What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অন্তর্বর্তী শূণ্যতা (1 Viewer)

সুনির্মল – সন্ধ্যের একটু পরে বাড়ি ফিরে ভদ্র বালকের মতো শোওয়ার ঘরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করতে গেল ও। কিন্তু পারল না। পিছন থেকে রাইয়ের গলা শোনা গেল। "কি গো, যাচ্ছো কোথায়? টিফিন করবে না?" পিছন ফিরে দেখল বউ কিচেন থেকে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করছে। ও কেবল ঘাড় নেড়ে জানালো করবে না। তারপরেই সুড়সুড় করে কেটে পড়ার মতলব করছিল, কিন্তু পারল না। তার কারণ দ্বিতীয় প্রশ্নবাণটা এসে ওর পিঠে বিঁধল। "কেন? টিফিন করবে না কেন? আজকে তোমার ফেভারিট ব্রেড পকোড়া করেছি। দুটো অন্তত খাও।"

- "ভাল লাগছে না। তুমি আর বাবান খাও। আমি খাবো না।" অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখ খুলতে বাধ্য হল। তাড়াতাড়ি এখান থেকে কেটে পড়াই ভালো। বিপদ ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে।

- "কেন খাবে না? শরীর খারাপ?" রাইয়ের গলাটা যেন আরো কিছুটা ওর দিকে এগিয়ে এল। বিপদ বুঝতে পেরে ও তাড়াতাড়ি ঘাড় নাড়ল। যার অর্থ হ্যাঁ বা না দুটোও হতে পারে। আবার কোনোটাই হতে পারে না। কিন্তু বিপদ এত সহজে যাওয়ার নয়। এত কপাল ওর নেই।

- "কি হয়েছে। জ্বর? দেখি গাটা?" রাইয়ের গলা এখন একদম ওর পিছনে। ও একটু সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু ফল হল উল্টো। ততক্ষণে রাইয়ের হাত ওর কপালে এসে ঠেকেছে। আর তাতেই যা হওয়ার তাই হল। রাই একটা মধ্যম চিৎকার করে বলল, "তুমি ভরসন্ধ্যেবেলায় ঐসব ছাইপাঁশ খেয়ে এসেছো?"

ধরা পড়ে গেলে সব চোরেরই যেমন 'আর করবো না, স্যার, এবারটা মাফ করে দিন' ভাব হয়, ওরও তাইই হল। ও তাড়াতাড়ি রাইয়ের মুখের উপরে হাত রেখে বলল, "শশশ। চুপ! বাবান শুনতে পাবে।" রাই ছিটকে কিছুটা পিছিয়ে গেল। কিন্তু গলাটা একটু খাদে নামিয়ে বলল, "উমম, ছেলের জন্যে কত চিন্তা! ছাইপাঁশ গিয়ে এসে এখন ছেলের জন্যে চিন্তা করছেন উনি! হ্যাঁগো, তোমায় কতদিন বলেছি, ছেলেটা বড়ো হচ্ছে। সব বুঝতে শিখছে। এখন ওসব ছেড়ে দাও। নাহলে ও তোমাকে দেখে কি শিখবে? কিন্তু তোমার কোনো হুঁশ নেই? ভর সন্ধ্যেয় মাল খেয়ে বাড়ি ঢুকছো?!" ও এ কথার কোনো উত্তর দিল না। কেবল একবার আড়চোখে বিড়ালের মত করে ডাইনিংয়ের দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো। আটটা বেজে বিয়াল্লিশ। একে নিশ্চয়ই ভরসন্ধ্যে বলা উচিত নয়। কিন্তু এখন রাইকে সেকথাটা বোঝানো ওর স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে ভেবে চুপ করে রইল। রাই থামার পাত্রী নয়। সে বলেই চলল, "তা যখন গিলেই এসেছো, তখন এখানে সংয়ের মত দাঁড়িয়ে রয়েছো কেন? ঘরে গিয়ে বসে থাকো। আজকে খবরদ্দার ঐ ঘর থেকে বের হবে না বলে দিচ্ছি। রাতের খাবার আমি ওখানেই দিয়ে আসবো। ছেলের কাছে এই অবস্থায় একদম আসবে না। যাও, তাড়াতাড়ি যাও। ছিঃ!" ওর মুখের উপরে একরাশ ঘেন্না ছিটিয়ে দিয়ে রাই দুমদুম শব্দে পা ফেলে কিচেনে ঢুকে গেল। ওদের বেডরুমে অ্যাটাচড বাথরুম নেই। তাই টয়লেট পেলে কোথায় যাবে সেকথা রাইকে ডেকে জিজ্ঞাসা করার সাহস আর হলনা ওর। জামাকাপড় ছেড়ে চোখেমুখে একটু জলের ঝাপটা দিতে আগের থেকে অনেকটাই ফ্রেশ লাগল। বিছানায় এসে শুয়ে রইল কিছুক্ষণ। তাপসের জন্য আজকে অনেকদিন পর রাইয়ের কাছে বকুনি খেতে হল ওকে। 'শালা, কালকে একবার অফিস যাই। তারপর তোকে দেখাবো মজা।' মনে মনে তাপসকে কিছুক্ষণ শাপশাপান্ত করে মনটা একটু হলেও হাল্কা মনে হল। তারপর কি মনে হতে বালিশের পাশ থেকে নিজের ফোনটা তুলে নিল। দেখল ন'টা বেজে ষোলো। কান পেতে শুনল ডাইনিং থেকে টিভি আওয়াজ ভেসে আসছে। এখন একঘন্টা নিশ্চিন্ত। রাই দুটো সিরিয়াল পর পর না দেখে টিভির সামনে থেকে উঠবে না। আর বাবান ওর পড়ার ঘরে অনলাইনে টিউশনিতে ব্যস্ত। বিছানা থেকে উঠে পা টিপটিপে দরজার কাছে এল। তারপর দরজাটা আলতো করে বন্ধ করে দিয়ে নিঃশব্দে ছিটকিনিটাকে তুলে দিয়ে আবার বিছানায় এসে বসল। ফোনটাকে হাতে তুলে নিয়ে একটু নিজের মনেই কিছু একটা ভাবল। তারপর লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বুড়ো আঙুলের এক টোকায় অ্যাপটাকে চালু করল। সঙ্গে সঙ্গেই নীলচে রঙের বৃত্তটা ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে।


- "শালা, সত্যি করে বল্ তো, লাস্ট কবে বউকে করেছিস?" আচমকা তাপসের মুখে প্রশ্নটা শুনে বিষম খেল ও। খক খক করে কাশতে কাশতে হাতের রঙিন তরলের গ্লাসটাকে টেবিলের উপরে নামিয়ে রাখল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, "মানে?"

- "মানে!? আহা নেকুচোদা! কোনটার মানে বুঝতে পারছো না, বাবু? বউ? নাকি করা? কোনটা?" মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল তাপস।

- "চুপ কর তো বাঞ্চোত। শালা কতদিন পর মাল খেতে বসেছি, এখানেও বউয়ের কথা তুলে দিলি তো নেশাটা চুদে।" গলায় কিছু বিরক্তি ঢেলে বলল ও।

- "কেন রে শালা, বিয়েটা তো প্রেম করেই করেছিলিস। এখন কি হলো?" তাপস তবুও থামবার নয়।

- "তুই কি চুপ করবি, নাকি মারবো একটা পোঁদে লাথি।" ওর ধাতানি খেয়ে অবশেষে মুখ বুজল তাপস।

ওরা দুজনে কলেজের বন্ধু। আবার কোইন্সিডেন্সিয়ালি একই অফিসে কাজ করে। তাই ওদের বন্ধুত্বটা একটু বেশীই গাঢ়। বয়সটাও সমবয়সী। তবে ওর মনে আজও একটা খটকা রয়েছে। মনে হয় তাপসও রাইকে ভালোবাসত। কিন্তু বন্ধুর জন্যই হয়তো কোনোদিন মুখ ফুটে ওকে বলতে পারেনি। তা নাহলে শালা, আজও বিয়ে করল না কেন? কিন্তু এই কথাটা ও আজও তাপস বা রাইকে জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। তাপস অনেকবার ওদের বাড়িতে গেছে। রাইও তাপসের বাড়িতে এসেছে বহুবার। ওরা দুজনে হেসে হেসে কথাও বলে। দুজন দুজনকে নাম ধরে ডাকে। 'তুমি' করে কথা বলে। রাইকে দেখে মনে হয়না তাপসের প্রতি আলাদা কোনো ফিলিংস আছে বলে। তাপসেরও আছে এটাও অবশ্য ও জোর গলায় বলতে পারবে না। কিন্তু কেন জানি, বিয়ের এতগুলো বছর কেটে যাওয়ার পরে, ছেলের বয়স দশ পূর্ণ হওয়ার পরেও একটা সন্দেহের কাঁটা মনে মধ্যে মাঝেমাঝেই খচখচ করে লাগে। ও ভাবে, রাই যদি ওকে বিয়ে না করে, তাপসকে করত, তাহলে কি ও আরেকটু বেশীই সুখে থাকত? যদিও অফিসে তাপস আর ওর পজিশন একই, মাইনেও উনিশ-বিশ প্রায় একই পায়। তবুও? একএকদিন রাত্রিবেলা বাবান ঘুমিয়ে পড়লে যখন ও আর রাই একসাথে ঘনিষ্ঠ হয়, তখন ভাবে এখন যদি ওর বদলে বিছানায় তাপস থাকত, তাহলে কি হত? তাপস কি ওর মত করেই রাইকে ভালবাসত? নাকি অন্য কিছু করত? যখন ও রাইয়ের বুকের গভীরে ঠোঁট ঠেকিয়ে চুষে নেওয়ার চেষ্টা করে ওর শরীরসুধা তখন ওর মনে প্রশ্ন জাগে তাপসও কি এইভাবেই রাইয়ের বুকের গভীরে মুখ নামাত? নিজেকে বিছানায় তাপস ভেবে রাইয়ের সঙ্গে খেলা করতে ওর ভালো লাগে। এই অভ্যেসটা গত কয়েকবছরে তৈরী হয়েছে ওর মনের মধ্যে। এখন বয়সের সঙ্গে সেটা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে। এখন তো যখনই রাইয়ের ন্যাংটো শরীরটাকে নিজের শরীরের চাপে পিষ্ট করতে করতে ওর মধ্যে নিজেকে চালান করতে থাকে, ক্রমাগত তখন ও নিজেকে তাপস বলেই ভাবে। ও তখন আর সু নয়, তাপস হয়ে যায়। রাই হয়ে যায় ওর বন্ধুপত্নী। গোপন প্রেমিকা। যার সাথে ও লুকিয়ে লীলাখেলা খেলছে। পরকীয়ার নিষিদ্ধ খেলা। বিছানায় নিজেকে তাপস ভাবলেই তলপেটটা কেমন যেন শক্ত হয়ে যায় আগের থেকে। শরীরের সব রক্ত জমা হয় ওর তৃতীয় পায়ে। রাইয়ের পা দুটোকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে আওরিক শক্তিতে ক্রমাগত গোঁত্তা মারতে থাকে ও। থামার কোনো লক্ষণই থাকে না। তখন একটাই চিন্তা ওর মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। রাইয়ের স্বামী মানে সু এসে যাওয়ার আগেই ওকে এই খেলাটা শেষ করতে হবে। কিন্তু এত সহজে খেলা শেষ হয় না। চলতেই থাকে। চলতেই থাকে। রাই যায় হাঁফিয়ে। শীৎকার গিয়ে মিশে যায় গোঁঙানীতে। কিন্তু ও থামে না। আসলে থামতে পারে না। ও যে এইমুহুর্তে সু নয় তাপস - এই চিন্তাটাই ওকে আরো, আরো বেশী করে খেলতে সাহায্য করে। তারপর দম ফুরিয়ে গিয়ে যখন নেতিয়ে পড়ে রাইয়ের বুকের উপরে, যখন ওর ঘামে ভেজা পিঠে রাইয়ের আঙুলগুলো আলতো করে আলপনা আঁকতে থাকে, তখন তাপসের খোলস ছেড়ে ও আবার হয়ে ওঠে রাইয়ের অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে করা বর। কিন্তু আবার পরের দিন রাতেই ও হয়ে যায় তাপস। রাইয়ের গোপন প্রেমিক। এই খেলার যেন কোনো শেষ নেই। চলতেই থাকে।

- "তুই বিয়ে করলি না কেন রে?" ওর প্রশ্ন শুনে এবার বিষম খাওয়ার পালা তাপসের। রক্তিম চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে তাপস পাল্টা প্রশ্ন করল, "কি বললি?"

- "বলছি, তুই বিয়ে করলি না কেন?" গ্লাসের তরলে চুমুক দিয়ে আবার প্রশ্নটা করল।

- "ধরে নে, মনের মতো ভালো কোনো মেয়ে পাই নি। তাই বিয়ে করিনি।" যেন কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে উত্তরটা দিল তাপস।

- "তা কেমন মেয়ে তোর পছন্দ? রাইয়ের মতো?" এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ওর প্রশ্নের কারণে বিষম খেল তাপস। একটু আগে ওর মতই খকখক করে কাশতে কাশতে শুরু করল। তারপর নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "তোকে আর খেতে হবে না। দে। তোর নেশা হয়ে গেছে।"

- "আঃ! বল না। রাইয়ের মত মেয়ে পেলে বিয়ে করবি?"

- "হুম করতেও পারি।" এবারও একটু সময় নিয়ে বলল তাপস।

- "উঁহু। ওরকম নয়। হ্যাঁ বা না তে জবাব দে।"

- "হ্যাঁ। করব।" এবারে আর একটুও সময় নিল না তাপস। প্রায় সাথে সাথেই উত্তর দিল। এইরকমই একটা উত্তর আশা করেছিল ও। কিন্তু তারপরে তাপস যা বলল সেটা ও একেবারেই আশা করেনি।

- "রাইয়ের মতো কেন, তুই যদি কোনোদিন রাইকে ডিভোর্স দিস, তাহলে ওকেই বিয়ে করবো।" এবার বিষম খাওয়ার পালা ওর। তবে উত্তরটা ওর পছন্দ হল। মুখে বলল, "না। সে গুড়ে বালি। না ওকে আমি কোনোদিন ডিভোর্স দেবো, আর না তোর সাথে ওর বিয়ে হতে দেবো।" তাপস একথার কোনো উত্তর দিল না। কেবল একটু মুচকি হাসল। যার অনেক রকম মানে হতে পারে। সেই জটিলতায় ও গেল না। বরং কিছুক্ষণ নীরবে পান করার পর হঠাৎ বলল, "তিন চারদিন আগে।" একথার মানে বুঝতে পেরে তাপস জিজ্ঞাও দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। এবার ও নীরবে কিছুটা হেসে বলল, "একটু আগে জিজ্ঞাসা করলি না, কবে লাস্ট রাইকে করেছি? তারই উত্তর দিলাম। এই তিনচারদিন আগে।" তাপস কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, "কেন, এখন আর প্রতিদিন করিস না? ছেলে বড়ো হচ্ছে বলে তুই ভদ্র হয়ে যাচ্ছিস?"

- "আসলে তা নয়। তবে হ্যাঁ এটা সত্যি, এখন আর প্রতিদিন ভালো লাগে না। একঘেয়ে লাগে। রাইও চট করে করতে চায় না। অনেক সাধ্যসাধনা করতে হয়।"

- "ঠিক এই জন্যেই আমি বিয়ে করিনি। শালা নিজের বউকে আবার কি পটাতে হবে রে? তুই না পুরুষ মানুষ? যখন চাইবি তখনই করবি।"

- "শালা, বিয়ে তো করিস নি। তাই কোনো অভিজ্ঞতা নেই।"

- "কে বলল অভিজ্ঞতা নেই? তোর থেকে আমার বেশী অভিজ্ঞতা আছে।"

- "মানে? কি বলছিস আলবাল! বিয়ে করিস নি, থা করিস নি..."

- "বিয়ে করিনি বলে কি আর অভিজ্ঞতা থাকবে না? জানিস প্রতিরাতে নতুন নতুন মেয়েদেরকে আমি করি।"

- "শালা, নেশার ঘোরে আবার আলবাল বকতে শুরু করেছিস।"

- "আলবাল বকছি আমি? ঠিক আছে দে, তোর ফোনটা দে, তোকেও ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তারপর দেখবি আমি আলবাল বকছি, নাকি সত্যি বলছি।" হাতের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে তাপস ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল।

- "না থাক। আমার ভুল হয়েছে তোকে ঘাঁটিয়ে।" ওর দিকে হাতজোড় করে বলল।

- "তই এখনো আমার কথা বিশ্বাস করছিস না। একবার দে ফোনটা।"

- "কেন ফোনটা দিলে কি করবি?"

- "ম্যাজিক দেখাবো।" তাপস ততক্ষণে ওর পাশে পড়ে থাকা ফোনটা ছোঁ মেরে তুলে নিয়েছে।

ফোনের স্ক্রিণে বর্তমানে ন'টা বেজে সতেরো। ফোনটা হাতে নিয়ে বেকুবের মতো বসে রয়েছে ও। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। নেশা কেটে গেছে অনেক আগেই। মাথার উপরে ফ্যানটা ফুলস্পিডে ঘোরা সত্ত্বেও কপালে ঘাম জমা হচ্ছে একটু একটু করে। প্রচন্ড গরম লাগছে। নীলচে বৃত্তটা থেমে গেছে অনেকক্ষণ। তারপরে ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড। তারপরে আবার একটা নীলচে বৃত্ত। অবশেষে প্রবেশ। চোখদুটো প্রায় বিস্ফারিত করে ফোনের স্ক্রিণটার দিকে তাকিয়ে রইল সুনির্মল।
 
আয়ুষী – নিজের ঘরে ঢুকেই বিছানার উপরে নিজের ব্যাগ আর ফোনটাকে ছুঁড়ে ফেলল ও। তারপর দরজাটাকে বন্ধ করে বিছানার উপরে ধপাস করে বসে পড়ল। কেমন যেন গুমোট গরম লাগছে। ফ্যানটা ফুলস্পিডে ঘোরা সত্ত্বেও একটুও হাওয়া ওর গায়ে লাগছে না। মাথাটাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। একটা সিগারেট খাওয়া দরকার। তা নাহলে মাথাটা ঠান্ডা হবে না কিছুতেই। ব্যাগ থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা বের করে একটা সিগারেট ধরালো। তারপর তাতে একটা টান দিয়ে লম্বা একটা ধোঁয়া ছাড়ল। ধোঁয়ার অস্পষ্ট কুন্ডলীটা ওর মুখ থেকে বেরিয়ে জানালার দিকে ছুটে বেরিয়ে এল। পরপর দু তিনটে টান মারার পরেও মাথাটা কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছে না। বারবার তিন্নির বলা কথাগুলো ওর কানে বাজছে। যতই বাড়ছে, ততই মাথাটা ঠান্ডা হওয়ার জায়গায় গরম হয়ে যাচ্ছে। রাত অনেকটাই হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু ক'টা বাজছে ও জানে না। একটা হতে পারে। দেড়টা হওয়াটাও কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। আবার দুটো হলেও ওর কিছু করার নেই। কিন্তু খিদেটা তো পাচ্ছে। কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে না। অদ্ভুত একটা বৈপরিত্য শরীরের মধ্যে টের পাচ্ছে ও। যেমন মনের মধ্যেও হচ্ছে। যেমন চোখের কোণদুটো হু হু করে জ্বলছে। বালিশটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু পারছে কই। কাঁদার পরিবর্তে ঠোঁটের কোণে জ্বলন্ত সিগারেটটায় উপর্যুপরি কয়েকটা টান দিয়ে, সেটাকে টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিল জানালার বাইরে। আজকের সন্ধ্যেটাকেও এইভাবে টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারলে ওর আরোও ভালো লাগত। কিন্তু সেটাই বা পারছে কই। আর পারছে না বলেই হয়তো রাগটা তিন্নির চেয়েও নিজের উপরেই ঘুরেফিরে আসছে বারবার। সেই অনুভূতিটুকুর জন্যই হয়তো রাগটাকেও ঝেড়ে ফেলতে পারছে না মাথা থেকে। কিম্বা শরীর থেকে। কিম্বা ঐ সিগারেটটার মতোই পোড়া মনটা থেকেও।

দিনটা অন্যদিনের থেকে কিছুটা হলেও অন্যরকম ভাবেই শুরু হয়েছিল আজকে। দিনের বেলায় ও কটায় বাড়ি থেকে বের হয়, আর রাত্রিবেলায় কটায় বাড়ি ফেরে, সেটা যখন ও নিজেই জানে না, তখন বাড়ির অন্যদের সেই বিষয়ে দোষারোপ করাটা বোধহয় বাতুলতা। ও মাঝে মাঝে ভাবে বাংলার 'বাউন্ডুলে' শব্দটা বোধহয় ওকে দেখেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। বাড়িতে লোক বলতে ওকে নিয়ে চারজন। বাবা-মা-ভাইয়া আর ও। ও আর ভাইয়া যমজ। কে বড়ো আর কেই বা ছোটো এই নিয়ে ও কোনোদিন মাথা ঘামায় নি। কিই বা হবে ঘামিয়ে? যদি সে বড়ো হয়, তাহলে পৃথিবী কি উত্তর দিকে ঘুরতে শুরু করবে? বাবা বলে ও নাকি ছোটোবেলা থেকেই যাকে বলে রেবেল। বাড়িতে একমাত্র ওরই সাহস আছে মায়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলার। আর কারোর নেই। কিন্তু ইদানিং সেটাও ভালো লাগে না। কারণ কদিন ধরেই ওর কিছুই যেন ঠিকঠাক হচ্ছে না। না লিরিকস, না গিটার। না অন্যকিছু। ওদের দলটার নামও কিন্তু বাউন্ডুলে। নামটা ওরই দেওয়া তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিন্নি লিড ভোকালিস্ট। ও বেস গিটারে। সন্দীপন ড্রাম। আর তিন্নির দাদা তমাল কি বোর্ড। আরোও দু চারজন আছে। সেই স্কুল থেকেই ওদের ব্যান্ডের যাত্রা শুরু। একমাত্র তমালদা হচ্ছে ওদের থেকে সিনিয়ার। বাকীরা একই ক্লাসের। সেই কেজি ক্লাস থেকে। ও ওদের লিরিসিস্ট। কিন্তু কদিন ধরেই ওর মাথায় কোনো লিরিক্স আসছে না। তার কারণ বাকীরা বুঝতে না পারলেও তিন্নি কিন্তু ঠিকই পেরেছিল। ওদের দুজনকে হরিহর আত্মা বললেও হয়তো কম কিছু বলা হয়। ওরা তার থেকেও বেশী কিছু। অন্তত ও নিজে তো তাইই ভাবে। কিন্তু তিন্নি কি ভাবে? ও কোনোদিন জানতে চায়নি। ভেবেছে কিই বা হবে জেনে। কিন্তু আজ দেখছে জানলেই হয়তো ভালো হত। তাহলে মন পোড়ার যন্ত্রণাটা একটু হলেও তো কম হত। খিদেটা আবার পাচ্ছে। সেই কোন দুপুরে খেয়ে বেরিয়েছিল। এখন তো অগাধ রাত। খিদে পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাও বাইরে গিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে করছে না। বালিশে মাথাটা রেখে শুয়ে পড়ল ও। তারপর প্যাকেটটা থেকে আরো একটা সিগারেট বের করে ধরাতে গেল। কিন্তু ধরাল না। ইদানিং ওর সিগারেটটা খাওয়া আগের থেকে বেড়ে গেছে। এটা ওকে তিন্নিই বলেছে। তারপর থেকে ও মনে মনে ঠিক করেছিল সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দেবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা হওয়ার নয়। ধীরে ধীরে চোখের পাতাগুলো বুজল ও। দিনটা শুরু হয়েছিল একটু অন্যরকম ভাবেই। ও প্রায় প্রতিরাতেই দেরী করে বাড়ি ফেরে। সঙ্গে একসেট এক্সট্রা চাবী থাকে বলে বিশেষ একটা অসুবিধা হয় না। ও যখন বাড়ি ফেরে তখন বাকীদের আক্ষরিক অর্থেই মাঝরাত। মা গজগজ করলেও টেবিলে ওর খাবার চাপা দিয়ে রাখতে ভোলে না। ঠান্ডা সেই খাবার ও খেয়েও নেয়। আজকেও নিজের রুমে ঢোকার আগে দেখেছে টেবিলে ওর প্রাপ্য খাবার ঢাকা দেওয়া আছে। কিন্তু আজ ও খায়নি। সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে গিয়েছিল অদ্ভুত একটা আওয়াজে আর সেই সাথে মায়ের চিৎকারে। মা এরকম খুব কমই করে। আসলে করার প্রয়োজন পড়ে না। তাড়াতাড়ি উঠে বসে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল মা ভাইয়ার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চিৎকার করছে আর দরজায় ধাক্কাচ্ছে। কি না, ভাইয়া আজ নাকী দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছে! মায়ের ন্যাকামো দেখে ওর মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তারপরে মায়ের সাথে কিছুটা চিৎকার চেঁচামেচি করে আবার এসে শুয়ে পড়েছিল ও। ঘুমটা ভাঙ্গল যখন তখন দেড়টা পেরিয়ে গেছে। একেবারে স্নান করে রেডি হয়ে যখন নিজের ঘর থেকে বেরোলো, দেখল টেবিলে ওর খাবার ঢাকা আছে। নিঃশব্দে খেয়ে বেরিয়ে পড়েছিল ঘর থেকে। না বেরোলেই হয়তো ভালো করত। আজকের দিনটাই জাস্ট ওর জন্য নয়।

ওদের রিহার্সাল তিন্নিদের ঘরে হয়। প্রথম থেকেই এটা হয়ে আসছে। তিন্নির বাবা-মাও এতে কোনো আপত্তি করেন নি। বরং প্রতিনিয়ত ওদের প্রত্যেককে উৎসাহ ও উদ্যোম দিয়ে গেছেন। গেছেন কেন, এখনও দিয়ে যান। ওর বাবাও কোনোদিন আপত্তি করেনি। মুশকিল হয়েছিল মাকে নিয়ে। মেয়ে ছেলেদের মতো করে চুল কেটে স্টেজে উঠে ঘাড় দুলিয়ে দুলিয়ে গান গাইবে, তাও আবার ব্যান্ডের গান, সেটা মা একদমই মেনে নেয়নি। কিন্তু সেও হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। ছোটোবেলা থেকেই গান ওর একটা প্যাশান। জেদ করেও এই প্যাশানটাকে বজায় রেখেছে। কিন্তু কালকের পর কি হবে সেটা বলা আর সম্ভব নয়। কারণ আজকে যে ঘটনাটা ঘটে গেল তারপর আর ব্যান্ডে থাকাটা তো অনেক দূরের কথা, তিন্নিদের বাড়িতে যাওয়াটা উচিত হবে কিনা, সেটাও একবার ওর ভেবে দেখা দরকার। ও আজ কলেজ যায়নি। যেতে ইচ্ছা করেনি। ও, তিন্নি, স্যান্ডি অর্থাৎ সন্দীপন সবাই একই কলেজে পড়ে। কিন্তু বিভিন্ন সাবজেক্টে। কিন্তু সবাই কলেজ করার পরে জড়ো হয় তিন্নিদের বাড়িতে। ওখানে পুরানো গানের রিহার্সাল হয়। নতুন গানের আলোচনা, অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়। কোথাও প্রোগ্রাম থাকলে সে বিষয়ে আলোচনা হয়। তাই আজ ও কলেজ না গিয়ে সটান পৌঁছে গিয়েছিল তিন্নিদের বাড়িতে। গিয়ে ওর মায়ের কাছে জানতে পারল আজ নাকি তিন্নিও কলেজ যায়নি। এটা ওর জানা ছিল না। ইনফ্যাক্ট সকাল থেকে ওর ফোনটা নট রিচেবল ছিল। অবশ্য তা নিয়ে ও খুব একটা দুশ্চিন্তা করেনি। তিন্নি এইরকমই একটা পাগলাটে। এরকম মাঝে মধ্যে করেই থাকে। আর এরকমটা করে বলেই না ওকে এত ভালো লাগে ওর। ওর এই স্বভাবটার জন্যই ও ওকে এতটা ভালোবাসে। হ্যাঁ। ও তিন্নিকে ভালোবাসে। না। কোনো বন্ধু হিসাবে নয়। বরং আদি অকৃত্রিম ভালোবাসা। যেমন একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে ভালোবাসে, ঠিক তেমনই ও ভালোবাসে তিন্নিকে। কিন্তু এই কথাটা ও আজও মুখ ফুটে বলতে পারেনি তিন্নিকে। কি জানি, শুনে কি রিঅ্যাক্ট করবে। কিন্তু ওর সন্দেহ যে তিন্নি কিছু একটা হলেও আন্দাজ করেছে হয়তো। তা নাহলে কদিন ধরেই তিন্নি ওকে অ্যাভয়েড করবে কেন? কলেজ গেলেও ওর সাথে কথা বলছে না। ঠিক টাইমে রিহার্সালে আসছে না। এলেও চুপচাপ এক কোণে বসে থেকে উঠে চলে যাচ্ছে। ইত্যাদি। তাই তো কদিন ধরে ওরও মন খারাপ। কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না। না পড়োশোনায়। না গানে। নতুন কোনো লিরিক্স মাথায় আসছে না। সাথে বেড়েই চলেছে সুখটানের সংখ্যা। আজ মনে মনে একটা ব্যবস্থা করবে বলেই ঠিক করেছিল ও। ও ভেবেছিল তিন্নিকে ওর মনের কথাটা আজকেই জানিয়ে দেবে। দোতলায় তিন্নির রুমে যখন ও ঢুকল তখন সন্ধ্যে হব হব। দিনের শেষ একটা মরা আলো এসে ঢুকছে জানালার গরাদ ঠেলে। বিছানার উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে তিন্নি। পরণে একটা ক্রীম ঢোলা গেঞ্জী আর মেরুন রঙের ক্যাপ্রী। ও ঘরে ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে দিল। আর সেই শব্দে বিছানায় উঠে বসল তিন্নি।

আগুনের আঁচের তাতে বর্তমানে ফিরল ও। দুই আঙুলের ফাঁকে কখন যে সিগারেটটা পুড়ে শেষ হয়ে গেছে সেটা বুঝতেই পারেনি ও। পড়ে রয়েছে একটু লালচে আভা আর কিছুটা লম্বাটে ছাই। এই সিগারেটটাকেও আগেরটার মতই জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর টেবিলের উপর থেকে জলের বোতলটাকে তুলে নিয়ে ঢক ঢক করে বেশ কিছুটা জল খেয়ে নিল। পেটের মধ্যে ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকা খিদের আগুনটা এবার হয়ত নিভে যাবে। কিন্তু ওর মনের আগুনটা? বোতলটাকে আবার যথাস্থানে রেখে দিয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটাকে হাতে তুলে নিল। দুটো বাজতে বারো মিনিট বাকী। তার মানে এখন বেশ রাত। ফোনটাকে আনলক করল ও। ব্যাটারীর চার্জ পারসেন্টেজ ১৫ দেখাচ্ছে। লাল হয়ে আসা ব্যাটারীটা আর কিছুক্ষণ পরেই দেহ রাখবে। ফোনটাকে চার্জ দিলে হত। কিন্তু এখন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছে। ফোনের উপরে একবার আঙুল ঘোরাল ও। তারপর থেমে গেল। হঠাৎ করেই অ্যাপটা চোখে পড়ল ওর। গতকালই অ্যাপটা ইনস্টল করেছে ও। ইচ্ছা ছিল তিন্নিকে দেখাবে। কিন্তু সেই সুযোগ পায়নি। বুড়ো আঙুলের আলতো চাপেই খুলে গেল অ্যাপটা। সাদাটে স্ক্রীণে নীলচে একটা বৃত্ত ঘুরছে। তারপরেই ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড। এটাও ও আগে থেকেই তৈরী করে রেখেছিল। কেবল যথাস্থানে দেওয়ার অপেক্ষা। একমুহুর্ত থমকাল ও।

- "কি ব্যাপার? তুই এখন এখানে?" তিন্নির প্রশ্নে থমকে দাঁড়াল ও। তারপর বিছানায় ওর পাশে বসে বলল, "কেন? তোর কিছু অসুবিধা আছে?" তারপর তিন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে ও বলল, "থাকলে বল্, চলে যাচ্ছি।"

- "বাজে কথা বন্ধ কর। তুই দরজাটা ছিটকিনি দিলি কেন?" তিন্নির গলায় কি উদ্বেগের ছোঁয়া আছে, সেটাই বোঝার চেষ্টা করল ও। কিন্তু পারল না।

- "তোর সাথে আমার কিছু দরকারী কথা আছে। তাই দিলাম।" গলাটাকে শান্ত করে প্রায় খাদে টেনে নামিয়ে দিয়ে জবাব দিল ও।

- "আগে ছিটকিনিটা খোল। সবাই কি ভাববে?" তিন্নির শেষের কথাটা যেন ছুঁচের মত বিঁধল ওর গায়ে।

- "কি ভাববে মানে? আমরা বন্ধু। দরজা বন্ধ করতে পারি না? আর তুই এভাবে প্যানিক করছিস কেন?"

- "প্যানিক করছি না। তোকে কেবল দরজাটা খুলতে বলেছি।"

- "খুলে দেবো। প্যানিক করিস না। আমার কথা বলা হয়ে গেলেই আমি দরজাও খুলে দেবো। আর এখান থেকে চলেও যাবো। কিন্তু তার আগে তোর সাথে আমার কিছু দরকারী কথা আছে। সেগুলো আগে বলে নিই।"

- "বল কি বলবি।" তিন্নি কি আগের থেকে একটু শান্ত হয়েছে? হবে হয়তো।

- "আমি কদিন থেকেই লক্ষ্য করছি তুই আমাকে অ্যাভয়েড করছিস। কেন জানতে পারি?"

- "কারণটা তুই ভালো করেই জানিস। আর নাটক করিস না।" তিন্নি যেন একটু তেতে গেল।

- "নাটক! আমি নাটক করছি!?"

- "নাটক নয়তো কি? তুই কি বলতে চাস, কি করতে চাস আমি জানি না?" ফোঁস করে উঠল তিন্নি।

- "কি করতে চাই আমি?" ও কিন্তু বরফ শীতল।

- "তুই নোংরামী করতে চাস।"

- "নোংরামী! কোনটা নোংরামী? তোকে ভালোবাসাটা নোংরামী?"

- "বাজে কথা বলিস না। তুই ভালো করেই জানিস আমি এরকম না। আমার এসব ভালো লাগে না।"

- "ভালো লাগে না? কি ভালো লাগে না?"

- "শুনবি? তাহলে শোন। তুই যখন আমার কাছে এসে বসিস আমার ভালো লাগে না। তুই যখন আমাকে ছুঁস, আমার ভালো লাগে না। আমার তোকেই ভালো লাগে না। তুই চলে যা এখান থেকে। তুই নোংরা। তোর মন নোংরা। তোর ব্যবহার নোংরা। আমার কাছে আর কোনো দিন আসবি না। তুই অসুস্থ হতে পারিস। আমি নয়।"

একটানা কথাগুলো বলে আবার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল তিন্নি। তবে এবার নিজের মুখটা বালিশের মধ্যে গুঁজে। ওর শরীরটা বারে বারে ফুঁপে ফুঁপে উঠছে। তিন্নি কি কাঁদছে? ওর ইচ্ছা হল একবার তিন্নির মাথায় হাত রাখে। চুলে আলতো করে বিলি কেটে দেয়। নিঃশেষে শুষে নেয় ওর দু চোখ উজাড় করা জলের ফোঁটাগুলোকে। কিন্তু চেয়েও এর একটাও করতে পারল না ও। মেঝের সাথে ওর পাগুলোকে কেউ যেন সিমেন্টের সঙ্গে এঁটে দিয়েছে। ওর পাদুটো থরথর করে কাঁপছে। ওর নিজের চোখের কোণদুটোও কেমন যেন জ্বলছে হু হু করে। কিন্তু ও কাঁদতে পারছে না। ও কাঁদলও না। দরজাটা খুলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এল ধীর পায়ে। দরজার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়েছিল তিন্নির দাদা তমাল। ওর দিকে একবার ভাবলেশহীন চোখে তাকাল। তারপর বোনের ঘরে ঢুকে গেল। ধীর পায়ে তিন্নিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল ও।

ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ডটা দিতেই নীলচে বৃত্তটা বারকয়েক পূর্ণগতিতে ঘোরার পর ওর ফোনের স্ক্রীণে ইংরেজীতে ফুটে উঠল একটা বার্তা। Welcome to the world of true voyeurism, exhibitionism & cuckolding. Live your deepest wild fantasy. আরো অনেক কথা লেখা ছিল, সবটা ও পড়ল না। কেবল নীচের দিকে বড়ো করে লেখা Enter বোতামটায় একটা চাপ দিল। সাথে সাথে অ্যাপের হোমপেজটা খুলে গেল। স্ক্রীণের একদম উপরের ডানদিকে ওর ইউজার নেমের ঠিক পাশে একটা সবুজ বৃত্ত জ্বলজ্বল করছে। তার মানে ও এখন Active। আয়ুষী ঘাড় গুঁজে পাগলের মত স্ক্রল করতে শুরু করল অ্যাপটায়। ও হয়তো জানতেও পারল না, ওর আশেপাশের আরও পাঁচখানা আলাদা আলাদা প্রোফাইল আলাদা আলাদা ফোন থেকে এই মুহুর্তে Active হয়ে আছে।
~ অত্র প্রথমোৎধ্যায়ঃ সমাপ্তঃ ~
 
পরিচ্ছদ ২ - পরিচিতি

অনুরাধা – সময় যত গড়াচ্ছে, বেলা যত বাড়ছে ততই বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ শব্দটা যেন বেড়েই যাচ্ছে। মনের মধ্যে একটা আকুল আগ্রহ তৈরী হচ্ছে বারবার ফোনটাকে একবার হাতে নিয়ে দেখার জন্য। অ্যাপটা একবার হলেও খোলার জন্য। কিন্তু পারছে না। মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে ও নিজে। মন বলছে, 'একবার খুলেই দেখা যাক না, কি ব্যাপার।' কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে, 'খবরদ্দার না! এসব নোংরা জিনিস না দেখাই ভালো। সু যদি জানতে পারে, তাহলে কি হবে। কি ভাববে ও আমার সঙ্গে।' একবার ভেবেছিল অ্যাপটা ডিলিট করে দেবে। মনের মধ্যে একটা দোনামনা ছিল। কিন্তু কিছু একটা ভেবে শেষপর্যন্ত আর অ্যাপটাকে ডিলিট করা হয়ে উঠল না। সেটা বহাল তবিয়তে রয়েই গেল ওর ফোনে। কিন্তু সেটা খুলল না। তপতী ফোনটা রেখে দেওয়ার পর থেকে মনটা কেমন যেন করছে। বাড়ির কাজের ফাঁকে ফাঁকে যখন ফোনটা চোখে পড়েছে, ততবারই বুকটা ধড়াস করে উঠেছে। যেন ওটা ফোন নয়, কোনো টাইম বম্ব। কেবল ফাটার অপেক্ষা। ঘর সংসারের টুকটাক কাজের মধ্যেই একবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটাকে হাতে তুলে নিল ও। অ্যাপটা খুলেও ফেলল। তপতীর থেকে জেনে নিয়ে আগেই ইউজার নেম আর পাসওয়া্র্ড একটা তৈরী করে রেখেছিল ও, সেটা যথাস্থানে লিখে লগ ইন করতে যাবে, হঠাৎ করে দরজার বেলটা বেজে উঠল সশব্দে। চমকে উঠে হাত থেকে ফোনটা পড়ে যাওয়ার জোগাড় হল বটে, কিন্তু পড়ল না। বিয়ের এতগুলো বছর কাটিয়ে দেওয়ার পর ও আজকে প্রথমবার জানতে পারল ওদের দরজার কলিং বেলের আওয়াজটা বড়ই কর্কশ। খুব কানে লাগে। ফোনটাকে রেখে দিয়ে তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঢুকল ওর কাজের মেয়ে সোমা। ও একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ডাইনিংয়ের ঘড়িটার দিকে তাকালো। সবে ন'টা বেজে সাঁইত্রিশ। সু আর বাবান মাত্র আধঘন্টা হল বেরিয়েছে। কিন্তু ওর মনে হচ্ছিল যেন একযুগ সময় পেরিয়ে গেছে। সোমা ঘরে ঢুকেই শশব্যস্ত হয়ে পড়ল। "আসতে একটু দেরী হয়ে গেল বৌদি। কি করবো বলো, চন্দ্রিমা কাকীমার আর হয় না। জানোই তো, একবার বাথরুমে ঢুকলে আর বেরোতে চায় না। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আমার গলা বসে গেল, তবুও বেরোয় না। শেষমেশ আমি রেগে মেগে বললাম, আমি যাচ্ছি অনুবৌদির ফ্ল্যাটে। তুমি বাথরুমেই বসে থাকো, আমি আসি। তবুও বেরোয় না। রোজ রোজ আর ভালো লাগে না বাপু। এতক্ষণ ধরে বাথরুমে বসে যে কি করে, স্বয়ং ভগবানই জানে...।" একটানা কথা বলতে শুরু করেছে সোমা। এর প্রত্যেকটা কথা ওর জানা, শোনা ও মুখস্থ। কারণ প্রতিদিনই দেরী করে এসে একই বাহানা দেয় মেয়েটা। অন্য দিন হলে হয়তো ও একটু হলেও রাগ করতো। হয়তো দু চার কথাও শুনিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু আজকে ওর ইচ্ছা হল না। কেবল ওকে বলল, "আর কথা বলিস না, সোমা। অনেক দেরী হয়ে গেছে। আগে বাসনগুলো মেজে ফেল। তারপর ঘরটা ঝাঁট দিয়ে মুছে দিবি। তারপর যাওয়ার আগে বেড প্যানটা পরিষ্কার করে, ঠাকুমাকে চান করিয়ে দিবি। বুঝলি? আমি চান করতে যাচ্ছি।" তারপর থেমে বলল, "আর শোন, কিচেনে তোর পাঁউরুটি আর চা রেখেছি। খেয়ে নিবি।" সোমা আর কথা না বাড়িয়ে ঘাড় নেড়ে কিচেনে ঢুকে গেল। ও একটা তোয়ালে হাতে নিয়ে একবার আড়চোখে ডাইনিং টেবিলে রাখা নিজের ফোনটার দিকে তাকিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।

সু আর বাবানের কিছু নোংরা কাপড় কেচে নিয়ে জল ঝরতে দিয়ে এবার স্নানের প্রস্তুতি করতে লাগল ও। বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করতেই অল্প পরিসরে নিজেকে একা পেল। হাইসকোটটা খুলে ফেলে দিল এক কোণে। ঘরেতে ব্রা পরার অভ্যেস ওর নেই। পরার অবশ্য দরকারও পড়ে না। ঘরে ও ছাড়া আর আছেটাই বা কে। শয্যাশায়ী শাশুড়ি থেকেও একপ্রকার নেই। তাই আলাদা করে ব্রা পরার কোনো প্রয়োজনীয়তা ও খুঁজে পায়না। তবে প্যান্টি পরে থাকে। ঘরে অতিথি অভ্যাগতরা এলে অবশ্য আলাদা ব্যাপার। তখন দুটোই পরতে হয়। তবে সেটাও আলেকালে। ওদের ঘরে আত্মীয় কুটুম প্রায় একপ্রকার আসে না বলতে গেলে। বাবা-দাদা-বৌদি কেউই এলে রাত কাটায় না। মা এলে দু চারদিন থাকে। তাও বিয়ের পর হাতে গোণা। প্যান্টিটাকে খুলে হাউসকোটের পাশেই ফেলে রাখল। প্যান্টিটাকে দেখে একটা মজার কথা মনে পড়ে গেল হঠাৎ করে। বিয়ের পরে সু ইচ্ছে করে ওর সব ব্রা আর প্যান্টিগুলোকে লুকিয়ে রাখত এদিক ওদিক। যাতে ও পরতে না পারে। কম বদমাইশ ছিল সু! সেই কলেজ থেকে প্রেম। তারপর বিয়ে। বাবান পেটে না আসা পর্যন্ত দুজনে চুটিয়ে মজা করেছে। বাবান হওয়ার পরেও করেছে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুরই গতি বোধহয় কমে যায়। হাল্কা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাওয়ারটা চালু করে দিল। একরাশ ঠান্ডা জল ওর চুলগুলোকে ভিজিয়ে দিয়ে নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে ওর গোটা শরীর ভিজতে শুরু করেছে। আঃ! কি আরাম! দু চোখ বুজে এল ওর। সু-য়ের কথা মনে আসতেই আরো একটা কথা মনে পড়ে গেল। তপতীর কথা। তপতী ওর ছোটোবেলার বন্ধু। যাকে বলে ন্যাংটো বয়সের। দুজনেই একে অপরের হাড়হদ্দ জানে। গতকাল অনেকদিন পরে তপতী ওকে ফোন করেছিল। প্রায় দিন কুড়িক পরে। তাই ফোনটা ধরেই স্বভাবত খুশী হয়ে গেছিল ও। "বল্ কী খবর? অনেকদিন পরে ফোন করলি যে? ভুলেই গেছিলি বুঝি?"

- "না রে, তোকে একটা খবর দেওয়ার ছিল।" তপতীর গলায় কিছুটা হলেও লজ্জার সুর টের পেল।

- "কি খবর রে?"

- "একটা ভালো খবর।"

- "উফ্! কি খবর সেটা বলবি তো?" নিজের ঔৎসুক্য আর লোকাতে পারল না ও।

- "বলছি, বলছি। শোন খবরটা প্রথম তোকেই দিচ্ছি। বরকেও বলিনি এখনও। অফিস থেকে ফিরলে বলবো।" তপতী আসল কথাটা বলার বদলে জিলিপির প্যাঁচ কষতে থাকে।

- "থাক। তোকে আর বলতে হবে না। এত হেঁয়ালী করলে আমি শুনতেও চাই না।" গলায় বিরক্তি এনে স্পষ্ট জানায়।

- "উফ! রেগে যাচ্ছিস কেন?" বন্ধুর রাগ আর বিরক্তি কমানোর জন্য হালকা গলায় বলে তপতী।

- "রাগবো না?! তখন থেকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলছিস, মেন কথাটা বলছিসই না।"

- "বলছি শোন। আমি আবার কনসিভ করেছি।" এবারে আর দেরী না করে এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে তপতী।

- "মানে?!" বন্ধুর কথায় ও একইসাথে আনন্দিত আর আশ্চর্য দুটোই হয়।

- "মানে আই অ্যাম প্রেগন্যান্ট ওয়ান্স এগেন!" গলায় লজ্জার ভাব এবারে অনেকটাই।

- "বাহঃ! এতো দারুণ খবর!" রাগের বদলে উচ্ছাস ঝরে পড়ে ওর গলায়।

- "তাহলে, বলিনি ভালো খবর আছে?"

- "সত্যিই ভালো খবর! তা কনফার্ম করেছিস তো?"

- "হ্যাঁরে, আজকেই কনফার্ম করেছি। দুমাস হচ্ছে।"

- "আগে টের পাসনি?"

- "পেয়েছিলাম, তবে আজকে কনফার্ম হলাম।"

- "কনগ্র্যাটস রে। তবে হঠাৎ করে এতবছর পরে আরেকটা ইস্যু নিলি?"

- "আর বলিস কেন ভাই? সব হঠাৎ করেই হয়ে গেল। বর বলল চলো আরেকটা নিই।"

- "আর তুই রাজী হয়ে গেলি? দুজনকে সামলাতে পারবি একলা হাতে?"

- "সব পারবো। দুজন মিলে সামলাবো। অসুবিধা হবে কেন?"

- "ওঃ কি প্রেম রে! হিংসে হচ্ছে তোকে দেখে।"

- "হিংসা নয় চেষ্টা করো। তবে তুই চাইলে আমি তোকে হেল্প করতে পারি।" হঠাৎ করেই বলল তপতী।

- "তুই হেল্প করবি?"

- "কেন? পারবো না?"

- "পারবি না কখন বললাম? তুই সব পারিস। তা কিভাবে হেল্প করবি?"

- "সে ব্যবস্থা আছে। তবে তোকে আমার সব কথা শুনে চলতে হবে। আমি যেমন যেমন বলবো তেমন তেমন করতে হবে। আমি ফল পেয়েছি বলেই তোকে সাজেস্ট করছি।" তপতী সিরিয়াস গলায় বলল।

- "কি করেছিস তুই?" বন্ধু যে কেবল ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছে না, সেটা ও পরিষ্কার বুঝতে পারল।

- "বলছি শোন। মাসদেড়েক আগে হঠাৎ একদিন বর অফিস থেকে ফিরে আমায় বলল..."

তপতী বলে চলল। ও শুনে চলল। নীরবে। নিঃশব্দে। প্রথম প্রথম ওর বিশ্বাস হচ্ছিল না। তপতী হয়তো মজা করছে। এরকম আবার হয় নাকী? তাও আবার কলকাতার মত একটা শহরে? কিন্তু কিন্তু ধীরে সব কথা শোনার পর ওর মনের ভাবটাই পরিবর্তন হয়ে গেল। এরকমও যে হতে পারে সেটা ও কোনোদিন কল্পনাও করেনি। অবশ্য ওর কল্পনার জগৎটা ওর বাস্তবের মতই সীমিত পরিসরের। বর। ছেলে। আর ও। ব্যাস শেষ। এর বেশী কোনোদিন কল্পনাও করেনি। বিয়ের পর থেকে অনেকগুলো বছরই তো কেটে গেল, কই ওর মনে তো সু ছাড়া আর কিছু কোনোদিন আসেনি? আজও যখন সু –এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, কত সাবধানতাই না নেয়। বাবান ঘুমিয়েছে কিনা। জানালাটা ঠিক মতো বন্ধ হয়েছে কিনা। পর্দাটা ঠিক করে টানা হয়েছে কিনা। ঘরের আলোটা নিভিয়ে দাও। আরো কতকিছু। বরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময়েও কত সাবধানতা। আস্তে করো, শব্দ হচ্ছে। বাবান উঠে পড়বে। মুখে কথা বলো না। আরো কতকিছু। সেখানে ওর মত একটা অতি সাধারণ, ঘরোয়া, ছাপোষা নারী তপতীর বলা কথাগুলোয় বিশ্বাস করবেই বা কি করে? বিশ্বাস করতে ভয় হয় যে। যদি এগুলো সত্যি হয়?

দুপুরে ভাত খাওয়ার পরে মাকে ফোন করা একটা নিত্যদিনের অভ্যাস ওর। কিন্তু আজ প্রথমবার সেই অভ্যাসে ছেদ পড়ল। খাওয়াদাওয়া শেষ করে, ডাইনিং টেবিলটা মুছে, বাসনপত্রগুলো মেজে নিয়ে সোজা শোওয়ার ঘরে চলে এল। বাবান বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে কাদা। সেই বিকালের আগে উঠবে না। ঐদিক থেকে নিশ্চিন্ত। ফোনটা চার্জ হচ্ছিল। চার্জ থেকে খুলে নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসল। পিঠে বালিশটা দিতে আরো আরাম হল যেন। ফোনটা হাতে নিতেই তপতীর কালকের বলা কথাগুলো কানের কাছে আরো একবার ভেসে উঠল। "আমার কথা বিশ্বাস কর, অনু। আর যাই হোক, তোর কোনো ক্ষতি হোক আমি চাইব না। এটা কেবল টাইম পাসের জন্য। একবার অ্যাপটা ইউজ কর। দেখবি এই জগতে কত কিছু আছে, তুই এতদিন তার হদিস জানতিসই না। এতে দেখবি আখেরে তোর লাভই হবে। তোর সেক্স লাইফ আরো এক্সাইটেড হয়ে যাবে। একবার ইউজ করে দেখ, পছন্দ না হলে ডিলিট করতে কতক্ষণ?..." ঘাড় ঘুরিয়ে আরো একবার বাবানের দিকে তাকালো ও। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আশ্বস্ত হয়ে প্রথমে ফোনটাকে সাইলেন্ট করল। তারপর ব্লুটুথ হেডফোনটাকে কানে গুঁজে নিল। ও চায় না কোনো অবাঞ্ছিত আওয়াজ ছেলের কানে যাক। লগ ইন পেজে ঢুকে নিজের ইউজার নেমটাকে টাইপ করল ও। Lilith99। নামটা কিন্তু ওকে তপতীই সাজেস্ট করেছিল। ওর পছন্দও হয়ে গেছিল। নেটে দেখেছে লিলিথ হচ্ছে প্রথম পুরুষ অ্যাডামের প্রথমা স্ত্রী। তাই ওটাকেই রেখেছে। লিলিথ। নামটা বেশ মিষ্টি। নেট থেকে বেছে বেছে একটা ছবিও ডাউনলোড করে প্রোফাইল পিকচার করেছে। জন কলিয়ারের আঁকা একটা ছবি। নগ্ন দেহী একটা নারী শরীরকে পেঁচিয়ে আছে একটা কালো ও লম্বা সাপ। এক দৃষ্টে ওই ছবিটাই ওর পছন্দ হয়ে গেছিল। তাই ওটাকেই প্রোফাইল পিকচার করেছে। অল্পক্ষণ সময় লাগল লগইন হতে। লগ ইন হওয়ার পর একটা নতুন পেজ খুলে গেল। প্রথমে একটা প্রোফাইল তৈরী করতে হবে। আর তার জন্য ওর কিছু পার্সোনাল ইনফরমেশন দিতে হবে। আগে থেকে তপতী সবকিছু শিখিয়ে দিয়েছে। ওর কথা মতই কিছু ইনফরমেশন ইচ্ছে করেই ভুল দিল। যেমন – বয়স ২৫। গায়ের রঙ – ফর্সা। হাইট – 5 ফুট 3 ইঞ্চি। এরকম আরো কিছু। কিন্তু এর পরের প্রশ্নগুলো যেন আরো ডার্ক হতে শুরু করল। Your Type – Dominant / Slave. এই প্রশ্নের অর্থ ও বুঝতে পারল না। অনেক ভেবে Slave অপশনটাতেই ক্লিক করল। পরের প্রশ্ন – You are interested in – Men / Women / Both. এটার উত্তর তপতী আগেই ওকে শিখিয়ে রেখেছিল। ও Both –এ ক্লিক করল। এর পরের প্রশ্নে ও আরো ভড়কে গেল। Your favourite sex position – Missionary / Doggy / Horse Riding. কোনটা ক্লিক করবে ভেবে পেল না। তিনটে পজিসনেই সু ওকে করে থাকে। তবে মজা হয় সবচেয়ে বেশী Missionary তেই। তাই ঐটাতেই ক্লিক করল। এরকম আরো অনেক রকমের ডার্ক আর ইন্টিমেট প্রশ্ন। মাথা ঠান্ডা করে এক এক করে ক্লিক করে যেতে লাগল। সবশেষের প্রশ্নটাতে এসে আরো একবার হোঁচট খেল। বুঝে উঠতে পারল না কি করবে। প্রশ্নটা ছিল – Do you want your face blurred – Yes / No. ও Yes তে ক্লিক করল। তবে নীচে লেখা ছিল ও চাইলে যখন খুশী এই অপশনটি চেঞ্জ করতে পারবে। কিন্তু ও জানে এই অপশনটা কোনোদিনই চেঞ্জ করবে না। কারণ এই অ্যাপে নিজের মুখ দেখানোর কোনো ইচ্ছেই ওর নেই। সবশেষে লোকেশনে কেবল Kolkata লিখল। ওর প্রোফাইলটা এতক্ষণে তৈরী হল। বেশ অনেকটা সময়ই লাগল। ঘেমে উঠেছে এরমধ্যে। সেটা গরমে নাকি উত্তেজনায় বুঝে উঠতে পারল না। কপাল আর গলার ঘামগুলো মুছতেই ও বুঝতে পারল জল তেষ্টা পেয়েছে। এই রে, জলটা তো ডাইনিং টেবিলেই রয়ে গেছে। তাড়াতাড়িতে আনা হয়নি। ফোনটাকে বিছানায় ফেলে রেখে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এল। টেবিল থেকে জলের বোতলটা তুলে নিয়ে ছিপি খুলে কিছুটা জল গলায় ঢালল। আহঃ! কি আরাম! জলের বোতলটাকে হাতে নিয়ে আবার শোওয়ার ঘরে ফেরত এল। ঘরে ঢুকেই প্রথমেই ওর চোখটা পড়ল বিছানায় রাখা ফোনটার উপরে। লক স্ক্রিণের আলোটা নিঃশব্দে জ্বলছে। সাইলেন্ট থাকার কারণে কোনো আওয়াজ হয়নি। তাড়াতাড়ি এসে ফোনটাকে হাতে তুলে নিল। ও যা ভয় পেয়েছে, তাইই। অ্যাপটার একটা নোটিফিকেশন এসেছে। নোটিফিকেশন আইকনটাতে আঙুল বোলাতেই নীলচে বৃত্তটা ঘুরতে শুরু করল। তারপর ফুটে উঠল একটা লেখা। Baphomet34 wants to be your partner – Accept / Decline. প্রথমেই যেটা ওর চোখে পড়ে, সেটা হল নাম। Baphomet34। বিড়বিড় করে নামটা আরো একবার পড়ল ও। যদিও মানেটা ওর জানা নেই। নামের উপরে ক্লিক করে প্রোফাইলটায় ঢুকল। বয়স – 27। Male, Dominant, interested in Women, lives in Kolkata. এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু ইনফরমেশন ছিল, যেগুলো পড়তে পড়তে ওর কান আর মাথা দুটোই গরম হয়ে গেল। যদিও 'আট ইঞ্চি'র কথাটা ওর একেবারেই বিশ্বাস হল না। যাই হোক। সব ইনফরমেশনগুলো পড়ার পরে ও বুঝতে পারল ফোনের স্ক্রিণে ওর আঙুলগুলো আরো একবার অস্থির হয়ে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। অনেক ভেবে অবশেষে লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে Accept বোতামটায় ক্লিক করল অনুরাধা।
 
আয়ুষ – সকালের পর থেকে অনেকটা সময়ই এর মধ্যে কেটে গেছে। এখন সময়ের হিসেবে দুপুর। সারা বাড়িতে এখন ও সম্পূর্ণ একা। এই সময়ে ও সাধারণত বাড়িতে থাকে না। কলেজে থাকে। কিন্তু আজ কলেজে যায়নি বলে বাড়িতে রয়েছে। তাও আবার একা। এখন ও যা খুশী তাই করতে পারে। কিন্তু কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না। সকাল থেকে একবারও তিতাসের সঙ্গে কথা হয়নি ওর। এরকম দিন ওর জীবনে প্রায় আসেই না বলতে গেলে। কারণ তিতাস যেমন ওর সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারে না, ঠিক তেমনই ও নিজেও তিতাসের সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারে না। কিন্তু এই তিতাসটা কে? তিতাস হল ওর একমাত্র বন্ধু। বা বান্ধবীও বলা চলে। একমাত্র কারণ কলেজে তিতাস ছাড়া অন্য কারোর সঙ্গে ওর ঠিক জমে না। আসলে ওর মত লাজুক আর ইন্ট্রোভার্ট ছেলে যে আজকের এই ডিজিটাল যুগে একেবারেই অচল, সেটা ও নিজেও ভালো করেই জানে। কিন্তু তাও ওর কিছু করার নেই। আসলে ও চট করে কারোর সঙ্গে গায়ে পড়ে বন্ধুত্ত্ব করতে পারে না। কেউ যদি যেচে ওর সাথে কথা বলতে চায়, বা বন্ধুত্ব করে তবে ও তার সঙ্গে মেশে, কথা বলে এবং বন্ধুত্বও করে। যদিও সেই বন্ধুত্ব খুব বেশী দিন টেকে না, সেটা আলাদা কথা। যেমন এর আগে স্কুলে ওর দু তিনজন বন্ধু ছিল। কিন্তু আজ তারা কোথায়, কোন কলেজে পড়ে ও সেসব কিছুই জানে না। তার কারণ খোঁজ রাখেনি। ও চুপচাপ নিজের মধ্যে থাকতেই বেশী পছন্দ করে। খুব বেশী হট্টগোল, হাসি ঠাট্টা এসব পছন্দ করে না। আর ওর মত সিরিয়াস ছেলেকে কেউই বিশেষ পাত্তা দেয় না। মেয়েরা তো নয়ই। অবশ্য এসব নিয়ে ওর খেদ কোনোকালেই ছিল না। নিজেকে নিয়েই থাকতো। সেই অভ্যেসটা হোঁচট খেল কলেজের প্রথম দিনেই। সেই দিনটার কথা ওর বেশ ভালো করেই মনে আছে। নিজের অভ্যেস মতো শেষের দিকের একটি বেঞ্চে একলা বসেছে। ওর পাশে এসে বসার মতন উদারতা তখনও পর্যন্ত কেউই দেখায়নি। এতে অবশ্য ওরই লাভ হয়েছে। ক্লাস শুরু হতে আর অল্পক্ষণই বাকী আছে। নীচু হয়ে ব্যাগ থেকে পেন আর নোটবুকটা বের করছিল, হঠাৎ করে প্রায় কানের গোড়ায় একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। গলাটা মেয়েলী বলেই ও হয়তো চমকে উঠেছিল প্রথমে। পাশ ফিরে দেখল বেঞ্চের ঠিক পাশে রোগা আর লম্বা মতন একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে দেখল মেয়েটার চোয়াল নড়ছে। দেখে মনে হল কিছু চিবোচ্ছে। সম্ভবত চুয়িংগাম। ও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি কি আমায় কিছু বললে?" একমুহুর্তের জন্য চোয়ালটা থেমে গেল। তারপর আবার আগের মত নড়তে শুরু করে দিল। সেই গতির মধ্যেই জবাব এল, "হ্যাঁ।"
  • "কি?" ভদ্রতার খাতিরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও জিজ্ঞাসা করল।​
  • "বলছি, একটু সরে বসো। আমি বসবো এখানে।" আগের মতই চোয়াল নড়ছে।​
  • "কেন?" প্রশ্নটা করেই বুঝতে পারল নিতান্তই বোকার মত প্রশ্নটা করে ফেলেছে। তার জবাবটা ও পরের কথাতেই টের পেল।​
  • "কেন আবার কী? বেঞ্চে বসবো না তো কোথায় বসব। তোমার কোলে?" গলায় বিরক্তির সাথে মজাটাও লুকিয়ে আছে সেটা প্রথমে বুঝতে পারেনি।​
  • "আমি সেটা বলতে চাইনি..." এই প্রথম কাউকে জবাবদিহি করতে চাইল, কিন্তু পারল না।​
  • "তাহলে কি বলতে চেয়েছিলে?" মেয়েটা ওকে প্রায় চুপ করিয়ে দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল।​
  • "আমি বলতে চেয়েছিলাম। তুমি এখানে বসবে কেন? অন্য কোথাও বসো।" ঠান্ডা মাথায় জবাব দিল।​
  • "কেন এখানে বসলে কি হবে?" আবার পাল্টা প্রশ্ন।​
  • "বসলে কিছু হবে না, বাট..." এবারেও কথা শেষ করতে পারল না।​
  • "তাহলে আমি এখানেই বসবো।" বলে মেয়েটা নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে ওর পাশেই গ্যাঁট হয়ে বসে পড়ল। প্রতিবাদ করার তিলমাত্র সুযোগও পেল না।​
এরপরেই একজন স্যার এলেন। এবং ক্লাস নিতে শুরু করলেন। ও মনোযোগ দিয়ে ক্লাস শুনছে এবং নোটস নিচ্ছে হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে টের পেল মেয়েটি দিব্বি ওর পাশে বসে ফোনে চ্যাট করে যাচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে মুখ টিপে টিপে হাসছে। ও কিছু বলল না। কিন্তু মেয়েটি বলল, "আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে, সামনে স্যারের দিকে তাকাও। তা নাহলে স্যার ভাববে লাস্ট বেঞ্চে বসে তুমি আমার সাথে প্রেম করছো।" কথাটা বলল বটে, তবে একবারের জন্যেও চোখদুটো ফোন থেকে সরালো না। তাহলে কিভাবে টের পেল যে ও ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। রহস্যভেদ করার চেষ্টা করল না। নিজেকে সামলে নিয়ে আবার ক্লাসে মন দিল। কিন্তু সেটাও বেশীক্ষণ পারল না। হঠাৎ ওর কানে এল মেয়েটা বলছে, "অ্যাই, ক্লাস শেষ হয়ে গেলে তোমার নোটসগুলোর ছবি তুলে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করে দিওতো। আমার নম্বরটা টুকে নাও। নাইন এইট সেভেন সিক্স...." গড়গড় করে নিজের ফোন নম্বরটা বলে গেল মেয়েটা। ও তো যাকে বলে অবাক। এতটাই যে, নম্বরটা টুকতেও ভুলে গেল। মেয়েটা একবার আড়চোখে ওর দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর নিজেই ওর নোটবুকটা টেনে নিয়ে পিছনের পাতায় খসখস করে নিজের ফোন নম্বরটা লিখে দিল। তারপর নোটবুকটা আবার ওর দিকে ঠেলে দিল। ও তাকিয়ে দেখল নম্বরের ঠিক উপরে নিজের অটোগ্রাফটাও মেয়েটি দিয়ে দিয়েছে। 'তিতাস'। দেখেই মনে হচ্ছে ডাক নাম। কারণ তিতাস কারোর ভালো নাম হতে পারে না। হলেই বা দোষ কি? অযাচিত ভাবে অন্য কারোর কথা ভাবছে ও, তাও একটা মেয়ের বিষয়ে? নিজের মনকেই কষে ধমক লাগালো। তারপরেই শুনতে পেল মেয়েটা অর্থাৎ তিতাস ওকে উদ্দেশ্য করেই বলছে, "তুমি কি সারাক্ষণই এরকম বিড়বিড় করে বকো, নাকি এখন কিছু স্পেশাল।" ও তাকিয়ে দেখল মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে মুচকি হাসছে।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে ও নিজের ঘরে এল। বুবলা অর্থাৎ ওর বোন একটু আগেই কোথাও বেরিয়ে গেল। কোথায় গেল জানে না। জানতে চায়ও না। নিজের ঘরে এসে দরজাটা বন্ধ করে বসল। যদিও এই মুহুর্তে বাড়িতে ও ছাড়া দ্বিতীয় কোনো জনপ্রাণী নেই, তবুও সাবধানতা বশত দরজাটা বন্ধ করেই দিল। বিছানার উপরে ফোনটা পড়ে আছে। তিতাসকে একবার ফোন করা দরকার। তা না হলে পরে ঝাড় খেতে হবে। মেয়েটা সত্যিই একটা পাগলী। কিন্তু এই পাগলী মেয়েটাকে ওর খুব ভালো লাগে। দুবছরের সম্পর্কে ওরা দুজনেই তুমি থেকে তুইতে নেমে এসেছে। কিন্তু আজও ও তিতাসের ভালো নাম জানে না। জানতে চায়ওনি কোনোদিন। কি হবে জেনে? ও বরং ওর কাছে তিতাস হয়েই থাকুক না। ক্ষতি কি? এরই নাম কি ভালোবাসা? ও জানে না। হবে হয়তো। কোনোদিন এসব নিয়ে ভাবে নি। তিতাসও নিশ্চয়ই ভাবে না। আসলে তিতাস কিছু নিয়েই বড়ো একটা ভাবে না। কোনো কিছু নিয়েই ও সিরিয়াস নয়। আর এই জন্যেই হয়তো ওকে ওর এত বেশী ভালো লাগে। ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে তিতাসের নম্বরটা ডায়াল করল। এনগেজ টোন আসছে। নিশ্চয়ই কারোর সাথে ভাট বকছে। বকতে পেলে তো আর কিচ্ছু চায় না মেয়েটা। কলটা কেটে দিল। পরে একবার ট্রাই করবে। বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। সকাল থেকেই কেমন একটা আলস্য অনুভব করছে। শুয়ে পড়ে ফোনটাকে রাখতে গিয়েও রাখল না। কি মনে হতে দ্রুত আঙুল চালিয়ে অ্যাপটাকে খুলে ফেলল। ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ডটা টাইপ করল। অনেক ভেবে ইউজার নেমটা রেখেছে। Baphomet34। ছাগল মুখো এই দানবটিকে অনেকে শয়তান বলেও উল্লেখ করে থাকে। অনেক খুঁজে এই নামটিই ওর পছন্দ হয়েছে। সেই সঙ্গে ভয়াল দর্শন একটি ছবিকে প্রোফাইল পিকচার করেছে। আজ সারাটা সকাল ধরে বসে বসে নিজের প্রোফাইলটিকে তৈরী করেছে। অবশ্য তার জন্য গাদাগুচ্ছের মিথ্যে কথাও লিখতে হয়েছে ওকে। ওর বয়স, হাইট, ইত্যাদি তো আছেই। বেশীর ভাগ প্রশ্নে অনেক ভেবেচিন্তে অপশন চুজ করেতে হয়েছে। Dominant অপশনটা অবশ্য ইচ্ছে করেই রেখেছে। লোকেশনটা কলকাতাই রেখেছে। প্রথমে ভেবেছিল ফেসটা ব্লারড করবে না। তারপর অনেক ভেবে Yes করে দিয়েছে। কিন্তু Interested in অপশনে কেবল women টাতেই ক্লিক করেছে। অনেকটা সময় নিয়েই নিজের প্রোফাইলটা তৈরী করেছে। যাতে অ্যাট্রাকশনটা বজায় থাকে। এখন অ্যাপটা খুলতেই অটোমেটিক্যালি কিছু সাজেশন চলে এল। বলা বাহুল্য সবগুলোই মহিলাদের প্রোফাইল। প্রায় খান আষ্টেক তো হবেই। সময় নিয়ে এক এক করে সব কটা প্রোফাইল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অবসার্ভ করল ও। এর মধ্যে বেশীর ভাগটাই যে ফেক প্রোফাইল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো সবগুলোই। কিন্তু তার মধ্যেও দুটো প্রোফাইল ওর চোখে পড়ল। এবং দুটোতেই কিছু না কিছু অসঙ্গতি আছে। কেমন যেন আনাড়ি হাতে তৈরী প্রোফাইল। এই অ্যাপে খুব বেশী লোকের সাথে মিশবে না, এটা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। হাতে গোণা কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতবে। এই দুটো প্রোফাইলই ওর কাছে পারফেক্ট বলে মনে হল। কারণ এই অসঙ্গতিগুলোর কারণেই ওর মনে হল এইগুলো জেনুইন প্রোফাইল হলেও হতে পারে। এই প্রোফাইলগুলোর মালিক বা মালকিন এসব জিনিসে খুব একটা বেশী অভ্যস্থ নয়। তাই এই অসঙ্গতিগুলো রয়ে গেছে। প্রথম নামটা ওর মনে ধরল। Lilith99। ছবি দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। নেট থেকে যে ডাউনলোড করা সেটা বোঝাই যাচ্ছে। প্রোফাইলটাও যেন একটু এলোমেলো। Slave শব্দটাও ওর নজর এড়ালো না। বয়স লেখা আছে ২৫। সঠিক বা ভুল হতেই পারে। কিন্তু বাকী অপশনগুলো একটু খাপছাড়া। বেশী কিছু না ভেবে ও send partner request অপশনটাতে ক্লিক করল। ও আশা করেনি এতটা চটজলদি জবাব পাবে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নোটিফিকেশন এল Lilith99 accepts your request. Now you can chat with HER. লিলিথের প্রোফাইলটা দ্বিতীয়বার খুলল ও। এতক্ষণে চ্যাট অপশনটাও এনেবল হয়ে গেছে। লিলিথের নামের পাশে একটা মাঝারী সবুজ রঙের বৃ্ত্ত জ্বলজ্বল করছে। তারমানে সে এখন অ্যাকটিভ আছে। ও চ্যাট অপশনটা খুলল। তারপর এক লাইন টাইপ করল। Hi sexy, this is Baphomet. Wanna chat with you. সেন্ড অপশনটাতে আঙুল বোলাতেই চ্যাটটা চলে গেল প্রাপকের কাছে। কিন্তু কোনো জবাব এলো না। তার বদলে নামের পাশের বৃত্তটা নিভে গেল মুহুর্তের মধ্যে। তার মানে ওর চ্যাটটা পাওয়ার পরেই লিলিথ ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেল। ও কি একটু হলেও তাড়াহুড়ো করে ফেলল? বুঝতে পারল না। যাক। এরপর ও দ্বিতীয় প্রোফাইলটায় নজর দিল। এই প্রোফাইলটার নাম Aphrodite24। বয়স – ২৪। তবে Dominant। Favourite Sex Position অপশনে NA লেখা রয়েছে। বাদবাকী সেক্স রিলেটেড কোশ্চেনগুলোতেও কেমন যেন সব খাপছাড়া গোছের উত্তর। কিছু একটা দিলেই হলো এরকম একটা ব্যাপার। ও বুঝতে পারল, এই প্রোফাইলের মালিক হয় এই সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে চায় না, অথবা এই সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর তার জানা নেই। তাই কোনো না কোনো একটা অপশনে ক্লিক করেছে। এখানেও অসঙ্গতি। তাই আগের মত এই প্রোফাইলেও send partner request অপশনটাতে ক্লিক করল। ও জানে এর উত্তর এখনই পাবে না। কারণ নামের পাশের বৃত্তটি নিষ্প্রভ হয়ে আছে। তবে ও অপেক্ষা করতে রাজী। আরো কিছুক্ষণ অ্যাপটা ঘেঁটে দেখার ইচ্ছে ওর ছিল, কিন্তু সেই সুযোগ পেল না। কারণ ওর ফোনটা ততক্ষণে পূর্ণস্বরে বাজতে শুরু করে দিয়েছে। স্ক্রিণে তিতাসের নামটা দেখতে পেয়ে আর দেরী করল না। তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করল।

সারাটা দিন কেটে যাওয়ার পরেও একটা প্রোফাইল কিন্তু অ্যাকটিভ হল না। সন্ধ্যের দিকে একবারের জন্য Aphrodite24 প্রোফাইলটা অ্যাকটিভ হয়েছিল। কিন্তু তা খুবই অল্প সময়ের জন্য। কেবলমাত্র ওর partner request টা accept করল। আর তার অল্পক্ষণ পরেই সেটা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেল। ও আবার লিলিথের প্রোফাইলটা খুলল, কিন্তু সেটাও ইনঅ্যাকটিভ হয়ে পড়ে আছে। একটু পরে মা কলেজ থেকে ফিরল। প্রথমে কলিং বেলের শব্দ, তারপর মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে বাইরে এসে দরজাটা খুলল। মা ওকে একপ্রকার ঠেলা মেরে ঘরের ভিতরে ঢুকল। ডাইনিং টেবিলে নিজের কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রাখল। মা ঘেমে নেয়ে চান করে গেছে প্রায়। কপাল আর গলায় জমে ওঠা ঘামের বড়ো বড়ো ফোঁটাগুলোকে এত দূর থেকেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল। ও জানে মা সবার আগে বাথরুমে ঢুকে গা ধোবে। তাইই হল। মা তোয়ালেটা নিয়ে সটান বাথরুমে ঢুকে গেল। তবে যাওয়ার আগে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, "ব্যাগে তোমার জন্য ফিস ফ্রাই আছে। বের করে খাও। তা নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।" মা বাথরুমে ঢুকে পড়তেই ও আর সময় নষ্ট করল না। ব্যাগ থেকে ফিস ফ্রাইগুলো বের করে সদগতি করতে লেগে গেল। সারাটা সন্ধ্যে কেটে গেলেও লিলিথ বা অ্যাফ্রোডাইট কেউই অ্যাকটিভ হল না। হাল ছেড়ে দিয়ে বই আর ল্যাপটপ নিয়ে পড়তে বসে গেল। তা নাহলে মা কুরুক্ষেত্র করবে। আর ও সেটা একেবারেই চায় না। ন'টার বেশ খানিকটা পরে ফোনের নোটিফিকেশন টোনটা একবার বেজে উঠল। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে অ্যাপটা খুলে ফেলল। ওর চ্যাট বক্সে একটা চ্যাট এসেছে। দেখল লিলিথ ওকে চ্যাট পাঠিয়েছে। নামের পাশের বৃত্তটাও আবার আগের মত জ্বলজ্বল করছে। ও তাড়াতাড়ি চ্যাটটা খুলল। দেখল এক লাইন লেখা আছে। "Hi, this is Lilith". উত্তরে কি লেখা যায় প্রথমে সেটা বুঝে উঠতে পারল না। বোকার মত লিখল, "Are you active now?" উত্তর এল অল্প একটু পরে। "Yes" এরপর কি লেখা যায় চট করে ওর মাথায় এলো না। একটু সময় নিয়ে ও লিখল, "Are you Bengali?" আবার অল্পক্ষণের বিরতি। তারপর উত্তর এল, "Yes. But why?" মুচকি হেসে কি বোর্ডে ঝড়ের মত আঙুল চালাতে শুরু করল আয়ুষ।
 
গল্পটা কি পড়তে কারোর ভালো লাগছে না। কোনো কমেন্ট চোখে পড়ছে না। ভালো না লাগলে সরাসরি জানান। তাহলে আর পোস্ট করব না
 
Golpo ta besh interesting mone hoitese samne.. hopefully insect thakbe…. But progress ta surute khub slow jacche, arektu regular golpotar update dien parle
 

দূর্নিবার – গতকাল অনেক রাত অবধি জেগে ছিল ও। কারণ অন্য কিছু নয়, ঘুম আসেনি। কিন্তু ঘুম না আসার অবশ্য একটা সলিড কারণ আছে। আর সেটা হল তনিমা। অনেক রাত অবধি কেবল মেয়েটার কথাই মনে এসেছে ওর। না, না, কোনো খারাপ কথা বা চিন্তা নয়। ওর বলা কথাগুলোই কেবল ঘুরেফিরে ওর মনটাকে স্ট্রাইক করেছে। মেয়েটা সত্যিই খুব সাহসী। কথাগুলো ও ঠিকই বলেছে। একই লাইফ পার্টনারের সঙ্গে জীবনটাকে একই খাতে বইয়ে দেওয়াটা একপ্রকার মূর্খামী। ওর বয়সের অর্ধেক একটি মেয়ে ওর চোখ খুলে দিয়েছে। ঠিকই তো। আজ ইতুর সঙ্গে প্রায় পঁচিশ বছর কাটিয়ে দিল। এক ভাবে। কমিটেড। এক ছেলে আর এক মেয়ে। তারাও বর্তমানে কলেজে পাঠরত। বয়স কুড়ি একুশ হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কি পেয়েছে ও? বউয়ের কাছে আজ পর্যন্ত একটা মিষ্টি কথা শুনতে পায়নি। তাহলে কিসের মোহে এই পঁচিশটা বছর একসাথে, একভাবে কাটিয়ে দিল? জানে না। মাথাটা কেমন গরম লাগছে। সিগারেট আর দেশলাইয়ের প্যাকেটটা সাথে নিয়ে বেডরুম লাগোয়া ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। এক চিলতে ব্যালকনি। কোণে বেশ কয়েকটা পাতাবাহারী গাছের টব। সবই ওর বউয়ের শখ। পারেও বটে। পিছন ফিরে একবার তাকাল। ইতু পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে। এখন ওর মাঝরাত। সিগারেটের প্যাকেটটা থেকে একটা সাদা কাঠি বের করে ধরাল। তারপর লম্বা একটা টান দিয়ে আয়েশ করে ধোঁয়ার কুণ্ডলীটাকে ভাসতে দিল বাতাসে। সেই দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আরো একবার তনিমার কথা মনে এল ওর। এরকম বোল্ড আর ইন্টিমেট কথা এর আগে কখনো বলেনি মেয়েটা। সব শুনতে শুনতে ওর নিজের কানগুলো পর্যন্তও গরম হয়ে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল কোনো পর্ণ অডিও স্টোরি শুনছে। কিন্তু একবারের জন্যও তনিমাকে থামায়নি। ইন্টারাপ্টও করেনি। এক মনে প্রত্যেকটা শব্দ শুনে গেছে চুপচাপ। মেয়েটাও প্রতিটা কথা ডিটেলসে বলে যাচ্ছিল। কথাগুলো সত্যি নাকি মিথ্যে তা ও জানে না। জানার প্রয়োজনও মনে করে না। সব কথা বলার পর যখন তনিমা অল্প একটু থেমেছে তখন প্রথম প্রশ্ন করেছিল, "তাহলে বলছো ঐ অ্যাপে লাইভ সেক্স করা বা দেখা যায়?"
  • "অবশ্যই। তবে তার আগে আপনাকে আপনার পার্টনারকে রিকোয়েস্ট করতে হবে। যদি সে আপনার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে তবে আপনি লাইভ সেক্স দেখতে পারবেন।" তার বিখ্যাত ঠোঁটচাপা হাসিটা হেসে বলল তনিমা। তারপর অল্প কিছুটা থেমে বলল, "অবশ্য ফ্রিতে দেখতে পাবেন না, তার জন্য কিছুটা গ্যাঁটের কড়ি খসাতে হবে আপনাকে।"​
  • "কিরকম?" কৌতুহলী স্বরে জিজ্ঞাসা করেছিল।​
  • "কিরকম জানেন। লাইভ সেক্স দেখার আগে আপনাকে আপনার পার্টনারকে কিছু টিপস্ সেন্ড করতে হয়।"​
  • "টিপস্?!"​
  • "হ্যাঁ। আমি আপনার বোঝার সুবিধার জন্য টিপস্ বলছি, তবে অ্যাপে আছে স্টার। তবে ব্যাপারটা একই। আপনাকে অ্যাপের নিজস্ব স্টোর থেকে এই স্টার কিনতে হবে। যত বেশী স্টার আপনি খরচা করবেন তত বেশী এঞ্জয় করতে পারবেন।" ব্যাপরটা খোলসা করে বলল তনিমা।​
  • "এতে তার লাভ কি?"​
  • "ধরুন আমি আপনাকে সার্ভিস দিলাম। মানে আমার সেক্স আপনাকে লাইভ দেখতে দিলাম। তার বদলে আপনি আমাকে স্টার সেন্ড করলেন। সেই স্টার আমার প্রোফাইলে জমা হয়ে রইল। আমি পরে সেইগুলো অন্য কাউকে সেন্ড করতে পারবো। আমাকে পয়সা খরচা করে কিনতে হবে না। ধরুন এই স্টারই হল অ্যাপটার কারেন্সী। যার কাছে যত বেশী স্টার, সে তত বেশী বড়লোক।"​
এতক্ষণে পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হল ওর কাছে। তনিমা অল্প একটু থেমে আবার বলল, "তবে চ্যাটটা বিনামূল্যে করতে পারবেন। ভিডিও কলটাও ফ্রি। তবে ঐটুকুই। বাদবাকী দেখতে গেলে স্টার কিনতে হবে।" ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে ও বলল, "বুঝেছি। এই দুনিয়ায় ফ্রিতে কিছুই হয় না। কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়।"
  • "হক কথা।"​
  • "তা তোমার কত স্টার জমেছে আজ পর্যন্ত।"​
  • "তা প্রায় হাজার দেড়েক।" মুচকি হেসে বলল তনিমা। "আসলে আমরা মানে আমি আর আমার বয়ফ্রেন্ড দুজনেই প্রতি রাতে লাইভ পারফর্ম করে থাকি। তবে ভাববেন না যে শুধুই স্টার জমাই আমরা। অন্যের পিছনে খরচাও করে থাকি।"​
  • "তার মানে তোমরা অন্যের লাইভ সেক্সও দেখো!!" কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করল।​
  • "অবশ্যই দেখি। তা নাহলে বাকীরা আমাদের শো দেখবে কেন?"​
  • "শো?!!"​
  • "আমরা শো বা পারফর্মই বলে থাকি। বাকিরাও সেটাই বলে।"​
  • "তাহলে তোমাদের কাছে সেক্স কেবলই একটা পারফর্মেন্স। এর মধ্যে কোনো ইন্টিমেসি নেই?"​
  • "কে বলল নেই? সেইজন্যেই তো আমরা এই অ্যাপটা ব্যবহার করি। লাইভ পারফর্মের সময় আমাদের পার্টনাররা এমন এমন রিকোয়েস্ট করে, সব আপনাকে বললে আপনি হার্ট ফেল করবেন। সেইসব রিকোয়েস্ট রেখে আমাদের পারফর্ম করতে হয়। সবাই তাইই করে।"​
  • "তার মানে এককথায় সেক্সের খোলা বাজার। তাই তো?"​
  • "ঠিক ধরেছেন। এখানে কোনো সেন্সরশিপের বালাই নেই। সবই খুল্লামখুল্লা। আর সবথেকে সেফেস্ট বিষয় হচ্ছে এখানে না কেউ আপনাকে চেনে। না আপনি অন্য কাউকে চেনেন। এখানে আপনি বাকীদের মতোই কেবল একজোড়া চোখ। এখানে আপনি কাউকে জাজ করতে পারবেন না। কারণ এখানে সবাই সমান। সব্বাই। আপনিও।"​

কথাটা তনিমা ঠিকই বলেছিল। এখানে সবাই সমান। সে নিজেও। যখন থেকে এই অ্যাপে লগ ইন করেছে তখন থেকেই ও জাজ করার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। ও তো সব জেনেশুনেই এখানে এসেছে। তাহলে কাউকে জাজ করাটা অনর্থক। যাই হোক। আজ বিকালে কাজের ফাঁকে এই কথাগুলোই বারবার মনে আসছিল ওর। ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে অ্যাপটাকে খুলল। নিজের ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ডটা দিয়ে লগ ইন করল। Himeros07। নামটা গতকালই ঠিক করেছিল। হিমেরস হচ্ছে একজন গ্রীক দেবতা। তবে সেক্সের। বেছে বেছে এই নামটাকেই পছন্দ করেছে। তনিমারও যে নামটা পছন্দ হয়েছে সেটা তো ও আজকেই বলেছে। অ্যাপটাতে লগইন করে বেশ কিছুটা ঘাঁটাঘাঁটি করল। প্রোফাইলটা অবশ্য ওকে তৈরী করতে হয়নি। ওটা তনিমাই করে দিয়েছে। জবাবগুলোও বেছে বেছে দিয়েছে। মেয়েটার এই বয়সেই এই বিষয়ে এরকম জ্ঞান দেখে অবাক হয়ে গেল। Interested in অপশনে ও কেবল women টাকেই চুজ করেছে। কোনো ছেলের সাথে সময় নষ্ট করার মানসিকতা ওর নেই। অ্যাপটা খুলেই তনিমার সাজেশন মতো চলে গেছে partner Suggestion অপশনে। একসঙ্গে অনেকগুলো অপশন একের পর এক আসতে শুরু করল। প্রথমেই যে নামটা সামনে এল সেটা হচ্ছে Eisheth26। নামটা বেশ আনকমন লাগল ওর কাছে। ও প্রোফাইলটা খুলল। খুব বেশী ইনফর্মেশন পাওয়া গেলনা। কেবল বয়স – ২৬ আর Dominant এই দুটো জিনিসই ওর চোখে পড়ল। কি মনে করে ঐ প্রোফাইলটায় partner Request সেন্ড করে দিল। তারপর আরো বেশ কয়েকটা প্রোফাইলে সেন্ড করল রিকোয়েস্ট। আরেকটা প্রোফাইল খুলল। সেটার নামটা বেশ ইউনিক। বেশ মিষ্টিও বটে। Lilith99। লিলি ফুলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কি? বুঝতে পারল না। লিলিথের প্রোফাইলটা অ্যাকটিভ ছিল। একটু পরেই সে ওর রিকোয়েস্টটা অ্যাকসেপ্ট করে নিল। কিন্তু এইসেথের প্রোফাইলটা ইনঅ্যাকটিভ ছিল। কিন্তু কেন জানিনা এই প্রোফাইলটাই ওর আকর্ষণ টেনে নিচ্ছিল বারবার। মনের মধ্যে কেমন যেন একটা টান অনুভব করতে পারছিল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কয়েকবারই ফোনটা হাতে নিয়ে নিয়ে দেখছিল। কিন্তু প্রতিবারেই হতাশ হতে হচ্ছিল ওকে। অবশেষে হাল ছেড়ে দিল। ঘরে ফিরতে বেশ অনেকটাই রাত হয়ে গেল ওর। অন্যদিন আটটার মধ্যে ঢুকলেও আজ ঢুকতে ঢুকতে ন'টা পেরিয়ে গেল। ঘরে ঢুকে দেখল ডাইনিংয়ে বসে ইতু একমনে কিছু করছে। এইসময়টা ও ব্যস্তই থাকে। হয় নোটস তৈরী করে। কখনো আবার সেমিস্টারের খাতা চেক করে। আজও দেখল একমনে মোবাইলে কিসব করছে। চারপাশে একগাদা খাতাপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। ওকে ঢুকতে দেখে ইতু ফোন রেখে বলল, "আজ এতো দেরী হল যে।" জুতো খুলতে খুলতে ও উত্তর দিল, "কাজের চাপ তো বোঝোই।" আসলে বউয়ের মুডটা আঁচ করার চেষ্টা করতে লাগল। সকালের মতই কি গরম আছে? কিন্তু দেখে যেটুকু বুঝল যে, না, আবহাওয়া বড়ই মনোরম। ফোন রেখে কিচেনের দিকে যেতে যেতে ইতু বলল, "তুমি জামাকাপড় ছেড়ে হাত পা ধুয়ে এসো। আজ ফিস ফ্রাই এনেছি। গরম করে দিচ্ছি। খাও।" ফিসফ্রাই!! তাহলে আবহাওয়া সত্যিই মনোরম। জামাকাপড় ছেড়ে এসে দেখল টেবিলে ধোঁয়া ওঠা ফিসফ্রাইয়ের সাথে চা থেকেও ধোঁয়া উঠছে। তাড়াতাড়ি সেসবের সদব্যবহার করতে লাগল। দেখল ইতু আবার মনোযোগ দিয়ে ফোনে কিছু একটা করছে। মাঝে মাঝে খাতায় কিছু টুকেও রাখছে। মনে হয় নোটস। খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করল, "বুবান কোথায়?" ফোন থেকে মাথা না তুলেই ইতু জবাব দিল, "ওর ঘরে। অ্যাসাইনমেন্ট করছে।"
  • "আর বুবলা?" মেয়ের কথাটাও জিজ্ঞাসা করল।​
  • "সে মহারানী রাজকার্য সেরে ফেরেননি এখনও। ফিরতে হয়তো মাঝরাত হয়ে যাবে। প্রতিদিনই তো হয়। হোপলেস!" শেষের কথাটা ফোন থেকে মাথা তুলে সরাসরি চশমার পুরু কাচের ফাঁক দিয়ে ওর দিকে তাকিয়েই বলল ইতু।​
কথাটা ওকে বলল নাকি মেয়েকে সেটা জিজ্ঞাসা করার সাহস পেল না। এরইমধ্যে ইতুর মাথা আবার ফোনের দিকে চলে গেছে। বিপদ বাড়ার আগেই খাবার শেষ করে ব্যালকনিতে চলে এল। সাথে ফোন আর সিগারেটের প্যাকেটটা আনতে ভুলল না। ঠোঁটের গোড়ায় জ্বলন্ত সিগারেটটা ধরে রেখে ফোনটা খুলল। অ্যাপটাতে লগইন করে দেখল এর মধ্যে অনেকেই ওর রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেছে। আবার অনেকেই ওকে রিকোয়েস্ট সেন্ডও করেছে। তাদের মধ্যে বেছে বেছে কয়েকজনের রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করল। কিন্তু ওর মন পড়ে আছে সেই প্রোফাইলটায়। খুঁজে বের করে প্রোফাইলটায় ঢুকল। নামের পাশে বৃত্তটা জ্বলজ্বল করছে। তার মানে সে এখন অ্যাকটিভ আছে। তাহলে ওর রিকোয়েস্টটা অ্যাকসেপ্ট করছে না কেন? মনের মধ্যে একটা অস্থির ভাব অনুভব করল ও। আরো একবার রিকোয়েস্টটা সেন্ড করল। এবার অল্প একটু পরেই সেটা অ্যাকসেপ্টও হয়ে গেল। এবার আর ও দেরী না করে একটা "Hi" লিখে পাঠাল চ্যাটে। এবং আশ্চর্যের কথা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফিরতি চ্যাট এল তার কাছ থেকে।
  • "Who the fuck you are???"​
  • "I think you should mind your language." অল্প একটু বিরক্তি নিয়েই লিখল। সঙ্গে সঙ্গেই এক লাইনে উত্তর এল।​
  • "Go to HELL." সঙ্গে একটা ইমোজি। একটা হাত, যার কেবল মধ্যমাটা উঁচু হয়ে আছে।​
অর্থটা বুঝতে একেবারেই অসুবিধা হল না ওর। এরসাথে এটাও বুঝতে পারল এটা শক্ত ঘাঁটি। ওর এরকম মেয়েই পছন্দ। অবশ্য এটা যদি কোনো মেয়ে হয়ে থাকে। কথা চালাবার জন্য লিখল,
  • "That's where I have come from."​
  • "You are just a pimp. Stay away."​
  • "I can't. I want to talk with you."​
  • "And why should I talk with you?"​
  • "Just because I want to." কথাবার্তাগুলো ক্রমেই গরম হয়ে উঠছে।​
কিন্তু একটা জিনিস ও বুঝতে পারছে। উল্টোদিকে থাকা মানুষটাও কিন্তু সমানে কথা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে তার প্রতিটা কথায় কিন্তু চুপ করে থাকছে না সে। এতেই ভরসা পেয়ে আরো বেশী করে কথা চালিয়ে যাচ্ছে। পরের প্রশ্নটায় কিছুটা হলেও হকচকিয়ে গেল। আসলে প্রশ্নটার মর্মার্থ একটুও বোধগম্য হল না ওর।
  • "Are you a MALE or a FEMALE?"​
  • "And why do you concern?" একটু ল্যাজে খেলানোর চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না।​
  • "Just Answer me. Or get lost."​
  • "I am a guy." এর বেশী ঘাঁটানোর সাহস হল না।​
  • "I thought you a are gay." কথাটা মজা করে বলল কিনা বুঝতে পারা গেল না।​
  • "Wish to test (taste) me?" ইচ্ছে করেই punning করে কথাটা লিখল যদি বরফ গলে।​
  • "You wish!!! Are you capable???" বিপক্ষও হারার পাত্র নয়।​
  • "I think so." কথাবার্তা চলতে থাকল।​
সিগারেটে শেষ টান মেরে সেটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দেখল আরো একটা চ্যাট ঢুকছে ওর অ্যাপে। "Do you really live in Kolkata?" এই প্রশ্নের কারণটা বুঝতে পারল না। ও তাড়াতাড়ি টাইপ করল, "Yeah. But why?" কিছুক্ষণ ওপাশ সম্পূর্ণ নিরুত্তর। তাহলে কি ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেছে? কই না তো, সবুজ বৃত্তটা তো বেশ জ্বলজ্বল করছে। কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়েই লিখল, "Hey, are you there?" আবারও কিছুক্ষণের বিরতি। তারপরেই চ্যাটটা এসে পৌঁছাল ওর কাছে। একলাইনের একটা প্রশ্ন। কিন্তু সেটা পড়েই গোটা শরীর জুড়ে ঘাম ছুটে গেল ওর। বারদুয়েক প্রশ্নটায় চোখ বোলাল। বুঝতে পারল না যেটা দেখছে সেটা সত্যি নাকি কোনো মজা। দূর্নিবার চোখ বড়ো বড়ো করে দেখল চ্যাটে লেখা রয়েছে, "Hey man, will you have sex with me??? I badly need this. Coz I am fucked up."
 
ইন্দুমতি – আজকে কিভাবে বাড়ি ফিরেছে সেটা কেবল ও নিজে জানে। না। ওর সঙ্গে কোনো খারাপ ঘটনা বা দূর্ঘটনা কোনোটাই ঘটেনি। তবুও এই কথাটাই ওর বারবার মনে হয়েছে। তার কারণও অবশ্য একটা আছে। সেটা বাড়ি ফেরার পথে বারবার মনে হয়েছে। আজ বিকালে কলেজ থেকে ফেরার পথে ঝোঁকের মাথায় আগের স্টপেজে নেমে পড়েছিল। এখন বাড়ি ফিরছে। একবার মনে হয়েছিল বাস নাহোক একটা অটো বা টোটো ধরা যাক। তারপর মনে হয়েছে, থাক, একদিন হেঁটেই বাড়ি ফেরা যাক। এখন মনে হচ্ছে ভুলই করেছে সে। যাহোক কিছু একটা নিলেই ভালো হতো। হাঁটতে আর ইচ্ছে করছে না। কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে শরীরটা। সেই সাথে কিছুটা হলেও মনটাও। ব্যাগের স্ট্র্যাপটা বারবার কাঁধ থেকে খসে পড়ছে। সেইসঙ্গে অসহ্য গরম। সারাশরীর বেয়ে ঘামের ফোঁটাগুলো গড়িয়ে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে অনবরত। ব্লাউজের পিঠ আর বগলের কাছটা অনেক আগেই ভিজে গেছে। বুকের দিকটাও ভিজতে শুরু করেছে অল্প অল্প। আর সেইজন্য আরো বেশী করে গা ঘিনঘিন করছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে গা ধোওয়া অবধি ঠিক শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ি ফেরার তাড়ায় পা জোরে চালানোয় একই সাথে দুটো জিনিস ঘটছে ওর সাথে। এক, ও আরো বেশী ঘেমে যাচ্ছে। এবং দুই, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে ক্লান্তও হয়ে পড়ছে। বার তিনেক কাঁধ থেকে খসে পড়া ব্যাগের স্ট্র্যাপগুলোকে সামলে আরো কিছুটা পথ হেঁটে এগিয়ে গেল। তারপর আর পারল না। রাস্তার ধারে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বিরাম নিতে লাগল। জল তেষ্টাও পেয়েছে প্রচন্ড। সঙ্গের ব্যাগে বোতল আছে বটে, কিন্তু জল নেই। একটু আগেই সেই অন্ধগলি থেকে বের হওয়ার আগে শেষ ঢোঁক জলটা খেয়ে এসেছে। রাস্তার ধারে কোথাও কোনো জলের কলও চোখে পড়ছে না। একটু জল ধরে খাবে সে উপায়ও নেই। চারিদিকে এখন ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে। রাস্তার ধারের একটা ল্যাম্পপোস্টের তলায় দাঁড়িয়ে বাঁ হাতের কবজিতে লাগানো ঘড়িটা দেখল। ছ'টা বেজে সাতচল্লিশ। অন্তত আধঘন্টা ধরে হাঁটছে। তার বেশীও হতে পারে। তার গন্তব্যের আগের স্টপেজটা যে এত দূরে সেটা ও আগে বুঝতে পারেনি। পারলে ঐরকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নিত না। আরো কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আর পারল না। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে অটোর অপেক্ষা করতে লাগল। ওর পাশ দিয়ে শাঁ শাঁ করে সব গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। এই সময়টায় রাস্তায় বেশ ভীড় থাকে। সবারই বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে এই সময়টায়। বেশ কয়েকটা অটোও ওর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। তবে কোনোটাই দাঁড়ালো না। হয় অটোগুলো ভর্তি, নয়তো বা ওরা ওকে খেয়ালই করেনি। বাধ্য হয়ে ও সামনের একটা ল্যাম্পপোস্টের তলায় এসে দাঁড়াল। যাতে অটোরা ওকে দেখতে পায়। হাত বাড়িয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু কোনো অটোই দাঁড়াল না। ইতিমধ্যে আরো মিনিট দশেক কেটে গেছে। ও ঠিক করে উঠতে পারল না, ও কি এখানেই এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, নাকি আবার হাঁটতে শুরু করবে? হাঁটার কথা মনে আসতেই হাঁটুর ব্যাথাটা আরো একবার নিজেকে জানান দিল। সত্যিই এবার বয়স বাড়ছে। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়। হঠাৎ করে একটা অটোকে আসতে দেখল সে। এটাকে যেভাবেই হোক পাকড়াতে হবে। কাঁধের ব্যাগটা সামলে নিয়ে ও একপ্রকার প্রায় রাস্তায় নেমে পড়ল। জোরে জোরে হাত নাড়াতে শুরু করল। সৌভাগ্যক্রমে অটোর গতিও কমে এল। ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে অবশেষে ওর প্রায় গায়ের কাছে এসে ব্রেক কষল অটোটা। তাকিয়ে দেখল ভিতরে দুজন বসে রয়েছে। তার মানে ও হাত না দেখালেও হয়তো ওর কাছে এসে দাঁড়াত। যাই হোক ড্রাইভার মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, "কোথায় যাবেন, মাসিমা?" ক্লান্তির মধ্যেও 'মাসিমা' শব্দটা বড্ড বেশী কানে লাগল ওর। তবুও সেটা মেনে নিয়ে নিজের গন্তব্যের ঠিকানা জানিয়ে জিজ্ঞাসা করল, "যাবে?" লোকটা মুখটা আবার ঢুকিয়ে নিয়ে বলল, "উঠে আসুন।" ও অটোতে উঠে বসতেই গতিপ্রাপ্ত হল সেটা। খানিক গুছিয়ে বসার পরে মনে হল এই রে, ভাড়াটাতো জিজ্ঞাসা করা হয়নি। নামার সময়ে আবার ঝামেলা করবে না তো? যাই হোক, এরপর আর হাঁটার ইচ্ছা নেই। যা নেয় নেবে। অটোর শক্ত সিটে পিঠটাকে এলিয়ে দিয়ে বসল ও। একটু হলেও আরাম পেল। বাইরে থেকে হাওয়া ঝাপটা এসে মারছে ওর মুখে। অথচ একটু আগেও কি গুমোট গরম ছিল! চোখ বোজা অবস্থাতেই একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিল।
  • "আমি আবার বলছি, তুমি হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছো। এতে লাভ কিছুই হবে না। উল্টে তোমার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।" তন্নিষ্ঠা ওর হাতটাকে খপ করে ধরে নিয়ে বলল।​
  • "আমার কি ক্ষতি হবে? তুমিই তো একটু আগে বললে যে, এখানে কেউ নিজের আসল নাম দেয় না। আমিও দেবো না। তাহলেই কেউ আমাকে চিনতে পারবে না। তাহলে আমার ক্ষতি কিভাবে হবে?" নিজের যুক্তির ঘুঁটি সাজিয়ে ও বলে।​
  • "সেটা ঠিক আছে, কিন্তু তুমি ওদেরকেই বা আইডেন্টিফাই করবে কিভাবে?" পাল্টা যুক্তি ওর দিকে ছুঁড়ে মারে তন্নিষ্ঠা।​
  • "সেটা তুমি হেল্প করলেই আমার কাজটা সহজ হয়ে যেত। কিন্তু তুমি তো গোঁ ধরে বসে আছো, আমাকে হেল্প করবে না। তাহলে আমার অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া ছাড়া আরো কোনো গতি নেই।" চোখ থেকে নেমে আসা চশমাটাকে আরো একবার যথাস্থানে পাঠিয়ে দিল।​
  • "দেখো, আমি তোমাকে হেল্প করতে চাইছি না, ব্যাপারটা এরকম নয়। আমি বলতে চাইছি, এত করে তোমার কোনো লাভ হবে না।" পাল্টা যুক্তি সাজানোর মরিয়া চেষ্টা করল তন্নিষ্ঠা।​
  • "তুমি কি চাইছো, সেটা আমার কাছে প্রাধান্য নয়। আমি কি করতে চাইছি, সেটাই মূল কথা। তুমি এবার খোলসা করে বলো, তুমি আমায় হেল্প করবে কিনা। না করলেও অবশ্য ক্ষতি কিছুই নাই, আমি একাই এসব করে নিতে পারবো। কিন্তু সময় লাগবে এই যা। তুমি থাকলে তাড়াতাড়ি হয়ে যেত দুজনে মিলে।"​
  • "বেশ, তুমি যদি আমার কথা না শোনো, তাহলে আমার আর কিছু করার নেই। আমি কিন্তু তোমাকে আগেভাগেই সাবধানও করেছি, বারণও করেছি। তুমি আমার কথা না শুনলে আমার কিছু করার নেই। তবে হ্যাঁ, বিপদে পড়লে যেন আবার আমাকে ডাকতে এসো না। আমি এসবে নেই, তা আগেভাগেই বলে রাখছি। আমাকে এসবে একদম জড়াবে না।" তন্নিষ্ঠা ওর দিকে সিরিয়াস মুখ করে বলল।​
  • "বেশ তাই হবে। আজকের পর আমি তোমাকে এই বিষয়ে কিচ্ছু বলবো না। তুমি কেবল আমার প্রোফাইলটা তৈরী করে দাও, তাহলেই হবে।" তন্নিষ্ঠাকে আশ্বস্ত করে বলল।​
  • "ঠিক আছে, দাও। তোমার ফোনটা দাও।" মুচকি হেসে তন্নিষ্ঠার বাড়িয়ে দেওয়া হাতের তালুতে নিজের ফোনটা রাখল ও।​

  • "মাসিমা, এসে গেছি।" ড্রাইভারের ডাকে বর্তমানে ফিরল। চোখ চেয়ে দেখল এরইমধ্যে ওকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে। অটো থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করল, "কত হয়েছে?"​
  • "আশি টাকা মাসিমা।" নির্লিপ্ত স্বরে বলল ড্রাইভারটা।​
অন্যদিন হলে এটা নিয়ে বার্গেনিং করত হয়তো, কিন্তু আজ ইচ্ছা করল না। খুচরো আশিটাকা ধরিয়ে দিয়ে ব্যাগটা কাঁধ নিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল। গলির মুখের দোকানটায় দেখল গরম গরম ফিসফ্রাই ভাজা হচ্ছে। কিছু মনে করে দাঁড়িয়ে কিনে নিল বেশ কয়েকটা। ছেলেটা খেতে খুব পছন্দ করে। বরও করে, তবে ওর ভয়ে কিনতে পারে না। ফিসফ্রাই কিনে নিয়ে আবার বাড়ির পথ ধরল ও। বাড়িতে পৌঁছে দেখল ঘরটা ভেতর থেকে লক। তখনই মনে পড়ল বুবান আজ বাড়িতেই আছে। কলিংবেল টিপল। বারদুয়েক বাজানোর পরে একবার হাঁক পাড়ল, "বুবান, দরজাটা খোলো।" প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বুবান দরজাটা খুলে দিল। ওকে পাশ কাটিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকল। কাঁধের ব্যাগটাকে ডাইনিং টেবিলের উপরে রাখতে আরাম হল কিছুটা। কাঁধটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়। শাড়ি ব্লাউজ সবই ঘামে ভিজে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে গেছে। এক্ষুণি গা না ধুলে শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না। তোয়ালেটা হাতে নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো। বুবান কাছেই দাঁড়িয়েছিল। ওকে দেখে ফিস ফ্রাইয়ের কথাটা মনে পড়ে গেল। পিছন ফিরে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, "ব্যাগে তোমার জন্য ফিস ফ্রাই আছে। বের করে খাও। তা নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।" বলে আর দাঁড়ালো না। বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শাড়িটাকে খুলে ফেলল। ব্লাউজটা ঘামে ভিজে যেন ন্যাতা হয়ে গেছে। ঘামের গন্ধও ছাড়ছে। তাড়াতাড়ি ব্লাউজটা খুলে ফেলল। তারপর সায়া। সবশেষে ব্রেসিয়ার। সব জামাকাপড়গুলোকে এক জায়গায় জড়ো করে রাখল। পরে কাচতে হবে। এখন আর ইচ্ছে করছে না। শাওয়ারের হাতলটা ঘোরাতেই বেশ কিছুটা গরম জল গায়ে এসে পড়ল। সারাদিনের রোদে ট্যাঙ্কের জলটা যেন ফুটছে। তবে একটু পরেই ঠান্ডা জল আসতে শুরু করল। আঃ! কি আরাম। আরো একবার চোখ বুজে এল ওর।

গলির ভিতরে ঢুকে অ্যাপটা খুলে নিজের ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ডটা লিখে লগ ইন করল। Aphrodite24। নামটা তন্নিষ্ঠাই নেট ঘেঁটে বের করেছে। কোনো এক দেবীর নাম নাকী। গ্রীকদের প্রেমের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। যত সব ঢং! ওর একদমই পছন্দ হয়নি। তবে তন্নিষ্ঠা বলল এই অ্যাপে নাকি সব এইরকম নামই চলে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই নামটাকেই রাখতে হয়েছে। খুঁজে খুঁজে একটা ছবি বের করে সেটাকে আবার প্রোফাইল পিকচার করে দিল। একটা মস্তবড়ো ঝিনুকের উপরে একটা নারীমূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই নারীর গায়ে যে এককণাও সুতো নেই, সেটা আশা করি বলার অপেক্ষা রাখে না। এক হাত দিয়ে সে নিজের বুক আর অন্য হাত দিয়ে নিজের তলপেটটা ঢেকে কোনোরকমে লজ্জা নিবারণ করছে। বা চেষ্টা করছে। তন্নিষ্ঠার কথায় এতে নাকি ছেলেছোকরারা ওর প্রোফাইলে হামলে পড়বে। মুখে কিছু বলতে পারল না বটে, তবে শুনে গাটা রি রি করে উঠল। কিন্তু কছু উপায় নেই, নাচতে নেমে ঘোমটা মুখের উপরে টানা অন্যায়। সেটা ও করবে না। এরপর শুরু হল প্রোফাইল তৈরী। সে এক পর্ব গেল বটে। প্রথম প্রথম প্রশ্নগুলো ঠিকই ছিল। নর্মাল। বয়স। হাইট। গায়ের রঙ। জেন্ডার – এসব। একমাত্র জেন্ডার বাদে বাকী সবই তন্নিষ্ঠা ইচ্ছা করেই ভুল লিখল। তারপর থেকে যা সব প্রশ্ন শুরু হল, তা দেখে শুনে দুজনেরই গলদঘর্ম অবস্থা। ভাবগতিক দেখে ও তন্নিষ্ঠাকে বলল, "এত বুঝে শুনে গুছিয়ে লেখার দরকার নেই। যাহোক কিছু একটা লিখে প্রোফাইলটা তৈরী করো যেভাবে হোক।" তন্নিষ্ঠাও ওর কথা বাড়ায় নি। কিছুটা আন্দাজে আর বাকিটা যাহোক কিছু একটা ক্লিক করে বেরিয়ে গেল। কেবল Interested in এর বেলায় ও তন্নিষ্ঠাকে দাঁড়াতে বলল। তারপর কিছু একটা ভেবে বলল, "Both অপশনটা দাও।" তন্নিষ্ঠা কৌতুহল ভরে একবার ওর দিকে তাকাল। কিছুটা জবাবদিহির ভঙ্গিতে বলল, "Both না করলে মেয়েগুলোকে ধরতে পারবো না।" তন্নিষ্ঠাও আর কথা বাড়াল না। চুপচাপ করে গেল সব কিছু। সবশেষে ওকে জিজ্ঞাসা করল ফেস ব্লার করবে কিনা। ওতে ও হ্যাঁ বলল। আর লোকেশনও কলকাতাই লিখল। প্রোফাইলটা তৈরী শেষ হওয়ার পর দুজনেই ঘেমে নেয়ে একসা। ফোনটা ওর হাতে ফেরত দিয়ে তন্নিষ্ঠা বলল, "আরো একবার ভেবে দেখো।" ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ও বলল, "আমার ভাবা হয়ে গেছে।"

গলির মধ্যে লগ ইন করার সাথে সাথেই একটা নোটিফিকেশন ঢুকল ওর অ্যাপে। আঙুল বুলিয়ে সেটাকে খুলে ফেলল। দেখল লেখা আছে Baphomet34 wants to be your partner. নীচে দুটো অপশন আছে। Accept আর Decline. মনের মধ্যে একটা দোলাচল শুরু হল। কি করবে একমূহুর্তের জন্য বুঝে উঠতে পারল না। নামটা আরো একবার পড়ল বিড়বিড় করে। Baphomet34। এটা কোনদেশী নাম বুঝতে পারল না। আরো একবার আঙুল বুলিয়ে প্রোফাইলটাকে খুলে ফেলল। 27, Male, Dominant, interested in Women, lives in Kolkata – অপশনগুলোকে এক এক করে চোখ বুলিয়ে যেতে লাগল। খুব বেশীদূর যাওয়ার ইচ্ছা হল না যদিও। গেলও না। এটা কে? কলেজের কেউ? নাকি অন্য কেউ? প্রোফাইল দেখে তো কিছুই বোঝার উপায় নেই? যদি অপরিচিত কেউ হয়? তাহলে তো কেবল সময় নষ্ট করা হবে। আর এটা ও একদমই চায় না। কিন্তু এটা যদি ওর কলেজের কেউ হয়? তাহলে তো একটা সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। ও ঠিকই বলেছিল। অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়াই না হয়ে দাঁড়ায় শেষপর্যন্ত। কিন্তু কিছু তো করার নেই। একটা চান্স নিতেই হবে। আর বেশী না ভেবে Accept অপশনটায় ক্লিক করেই দিল। তারপর তাড়াতাড়ি অ্যাপটা থেকে বেরিয়ে এল। গা ধোওয়া সেরে একটা ম্যাক্সি অঙ্গে জড়িয়ে বাথরুমের বাইরে এল। এসে দেখল বুবান খাওয়া সেরে নিজের ঘরে চলে গেছে। পড়াশোন করছে হয়তো। কিচেনে ঢুকে এক কাপ চা বানিয়ে নিল নিজের জন্য। মাথাটা কেমন যেন টিপটিপ করছে। ডাইনিংয়ের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল আটটা বেজে সাতাশ। ওর ফিরতে অনেকটাই দেরী হয়েছে আজকে। অন্যান্যদিন এই সময় ওর রাতের খাওয়ার তৈরী হয়ে যায়। তারপর বসে কলেজের ছেলেমেয়েদের অ্যাসাইনমেন্ট চেক করতে। আজকে এক্ষুণি রান্না করতে ইচ্ছা করছে না। পরে করবে। তার চেয়ে ছেলেমেয়েদের অ্যাসাইনমেন্টগুলোই একটু চেক করা যাক। বই, নোটস, খাতা, ফোন নিয়ে বসল। আধঘন্টারও বেশী কাজ করার পরে ঘাড়টা টনটন করতে শুরু করল। ডান হাতে ঘাড়টা আলতো ম্যাসাজ করতে করতে ফোনটাকে হাতে তুলে নিল। কি মনে হতে অ্যাপটাকে খুলে ফেলল। তবে খোলার আগে একবার বুবানের ঘরের দিকে তাকিয়ে নিতে ভুলল না। ছেলেটা দেখে ফেললে মুশকিল হবে। নিশ্চিন্ত হয়ে অ্যাপটাকে খুলল। খুলতেই দুটো জিনিস চোখে পড়ল ওর। এক, ব্যাফোমেট ওকে চ্যাট পাঠিয়েছে। "Hi sexy! What's up!!" ভাষার কি ছিরি!! ইচ্ছে করছে কষে দুটো থাপ্পড় মারি। বিরক্তি সহকারে চ্যাটটাকে কেটে দিতেই আরো একটা জিনিস চোখে পড়ল ওর। আরো দুটো পার্টনার রিকোয়েস্ট এসেছে। নামদুটো পড়ল। একটা হচ্ছে Cupid69। আর অন্যটা হল Eisheth26। নামদুটোর মানে কোনোটাই ও বুঝতে পারল না। শুধু এটুকু বুঝতে পারল। কিউপিড ছেলে আর এইসেথ মেয়ে। অল্প একটু ভেবে দুজনেরই রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করল ও। তারপর অ্যাপটাকে একটু বোঝার জন্য এদিক সেদিক ঘুরতে লাগল। দেখে যা বুঝল এর থেকে নরকও বুঝি পরিষ্কার হবে। ঘেন্নায় অ্যাপটাকে বন্ধ করতে গেল কিন্তু পারল না। কারণ অ্যাপটা বন্ধ করার আগে একটা চ্যাট এল। কিউপিড পাঠিয়েছে। লেখা আছে, "Hi, Aphrodite, want to be my friend?" লেখাটা পড়ে ও বুঝতে পারল এটা আগেরটার মত কেউ নয়। তা নাহলে এভাবে বন্ধু হতে চাইত না। ও উত্তরে লিখল, "Of course." ঠিক সেই সময়েই ঘরের দরজাটা খুলে গেল। মুখ তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল। বর ঢুকছে। আজ ওরও দেরী হয়েছে ফিরতে। বরকে ঢুকতে দেখে ফোনটাকে চোখের সামনে থেকে নামিয়ে নিয়ে বলল, "আজ এতো দেরী হল যে।" বর জুতো খুলতে খুলতে উত্তর দিল, "কাজের চাপ তো বোঝোই।" কিন্তু তখন আর বরের কথায় ওর মন নেই। কারণ ওর চোখ চলে গেছে হাতে ধরা ফোনটার উপরে। ও দেখতে পেল চ্যাট বক্সে লেখা ফুটে উঠেছে ইতিমধ্যে, "Are you free now? Want to talk with you." কপালে ঘাম জমে উঠতে শুরু করল। ফিরতি উত্তরে কেবল "Not now." টাইপ করে উঠে পড়ল। তারপর ফোনটাকে রেখে দিয়ে কিচেনের দিকে যেতে যেতে ইন্দুমতি বরের উদ্দেশ্যে বলল, "তুমি জামাকাপড় ছেড়ে হাত পা ধুয়ে এসো। আজ ফিস ফ্রাই এনেছি। গরম করে দিচ্ছি। খাও।"
 
সুনির্মল – আজকের গোটা দিনটাই এককথায় বেকার গেল। যদিও সন্ধ্যের পর থেকে একটু ভালো চলছিল। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর আবার যে কে সেই। রাই মাঝেমধ্যে এমন ওভার রিঅ্যাক্ট করে ফেলে, যে বলার কথা নয়। ও যে একজন পুরুষ মানুষ, তার উপর ওর বর, সেটাই বোধহয় মাঝে মাঝে ও ভুলে যায়। শোওয়ার ঘরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে এই কথাগুলোই ভাবছিল। এই যে একটু আগে রাই যেটা করল ওর সাথে, সেটা কি উচিত হয়েছে? না হয় একটু আধটু ড্রিঙ্ক করেছে, তাতে কি এমন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, সেটাই ও বুঝে উঠতে পারছে না। ও কি বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করা, একটু আনন্দ ফূর্তি করাও বন্ধ করে দেবে? তাও তো এখন শুধু অফিস থেকে ঘর। আর ঘর থেকে অফিস। এর বাইরে জগৎ আছে বলে তো ভুলেই গেছে একপ্রকার। আর বন্ধু বলতে তো ঐ একজনই। তাপস। ওর পাল্লায় পড়ে মাঝেসাঝে এক-দু পাত্তর হয়। সব কথা কি ধরলে হয় রে বাপু। রাই কেমন জানি একটা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আগে কিন্তু এরকম মোটেও ছিল না। এখন সব কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ধরে। আর মুখের উপরে উত্তর দেয়। এই যেমন আজকে সকালেই। রোজই চান টান করে দেখে রাই ব্রেকফাস্ট রেডী করে উঠতে পারে না। তার ফলে রোজই ওর অফিস যেতে দেরী হয়। সেই কথাটাই ও আজকে রাইকে বলেছিল। তার উত্তরে রাই ওকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিয়েছিল। তার উত্তরও ওর কাছেও ছিল। কিন্তু ঐ যে বলে না, কথায় কথা বাড়ে। তাই ও আর কথা বাড়ায় নি। কিন্তু অফিসে গিয়েও কি শান্তি আছে? বসের ধাঁতানি ওর কপালে বাঁধা। টিফিন টাইমে ও আর তাপস একই সঙ্গে টিফিন করে। তাপস ব্যাচেলর। বিয়ে করেনি। বয়স ওরই মতো হবে। তিনকূলে কেউই নেই। একদম ঝাড়া হাত পা। ব্যাটার ঐ জন্যেই অত ডাঁট। বিয়ে করলে বুঝতে পারত। সে যাই হোক। রোজই টিফিনের সময় বিভিন্ন জিনিস নিয়ে ওদের মধ্যে কথা হয়। খেলা-সিনেমা-পলিটিক্স সবরকমের পাঁচমেশালী কথা হয়। আজকের বিষয় ছিল সেক্স। এই জিনিসটা নিয়ে এত কানাঘুষো হয় কেন, সেটা ও আজও বুঝতে পারেনি। ওর জীবনে রাইই একমাত্র নারী। কলেজে ওর থেকে জুনিয়র ছিল। তবে প্রেমটা বেশ মাখো মাখোই ছিল দুজনের। রাইকে প্রথম কিস করাটাও ওর মনে আছে। তখন ওরা দুজনেই কলেজে পড়ে। সেই বছর রিলিজ হল শাহরুখ খানের বীর-জারা। রাই যাকে বলে শাহরুখের অন্ধ ভক্ত। আর ও আমীরের। তবুও রাইয়ের বায়না রাখতে দুজনে গিয়েছিল সিনেমাটা দেখতে। তখন চারিদিকে এত মাল্টিপ্লেক্সের রমরমা ছিল না। আর থাকলেও, মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখার মত রেঁস্ত ওর পকেটে ছিল না। কলেজের কাছেই একটা সিঙ্গল স্ক্রিণে দুপুরের শোতে গিয়েছিল ওরা। টিকিটটা কেটে দিয়েছিল কিন্তু তাপসই। একমাত্র সে-ই জানত ওদের প্রেমের কথা। টিকিট দুটো ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলেছিল, "কর্ণারের টিকিট আছে কিন্তু। এবার আর গান্ডুর মতো শুধু সিনেমা দেখেই ফিরে আসিস না যেন। বন্ধুর মুখটা রাখিস, ভাই।" প্রথমে বন্ধুর মুখে এই কথা, তার উপরে মুচকি হাসি দেখে সেদিন সত্যিই ওর লজ্জা লাগছিল। ওর স্পষ্ট মনে আছে সেদিনের টিকিটের টাকাটা আজও তাপসকে দিয়ে ওঠা হয়নি। ও-ও চায়নি অবশ্য। সে যাই হোক। কথাটা বলেই তাপস চলে গিয়েছিল ওখান থেকে। ও চলে যেতেই রাই জিজ্ঞাসা করেছিল, "তোমার কানে কানে কি বলে গেল গো?" ও কথা ঘুরিয়ে বলেছিল, "ও কিছু না। চলো। শো শুরু হয়ে যাবে।" রাই আর কোনো কথা বলেনি। কেবল মাত্র একবার ভ্রু দুটো কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়েছিল। রাই কি কিছু বুঝতে পেরেছিল সেদিন? এইকথাটা ও কোনোদিন রাইকে জিজ্ঞাসা করেনি। কি হবে সব কথা জেনে? সিনেমা হলের অন্ধকার ঘরটাতে ঢুকতে গিয়ে ওর সেদিন কি ভয়ই না পাচ্ছিল। আজ সেসব কথা মনে পড়লে হাসি পায়। এর আগে অনেকবার রাইয়ের সঙ্গে একলা সিনেমা দেখতে গেছে। কোনোবার এরকম ফিলিংস হয়নি। আজ মনে হচ্ছে কি যেন একটা নিষিদ্ধ কাজ করতে চলেছে ও। রাইয়ের হাতটাকে শক্ত করে নিজের মুঠোয় ঢুকিয়ে নিয়ে চুপচাপ নিজেদের সিটে গিয়ে বসল। একে দুপুরের শো। তার উপরে কর্ণার সিট। সোনায় সোহাগা যাকে বলে। মনে মনে তাপসকে থ্যাঙ্কস জানতে ভোলেনি। কাছে পিঠে লোকজন বিশেষ নেই। যে কজন আছে সবই ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ওদের দু তিনটে রো আগে আরো দুজন বসে আছে। দেখেই বোঝা যায় কাপল। হয়তো ওদের মতোই কলেজ কেটে সিনেমা দেখতে এসেছে। হয়তো ওদেরও কোনো বন্ধুই টিকিটি কেটে এনে দিয়েছে। হবে হয়তো। সিনেমা শুরু হল। পর্দা জুড়ে বুড়ো শাহরুখকে দেখেই রাইয়ের কি চিৎকার! পারলে সিট ছেড়ে পর্দার উপরে গিয়ে পড়ে। অনেক কষ্টে শান্ত করে বসাতে হয় ওকে। কিন্তু এক একটা সিনে বাচ্চা মেয়ের মত হাততালি দিয়ে উঠছে। যদিও তাতে কারোরই অসুবিধা হচ্ছে না। সবাই ওর মতই মজা নিচ্ছে। ইন্টারভ্যালের পর ও উঠে গিয়ে এক প্যাকেট পপ কর্ণ কিনে আনল। সিনেমা আবার শুরু হতেই রাই একটা করে নিজে খাচ্ছে, আর একটা করে ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। ওর মন কিন্তু সিনেমায় নেই। বারবার তাপসের বলা কথাগুলো মনে আসছে। একবার আড়চোখে দেখল রাইয়ের চোখ পর্দার সাথে সেঁটে গেছে। ও আলতো করে ওর ডানহাতটা রাখল রাইয়ের বাঁ পায়ের উপরে। এর আগে ও অনেকবার রাইয়ের শরীর ছুঁয়েছে। কখনও অজান্তে। আবার কখনও জেনে শুনে। কিন্তু আজকের স্পর্শটাই যেন আলাদা। ওর গোটা শরীর জুড়ে একটা শিহরণ খেলে গেল। বুকের মধ্যে কিছু একটা লাবডুব করে যাচ্ছে অনবরত। গলার কাছে দলা পাকিয়ে আছে কিছু একটা। এরপরেই একটা চমক। রাই একটা আলতো হাত রাখলো ওর হাতের উপরে। রাইয়ের গরম হাতের স্পর্শ যেন ওর শরীরের ছ্যাঁকা লাগিয়ে দিচ্ছে। ও চাইছে নিজের হাতটা সরিয়ে নিতে। কিন্তু পারছে না। রাই এখন শক্ত করে ওর হাতটা ধরে আছে। ও শরীরের সব ইন্দ্রিয় দিয়ে বুঝতে পারল সময় উপস্থিত। তিলার্ধ সময়ও অপচয় না করে ডানহাতটা দিয়ে রাইয়ের পাতলা কোমরটা ধরে নিজের দিকে টান দিল আলতো করে। রাই কোনো বাধা দিল না। কেবল একবার ওর চোখের দিকে তাকালো। তারপর ধীরে ধীরে নিজের চোখদুটোর বন্ধ করে নিল। ও নিজের মুখটা রাইয়ের মুখের আরো কাছে নিয়ে গেল। চেষ্টা করল ওর নরম ঠোঁট দুটো ছোঁয়ার। পারল না। চেয়ারের হাতল দুটো খামোকা বাধা সৃষ্টি করছে। বিরক্ত হয়েই রাইয়ের শরীরটাকে নিজের দিকে টেনে নিতে চাইল আরো কিছুটা। তাতে বিপদ আরো বাড়ল। ওর আচমকা টানে টাল সামলাতে না পেরে রাইয়ের শরীরটা হুমড়ি খেয়ে পড়ল ওর বুকের উপরে। নিজের বুকের মাঝে সেই প্রথমবার টের পেয়েছিল রাইয়ের নরম বুকদুটোর কোমল স্পর্শ। চুড়িদারের তলায় ব্রা। আর ব্রা ভেদ করে নরম বুকদুটোর স্পর্শ অনুভব করতে পারছিল ও। এতকিছুর পরেও রাই চোখ খোলেনি। এতক্ষণে ওর ঠোঁটদুটো নাগালের মধ্যে এসেছে। এই সুযোগ। আর দেরী না করে রাইয়ের ঠোঁটদুটোর উপরে নামিয়ে আনল নিজের ঠোঁটদুটোকে।

বালিশের পাশে পড়ে থাকা ফোনটা হাতে তুলে দেখল, এখন ন'টা বেজে ষোলো মিনিট। বাইরের ঘর থেকে টিভির আওয়াজ ভেসে আসছে। রাই এখন সিরিয়ালে মত্ত। বিছানা থেকে উঠে বিড়ালের মত করে পা টিপেটিপে দরজার কাছে গিয়ে পৌঁছাল। একবার বাইরে উঁকি মেরে দেখল। রাই সোফায় বসে টিভি দেখছে একমনে। সন্তর্পণে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ছিটকিনি তুলে দিল। সাবধানের মার নেই। বিছানায় ফিরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে প্রথমেই অ্যাপটা খুলে ফেলল। ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড লিখে লগ ইন করল। Cupid69। নামটা তাপসই দিয়েছে। শালা, জাতে মাতাল হলেও তালে কিন্তু একদম ঠিকঠাক। কিউপিড হচ্ছে নাকী রোমানদের প্রেমের দেবতা। এসব বিষয়ে শালার জ্ঞান প্রচুর। ও এসব জানে শোনে না খুব একটা। "আর 69 টা কেন দিলাম, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস..." বলে ওর দিকে চোখ মেরে খানিকক্ষণ খিকখিক করে হাসল হারামীটা।
  • "দাঁত না কেলিয়ে বলবি এটা কী?" বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করল।​
  • "গুপিযন্ত্র!!" বলে আরেক দফা খিকখিক করে হাসল তাপস।​
  • "ধুর বাল! বলবি তো বল, তা নাহলে আমি এখনই ডিলিট করে দিচ্ছি।" তাপসের হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিতে গিয়েও পারল না।​
  • "অ্যাই খবরদার। একদম ডিলিট করবি না, বলে দিচ্ছি। আমার দিব্যি রইল।" মেয়েদের মত গলা করে বলল তাপস।​
  • "শালা, মালের ঘোরে আবার ফালতু বকছিস?"​
  • "যখন এটা চালাবে, তখন বুঝবে কে ফালতু বকছে।"​
  • বলে নিজেই কিসব টেপাটেপি করতে শুরু করল ওর ফোনে। তারপর একটু পরে ওর কোলের উপরে ফোনটাকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, "এই নে, তোর প্রোফাইলটা যা তৈরী করে দিয়েছি না, দেখবি এক একজন মাল এসে ভীড় করছে। তুই শুধু বাবু হয়ে বসে শো দেখে যাবি। আর এঞ্জয় করে যাবি।"​
  • "আমি কিন্তু এখনও বুঝতে পারছি না, এটায় কি হয়। আলবাল না বকে, বলনা বাবা, এটার কাজটা কি।" বন্ধুর কাছে কাতর মিনতি জানায় ও।​
  • "তুই পানু দেখেছিস কখনো?" হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল তাপস।​
  • "মানে!?"​
  • "মানে পানু, ব্লু ফিল্ম, নোংরা ছবি, যাতে ছেলে মেয়েরা মিলে 'ইয়ে' করে রে, গান্ডু।" দাঁত খিঁচিয়ে বলে তাপস।​
  • "পানু মানে কি আমি তা জানি। আমি বলতে চাইছি এই কথা হঠাৎ জিজ্ঞাসা করছিস কেন?" বন্ধুকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে।​
  • "কারণ আছে। বলনা বাবা, দেখেছিস নাকি।" অধৈর্য হয়ে বলে তাপস।​
  • "দেখেছি।" বাধ্য হয়ে বলে ও।​
  • "লাইভ দেখেছিস কখনো? মানে তোর নিজের নয়, অন্য কারোর। ধর। তুই বসে আছিস একটা চেয়ারে। আর তোর সামনে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সেক্স করছে। একদম খুল্লামখুল্লা। যেমনটা পানুতে দেখায় সেরকম। কিন্তু এখানে এটা লাইভ। যেন চাইলেই তুই হাত বাড়ালে তাদের স্পর্শ করতে পারবি। ছুঁতে পারবি। তুই চাইলে ওদের যা খুশী অর্ডার করতে পারিস। তুই যেমন যেমন অর্ডার করবি, ওরা তেমন তেমন করেই করবে। বাধ্য ছেলেমেয়ের মত।"​
  • "বলিস কি?!!" এইটুকু শুনেই ওর কপালে চোখ উঠে যায়।​
  • "তাহলে আর বলছি কি? শুধু তাইই নয়, তুই চাইলে ওদের সঙ্গে ইনভল্ভও হতে পারবি। অবশ্য তারা যদি এমনটা চায় তবেই। আর তার জন্য পকেট একটু খালি করতে হবে।"​
  • "তুই তাহলে এসবের কথা বলছিলিস এতক্ষণ?" এখনও ওর এসব বিশ্বাস হয় না।​
  • "তবে আর বলছি কি, প্রতি রাতে আমার শোওয়ার ঘরে আমার প্রাইভেট শো চলে। বুঝেছিস? তোকেও একদিন দেখাবো।"​
  • "আমিও এটা করতে পারবো?"​
  • "আলবৎ পারবি। তাই তো বলছি, এটা অ্যাপ নয়, আলাদিনের চিরাগ। কেবল ঠিকমতো করে ঘষতে জানা চাই। বুঝলি গান্ডু?"​
লগইন করার পর ও সোজা চলে গেল পার্টনার সাজেশন অপশনে। এই অ্যাপের প্রতিটা ঘাঁতঘোঁত ওকে তাপস বুঝিয়ে দিয়েছে। এও বুঝিয়ে দিয়েছে কীভাবে চার ফেলে মাছ ধরতে হয়। আর সেই মাছকে কিভাবে খেলিয়ে পাড়ে মানে বিছানায় তুলতে হয়। তাপসের কথা অনুযায়ী ও প্রথমেই কম বয়সী মেয়ের প্রোফাইল খুঁজতে শুরু করল। ২৩-২৪-২৫-২৬ যাই হোক। এর বেশী নয়। সাজেশন অপশনে অনেকগুলো প্রোফাইল ভীড় করে এসেছে। একটা সুবিধে আছে অবশ্য। লোকেশন কলকাতা হওয়ার কারণে সবই নিশ্চয়ই কাছেপিঠের হবে। দেখেশুনে গোটা ছয়েক প্রোফাইলে পার্টনার রিকোয়েস্ট সেন্ড করল। তারমধ্যে একটা অল্পক্ষণের মধ্যেই অ্যাকসেপ্টও করল ওর রিকোয়েস্ট। এত তাড়াতাড়ি যে ব্যাপারটা হবে সেটা ও বুঝতে পারেনি। প্রোফাইলটায় ঢুকতেই নামটা আগে পড়ল ও। Aphrodite24। ২৪ বছরের মেয়ে। নামের মানেটা বুঝতে পারল না। প্রোফাইলটা দেখেও কিছু বুঝতে পারল না। কিন্তু কি করা যায়। তাপসের গুরুবাক্য মনে পড়ল। চার ফেলতে হবে। তাড়াতাড়ি চ্যাট অপশনে গিয়ে লিখল, "Hi, Aphrodite, want to be my friend?" টাইপ করার সময় ওর আঙ্গুলগুলো থর থর করে কাঁপছিল। বুকটা ঢিবঢিব করছে। সেন্ড করার পর অল্প কিছুক্ষণের বিরতি। ও ভেবেছিল ওপাশ থেকে হয়তো কোনো জবাব আসবে না। কিন্তু উত্তর এল। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এলো বলা চলে। জবাবটা পড়ে ও নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। দুটো শব্দে উত্তর লেখা আছে। "Of Course." এত তাড়াতাড়ি যে ফিরতি জবাব পাবে সেটা ও একদমই আঁচ করতে পারেনি। এরপর কি লেখা যায় এটা ভাবতেই কিছুটা সময় কেটে গেল। কিছুটা একটা লিখতে হবে। তা নাহলে ওপাশের মেয়েটা কি ভাববে? কি ক্যাবলা রে বাবা! চ্যাট করতেও জানে না। ও তাড়াতাড়ি টাইপ করতে লাগল। "Are you free now? Want to talk with you." এবার ও আশা করেছিল সদর্থকই কোনো জবাব আসবে। কিন্তু এবার ওকে নিরাশ হতে হল। কারন আবার দুটো শব্দেই উত্তর এসেছে। কিন্তু এবার উল্টো। "Not Now." জবাবটা পড়ে বেশ কিছুটা দমে গেল ও। কিন্তু এভাবে হেরে গেলে তো হবে না। কিছু একটা লিখতে যাবে, হঠাৎই প্রোফাইলটা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেল। মনটা সত্যি করেই খারাপ হয়ে গেল। বোধহয় ও একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। যাইহোক পরে আবার চেষ্টা করে দেখতে হবে। ফোনটা রেখে দিতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই অ্যাপে একটা নোটিফিকেশন এল। Eisheth26 accepts your request. Now you can chat with HER. Eisheth26। আগেরটার মতো এর মানেও ও বুঝতে পারল না। তবে আবার আগের মতোই চ্যাটে "Hi, Eisheth, want to be my friend?" লিখে পাঠাল। কিন্তু এবারে ফল হল উল্টো। একটু পরেই জবাব এলো। "Fuck off, Pimp." ও বুঝতে পারল এটা শক্ত ঘাঁটি। সময় দিতে হবে। আবারও নিরাশ হয়ে ফোনটা রেখে দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু বিধি বাম। এবারেও তা পারল না। কারণ একটা নতুন চ্যাট এসে জমা হয়েছে ওর চ্যাট বক্সে। তাড়াতাড়ি সেটা খুলে দেখল আবার অ্যাফ্রোডাইট। চ্যাটে লেখা রয়েছে। "Now I am free. We can talk freely." নতুন করে একটা জোশ খেলে গেল ওর মনের মধ্যে। ফোনের স্ক্রিণের উপরে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে টাইপ করতে শুরু করল সুনির্মল।
 
আয়ুষী – এখন সময়ের হিসাবে কটা বাজে ও জানে না। হয়তো সাতটা। কিম্বা আটটা। ন'টাও হতে পারে। আবার দশটা হলেও কিছু করার নেই। আসলে ও সময়ের হিসাবটা বর্তমানে ভুলে গেছে। গুণে গুণে নয় নম্বর সিগারেটটা বের করে খালি প্যাকেটটাকে দূরে অন্ধকারের মুখে ছুঁড়ে মারল। এর আগে এখানে বসেই আটটা সিগারেট খেয়ে শেষ করেছে। লাইটারটা দিয়ে সিগারেটটা ধরিয়ে মুখ ভর্তি ধোঁয়া ছাড়ল। অল্প একটু দূরে অন্ধকারের বুক চিরে দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। তিন্নিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ও সোজা এসে বসেছে এই গঙ্গার ঘাটে। তারপর থেকে ব্যয় হয়েছে অনেকটা সময় এবং আটটা সিগারেট। ওর চারপাশে এখন জমাট বাঁধা অন্ধকার। কেবল ওর দুই আঙুলের ফাঁকে জ্বলতে থাকা সামান্য লালচে আগুন। আবার একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ল। ঘড়ি নেই ওর হাতে। কোনোদিনই পরার অভ্যাস নেই। থাকলে হয়তো সময়টা দেখতে পারত। কিন্তু ওটা তো ফোনে দেখতে পারে। কিন্তু সেই ইচ্ছাটাও এখন আর নেই। ফোনটা ওর হাতের কাছেই একটু দূরে মাটির উপরে পড়ে রয়েছে। ও যখন এখানে এসে বসেছিল তখন বিকেলের শেষ মরা আলোটা এসে পড়েছিল ওই পৃথিবীর বুকে। ও এসে বসেছিল গঙ্গার ধারে। ও প্রায়ই এখানে আসে। এর আগে অনেকবারই এসেছে। তবে প্রতিবারই তিন্নির সাথে। তিন্নির ফেভারিট জায়গা এটা। ওরা দুজন এখানে এসে বসে। উঁহু। বসত। আর হয়তো সেই সুযোগ পাবে না। তিন্নি। পাগলী মেয়ে একটা। অন্ধকারকে কম বেশী সব মেয়েই ভয় পায়। কিন্তু তিন্নি পায় না। বরং উল্টে ও অন্ধকারকে এঞ্জয় করে। এখানে এসে বসার কারণটাই সেটা। কেবল অন্ধকারের মধ্যে বসে থাকা। আর দূর থেকে গঙ্গার ভেসে আসা জলের শব্দ শোনা। ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই জায়গাটাকে ঘিরে। মনে আছে আজ থেকে খুব বেশী নয় দুই-তিন বছর আগের এক সন্ধ্যের কথা। এইরকমই একটা সন্ধ্যে। আবার এইরকম নয়। অন্তত এইরকম মনমরা তো নয়ই। সেদিন ওদের হায়ার সেকেন্ডারীর রেজাল্ট বেরিয়েছে। স্কুলের সীমা পেরিয়ে এবার একটা নতুন জীবন। উন্মুক্ত জীবন। স্কুল থেকে রেজাল্ট নিয়ে বেরিয়ে এসে ও তিন্নিকে বলেছিল, "চ্।"
  • "কোথায়?" অবাক হয়ে বলেছিল তিন্নি।​
  • "গঙ্গার ঘাটে।"​
  • "এখন!?" আবারও অবাক তিন্নি।​
  • "কেন? কি অসুবিধা আছে?" এবার ওর অবাক হওয়ার পালা।​
  • "না মানে। দ্যাখ্ আকাশের অবস্থা ভালো নয়। যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে। সঙ্গে ছাতাও আনিনি। তার চেয়ে চল আমাদের বাড়ি যাই।" মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলল তিন্নি।​
  • "না। আমার যখন ইচ্ছে হয়েছে তখন আমি গঙ্গার ঘাটেই যাবো। তুই বরং বাড়িই যা।" রাগ দেখিয়ে বলল ও।​
  • "না। তোকেও যেতে হবে না। বৃষ্টি হলে ভিজে মরবি।" তিন্নি বলল।​
  • "ভিজলে ভিজবো। তোর অত কিসের চিন্তা? তুই বাড়ি যাবি, যা না। কে আটকাচ্ছে!" আবার রাগ দেখিয়ে বলল ও।​
  • "ওরে, রাগ দেখো! আচ্ছা চ্। আমিও যাবো তোর সাথে।" মুচকি হেসে বলল তিন্নি।​
  • "না তোকে যেতে হবে না। আমি একাই যাবো।" ও আরোও রাগ দেখিয়ে বলল।​
  • "থাক। আর গোঁসা করতে হবে না। এবার চ্।" ওর হাত ধরে টেনে বলল তিন্নি।​
সেদিন তিন্নির কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিল। গঙ্গার ঘাটে পৌঁছাবার একটু পরেই নামল ঝেঁপে বৃষ্টি। মূহুর্তের মধ্যে দুজনে বৃষ্টিতে ভিজে চান করে গেল। আকাশ মেঘলা হয়ে অন্ধকার হয়ে গেছে অনেকটাই। তার উপরে মুষলধারে বৃষ্টি। চোখে প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আবার তার সাথে হঠাৎ করেই শুরু হল আকাশ চিরে বজ্রপাত। তিন্নি ওর জামার হাতাটাকে খামচে ধরে ভয় ধরা গলায় বলল, "দেখলি। আমার কথা শুনলি না। এবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেজ।" ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই তীব্র শব্দে আরো একটা বাজ পড়ল। চারপাশটা সাদাটে আলোয় ভরে গেল। তিন্নি আরো কিছুটা সেঁটে এল ওর শরীরের কাছে। ভয়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে তিন্নির শরীরটা থর থর করে কাঁপছে। কাঁপছে ও-ও। কিন্তু সেটা তিন্নিকে দেখানো যাবে না। তাহলে বেচারী আরো ভয় পেয়ে যাবে। এই মুহুর্তে ওদের চারপাশে কোনো জনপ্রাণী নেই। হঠাৎই ওর চোখে পড়ল একটা সামান্য ছাউনি। সেদিকে আঙুল বাড়িয়ে ও বলল, "চল। আপাতত ঐ ছাউনিটার তলায় গিয়ে দাঁড়াই।" বলে দুজনেই তাড়াতাড়ি পা বাড়াল ছাউনিটার দিকে। কাছে এসে দেখল সেটা একটা অস্থায়ী দোকান গোছের। তবে ভিতরে কেউ নেই। মাথায় ত্রিপল থাকায় ভিতরে অন্তত জল পড়ছে না। দুজনে সেই ছাউনির তলায় ঢুকে পড়ল। ভিতরে জল পড়ছে না ঠিকই, তবে বৃষ্টির ছাঁট গায়ে এসে পড়ছে দুজনেরই। এতক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার ফলে দুজনেই ভিজে চান করে গেছে। কেমন যেন শীত শীত করছে। কাছেপিঠে আবার একটা বাজ পড়ল সশব্দে। তিন্নি নিজের চোখ আর কান বুজে ওর শরীরের সঙ্গে লেপ্টে গেল প্রায়। আধো আলো আর আধো অন্ধকারে ও দেখল তিন্নিকে। বেচারী ওর বুকের কাছে মাথাটা নামিয়ে চোখটা বুজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। ও হাত বাড়িয়ে ওর ভেজা শরীরটাকে শক্ত করে ধরল। তিন্নি এবার চোখ খুলে ওর দিকে তাকালো। ভয়ার্ত সেই চোখে কি আরো কিছুর ছায়া সেদিন ও দেখতে পেয়েছিল? সাদা ইউনিফর্ম ভিজে গিয়ে ট্রান্সপারেন্ট হয়ে গেছে। হাল্কা শ্যাওলা কালারের ব্রাটা বিশ্রীভাবে ফুটে উঠেছে ইউনিফ্রমের তলা থেকে। সেইদিকে তাকিয়ে ওর মনটা হঠাৎ করেই কেমন জানি হয়ে গেল। তিন্নি কেবল ওর কাছে বন্ধু নয়। বরং তার থেকে অনেক অনেক বেশী কিছু। এই ভাবটা ওর মনে অনেক দিন ধরেই আছে। কিন্তু ও মুখ ফুটে বলতে পারেনি ওকে। ভয় হয়। যদি তিন্নি ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। ও সেটা কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। তিন্নির মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখল। গোটা মুখটা জলে ভেজা। গালে, কপালে, চিবুকে, ঠোঁটে কতকগুলো বড়ো, মাঝারী, ছোটো জলের ফোঁটা ভীড় করে আছে। কয়েকগাছা চুল লেপ্টে আছে ওর কপালে। দুই আঙুলে সেগুলো সরিয়ে দিল ও। তিন্নি কিছু বলতে গিয়েও বলল না। ঠোঁটদুটোকে একবার খুলেই বন্ধ করে দিল। এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল চিবুকে। তারপর আরো নীচে গড়িয়ে হারিয়ে গেল অন্ধকারের মধ্যে কোথাও। হঠাৎ কি জানি কিছু একটা ঘটে গেল মুহুর্তের মধ্যে। দুই হাতের মধ্যে তিন্নির মাথাটাকে আলতো করে ধরে ওর ঠোঁটদুটোর উপরে রাখল নিজের ঠোঁট দুটোকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তিন্নির ভেজা, কাঁপতে থাকা শরীরটাকে। ভেজা সাদা ইউনিফর্ম আর শ্যাওলা কালারের ব্রাতে ঢাকা কচি লেবুর মত বুকদুটো ওর বুকে ঘষা খেতে লাগল। এই স্পর্শটাই ওকে যেন বেশী করে মাতাল করে তুলছিল। দুজনের ঠোঁটদুটো কতক্ষণ একে অপরের সঙ্গে লেগেছিল ওরা নিজেরাও জানে না। ওর মনে হয় এক যুগ। হবে হয়তো। এর পরে অনেকবার ও তিন্নিকে কিস করেছে। ছুঁয়ে দেখেছে ওর তণ্বী শরীরটাকে। কিন্তু সেই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যের স্পর্শ আর ফেরত পায়নি। হয়তো প্রথম কিস বলেই ওটা এতটা আলাদা। এতটা স্পেশাল। তিন্নি কিন্তু সেদিন বাধা দেয়নি ওকে। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেনি। বরং উল্টে নিজেকে যেন সঁপে দিয়েছিল ওর কাছে। ওর হাতে। ওর বুকে। যখন ওর হাত নেমে এসেছিল ওর বুকে, তখনও ও বাধা দেয়নি। যখন ওর হাত মেপে নিচ্ছিল ওর বর্তুলাকার বুকের পরিধি, তখনও ও মানা করেনি। যখন ওর ঠোঁট শুষে নিচ্ছিল ওর শরীরের সব তাপ, তখনও ও নিষেধ করেনি। তিন্নির ইউনিফর্মের একটা বোতাম সেদিন ছিঁড়ে কোথায় পড়ে গিয়েছিল, অনেক চেষ্টা করেও ওরা খুঁজে পায় নি। কিন্তু তাতেও তিন্নি রাগ করেনি। সেদিন বাড়ি ফিরতে দুজনেরই অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। বকুনিও খেয়েছিল অনেক। কিন্তু তাতেও দুজনের কিছুই মনে হয়নি। বিশেষ করে ওর। তিন্নির প্রতি ভালোবাসাটা অঙ্কুরিত হয়েছিল সেদিন থেকেই। তারপর থেকে অনেকটাই সময় বয়ে গেছে। সেদিনের সেই সদ্য অঙ্কুরিত চারাগাছ আজ অনেকটাই ডালপালা মেলেছে।

দুই আঙুলের ফাঁকে নিভে আসা আগুনটাতে শেষবারের মত একটা টান দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল। পাশে পড়ে থাকা ফোনের স্ক্রিণটা একবারের জন্য জ্বলে উঠে নিভে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল একটা নোটিফিকেশন এসেছে। অ্যাপটা গতকাল রাতেই ইন্সটল করেছিল। ওটা দেখাতেই আজ গিয়েছিল তিন্নির কাছে। ইচ্ছা ছিল ওরও একটা প্রোফাইল খুলে দেবে। কিন্তু সেটা আর হল না। ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাসটা ফেলে ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ডটা লিখে লগ ইন করল। Eisheth26। কাল অনেক রাত অবধি জেগে এই প্রোফাইলটা তৈরী করেছে। নামটা নেটে খুঁজে খুঁজে পেয়েছে। Eisheth হচ্ছে একধরনের succubus. এরা একধরনের ডেমন বা শয়তান, যারা ঘুমন্ত মানুষের সাথে সেক্স করে তাদের আত্মাকে গ্রাস করে। নামটা একবারেতেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল ওর। লগ ইন করার পরে প্রথমেই যে নোটিফিকেশনটা দেখতে পেল সেটা হল Himeros07 নামে কেউ একজন ওকে পার্টনার রিকোয়েস্ট সেন্ড করেছে। Male দেখেই ইগনোর করল ও। সোজা চলে গেল সাজেশন অপশনে। পরপর কয়েকটা প্রোফাইল ভিজিট করল। কয়েকটা পছন্দও হল। তাদেরকে পার্টনার রিকোয়েস্ট সেন্ড করল। অল্প একটু পরে তাদের মধ্যে একজন ওর রিকোয়েস্টটা অ্যাকসেপ্টও করল। নামটা আরো একবার পড়ল ও। Aphrodite24। বয়সটা নাকী ২৪। ফেক প্রোফাইল জেনেও ওটাকেই রিকোয়েস্ট সেন্ড করেছিল। কথা বলার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু এখন আর ভালো লাগছে না। পরে বলবে বলে ঠিক করল। ফোনটাকে রেখে দিতে যাচ্ছিল, হঠাৎই আরো একটা নোটিফিকেশন ঢুকল ওর ফোনে। হিমেরস নামের প্রোফাইলটা থেকে আবার ওকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। অসহ্য একটা! প্রথমে ভেবেছিল decline করে দেবে। কিন্তু তাতে লাভ কি হবে? হয়তো আবার ওকে রিকোয়েস্ট সেন্ড করবে। এইসব ছেলেদের তো আর কাজ নেই! মেয়ে দেখলেই নোলা ঝরে। তার চেয়ে অ্যাকসেপ্ট করে ফেলে রাখলেই হল। রিকোয়েস্টটাকে অ্যাকসেপ্ট করে মিউট করতে যাবে, তার আগেই একটা চ্যাট ঢুকল তার কাছ থেকে। লেখা আছে, "Hi." সঙ্গে সঙ্গে তমাল দার মুখটা মনে পড়ে গেল ওর। ও যে বোনের সাথে মিশুক সেটা তমাল দা একদমই চায়নি। হয়তো কিছু একটা আন্দাজ করেছিল। আর আজকের ঘটনাটার পিছনে যে তমালদার হাত রয়েছে তাতে ও দুশো শতাংশ নিশ্চিত। এই জন্যেই ওর কোনো ছেলেকেই পছন্দ হয় না। এটাও মনে হচ্ছে সেইরকমই একজন চ্যাংড়া হবে। একে যে করেই হোক থামাতে হবে। ও লিখে পাঠাল, "Who the fuck you are???" ও ভাবল এতে বুঝি ওর শিক্ষা হবে। কিন্তু কুকুরের লেজ চিরকাল বাঁকাই থাকে। প্রায় মুহুর্তের মধ্যে উত্তর এলো, "I think you should mind your language." শালা বোকাচোদা! জ্ঞান চোদাতে এসেছে! গা জ্বলে যায়! "Go to HELL." লিখে একটা middle fingered ইমোজি পাঠিয়ে দিল। ও ভাবল এতেই বোধহয় ঠান্ডা হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ ওপাশ নিস্তব্ধ। মনে মনে ও খুশীই হল। শান্ত হয়েছে হারামীটা। কিন্তু না। ভুল ভেবেছিল ও। আবার একটা চ্যাট ঢুকল। অনিচ্ছা সত্তেও খুলে দেখল, "That's where I have come from." শালা সেয়ানা সাজছে। মুখের মত একটা জবাব দিতেই হবে। তাড়াতাড়ি লিখল, "You are just a pimp. Stay away." এবার উত্তর এল, "I can't. I want to talk with you." এই তো শালা, পথে এসো! মেয়ে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে। "And why should I talk with you?" উত্তর এল, "Just because I want to." শালা কোথাকার রাজা উজির এলো রে। দাঁড়া তোর ব্যবস্থা করছি। এটা যে কোনো চ্যাংড়া ছেলের প্রোফাইল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবুও ও লিখল, "Are you a MALE or FEMALE?" ও বাজিয়ে দেখতে চাইল। আবারও ঘোরা পথে জবাব এল, "And why do you concern?" ওভারস্মার্ট সাজা বের করছি। "Just answer me. Or get lost." এবারের জবাবটা পড়ে ও মুচকি হাসল। এতক্ষণে ওষুধে কাজ ধরেছে। "I am a guy." ও মুচকি হেসে তাতাবার জন্য লিখল, "I thought you are a gay." কিন্তু শালা ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না। লিখে পাঠিয়েছে, "Wish to test (taste) me?" সারাদিন তো মাথায় কেবল একটা জিনিসই ঘুরছে। মুখ বাঁকিয়ে লিখল, "You wish!!! Are you capable???" উত্তর এল "I think so." ও কিছু একটা লিখতে যাচ্ছিল। তার আগে একটা নোটিফিকেশন ঢুকল। ক্লিক করে দেখল কে একটা Cupid69 নামের প্রোফাইল থেকে ওকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আরো একটা ছ্যাঁচড়া। ঝোঁকের মাথায় ওকেও অ্যাকসেপ্ট করে দিল। তাকে কড়া করে একটা চ্যাট লিখবে ভাবল। কিন্তু তার আগেই সেখান থেকে চ্যাট এল। "Hi, Eisheth, want to be my friend?" পড়েই গা জ্বলে গেল ওর। শালা এখনো কথা বলতে শেখেনি। জবাবে লিখল, "Fuck off, Pimp."

আবার একটা নোটিফিকেশন ঢুকল ফোনে। না। এবার আর অ্যাপে নয়। বরং হোয়াটসঅ্যাপে। খুলে দেখল ওদের বাউন্ডুলে ব্যান্ডের গ্রুপে মেসেজ ঢুকেছে। তমাল দা লিখেছে। "Guys, আমি আর তিন্নি এই ব্যান্ডে থাকব না। আমরা ব্যান্ড ছেড়ে দিচ্ছি।" প্রায় সাথে সাথেই আরো খান চারেক ম্যাসেজ ঢুকল গ্রুপে। সবাই জানতে চাইছে কারণ কি। তমাল দা আবার মেসেজ করল, "কালকে বিকালে সবাই আমাদের বাড়িতে এসো। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।" সবাই জানতে চাইছে কারণ কি। ও চুপচাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে তিন্নিকে একটা মেসেজ করল। "এমনটা করিস না, তিন্নি। প্লিজ। একবার আমার কথাটা শোন।" মেসেজটায় মুহুর্তের মধ্যে নীল দুটো টিক পড়ল। তার মানে তিন্নি ওর মেসেজটা পড়েছে। ও কিছুটা অপেক্ষা করল। ভাবল তিন্নি হয়তো ওকে মেসেজ করবে। তিন্নি মেসেজ করল ওকে। কিন্তু না করলেই হয়তো ভালো করত। তাকিয়ে দেখল তিন্নি ওকে লিখেছে, "তুই আর আমার কাছে আসিস না। আমি তোকে সত্যিই ঘেন্না করি।" ফোনটার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বেকুবের মত বসে রইল। কি লিখবে এর উত্তরে ভেবে পেল না। কিছু কি লেখা উচিত? সেটাও ও বুঝতে পারল না। ততক্ষণে তিন্নি অফলাইন হয়ে গেছে। গ্রুপে মেসেজের ঝড় উঠেছে ততক্ষণে। গ্রুপের নোটিফিকেশনটাকে মিউট করে দিয়ে আনমনে আরো একবার অ্যাপে ফেরত গেল ও। কি মনে হতে হিমেরসকে লিখল, "Do you really live in Kolkata?" সঙ্গে সঙ্গে জবাব এল, "Yeah. But why?" কারণটা এককথায় লিখতে পারবে না সেটা ও ভালো করেই জানে। চোখের সামনে তিন্নির মুখটা ভেসে উঠছে। কি করবে ও ভেবে পেল না। অ্যাপে আরো একটা চ্যাট ঢুকল, "Hey are you there?" চোখের কোণটা জ্বলতে শুরু করেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ও টাইপ করল, "Hey man, will you have sex with me??? I badly need this. Coz I am fucked up."

রাত এখন একটা বেজে আটচল্লিশ। খিদেয় পেটটা জ্বলে যাচ্ছে। হাতের ফোনটায় মাত্র পনেরো পার্সেন্ট চার্জ আছে। এটা শেষ হলেই ফোনটা আজকের মত চোখ বুজবে। কিন্তু ও চোখ বুজতে পারবে কি আজ রাতে? মনে পড়ে গেল সন্ধ্যের কথাটা। চ্যাটে কথাটা লিখেই ও লগ আউট হয়ে গিয়েছিল। কথাটা কেন লিখেছিল ও নিজেও জানে না। ঠিক করেছে নাকি ভুল, তাও ও জানে না। ফোনটা হাতে নিয়ে অ্যাপটা খুলে লগ ইন করতেই দেখল হিমেরসের একটা চ্যাট ওর চ্যাট বক্সে পড়ে রয়েছে। খুলে দেখল লেখা রয়েছে, "Are you alright? If you want, I can hear you." লেখাটা পড়ে মনটা একটু হলেও অন্যরকম হয়ে গেল। সারাজীবন ওকে কেউ বুঝতে পারেনি। বাবা-মা-ভাইয়া। কেউ না। এমন কি তিন্নিও পারেনি। এ কি পারবে? মনটা দোলাচলে দুলে উঠল। ও লিখল, "Thanks. Can we meet?" ও লক্ষ্য করেনি, হিমেরস এত রাতেও অ্যাকটিভ আছে। সঙ্গে সঙ্গে জবাব এল, "Of course. Tell me where?" শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে। ফোনের স্ক্রীণটা লাল হয়ে এসেছে। চার্জ প্রায় শেষ। যেকোনো মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি আয়ুষী লিখল, "I'll talk with you later." কিন্তু চ্যাটটাকে সেন্ড করার আগেই ফোনটা সুইচড অফ হয়ে গেল।



~ অত্র দ্বিতীয়োৎধ্যায়ঃ সমাপ্তঃ ~
 

Users who are viewing this thread

Back
Top