা, ভালোলাগা, ভালোবাসা - সব কিছুই তার চোখ ও মুখের ভঙ্গিমায় ফুটে উঠতে থাকে। মনোতোষ স্বর্ণালীর কোল থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকায়। চার চোখের মিলন হয়। মনোতোষ সেই কাজল কালো চোখে যে ভাষা খেলা করছিলো তা পড়তে পারে, সে ভাবতে থাকে--

-"স্বর্ণালীর মতো মমতাময়ীকে অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে শুধু ভাগ্যবানেরাই লাভ করে থাকে! স্বর্ণালীকে এই মুহূর্তে খুব-ই সুন্দর লাগছে। আজ এই সাজ-সজ্জা,গভীর কাজলকালো চোখদুটোর মায়াবী চাহনি,সুকোমল মুখখানি আমায় যেন পাগল করে দিচ্ছে ওর স্পর্শ পেতে,ওকে কাছে পেতে,ওর গোলাপের মত পেলব-কোমল তনুর অমোঘ আকর্ষণে আমি আজ মুগ্ধ-বিমোহিত! আগে তো কখনোই আমার মন এমন ব্যাকুল হয়ে ওঠেনি। এত অস্থিরতা কাজ করেনি । এমন পিপাসার্ত মনে হয়নি নিজেকে। কোনো নারীর প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গীও তার মনে উদয় হয়নি,এমন কি অমৃতার সঙ্গে প্রেমের সেই দূর্বার দিনগুলোতেও! "

মনোতোষ প্রশ্ন করে নিজেকে "আমি কি স্বর্ণালীকে এত অল্প সময়ের মধ্যেই ভালোবেসে ফেলেছি? তবে অমৃতার সঙ্গে আগের সবকিছু কি ছিলো? শুধুই কি মোহ? যেমনটি মা বলেছিলেন? নিশ্চয়-ই তাই।নয়তো আমার মনের অন্ত:স্থলে অমৃতার সঙ্গে বিচ্ছেদের বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই,অনুশোচনা নেই কেন? কোনো জাদুকাঠির স্পর্শে আমার নতুন জন্ম হল কি তবে?"

মনোতোষ উঠে বসে নবপরিনীতার মুখ তুলে ধরলো। চার চোখের মিলন হলো । আর এবার যেন কামদেব বিদ্ধ করলেন তার প্রেমের তীরে মনোতোষ-স্বর্ণালীকে সেই আদিম-উন্মত্ততাকে আহ্বান করে যা ব্যতীত সৃষ্টি অপূর্ণ আর প্রেম অতৃপ্ত!

মনোতোষ উঠে বসে স্বর্ণালীকে নিজের বুকে টেনে নিল। পুরুষ স্পর্শে একটু উত্তেজিত স্বর্ণালী মনোতোষের পাঞ্জাবির বোতাম খুলে তার নগ্ন বুকে মুখ ঘষতে লাগলো। স্বর্ণালীর তপ্ত ঠোঁটের স্পর্শে মনোতোষের দেহে কামনার হলাহল ফেনিয়ে উঠলো। স্বর্ণালীর ঠোঁটে ঠোঁট বসালো সে। তার সারা দেহে যেন বিদ্যুৎ বয়ে যাচ্ছে। নরম ঠোঁটের ছোঁয়াতে মনোতোষের সারা গা শিউরে উঠতে লাগলো। তার পুরুষাঙ্গটা নেচে উঠলো একটু। সে স্বর্ণালীকে ঠেলে শুইয়ে দিয়ে নিজের জিভ ঠেলে দিল স্বর্ণালীর মুখে। স্বর্ণালীও এক আশ্চর্য খিদে নিয়ে চুষতে লাগলো মনোতষের জিভ। মনোতোষের একটা হাত স্বর্ণালীর নগ্ন কোমরে পড়তেই স্বর্ণালী কেঁপে উঠলো একটু। তারপর মনোতোষ চুমু খাওয়া বন্ধ করে একটু উঠে বসে নিজের গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে ফেললো। একবার স্বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে, ওর বুকের ওপর থেকে আঁচলটা সরিয়ে দিল। স্বর্ণালীর ভরাট স্তন দুটো যেন ব্লাউজ আটকে রাখতে পারছে না। মনোতোষ ব্লাউজের ওপরে হাত রাখতেই স্বর্ণালী একটা হালকা শিৎকার করে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো। মনোতোষ স্বর্ণালীর গলায় একটা চুমু দিয়ে, ব্লাউজের হুক গুলো খুলতে লাগলো। গরমে আর উত্তেজনায় স্বর্ণালী ঘামতে শুরু করেছে। তার দেহের থেকে পারফিউম আর ঘামের গন্ধ মিলে এক মাদকতাময় নারী শরীরের ঘ্রাণ নাকে আসছে মনোতোষের। মনোতোষ স্বর্ণালীর স্তন দুটো ব্রার ওপর দিয়ে হালকা করে কামড়াতে লাগলো। তার দুই হাত দিয়ে সে স্বর্ণালীর শাড়ি কোমর থেকে টেনে খুলে ফেলল। আর স্বর্ণালীর হাত চলে গেল মনোতোষের পায়জামার ফিতায়। মনোতোষ কিছুক্ষণ ব্রার হুক খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। সে ব্রার কাপ দুটো ধরে একটু ওপরে উঠিয়ে দিতেই স্বর্ণালীর ভরাট ও সুডৌল স্তন জোড়া বেরিয়ে পড়লো। স্বর্ণালীর গৌর বর্ণের বড় গোল নরম স্তনের ওপরে ডালিমের দানার মতো রক্তিম স্তনবৃন্ত যেন মনোতোষের চোষনের অপেক্ষায় অধীর। মনোতোষ দুই হাত দিয়ে স্বর্ণালীর স্তন টিপতে টিপতে হঠাৎ একটা স্তনবৃন্ত মুখে পুরে চুষতে লাগলো।

স্বর্ণালী শিউরে উঠে -- উমমম করে একটা জোরে শিৎকার করে উঠলো। মনোতোষ কৌতুহলি মানুষ। সে স্বর্ণালীর স্তনবৃন্ত দুটো দুই আঙুল দিয়ে মুচড়ে দিতে লাগলো, আর সাথে সাথে স্বর্ণালী কেঁপে উঠলো। মনোতোষের পুরুষ সিংহও জাঙ্গিয়ার বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করে উঠলো।

স্বর্ণালীর শাড়ি, ব্লাউজের পাশাপাশি মনোতোষের পরনের জাঙ্গিয়া বাদে আর সব এখন মাটিতে পড়ে আছে। মনোতোষ একটা হাত স্বর্ণালীর উরুতে রেখে পেটিকোটটা ওঠাতে লাগলো। একটু পরেই স্বর্ণালীর মসৃণ পায়ে মনোতোষ হাত বোলাতে লাগলো। কী সুন্দর লক্ষ্মী লক্ষ্মী গঠন পায়ের। স্বল্প পরিচিত পুরুষের হাতের ছোঁয়ায় স্বর্ণালী হালকা গোঙাচ্ছে। মনোতোষ পেটিকোটটা তুলে স্বর্ণালীর কোমরের কাছে জড়ো করলো। এবার সে স্বর্ণালীর স্তনবৃন্তে চুমু দিতে দিতে স্বর্ণালীর উরুসন্ধিতে নিজের হাত রাখলো। প্যান্টির ওপর দিয়েই স্বর্ণালীর উত্তপ্ত যোনির ভেজা উষ্ণতা পরখ করতেই মনোতোষের পুরুষাঙ্গ কঠিন হয়ে আকাশমুখী হয়, পুরুষাঙ্গের মাথায় ঘাসের ওপর শিশির বিন্দুর মতো কামরস নির্গত জমতে লাগলো। মনোতোষ একটু বিব্রত ভাবে স্বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে, নিজের ভেজা জাঙ্গিয়াটা খুলে মাটিতে ফেলে দিল। তার পুরুষাঙ্গ শক্ত ও খাড়া হয়ে আছে। তা দেখে কামোত্তেজিত হয়ে স্বর্ণালী উঠে বসে নিজের ব্রার হুকটা খুলে সেটাও মাটিতে ফেলে দিল। তারপর মনোতোষকে অবাক করে দিয়ে তার পুরুষাঙ্গটাতে একটা চুমু দিল। মনোতোষ বিছানায় শুয়ে পড়লো আর স্বর্ণালী তার অতীত অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে মনোতোষের পুরুষাঙ্গটা চাটতে লাগলো। তার পুরুষ রসের স্বাদে স্বর্ণালীর সারা দেহে এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হলো। সে বুভুক্ষুর মতো মনোতোষের পুরুষাঙ্গ চুষতে লাগলো। তালে তালে স্বর্ণালীর ভরাট স্তন দুটোও নাচতে লাগলো। সে যেন কামজ্বরে পাগল হয়ে যাবে। তার প্যান্টি এতক্ষণে কামরসে ভিজে চপ চপ করছে। সে এক হাতে নিজের যোনির ফাটলে আঙুল ঘষতে থাকে আরেকবার নিজের স্তনবৃন্ত ধরে টান মারতে থাকে।

স্বর্ণালী এবার নিজের শায়াটা খুলে মাটিতে ফেলে দিয়ে, প্যান্টিটাও একটানে খুলে ফেললো। একটা বন্ধ ঘরে একজন অচেনা পুরুষের ( পরিমল তার পূর্ব পরিচিত ছিল।) সাথে একেবারে নগ্ন হয়ে সে আগে কখনও থাকেনি। স্বর্ণালীর মনে হচ্ছিল এই সময়টাতো আর ফিরে আসবে না। কদিনের মধ্যেই মনোতোষ একজন পরিচিত পুরুষ হয়ে যাবে। আর কি কখনও সে এই ফুলশয্যার রাতের অনুভুতি পাবে?

মনোতোষের কোমরের ওপর উঠে বসে ওর ঠোঁটে একটা চুমু দিল স্বর্ণালী। মনোতোষ তার দুই হাত দিয়ে স্বর্ণালীর বুকের নরম কবুতর দুটোকে আদর করতে লাগলো, তাদের উষ্ণতায় নিজের হাত সেঁকতে লাগলো।

স্বর্ণালী নিজেই সক্রিয় হয়ে নিজের পায়ে সামান্য ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়ে বসে, এক হাত দিয়ে মনোতোষের পুরুষাঙ্গটা ঠিক নিজের যোনির মুখে ধরলো। স্বর্ণালীর কামরসে চুপচুপে ভেজা যোনির স্পর্শ পেয়ে মনোতোষের পুরুষাঙ্গটা একটু কেঁপে উঠলো। স্বর্ণালী আস্তে করে পুরুষাঙ্গটার ওপর বসতে চেষ্টা করতেই এক তীব্র বেদনা অনুভব করলো। তার মনে হচ্ছিল যেন তার যোনিটা ছিঁড়ে দুই ভাগ হয়ে যাবে। সবারই কি প্রথমবার যৌনসম্পর্ক স্থাপনের সময় এরকম যন্ত্রণার অনুভূতি হয় ? সে আবার চেষ্টা করলো মনোতোষের পুরুষাঙ্গটা তার যোনিগহ্বরের ভেতরে ঢোকানোর , কিন্তু তীব্র ব্যাথা করছে তার।

মনোতোষ ঠিক বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে। স্বর্ণালী কী তার পুরুষাঙ্গটা ভেতরে নিতে ভয় পাচ্ছে?

এরপর মনোতোষ একটানে স্বর্ণালীকে নিজের দেহের নিচে টেনে নিয়ে এলো। তারপর এক সময় মনোতোষ স্বর্ণালীর যোনির মুখে লিঙ্গের ডগা ধরে ঝুঁকে পরে ওর মুখের ওপরে এবং নিজের ঠোঁট দিয়ে ওর ঠোঁট চেপে ধরে। এবার স্বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে ওর ভেতরে উপগত হওয়ার অনুমতি চাইলো। স্বর্ণালী ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালে মনোতোষ একটা অল্প ধাক্কা দিল, ইসস্ , যোনির ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল মনে হল স্বর্ণালীর। চোখ বুজে মনোতোষের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে সেই ব্যথা সামলে নিতে চাইলো কোনোমতে। স্বর্ণালীর কচি আঁটো যোনির মধ্যে ভীষণ শক্ত এক টুকরো মাংসপিণ্ড ঢুকে পড়েছে, ফাটিয়ে দিচ্ছে ওর নরম যোনির মাংসল দেওয়াল। ঊরু জোড়া টানটান হয়ে গেছে, শরীর শক্ত হয়ে আসে স্বর্ণালীর। আরো একটা ধাক্কা মারল মনোতোষ, একদম গোঁড়া পর্যন্ত ঢুকে গেল ওর লিঙ্গ স্বর্ণালীর কচি আঁটো যোনির ভেতরে।

"আহহহহ ..... লাগছে " স্বর্ণালীর মুখ থেকে এক আর্ত চিৎকার বের হয়ে এল। তীব্র যন্ত্রণা করে ওঠে ওর যোনি , মনে হল এই বুঝি ওর নিম্নাঙ্গ ছিঁড়ে যাবে ওর শরীর থেকে, দু টুকরো হয়ে যাবে ওর কচি দেহ। ব্যাথায় চোখ থেকে জল বেরিয়ে এলো।

তা দেখে মনোতোষের চোখে একটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ফুটে ওঠে। স্বর্ণালীর মনে হয় - মনোতোষ বুঝি জানতে চাইছে তার কষ্ট হচ্ছে কিনা ? সে স্বর্ণালীর ভেতর থেকে বের হয়ে আসবে কিনা জানতে চায়।

কিন্তু এত যন্ত্রনার মধ্যেও স্বর্ণালী এক আনন্দ অনুভব করতে লাগলো। তার যোনি থেকে যেন বন্যা বয়ে চলছে কামরসের। ইতিমধ্যে স্বর্ণালীর যন্ত্রণা একটু কমে এল , সে একটু শান্ত হল। সে মনোতোষকে বলল - " না না ঠিক আছে । আর যন্ত্রণা অনুভব করছে না। "

এই কথা শুনে মনোতোষ প্রথমে ধীরে, তারপর জোরে জোরে কোমর উপর নিচ করে ঠাপাতে লাগলো। স্বর্ণালীর কচি যোনিটা যেন মনোতোষের পুরুষাঙ্গটাকে কামড়ে ধরেছে। ঠাপের তালে তালে স্বর্ণালী গোঙাচ্ছে আর তার বুকটা দুলছে। মনোতোষ স্বর্ণালীর ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে আরো দ্রুততার সঙ্গে তাকে মন্থন করতে লাগলো। স্বর্ণালীর মনে হচ্ছিল তার দেহটাকে যেন ছিঁড়ে ফেলবে মনোতোষের মোটা ও কঠিন পুরুষাঙ্গটা। দুজনের শিৎকার গুঞ্জিত হতে থাকলো সারা ঘর জুড়ে। হঠাৎ স্বর্ণালীর সারা দেহে একটা কম্পনের মত অনুভূতি বয়ে গেল। একটা আনন্দের স্রোতে সে যেন ভেসে যাচ্ছে। সেই স্রোতের ধারাতে তার যোনিও নারী রসে ভরে উঠলো। একটু পরেই স্বর্ণালী নিজের নারী অঙ্গের গভীরে মনোতোষের পুরুষ বীজের ফোয়ারা অনুভব করলো। এ কী অপূর্ব সুখ।

হাঁপাতে হাঁপাতে বীর্য ত্যাগ করে স্বর্ণালীর পাশে শুয়ে পড়লো মনোতোষ। দুজনে চরম দৈহিক পুলক লাভ করে পরিশ্রান্ত হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।

পর দিন সকালে ঘুম ভেঙে স্বর্ণালী প্রাণভরে দেখছে তার পাশে গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন প্রেম পুরুষকে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে শিশুর মতো মায়াময় ও কমনীয় দেখাচ্ছিল! যদিও প্রথমেই অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে শরীরী প্রেমে জড়াবার ইচ্ছে তার ছিলো না, কিন্তু দুজনের ভালোলাগা আর কাছে পাওয়ার আকর্ষণ মানেনি কোন দ্বিধা....আর এক অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষের সেবা করার,তার মুখে হাসি ফুটিয়ে সুখী দেখার ও নিজে সুখী হওয়ার যে পূণ্য করার সুযোগ বিধাতা তাকে দিচ্ছেন, এর কাছে পৃথিবীর আর সবকিছুই গৌণ! .......... আজ প্রকৃত অর্থেই সফল হলো একটি সত্যিকারের ফুলশয্যার রাত আর তার গল্পকথার!

পাঠকুল শেষ হলো স্বর্ণালীর কথা। আমরা আবার বিপাশার পিছন পিছন তার ক্যামেরাকে অনুসরণ করি। দেখি এবার সে চৌধুরী ভিলার কোন সদস্যের কাছে যায়।
 
তৃতীয় অধ্যায়ঃ

চন্দ্রলেখার
উপাখ্যান -

পরিচ্ছেদ
- ১ : চন্দ্রলেখার স্বাক্ষাৎকার (অন দ্যা ক্যামেরা
)



বিপাশার ক্যামেরা স্বর্ণালীর ঘর থেকে বেরিয়ে চলছে চন্দ্রলেখার ঘরের দিকে। এ বাড়ির কাজের মেয়ে মিতালী বিপাশাকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে চলেছে।

চন্দ্রলেখার ঘরে ঢুকে বিপাশা দেখে এক বিরাট ঘরে বিশাল এক শয্যায় চন্দ্রলেখা শুয়ে আছেন। লাল পাড় সাদা ধবধবে শাড়ী ও সিঁথিতে একরাশ সিঁদুর নিয়ে শুয়ে থাকা চন্দ্রলেখাকে দেখে বিপাশা বোঝে অসম্ভব আভিজাত্য ও অহঙ্কার মহিলাকে ঘিরে রয়েছে।

বিপাশা চন্দ্রলেখার মাথার কাছে রাখা একটা টুলে বসে বলে - " মাসীমা , আমি এসে গেছি। আপনাকে আগেই আমি খবর পাঠিয়েছিলাম ভিডিও অ্যালবামের জন্য আপনার ইন্টারভিউ নেব। "

চন্দ্রলেখা বিছানায় একটু উঠে বসলেন। "আঃ! আহহ ..... " চন্দ্রলেখার মুখ যন্ত্রণায় কুঁচকে উঠলো। বাতের ব্যথায় চন্দ্রলেখা প্রায় পঙ্গু হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী।

চন্দ্রলেখা বললেন - " আমার কথা ? আমার জীবনে এমন কোনও ঘটনা নেই যেটা তোমাকে আমি আলাদা করে শোনাবো।"

বিপাশা বলে ওঠে - " মাসীমা , প্রত্যেকের জীবনেই এমন কিছু কথা আছে যা সকলের সামনে বলা যায় না। আপনি স্বীকার করুন আর না করুন আপনার জীবনেও এমন কোনো গোপন ঘটনা রয়েছে যার কথা কাউকে কোনোদিন বলেননি। আমি আমার টেপরেকর্ডারে সেই ঘটনা রেকর্ড করবো , আর আমার ক্যামেরা ঘটনা বলার সময় আপনার চোখ-মুখের এক্সপ্রেশান ধরে রাখবে। "

চন্দ্রলেখার শুষ্ক ঠোঁট দুটো থরথর করে কেঁপে ওঠে। তিনি বলেন - " এই মেয়ে , কি লাভ বলো এইভাবে হারানো দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করে ? যা চলে গিয়েছে তাকে তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় , কি হবে অতীতকে খুঁড়ে ?"

বিপাশা বলে - " আমি কথা দিচ্ছি মাসীমা , তেমন কোনো গোপন কথা থাকলে আমি কখনোই দেখাবো না। আপনাকে আগে ভিডিওটা দেখাবো , আপনি যতটুকু বলবেন ততটুকুই সকলে দেখবে। "

-- " তুমি সত্যি বলছো তো বিপাশা ? তোমরা এযুগের আধুনিক মেয়েরা কাজ আদায় করার জন্য অনেক মিথ্যা কথা বলে থাকে। তোমাকে দেখে অবশ্য আমার মনে হচ্ছে তুমি সেই দলে নও।"

এই বলে চন্দ্রলেখা একটু উদাস হয়ে যান। তারপর তিনি বলতে শুরু করেন - " জানো বিপাশা , আমার ছোটো মেয়ে মানসী , তাকে বড্ড বেশি মনে পড়ছে আমার এখন। সে বেঁচে থাকলে তোমার বয়সী হতো। তার দেহে তখন সদ্য যৌবন পা রেখেছে, একটু ছটফটে সেই মেয়েটা পাখির মতো কলরবে ভরিয়ে রাখতো গোটা বাড়িটা। সে হাসলে তোমার মতোই তার গালেও টোল পড়তো। কিন্তু মারনব্যধি ম্যালিগনান্ট ম্যালেরিয়া তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে।

মনে হচ্ছে, তুমি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না , বলো কি বলতে হবে আমাকে ? চল্লিশ বছরের এই দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের কোথা থেকে শুরু করতে হবে বলো? "

-- " যে দিন প্রথম আপনার সঙ্গে রাজনারায়ণ বাবুর দেখা হয়েছিল কিংবা যেদিন আপনি প্রথম সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে বাড়ির গৃহিণী হিসেবে চৌধুরী ভিলাতে পদার্পণ করেছিলেন সেদিন থেকে।"

-- " তাহলে তো আমাকে অনেক বছর আগের পৃথিবীতে ফিরে যেতে হবে।

তুমি আমাকে তাক থেকে ওই বটুয়াটা এনে দিতে পারবে ? "

বিপাশা , ঘরের দেওয়াল আলমারির তাক থেকে একটা বটুয়া এনে চন্দ্রলেখার হাতে দিল। সেখান থেকে যত্ন করে বের করে আনলেন একটা ছবি। আর বললেন -- " দেখতো মা এঁকে চিনতে পারো কিনা?"

বিপাশা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখে ছবিটা প্রায় হলুদ হয়ে গেছে। একটি অপূর্ব সুন্দরী সদ্য যুবতীর সঙ্গে সুপুরুষ এক যুবক।

বিপাশা বলল -- " আমি আন্দাজ করছি যুবতীটি আপনি এবং আপনার সঙ্গে পুরুষটি রাজনারায়ণ বাবু।"
 
ছোট্ট এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে চন্দ্রলেখা বলেন, " ঠিক বলেছো। এটা বিয়ের পর পরই প্রায় চল্লিশ বছর আগে স্টুডিওতে গিয়ে তোলা। সে নিয়ে রক্ষণশীল এই চৌধুরী ভিলাতে কি আলোড়ন। কিন্তু আমার স্বামী বাড়ির কোনো বিধিনিষেধই মানতেন না। একদিন আমাকে নিয়ে সাহেব পাড়াতে গিয়ে এই ছবি তুলে আনেন। দেখো , তখন উনি কতটা সুপুরুষ ছিলেন।"

বিপাশা চোখ বন্ধ করে রাজনারায়ণ বাবুর চেহারাটা একবার ভেবে নেয়। সবে সত্তর পার হওয়া মানুষটি এখনও জাগ্রত পৌরুষের জ্বলন্ত চিহ্ন। এখনো ইচ্ছে হলে তিনি যৌবনের বিবিক্ত উন্মাদনাকে যেন মুঠোবন্দী করতে সক্ষম।

বিপাশা সন্তপর্ণে টেপটা চালিয়ে দেয়। ক্যামেরাটা ফোকাস করে চন্দ্রলেখা দেবীর ওপরে। বলে - " তাহলে আপনার মুখ থেকে শোনা যাক আপনার বিয়ের গল্প।"

বিয়ের রাতেই প্রথম তাঁকে ভালো করে দেখার সুযোগ পাই আমি। তখন আমি সবেমাত্র আঠারো বছর পার হয়েছি। লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমার বরের দিকে , আর ভাবছি এত রূপ কি কোনো পুরুষের মানুষের হতে পারে, মনে হয় যেন দেবদূত নেমে এসেছে। কিন্তু এই সুপুরুষ মানুষটিই আমাকে চল্লিশ বছর ধরে ভুগিয়েছে। সেসব কিছু খুলে বলতে গেলে একটা মহাভারত হয়ে যাবে।"

বিপাশা বুঝতে পারে এবার দারুণ একটা রহস্য রোমাঞ্চিত গল্প খুলতে চলেছে। সে ভাবে প্রত্যেক নারীই বোধহয় তার মনের মধ্যে এক একটা মহাভারত লুকিয়ে রেখেছে। খুব সাবধানে তাকে চন্দ্রলেখার মনের ভেতর থেকে এই মহাভারতের গোপন কথাগুলো বের করতে হবে। তারজন্য তাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।

চন্দ্রলেখা বলতে থাকেন , " কালীঘাটের এক গরীব ব্রাহ্মণ পরিবারে। তিন বোনের মধ্যে আমি ছোট। কালীঘাটে পুজো দিতে গিয়ে আমাকে দেখে শুধুমাত্র রূপের জন্য আমার শ্বাশুড়ীমা তাঁর একমাত্র ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ের ঠিক করেন।

চন্দ্রলেখা বলে চলেছেন - " বিয়ের পর সোহাগ রাত। অনেক স্বপ্ন আর আতঙ্ক ছিল মনের মধ্যে। আমার বিবাহিতা বন্ধুরা শুনিয়েছিল তাদের সোহাগ রাতের গল্প। সেই গল্পে আছে রহস্য-রোমাঞ্চ-আতঙ্কিত উন্মাদনা, আছে কিছু কামনা-বাসনা, হিংস্র আর্তনাদও আছে। আমি ভেবেছিলাম বড়লোকের খেয়ালী ছেলের উন্মাদ উন্মত্ততা সহ্য করতে পারবো তো? তার বাসনার অগ্নিকুন্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যাব না তো?

কিন্তু সেরাতে স্বামীকে পেলাম আমার বন্ধুর মতো। আমার স্বামী আমার কানে মুখ রেখে বলল - তুমি কত সুন্দর চন্দ্রলেখা - তারপর দুজনে পরস্পরকে খুলে চলেছিলাম পরস্পরের কাছে। সারা রাত কেটে গিয়েছিল এক আশ্চর্য মগ্নতার মধ্যে। উনি দক্ষ শিল্পীর সেতারে সুর তোলার মতো আমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলেন। আমি ভাবলাম তাহলে বোধহয় আমার কপাল হেসেছে। আমি স্বামী সোহাগী হয়ে কাটিয়ে দেবো সারা জীবনটা।

বিয়ের প্রথম তিন মাস স্বপ্নের মতো কেটে গেল। আমি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ওনার বাইরের আকর্ষণ বাড়তে লাগলো। শুনতে পেলাম বাইরে ওনার বাঁধা মেয়েমানুষ রয়েছে।

এইভাবে কেটে গেল আরো চার মাস। তারপর একদিন রাতে আমাকে বললেন ছবি আঁকা শিখতে তিনি যাবেন সেই সুদূর ফরাসী মূলকে। তখন বড় খোকা পেটে , সাত মাসের। আমি ভাবতে পারছি না এই অবস্থায় আমার স্বামী আমাকে ফেলে রেখে প্রবাসী হচ্ছেন।

হয়তো আমার এই অনিশ্চয়তার ছোঁয়া আমার চোখে -মুখে ফুটে উঠেছিল। উনি উঠে এসে আমার চিবুকটা তুলে চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন - চন্দ্রলেখা, যদি কোনো দিন আমি বড় শিল্পী হতে পারি তাহলে আমার আত্মকথা লিখবো। সেখানে তোমার

এই আত্মত্যাগের কথা লেখা থাকবে। আশাকরি, তুমি চোখের জলে আমার যাবার পথ পিছল করবে না।

আমি আমার শ্বশুর মশাইকে নিয়ে জাহাজ ঘাটায় গিয়ে ওনাকে বিদায় জানিয়ে এসেছিলাম। বাড়ি ফিরে কদিন চোখের জলে ভেসে গেছি। কিন্তু কবরেজ মশাইয়ের কথায় পেটেরটার কথা ভেবে নিজেকে সামলাম।

এক দিন বড় খোকার জন্ম হলো। আর আমার বিরহের রাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে ভাবতে বসলাম, এই মানুষটার সঙ্গে কয়েকটা মাত্র দিন কাটালাম, কিন্তু তাতেই তিনি কীভাবে আমার সব কিছু হরণ করলেন ? তখন সব সময় মনে হতো কবে তিনি আসবেন, কবে আমার শরীরের এখানে ওখানে রাখবেন তার সোহাগ পরশ।

এক দিন জানতে পারলাম যখন আমি তাঁর কথা ভেবে শোকাচ্ছন্নতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি তখন তিনি সোনারিটা নামে এক ফরাসী সুন্দরীর শরীরে খুঁজে নিচ্ছেন জীবনের উত্তাপ , তার হাত ধরে সেইন নদীতে নৌকা বিহারের সময় কানে কানে শোনাচ্ছেন কামনার মন্ত্রমালা।

বছর পার করে তিনি তাঁর শিল্পীসত্তা সেইন নদীর জলে বিসর্জন করে ফিরে এলেন। তারপর জৈবিক খিদে মেটানোর জন্য প্রয়োজন মতো আমার কাছে আসতেন , আর আমি পর পর পাঁচ সন্তানের মা ( বড় জনকে বাদ দিয়ে) হলাম। কিন্তু তত দিনে আমার মন মরে গেছে।

ইতিমধ্যে কানা ঘুষো শুনতে পেলাম প্রতি রবিবার রাতে তিনি যান ওনার এক আদরিণী রক্ষিতার কাছে। আমি লক্ষ্য করতাম রবিবার বিকেল থেকেই বদলে যেত তাঁর শরীরের ভাষা। পড়তেন ধাক্কা পাড়ের চুনোট করা ধুতি ও গিলে করা পাঞ্জাবী , হাতে যুঁই ফুলের মালা , চোখে সুরমার টান এবং লক্ষ্ণৌ থেকে আনা সুগন্ধি ছড়িয়েছেন সারা গায়ে।

উনি বের হয়ে যাওয়ার পরই মনটা আমার হু হু করে উঠতো। কিন্তু ছেলে মেয়েদের আব্দার মেটাতে গিয়ে ওটা নিয়ে বেশি ভাবার সময় পেতাম না। ধীরে ধীরে আমি ওনার সব ব্যাপারে আশ্চর্য রকমভাবে নিরাসক্ত হয়ে পড়লাম।

এই ভাবেই একটির পর একটি বছর কেটে গেছে, বসন্ত এসেছে চলে গেছে। যৌবন একদিন চলে গেল আমার শরীর থেকে, ক্রমশঃ বার্ধক্য এসে গ্রাস করলো এই দেহটাকে। এখন আমরা দুজনে একঘরে থাকলেও আমাদের মধ্যে রয়েছে একটা অদৃশ্য লক্ষ্মণ রেখা। এখন আমি যত দিন বাঁচবো ততদিন এক সুখী জননী হিসাবেই বেঁচে থাকতে চাই। "

বলতে থাকেন চন্দ্রলেখা - " বিপাশা, তোমরা এ প্রজন্মের মেয়েরা আমাদের এই ব্যথা বুঝতে পারবে না। তোমাদের এমনভাবে কোনোদিন দুঃখের আগুনে পুড়তে হবে না । তোমাদের হৃদয় নিয়ে কোনো পাষন্ড পুরুষ এমনভাবে ছিনিমিনি খেলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। আমরাই হলাম দুঃখবতী প্রজন্মের শেষ সংস্করণ। এই ভালোবাসার পৃথিবী থেকে এক দিন আমরা চিরতরে হারিয়ে যাব এবং সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে এইরূপ চোখের জলের ইতিহাস।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বিপাশা , তুমি না এলে আমি কখনো মনের আয়নায় নিজের মুখ দেখতাম না। আমি বুঝতে পারতাম না আমার দুঃখ আছে, আমার সুখ আছে, আছে আমার অতৃপ্তির ব্যাখ্যান। আজ আমার অনেক কথা তোমার কাছে বলে আমার এই পোড়াবুক শান্ত হলো। "

দুজনের কথার মাঝে ঘরে ঢোকেন রাজনারায়ণ। তিনি সকালে বাগানে পায়চারি করে ঘরে এলেন। এরপর তিনি সুগন্ধি দার্জিলিং চা তারিয়ে তারিয়ে খাবেন ও খবরের কাগজ পড়বেন। রাজনারায়ণ বাবু ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বিপাশা বুঝতে পারে এবার তাকে উঠতে থাকে। সে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে চন্দ্রলেখাকে বলে - " মাসীমা, এখনকার মতো আসি ? পরে প্রয়োজন মতো আপনার কাছে আসব।"

এই বলে রাজনারায়ণ বাবুকে শুভ সকাল জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top